أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 810)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৬৮ ৬৯নং আয়াত:-
[ وَ اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে,
Your Lord inspired to the bee,]
www.motaher21.net
وَ اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ اَنِ اتَّخِذِیۡ مِنَ الۡجِبَالِ بُیُوۡتًا وَّ مِنَ الشَّجَرِ وَ مِمَّا یَعۡرِشُوۡنَ ﴿ۙ۶۸﴾
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে, তুমি গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে।
And your Lord inspired to the bee, “Take for yourself among the mountains, houses, and among the trees and [in] that which they construct.
ثُمَّ کُلِیۡ مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ فَاسۡلُکِیۡ سُبُلَ رَبِّکِ ذُلُلًا ؕ یَخۡرُجُ مِنۡۢ بُطُوۡنِہَا شَرَابٌ مُّخۡتَلِفٌ اَلۡوَانُہٗ فِیۡہِ شِفَآءٌ لِّلنَّاسِ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۶۹﴾
এরপর প্রত্যেক ফল হতে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর;ওর উদর হতে নির্গত হয় নানা রঙের পানীয়; যাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগমুক্তি। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
Then eat from all the fruits and follow the ways of your Lord laid down [for you].” There emerges from their bellies a drink, varying in colors, in which there is healing for people. Indeed in that is a sign for a people who give thought.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৬৮ ৬৯নং আয়াত:-
[ وَ اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে প্রত্যাদেশ করেছেন যে,
Your Lord inspired to the bee,]
www.motaher21.net
৬৮-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
এখানে وحي (ওয়াহী) শব্দটি শাব্দিক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। ওয়াহী শব্দটি শাব্দিক পাঁচটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। তন্মধ্যে এখানে
الإلهام الغريزي للحيوان
বা প্রকৃতগত ইলহাম যা প্রাণীকে করা হয়। (মাবাহিস ফী উলূমিল কুরআন পৃ: ২৬)
অর্থাৎ এমন জ্ঞান-বুদ্ধি যা নিজ প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রত্যেক জীবকে দেয়া হয়েছে। মৌমাছিদেরকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এটা বুঝিয়ে দিলেন যে, তারা যেন পাহাড়, গাছ এবং মানুষের বাড়ির ছাদে তাদের মৌচাক তৈরি করে নেয়। এ দুর্বল সৃষ্টজীবের ঘরটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়! ওটা কতই না মজবূত, কতই না সুন্দর ও কতই না কারুকার্যময়! এরা এমনভাবে চাক তৈরি করে যে, মাঝে কোথাও একটু ফাঁকা থাকে না।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মৌমাছিদেরকে আরো নির্দেশ দিলেন, তারা যেন ফল, ফুল এবং ঘাসপাতা হতে রস আহরণ করে ও যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গমনাগমন করে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সময় যেন সরাসরি নিজেদের মৌচাকে ফিরে আসে। উঁচু পাহাড়ের চূড়া হোক, মরু প্রান্তর হোক, বৃক্ষ হোক, লোকালয় হোক, জনশূন্য স্থান হোক ইত্যাদি যে স্থানেই হোক না কেন তারা পথ ভুলে না। যত দূরেই যাক না কেন, ফিরে আসার সময় পথ ভুল করে না। তারা ডানার মাধ্যমে মোম তৈরি করে এবং মুখ দ্বারা মধু জমা করে।
ذُلُلًا এর তাফসীর বশীভূত দ্বারাও করা হয়, এখানে সহজ অর্থ নেয়া হয়েছে অর্থাৎ মৌমাছিকে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিয়েছেন, তুমি তোমার রবের দেখানো পথে চলো, এটা তোমার জন্য সহজ করে দেয়া হয়েছে। তুমি যত দূরেই যাও পথ হারাবে না। বরং তোমার রব যে পথ দেখিয়েছেন সে জন্য তোমার কারণে দূরদূরান্ত থেকে ফিরে আসা সহজ।
(مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُه)
অর্থাৎ মধু সাদা, হলুদ ও লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ এর হয়ে থাকে ফল, ফুল ও মাটির রঙ এর ভিন্নতার কারণে। যেরূপ রঙের ফল বা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করবে মধু সে রঙ্গের মত হবে।
(فِيْهِ شِفَا۬ءٌ لِّلنَّاسِ)
অর্থাৎ মধুতে বহু রোগের ঔষধ রয়েছে। এর অর্থ এ নয় যে, সকল রোগের ঔষধ। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন: মধু অবশ্যই রোগের আরোগ্যদানকারী। আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত প্রাকৃতিক এক পানীয়। তবে বিশেষ বিশেষ রোগের জন্য, সকল রোগের জন্য নয়। হাদীসে এসেছে নাবী মিষ্টি ও মধু পান করতেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯৭২)
অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি জিনিসের মধ্যে আরোগ্য রয়েছে (১) শিংগা লাগানোতে, (২) মধুতে, (৩) আগুনের দ্বারা ছেঁকা দেয়াতে। তবে আমি আমার উম্মতকে আগুন দ্বারা ছেঁকা দেয়া হতে নিষেধ করছি। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬৮৪)
হাদীসে একটি ঘটনাও উল্লেখ রয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক পাতলা পায়খানার রোগীকে মধু খাওয়ার পরামর্শ দিলেন। কিন্তু মধু খেয়ে তার রোগ আরো বেড়ে গেল। তিনি দ্বিতীয়বার মধু পান করতে বললেন যাতে রোগীর পুরাতন মল বেরিয়ে যায়। রোগীর বাড়ির লোকেরা ভাবল, রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার এক ভাই আবার নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এল। তখন তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলা সত্য, তোমার ভায়ের পেট মিথ্যা। যাও, তাকে আবার মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার মধু পান করালো ফলে সে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করল। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬৮৪)
মৌমাছির আচরণ ও যোগাযোগের ওপর গবেষণার জন্য ১৯৭৩ সালে নোবেল পান ভন-ফ্রিচ। কোন নতুন বাগান বা ফুলের সন্ধান পাওয়ার পর একটি মৌমাছি আবার মৌচাকে ফিরে যায় এবং মৌমাছি নৃত্য নামক আচরণের মাধ্যমে তার সহকর্মী মৌমাছিদেরকে সেখানে যাওয়ার সঠিক গতিপথ ও মানচিত্র বলে দেয়। অন্যান্য শ্রমিক মৌমাছিকে তথ্য দেয়ার লক্ষ্যে এ ধরনের আচরণ আলোকচিত্র ও অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্যে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আগে মানুষ ভাবত কর্মী মৌমাছিরা পুরুষ এবং ঘরে ফিরে এসে তাদেরকে একটি রাজা মৌমাছির কাছে জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়, কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন যা প্রমাণ করে শ্রমিক মৌমাছিরা স্ত্রী এবং তারা রাজা নয় বরং রাণী মৌমাছির কাছে জবাবদিহিতা করে। মৌমাছিদের বোধশক্তি ও তীক্ষè বুদ্ধি তাদের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সুন্দররূপে অনুমান করা যায়। এ দুর্বল প্রাণীর জীবন ব্যবস্থা মানুষের রাজনীতি ও শাসননীতির সাথে চমৎকার মিল রয়েছে। সমগ্র আইন-শৃঙ্খলা একটি বড় মৌমাছির হাতে থাকে এবং সেই হয় মৌমাছির শাসক।
আল্লাহ তা‘আলা এসব বর্ণনা করার পর বলছেন: এগুলোর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য। সুতরাং মানুষ যদি এ ছোট্ট প্রাণীকে নিয়ে চিন্তা করে তাহলে অনেক শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মৌমাছি একটি ছোট্ট প্রাণী, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অনেক উপকার করে থাকেন।
২. মধুর অনেক উপকারিতা রয়েছে।
৩. তিনটি জিনিসের দ্বারা আরোগ্য লাভ করা যায়।
৪. মৌমাছির মধ্যে মানব জাতির অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
অহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, এমন সূক্ষ্ম ও গোপন ইশারা, যা ইশারাকারী ও ইশারা গ্রহণকারী ছাড়া তৃতীয় কেউ টের পায় না। এ সম্পর্কের ভিত্তিতে এ শব্দটি ‘ইলকা’ (মনের মধ্যে কোন কথা নিক্ষেপ করা) ও ইলহাম (গোপন শিক্ষা ও উপদেশ দান করা) অর্থে ব্যবহৃত হয়। মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে যে শিক্ষা দান করেন তা যেহেতু কোন মকতব, স্কুল বা শিক্ষায়তনে দেয়া হয় না বরং এমন সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে দেয়া হয় যে, বাহ্যত কাউকে শিক্ষা দিতে এবং কাউকে শিক্ষা নিতে দেখা যায় না, তাই একে কুরআনে অহী, ইলকা ও ইলহাম শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে। এখন এ তিনটি শব্দ আলাদা আলাদা পরিভাষায় পরিণত হয়েছে। অহী শব্দটি নবীদের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। ইলহামকে আউলিয়া ও বিশেষ বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। আর ইলকা শব্দটি অপেক্ষাকৃত ব্যাপক অর্থবোধক এবং সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কিন্তু কুরআনে এ পারিভাষিক অর্থের পার্থক্যটা পাওয়া যায় না। এখানে আকাশের ওপরও অহী নাযিল হয় এবং সেই অনুযায়ী তার সব ব্যবস্থা পরিচালিত হয় (وَأَوْحَى فِي كُلِّ سَمَاءٍ أَمْرَهَا– حم السجده) পৃথিবীর ওপরও অহী নাযিল হয় এবং এর ইঙ্গিত পাওয়ার সাথে সাথেই সে নিজের কাহিনী শুনাতে থাকে (يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا – بِأَنَّ رَبَّكَ أَوْحَى لَهَا– الزلزل) ফেরেশতাদের ওপরও অহী নাযিল হয় এবং সেই মোতাবেক তারা কাজ করে (إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ–الانفال) মৌমাছিদেরকে তাদের সমস্ত কাজ অহীর (প্রকৃতিগত শিক্ষা) মাধ্যমে শেখানো হয়। আলোচ্য আয়াতে এ বিষয়টিই দেখা যাচ্ছে। আর এই অহী কেবলমাত্র মৌমাছি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নেই বরং মাছের সাঁতার কাটা, পাখির উড়ে চলা, নবজাত শিশুর দুধ পান করার বিষয়টাও আল্লাহর অহীই শিক্ষা দান করে। তাছাড়া চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা অনুসদ্ধান ছাড়াই একজন মানুষকে যে অব্যর্থ কৌশল বা নির্ভুল মত অথবা চিন্তা ও কর্মের সঠিক পথ বুঝানো হয় তাও অহী। (وَأَوْحَيْنَا إِلَى أُمِّ مُوسَى أَنْ أَرْضِعِيهِ– القصص) এ অহী থেকে কোন একজন মানুষও বঞ্চিত নয়। দুনিয়ায় যত নতুন নতুন উদ্ভাবন ও কল্যাণকর আবিষ্কার হয়েছে যত বড় বড় শাসক, বিজেতা, চিন্তানায়ক ও লেখক যুগান্তকারী ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কর্ম সম্পাদন করেছেন তার সবের পেছনেই এ অহীর কার্যকারিতা দেখা যায়। বরং সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত যে অভিজ্ঞতার সুম্মুখীন হয় তা হচ্ছে এই যে, কখনো বসে বসে একটি কথা মনে হলো অথবা কোন কৌশল মাথায় এলো কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখা দেলো এবং পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেলো যে, অদৃশ্য থেকে পাওয়া সেটি তার জন্য একটি সঠিক পথনির্দেশনা ছিল।
এ বিভিন্ন ধরনের অহীর মধ্যে নবীদেরকে যে অহী করা হতো সেটি ছিল একটি বিশেষ ধরনের অহী। এ অহীটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য অহী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এতে যাকে অহী করা হয় সে এ অহী আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন ও নিশ্চিত থাকে। এ অহী হয় আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও নির্দেশাবলী সংক্রান্ত। আর নবী এ অহীর মাধ্যমে মানব সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ দেবেন এটিই হয় এর নাযিল করার উদ্দেশ্য।
# ‘রবের তৈরী করা পথে’ বলে মৌমাছিদের একটি দল যে ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির আওতাধীনে কাজ করে সেই সমগ্র ব্যবস্থা ও কর্মপদ্ধতির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মৌচাকের আকৃতি ও কাঠামো, তাদের দল গঠন প্রক্রিয়া, তাদের বিভিন্ন কর্মীর মধ্যে কর্মবন্টন, তাদের আহার সংগ্রহের জন্য অবিরাম যাওয়া-আসা এবং তাদের নিয়ম মাফিক মধু তৈরী করে তা ক্রমাগত গুদামে সঞ্চয় করতে থাকা— এসব হচ্ছে সেই পথ যা তাদের রব তাদের কাজ করার জন্য এমনভাবে সুগম করে দিয়েছেন যে, তাদের কখনো এ ব্যাপারে নিজেদের চিন্তা-ভাবনা করার প্রয়োজন হয় না। এটা একটা নির্ধারিত ব্যবস্থা। এরই ভিত্তিতে একটি বাঁধাধরা নিয়মে এ অগণিত চিনিকলগুলো হাজার হাজার বছর ধরে কাজ করে চলছে।
# মধু যে একটি উপকারী ও সুস্বাদু খাদ্য তা কারোর অজানা নেই। তাই একথাটি এখানে উল্লেখ করা হয়নি। তাবে তার মধ্যে যে রোগ নিরাময় শক্তি আছে একথাটা তুলনামূলকভাবে একটি অজানা বিষয়। এজন্য একথাটা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। মধু প্রথমত কোন কোন রোগে এমনিতেই উপকারী। কেননা, তার মধ্যে রয়েছে ফুল ও ফলের রস এবং তাদের উন্নত পর্যায়ের গ্লুকোজ। তারপর মধুর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তা নিজে কখনো পচে না এবং অন্য জিনিসকেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত নিজের মধ্যে পচন থেকে সংরক্ষিত রাখে। এর ফলে ঔষধ তৈরী করার জন্য তার সাহায্য গ্রহণ করার মত যোগ্যতা তার মধ্যে সৃষ্টি হয়ে যায়। এজন্যই ঔষধ নির্মাণ শিল্পে অ্যাল-কোহলের পরিবর্তে মধুর ব্যবহার শত শত বছর থেকে চলে আসছে। তাছাড়া মৌমাছি যদি এমন কোন এলাকায় কাজ করে যেখানে কোন বিশেষ ধরনের বনৌষধি বিপুল পরিমাণ পাওয়া যায় তাহলে সেই এলাকার মধু নিছক মধুই হয় না বরং তা ঐ ঔষধির সর্বোত্তম উপাদান ধারণ করে এবং যে রোগের ঔষধ আল্লাহ ঐ ঔষধির মধ্যে তৈরী করেছেন তার জন্যও তা উপকারী হয়। যদি যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী মৌমাছিদের সাহায্যে এ কাজ করানো হয় এবং বিভিন্ন ঔষধি বৃক্ষের উপাদান তাদের সাহায্যে বের করে তাদের মধু আলাদা আলাদাভাবে সংরক্ষিত হয় তাহলে আমাদের মতে এ মধু ল্যাবরেটরিতে তৈরী উপাদানের চেয়ে বেশী উপকারী প্রমাণিত হবে।
# এ গোটা বর্ণনার উদ্দেশ্য হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত দ্বিতীয় অংশের সত্যতা সপ্রমাণ করা। দু’টি কারণেই কাফের ও মুশরিকরা তাঁর বিরোধিতা করতো। এক, তিনি পরকালীন জীবনের ধারণা পেশ করেন। এ ধারণা চরিত্র ও নৈতিকতার সমগ্র নকশাটাই বদলে দেয়। দুই, তিনি কেবল মাত্র এক আল্লাহকেই মাবুদ, আনুগত্য করার যোগ্য, সংকট থেকে উদ্ধারকারী ও ফরিয়াদ শ্রবণকারী গণ্য করেন। এর ফলে শিরক ও নাস্তিক্যবাদের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সমগ্র জীবন ব্যবস্থাটাই ভ্রান্ত গণ্য হয়। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের উপরোক্ত দু’টি অংশকে সত্য প্রমাণ করার জন্য এখানে বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকৃষ্ট করা হয়েছে। বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই যে, নিজের চারপাশের জগতের দিকে তাকিয়ে দেখো, সর্বত্র এই যে চিহ্নগুলো পাওয়া যাচ্ছে এগুলো কি নবীর বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করছে, না তোমাদের কাল্পনিক চিন্তা-ভাবনা ও কুসংস্কারকে সত্য প্রমাণ করছে? নবী বলেন, মরার পর তোমাদের আবার জীবিত করা হবে। তোমরা নবীর একথাকে একটি অসম্ভব কথা বলে গণ্য করছো। কিন্তু প্রতি বর্ষাকালে পৃথিবী এর প্রমাণ পেশ করে। সৃষ্টির পুনরাবর্তন কেবল সম্ভবই নয় বরং প্রতি বর্ষাকালে তোমাদের চোখের সামনে ঘটছে। নবী বলেন, এ বিশ্ব-জাহান আল্লাহবিহীন নয়। তোমাদের নাস্তিকরা একথাকে একটি প্রামণহীন দাবী মনে করছে। কিন্তু গবাদি পশুর গঠনাকৃতি, খেজুর ও আংগুরের উৎপাদন এবং মৌমাছির সৃষ্টি কৌশল একথার সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, একজন প্রাজ্ঞ ও করুণাময় রব এ জিনিসগুলোর নকশা তৈরী করেছেন। অন্যথায় এতগুলো পশু, এতসব গাছপালা এবং এত বিপুল সংখ্যক মৌমাছি মিলেমিশে মানুষের জন্য এ নানাবিধ উন্নতমানের, উৎকৃষ্ট, সুস্বাদু ও লাভজনক জিনিস প্রতিদিন যথানিয়মে তৈরী করে যাচ্ছে, এটা কেমন করে সম্ভব ছিল? নবী বলেন, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কেউ উপাস্য, মাবুদ এবং প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা লাভের হকদার নেই। তোমাদের মুশরিকরা একথায় নাক সিটকায় এবং নিজেদের বহু সংখ্যক উপাস্যের পূজাবেদীতে অর্ঘ ও উপঢৌকনাদি নিবেদন করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তোমরা নিজেরাই বলো, এ দুধ, খেজুর, আংগুর ও মধু এগুলো তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য, এ নিয়ামতগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কে তোমাদের দান করেছেন? কোন্ দেবী, দেবতা বা অলী তোমাদের আহার পৌঁছাবার এ ব্যবস্থা করেছেন?
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*মৌমাছি আল্লাহর এক বিস্ময়কর সৃষ্টি : এরপর কোরআন দৃষ্টি আকর্ষণ করছে আল্লাহর এক বিষ্ময়কর সৃষ্টির দিকে। এই সৃষ্টিকে আল্লাহ তায়ালা তার খলীফা মানবজাতির সেবায় নিয়ােজিত রেখেছেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘তােমার রব মৌমাছির কাছে নির্দেশ পাঠালেন, পাহাড় পবর্তসমূহের গায়ে, উঁচু গাছে এবং এমন… এই মৌমাছির পেট থেকে বের হয় এমন বিভিন্ন রংয়ের শরবত যার মধ্যে রয়েছে মানুষের জন্যে রােগ নিরাময়কারী ওষুধ। অবশ্যই এর মধ্যে রয়েছে সেই জাতির জন্যে নিদর্শন যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ অর্থাৎ, মৌমাছি সেই গােপন প্রাকৃতিক নির্দেশে চলাচল করে যা মহান সৃষ্টিকর্তা মজ্জাগতভাবে তার প্রকৃতির মধ্যে দান করেছেন। এই এলহাম (গােপন নির্দেশ)-ও এক প্রকার ওহী, যা যে কোনাে সময়ে যে কোনাে প্রাণীকে আল্লাহ তায়ালা দান করতে পারেন। এ এলহাম এক অত্যাশ্চর্য পন্থায় কাজ করে যা কোনাে মানুষের বুদ্ধি বা কোনাে ব্যক্তির ধারণা শক্তিতে বুঝে আসে না। তাকিয়ে দেখুন একবার মৌমাছির চাকের প্রতি-এর ঘরের নির্মাণ কৌশল ও মৌমাছির কর্ম বন্টনের দিকে। সেখানে এমন নিপুণতা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে যা মানুষের যে কোনাে নির্মাণ কুশলতা থেকে বেশী নিপুণ। আরাে তাকিয়ে দেখুন ফুলে ফুলে ঘুরে ঘুরে গুণ গুণ করে কী চমৎকারভাবে মৌমাছির দল মধু সংগ্রহ করে। এসব কিছুর মধ্যে এমন বিস্ময় বিরাজ করছে যা যে কোনাে সচেতন মানুষকে বিমুগ্ধ করে দেয় । আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কতাে মেহেরবানী যে তিনি এদের দ্বারা মধু সংগ্রহের জন্যে প্রকৃতির বুকে এমন সব ক্ষেত্রও সৃষ্টি করে রেখেছেন যাতে করে তার মধ্যে বিচরণ করে মৌমাছিরা স্বচ্ছ মধু সংগ্রহ করতে পারে। তারা আল্লাহর ইচ্ছাতেই মানুষের খেদমত করে। তারপর আল কোরআন জানাচ্ছে যে, মধূর মধ্যে মানুষের জন্যে রয়েছে আরােগ্য। এই কোরআনী কথার সত্যতা আজকে বহু চিকিৎসাবিদদের জ্ঞান গবেষণাতে ধরা পড়েছে। তাদের মধ্যে জনৈক বিশেষজ্ঞ এর ওপর গবেষণা চালাতে গিয়ে মুগ্ধ হয়ে যে তথ্যগুলাে পেশ করেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর।(ডঃ আবদুল ‘আযীম রচিত আল ইসলাম ওয়াতত্তিব্বুল হাদীস’ কিতাবটি দেখুন) এভাবে আল কোরআনের ওপর যতাে গবেষণা চালানাে হয়েছে মানুষ ততাে বেশী মুগ্ধ হয়েছে এবং তারা আল কোরআনে বর্ণিত প্রতিটি কথার সত্যতা মনে প্রাণে উপলব্ধি করতে পেরে ধন্য হয়েছেন। সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য জানুক আর না জানুক, বুঝুক আর না বুঝুক আল কোরআনে উল্লেখিত প্রত্যেকটি কথাকে সত্য জেনে তার ওপর গবেষণা করা, যতাে বেশী জ্ঞান গবেষণা চালানাে হবে তত বেশী সত্য উদ্ঘাটিত হবে এবং ততাে বেশী তার ঈমান মযবুত হতে থাকবে। আল কোরআনের ব্যাখ্যায় বহু হাদীস এসেছে, যার অধ্যয়নেও মােমেনরা নব নব দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। বুখারী ও মুসলিম শরীফের একটি হাদীসে জানা যায়, আবু সাঈদ(রা.) বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ(স.)-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বললাে, আমার ভাই এর পাতলা পায়খানা হচ্ছে। তখন রসূলুল্লাহ(স.) তাকে বললেন, ওকে মধু পান করাও। সে ফিরে গিয়ে তাকে মধু পান করালাে। তারপর সে ফিরে এসে বললাে, ইয়া রসূলাল্লাহ, তাকে মধু পান করিয়েছি, কিন্তু পায়খানা থামেনি, বরং আরাে বেড়ে গেছে। রসূলুল্লাহ(স.) আবার গিয়ে তার ভাইকে মধু পান করাতে বললেন। সে ফিরে গিয়ে আবারও তাকে মধু পান করালাে। কিছুক্ষণ পর সে ফিরে এসে বললাে ইয়া রাসূলাল্লাহ, আবারও পান করিয়েছি, কিন্তু পায়খানা আরাে বেড়ে গেছে। তখন রসূলুল্লাহ(স.) তাকে বললেন, আল্লাহ তায়ালা সত্য বলেছেন, কিন্তু তােমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলেছে। আবারও গিয়ে তােমার ভাইকে মধু পান করাও। সে গিয়ে আবারও তার ভাইকে মধু পান করালাে। তখন সে সুস্থ হয়ে উঠল। এ ঘটনা থেকে মধুর গুণ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ(স.)-এর নিশ্চিত বিশ্বাস সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে জানা গেল। উল্লেখিত ঘটনার প্রতিবারে মধু পান করানােতে পায়খানা বেড়ে যাওয়া সত্তেও রসূলুল্লাহ(স.)-এর নিশ্চিত বিশ্বাসে কোনাে ভাটা পড়েনি, বরং তিনি পরিপূর্ণ নিশ্চয়তার সাথে বারবার মধু পান করানাের জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন এবং অবশেষে তার নিশ্চিত জ্ঞান সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। এইভাবে, প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার যে, আল কোরআনে যেসব বিবরণ এসেছে তা সবই অকাট্য সত্য, যদিও বাহ্যিক অবস্থা সাময়িকভাবে কোনাে কোনাে সময়ে ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু অবশেষে আল কোরআনের কথা সত্যে পরিণত হবেই হবে, এতে কোনাে সন্দেহ নেই। আসুন, আমরা আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত এসব নেয়ামতের দিকে আবারও একবার তাকিয়ে দেখি ও চিন্তা করি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করানো, গোবর ও রক্তের মাঝখান থেকে দুধের প্রস্রবণ বেরিয়ে আসা, আংগুর ও খেজুর থেকে মাদক দ্রব্য এবং সুন্দর পানীয় প্রস্তুত করা এবং মৌমাছির পেট থেকে মধু নির্গত হওয়া। এসবগুলাে তাে সবই পবিত্র ও সুপেয় পানীয় যা বিপরীতধর্মী। বস্তুসমূহ থেকে নির্গত হয়। পান করার প্রসংগ যখন সামনে আসে তখন আমরা শুধু গৃহ পালিত পশুর কথাটিই চিন্তা করি। যে প্রক্রিয়ায় এসব পশুর পেট থেকে আমরা দুধ পাই সেগুলাের ওপর চিন্তা করলেই বাকি অন্যান্য সবগুলাের মাহাত্ম সহজেই আমাদের নযরে ধরা পড়বে। এর পরবর্তী পরিচ্ছেদে আমরা দেখতে পাবাে এসব থেকে আমরা আরাে কতাে কি পাই, যেমন পাই ঐসব জীবজন্তু থেকে চামড়া পশম ও চুল। জীব জন্তু থেকে মানুষের প্রয়ােজনে এসব জিনিসের ব্যবস্থা করা এটা এমন একটা বিষয় যার দিকে আল কোরআন ইংগিত করে মানুষকে আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন দেখাচ্ছে। মানুষের অন্তরের গভীরে রেখাপাত করার জন্যে জীবজন্তু, গাছপালা, ফলমূল মৌমাছি এবং স্বচ্ছ ও সুস্বাদু মধুর এসব দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সর্বাধিক উপযােগী, কারণ এ বিষয়গুলাে গভীরভাবে তাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে, তাদের বয়সের সর্বস্তরে এসবের প্রয়ােজন, পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার জন্যে প্রয়ােজনীয় যাবতীয় বিষয়ের সাথে রয়েছে এসবের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক, তাদের স্ত্রী-পুত্র পৌত্রাদি সবার জন্যে এসব কিছুর প্রয়ােজন একথাটা যত বেশী চিন্তা করা হবে ততােই হৃদয়কে নাড়া দিতে থাকবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬৮-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে ওয়াহী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইলহাম বা অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দেয়া। মৌমাছিদেরকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এটা বুঝিয়ে দেয়া হয় যে, ওরা যেন পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং (মানুষের বাড়ীর) ছাদে ওদের মৌচাক তৈরী করে। এই দুর্বল সৃষ্টজীবের ঘরটি দেখলে বিস্মিত হতে হয়! ওটা কতই না মজবুত, কতই না সুন্দর এবং কতই কারুকার্য খচিত!
অতঃপর মহান আল্লাহ মৌমাছিদেরকে হিদায়াত করেন যে, ওরা যেন ফল, ফুল এবং ঘাসপাতা হতে রস আহরণ করে ও যেখানে ইচ্ছা সেখানেই গমনাগমন করে। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের সময় যেন সরাসরি নিজেদের মৌচাকে পৌঁছে যায়। উঁচু পাহাড়ের চূড়া হোক, মরু প্রান্তর হোক, বৃক্ষ হোক, লোকালয় হোক, জনশূন্য স্থান ইত্যাদি যে স্থানই হোক না কেন ওরা পথ ভুলে না। যত দূরেই গমন করুক না কেন ওরা প্রত্যাবর্তন করে সরাসরি নিজেদের মৌচাকে নিজেদের বাচ্চা, ডিম ও মধুতে পৌঁছে যায়। ওরা ডানার সাহায্যে মোম তৈরী করে এবং মুখ দ্বারা জমা করে মধু।
(আরবি) এর তাফসীর ‘বশীভূত’ দ্বারাও করা হয়েছে। যেমন (আরবি) স্থলেও এটাই ভাবার্থ। সুতরাং (আরবি) এটা থেকে (আরবি) হবে এর একটি দলীল এটাও যে, লোকেরা মৌচাককে এক শহর হতে অন্য শহর পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট। অর্থাৎ (আরবি) এটা বা পথ হতে (আরবি) হয়েছে। ইমাম ইবনু জারীর (রাঃ) দুটোকেই সঠিক বলেছেন।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মাছির বয়স হলো চল্লিশ দিন। আর মৌমাছি ছাড়া সমস্ত মাছি আগুনে থাকবে।” (এ হাদীসটি আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মধু সাদা, হলদে লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ-এর হয়ে থাকে। ফল, ফুল ও মাটির রঙ-এর বিভিন্নতার কারণেই মধুর এই বিভিন্ন রং হয়ে থাকে। মধুর বাহ্যিক সৌন্দর্য ও চমকের সাথে সাথে ওর দ্বারা রোগ হতেও আরোগ্য লাভ হতে থাকে। আল্লাহ তাআলা এর দ্বারা বহু রোগ হতে আরোগ্য দান করে থাকেন। এখানে (আরবি) বলা হয় নাই। এরূপ বললে এটা সমস্ত রোগের আরোগ্য দানকারী রূপে সাব্যস্ত হতো। বরং (আরবি) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এতে লোকদের জন্যে শিফা রোগের আরোগ্য) রয়েছে। এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের প্রতিষেধক। ঔষধ সব সময় রোগের বিপরীত হয়ে থাকে। মধু গরম, কাজেই এটা ঠাণ্ডা লাগা রোগের জন্যে উপকারী। মুজাহিদ (রঃ) এবং ইবনু জারীর (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা কুরআন কারীমকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কুরআনে শিফা রয়েছে। এ উক্তিটি আপন স্থানে সঠিক বটে, কিন্তু এখানে তো মধুর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ফলে এখানে মুজাহিদের (রঃ) উক্তির অনুসরণ করা হয়নি। হ্যা, তবে কুরআনের শিফা হওয়ার বর্ণনা অন্য জায়গায় দেয়া হয়েছে। যেমনঃ (১৭:৮২) এই আয়াতে এবং (আরবি) এই আয়াতে (আরবি) আল্লাহ পাকের এই উক্তিতে দ্বারা যে মধু উদ্দেশ্য তার দলীল হচ্ছে নিম্নের হাদীসঃ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে এসে বললোঃ “আমার ভাই-এর পেট ছুটে গিয়েছে। (অর্থাৎ খুব পায়খানা হচ্ছে)।” তিনি বলেনঃ “তাকে মধু পান করিয়ে দাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। আবার সে আসলো এবং বললোঃ “হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! তার রোগ তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি এবারও বললেনঃ “যাও, তাকে মধু পান করাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান। করালো। পুনরায় এসে সে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তার পায়খানা তো আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।” তিনি বললেনঃ “আল্লাহ সত্যবাদী এবং তোমার ভাই-এর পেট মিথ্যাবাদী। তুমি যাও এবং তাকে মধু পান করাও।” সে গেল এবং তাকে মধু পান করালো। এবার সে সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করলো। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁদের সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা)
কোন কোন ডাক্তার মন্তব্য করেছেন যে, সম্ভবতঃ ঐ লোকটির পেটে ময়লা আবর্জনা খুব বেশী ছিল। মধুর গরম গুণের কারণে ওগুলি হজম হতে থাকে। ফলে ঐ ময়লা আবর্জনা ও উচ্ছিষ্ট অংশগুলি বেরিয়ে যেতে শুরু করে। কাজেই পাতলা মল খুব বেশী হয়ে বেরিয়ে যায়। বেদুঈন ওটাকেই রোগ বৃদ্ধি বলে মনে করে এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট অভিযোগ করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে আরো মধু পান করাতে বলেন। এতে ময়লা আবর্জনা পাতলা মলরূপে আরো বেশী হয়ে নামতে শুরু করে। পুনরায় মধু পান করানোর পর পেট সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়ে যায় এবং সে পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে। ফলে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কথা, যা তিনি আল্লাহ তাআলার ইঙ্গিতেই বলেছিলেন, সত্য প্রমাণিত হয়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)হাওয়া ও মধু খুব ভালবাসতো। (এ হাদীসটিও সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, কিন্তু এটা সহীহ বুখারীর শব্দ)
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিনটি জিনিসে শিফা বা রোগ মুক্তি রয়েছে। শিঙ্গা লাগানো মধুপান এবং (গরম লোহা দ্বারা) দাগ দিয়ে নেয়া। কিন্তু আমার উম্মতকে আমি দাগ নিতে নিষেধ করছি।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “তোমাদের ওষুধগুলির মধ্যে কোন গুলিতে যদি শিফা’ থেকে থাকে তবে সেগুলি হচ্ছে শিঙ্গা লাগানো, মধুপান এবং আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়া, যেটা যে রোগের জন্যে উপযুক্ত। তবে আমি দাগিয়ে নেয়াকে পছন্দ করি না।” (এ হাদীসটিও সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “আগুন দ্বারা দাগিয়ে নেয়াকে আমি অপছন্দ করি, বরং পছন্দ করি না)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “রোগের আরোগ্যদানকারী দুটি জিনিসকে তোমরা নিজেদের উপর অপরিহার্য করে নাও। সে দু’টি জিনিস হচ্ছে মধু ও কুরআন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী ইবনু আবি তালিব, (রাঃ) বলেনঃ “তোমাদের কেউ যদি তার রোগের শিফা চায়, তবে সে যেন কুরআনের কোন আয়াতকে একটি সহীফায় লিখে নেয় এবং ওটাকে বৃষ্টির পানি দ্বারা ধৌত করে। অতঃপর তার স্ত্রীর নিকট থেকে একটা দিরহাম রৌপ্য মুদ্রা চেয়ে নেয় যা সে সন্তুষ্ট চিত্তে প্রদান করবে। তারপর ঐ দিরহাম দ্বারা কিছু মধু কিনে নেয় এবং তা পান করে। এইভাবে কয়েকটি কারণে এর দ্বারা শিফা পাওয়া যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি কুরআনে ওটা নাযিল করেছি যা মুমিনদের জন্যে শিফা (রোগমুক্তি) ও রহমত স্বরূপ।” (১৭:৮২) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি আকাশ হতে বরকতময় পানি বর্ষিয়ে থাকি।” (৫০:৯) আর এক জায়গায় বলেছেন (আরবি) অর্থাৎ যদি তারা (তোমাদের স্ত্রীরা) মহরের কিয়দাংশ ছেড়ে দেয় তবে তা তোমরা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।” (৪:৪) মধুর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ এতে (মধুতে) লোকদের জন্যে শিফা রয়েছে।” (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকালে মধু চেটে নেয় তার উপর কোন বড় বালা মসীবত আসে না। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন। এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যুবাইর ইবনু সাঈদ এবং তার বর্ণিত হাদীস পরিত্যাজ্য)
আবু উবাই ইবনু উম্মি হারাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “তোমরা (আরবি) ও (আরবি) ব্যবহার কর। কেননা, এতে প্রত্যেক রোগের শিফা’ রয়েছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ (আরবি) এর অর্থ কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “মৃত্যু”। (এ হাদীসটিও ইমাম ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন)
কেউ কেউ বলেছেন যে, (আরবি) ঐ মধুকে বলা হয় যা ঘিয়ের মশকে রাখা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে! অর্থাৎ হে মানব মণ্ডলী! মৌমাছির মত অতি দুর্বল ও শক্তিহীন প্রাণী তোমাদের জন্যে মধু ও মোম তৈরী করা, স্বাধীনভাবে বিচরণ করা এবং বাসস্থান ভুল না করা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যারা চিন্তা গবেষণা করে তাদের জন্যে এতে আমার শ্রেষ্ঠত্ব এবং আধিপত্যের বড় নিদর্শন রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ মহান আল্লাহর বিজ্ঞানময়, জ্ঞানী, দাতা এবং দয়ালু হওয়ার দলীল লাভ করতে পারে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 68-69
[ وَ اَوۡحٰی رَبُّکَ اِلَی النَّحۡلِ
Your Lord inspired to the bee,]
In the Bee and its Honey there is Blessing and a Lesson
Allah says,
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ
ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ
And your Lord inspired the bee, saying:”Take you habitations in the mountains and in the trees and in what they (humans) erect. Then, eat of all fruits,
What is meant by inspiration here is guidance.
The bee is guided to make its home in the mountains, in trees and in structures erected by man.
The bee’s home is a solid structure, with its hexagonal shapes and interlocking forms there is no looseness in its combs. Then Allah decrees that the bee will have permission to eat from all fruits and to follow the ways which Allah has made easy for it, wherever it wants to go in the vast spaces of the wilderness, valleys and high mountains. Then each bee comes back to its hive without swerving to the right or left, it comes straight back to its home where its offspring and honey are. It makes wax from its wings, and regurgitates honey from its mouth, and lays eggs from its rear, then the next morning it goes out to the fields again.
فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلً
and follow the routes of your Lord made easy (for you),
Qatadah and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said:
“This means, in an obedient way,”
understanding it to be a description of the route of migration.
Ibn Zayd said that this is like the Ayah:
وَذَلَّلْنَـهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُونَ
And We have subdued them for them so that some they may ride and some they may eat. (36:72)
He said:
“Do you not see that they move the bees’ home from one land to another, and the bees follow them!”
The first opinion is clearly the more likely, as it describes the routes that the bees follow, i.e., `follow these routes as they are easy for you.’
This was stated by Mujahid.
Ibn Jarir said that both opinions are correct.
يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
There comes forth from their bellies, a drink of varying colors, wherein is healing for men.
meaning, honey, that is white, yellow, red, or of other good colors, depending on the different things that the bees eat.
فِيهِ شِفَاء لِلنَّاسِ
in which there is a cure for men.
meaning there is a cure in honey for diseases that people suffer from.
Some of those who spoke about the study of Prophetic medicine said that;
if (Allah) had said, `in which there is the cure for men’, then it would be the remedy for all diseases,
but He said, `in which there is a cure for men’, meaning that it is the right treatment for every “cold” disease, because it is “hot”, and a disease should be treated with its opposite.
Al-Bukhari and Muslim recorded in their Sahihs from Qatadah from Abu Al-Mutawakkil Ali bin Dawud An-Naji from Abu Sa`id Al-Khudri that;
a man came to the Messenger of Allah and said, “My brother is suffering from diarrhea.”
He said,
اسْقِهِ عَسَلً
(Give him honey to drink).
The man went and gave him honey, then he came back and said, “O Messenger of Allah! I gave him honey to drink, and he only got worse.”
The Prophet said,
اذْهَبْ فَاسْقِهِ عَسَلً
Go and give him honey to drink.
So he went and gave him honey, then he came back and said, “O Messenger of Allah! it only made him worse.”
The Prophet said,
صَدَقَ اللهُ وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيكَ اذْهَبْ فَاسْقِهِ عَسَلً
Allah speaks the truth and your brother’s stomach is lying. Go and give him honey to drink.
So he went and gave him honey, and he recovered.”
It is reported in the Two Sahihs from A’ishah, may Allah be pleased with her, that the Messenger of Allah used to like sweet things and honey.
This is the wording of Al-Bukhari, who also reported in his Sahih from Ibn Abbas that the Messenger of Allah said:
الشِّفَاءُ فِي ثَلَثَةٍ
فِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ
أَوْ شَرْبَةِ عَسَلٍ
أَوْ كَيَّةٍ بِنَارٍ
وَأَنْهَى أُمَّتِي عَنِ الْكَي
Healing is to be found in three things:
the cut made by the cupper, or
drinking honey, or
in branding with fire (cauterizing),
but I have forbidden my Ummah to use branding.
إِنَّ فِي ذَلِكَ لايَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
There is indeed a sign in that for people who reflect.
meaning in the fact that Allah inspires this weak little creature to travel through the vast fields and feed from every kind of fruit, then gather it for wax and honey, which are some of the best things, in this is a sign for people who think about the might and power of the bee’s Creator Who causes all of this to happen.
From this they learn that He is the Initiator, the All-Powerful, the All-Wise, the All-Knowing, the Most Generous, the Most Merciful.