أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 780)
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৫১-৭৭ নং আয়াত:-
[ قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ
এক অপরাধী সম্প্রদায়ের,
A people of criminals,]
www.motaher21.net
وَ نَبِّئۡہُمۡ عَنۡ ضَیۡفِ اِبۡرٰہِیۡمَ ﴿ۘ۵۱﴾
আর তাদেরকে জানিয়ে দাও ইব্রাহীমের অতিথিদের কথা।
And inform them about the guests of Abraham,
اِذۡ دَخَلُوۡا عَلَیۡہِ فَقَالُوۡا سَلٰمًا ؕ قَالَ اِنَّا مِنۡکُمۡ وَجِلُوۡنَ ﴿۵۲﴾
যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম’, তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আমরা তোমাদের ব্যাপারে শংকিত।
When they entered upon him and said, “Peace.” [Abraham] said, “Indeed, we are fearful of you.”
قَالُوۡا لَا تَوۡجَلۡ اِنَّا نُبَشِّرُکَ بِغُلٰمٍ عَلِیۡمٍ ﴿۵۳﴾
তারা বলল, ‘ভয় করো না। আমরা তোমাকে একজন জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।’
[The angels] said, “Fear not. Indeed, we give you good tidings of a learned boy.”
قَالَ اَبَشَّرۡتُمُوۡنِیۡ عَلٰۤی اَنۡ مَّسَّنِیَ الۡکِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُوۡنَ ﴿۵۴﴾
সে বলল, ‘আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ? তোমরা কিসের সুসংবাদ দিচ্ছ?’
He said, “Have you given me good tidings although old age has come upon me? Then of what [wonder] do you inform?”
قَالُوۡا بَشَّرۡنٰکَ بِالۡحَقِّ فَلَا تَکُنۡ مِّنَ الۡقٰنِطِیۡنَ ﴿۵۵﴾
তারা বলল, ‘আমরা তোমাকে সত্য সংবাদ দিচ্ছি; সুতরাং তুমি আদৌ নিরাশ হয়ো না।y
They said, “We have given you good tidings in truth, so do not be of the despairing.”
قَالَ وَ مَنۡ یَّقۡنَطُ مِنۡ رَّحۡمَۃِ رَبِّہٖۤ اِلَّا الضَّآلُّوۡنَ ﴿۵۶﴾
তিনি বললেন, ‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?’
He said, “And who despairs of the mercy of his Lord except for those astray?”
قَالَ فَمَا خَطۡبُکُمۡ اَیُّہَا الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿۵۷﴾
সে বলল, ‘হে প্রেরিত (ফিরিশতা)গণ! তোমাদের ব্যাপার কি?’
[Abraham] said, “Then what is your business [here], O messengers?”
قَالُوۡۤا اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ ﴿ۙ۵۸﴾
তারা বলল, ‘আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।
They said, “Indeed, we have been sent to a people of criminals,
اِلَّاۤ اٰلَ لُوۡطٍ ؕ اِنَّا لَمُنَجُّوۡہُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿ۙ۵۹﴾
তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই তাদের সকলকে রক্ষা করব।
Except the family of Lot; indeed, we will save them all.
اِلَّا امۡرَاَتَہٗ قَدَّرۡنَاۤ ۙ اِنَّہَا لَمِنَ الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿٪۶۰﴾
কিন্তু তার স্ত্রীকে নয়; আমরা স্থির করেছি যে, সে অবশ্যই পশ্চাতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’
Except his wife.” Allah decreed that she is of those who remain behind.
فَلَمَّا جَآءَ اٰلَ لُوۡطِۣ الۡمُرۡسَلُوۡنَ ﴿ۙ۶۱﴾
অতঃপর ফিরিশতাগণ যখন লূত পরিবারের নিকট এল,
And when the messengers came to the family of Lot,
قَالَ اِنَّکُمۡ قَوۡمٌ مُّنۡکَرُوۡنَ ﴿۶۲﴾
তখন লূত বললেন, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক’।
He said, “Indeed, you are people unknown.”
قَالُوۡا بَلۡ جِئۡنٰکَ بِمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَمۡتَرُوۡنَ ﴿۶۳﴾
তারা বলল, ‘না, তারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা আপনার কাছে তা’ই নিয়ে এসেছি;
They said, “But we have come to you with that about which they were disputing,
وَ اَتَیۡنٰکَ بِالۡحَقِّ وَ اِنَّا لَصٰدِقُوۡنَ ﴿۶۴﴾
আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী।
And we have come to you with truth, and indeed, we are truthful.
فَاَسۡرِ بِاَہۡلِکَ بِقِطۡعٍ مِّنَ الَّیۡلِ وَ اتَّبِعۡ اَدۡبَارَہُمۡ وَ لَا یَلۡتَفِتۡ مِنۡکُمۡ اَحَدٌ وَّ امۡضُوۡا حَیۡثُ تُؤۡمَرُوۡنَ ﴿۶۵﴾
সুতরাং তুমি রাত্রির কোন এক সময়ে তোমার পরিবারবর্গসহ বের হয়ে পড় এবং তুমি তাদের পশ্চাতে চল। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পিছনের দিকে না তাকায়। তোমাদেরকে যেথায় যেতে আদেশ করা হচ্ছে তোমরা সেথায় চলে যাও।’
So set out with your family during a portion of the night and follow behind them and let not anyone among you look back and continue on to where you are commanded.”
وَ قَضَیۡنَاۤ اِلَیۡہِ ذٰلِکَ الۡاَمۡرَ اَنَّ دَابِرَ ہٰۤؤُلَآءِ مَقۡطُوۡعٌ مُّصۡبِحِیۡنَ ﴿۶۶﴾
আমি তাকে (লূতকে) এ বিষয়ে অবহিত করলাম যে, প্রত্যূষে তাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।
And We conveyed to him [the decree] of that matter: that those [sinners] would be eliminated by early morning.
وَ جَآءَ اَہۡلُ الۡمَدِیۡنَۃِ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿۶۷﴾
নগরবাসিগণ উল্লাসিত হয়ে উপস্থিত হল।
And the people of the city came rejoicing.
قَالَ اِنَّ ہٰۤؤُلَآءِ ضَیۡفِیۡ فَلَا تَفۡضَحُوۡنِ ﴿ۙ۶۸﴾
সে বলল, ‘নিশ্চয় এরা আমার অতিথি; সুতরাং তোমরা আমাকে বেইজ্জত করো না।
[Lot] said, “Indeed, these are my guests, so do not shame me.
وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ لَا تُخۡزُوۡنِ ﴿۶۹﴾
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে লাঞ্ছিত করো না।’
And fear Allah and do not disgrace me.”
قَالُوۡۤا اَوَ لَمۡ نَنۡہَکَ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۷۰﴾
তারা বলল, ‘আমরা কি দুনিয়ার লোককে আশ্রয় দিতে তোমাকে নিষেধ করিনি?’
They said, “Have we not forbidden you from [protecting] people?”
قَالَ ہٰۤؤُلَآءِ بَنٰتِیۡۤ اِنۡ کُنۡتُمۡ فٰعِلِیۡنَ ﴿ؕ۷۱﴾
লূত বলল, ‘একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও, তবে আমার এই কন্যাগণ রয়েছে।’
[Lot] said, “These are my daughters – if you would be doers [of lawful marriage].”
لَعَمۡرُکَ اِنَّہُمۡ لَفِیۡ سَکۡرَتِہِمۡ یَعۡمَہُوۡنَ ﴿۷۲﴾
আপনার জীবন, নিশ্চয় তারা তাদের নেশায় বিভ্রান্ত হয়ে ঘুরছিল।
By your life, [O Muhammad], indeed they were, in their intoxication, wandering blindly.
فَاَخَذَتۡہُمُ الصَّیۡحَۃُ مُشۡرِقِیۡنَ ﴿ۙ۷۳﴾
অতঃপর সূর্যোদয়ের সময়ে বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল।
So the shriek seized them at sunrise.
فَجَعَلۡنَا عَالِیَہَا سَافِلَہَا وَ اَمۡطَرۡنَا عَلَیۡہِمۡ حِجَارَۃً مِّنۡ سِجِّیۡلٍ ﴿ؕ۷۴﴾
তাতে আমরা জনপদকে উল্টিয়ে উপর-নিচ করে দিলাম এবং তাদের উপর পোড়ামাটির পাথর-কংকর বর্ষন করলাম।
And We made the highest part [of the city] its lowest and rained upon them stones of hard clay.
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّلۡمُتَوَسِّمِیۡنَ ﴿۷۵﴾
অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে সূক্ষ্ণদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।
Indeed in that are signs for those who discern.
وَ اِنَّہَا لَبِسَبِیۡلٍ مُّقِیۡمٍ ﴿۷۶﴾
আর নিশ্চয় তা লোক চলাচলের পথের পাশেই বিদ্যমান ।
And indeed, those cities are [situated] on an established road.
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿ؕ۷۷﴾
নিশ্চয় এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন ।
Indeed in that is a sign for the believers.
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৫১-৭৭ নং আয়াত:-
[ قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ
এক অপরাধী সম্প্রদায়ের,
A people of criminals,]
www.motaher21.net
৫১-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতগুলোতে ইবরাহীম (عليه السلام) কে সন্তানের সুসংবাদ ও লুত (عليه السلام)-এর অবাধ্য সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য যখন আকাশ থেকে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়েছিল সে প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কাছে আগত মেহমানদের ঘটনা উম্মাতকে জানিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ মেহমানগণ ছিলেন ফেরেশতা, যারা মানুষের রূপ ধারণ করে সালাম দিয়ে ইবরাহীম (عليه السلام)-এর কাছে উপস্থিত হয়েছিল। যেমন সূরা হুদের ৬৯-৭০ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইবরাহীম (عليه السلام) সালামের জবাব দিলেন, মেহমানদের সম্মান করে বসতে দিলেন। তারপর বাছুরের ভুনা গোশতসহ খাবার নিয়ে আসলেন। কিন্তু তারা খাচ্ছেন না; তাই তাঁর মনে ভয় সঞ্চার হল এবং বললেন: “আমি তো আপনাদেরকে ভয় করছি”। অতঃপর তারা ইবরাহীম (عليه السلام)-কে বলল: আপনি ভয় করবেন না, আমরা আপনাকে একজন জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি। তিনি হলেন ইসহাক (عليه السلام) (সূরা হূদ ১১:৭২), তখন ইবরাহীম (عليه السلام) নিজের ও স্ত্রীর বার্ধক্যকে সামনে রেখে স্বীয় বিস্ময় দূরীকরণার্থে এবং ওয়াদাকে দৃঢ় করানোর লক্ষ্যে তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন: এ বার্ধক্য অবস্থায়ও কি আমার সন্তান জন্ম লাভ করবে? ফেরেশতারা উত্তরে দৃঢ়তার সাথে ওয়াদার পুনরাবৃত্তি করেন আর তাঁকে নিরাশ না হতে উপদেশ দেন। কারণ নিরাশ হওয়া পথভ্রষ্ট লোকদের কাজ। তখন তিনি নিজের মনের বিশ্বাসকে প্রকাশ করতঃ বলেন: আমি নিরাশ হইনি। বরং আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলা ওর চেয়েও বড় কাজের ক্ষমতা রাখেন। এ কথা থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার সম্মানিত রাসূলগণ গায়েব জানতেন না। যদি গায়েব জানতেন তাহলে তাদের সামনে খাবার তুলে ধরতেন না। কারণ ফেরেশতারা খাবার খায় না।
উল্লেখ্য যে, আয়াতে ইবরাহীম (عليه السلام) যে পুত্রের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে তিনি হলেন ইসহাক। ইসহাক (عليه السلام) ইবরাহীম (عليه السلام)-এর প্রথমা স্ত্রী সারাহ-এর গর্ভজাত একমাত্র পুত্র। তিনি ছিলেন ইসমাঈল (عليه السلام)-এর চৌদ্দ বছরের ছোট। এই সময় সারাহর বয়স ছিল ৯০ এবং ইবরাহীম বয়স ছিল ১০০। এ সম্পর্কে সূরা যারিয়াতের ২৪-৩০ নং আয়াতেও আলোচনা রয়েছে।
ইবরাহীম (عليه السلام) ফেরেশতা কর্তৃক পুত্র সন্তানের সুসংবাদ পাওয়ার পর তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে কী উদ্দেশ্যে আপনাদের আগমন? তারা উত্তরে বলল: আমরা লূতের কওমের বস্তি উলটিয়ে দেয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু লুতের পরিবার ছাড়া। পরিবার বলতে যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। এদের মাঝে লূত (عليه السلام)-এর স্ত্রী শামিল নয়। কারণ সে ঈমান আনেনি। যখন ফেরেশতারা তরুণ সুদর্শন যুবকের রূপ ধারণ করে লূত (عليه السلام)-এর নিকট আগমন করল তখন তিনি বললেন: আমরা তো আপনাদেরকে চিনতে পারছি না।
সূরা যারিআতের ২৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে তিনি প্রথমে সালাম দিলেন তারপর উক্ত কথা বললেন। ফেরেশতাগণ গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে বলেন: যা আপনার কওম অস্বীকার করছিল এবং যার আগমন সম্পর্কে তারা সন্দেহ করত আমরা সে বিষয় ও অকাট্য হুকুম নিয়ে আগমন করেছি। অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার আযাব নিয়ে এসেছি। بِالْحَقِّ বলতে আযাবকে বুঝানো হয়েছে।
তারপর ফেরেশতারা লূত (عليه السلام) কে বলল: আপনি রাতের যে কোন সময় আপনার পরিবার তথা মু’মিনদের নিয়ে এখান থেকে চলে যাবেন। আপনি তাদের পেছনে পেছনে চলবেন যাতে কোন মু’মিন বাদ না থেকে যায়। তবে সাবধান, তাদেরকে ধ্বংস করার সময় হয়তো চিৎকার আওয়াজ শোনা যাবে তখন কোনক্রমেই যেন আপনাদের কেউ পেছনের দিকে না তাকায়, যদি তাকায় তাহলে তাকেও আযাব গ্রাস করে নেবে।
লূত (عليه السلام) কে ওয়াহী করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সকাল হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে অথবা دَابِرَ এর অর্থ হল; সর্বশেষ মানুষ, যে অবশিষ্ট থাকবে। অর্থাৎ তাকেও সকাল পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়া হবে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ ط أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيْبٍ)
“নিশ্চয়ই প্রভাত তাদের জন্য নির্ধারিত সময়। প্রভাত কি নিকটবর্তী নয়?” (সূরা হূদ ১১:৮১)
ফেরেশতারা লূত (عليه السلام)-এর বাড়িতে জাতির ধ্বংসের ফায়সালা করছে, আর ওদিক থেকে এলাকাবাসী খুব আনন্দের সাথে লূত (عليه السلام)-এর বাড়ির দিকে আগমন করছে। কারণ তাঁর বাড়িতে সুদর্শন কয়েকজন যুবক আগমন করেছে, তাদের সাথে সমকামিতা করবে। তারা লূত (عليه السلام)-এর কাছে দাবী করল, ঐ সব যুবকদেরকে তাদের হাতে তুলে দিতে যাতে তারা অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। লূত (عليه السلام) তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে, তারা আমার মেহমান, কী করে তাদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দিতে পারি? এটা তো আমার জন্য অপমান ও লজ্জাজনক বিষয়। লূত (عليه السلام)-এর এসব কথা শুনে তারা বলল: হে লূত! এ সকল অপরিচিত যুবকদের সাথে তোমার কী সম্পর্ক? তুমি কেন তাদের পক্ষ অবলম্বন করছ? আমরা কি তোমাকে অপরিচিতদের পক্ষ অবলম্বন করতে নিষেধ করিনি? অথবা তাদেরকে অতিথি হিসেবে বাড়িতে আশ্রয় দিতে নিষেধ করিনি? এ কথা যখন হচ্ছিল তখনও লূত (عليه السلام) জানতেন না যে, আগত যুবকরা আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত ফেরেশতা। তখন লূত (عليه السلام) তাদেরকে আরো বুঝিয়ে বললেন: একান্তই যদি তোমরা কিছু করতে চাও তাহলে আমার কন্যাগণ রয়েছে তাদেরকে বিয়ে করে তোমাদের চাহিদা পূর্ণ করে নাও।
এখানে কন্যা বলতে নিজ জাতির মহিলাদেরকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে নাবীর জীবনের শপথ করছেন; এতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো ফযীলত ও মর্যাদা প্রকাশ পেয়েছে। তবে অন্য কারো জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের নামে শপথ করা বৈধ নয়। আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন একচ্ছত্র অধিপতি, তিনি যার ইচ্ছা শপথ করতে পারেন। তাঁকে কেউ বাধা দেয়ার নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: যেরূপ নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি নেশা করার ফলে জ্ঞানশূন্য হয়ে যায় এবং ভাল-মন্দ কিছু বুঝে না, অনুরূপ এরাও কুকর্মের নেশায় এমনভাবে বিভোর ছিল যে, লূত (عليه السلام)-এর এমন যুক্তিগ্রাহ্য ও নৈতিকতাপূর্ণ কথা তাদের বুঝে আসল না।
ইবনু আব্বস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যতগুলো মাখলূক সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান আর কাউকে করেননি। আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র তাঁর জীবনেরই শপথ করেছেন অন্য কারো জীবনের শপথ করেননি। এসব আলোচনা সূরা হূদে বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে।
এসব বুঝ দেয়ার পরেও যখন তারা অবাধ্য হল তখন সূর্য উদয়ের সাথে সাথে বিকট আওয়াজ আসল, কেউ বলেছেন এটা জিবরীল (عليه السلام)-এর আওয়াজ। তাদের জনপদকে উল্টিয়ে ওপর-নীচ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়, তাদের জনপদকে শুন্যে তোলা হয়, তারপর সেখান থেকে উল্টিয়ে পৃথিবীতে ফেলে দেয়া হয়। এভাবে ওপরকে নীচ আর নীচকে উপর করে ধ্বংস করে দেয়া হয়। এও বলা হয় যে, তাদের ঘরের ছাদসহ তাদেরকে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়। তারপর তাদের ওপর এক বিশেষ ধরনের পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ হয়। এভাবে তাদেরকে তিন প্রকার আযাব দিয়ে পৃথিবীর মানুষের জন্য এক নিদর্শন বানিয়ে দেয়া হয়।
مُتَوَسِّمِيْنَ বলা হয় গভীরভাবে সমীক্ষা ও চিন্তা-ভাবনাকারীদেরকে। এদের জন্য এ ঘটনায় শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
(لَبِسَبِيْلٍ مُّقِيْمٍ)
অর্থাৎ তাদের জনপদের ধ্বংসাবশেষ চলাচলের সাধারণ রাস্তার ধারে। লূত- সম্প্রদায়ের জনপদ মদীনা হতে সিরিয়া যাওয়ার পথে পড়ে। প্রত্যেক যাতায়াতকারীকে তাদের জনপদ দিয়ে যেতে হয়। তাদের মোট পাঁচটি জনবসতি ছিল, যথা- স্বা‘বাহ, সা‘ওয়াহ, আমুরাহ, দূমা ও সাদুম। সাদুম ছিল সবচেয়ে বড় এবং একেই রাজধানী বা সবগুলোর কেন্দ্রস্থল মনে করা হত। বলা হয় যে, জিবরীল (عليه السلام) নিজ বাহুতে ঐ সকল জনপদকে নিয়ে আকাশে চড়েন, এমনকি আসমানবাসীগণ তাদের কুকুর ও মোরগের আওয়াজ শুনতে পান। তারপর সে জনপদকে উল্টে দিয়ে নিক্ষেপ করা হয়।
প্রতত্নতাত্ত্বিক আবিস্কার ও খননকার্য থেকে এ তত্ত্ব বেরিয়ে এসেছে যে, এ শহরটি ইসরাঈল ও জর্ডানের সীমান্তবর্তী এলাকায় মৃত সাগরের তীরে অবস্থিত। ওল্ড টেস্টামেন্টে এ শহরের নাম সুডুম (ঝঙউঙগ) ।
এ সম্পর্কে আমরা সূরা হূদের ৬৯ নং আয়াত থেকে শুরু করে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত আলোচনা করেছি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইবরাহীম (عليه السلام) একজন উত্তম মেজবান ছিলেন, অপরিচিত লোকদের সাথেও উত্তমভাবে মেহমানদারী করতেন।
২. কারো কাছে দেখা করার পূর্বে সালাম দেয়া উচিত যেমন ফেরেশতারা নাবীদের বাড়িতে আগমন করলে দিতেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান দিতে পারেন, তাই সন্তানসহ যে কোন চাওয়া কেবল আল্লাহ তা‘আলার কাছেই চাইতে হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কবীরা গুনাহ ।
৫. পৃথিবীর বুকে সর্বপ্রথম লূত (عليه السلام)-এর জাতি সমকামিতায় লিপ্ত হয়, ফলে তাদের ওপর যে মর্মাান্তিক শাস্তি নেমে আসে তা জানতে পারলাম।
৬. একজন মানুষ ভাল হলে তার পরিবারের সবাই ভাল নাও হতে পারে, যেমন লূত (عليه السلام) একজন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিন্তু তাঁর স্ত্রী ঈমান আনেনি।
৭. পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির বিবরণ তুলে ধরার কারণ হল যাতে তাদের থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হই।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে যে উদ্দেশ্যে হযরত ইবরাহীম এবং তার সাথে সাথে লূতের সম্প্রদায়ের কাহিনী শুনানো হচ্ছে তা অনুধাবন করার জন্য এ সূরার প্রথম দিকের আয়াতগুলো সমানে থাকা প্রয়োজন। প্রথম দিকে ৭ ও ৮ আয়াতে কাফেরদের এ উক্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতোঃ “যদি তুমি সাচ্চা নবী হয়ে থাকো তাহলে ফেরেশতাদেরকে আমাদের সামনে আনছো না কেন?” সেখানে এ প্রশ্নটির নিছক একটি সংক্ষিপ্ত জবাব দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিলঃ “ফেরেশতাদেরকে আমি এমনি অযথা পাঠাই না, যখনই তাদেরকে পাঠাই সত্য সহকারে পাঠাই।” এখন এখানে এর বিস্তারিত জবাব এ দু’টি কাহিনীর আকারে দেয়া হচ্ছে। এখানে তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে, একটি “সত্য” নিয়ে ফেরেশতারা ইবরাহীমের কাছে এসেছিল আবার অন্য একটি “সত্য” নিয়ে তারা এসেছিল লূতের সম্প্রদায়ের কাছে। এখন তোমরা নিজেরাই দেখে নাও, ঐ দু’টি সত্যের মধ্য থেকে কোনটি নিয়ে ফেরেশতারা তোমাদের কাছে আসতে পারে? একথা সুস্পষ্ট যে, ইবরাহীমের কাছে যে সত্য নিয়ে তারা এসেছিল সেটি লাভ করার যোগ্যতা তোমাদের নেই। এখন কি যে সত্যটি নিয়ে তারা লূতের সম্প্রদায়ের ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল সেটি সহকারে তোমরা তাদেরকে আনতে চাও?
# সুরা: হুদ
আয়াত নং :-69
وَ لَقَدْ جَآءَتْ رُسُلُنَاۤ اِبْرٰهِیْمَ بِالْبُشْرٰى قَالُوْا سَلٰمًا١ؕ قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنْ جَآءَ بِعِجْلٍ حَنِیْذٍ
আর দেখো ইবরাহীমের কাছে আমার ফেরেশতারা সুখবর নিয়ে পৌঁছলো। তারা বললো, তোমার প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। ইবরাহীম জওয়াবে বললো, তোমাদের প্রতিও সালাম বর্ষিত হোক। তারপর কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ইবরাহীম একটি কাবাব করা বাছুর (তাদের মেহমানদারীর জন্য) নিয়ে এলো।
তাফসীর :
# এ থেকে জানা যায়, ফেরেশতারা হযরত ইবরাহীমের কাছে এসেছিলেন মানুষের আকৃতি ধরে। শুরুতে তারা নিজেদের পরিচয় দেননি। তাই হযরত ইবরাহীম (আ) তাদেরকে অপরিচিত মেহমান মনে করে আসার সাথে সাথেই তাদের খানাপিনার ব্যবস্থা করেছিলেন।
# হযরত ইসহাকের (আ) জন্মের সুসংবাদ। সূরা হূদে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
# হযরত ইবরাহীমের (আ) এ প্রশ্নটি থেকে পরিষ্কার প্রমাণ হয় যে, ফেরেশতারা সব সময় অস্বাভাবিক অবস্থায়ই মানুষের আকৃতি ধরে আসেন এবং বড় বড় ও গুরুতর ধরনের অভিযানেই তাদেরকে পাঠানো হয়।
# এ ধরনের সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায় যে, লূতের সম্প্রদায়ের অপরাধের পেয়ালা তখন কানায় কানায় ভরে উঠেছিল। যার ফলে হযরত ইবরাহীমের (আ) মত সজাগ ও অভিজ্ঞ লোকের সামনে তার নাম উচ্চারণ করার আদৌ প্রয়োজনই হয়নি। কাজেই শুধুমাত্র “একটি অপরাধী সম্প্রদায়” বলাই যথেষ্ট বিবেচিত হয়েছে।
# সুরা: আল-আরাফ
আয়াত নং :-80
وَ لُوْطًا اِذْ قَالَ لِقَوْمِهٖۤ اَتَاْتُوْنَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ اَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِیْنَ
আর লূতকে আমি পয়গম্বর করে পাঠাই। তারপর স্মরণ করো, যখন সে নিজের সম্প্রদায়ের লোকদেরকে বললোঃ “তোমরা কি এতই নির্লজ্জ হয়ে গেলে যে, দুনিয়ার ইতিপূর্বে কেউ কখনো করেনি এমন অশ্লীল কাজ করে চলেছো?
তাফসীর :
# বর্তমানে যে এলাকাটিকে ট্রান্স জর্ডান (شرق اردن) বলা হয় সেখানেই ছিল এ জাতিটির বাস। ইরাক ও ফিলিস্তিনের মধ্যবর্তী স্থানে এ এলাকাটি অবস্থিত। বাইবেলে ‘সাদূম’ কে এ জাতির কেন্দ্রস্থল বলা হয়েছে। মৃত সাগরের (dead sea) নিকটবর্তী কোথাও এর অবস্থান ছিল। তালমূদে বলা হয়েছে, সাদূম ছাড়া তাদের আরো চারটি বড় বড় শহর ছিল। এ শহরগুলোর মধ্যবর্তী এলাকাসমূহ এমনই শ্যামল সবুজে পরিপূর্ণ ছিল যে, মাইলের পর মাইল জুড়ে এ বিস্তৃত এলাকা যেন একটি বাগান মনে হতো। এ এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করতো। কিন্তু আজ এ জাতির নাম-নিশানা দুনিয়ার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এমনকি তাদের জনপদগুলো কোথায় কোথায় অবস্থিত ছিল তাও আজ সঠিকভাবে জানা যায় না। মৃত সাগরই তাদের একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে টিকে আছে। বর্তমানে এটি ‘লুত সাগর’ নামে পরিচিত।
হযরত লূত আলাইহিস সালাম ছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভাইপো। তিনি চাচার সাথে ইরাক থেকে বের হন এবং কিছু কাল সিরীয়া, ফিলিস্তিন ও মিসর সফর করে দাওয়াত ও তাবলীগের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে থাকেন। অতঃপর স্বতন্ত্রভাবে রিসালাতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে এ পথ ভ্রষ্ট জাতিটির সংস্কার ও সংশোধনের দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত হন। সাদূমবাসীদের সাথে সম্ভবত তাঁর আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে তাদেরকে তার সম্প্রদায় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইহুদীদের হাতে বিকৃত বাইবেলে হযরত লূতের চরিত্রের বহুতর কলঙ্ক কালিমা লেপন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তিনি নাকি হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে ঝগড়াঝাঁটি করে সাদূম এলাকায় চলে গিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১৩: ১-১২) কিন্তু কুরআন এ মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করছে। কুরআনের বক্তব্য মতে আল্লাহ তাকে রসূল নিযুক্ত করে এ জাতির কাছে পাঠান।
# এখানে বক্তব্য সংক্ষেপ করা হয়েছে। সূরা হূদে ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তাদের আগমনে হযরত লূত (আ) অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর মন ভীষণভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ে। তাদেরকে দেখার সাথে সাথেই তিনি মনে মনে বলতে থাকেন আজ বড় কঠিন সময় এসেছে। তাঁর এ ভয়ের কারণ হিসেবে কুরআনের বর্ণনা থেকে যে ইঙ্গিত এবং হাদীস থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, এ ফেরেশতারা অত্যন্ত সুশ্রী কিশোরদের আকৃতি ধরে হযরত লূতের কাছে এসেছিলেন। এদিকে হযরত লূত (আ) তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের চারিত্রিক দুষ্কৃতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তিনি আগত মেহমানদেরকে ফিরিয়ে দিতে পারছিলেন না আবার নিজের সম্প্রদায়ের বদমায়েশদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করাও তাঁর পক্ষে কঠিন ছিল। তাই তিনি বড়ই পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন।
# নিজের পরিবারবর্গের পেছনে পেছনে এজন্য চলো যেন তাদের কেউ থেকে যেতে না পারে।
# এর মানে এ নয় যে, পেছন ফিরে তাকালেই তোমরা পাথর হয়ে যাবে, যেমন বাইবেলে বলা হয়েছে। বরং এর মানে হচ্ছে, পেছনের আওয়াজ শোরগোল শুনে তামাশা দেখার জন্য থেমে যেয়ো না। এটা তামাশা দেখার সময় নয় এবং অপরাধী জাতির ধ্বংস ক্রিয়া দেখে অশ্রুপাত করার সময়ও নয়। এক মুহূর্ত যদি তোমরা আযাব প্রাপ্ত জাতির এলাকায় থেমে যাও তাহলে ধ্বংস-বৃষ্টির কিছুটা তোমাদের ওপরও বর্ষিত হতে পারে এবং তাতে তোমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারো।
# এ থেকে এ জাতির ব্যভিচারবৃত্তি কোন্ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল তা অনুমান করা যেতে পারে। জনপদের এক ব্যক্তির বাড়িতে কয়েকজন সুশ্রী অতিথি এসেছেন। ব্যাস, আর যায় কোথায় অমনি তার বাড়িতে বিপুল সংখ্যক দুর্বৃত্ত চড়াও হয় এবং তা অতিথিদের কাছে প্রকাশ্যে দাবী জানাতে থাকে যে, তার অতিথিদেরকে দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দিতে হবে, যাতে তারা তাদের সাথে ব্যভিচার করতে পারে। তাদের সারা জনপদে তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মত কেউ ছিল না। তাদের জাতির নৈতিক চেতনাও খতম হয়ে গিয়েছিল। ফলে লোকেরা প্রকাশ্যে এ ধরনের বাড়াবাড়ি করতে লজ্জাবোধ করতো না। হযরত লূতের (আ) মত পবিত্রাত্মা ও নৈতিকতার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের গৃহে যখন বদমায়েশদের এমন নির্লজ্জ হামলা হতে পারে, তখন এ থেকে আন্দাজ করা যেতে পারে যে, এসব জনবসতিতে সাধারণ মানুষদের সাথে কোন্ ধরনের ব্যবহার করা হতো।
তালমুদে এ জাতির যে অবস্থা লিখিত হয়েছে তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরছি। এ থেকে এ জাতিটি নৈতিক অধঃপতনের কোন্ প্রান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল তার কিছুটা বিস্তারিত সংবাদ জানা যাবে। তালমুদে বলা হয়েছেঃ একবার আইলাম এলাকার একজন মুসাফির এ জাতিটির এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। পথে রাত হয়ে গেল। ফলে তাকে বাধ্য হয়ে তাদের সাদুম নগরীতে অবস্থান করতে হলো। তার সাথে ছিল তার নিজের পাথেয়। কারোর কাছে সে অতিথি হবার আবেদন জানালো না। সে একটি গাছের নীচে বসে পড়লো। কিন্তু একজন সাদুমবাসী পীড়াপীড়ি করে তাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। রাত্রে তাকে নিজের কাছে রাখলো এবং প্রভাত হবার আগেই তার গাধাটি তার জীন ও বাণিজ্যিক মালপত্রসহ লোপাট করে দিল। বিদেশী লোকটি শোরগোল করলো। কিন্তু কেউ তার ফরিয়াদ শুনলো না। বরং জনবসতির লোকেরা তার অন্যান্য মালপত্রও লুট করে নিয়ে তাকে বাইরে বের করে দিল।
একবার হযরত সারা হযরত লূতের পরিবারের খবরাখবর সংগ্রহের জন্য নিজের গোলাম ইলিয়াযিরকে সাদুমে পাঠালেন। ইলিয়াযির নগরীতে প্রবেশ করে দেখলেন, একজন সাদুমী একজন বিদেশীকে মারছে। ইলিয়াযির সাদুমীকে বললো, তোমার লজ্জা হয় না তুমি একজন অসহায় মুসাফিরের সাথে এ ব্যবহার করছো? কিন্তু জবাবে সর্বসমক্ষে ইলিয়াযিরের মাথা ফাটিয়ে দেয়া হলো।
একবার এক গরীব লোক কোথাও থেকে তাদের শহরে এলো। কেউ তাকে খাবার দাবারের জন্য কিছু দিল না। সে ক্ষুধায় অবসন্ন হয়ে এক জায়গায় মাটিতে পড়েছিল। এ অবস্থায় হযরত লুতের (আ) এর মেয়ে তাকে দেখতে পেলেন। তিনি তার কাছে খাবার পৌঁছে দিলেন। এজন্য হযরত লূত (আ) ও তাঁর মেয়েকে কঠোরভাবে নিন্দা করা হলো এবং তাদেরকে এই বলে হুমকি দেয়া হলো যে, এ ধরনের কাজ করতে থাকলে তোমরা আমাদের জনবসতিতে থাকতে পারবে না।
এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা বর্ণনা করার পর তালমূদ রচয়িতা লিখছেন, নিজেদের দৈনন্দিন জীবনে এ লোকেরা ছিল বড়ই জালেম, ধোঁকাবাজ এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে অসৎ। কোন মুসাফির তাদের এলাকা নিরাপদে অতিক্রম করতে পারতো না। তাদের লোকালয় থেকে কোন গরীব ব্যক্তি এক টুকরো রুটি সংগ্রহ করতে পারতো না। বহুবার এমন দেখা গেছে বাইরের কোন লোক তাদের এলাকায় প্রবেশ করে অনাহারে মারা গেছে এবং তারা তার গায়ের পোশাক খুলে নিয়ে গিয়ে তার লাশকে উলঙ্গ অবস্থায় দাফন করে দিয়েছে। বাইরের ব্যবসায়ীরা দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে পৌঁছে গেলে সর্বসমক্ষে তাদের মালামাল লুট করে নেয়া হতো এবং তাদের ফরিয়াদের জবাবে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হতো। নিজেদের উপত্যকাকে তারা একটি উদ্যান বানিয়ে রেখেছিল। মাইলের পর মাইলব্যাপী ছিল এ উদ্যান। একমাত্র লূত আলাইহিস সালাম ছাড়া তাদের এসব কাজের প্রতিবাদ করার কেউ ছিল না। এ সমগ্র কাহিনীকে সংক্ষেপ করে কুরআন মজীদে শুধুমাত্র দু’টি বাক্যে প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ
وَمِنْ قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ
“তারা আগে থেকেই অনেক খারাপ কাজ করে আসছিল।” (হূদঃ ৭৮)
أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ
“তোমরা পুরুষদের দ্বারা যৌন কামনা পূর্ণ করো, মুসাফিরদের মালপত্র লুটপাট করো এবং নিজেদের মজলিসমূহে প্রকাশ্যে দুষ্কর্ম করো।” (আনকাবুতঃ ২৯)
# সূরা হূদের ৮৭ টীকায় এর ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে কেবল এতটুকুন ইঙ্গিতই যথেষ্ট যে, একথাগুলো একজন ভদ্রলোকের মুখ থেকে এমন সময় বের হয়েছে যখন তিনি একবারেই লাচার হয়ে গিয়েছিলেন এবং বদমায়েশরা তাঁর কোন ফরিয়াদ ও আবেদন নিবেদনে কান না দিয়ে তাঁর মেহমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল।
এ সুযোগে একটি কথা পরিষ্কার করে দেয়া প্রয়োজন। সূরা হূদে ঘটনাটি যে ধারাবাহিকতার সাথে বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে জানা যায় যে, বদমায়েশদের এ হামলার সময় পর্যন্তও হযরত লূত (আ) একথা জনাতেন না যে, তাঁর মেহমানরা আসলে আল্লাহর ফেরেশতা। তখনো পর্যন্ত তিনি মনে করছিলেন, এ ছেলে কয়টি মুসাফির এবং এরা তাঁর বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বদমায়েশদের দল যখনই মেহমানদের অবস্থান স্থলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং হযরত লূত (আ) অস্থির হয়ে বলে উঠলেন
لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ
(হায়, যদি আমার তোমাদের মোকাবিলা করার শক্তি থাকতো অথবা আমার সাহায্য-সহযোগিতা গ্রহণ করার মতো কোন সহায় থাকতো!) তখনই মেহমানরা নিজেদের ফেরেশতা হবার কথা প্রকাশ করলো। এরপর ফেরেশতারা তাঁকে বললো, এখন আপনি নিজের পরিবারবর্গকে নিয়ে এখান থেকে বের হয়ে যান এবং এদের সাথে বোঝাপড়া করার জন্য আমাদের ছেড়ে দেন। ঘটনাবলীর এ ধারাবহিকতা সামনে রাখার পর কোন্ সংকটপূর্ণ অবস্থায় একেবারে লাচার হয়ে হযরত লূত (আ) একথা বলেছিলেন তা পুরোপুরি অনুমান করা যেতে পারে। ঘটনাগুলো যে ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয়েছিল এ সূরায় সেগুলো বর্ণনা করার সময় যেহেতু সেই ধারাবহিকতা অক্ষুণ্ণ রাখা হয়নি বরং যে বিশেষ দিকটি শ্রোতাদের মনে বদ্ধমূল করার জন্য এ কাহিনীটি এখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে সেটিকে বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করাই এখানে কাম্য। তাই একজন সাধারণ পাঠক এ ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে যে, ফেরেশতারা শুরুতেই হযরত লূতের কাছে নিজেদের পরিচয় দিয়েছিল এবং এখন নিজের মেহমানদের ইজ্জত-আব্রু বাঁচাবার জন্য তাঁর এ সমস্ত ফরিয়াদ ও আবেদন নিবেদন নিছক নাটুকেপনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
ফী জিলালিল কুরআন:
৬৭-৭৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৭৭ নং আয়াতে পড়ুন।
# এ পোড়া মাটির পাথর বৃষ্টি হতে পারে উল্কাপাত ধরনের কিছু। আবার আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে তা মৃত্তিকা গর্ভ থেকে বের হয়ে তাদের ওপর চতুর্দিক থেকে বৃষ্টির মত বর্ষিত হয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া একটি মারাত্মক ধরনের ঘূর্ণিঝড়ও তাদের ওপর এ পাথর বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে।
ফী জিলালিল কুরআন:
৬৭-৭৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৭৭ নং আয়াতে পড়ুন।
# হেজায থেকে সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মিসর যাবার পথে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি পড়ে। সাধারণত বাণিজ্য যাত্রীদল এ ধ্বংসের নিদর্শনগুলো দেখে থাকে। আজও সমগ্র এলাকা জুড়ে এ ধ্বংসাবশেষগুলো ছড়িয়ে আছে। এ এলাকাটির অবস্থান লূত সাগরের (dead sea) পূর্বে ও দক্ষিণে। বিশেষ করে এর দক্ষিণ অংশ সম্পর্কে ভূগোলবিদগণের বর্ণনা হচ্ছে, এ এলাকাটি এতবেশী বিধ্বস্ত যার নজীর দুনিয়ার আর কোথাও পাওয়া যায় না।
ফী জিলালিল কুরআন:
৬৭-৭৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৭৭ নং আয়াতে পড়ুন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫১-৭৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি তাদেরকে ইবরাহীমের (আঃ) অতিথিদের সম্পর্কে খবর দিয়ে দাও।’ (আরবি) শব্দটিকে একবচন ও বহুবচন উভয়ের উপরই প্রয়োগ করা হয়, যেমন (আরবি) ও (আরবি) শব্দদ্বয়। এই অতিথিগণ ছিলেন ফেরেস্তা, যারা মানুষের রূপধরে সালাম করতঃ হযরত ইব্রাহীমের (আঃ) নিকট হাযির হয়েছিলেন। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) তাঁদের জন্যে গো-বৎস যবাহ করেন এবং গোশত ভেজে তাঁদের সামনে পেশ করেন। কিন্তু যখন তিনি দেখেন যে, তাঁরা হাত বাড়াচ্ছেন না তখন তাঁর মনে ভয়ের সঞ্চার হয় এবং বলেনঃ “আমি তো আপনাদেরকে ভয় করছি।” ফেরেশতাগণ তখন তাঁকে নিরাপত্তা দান করে বলেনঃ “আপনার ভয়ের কোন কারণ নেই।” অতঃপর তারা তাকে হযরত ইসহাকের (আঃ) জন্ম লাভের শুভ সংবাদ দান করেন। যেমন সূরায়ে হুদে বর্ণিত হয়েছে। তখন তিনি তাঁর নিজের ও তাঁর স্ত্রীর বার্ধক্যকে সামনে রেখে স্বীয় বিস্ময় দূরীকরণার্থে এবং ওয়াদাকে দৃঢ় করানোর লক্ষ্যে তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এই (বার্ধক্যের) অবস্থায়ও কি আমার সন্তান জন্মগ্রহণ করবে।” ফেরেশতাগণ উত্তরে দৃঢ়তার সাথে ওয়াদার পুনরাবৃত্তি করেন আর তাঁকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দেন। তখন তিনি নিজের মনের বিশ্বাসকে প্রকাশ করতঃ বলেনঃ “আমি নিরাশ হই নাই। বরং আমি বিশ্বাস রাখি যে, আমার প্রতিপালক আল্লাহ এর চেয়েও বড় কাজের ক্ষমতা রাখেন।
# আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, যখন তাঁর ভয় দূর হয়ে গেল এবং সুসংবাদও প্রাপ্ত হলেন তখন তিনি ফেরেশতাদেরকে তাদের আগমনের কারণ জিজ্ঞেস করলেন। তাঁরা উত্তরে বললেনঃ “আমরা হযরত লুতের (আঃ) কওমের বস্তি উলটিয়ে দেয়ার জন্যে এসেছি। কিন্তু হযরত লুতের (আঃ) পরিবারবর্গ রক্ষা পাবে। তবে তাঁর স্ত্রী রক্ষা পাবে না। সে কওমের সঙ্গেই রয়ে যাবে এবং তাদের সাথেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
# আল্লাহ তাআলা হযরত লূত (আঃ) সম্পর্কে সংবাদ দিচ্ছেন যে, যখন ফেরেশতাগণ তার কাছে তরুণ সুদর্শন যুবকের রূপ ধরে অগিমন করেন তখন। তিনি তাদেরকে বলেনঃ “আপনারা তো সম্পূর্ণ অপরিচিত লোক।” তখন ফেরেশতাগণ গুপ্ত রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে বলেনঃ “যা আপনার কওম অস্বীকার করছিল এবং যার আগমন সম্পর্কে তারা সন্ধিগ্ধ ছিল, আমরা সেই সত্য বিষয় ও অকাট্য হুকুম নিয়ে আগমন করেছি। আর ফেরেশতারা সত্য বিষয় সহই আগমন করে থাকে এবং আমরাও সত্যবাদী। যে খবর আমরা আপনাকে দিচ্ছি তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আপনি (সপরিবারে) রক্ষা পেয়ে যাবেন, আর আপনার এই কাফির কওম ধ্বংস হয়ে যাবে।”
# আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, ফেরেস্তাগণ হযরত নূতকে (আঃ) বলেনঃ “রাত্রির কিছু অংশ কেটে গেলেই আপনি আপনার নিজের লোকজনকে নিয়ে এখান থেকে বেরিয়ে পড়বেন। আপনি স্বয়ং তাদের পিছনে থাকবেন যাতে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ভালভাবে করতে পারেন।” রাসূলুল্লাহর (সঃ) এই নিয়মই ছিল যে, তিনি সেনাবাহিনীর পিছনে পিছনে চলতেন যাতে দুর্বল ও পতিত লোকদের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারেন।
এরপর হযরত নূতকে (আঃ) বলা হচ্ছেঃ “যখন তোমার কওমের উপর শাস্তি নেমে আসবে এবং তাদের চীৎকার ধ্বনী শুনা যাবে তখন কখনই তাদের দিকে ফিরে তাকাবে না। তাদেরকে এ শাস্তির অবস্থায় ফেলে দিয়েই তোমাদেরকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কোন দ্বিধা-সংকোচ না করেই চলে যাবে।” সম্ভবতঃ তাঁদের সাথে কেউ ছিলেন, যিনি তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নূতকে (আঃ) আমি পূর্বেই বলে দিয়েছিলাম যে, ঐ লোকগুলিকে সকালেই ধ্বংস করে দেয়া হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তাদের (শাস্তি দানের) প্রতিশ্রুত সময় হচ্ছে সকাল বেলা, সকাল কি নিকটবর্তী নয়?” (১১:৮১)
#
আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, হযরত লূতের (আঃ) বাড়ীতে সুদর্শন তরুণ যুবকগণ অতিথি হিসেবে আগমন করেছেন। এ খবর যখন তাঁর কওমের লোকেরী পেলো তখন তারা তাদের খারাপ উদ্দেশ্য সফল করার লক্ষ্যে অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় তার বাড়ীতে দৌড়িয়ে আসলো। আল্লাহর নবী হযরত লুত (আঃ) তাদেরকে বুঝাতে লাগলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আমার অতিথিদের ব্যাপারে আমাকে লজ্জিত করো।” স্বয়ং হযরত লুত (আঃ) জানতেন না যে, তার অতিথিগণ আল্লাহর ফেরে, যেমন সূরায়ে হুদে রয়েছে। যদিও এরও বর্ণনা এখানে পরে হয়েছে এবং ফেরেশতাদের প্রকাশিত হয়ে পড়ার বর্ণনা পূর্বে হয়েছে; কিন্তু এর দ্বারা ক্রম পর্যায় উদ্দেশ্য নয়। আর (আরবি) অক্ষরটি তারতীব বা ক্রম বিন্যাসের জন্যে আসেও না, বিশেষ করে এমন ক্ষেত্রে যেখানে ওর বিপরীত দলীল বিদ্যমান থাকে। হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ “আমাকে তোমরা অপদস্থ করো না।” তারা উত্তরে বলেঃ “আপনার যখন এটা খেয়াল ছিল তখন আপনি এদেরকে অতিথি হিসেবে আপনার বাড়ীতে স্থান দিয়েছেন কেন? আমরা তো। আপনাকে পূর্বেই নিষেধ করেছিলাম।” তখন তিনি তাদেরকে আরো বুঝিয়ে বললেনঃ “তোমাদের স্ত্রীগণ, যারা আমার কন্যাতুল্য, তারাই তোমাদের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার পাত্র, এরা নয়।”এর পূর্ণ বিবরণ আমরা বিস্তারিতভাবে ইতিপূর্বে দিয়ে এসেছি। সুতরাং এর পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন।
যেহেতু ঐ লোকগুলি কাম-বাসনায় উন্নত্ত ছিল এবং আল্লাহর শাস্তির যে ফায়সালা তাদের মস্তকোপরি ঝুলছিল, তা থেকে তারা ছিল সম্পূর্ণরূপে উদাসীন, সেই হেতু আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীর (সঃ) জীবনের শপথ করে তাদের এই অবস্থার বর্ণনা দিচ্ছেন। এর দ্বারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) অত্যধিক মর্যাদা প্রকাশিত হয়েছে। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা তাঁর যতগুলি মাখলুক সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) অপেক্ষা অধিক মর্যাদাবান আর কেউই নেই। মহান আল্লাহ একমাত্র তাঁরই জীবনে শপথ ছাড়া আর কারো জীবনের শপথ করেন নাই। (আরবি) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতা। তাতেই তারা উদভ্রান্ত হয়ে ফিরছে।
#
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “সূর্যোদয়ের সময় এক ভীষণ শব্দ আসলো এবং সাথে সাথে তাদের বস্তীগুলি উর্ধ্বে উথিত হলো আকাশের নিকটে পৌছে সেখান থেকে ওগুলিকে উলটিয়ে দেয়া হলো, উপরের অংশ নীচে এবং নীচের অংশ উপরে হয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিতে শুরু করলো। সূরায়ে হূদে এটা বিস্তারিতরূপে বর্ণিত হয়েছে।
যাদের পর্যবেক্ষণ শক্তি ও অন্তদৃষ্টি রয়েছে তাদের জন্যে এই বস্তিগুলির ধ্বংসের মধ্যে বড় বড় নিদর্শন বিদ্যমান রয়েছে। এই ধরনের লোকেরাই এ সব বিষয় থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। তারা অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে এগুলির প্রতি লক্ষ্য করে থাকে এবং চিন্তা গবেষণা করে নিজেদের অবস্থা সুন্দর করে নেয়।
হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা মু’মিনের বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতার প্রতি লক্ষ্য রেখো, সে আল্লাহর নূরের সাহায্যে দেখে থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) এবং ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) বর্ণনা করেছেন) অতপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেন। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, সে আল্লাহর নূর ও তার তাওফীকের সাহায্যে দেখে থাকে। হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহর কতকগুলি বান্দা এমন রয়েছে যারা মানুষকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারে।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘ওটা লোক চলাচলের পথিপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান। অর্থাৎ হযরত লুতের (আঃ) কওমের যে বস্তির উপর বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ শাস্তি নেমে এসেছিল এবং ওটাকে উলটিয়ে দেয়া হয়েছিল তা আজও একটা নিদর্শন রূপে বিদ্যমান রয়েছে। তোমরা রাতদিন সেখান দিয়ে চলাচল করে থাকো। বড়ই বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এখনও তোমরা তার থেকে শিক্ষা গ্রহ করছো না! মোট কথা, প্রকাশ্যভাবে লোক চলাচলের পথে ঐ বস্তির গ্নাবশেষ আজও বিদ্যমান আছে। অর্থ এও হতে পারেঃ “প্রকাশ্য কিতাবে টো বিদ্যমান রয়েছে।” কিন্তু এ অর্থটি এখানে ঠিকভাবে বসছে না। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
আল্লাহ পাক বলেনঃ “অবশ্যই এতে মু’মিনদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।” অর্থাৎ কিভাবে আল্লাহ তাআলা নিজের লোকদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং স্বীয় শত্রুদেরকে ধ্বংস করেন, এটা তার একটা স্পষ্ট নিদর্শন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al-Hijr
Sura: 15
Verses :- 51-77
[ قَوۡمٍ مُّجۡرِمِیۡنَ
A people of criminals,]
The Guests of Ibrahim and their Good News of a Son for Him
Allah says:
وَنَبِّيْهُمْ عَن
And tell them about,
Allah is saying:`Tell them, O Muhammad, about the story of,
ضَيْفِ إِبْراَهِيمَ
إِذْ
.
the guests of Ibrahim. When,
دَخَلُواْ عَلَيْهِ فَقَالُواْ سَلمًا قَالَ إِنَّا مِنكُمْ وَجِلُونَ
they entered upon him, and said:”Salaman (peace!).”
He said:”Indeed we are frightened of you.”
meaning that they were scared. The reason for their fear has been mentioned previously, which is that they noticed that these guests did not eat of the food that was offered, which was a fattened calf.
قَالُواْ لَا تَوْجَلْ
They said:”Do not be afraid!…”
meaning, do not be scared.
إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلمٍ عَلِيمٍ
We bring you the good news of a boy possessing much knowledge and wisdom.
this refers to Ishaq, as was previously mentioned in Surah Hud. Then,
قَالَ
He said,
meaning he spoke with wonder and astonishment, asking for confirmation, because he was old and his wife was old:
أَبَشَّرْتُمُونِي عَلَى أَن مَّسَّنِيَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ
Do you give me this good news while old age has overtaken me! Of what then is your news about!
They responded by confirming the good news they had brought, good news after good news:
قَالُواْ بَشَّرْنَاكَ بِالْحَقِّ فَلَ تَكُن مِّنَ الْقَانِطِينَ
They said:”We give you good news in truth. So do not be of those who despair.”
قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِ إِلاَّ الضَّألُّونَ
He said:”And who despairs of the mercy of his Lord except those who are astray!
The Reason why the Angels came
Allah tells:
قَالَ فَمَا خَطْبُكُمْ أَيُّهَا الْمُرْسَلُونَ
He said:”What then is the business for which you have come, O messengers!”
Allah tells us that after Ibrahim had calmed down from the excitement of this good news, he started to ask them why they had come to him.
قَالُواْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمٍ مُّجْرِمِينَ
They said, “Indeed, we have been sent to a people of criminals,
(All) except the family of Lut, all of whom we are to save (from the destruction).
They told him that they were going to save the family of Lut from among those people, except for his wife, because she was one of those who were doomed.
Thus it was said,
إِلاَّ امْرَأَتَهُ قَدَّرْنَا إِنَّهَا لَمِنَ الْغَابِرِينَ
Except for his wife, of whom We have decreed that she shall be of those who remain behind.
i.e., she was one of those who would be left behind and will be destroyed.
The Angels coming to Lut
Allah tells:
فَلَمَّا جَاء الَ لُوطٍ الْمُرْسَلُونَ
Then when the messengers (the angels) came to the family of Lut,
Allah tells us about when the angels came to Lut in the form of young men with handsome faces. When they entered his home,
قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ
قَالُواْ بَلْ جِيْنَاكَ بِمَا كَانُواْ فِيهِ يَمْتَرُونَ
He said:”Verily, you are people unknown to me.”
They said:”Nay, we have come to you with that (torment) which they have been doubting.”
meaning that they were bringing the punishment and destruction that the people doubted they would ever suffer from.
وَأَتَيْنَاكَ بَالْحَقِّ
And we have brought you the truth,
It is like the Ayah,
مَا نُنَزِّلُ الْمَلَـيِكَةَ إِلاَّ بِالحَقِّ
We do not send the angels down except with the truth. (15:8)
وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
and certainly, we tell the truth.
They said this in affirmation of the news that they brought him, that he would be saved and his people would be destroyed.
Lut is ordered to leave with His Family during the Night
Allah tells:
فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَاتَّبِعْ أَدْبَارَهُمْ
Then travel for a portion of the night with your family, and you go behind them in the rear,
Allah tells us that His angels ordered Lut to set out after part of the night had passed. They told him to walk behind them, to protect them. Similarly, the Messenger of Allah would walk in the rear of the army on military campaigns, in order to help the weak and carry those who had no means of transport.
وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ
and let no one amongst you look back,
meaning – when you hear the people screaming from their torment, do not turn around to look at them; leave them to face whatever punishment and vengeance is coming to them.
وَامْضُواْ حَيْثُ تُوْمَرُونَ
but go on to where you are ordered.
it is as if they had a guide with them to show them the way.
وَقَضَيْنَا إِلَيْهِ ذَلِكَ الَامْرَ
And We made this decree known to him,
meaning – We already told him about that.
أَنَّ دَابِرَ هَوُلاء مَقْطُوعٌ مُّصْبِحِينَ
that those (sinners) would be rooted out in the early morning.
meaning in the morning, as in another Ayah:
إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ
Indeed, morning is their appointed time. Is not the morning near! (11:81).
The People of the City arrive upon the Angels, thinking that they are Men
Allah tells:
وَجَاء أَهْلُ الْمَدِينَةِ يَسْتَبْشِرُونَ
And the inhabitants of the city came rejoicing.
Allah tells us about how Lut’s people came to him when they found out about his handsome guests, and they came happily rejoicing about them.
قَالَ إِنَّ هَوُلاء ضَيْفِي فَلَ تَفْضَحُونِ
وَاتَّقُوا اللّهَ وَلَا تُخْزُونِ
(Lut) said:”Verily, these are my guests, so do not shame me. And have Taqwa of Allah, and do not disgrace me.”
This is what Lut said to them before he knew that his guests were messengers from Allah, as mentioned in Surah Hud, but here (in this Surah), we have already been told that they are messengers from Allah, and this is followed by an account of Lut’s people coming and his exchange with them.
However, here the conjunction (wa, meaning “and”) does not imply the sequence of events, especially since there is something to indicate that this is not the case.
They said answering him,
قَالُوا أَوَلَمْ نَنْهَكَ عَنِ الْعَالَمِينَ
They said:Did we not forbid you from entertaining (or protecting) any of the `Alamin!
meaning, `did we not tell you that you should not have anyone as a guest!’
قَالَ هَوُلاء بَنَاتِي إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ
(Lut) said:”These are my daughters, if you must act (so).”
He reminded them about their womenfolk and what their Lord had created for them in the women of permissible sexual relationships.
This issue has already been explained and is no need to repeat the discussion here. All of this happened while they were still unaware of the inevitable calamity and punishment that was about to befall them the following morning.
Hence Allah, may He be exalted, said to Muhammad,
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
Verily, by your life, in their wild intoxication, they were wandering blindly.
Allah swore by the life of His Prophet, which is an immense honor reflecting his high rank and noble status.
Amr bin Malik An-Nakari reported from Abu Al-Jawza’ that Ibn Abbas said:
“Allah has never created or made or formed any soul that is dearer to him than Muhammad. I never heard that Allah swore by the life of anyone else.
Allah says,
لَعَمْرُكَ إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
Verily, by your life, in their wild intoxication, they were wandering blindly.
meaning, by your life and the length of your stay in this world,
This was reported by Ibn Jarir.
Qatadah said:
لَفِي سَكْرَتِهِمْ
(in their wild intoxication),
“It means – in their misguided state;
يَعْمَهُونَ
(they were wandering blindly),
means – they were playing.”
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said:
لَعَمْرُكَ
(Verily, by your life),
means by your life,
and
إِنَّهُمْ لَفِي سَكْرَتِهِمْ يَعْمَهُونَ
(in their wild intoxication, they were wandering blindly),
means that they were confused.
The Destruction of the People of Lut
Allah said;
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ
So the Sayhah overtook them at the time of sunrise.
This is the piercing sound that came to them when the sun rose, which was accompanied by the city being flipped upside down, and stones of baked clay (As-Sijjil) raining down upon them.
فَجَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِمْ حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ
And We turned them upside down and rained stones of baked clay upon them.
The discussion of As-Sijjil in Surah Hud is a sufficient explanation.
Allah said:
إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَاتٍ لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
Surely, in this are signs for those who see.
meaning that the traces of the destruction of that city are easily visible to any one who ponder about it, whether they look at it with physical eyesight or mental and spiritual insight, as Mujahid said concerning the phrase,
لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
(those who see) he said,
“those who have insight and discernment.”
It was reported from Ibn Abbas and Ad-Dahhak that;
it referred to those who look.
Qatadah said:
“those who learn lessons.”
لِّلْمُتَوَسِّمِينَ
(those who see),
therefore the meaning is “those who ponder.”
The City of Sodom on the Highroad
Allah tells;
وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٍ مُّقيمٍ
And verily, they were right on the highroad.
meaning that the city of Sodom, which was physically and spiritually turned upside down, and pelted with stones until it became a foul smelling lake (the Dead Sea), is on a route that is easily accessible until the present day.
This is like the Ayah,
وَإِنَّكُمْ لَّتَمُرُّونَ عَلَيْهِمْ مُّصْبِحِينَ
وَبِالَّيْلِ أَفَلَ تَعْقِلُونَ
Verily, you pass by them in the morning, and at night. Will you not then reflect! (37:137-138)
إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِّلْمُومِنِينَ
Surely, there is indeed a sign in that for the believers.
meaning, `All that We did to the people of Lut, from the destruction and the vengeance, to how We saved Lut and his family, these are clear signs to those who believe in Allah and His Messengers.