(Book# 784) সুরা: হিজর সুরা:১৫ ৮৭-৮৮ নং আয়াত:- [ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾ অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন। And We have certainly given you, seven of the often repeated and the great Qur’an.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 784)
সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৮৭-৮৮ নং আয়াত:-
[ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾
অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন।
And We have certainly given you, seven of the often repeated and the great Qur’an.]
www.motaher21.net
لَا تَمُدَّنَّ عَیۡنَیۡکَ اِلٰی مَا مَتَّعۡنَا بِہٖۤ اَزۡوَاجًا مِّنۡہُمۡ وَ لَا تَحۡزَنۡ عَلَیۡہِمۡ وَ اخۡفِضۡ جَنَاحَکَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۸۸﴾
আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনো তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত করো না এবং তাদের জন্য তুমি ক্ষোভ করো না। আর বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।
Do not extend your eyes toward that by which We have given enjoyment to [certain] categories of the disbelievers, and do not grieve over them. And lower your wing to the believers.

সুরা: হিজর
সুরা:১৫
৮৭-৮৮ নং আয়াত:-
[ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾
অবশ্যই আমি তোমাকে দিয়েছি পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাতটি আয়াত এবং মহা কুরআন।
And We have certainly given you, seven of the often repeated and the great Qur’an.]
www.motaher21.net

৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

(وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا)

এখানে স্বাব-এ মাছানী দ্বারা কী উদ্দেশ্য এ বিষয়ে আলেমদের মতামত পাওয়া গেলেও সঠিক কথা হল এই যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য সূরা ফাতিহা। কারণ এতে সাতটি আয়াত রয়েছে আর এটা সালাতে প্রত্যেক রাকাআতে পাঠ করা হয়। আর এটিই সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

“আবূ সাঈদ বিন মুয়াল্লা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এমতাবস্থায় আমি সালাতরত ছিলাম, সে সময় তিনি আমাকে আহ্বান করলেন কিন্তু আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেইনি। অতঃপর আমি সালাত শেষ করে তাঁর নিকট আসলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন: আমার নিকট আসতে কিসে তোমাকে বারণ করল? আমি উত্তরে বললাম যে, আমি সালাতরত অবস্থায় ছিলাম, তখন তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি?

(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اسْتَجِيْبُوْا لِلّٰهِ وَلِلرَّسُوْلِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيْكُمْ)

“হে মু’মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দাও।” (সূরা আনফাল ৮:২৪)

অতঃপর তিনি বললেন: আমি কি মাসজিদ থেকে বের হবার পূর্বে কুরআনে মর্যাদার দিক দিয়ে কোন্ সূরাটি সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন সে সম্পর্কে তোমাকে অবগত করব না? অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হবার সময় আমি তাকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এটা হল

(اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ)‏

“সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।”

সূরা ফাতিহা হল বার বার পঠিত সাতটি আয়াত ও কুরআনুল আযীম যা আমাকে দেয়া হয়েছে। (সহীহ বুখারী: ৪৭০৩)

পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, যেহেতু তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর নিকট হতে সবচেয়ে বড় ও মহান একটি জিনিস দিয়েছেন তাই তাঁকে নিষেধ করছেন তিনি কাফির-মুশরিকদের এই তুচ্ছ অংশ দেখে আকৃষ্ট না হওয়ার জন্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তুমি তোমার চক্ষুদ্বয় কখনও প্রসারিত কর‎ না তার প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি, তার দ্বারা তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। তোমার প্রতিপালক প্রদত্ত জীবনোপকরণ উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী। এবং তোমার পরিবারবর্গকে সালাতের আদেশ দাও ও তাতে অবিচল থাক, আমি তোমার নিকট কোন জীবনোপকরণ চাই না; আমিই তোমাকে জীবনোপকরণ দেই এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য।” (সূরা ত্বহা ২০:১৩১-১৩২) এবং তিনি তাঁর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করলেন তিনি যেন তাদের ব্যাপারে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত না হন।

আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللّٰهِ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِيْ ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُوْنَ)‏

“তুমি ধৈর্য ধারণ কর‎, তোমার ধৈর্য তো আল্লাহরই সাহায্যে। তাদের দরুন দুঃখ কর না এবং তাদের ষড়যন্ত্রে তুমি মনঃক্ষুণত্ন হয়ো না।” (সূরা নাহল ১৬:১২৭)

আর তিনি তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিলেন তিনি যেন মু’মিনদের জন্য তার বিনয়ের ডানাকে অবনমিত করেন। অর্থাৎ তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেন।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ)‏

“এবং যারা তোমার অনুসরণ করে সে সমস্ত‎ মু’মিনদের প্রতি বিনয়ী হও।” (সূরা শু‘আরা ২৬:২১৫)

সুতরাং মানুষের উচিত মু’মিন ব্যক্তিবর্গের সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলা। উচ্চৈঃস্বরে হৈ-হুল্লোড় করে নয়। মানুষকে দাওয়াত দিতে গেলে তাকে নম্র ভাষায় দাওয়াত দিতে হবে, তা না হলে মানুষ তার দাওয়াতে সাড়া দেবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সূরা ফাতিহা অন্যতম একটি মর্যাদাসম্পন্ন সূরা।
২. পার্থিব কোন জিনিসের প্রতি লোভ করা যাবে না।
৩. মানুষকে নম্র ভাষায় ঈমানের দিকে ডাকতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
সূরা ফাতিহার সাতটি আয়াত। যদিও কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন দু’ দু’শো আয়াত বিশিষ্ট সাতটি বড় বড় সূরা। অর্থাৎ আল বাকারাহ, আলে ইমরান, আন নিসা, আল মায়েদাহ, আল আন’আম, আল আ’রাফ ও ইউনূস অথবা আল আনফাল ও আত্ তাওবাহ। কিন্তু পূর্ববর্তী আলেমগণের অধিকাংশই এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে সূরা ফাতিহার কথাই বলা হয়েছে। বরং খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাতটি বারবার আবৃত্তি করার মত সূরা বলে যে সূরা ফাতিহার দিকে ইঙ্গিত করেছেন এর প্রমাণ স্বরূপ ইমাম বুখারী দু’টি “মরফূ” হাদীসও বর্ণনা করেছেন।

# একথাটিও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সাথীদেরকে সান্তনা দেবার জন্য বলা হয়েছে। তখন এমন একটা সময় ছিল যখন নবী ﷺ এবং তাঁর সাথীরা সবাই চরম দুরাবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন। নবুওয়াতের গুরু দায়িত্বভার কাঁধে তুলে নেবার সাথে সাথেই নবী করীমের (সা.) ব্যবসায় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ওদিকে দশ বারো বছরের মধ্যে হযরত খাদিজার (রা) সব সম্পদও খরচ হয়ে গিয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে কিছু উঠতি যুবক ছিলেন। তাদেরকে অভিভাবকরা ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। কতক ছিলেন ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনবরত অর্থনৈতিক বয়কটের আঘাতে তাদের কাজ কারবার একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কতক দুর্ভাগ্য পীড়িত আগেই ছিলেন দাস বা মুক্ত দাস শ্রেণীভুক্ত। তাদের কোন অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডই ছিল না। এরপর দুর্ভাগ্যের ওপর দুর্ভাগ্য হচ্ছে এই যে, নবী (সা.) সহ সমস্ত মুসলমান মক্কা ও তার চারপাশের পল্লীগুলোতে চরম নির্যাতিতের জীবন যাপন করছিলেন। তারা ছিলেন সবদিক থেকে নিন্দিত ও ধিকৃত। সব জায়গায় তাঁরা লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও হাসি-তামাশার খোরাক হয়েছিলেন। এই সঙ্গে মানসিক ও আত্মিক মর্মজ্বালার সাথে সাথে তারা দৈহিক নিপীড়নের হাত থেকেও রেহাই পাননি। অন্যদিকে কুরাইশ সরদাররা পার্থিব অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে সব রকমের সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যের অধিকারী ছিল। এ অবস্থায় বলা হচ্ছে, তোমার মন হতাশাগ্রস্ত কেন? তোমাকে আমি এমন সম্পদ দান করেছি যার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ তুচ্ছ। তোমার এ জ্ঞানগত ও নৈতিক সম্পদ ঈর্ষার যোগ্য ওদের বস্তুগত সম্পদ নয়। ওরা তো নানান হারাম উপায়ে এ সম্পদ আহরণ করছে এবং নানাবিধ হারাম পথে এ উপার্জিত সম্পদ নষ্ট করছে। শেষ পর্যন্ত ওরা একদম কপর্দক শূন্য ও কাংগাল হয়ে নিজেদের রবের সামনে হাজির হবে।
# তারা যে নিজেদের কল্যাণকামীকে নিজেদের শত্রু মনে করছে, নিজেদের ভ্রষ্টতা ও নৈতিক ত্রুটিগুলোকে নিজেদের গুণাবলী মনে করছে, নিজেরা এমন পথে এগিয়ে চলছে এবং নিজেদের সমগ্র জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যার নিশ্চিত পরিণাম ধ্বংস এবং যে ব্যক্তি তাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার পথ দেখাচ্ছে তাঁর সংস্কার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করার জন্য সর্বাত্মক সংগ্রাম চালাচ্ছে, তাদের এ অবস্থা দেখে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ো না।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

# এই মহা সত্যের সাথেই সম্পৃক্ত সেই চির সত্যবাণী যার বাহক হচ্ছেন নবী রসূলরা। এই চির সত্য বাণীরই অন্যতম হচ্ছে আল কোরআন। তাই বলা হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি তােমাকে সাত আয়াত (বিশিষ্ট একটি সূরা) দিয়েছি, যা (নামাযের ভেতর ও বাইরে) বারবার পঠিত হয়, আরাে (দিয়েছি জীবনের বিধান হিসাবে মহাগ্রন্থ আল কোরআন।'(আয়াত ৮৭) আলােচ্য আয়াতে ‘বার বার পঠিতব্য’ বা আল মাছানী বলতে হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী সুরায়ে ফাতেহার সাতটি আয়াতকেই বুঝানাে হয়েছে। কারণ, এই সাতটি আয়াত নামাযের মধ্যে বার বার পড়া হয়। অথবা উক্ত সাতটি আয়াতে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। আর মহান আল কুরআন বলতে গােটা কোরআন শরীফকে বুঝানাে হয়েছে।  *সৃষ্টি ভােগবিলাস ও ধ্বংস : এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, নিখিল বিশ্বের সৃষ্টির সত্যতা এবং কেয়ামতের সত্যতার সাথে পবিত্র কোরআনের প্রসংগটি উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত এর দ্বারা এ কথাই বুঝানাে হয়েছে যে, নিখিল বিশ্ব, গােটা সৃষ্টি জগত এবং কেয়ামতের বিষয়টি যে মহা সত্যের সাথে সম্পৃক্ত, তারই সাথে সম্পৃক্ত এই পবিত্র কোরআনও। এই কোরআন স্রষ্টার অমােঘ বিধানের পরিচয় তুলে ধরে, হৃদয়কে এর প্রতি আকৃষ্ট করে, জীবন ও জগতকে কেন্দ্র করে যে অসংখ্য খােদায়ী নিদর্শনাবলী লােক চক্ষুর অন্তরালে রয়ে গেছে সেগুলােকে প্রকাশ করে, উন্মােচিত করে এবং সেগুলাের রহস্য ও ভেদ অনুধাবন করার জন্যে মানুষের বিবেক বুদ্ধিকে আলােড়িত করে। সর্বোপরি ন্যায় ও অন্যায় এবং সত্য ও মিথ্যার ব্যবধান মানুষের সামনে তুলে ধরে। ভালাে ও মন্দ এবং মংগল ও অমংগলের পার্থক্য মানুষের সামনে তুলে ধরে। মােট কথা এই পবিত্র কোরআনও সেই মহা সত্য হতেই উৎসারিত যার ইংগীতে গােটা সৃষ্টি জগত অস্তিত্ব লাভ করেছে। গােটা সৃষ্টি জগতের অস্তিত্ব যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য এই পবিত্র কোরআনও। চিরন্তন ও শাশ্বত খােদায়ী বিধানের ন্যায়ই চিরন্তন এই কোরআন। এটা ক্ষণস্থায়ী ও বিলীন হয়ে যাওয়ার মতাে কোনাে বস্তু নয়। এই কোরআন চিরকাল বিদ্যমান থেকে জীবনের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাবে, জীবনের গতি ও ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে যাবে।
# অবিশ্বাসী ও খােদাদ্রোহীদের শত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, তাদের শত অনীহা অবিশ্বাস এর অস্তিত্ব ও প্রভাবকে খাটো করতে পারবে না। কারণ সে সবের ভিত্তি হচ্ছে মিথ্যার ওপর। আর মিথ্যার কোনাে স্থায়িত্ব নেই। গােটা সৃষ্টি জগতে এর অস্তিত্ব হচ্ছে আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী। কাজেই যিনি মহাসত্য হতে উৎসারিত এই পবিত্র কোরআনের ধারক হবেন, বাহক হবেন এবং যিনি সেই মহাসত্যের সাথে সম্পৃক্ত পবিত্র বাণী তথা কোরআনের প্রচার ও প্রসারক হবেন তাঁর দৃষ্টি কখনও ক্ষণস্থায়ী কোনাে বস্তুর প্রতি নিবদ্ধ থাকতে পারে না, পৃথিবীর মায়াবী কোনাে চাকচিক্য তাকে আকৃষ্ট করতে পারে না। তার পরিণতি কখনও বাতিলপন্থী ও ভ্রষ্ট লােকদের ন্যায় হতে পারে না। তার চলার পথে কোনাে কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বাতিলপন্থীদের কোনাে আচরণই তাকে বিচলিত করতে পারে না। তিনি সব কিছুকে উপেক্ষা করে সত্যের পথেই চলতে থাকবেন। এ কথাই নিচের আয়াতে বলা হয়েছে। (আর এই কোরআনের শিক্ষা হচ্ছে, আমি এই (কাফেরদের) মাঝে কিছু লােকদের ভােগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি তার প্রতি তুমি কখনাে তােমার দু চোখ তুলে তাকাবে না, (ঈমান না আনার জন্যে) তাদের ওপর তুমি কোনাে ক্ষোভ করবে না বরং (ওদের কথা বাদ দিয়ে) তুমি ঈমানদারদের দিকেই ঝুঁকে পড়াে।'(আয়াত ৮৮)। অর্থাৎ জাগতিক জীবনে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে অনেককে ভােগ বিলাসিতার যে সব উপায় উপকরণ দান করা হয়েছে সেগুলাের প্রতি তুমি আদৌ দৃষ্টিপাত করবে না। আগ্রহের দৃষ্টি ভােগের দৃষ্টি অথবা কামনার দৃষ্টি কোনাে দৃষ্টিই সে দিকে নিক্ষেপ করা যাবে না। কারণ সেগুলাে ক্ষণস্থায়ী ও মিথ্যা, আর তুমি যার ধারক ও বাহক তা হচ্ছে চিরস্থায়ী ও চির সত্য। আলােচ্য আয়াতের উক্ত বক্তব্যের অর্থ এটা মােটেও নয় যে, যারা বঞ্চিত তারা বঞ্চনাকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে আর ভােগ বিলাসিতায় লিপ্ত লােকদেরকে ওই অবস্থায়ই ছেড়ে দেয়া হবে। সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়ে গােটা সমাজ যদি দুটো শ্রেণীতে বিভক্ত হয়ে পড়ে; একটি শ্রেণী মযলুম ও বঞ্চিত আর অপর শ্রেণীটি ভােগবাদী ও বিলাসী, এরূপ পরিস্থিতিকে ইসলাম কখনও মেনে নিতে পারে না। কারণ ইসলামের ভিত্তি হক ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং ইসলাম চায় যে, এই গােটা সৃষ্টি জগতও হক ও ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকুক। কাজেই ইসলাম কখনও অন্যায় ও অসাম্যকে মেনে নিতে পারে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) বলছেনঃ “হে নবী (সঃ)! আমি যখন তোমাকে কুরআন কারীমের ন্যায় অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী সম্পদ দান করেছি। তখন তোমার জন্যে মোটেই শোভনীয় নয় যে, তুমি কাফিরদের পার্থিব ধনসম্পদের প্রতি লোভনীয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। এ সব কিছু তো ক্ষণস্থায়ী মাত্র। শুধু পরীক্ষা স্বরূপ কয়েকদিনের জন্যে মাত্র তাদেরকে এগুলি দেয়া হয়েছে। সাথে সাথে তোমার পক্ষে এটাও সমীচীন নয় যে, তুমি তাদের ঈমান না আনার কারণে দুঃখিত, হবে। হ্যা, তবে তোমার উচিত যে, তুমি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত নম্র ও কোমল হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে লোক সকল! তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল আগমন করেছে, যার কাছে তোমাদের কষ্ট প্রদান কঠিন ঠেকে, যে তোমাদের শুভাকাংখী এবং যে মুমিনদের উপর অত্যন্ত দয়ালু।”

(আরবি) সম্পর্কে একটি উক্তি তো এই যে, এর দ্বারা কুরআন কারীমের প্রথম দিকের দীর্ঘ ৭(সাত)টি সূরাকে বুঝানো হয়েছে। সূরা গুলিহচ্ছেঃ বাকারা, আল-ইমরান, নিসা, মায়েদাহ, আনআম, ‘আরাফ এবং ইউসুফ। কেননা, এই সূরাগুলিতে ফারায়িয, হুদূদ, ঘটনাবলী এবং নির্দেশনাবলী বিশেষ পন্থায় বর্ণনা রয়েছে। অনুরূপভাবে দৃষ্টান্তসমূহ, খবরসমূহ এবং উপদেশাবলীও বহুল পরিমাণে রয়েছে। কেউ কেউ সূরায়ে ‘আরাফ পর্যন্ত ছ’টি সূরা গণনা করে সূরায়ে আনফাল ও তাওবা’কে সপ্তম সূরা বলেছেন। তাঁদের মতে এই দু’টি সূরা মিলিতভাবে একটি সূরাই বটে।

হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি এই যে, একমাত্র হযরত মূসা (আঃ) এগুলির মধ্যে দু’টি সূরা লাভ করেছিলেন। আর আমাদের নবী (সঃ) ছাড়া বাকী অন্যান্য নবীদের কেউই এগুলি প্রাপ্ত হন নাই। একটা উক্তি রয়েছে যে, প্রথমতঃ হযরত মূসা (আঃ) ছ’টি লাভ করেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি তার প্রতি অবতারিত লিখিত ফলকগুলি ছুঁড়ে ফেলেছিলেন তখন দুটি উঠে। গিয়েছিল এবং চারটি রয়েছিল। একটি উক্তি এই আছে যে, “কুরআন আযীম দ্বারাও এটাই উদ্দেশ্য।

যিয়াদ (রঃ) বলেনঃ “এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি তোমাকে সাতটি অংশ দিয়েছি।” সেগুলি হচ্ছেঃ “আদেশ, নিষেধ, শুভসংবাদ, ভয়, দৃষ্টান্ত, নিয়ামত রাশির হিসাব এবং কুরআনিক খবরসমূহ”।

(আরবি) দ্বিতীয় উক্তি এই যে, দ্বারা সূরায়ে ফাতেহা’কে বুঝানো হয়েছে, যার সাতটি আয়াত রয়েছে। বিসমিল্লাহসহ এই সাতটি আয়াত। সুতরাং ভাবার্থ হচ্ছেঃ “এগুলি দ্বারা আল্লাহ তাআলা তোমাকে বিশিষ্ট করেছেন। এটা দ্বারা কিতাবকে শুরু করা হয়েছে এবং প্রত্যেক রাকআতে এটা পঠিত হয়, তা ফরয, নফল ইত্যাদি যেই নামাযই হোক না কেন।” ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) এই উক্তিটিই পছন্দ করেছেন এবং এই ব্যাপারে যে হাদীসগুলি বর্ণিত হয়েছে সেগুলিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আমরা ঐ সমূদয় হাদীস সূরায়ে ফাতেহার ফযীলতের বর্ণনায় এই তাফসীরের শুরুতে লিখে দিয়েছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যেই।

এই জায়গায় ইমাম বুখারী (রাঃ) দুটি হাদীস এনেছেন। একটি হাদীসে হযরত আবু সাঈদ মুআল্লা (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমি নামায পড়ছিলাম। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) এসে আমাকে ডাক দেন। কিন্তু আমি (নামাযে ছিলাম বলে) তাঁর কাছে গেলাম না। নামায শেষে যখন আমি তাঁর কাছে হাজির হই তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ঐ সময়েই তুমি আমার কাছে আস নাই কেন?” আমি উত্তরে বললামঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি নামাযে ছিলাম।” তিনি বললেনঃ “আল্লাহ তাআলা কি (আরবি) (হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) যখন তোমাদেরকে ডাক দেন তখন তোমরা তাদের তাকে সাড়া দাও) (৮:২৪) এ কথা বলেন নাই? জেনে রেখো যে, মসজিদ হতে বের হওয়ার পূর্বেই আমি তোমাকে কুরআন। কারীমের একটি খুব বড় সূরার কথা বলবো।” কিছুক্ষণ পর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) মসজিদ থেকে বের হতে উদ্যত হলেন, তখন আমি তাঁকে ঐ ওয়াদাটি স্মরণ করিয়ে দিলাম। তিনি তখন বললেনঃ “ওটা হচ্ছে (আরবি) এই সূরাটি। এটাই হচ্ছে (আরবি) এবং এটাই বড় কুরআন যা আমাকে প্রদান করা হয়েছে।”

অন্য হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরায়ে ফাতেহাই হলো (আরবি) এবং এটাই কুরআনে আযীম। সুতরাং এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হলো যে, (আরবি) এবং (আরবি) দ্বারা সূরায়ে ফাতেহাকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু এটাও মনে রাখা উচিত যে, এটা ছাড়া অন্যটাও উদ্দেশ্য হতে পারে এবং এহাদীসগুলি ওর বিপরীত নয়, যখন অন্যগুলোতেও এই মূল তত্ত্ব পাওয়া যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন উত্তম বাণী সম্বলিত কিতাব যা সুসামঞ্জস্য এবং যা পুনঃপুনঃ আবৃত্তি করা হয়।” (৩৯:২৩) সুতরাং এই আয়াতে সম্পূর্ণ কুরআনকে বলা হয়েছে এবং ও বলা হয়েছে। কাজেই এটা এক দিক দিয়ে এবং অন্য দিক দিয়ে হলো। আর কুরআন আযীমও এটাই। যেমন নিম্নের রিওয়াইয়াত দ্বারা এটা প্রমাণিত হয়ঃ রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর স্থাপিত ওটা কোন্ মসজিদ?” উত্তরে তিনি নিজের মসজিদের (মসজিদে নববী) দিকে ইশারা করেন। অথচ এটাও প্রমাণিত বিষয় যে, ঐ আয়াতটি কুবার মসজিদ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়। সুতরাং নিয়ম এই যে, কোন জিনিসের উল্লেখ অন্য জিনিসকে অস্বীকার করে না, যদি ওর মধ্যেও ঐরূপ গুণ থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তি আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে কুরআন পেয়ে নিজেকে অন্য কিছু থেকে অমুখাপেক্ষী মনে করে না।” এই হাদীসের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি কুরআন পেলো অথচ এটা ছাড়া অন্য কিছু থেকে বেপরোয়া হলো না সে মুসলমান নয়। এই তাফসীর সম্পূর্ণরূপে সঠিক বটে, কিন্তু এই হাদীসের দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয়। এ হাদীসের সঠিক ভাব ও উদ্দেশ্য আমরা আমাদের এই তাফসীরের শুরুতে বর্ণনা করেছি।

হযরত আবু রাফে’ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহর (সঃ) বাড়ীতে এক মেহমান আগমন করে। ঐ দিন তার বাড়ীতে কিছুই ছিল না। তিনি রজব মাসে পরিশোধের অঙ্গীকারে একজন ইয়াহূদীর কাছে কিছু আটা ধার চাইতে পাঠান। কিন্তু ইয়াহূদী বলেঃ “আমার কাছে কোন জিনিস বন্ধক রাখা ছাড়া আমি ধার দেবো না।” ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! আমি আকাশবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় আমানতদার এবং যমীনবাসীদের মধ্যেও। সে যদি আমাকে ধার দিতো অথবা বিক্রী করতো তবে আমি অবশ্য অবশ্যই ওটা আদায় করে দিতাম।” তখন (আরবি) এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তাঁকে যেন পার্থিব জগতের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা হয়েছে। হযরত ইবনু আ স (রাঃ) বলেনঃ “মানুষের জন্যে এটা নিষিদ্ধ যে, সে কারো ধন-সম্পদের প্রতি লোভের দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ পাক যে বলেছেনঃ “আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি এর দ্বারা সম্পদশালী কাফিরদেরকে বুঝানো হয়েছে”।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- Al-Hijr
Sura: 15
Verses :- 87-88
[ وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنٰکَ سَبۡعًا مِّنَ الۡمَثَانِیۡ وَ الۡقُرۡاٰنَ الۡعَظِیۡمَ ﴿۸۷﴾
And We have certainly given you, seven of the often repeated and the great Qur’an.]
www.motaher21.net
A Reminder of the Blessing of the Qur’an and the Command to focus on its Message

Allah says:

وَلَقَدْ اتَيْنَاكَ سَبْعًا مِّنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْانَ الْعَظِيمَ

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُوْمِنِينَ
And indeed, We have bestowed upon you seven of the Mathani, and the Grand Qur’an. Look not with your eyes ambitiously at what We have given to certain classes of them, nor grieve over them. And lower your wings to the believers.

Allah is saying to His Prophet:

Since We have given you the Grand Qur’an, then do not look at this world and its attractions, or the transient delights that we have given to its people in order to test them. Do not envy what they have in this world, and do not upset yourself with regret for their rejection of you and their opposition to your religion.

وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ

And lower your wings to the believers who follow you. (26:215) meaning – be gentle with them, like the Ayah,

لَقَدْ جَأءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُوْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

Verily, there has come unto you a Messenger from among yourselves. It grieves him that you should receive any injury or difficulty. He is anxious for you, for the believers – he is full of pity, kind and merciful. (9:128)

There were some differences among the scholars over the meaning of “seven of the Mathani”.

Ibn Mas`ud, Ibn Umar, Ibn Abbas, Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Ad-Dahhak and others said that;

they are the seven long (Surahs), meaning

Al-Baqarah,

Al-Imran,

An-Nisa’,

Al-Ma’idah,

Al-An`am,

Al-A`raf,

Yunus.

There are texts to this effect reported from Ibn Abbas and Sa`id bin Jubayr.

Sa`id said:

“In them, Allah explains the obligations, the Hudud (legal limits), stories and rulings.”

Ibn Abbas said,

“He explains the parables, stories and lessons.”

The second opinion is that;

they (the seven of the Mathani) are Al-Fatihah, which is composed of seven Ayat.

This was reported from Ali, Umar, Ibn Mas`ud and Ibn Abbas.

Ibn Abbas said:

“The Bismillah, is completing seven Ayah, which Allah has given exclusively to you (Muslims).”

This is also the opinion of Ibrahim An-Nakha`i, Abdullah bin Umayr, Ibn Abi Mulaykah, Shahr bin Hawshab, Al-Hasan Al-Basri and Mujahid.

Al-Bukhari, may Allah have mercy on him, recorded two Hadiths on this topic. The first was recorded from Abu Sa`id bin Al-Mu`alla, who said:

“The Prophet passed by me while I was praying. He called out for me but I did not come until I finished my prayer. Then I came to him, and He asked,

مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنِي

What stopped you from coming to me?

I said, `I was praying’.

He said,
أَلَمْ يَقُلِ اللهُ
D

;

يأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُواْ اسْتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ

O you who believe! Answer Allah (by obeying Him) and (His) Messenger when he calls you… (8:24)

أَلَا أُعَلِّمُكَ أَعْظَمَ سُورَةٍ فِي الْقُرْانِ قَبْلَ أَنْ أَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِد

Shall I not teach you the most magnificent Surah before I leave the Masjid!

Then the Prophet went to leave the Masjid, and I reminded him, so he said,

الْحَمْدُ للَّهِ رَبِّ الْعَـلَمِينَ

All praises and thanks be to Allah, the Lord of all that exists. (1:2)

هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِي وَالْقُرْانُ الَّذِي أُوتِيتُه

This is the seven of the Mathani and the Qur’an which I have been given.”

The second Hadith was reported from Abu Hurayrah who said that the Messenger of Allah said:

أُمُّ الْقُرْانِ هِيَ السَّبْعُ الْمَثَانِي وَالْقُرْانُ الْعَظِيم
Umm Al-Qur’an (the Mother or the Essence of the Qur’an), is the seven Mathani, and the Grand Qur’an.

This means that Al-Fatihah is the seven Mathani and the Grand Qur’an, but this does not contradict the statement that the seven Mathani are the seven long Surahs, because they also share these attributes, as does the whole Qur’an.

As Allah says,

اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَـباً مُّتَشَـبِهاً مَّثَانِيَ

Allah has sent down the best statement, a Book (this Qur’an), its parts resembling each other in goodness and truth, oft-recited. (39:23)

So it is oft-recited in one way, and its parts resemble one another in another way, and this is also the Grand Qur’an.

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ

Look not with your eyes ambitiously at what We have given to certain classes of them.

meaning, be content with the Grand Qur’an that Allah has given to you, and do not long for the luxuries and transient delights that they have.

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

لَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ
(Look not with your eyes ambitiously),

“He (in this Ayah) forbade a man to wish for what his companion has.”

إِلَى مَا مَتَّعْنَا بِهِ أَزْوَاجًا مِّنْهُمْ

at what We have given to certain classes of them,

Mujahid said:

“This refers to the rich.

Leave a Reply