أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 756)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
৪ নং আয়াত:-
[ وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
প্রত্যেক রসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছিলেন, তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য।
And We sent not a Messenger except with the language of his people, in order that he might make (the Message) clear for them.]
www.motaher21.net
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِہٖ لِیُبَیِّنَ لَہُمۡ ؕ فَیُضِلُّ اللّٰہُ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۴﴾
আমি প্রত্যেক রসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
And We did not send any messenger except [speaking] in the language of his people to state clearly for them, and Allah sends astray [thereby] whom He wills and guides whom He wills. And He is the Exalted in Might, the Wise.
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
৪ নং আয়াত:-
[ وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
প্রত্যেক রসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছিলেন, তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য।
And We sent not a Messenger except with the language of his people, in order that he might make (the Message) clear for them.]
৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন;-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, তিনি সকল রাসূলকে তাদের স্বজাতির ভাষায় প্রেরণ করেছেন। যাতে উম্মাতের কাছে দীনের দাওয়াত দিতে কোন প্রকার জটিলতা সৃষ্টি না হয়, বুঝাতে কোন প্রকার কষ্টের সম্মুখীন হতে না হয়। কারণ রাসূল যদি এক ভাষাভাষী হন আর যাদের কাছে তাঁকে প্রেরণ করা হয়েছে তারা অন্য ভাষাভাষী হয় তাহলে যে উদ্দেশ্যে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে তা হাসিল হবে না। রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই হল, তিনি তাদের কাছে দীনের বিধানাবলী সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন তারা বুঝে সে অনুপাতে জীবন যাপন করবে। কিন্তু মানুষ যদি রাসূলের কথাই না বুঝে, আর মানুষের সমস্যা বুঝে যদি সমাধান না দিতে পারেন তাহলে রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই পূরণ হবে না। সুতরাং যে এলাকায় যে ভাষার প্রচলন সে এলাকার জন্য সে ভাষাভাষী ব্যক্তিকেই মনোনীত রাসূল হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। আমাদের রাসূল তো আরবি ভাষাভাষী ছিলেন কিন্তু তিনি তো আরবদের রাসূল নন, তিনি সারা জাহানের রাসূল (সূরা আ‘রাফ ৭:১৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন প্রত্যেক জাতির কাছে তাদের স্বভাষায় রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে, আমাকে প্রত্যেক লাল, কালো অর্থাৎ সারা পৃথিবীবাসীর জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ৫২১)
তাহলে আমরা কি করব? আমরা কি মানুষের কাছে দাওয়াত দেয়ার সময় আরবিতে দাওয়াত দেব, আরবিতে ওয়াজ-নসিহত করব, আরবিতে জুমু‘আর খুৎবা পড়ব না মাতৃভাষায় করব? উত্তর অত্র আয়াতেই আল্লাহ তা‘আলা বলে দিয়েছেন। রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্যই হল মানুষের কাছে দীনের কথা সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা। সুতরাং যে জাতির নিকট যে ভাষায় ব্যক্ত করলে বুঝতে পারবে তাদের কাছে সে ভাষায় ব্যক্ত করা উচিত। এর মাঝে জুমু‘আর খুৎবাও শামিল, কারণ জুমু‘আর খুৎবা হল একটি দাওয়াত, ওয়াজ এবং দীনের বিধি বিধান বর্ণনা করার অন্যতম মাধ্যম। এখানে যদি আরবিতে বলা হয় তাহলে ওয়াজ নসিহতের কোন উদ্দেশ্যই ঠিক থাকবে না? অতএব জুমু‘আর খুৎবাও রাসূলের পদ্ধতিতে মানুষের বোধগম্য মাতৃভাষায় প্রদান করতে হবে।
(فَيُضِلُّ اللّٰهُ مَنْ يَّشَا۬ءُ)
অর্থাৎ রাসূলদের দাওয়াত পাওয়া সত্ত্বেও সবাই মু’মিন-মুসলিম হবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করবেন এবং যাকে তাওফীক দেবেন সেই কেবল হিদায়াত পাবে, অন্য কেউ নয়। এ সম্পর্কে অত্র সূরার প্রথম আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক রাসূলকে স্বগোত্রীয় ভাষায় প্রেরণ করা হয়েছে।
২. জুমু‘আর খুৎবা মানুষ যে ভাষায় দিলে বুঝতে পারে সে ভাষাতেই হতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এটা আল্লাহ তাআলার অসীম মেহেরবানী যে, তিনি প্রত্যেক নবীকে তাঁর কওমের ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন। যাতে বুঝতে ও বুঝাতে সহজ হয়। হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে তাঁর কওমের ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছেন। সুতরাং তাদের উপর সত্য তো উদভাসিত হয়েই যায়, কিন্তু হিদায়াত ও গুমরাহী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ হতে পারে না। তিনি জয়যুক্ত। তাঁর প্রতিটি কাজ নিপুণতায় পরিপূর্ণ। পথভ্রষ্ট সেই হয় যে ওর যোগ্য। আবার হিদায়াত লাভ সেই করে যে ওর উপযুক্ত পাত্র। যেহেতু প্রত্যেক নবী শুধুমাত্র নিজ নিজ কওমের নিকট প্রেরিত হতেন, সেহেতু তিনি তাঁর কওমের ভাষাতেই কিতাব লাভ করতেন এবং তিনিও সেই ভাষারই লোক হতেন। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ইবনু আবদুল্লাহর রিসালত ছিল সাধারণ। তিনি ছিলেন সারা দুনিয়ার সমস্ত কওমের জন্যে রাসূল। যেমন হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে।
যেগুলি আমার পূর্ববর্তী নবীদের কাউকেও দেয়া হয়নি। ১. আমাকে এক মাসের পথের দূরত্বের প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। (এক মাসের পথের দূরত্ব থেকে শত্রুরা আমার নামে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে) । ২, আমার জন্যে (সমস্ত) যমীনকে সিজদা’র স্থান ও পবিত্র বানানো হয়েছে। ৩. আমার জন্যে গনীমতের মালকে হালাল করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কারো জন্যে হালাল ছিল না। ৪. আমার জন্যে শাফায়াত করার অনুমতি রয়েছে। ৫. প্রত্যেক নবীকে শুধুমাত্র তাঁর কওমের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। আর আমি সমস্ত মানুষের নিকট প্রেরিত হয়েছি। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
এর আরো বহু সাক্ষ্য প্রমাণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এখানে ঘোষণা করেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাওঃ হে জনমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
#এর দু’টি অর্থ হয়ঃ এক, আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবী পাঠিয়েছেন তার ওপর তার ভাষায়ই নিজের বাণী অবতীর্ণ করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন তা ভালোভাবে বুঝতে পারে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন ওজর পেশ করতে না পারে যে, আপনার পাঠানো শিক্ষা তো আমরা বুঝতে পারিনি কাজেই কেমন করে তার প্রতি ঈমান আনতে পারতাম। দুই, আল্লাহ কখনো নিছক অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবার জন্য আরব দেশে নবী পাঠিয়ে তাদের মুখ দিয়ে জাপানী বা চৈনিক ভায়ায় নিজের কালাম শুনাননি। এ ধরনের তেলেসমাতি দেখিয়ে লোকদের অভিনবত্ব প্রিয়তাকে পরিতৃপ্ত করার তুলনায় আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষা ও উপদেশ দান এবং বুঝিয়ে বলা ও সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করাই বেশী গুরুত্বের অধিকারী। এ উদ্দেশ্যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায়, যে ভাষা সে বোঝে, পয়গাম পৌঁছানো প্রয়োজন।
# সমগ্র জাতি যে ভাষা বোঝে নবী সে ভাষায় তার সমগ্র প্রচার কার্য পরিচালনা ও উপদেশ দান করা সত্ত্বেও সবাই হেদায়াত লাভ করে না। কারণ কোন বাণী কেবলমাত্র সহজবোধ্য হলেই যে, সকল শ্রোতা তা মেনে নেবে এমন কোন কথা নেই। সঠিক পথের সন্ধান লাভ ও পথভ্রষ্ট হওয়ার মূল সূত্র রয়েছে আল্লাহর হাতে। তিনি যাকে চান নিজের বাণীর সাহায্যে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং যার জন্য চান এ একই বাণীকে তার জন্য পথভ্রষ্টাতার উপকরণে পরিণত করেন।
# লোকেরা নিজে নিজেই সৎপথ লাভ করবে বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে, এটা সম্ভব নয়। কারণ তারা পুরোপুরি স্বাধীন নয়। বরং আল্লাহর কর্তৃত্বের অধীন। কিন্তু আল্লাহ নিজের এ কর্তৃত্বকে অন্ধের মতো প্রয়োগ করেন না। কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করবেন এবং যাকে ইচ্ছা প্রথভ্রষ্ট করবেন এটা তাঁর রীতি নয়। কর্তৃত্বশীল ও বিজয়ী হওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞানী এবং প্রাজ্ঞও। তাঁর কাছ থেকে কোন ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণেই হেদায়াত লাভ করে। আর যে ব্যক্তিকে সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত করে ভ্রষ্টতার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয় সে নিজেই নিজের ভ্রষ্টতাপ্রীতির কারণে এহেন আচরণ লাভের অধিকারী হয়।
তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ যে সম্প্রদায়ের মধ্যে যে নবী পাঠিয়েছেন তার উপর তার ভাষায়ই নিজের বাণী নাযিল করেছেন। এর উদ্দেশ্য ছিল, সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় যেন নবীর কথা বুঝতে পারে এবং যা নাযিল হয়েছে তাও জানতে পারে। [ইবন কাসীর] যাতে করে পরবর্তী পর্যায়ে তারা এ ধরনের কোন ওজর পেশ করতে না পারে যে, আপনার পাঠানো শিক্ষা তো আমরা বুঝতে পারিনি কাজেই কেমন করে তার প্রতি ঈমান আনতে পারতাম। এ উদ্দেশ্যে কোন জাতিকে তার নিজের ভাষায়, যে ভাষা সে বোঝে, পয়গাম পৌঁছানো প্রয়োজন।
[২] আদম ‘আলাইহিস্ সালাম জগতে প্রথম মানুষ। তিনি তাকেই মানুষের জন্য সর্বপ্রথম নবী মনোনীত করেন। এরপর পৃথিবীর জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পেয়েছে, আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে হেদায়াত ও পথ-প্রদর্শনের ব্যবস্থা ততই সম্প্রসারিত হয়েছে। প্রত্যেক যুগ ও জাতির অবস্থার উপযোগী বিধি-বিধান ও শরী’আত নাযিল হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মানব জগতের ক্রমঃবিকাশ যখন পূর্ণত্বের স্তরে উপনীত হয়েছে, তখন সাইয়্যেদুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন, ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সমগ্র বিশ্বের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। তাকে যে গ্রন্থ ও শরী’আত দান করা হয়েছে, তাতে তাকে সমগ্র বিশ্ব এবং কেয়ামত পর্যন্ত সর্বকালের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। এখানে এটা জানা আবশ্যক যে, এ আয়াতে যদিও বলা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা প্রত্যেক নবীকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছেন কিন্তু অন্য আয়াতে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আল্লাহ্ তা’আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সমস্ত মানুষের জন্যই রাসূল করে পাঠিয়েছেন। কোন জাতির সাথে সুনির্দিষ্ট করে নয়। যেমন, আল্লাহ্ বলেন, “বলুন, ‘হে মানুষ! নিশ্চয় আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহ্র রাসূল” [সূরা আল-আ’রাফঃ ১৫৮]
আরও বলেন, “কত বরকতময় তিনি! যিনি তাঁর বান্দার উপর ফুরকান নাযিল করেছেন, সৃষ্টিজগতের জন্য সতর্ককারী হতে।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ১]
আরও বলেন, “আর আমরা তো আপনাকে সমগ্র মানুষের জন্যই সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি” [সূরা সাবাঃ ২৮] ইত্যাদি আয়াতসমূহ।
যা থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত সমস্ত সৃষ্টিকুলের জন্য, প্রতিটি ভাষাভাষির জন্য। প্রতি ভাষাভাষির কাছে এ বাণী পৌঁছে দেয়া মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তব্য। [আদওয়াউল বায়ান]
[৩] এ আয়াত এ প্রমাণ বহন করে যে, যা দিয়ে আল্লাহ্র কালাম ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত স্পষ্টভাবে বুঝা যাবে, ততটুকু আরবী ভাষাজ্ঞান প্রয়োজন এবং আল্লাহ্র কাছেও প্রিয় বিষয়। কেননা এটা ব্যতীত আল্লাহ্র কাছে যা নাযিল হয়েছে তা জানা অসম্ভব। তবে যদি কেউ এমন হয় যে, তার সেটা শিক্ষা গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে না যেমন ছোটকাল থেকে এটার উপর বড় হয়েছে এবং সেটা তার প্রকৃতিতে পরিণত হয়েছে তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কারণ, তখন সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বাণী থেকে দ্বীন ও শরী’আত গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। যেমন সাহাবায়ে কিরাম গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। [সা’দী]
[৪] অর্থাৎ আমি মানুষের সুবিধার জন্য নবীগণকে তাদের ভাষায় প্রেরণ করেছি- যাতে নবীগণ আমার বিধি-বিধান উত্তমরূপে বুঝিয়ে দেন। কিন্তু হেদায়াত ও পথভ্রষ্টতা এরপরও মানুষের সাধ্যাধীন নয়। আল্লাহ্ তা’আলাই স্বীয় শক্তিবলে যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্টতায় রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দেন। সমগ্র জাতি যে ভাষা বোঝে নবী সে ভাষায় তার সমগ্র প্রচার কার্য পরিচালনা ও উপদেশ দান করা সত্ত্বেও সবাই হেদায়াত লাভ করে না। কারণ কোন বাণী কেবলমাত্র সহজবোধ্য হলেই যে, সকল শ্রোতা তা মেনে নেবে এমন কোন কথা নেই। সঠিক পথের সন্ধান লাভ ও পথভ্রষ্ট হওয়ার মূল সূত্র রয়েছে আল্লাহ্র হাতে। তিনি যাকে চান নিজের বাণীর সাহায্যে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং যার জন্য চান না সে হিদায়াত পায় না।
আয়াতের শেষে আল্লাহ্র দু’টি মহান গুণের উল্লেখ করা হয়েছে, বলা হয়েছে, তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান। এ দু’টি গুণবাচক নাম এখানে উল্লেখ করার পিছনে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। যার অর্থ, লোকেরা নিজে নিজেই সৎপথ লাভ করবে বা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে, এটা সম্ভব নয়। কোন যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই তিনি যাকে ইচ্ছা হেদায়াত দান করবেন এবং যাকে ইচ্ছা অযথা পথভ্রষ্ট করবেন এটা তাঁর রীতি নয়। কর্তৃত্বশীল ও বিজয়ী হওয়ার সাথে সাথে তিনি জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞও। তাঁর কাছ থেকে কোন ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণেই হেদায়াত লাভ করে। আর যে ব্যক্তিকে সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত করে ভ্রষ্টতার মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয় সে নিজেই নিজের ভ্রষ্টতাপ্রীতির কারণে এহেন আচরণ লাভের অধিকারী হয়। [দেখুন, সা’দী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] মহান আল্লাহ দুনিয়াবাসীর প্রতি এই অনুগ্রহ করলেন যে, তাদের হিদায়াতের জন্য কিতাব অবতীর্ণ করলেন এবং রসূলগণকে প্রেরণ করলেন এবং উক্ত অনুগ্রহকে এভাবে পরিপূর্ণতা দান করলেন যে, প্রত্যেক রসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করলেন, যাতে হিদায়াতের রাস্তা বুঝতে কোন প্রকার জটিলতা না আসে।
[২] কিন্তু উক্ত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সত্ত্বেও হিদায়াত সেই পাবে, যাকে আল্লাহ দিতে চাইবেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 4
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
And We sent not a Messenger except with the language of his people, in order that he might make (the Message) clear for them.
Every Prophet was sent with the Language of His People; Guidance or Misguidance follows the Explanation
Allah says:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلاَّ بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ
And We sent not a Messenger except with the language of his people, in order that he might make (the Message) clear for them.
Allah is Kind and Compassionate with His creation, sending Messengers to them from among them and speaking their language, so that they are able to understand the Message that the Messengers were sent with.
Allah said next,
فَيُضِلُّ اللّهُ مَن يَشَاء وَيَهْدِي مَن يَشَاء
Then Allah misleads whom He wills and guides whom He wills.
after the proof and evidence have been established for the people, Allah misguides whom He wills from the path of guidance and guides whom He wills to the truth,
وَهُوَ الْعَزِيزُ
And He is the All-Mighty,
whatever He wills occurs and whatever He does not will never occurs,
الْحَكِيمُ
the All-Wise.
in His decisions, misleading those who deserve to be misled and guiding those who deserve guidance.
This is from Allah’s wisdom with His creation, every Prophet He sent to a people spoke their language and everyone of these Prophets were only sent to their people. Muhammad bin Abdullah, Allah’s Messenger, peace and blessings be upon him, was sent to all people.
It is recorded in the Two Sahihs that Jabir said that the Messenger of Allah said,
أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ مِنَ الاَْنْبِيَاءِ قَبْلِي
نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ
وَجُعِلَتِ لِيَ الاَْرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا
وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَايِمُ وَلَمْ تُحَلَّ لاِأَحَدٍ قَبْلِي
وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ
وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّة
I have been given five things which were not given to anyone else before me.
Allah made me victorious by awe, (by His frightening my enemies) for a distance of one month’s journey.
The earth has been made for me (and for my followers) a place for worship and a purifier.
The war booty has been made lawful for me and it was not lawful for anyone else before me.
I have been given the right of Intercession (on the Day of Resurrection).
Every Prophet used to be sent to his nation only, but I have been sent to all mankind.
Allah said,
قُلْ يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّى رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا
Say:”O mankind! Verily, I am sent to you all as the Messenger of Allah… (7:158).