(Book# 787) Sura:- An-Nahl Sura: 16 Verses :- 01 [ أَتَى أَمْرُ اللّهِ আল্লাহর আদেশ আসবেই; The Event ordained by Allah has indeed come,] www.motaher21.net

Requested for your feedback.

About Author

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم

আসসালামুয়ালাইকুম।

মুহতারাম,

মহান আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া জানাই, আল্ ‌হাম্ দু লিল্লাহ।

……..……………………
সুধু ১ টি কোটেসান বলা হয়ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
কিন্তু তাতে পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে না।
তাই চেষ্টা করছি মুল বিষয় বুঝতে পারে।
এতে আমি কম-বেশি এক ডজন তাফসীর সহাযোগিতা নিচ্ছি।

যেমন:- ইবনে ‌কাসীর, ফী যিলালিল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন, কুরআনুল কারীম, মাও: আশরাফ আলী, আবুবকর ‌যাকারিয়া‌, আহসানুল বায়ান, তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ,
English Tafsir Ibn Kathir,
The Noble Quran…..

………………..

আসসালামুয়ালাইকুম।
দোস্ত তুমরা কয়েকজন হয়তো বুঝতে পারছো।
কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারছি না।
আমি ধারাবাহিক কুরআন শরীফ এর আলোচনা করা হচ্ছে।
বাংলা, English এবং عرب তিন ভাষায় লিখিত।
তাই একটু ‌সময় দিতে হবে। এবং একটু লম্বা হতে পারে।
তাই আমাদের ছেলেমেয়েরা ও সবাই মিলে বুঝতে পারে।

তোমরা নিজেদের অবস্থান ও সময় মত সবাই দেখতে ‌পাবে।
১) সুরা ‌ফাতিহা,২)বাকারা, ৩) আলে ইমরান,৪) নিছা,৫)মায়েদা,৬)আল আনআম, ৭)আল্ আরাফ, ৮)আল্ আন্ ফাল,৯) আত্‌ তাওবা, আলোচনা করা হয়েছে। ১০) সুরা ইউনুস ১১) সুরা হুদ ১২)সুরা ইউসুফ ১৩) সুরা রাদ ১৪) সুরা ইব্রাহিম ১৫)সুরা হিজর ১৬) সুরা ‌নমল চলছে…।
ধারাবাহিক কুরআন এর আলোচনা করা হচ্ছে..
এর আগেও সুরা হুজরাত(৪৯) সুরা সফ‌ (৬১)
সুরা মুজাম্মাল (৭৩) ইত্যাদি আরো কয়েকটি সুরা আলোচনা করা হয়েছে।

আমি মনে করি সবাই বুদ্ধিমান।
এটা সবাই বুঝতে পারে।

………
একটা লিখা হল Facebook এতে ১০,০০,০০০/(দশ লক্ষ +/- ) এর বেশি লোক কে পাঠানো হয়।
What’s app তে ৩৫ টি গ্রুপে ও tweeter এতে পাঠানো হয়।
………………

আমার প্রকাশিব্য অপেক্ষায় ৫টি
বই কেন আপনি ছাপাবেন ইনশাআল্লাহ :-

১) আল্ ‌হাম্ দু লিল্লাহ, আমি এখন পর্যন্ত ৭৮৬ টি বই লিখেছি।
২) এখন পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে ১০
টি বই ।
৩) Durban R S A থেকে Ahmed Hossen Deedat (2004 সালে) প্রকাশিত করেছেন।
তিনি এই বইগুলো ৫৬ টি দেশে পাঠিয়ে ছিলেন।
৪) ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়াম) ২০০৭ সালে প্রকাশিত করেছেন ।
ওয়ামী বই সিরিজ ২৬।
৫) Australian Islamic Library
2015 সালে প্রকাশিত করেছেন
৬) এই পর্যন্ত কম বা বেশি ৫ লক্ষ বই বিতরণ বা বিক্রয় করা হয়েছে।
৭) প্রকাশিব্য বই ৫টি ছাপানো হলে আমি ইনশাআল্লাহ ১০০০ এক হাজার বই ক্রয় করবো।
………….
বই ৫টি পছন্দ করেছি :-
আমার লেখা ৭৭৩টি বই এর মধ্যে এগুলো সর্ব উত্তম ৫টি।
১) কুরআন এর আলোকে আমাদের প্রতি দিন কেমন কাজকর্ম করতে হবে এই বিষয়ে ‌বলা হয়েছে।
“ঘুম থেকে কাজ উত্তম ” এই বইতে পাঠকগণ ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবেন।
২) আমরা অনেকেই আল্লাহ তায়ালা কে ভালো বাসার দাবি করেন।
আর আখেরাতে নাজাত পেতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে ভালো বাস্তব জীবনে ভালো ভাসতে হবে।
“আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি”?
এই বইতে সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৩) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বার বার বলেছেন যে আমরা সঠিক কথা বলতে হবে,
সঠিক কাজটি করতে হবে।
“এমন কথা কেন বল?”
এই বইতে পাঠকগণ সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে ‌দেয়া হয়েছে।
৪) সুরা বনি ইসরাইলে ২৩ নং আয়াত থেকে ৩৯ নং আয়াত পর্যন্ত (৩ তৃতীয় রুকু ও ৪ চতুর্থ রুকু তে) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন :-
আমাদের সমাজ ও জীবন কি ভাবে পরিচালিত করা দরকার !
এই বিষয়ে চমৎকার ভাবে বলেছেন।
“আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন”
বইতে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

৫) “ইসলামের বিজয়” বইটিতে
ক) আমাদের অধ্যায়ন,‌ খ)বই পড়া ও বিতরণ, গ) মুমিন, কাফের,মুনাফীক ও মানুষ ঘ) লেন দেন । ঙ) ২৪ ঘন্টার রুটিন‌ । চ) ইসলামের বিজয় কি ভাবে করা‌জাবে। ছ) আল্লাহকে ভালোবাসা, জ) আন্তর্জাতিক বিশ্বে দাওয়াত ।
এই সকল বিষয়ে ‌ আলোচনা করা হয়েছে।
তাই এটা অবশ্যই পড়া অবশ্যই প্রয়োজন।
আমরা সবাই ইনশাআল্লাহ নিজে পড়ুন , অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করুন।
…….

ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোতাহার হোসেন
House # 12
Road # 03, Block-B
Pink city Model Town,
Khilkhet, Dhaka1229, Bangladesh.
Phone: +88-01952761232/01827764252 email: motaher7862004@ya hoo.com/engrmotaher440@gmail.com

FB:Muhammed Motaher Hossain/ Motaher’s Fan Page
Engr Motaher: https://motaher21.net/about-author/

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 787)
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 01
[ أَتَى أَمْرُ اللّهِ
আল্লাহর আদেশ আসবেই;
The Event ordained by Allah has indeed come,]
www.motaher21.net
اَتٰۤی اَمۡرُ اللّٰہِ فَلَا تَسۡتَعۡجِلُوۡہُ ؕ سُبۡحٰنَہٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۱﴾
আল্লাহর আদেশ আসবেই; সুতরাং তোমরা তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যাকে অংশী করে তিনি তার উর্ধে।
The command of Allah is coming, so be not impatient for it. Exalted is He and high above what they associate with Him.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
০১ নং আয়াত:-
[ أَتَى أَمْرُ اللّهِ
আল্লাহর আদেশ আসবেই;
The Event ordained by Allah has indeed come,]
www.motaher21.net

১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

নামকরণ:

النَّحْلِ- আন্-নাহল শব্দের অর্থ: মৌমাছি, মধুমক্ষিকা, মধুকর, ভ্রমর ইত্যাদি। উক্ত সূরার ৬৮ নং আয়াতে মৌমাছি সম্পর্কে আলোচনা বিবৃত হয়েছে বিধায় উক্ত সূরাকে “আন্ নাহল” নামে নামকরণ করা হয়েছে। সূরাতে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের আলোচনা স্থান পেয়েছে

সূরার শুরুর দিকে কিয়ামতের নিকটবর্তীতা, চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি ও তার উপকারিতা, আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে বিভিন্ন বৃক্ষ, তরুলতা ইত্যাদি উৎপন্নসহ গণনাতীত নেয়ামত সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। সব কিছুর স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, মুশরিকদের বাতিল মা‘বূদ কিছুই সৃষ্টি করেনি, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়েছে। যারা মানুষকে পথভ্রষ্টতা ও খারাপ কাজের দিকে আহ্বান করে তারা আহুত ব্যক্তিদেরও অপরাধ বহন করবে, কাফির ও মু’মিনের আত্মা কবচ করার সময়কালীন অবস্থা, আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে মুশরিকদের স্বেচ্ছাচারিতাপূর্ণ ধারণা ও তাওহীদের বাণী দিয়ে প্রত্যেক জাতির কাছে নাবী প্রেরণ, মানব জাতি আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়াদ্রতা, কয়েকটি উপমা, কিয়ামতের দিন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী নিয়ে আসা হবে এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও সাক্ষী হিসেবে নিয়ে আসা হবে, ঈমানে পরিপূর্ণ অন্তরবিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তি কুফরী করতে বাধ্য হলে তার বিধান, হালাল-হারামের মানদণ্ড ইসলামী শরীয়ত, সবশেষে হিকমত ও উত্তম কথার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার পথে মানুষকে আহ্বান এবং ক্ষমা ও ধৈর্য ধারণ করার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১ নং আয়াতের তাফসীর:

(أَتٰٓي أَمْرُ اللّٰهِ)-

এখানে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ আসবেই বলতে কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। সুতরাং তা সত্বর কামনা করা উচিত নয়। এখানে অতীতকালীন ক্রিয়া দ্বারা বর্ণনা করার কারণ হল যে, যেহেতু এটা বাস্তবায়িত হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, অবশ্যই এটা বাস্তবায়িত হবে। সেদিক বিবেচনা করে أَتٰٓي অতীতকালীন ক্রিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ)

“মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ)‏

“কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে, চন্দ্র ফেটে গেছে।” (সূরা কামার ৫৪:১) তাই আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি বা কিয়ামত সংঘটিত হবার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করতে নিষেধ করেছেন। কারণ এ শাস্তি যখন এসে যাবে তখন কেউ তা প্রতিহত করতে পারবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَيَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ ط وَلَوْلَآ أَجَلٌ مُّسَمًّي لَّجَا۬ءَهُمُ الْعَذَابُ ط وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ ‏ يَسْتَعْجِلُوْنَكَ بِالْعَذَابِ ط وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌم بِالْكٰفِرِيْنَ) ‏

“তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত তবে শাস্তি তাদের ওপর অবশ্যই আসত। নিশ্চয়ই তাদের ওপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তারা টেরও পাবে না। তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৫৩-৫৪)

এরূপ সূরা শুরার ২৮ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যে অংশী স্থাপন করে তাত্থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনি একক ও অদ্বিতীয়।

অতএব কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করা যাবে না। শাস্তি আসতে বিলম্বের কারণে মনে করা যাবে না যে, এটা বাস্তবায়িত হবে না, বরং নির্ধারিত সময়ে তা অবশ্যই আসবে। আর এ ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলিমকে অন্তরে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, কিয়ামত নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কিয়ামত অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে, আর এ ব্যাপারে বিশ্বাস রাখতে হবে, কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করা যাবে না ।
২. সকল অংশী স্থাপনকারীর অংশী হওয়া থেকে আল্লাহ তা‘আলা সুমহান ও পবিত্র।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
(১৬-নহল) : নামকরণ:

৬৮ আয়াতের وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ বাক্যাংশ থেকে এ নামকরণ করা হয়েছে। এও নিছক আলামত ভিত্তিক, নয়তো নাহল বা মৌমাছি এ সূরার আলোচ্য বিষয় নয়।
(১৬-নহল) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য- প্রমাণ এর নাযিল হওয়ার সময়-কালের ওপর আলোকপাত করে। যেমন, ৪১ আয়াতের وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِنْ بَعْدِ مَا ظُلِمُوا বাক্যাংশ থেকে এ কথা পরিষ্কার জানা যায় যে, এ সময় হাবশায় হিজরত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১০৬ আয়াতের مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ বাক্য থেকে জানা যায়, এ সময় জুলুম-নিপীড়নের কঠোরতা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল এবং এ প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল যে, যদি কোন ব্যক্তি নির্যাতনের আধিক্যে বাধ্য হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করে ফেলে তাহলে তার ব্যাপারে শরীয়াতের বিধান কি হবে।

। ১১২- ১১৪ আয়াতগুলোর— وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا ……………..إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ বাক্যগুলো পরিষ্কার এদিকে ইঙ্গিত করছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের পর মক্কায় যে বড় আকারের দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল এ সূরা নাযিলের সময় তা শেষ হয়ে গিয়েছিল।

। এ সূরার ১১৫ আয়াতটি এমন একটি আয়াত যার বরাত দেয়া হয়েছে সূরা আন’আমের ১১৯ আয়াতে। আবার সূরা আন’আমের ১৪৬ আয়াতে এ সূরার ১১৮ আয়াতের বরাত দেয়া হয়েছে। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, এ সূরা দু’টির নাযিলের মাঝখানে খুব কম সময়ের ব্যবধান ছিল।এসব সাক্ষ্য- প্রমাণ থেকে একথা পরিষ্কার জানা যায় যে, এ সূরাটিও মক্কী জীবনের শেষের দিকে নাযিল হয়। সূরার সাধারণ বর্ণনাভংগীও একথা সমর্থন করে।
(১৬-নহল) : কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়:

শির্ককে বাতিল করে দেয়া, তাওহীদকে সপ্রমাণ করা, নবীর আহবানে সাড়া না দেবার অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করা ও উপদেশ দেয়া এবং হকের বিরোধিতা ও তার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শন করা এ সূরার মূল বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়। আলোচনা কোন ভূমিকা ছাড়াই আকস্মিকভাবে একটি সতর্কতামূলক বাক্যের সাহায্যে সূরার সূচনা করা হয়েছে। মক্কার কাফেররা বারবার বলতো, “আমরা যখন তোমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছি এবং প্রকাশ্যে তোমার বিরোধিতা করছি তখন তুমি আমাদের আল্লাহর যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা আসছে না কেন?” তাদের এ কথাটি বারবার বলার কারণ ছিল এই যে, তাদের মতে এটিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবী না হওয়ার সবচেয়ে বেশী সুস্পষ্ট প্রমাণ। এর জবাবে বলা হয়েছে, নির্বোধের দল, আল্লাহর আযাব তো তোমাদের মাথার ওপর তৈরী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখন তা কেন দ্রুত তোমাদের ওপর নেমে পড়ছে না এজন্য হৈ চৈ করো না। বরং তোমরা যে সামান্য অবকাশ পাচ্ছো তার সুযোগ গ্রহণ করে আসল সত্য কথাটি অনুধাবন করার চেষ্টা করো। এরপর সংগে সংগেই বুঝাবার জন্য ভাষণ দেবার কাজ শুরু হয়ে গেছে এবং নিম্নলিখিত বিষয়বস্তু একের পর এক একাধিকবার সামনে আসতে শুরু করেছে।

। (১) হৃদয়গ্রাহী যুক্তি এবং জগত ও জীবনের নিদর্শনসমূহের সুস্পষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণের সাহায্যে বুঝানো হয়েছে যে, শির্ক মিথ্যা এবং তাওহীদই সত্য।

। (২) অস্বীকারকারীদের সন্দেহ, সংশয়, আপত্তি, যুক্তি ও টালবাহানার প্রত্যেকটির জবাব দেয়া হয়েছে।

। (৩) মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরার গোয়ার্তুমি এবং সত্যের মোকাবিলায় অহংকার ও আষ্ফালনের অশুভ পরিণামের ভয় দেখানো হয়েছে।

। (৪) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে জীবন ব্যবস্থা এনেছেন, মানুষের জীবনে যে সব নৈতিক ও বাস্তব পরিবর্তন সাধন করতে চায় সেগুলো সংক্ষেপে কিন্তু হৃদয়গ্রাহী করে বর্ণনা করা হয়েছে। এ প্রসংগে মুশরিকদেরকে বলা হয়েছে, তারা যে আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নেবার দাবি করে থাকে এটা নিছক বাহ্যিক ও অন্তসারশূন্য দাবি নয় বরং এর বেশ কিছু চাহিদাও রয়েছে। তাদের আকীদা-বিশ্বাস, নৈতিক-চারিত্রিক ও বাস্তব জীবনে এগুলোর প্রকাশ হওয়া উচিত।

। (৫) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সংগী-সাথীদের মনে সাহস সঞ্চার করা হয়েছে এবং সংগে সংগে কাফেরদের বিরোধিতা, প্রতিরোধ সৃষ্টি ও জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মনীতি কি হতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে।
# তা একেবারে আসন্ন হয়ে উঠেছে। তার প্রকাশ ও প্রয়োগের সময় নিকটবর্তী হয়েছে। ব্যাপারটা একেবারেই অবধারিত ও সুনিশ্চিত অথবা একান্ত নিকটবর্তী এ ধারণা দেবার জন্য বাক্যটি অতীতকালের ক্রিয়াপদের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। কিংবা কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের সবরের পেয়ালা কানায় কানায় ভরে উঠেছিল এবং শেষ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসে গিয়েছিল বলেই অতীতকালের ক্রিয়াপদ দ্বারা একথা বলা হয়েছে।

প্রশ্ন জাগে, এ “ফায়সালা” কি ছিল এবং কোন আকৃতিতে এসেছে? আমরা মনে করি (তবে আল্লাহই সঠিক খবর ভাল জানেন) এ ফায়সালা বলতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে হিজরতকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াত নাযিলের কিছুদিন পরেই এ হিজরতের হুকুম দেয়া হয়। কুরআন অধ্যয়নে জানা যায়, যে সমাজে নবীর আগমন ঘটে তাদের অস্বীকৃতি ও প্রত্যাখ্যান একেবারে শেষ সীমানায় পৌঁছে গেলেই নবীকে হিজরতের হুকুম দেয়া হয়। এ হুকুম উল্লেখিত সমাজের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এরপর হয় তাদের ওপর ধ্বংসাত্মক আযাব এসে যায় অথবা নবী ও তাঁর অনুসারীদের হাত দিয়ে তাদেরকে সমূলে উৎপাটিত করে দেয়া হয়। ইতিহাস থেকেও একথাই জানা যায়। হিজরত সংঘটিত হবার পর মক্কার কাফেররা মনে করলো ফায়সালা তাদের পক্ষেই হয়েছে। কিন্তু আট দশ বছরের মধ্যেই দুনিয়াবাসীরা দেখে নিল, শুধুমাত্র মক্কা থেকেই নয়, সমগ্র আরব ভূখণ্ড থেকেই শিরক ও কুফরীকে শিকড় সুদ্ধ উপড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে।

# প্রথম বাক্য ও দ্বিতীয় বাক্যের পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবন করার জন্য এর পটভূমি সামনে রাখা প্রয়োজন। কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বারবার চ্যালেঞ্জ দিয়ে আসছিল যে, তুমি আল্লাহর যে ফায়সালার কথা বলে আমাদের ভয় দেখিয়ে থাকো তা আসছে না কেন? তাদের এ চ্যালেঞ্জের পিছনে আসলে যে চিন্তাটি সক্রিয় ছিল তা ছিল এই যে, তাদের মুশরিকী ধর্মই সত্য এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খামাখা আল্লাহর নামে একটি ভ্রান্ত ধর্ম পেশ করছেন। আল্লাহ এ ধর্মকে অনুমোদন দান করেননি। তাদের যুক্তি ছিল, আমরা যদি আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে থাকি এবং মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর পাঠানো নবী হয়ে থাকেন তাহলে আমরা তাঁর সাথে যে ব্যবহার করছি তাতে আমাদের সর্বনাশ হওয়া উচিত ছিল না কি? কিন্তু তা হচ্ছে না, এটা কেমন করে সম্ভব? তাই আল্লাহর ফায়সালার ঘোষণা দেবার সাথে সাথেই বলা হয়েছে, এ ফায়সালার প্রয়োগ বিলম্বিত হবার যে কারণ তোমরা মনে করছো তা মোটেই সঠিক নয়। আল্লাহর সাথে কারো শরীক হবার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর সত্তা এর অনেক ঊর্ধ্বে এবং এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

সূরা আন নাহল সংক্ষিপ্ত আলােচনা : এ সূরাটার সূর, তাল ও লয় শান্ত ও স্বাভাবিক। তবে এর আলােচিত বিষয়বস্তু অনেক ও রকমারি। এর প্রেক্ষাপট ব্যাপক ও সুপ্রশস্ত। এর ঝংকার প্রভাবশালী ও বহু সংখ্যক এবং এর ভেতরে উৎসারিত প্রেরণা ও অত্যন্ত গভীর। রসূল(স.)-এর মক্কী জীবনে নাযিল হওয়া অন্যান্য সূরার মতাে এ সুরাটাও আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্য, ওহী ও পরকাল-এই তিনটি প্রধান বিষয় নিয়ে আলােচনা করে। তবে এই প্রধান বিষয় কয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট আরাে কিছু আনুষংগিক বিষয়ও আলোচ্য সূচীর আওতাভুক্ত। যেমন এতে ইবরাহীম(আ.) ও মুহাম্মদ(স.)-এর আনীত খােদায়ী বিধানের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনাকারী তাওহীদ এবং ঈমান, কুফুরী, হেদায়াত ও গােমরাহী সংক্রান্ত মানবীয় ইচ্ছা ও আল্লাহর ফয়সালার বিষয়টি আলােচিত হয়েছে। অনুরূপভাবে আলােচিত হয়েছে রাসূলের দায়িত্ব, রসূলকে প্রত্যাখ্যানকারীদের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি, হালালকে হারাম করা, হারামকে হালাল করা ও এ বিষয়ে পৌত্তলিকদের ধ্যান ধারণা, আল্লাহর পথে হিজরত, মুসলমানদেরকে নির্যাতনের মাধ্যমে ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করা, ঈমানের পর পুনরায় কুফুরী করা আল্লাহর কাছে এ সবের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি, পারস্পরিক লেনদেন, ন্যায়-বিচার, পরােপকার, আল্লাহর পথে দান এবং ওয়াদা পালন ইত্যাদি, যা ওই প্রধান আকীদাভিত্তিক আচরণের সাথে সংশ্লিষ্ট। মােটকথা বহু সংখ্যক আলােচ্য বিষয়ে সুরাটা পরিপূর্ণ। । কিন্তু যে পটভূমিতে এ বিষয়গুলাে আলােচিত হয়েছে এবং যে ময়দানে এ ঘটনাগুলাে ঘটেছে, তা অত্যন্ত ব্যাপক ও সুপ্রশস্ত। এই পটভূমি ও ময়দানের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আকাশ ও পৃথিবী, আকাশ থেকে নামা বৃষ্টি, ক্রমবর্ধনশীল বৃক্ষ, রাত দিন, চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্র, সাগর, পাহাড় পর্বত, নদ নদী ও রাস্তাঘাট। এক কথায় বলা যায়, গােটা মানব জীবন, তার ঘটনাবলী ও পরিণাম, গােটা পরকালীন জীবন, তার মূল্যবােধ ও দৃশ্যাবলী এবং সমগ্র অদৃশ্য জগত, তার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য, মানব সত্তা ও প্রকৃতির ওপর তার সুগভীর প্রভাব- এ সবকিছু নিয়ে এ সূরার আলােচনা ও পটভূমি গঠিত। এ বিস্তীর্ণ ময়দানে সুরাটা তার বক্তব্য পেশ করে। এ বক্তব্য যেন পথনির্দেশ দান, মনমগযকে উদ্বুদ্ধকরণ ও বিবেক বুদ্ধিকে অনুপ্রেরণা জোগানাের একটা বিরাট উদ্যোগ ও অভিযান। এ অভিযান খুবই শান্ত ও ধীর লয়ে পরিচালিত। তবে সেখানেও বৈচিত্র্য রয়েছে। রয়েছে একাধিক সুরের ব্যঞ্জনা। তাতে যদিও বজ্রের তুর্যনিনাদ নেই কিংবা সংগীতের মিহি সুর নেই, কিন্তু তা তার সমস্ত মৃদুমন্দতা সত্তেও মানব সত্ত্বার প্রতিটি স্নায়ুতন্ত্র ও প্রতিটি প্রত্যংগকে সম্বােধন করে এবং তার বিবেক-বুদ্ধি ও ভাবাবেগকে একই সাথে উদ্বুদ্ধ ও উজ্জীবিত করে। সে তার চোখকে দেখতে, কানকে শুনতে, স্নায়ুকে অনুভূতিশীল হতে, আবেগকে সচেতন হতে এবং বিবেক বুদ্ধিকে চিন্তা গবেষণা করতে বলে। সে সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতিকে তথা আকাশ ও পৃথিবীকে, সূর্য ও চন্দ্রকে, রাত ও দিনকে, পাহাড় ও সাগরকে, নদ নদী ও উপত্যকাকে, ছায়া ও আশ্রয়স্থলকে, উদ্ভিদ ও ফলমূলকে এবং পশু ও পাখি একই সমতলে সমবেত করে। একই সমতলে সমবেত করে দুনিয়া ও আখেরাতকে এবং দৃশ্য অদৃশ্য সব কিছুকে। এ সবই মানুষের অংগ প্রত্যংগে, স্নায়ুতন্ত্রীতে এবং হৃদয় ও বিবেকে অপ্রতিরােধ্য প্রভাব সৃষ্টির হাতিয়ার। একমাত্র নিষ্কৃয় বিবেক, মৃত হৃদয় ও বিকৃত চেতনা ছাড়া আর কোনাে কিছুই এ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে পারে না। এই সূরা মানুষকে একদিকে যেমন প্রকৃতিতে বিরাজমান আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও মানুষকে। দেয়া আল্লাহর নেয়ামতগুলাের প্রতি তার মনােযােগ আকর্ষণ করে, তেমনি কেয়ামতের দৃশ্যাবলী, মৃত্যু উপস্থিত হওয়ার দৃশ্যাবলী এবং অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলাের ধ্বংসযজ্ঞের চিত্রও তার সামনে তুলে ধরে। সেই সাথে মানুষের সেই সব ভাবাবেগকেও জাগিয়ে তােলে, যা মানব হৃদয়ের সুপ্ত চিন্তা চেতনার সন্ধান দেয়। সন্ধান দেয় মাতৃগর্ভে থাকাকালে, যৌবনে, প্রৌঢ়ত্বে, বার্ধক্যে, দুর্বল ও শক্তিমান অবস্থায়, স্বচ্ছল ও দারিদ্র অবস্থায় মানুষ কিভাবে জীবন ধারণ করে, তারও । অনুরূপভাবে উদাহরণাবলী ও সহজ সরল ঘটনাবলীর মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যাও পেশ করে। সূরার সবচেয়ে গভীর তাৎপর্যময় অংশ হলাে প্রকৃতি সংক্রান্ত আয়াতগুলাে যা সৃষ্টির মাহাত্ম্য, সম্পদের বিশালতা এবং জ্ঞান ও কুশলতার বিরাটত্বকে ফুটিয়ে তােলে। এগুলাে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, বরং পরস্পরের সাথে যুক্ত। এই বিশাল ও বিস্ময়কর সৃষ্টি জগত, যা মহান স্রষ্টার সীমাহীন জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এমনভাবে সৃজিত ও পরিচালিত, যাতে তা মানুষের সুখ শান্তির উপকরণ হয় এবং তাদের শুধু অপরিহার্য প্রয়ােজনই পূরণ করে না, বরং তাদের বিভিন্ন শখও পূরণ করে। একদিকে তা প্রয়ােজনও পূরণ করে, অপরদিকে তাকে সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপকরণ হিসাবেও গ্রহণ করা হয়, তা দ্বারা দেহ ও মনের আনন্দ ও পরিতৃপ্তিও সাধিত হয়। মানুষ যাতে আল্লাহর কৃতজ্ঞ হয়, সে জন্যেই এতাে সব নেয়ামতের ব্যবস্থা। এ কারণেই এ সূরায় নেয়ামত ও তার শােকরের বিষয় আলােচিত হয়েছে, এ সবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে এবং এ সব বিষয়ে সূরার বিভিন্ন অংশে মন্তব্য করা হয়েছে, বিভিন্ন উদাহরণ এবং বিভিন্ন নমুনাও পেশ করা হয়েছে। নেয়ামতের শােকর আদায়ের শ্রেষ্ঠতম নমুনা পেশ করেন হযরত ইবরাহীম(আ.)। বলা হয়েছে, তিনি (হযরত ইবরাহীম) আল্লাহর নেয়ামতের শােকরকারী ছিলেন। তাই আল্লাহ তায়ালা তাকে নির্বাচন করেছিলেন এবং তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলেন। এ সব আলােচনাই সম্পন্ন হয়েছে পরিপূর্ণ সমন্বয়ের মাধ্যমে। সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আলােচিত দৃশ্যাবলী, বক্তব্যসমূহ ও আলােচ্য বিষয়সমূহের মধ্যে। তাফসীর আলােচনা করার সময় এ সবের কিছু কিছু নমুনা তুলে ধরবার আশা রাখি। প্রথমে সূরার প্রথম অধ্যায়টার তাফসীরে মনোনিবেশ করছি। এ অধ্যায়টার আলােচ্য বিষয় হলাে তাওহীদ। এ তাওহীদের মাধ্যম হলাে সৃষ্টি জগতে বিরাজিত আল্লাহর নিদর্শনাবলী, আল্লাহর নেয়ামতসমূহ, গােপন ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ এবং দুনিয়া ও আখেরাত সম্পর্কে তাঁর সর্বাত্মক জ্ঞান। ।

‘আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। কাজেই এর জন্যে তাড়াহুড়াে করাে না। ওরা যে সব শরীক সাব্যস্ত করেছে, তিনি তা থেকে পবিত্র…'(আয়াত ১-৩) মক্কার মােশরেকরা রসূল(স.)-কে তাড়া দিতাে যে, দুনিয়া বা আখেরাতের আযাব দ্রুত নিয়ে এসাে। যখনই তাদের অবকাশ বাড়িয়ে দেয়া হতাে এবং আযাব আসতাে না, তখনই তারা বেশী করে তাড়াহুড়ো করতাে। শুধু তাড়াহুড়ো নয়, বেশী করে ঠাট্টা বিদ্রুপও করতাে এবং বেশী করে ধৃষ্টতাও দেখাতাে। তারা মনে করতাে যে, মােহাম্মদ(স.) তাদেরকে এমন সব জিনিসের ভয় দেখায়, যার আদৌ কোনাে অস্তিত্ব নেই যাতে তারা তাঁর উপর ঈমান আনে ও তার কাছে আত্মসমর্পণ করে। আল্লাহ তায়ালা যে কী উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবকাশ দেন, তা তারা উপলব্ধিই করতাে না। তার প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী নিয়ে কোনাে চিন্তাভাবনাই করতাে না এবং কোরআনের আয়াতগুলােও বুঝতে চেষ্টা করতাে না। কোরআনের যে সমস্ত আয়াত বিবেক ও মনকে সম্বােধন করে, তা যে কেবল আযাবের হুংকার সম্বলিত কথাবার্তার চেয়ে ভালাে, সেটা তারা বুঝতাে না। তারা বুঝতো না যে, যে মানুষকে আল্লাহ তায়ালা বিবেকবুদ্ধি ও স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সম্মানিত করেছেন, তাকে কেবল আযাবের হুমকি দেয়ার চেয়ে যুক্তি দিয়ে বুঝানাে বেশী সম্মানজনক। সূরার শুরুতেই চূড়ান্ত ঘােষণা এসেছে, ‘আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে।’ অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ জারি হয়েছে এবং তার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আর এটুকুই যথেষ্ট তা আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে কার্যকরী হবার জন্যে। কাজেই তােমরা এর জন্যে তাড়াহুড়াে করাে না। কেননা আল্লাহর যে কোনাে নিয়ম তার ইচ্ছা অনুযায়ীই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। কারাে তাড়াহুড়ােতে বা অনুরােধে তা আগপিছ হয় না। সুতরাং আযাব কিংবা কেয়ামতের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এখন সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়েই হবে। তার এক মুহূর্ত আগেও নয়, পরেও নয়। সুনিশ্চিত অর্থবােধক এই শব্দটা মনের ওপর প্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করে, তা সে যতােই অহংকারী বা শান্ত প্রকৃতির মানুষ হােক না কেন। তদুপরি এ শব্দটা যে অর্থ প্রকাশ করছে তা নিরেট বাস্তবও। কেননা আল্লাহর নির্দেশ মাত্রই কার্যকরী হওয়া অবধারিত। এমনকি আল্লাহর পক্ষ থেকে স্রেফ সিদ্ধান্ত গ্রহণই তার বাস্তবায়িত হওয়ার সমর্থক এবং বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা বিধান করে। কাজেই এ শব্দটাতে অতিরঞ্জিত কিছু নেই এবং অবাস্তবও কিছু নেই। উপরন্তু এর আসল উদ্দেশ্য হলাে মানুষের চেতনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করা, যা সম্পূর্ণরূপে সফল হয়েছে। অস্তিত্ব নেই, যাতে তারা তার ওপর ঈমান আনে ও তার কাছে পক্ষান্তরে এক আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা এবং শিরক থেকে উদ্ভূত যাবতীয় ধ্যান ধারণা থেকে আল্লাহ তায়ালা সম্পূর্ণ পবিত্র এ সব ধ্যান ধারণা যে ধরনেরই হােক এবং মানুষের যতাে নিম্নস্তরের চিন্তা চেতনা থেকেই তা উৎসারিত হােক না কেন।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার খবর দিচ্ছেন। কিয়ামত যেন সংঘটিত হয়েই গেছে। এ জন্যেই তিনি অতীত কালের ক্রিয়া দ্বারা এই বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ মানুষের হিসাব নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসিনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” (২১:১)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে এবং চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে।” এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমরা এই নিকটবর্তী বিষয়ের জন্যে তাড়াহুড়া করো না।” • সর্বনামটি হয়তো বা ‘আল্লাহ’ শব্দের দিকে ফিরছে। তখন অর্থ হবেঃ “তোমরা আল্লাহ তাআলার নিকট ওটা তাড়াতাড়ি চেয়ো না। কিংবা ওটা প্রত্যাবর্তিত হচ্ছে ‘আযাব’ শব্দের দিকে।” অর্থাৎ ‘আযাবের জন্যে তাড়াতাড়ি করো না। দু’টি অর্থই পরস্পর সম্বন্ধ যুক্ত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! লোকেরা তোমার কাছে তাড়াতাড়ি শাস্তি চাচ্ছে, যদি শাস্তির জন্যে একটা নির্ধারিত সময় না থাকতো, তবে অবশ্যই তা তাদের উপর চলে আসতো, কিন্তু তা অবশ্যই অকস্মাৎ তাদের উপর চলে আসবে এবং তারা তা বুঝতেই পারবে না। তারা তোমার কাছে আযাবের জন্যে তাড়াতাড়ি করছে, নিশ্চয় জাহান্নাম কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী।”

যহহাক (রঃ) এই আয়াতের এক বিস্ময়কর ভাবার্থ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ “আল্লাহ তাআলার ফারায়ে ওহুদূদ নাযিল হয়ে গেছে।” ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) কঠোর ভাবে এটা খণ্ডন করেছেন এবং বলেছেনঃ “আমাদের মধ্যে তো এমন একজনও নেই, যে শরীয়তের অস্তিত্বের পূর্বে এটা চাওয়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করেছে। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আযাবের জন্যে তাড়াহুড়া করা যা কাফিরদের অভ্যাস ছিল। কেননা, তারা ওটাকে মানতই না।” যেমন কুরআন পাকে রয়েছেঃ “বেঈমানেরা তো এর জন্যে তাড়াতাড়ি করছে অথচ ঈমানদাররা এর থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত রয়েছে। কেননা, তারা এটাকে সত্য বলে বিশ্বাস করে; প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আল্লাহর শাস্তির ব্যাপারে সন্দেহ পোষণকারী দূরের বিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছে।”

হযরত উকবা ইবনু আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার নিকটবর্তী সময়ে পশ্চিম দিকহতে ঢালের মত কালো মেঘ প্রকাশিত হবে এবং ওটা খুবই তাড়াতাড়ি আকাশের উপরে উঠে যাবে। অতঃপর ওর মধ্য হতে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে। লোকেরা বিস্মিত হয়ে একে অপরকে জিজ্ঞেস করবেঃ “কিছু শুনতে পেয়েছো কি?” কেউ কেউ বলবেঃ “হাঁ, পেয়েছি।” আর কেউ কেউ ওটাকে বাজে কথা বলে উড়িয়ে দেবে। আবার ঘোষণা দেয়া হবে এবং বলা হবেঃ “হে লোক সকল!” এবার সবাই বলে উঠবে- “হাঁ, শব্দ শুনতে পেয়েছি।” তৃতীয়বার ঐ ঘোষণাকারী ঘোষণা করবে; “হে লোক সকল! আল্লাহর হুকুম এসে গেছে। এখন তাড়াতাড়ি করো না।” আল্লাহর কসম! এমন দু ব্যক্তি যারা কাপড় ছড়িয়ে রাখতো তারা জড় করার সময় পাবে না, কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। কেউ হয়তো তার পানির হাউয ঠিক করতে থাকবে, সেই পানি পান করতে পারবে না, কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে। দুধ দোহনকারী দুধ পান করার অবসর পাবে না, কিয়ামত হয়ে যাবে। লোকেরা শসব্যস্ত হয়ে পড়বে।

এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় পবিত্র সত্তার শিরক ও অন্যের ইবাদত হতে বহু উর্ধ্বে থাকার বর্ণনা দিচ্ছেন। বাস্তবিকই তিনি ঐ সমুদয় বিষয় থেকে পবিত্র এবং তা থেকে তিনি বহু দূরে ও বহু উর্ধ্বে রয়েছেন। এরাই মুশরিক যারা কিয়ামতকেও অস্বীকারকারী। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্ধ্বে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 01
أَتَى أَمْرُ اللّهِ ]
The Event ordained by Allah has indeed come,]
Warning about the approach of the Hour

Allah says:

أَتَى أَمْرُ اللّهِ

The Event ordained by Allah has indeed come,

Allah is informing about the approach of the Hour in the past tense (in Arabic) in order to confirm that it will undoubtedly come to pass.

This is like the following Ayat, in which the verbs appear in the past tense in Arabic:

اقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَـبُهُمْ وَهُمْ فِى غَفْلَةٍ مُّعْرِضُونَ

Mankind’s reckoning has drawn near them, while they turn away in heedlessness. (21:1)

اقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانشَقَّ الْقَمَرُ

The Hour has drawn near, and the moon has been cleft. (54:1)

فَلَ تَسْتَعْجِلُوهُ

so do not seek to hasten it.

means, what was far is now near, so do not try to rush it. As Allah said,

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَلَوْلَا أَجَلٌ مُّسَمًّى لَّجَأءَهُمُ الْعَذَابُ وَلَيَأْتِيَنَّهُمْ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

يَسْتَعْجِلُونَكَ بِالْعَذَابِ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةٌ بِالْكَـفِرِينَ

And they ask you to hasten the torment (for them), and had it not been for a term appointed, the torment would certainly have come to them. And surely, it will come upon them suddenly while they are unaware!

They ask you to hasten on the torment. And verily! Hell, of a surety, will encompass the disbelievers. (29:53-54)

Ibn Abi Hatim reported from Uqbah bin Amir that the Messenger of Allah said:

تَطْلُعُ عَلَيْكُمْ عِنْدَ السَّاعَةِ سَحَابَةٌ سَوْدَاءُ مِنَ الْمَغْرِبِ مِثْلَ التُّرْسِ فَمَا تَزَالُ تَرْتَفِعُ فِي السَّمَاءِ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ فِيهَا يَا أَيُّهَاالنَّاسُ

فَيُقْبِلُ النَّاسُ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ هَلْ سَمِعْتُمْ

فَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ نَعَمْ وَمِنْهُمْ مَنْ يَشُكُّ

ثُمَّ يُنَادِي الثَّانِيَةَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ

فَيَقُولُ النَّاسُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ هَلْ سَمِعْتُمْ

فَيَقُولُونَ نَعَمْ

ثُمَّ يُنَادِي الثَّالِثَةَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ

أَتَى أَمْرُ اللهِ فَلَ تَسْتَعْجِلُوه

When the Hour approaches, a black cloud resembling a shield will emerge upon from the west. It will continue rising in the sky, then a voice will call out, `O mankind!’

The people will say to one another, `Did you hear that!’

Some will say, `yes’, but others will doubt it.

Then a second call will come, `O mankind!’

The people will say to one another, `Did you hear that!’

And they will say, `Yes.’

Then a third call will come, `O mankind!’

The Event ordained by Allah has indeed come, so do not seek to hasten it.’

The Messenger of Allah said:

فَوَ الَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ الرَّجُلَيْنِ لَيَنْشُرَانِ الثَّوبَ فَمَا يَطْوِيَانِهِ أَبَدًا

وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَمُدَّنَّ حَوْضَهُ فَمَا يَسْقِي فِيهِ شَيْيًا أَبَدًا

وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَحْلُبُ نَاقَتَهُ فَمَا يَشْرِبُهُ أَبَدًا

قَالَ وَيَشْتَغِلُ النَّاس

“By the One in Whose Hand is my soul, two men will spread out a cloth, but will never refold it;

a man will prepare his trough, but will never water his animals from it;

and a man will milk his camel, but will never drink the milk.”

Then he said, “The people will be distracted.”

Then Allah tells us that He is free from their allegations of partners to their worship of idols, and making equals for Him. Glorified and exalted be He far above that. These are the people who deny the Hour, so He says:

سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ

Glorified and Exalted be He above all that they associate as partners with Him.

Leave a Reply