أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 793)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১২-২০ নং আয়াত:-
[ وَلِتَبْتَغُواْ مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْ
তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
That you may seek from His bounty and that you may perhaps be grateful.]
www.motaher21.net
وَ سَخَّرَ لَکُمُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ۙ وَ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ ؕ وَ النُّجُوۡمُ مُسَخَّرٰتٌۢ بِاَمۡرِہٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّعۡقِلُوۡنَ ﴿ۙ۱۲﴾
তিনিই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে; আর নক্ষত্ররাজিও অধীন রয়েছে তাঁরই বিধানের; অবশ্যই এতে বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
And He has subjected for you the night and day and the sun and moon, and the stars are subjected by His command. Indeed in that are signs for a people who reason.
وَ مَا ذَرَاَ لَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ مُخۡتَلِفًا اَلۡوَانُہٗ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّذَّکَّرُوۡنَ ﴿۱۳﴾
আর তিনি তোমাদের জন্য যমীনে যা সৃষ্টি করেছেন, বিচিত্র রঙের করে, নিশ্চয় তাতে সে সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা উপদেশ গ্রহন করে।
And [He has subjected] whatever He multiplied for you on the earth of varying colors. Indeed in that is a sign for a people who remember.
وَ ہُوَ الَّذِیۡ سَخَّرَ الۡبَحۡرَ لِتَاۡکُلُوۡا مِنۡہُ لَحۡمًا طَرِیًّا وَّ تَسۡتَخۡرِجُوۡا مِنۡہُ حِلۡیَۃً تَلۡبَسُوۡنَہَا ۚ وَ تَرَی الۡفُلۡکَ مَوَاخِرَ فِیۡہِ وَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۴﴾
তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন; যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত (মাছ) আহার করতে পার এবং যাতে তা হতে বের করতে পার নিজেদের পরিধেয় অলংকার। এবং তোমরা দেখতে পাও, ওর বুক চিরে নৌযান চলাচল করে। আর যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
And it is He who subjected the sea for you to eat from it tender meat and to extract from it ornaments which you wear. And you see the ships plowing through it, and [He subjected it] that you may seek of His bounty; and perhaps you will be grateful.
وَ اَلۡقٰی فِی الۡاَرۡضِ رَوَاسِیَ اَنۡ تَمِیۡدَ بِکُمۡ وَ اَنۡہٰرًا وَّ سُبُلًا لَّعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ ﴿ۙ۱۵﴾
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে আন্দোলিত না হয় এবং স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ, যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পার।
And He has cast into the earth firmly set mountains, lest it shift with you, and [made] rivers and roads, that you may be guided,
وَ عَلٰمٰتٍ ؕ وَ بِالنَّجۡمِ ہُمۡ یَہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۶﴾
এবং পথ নির্দেশক চিহ্নসমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যে পথনির্দেশ পায়।
And landmarks. And by the stars they are [also] guided.
اَفَمَنۡ یَّخۡلُقُ کَمَنۡ لَّا یَخۡلُقُ ؕ اَفَلَا تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۱۷﴾
সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?
Then is He who creates like one who does not create? So will you not be reminded?
وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَۃَ اللّٰہِ لَا تُحۡصُوۡہَا ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَغَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۸﴾
তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে ওর সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না; আল্লাহ অবশ্যই ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু।
And if you should count the favors of Allah, you could not enumerate them. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تُسِرُّوۡنَ وَ مَا تُعۡلِنُوۡنَ ﴿۱۹﴾
তোমরা যা গোপন রাখো এবং যা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা জানেন।
And Allah knows what you conceal and what you declare.
وَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ لَا یَخۡلُقُوۡنَ شَیۡئًا وَّ ہُمۡ یُخۡلَقُوۡنَ ﴿ؕ۲۰﴾
আর তারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য যাদেরকে ডাকে তারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয় ।
And those they invoke other than Allah create nothing, and they [themselves] are created.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১২-২০ নং আয়াত:-
[ وَلِتَبْتَغُواْ مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْ
তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
That you may seek from His bounty and that you may perhaps be grateful.]
www.motaher21.net
১২-২০ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পাঁচটি বড় বড় সৃষ্টি মানুষের কল্যাণার্থে নিয়োজিত ও অনুগত করে দিয়েছেন সে কথা বলা হয়েছে। এ বড় বড় পাঁচটি সৃষ্টি হল রাত, দিন, সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র । এসব সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই চন্দ্র-সূর্য নির্দিষ্ট কক্ষপথে বিচরণ করছে, দিবা-রাত্রি আবর্তিত হচ্ছে, কোন সময় ছোট, কোন সময় বড় হচ্ছে, একটি অপরটিকে অতিক্রম করে চলছে না। এসবের মাঝে কোনরকম পার্থক্য সূচিত হয় না। নক্ষত্রমালা দ্বারা আকাশ সুসজ্জিত করেছেন এবং এর দ্বারা পথভোলা পথিক পথ খুঁজে পায়। এগুলো আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ শক্তি ও সার্বভৌমত্বের প্রমাণ বহন করে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ رَبَّکُمُ اللہُ الَّذِیْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ فِیْ سِتَّةِ اَیَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰی عَلَی الْعَرْشِﺤ یُغْشِی الَّیْلَ النَّھَارَ یَطْلُبُھ۫ حَثِیْثًاﺫ وَّالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرٰتٍۭ بِاَمْرِھ۪ﺚ اَلَا لَھُ الْخَلْقُ وَالْاَمْرُﺚ تَبٰرَکَ اللہُ رَبُّ الْعٰلَمِیْنَﮅ)
“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি ‘আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনিই দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন যাতে তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে, আর সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজি, যা তাঁরই আজ্ঞাধীন, জেনে রাখ যে, সৃষ্টি তাঁর, হুকুমও (চলবে) তাঁর। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তিনি বরকতময়।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَا۬ءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ وَجَعَلْنٰهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيٰطِيْنِ وَأَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابَ السَّعِيْر)
“আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজী) দ্বারা আর ওগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নামের আযাব।” (সূরা মুলক ৬৭:৫)
এসব প্রত্যেকটি মাখলুক আল্লাহ তা‘আলার একত্বের ওপর প্রমাণ বহন করে যে, প্রতিপালক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়। অতএব যারা এর বিপরীত মনে করবে অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে প্রতিপালক হিসেবে বিশ্বাস করবে তারা মুশরিক আর তারাই হবে জাহান্নামী।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেন যে, তিনি মানুষের উপকারার্থে পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরণের ও রঙের বস্তু সৃষ্টি করেছেন। খনিজ সম্পদ, গাছপালা, জড় পদার্থ ও জীবজন্তু এমন কি মানুষের মাঝেও ভিন্ন ভিন্ন রঙ সৃষ্টি করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: “তুমি কি লক্ষ্য করনি? আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। তারপর আমি তা দিয়ে নানা বর্ণের ফলমূল উৎপন্ন করি। আর পর্বতমালারও রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ সাদা, লাল ও ঘোর কাল। আর এভাবে মানুষ, প্রাণী ও চতুষ্পদ জন্তু বিভিন্ন বর্ণের হয়ে থাকে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী, পরম ক্ষমাশীল।” (সূরা ফাতির ৩৫/২৭-২৮)
এ সমস্ত নিদর্শনগুলো এটাই প্রমাণ বহন করে যে, আল্লাহ তা‘আলা একক তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি ছাড়া আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়। আর আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত বিভিন্ন প্রকার রঙের এসব জিনিস সৃষ্টি করার ক্ষমতা কারো নেই। সুতরাং সকলের উচিত তাঁরই ইবাদত করা।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, ঐ সমস্ত অধীনস্থ জিনিসগুলোর মত সমুদ্রকেও তিনি মানুষের অধীনস্থ করে দিয়েছেন, যাতে সমুদ্রে ভ্রমণ করা, শিকার করা, পরিধেয় অলঙ্কার বের করে আনা এবং এক স্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللّٰهُ الَّذِيْ سَخَّرَ لَكُمُ الْبَحْرَ لِتَجْرِيَ الْفُلْكُ فِيْهِ بِأَمْرِهٰ وَلِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٰ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ)
“আল্লাহ, তিনি সমুদ্রকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে তাতে নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করতে পার ও তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা জাসিয়া ৪৫:১২)
অত্র আয়াতে সমুদ্রকে মানুষের অনুগত করে দেয়ার মাধ্যমে চারটি নেয়ামত বর্ণনা করেছেন।
(১) طَرِيًّا অর্থ তাজা, অর্থাৎ মানুষ সমুদ্রে জাল ফেলে তাজা মাছ সংগ্রহ করে খেয়ে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمِنْ كُلٍّ تَأْكُلُوْنَ لَحْمًا طَرِيًّا)
“তোমরা প্রত্যেকটি থেকেই টাটকা গোশত খাও” (সূরা ফাতির ৩৫:১২)
(২) মানুষ সমুদ্র থেকে মূল্যবান পরিধেয় অলঙ্কার বের করে আনে। যেমন মণিমুক্তা, প্রবাল ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَخْرُجُ مِنْهُمَا اللُّؤْلُؤُ وَالْمَرْجَانُ
“উভয় সমুদ্র হতে বের করেন মুক্তা ও প্রবাল।” (সূরা রহমান ৫৫:২২)
(৩) সমুদ্রের পাহাড় সমান ঢেউ চিরে মানুষ তাতে ভ্রমণ করে, অথচ আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে তাতে ডুবিয়ে মারতে পারেন।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِه۪ مَا يَرْكَبُوْنَ - وَإِنْ نَّشَأْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيْخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنْقَذُوْنَ)
“এবং তাদের জন্য আমি এর অনুরূপ যানবাহন সৃষ্টি করেছি যাতে তারা আরোহণ করে। আর আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন কেউ তাদের আর্তনাদে সাড়া দেবে না এবং তাদেরকে উদ্ধারও করা হবে না।” (সূরা ইয়াসিন ৩৬:৪২-৪৩)
(৪) মানুষ সমুদ্র পথে ব্যবসায়-বাণিজ্য করে আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ অন্বেষণ করে থাকে। হাজার হাজার টন মালামাল আমদানি ও রপ্তানি করে থাকে।
(وَتَرَي الْفُلْكَ فِيْهِ مَوَاخِرَ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِه۪ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ )
“তুমি দেখতে পাও ঢেউয়ের বুক চিরে জাহাজ চলাচল করে যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ তালাশ করতে পার এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা ফাতির ৩৫:১২)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে পাহাড় সৃষ্টির হিকমত ও উপকারিতা বর্ণনা করছেন। ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানে “ভাঁজ করার” বিষয়টি একটি সাম্প্রতিক আবিষ্কৃত সত্য। ভাঁজ করা বিষয়টি পাহাড়-পর্বতের বিন্যাসের জন্য দায়ী। পৃথিবীর যে কঠিন পৃষ্ঠের ওপর আমরা বসবাস করি তা শক্ত খোসার ন্যায়, অথচ এর গভীরের স্তরগুলো উত্তপ্ত ও তরল। ফলে যে কোন প্রাণীর জন্য তা বসবাসের অনুপযোগী। এটাও জানা যায় যে, পাহাড়-পর্বতের স্থায়িত্ব ভাঁজ করার মত বিস্ময়কর ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। কারণ অস্থিতিশীল অবস্থা থেকে পরিত্রাণের মাধ্যমে পাহাড়-পর্বতের ভিত্তি স্থাপন করাই ছিল এ ভাঁজগুলোর উদ্দেশ্য। সুতরাং পাহাড়গুলো স্থাপন করেছেন কীলক (পেরেক) স্বরূপ যাতে করে পৃথিবী নড়াচাড়া করতে না পারে। ক্ষণিকের ভূমিকম্প থেকে এর অনুভব করা যেতে পারে। ভূমিকম্প মুহূর্তের মধ্যে বিশাল বিশাল ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় এবং শহর ও গ্রামকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَلَمْ نَجْعَلِ الْأَرْضَ مِهَادًا) – (وَّالْـجِبَالَ أَوْتَادًا
“আমি কি জমিনকে বিছানাস্বরূপ করিনি? এবং পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ?” (সূরা নাবা ৭৮:৬-৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(خَلَقَ السَّمٰوٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا وَأَلْقٰي فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيْدَ بِكُمْ)
“তিনি আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তম্ভ ব্যতিরেকে, তোমরা তা দেখছ। তিনি পৃথিবীতে সুউচ্চ পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে।” (সূরা লুকমান ৩১:১০)
আর আল্লাহ তা‘আলা এতে নদী ও চলার পথ তৈরী করে দিয়েছেন যাতে করে মানুষেরা সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلْنَا فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيْدَبِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيْهَا فِجَاجًا سُبُلًا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ)
“এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক ঢলে না যায় এবং আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ, যাতে তারা গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারে” (সূরা আম্বিয়া ২১:৩১)
আর রাস্তা খুঁজে বের করার নিদর্শন স্বরূপ তিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন নক্ষত্ররাজী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوْا بِهَا فِيْ ظُلُمٰتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ)
“তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন যেন তার দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও।” (সূরা আনয়াম ৬:৯৭)
এই সব মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। এখানে এ সমস্ত অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করে তাওহীদের গুরুত্ব বুঝানো হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলাই সকল কিছুর স্রষ্টা। আর তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ছেড়ে যাদের ইবাদত করছ তারা কিছুই সৃষ্টি করেনি; বরং তারাও আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্ট। অতএব স্রষ্টা ও সৃষ্ট বস্তু কখনো এক হতে পারে না। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদেরকে মা‘বূদ হিসেবে আহ্বান করা হয় তারা কোন কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তারা আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি।
এই সমস্ত নেয়ামত ছাড়া আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে আরো অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। যা মানুষ গণনা করে শেষ করতে পারবে না। তবুও তারা ঈমান আনে না। বস্তুত তারাই মূর্খ বা নির্বোধ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ لَا تُحْصُوْهَا ط إِنَّ الْإِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ )
“তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চন্দ্র-সূর্য, দিবা-রাত্রি সকল কিছুকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন।
২. পর্বত পৃথিবীতে স্থাপন করা হয়েছে যাতে করে পৃথিবী নড়াচড়া না করে।
৩. নক্ষত্র সৃষ্টি করা হয়েছে মানুষকে পথ দেখানোর জন্য।
৪. সমুদ্রে মণি-মুক্তা রয়েছে।
৫. আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত গণনা করে শেষ করা যাবে না।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
‘আর তিনি তােমাদের উপকারার্থে রাত দিন এবং চন্দ্র সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করে দিয়েছেন…'(আয়াত ১২) বস্তুত সূর্য, চন্দ্র ও গ্রহ নক্ষত্র মানুষকে দেয়া আল্লাহর এক চমকপ্রদ নেয়ামত এবং সৃষ্টি জগতকে তিনি কিভাবে পরিচালনা করেন তারই দৃষ্টান্ত। এগুলাে পৃথিবীতে মানুষের প্রয়ােজন পূরণ করে। এগুলােকে মানবজাতির উপকারার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। ভেবে দেখুন তাে রাত ও দিন মানুষের জীবনের ওপর কতাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রাত ছাড়া দিন ও দিন ছাড়া রাত কেমন হতাে এবং ওই অবস্থায় পৃথিবীতে মানুষ, জীবজন্তু ও বৃক্ষলতা কিভাবে বেঁচে থাকতাে। চন্দ্র ও পৃথিবীর সাথে অনুরূপভাবে সূর্যের সাথে উভয়ের সম্পর্ক এবং জীবনের অস্তিত্ব ও বিকাশের সাথে তাদের সম্পর্ক চিন্তা করে দেখার মতাে। ‘আর নক্ষত্রগুলােকে আল্লাহর নির্দেশেই অনুগত করা হয়েছে।’ অর্থাৎ মানুষের এবং আল্লাহর জানা অন্যান্য সৃষ্টির উপকারার্থেই এগুলাে করা হয়েছে। এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি পরিচালনার কৌশলেরই একটা দিক এবং সমগ্র বিশ্বজগতে কার্যকর প্রাকৃতিক নিয়মের সমন্বয়েরই নমুনা। যে সব বুদ্ধিমান লােক চিন্তা গবেষণা করে এবং দৃশ্যমান জগতের অন্তরালে আল্লাহর যে নিয়ম কানুন চালু রয়েছে, তা উপলব্ধি করে তারা এটাও হৃদয়ংগম করে। তাইতাে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এগুলাের মাঝে চিন্তাশীল লােকদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’
# মানুষের জন্যে আল্লাহর সৃষ্টিকৃত নেয়ামতসমূহের চতুর্থ নেয়ামত হলাে বিভিন্ন ধরনের রং। ‘আর যে বিচিত্র রং বেরংয়ের জিনিসগুলাে তিনি পৃথিবীতে তােমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন, তাতেও শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।'(আয়াত ১৩) অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে মানব জাতির জন্যে যে রকমারি ধাতব পদার্থ সৃষ্টি ও সঞ্চিত করে রেখেছেন, যা দিয়ে বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের জীবন বাঁচে, তাতে নিদর্শন বা শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। ভূগর্ভে লুকানাে এ সব জিনিস মানুষের প্রয়ােজনের সময় যাতে কাজে লাগে এবং তারা যাতে পরবর্তীকালে জ্ঞানার্জন করে এগুলাে বের করতে পারে, সেজন্যে সেগুলােকে সঞ্চিত করে রেখে দেয়া হয়েছে, যখনই একটা খনিজ সম্পদ ফুরিয়ে যায়, অমনি তার চেয়েও অনেক বেশী পরিমাণে অপর একটা সম্পদ তার স্থান দখল করে। এভাবে বান্দাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা জীবিকা সঞ্চিত করে রাখেন। ‘এতে শিক্ষা গ্রহণকারীদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ অর্থাৎ যারা এ কথা ভুলে যায় না যে, আল্লাহ তায়ালাই তাদের জন্যে এই সম্পদ লুকিয়ে রেখেছেন।
# পানের অযোগ্য লবনাক্ত পানিতে পরিপূর্ণ সাগর মহাসাগরে আল্লাহর যে অসংখ্য সৃষ্টি ও সম্পদ রয়েছে, সে সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে এ আয়াতে, ‘তিনিই সমুদ্রকে তােমাদের অধিনস্থ করেছেন, যাতে তােমরা তা থেকে তাজা মাছ ও তার গােশত খেতে পারাে, এবং তা থেকে তােমাদের ব্যবহারের জন্যে রত্ন বের করতে পারাে। ওই সমুদ্রে তুমি জাহাজ চলাচল করতে দেখবে। আর তােমরা যাতে সমুদ্র থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ অর্জন করতে পারাে এবং আল্লাহর শােকর করতে পারাে, (সেজন্যে সমুদ্রকে পদানত করেছেন)।’ সমুদ্রের সম্পদরাজি এবং প্রাণীসমূহ মানুষের অসংখ্য প্রয়ােজন ও শখ পূরণ করে থাকে। এ সবের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে মাছ, যার তাজা গােশত খাদ্য হিসেবে মানুষের খুবই প্রিয়। তারপর এর আশপাশেই উৎপন্ন হয় মনিমুক্তা ইত্যাদি, যা মানুষ অলংকার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। জাহাজের উল্লেখ দ্বারা শুধু ভ্রমণ ও পরিবহনের দিকটা বুঝানাে হয়েছে তা নয়, বরং এ কথার মধ্যে সৃষ্টি সৌন্দর্যের এক শৈল্পিক প্রতিচ্ছবিও অংকন করা হয়েছে। ‘তুমি দেখবে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল করতে’ এ কথাটির ভেতরের দৃশ্য ও দৃশ্যের সৌন্দর্য উপভােগ করার দিকে সূক্ষ্ম ইংগিত রয়েছে। ঢেউয়ের বুক চিরে সাগরের বুকে জাহাজ চলার দৃশ্যটা কতাে মনােরম ও উপভােগ্য তা সহজেই বােধগম্য। এখানে আমরা পুনরায় প্রাকৃতিক বস্তুসমূহের চাহিদা ও প্রয়ােজন ছাড়াও তার দৃশ্যের বৈচিত্র্যের প্রতি কোরআনের দৃষ্টি আকর্ষণের মহান উদ্যোগ লক্ষ্য করি । কোরআনের আমাদেরকে এই মর্মে সচেতন করছে যে, প্রকৃতির সম্পদ সম্ভার দ্বারা কেবল নিজেদের প্রয়ােজন পূরণ করেই যেন আমরা ক্ষান্ত না থাকি, বরং এর সৌন্দর্যও যেন উপভােগ করি ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি কিভাবে কোরআন আমাদেরকে সমুদ্র ও সমুদ্রের বুক চিরে জাহাজ চলাচলের দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে এবং সমুদ্রের লােনা অপেয় পানিতে যে খাদ্য, রত্ন ও সৌন্দর্যোপকরণ আমাদের আয়ত্তাধীন করে দেয়া হয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান ও তার শােকর করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
# সূরার এই পর্বের সর্বশেষ দুটো আয়াতে আরা কিছু নেয়ামত ও সম্পদের বিবরণ দেয়া হয়েছে। ‘তিনিই যমীনের মধ্যে পাহাড়সমূহকে গেড়ে দিয়েছেন, যাতে যমীন তােমাদের নিয়ে এদিক সেদিক ঢলে না পড়ে। তিনিই নদী পথ ঘাট…’ বড় বড় পাহাড় পর্বত গুলোর ব্যাপারে আধুনিক বিজ্ঞান আমাদেরকে তেমন জোরালো ও যুক্তিসংগত তেমন কোনাে তথ্য দিতে পারে না। কিছু পরস্পর বিরােধী মতবাদ দ্বারা সে ওগুলাের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে। ওইসব মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগা মতবাদ এই যে, পৃথিবীর উষ্ণ অভ্যন্তর ভাগ যখনই ঠান্ডা হয়, তখনই তা কুঁচকে যায় এবং পৃথিবীর উপরিভাগ সংকীর্ণ হয়ে যায়। এর ফলে পাহাড় পর্বত ও উঁচু নীচুর সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোরআন বলে যে, এই সব পাহাড় পর্বত পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান পাহাড় পর্বতের এই ভূমিকার কথা এখনাে বলে না। পাহাড় পর্বতের পাশাপাশি নদ নদী ও রাস্তাঘাটের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। নদ নদীর সাথে রয়েছে পাহাড় পর্বতের প্রাকৃতিক সম্পর্ক, কেননা অধিকাংশ নদ নদীর উৎস থাকে পাহাড় পর্বতে, যেখানে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয়। পাহাড় পর্বত, নদ নদী এবং যাতায়াত, পরিবহন ও পশুর পরিবেশের সাথে রাস্তা ঘাটের সংযােগ রয়েছে। এরই পাশাপাশি রয়েছে পথনির্দেশক নিদর্শনাবলী, যা দেখে পথিকরা পথের সন্ধান পায়। যমীনে এ সব নিদর্শন হলাে পাহাড় পর্বত, মালভূমি ও নিম্নাঞ্চল আর আকাশে নক্ষত্র। নক্ষত্র দেখে জলে ও স্থলে পথের দিকনির্দেশনা লাভ করা যায়।
# *সকল সৃষ্টি আল্লাহর একাত্মবাদের সাক্ষ্য দেয় : সৃষ্টি, নেয়ামত ও বিশ্ব পরিচালনার বিবরণ সম্বলিত আয়াতগুলাের পর এগুলাের ওপর মন্তব্য করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে এই নেয়ামতসমূহের বিবরণ দেয়া হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যটাই মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। শিরক পরিহার ও তাওহীদের অনুসরণের ওপর জোর দেয়াই ছিলাে আল্লাহর এসব নেয়ামত ও সৃষ্টির বিবরণ দানের উদ্দেশ্য। ‘তবে যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি যারা সৃষ্টি করে না তাদের সমকক্ষ হতে পারে? তােমরা কি স্মরণ করবে না। তােমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা করাে, তবে তা গণনা করে শেষ করতে পারবে না, তিনি দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তোমরা যা কিছু গোপন করাে ও যা কিছু প্রকাশ করাে, তা আল্লাহ তায়ালা জানেন। আর আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকো, তারা তাে কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরকেই তাে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা মৃত নিষ্প্রাণ। তারা কখন পুনরুত্থিত হবে, তা তারা অনুভবই করে না।’ এটা খুবই সময়ােচিত মন্তব্য। ‘যিনি সষ্টি করেন, তিনি কি যারা সৃষ্টি করে না তাদের সমান?’ এ প্রশ্নের জবাবে মানুষ না বলতে বাধ্য। আসলে এর জবাব ‘না’ ছাড়া আর কিছু হতেও পারে না। কেননা যে সত্ত্বা সমগ্র সৃষ্টি জগতের স্রষ্টা, কেউ এমন কোনাে সত্ত্বাকে তার সমান গণ্য করতে পারে না, যে ছােটো বা বড়াে এমন কি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না। ‘তবে কি তােমরা স্মরণ করবে না?’ বস্তুত ব্যাপরটা এতােই স্পষ্ট ও সুনিশ্চিত যে, তা শুধু স্মরণ করাই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশী কোনাে যুক্তি প্রমাণ দর্শানাে বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার কোনােই প্রয়ােজন নেই। আল্লাহ তায়ালা বহু রকমের নেয়ামতের বিবরণ দিয়েছেন। অতপর এর ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহর নেয়ামত গণনা করাে, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না।’ অর্থাৎ নেয়ামতের শােকর আদায় করা তাে দূরের কথা, তা গুণে শেষ করাও অসম্ভব, আর অধিকাংশ নেয়ামত এমন যে, মানুষ তাে তা জানে না। কেননা এগুলাের সাথে মানুষের আজন্ম লালিত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তাই এ সব নেয়ামত যখন খােয়া যায়, ঠিক তখন ছাড়া আর কেউ এগুলাের খোঁজ রাখে না। এ হচ্ছে মানুষের দেহ কাঠামাে ও তার ভূমিকা। যখন তার রােগ ব্যাধির দরুণ দেহের কর্মক্ষমতা বিগড়ে যায়, তখন ছাড়া সে কি অনুভব করে যে, এতে কোনাে নেয়ামত আছে? এরূপ অবস্থায় তার অক্ষমতার জন্যে আল্লাহর ক্ষমা এবং দুর্বল মানুষের প্রতি আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার মতাে থাকতে পারে না। ‘আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।’ স্রষ্টা তার গােপন ও প্রকাশ্য সব সৃষ্টিকেই জানেন। ‘তােমরা যা কিছু প্রকাশ করাে ও যা কিছু গােপন করাে, তা আল্লাহ তায়ালা জানেন। কাজেই যে সমস্ত তথাকথিত উপাস্য কিছুই সৃষ্টি করে না এবং কিছুই জানে না, তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করা কিভাবে সমীচীন হতে পারে? আসলে যারা তাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করে, তারা মৃত এবং তাদের বেঁচে থাকার কোনাে যােগ্যতাই নেই। তাই তাদের কোনাে চেতনাও নেই, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের উপাসনা করে, তারা…. মৃত ও নির্জীব, কখনো তারা পুনরুত্থিত হবে, তাও তারা জানে না…’ এখানে কেয়ামত ও তার সময়কালের দিকে ইংগিত দেয়া হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে যে, যিনি স্রষ্টা, তাঁর অবশ্যই তার সৃষ্টির পুনরুত্থানের সময় জানা দরকার। কেননা পুনরুত্থান হচ্ছে সৃষ্টিরই পূর্ণতা। এই পুনরুত্থানের মাধ্যমেই সকল প্রাণী তাদের কর্মফল লাভ করে। সুতরাং যে সকল উপাস্য জানে না কখন তার উপাসকদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে, সে সব উপাস্য উপাসনা লাভেরই অযােগ্য। আসলে তারা উপহাসের পাত্র। কেননা স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন। আর তা যখন পারেন, তখন কখন পুনরুজ্জীবিত করবেন, তাও তার অবশ্যই জানা থাকবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ থেকে জানা যায়, ভূপৃষ্ঠে পর্বত শ্রেণী স্থাপনের উপকারিতা হচ্ছে, এর ফলে পৃথিবীর আবর্তন ও গতি সুষ্ঠু ও সুশৃংখল হয়। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ের এ উপকারিতা সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, পাহাড়ের অন্য যে সমস্ত উপকারিতা আছে সেগুলো একেবারেই গৌণ। মূলত মহাশূন্যে আবর্তনের সময় পৃথিবীকে আন্দোলিত হওয়া থেকে রক্ষা করাই ভূপৃষ্ঠে পাহাড় স্থাপন করার মুখ্য উদ্দেশ্য।
# নদ-নদীর সাথে যে পথ তৈরী হয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে পার্বত্য এলাকাসমূহে এসব প্রাকৃতিক পথের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। অবশ্যি সমতল ভূমিতেও এগুলোর গুরুত্ব কম নয়।
# আল্লাহ সমগ্র পৃথিবীটাকে একই ধারায় সৃষ্টি করেননি। বরং প্রত্যেকটি এলাকাকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা চিহ্নিত করেছেন। এর অন্যান্য বিভিন্ন উপকারিতার মধ্যে একটি অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে এই যে, মানুষ নিজের পথ ও গন্তব্য আলাদাভাবে চিনে নেয়। এ নিয়ামতের মর্যাদা মানুষ তখনই অনুধাবন করতে পারে যখন ঘটনাক্রমে এমন কোন বালুকাময় মরু প্রান্তরে তাকে যেতে হয় যেখানে এ ধরনের বৈশিষ্ট্যমূলক চিহ্নের প্রায় কোন অস্তিত্বই থাকে না এবং মানুষ প্রতি মুহূর্তে পথ হারিয়ে ফেলার ভয় করতে থাকে। সামুদ্রিক সফরে মানুষ এর চেয়ে আরো বেশী মারাত্মকভাবে এ বিরাট নিয়ামতটি অনুভব করতে থাকে। কারণ সেখানে পথের নিশানী প্রায় একেবারেই থাকে না। কিন্তু মরুভূমি ও সমুদ্রের বুকেও আল্লাহ মানুষের পথ দেখাবার জন্য একটি প্রাকৃতিক ব্যবস্থা করে রেখেছেন। সেখানে প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্তও মানুষ তারকার সাহায্যে পথের সন্ধান করে আসছে।
এখানে আবার তাওহীদ রহমত ও রবুবীয়াতের যুক্তির মাঝখানে রিসালাতের যুক্তির দিকে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ স্থানটি পড়তে গিয়ে মন আপনা আপনি এই বিষয়বস্তুর প্রতি নিবিষ্ট হয়ে যায় যে, যে আল্লাহ তোমাদের বস্তুগত জীবনে পথনির্দেশনার জন্য এতসব ব্যবস্থা করে রেখেছেন তিনি কি তোমাদের নৈতিক জীবনের ব্যাপারে এতই বেপরোয়া হয়ে যেতে পারেন যে, এখানে তোমাদের পথ দেখাবার কোন ব্যবস্থাই করবেন না? একথা সুস্পষ্ট, বস্তুগত জীবনে পথভ্রষ্ট হবার সবচেয়ে বড় ক্ষতি নৈতিক জীবনে পথভ্রষ্ট হবার ক্ষতির তুলনায় অতি সামান্যই বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে বলা যায়, মহান করুণাময় রব যখন আমাদের বৈষয়িক জীবনকে সহজ ও সফল করার জন্য পাহাড়ের মধ্যে আমাদের জন্য পথ তৈরী করেন, সমতল ক্ষেত্রে পথের চিহ্ন স্থাপন করেন, মরুভূমি ও সাগরের বুকে আমাদের দিক-নির্দেশনার জন্য আকাশে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন তখন তাঁর সম্পর্কে আমরা কেমন করে এ কুধারণা পোষণ করতে পারি যে, তিনি আমাদের নৈতিক সাফল্য ও কল্যাণের জন্য কোন পথই তৈরী করেননি, সেই পথকে সুস্পষ্ট করে করে তোলার জন্য কোন চিহ্নও দাঁড় করাননি এবং তাকে পরিষ্কারভাবে দেখিয়ে দেবার জন্য কোন উজ্জ্বল প্রদীপও জ্বালাননি?
#.এ পর্যন্ত বিশ্ব-জাহান ও প্রাণী জগতের বহু নিশানী একের পর এক বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো বর্ণনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ তার নিজের সত্তা থেকে নিয়ে আসমান ও যমীনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বত্রই যেদিকে চায় দৃষ্টি প্রসারিত করে দেখুক, সেখানে প্রত্যেকটি জিনিসই নবীর বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে এবং কোথাও থেকেও শিরক ও নাস্তিক্যবাদের সমর্থনে একটি সাক্ষ্য-প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে না। এই যে তিনি নগণ্য একটি ফোঁটা থেকে বাক শক্তিসম্পন্ন এবং যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করে বিতর্ককারী মানুষ তৈরী করেছেন, তার প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণ করার জন্য এমন বহু জীব-জানোয়ার সৃষ্টি করেছেন যাদের চুল, চামড়া, রক্ত, দুধ, গোশত ও পিঠের মধ্যে মানবিক প্রকৃতির বহুতর চাহিদা এমনকি তার সৌন্দর্য প্রিয়তার দাবী পুরণের উপাদান রয়ে গেছে। এই যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করার এবং ভূপৃষ্ঠে নানা জাতের ফুল, ফল, শস্য ও উদ্ভিদ উৎপাদনের ব্যবস্থা করেছেন, যার অসংখ্য বিভাগ পরস্পরের সাথে মিলেমিশে অবস্থান করে এবং সেগুলো মানুষের প্রয়োজনও পূর্ণ করে। এ রাত ও দিনের নিয়মিত আসা যাওয়া এবং চন্দ্র, সূর্য ও তারকারাজির চরম নিয়ন্ত্রিত ও সুশৃংখল আবর্তন, পৃথিবীর উৎপন্ন ফসল ও মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে যার গভীরতম সম্পর্ক বিদ্যমান। এই যে পৃথিবীতে সমুদ্রের অস্তিত্ব এবং তার মধ্যে মানুষের বহু প্রাকৃতিক ও সৌন্দর্য প্রীতির চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। এই যে পানির কতিপয় বিশেষ আইনের শৃংখলে বাঁধা থাকা এবং তারপর তার এ উপকারিতা যে মানুষ সমুদ্রের মতো ভয়াবহ বস্তুর বুক চিরে তার মধ্যে নিজের জাহাজ চালায় এবং দেশ থেকে দেশান্তরে সফর ও বাণিজ্য করে। এই যে পৃথিবীর বুকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি এবং মানুষের অস্তিত্বের জন্য তাদের অপরিহার্যতা। এই যে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে অসীম মহাশূন্যের বুক পর্যন্ত অসংখ্য চিহ্ন ও বিশেষ নিশানীর বিস্তার এবং তারপর এসব মানুষের কল্যাণে নিয়েজিত থাকা। এসব জিনিসই পরিষ্কার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একটি সত্তাই এ পরিকল্পনা তৈরী করেছেন। তিনি একাই নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এসবের ডিজাইন তৈরী করেছেন। তিনিই এ ডিজাইন অনুযায়ী তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই প্রতি মুহূর্তে এ দুনিয়ায় নিত্য নতুন জিনিস তৈরী করে করে এমনভাবে সামনে আনছেন যার সমগ্র পরিকল্পনা ও তার নিয়ম-শৃংখলার সামান্যতম ফারাকও আসছে না। আর তিনি একাই পৃথিবী থেকে নিয়ে আকাশ পর্যন্ত এ সুবিশাল কারখানাটি চালাচ্ছেন। একজন নির্বোধ বা হঠকারী ছাড়া আর কে-ই বা একথা বলতে পারে যে, এসব কিছুই একটি আকস্মিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়? অথবা এ চরম সুশৃংখল, সুসংবদ্ধ ও ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্ব-জাহানের বিভিন্ন কাজ বা বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন খোদার সৃষ্ট এবং বিভিন্ন খোদার পরিচালনাধীন?
# যদি তোমরা একথা মানো (যেমন বাস্তবে মক্কার কাফেররাও এবং দুনিয়ার অন্যান্য মুশরিকরাও মানতো) যে, একমাত্র আল্লাহই সব কিছুর স্রষ্টা এবং এ বিশ্বজগতে তোমাদের উপস্থাপিত শরীকদের একজনও কোন কিছুই সৃষ্টি করেনি, তাহলে স্রষ্টার সৃষ্টি করা ব্যবস্থায় অস্রষ্টাদের মর্যাদা কেমন করে স্রষ্টার সমান অথবা কোনভাবেই তাঁর মতো হতে পারে? নিজের সৃষ্ট জগতে স্রষ্টা যেসব ক্ষমতা-ইখতিয়ারের অধিকারী অ-স্রষ্টারাও তার অধিকারী হবে এবং স্রষ্টা তাঁর সৃষ্টিলোকের ওপর যেসব অধিকার রাখেন অ-স্রষ্টারাও তাই রাখবে, এটা কেমন করে সম্ভব? স্রষ্টা ও অ-স্রষ্টার গুণাবলী একই রকম হবে অথবা তারা একই প্রজাতিভুক্ত হবে, এমনকি তাদের মধ্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক হবে, এটা কেমন করে কল্পনা করা যেতে পারে?
ফী জিলালিল কুরআন:
# প্রথম ও দ্বিতীয় বাক্যের মধ্যে একটি বিরাট অকথিত কাহিনী রয়ে গেছে, যা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, সেটি এতই সুস্পষ্ট যে, এখানে তার জের টানার কোন প্রয়োজন নেই। তার প্রতি এ সামান্যতম ইঙ্গিত করে দেয়াই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, আল্লাহর অপরিসীম অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করার পরপরই তাঁর ক্ষমাশীল ও করুণাময় হবার কথা উল্লেখ করতে হবে। এ থেকে জানা যায়, যে মানুষের সমগ্র সত্তা ও সারাটা জীবন আল্লাহর অনুগ্রহের সূতোয় বাঁধা সে কেমন সব অকৃজ্ঞতা, অবিশ্বস্ততা, বিশ্বাসঘাতকতা ও বিদ্রোহাত্মক আচরণের মাধ্যমে নিজের উপকারী ও অনুগ্রহদাতা এমন ধরনের করুণাশীল ও সহিষ্ণু যে, এমন সব কার্যকলাপের পরও তিনি বছরের পর বছর একজন অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে এবং শত শত বছর একটি বিদ্রোহী ও নাফরমান জাতিকে নিজের অনুগ্রহদানে আপ্লুত করে চলেছেন। এখানে দেখা যাবে, এক ব্যক্তি প্রকাশ্য স্রষ্টার অস্তিত্বই অস্বীকার করে এবং তারপরও তার প্রতি প্রবল ধারায় অনুগ্রহ বর্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে আবার এক ব্যক্তি স্রষ্টার সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকার সব কিছুতেই অ-স্রষ্টা সত্তাদেরকে শরীক করে চলছে এবং দানের জন্য দানকারীর পরিবর্তে অ-দানকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এরপরও এখানে দেখা যাবে দাতা-হস্ত দান করতে বিরত হচ্ছে না। এখানে এ দৃশ্যও দেখা যাবে যে, এক ব্যক্তি স্রষ্টাকে স্রষ্টা ও অনুগ্রহদাতা হিসেবে মেনে নেয়ার পরও তাঁর মোকাবিলায় বিদ্রোহ ও নাফরমানী করা নিজের অভ্যাসে পরিণত এবং তাঁর আনুগত্যের শৃংখল গলায় থেকে নামিয়ে দেয়াকে নিজের নীতি ও বিধি হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এরপরও সারাজীবন স্রষ্টার অপরিসীম অনুগ্রহের ধারায় সে আপ্লুত হয়ে চলেছে।
# আল্লাহকে অস্বীকার এবং শিরক ও গোনাহের কাজ করা সত্ত্বেও আল্লাহর অনুগ্রহের সিলসিলা বন্ধ না হওয়ার কারণ আল্লাহ লোকদের কার্যকলাপের কোন খবর রাখেন না,—-কোন নির্বোধ যেন একথা মনে না করে বসে। এটা অজ্ঞতার কারণে আন্দাজে ভাগ-বাঁটোয়ারা করার বা ভুলে কাউকে দান করে দেবার ব্যাপার নয়। এটা তো সহিষ্ণুতা ও ক্ষমার ব্যাপার। অপরাধীদের গোপন ভেদ বরং তাদের মনের গহনে লুকিয়ে থাকা সংকল্পগুলোর বিস্তারিত চেহারা জানার পরও এ ধরনের সহিষ্ণুতা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা হচ্ছে। এটা এমন পর্যায়ের সৌজন্য, দানশীলতা ও ঔদার্য যে একমাত্র রব্বুল আলামীনের পক্ষেই এটা শোভা পায়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
#
আল্লাহ তাআলা নিজের আরো বড় বড় নিয়ামতরাজির বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ “হে মানুষ! দিবস ও রজনী তোমাদের উপকারার্থে পর্যায়ক্রমে যাতায়াত করছে, সূর্য ও চন্দ্র চক্রাকারে আবর্তিত হচ্ছে এবং উজ্জ্বল নক্ষত্ররাজি তোমাদের কাছে আলো পৌঁছাচ্ছে। প্রত্যেকটিকে আল্লাহ এমন সঠিক নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন যে, না ওগুলি এদিকে ওদিকে যাচ্ছে, না তোমাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে। সবটাই মহান আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে। ছ’ দিনে তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আকাশের উপর সমাসীন হন। দিন ও রাত্রি পর্যায়ক্রমে আসা-যাওয়া করছে? সূর্য-চন্দ্র এবং তারকারাজি তাঁরই নির্দেশক্রমে কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সৃষ্টি ও হুকুমের মালিক তিনিই। তিনি বিশ্ব প্রতিপালক এবং তিনি বড়ই বরকত ও কল্যাণময়। বিবেকবান ব্যক্তিদের জন্যে এতে মহা শক্তিশালী আল্লাহর শক্তি ও সাম্রাজ্যের বড় নিদর্শন রয়েছে।”
এই আকাশের বস্তুরাজির পর এখন যমীনের বস্তু রাজির প্রতি লক্ষ্য করা যাক। প্রাণী, উদ্ভিদ, জড় পদার্থ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ ও রূপের জিনিসগুলি এবং অসংখ্য উপকারের বস্তুগুলি তিনি মানুষের উপকারের উদ্দেশ্যে যমীনে সৃষ্টি করেছেন। যারা আল্লাহর নিয়ামত রাশি সম্পর্কে চিন্তা গবেষণা করে এবং ওগুলির মর্যাদা দেয় তাদের জন্যে এগুলো অবশ্যই বড় বড় নিদর্শনই বটে।
#
আল্লাহ তাআলা নিজের অরো অনুগ্রহ ও মেহেরবাণীর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেনঃ “হে মানবমণ্ডলী! সমুদ্রের উপরেও তিনি তোমাদেরকে আধিপত্য দান করেছেন। নিজের গভীরতা ও তরঙ্গমালা সত্ত্বেও ওটা তোমাদের অনুগত। তোমাদের নৌকাগুলি তাতে চলাচল করে। অনুরূপভাবে তোমরা ওর মধ্য হতে মৎস্য বের করে ওর তাজা গোশত ভক্ষণ করে থাকো। মাছ (হজ্জের ইহরামহীন অবস্থায় এবং ইহরামের অবস্থায় জীবিত হোক বা মৃত। হোক সব সময় হালাল। মহান আল্লাহ এই সমুদ্রের মধ্যে তোমাদের জন্যে জওহর ও মনিমুক্তা সৃষ্টি করেছেন, যেগুলি তোমরা অতি সহজে বের করতঃ অলংকারের কাজে ব্যবহার করে থাকে। এই সমুদ্রে নৌকাগুলি বাতাস সরিয়ে এবং পানি ফেড়ে বুকের ভরে চলে থাকে।
সর্বপ্রথম হযরত নুহ (আঃ) নৌকায় আরোহণ করেন। তাকেই আল্লাহ তাআ’লী নৌকা তৈরীর কাজ শিখিয়ে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই মানুষ নৌকা তৈরী করে আসছে এবং আরোহণ করে তারা বড় বড় সফর করতে রয়েছে। এপারের জিনিস ওপারে এবং ওপারের জিনিস এপারে নিয়ে যাওয়া-আসা করছে। ঐ কথাই এখানে বলা হচ্ছেঃ ‘তা এই জন্যে যে, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা পশ্চিমা সমুদ্রকে বলেনঃ “আমার বান্দাদেরকে আমি তোমার মধ্যে আরোহণ করাতে চাই। সুতরাং তুমি তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবে?” উত্তরে সে বলেঃ “আমি তাদেরকে ডুবিয়ে দেবো।” তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলেনঃ “তোমার তীব্রতা তোমার কিনারা বা ধারের উপরই থাক। আমি তাদেরকে আমার হাতে নিয়ে চলবো। তোমাকে আমি প্রলংকার ও শিকার হতে বঞ্চিত করে দিলাম। অতঃপর তিনি পূর্বা সমুদ্রকে অনুরূপ কথাই বললেন। সে বললোঃ “আমি তাদেরকে স্বীয় হাতে উঠিয়ে নিবো এবং মা যে ভাবে নিজের সন্তানের খোঁজ খবর নিয়ে থাকে সেই ভাবে আমিও তাদের খোঁজ খবর নিতে থাকবে।” তার এ কথা শুনে মহান আল্লাহ তাদের অলংকারও দিলেন এবং শিকারও দিলেন। (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। এর রিওয়াইয়াতকারী শুধু আবদুর রহমান ইবনু আবদিল্লাহ। তবে হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতেও এ হাদীসটি মারূফ রূপে বর্ণিত হয়েছে)
এরপর যমীনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এটাকে থামিয়ে রাখা এবং হেলাদোলা হতে রক্ষা করার জন্যে এর উপর মযবুত ও ওজনসই পাহাড় স্থাপন করা হয়েছে। যাতে এর নড়াচড়া করার কারণে এর উপর অবস্থানকারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে না পড়ে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তিনি পর্বতসমূহকে দৃঢ়ভাবে প্রোথিত করেছেন।”
হযরত হাসান (রঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন যমীন সৃষ্টি করেন তখন তা হেলা-দোলা করছিল। শেষ পর্যন্ত ফেরেশতারা বলতে শুরু করেন, এর উপর তো কেউ অবস্থান করতে পারবে না। সকালেই তাঁরা দেখতে পান যে, এতে পাহাড়কে গেড়ে দেয়া হয়েছে এবং ওর হেলা-দোলাও বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং পাহাড়কে কোন জিনিস দ্বারা বানানো হয়েছে সেটাও ফেরেস্তাগণ অবগত হন। কায়েস ইবনু উবাদাহ (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আলী (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, যমীন বলেঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার উপর বণী আদমকে বসবাস করার অধিকার। দিচ্ছেনঃ যারা আমার পিঠের উপর গুনাহ করবে এবং অশ্লীলতা ছড়াবে।” একথা বলে সে কাঁপতে শুরু করে। তখন আল্লাহ পাক ওর উপর পর্বতসমূহ মযবুত ভাবে প্রোথিত করেন যেগুলি তোমরা দেখতে পাচ্ছ এবং কতকগুলিকে দেখতেও পাচ্ছ না।”
এটাও আল্লাহ তাআলার দয়া ও মেহেরবাণী যে, তিনি চতুর্দিকে নদ-নদী ও প্রস্রবণ প্রবাহিত রেখেছেন। কোনটি তেজ, কোনটি মন্দা, কোনটি দীর্ঘ এবং কোনটি খাটো। কখনো পানি কমে যায় এবং কখনো বেশী হয় এবং কখনো সম্পূর্ণরূপে শুকিয়ে যায়। পাহাড়-পর্বতে, বনে-জঙ্গলে, মরূ প্রান্তরে এবং পাথরে বরাবরই এই প্রস্রবণগুলি প্রবাহিত রয়েছে এবং এক স্থান হতে অন্যস্থানে চলে যাচ্ছে। এ সবই হচ্ছে মহান আল্লাহর ফযল ও করম, করুণা ও দয়া। না আছে তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ এবং না আছে কোন প্রতিপালক। তিনি ছাড়া অন্য কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। তিনিই প্রতিপালক এবং তিনিই মাবুদ। তিনিই রাস্তা বানিয়ে দিয়েছেন স্থলে ও জলে, পাহাড়ে ও জঙ্গলে, লোকালয়ে এবং বিজনে। তাঁর দয়া ও অনুগ্রহে সর্বত্রই রাস্তা বিদ্যমান রয়েছে, যাতে এদিক থেকে ওদিকে লোক যাতায়াত করতে পারে। কোন পথ প্রশস্ত, কোনটা সংকীর্ণ এবং কোনটা সহজ, কোনটা কঠিন। তিনি আরো নিদর্শন রেখেছেন। যেমন পাহাড়, টিলা ইত্যাদি, যেগুলির মাধ্যমে পথচারী মসাফির পথ জানতে বা-চিনতে পারে। তারা পথ ভুলে যাওয়ার পর সোজা সঠিক পথ পেয়ে যায়। নক্ষত্ররাজি পথ প্রদর্শকরূপে রয়েছে। রাত্রির অন্ধকারে ওগুলির মাধ্যমেই রাস্তা ও দিক নির্ণয় করা যায়।
ইমাম মালিক (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবি) দ্বারা পাহাড়কে বুঝানো হয়েছে।
এরপর মহান আল্লাহ নিজের বড়ত্বের শ্রেষ্ঠত্বের, বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ “ইবাদতের যোগ্য তিনি ছাড়া আর কেউই নেই। আল্লাহ ছাড়া লোকেরা যাদের ইবাদত করছে তারা একেবারে শক্তিহীন। কোন কিছু সৃষ্টি করার ক্ষমতা তাদের নেই। পক্ষান্তরে সব কিছুরই সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ।”
এটা স্পষ্ট কথা যে, সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টি করতে অক্ষম কখনো সমান হতে পারে না। সুতরাং উভয়ের ইবাদত করা বড়ই যুলুমের কাজ। এতোটা বেহুশ হওয়া মানুষের জন্যে মোটেই শোভনীয় নয়।
অতপরঃ আল্লাহ তাআলা স্বীয় নিয়ামতের প্রাচুর্য ও আধিক্যের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে এতো বেশী নিয়ামত দান করেছি। যে, তোমরা সেগুলি গণে শেষ করতে পার না। আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে থাকি। যদি আমি আমার সমস্ত নিয়ামতের পুরোপুরি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দাবী করতাম তবে তোমাদের দ্বারা তা পূরণ করা মোটেই সম্ভব ছিল না যদি আমি এই নিয়ামতরাশির বিনিময়ে তোমাদের সকলকে শাস্তি প্রদান করি তবুও তা আমার পক্ষে যুলুম হবে না। কিন্তু তোমাদের অপরাধ ও পাপসমূহ ক্ষমা করে থাকি। তোমাদের দোষ-ত্রুটি আমি দেখেও দেখি না। পাপ হতে তাওবা, আনুগত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন এবং আমার সন্তুষ্টির কামনার পর কোন গুনাহ হয়ে গেলে আমি তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে থাকি। আমি অত্যন্ত দয়ালু। তাওবার পর আমি শাস্তি প্রদান করি না।
#
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, তিনি গোপনীয় ও প্রকাশ্য সবকিছুই জানেন। তাঁর কাছে দুটোই সমান। কিয়ামতের দিন প্রত্যেক আমলকারীকে তার আমলের প্রতিদান তিনি প্রদান করবেন, ভালকে পুরস্কার এবং মন্দকে শাস্তি। যে মিথ্যা উপাস্যদের কাছে এই লোকগুলি তাদের প্রয়োজন পূরণের আবেদন জানায় তারা কোন কিছুরই সৃষ্টিকর্তা নয়; বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট। যেমন হযরত খালীল (আঃ) স্বীয় কওমকে বলেছিলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা যাদেরকে নিজেরাই খোদাই করে নির্মাণ কর, তোমরা কি তাদেরই পূজা কর? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমরা যেগুলিকে তৈরী কর সেগুলিকেও।” (৩৭:৯৫-৯৬)
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহ ছাড়া তোমরা বরং এমন মা’বুদের ইবাদত করছো যারা নির্জীব জড় পদার্থ, যারা শুনেও না, দেখেও না এবং বুঝেও না। তাদের তো এতোটুকুও অনুভূতি নেই যে, কিয়ামত কখন হবে? তাহলে তোমরা তাদের কাছে উপকার ও ছাওয়াব লাভের আশা কি করে করছো? এই আশা তো ঐ আল্লাহর কাছেই করা উচিত, যিনি সমস্ত কিছুর খবর রাখেন এবং যিনি সারা বিশ্বের প্রতিপালক!
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 12-20
[ وَلِتَبْتَغُواْ مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْ
That you may seek from His bounty and that you may perhaps be grateful.]
www.motaher21.net
Signs in the Subjection of Night and Day, the Sun and the Moon, and in that which grows on Earth
Allah says:
وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالْنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالْنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ
And He has subjected the night and the day for you, and the sun and the moon; and the stars are subjected by His command.
Allah mentions the mighty signs and immense blessings to be found in His subjection of night and day, which follow one another;
the sun and moon, which revolve;
the stars, both fixed and moving through the skies, offering light by which people may find their way in the darkness.
Each of (these heavenly bodies) travels in its own orbit, which Allah has ordained for it, and travels in the manner prescribed for it, without deviating in any way.
All of them are under His subjugation, His control and His decree, as Allah says:
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِى خَلَقَ السَمَـوَتِ وَالاٌّرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِى الَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالاٌّمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَـلَمِينَ
Indeed, your Lord is Allah, Who created the heavens and the earth in Six Days, and then He rose (Istawa) over the Throne.
He brings the night as a cover over the day, seeking it rapidly, and (He created) the sun, the moon, the stars (all) subjected to His command. Surely, His is the creation and commandment.
Blessed is Allah, the Lord of all that exists! (7:54)
Thus Allah says;
إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
Surely, in this are proofs for people who understand.
meaning, they are indications of His immense power and might, for those who think about Allah and understand His signs.
وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِي الَارْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ
And whatsoever He has created of varying colors on the earth for you.
When Allah points out the features of the skies, He also points out the wondrous things that He has created on earth, the variety of its animals, minerals, plants and inanimate features, all having different colors and shapes, benefits and qualities.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِّقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ
Verily, in this is a sign for people who reflect.
meaning (those who remember) the blessings of Allah and give thanks to Him for them.
Signs in the Oceans, Mountains, Rivers, Roads and Stars
Allah tells;
وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُواْ مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُواْ مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيه
And He it is Who subjected the sea (to you), that you may eat from the fresh tender meat, and that you bring forth out of it ornaments to wear.
And you see the ships plowing through it,
Allah tells us how He has subjected the seas, with their waves lapping the shores, and how He blesses His servants by subjecting the seas for them so that they may travel on them, and by putting fish and whales in them, by making their flesh permissible to eat – whether they are caught alive or dead – at all times, including when people are in a state of Ihram.
He has created pearls and precious jewels in the oceans, and made it easy for His servants to recover ornaments that they can wear from the ocean floor.
He made the sea such that it carries the ships which plow through it. He is the One Who taught mankind to make ships, which is the inheritance of their forefather Nuh. He was the first one to travel by ship, he was taught how to make them, then people took this knowledge from him and passed it down from generation to generation through the centuries, so that they could travel from country to country and from place to place, bringing goods from here to there and from there to here.
Thus Allah says:
وَلِتَبْتَغُواْ مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
that you may seek from His bounty and that you may perhaps be grateful.
for His bounty and blessings.
Allah says.
وَأَلْقَى فِي الَارْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ
And He has driven firm standing mountains into the earth, lest it should shake with you;
Allah mentions the earth and how He placed in it mountains standing firm, which make it stable and keep it from shaking in such a manner that the creatures dwelling on it would not be able to live. Hence Allah says,
وَالْجِبَالَ أَرْسَـهَا
And the mountains He has fixed firmly. (79:32)
وَأَنْهَارًا وَسُبُلً
and rivers and roads,
meaning He has made rivers which flow from one place to another, bringing provision for His servants.
The rivers arise in one place, and bring provision to people living in another place. They flow through lands and fields and wildernesses, through mountains and hills, until they reach the land whose people they are meant to benefit. They meander across the land, left and right, north and south, east and west – rivers great and small – flowing sometimes and ceasing sometimes, flowing from their sources to the places where the water gathers, flowing rapidly or moving slowly, as decreed by Allah. There is no god besides Him and no Lord except Him.
He also made roads or routes along which people travel from one land or city to another, and He even made gaps in the mountains so that there would be routes between them, as He says:
وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجاً سُبُلً
And We placed broad highways for them to pass through. (21:31)
لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
that you may guide yourselves.
وَعَلمَاتٍ
And landmarks,
meaning, signs like great mountains and small hills, and so on, things that land and sea travelers use to find their way if they get lost.
وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ
and by the stars (during the night), they (mankind) guide themselves.
meaning, in the darkness of the night.
This was the opinion of Ibn Abbas.
Worship is Allah’s Right
Then Allah tells us of His greatness, and that worship should be directed to Him alone, not to any of the idols which do not create but are rather themselves created.
Thus He says,
أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لاَّ يَخْلُقُ أَفَل تَذَكَّرُونَ
Is then He, Who creates, the same as one who does not create! Will you not then reflect!
Then He shows His servants some of the many blessings He granted for them, and the many kinds of things that He has done for them.
He says;
وَإِن تَعُدُّواْ نِعْمَةَ اللّهِ لَا تُحْصُوهَا إِنَّ اللّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
And if you would try to count the favors of Allah, you would never be able to count them. Truly, Allah is Forgiving, Most Merciful.
meaning that He pardons and forgives them. If He were to ask you to thank Him for all of His blessings, you would not be able to do so, and if He were to command you to do so, you would be incapable of it. If He punishes you, He is never unjust in His punishment, but He is Forgiving and Most Merciful, He forgives much and rewards for little.
Ibn Jarir said:
“It means that Allah is Forgiving when you fail to thank Him properly, if you repent and turn to Him in obedience, and strive to do that which pleases Him. He is Merciful to you and does not punish you if you turn to Him and repent.
Allah tells:
وَاللّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ
And Allah knows what you conceal and what you reveal.
Allah tells us that He knows what is hidden in people’s hearts as well as what is apparent. He will reward or punish everyone for their deeds on the Day of Resurrection. If their deeds are good then they will be rewarded, and if their deeds are evil, then they will be punished.
The gods of the Idolators are Created, they do not create
Then Allah tells:
وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْيًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ
Those whom they invoke besides Allah have not created anything, but are themselves created.
Allah tells that the idols which people call on instead of Him cannot create anything, they are themselves created, as Al-Khalil (Ibrahim) said:
قَالَ أَتَعْبُدُونَ مَا تَنْحِتُونَ
وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُونَ
“Do you worship that which you (yourselves) carve, while Allah has created you and what you make!” (37:-96).