(Book# 772) সুরা: ইব্রাহিম সুরা:১৪ ৪৭-৪৮ নং আয়াত:- [ فَلَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ সুতরাং তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন; So think not that Allah will fail to keep His promise!] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 772)
সুরা: ইব্রাহিম
সুরা:১৪
৪৭-৪৮ নং আয়াত:-
[ فَلَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ
সুতরাং তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন;
So think not that Allah will fail to keep His promise!]
www.motaher21.net
فَلَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰہَ مُخۡلِفَ وَعۡدِہٖ رُسُلَہٗ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ ذُو انۡتِقَامٍ ﴿ؕ۴۷﴾
সুতরাং তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন; আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী।
So never think that Allah will fail in His promise to His messengers. Indeed, Allah is Exalted in Might and Owner of Retribution.
یَوۡمَ تُبَدَّلُ الۡاَرۡضُ غَیۡرَ الۡاَرۡضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوۡا لِلّٰہِ الۡوَاحِدِ
যেদিন এ যমীন পরিবর্তিত হয়ে অন্য যমীন হবে এবং আসমানসমূহও; আর মানুষ উন্মুক্তভাবে উপস্থিত হবে এক, একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ্‌র সামনে।
[It will be] on the Day the earth will be replaced by another earth, and the heavens [as well], and all creatures will come out before Allah, the One, the Prevailing.

৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা নিজের প্রতিশ্রুতিকে সুদৃঢ় ও মজবুত করে বলছেন: দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলদের সাহায্য করার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন তার বরখেলাফ হবে না। তাঁর ওপর কেউ জয়যুক্ত নয়, তিনি সবার ওপর জয়যুক্ত। তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হয়, তিনি যা চান তাই হয়। তিনি অবশ্যই কাফিরদেরকে শাস্তি দেবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ اللّٰهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيْعَادَ)

“নিশ্চয় আল্লাহ তার ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।” (সূরা আলি-ইমরান-৩:৩৯)

পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছে যে, কিয়ামতের দিন জমিন পরিবর্তন হয়ে অন্য জমিন হয়ে যাবে, এ আকাশ থাকবে না, পরিবর্তন হয়ে যাবে।

ইমাম শাওক্বানী (রহঃ) বলেন: পরিবর্তন দু’ভাবে হতে পারে (১) গুণগত দিক দিয়ে, (২) পদার্থগত দিক দিয়ে।

উক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি হাদীসে বলেন: “কিয়ামতের দিন মানুষ সাদা ও লালচে রঙের ভূমিতে একত্রিত হবে, যা ময়দার রুটির মত হবে, তাতে কারো কোন চিহ্ন থাকবেনা। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৯০)

আয়িশাহ  হতে বর্ণিত তিনিই সর্বপ্রথম এ আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেন। তিনি বলেন: যেদিন আকাশ-জমিন পরিবর্তন হয়ে যাবে সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেন: পুলসিরাতের ওপর। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৯০)

এ সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদীস ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) তাঁর তাফসীরে নিয়ে এসেছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওয়াদা বাস্তবায়ন করবেনই, তা ভঙ্গ করবেন না।
২. কিয়ামতের দিন আকাশ ও পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে যাবে।
৩. সেদিন আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো কোন মালিকানা থাকবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা নিজের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিষ্ঠিত ও দৃঢ় করছেন যে, দুনিয়া ও আখেরাতে স্বীয় রাসূলদেরকে সাহায্য করার তিনি যে ওয়াদা করেছেন তার তিনি কখনো ব্যতিক্রম করবেন না। তাঁর উপর কেউ জয়যুক্ত নয়, তিনি সবার উপর জয়যুক্ত। তাঁর ইচ্ছা অপূর্ণ থাকে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা হয়েই যায়, তিনি কাফিরদের উপর তাদের কুফরীর প্রতিশোধ গ্রহণ অবশ্যই করবেন। কিয়ামতের দিন তাদেরকে দুঃখ ও আফসোস করতে হবে। সে দিন যমীন হবে বটে, কিন্তু এটা নয়, বরং অন্যটা। অনুরূপভাবে আসমানও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। হযরত সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এমন সাদা পরিষ্কার যমীনের উপর হাশর করা হবে যেমন ময়দার সাদা রুটী যার উপর কোন দাগ বা চিহ্ন থাকবে না। ( এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনিই সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহকে (সঃ) এই আয়াত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেনঃ “আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে দিন লোকেরা কোথায় থাকবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “(তারা সেদিন) পুলসিরাতের উপর থাকবে।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আয়েশাকে (রাঃ) তাঁর প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেনঃ “তুমি আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে যা আমার উম্মতের অন্য কেউ জিজ্ঞেস করেনি। (জেনে রেখো যে, ঐ দিন লোকেরা পুলসিরাতের উপর থাকবে।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) (আরবি) (৩৯:৬৭) এই আয়াতের ব্যাপারেও প্রশ্ন করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসুল! সেই দিন লোকেরা কোথায় থাকবে?” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) উত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ “সেদিন তারা জাহান্নামের পিঠের উপর (অর্থাৎ পুলসিরাতের উপর) থাকবে।” রাসূলুল্লাহর (সঃ) আযাদকৃত ক্রীতদাস হযরত সাওবান (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট দাড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন ইয়াহুদী লেম আগমন করে এবং বলেঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! আসসালামু আলাইকা (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) ।” আমি তখন তাকে এতো জোরে ধাক্কা মারি যে, সে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন সে আমাকে বলেঃ “আমাকে ধাক্কা মারলে কেন?” আমি উত্তরে বলিঃ বে আদব! ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) না বলে তার নাম নিলে? সে বললোঃ “তাঁর পরিবারের লোক তার যে নাম রেখেছে আমরা তো তাকে সেই নামেই ডাকবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমার পরিবারের লোক আমার নাম মুহাম্মদই (সঃ) রেখেছে বটে।” ইয়াহূদী বললোঃ “আমি আপনাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেনঃ “আমার জবাবে তোমার কোন উপকার হবে কি?” সে উত্তরে বলেঃ “শুনে তো নিই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) হাতের যে একটি কুটা (খড়কুটা) ছিল তা মাটিতে ঘুরতে। ঘুরাতে তিনি বলেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে, জিজ্ঞেস কর।” সে জিজ্ঞেস করলোঃ যখন আকাশ পরিবর্তিত হয়ে যাবে তখন লোকেরা কোথায় থাকবে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “পুলসিরাতের নিকট অন্ধকারের মধ্যে।” সে আবার জিজ্ঞেস করলো “সর্বপ্রথম পুলসিরাত দিয়ে পার হবে কে?” তিনি উত্তর দেনঃ “দরিদ্র মুহাজিরগণ।” সে পুনরায় প্রশ্ন করেঃ “তাদেরকে সর্বপ্রথম কি উপটৌকন দেয়া হবে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “অধিক পরিমাণে মাছের কলিজা।” সে আবার জিজ্ঞেস করেঃ “এরপর তারা কি খাদ্য পাবে?” তিনি উত্তর দেনঃ “জান্নাতী বলদ যবাহ করা হবে, যেগুলি জান্নাতের আশে পাশে চরতো।” সে পুনরায় জিজ্ঞেস করেঃ “তারা পান করার জন্যে কি পাবে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “সালসাবীল নামক জান্নাতী নহরের পানি।” ইয়াহুদী তখন বললোঃ “আপনার সমস্ত জবাবই সঠিক। আচ্ছা, আপনাকে আমি আর একটি কথা জিজ্ঞেস করবো যা শুধুমাত্র নবী জানেন এবং দুনিয়ার আর দু’একজন লোকে জানে।” তিনি বললেনঃ “আমার জবাব তোমার কোন উপকারে আসবে কি?” সে জবাবে বললোঃ “কানে শুনে তো নিবো।” অতঃপর সে বললোঃ “সন্তান (পুত্র সন্তান ও কন্যা সন্তান) সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? (অর্থাৎ কখনো পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে এবং কখন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে)?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “পুরুষের বিশেষ পানি (বীর্য) সাদা বর্ণের হয় এবং নারীর বিশেষ পানি (বীর্য) হলদে রং এর হয়। যখন এই দু’পানি একত্রিত হয় তখন যদি পুরুষের পানি (বীর্য) অধিক হয় তবে আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে থাকে। আর যদি নারীর পানি বেশী হয় তবে আল্লাহ তাআলার হুকুমে কন্যা সন্তান জন্মে।” এই উত্তর শুনে ইয়াহুদী বলে উঠলোঃ “নিশ্চয় আপনি সত্য কথা বলেছেন এবং অবশ্যই আপনি নবী।” অতঃপর ইয়াহূদী চলে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যখন এই ব্যক্তি আমাকে প্রশ্ন করে তখন আমার উত্তর জানা ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তাআলা সাথে সাথে আমাকে উত্তর জানিয়ে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একজন ইয়াহূদী আলেম রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেঃ “আচ্ছা বলুন তো, আল্লাহ তাআলা যে তার কিতাবে বলেন (আরবি) (অর্থাৎ যে দিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও), তাহলে সারা মাখলুকাত ঐ সময় কোথায় থাকবে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ঐ সময় সারা মাখলুকাত আল্লাহর মেহমান বা অতিথি হবে। সুতরাং তার কাছে যা কিছু রয়েছে তা তাদেরকে তাঁকে অসমর্থ করবে না (অর্থাৎ) তাঁর কোন কিছুরই অভাব হবে না।” (এ হাদীসটি আবু জাফর ইবনু জারীর তাবারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আমর ইবনু মায়মূন (রাঃ) বলেন, এই যমীন পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং তা হবে সাদা রূপার মত, যাতে থাকবে না কোন রক্তারক্তি এবং থাকবে কোন পাপ কর্ম। চক্ষুগুলি তেজ হবে এবং আহ্বানকারীর শব্দ তাদের কানে অসিবে। সবাই তারা শূন্য পায়ে ও উলঙ্গ দেহে দাঁড়িয়ে থাকবে যেমনভাবে তারা সৃষ্ট হয়েছিল এবং তাদের দেহের ঘর্ম বগার মত হয়ে যাবে (অর্থাৎ তাদের নাক পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।” (এ টা ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতেও অনুরূপ বর্ণনা রয়েছে। একটি মার’ হাদীসে আছে যে, ঐ যমীন সাদা রং -এর হবে। তাতে খুনাখুনি ও কোন পাপের কাজ হবে না। (এ হাদীসকে মারফু’কারী মাত্র একজন বর্ণনাকারী, অর্থাৎ জারীর ইবনু আইয়্যব (রাঃ) তিনি সবল বর্ণনাকারীগণ)

হযরত যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইয়াহদীদের কাছে তোক প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি তাদের কাছে কেন লোক পাঠালাম তা তোমরা জান কি?” উত্তরে তারা বলেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন।” তিনি তখন বললেনঃ “আমি তাদেরকে আল্লাহ পাকের (আরবি) এই উক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে তাদের কাছে লোক পাঠালাম। জেনে রেখো যে, সেদিন যমীন রৌপ্যের ন্যায় সাদা বর্ণ ধারণ করবে।” অতঃপর তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তরে বলেঃ ঐ দিন যমীন ময়দার ন্যায় সাদা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। পূর্ববর্তী গুরুজনদের আরো কয়েকজন হতে অনুরূপ রিওয়াইয়াত রয়েছে যে, সেদিন যমীন হবে রৌপ্যের)

হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, সেই দিন যমীন হবে রৌপ্যের এবং আসমান হবে স্বর্ণের। হযরত উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেন, সেই দিন আসমান বাগান হয়ে থাকবে। মুহাম্মদ ইবনু কায়েস (রঃ) বলেন, ঐ দিন যমীন রুটী হয়ে যাবে এবং মুমিনরা তাদের পায়ের নীচেই ওকে খাদ্য হিসেবে পাবে। হযরত সাঈদ ইবনু জবাইর (রঃ) অনরূপই বলেন যে, সেদিন যমীন রুটী হয়ে থাকবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, কিয়ামতের দিন সারা যমীন আগুন হয়ে যাবে। এর পিছনে থাকবে জান্নাত, যার নিয়ামতরাশি বাইরে থেকেই দেখা যাবে। জনগণ ঘামের মধ্যে ডুবে থাকবে। তখন পর্যন্ত হিসাব-নিকাশ শুরু হয়নি। সেই দিনের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে মানুষ এতো ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে যে, তাদের দেহের ঘাম প্রথমতঃ তাদের পায়ে থাকবে, অতঃপর ক্রমে ক্রমে বৃদ্ধি পেতে পেতে তাদের নাক পর্যন্ত পৌছে যাবে। হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন, আসমান (সে দিন বাগানে রূপান্তরিত হবে, সমুদ্র আগুন হয়ে যাবে এবং যমীনও পরিবর্তিত হয়ে যাবে। সুনানে আবি দাউদে রয়েছেঃ “সমুদ্রের সফর যেন শুধু মাত্র গাজী, হাজী এবং উমরাকারীই করে। কেননা, সমুদ্রের নীচে আগুন রয়েছে এবং আগুনের নীচে সমুদ্র রয়েছে।”

সূরের (শিঙ্গার) মাশহুর হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যমীনকে সমতল করে উকাযী চামড়ার মত টানবেন যাতে কোন উঁচু নীচু থাকবে না। তারপর একটি মাত্র আওয়াজের সাথে সাথে সমস্ত মাখলুক ঐ নতুন যমীনে ছড়িয়ে পড়বে।

ইরশাদ হচ্ছেঃ “সমস্ত মাখলূক (কবর থেকে বেরিয়ে) আল্লাহর সামনে হাযির হয়ে যাবে, যিনি এক ও পরাক্রমশালী। সবারই স্কন্ধ তাঁর সামনে অবনত থাকে এবং সবাই হয়ে যায় তাঁর অনুগত ও বাধ্য।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর
# এ বাক্যে আপাত দৃষ্টে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আসলে উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁর বিরোধীদেরকে শুনানো। তাদেরকে বলা হচ্ছে, আল্লাহ‌ পূর্বেই তাঁর রসূলেদের সাথে যে ওয়াদা করেছিলেন তা পূর্ণ করেছেন এবং তাদের বিরোধীদের কে লাঞ্ছিত করেছেন। আর এখনও নিজের রসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর সাথে তিনি যে ওয়াদা করছেন তা পূর্ণ করবেন এবং যারা এর বিরোধিতা করছে তাদেরকে বিধ্বস্ত করে দেবেন।
# এ আয়াত এবং কুরআনের অন্যান্য বিভিন্ন ইশারা থেকে জানা যায়, কিয়ামতের সময় পৃথিবী ও আকাশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে না। বরং শুধুমাত্র বর্তমান প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ওলট পালট করে দেয়া হবে। এরপর প্রথম শিংগা ধ্বনি ও শেষ শিংগা ধ্বনির মাঝখানে একটি বিশেষ সময়কালের মধ্যে-যা একমাত্র আল্লাহই জানেন-পৃথিবী ও আকাশের বর্তমান কাঠামো বদলে দেয়া হবে এবং ভিন্ন একটি প্রাকৃতিক অবকাঠামো ভিন্ন একটি প্রাকৃতিক আইনসহ তৈরী করা হবে। সেটিই হবে পরলোক। তারপর শেষ শিংগাধ্বনির সাথে সাথেই আদমের সৃষ্টির পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম নিয়েছিল তাদের সবাইকে পুনর্বার জীবিত করা হবে এবং তারা আল্লাহর সামনে উপস্থাপিত হবে। কুরআনের ভাষায় এরই নাম হাশর। এর শাব্দিক অর্থ এক জায়গায় জমা ও একত্র করা। কুরআনের ইশারা ইঙ্গিত ও হাদীসের সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয় যে, পৃথিবীর এ সরযমীনেই হাশর অনুষ্ঠিত হবে, এখানেই আদালত কায়েম হবে, এখানেই মীযান তথা তুলাদণ্ড বসানো হবে এবং পৃথিবীর বিষয়াবলী পৃথিবীর মাটিতেই চুকিয়ে দেয়া হবে। তাছাড়া কুরআন ও হাদীস থেকে একথাও প্রমাণ হয় যে, আমাদের সেই দ্বিতীয় জীবনটি-যেখানে এসব ব্যাপার সংঘটিত হবে- নিছক আত্মিক জীবন হবে না। বরং আজ আমরা যেভাবে দেহ ও আত্মা সহকারে জীবিত আছি সেখানেও আমাদের তেমনিভাবে জীবিত করা হবে। প্রত্যেক ব্যক্তি যে ব্যক্তিসত্তা সহকারে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিল সেখানে ঠিক সেই একই ব্যক্তিসত্তা সহকারে উপস্থিত হবে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Ibrahim
Sura: 14
Verses :- 47-48
[ فَلَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ

So think not that Allah will fail to keep His promise!]
www.motaher21.net
Allah never breaks a Promise

Allah affirms His promise,

فَلَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَهُ

So think not that Allah will fail to keep His promise to His Messengers.

His promise to grant them victory in this life and on the Day when the Witnesses shall come forth. Allah affirms that He is All-Able and that nothing He wills escapes His power and none can resist Him.

إِنَّ اللّهَ عَزِيزٌ ذُو انْتِقَامٍ

Certainly, Allah is All-Mighty, All-Able of Retribution.

Allah affirms that He is Able to exact retribution from those who disbelieve in Him and deny Him,

وَيْلٌ يَوْمَيِذٍ لِّلْمُكَذِّبِينَ

Woe that Day to the deniers! (77:15)

Allah said here.
يَوْمَ تُبَدَّلُ الَارْضُ غَيْرَ الَارْضِ وَالسَّمَاوَاتُ

On the Day when the earth will be changed to another earth and so will be the heavens,

meaning, His promise shall come to pass on the Day when the earth will be changed to an earth other than this earth that we know and recognize.

It is recorded in the Two Sahihs that Sahl bin Sa`d said that the Messenger of Allah said,

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ النَّقِيِّ لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لاَِحَد

On the Day of Resurrection, the people will be gathered on a white (barren), flat earth just like the wheat bread, it has no recognizable features for anyone.

Imam Ahmad recorded that A’ishah said,

“I was the first among all people who asked the Messenger of Allah about this Ayah,
يَوْمَ تُبَدَّلُ الَارْضُ غَيْرَ الَارْضِ وَالسَّمَاوَاتُ
(On the Day when the earth will be changed to another earth and so will be the heavens), saying, `O Allah’s Messenger! Where will the people be then?’

He said,

عَلَى الصِّرَاط

On the Sirat.”

Muslim, but not Al-Bukhari, collected this Hadith.

At-Tirmidhi and Ibn Majah also recorded it, and At-Tirmidhi said “Hasan Sahih”.

Imam Muslim bin Al-Hajjaj recorded in his Sahih that Thawban the servant of the Messenger of Allah said,

“I was standing next to the Messenger of Allah when a Jewish rabbi came to him and said, `Peace be to you, O Muhammad.’

I pushed him with such a force that almost caused him to fall down and he asked me why I did that.

I said, `Why did you not say, `O Messenger of Allah!’

The Jew said, `We call him by the name which his family gave him.’

The Messenger of Allah said,

إِنَّ اسْمِي مُحَمَّدٌ الَّذِي سَمَّانِي بِهِ أهْلِي

Muhammad is indeed the name which my family gave me.

The Jew said, `I came to ask you about something.’

The Messenger of Allah replied,

أَيَنْفَعُكَ شَيْيًا إِنْ حَدَّثْتُكَ

Would it benefit you if I replied to your question?

He said, `I will hear it with my ear.’

The Messenger of Allah poked the ground with a staff he had and said,
سَل
(Ask).

The Jew said, `Where will the people be when the earth will be changed to another earth and so will the heavens?’

The Messenger of Allah said,

هُمْ فِي الظُّلْمَةِ دُونَ الْجَسْر

In the darkness before the Bridge (Jasr).

قال:فمن أول الناس إجازة ؟

He asked, `Who will be the first to pass it?’

فقال:
فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِين

He said, The poor emigrants (Muhajirin).

فقال اليهودي:فما تحفتهم حين يدخلون الجنة؟

He asked, `What will their (refreshment) be when they enter Paradise?’

قال:
زِيَادَةُ كَبِدِ النُّون

He said, The caul of fish liver.

قال:فما غذاؤهم في إثرها؟

He asked, `What will they have after that?’

قال:
يُنْحَرُ لَهُمْ ثَوْرُ الْجَنَّةِ الَّذِي كَانَ يَأْكُلُ مِنْ أَطْرَافِهَا

He said, A bull of Paradise which grazed through its pathways will be slaughtered for them.

قال:فما شرابهم عليه؟

He asked, `From what will they drink?’

قال:
مِنْ عَيْنٍ فِيهَا تُسَمَّى سَلْسَبِيلً

He said, From a fountain whose name is Salsabil.

قال:صدقت،

قال:وجئت أسألك عن شيء لا يعلمه أحد من أهل الأرض إلا نبي أو رجل أو رجلان

He said, `You have said the truth. I have come to ask you something about which none of the inhabitants of the earth knows, with the exception of a Prophet or one or two other men.’

قال:
أَيَنْفَعُكَ إِنْ حَدَّثْتُكَ

He said, Would you benefit by me informing you about it?

قال:أسمع بأذني

قال:جئت أسألك عن الولد

He replied, `I would listen. I have come to ask you about the child.’

قال:
مَاءُ الرُّجُلِ أَبْيَضُ وَمَاءُ الْمَرْأَةِ أَصْفَرُ فَإِذَا اجْتَمَعَا فَعَلَا مَنِيُّ الرُّجُلِ مَنِيَّ الْمَرْأَةِ أَذْكَرَا بِإِذْنِ اللهِ تَعَالَى وَإِذَا عَلَا مَنِيُّ الْمَرْأَةِ مَنِيَّ الرَّجُلِ أَنَّثَا بِإِذْنِ الله

He said, The fluid of the man is white, and the woman’s is yellow. When they meet, if the discharge of the man is greater than that of the woman, then it becomes a male, by Allah’s permission. When the woman’s discharge is greater than the man’s, it becomes a female by Allah’s permission.

قال اليهودي:لقد صدقت وإنك لنبي ثم انصرف

The Jew said, `You have told the truth and are indeed a Prophet.’ Then he left.

فقال رسول اللهصلى الله عليه وسلّم
لَقَدْ سَأَلَنِي هَذَا عَنِ الَّذِي سَأَلَنِي عَنْهُ وَمَا لِي عِلْمٌ بِشَيْءٍ مِنْهُ حَتَّى أَتَانِي اللهُ بِه

So Allah’s Messenger said; He asked me such things that I had no knowledge of it until Allah gave it to me.

Allah said next,

وَبَرَزُواْ للّهِ

and they will appear before Allah,

describing when the creatures will be resurrected before Allah from their graves,

الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

the One, the Irresistible.

Who has full power and control over all things and to Whom the necks and minds are subservient.

Leave a Reply