(Book# 759) সুরা: ইব্রাহিম সুরা:১৪ ৯-১২ নং আয়াত:- [ جَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ তাদের রসূলগণ এসেছিল; To them came their Messengers with clear proofs,] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 759)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
৯-১২ নং আয়াত:-
[ جَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ
তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ তাদের রসূলগণ এসেছিল;
To them came their Messengers with clear proofs,]
www.motaher21.net
اَلَمۡ یَاۡتِکُمۡ نَبَؤُا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ قَوۡمِ نُوۡحٍ وَّ عَادٍ وَّ ثَمُوۡدَ ۬ؕۛ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ ؕۛ لَا یَعۡلَمُہُمۡ اِلَّا اللّٰہُ ؕ جَآءَتۡہُمۡ رُسُلُہُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ فَرَدُّوۡۤا اَیۡدِیَہُمۡ فِیۡۤ اَفۡوَاہِہِمۡ وَ قَالُوۡۤا اِنَّا کَفَرۡنَا بِمَاۤ اُرۡسِلۡتُمۡ بِہٖ وَ اِنَّا لَفِیۡ شَکٍّ مِّمَّا تَدۡعُوۡنَنَاۤ اِلَیۡہِ مُرِیۡبٍ ﴿۹﴾
তোমাদের কাছে কি সংবাদ আসেনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের; নূহের সম্প্রদায়ের, আ’দের ও সামূদের এবং তাদের পরবর্তীদের? তাদের বিষয় আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানে না; তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ তাদের রসূলগণ এসেছিল; তারা তাদের হাত তাদের মুখে স্থাপন করল এবং বলল, ‘যা নিয়ে তোমরা প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা প্রত্যাখ্যান করি এবং যার প্রতি তোমরা আমাদেরকে আহবান করছ, তাতে আমরা অবশ্যই বিভ্রান্তিকর সন্দেহ পোষণ করি।’
Has there not reached you the news of those before you – the people of Noah and ‘Aad and Thamud and those after them? No one knows them but Allah . Their messengers brought them clear proofs, but they returned their hands to their mouths and said, “Indeed, we disbelieve in that with which you have been sent, and indeed we are, about that to which you invite us, in disquieting doubt.”
قَالَتۡ رُسُلُہُمۡ اَفِی اللّٰہِ شَکٌّ فَاطِرِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ یَدۡعُوۡکُمۡ لِیَغۡفِرَ لَکُمۡ مِّنۡ ذُنُوۡبِکُمۡ وَ یُؤَخِّرَکُمۡ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ؕ قَالُوۡۤا اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا ؕ تُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ تَصُدُّوۡنَا عَمَّا کَانَ یَعۡبُدُ اٰبَآؤُنَا فَاۡتُوۡنَا بِسُلۡطٰنٍ مُّبِیۡنٍ ﴿۱۰﴾
তাদের রসূলগণ বলেছিল, ‘আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সম্বন্ধে কি কোন সন্দেহ আছে? তোমাদের পাপরাশি মার্জনা করবার জন্য এবং নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ দিবার জন্য তিনি তোমাদেরকে আহবান জানাচ্ছেন।’ তারা বলল, ‘তোমরা তো আমাদেরই মত মানুষ; আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের উপাসনা করত, তোমরা তাদের উপাসনা করা হতে আমাদেরকে বিরত রাখতে চাও। সুতরাং তোমরা আমাদের কাছে কোন অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত কর।’
Their messengers said, “Can there be doubt about Allah, Creator of the heavens and earth? He invites you that He may forgive you of your sins, and He delays your death for a specified term.” They said, “You are not but men like us who wish to avert us from what our fathers were worshipping. So bring us a clear authority.”
قَالَتۡ لَہُمۡ رُسُلُہُمۡ اِنۡ نَّحۡنُ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَمُنُّ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ؕ وَ مَا کَانَ لَنَاۤ اَنۡ نَّاۡتِیَکُمۡ بِسُلۡطٰنٍ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰہِ ؕ وَ عَلَی اللّٰہِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۱﴾
তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বললেন, ‘সত্য বটে, আমরা তোমাদের মত মানুষই কিন্তু আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে অনুগ্রহ করেন এবং আল্লাহ্‌র অনুমতি ছাড়া তোমাদের কাছে প্রমাণ উপস্থিত করার সাধ্য আমাদের নেই । আর আল্লাহ্‌র উপরই মুমিনগণের নির্ভর করা উচিত।
Their messengers said to them, “We are only men like you, but Allah confers favor upon whom He wills of His servants. It has never been for us to bring you evidence except by permission of Allah . And upon Allah let the believers rely.
وَ مَا لَنَاۤ اَلَّا نَتَوَکَّلَ عَلَی اللّٰہِ وَ قَدۡ ہَدٰىنَا سُبُلَنَا ؕ وَ لَنَصۡبِرَنَّ عَلٰی مَاۤ اٰذَیۡتُمُوۡنَا ؕ وَ عَلَی اللّٰہِ فَلۡیَتَوَکَّلِ الۡمُتَوَکِّلُوۡنَ ﴿٪۱۲﴾
আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করব না কেন? তিনিই তো আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন; তোমরা আমাদেরকে যে ক্লেশ দিচ্ছ, আমরা অবশ্যই তা ধৈর্যের সাথে সহ্য করব। আর নির্ভরকারীদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।’
And why should we not rely upon Allah while He has guided us to our [good] ways. And we will surely be patient against whatever harm you should cause us. And upon Allah let those who would rely [indeed] rely.”

সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
৯-১২ নং আয়াত:-
[ جَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ
তাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শনাবলীসহ তাদের রসূলগণ এসেছিল;
To them came their Messengers with clear proofs,]
৯-১২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে‌‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের সাথে কুফরী করার কারণে ধ্বংস হয়েছে তাদের কয়েকটি জাতির কথা জানিয়ে মক্কাবাসীকে সম্বোধন করে সারা পৃথিবীবাসীর উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমাদের পূর্ববর্তী নূহ (عليه السلام) এর জাতি, ‘আদ জাতি, সামূদ জাতি ও তাদের পরে দুনিয়াতে কত জাতি এসেছিল যাদের সংখ্যা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না, এসব কথা কি তোমাদের কাছে পৌঁছেনি? তাদের কাছে রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে আগমন করেছিল, যখন তাদের কাছে রাসূলগণ দীনের দাওয়াত নিয়ে যেতেন তখন তারা হাত দ্বারা মুখ ঢেকে নিত, মুখ ফিরিয়ে নিত, রাসূলদেরকে মানুষ বলে প্রত্যাখ্যান করত এবং সন্দেহের কথা বলে উড়িয়ে দিত। সেসব জাতির মর্মান্তিক পরিণাম সূরা আ‘রাফে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তোমরাও যদি এরূপ কর তাহলে তোমাদের পরিণাম তাদের মতই হবে।

(فَرَدُّوْآ أَيْدِيَهُمْ فِيْٓ أَفْوَاهِهِمْ)

বিদ্বানগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন:

(১) তারা নিজ হাত মুখে রেখে বলত: আমাদের তো শুধু একটিই উত্তর যে, আমরা তোমাদের রিসালাতকে অস্বীকার করি।

(২) তারা নিজ আঙ্গুল দ্বারা নিজ মুখের দিকে ইঙ্গিত করে বলত চুপ থাকো এবং এ লোক যা বলে তা মেনে নিয়ো না।

(৩) তারা নিজ নিজ মুখে বিদ্রুপ করত। এ ছাড়াও অনেক অর্থ ব্যক্ত করা হয়। মোট কথা হল তারা ঈমান আনত না, বরং অহংকার করত। যেমন সূরা নূহে নূহ (عليه السلام)-এর জাতির বিবরণ দেয়া হয়েছে।

রাসূলগণ তাদের অবাধ্যতা দেখে বলতেন: আল্লাহ তা‘আলা সমন্ধে তোমাদের সংশয় রয়েছে? যদি সন্দেহ থাকে তাহলে দেখে নাও তিনি আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন। তাঁর এসব সৃষ্টি দেখার পর কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। সে আল্লাহ তা‘আলাই তোমাদেরকে তোমাদের গুনাহ থেকে পবিত্র করার জন্য এবং নির্ধারিত আয়ু পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার জন্য ঈমান ও তাওহীদের প্রতি আহ্বান করছেন। সুতরাং তোমরা কি তাঁর দাওয়াতকে অস্বীকার করবে? এসব কথা শুনে উম্মাতেরা বলত, তুমি আমাদের মত একজন মানুষ, তুমি কিভাবে আমাদেরকে হিদায়াত দিবে? মানুষ কোন দিন আল্লাহ তা‘আলার ওয়াহী ও নবুওয়াত নিয়ে আসতে পারে না, তুমি আমাদেরকে আমাদের বাপ-দাদার ধর্ম থেকে বিচ্যুত করতে চাও।

তাদের কথায় রাসূলগণ প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিলেন যে, অবশ্যই আমরা তোমাদের মত মানুষ, সুতরাং মানুষ রাসূল হতে পারে না, তোমাদের এই ধারণা ভুল। আল্লাহ তা‘আলা মানবকুলের হিদায়াতের জন্য তাদের মধ্য থেকেই কতিপয় মানুষকে নির্বাচন করে নেন এবং এ অনুগ্রহ তোমাদের মধ্য হতে আমাদের প্রতি করেছেন।

(إِلَّا بِإِذْنِ اللّٰهِ)

অর্থাৎ তোমরা কোন মু‘জিযাহ দাবি করলেই দেখাতে পারব না, কারণ মু’জিযাহ প্রদর্শন করা আমাদের এখতিয়ারে নয় বরং তা আল্লাহ তা‘আলার হাতে, তাঁর অনুমতি ছাড়া আমরা কোন মু‘জিযাহ দেখাতে পারি না, পারবোও না।

(فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ)

এখানে “বিশ্বাসীদের” বলে উদ্দেশ্য প্রথমত নাবীগণ। অর্থাৎ আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলার উপরেই ভরসা করা, যেমন পরবর্তী আয়াতে বলেছেন: আমরা আল্লাহ তা‘আলার ওপর নির্ভর করব না কেন?

আয়াতের শিক্ষা:

১. পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির কাহিনী তুলে ধরার কারণ হল তাদের থেকে শিক্ষা নেয়া।
২. রাসূলগণ মাটির তৈরি তাদের মত মানুষ তাই পূর্ববর্তীরা নাবীদেরকে মেনে নেয়নি।
৩. ভরসা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ওপর, অন্য কারো ওপর নয়।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
#হযরত মূসার (আ) ভাষণ ওপরে শেষ হয়ে গেছে। এখন সরাসরি মক্কার কাফেরদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে।

# এ শব্দগুলোর ব্যাখ্যার তাফসীরকারদের মধ্যে বেশ কিছু মতবিরোধ দেখা গেছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন। আমাদের মতে এর সবচেয়ে নিকবর্তী অর্থ তাই হতে পারে যা প্রকাশ করার জন্য আমরা বলে থাকি, “কানে হাত চাপা দিয়েছে, বা মুখে হাত চাপা দিয়েছে।” কারণ পরবর্তী বাক্যের বক্তব্যের মধ্যে পরিষ্কার অস্বীকৃতি ও এ সাথে হতবাক হয়ে যাওয়ার ভাব প্রকাশ পেয়েছে এবং এর মধ্যে কিছু ক্রোধের ভাবধারাও মিশে আছে।

# এমন সংশয় যার ফলে প্রশান্তি বিদায় নিয়েছে। সত্যের দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এ দাওয়াত যখন শুরু হয় তখন তার কারণে চতুর্দিকে অবশ্যি একটা ব্যাকুলতা, হৈ চৈ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়ে যায় ঠিকই এবং অস্বীকার ও বিরোধিতাকারীরাও ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে পূর্ণ প্রশান্তির সাথে তা অস্বীকার বা তার বিরোধিতা করতে পারে না। তারা যত প্রবলভাবেই তাকে প্রত্যাখ্যান করুক এবং যতই শক্তি প্রয়োগ করে তার বিরোধিতা করুক না কেন দাওয়াতের সত্যতা, তার ন্যায় সঙ্গত যুক্তি সমূহ, তার সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন কথা, তাহার মনোমুগ্ধকর ভাষা, তার আহবায়কের নিখুঁত চরিত্র, তার প্রতি বিশ্বাসীদের জীবনধারায় সূচিত সুস্পষ্ট বিপ্লব এবং তাদের নিজেদের সত্য কথা অনুযায়ী পরিচ্ছন্ন কার্যাবলী-এসব জিনিস মিলেমিশে অতীব কট্টর বিরোধীর মনেও অস্থিরতার তরংগ সৃষ্টি করে দেয়। সত্যের আহবায়কদেরকে যারা অস্থির ও ব্যাকুল করে দেয় তারা নিজেরাও স্থিরতা ও মানসিক প্রশান্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
# রসূলদের একথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক যুগের মুশরিকরা আল্লাহর অস্তিত্ব মানতো এবং আল্লাহ‌ পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা একথাও স্বীকার করতো। এরই ভিত্তিতে রসূলগণ বলেছেন, এরপর তোমাদের সন্দেহ থাকে কিসে? আমরা যে জিনিসের দিকে তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি তা এছাড়া আর কিছুই নয় যে, পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা আল্লাহ‌ তোমাদের বন্দেগী লাভের যথার্থ হকদার। এরপরও কি আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ আছে?

# নির্দিষ্ট সময় মানে ব্যক্তির মৃত্যুকালও হতে পারে আবার কিয়ামতও হতে পারে। জাতিসমূহের উত্থান ও পতনের ব্যাপারে বলা যেতে পারে, আল্লাহর কাছে তাদের উত্থান-পতনের সময় কাল নির্দিষ্ট হওয়ার বিষয়টি তাদের গুণগত অবস্থার ওপর নির্ভরশীল। একটি ভালো জাতি যদি তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিকৃতির সৃষ্টি করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ কমিয়ে দেয়া হয় এবং তাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়। আর একটি ভ্রষ্ট জাতি যদি নিজেদের অসৎগুণাবলীকে শুধরে নিয়ে সৎগুণাবলীতে পরিবর্তিত করে তাহলে তার কর্মের অবকাশ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এমনকি তা কিয়ামত পর্যন্তও দীর্ঘায়িত হতে পারে। এ বিষয়বস্তুর দিকেই সূরা রা’আদের ১১ আয়াতে ইঙ্গিত করে। আল্লাহ‌ বলেছেন, আল্লাহ‌ কোন জাতির অবস্থার ততক্ষন পরিবর্তন ঘটান না যতক্ষণ না সে নিজের গুণাবলীর পরিবর্তন করে।

# তাদের কথার অর্থ ছিল এই যে, তোমাকে আমরা সব দিক দিয়ে আমাদের মত একজন মানুষই দেখছি। তুমি পানাহার করো, নিদ্রা যাও, তোমার স্ত্রী ও সন্তানাদি আছে তোমার মধ্যে ক্ষুধা, পিপাসা, রোগ, শোক, ঠাণ্ডা ও গরমের তথা সব জিনিসের অনুভূতি আছে। এসব ব্যাপারে এবং সব ধরনের মানবিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে আমাদের সাথে তোমার সাদৃশ্য রয়েছে। তোমার মধ্যে এমন কোন অসাধারণত্ব দেখছি না যার ভিত্তিতে আমরা এ কথা মেনে নিতে পারি যে, তুমি আল্লাহর কাছে পৌঁছে গিয়েছো, আল্লাহ‌ তোমার সাথে কথা বলেন এবং ফেরেশতারা তোমার কাছে আসে।

# এমন কোন প্রমাণ যা আমরা চোখে দেখি এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করি। যে প্রমাণ দেখে আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, যথার্থই আল্লাহ‌ তোমাকে পাঠিয়েছেন এবং তুমি এই যে বাণী এনেছো তা আল্লাহর বাণী।

# নিঃসন্দেহে আমি তো মানুষই। তবে আল্লাহ‌ সত্যের তত্বজ্ঞান ও পূর্ণ অন্তরদৃষ্টি দান করে তোমাদের মধ্য থেকে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন। এখানে আমার সামর্থ্যর কোন ব্যাপার নেই। এ তো আল্লাহর পূর্ণ ইখতিয়ারের ব্যাপার। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যা ইচ্ছা দেন। আমার কাছে যা কিছু এসেছে তা আমি তোমাদের কাছে পাঠাতে বলতে পারি না এবং আমার কাছে যে সত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিতেও পারি না।

তাফসীরে আবুবকর জাকারিয়া বলেছেন:-
#[১] এ শব্দগুলোর ব্যাখ্যার ব্যাপারে তাফসীরকারদের মধ্যে বেশ কিছু মত দেখা গেছে। কারো কারো মতে, এর অর্থ তারা নবীদেরকে চুপ থাকতে বলেছে। [ইবন কাসীর] অথবা মুখ দিয়ে সেগুলো উড়িয়ে দিয়েছে। [ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এর অর্থ করেছেনঃ ‘তারা তাদের আঙ্গুলে কামড় দিয়েছে।’ অর্থাৎ তারা যাতে বিশ্বাসী ছিল তাতে কামড়ে পড়ে ছিল, নবী-রাসূলদের কথা শুনেনি। [কুরতুবী] কাতাদা ও মুজাহিদ এখানে এর অর্থঃ ‘রাসূলগণ যা নিয়ে এসেছে তারা তাদের কথা প্রত্যাখ্যান করেছে আর মুখে তাদের উপর মিথ্যারোপ করেছে’। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ এমন সংশয় যার ফলে প্রশান্তি বিদায় নিয়েছে। অর্থাৎ তোমরা যা নিয়ে এসেছ তাতে আমরা বিশ্বাস স্থাপন করবো না। কারণ, তোমাদের দাওয়াতের ব্যাপারে আমরা শক্তিশালী সন্দেহে নিপতিত। [ইবন কাসীর] আমরা মনে করছি তোমরা রাজত্ব অথবা দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টায় আছ। [কুরতুবী] কিন্তু পরবর্তী আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, তারা সম্ভবত: ঈমান ও তাওহীদের ব্যাপারেই সন্দেহ করছিল। [দেখুন, মুয়াসসার] কারণ, রাসূলগণ তাদের কথার উত্তরে বলেছিলেন যে, তোমরা কি আল্লাহ্‌র ব্যাপারে সন্দেহ করতে পার? অথচ তিনিই আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন।

# [১] আয়াতের অর্থে দু’টি সম্ভাবনা রয়েছে। এক. আল্লাহ্‌র অস্তিত্বে কি সন্দেহ আছে? অথচ মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি ফিতরাতই তাঁর অস্তিত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে, তাঁর স্বীকৃতি দেয়া বাধ্য করছে। সুতরাং যাদের প্রকৃতি ও স্বভাবজাত বিবেক ঠিক আছে তারা অবশ্যই তাঁর অস্তিত্বকে অবশ্যম্ভাবী মনে করে। হ্যাঁ, তবে কখনও কখনও সে সমস্ত ফিতরাতে সন্দেহ ও দ্বিধার অনুপ্রবেশ ঘটে, আর তখনই তাঁর অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য দলীল-প্রমাণাদির দিকে তাকানোর প্রয়োজন পড়ে। আর এজন্যই রাসূলগণ এমন এক কথা এরপর বলেছেন যা তাদেরকে তাঁর পরিচয় ও তাঁর অস্তিত্বের ব্যাপারে দলীল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। রাসূলগণ সেটাই তাদের উম্মতদেরকে বলেছেন যে, আমরা ঐ আল্লাহ্ সম্পর্কে বলছি যিনি “আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা”। তিনিই এ দু’টোকে সৃষ্টি করেছেন এবং কোন পূর্ণ নমূনা ব্যতীত নতুনভাবে অস্তিত্বে এনেছেন। কেননা, এ দু’টো নব্য হওয়া, সৃষ্ট হওয়া ও আজ্ঞাবহ হওয়া অত্যন্ত স্পষ্ট। সুতরাং এগুলোর জন্য একজন নির্মাতা অবশ্যই প্রয়োজন। আর তিনি আর কেউ নন, তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্‌, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, সবকিছুর ইলাহ ও মালিক। [ইবন কাসীর]

দুই. রাসূলদের একথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক যুগের মুশরিকরা আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব মানতো এবং আল্লাহ্ পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা একথাও স্বীকার করতো। এরই ভিত্তিতে রাসূলগণ বলেছেন, এরপর তোমাদের সন্দেহ থাকে কিসে? আমরা যে জিনিসের দিকে তোমাদের দাওয়াত দিচ্ছি তা এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে, পৃথিবী ও আকাশের স্রষ্টা আল্লাহ্ তোমাদের বন্দেগীলাভের যথার্থ হকদার। এরপর কি আল্লাহ্‌র ব্যাপারে তোমাদের সন্দেহ আছে? অর্থাৎ সষ্টাকে মেনে নেয়া এটা সৃষ্টিজগতের সবার কাছেই স্বীকৃত ব্যাপার। মুখে যতই অস্বীকার করুক না কেন মন তাদের তা স্বীকৃতি দিতে বাধ্য। কেননা তারা যদি স্রষ্টা না হয়ে থাকে তবে তারা সৃষ্টি, এ দুয়ের মাঝে অবস্থানের সুযোগ নেই। সুতরাং তিনি যদি একমাত্র স্রষ্টা হয়ে থাকেন, একমাত্র তাঁর ইবাদাত করতে বাধা কোথায়? [দেখুন, ইবন কাসীর]

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেনঃ “ওরা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না ওরা নিজেরাই স্রষ্টা? না কি ওরা আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় প্রত্যয়ী নয়।” [সূরা আত-তূরঃ ৩৫-৩৬]

[২] তাদের কথার অর্থ ছিল এই যে, তোমাদেরকে আমরা সব দিক দিয়ে আমাদের মত একজন মানুষই দেখছি। তোমরা পানাহার করো, নিদ্রা যাও, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানাদি আছে, তোমাদের মধ্যে ক্ষুধা, পিপাসা, রোগ, শোক, ঠাণ্ডা ও গরমের তথা সব জিনিসের অনুভূতি আছে। এসব ব্যাপারে এবং সব ধরনের মানবিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে আমাদের সাথে তোমাদের সাদৃশ্য রয়েছে। তোমাদের মধ্যে এমন কোন অসাধারণত্ব দেখছি না যার ভিত্তিতে আমরা এ কথা মেনে নিতে পারি যে, আল্লাহ্ তোমাদের সাথে কথা বলেন এবং ফেরেশতারা তোমাদের কাছে আসে। তোমরা তো আমাদের কাছে কোন মু’জিযা নিয়ে আসনি।

[৩] তোমরা এমন কোন প্রমাণ বা মু’জিযা নিয়ে আস যা আমরা চোখে দেখি এবং হাত দিয়ে স্পর্শ করি। যে প্রমাণ দেখে আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, যথার্থই আল্লাহ্ তোমাদেরকে পাঠিয়েছেন এবং তোমরা যে বাণী এনেছো তা আল্লাহ্‌র বাণী।

# নিঃসন্দেহে আমরা তো মানুষই। তবে আল্লাহ্ নবুওয়াত ও রিসালাতের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে আমাদেরকে বাছাই করে নিয়েছেন। এখানে আমাদের সামর্থ্যের কোন ব্যাপার নেই। এ তো আল্লাহ্‌র পূর্ণ ইখতিয়ারের ব্যাপার। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে যা ইচ্ছা দেন। আমাদের কাছে যা কিছু এসেছে তা আমরা তোমাদের কাছে পাঠাতে বলতে পারি না এবং আমাদের কাছে যে সত্যের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেছে তা থেকে আমরা নিজেদের চোখ বন্ধ করে নিতেও পারি না। আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন প্রমাণ বা মু’জিযা নিয়ে আসতে পারি না। যতক্ষণ না আল্লাহ্‌র কাছে আমরা তা চাইব এবং তিনি তা অনুমোদন করবেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]

# [১] অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে সবচেয়ে সঠিক ও সবচেয়ে স্পষ্ট ও প্রকাশমান পথটির দিশা দিয়েছেন। [ইবন কাসীর]

[২] এভাবে যখনই কোন নবী বা রাসূল কোন কাওমের কাছে এসেছে তখনই তাদের নেতা গোছের লোকেরা নবী-রাসূলদেরকে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে রাখত। কখনও তাদেরকে দেশান্তর করার ভয় দেখাত। আবার কখনও তাদেরকে হত্যা করতে উদ্যত হত। যেমন শু’আইব আলাইহিসসালামের কাওম তাকে বলেছিল, “তার সম্প্রদায়ের অহংকারী নেতারা বলল, ‘হে শু’আইব! আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।’ তিনি বললেন, ‘যদিও আমরা ওটাকে ঘৃণা করি তবুও?” [সূরা আল-আ’রাফঃ ৮৮]

লূত আলাইহিসসালামের জাতি তাকে বলেছিলঃ “উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বলল, ‘লূত-পরিবারকে তোমরা জনপদ থেকে বহিষ্কার কর, এরা তো এমন লোক যারা পবিত্র সাজতে চায়।” [সূরা আন-নামলঃ ৫৬]

তদ্রুপ অন্যত্রও এসেছে যে, মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও তারা অনুরূপ কথা বলেছিল, যেমনঃ “তারা আপনাকে দেশ থেকে উৎখাত করার চূড়ান্ত চেষ্টা করেছিল আপনাকে সেখান থেকে বহিষ্কার করার জন্য; তাহলে আপনার পর তারাও সেখানে অল্পকাল টিকে থাকত।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৭৬]

“স্মরণ করুন, কাফিররা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা করার বা নির্বাসিত করার জন্য এবং তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহ্ও কৌশল করেন; আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” [সূরা আল-আনফালঃ ৩০]

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
# ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বলেন, এখানে হযরত মূসার (আঃ) অবশিষ্ট ওয়াযের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর নিয়ামতরাজির কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে কতই না কঠিন শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং কিভাবেই না তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” ইবনু জারীরের (রঃ) এই উক্তির ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। বাহ্যিক ভাবে তো এটা জানা যাচ্ছে যে, হযরত মূসার (আঃ) ঐ ওয়ায শেষ হয়ে গেছে এবং এখন কুরআন কারীমের নতুন বর্ণনা শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে যে, আ’দ ও সামূদের ঘটনা তাওরাতে ছিলই না। তা হলে এই কথাগুলিও যদি হযরত মূসারই (আঃ) কথা ধরে নেয়া হয় তবে এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তাদের ঘটনাবলী ইয়াহূদীদের সামনে বর্ণিত হয়েছিল এবং এ দুটো ঘটনাও তাওরাতে। ছিল। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে। মোট কথা, ঐ লোকদের এবং ওদের মত আরো বহু লোকের ঘটনাবলী কুরআন কারীমে আমাদের সামনে বর্ণিত হয়েছে যে, তাদের কাছে আল্লাহর নবীগণ তাঁর নিদর্শনাবলী এবং তাঁর প্রদত্ত মু’জিযা সমূহ নিয়ে আগমন করেছিলেন। তাদের সংখ্যার জ্ঞান মহা মহিমান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। হযরত আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, বংশক্রম বর্ণনাকারীরা ভুল কথক। এমনও বহু উম্মত গত হয়েছে। যাদের সম্পর্কে অবগতি আল্লাহ ব্যতীত আর কারো নেই। উরওয়া ইবনু যুহাইর (রঃ) বলেন, সা’দ ইবনু আদনানের পরবর্তী নসব নামা সঠিকভাবে কেউ জানে না। তিনি নিজের হাত খানা মুখের উপর নিয়ে গিয়ে বলেনঃ “একটি অর্থ এটা যে, তারা রাসূলদের মুখ বন্ধ করতে শুরু করে। আর এক অর্থ এটাও যে, তারা তাদের নিজেদেরহাত নিজেদের মুখের উপর রেখে বলেঃ রাসূল যা বলছেন তা সব মিথ্যা। এও এক অর্থ হতে পারে যে, তারা নিজেদের মুখে তাঁদের মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে শুরু করে। এটাও একটা অর্থ হতে পারে যে, তারা রাসূলদের কথার জবাব দিতে না পেরে নীরবতা অবলম্বন করতঃ অঙ্গুলীগুলি মুখের উপর রেখে দেয়। আবার এ অর্থ হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এখানে শব্দটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকেঃ (আরবি) এবং তারা (আরবি) দ্বারা (আরবি) অর্থ নিয়ে থাকে। কবিদের কবিতাতেও এর প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন একজন কবি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি ওর ব্যাপারে লাকীত ও তার দল হতে বিমুখ হচ্ছি কিন্তু আমি সানবাস হতে বিমুখ হচ্ছি না।”

আর মুজাহিদের (রঃ) উক্তি অনুসারে এর পরবর্তী বাক্যটি ওরই তাফসীর বা ব্যাখ্যা। এ কথাও বলা হয়েছে যে, তারা রাসূলের উপর ক্রোধে তাদের অঙ্গুলিগুলি তাদের মুখে পুরে দেয়। যেমন এক জায়গায় মুনাফিকদের সম্পর্কে অল্লিাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন তারা নিভৃতে থাকে তখন তোমাদের উপর ক্রোধে তাদের। অঙ্গুলির অগ্রভাগ কামড়াতে থাকে।” (৩:১১৯) এই অর্থও হবে যে, আল্লাহর কালাম শুনে বিস্মিত হয়ে তারা তাদের হাতগুলি তাদের মুখে রেখে দেয় এবং বলেঃ “আমরা তো তোমার রিসালাত অস্বীকারকারী। আমরা তোমাকে সত্যবাদী মনে করি না। বরং আমরা কঠিন সন্দেহের মধ্যে রয়েছি।”

#

আল্লাহ তাআলা এখানে রাসূলদের এবং তাঁদের সম্প্রদায়ের কাফিরদের কথাবার্তা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন। তাঁদের কওম আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে সন্দেহ ও সংশয় প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবাদে রাসূলগণ তাদেরকে বলেনঃ ‘আল্লাহর ইবাদতের ব্যাপারে সন্দেহ? অর্থাৎ তার অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ কেমন? স্বভাব ও প্রকৃতি তো তার অস্তিত্বের ন্যায় সাক্ষী! মানুষের বুনিয়াদের মধ্যে তার অস্তিত্বের স্বীকারোক্তি বিদ্যমান। সুস্থির বিবেক তার অস্তিত্ব মানতে বাধ্য। আচ্ছা, যদি দলীল ছাড়া শান্তি না পাও তবে চিন্তা করে দেখ তো এই আসমান ও যমীন কিরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। কোন কিছুর অস্তিত্বের জন্যে ওকে অস্তিত্বে আনয়নকারী মওজুদ থাকা জরুরী। তাহলে যিনি এই আসমান ও যমীনকে বিনা নমুনায় সৃষ্টি করেছেন তিনিই হচ্ছেন এক ও অংশীবিহীন আল্লাহ। এই জগতটা নতুন, অনুগত ও সৃষ্ট হওয়া প্রকাশমান। এর দ্বারা কি এই মোটা ও সহজ কথাটি বুঝে আসে না যে, এর কারিগর এবং এর সৃষ্টিকর্তা একজন রয়েছেন? আর তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। তিনিই হচ্ছেন প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিকর্তা মালিক ও প্রকৃত উপাস্য। তাঁর উলুহিয়্যাত ও একত্ববাদে তোমাদের সন্দেহ রয়েছে কি? যখন সমস্ত প্রাণী, জীবজন্তু এবং বস্তুর সৃষ্টিকর্তা ও আবিস্কারক তিনিই, তখন একমাত্র তিনিই ইবাদতের যোগ্য হবেন না কেন? অধিকাংশ উম্মতই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বীকারকারী ছিল। তারা অন্যদের যে, ইবাদত করতো তা শুধু মাধ্যম মনে করে যে, তাদের মাধ্যমেই তারা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করবে। এ জন্যে আল্লাহর রাসূলগণ তাদেরকে ঐ সব দেবতার ইবাদত করতে নিষেধ করতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাঁর দিকে আহবান করছেন যে, তিনি পরকালে তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তোমাদেরকে অবকাশ। দিবেন। প্রত্যেক মর্যাদাবানকে তিনি মর্যাদা দান করবেন।” তখন তাঁদের উম্মতগণ প্রথম পর্যায়টা মেনে নেয়ার পর জবাব দেয়ঃ “আমরা তোমাদের রিসালতকে কি করে মেনে নিতে পারি? তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ। আচ্ছা,যদি তোমরা তোমাদের কথায় সত্যবাদীই হও তবে বড় রকমের মু’জিযা আমাদের সামনে পেশ কর যা মানবীয় শক্তির বাইরে?” তাদের এ কথার জবাবে রাসূলগণ বললেনঃ “এ কথা তো সত্যই যে, আমরা তোমাদের মতই মানুষ। তবে রিসালাত ও নুবওয়ত আল্লাহর একটা দান। তা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করে থাকেন। মানুষ হওয়াটা রিসালতের প্রতিকূল নয়। আর যে জিনিস তোমরা আমাদের কাছে দেখতে চাচ্ছ সে সম্পর্কেও জেনে রেখো যে, ওটা আমাদের অধিকার বা ক্ষমতার জিনিস নয়। তবে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো। যদি তিনি আমাদের প্রার্থনা কবুল করেন তবে আমরা অবশ্যই তা তোমাদের দেখাবো। মুমিনরা তো প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলার উপরই ভরসা করে থাকে। আর বিশেষ করে আমরা তাঁর উপর খুব বেশী ভরসা করি। কেননা, তিনি আমাদেরকে সমস্ত পথের মধ্যে সর্বোত্তম পথের সন্ধান দিয়েছেন। তোমরা যত পার আমাদেরকে কষ্ট দিতে থাকো, কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমাদের হাত থেকে ভরসার অঞ্চল ছুটে যাবে না। ভরসাকারী দলের জন্যে আল্লাহ তাআলার ভরসাই যথেষ্ট।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 9-12
جَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ

To them came their Messengers with clear proofs,
Earlier Nations disbelieved in Their Prophets

Allah says:

أَلَمْ يَأْتِكُمْ نَبَأُ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ قَوْمِ نُوحٍ وَعَادٍ وَثَمُودَ وَالَّذِينَ مِن بَعْدِهِمْ لَا يَعْلَمُهُمْ إِلاَّ اللّهُ

Has not the news reached you, of those before you, the people of Nuh, `Ad, and Thamud, and those after them! None knows them but Allah.

Allah narrated to this Ummah (followers of Muhammad) the stories of the people of Prophet Nuh, `Ad and Thamud, and other ancient nations that belied their Messengers. Only Allah knows the count of these nations,

جَاءتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ

To them came their Messengers with clear proofs,

they brought them evidences and plain, tremendous proofs and signs.

Ibn Ishaq reported that Amr bin Maymun said that Abdullah said about Allah’s statement,
لَا يَعْلَمُهُمْ إِلااَّ اللّهُ
(None knows them but Allah),

“The genealogists utter lies.”

This is why Urwah bin Az-Zubayr said,

“We did not find anyone who knows the forefathers of Ma`dd bin Adnan.”
Meaning of, “They put Their Hands in Their Mouths”

Allah said next,

فَرَدُّواْ أَيْدِيَهُمْ فِي أَفْوَاهِهِمْ

but they put their hands in their mouths,

It is said that they pointed to the Messengers’ mouths asking them to stop calling them to Allah, the Exalted and Most Honored.

It is also said that it means, they placed their hands on their mouths in denial of the Messengers.

It was also said that it means that they did not answer the call of the Messengers, or they were biting their hands in rage.

Mujahid, Muhammad bin Ka`b and Qatadah said that;

they belied the Messengers and refuted their call with their mouths.

I (Ibn Kathir) say that Mujahid’s Tafsir is supported by the completion of the narrative,

وَقَالُواْ إِنَّا كَفَرْنَا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ وَإِنَّا لَفِي شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُونَنَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ

and said:”Verily, we disbelieve in that with which you have been sent, and we are really in grave doubt as to that to which you invite us.”

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said,

“When they heard Allah’s Word, they were amazed and placed their hands on their mouths,”

وَقَالُواْ إِنَّا كَفَرْنَا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ

and said:”Verily, we disbelieve in that with which you have been sent.”

They said, We do not believe what you brought us, and have strong doubt in its authenticity.
The Argument between the Prophets and the Disbelievers

Allah says:

قَالَتْ رُسُلُهُمْ

Their Messengers said:

Allah narrates to us the arguments that ensued between the disbelievers and their Messengers. When their nations doubted the Message of worshipping Allah alone without partners, the Messengers said,

أَفِي اللّهِ شَكٌّ

(What!) Can there be a doubt about Allah…

about His Lordship and having the exclusive right to be worshipped alone, being the only Creator of all creatures!

فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ

the Creator of the heavens and the earth!

Verily, none besides Allah is worthy of worship, alone without partners with Him. Most nations were, and still are, affirming the existence of the Creator, but they call upon intermediaries besides Him whom they think will benefit them or bring them closer to Allah.

Their Messengers said to them,

يَدْعُوكُمْ لِيَغْفِرَ لَكُم مِّن ذُنُوبِكُمْ

He calls you that He may forgive you of your sins, (in the Hereafter),

وَيُوَخِّرَكُمْ إِلَى أَجَلٍ مُّسَـمًّى

and give you respite for a term appointed,

in this worldly life.

Allah said in other Ayat,

وَأَنِ اسْتَغْفِرُواْ رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُواْ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُوْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ

Seek the forgiveness of your Lord, and turn to Him in repentance, that He may grant you good enjoyment, for a term appointed, and bestow His abounding grace to every owner of grace. (10:3)

However, their nations went on arguing against their Prophethood, after they had to submit to the first evidence (that Allah Alone created everything).
Disbelievers reject Prophethood because the Messengers were Humans!

Their nations said,

قَالُواْ إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا

They said:”You are no more than human beings like us!

so why should we follow you just because you say so, even though we did not witness a miracle by your hands,

تُرِيدُونَ أَن تَصُدُّونَا عَمَّا كَانَ يَعْبُدُ ابَأوُنَا

You wish to turn us away from what our fathers used to worship.

فَأْتُونَا بِسُلْطَانٍ مُّبِينٍ

Then bring us a clear authority.

i.e. a miracle of our choice.
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِن نَّحْنُ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ

Their Messengers said to them:”We are no more than human beings like you…”

affirming that truly, they were only human being like their nations,

وَلَـكِنَّ اللّهَ يَمُنُّ عَلَى مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ

but Allah bestows His grace to whom He wills of His servants,

with Prophethood and Messengership which is His choice,

وَمَا كَانَ لَنَا أَن نَّأْتِيَكُم بِسُلْطَانٍ

It is not ours to bring you an authority,

according to your choice,

إِلاَّ بِإِذْنِ اللّهِ

except by the permission of Allah,

after we beg Him and He provides us with a miracle,

وَعلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُوْمِنُونَ

And in Allah (alone) let the believers put their trust.

in all their affairs.

Their Messengers said to them next.
وَمَا لَنَا أَلاَّ نَتَوَكَّلَ عَلَى اللّهِ

And why should we not put our trust in Allah,

after He had guided us to the best, most clear and plain way,

وَقَدْ هَدَانَا سُبُلَنَا

while He indeed has guided us in our ways!

وَلَنَصْبِرَنَّ عَلَى مَا اذَيْتُمُونَا

And we shall certainly bear with patience all the hurt you may cause us,

such as foolish actions and abusive statements,

وَعَلَى اللّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ

and in Allah (alone) let those who trust, put their trust.

Leave a Reply