أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 805)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৫১-৫৫ নং আয়াত:-
[ اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ تَتَّقُوۡنَ ﴿۵۲﴾
তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ভয় করবে?
Then is it other than Allah that you fear?]
www.motaher21.net
وَ قَالَ اللّٰہُ لَا تَتَّخِذُوۡۤا اِلٰـہَیۡنِ اثۡنَیۡنِ ۚ اِنَّمَا ہُوَ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَاِیَّایَ فَارۡہَبُوۡنِ ﴿۵۱﴾
আল্লাহ বললেন, তোমরা দুইজন উপাস্য গ্রহণ কর না; তিনিই তো একমাত্র উপাস্য।সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর।
And Allah has said, “Do not take for yourselves two deities. He is but one God, so fear only Me.”
وَ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لَہُ الدِّیۡنُ وَاصِبًا ؕ اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ تَتَّقُوۡنَ ﴿۵۲﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সেসব তো তাঁরই এবং নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য তাঁরই প্রাপ্য; তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ভয় করবে?
And to Him belongs whatever is in the heavens and the earth, and to Him is [due] worship constantly. Then is it other than Allah that you fear?
وَ مَا بِکُمۡ مِّنۡ نِّعۡمَۃٍ فَمِنَ اللّٰہِ ثُمَّ اِذَا مَسَّکُمُ الضُّرُّ فَاِلَیۡہِ تَجۡـَٔرُوۡنَ ﴿ۚ۵۳﴾
তোমাদের মাঝে যেসব সম্পদ রয়েছে তা তো আল্লাহরই নিকট হতে; আবার যখন দুঃখ-দৈন্য তোমাদেরকে স্পর্শ করে, তখন তোমরা তাঁকেই ব্যাকুলভাবে আহবান কর।
And whatever you have of favor – it is from Allah . Then when adversity touches you, to Him you cry for help.
ثُمَّ اِذَا کَشَفَ الضُّرَّ عَنۡکُمۡ اِذَا فَرِیۡقٌ مِّنۡکُمۡ بِرَبِّہِمۡ یُشۡرِکُوۡنَ ﴿ۙ۵۴﴾
আবার যখন আল্লাহ তোমাদের দুঃখ-দৈন্য দূরীভূত করেন, তখন তোমাদের একদল তাদের প্রতিপালকের সাথে অংশী করে।
Then when He removes the adversity from you, at once a party of you associates others with their Lord
لِیَکۡفُرُوۡا بِمَاۤ اٰتَیۡنٰہُمۡ ؕ فَتَمَتَّعُوۡا ۟ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۵﴾
যাতে আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা অস্বীকার করে;[১] সুতরাং তোমরা ভোগ করে নাও, অচিরেই জানতে পারবে।
So they will deny what We have given them. Then enjoy yourselves, for you are going to know.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৫১-৫৫ নং আয়াত:-
[ اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ تَتَّقُوۡنَ ﴿۵۲﴾
তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ভয় করবে?
Then is it other than Allah that you fear?]
www.motaher21.net
৫১-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে তাঁর সাথে অন্য কোন বাতিল মা‘বূদের ইবাদত করতে নিষেধ করছেন। কারণ তিনিই একমাত্র মা‘বূদ যিনি মানুষের সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার। সে সাথে তাঁকেই ভয় করার নির্দেশ দিচ্ছেন, কারণ তাঁর হাতে সকল কল্যাণ-অকল্যাণ ও ভাল-মন্দ। সুতরাং কবর, মাযার, পীর, গাউস-কুতুব ও অন্য সকল তাগুতের ইবাদত বাদ দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা আবশ্যক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَفِرُّوْٓا اِلَی اللہِﺚ اِنِّیْ لَکُمْ مِّنْھُ نَذِیْرٌ مُّبِیْنٌﮁﺆوَلَا تَجْعَلُوْا مَعَ اللہِ اِلٰھًا اٰخَرَﺚ اِنِّیْ لَکُمْ مِّنْھُ نَذِیْرٌ مُّبِیْنٌﮂ)
“আল্লাহর দিকে ধাবিত হও; আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ হতে স্পষ্ট সতর্ককারী। তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কোন মা‘বূদ স্থির কর না; নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ হতে স্পষ্ট সতর্ককারী।” (সূরা যারিয়াত ৫১:৫০-৫১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لَا تَجْعَلْ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَّخْذُوْلًا)
“আল্লাহর সাথে অপর কোন মা‘বূদ সাব্যস্ত কর না; করলে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।” (সূরা ইসরা ১৭:২২)
আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া একাধিক মা‘বূদ হলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَوْ كَانَ فِيْهِمَآ اٰلِهَةٌ إِلَّا اللّٰهُ لَفَسَدَتَا ج فَسُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)
“যদি আল্লাহ ব্যতীত আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে বহু মা‘বূদ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে তা হতে ‘আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।” (সূরা আম্বিয়া ২১:২২)
(فَإِيَّايَ فَارْهَبُوْنِ)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকেই ভয় করে সকল নিষেধ কাজ বর্জন ও নির্দেশাবলী পালন করা উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(نِالَّذِيْنَ يُبَلِّغُوْنَ رِسٰلٰتِ اللّٰهِ وَيَخْشَوْنَه۫ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللّٰهَ ط وَكَفٰي بِاللّٰهِ حَسِيْبًا)
“তারা (নাবীগণ) আল্লাহর বাণী প্রচার করত এবং তাঁকে ভয় করত, আর তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করত না। হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা আহযাব ৩৩:৩৯)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আকাশে ও জমিনে যা কিছু রয়েছে তার কর্তৃত্ব, পরিচালনা এবং মালিক একমাত্র তিনি। সুতরাং একমাত্র তাঁরই অনুগত হওয়া উচিত এবং তাঁকেই ভয় করা উচিত।
الدِّيْنُ এখানে দীন অর্থ আনুগত্য, وَاصِبًا অর্থ অবিরাম, ধারাবাহিক। অর্থাৎ অবিরামভাবে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করতে হবে।
(إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ…) এখানে মানুষের একটি মন্দ অভ্যাসের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। তারা বিপদে পড়লে তাদের ভ্রান্ত মা‘বূদদের কথা ভুলে যায়। বিনীতভাবে আল্লাহ তা‘আলাকেই ডাকে। আর যখন এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে যায় তখন তারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যায় এবং তাঁর সাথে শরীক করে বসে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ إِلَّآ إِيَّاهُ ج فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَي الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ ط وَكَانَ الْإٍنْسَانُ كَفُوْرًا)
“সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে তোমরা আহ্বান করে থাক তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়; অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা ইসরা ১৭:৬৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(قُلِ اللّٰهُ يُنَجِّيْكُمْ مِّنْهَا وَمِنْ كُلِّ كَرْبٍ ثُمَّ أَنْتُمْ تُشْرِكُوْنَ)
“বল: আল্লাহই তোমাদেরকে তা হতে এবং সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হতে নাজাত দেবেন। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাঁর সাথে শরীক কর।’’ (সূরা আন‘আম ৬:৬৪)
তাদের এ অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজের কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলেন তোমরা যা খুশি করতে থাক। তোমাদের এই কৃতকর্মের ফলাফল জানতে পারবে। অর্থাৎ এর ফলে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে যা অতি ভয়াবহ।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য, অন্য কারো জন্য নয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বূদ নেই, থাকলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত।
৩. মানুষ বিপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকে, কিন্তু বিপদ থেকে উদ্ধার হলে আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে গিয়ে তাঁর সাথে শিরক করে।
৪. যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শিরক করে তাদের পরিণাম ভয়াবহ।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা (৫১-৭৬) : সর্বশক্তিমান আল্লাহর সার্বভৌমত্বের বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলােচনা শুরু হচ্ছে। সর্বপ্রথম এখানে যে কথাটি বলা হয়েছে তা হচ্ছে জীবন মৃত্যুর মালিক এবং সর্বময় ক্ষমতার মালিক একমাত্র একজনই হতে পারেন, তিনিই আল্লাহ তায়ালা এবং তার ক্ষমতায় ভাগ বসানাের মতাে দ্বিতীয় কোনাে শক্তি নেই। আলােচ্য অধ্যায়ের মধ্যে পরপর প্রথম তিনটি আয়াতে জানানাে হয়েছে যে সকল নেয়ামতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আর এ কথাটি বুঝানাের জন্যে দুটি উহাদরণ দেয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে সর্বশক্তিমান মালিক ও রিযিকদাতা এবং দুই-অধীনস্থ অসহায় গােলাম, যার কোনাে কর্তৃত্ব নেই আর কোনাে কিছুর ওপর তার মালিকানা নেই, এই দুই-এর সত্ত্বা কি কখনও সমান হতে পারে? প্রথম চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যিনি সকল কিছুর মালিক এবং যিনি সকল প্রাণীর যাবতীয় প্রয়ােজন মেটান তিনি এমন কোনাে ব্যক্তির সমান বা সমকক্ষ কেমন করে হবেন যে প্রকৃতপক্ষে কোনাে কিছুর ওপর মালিক নয় বা কারও কোনাে প্রয়ােজন পূরণের ক্ষমতাই যার নাই এবং অপরের ওপর যে নির্ভরশীল? এমন দুই সত্ত্বাকে একইভাবে ‘ইলাহ’ (সর্বময় ক্ষমতা বা জীবন মৃত্যুর মালিক) শব্দ দ্বারা কেমন ভাবে সম্বোধন করা যায়? *আল্লাহর নেয়ামত অফুরন্ত : এ পরিচ্ছেদে মানুষের কাছে তাদের বােধগম্য এমন উদাহরণ পেশ করা হয়েছে, বুঝতে কোনাে বেগ পেতে হয় না, কারণ দুঃখ বিপদের সময় সৃষ্টজীব এসব মানুষ কাতর কণ্ঠে প্রার্থনা জানায় সর্বময় ক্ষমতার মালিক, জীবন মৃত্যু-দানকারী একমাত্র আল্লাহ জাল্লা শানুহুর কাছে। কিন্তু, আফসােস হতভাগা এই মানুষটি যখন বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে যায় তখন সেই মহান আল্লাহর ক্ষমতায় আরাে কারাে অংশ আছে বলে মনে করে, অথচ তথাকথিত এই বুদ্ধিমানরা (?) একটুও চিন্তা করে না যে, যাদেরকে তারা আল্লাহর শরীক মনে করে তাদের না ছিলাে অতীত, না আছে ভবিষ্যৎ বরং সাময়িকভাবে হয়তাে তারা একটু ক্ষমতা লাভ করেছে, কিন্তু তারা এতাে অসহায় যে, এই ক্ষমতাকে কোনাে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা ধরে রাখতে পারবে বলে জোর করে বলতে পারে না। এসব বিবেক বর্জিত বেওকুফরা তাদের নিজেদের হাতে তৈরী করা পুতুলের সামনে মাথানত করে এবং তাদের কাছে নিজেদের প্রয়ােজনের কথা পেশ করে কাকুতি মিনতি করতে থাকে। কেন তারা এসব বাজে আচরণ করে, জিজ্ঞাসা করা হলে কোনাে জবাব দিতে না পেরে তারা নির্বাক হয়ে যায় ও উগ্র মূর্তি ধারণ করে। তাদের নির্বুদ্ধিতা এতােদূর পর্যন্ত পৌছে গেছে যে তারা বিশ্বের জীবন-মৃত্যুর মালিকের শক্তি ক্ষমতা অংশীদার বানায়। তারা এমন সব দুর্বল ও অসহায় মেয়েদেরকে আল্লাহর কন্যা আখ্যা দেয় যাদের জন্মকে তারা নিজের কুলক্ষণা ও ভাগ্যহারা হওয়ার লক্ষণ মনে করে এবং তাদেরকে সকল দিক দিয়ে অপদার্থ মনে করে, তাদের জন্মের সাথে সাথে তাদের মুখ কালো হয়ে যায় ও যথাশীঘ্র তাদেরকে জীবন্ত কবর দিয়ে ওই আপদ থেকে তারা রেহাই পেতে চায়। এহেন দুর্লক্ষুণে সৃষ্টিকে তারা আখ্যা দেয় আল্লাহর কন্যা বলে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য যে আল্লাহ ছাড়া তারা কাউকে সর্বময় কর্তৃত্বের মালিক মনে করে না, কাউকে জীবন মৃত্যুর মালিক ও সৃষ্টিকর্তাও মনে করে না-আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা এটাও চিন্তা করতে পারেনা যে আল্লাহ তায়ালা যদি কারাে মুখাপেক্ষী হন, কারাে সাহায্য যদি তার প্রয়ােজন হয় বা তাঁর ক্ষমতার কিছু অংশ অন্য কারাে হাতে যাওয়ার কারণে যদি সে তার ক্ষমতার অংশীদার হয়ে যায়, তাহলে সর্বময় ক্ষমতার মালিক বলতে আর কেউ থাকতে পারে কিনা। কী আশ্চর্য! যে রিযিক আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দিয়েছেন, সেগুলাের কোনাে কোনােটার মালিক তারা অন্য কাউকে মনে করে, অথচ যে সব জিনিস তাদের অধিকারে আছে সেগুলাের কোনাে অংশ তাদের অধীনস্থ ব্যক্তিদেরকে তারা কিছুতেই দিতে চায়না, এরশাদ হচ্ছে, ‘আর মেয়েদেরকে দুর্লক্ষুণ মনে করে বলেই তাদেরকে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার সংবাদ দেয়া হলে তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং তারা রাগে জ্বলে ওঠে।’ আবার যে সময়ে তারা আল্লাহর জন্য সেসব জিনিস বানায় যা তারা নিজেরা অপছন্দ করে, সে সময়ে অহংকারের সাথে তারা বলে যে, সকল কল্যাণও তাদের জন্যেই বরাদ্দ এবং যে আচরণ তারা করছে অবশ্যই তারা তার ভালাে ফলই পাবে! আর যাদের কাছে রসূল(স.) এসেছেন সেইসব লােক এসব বাজে চিন্তাধারা তাদের পূর্বসুরী মােশরেকদের কাছ থেকেই তাে পেয়েছে-এজন্যে বড় করুণা করে আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে শেষবারের মতাে নবী মােহাম্মদ(স.)-কে পাঠিয়েছেন যে তাদেরকে আল কোরআনের মধ্যে বর্ণিত হেদায়াতের পথ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া যায়। তবে, সত্যকে যারা গ্রহণ করেছে সেই সব মােমেনদের জন্যে রয়েছে এ কিতাবের মধ্যে হেদায়াত ও রহমত। তারপর আল্লাহর নির্মিত বস্তু সম্ভারের মধ্যে মানুষের জন্যে রাখা হয়েছে বহু নিদর্শন ও উদাহরণ, যদি তারা চিন্তা করে দেখে তাহলে এগুলাের মধ্যে তাদের জন্যে উপদেশ ও শিক্ষা রয়েছে। একটু খেয়াল করে বুঝতে চাইলেই তারা অনুভব করতে পারবে যে, আল্লাহ তায়ালাই সকল কর্তৃত্বের মালিক এবং সব কিছুকে অস্তিত্ব দান করেছেন। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসব নিদর্শনই হচ্ছে আল্লাহকে চেনার দলীল। ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোনাে কিছু দিয়ে তাঁকে জানা যাবে না। অতএব, দেখুন আল্লাহ তায়ালাই আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন বৃষ্টিধারা, অতপর তার দ্বারা তিনি যমীনকে মরে যাওয়ার পর আবার সজীব করে তুলেছেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পানি ছাড়াও আরও অনেক কিছু পান করান, যেমন দুধ যা সহজে গলার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে। এ দুধ গবাদি পশুর পেট থেকে পাওয়া যায় এবং তা বেরিয়ে আসে গােবর ও রক্তের মধ্যবর্তী অবস্থিত এক সুন্দর পথ বেয়ে। আবার দেখুন, মানুষের জন্যে খেজুর আংগুর ইত্যাদি ফল পয়দা করেন, যার থেকে বিভিন্ন ধরনের সুন্দর পানীয় পান করার বস্তু প্রস্তুত করা হয়। একইভাবে আল্লাহ তায়ালা মৌমাছিকে হুকুম দিয়েছেন যেন তারা পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা ও যে কোনাে উঁচু যায়গায় চাক বাঁধে তারপর সেই চাক থেকে তিনি স্বচ্ছ মধু বের করার ব্যবস্থা করেন যা মানুষের জন্যে ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তারপর আরও দেখুন, আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে সৃষ্টি করেন এবং তাদেরকে মৃত্যু দান করেন। এদের মধ্যে কাউকে তিনি বৃদ্ধ বয়স লাভ করার জন্যে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখেন এবং তখন তারা এতােটা বৃদ্ধ হয়ে যায় যে ওই বয়সে এসে জানা অনেক জিনিস তারা ভুলে যায়, আর সে বয়সে তারা এতাে বেশী দুর্বল হয়ে যায় যে তাদের স্মৃতিশক্তি অত্যধিক কমে যায়, যার কারণে তাদের আর কিছুই মনে থাকেনা। এর ফলে সারা জীবন ধরে অর্জিত তাদের সকল জ্ঞান বিলুপ্ত হয়ে যায়। আবারও দেখুন, আল্লাহ তায়ালা তাদের কাউকে কারাে ওপর আর্থিক দিক দিয়ে বেশী মর্যাদাবান বানিয়েছেন, এ জীবনের জন্যে প্রয়ােজনীয় সকল প্রকার দ্রব্য সম্ভার লাভ করার ব্যাপারে কোনাে কোনো ব্যক্তিকে অপর অনেকের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। আবার আল্লাহ রাব্বুল ইযযত তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের জোড়া জুটিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের মাধ্যমে দান করেছেন তাদের সন্তানাদি পৌত্র-পৌত্রী ও নাতি-নাতনী। এরপরও তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের দাসত্ব করে এবং বিনা যুক্তিতে অন্য এমন কিছুর অন্ধ আনুগত্য করে যারা তাদের কোনাে প্রয়ােজনই মেটাতে পারে না এবং আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর কোনাে জিনিসের ওপর তাদের কোনাে কর্তৃত্ব নেই, নেই কোনাে কিছুকে পরিচালনার ক্ষমতা, এতদসত্তেও তারা আল্লাহর সাথে বিভিন্ন বস্তুর তুলনা করে এবং তাকে মনগড়া বিভিন্ন জিনিসের মত কল্পনা করে। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে এসব ধারণা কল্পনা করতে গিয়ে কখনও তারা তাকে কোনাে মানুষের মতাে করে, তার কাল্পনিক মূর্তি বানায় আবার কখনও তারা তাদের আশেপাশের জীবজন্তু অথবা প্রাকৃতিক কোনাে বস্তুর মতােই তাকে কল্পনা করে সেই মতে মূর্তি তৈরী করে ও সেগুলাের পূজা করে। আবার কখনাে কখনাে তারা আল্লাহর সংরক্ষিত ক্ষমতা মানুষের হাতে তুলে দিয়ে মানুষকেই আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয়। যারা মূর্তিপূজা করে নিজেদের হাতে তৈরী অসহায় মূর্তিদের সামনে তারা পেশ করে নানা প্রকার উপাদেয় খাদ্য-খাবার এবং কল্পনা করতে থাকে যে, সেগুলাে ওইসব খাদ্য-খাবারের স্বাদ-গন্ধ পেয়ে তুষ্ট হয়ে যাবে এবং তাদের প্রতি করুণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে, তাদের জন্যে বরাদ্দ করবে খাদ্য-পানীয় ও জীবন ধারণের অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং তাদের আশে-পাশের বস্তু নিচয় থেকে তাদেরকে সরবরাহ করবে তাদের জীবনের জন্যে প্রয়ােজনীয় সব কিছু। এরপর এ প্রসংগটি সমাপ্ত করা হচ্ছে ওই দুটি উদাহরণ দান করার সাথে যার দিকে একটু আগেই ইংগীত করা হয়েছে, অর্থাৎ সর্বশক্তিমান জীবন মৃত্যুর মালিক মনিব-রিযিকদাতা এবং অসহায় ও অক্ষম গােলাম- এই দুই সত্ত্বা কি কোনাে অবস্থাতেই বরাবর হতে পারে। এ উদাহরণ-দ্বারা তাদের জ্ঞান ও বিবেক বুদ্ধির দুয়ারে করাঘাত করা হয়েছে, যাতে করে গভীরভাবে একথাগুলাে তাদের হৃদয় পটে রেখাপাত করে, অনুভূতিতে সাড়া জাগায় এবং তাদের ঘুমন্ত বিবেক ঝাকি মেরে জাগিয়ে তােলে। *তাফসীর : ৫১ ও ৫২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা ৫২ নং আয়াতে পড়ুন।
# *নিরংকুশ সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর : আল্লাহ তায়ালা বললেন, ‘তােমরা দু’জনকে ইলাহ হিসেবে গ্ৰহণ করো না… দুনিয়ার মজা লুটে নাও অতপর শীঘ্রই তােমরা জানতে পারবে।'(৫১-৫৫) অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন যেন দুজনকে ‘ইলাহ’ হিসেবে গ্ৰহণ না করে। ‘ইলাহ’ চিরদিনই একজন, তাঁর দ্বিতীয় বলতে কেউ নাই, হতে পারে না, কারণ শক্তি ক্ষমতা একাধিক সত্ত্বার মধ্যে থাকলে কেউই সর্বশক্তিমান হতে পারে না। আবার ক্ষমতার মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে থাকলে একই নিয়মে সারা বিশ্ব চলতে পারতো না। অতএব তিনি একাই, তার দ্বিতীয় কেউ নেই। আরও চিন্তা করে দেখুন সবার স্রষ্টা একমাত্র একজন যার হুকুমে ও নিয়ন্ত্রণাধীনে চলছে গােটা সৃষ্টির সব কিছু। এখানে বাক্যধারার মধ্যে একটি কথাকে দু’বার বলা হয়েছে ‘ইলাহাইনি’-দুজন ইলাহ আবার ইসনাইনি-দুজন এবং না-সূচক কথার পর সংক্ষেপে বলা হয়েছে-ইলাহ মাত্র একজন। আবার না-সূচক কথার পর সংক্ষেপে আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে আবারও সংক্ষেপে বলা হয়েছে ‘শুধুমাত্র আমাকে ভয় করাে।’ অর্থাৎ আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করাে না, যেহেতু আমার শক্তি ক্ষমতার সাথে তুলনা করার মতাে আর কেউ নেই বা আমার ক্ষমতাকে দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝানাে যাবে না। ‘রহমাতুন’ শব্দটি ‘তাহযীর’-থেকে অধিক ভীতি কোনাে প্রকাশক। অর্থাৎ সকল কিছু মৌলিকভাবে আকীদার সাথে জড়িত সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি এ বিশ্বাসের সাথে যদি তারই ভয় হৃদয়ের মধ্যে বদ্ধমুল না হয় তাহলে ঈমান টিকে থাকতে পারে না। আর অন্তরের মধ্যে আল্লাহভীতি যদি স্পষ্টভাবে না থাকে এবং এ ভয়-ভীতির বহিপ্রকাশ যদি না দেখা যায়-অর্থাৎ বাহ্যিক আচরণ দ্বারা দ্ব্যর্থহীনভাবে যদি কোনাে ব্যক্তির মনে আল্লাহর ভয় বর্তমান আছে বলে জানা যায় তাহলেই তার ঈমানের দাবী গ্রাহ্য হবে, নচেৎ নয়। আল্লাহর ভয়ের সাথে অন্তরের মধ্যে অন্য কারাে ভয় থাকলে আল্লাহর ওপর ঈমান কিছুতেই মযবুত ভিত্তিতে দাঁড়াতে পারবে না। অবশ্য অবশ্যই তিনিই একমাত্র ইলাহ, সর্বশক্তিমান বা জীবন মৃত্যুর মালিক। তিনিই একমাত্র মালিক, সব কিছুর ওপর বিরাজমান রয়েছে তার আধিপত্য। ‘আর আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবীর মালিক একমাত্র তিনিই।’ তিনিই একমাত্র কৃপা প্রদর্শনকারী। ‘চিরস্থায়ী ও নিরংকুশ আনুগত্য একমাত্র তার জন্যেই নির্ধারিত।’ অর্থাৎ যখনই কেউ দ্বীন ইসলামের সন্ধান পেয়ে যাবে তখন থেকেই আল্লাহর দেয়া এ জীবন ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য পেশ করতে হবে, যেহেতু আল্লাহর জীবন ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোনাে জীবন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। তিনিই একমাত্র নেয়ামত দানকারী। যতাে প্রকার নেয়ামত তােমরা লাভ করেছে তা সবই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকেই তোমরা পেয়েছো। আর তােমাদের স্বভাব প্রকৃতিই এমন যে, কোনাে সংকট সমস্যায় ও কঠিন দিনে তার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করে থাকে। দুঃখ বেদনা ও বালা মুসীবতের সময় তােমাদের অন্তর প্রাণ মিথ্যা ও কাল্পনিক দেব-দেবীর দিক থেকে সরে এসে পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর দিকেই ধাবিত হয় এবং সে সময় তার শক্তি ক্ষমতার সাথে অন্য কারাে কোনাে অংশ আছে, এ কথা কিছুতেই আর মন মানতে চায় না। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তারপর যখন কোনাে দুঃখ কষ্ট তােমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তােমরা কাতর কণ্ঠে তাঁর কাছেই প্রার্থনা করতে শুরু করে দাও’ অর্থাৎ ওই কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে একমাত্র তাঁর কাছেই কাতরভাবে চিৎকার করে ওঠে। আর এভাবে সার্বভৌমত্ব, বাদশাহী, নিরংকুশ আনুগত্য, নেয়ামত-দান ও মুখাপেক্ষিতা হাসিলের পাত্র একমাত্র তিনি যখন দুঃখ কষ্ট মানুষকে ভেংগে দিতে চায়, জীবনকে বিপন্ন করে নানা প্রকার শিরকের বিড়ম্বনা আসে তখন মানব প্রকৃতি হঠাৎ করে নিজের অজান্তেই সাক্ষ্য দিয়ে ওঠে যে শক্তি ক্ষমতা, মান সম্মান ও সম্পদের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ, আবেদন নিবেদন লাভ করার অধিকারী একমাত্র তিনিই। এতদসত্তেও, একদল মানব গােষ্ঠী আল্লাহর একত্ব ও সার্বভৌমত্বের সাথে এই উদ্দেশ্যে অন্য অন্যকে শরীক করে থাকে যে তারা ওদেরকে কঠিন বিপদ-আপদ ও দুঃখ-দৈন্য থেকে উদ্ধার করবে। এভাবে তারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে কুফরী পর্যন্ত পৌছে যায়। অস্বীকার করতে শুরু করে সেইসব নেয়ামতকে যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাদেরকে দিয়েছেন। সুতরাং সাময়িক সংকীর্ণ সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী এ জীবন শেষে যে চিরস্থায়ী জীবন আসছে সেখানে তাদের কি ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে, অবশ্যই সে বিষয়ে তাদের চিন্তা করা উচিত এজন্যে এরশাদ হচ্ছে, ‘আমােদ ফূর্তি করে নাও (এ ক্ষণস্থায়ী জীবন) শীঘ্রই তােমরা জানতে পারবে।’
# *বিপদে এক আল্লাহ কেটে গেলেই শিরক : উপরোক্ত তাফসীরে এই ব্যখ্যাটাই অত্যন্ত জোরদার হয়ে ফুটে উঠেছে যে, ‘তারপর যখন কোনাে দুঃখ দৈন্য তােমাদেরকে স্পর্শ করে তখন তােমরা তাঁর কাছেই কাকুতি মিনতি করতে শুরু করে দাও, আবার যখন এ দুঃখ কষ্ট দূর হয়ে যায় তখন তােমাদের মধ্য থেকে একদল লােক তাদের রবের সাথে অন্য কাউকে শরীক করতে শুরু করে দেয়।’ এ উদাহরণ বারবার পেশ করা হয়েছে, বারবার মানুষের এই অভ্যাসের কথা উল্লেখ করে তাদেরকে সময় থাকতেই সাবধান হতে বলা হয়েছে। প্রতি বারেই দেখা গেছে সংকট সমস্যায় মানুষ যখন জর্জরিত হয়ে যায় তখন তাদের অন্তর আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে যায়, কারণ তখন আপনা থেকেই তাদের মনই বলে ওঠে যে এ কঠিন অবস্থা থেকে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বাচাতে পারবেনা, কিন্তু যখনই সংকট কেটে যায় স্বচ্ছলতা ফিরে আসে পুনরায় আল্লার নেয়ামত লাভ করে তখন পেছনের কথা ভুলে গিয়ে আবার তারা নাফরমানী করতে শুরু করে, বিপদের সময় আল্লাহর সাথে তারা যে অংগীকার করেছিলাে তা আবার শিথিল হয়ে যায় তখন কতো প্রকার বাঁকা পথে তারা যে শিরক করতে শুরু করে দেয় তার ইয়ত্তা নেই, যদিও তার একেবারে প্রকাশ্যভাবে ও খােলাখুলি কথায় আল্লাহর নাম নেয়া পরিত্যাগ করে না। আবার কখনও এমন হয় যে, কোনাে কোনাে জাতি সত্য থেকে এতাে বেশী দূরে চলে যায় যে তার প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বিশৃংখলা ও ধ্বংসের পথটাই নিজেদের জন্যে তারা পছন্দ করে নেয়, এমনকি চরম কঠিন অবস্থার মধ্যেও তারা নরম হয় না ও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, এখানে মনে রাখা দরকার যে সর্বকালেই মানুষ জানে যে আল্লাহ তায়ালাই সৃষ্টিকর্তার সর্বময় ক্ষমতার মালিক, কিন্তু তাকে রব প্রতিপালক মনিব ও বাদশাহ বলে মানলে তার আইন কানুন অনুসারে চলতে হবে-এজন্যে পীর পুরােহিতদের কথামত দেব-দেবীর পূজা করলে জীবনের সব ব্যাপারে আল্লাহর বিধান মানা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে-প্রধানত একারণেই তারা ওইসব শিরকে লিপ্ত হয়ে গেছে। তারা সংক্ষেপে ও বিনা কষ্টে স্বার্থলাভ করার জন্যে আল্লাহর কোনাে সৃষ্টিজীবের দাসত্ব করে এবং তাদের কাছে সাহায্যের জন্যে প্রার্থনা জানায়, অবশ্য তাদের সামনে ওরা মাথা নত করে বিপদমুক্তি ও আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হচ্ছে, তারা অবশ্যই আল্লাহর কাছে সম্মানী ও বড় মর্যাদার অধিকারী, আবার কখনও কখনও তারা বিনা যুক্তিতেই ওসব দেবতার পূজা অর্চনা করে ও তাদেরকে সাহায্যের জন্যে ডাকে, যেমন করে রােগ-ব্যাধি, সংকট সমস্যা ও বিপদ আপদের মধ্যে মানুষ বন্ধু বান্ধবকে ডেকে থাকে। আসলে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার ব্যাপারে জাহেলি যামানার মােশরেকদের তুলনায় এরা আরও অনেক বেশী কঠিন হৃদয়। এদের সম্পর্কেই আল-কোরআন ওপরের ওই উদাহরণটি পেশ করেছে যা আমরা একটু আগে দেখলাম। অথচ তারা এ কথাটি চিন্তা করে না, যাদের ধন সম্পদ ও পদমর্যাদার দিকে তাকিয়ে তাদের কাছে ওরা সাহায্য চায় তারা নিজেদেরকে দুনিয়ার দুর্দিনে এবং পরকালে আল্লাহর আযাব থেকে অন্যদের বাঁচানাে দূরের কথা নিজেরা বাঁচবে কিনা তারও ঠিক নেই।
তাফসীর তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# দুই ইলাহ বা খোদা নাকচ করে দেবার মধ্য দিয়ে দু’য়ের অধিক ইলাহকেও আপনা আপনিই নাকচ করা হয়ে যায়।
# অন্য কথায় তাঁর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতেই এ সৃষ্টি জগতের সমগ্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে।
# অন্য কথায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর ভীতি এবং অন্য কারোর অসন্তোষ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার প্রবণতা কি তোমাদের জীবন ব্যবস্থার ভিত্তি হবে?
# তোমাদের নিজেদের মধ্যে বিরাজমান এটি তাওহীদের একটি সুস্পষ্ট সাক্ষী। কঠিন বিপদের মুহূর্তে যখন সমস্ত মনগড়া চিন্তা-ভাবনার রঙিন প্রলেপ অন্তর্হিত হয় তখন কিছুক্ষণের জন্য তোমাদের যে আসল প্রকৃতি আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ইলাহ, রব, মালিক ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারের অধিকারী বলে মানে না তা স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন সূরা আন’আমের ২৯ ও ৪১ টীকা এবং সূরা ইউনূসের ৩১ টীকা)
# আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, তোমরা একটি নিদর্শন নিয়ে আসার দাবী জানাচ্ছো অথচ তোমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাণীদের জীবনধারা পর্যবেক্ষন করার আহবান জানানো হয়েছিল। এরপর এখন আর একটি নিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এ নিদর্শনটি সত্য অস্বীকারকারীদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তখন আর মানুষের চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর খোদাদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করে। এ নিশানীটিকে এখানে সত্যের নিদর্শন হিসেবে পেশ করা হচ্ছে। কারণ আল্লাহ ভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের নিজের মধ্যেই বিদ্যমান। এর ওপর গাফলতি ও অজ্ঞানতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। আবু জাহেলের ছেলে ইকরামা এ ধরণের নিশানী প্রত্যক্ষ করেই ঈমানের সম্পদ লাভে সক্ষম হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে মক্কা বিজিত হবার পর ইকরামা জেদ্দার দিকে পালিয়ে যান। একটি নৌকায় চড়ে তিনি হাবাশার (ইথিয়োপিয়ার) পথে যাত্রা করেন। পথে ভীষণ ঝড়-তুফানে তার নৌকা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। প্রথমে দেবদেবীদের দোহাই দেয়া শুরু হয়। কিন্তু এতে তুফানের ভয়াবহতা কমে না বরং আরো বেড়ে যেতেই থাকে। যাত্রীদের মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, এবার নৌকা ডুবে যাবে। তখন সবাই বলতে থাকে, এখন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকলে চলবে না। একমাত্র তিনি চাইলে আমাদের বাঁচাতে পারেন। এ সময় ইকরামের চোখ খুলে যায়। তার মন বলে ওঠে, যদি এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী না থেকে থাকে, তাহলে অন্য জায়গায়ই বা আর কেউ থাকবে কেন? একথাটাই তো আল্লাহর সেই নেক বান্দাটি আমাদের গত বিশ বছর থেকে বুঝাচ্ছেন আর আমরা খামখা তাঁর সাথে লড়াই করছি। এটি ছিল ইকরামার জীবনের সিদ্ধান্তকরী মুহূর্ত। সে মুহূর্তেই তিনি আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেন, যদি এ যাত্রায় আমি বেঁচে যাই, তাহলে সোজা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাবো এবং তাঁর হাতে আমার হাত দিয়ে দেবো। পরে তিনি নিজের এ অঙ্গীকার পূর্ণ করেন। ফিরে এসে তিনি কেবল মুসলমান হয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, বরং অবশিষ্ট জীবন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করেই কাটান।
# একমাত্র আল্লাহই যে, সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন, সকল শক্তির অধিকারী, সমস্ত ইখতিয়ার ও কর্মক্ষমতা যে, তাঁরই হাতে সীমাবদ্ধ, তোমাদের কল্যাণ ও অকল্যাণ করার যাবতীয় ক্ষমতা যে, তাঁরই আয়ত্তাধীন এবং তাঁরই হাতে যে, রয়েছে তোমাদের ভাগ্যের চাবিকাঠি-এ সত্যগুলোর সাক্ষ্য তো তোমাদের নিজেদের অস্তিত্বের মধ্যেই বিদ্যমান। কোন কঠিন সংকটকাল এলে এবং যাবতীয় উপায় উপকরণ হাতছাড়া হতে দেখা গেলে তোমরা নিতান্ত অসহায়ের মতো তাঁর আশ্রয় চাও। কিন্তু এ সমস্ত দ্ব্যর্থহীন আলামত থাকা সত্ত্বেও তোমরা প্রভুত্বের ক্ষেত্রে কোন প্রকার যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই তাঁর সাথে অন্যদেরকে শরীক করেছো। তাঁরই দেয়া জীবিকায় প্রতিপালিত হয়ে অন্নদাতা বলছো অন্যদেরকে। তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা লাভ করে অন্যদেরকে বন্ধু ও সাহায্যকারী আখ্যা দিচ্ছো। তাঁর দাস হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের বন্দেগী ও দাসত্ব করছো। সংকট থেকে তিনিই উদ্ধার করেন এবং বিপদ ও দুঃখ-কষ্টের দিনে তাঁরই কাছে কান্নাকাটি করো কিন্তু তাঁর সহায়তায় সে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার লাভ করার পর অন্যদেরকে ত্রাণকর্তা মনে করতে থাকো এবং অন্যদের নামে নযরানা দিতে থাকো।
# তোমাদের নিজেদের মধ্যে বিরাজমান এটি তাওহীদের একটি সুস্পষ্ট সাক্ষী। কঠিন বিপদের মুহূর্তে যখন সমস্ত মনগড়া চিন্তা-ভাবনার রঙিন প্রলেপ অন্তর্হিত হয় তখন কিছুক্ষণের জন্য তোমাদের যে আসল প্রকৃতি আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ইলাহ, রব, মালিক ও ক্ষমতা-ইখতিয়ারের অধিকারী বলে মানে না তা স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়।
# আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার সাথে সাথে কোন বুযর্গ বা দেব-দেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতারও নযরানা পেশ করতে থাকে এবং নিজেদের প্রত্যেকটি কথা থেকে একথা প্রকাশ করতে থাকে যে, তাদের মতে আল্লাহর এ মেহেরবানীর মধ্যে উক্ত বুযর্গ বা দেব-দেবীর মেহেরবাণীও অন্তর্ভুক্ত ছিল বরং তারাই মেহেরবানী করে আল্লাহকে মেহেরবানী করতে উদ্বুদ্ধ না করলে আল্লাহ কখনোই মেহেরবানী করতেন না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫১-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেনঃ “এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউই ইবাদতেরযোগ্য নেই। তিনি শরীক বিহীন। তিনি প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টি কর্তা, মালিক এবং প্রতিপালক। আন্তরিকতার সাথে সদা-সর্বদা তাঁরই ইবাদত করা অবশ্য কর্তব্য। তিনি ছাড়া অন্যের ইবাদতের পন্থা অবলম্বন করা মোটেই। উচিত নয়। আসমান ও যমীনের সমস্ত কিছু ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় তারই অনুগত। সকলকেই তাঁরই কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। সুতরাং তোমরা খাঁটিভাবে তারই ইবাদত করতে থাকো। তার সাথে অন্যকে শরীক করা হতে বিরত থাকো। নিখুঁত দ্বীন একমাত্র আল্লাহরই। আসমান ও যমীনের সমস্ত কিছুর একক মালিক তিনিই।
লাভ ও ক্ষতি তাঁরই ইচ্ছাধীন। যত কিছু নিয়ামত বান্দার হাতে রয়েছে সবই তাঁরই নিকট হতে এসেছে। জীবিকা, নিয়ামত, নিরাপত্তা এবং সাহায্য সবই তার পক্ষ হতে আগত। তাঁরই দয়া ও অনুগ্রহ বান্দার উপর রয়েছে। জেনে রেখো, এতগুলো নিয়ামত পাওয়ার পরেও তোমরা এখনো তাঁরই মুখাপেক্ষী। রয়েছে। বিপদ-আপদ এখনো তোমাদের মাথার উপর ঘুরপাক খাচ্ছে। দুঃখ ও বিপদ-আপদের সময় তোমরা তাঁকেই স্মরণ করে থাকো। কঠিন বিপদের সময় কেঁদে কেঁদে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তোমরা তাঁরই দিকে ঝুঁকে পড়। স্বয়ং মক্কার মুশরিকদের অবস্থাও এরূপই ছিল। যখন তারা সমুদ্রে পরিবেষ্টিত হয়ে পড়তো, বিপরীত বাতাস যখন নৌকা ঝুকিয়ে দিতো এবং নৌকা টলমল করে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হতো তখন তোমরা তোমাদের ঠাকুর, দেবতা, প্রতিমা, পীর, ফকীর, ওয়ালী, নবী সবকেই ভুলে যেতে এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে ঐ বিপদ হতে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আল্লাহর নিকটই প্রার্থনা করতে। কিন্তু যখন নৌকা নদীর তীরে পৌঁছে যেতো তখন ঐ পুরাতন মা’বুদগুলির আবার তারা স্মরণ করতো। আর প্রকৃত মা’ৰূদের সাথে পুনরায় ঐ মা’বুদের পূজা শুরু করে দিতো। এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞ ও বিশ্বাসঘাকতা আর কি হতে পারে? এখানেও আল্লাহ পাক বলেন যে, উদ্দেশ্য সফল হওয়া মাত্রই অনেক লোক চক্ষু ফিরিয়ে নেয়। শব্দটি সমাপ্তিবোধক লাম। আবার এটাকে আমি তাদের এই স্বভাব এজন্যেই করেছি যে, তারা আল্লাহর নিয়ামতের উপর পর্দা ফেলে দেয় এবং তা অস্বীকার করে, অথচ প্রকৃত পক্ষে নিয়ামত দানকারী এবং বিপদ-আপদ দূরকারী আমি ছাড়া আর কেউ নেই।
এরপর মহান আল্লাহ তাদেরকে ধমকের সুরে বলছেনঃ “আচ্ছা, দুনিয়ায় তোমরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাও এবং সুখ ভোগ করতে থাকো। কিন্তু এর পরিণাম ফল সত্বরই জানতে পারবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 51-55
[ اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ تَتَّقُوۡنَ ﴿۵۲﴾
Then is it other than Allah that you fear?]
Allah Alone is Deserving of Worship
Allah tells:
وَقَالَ اللّهُ لَا تَتَّخِذُواْ إِلـهَيْنِ اثْنَيْنِ إِنَّمَا هُوَ إِلهٌ وَاحِدٌ فَإيَّايَ فَارْهَبُونِ
وَلَهُ مَا فِي الْسَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا أَفَغَيْرَ اللّهِ تَتَّقُونَ
And Allah said “Do not worship two gods. Indeed, He (Allah) is only One God. Then fear Me Alone.To Him belongs all that is in the heavens and the earth and the religion.
Allah tells us that there is no god but He, and that no one else should be worshipped except Him, alone, without partners, for He is the Sovereign, Creator, and Lord of all things.
وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا
His is the religion Wasiba,
Ibn Abbas, Mujahid, Ikrimah, Maymun bin Mahran, As-Suddi, Qatadah and others said that;
this means forever.
It was also reported that Ibn Abbas said,
“It means obligatory.”
Mujahid said:
“It means purely for Him,”
i.e., worship is due to Him Alone, from whoever is in the heavens and on earth.
As Allah says:
أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِى السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
Do they seek other than the religion of Allah, while to Him submitted all creatures in the heavens and the earth, willingly or unwillingly. And to Him shall they all be returned. (3:83)
This is in accordance with the opinion of Ibn Abbas and Ikrimah, which is that this Ayah is merely stating the case.
According to the opinion of Mujahid,
it is by way of instruction, i.e., it is saying:You had better fear associating partners in worship with Me, and be sincere in your obedience to Me.
As Allah says:
أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ
Surely, the pure religion (sincere devotion) is for Allah only. (39:3)
Then Allah tells
وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللّهِ
And whatever of blessings and good things you have, it is from Allah.
Allah tells us that He is the One Who has the power to benefit and harm, and that the provisions, blessings, good health and help, His servants enjoy are from His bounty and graciousness towards them.
ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ
Then, when harm touches you, to Him you cry aloud for help.
meaning because you know that none has the power to remove that harm except for Him, so when you are harmed, you turn to ask Him for help and beg Him for aid.
As Allah says:
وَإِذَا مَسَّكُمُ الْضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلَا إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّـكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ وَكَانَ الاِنْسَـنُ كَفُورًا
And when harm touches you at sea, those that you call upon vanish, except for Him. But when He brings you safe to land, you turn away. And man is ever ungrateful. (17:67)
Here, Allah tells us:
ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنكُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ
لِيَكْفُرُواْ بِمَا اتَيْنَاهُمْ
Then, when He has removed the harm from you, behold! some of you associate others in worship with their Lord (Allah). So they are ungrateful for that which We have given them!
It was said that the Lam here (translated as “So”) is an indicator of sequence, or that it serves an explanatory function,
meaning, `We decreed that they would conceal the truth and deny the blessings that Allah has bestowed upon them. He is the One Who bestows blessings and the One Who removes distress.’
Then Allah threatens them, saying:
فَتَمَتَّعُواْ
Then enjoy yourselves,
meaning, do what you like and enjoy what you have for a little while.
فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
but you will soon come to know.
meaning the consequences of that.