(Book# 791) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ০৯ নং আয়াত:- [ وَ لَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿٪۹﴾ তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন। He could have guided you all.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 791)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
০৯ নং আয়াত:-
[ وَ لَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿٪۹﴾
তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।
He could have guided you all.]
www.motaher21.net
وَ عَلَی اللّٰہِ قَصۡدُ السَّبِیۡلِ وَ مِنۡہَا جَآئِرٌ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿٪۹﴾
সরল পথের নির্দেশ করা আল্লাহর দায়িত্ব। আর পথগুলির মধ্যে বক্রপথও আছে; তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।
And upon Allah is the direction of the [right] way, and among the various paths are those deviating. And if He willed, He could have guided you all.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
০৯ নং আয়াত:-
[ وَ لَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿٪۹﴾
তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতেন।
He could have guided you all.]
www.motaher21.net

৯ নং আয়াতের তাফসীর:-

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে قَصْدُ السَّبِيْلِ বলতে সিরাতুল মুসতাকিম বা সরল পথকে বুঝানো হয়েছে। যাতে কোন প্রকার বক্রতা নেই। যে পথে চললে আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাত পাওয়া যাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَأَنَّ هٰذَا صِرَاطِيْ مُسْتَقِيْمًا فَاتَّبِعُوْهُ ج وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيْلِه۪)

“আর নিশ্চয়ই এ পথই আমার সহজ-সরল পথ। সুতরাং তোমরা এরই অনুসরণ করবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করবে না, করলে তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করবে।” (সূরা আনয়াম ৬:১৫৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَأَنِ اعْبُدُوْنِيْ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ)

“আর আমারই ইবাদত কর, এটাই সরল-সঠিক পথ।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৬১)

আল্লাহ তা‘আলার দায়িত্ব হল সরল সঠিক পথের দিশা দেয়া এবং তিনি তা করেছেন। সরল সঠিক পথের দিশা দেয়ার সাথে সাথে একথাও বলে দিয়েছেন যে, সরল পথের পথিমধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে, যে পথে চললে সে আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে দূরে সরে যাবে। সে পথে চললে গোমরাহ হয়ে যাবে। সাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলছেন একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সরল রেখা টানলেন, আর ডান দিকে দুটি রেখা টানলেন ও বাম দিকে দুটি রেখা টানলেন। তারপর মাঝের সরল রেখার ওপর হাত রেখে বললেন: এটা হল আল্লাহ তা‘আলার পথ। (ইবনু মাযাহ হা: ১১, সহীহ)

আল্লাহ তা‘আলা উভয় পথেরই বর্ণনা দিয়ে সিরাতে মুসতাকিম তথা সরল সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কোন পথে চলতে বাধ্য করে দেননি। যদি বাধ্য করে দেয়া হত তাহলে পরীক্ষা নেয়ার কোনই প্রয়োজন ছিল না। সুতরাং সঠিক ও ভুল পথের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিয়ে উক্ত পথে চলার ফলাফল বর্ণনা করে দিয়েছেন যাতে হাতে-নাতে শিক্ষা দেয়ার জন্য মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে দোষারোপ করতে না পারে। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা পথপ্রদর্শক হিসেবে যুগে যুগে নাবী-রাসূল পাঠিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য সৎ পথ অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেউ অন্য কারো (পাপের) ভার বহন করবে না। আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত‎ কাউকেও শাস্তি‎ দেই না।” (সূরা ইসরা ১৭:১৫)

সুতরাং কেউ যদি পথভ্রষ্ট হয় তাহলে আল্লাহকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। কারণ তিনি সব কিছু বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়ে যুগে যুগে নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, আর কেউ হিদায়াত প্রাপ্ত হলে তা আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া।

(وَلَوْ شَا۬ءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِيْنَ)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনি চাইলে সকলকে হেদায়েত দান করতে পারতেন। এর দ্বারা কোন মানুষ এমনটি বলতে পারবে না যে, আল্লাহ তা‘আলা চাননি তাই আমি হিদায়াত পাইনি। তাই আল্লাহ তা‘আলার কারণে আমাকে জাহান্নামে যেতে হলে সেখানে আমার কোন হাত নেই। এটি ভুল, কারণ পূর্বেই বলা হয়েছে মানুষকে সৃষ্টি করার পর জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়ে হিদায়াত ও গোমরাহ উভয় পথ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পর স্বাধীনতা দিয়েছেন, সে তার খুশি মত যে কোন রাস্তা বেছে নিতে পারবে। তবে কোন্ পথে চললে কী ফলাফল হবে তাও বর্ণনা করে দিয়েছেন। সুতরাং যারা খাল কেটে কুমির আনে তারা হিদায়াতের উপযুক্ত হতে পারে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَوْ شَا۬ءَ اللّٰهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَي الْهُدٰي فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْـجٰهِلِيْنَ)

“আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের সকলকে অবশ্যই সৎ পথে একত্র করতেন। সুতরাং তুমি মুর্খদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আনয়াম ৬:৩৫)

অতএব মানুষ ইচ্ছা করে যে পথ বেছে নেবে সে ঐ পথেরই অনুসারী হবে। এতে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সরল ও বক্রপথ উভয়টা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কোন কাজ করার ব্যাপারে বাধ্য করেন না।
৩. রাসূল প্রেরণ করার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে শাস্তি দেন না।
৪. সরল-সঠিক পথ একটিই তা হল, কুরআন ও সহীহ সুন্নার অনুসরণ করা। কোন তরীকা, পথ-মত ও ব্যক্তির আদর্শ হতে পারে না।
৫. হিদায়েত দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা, তবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হিদায়াত দেন না যারা হিদায়াত গ্রহণ করার চেষ্টা করে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তাওহীদ, রহমত ও রবুবীয়াতের যু্ক্তি পেশ করতে গিয়ে এখানে ইঙ্গিতে নবুওয়াতের পক্ষেও একটি যুক্তি পেশ করা হয়েছে। এ যুক্তির সংক্ষিপ্তসার হচ্ছেঃ দুনিয়ায় মানুষের জন্য চিন্তা ও কর্মের অনেকগুলো ভিন্ন ভিন্ন পথ থাকা সম্ভব এবং কার্যত আছেও। এসব পথ তো আর একই সঙ্গে সত্য হতে পারে না। সত্য একটিই এবং যে জীবনাদর্শটি এ সত্য অনুযায়ী গড়ে ওঠে সেটিই একমাত্র সত্য জীবনাদর্শ। অন্যদিকে কর্মেরও অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন পথ থাকা সম্ভব এবং এ পথগুলোর মধ্যে যেটি সঠিক জীবনাদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয় সেটিই একমাত্র সঠিক পথ।

এ সঠিক আদর্শ ও সঠিক কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। বরং এটিই তার আসল মৌলিক প্রয়োজন। কারণ অন্যান্য সমস্ত জিনিস তো মানুষের শুধুমাত্র এমন সব প্রয়োজন পূর্ণ করে যা একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রাণী হওয়ার কারণে তার জন্য অপরিহার্য হয়। কিন্তু এ একটিমাত্র প্রয়োজন শুধুমাত্র মানুষ হবার কারণে তার জন্য অপরিহার্য হয়। এটি যদি পূর্ণ না হয় তাহলে এর মানে দাঁড়ায় এই যে, মানুষের সমস্ত জীবনটাই নিষ্ফল ও ব্যর্থ হয়ে গেছে।

এখন ভেবে দেখো, যে আল্লাহ তোমাদের অস্তিত্বদান করার আগে তোমাদের জন্য এতসব সাজ সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রেখেছেন এবং যিনি অস্তিত্ব দান করার পর তোমাদের প্রাণী-জীবনের প্রত্যেকটি প্রয়োজন পূর্ণ করার এমন সূক্ষ্ম ও ব্যাপকতর ব্যবস্থা করেছেন, তোমরা কি তাঁর কাছে এটা আশা করো যে, তিনি তোমাদের মানবিক জীবনের এই সবচেয়ে বড় ও আসল প্রয়োজনটি পূর্ণ করার ব্যবস্থা না করে থাকবেন?

নবুওয়াতের মাধ্যমে এ ব্যবস্থাটিই তো করা হয়েছে। যদি তুমি নবুওয়াত না মানো তাহলে বলো তোমার মতে মানুষের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ অন্য কি ব্যবস্থা করেছেন? এর জবাবে তুমি একথা বলতে পারো না যে, পথের সন্ধান করার জন্য আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি দিয়ে রেখেছেন। কারণ মানবিক বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি ইতিপূর্বেই এমন অসংখ্য পথ উদ্ভাবন করে ফেলেছে যা তার সত্য-সরল পথের সঠিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতার সুস্পষ্ট প্রামণ। আবার তুমি একথাও বলতে পারো না যে, আল্লাহ আমাদের পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থা করেননি। কারণ আল্লাহর ব্যাপারে এর চেয়ে বড় আর কোন কুধারণা হতেই পারে না যে, প্রাণী হবার দিক দিয়ে তোমাদের প্রতিপালন ও বিকাশ লাভের এতসব বিস্তারিত ও পূর্ণাংগ ব্যবস্থা তিনি করে রেখেছেন অথচ মানুষ হবার দিক দিয়ে তোমাদের একেবারে অন্ধকারের বুকে পথ হারিয়ে উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়াবার ও পদে পদে ঠোকর খাবার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। (আরো বেশী জানার জন্য সূরা আর রাহমানের ২ এবং ৩ টীকা দেখুন)।
# অন্য কথায় আল্লাহ‌ তা’আলা যেহেতু মানুষের স্রষ্টা, তাই স্রষ্টার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের সৃষ্টিকে পথ প্রদর্শন করা এবং এ পথের মাধ্যমে সে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে সে পথ দেখেনো। সুতরাং আল্লাহর পক্ষ থেকে কুরআনের এ শিক্ষা নাযিল হওয়া শুধু তাঁর অনুগ্রহ পরায়ণতার দাবীই নয়, তাঁর স্রষ্টা হওয়ারও অনিবার্য এবং স্বাভাবিক দাবী। স্রষ্টা যদি সৃষ্টিকে পথ প্রদর্শন না করেন তাহলে আর কে তা করবে? তাছাড়া স্রষ্টা নিজেই যদি পথ প্রদর্শন না করেন তাহলে আর কে তা করতে পারে? স্রষ্টা যে বস্তু সৃষ্টি করলেন তিনি যদি তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণ করার পন্থা পদ্ধতি না শেখান তাহলে তাঁর জন্য এর চেয়ে বড় ত্রুটি আর কি হতে পারে? সুতরাং প্রকৃত পক্ষে আল্লাহ‌ তা’আলার পক্ষ থেকে মানুষকে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হওয়া কোন আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। বরং তাঁর পক্ষ থেকে যদি এ ব্যবস্থা না থাকতো তাহলে সেটাই হতো বিস্ময়কর ব্যাপার। গোটা সৃষ্টিলোকে যে জিনিসই তিনি সৃষ্টি করেছেন তা কেবল সৃষ্টি করেই ছেড়ে দেননি। তাকে এমন উপযুক্ত আকার-আকৃতি দিয়েছেন যার সাহায্যে সে প্রাকৃতিক ব্যবস্থার অধীনে তার নিজের অংশের কাজ করার যোগ্য হতে পারে। সাথে সাথে সে কাজ সম্পাদন করার পন্থা পদ্ধতিও তাকে শিখিয়েছেন। মানুষের নিজের দেহের এক একটি লোম এবং এক একটি কোষকে (Cell) মানবদেহে যে কাজ আঞ্জাম দিতে হবে সে কাজ শিখেই তা জন্ম লাভ করেছে। তাই মানুষ নিজে কেমন করে তার স্রষ্টার শিক্ষা ও পথ নির্দেশ লাভ করা থেকে মুক্ত ও বঞ্চিত হতে পারে? এ বিষয়টি কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ভঙ্গিতে বুঝানো হয়েছে। সূরা লায়লে ( ১২ আয়াত )বলা হয়েছেঃإِنَّ عَلَيْنَا لَلْهُدَى “পথ প্রদর্শন করা আমার দায়িত্ব।” সূরা নাহলে ( ৯ আয়াত ) বলা হয়েছেঃ وَعَلَى اللَّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَائِرٌ “সরল সোজা পথ দেখিয়ে দেয়া আল্লাহর দায়িত্ব। বাঁকা পথের সংখ্যা তো অনেক।” সূরা ত্বা-হায় ( ৪৭-৫০আয়াত ) উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফেরাউন মূসার মুখে রিসালাতের পয়গাম শুনে বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ তোমার সেই ‘রব’ কে যে আমার কাছে দূত পাঠায়? জবাবে হয়রত মূসা বললেনঃ

رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَى كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَى

“তিনিই আমার রব যিনি প্রতিটি জিনিসকে একটি নির্দিষ্ট আকার-আকৃতি দান করে পথ প্রদর্শন করেছেন।”

অর্থাৎ তিনি তাকে সেই নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছেন যার সাহায্যে সে বস্তু জগতে তার করণীয় কাজ সম্পাদন করতে পারবে। মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহ‌ তা’আলার পক্ষ থেকে নবী-রসূল ও আসমানী কিতাবসমূহ আসা যে সরাসরি প্রকৃতিরই দাবী, একজন নিরপেক্ষ মন-মগজের অধিকারী মানুষ এসব যুক্তি প্রমাণ দেখে সে বিষয়ে নিশ্চিত ও সন্তুষ্ট হতে পারে।
# মূল আয়াতে بيان শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে মনের ভাব প্রকাশ করা। অর্থাৎ কোন কিছু বলা এবং নিজের উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় ব্যক্ত করা। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে পার্থক্য ও বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তোলা। এখানে এর অর্থ হচ্ছে ভাল মন্দ ও কল্যাণ-অকল্যাণের মধ্যকার পার্থক্য। এ দু’টি অর্থ অনুসারে ক্ষুদ্র এ আয়াতাংশটি ওপরে বর্ণিত যুক্তি প্রমাণকে পূর্ণতা দান করে। বাকশক্তি এমন একটি বিশিষ্ট গুণ যা মানুষকে জীবজন্তু ও পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টিকূল থেকে পৃথক করে দেয়। এটা শুধু বাকশক্তিই নয়। এর পেছনে জ্ঞান ও বুদ্ধি, ধারণা ও অনুভূতি, বিবেক ও সংকল্প এবং অন্যান্য মানসিক শক্তি কার্যকর থাকে যেগুলো ছাড়া মানুষের বাকশক্তি কাজ করতে পারে না। এজন্য বাকশক্তি প্রকৃতপক্ষে মানুষের জ্ঞানী ও স্বাধীন সৃষ্টজীব হওয়ার স্পষ্ট প্রমাণ। আর আল্লাহ‌ তা’আলা এ বিশেষ গুণটি যখন মানুষকে দান করেছেন তখন এটাও স্পষ্ট যে, জ্ঞান ও অনুভূতি এবং ইখতিয়ারবিহীন সৃষ্টিকূলের পথ প্রদর্শনের জন্য শিক্ষার যে প্রকৃতি ও পদ্ধতি উপযুক্ত হতে পারে মানুষের শিক্ষার প্রকৃতি ও পদ্ধতি তা হতে পারে না। একইভাবে মানুষের আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ গুণ হলো আল্লাহ‌ তায়ালা তার মধ্যে একটি নৈতিক অনুভূতি (Moral sense) সৃষ্টি করে দিয়েছেন যার কারণে সে প্রকৃতিগতভাবেই ভাল ও মন্দ, ন্যায় ও অন্যায়, জুলুম ও ইনসাফ এবং উচিত ও অনুচিতের মধ্যে পার্থক্য করে এবং চরম গোমরাহী ও অজ্ঞতার মধ্যেও তার ভিতরের এ আত্মজ্ঞান ও অনুভূতি লোপ পায় না। এ দু’টি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অনিবার্য দাবী হচ্ছে মানুষের জ্ঞানলোক সমৃদ্ধ ও স্বাধীন জীবনের জন্য শিক্ষাদানের পন্থা ও পদ্ধতি জন্মগতভাবে লব্ধ শিক্ষা পদ্ধতি-যার সাহায্য মাছকে সাঁতার কাটা, পাখীকে উড়ে বেড়ানো এবং মানুষের নিজ দেহের মধ্যে চোখের পাতাকে পলক ফেলা, চোখকে দেখা, কানকে শোনা এবং পাকস্থলীকে হজম করা শেখানো হয়েছে-থেকে ভিন্ন হতে হবে। জীবনের এক্ষেত্রে মানুষ নিজেও শিক্ষক, বই পুস্তক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা ও ধর্মীয় শিক্ষা, লেখা, বক্তৃতা, বিতর্ক ও যুক্তি প্রমাণের মত উপায় উপকরণকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করে এবং শুধু জন্মগতভাবে লব্ধ জ্ঞানকে যথেষ্ট মনে করে না। তাহলে মানুষের স্রষ্টার ওপরে তাদের পথ প্রদর্শনের যে দায়িত্ব বর্তায় তা সম্পাদন করার জন্য যখন তিনি রসূল ও কিতাবকে শিক্ষাদানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন তখন তা বিস্ময়ের ব্যাপার হবে কেন? সৃষ্টি যেমন হবে তার শিক্ষাও তেমন হবে এটা একটা সহজ যুক্তিগ্রাহ্য কথা। بيان যে সৃষ্টিকে শেখানো হয়েছে তার জন্য ‘কুরআন’ই হতে পারে শিক্ষার উপযুক্ত মাধ্যম। যেসব সৃষ্টিকে ‘বায়ান’ শেখানো হয়নি তাদের উপযোগী শিক্ষা মাধ্যম ‘বায়ান’ শেখানো হয়েছে এমন সৃষ্টির জন্য উপযোগী হতে পারে না।
# যদিও আল্লাহ‌ সমস্ত মানুষকে অন্যান্য সকল ক্ষমতাসীন সৃষ্টির মতো জন্মগতভাবে সঠিক পথে পরিচালিত করে নিজের এ দায়িত্বটি (যা তিনি মানুষকে পথ দেখাবার জন্য নিজেই নিজের ওপর আরোপ করে নিয়েছিলেন) পালন করতে পারতেন। কিন্তু এটি তিনি চাননি। তিনি চেয়েছিলেন এমন একটি স্বাধীন ক্ষমতাসম্পন্ন সৃষ্টির উদ্ভব ঘটানো যে নিজের পছন্দ ও বাছ-বিচারের মাধ্যমে সঠিক ও ভ্রান্ত সব রকমের পথে চলার স্বাধীনতা রাখে। এ স্বাধীন ক্ষমত ব্যবহার করার জন্য তাকে জ্ঞানের উপকরণ, বুদ্ধি ও চিন্তার যোগ্যতা এবং ইচ্ছা ও সংকল্পের শক্তি দান করা হয়েছে। তাকে নিজের ভিতরের ও বাইরের অসংখ্য জিনিস ব্যবহার করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তার ভিতরে ও বাইরে সবদিকে এমন সব অসংখ্য কার্যকারণ ছড়িয়ে রাখা হয়েছে যা তার জন্য সঠিক পথ পাওয়া ও ভুল পথে পরিচালিত হওয়া উভয়টিরই কারণ হতে পারে। যদি তাকে জন্মগতভাবে সঠিক পথানুসারী করে দেয়া হতো তাহলে এসবই অর্থহীন হয়ে যেতো এবং উন্নতির এমন সব উচ্চতম পর্যায়ে পৌঁছানো মানুষের পক্ষে কখনো সম্ভব হতো না, যা কেবলমাত্র স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষ লাভ করতে পারে। তাই মহান আল্লাহ‌ মানুষকে দেখাবার জন্য জোরপূর্বক সঠিক পথে পরিচালিত করার পদ্ধতি পরিহার করে রিসালাতের পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এভাবে মানুষের স্বাধীনতা যেমন অক্ষুণ্ণ থাকবে, তেমনি তার পরীক্ষার উদ্দেশ্যও পূর্ণ হবে এবং সত্য-সরল পথ ও সর্বোত্তম যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতিতে তার সামনে পেশ করে দেয়া যাবে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

পৃথিবীর প্রকাশ্য ও অনুভবযােগ্য গন্তব্যে যাতায়াতের মাধ্যম সম্পর্কে আলােচনার সাথে সাথেই প্রসংগত আধ্যাত্মিক গন্তব্যে পৌছার আধ্যাত্মিক পথ সম্পর্কেও আলােচনা করা হয়েছে পরবর্তী আয়াতে, এটা হচ্ছে আল্লাহর কাছে পৌছার পথ। এটা গন্তব্যে উপনীত হওয়ার নির্ভুল ও অব্যর্থ পথ। এ ছাড়া আরাে কিছু পথ রয়েছে, যা গম্ভব্যে পৌছায় না এবং গন্তব্যের সন্ধানও দেয় । আল্লাহর কাছে পৌছার সঠিক ও নির্ভুল পথের সন্ধান দেয়ার দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহণ করেছেন। এই পথের সন্ধান তিনি প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী ও মানব জাতির কাছে প্রেরিত রসূলদের মাধ্যমে দিয়েছেন। ‘সরল ও সঠিক পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে। পথগুলাের মধ্যে কিছু বাঁকা পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছা করলে তােমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।'(আয়াত ৯) ‘কাসদুস্ সাবীল’ শব্দটার অর্থ ‘আস্-সাবীলুল কাসিদ’ বা সঠিক ও সােজা পথ, যা তার গন্তব্য পর্যন্ত সােজাসুজি পৌছা যায়। তাতে কোন বক্রতা নেই এবং তা থেকে বিপথগামী হবার আশংকা নেই। ‘জাইর’ শব্দটা দ্বারা বাঁকা ও ভ্রান্ত পথ বুঝানাে হয়েছে, যা গন্তব্যে পৌছে না। তিনি ইচ্ছা করলে তােমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারেন। তবে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই মানুষকে সৎ ও অসৎ উভয় ধরনের পথে চলার যােগ্য বানিয়েছেন এবং তাকে সৎ কিংবা অসৎ পথে-এর যে কোনটা নির্ধারণের স্বাধীনতা দিয়েছেন। কাজেই কেউবা সৎ ও সঠিক পথে চলবে, কেউবা অসৎ ও ভ্রান্ত পথে চলবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কেউ নয়। কেননা আল্লাহর ইচ্ছাই ছিলাে এই যে, মানুষকে নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআ’লী পার্থিব পথ অতিক্রমের উপকরণাদি বর্ণনা করার পর পারলৌকিক পথ অতিক্রমের উপকারাদির পথের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। কুরআন কারীমের মধ্যে এ ধরনের অধিকাংশ বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। হজ্জের নফরের পাথেয়ের বর্ণনা দেয়ার পর তাকওয়ার পাথেয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, যা পরকালে কাজে লাগবে। বাহ্যিক পোষাকের বর্ণনার পর তাকওয়ার পোষাকের উত্তমতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে এখানে চতুষ্পদ জন্তুগুলির মাধ্যমে দুনিয়ার কঠিন পথ ও দূর দূরান্তের সফর অতিক্রম করার কথা বর্ণনা করার পর আখেরাতের ও ধর্মীয় পথের বর্ণনা করছেন যে, সত্য পথ। আল্লাহ তাআলার সাথে মিলন ঘটিয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেনঃ “প্রতিপালক আল্লাহর সরল সঠিক পথ এটাই। সুতরাং তোমরা এই পথেই চলো, অন্য পথে চলো না। অন্যথায় তোমরা পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে এবং সরল থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়বে। আমার কাছে পৌঁছবার সোজা পথ এটাই। আমি যে সরল সঠিক পথের কথা বলছি, সেটাই হচ্ছে দ্বীনে ইসলাম। এরই মাধ্যমে। তোমরা আমার কাছে পৌঁছতে পারবে। এটা আমি স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করে। দিলাম এবং এর সাথে সাথে আমি অন্যান্য পথগুলির ভ্রান্তির কথাও বর্ণনা করলাম। অতএব, সরল সঠিক পথ একটাই যা কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ (সঃ) হতে প্রমাণিত হয়েছে। বাকী অন্যান্য পথগুলি হচ্ছে ভুল ও অন্যায় পথ এবং মানুষের নিজেদের দ্বারা আবিষ্কৃত পথ। যেমন ইয়াহূদিয়্যাত, নাসরানিয়্যাত, মাজুসিয়্যাত ইত্যাদি।”

এরপর ঘোষণা করা হচ্ছে যে, হিদায়াত হচ্ছে মহান প্রতিপালকের অধিকারের বিষয়। তিনি ইচ্ছে করলে দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করতে পারেন, পৃথিবীর সমস্ত অধিবাসীকে মুমিন বানিয়ে দিতে তিনি সক্ষম। তিনি চাইলে সমস্ত মানুষকে একই পথের পথিক করে দিতে পারেন। কিন্তু এই মতানৈক্য বাকী থেকেই যাবে।।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালকের কথা পূর্ণ হবেই। তা এই যে, জাহান্নাম ও জান্নাত দানব ও মানব দ্বারা পূর্ণ হবে।”

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 09
[ وَ لَوۡ شَآءَ لَہَدٰىکُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿٪۹﴾
He could have guided you all.]
www.motaher21.net
Explanation of the Different Religious Paths

When Allah mentioned the animals which may be used for the purpose of physical journeys, He also referred to the moral, religious routes that people may follow. Often in the Qur’an there is a shift from physical or tangible things to beneficial spiritual and religious matters, as when Allah says,

وَتَزَوَّدُواْ فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى

And take a provision (with you) for the journey, but the best provision is Taqwa (piety, righteousness). (2:197)

And,

يَـبَنِى ادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَرِى سَوْءَتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ

O Children of Adam! We have granted clothing for you to cover yourselves, as well as for adornment; but the raiment of righteousness, that is better. (7:26)

Since Allah mentioned cattle and other such animals in this Surah, all of which are ridden or can be used in any way necessary, carrying people’s necessities for them to distant places and on difficult journeys – then He mentions the ways which people follow to try to reach Him, and explains that the right way is the one that does reach Him.

He says:

وَعَلَى اللّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ

And it is up to Allah to show the right way.

This is like the Ayat,

وَأَنَّ هَـذَا صِرَطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُواْ السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ

And verily, this is My straight path, so follow it, and do not follow the (other) paths, for they will separate you away from His path. (6:153)

and,

قَالَ هَذَا صِرَطٌ عَلَىَّ مُسْتَقِيمٌ

(Allah) said:”This is the way which will lead straight to Me.” (15:41)

وَعَلَى اللّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ

And it is up to Allah to show the right way.

Mujahid said:

“The true way is up to Allah.”

Al-Awfi said that Ibn Abbas said:

“It is up to Allah to clarify, to explain the guidance and misguidance.”

This was also reported by Ali bin Abi Talhah, and was also the opinion of Qatadah and Ad-Dahhak.

Hence Allah said:

وَمِنْهَا جَأيِرٌ

But there are ways that stray.

meaning they deviate from the truth.

Ibn Abbas and others said:

“These are the different ways,”

and various opinions and whims, such as Judaism, Christianity and Zoroastrianism.

Ibn Mas`ud recited it as
وَمِنْ
كُمْ
جَأيِرٌ
,

“But among you are those who stray.”

Then Allah tells us that all of that happens by His will and decree.

He says:

وَلَوْ شَاء لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ

And had He willed, He would have guided you all.

And Allah says:

وَلَوْ شَأءَ رَبُّكَ لامَنَ مَن فِى الاٌّرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا

If your Lord had willed, then all who are in the earth would have believed. (10:99)

وَلَوْ شَأءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ

إِلاَّ مَن رَّحِمَ رَبُّكَ وَلِذلِكَ خَلَقَهُمْ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبّكَ لَامْلَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

And if your Lord had so willed, He could surely, have made humanity one Ummah, but they will not stop disagreeing. Except those for whom your Lord has granted mercy. And it is for this that He did create them; and the Word of your Lord has been fulfilled (i.e. His saying):”Surely, I shall fill Hell with Jinn and men all together.” (11:118-119).

Leave a Reply