أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 808)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৬৩-৬৫ নং আয়াত:-
[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা শ্রবণ করে।
Indeed in that is a sign for a people who listen.]
www.motaher21.net
تَاللّٰہِ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰۤی اُمَمٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَزَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ اَعۡمَالَہُمۡ فَہُوَ وَلِیُّہُمُ الۡیَوۡمَ وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۶۳﴾
শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শয়তান ঐ সব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে আজও তাদের অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি।
By Allah, We did certainly send [messengers] to nations before you, but Satan made their deeds attractive to them. And he is the disbelievers’ ally today [as well], and they will have a painful punishment.
وَ مَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ اِلَّا لِتُبَیِّنَ لَہُمُ الَّذِی اخۡتَلَفُوۡا فِیۡہِ ۙ وَ ہُدًی وَّ رَحۡمَۃً لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ ﴿۶۴﴾
আমি তো তোমার প্রতি গ্রন্থ এ জন্যই অবতীর্ণ করেছি; যাতে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করে, তাদেরকে তুমি তা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিতে পার এবং বিশ্বাসীদের জন্য পথ নির্দেশ ও দয়া স্বরূপ।
And We have not revealed to you the Book, [O Muhammad], except for you to make clear to them that wherein they have differed and as guidance and mercy for a people who believe.
وَ اللّٰہُ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِہِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
আল্লাহ আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতঃপর তার দ্বারা তিনি ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন; অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা শ্রবণ করে।
And Allah has sent down rain from the sky and given life thereby to the earth after its lifelessness. Indeed in that is a sign for a people who listen.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৬৩-৬৫ নং আয়াত:-
[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা শ্রবণ করে।
Indeed in that is a sign for a people who listen.]
www.motaher21.net
৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
যখন কাফির-মুশরিকরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যাবাদী, জাদুকর ও পাগল ইত্যাদি বলে ব্যঙ্গ করতে লাগল তখন আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন: আমি (আল্লাহ তা‘আলার শপথ) করে বলছি; তোমার পূর্বে বিভিন্ন জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, তারা মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছিল, কিন্তু শয়তান তাদের কাছে খারাপ আমলগুলো সুশোভিত করে তুলে ধরেছিল, ফলে তারা রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং মক্কার কাফির-মুশরিকসহ পৃথিবীতে যত কাফির আগমন করবে সকলের নিকটই শয়তান খারাপ আমলকে চাকচিক্যময় করে তুলে ধরেছে ও ধরবে, ফলে তারা ঈমান আনতে পারেনি এবং পারবেও না। সুতরাং আজ দুনিয়াতে শয়তান তাদের অভিভাবক, তারা শয়তানের অনুসরণ করছে, তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখছে, কিন্তু কিয়ামতের দিন তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
(إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوْا فِيْهِ)
অর্থাৎ কুরআন নাযিলের অন্যতম একটি লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণনা করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব বিবৃত করে বলেন: বিশ্বাস ও শরীয়তের বিধি-বিধানের ব্যাপারে ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের মাঝে, অনুরূপ অগ্নিপূজক ও মুশরিকদের মাঝে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকদের মাঝে যে সব মতপার্থক্য রয়েছে, তা এমনভাবে আলোচনা কর, যাতে ন্যায়-অন্যায় ও হক-বাতিল স্পষ্ট হয়ে যায়। যাতে মানুষ হককে গ্রহণ করতে পারে, বাতিলকে বর্জন করতে পারে। সুতরাং যারা কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তার প্রতি আমল করবে তাদের জন্য হিদায়াত ও রহমত।
(أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً….)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে মৃত জমিনকে জীবিত করেন। অর্থাৎ জমিন একসময় শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যায়, তাতে কিছুই জন্মানোর ক্ষমতা থাকে না। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন এবং তার দ্বারা ভূমিকে জীবিত করে তোলেন, ফলে তাতে ফসল জন্মাতে থাকে। এটা আল্লাহ তা‘আলারই একটি নিদর্শন; যা মানুষের মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের প্রমাণ বহন করে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মৃত ভূমিকে যেমন জীবিত করেন তেমনি মানুষকেও পুনরায় জীবিত করবেন। তাই যারা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলী হতে উপদেশ গ্রহণের জন্য শ্রবণ করে তাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক জাতির নিকট নবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে।
২. যারা মন্দ কাজ করে তাদের বন্ধু হচ্ছে শয়তান।
৩. জমিন ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত কিংবা ফেটে চৌচির হওয়ার পর যেমন বৃষ্টির পানি দ্বারা জীবিত হয় তেমনি মানুষকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# অন্য কথায় এ কিতাব নাযিল হওয়ার কারণে এরা একটি সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে গেছে। কল্পনা, ভাব-বিলাস, কুসংস্কার ও অন্ধ অনুকরণের ভিত্তিতে যে অসংখ্য ও বিভিন্ন মতবাদ ও ধর্মে এরা বিভক্ত হয়ে গেছে সেগুলোর পরিবর্তে সবাই একমত হতে পারে সত্যের এমন একটি স্থায়ী বুনিয়াদ এদের নাগালের ভেতরে এসে গেছে। এখন এ নিয়ামতটি এসে যাওয়ার পরও যারা অতীতের অবস্থাকেই প্রাধান্য দিয়ে যাওয়ার মত নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিচ্ছে তাদের পরিণাম ধ্বংস ও লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছু নয়। এখন যারা এ কিতাবকে মেনে নেবে একমাত্র তারাই সত্য-সরল পথ পাবে এবং তারাই অঢেল রবকত ও রহমতের অধিকারী হবে।
# প্রতি বছর তোমাদের চোখের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যে, পৃথিবী একটি নিরস বিশুষ্ক প্রান্তরের মত পড়ে আছে। সেখানে জীবনের স্পন্দন নেই। ঘাস-লতা-গুল্ম-পাতা-সবুজের চিহ্নই নেই। নেই কোন ধরনের পোকা মাকড়ের অস্তিত্ব। এ সময় এসে গেলো বর্ষার মওসুম। দু-চার ফোঁটা বৃষ্টি আকাশ থেকে নেমে আসাতেই এ মরা যমীনের বুক চিরে জীবনের তরংগ জেগে উঠতে থাকে। যমীনের বিভিন্ন স্তরে জমে থাকা অসংখ্য বীজ সহসাই জেগে ওঠে। তাদের প্রত্যেকের মধ্য থেকে গত বর্ষায় জন্মলাভ করার পর মরে যাওয়া উদ্ভিদগুলো আবার মাথা চাড়া দেয়। গরমের মওসুমে নাম নিশানা পর্যন্ত মুছে গিয়েছিল এমন সব অগণিত মৃত্তিকার কীট অকস্মাৎ আবার দেখা যায় যেমন বিগত বর্ষায় দেখা গিয়েছিল। নিজেদের জীবনে তোমরা এসব বারবার দেখতে থাকো। এরপরও নবীর মুখ থেকে একথা শুনে অবাক হয়ে যাও যে, আল্লাহ মৃত্যুর পর সমস্ত মানুষকে পুনর্বার জীবিত করবেন। এ অবাক হওয়ার কারণ এছাড়া আর কী হতে পারে যে, তোমাদের পর্যবেক্ষণ বুদ্ধি-জ্ঞানহীন পশুদের পর্যবেক্ষণের মতই। তোমরা বিশ্ব-জাহানের বিস্ময়কর চমৎকারিত্ব দেখো কিন্তু তার পেছনে স্রষ্টার ক্ষমতা ও প্রজ্ঞার নিদর্শন গুলো দেখো না। অন্যথায় নবীর বর্ণনা শোনার পর তোমাদের মন অনিবার্যভাবে চিৎকার করে বলে উঠতো যে, ‘এসব নিদর্শন যথার্থই নবীর বর্ণনাকে সমর্থন করে’।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*যুগে যুগে ইসলামের বিরোধিতা : এরপর বুঝতে হবে যে রসূলুল্লাহ(স.)-এর সময়কার আরব জাতির যে সর্বপ্রথম সত্যকে অস্বীকার করেছিলাে তা নয় এবং এরাই প্রথম অভিশপ্ত হয়নি-এদের পূর্বেও অনেকে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং আরও অনেকে অভিশপ্ত হয়েছে তাদেরকেও শয়তান ভুল পথে চালিত করেছে এবং সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়াকেই শয়তান তাদের সামনে সুন্দর করে তুলে ধরেছে তাদের চিন্তাকে ও তাদের কাজকে সুন্দর করে দেখিয়েছে। অতপর যারা তাদেরকে বিপথগামী করেছিলাে তাদের কাছে মন্দ পথকে সুন্দর করে দেখিয়েছিলাে এবং কল্যাণের পথ থেকে তাদের সরিয়ে দিয়েছিলাে অথচ তাদেরকেই তারা তাদের কল্যাণকারী ও অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছিলাে। অপরদিকে আল্লাহ তায়ালা ওই অন্যায় অসৎ ও অকল্যাণ থেকে উদ্ধার করার জন্যে তাদের কাছে রসূল পাঠালেন। এই রসূলের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার পার্থক্য এবং তাদের ধর্ম বিশ্বাসসমূহে ও তাদের পূর্বেকার ধর্মীয় পুস্তকগুলােতে যে সব ভ্রান্তি ঢুকে পড়েছিলাে সেগুলােকে রসূলের মাধ্যমে বিস্তারিতভাবে তাদের সামনে তুলে ধরার ব্যবস্থা করলেন। আল্লাহ তায়ালা চাইলেন রসূলুল্লাহ(স.) যেন মােমেনদের সামনে হেদায়াত ও রহমতের বাস্তব মূর্তি হয়ে ফুটে ওঠেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর কসম, আমি অবশ্যই তােমার পূর্বেকার জাতিসমূহের কাছে বহু রসূল পাঠিয়েছি, কিন্তু শয়তান তাদের খারাপ কাজগুলােকেই তাদের সামনে সুন্দর করে দেখিয়েছে এবং সে আজও এদের অভিভাবক ও দরদী বন্ধু সেজে তাদেরকে ধােকা দিচ্ছে। সুতরাং তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি, আর তােমার কাছে কিতাব এজন্যেই পাঠিয়েছি যে তুমি তাদের মতভেদপূর্ণ বিষয়গুলাের মীমাংসা স্পষ্ট করে তাদের সামনে তুলে ধরবে।’ সুতরাং এ শেষ ও সমাপ্তিকর কিতাব ও সর্বশেষ রসূলের মূল দায়িত্ব হচ্ছে পূর্বে অবতীর্ণ আসমানী কিতাবগুলাের শিক্ষার মধ্যে যে পার্থক্য ও মতভেদ সৃষ্টি হয়েছিলাে সেগুলােকে মীমাংসা করে দেয়া এবং বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত জাতিসমূহের মধ্যে সত্যের বাতিকে সমুজ্জল করে তােলা। তাদেরকে তাওহীদের শিক্ষার আলােকে এক জাতিতে পরিণত করা এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মধ্যে (পরিবর্তিত হওয়া সত্তেও) মূল বিষয় হিসাবে এখনও যে তাওহীদের প্রেরণা পাওয়া যায়, তাকে উজ্জীবিত করে তােলা। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর মাধ্যমে চেয়েছেন, আরব জাতি তথা তৎকালীন জাতিসমূহের মধ্যে নানা প্রকার ভুল ভ্রান্তির অনুপ্রবেশে তাওহীদের শিক্ষা সম্পর্কে যে অস্পষ্টতা ও সন্দেহ এসে গিয়েছিলাে, শিরক ও মূর্তিপূজার যেসব প্রচলন এসে গিয়েছিলাে। সে সব ভুলভ্রান্তি দূর করে তাদেরকে সত্যনিষ্ঠ করে তুলতে। শেষ নবী(স.) তাদেরকে একথা বুঝতে আহ্বান জানালেন যে পূর্বেকার কিতাবসমূহের মধ্যে পরিবর্তন এসে যাওয়ার কারণে সেগুলােকে পরিত্যাগ করতে হবে এবং আরশে মােয়াল্লায় লিখিত মূল কিতাব-এর অবিকল রূপ আল কোরআন, যা সর্বশেষ কিতাব হিসাবে নাযিল হয়েছে- তাকেই মযবুত করে আঁকড়ে ধরতে হবে, তাহলেই যাবতীয় অন্যায় থেকে বাঁচা যাবে এবং সত্য সঠিক পথ পাওয়া সম্ভব হবে। এভাবেই সত্যনিষ্ঠ ও সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিরা ঈমানের স্বচ্ছ সুধা পান করে ধন্য হবে এবং তাদের সামনে ইহকাল ও পরকাল সাফল্যের সিংহদ্বার খুলে যাবে।
*আল্লাহর সার্বভৌমত্বের নিদর্শন : এ পর্যন্ত এসে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব সম্পর্কিত আলােচনা শুরু হয়েছে এবং বিশ্বের বুকে যা তিনি সৃষ্টি করেছে তার মধ্যে তার ক্ষমতার অজস্র নিদর্শন প্রকাশ পেয়েছে। মানুষকে প্রদত্ত গুণাবলী ও যােগ্যতার সাথে যে নেয়ামত ও মান সম্ভ্রম তিনি তাকে দিয়েছেন-সেসব কিছুর মধ্যেও আল্লাহরই নিরংকুশ শক্তি ক্ষমতার কথা প্রকাশিত হয়েছে। সারা বিশ্বের মধ্যে যা কিছু আছে সে সব কিছুকে সামনে রেখে একথা সুস্পষ্টভাবে জানানাে হয়েছে যে, সব কিছুর ওপর নিরংকুশ ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর। ইতিপূর্বে বর্ণিত আয়াতে এ কিতাব আল-কোরআনের অবতরণ সম্পর্কে আলােচনা এসেছে, বলা হয়েছে যে মানব সৃষ্টির সূচনা থেকে এ পর্যন্ত গােটা মানব মন্ডলীর জন্যে যা কিছু নাযিল করা হয়েছে তার মধ্যে এ মহান কিতাবই সর্বোাৎকৃষ্ট-সব থেকে নির্ভুল, সব থেকে যুক্তিপূর্ণ এবং এইটিই সেই কিতাব যার মধ্যে মূল কিতাব অবিকল অবস্থায় বর্তমান রয়েছে-এরই মধ্যে রয়েছে আত্মার জীবন সম্পর্কিত কথা-আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের কথা। এ বৃষ্টি-দ্বারা শুষ্ক যমীনকে সজীব করা হয়েছে এবং এই পানির মধ্যই রয়েছে প্রাণীর জীবন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন অতপর তার দ্বারা যমীনকে মরে যাওয়ার পর জীবিত করেছেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে রয়েছে (আল্লাহকে জানা ও চেনার জন্যে) এক সুস্পষ্ট নিদর্শন।’ আর এই পানিই তাে হচ্ছে প্রতিটি প্রাণীর জীবন। আল্লাহর কিতাবে বলা হয়েছে গােটা পৃথিবীর জীবনই রয়েছে এই পানির মধ্য, অর্থাৎ এর ওপরে পশু পাখী জীব জন্তু প্রাণী। গাছপালা উদ্ভিদ মানুষ অর্থাৎ যতাে কিছু আছে সবই এই পানি থেকে সৃষ্টি। যে মহান সত্ত্বা মৃত থেকে জীবনের আগমন ঘটিয়ে থাকেন তিনিই তাে ইলাহ হওয়ার যােগ্য, তিনিই জীবন মৃত্যুর মালিক, অতএব সন্দেহাতীতভাবে একথা বুঝা গেলো যে, ইলাহ-এর এক অর্থ হলাে জীবন মৃত্যুর মালিক (তিনিই সৃষ্টিকর্তা খালেক); ‘নিশ্চয়ই, যে জাতি সত্যিকারে শােনে, (শােনে বাহ্যিক ও অন্তরের কান দিয়ে) তার জন্যে রয়েছে একথার মধ্যে সুস্পষ্ট নিদর্শন। অতপর এই শােনার পর তারা গভীরভাবে চিন্তা করে।’ এইটিই বর্তমান পরিচ্ছেদের মূল আলােচ্য বিষয়-আল্লাহর সার্বভৌমত্ব ও বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য তার জীবন-মৃত্যুর মালিক হওয়ার বিষয় এবং মৃত্যুর পর আবার জীবিত করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ‘ইলাহ’ শব্দটির প্রামাণ্য দলীল পেশ করা হয়েছে-এই বিষয়টিকেই আল-কোরআন বহু যুক্তির মাধ্যমে পেশ করেছে। অতপর যে ব্যক্তি অন্তরের কান দিয়ে শােনে, বুঝতে চায় এবং চিন্তা-ভাবনা করে, তার জন্যে রয়েছে এই আলােচ্য-বিষয়ের মধ্যে আল্লাহকে চেনার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নিদর্শন।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবীকে (সঃ) সান্ত্বনার সুরে বলছেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! তোমার পূর্বে আমি উম্মত বর্গের নিকট রাসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম, তাদের সকলকেই মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। সুতরাং তোমাকেও যে এরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই। এই অবিশ্বাসকারীরা শয়তানের শিষ্য। শয়তানী কুমন্ত্রণার কারণে তাদের খারাপ কাজগুলি তাদের কাছে শোভনীয় হচ্ছে। তাদের বন্ধু হচ্ছে শয়তান। সে কিন্তু তাদের কোনই উপকার করবে না। সে সব সময় তাদেরকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়ে পগার পার হয়ে যাবে।
কুরআন কারীম হচ্ছে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী কিতাব। প্রত্যেক ঝগড়া-বিবাদ ও মতভেদের ফায়সালা এতে বিদ্যমান রয়েছে। এটা অন্তরের জন্যে হিদায়াত স্বরূপ এবং যে সব ঈমানদার এর উপর আমল করে তাদের জন্যে এটা রহমত স্বরূপ।
এই কুরআন কারীমের মাধ্যমে কিভাবে মৃত অন্তর জীবন লাভ করে থাকে, তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে মৃত যমীন ও মেঘের বৃষ্টি। যারা কথা শুনে ও বুঝে তারা এর দ্বারা অনেক কিছু উপদেশ লাভ করতে পারে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 63-65
[ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّسۡمَعُوۡنَ ﴿٪۶۵﴾
Indeed in that is a sign for a people who listen.]
Finding Consolation in the Reminder of Those Who came before
Allah says,
تَاللّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ
By Allah, We indeed sent (Messengers) to the nations before you, but Shaytan made their deeds seeming fair to them.
Allah says, `He sent Messengers to the nations of the past, and they were rejected. You, O Muhammad, have an example in your brothers among the Messengers, so do not be distressed by your people’s rejection. As for the idolators’ rejection of the Messengers, the reason for this is that the Shaytan made their deeds attractive to them.’
فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ
So today he (Shaytan) is their helper,
meaning they will be suffering punishment while Shaytan is their only helper, and he cannot save them, so they have no one to answer their calls for help,
وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
and theirs will be a painful torment.
The Reason why the Qur’an was revealed
Allah says,
وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلاَّ لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُواْ فِيهِ
And We have not revealed the Book to you, except that you may clearly explain to them those things in which they differ,
Allah says to His Messenger that He has revealed the Book to him to explain the truth to mankind in matters which they dispute over. So the Qur’an is a decisive arbitrator for every issue that they argue about.
وَهُدًى
and (as) a guidance,
meaning, for their hearts.
وَرَحْمَةً
and a mercy,
meaning, for the one who adheres to it.
لِّقَوْمٍ يُوْمِنُونَ
for a people who believe.
وَاللّهُ أَنزَلَ مِنَ الْسَّمَاء مَاء فَأَحْيَا بِهِ الَارْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا
And Allah sends water down from the sky, then He revives the earth with it after its death.
Just as Allah causes the Qur’an to bring life to hearts that were dead from disbelief, so He brings the earth to life after it has died, by sending down water from the sky.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
Surely that is a sign for people who listen.
meaning those who understand the words and their meanings.