أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 782)
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৮০-৮৪ নং আয়াত:-
[ فَمَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ
তা তাদের কোন কাজে আসেনি।
So nothing availed them.]
www.motaher21.net
وَ لَقَدۡ کَذَّبَ اَصۡحٰبُ الۡحِجۡرِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿ۙ۸۰﴾
হিজরবাসিগণও রসূলদেরকে মিথ্যা মনে করেছিল।
And certainly did the companions of Thamud deny the messengers.
وَ اٰتَیۡنٰہُمۡ اٰیٰتِنَا فَکَانُوۡا عَنۡہَا مُعۡرِضِیۡنَ ﴿ۙ۸۱﴾
আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল।
And We gave them Our signs, but from them they were turning away.
وَ کَانُوۡا یَنۡحِتُوۡنَ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا اٰمِنِیۡنَ ﴿۸۲﴾
তারা নিশ্চিন্তে পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত।
And they used to carve from the mountains, houses, feeling secure.
فَاَخَذَتۡہُمُ الصَّیۡحَۃُ مُصۡبِحِیۡنَ ﴿ۙ۸۳﴾
অতঃপর ভোরে বিকট চীৎকার তাদেরকে পাকড়াও করল।
But the shriek seized them at early morning.
فَمَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ ﴿ؕ۸۴﴾
সুতরাং তারা যা অর্জন করত তা তাদের কোন কাজে আসেনি।
So nothing availed them [from] what they used to earn.
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৮০-৮৪ নং আয়াত:-
[ فَمَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ
তা তাদের কোন কাজে আসেনি।
So nothing availed them.]
www.motaher21.net
৮০-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
উক্ত আয়াতগুলোতে সালেহ (عليه السلام)-এর সম্প্রদায় সামূদ জাতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। الْحِجْرِ হল হিজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী এলাকার একটি জনবসতি। সালেহ (عليه السلام)-এর জাতি এ এলাকায় বসবাস করত। একজন রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা মানে সকল রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। এ জন্য বলা হয়েছে, তারা রাসূলগণকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। সালেহ (عليه السلام) তাদের কাছে এমন মু‘জিযাহ নিয়ে এসেছিলেন যা দ্বারা তাঁর সত্যবাদিতা তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যায়।
যেমন তাদের দাবীনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে দশমাস গর্ভবতী একটি উষ্ট্রী দেয়া হয়েছিল যা কঠিন প্রস্তর খন্ড থেকে বের হয়ে আসে। আল্লাহ তা‘আলার এ নিদর্শনের জন্য তাদের ওপর কিছু বিধি-নিষেধ জারী করে দেয়া হয়েছিল যে, উষ্ট্রীর পানি পান করার দিন তারা ঘাটে আসতে পারবে না, ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে উষ্ট্রীর গায়ে হাত দিতে পারবে না ইত্যাদি। কিন্তু তারা সব বিধান লংঘন করে উষ্ট্রীকে হত্যা করার চন্ত্রান্ত করে অবশেষে পা কেটে হত্যা করে ফেলে। ফলে তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি নেমে আসে। ভীষণ ভূমিকম্প এবং ওপর থেকে বিকট ও ভয়াবহ এক গর্জন দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করা হয়। ফলে তারা সবাই যার যার স্থানে একযোগে অধোমুখী হয়ে ভূতলশায়ী হল (সূরা আ‘রাফ ৭:৭৮, হূদ ১১:৬৭-৬৮) এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হল এমনভাবে, যেন তারা কোনদিন সেখানে বসবাস করেনি। এ সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ নং আয়াতের আলোচনা করা হয়েছে। اٰمِنِيْنَ অর্থাৎ নির্ভয়ে পাহাড় কেটে কেটে প্রাসাদ নির্মাণ করত। নবম হিজরীতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাবূক যুদ্ধে যান তখন তাদের এ এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মাথায় কাপড় জড়িয়ে নিলেন, নিজের সওয়ারীর গতি বাড়িয়ে দিলেন এবং সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা কান্নারত অবস্থায় ও আল্লাহ তা‘আলার আযাবকে স্মরণ করে এ এলাকা অতিক্রম কর। (সহীহ বুখারী হা: ৪৩৩, সহীহ মুসলিম হা: ২২৮৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক জাতির অধিকাংশ লোকেরা নাবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল।
২. কোন ধ্বংসাবশেষপূর্ণ এলাকা দিয়ে অতিক্রমকালে আযাবের কথা স্মরণ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় অতিক্রম করতে হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এটি ছিল সামূদ জাতির কেন্দ্রীয় শহর। মদীনার উত্তর পশ্চিমে বর্তমান আল’উলা শহরের কয়েক মাইল দূরে এ শহরটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। মদীনা থেকে তাবুক যাবার সময় প্রধান সড়কের ওপরই এ জায়গাটি পড়ে। এ উপত্যকাটির মধ্য দিয়ে কাফেলা এগিয়ে যায়। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ অনুযায়ী কেউ এখানে অবস্থান করে না। হিজরী আট শতকে পর্যটক ইবনে বতুতা হজ্জে যাবার পথে এখানে এসে পৌঁছেন। তিনি লেখেনঃ “এখানে লাল রংয়ের পাহাড়গুলোতে সামূদ জাতির ইরামতগুলো রয়েছে। এগুলো তারা পাহাড় কেটে কেটে তার মধ্যে নির্মাণ করেছিল। এ গৃহগুলোর কারুকাজ এখনো এমন উজ্জ্বল ও তরতাজা আছে যেন মনে হয় আজই এগুলো খোদাই করা হয়েছে। পচাগলা মানুষের হাড় এখনো এখানকার ঘরগুলো মধ্যে পাওয়া যায়। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য সূরা আ’রাফের ৫৭ টীকা দেখুন)।
# এটি আরবের প্রাচীন জাতিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জাতি। আদের পরে এরাই সবচেয়ে বেশী খ্যাতি ও পরিচিত অর্জন করে। কুরআন নাযিলের পূর্বে এদের কাহিনী সাধারণ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। জাহেলী যুগের কবিতা ও খুতবা সাহিত্যে এর ব্যাপক উল্লেখ পাওয়া যায়। আসিরিয়ার শিলালিপি, গ্রীস, ইসকানদারীয়া ও রোমের প্রাচীন ঐতিহাসিক ও ভুগোলবিদগণও এর উল্লেখ করেছেন। ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের কিছুকাল পূর্বে ও এ জাতির কিছু লোক বেঁচে ছিল। রোমীয় ঐতিহাসিকগণের মতে, এরা রোমীয় সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়ে এদের শত্রু নিবতীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
উত্তর-পশ্চিম আরবের যে এলাকাটি আজো ‘আল হিজর’ নামে খ্যাত, সেখানেই ছিল এদের আবাস। আজকের সউদী আরবের অন্তর্গত মদীনা ও তাবুকের মাঝখানে হিজায রেলওয়ের একটি ষ্টেশন রয়েছে, তার নাম মাদায়েনে সালেহ। এটিই ছিল সামূদ জাতির কেন্দ্রীয় স্থান। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল হিজর। সামূদ জাতির লোকেরা পাহাড় কেটে যে সব বিপুলায়তন ইমারত নির্মাণ করেছিল, এখনো হাজার হাজার একর এলাকা জুড়ে সেগুলো অবস্থান করছে। এ নিঝুম পুরীটি দেখে আন্দাজ করা যায় যে, এক সময়ে এ নগরীর জনসংখ্যা চার পাঁচ লাখের কম ছিল না। কুরআন নাযিল হওয়ার সময়কালে হেজাযের ব্যবসায়ী কাফেলা এ প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতো। তাবুক যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ এলাকা অতিক্রম করছিলেন, তখন তিনি মুসলমানদেরকে এ শিক্ষানীয় নিদর্শনগুলো দেখান এবং এমন শিক্ষা দান করেন যা এ ধরনের ধ্বংসাবশেষ থেকে একজন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তির শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। এ জায়গায় তিনি একটি কুয়ার দিকে অংগুলি নির্দেশ করে বলেন, এ কুয়াটি থেকে হযরত সালেহের উটনী পানি পান করতো। তিনি মুসলমানদেরকে একমাত্র এ কুয়াটি থেকে পানি পান করতে বলেন এবং অন্য সমস্ত কুয়া থেকে পানি পান করতে নিষেধ করেন। একটি গিরিপথ দেখিয়ে তিনি বলেন, এ গিরিপথ দিয়ে হযরত সালেহের উটনীটি পানি পান করতে আসতো। তাই সেই স্থানটি আজো ‘ফাজ্জুন নাকাহ’ বা ‘উটনীর পথ’ নামে খ্যাত হয়ে আছে। তাদের ধ্বংসস্তুপগুলোর মধ্যে যেসব মুসলমান ঘোরাফেরা করছিল তাদেরকে একত্র করে তিনি একটি ভাষণ দেন। এ ভাষণে সামূদ জাতির ভয়াবহ পরিণাম থেকে তাদেরকে শিক্ষা গ্রহণের উপদেশ দিয়ে তিনি বলেন, এটি এমন একটি জাতির এলাকা যাদের ওপর আল্লাহর আযাব নাযিল হয়েছিল। কাজেই এ স্থানটি দ্রুত অতিক্রম করে চলে যাও। এটা ভ্রমনের জায়গা নয় বরং কান্নার জায়গা।
# তারা পাহাড় কেটে কেটে তার মধ্যে যেসব আলীশান ইমারত নির্মাণ করেছিল সেগুলো তাদেরকে কোন প্রকারে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি।
ফী জিলালিল কুরআন:
*ধ্বংসপ্রাপ্ত দুটি জাতির ঘটনা : একই ধরনের অবস্থা হয়েছিলাে হযরত শোয়াইবের জাতি আইকা বাসীর ও হযরত সালেহের জাতি হেজর বাসীর। ‘আইকাবাসীও অত্যাচারী ছিলাে। তাই আমি তাদের কাছ থেকেও প্রতিশােধ নিয়েছিলাম…'(আয়াত ৭৮-৮৪) হযরত শোয়াইব জাতি আইকাবাসী ও মাদইয়ানবাসী সম্পর্কে কোরআন অন্যান্য জায়গায় বিস্তারিত কাহিনী বর্ণনা করেছে। এখানে তাদের অনাচার ও ধ্বংসের বিষয়টা সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে আযাব সংক্রান্ত হুশিয়ারী এবং সূরার শুরুতে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে অবাধ্য জাতিগুলােকে ধ্বংস করে দেয়া হয় মর্মে যে তথ্য জানানাে হয়েছে, তার বাস্তবতা প্রমাণ করা যায়। মাদইয়ান ও আইকা লূত (আ.)-এর এলাকার কাছেই অবস্থিত। ‘ওই দুটো জায়গা প্রকাশ্য সড়কের পাশেই অবস্থিত’ এই উক্তিতে দুটো জায়গা দ্বারা হয়তাে আইকা ও মাদইয়ানকেই বুঝানাে হয়েছে। কেননা এই দুটো জায়গাই সুস্পষ্ট ও অক্ষত সড়কের পাশে অবস্থিত। এ দুটো আবার পূর্বোক্ত হযরত লূত(আ.)-এর সড়কের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দুটোকে এক সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। ধ্বংসপ্রাপ্ত জনপদগুলাে এভাবে ব্যস্ত সড়কের পাশে অবস্থান শিক্ষা লাভের সহায়ক। কেননা ওই জনপদগুলাের ধ্বংসাবশেষ এখনাে বিদ্যমান। আসা যাওয়ার পথে প্রতিটি মানুষের তা চোখে পড়ে। ওই ধ্বংসাবশেষের চার পাশের জনজীবন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কেবল ওই স্থানগুলাে এমনভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে যে, মনে হয় সেখানে কখনাে জনবসতি ছিলাে না। আজ সেখানে জীবনের গতি স্তব্ধ। অথচ তার পার্শবর্তী সড়কে জীবন গতিশীল রয়েছে। হিজরবাসী হলাে হযরত সালেহ(আ.)-এর জাতি। হিজর হিজায ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী স্থানে ‘ওয়াদিউল কুরা’-এর দিকে অবস্থিত। এখনাে এটা বিদ্যমান। সেই সুদূর অতীতে তারা পাহাড়ের পাথর খােদাই করে নিজেদের বাড়ি ঘর তৈরী করেছিলাে। এ থেকে বুঝা যায় তারা কতাে শিল্প নৈপুণ্য, শক্তি সামর্থ ও উন্নত সভ্যতার অধিকারী ছিলাে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, জনপদ এবং হযরত শোয়াইবের জনপদ হতে পারে। দুটো হিজায ও সিরিয়াগামী ‘হিজরবাসী রসূলদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছিলাে।’ হিজরবাসীর কাছে একজন রসূলই এসেছিলেন। তিনি হচ্ছেন হযরত সালেহ(আ.)। তাকেই তারা মিথ্যুক বলে প্রত্যাখ্যান করেছিলাে। তথাপি আল্লাহ তায়ালা বহুবচন প্রয়ােগ করে বলেছেন যে, তারা ‘রসূলদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছিলাে। কেননা হযরত সালেহ সমস্ত নবী ও রসূলের প্রতিনিধি ছিলেন। তাই তারা তাকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করলে বলা হলাে, তারা রসূলদেরকে মিথুক আখ্যায়িত করলাে। এভাবে স্থান, কাল, ব্যক্তি ও জাতি নির্বিশেষে সকল নবী ও রসূলকে এক দল ভুক্ত এবং সকল প্রত্যাখ্যানকারীকে এক দল ভুক্ত করা হলাে। ‘তাদেরকে আমি আমার নিদর্শনবাণী দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি।’ এখানেও ‘নিদর্শনাবলী’ বহুবচন যােগে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ হযরত সালেহ শুধু একটাই নিদর্শন সাথে এনেছিলেন। সেটা ছিলাে তার উষ্ট্রী, এর কারণ এই যে, বিশ্ব প্রকৃতিতে অনেক নিদর্শন রয়েছে। মানুষের নিজ সত্তার ভেতরেও রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। এই সমস্ত নিদর্শনই পর্যবেক্ষণ ও চিন্তাগবেষণার জন্যে উন্মুক্ত রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা সালেহ(আ.)-এর জাতিকে নিদর্শন হিসাবে শুধু উষ্ট্রীই দেননি, বরং অসংখ্য প্রাকৃতিক ও তাত্মিক নিদর্শন দিয়েছেন। অথচ এ জাতি সকল নিদর্শনই উপেক্ষা করেছিলাে। সব নিদর্শন থেকেই তাদের চোখ, মন, বিবেক ও বুদ্ধি কে বন্ধ করে রেখেছিলাে। ‘তারা পাহাড় খােদাই করে নিরাপদ বাসস্থান তৈরী করতাে। ভাের হতে না হতেই এক বিকট চিৎকার তাদেরকে পাকড়াও করলাে, ফলে তাদের উপার্জিত কোনাে সম্পত্তিই আযাবের সময় তাদের কাজে লাগলাে না।’ পাহাড়ের গায়ে খােদাই করে বানানাে বাসস্থানের নিরাপদ জীবন থেকে শুরু করে সর্ববিধ্বংসী বিকট চিৎকার পর্যন্ত যে দৃশ্যটা চোখে পড়ে, তা মানুষ মাত্রেরই মনকে প্রচন্ডভাবে আলােড়িত করে। কেননা সেই একটা মাত্র বিকট চিৎকারে তাদের সারা জীবনের সঞ্চিত সকল সহায় সম্পদ ও সাজ সরঞ্জাম এবং তাদের যুগ যুগান্তরের নির্মিত সকল স্থাপনা ও ঘরবাড়ী সবই পন্ড ও নস্যাত হয়ে গেলাে। এ সবের কোনাে কিছুই তাদের আকস্মিক ধ্বংসকে রুখতে পারলাে না। বস্তুত মানুষ নিজের জীবনকে পাহাড় পর্বতে খােদাই করে বানানাে ঘরবাড়ীর চেয়ে বেশী নিরাপদ আর কোথাও ভাবতে পারে না। আর প্রাতকালে মানুষ যতােখানি নিশ্চিন্ত ও তৃপ্ত বােধ করে, ততােখানি অন্য কোনাে সময়ে করে না। অথচ সালেহ(আ.)-এর জাতিকে সকাল বেলাই একটা প্রলয়ংকরী বিকট চিৎকার এসে ধ্বংস করে দিলাে। অথচ এ সময় তারা তাদের সুরক্ষিত নিরাপদ পার্বত্য জনপদে বসবাস করছিলাে। তাদের সমস্ত রক্ষাব্যুহ ভেংগে চুরমার হয়ে গেলাে। সমস্ত নিরাপত্তা প্রাচীর ও সুরক্ষিত দুর্গ বিধস্ত হয়ে গেলাে। এগুলাে তাদেরকে সেই বিকট শব্দ থেকে বাঁচাতে পারলাে না। বাতাস থেকে সৃষ্ট এই বিকট ধ্বনি তাদেরকে তাদের পাহাড়ের অভ্যন্তরের নিরাপদ বাসস্থানের মধ্যেই ধ্বংস করে রেখে গেলাে। এভাবে সূরা আল হিজরের কিসসা কাহিনীগুলাে সমাপ্ত হলাে। এ দ্বারা এটাই বুঝানাে হয়েছে যে, আল্লাহর রসূলদেরকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করে যারা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্যে নির্ধারিত অবকাশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করেন। বস্তুত আল্লাহর নীতি কখনাে পরিবর্তিত হয় না এবং তা কারাে সাথে পক্ষপাতিত্বও করে না, এই বক্তব্যটাকে এখানে সূরার অন্যান্য অংশের একই বক্তব্যের সাথে সুসমন্বিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। (আয়াত ৮৫-৯১) এটাই হচ্ছে সাধারণ নিয়ম। এ নিয়মের কোনাে ব্যতিক্রম নেই। এ নিয়ম জীবন ও জগতকে নিয়ন্ত্রণ করে, দল ও গােষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে, আদর্শ ও লক্ষ্য কে নিয়ন্ত্রণ করে, হেদায়াত ও গােমরাহী তথা ন্যায় অন্যায়কেও নিয়ন্ত্রণ করে সর্বশেষে মানুষের শেষ পরিণতি ও হিসাব নিকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে। আলােচ্য সূরার প্রতিটি আয়াত এবং প্রতিটি বাক্য উক্ত নিয়মের সত্যতা প্রমাণ করে। শুধু তাই নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে উক্ত নিয়মের প্রতিফলনের বাস্তব নমুনাও পেশ করে। এই নিয়ম আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে লুকায়িত নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্যের প্রতি ইংগীত করে এবং সেই চিরন্তন ও শাশ্বত সত্যের সাক্ষ্য বহন করে যার ওপর এই গােটা সৃষ্টি জগতের প্রকৃতি নির্ভরশীল।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮০-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর
“আসহাবুল হি’ দ্বারা সামূদ সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। যারা তাদের নবী হযরত সালেহকে (আঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। এটা স্পষ্ট কথা যে, একজন নবীকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীরা যেন সমস্ত নবীকেই মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। এ জন্যেই বলা হয়েছে, তারা রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। তাদের কাছে এমন মু’জিযা’ এসে পড়ে যার দ্বারা হযরত সা’লেহের (আঃ) সত্যবাদিতা তাদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যেমন একটি কঠিন পাথরের পাহাড়ের মধ্য থেকে একটি উষ্ট্ৰী বের হওয়া, যা তাদের শহরে বিচরণ করতো। একদিন ওটা পানি পান করতো, আর পরের দিন ঐ শহরবাসীদের জন্তুগুলি পানি পান করতো। তথাপি ঐ লোকগুলি বাঁকা পথেই চলতে থাকে, এমনকি তারা ঐ উষ্ট্ৰীটিকে হত্যা করে ফেলে। ঐ সময় হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে বলেনঃ “জেনে রেখো যে, তিন দিনের মধ্যেই তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসবে। এটা সম্পূর্ণরূপে সত্য ও সঠিক। ওয়াদা।”ঐ লোকগুলি তখনও আল্লাহর প্রদর্শিত পথের উপর নিজেদের অন্ধত্বকেই প্রাধান্য দেয়। তারা শুধু মাত্র নিজেদের শক্তি ও বাহাদুরী প্রদর্শন এবং গর্ব ও অহংকারের বশবর্তী হয়েই পাহাড় কেটে কেটে তাদের গৃহ নির্মাণ। করেছিল, প্রয়োজনের তাগিদে নয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাবুকে যাওয়ার পথে। যখন ঐ লোকদের বাসভূমি অতিক্রম করেন তখন তিনি মাথায় কাপড় বেঁধে নেন এবং স্বীয় সওয়ারীকে দ্রুত বেগে চালিত করেন। আর স্বীয় সহচরদেরকে বলেনঃ “যাদের উপর আল্লাহর শাস্তি অবতীর্ণ হয়েছিল তাদের বস্তিগুলি ক্রন্দনরত অবস্থায় অতিক্রম করো। কান্না না আসলেও কান্নার ভান করো। না জানি হয়তো তোমরাও ঐ শাস্তির শিকারে পরিণত হয়ে যাও না কি।”
যা হোক, শেষ পর্যন্ত ঠিক চতুর্থ দিনের সকালে আল্লাহর শাস্তি ভীষণ শব্দের রূপ নিয়ে তাদের উপর এসে পড়লো। ঐ সময় তাদের উপার্জিত। ধন-সম্পদ তাদের কোনই কাজে আসে নাই। যে সব শস্যক্ষেত্র ও ফলমূলের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে এবং ওগুলিকে বৃদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে ঐ উষ্ট্ৰীটির পানি পান অপছন্দ করতঃ ওকে তারা হত্যা করে ফেলে ছিল তা সেই দিন নিষ্ফল প্রমাণিত হয়ে যায় এবং মহামহিমান্বিত আল্লাহর নির্দেশ কার্যকরী হয়েই পড়ে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al-Hijr
Sura: 15
Verses :- 80-84
[ فَمَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُمۡ
So nothing availed them.]
The Destruction of the Dwellers of Al-Hijr, Who are the People called Thamud
Allah tells;
وَلَقَدْ كَذَّبَ أَصْحَابُ الحِجْرِ الْمُرْسَلِينَ
وَاتَيْنَاهُمْ ايَاتِنَا فَكَانُواْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ
And verily, the Dwellers of Al-Hijr denied the Messengers. And We gave them Our signs, but they were averse to them.
The Dwellers of the Al Hijr were the people of Thamud who rejected their Prophet, Salih. Whoever denies even one Messenger, then he has disbelieved in all of the Messengers, thus they are described as rejecting “the Messengers.”
Allah tells us that he (Salih) brought them signs to prove that what he was telling them was true, such as the she-camel which Allah created for them out of a solid rock in response to the supplication of Salih. This she-camel was grazing on their lands, and the people and the camel took water on alternate days that were well-known. When they rebelled and killed it, he said to them,
تَمَتَّعُواْ فِى دَارِكُمْ ثَلَـثَةَ أَيَّامٍ ذلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ
“Enjoy yourselves in your homes for three days. This is a promise which will not be belied.” (11:65)
Allah said:
وَأَمَّا ثَمُودُ فَهَدَيْنَـهُمْ فَاسْتَحَبُّواْ الْعَمَى عَلَى الْهُدَى
And as for Thamud, We showed them and made the path of truth clear but they preferred blindness to guidance. (41:17)
Allah tells us that,
وَكَانُواْ يَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا امِنِينَ
And they used to hew out dwellings from the mountains, (feeling) secure.
meaning, they were without fear and they had no real need for those houses; it was merely a form of extravagance and work without a purpose. This could be seen from their work in the houses in the Al-Hijr through which the Messenger of Allah passed on his way to Tabuk. He covered his head and urged his camel to go faster, saying to his Companions:
لَاا تَدْخُلُوا بُيُوتَ الْقَوْمِ الْمُعَذَّبِينَ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ فَإِنَّ لَمْ تَبْكُوا فَتَبَاكُوا خَشْيَةَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُم
Do not enter the dwellings of those who were punished unless you are weeping, and if you do not weep then make yourself weep out of fear that perhaps what struck them may also strike you.
فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُصْبِحِينَ
But the Sayhah (torment – awful cry) overtook them in the early morning.
meaning in the morning of the fourth day.
فَمَا أَغْنَى عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَكْسِبُونَ
And all that they used to earn availed them not.
meaning all of the benefits that they used to gain from their crops and fruits, and the water which they did not want to share with the she-camel that they killed so that it would not reduce their share of the water – all of that wealth would not protect them or help them when the command of their Lord came to pass.