أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 806)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৫৬-৬০ নং আয়াত:-
[ تَاللّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ
শপথ আল্লাহর! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর, সে সম্বন্ধে তোমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।
By Allah, you shall certainly be questioned about (all) that you used to fabricate.]
www.motaher21.net
وَ یَجۡعَلُوۡنَ لِمَا لَا یَعۡلَمُوۡنَ نَصِیۡبًا مِّمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ ؕ تَاللّٰہِ لَتُسۡـَٔلُنَّ عَمَّا کُنۡتُمۡ تَفۡتَرُوۡنَ ﴿۵۶﴾
আমি তাদেরকে যে জীবিকা দান করি, তারা তার এক অংশ নির্ধারিত করে তাদের (বাতিল উপাস্যদের) জন্য, যাদের সম্বন্ধে তারা কিছুই জানে না। শপথ আল্লাহর! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর, সে সম্বন্ধে তোমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।
And they assign to what they do not know a portion of that which We have provided them. By Allah, you will surely be questioned about what you used to invent.
وَ یَجۡعَلُوۡنَ لِلّٰہِ الۡبَنٰتِ سُبۡحٰنَہٗ ۙ وَ لَہُمۡ مَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿۵۷﴾
তারা নির্ধারিত করে আল্লাহর জন্য কন্যা-সন্তান অথচ তিনি পবিত্র; আর তাদের জন্য তাই যা তারা কামনা করে!
And they attribute to Allah daughters – exalted is He – and for them is what they desire.
وَ اِذَا بُشِّرَ اَحَدُہُمۡ بِالۡاُنۡثٰی ظَلَّ وَجۡہُہٗ مُسۡوَدًّا وَّ ہُوَ کَظِیۡمٌ ﴿ۚ۵۸﴾
তাদের কাউকে যখন কন্যা-সন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, তখন তার মুখমন্ডল কাল হয়ে যায় এবং সে অসহনীয় মনস্তাপে ক্লিষ্ট হয়।
And when one of them is informed of [the birth of] a female, his face becomes dark, and he suppresses grief.
یَتَوَارٰی مِنَ الۡقَوۡمِ مِنۡ سُوۡٓءِ مَا بُشِّرَ بِہٖ ؕ اَیُمۡسِکُہٗ عَلٰی ہُوۡنٍ اَمۡ یَدُسُّہٗ فِی التُّرَابِ ؕ اَلَا سَآءَ مَا یَحۡکُمُوۡنَ ﴿۵۹﴾
তাকে যে সংবাদ দেওয়া হয়, তার গ্লানি হেতু সে নিজ সম্প্রদায় হতে আত্মগোপন করে; সে চিন্তা করে যে, হীনতা সত্ত্বেও সে তাকে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে দেবে। সাবধান! তারা যা সিদ্ধান্ত করে, তা কতই না নিকৃষ্ট।
He hides himself from the people because of the ill of which he has been informed. Should he keep it in humiliation or bury it in the ground? Unquestionably, evil is what they decide.
لِلَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ مَثَلُ السَّوۡءِ ۚ وَ لِلّٰہِ الۡمَثَلُ الۡاَعۡلٰی ؕ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿٪۶۰﴾
যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না যাবতীয় খারাপ উদাহরণ (গুণাগুণ) তাদেরই, আর আল্লাহ্র জন্যই যাবতীয় মহোত্তম গুণাগুণ আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
For those who do not believe in the Hereafter is the description of evil; and for Allah is the highest attribute. And He is Exalted in Might, the Wise.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৫৬-৬০ নং আয়াত:-
[ تَاللّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ
শপথ আল্লাহর! তোমরা যে মিথ্যা উদ্ভাবন কর, সে সম্বন্ধে তোমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে।
By Allah, you shall certainly be questioned about (all) that you used to fabricate.]
www.motaher21.net
৫৬-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে কাফির-মুশরিকদের একটি নির্বুদ্ধিতার কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের যে রিযিক দান করেছেন তা হতে একটি অংশ দেব-দেবী, প্রতিমা ও মা‘বূদের নামে নির্ধারণ করে রেখে দেয়, যে সকল দেব-দেবী ও প্রতিমা কিছুই জানে না এবং কোন উপকার ও ক্ষতি করতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلُوْا لِلّٰهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْأَنْعَامِ نَصِيْبًا فَقَالُوْا هٰذَا لِلّٰهِ بِزَعْمِهِمْ وَهٰذَا لِشُرَكَا۬ئِنَا ج فَمَا كَانَ لِشُرَكَا۬ئِهِمْ فَلَا يَصِلُ إِلَي اللّٰهِ ج وَمَا كَانَ لِلّٰهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلٰي شُرَكَا۬ئِهِمْ ط سَا۬ءَ مَا يَحْكُمُوْنَ)
“আল্লাহ যে শস্য ও গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন তন্মধ্য হতে তারা আল্লাহর জন্য একটি অংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা অনুযায়ী বলে, ‘এটা আল্লাহর জন্য এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্য’। যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়, তারা যা মীমাংসা করে তা কতই না নিকৃষ্ট!” (সূরা আনয়াম ৬:১৩৬)
এরা তো মাটি বা পাথরের তৈরি মূর্তি ও প্রতিমা, এরা কী জানবে আর মানুষের কী ক্ষতি ও উপকার করবে! সুতরাং তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শরীক বানিয়ে যে অপবাদ দিয়েছে সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন ।
আর তারা ফেরেশতাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য কন্যা সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করে। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে। আর তারা নিজেদের জন্য যা ভাল লাগে তা সাব্যস্ত করে অর্থাৎ নিজেদের জন্য ছেলে সন্তান সাব্যস্ত করে, কন্যা সন্তান অপছন্দ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثٰي - تِلْكَ إِذًا قِسْمَةٌ ضِيْزٰي)
“তবে কি তোমাদের জন্য পুত্র, আর তাঁর জন্য কন্যা সন্তান? এই প্রকার বণ্টন তো অসঙ্গত।” (সূরা নাজম ৫৩:২১-২২)
অথচ আল্লাহ তা‘আলা সন্তান গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র এবং এই বিষয়ে সম্পূর্ণ মুক্ত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(قُلْ ھُوَ اللہُ اَحَدٌﭐﺆ اَللہُ الصَّمَدُﭑﺆ لَمْ یَلِدْﺃ وَلَمْ یُوْلَدْﭒﺫ وَلَمْ یَکُنْ لَّھ۫ کُفُوًا اَحَدٌﭓ)
“বল: তিনিই আল্লাহ একক। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।” (সূরা আল-ইখলাস ১১২:১-৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(لَوْ أَرَادَ اللّٰهُ أَنْ يَتَّخِذَ وَلَداً لَّاصْطَفٰي مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَا۬ءُ لا سُبْحَانَه۫ ط هُوَ اللّٰهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ)
“যদি আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করতে চাইতেন তবে তিনি অবশ্যই বেছে নিতেন নিজের সৃষ্টির মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা, তিনি পবিত্র-মহান। তিনি আল্লাহ, এক, প্রবল প্রতাপশালী।” (সূরা যুমার ৩৯:৪)
অতএব তারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যে সন্তান নির্ধারণ করে এটা বড়ই অপবাদমূলক একটি কথা। তার ওপর আবার কন্যা সন্তান যা তারা তাদের নিজেদের জন্য অপছন্দ করে। এটা কেমন করে শুদ্ধ হতে পারে। তাদের এ নীতি অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন লজ্জায় তাদের মুখমণ্ডল হীন হয়ে যায় এবং তারা এটাকে একটি অপমানজনক বিষয় মনে করে। তাদের জাতি থেকে লুকিয়ে থাকে যাতে তাদের ভারাক্রান্ত মন ও দুশ্চিন্তা কেউ না দেখতে পারে। তারা চিন্তা করে কী করা যায়? অপমানের বস্তু হওয়া সত্ত্বেও কি জীবিত রাখবে, নাকি মাটিতে জীবন্ত পুঁতে ফেলে দেবে। সুতরাং তাদেরকে কন্যা সন্তানের সংবাদ দিলে যদি এ অবস্থা হয় তাহলে কীভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য কন্যা সন্তান সাব্যস্ত করে?
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُه۫ مُسْوَدًّا وَّهُوَ كَظِيْمٌ)
“দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে যখন তাদের কাউকে সেই (কন্যা সন্তানের) সংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:১৭)
كَظِيْمٌ অর্থাৎ চিন্তায় ও ভারাক্রান্তে চেহারা কালো হয়ে যায়। (أَيُمْسِكُه۫ عَلٰي هُوْنٍ) অর্থাৎ দুশ্চিন্তায় চিন্তিত এবং নিশ্চুপ। কেউ বলেছেন, স্ত্রীর ওপর ক্রোধান্তিত হয়ে যায়, কেন সে কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। يَدُسُّ অর্থ পুঁতে ফেলা।
সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শিরক করে তাদের জন্য নিকৃষ্ট ও অপূর্ণাঙ্গ উদাহরণ এই যে, কিয়ামতের দিন তাদের এ সমস্ত অপকর্মের প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং এজন্য তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। তাই সকলের উচিত এ ধরনের অন্যায় কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জড় পদার্থ কোন খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না।
২. আল্লাহ তা‘আলা সন্তান গ্রহণ করা থেকে মুক্ত।
৩. মানুষ নিজের জন্য যা পছন্দ করে না, তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য সাব্যস্ত করা নেহায়েত অন্যায়।
৪. আল্লাহর জন্যই সকল উত্তম উপমা; তিনি কোন অপূর্ণাঙ্গ ও ত্র“টিপূর্ণ উপমা হতে ঊর্ধ্বে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*গায়রুল্লাহর নামে দান বা উৎসর্গ হারাম : আমি ওদের যা কিছু রিযিক দিয়েছি তার একাংশকে ওরা এমন সবার জন্যে বরাদ্দ করে যারা জানেওনা (এই রিযিকের মূল উৎস কোথায়?)’ একারণে তারা নিজেদের জন্য কোনাে কোনাে জীব-জন্তু (গবাদি পশু) কে হারাম করে নেয়, তার ওপর তারা সওয়ার হয় না এবং তাদের গােশতও তারা খায়না, অথবা সেগুলােকে তারা পুরুষদের জন্য জায়েয করে নেয় আর মেয়েদের জন্য করে নেয় না-জায়েয। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে সুরায়ে আল আনয়ামের মধ্যে মানত করা জীবজন্তু সম্পর্কে আলােচনায় আমরা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। অথচ এসব বিষয়ের কোনাে জ্ঞান তাদের নাই-অর্থাৎ এ ধরনের মনগড়া কাজ করার মধ্যে কতােটুক ফায়দা আছে আর কতােটুকু ক্ষতি আছে তার সঠিক কোনাে জ্ঞান তাদের নাই। এগুলাে প্রাচীন জাহেলী যামানা থেকে উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত কিছু ভিত্তিহীন কাল্পনিক ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রকৃত সত্য কথা তাে হচ্ছে এই যে, যেসব জিনিসের (জন্তুর) অংশ বিশেষকে, না জেনে তারা কারাে জন্যে নির্ধারণ করে নেয় সেগুলােকে তাে তাদের রিজিক হিসাবে আল্লাহ তায়ালাই তাদের জন্যে বরাদ্দ করেছেন। অবশ্যই এগুলাে, তাদের ওইসব কাল্পনিক মাবুদদের দেয়া কোনাে নেয়ামত নয় যে, তাদের দানের কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্যে তাদেরকে এর অংশ দেয়া হবে। এখানেও লক্ষ্য করার বিষয়, যদি ওদের ওই মাবুদদের কাছ থেকে ওইসব পশু এসে থাকে তাহলে তাদের জন্যে সেগুলাে ছেড়ে দেয়ার কী অর্থ হতে পারে। প্রকৃতপক্ষে তারা কি ওগুলাে ভক্ষণ করবে না, তাদের নামে ওইসব পীর পুরােহিতরা ওগুলাে ভক্ষণ করবে, যারা এসব নিয়ম প্রথা চালু করেছে। অবশ্য অবশ্যই এসব পশু তাদের জন্যে একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই বরাদ্দ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাওহীদের (আল্লাহর একত্ব বিশ্বাসের) দিকে ডাকছেন, কিন্তু ওরা তাঁকে বাদ দিয়ে আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে অংশীদার কল্পনা করে নিয়ে তাদেরকে পূজা করছে ও তাদের কাছেই নিজেদের প্রয়ােজন পূরণের জন্যে আবেদন জানাচ্ছে। এভাবে ওদের কল্পনা ও বাস্তব কাজের মধ্যে যে পার্থক্য ছিলাে তা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়ে গেছে। রিযিক বা জীবন ধারণ সামগ্রী সবই আল্লাহর কাছ থেকে আসে, এর কোনাে একটি অংশও অপর কারাে কাছ থেকে আসে না। এজন্যে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিচ্ছেন নিরংকুশ ও নিঃশর্ত আনুগত্য তাকে ছাড়া অন্য কাউকেই যেন না দেয়া হয়, কিন্তু এ মােশরেকরা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে আরও বহুজনকে উপাস্য বা দেব দেবী হিসাবে গ্রহণ করে থাকে, অথচ তারা একটুও চিন্তা করে না যে, তারা প্রতিনিয়ত একমাত্র আল্লাহর দেয়া রিযিক গ্রহণ করছে। এতদসত্তেও কেমন করে তারা তাঁর নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হতে পারে? এইভাবে তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে সত্য থেকে দূরে থাকছে তা পরিষ্কারভাবে জানা যাচ্ছে। তাদের এ অদ্ভুত আচরণ যে পুরােপুরিই বিবেক বিরোধী এটা তারা জানে এবং এটা বুঝে সুঝেই তারা এসব জঘন্য আচরণ করে চলেছে। তওহীদ সম্পর্কিত শিক্ষা এসে যাওয়ার পর যখন মানুষ সাধারণভাবে তা গ্রহণ করা শুরু করে দিয়েছে তখন এর সত্যতা ও গ্রহণযােগ্যতা প্রমাণিত হয়ে গেছে, এতদসত্তেও হঠকারীতায় অন্ধ, অহংকারী ও জেদী প্রকৃতির একদল লােক আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত রিযিকের কিছু অংশ অন্য কোনাে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে আসে বলে মনে করে। প্রাচীন জাহেলী যুগের লােকেরাও এইভাবেই অন্যদেরকে রিযিকের কিছু অংশের মালিক মনে করতাে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ গরুর বাছুরকে মনে করতাে কিছু ক্ষমতার মালিক, তাই তারা বলতাে এ বাছুরটি বেদুইন নেতার। এর বিশেষ কিছু শক্তি ক্ষমতা আছে, সুতরাং একে কেউ বিরক্ত করাে না, যেখান থেকে ইচ্ছা সে খেয়ে বেড়াক। খবরদার তাকে কোনাে কাজেও কেউ লাগিওনা। অবশেষে একে সেই বেদুইন-নেতার নামেই যবাই করা হবে-আল্লাহর নামে নয়। এভাবে অতীতে অনেক আল্লাহর পরিবর্তে তাদের পীর দরবেশদের নামে মানত করে কোনাে কোনাে পশু ছেড়ে দিতাে, আল্লাহর নামে ছাড়া অন্য কারাে নামে কোনাে কিছু মানত করা সম্পূর্ণ হারাম। মুখে মুখে তারা মানতাে ও জানতাে যে আল্লাহ তায়ালাই সর্বশক্তিমান, কিন্তু বাস্তবে তারা এই আচরণ দ্বারা প্রমাণ করতে যে পীর দরবেশদেরও কিছু ক্ষমতা আছে এবং এইভাবেই তাদেরকে তারা আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার কিছু অংশের মালিক মনে করতাে। এহেন মানতের পশুকে আল্লাহর নামে যবাই করলেও প্রকৃতপক্ষে তার গােশত খাওয়া হারাম, এহেন আচরণ সম্পর্কে এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর কসম, অবশ্যই তােমরা যে তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিতে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ দেখুন কথাটার ওপর অত্যধিক ও প্রবল গুরুত্ব দানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিজের কসম খাচ্ছেন, কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল শক্তি ক্ষমতার মালিক, একথা জেনে বুঝেও স্বীকার করে যদি তার ক্ষমতার অংশ বিশেষের জন্য কাউকে মনে করা হয়, তাহলে কি আল্লাহর সাথে বিদ্রুপ করা হয় না? সচেতনভাবে যারা এ আচরণ করে তারা অবশ্যই আল্লাহ সম্পর্কে মৌলিক আকীদার মূলেই আঘাত হানছে, যেহেতু এভাবে বিশ্বাস করার অর্থ তৌহীদী বিশ্বাসকেই ধংস করে দেয়া।
# আল্লাহর ওপর মােশরেকদের নির্লজ্জ অপবাদ : ‘ওরা আল্লাহর জন্যে কন্যাসন্তান নির্ধারণ করে, অবশ্যই তিনি সন্তান গ্রহণ (করার দুর্বলতা) থেকে পবিত্র, আর তাদের জন্যে তারা গ্রহণ করে তাই যা তাদের মন চায় অর্থাৎ পুত্র সন্তান… শোনে, কি নিকৃষ্ট সিদ্ধান্তই তারা গ্রহণ করেছে!'(আয়াত ৫৭-৫৯) মানুষের আসল আকীদা যখন নষ্ট হয়ে যায় তখন তা কতােদুর খারাপ হতে পারে তার কোনাে সীমা থাকে না এবং পরবর্তীতে গৃহীত বিধ্বস্ত আকীদার মধ্যে সঠিক আকীদার নাম গন্ধও থাকে না, বরং এলােমেলােভাবে গৃহীত হয়ে থাকে তার মনগড়া বিভিন্ন বিশ্বাস, যার না থাকে কোনাে স্থায়িত্ব আর না থাকে কোনাে যৌক্তিকতা তখন প্রধানত সে আবেগ-চালিত হয়ে যায় ও যুক্তি বুদ্ধিহীনভাবে এবং অন্ধ আবেগের তাড়নে চালিত হয়ে কোনাে এক মত বা পথ গ্রহণ করে ইহকাল ও পরকালের ক্ষতির দিকে এগিয়ে যায়। সুস্থ ও সজ্ঞানে গৃহীত সঠিক আকীদাই জীবনের প্রথম ও মূল চালিকা শক্তি তা প্রকাশ পাক বা অন্তরের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করুক। ওই আরব জাহেলরা মনে করতাে যে আল্লাহর জন্যে রয়েছে ফেরেশতা-রূপ কন্যা সন্তান, যদিও নিজেদের জন্যে তারা কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়াকে দুর্ভাগ্যের লক্ষণ মনে করতাে। এখন চিন্তা করে দেখুন, কেমন তাদের বিবেচনা । একদিকে যাকে সর্বশক্তিমান,সৃষ্টিকর্তা ও জীবন মৃত্যুর মালিক বলে জানছে ও মানছে তার প্রতি ভক্তি ভালবাসা প্রদর্শন করছে আর তারই জন্যে কন্যা সন্তান আছে বলে কল্পনা করছে এবং নিজেদের জন্যে পছন্দ করছে পুত্র সন্তান। অথচ নিজেদের জন্যে কন্যা সন্তান হওয়াকে তারা দুর্ভাগ্যের লক্ষণ মনে করে। আসলে জাহেলী যামানায় সঠিক আকীদা থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই তাদের কাছে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া সহজ হয়ে গিয়েছিলাে। যদি কাউকে তারা হত্যা না করে বাঁচিয়ে রাখতাে তাহলে সেই মেয়েকে চরম হীনমন্যতা ও অপমানের জ্বালা সহ্য করেই বেঁচে থাকতে হতাে। কন্যা সন্তানকে নিয়ে তাদের এই হীনমন্যতার কারণ ছিলাে এই যে, কন্যা সন্তানরা তাদের যুদ্ধ বিগ্রহে সাহায্য করার যােগ্য নয়, উপার্জন করার মতাে ক্ষমতাও তারা রাখে না বরং যুদ্ধাবস্থায় তাদের নিরাপত্তার চিন্তা তাদের মধ্যে দুর্বলতার অনুভূতি টেনে আনে যে, পরাজিত হলে এসব কন্যাসন্তান শত্রুর হাতে ধরা পড়ে দাসীতে পরিণত হবে, আর বিজয়াবস্থায় তাদেরকে বিয়ে দিয়ে কাউকে জামাই বানাতে হবে আর সেসব জামাইদের দেমাগ হবে সীমাহীন চড়া। তারা যে অসহ্য যন্ত্রণা মেয়েদেরকে দেবে-তা না যাবে সহ্য করা, না যাবে তার কোনাে প্রতিকার করা অথবা এই মেয়েরা পরিবারের বােঝা হয়ে দুঃখ দৈন্য ডেকে আনবে-এইসব নানাবিধ দুশ্চিন্তার শিকার হয়েই তারা ওই চরম নিষ্ঠুর ও হৃদয়হীন হত্যাকান্ড ঘটাতাে, আর জাহেলী সমাজে এটা কোনাে অপমান বলেই গণ্য হবে না। অপর দিকে, সহীহ ও সঠিক ইসলামী আকীদা এসব কদর্য ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, এ পবিত্র ও সুস্থ আকীদার কারণে মানুষ জানে ও গভীরভাবে বিশ্বাস করে যে রিযিক একমাত্র আল্লাহরই হাতে, তিনি সবাইকে তাদের জীবন ধারণের উপযােগী যাবতীয় সামগ্রী সরবরাহ করেন, আর আল্লাহ তায়ালা যে সব বিপদ আপদ তাদের তাকদীরের লিখন হিসাবে পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রেখে দিয়েছেন তা ছাড়া অন্য কারাে কারণে বা অন্য কোনাে ব্যক্তির জন্যে কোনাে বিপদ কিছুতেই আসতে পারে না বা আসবে না। সহীহ আকীদার কারণে সে আরাে বিশ্বাস করে যে মানুষ সবাই প্রকৃতিগতভাবে পবিত্র এবং নর ও নারী নিয়েই তাে মানুষের অস্তিত্ব। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের জন্ম হবে কেমন করে! এজন্যে যে নারী অবশ্যই মানব সমাজের অর্ধেক, সে নরের জোড়া তার সুখ-দুঃখের সাথী, তার অবর্তমানে ও অভাবে পুরুষের জীবন হয়ে যায় মরুভূমির মতাে নীরব নিথর ও শুষ্ক। ইসলাম তাকে দিয়েছে মানুষের অবিচ্ছেদ্য অংশের সম্মান।
# *কন্যা সন্তান হলে অখুশী হওয়া : বর্তমান আলােচ্য প্রসংগে জাহেলিয়াতের ঘৃণ্য অভ্যাস ও জাহেলী সমাজের একটি কুৎসিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর যখন তাদেরকে কন্যা সন্তান জন্ম হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়, তখন (অপমানের জ্বালায়) তাদের মুখ কালো হয়ে যায়, আর তারা রাগে গরগর করতে থাকে।’ অর্থাৎ অপমানের গ্লানিতে, অভাবের ভয়ে মুখ তাদের কালাে হয়ে যায় এবং এজন্যেই কন্যা-সন্তান জন্ম হওয়ার সংবাদে সে ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠে। সে এর পরেও যদি কন্যা সন্তানকে হত্যা না করে, তার জন্মকে সহ্য করে যায়, সত্যিকারে কি সে মহা এক আপদের আগমন জ্বালা সহ্য করে বড় কষ্টে তার রাগকে সে সংবরণ করে? নবজাত কন্যা শিশুটির কী দোষ, সে তাে নিজের ইচ্ছায় দুনিয়ায় আসেনি। ইসলামের সহীহ আকীদা মানুষকে অধিকার ও সম্মানের দিক দিয়ে পুরুষের মতােই নারীর অবস্থান ও মর্যাদা দেয়, সে তার জন্যে আল্লাহর এক আশীর্বাদ ও মহাদান। মাতৃজঠরে যখন কোনাে বাচ্চা পয়দা হয়, তখন পুত্র-কন্যা যাই হােক কেন এ বিষয়ে মানুষের কোনাে হাত নেই, যেহেতু মানুষের ইচ্ছায় পুত্র বা কন্যার জন্ম হয় না, এমনকি মাতৃজঠরে ভ্রুণ থাকার সময় সেটা জীবিত অবস্থায় পয়দা হবে- না মৃত শিশুর জন্ম হবে, সে বিষয়ের ওপরও কারাে কোনাে হাত নেই। আবার তুচ্ছ একটি কীটের দ্বারা পূর্ণাংগ একটি মানুষের অস্তিত্ব দানের পেছনেও কোনাে মানুষের কোনাে হাত নেই। চিন্তা করে দেখুন মানুষের সৃষ্টি রহস্যের কথা, অতি ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ এক শুক্র-বিন্দুর ক্রমবিকাশের পরিণতিতে যে সুস্থ সুন্দর ও পূর্ণাংগ মানুষের আগমন ঘটে, তা কার ইচ্ছায়, কার মেহেরবানীতে, কার তত্ত্বাবধানে, কার পরিচর্যায়? অবশ্যই তা করুণাময় ও মহা মহিম এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মেহেরবানীতে। তিনিই কাউকে নর রূপে আবার কাউকে নারী রূপে পৃথিবীতে পাঠিয়ে পিতামাতার খুশীর কারণ ঘটান। কিন্তু আল্লাহর দানকে (পুরুষ বা নারী শিশু যাই হােক না কেন) সে অম্লান বদনে অভ্যর্থনা করতে পারে যে তার ইচ্ছাকেই নিজের ইচ্ছা মনে করে নিয়েছে, তার খুশীতে যে খুশী এবং তার দানকে যে নিজের জন্যে আশীর্বাদ হিসাবে গ্রহণ করেছে। এ বিষয়ে তার মুখ কালাে করার কী অধিকার থাকতে পারে। মানুষ না নিজের জন্মের ব্যাপারে কোনাে হাত রাখে, না নর নারী শিশুর জন্মের ব্যাপারে তার কোনাে ইচ্ছা খাটাতে পারে, না জীবিত বা মৃত হিসাবে ভূমিষ্ট হওয়ার ব্যাপারে সে কোনাে ভূমিকা রাখতে পারে? জন্ম মৃত্যুর মানবতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের পেছনে একমাত্র আল্লাহর কর্তৃত্ব ও কৃতিত্ব সার্বিকভাবে ক্ষমতাবান। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হেকমত ও তর নিয়মের দাবী হচ্ছে পৃথিবীর বুকে তিনি জীবনের স্পন্দন চালু রাখতে চান তবে তা একক কোনাে সত্ত্বার মাধ্যমে নয়, বরং দুইয়ের সম্মিলনে ও দুইয়ের সহযােগিতায়, অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর মাধ্যমে। সুতরাং, সৃষ্টি-ব্যবস্থায় নারী হচ্ছে সেই সম্মানিত ভিত্তি যাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি প্রক্রিয়া চলে। নারী সেখানে নিজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী বংশধরের উন্মেষ ঘটায়। বংশ ধারা প্রসারে নারীর ভূমিকাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু সে-ই সেই আধার যেখানে গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সুতরাং এই দুইজনের একজনই তাে কন্যা সন্তান-তার আগমনের সংবাদে কোনাে ব্যক্তি দুঃখিত হয় কেমন করে এবং এ সংবাদের কারণে-কেমন করে নিজেকে তার জাতির কাছ থেকে লুকিয়ে রাখার চিন্তা করে? অথচ এই দুই সত্তার উভয়ের সার্বক্ষণিক অস্তিত্ব ছাড়া পৃথিবীতে জীবন ধারা চালু থাকা সম্ভব নয়! নিশ্চয়ই এ সঠিক আকীদা থেকে মুখ ঘােরানাের অর্থ হচ্ছে সৃষ্টির চাকাকে থামিয়ে দেয়া। এর চিন্তা করা এবং এ উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সবই সৃষ্টির গতিধারাকে ধ্বংস করার শামিল। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘শােনাে, অতি নিকৃষ্ট ওদের গৃহীত সেই সিদ্ধান্ত যাতে ওরা উপনীত হয়েছে।’ আর বলুন তো এমন কী হলাে যার জন্যে তারা এহেন ফয়সালায় পৌছলাে এবং এমন পদক্ষেপ নেয়া শুরু করলাে? আর এভাবেই ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের মূল্য ও তাৎপর্য মানুষের কাছে প্রকাশিত হলাে এবং তাদের চিন্তাধারার মধ্যে এলাে এক বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন, যার ফলে সমাজ সংগঠন ও সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন হলাে, মানুষের পারস্পরিক মেলামেশার মধ্যে সৃষ্টি হলাে অভূতপূর্ব এক মাধুর্য। তাদের পারস্পরিক সহযােগিতা ও শ্রদ্ধাবোধ এবং সাধারণভাবে নারীর প্রতি যত্নবান হওয়ার ফলশ্রুতিতে সমাজের মধ্যে এক নতুন স্রোত প্রবাহিত হতে শুরু করলাে, উন্নত হলাে গােটা মানবতা, নারী রইলাে না আর ঘৃণা ও অবজ্ঞার পাত্রী, তার উপস্থিতি কোনাে প্রবঞ্চনার নামান্তর থাকলাে না বরং তার উপস্থিতি বয়ে আনতে লাগলাে মায়া মমতা ও মাধুর্যের ফল্গুধারা। জাহেলী যামানায় যাদেরকে দুর্লক্ষুণে মনে করা হতাে তাদের উপস্থিতি বিবেচিত হতে লাগলাে অপরিহার্য বলে। ইসলামী সভ্যতার বিকাশে এমন নবযুগের সূচনা হলাে যে মানুষে মানুষে সম্পর্ক মধুর থেকে মধুরতর হয়ে উঠলাে এবং মানবতা খুঁজে পেলাে নতুন এক স্বাদ এক নতুন অর্থ। নারীরা বিবেচিত হতে লাগলাে মানব অস্তিত্বের অপরিহার্য অংগ, তার প্রতি অবজ্ঞা গােটা মানবতার প্রতি অবজ্ঞা বলে গণ্য হলাে এবং কোনাে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবরস্থ করার অর্থ দাঁড়ালাে গােটা মানব জাতিকে ধ্বংস করা। জীবনের একটি অংগকে অকেজো করে দেয়া এবং সর্বোপরি এটা সৃষ্টিকর্তার স্থাপিত সৃষ্টি প্রক্রিয়াকে বানচাল করে দেয়ার শামিল। এটা শুধু মানব জাতির ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য নয়, বরং গােটা সৃষ্টির জন্যে এ কথা সমভাবে প্রযােজ্য-কারণ সবাই তাে নর ও নারী নামক জোড়া থেকে সৃষ্টি। আবার দেখুন, যখনই এই সঠিক আকীদা থেকে মানুষ দূরে সরে গেছে তখনই সমাজের মধ্যে বিরাট এক ধ্বস নেমে এসেছে, সমাজের স্বাভাবিক মেলামেশা বিগড়ে গেছে, সব দিকে সৃষ্টি হয়েছে বিশৃংখলা ও অশান্তি, পারস্পরিক সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়েছে, আর যুগের পর যুগ ধরে জারি হয়ে গেছে মারামারি হানাহানি ও এক জনকে ধ্বংস করে অপরের উত্থানের প্রতিযােগিতা। আধুনিক সমাজে অতীত জাহেলিয়াত যেন আবার ফিরে এসেছে। ইসলামী চেতনা ও ইসলামী মূল্যবােধ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে মানুষ পুনরায় ফিরে যেতে শুরু করেছে প্রাচীন জাহেলিয়াতের ভাবধারার দিকে-এর ফলে মানুষের মধ্যে ভালােবাসা হ্রাস পেয়েছে, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবােধ, সহযােগিতা ও সহমর্মিতার স্রোতধারায় ভাটা পড়ে গেছে- মানুষ এখন এতােটা নীচ ও ইতর হয়ে গেছে যে তারা নারীদের জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু করেছে, সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় তাদের অপরিহার্য অবদানকে মূল্যায়ন না করে তাদেরকে বানানাে হয়েছে বিজ্ঞাপন খেলনার উপকরণ-তাদের সৃষ্টি যে মানব সভ্যতার বিকাশের জন্যেই একথা যেন আজ উগ্র সভ্যতার ধ্বজাধারীরা মুছে ফেলতে চাইছে। এইভাবে যে জেহালত শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে মানুষকে রসাতলে নিয়ে চলেছে, আর এসবই হচ্ছে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস থেকে দূরে যাওয়ার প্রত্যক্ষ ফল। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, আধুনিক সভ্যতার ধারক বাহকরা নারীর সাথে ব্যবহারের ব্যাপারে ইসলামী শিক্ষা ও সভ্যতাকে ভ্রুকুটি প্রদর্শন করে চলেছে, তাদের প্রগলভতা এতােদূর এগিয়ে গেছে যে তারা মানব সভ্যতার বিকাশ ও অগ্রগতিতে সৃষ্টিকর্তার চিন্তা থেকে নিজেদের চিন্তাকে বড় মনে করা শুরু করে দিয়েছে। এসবই হচ্ছে আধুনিক সভ্যতাগর্বী ব্যক্তিদের ইসলামী বিশ্বাস বর্জিত চিন্তাধারার অবশ্যম্ভাবী ফল, অথচ এসব বুদ্ধিজীবী একবারও ফিরে তাকায় না ইসলামের স্বর্ণযুগে অনুসৃত পদ্ধতিসমূহের দিকে, দেখে না কোন নীতি অবলম্বনে তারা মানব সভ্যতায় শান্তি-সুধার এই অপূর্ব বিপ্লব এনেছিলাে। মানুষের জীবনে এনেছিলাে পারস্পরিক দরদ ভালােবাসা সহযােগিতা ও সহমর্মিতা। তাদের মধ্যে গড়ে তুলেছিলো অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। তাদেরকে একে অপরের জন্যে ত্যাগী ও সংবেদনশীল করে তুলে তাদেরকে সংকীর্ণতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার ধ্বংসাত্মক গহ্বর থেকে তুলে মানবতার স্বর্ণ শিখরে তুলেছিলাে, সমাধান করেছিলাে সকল প্রকার অর্থনৈতিক জটিলতা ও সমস্যার এবং নিষ্পত্তি করেছিলাে সকল প্রকার সামাজিক ব্যাধির। এসবই সম্ভব হয়েছিলাে সর্বশক্তিমান ও পরম করুণাময় এবং সবার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল ইযযতের বিধানকে সর্বাংগীন বিধান হিসাবে নত শিরে মেনে নেয়ার কারণে। আর সর্ববিজয়ী এ ব্যবস্থার অন্তর্গত নারী সংক্রান্ত বিধান ইসলামের অনুসারী প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির হৃদয়কন্দরে সমভাবে গুরুত্ব লাভ করেছিলাে। তারা জেনে নিয়েছিলাে ও পরম শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করেছিলাে যে, নারী গােটা মানব সভ্যতারই অপরিহার্য অর্ধাংশ। সুতরাং আল্লাহর কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই অংশের মধ্যে তারা আর কোনাে পার্থক্য রাখেনি আর তারই ফলে তারা সর্বকালের মধ্যে সব থেকে বেশী সমৃদ্ধ ও শান্তির স্বর্ণ যুগ গড়তে পেরেছিলাে।
# জাহেলী চিন্তাধারার সাথে ইসলামের পার্থক্য : জাহেলী চিন্তাধারা ও ইসলামী চিন্তাধারার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তার উদাহরণ হচ্ছে যেমন আখেরাতের প্রতি যারা বিশ্বাস রাখে না তাদের গুণ বৈশিষ্ট্য এবং আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে যেমন পার্থক্য বিদ্যমান, আর আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার উদাহরণই হচ্ছে সর্বোচ্চ। এ কথাটাই ব্যক্ত হয়েছে নীচের আয়াতে, ‘যারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখেনা তাদের জন্যেই রয়েছে নিকৃষ্ট উদাহরণ, আর আল্লাহর জন্যে রয়েছে সর্বোচ্চ উদাহরণ এবং তিনিই মহাশক্তিমান মহাবিজ্ঞানময়।’ আর এখানেই শিরক ও আখেরাতের অস্বীকৃতি-এই বিষয় দুটির মধ্যে বিদ্যমান ঘনিষ্ট সম্পর্ক সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে, কারণ এ দু’টি একই উৎসমূল থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং এ দুটোর মূলে রয়েছে একইভাবে মানুষের অন্তরের মধ্যে অদৃশ্যকে অস্বীকার করার প্রবণতা এবং এর ফলে মানুষের অন্তরে,তার জীবনে, সমাজে ও সামাজিক চরিত্রে প্রতিফলিত হয় এই বিষাক্ত প্রভাব। সুতরাং যখন আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাসী ওইসব ব্যক্তিদের কোনাে উদাহরণ পেশ করা হয় তখন দেখা যায় তারাই হচ্ছে মানুষের মধ্যে নিকৃষ্টতম শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ তাদের জীবনে কোনাে নিয়ম শৃংখলা, পারম্পরিক দরদ-ভালােবাসা ও সহানুভুতি থাকে না। তাদের জীবন দুনিয়া কেন্দ্রিক হওয়ার কারণে তারা চরম স্বার্থপর হয়, নিকৃষ্ট লােভী কুকুরের মতাে তারা দুনিয়ার সবটুকু মজা একাই ভোগ করতে চায়, যদিও এতাে বেশী ভােগ করার ক্ষমতা তাদের নেই। শুধু তাই নয়, দুনিয়ার যতাে নিকৃষ্ট ও যতাে নিষ্ঠুর প্রাণী আছে তাদের স্বভাবটি তাদের অজান্তেই সংক্রামিত হয়ে যায় ওই সব পরকালে অবিশ্বাসীদের মধ্যে। এই জন্যেই বলা হয়েছে, তাদেরই জন্যে হচ্ছে নিকৃষ্ট উদাহরণ। এই নিকৃষ্টতা কোনাে এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। অর্থাৎ, মৃত্যুর পর যখন কোনাে ব্যক্তির কারাে কাছে জবাবদিহিতার অনুভুতি থাকে না তখন এ দুনিয়াতেই তার চাওয়া ও পাওয়া সীমাবদ্ধ হয়ে যায়, এজন্যে এ পাওয়ার মধ্যে কারাে জন্যে কিছু ছাড় দেয়া তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে, আর এরই ফলে তার মন হয়ে যায় ছােট ও সংকীর্ণ তার অনুভূতি অনুদার হয়ে যায় এবং তার সকল কাজ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায় । এই সংকীর্ণতাই তার ব্যবহারকে বানিয়ে দেয় অমার্জিত। একাই সে সারা পৃথিবীর মালিক হয়ে বসতে চায়। কিন্তু কতাে নির্বোধ সে! যখন সে দেখে এতাে কিছু ভােগ করার না আছে তার (ক্ষমতা কারণ তার অস্তিত্বের মধ্যে ভােগ করার কতােটা ক্ষমতা আছে তাও তাে সে জানেনা) আর না তার সংকীর্ণ বয়সটুকু তাকে এতােসব ভােগ করার অনুমতি দেয়। সাময়িক সুস্থতা ও সবলতা এমনভাবে তাকে উচ্চাকাংখী করে তােলে যে মৃত্যু ও পরকালে বিশ্বাস না থাকায় তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সাধারণ চেতনাটুকু পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে যায়। ‘আর আল্লাহর জন্যেই রয়েছে সর্বোচ্চ উদাহরণ।’ যার তুলনা কোনাে সৃষ্টি জীবের সাথে হতে পারে না-তা সে যেইই হােক না কেন। আর যে পরকালে বিশ্বাস করে না, সে প্রকৃতপক্ষে নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা করতে না পেরে চরম বেওকুফ ও নির্বোধ ব্যক্তিতে পরিণত হয়। ‘আর তিনিই মহা শক্তিমান, মহা বিজ্ঞানময়।’ অর্থাৎ তিনিই যাবতীয় শক্তি ক্ষমতার অধিকারী, সকল বুদ্ধি ও জ্ঞানের উৎস। তিনিই জানেন কোথায় কোন জিনিসকে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং কার সাথে কোন ব্যবহার উপযােগী কোন বস্তুকে কিভাবে এবং কোথায় ব্যবহার করায় কী উপকার হবে এ জ্ঞান তার ছাড়া আর কারাে নেই। ‘আর তিনিই মানুষকে, তার যুলুমের কারণে পাকড়াও করার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।’ মানুষ নিজ বুদ্ধিতে যা করে তার ফলে আসলে সে নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে; অথচ মহা দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তাকে সর্বাধিক কল্যাণের অধিকারী বানাতে চান, কিন্তু না বুঝার কারণে মহান আল্লাহকে সে নিজের দুশমন মনে করে। তবুও পরম করুণাময় পরওয়ারদেগার বুঝার জন্যে, চিন্তা করার ও শােধরানাের জন্যে একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত তাকে সময় দিয়ে রাখেন। ‘তিনিই মহাশক্তিমান মহা বিজ্ঞানময়।’ তাঁর মেহেরবানীর কথা স্মরণ করাতে গিয়ে তিনি জানাচ্ছেন, যদি আল্লাহ তায়ালা মানুষের যুলুমের কারণে তাদেরকে (সংগে সংগে) পাকড়াও করতেন তাহলে তিনি পৃথিবীতে কোনাে প্রাণীকেই রেহাই দিতেন না, বরং (তার অপার দয়ার কারণে) তিনি তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখেন; অতপর যখন নির্দিষ্ট সে সময়টি এসে যায় তখন তাদের মৃত্যুকে এক মুহুর্তও বিলম্বিত করেন না এক মুহুর্ত আগেও করেন না। আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার নেয়ামতসমূহ দ্বারা তাদেরকে ধন্য করেছেন কিন্তু এই মানুষই এমন সত্ত্বা যে পৃথিবীতে অশান্তি ঘটায় এবং যুলুম করার কারণে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায় এবং নানা প্রকার যুলুম করে, সে আল্লাহ তায়ালা থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায় এবং শিরক করে, তারা একে অপরের ওপর বাড়াবাড়ি করে মানুষকে কষ্ট দেয়। এবং মানুষ ছাড়া সৃষ্টির আরও অনেককেও কষ্ট দেয়, অথচ এতদসত্তেও আল্লাহ তায়ালা তার এসব অপকর্ম সহ্য করে যান ও তাকে দয়া করতে থাকেন এবং তাকে সময় দিয়ে যান পূর্ব নির্ধারিত বিশেষ সেই দিন পর্যন্ত, যদিও এ সময় পাওয়ার যােগ্যতা তাদের থাকেনা। এ হচ্ছে তার শক্তি ক্ষমতার সাথে অংগাংগিভাবে জড়িত তার বিশেষ কৃপা ও হেকমত-এ হচ্ছে তাঁর বিশেষ রহমত যার সাথে তার সুবিচার বিজড়িত। কিন্তু হলে কি হবে, মানুষ তার দেয়া এ সুযােগের অপব্যবহার করে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:–
# যাদের সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের মাধ্যমে তারা এ নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি যে, আল্লাহ সত্যি তাদেরকে তাঁর শরীক করে রেখেছেন এবং নিজের প্রভুত্বের কিছু কাজ অথবা নিজের রাজ্যের কিছু এলাকা তাদের হাতে সোপর্দ করেছেন।
# তাদের জন্য নযরানা, ভেঁট ও অর্ঘ পেশ করার উদ্দেশ্যে নিজেদের উপার্জন ও কৃষি উৎপাদনের একটি নির্দিষ্ট অংশ আলাদা করে রাখতো।
# আরব মুশরিকদের মাবুদদের মধ্যে দেবতাদের সংখ্যা ছিল কম, দেবীদের সংখ্যা ছিল বেশী। আর এ দেবীদের সম্পর্কে তাদের আকীদা ছিল এই যে, তারা আল্লাহর মেয়ে। এভাবে ফেরেশতাদেরকেও তারা আল্লাহর মেয়ে গণ্য করতো।
# যে কন্যা সন্তানকে তারা নিজেদের জন্য এত বেশী লজ্জাজনক মনে করে থাকে, সেই কন্যা সন্তানকে আল্লাহর জন্য মনোনীত করতে তাদের কোনই দ্বিধা হয় না। অথচ আল্লাহর আদৌ কোন সন্তান থাকতে পারে এরূপ ধারণা করা একটি মহামূর্খতা ও চরম বেয়াদবী ছাড়া আর কিছুই নয়। আরব মুশরিকদের এ কর্মনীতিকে এখানে একটি বিশেষ দিক দিয়ে সমালোচনা করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আল্লাহ সম্পর্কে তাদের নিম্নমুখী চিন্তা-ভাবনাকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা এবং তাদেরকে একথা বলে দেয়া যে, মুশরিকী আকীদা-বিশ্বাস আল্লাহর ব্যাপারে তাদেরকে দুঃসাহসী ও ঔদ্ধত্যশালী বানিয়ে দিয়েছি, যার ফলে তারা এতই বিকারগ্রস্ত ও অনুভূতিহীন হয়ে পড়েছে যে, এ ধরনের কথা বলা তারা একটুও দোষণীয় মনে করে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৬-৬০ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের অসদাচরণ ও নির্বুদ্ধিতার খবর দিচ্ছেন যে, সবকিছু দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ, অথচ তারা অজ্ঞানতা বশতঃ তাদের মিথ্যা মাবুদদের অংশ তাতে সাব্যস্ত করছে। তারা বলেঃ (আরবি) অর্থাৎ “এটা আল্লাহর জন্যে তাদের ধারণা অনুযায়ী এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্যে; যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌছায় না এবং যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়, তারা যা মীমাংসা করে তা কতই না নিকৃষ্ট!” (৬:১৩৭) এই লোকদেরকে এর জবাবদিহি অবশ্যই করতে হবে। তাদের এই মিথ্যারোপের প্রতিফল অবশ্যই তারা পাবে এবং তা হবে জাহান্নামের আগুন।
এরপর তাদের দ্বিতীয় অন্যায় ও বোকামির বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভকারী ফেরেশতাগণ হচ্ছেন তাদের মতে আল্লাহর কন্যা (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এই ভুল তো তারা করে, তদুপরি তাঁদের ইবাদতও তারা করে। এটা ভুলের উপর ভুল। এখানে তারা তিনটি অপরাধ করলো। ১. তারা আল্লাহর সন্তান সাব্যস্ত করলো, অথচ তিনি তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। ২. সন্তানের মধ্যে আবার ঐ সন্তান আল্লাহর জন্যে নির্ধারণ করলো যা তারা নিজেদের জন্যেও পছন্দ করে না, অর্থাৎ কন্যা সন্তান। কি। উল্টো কথা? নিজেদের জন্যে নির্ধারণ করছে পুত্র সন্তান, আর আল্লাহ তাআলার জন্যে নির্ধারণ করছে কন্যা সন্তান! ৩, তাদের আবার তারা ইবাদত করছে। এটা তাদের সরাসরি অপবাদ ও মিথ্যারোপ ছাড়া কিছুই নয়। আল্লাহ তাআলার সন্তান হওয়া কি করে সম্ভব হতে পারে? তাও আবার এমন সন্তান যা তাদের নিজেদের কাছে খুবই নিকৃষ্ট ও হীন। কেমন বোকামি যে, আল্লাহ তাদেরকে দিবেন পুত্র সন্তান আর নিজের জন্যে রাখবেন মেয়ে সন্তান! আল্লাহ এর থেকে বরং সন্তান হতেই পবিত্র।
যখন তাদেরকে খবর দেয়া হয় যে, তাদের মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করেছে, তখন লজ্জায় তাদের মুখ কালো হয়ে যায় এবং মুখ দিয়ে কথা সরে না। তারা লোকদের কাছে আত্মগোপন করে থাকে। তারা চিন্তা করেঃ এখন কি করা যায়? যদি এ কন্যা সন্তানকে জীবিত রাখা যায়, তবে এটাতো খুবই লজ্জার কথা! সে তো উত্তরাধিকারিণীও হবে না এবং তাকে কিছু একটা মনে করাও হবে না। সুতরাং পুত্র সন্তানকেই এর উপর প্রাধান্য দেয়া হোক। মোট কথা তাকে জীবিত রাখলেও তার প্রতি অত্যন্ত অবহেলা প্রদর্শন করাহয়। অন্যথায় তাকে জীবন্তই কবর দিয়ে দেয়া হয়। এই অবস্থা তো তার নিজের। আবার আল্লাহর জন্যে এই জিনিসই সাব্যস্ত করে। সুতরাং তাদের এই মীমাংসা কতই নী জঘন্য! এই বন্টন কতই না নির্লজ্জতাপূর্ণ বন্টন! আল্লাহর জন্যে যা সাব্যস্ত করছে তা নিজের জন্যে কঠিন অপমানের কারণ মনে করছে! প্রকৃত ব্যাপার এই যে, তারা হচ্ছে অতি নিকৃষ্ট প্রকতির অধিকারী, আর আল্লাহ তো হচ্ছেন অতি মহৎ প্রকৃতির অধিকারী এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়, মহিমাময় ও মহানুভব।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 56-60
تَاللّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ ]
By Allah, you shall certainly be questioned about (all) that you used to fabricate.]
Among the Behavior of the Idolators was vowing to Things that Allah had provided for Them to their gods
Allah tells:
وَيَجْعَلُونَ لِمَا لَا يَعْلَمُونَ نَصِيبًا مِّمَّا رَزَقْنَاهُمْ
And they assign a portion of that which We have provided them with, to what they have no knowledge of (false deities).
Allah tells us about some of the heinous deeds of those who used to perform baseless worship of other gods besides Him, such as idols and statues, with no grounds for doing so. They gave their idols a share of that which Allah had provided for them,
فَقَالُواْ هَـذَا لِلَّهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَـذَا لِشُرَكَأيِنَا فَمَا كَانَ لِشُرَكَأيِهِمْ فَلَ يَصِلُ إِلَى اللَّهِ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَى شُرَكَأيِهِمْ سَأءَ مَا يَحْكُمُونَ
They say:”This is for Allah,” according to their claim,” and this is for our partners.” But the share of their “partners” is not directed to Allah, while the share of Allah is directed to their “partners”! How evil is that with which they judge. (6:136)
That is they assigned a share for their idols as well as Allah, but they gave preference to their gods over Him, so Allah swore by His Almighty Self to question them about these lies and fabrications. He will most certainly call them to account for it and give them the unrelenting punishment in the fire of Hell.
So He says,
تَاللّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ
By Allah, you shall certainly be questioned about (all) that you used to fabricate.
Then Allah tells us how they used to regard the angels, who are servants of the Most Merciful, as being female, and that they considered them to be Allah’s daughters, and they worshipped them with Him. In all of the above, they made very serious errors.
They attributed offspring to Him when He has no offspring, then they assigned Him the kind of offspring they regarded as inferior, namely daughters, which they did not even want for themselves, as He said:
أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الاٍّنثَى
تِلْكَ إِذاً قِسْمَةٌ ضِيزَى
Are the males for you and the females for Him! That is indeed an unfair division! (53:21-22)
And Allah says here.
وَيَجْعَلُونَ لِلّهِ الْبَنَاتِ سُبْحَانَهُ
And they assign daughters unto Allah! Glorified (and Exalted) is He.
meaning, above their claims and fabrications.
أَلَا إِنَّهُم مِّنْ إِفْكِهِمْ لَيَقُولُونَ
وَلَدَ اللَّهُ وَإِنَّهُمْ لَكَـذِبُونَ
أَصْطَفَى الْبَنَاتِ عَلَى الْبَنِينَ
مَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
But no! It is from their falsehood that they say:”Allah has begotten.” They are certainly liars! Has He (then) chosen daughters rather than sons! What is the matter with you! How do you decide! (37:151-154)
وَلَهُم مَّا يَشْتَهُونَ
And for themselves, what they desire;
meaning they choose the males for themselves, rejecting the daughters that they assign to Allah. Exalted be Allah far above what they say!
The Idolators’ Abhorrence for Daughters
Allah tells.
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُمْ بِالاُنثَى ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا
And when the news of (the birth of) a female (child) is brought to any of them, his face becomes dark,
meaning with distress and grief.
وَهُوَ كَظِيمٌ
and he is filled with inner grief!
meaning he is silent because of the intensity of the grief he feels.
يَتَوَارَى مِنَ الْقَوْمِ
He hides himself from the people,
meaning he does not want anyone to see him.
مِن سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ أَيُمْسِكُهُ عَلَى هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ
because of the evil of that whereof he has been informed. Shall he keep her with dishonor or bury her in the earth!
meaning, should he keep her, humiliating her, not letting her inherit from him and not taking care of her, preferring his male children over her!
أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ
(or bury her in the earth),
meaning bury her alive, as they used to do during the days of ignorance.
How could they dislike something so intensely, yet attribute it to Allah
أَلَا سَاء مَا يَحْكُمُونَ
Certainly, evil is their decision.
meaning how evil are the words they say, the way they want to share things out and the things they attribute to Him.
As Allah says:
وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمَـنِ مَثَلً ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدّاً وَهُوَ كَظِيمٌ
And if one of them is informed of the news of (the birth of a girl) that which he sets forth as a parable to the Most Gracious (Allah), his face becomes dark, and he is filled with grief! (43:17)
Here, Allah says
لِلَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ بِالاخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ
For those who do not believe in the Hereafter there is an evil description,
meaning, only imperfection is to be attributed to.
وَلِلّهِ الْمَثَلُ الَاعْلَىَ
and for Allah is the highest description.
meaning He is absolutely perfect in all ways and this absolute perfection is His Alone.
وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
And He is the All-Mighty, the All-Wise.