أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 817)[৯৯% খুতবায় আমরা যে কথা বলি।]
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ ]
নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা,সদাচরণন নির্দেশ দেন।
Verily, Allah orders justice and kindness,]
www.motaher21.net
اِنَّ اللّٰہَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ یَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۹۰﴾
নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।
Indeed, Allah orders justice and good conduct and giving to relatives and forbids immorality and bad conduct and oppression. He admonishes you that perhaps you will be reminded.
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৯০ নং আয়াত:-
[৯৯% খুতবায় আমরা যে কথা বলি।]
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ ]
নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা,সদাচরণন নির্দেশ দেন।
Verily, Allah orders justice and kindness,]
www.motaher21.net
৯০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ ছোট্ট বাক্যটিতে এমন তিনটি জিনিসের হুকুম দেয়া হয়েছে যেগুলোর ওপর সমগ্র মানব সমাজের সঠিক অবকাঠামোতে ও চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত থাকা নির্ভরশীল।
প্রথম জিনিসটি হচ্ছে আদল বা ন্যায়পরতা। দু’টি স্থায়ী সত্যের সমন্বয়ে এর ধারণাটি গঠিত। এক, লোকদের মধ্যে অধিকারের ক্ষেত্রে ভারসাম্য ও সমতা থাকতে হবে। দুই, প্রত্যেককে নির্দ্বিধায় তার অধিকার দিতে হবে। আমাদের ভাষায় এ অর্থ প্রকাশ করার জন্য “ইনসাফ” শব্দ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এ শব্দটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ থেকে অনর্থক এ ধারণা সৃষ্টি হয় যে, দু’ব্যক্তির মধ্যে “নিসফ” “নিসফ” বা আধাআধির ভিত্তিতে অধিকার বন্টিত হতে হবে। তারপর এ থেকেই আদল ও ইনসাফের অর্থ মনে করা হয়েছে সাম্য ও সমান ভিত্তিতে অধিকার বণ্টন। এটি সম্পূর্ণ প্রকৃতি বিরোধী। আসলে “আদল” সমতা বা সাম্য নয় বরং ভারসাম্য ও সমন্বয় দাবী করে। কোন কোন দিক দিয়ে “আদল” অবশ্যই সমাজের ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সাম্য চায়। যেমন নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে। কিন্তু আবার কোন কোন দিক দিয়ে সাম্য সম্পূর্ণ “আদল” বিরোধী। যেমন পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে সামাজিক ও নৈতিক সাম্য এবং উচ্চ পর্যায়ের কর্মজীবি ও নিম্ন পর্যায়ের কর্মজীবীদের মধ্যে বেতনের সাম্য। কাজেই আল্লাহ যে জিনিসের হুকুম দিয়েছেন তা অধিকারের মধ্যে সাম্য নয় বরং ভারসাম্য ও সমন্বয় প্রতিষ্ঠা। এ হুকুমের দাবী হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আইনগত, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার পূর্ণ ঈমানদারীর সাথে আদায় করতে হবে।
দ্বিতীয় জিনিসটি হচ্ছে ইহ্সান বা পরোপকার তথা সদাচার, ঔদার্যপূর্ণ ব্যবহার, সহানুভূতিশীল আচরণ, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা পারস্পরিক সুযোগ সুবিধা দান, একজন অপর জনের মর্যাদা রক্ষা করা, অন্যকে তার প্রাপ্যের চেয়ে বেশী দেয়া এবং নিজের অধিকার আদায়ের বেলায় কিছু কমে রাযী হয়ে যাওয়া— এ হচ্ছে আদলের অতিরিক্ত এমন একটি জিনিস যার গুরুত্ব সামষ্টিক জীবনে আদলের চাইতেও বেশী। আদল যদি হয় সমাজের বুনিয়াদ তাহলে ইহসান হচ্ছে তার সৌন্দর্য ও পূর্ণতা। আদল যদি সমাজকে কটুতা ও তিক্ততা থেকে বাঁচায় তাহলে ইহসান তার মধ্যে সমাবেশ ঘটায় মিষ্ট মধুর স্বাদের। কোন সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বক্ষণ তার অধিকার কড়ায় গণ্ডায় মেপে মেপে আদায় করতে থাকবে এবং তারপর ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ অধিকার আদায় করে নিয়েই তবে ক্ষান্ত হবে, আবার অন্যদিকে অন্যদের অধিকারের পরিমাণ কি তা জেনে নিয়ে কেবলমাত্র যতটুকু প্রাপ্য ততটুকুই আদায় করে দেবে, এরূপ কট্টর নীতির ভিত্তিতে আসলে কোন সমাজ টিকে থাকতে পারে না। এমনি ধরনের একটি শীতল ও কাঠখোট্টা সমাজে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত থাকবে না ঠিকই কিন্তু ভালবাসা, কৃতজ্ঞতা, ঔদার্য, ত্যাগ, আন্তরিকতা, মহানুভবতা ও মঙ্গলাকাংখার মত জীবনের উন্নত মূল্যবোধগুলোর সৌন্দর্য সুষমা থেকে সে বঞ্চিত থেকে যাবে। আর এগুলোই মূলত এমন সব মূল্যবোধ যা জীবনে সুন্দর আবহ ও মধুর আমেজ সৃষ্টি করে এবং সামষ্টিক মানবীয় গুণাবলীকে বিকশিত করে।
তৃতীয় যে জিনিসটির এ আয়াতে হুকুম দেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করা এবং তাদের সাথে সদাচার করা। এটি আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ইহসান করার একটি বিশেষ ধরণ নির্ধারণ করে। এর অর্থ শুধু এই নয় যে, মানুষ নিজের আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, দুঃখে ও আনন্দে তাদের সাথে শরীক হবে এবং বৈধ সীমানার মধ্যে তাদের সাহায্যকারী ও সহায়ক হবে। বরং এও এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত যে, প্রত্যেক সমর্থ ব্যক্তি নিজের ধন-সম্পদের ওপর শুধুমাত্র নিজের ও নিজের সন্তান-সন্ততির অধিকার আছে বলে মনে করবে না বরং একই সঙ্গে নিজের আত্মীয়-স্বজনদের অধিকারও স্বীকার করবে। আল্লাহর শরীয়াত প্রত্যেক পরিবারের সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের ওপর এ দায়িত্ব অর্পণ করেছে যে, তাদের পরিবারের অভাবী লোকেরা যেন অভুক্ত ও বস্ত্রহীন না থাকে। তার দৃষ্টিতে কোন সমাজের এর চেয়ে বড় দুর্গতি আর হতেই পারে না যে, তার মধ্যে বসবাসকারী এক ব্যক্তি প্রাচুর্যের মধ্যে অবস্থান করে বিলাসী জীবন যাপন করবে এবং তারই পরিবারের সদস্য তার নিজের জ্ঞাতি ভাইয়েরা ভাত-কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকবে। ইসলাম পরিবারকে সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গণ্য করে এবং এক্ষেত্রে এ মূলনীতি পেশ করে যে, প্রত্যেক পরিবারের গরীব ব্যক্তিবর্গের প্রথম অধিকার হয় তাদের পরিবারের সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের ওপর, তারপর অন্যদের ওপর তাদের অধিকার আরোপিত হয়। আর প্রত্যেক পরিবারের সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের ওপর প্রথম অধিকার আরোপিত হয় তাদের গরীব আত্মীয়-স্বজনদের, তারপর অন্যদের অধিকার তাদের ওপর আরোপিত হয়। এ কথাটিই নবী ﷺ তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। তাই বিভিন্ন হাদীসে পরিষ্কার বলে দেয়া হয়েছে, মানুষের ওপর সর্বপ্রথম অধিকার তার পিতা-মাতার, তারপর স্ত্রী-সন্তানদের, তারপর ভাই-বোনদের, তারপর যারা তাদের পরে নিকটতর এবং তারপর যারা তাদের পরে নিকটতর। এ নীতির ভিত্তিতেই হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি ইয়াতীম শিশুর চাচাত ভাইদেরকে তার লালন পালনের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে বাধ্য করেছিলেন। তিনি অন্য একজন ইয়াতীমের পক্ষে ফায়সালা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, যদি এর কোন দূরতম আত্মীয়ও থাকতো তাহলে আমি তার ওপর এর লালন পালনের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিতাম। অনুমান করা যেতে পারে, যে সমাজের প্রতিটি পরিবার ও ব্যক্তি (Unit) এভাবে নিজেদের ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব নিজেরাই নিয়ে নেয় সেখানে কতখানি অর্থনৈতিক সচ্ছলতা, কেমন ধরনের সামাজিক মাধুর্য এবং কেমনতর নৈতিক ও চারিত্রিক পুতঃ পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে।
# ওপরের তিনটি সৎ কাজের মোকাবিলায় আল্লাহ তিনটি অসৎ কাজ করতে নিষেধ করেন। এ অসৎকাজগুলো ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যক্তিবর্গকে এবং সামষ্টিক পর্যায়ে সমগ্র সমাজ পরিবেশকে খারাপ করে দেয়।
প্রথম জিনিসটি হচ্ছে অশ্লীলতা-নির্লজ্জতা (فَحْشَاءِ) । সব রকমের অশালীন, কদর্য ও নির্লজ্জ কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। এমন প্রত্যেকটি খারাপ কাজ যা স্বভাবতই কুৎসিত, নোংরা, ঘৃণ্য ও লজ্জাকর। তাকেই বলা হয় অশ্লীলতা। যেমন কৃপণতা, ব্যভিচার, উলংগতা, সমকামিতা, মুহররাম আত্মীয়কে বিয়ে করা, চুরি, শরাব পান, ভিক্ষাবৃত্তি, গালাগালি করা, কটু কথা বলা ইত্যাদি। এভাবে সর্ব সম্মুখে বেহায়াপনা ও খারাপ কাজ করা এবং খারাপ কাজকে ছড়িয়ে দেয়াও অশ্লীলতা-নির্লজ্জতার অন্তর্ভুক্ত। যেমন মিথ্যা প্রচারণা, মিথ্যা দোষারোপ, গোপন অপরাধ জনসমক্ষে বলে বেড়ানো, অসৎকাজের প্ররোচক গল্প, নাটক ও চলচ্চিত্র, উলংগ চিত্র, মেয়েদের সাজগোজ করে জনসমক্ষে আসা, নারী পুরুষ প্রকাশ্যে মেলামেশা এবং মঞ্চে মেয়েদের নাচগান করা ও তাদের শারীরিক অংগভংগীর প্রদর্শনী করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে দুষ্কৃতি (مُنْكَرِ) । এর অর্থ হচ্ছে এমন সব অসৎ কাজ যেগুলোকে মানুষ সাধারণভাবে খারাপ মনে করে থাকে, চিরকাল খারাপ বলে আসছে এবং আল্লাহর সকল শরীয়াত যে কাজ করতে নিষেধ করেছে।
তৃতীয় জিনিসটি জুলুম-বাড়াবাড়ি (بَغْيِ) । এর মানে হচ্ছে, নিজের সীমা অতিক্রম করা এবং অন্যের অধিকার তা আল্লাহর হোক বা বান্দার হোক লংঘন করা ও তার ওপর হস্তক্ষেপ করা।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা (৯০-১১১) : এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেয়া জীবন বিধানের মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মৌলিক কথাগুলােকে সংক্ষেপে তুলে ধরা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিচ্ছেন ন্যায়বিচার ও এহসান করার জন্যে। তিনি আরাে হুকুম দিয়েছেন আত্মীয়স্বজনকে দান করার জন্যে। আর নিষেধ করছেন লজ্জাকর, অপ্রিয় এবং বিদ্রোহাত্মক কাজ করতে…. (সেই দিনের কথা স্মরণ করা দরকার) যেদিন প্রত্যেক ব্যক্তি একমাত্র নিজের ব্যাপারেই আবেদন নিবেদন করতে থাকবে। সে দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কৃতকর্মেরই ফল যথাযথভাবে দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি কোনাে প্রকার যুলুম করা হবে না।'(আয়াত ৯০-১১১) পেছনের আলােচনাটি শেষ হলাে একথার ওপর যে, ‘আমি, নাযিল করেছি তােমার কাছে আল কিতাব (যা লিখিত রয়েছে সপ্ত আকাশের ওপরে চিরস্থায়ী ফলকে) যা সবকিছুর ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত কিতাব (হিসাবে দুনিয়া বিলীন না হওয়া পর্যন্ত চিরদিন অবিকৃত অবস্থায়। সুরক্ষিত থাকবে) এবং এ কিতাব হেদায়াত রহমত ও মুসলমানদের জন্যে সুসংবাদ দানকারী। আলােচ্য এই অধ্যায়টিতে হেদায়াত রহমত ও সুসংবাদ দিতে গিয়ে যে বিস্তারিত বিবরণ এই আল কিতাবে এসেছে তার কিছু অংশ পেছনের অধ্যায়টিতেও আলােচিত হয়েছে। আর বর্তমান অধ্যায়ে এসেছে কিছু কিছু বিবরণ, হেদায়াত রহমত ও সুসংবাদ সম্পর্কিত কিছু কথা, ন্যায় বিচার, এহসান ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করা সম্পর্কিত নির্দেশ এবং লজ্জাকর কাজ ও ব্যবহার, অপ্রিয় আচরণ ও বিদ্রোহাত্মক ব্যবহার করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে আরাে এসেছে ওয়াদা পূরণ করার নির্দেশ এবং পাকাপাকিভাবে চুক্তি করা হলে তা পূরণ করার হুকুমও এসেছে, আর অবশ্য অবশ্যই এ গুণগুলাে সেসব প্রধান ও মৌলিক নীতি যা মানুষের মধ্যে গড়ে তােলার লক্ষ্যে এই আল কিতাব নাযিল হয়েছে। আর এর মধ্যে রয়েছে চুক্তি ভংগের জন্যে নির্ধারিত শাস্তির বিবরণ ধােকা দেয়া ও বিভ্রান্ত করার জন্যে কসম খাওয়া হলে তার শাস্তির কথা, আর তা হবে অবশ্যই বড় কঠিন শাস্তি। অপরদিকে, যারা বিপদ আপদে সবর করেছে অবিচল থেকেছে এবং সদাসর্বদা আত্মসংযম করেছে তাদের জন্যে রয়েছে মহা সুসংবাদ তাদের কৃতকর্মের উচিত পাওনা থেকেও তাদেরকে অধিক ও উত্তম প্রতিদান দেয়া হবে। এরপর এ পবিত্র কিতাব পাঠ করার জন্যে কিছু আদব-কায়দা শেখানাে হয়েছে, আর তা হচ্ছে-আল কোরআন যখন পড়া হবে তখন যেন মরদূদ শয়তানের ধােকা থেকে বাঁচার জন্যে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয়, যাতে করে কোরআনুল কারীম যেখানে পাঠ করা হয় সেখানে শয়তান কোনাে প্রকার বাধা সৃষ্টি করতে না পারে, যেমন এ কিতাব সম্পর্কে কোনা কোনাে মােশরেক ব্যক্তি কিছু কিছু বিভ্রান্তিকর উক্তি করেছে। ওদের মধ্যে কেউ কেউ রসূলুল্লাহ(স.) কে দোষারােপ করছে ও এই বলে গালি দিচ্ছে যে, তিনি আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে মন গড়া কথা বলছেন, অর্থাৎ যা তিনি বলছেন তা আল্লাহর কথা নয়, বরং সেগুলাে হচ্ছে তার নিজের মন থেকে বানানাে কথা, আবার কেউ কেউ এমন কথাও বলছে যে, একজন অনারব ছেলে তাকে এ কোরআন শিক্ষা দিচ্ছে। এ পাঠের শেষের দিকে যারা ঈমান আনার পর কুফরী করবে তাদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তবে কোনাে ব্যক্তিকে কুরী করার জন্যে যদি বাধ্য করা হয় এবং তার অন্তর যদি ঈমানের মহব্বতে পরিপূর্ণ থাকে, অথবা দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করার কারণে যদি কোনাে ব্যক্তি নানা প্রকার যুলুম ও বিপদ আপদের সম্মুখীন হয়, আর এ কারণে যদি তারা হিজরত করে ও আল্লাহর পথে টিকে থাকতে গিয়ে তাকে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করতে হয়, তাহলে অবশ্যই তাকে যথাযথ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। এগুলাে সবই দৃষ্টান্ত হেদায়াত, রহমত মুসলমানদের জন্যে এক মহা সুসংবাদ। *তাফসীর : এ অধ্যায়ে এরশাদ হয়েছে, সামাজিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর নির্দেশ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা হুকুম দিচ্ছেন সুবিচার করতে, এহসান করতে এবং আত্মীয়স্বজনকে দান করতে, আর নিষেধ করছেন লজ্জাকর কাজ করতে, বর্জন করতে সেসব কাজ যা আল্লাহ ও সকল মানুষের কাছে অপ্রিয় এবং নিষেধ করছেন বিদ্রোহাত্মক কাজ করতে আর আল্লাহ তায়ালা চাইলে অবশ্যই তােমাদেরকে একটি মাত্র জাতিতে পরিণত করতে পারতেন, কিন্তু (তিনি তা চাননি, বরং) তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি সঠিক পথ দেখান। আর অবশ্যই তােমাদেরকে কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ওই সব বিষয়ে যা তােমরা (পৃথিবীর বুকে) করতে।’ অবশ্যই এই মহান কিতাব এক স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত জাতি গড়ে তুলতে চেয়েছে, চেয়েছে একটি সুগঠিত সমাজ গড়তে যাতে শান্তিপূর্ণ এক নতুন জগত এবং অনবদ্য ও সুন্দর এক ব্যবস্থা গড়ে তােলা যায় এ পাক কালাম বিশ্বজনীন এক দাওয়াত নিয়ে এসেছে, যেখানে গােত্রে গােত্রে হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না। থাকবে না, অপরকে ছােটো করে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্যে জাতিতে জাতিতে হানাহানি। সঠিক আকীদা বিশ্বাসের ভিত্তিতে সেখানে গড়ে উঠবে পরিবার, গােত্র, দল ও সমাজ, এ আকীদার কারণেই মানুষে মানুষে সম্পর্ক, জাতীয়তা এবং আত্মীয়তা গড়ে উঠবে। এই লক্ষ্যেই এমন সব মূলনীতি এসেছে যা দলীয় সংহতি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করেছে এবং এ কিতাবের মাধ্যমেই এক দলের সাথে অপর দলের সহ অবস্থান ও পারস্পরিক হৃদ্যতাপূর্ণ যােগাযােগ সম্ভব হয়েছে। ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে গােত্রগুলাের মধ্যে পারস্পরিক সহযােগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লেনদেনের মধ্যে ওয়াদা ও আস্থার বিনিময় হয়েছে। এ ব্যবস্থা এক ‘সুবিচার’ ও ভারসাম্যপূর্ণ মূলনীতি নিয়ে এসেছে, যার কারণে ব্যক্তি, গােত্র, দল ও সমাজের মধ্যে এমন এক ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তােলা সম্ভব হয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তি সেথায় তার ন্যায্য অধিকার ও স্বাধীনতা পুরােপুরিই ভােগ করে, সেখানে স্বেচ্ছাচারিতা ও কুপ্রবৃত্তির তাড়নে অপরের অধিকার নষ্ট করার মতাে কোনাে সুযোগ নেই, হিংসা-বিদ্বেষের কারণে বংশীয় সম্প্রীতি ও আত্মীয়তা নষ্ট হওয়ারও কোনাে সম্ভাবনা নেই। আল্লাহর মহব্বতে এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনের অভিলাসে সেখানে নির্দিষ্ট এক নীতি মেনে চলা হয় এবং মানুষে মানুষে ইনসাফ গড়ে ওঠে। আবার খেয়াল করে দেখুন, ইনসাফ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারের সাথে সাথেই আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে অপরের সাথে এহসানপূর্ণ ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এহসান বলতে বুঝায়, যার যা ন্যায্য পাওনা তাকে সেটা পুরােপুরি বুঝিয়ে দিয়ে মহব্বতের সাথে তাকে আর একটু বেশী দেয়া এবং এতােটা বেশী দেয়া যেন গ্রহীতা দাতার মহানুভবতা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে, এর ফলে গ্রহীতার হৃদয়ে দাতার জন্যে মহব্বতের দীর্ঘস্থায়ী এক ছাপ পড়ে, যা সে সহজে ভুলতে পারে না এবং যে কোনােডাবে এ সদ্ব্যবহার ও সহৃদয়তার কিছু না কিছু বিনিময় দেয়ার জন্যে তার হৃদয় উদগ্রীব হয়ে থাকে, তাই দেখা যায় এহসান মানুষে মানুষে রেষারেষির দ্বার বন্ধ করে দেয় এবং শয়তানের প্ররােচণায় পড়ে অপরকে ঠকিয়ে বা অপরকে ছােট করে নিজে বেশী পাওয়া বা নিজের স্থানকে সংহত করার প্রবণতা দমে যেতে বাধ্য হয়, প্রকারান্তরে এহসান অন্তরের ব্যাধির জন্য এক মিষ্টি দাওয়াই হিসবে কাজ করে। সুতরাং, যে কোনাে ব্যক্তি অন্তরের ক্ষত বা রােগ ব্যাধির নিরাময় চায় অথবা মানুষের হৃদয়ের আসনে নিজের আসনকে নিশ্চিত করতে চায় সে অবশ্যই যেন কিছু না কিছু এহসান করে, অর্থাৎ বস্তু বা ব্যবহার দিয়ে মানুষকে তার ন্যায্য পাওনা থেকে উল্লেখযােগ্য মাত্রায় যেন কিছু বেশী দেয়। অবশ্য ওপরে বর্ণিত অর্থের চাইতে এহসানের অর্থ আরাে অনেক ব্যাপক, যেমন প্রতিটি ভাল ও পবিত্র কাজই এহসান (যার দ্বারা মানুষের কিছু না কিছু উপকার হয়) তার এহসানের নির্দেশ দান বলতে প্রত্যেক ওই কাজ ও লেনদেন করার হুকুমকে বুঝায় যা সুদীর্ঘ এ জীবনের সবটুকু অংশের মধ্যে পরম করুণাময় আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ককে ঘনিষ্ট করে তােলে, পরিবারের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ায়, দলীয় জীবনে সংহতি আনে এবং মানব জীবনের বৃহত্তর পরিসরে আনে উদারতা ও মহানুভবতা। (কোনাে কোনাে তাফসীরে বলা হয়েছে, আদল হচ্ছে কর্তব্য পালন, অর্থাৎ যার যা ন্যায্য পাওনা তাকে তা বুঝিয়ে দেয়া এবং নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা, আর এহসান হচ্ছে নফল বা অতিরিক্ত কাজ বা ব্যবহার যা যে কোনাে মানুষের হদয়কে ও সকল মানুষের যিনি মালিক তাকে সন্তুষ্ট করে। এর প্রমাণ স্বরূপ বলা যায় যে, এ আয়াতটি হচ্ছে মক্কী জীবনে অবতীর্ণ, এসময়ে আইন কানুন সক্রান্ত কোনাে আয়াত বা সূরা নাযেল হয়নি, যেহেতু আইন চালু করার মতো কোনাে ক্ষমতা তখন নবী(স.)-এর হাতে আসেনি। অবশা আদল এবং এহসান শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয় বলে ব্যক্তিগত জীবনের লেনদেন ও ব্যবহার সবই এর দুই শব্দের আওতায় এসে যায় এবং শুধু আইন কানুনের অর্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।-সম্পাদক) আর আত্মীয়স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহারও এহসানের আওতাভুক্ত। কিন্তু এখানে পৃথকভাবে আত্মীয় স্বজনদের কথা বলায় আত্মীয়তার বিষয়টি আরাে বেশী গুরুত্ব পেয়েছে। এর দ্বারা বুঝানাে হয়েছে যে, পারিবারিক বন্ধনকে অটুট রাখার জন্যে আত্মীয়তার সম্পর্ককে অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে এবং বিপদ-আপদে তাদের প্রতি দানের হাত প্রসারিত করতে হবে। এ আয়াতে এ ইংগিতও দেয়া হয়েছে যে মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে এবং পারিবারিক পরিবেষ্টনী থেকে নিয়ে, ধীরে ধীরে এ দায়িত্ববােধকে সাধারণভাবে সকল মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর এটাও স্পষ্ট যে ইসলামী সমাজের সকল সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক এ দায়িত্ব বােধ গড়ে তােলার জন্য এ কথাটা আল কোরআনে নির্দেশ আকারে এসেছে, যেন চিরদিন ইসলামী সমাজে এ মহান ভাবধারা চালু থাকে এবং অবশ্য ও অপরিহার্য কর্তব্য হিসাবে মানুষ এ হুকুমটি পালন করে। বস্তুত এই এহসান হচ্ছে ইসলামী সমাজের সৌন্দর্য ও সংহতি বিকাশে এক রক্ষা কবজ।(দেখুন, ‘দিরাসাতুল ইসলামিয়াহ’ নামক কিতাবের মধ্যে ‘পারস্পরিক সামাজিক দায়িত্ববোধ’ নামক অধ্যায়) (সূরায়ে রা’দ এর ১৯ ও ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ঐ ব্যক্তি যে জানে যে তােমার রবের কাছ থেকে যা কিছু নাযিল হয়েছে তা সবই সত্য সেই ব্যক্তি কি কোনাে অন্ধ ব্যক্তির মতাে, (অর্থাৎ জ্ঞানান্ধ ব্যক্তির সমান) হতে পারে? অবশ্য অবশ্যই সকল বুদ্ধিমানেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে যারা আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তি পূরণ করে এবং কোনাে ওয়াদা ভংগ করে না এবং আল্লাহ তায়ালা পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে যে সম্পর্ক সম্বন্ধে স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করে…'(আয়াত ১৯-২০) *লজ্জাকর ও অপ্রিয় কাজের প্রতি নিষেধাজ্ঞা : ‘আর তিনি নিষেধ করছেন লজ্জাকর কাজ, অপ্রিয় ব্যবহার ও বিদ্রোহাত্মক কাজ করতে…’ লজ্জাকর কাজ বলতে ওই সকল কাজকে বুঝানাে হয়েছে যা মানুষের মনের মধ্যে লজ্জা ও ঘৃণার অনুভূতি জাগায় অথবা যেসব কাজ ও ব্যবহার সীমা অতিক্রম করে। এরমধ্যে সম্ভবত এখানে ঘৃণা করার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করাকে বুঝানাে হয়েছে কারণ মানুষ যখন কাউকে ঘৃণা করতে গিয়ে মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলে অথবা কারাে পক্ষ অবলম্বন করতে গিয়ে বা কাউকে ভালবাসতে গিয়ে যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন তার ওই কাজ বা ব্যবহারের জন্যে তাকে ভীষণ লজ্জিত হতে হয়। এহেন কাজও ব্যবহারকেই আল কোরআন ফাহেশা বলে অভিহিত করেছে। আর মুনকার হচ্ছে এমন সব আচরণ যাকে মানুষের প্রকৃতি (বিবেক বুদ্ধি) প্রত্যাখ্যান করে, আর এ কারণে ইসলামী শরীয়া (বিধান) ও তাকে ঘৃণ্য ও পরিত্যাজ্য বলে বর্জন করেছে, এখানে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলাে, প্রত্যেক বিবেক-বিরােধী কাজই শরীয়ত কর্তৃক পরিত্যাক্ত হয়েছে। আর কখনও এমন দেখা যায় যে, শরীয়তের কোনাে কোনাে বিধানকে যেন সাধারণ মানব প্রকৃতি মেনে নিতে পারে না বলে মনে হয়, সে অবস্থাতেও শরয়ী বিধানকেই দৃঢ়তার সাথে মানতে হবে, তার ফলে দেখা যাবে তথাকথিত প্রকৃতি শরয়ী বিধানের অনুসরণে মানুষের মূল প্রকৃতির দিকে ফিরে যাবে (যা তার অস্থিমজ্জার মধ্যে মিশে আছে)। আর বিদ্রোহ হচ্ছে যুলুম, সত্য ও ন্যায়নীতি বিরুদ্ধ পদক্ষেপ বা তৎপরতা। এমন কোনাে সমাজ নেই যা লজ্জাকর কাজ, অন্যায় ও বিদ্রোহাত্বক কাজ বা যুলুম করা সত্তেও মযবুতভাবে গড়ে উঠতে পেরেছে এবং এমন কোনাে সমাজ নেই যা নিন্দনীয়, অন্যায় ও যুলুম করার পরও শেষ পর্যন্ত টিকে থেকেছে। এ ধরনের অন্যায় ও যুলুম চলতে থাকলে নির্দিষ্ট একটি সময়ের পর অবশ্যই এর প্রতিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, মানব প্রকৃতি, এমন প্রশাসন বা যুলুমবাজ মানুষকে আর মেনে নিতে পারে না, বিক্ষোভ দানা বেধে উঠে, আসে গণজাগরণ এবং অন্যায় অবিচার ও যুলুমের বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিস্ফোরণ ঘটে। এরকম যুলুম চলতে থাকলে কোনাে সাম্রাজ্য বা রাষ্ট্র যত বড়ই হােক না কেন, তা অচিরেই তছনছ হয়ে যায় এবং মানুষের মানসপটে অতীতের স্মৃতি হিসাবে থেকে যায়। সুতরাং, বুঝা যাচ্ছে প্রত্যেক ধ্বংসের জন্যে রয়েছে এমন এক কারণ যা প্রত্যেক জীবন্ত মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে। এই জন্যে আল্লাহ তায়ালা সুবিচার ও এহসান করার নির্দেশ দিয়েছেন, আর নিষেধ করেছেন অন্যায় অবিচার ও যুলুম করতে। এই হচ্ছে মানব জীবনের জন্যে সঠিক প্রকৃতি সংগত বিধান, আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রকৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই শক্তিকেই শক্তিশালীও চাংগা করে তুলেছেন এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে অন্যায় অবিচার ও যুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের শিক্ষা দিয়েছেন। এই কারণেই এরপর বলা হয়েছে, ‘তিনি তােমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যেন তােমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পার।’ মানুষকে তার কর্তব্য স্মরণ করানাের জন্যে এ উপদেশ, এ উপদেশ এসেছে মানুষের অন্তরের মধ্যে এক প্রকার ওহী আকারে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াতে তাঁর বান্দাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনদেরকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাদেরকে নিষেধ করেছেন অশ্লীলতা, সীমালঙ্ঘন ও অসৎ কাজ করতে। الْعَدْلِ এর শাব্দিক অর্থ ন্যায়পরায়ণতা, ইনসাফ করা ও অবিচার না করা। আদল আল্লাহ তা‘আলার হকের ক্ষেত্রেও করতে হবে এবং মানুষের হকের ক্ষেত্রেও করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার যত হক রয়েছে তা যথাযথভাবে আদায় করে দেয়াই হল আদল। তা আর্থিক হোক, শারীরিক হোক বা অন্য যে কোন হক হোক। বাড়াবাড়ি করা যাবে না এবং শিথিলতাও করা যাবে না। অনুরূপ আদল এর অন্যতম একটি অর্থ হল ন্যায়বিচার করা। অর্থাৎ বিচারের ক্ষেত্রে কারো পক্ষপাতিত্ব না করা।
আল্লাহ তা‘আলা ন্যায় বিচার সম্পর্কে বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُوْنُوْا قَوّٰمِيْنَ لِلّٰهِ شُهَدَا۬ءَ بِالْقِسْطِ ز وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ عَلٰٓي أَلَّا تَعْدِلُوْا ط اِعْدِلُوْا قف هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوٰي)
“হে মু’মিনগণ! আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানে তোমরা অবিচল থাক; কোন সম্প্রদায়ের শত্র“তা যেন তোমাদেরকে এর প্রতি উদ্যত না করে যে, তোমরা ন্যায়বিচার করবে না, তোমরা ন্যায়বিচার কর, এটা তাকওয়ার অধিকতর নিকটবর্তী।” (সূরা মায়িদা ৫:৮)
ইহসান অর্থ হল সদাচরণ, ক্ষমা ও সহানুভূতি দেখানো এবং অনুগ্রহ করা। অর্থাৎ আবশ্যক দায়িত্ব্ ও কর্তব্য পালন করার পরেও এবং যথাযথ হক দিয়ে দেয়ার পরেও অতিরিক্ত কিছু করা বা দেয়া। যেমন কোন শ্রমিকের প্রাপ্য একশত টাকার সাথে দশ টাকা বেশি দিলেন, এটা তার প্রতি ইহসান। আল্লাহ তা‘আলা সদাচরণ সম্পর্কে বলেন:
(وَأَحْسِنْ كَمَآ أَحْسَنَ اللّٰهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ)
“তুমি অনুগ্রহ কর যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৭৭)
হাদীসে এসেছে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
ارْحَمُوا مَنْ فِي الأَرْضِ يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِي السَّمَاء
জমিনে যারা রয়েছে তাদের প্রতি রহম কর আকাশে যিনি রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে রহম করবেন। (তিরমিযী হা: ১৯২৪, সহীহ)
ইহসানের অন্যতম আরেকটি অর্থ হল একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইবাদত করা এবং সুন্দরভাবে তা সম্পন্ন করা। হাদীসে এসেছে:
(أَنْ تَعْبُدَ اللّٰهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ)
তুমি এমনভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে যেন তাঁকে দেখছো, যদি না দেখতে পাও তাহলে জেনে রেখো, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দেখছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৮)
পূর্বে আদলের আলোচনা করার পর এখানে আবার আত্মীয়-স্বজনের অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে তার উদ্দেশ্য, এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা।
আল্লাহ তা‘আলা আত্মীয়-স্বজনের হক সম্পর্কে বলেন:
(فَاٰتِ ذَا الْقُرْبٰي حَقَّه۫ وَالْمِسْكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ ط ذٰلِكَ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَ اللّٰهِ ز وَأُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ)
“অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরকেও। এটা তাদের জন্য উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, আর তারাই হল সফলকাম।” (সূরা রূম ৩০:৩৮)
হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন, আর যে সম্পর্ক ছিন্ন করবে তার সাথে আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্ক ছিন্ন করবেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৮৭)
আর অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার তো কোন সীমা নেই। চিত্ত বিনোদন, সংস্কৃতি ও প্রগতির নামে আজ অশ্লীলতা, নোংরামী ও বেহায়াপনা লাগামহীন হয়ে গেছে। অশ্লীলতা ও অসৎ কাজ (মানুষের বিবেকও বলে দেয় যে) কক্ষনোই ভাল নয়।
আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা, অসৎ কার্য ও সীমালংঘন না করার ব্যাপারে বলেন:
(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّـيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ)
“বল: নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ ও অন্যায় বিরোধিতা।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৩)
وَالْبَغْيِ অর্থ সীমালংঘন ও অত্যাচার। শরীয়ত যে সীমারেখা দিয়েছে তার বাইরে যাওয়াই হল সীমালংঘন করা। অন্যের হক নষ্ট করাও সীমালংঘন করার অন্তর্ভুক্ত।
অতএব আমাদের প্রত্যেকের উচিত, আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অনুপাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, মানুষের সাথে সদাচরণ করা, আত্মীয়তার হক যথাযথভাবে আদায় করা এবং মন্দ ও অশ্লীলকার্য পরিহার করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সৎ কাজ করতে হবে, অসৎ কাজ করা যাবে না।
২. কোন কিছুর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।
৩. আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতে হবে।
৪. সকল ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার ও ন্যায় নীতি গ্রহণ করতে হবে।
৫. অশ্লীল কার্য পরিহার করতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দানের নির্দেশ দিচ্ছেন, যদিও প্রতিশোধ গ্রহণও জায়েয। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর তবে সমান সমান ভাবে প্রতিশোধ গ্রহণ কর। আর যদি ধৈর্য ধারণ কর তবে ধৈর্যশীলদের জন্যে এটা বড়ই উত্তম কাজ।” (১৬:১২৬) অন্য আয়াতে আছেঃ “মন্দের বদল সমপরিমাণ মন্দ, আর যে মাফ করে দেয় ও মীমাংসা করে নেয়, তার প্রতিদান আল্লাহর নিকট রয়েছে।” আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ “যখমের কিসাস রয়েছে, কিন্তু যে ক্ষমা করে দেয়, ওটা তার জন্যে গুনাহ মাফের কারণ।” সুতরাং ন্যায়পরায়ণতা তো ফরয, আর ইহসান নফল। কালেমায়ে তাওহীদের সাক্ষ্য দেয়াও আ। বাহির ও ভিতর এক হওয়াও আ। আর ইহসান এই যে, ভিতরের পরিচ্ছন্নতা বাইরের চেয়েও বেশী হবে। ফাহসা’ এবং ‘মুনকার’ হচ্ছে ভিতর অপেক্ষা বাহির বেশী সুন্দর হওয়া।
আল্লাহ তাআলা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখারও নির্দেশ দিচ্ছেন। যেমন স্পষ্ট ভাষায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আত্মীয়-স্বজন, মিল্কীন ও মুসাফিরদেরকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং অপচয় করো না।” আর তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন থেকে নিষেধ করছেন। প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সমস্ত অশ্লীলতা হারাম এবং লোকদের উপর যুলুম ও বাড়াবাড়ী করাও হারাম। যেমন হাদীসে এসেছেঃ যুলুম ও সীমালংঘন অপেক্ষা এমন কোন বড় গুনাহ নেই যার জন্যে দুনিয়াতেই তাড়াতাড়ি শাস্তি দেয়া হয় এবং পরকালে কঠিন শাস্তি জমা থাকে।” আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এই আদেশ ও নিষেধ তোমাদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।”
হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, গোটা কুরআনের ব্যাপক অর্থ জ্ঞাপক আয়াত হচ্ছে সূরায়ে নাহলের এই আয়াতটি। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, যত ভাল স্বভাব আছে সেগুলি অবলম্বনের নির্দেশ কুরআন দিয়েছে এবং মানুষের মধ্যে যে সব খারাপ স্বভাব রয়েছে সেগুলি পরিত্যাগ করতে আল্লাহ তাআ’লা হুকুম করেছেন। হাদীসে রয়েছে যে, উত্তম চরিত্র আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন এবং অসৎ চরিত্র তিনি অপছন্দ করেন।
আবদুল মালিক ইবনু উমাইর (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। যে,হযরত আকসাম ইবনু সাইফীর (রাঃ) নিকট নবীর (সঃ) আবির্ভাবের খবর পোঁছে। তিনি তাঁর কাছে গমন করার স্থির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর কওম তাঁর এই পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তিনি তখন তাদেরকে বলেনঃ
“তোমরা আমাকে তাঁর কাছে যেতে না দিলে এমন লোক আমার কাছে হাজির কর যাদেরকে আমি দূত হিসেবে তাঁর নিকট প্রেরণ করবো।” তাঁর কথা অনুযায়ী দু’জন লোক এ কাজের জন্যে প্রস্তুত হয়ে যান। তাঁরা নবীর (সঃ) নিকট হাজির হয়ে আরজ করেনঃ “আমরা আকসাম ইবনু সাইফীর (রাঃ) দূত হিসেবে আপনার নিকট আগমন করেছি।” অতঃপর তাঁরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কে এবং আপনি কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “তোমাদের প্রথম প্রশ্নের উত্তর এই যে, আমি মুহাম্মদ ইবনু আব্দিল্লাহ (সঃ)। আর তোমাদের দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর এই যে, আমি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।” অতঃপর তিনি (আরবি) এই আয়াতটি পাঠ করেন। তাঁরা বলেনঃ “পুনরায় পাঠ করুন।” তিনি আবার পাঠ করেন। তারা তা মুখস্থ করে নেন এবং ফিরে গিয়ে আকসামকে (রাঃ) সমস্ত খবর অবহিত করেন। তাঁরা তাঁকে বলেনঃ “তিনি নিজের বংশের কোন গৌরব প্রকাশ করেন নাই। শুধু নিজের নাম ও পিতার নাম তিনি বলেন। অথচ তিনি অতি সম্ভান্ত বংশের লোক। তিনি আমাদেরকে যে কথাগুলি শিখিয়ে দিয়েছেন তা আমরা মুখস্থ করে নিয়েছি।” অতঃপর তাঁরা তাঁকে তা শুনিয়ে দেন। কথাগুলি শুনে আকসাম (রাঃ) বলেনঃ “তিনি তো তাহলে খুবই উত্তম ও উন্নত মানের কথা শিখিয়ে থাকেন। আর তিনি খারাপ ও অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখেন। হে আমার কওমের লোকেরা! তোমরা ইসলামে অগ্রগামী হও। তাহলে তোমরা নেতৃত্ব লাভ করবে এবং অন্যদের গোলাম হয়ে থাকবে না।”
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা বাড়ীর উঠানে বসে ছিলেন। এমন সময় হযরত উসমান ইবনু মাযউন (রাঃ) তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “বসছে না কেন?” তিনি তখন বসে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার সাথে কথা বলতে ছিলেন। হঠাৎ তিনি (নবী (সঃ) তাঁর দৃষ্টি আকাশের দিকে উত্তোলন করেন। কিছুক্ষণ ধরে তিনি উপরের দিকেই তাকাতে থাকেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি দৃষ্টি নীচের দিকে নামিয়ে দেন এবং নিজের ডান দিকে যমীনের দিকে তাকাতে থাকেন। এ দিকে তিনি মুখমণ্ডলও ঘুরিয়ে দেন। আর এমনভাবে মাথা হেলাতে থাকেন যে, যেন কারো নিকট থেকে কিছু বুঝতে রয়েছেন এবং কেউ তাঁকে কিছু বলতে রয়েছে। কিছুক্ষণ পর্যন্ত এই অবস্থাই থাকে। তারপর তিনি স্বীয় দৃষ্টি উঁচু করতে শুরু করেন, এমন কি আকাশ পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি পৌঁছে যায়। তারপর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসেন এবং পূর্বের বসার অবস্থায় হযরত উসমানের (রাঃ) দিকে মুখ করেন। হযরত উসমান (রাঃ) সবকিছুই দেখতে ছিলেন। তিনি আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না। জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার পাশে বেশ কয়েকবার আমার বসার সুযোগ ঘটেছে। কিন্তু আজকের মত কোন দৃশ্য তো কখনো দেখি নাই?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “কি দেখেছো?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “দেখি যে, আপনি দৃষ্টি আকাশের দিকে উত্তোলন করলেন এবং পরে নীচের দিকে নামিয়ে দিলেন। এরপর ডান দিকে ঘুরে গিয়ে ঐ দিকেই তাকাতে লাগলেন এবং আমাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর আপনি মাথাকে এমনভাবে নড়াতে থাকলেন যে, যেন কেউ আপনাকে কিছু বলছে এবং আপনি কান লাগিয়ে তা শুনছেন।” তিনি বললেনঃ “তা হলে তুমি সবকিছুই দেখেছো?” তিনি জবাবে বলেনঃ “জ্বি, হাঁ, আমি সবকিছুই দেখেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “আমার কাছে আল্লাহ তাআলার প্রেরিত ফেরে ওয়াহী নিয়ে এসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হাঁ, আল্লাহ কর্তৃকই প্রেরিত।” তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তিনি আপনাকে কি বললেনঃ “তিনি জবাব দিলেনঃ “তিনি আমাকে (আরবি) এই আয়াতটি পড়ে শুনালেন।” হযরত উসমান ইবনু মাযউন (রাঃ) বলেনঃ “তৎক্ষণাৎ আমার অন্তরে ঈমান সুদৃঢ় হয়ে যায় এবং রাসূলুল্লাহর (সঃ) মহব্বত আমার অন্তরে স্থান করে নেয়।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উসমান ইবনু আবুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহর (সঃ) পার্শ্বে বসে ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ তিনি তাঁর দৃষ্টি উপরের দিকে উত্তোলন করেন এবং বললেনঃ “আমার নিকট হযরত জিবরাঈল (আঃ) আগমন করে আমাকে নির্দেশ দেন যে, আমি যেন (আরবি) এই আয়াতটিকে এই সূরার এই স্থানে রেখে দিই।” এই রিওয়াইয়াতটিও সঠিক।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 90
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ ]
Verily, Allah orders justice and kindness,]
www.motaher21.net
The Command to be Fair and Kind
Allah says:
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ
Verily, Allah orders justice and kindness,
Allah tells us that He commands His servant to be just, i.e., fair and moderate, and that He encourages kindness and good treatment.
As He says:
وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُمْ بِهِ وَلَيِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّـبِرينَ
And if you punish them, then punish them with the like of that with which you were afflicted. But if you have patience with them, then it is better for those who are patient. (16:126)
وَجَزَاءُ سَيِّيَةٍ سَيِّيَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ
The recompense for an offense is an offense the like thereof; but whoever forgives and makes reconciliation, his reward is with Allah. (42:40)
وَالْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُ
and wounds equal for equal. But if anyone remits the retaliation by way of charity, it shall count as atonement for him. (5:45)
And there are other Ayat which support the institution of justice in Islam, as well as encouraging a fair and generous attitude.
The Command to maintain the Ties of Kinship and the prohibition of Immoral Sins, Evil and Tyranny
Allah says:
وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى
and giving (help) to relatives,
meaning that Allah is commanding us to uphold the ties of kinship, as He says:
وَءَاتِ ذَا الْقُرْبَى حَقَّهُ وَالْمِسْكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرْ تَبْذِيرًا
And give the relative his due and to the poor and to the wayfarer. But do not spend wastefully in the manner of a spendthrift. (17:26)
وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ
and He forbids immoral sins, and evil.
Fahsha’ refers to all things that are forbidden, and Munkar refers to those forbidden deeds that are committed openly by the one who does them.
Hence Allah says elsewhere:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ
Say (O Muhammad):”(But) the things that my Lord has indeed forbidden are the indecencies, whether committed openly or secretly) (7:33)
وَالْبَغْيِ
Baghy,
refers to aggression towards people.
In a Hadith, the Prophet said:
مَا مِنْ ذَنْبٍ أَجْدَرَ أَنْ يُعَجِّلَ اللهُ عُقُوبَتَهُ فِي الدُّنْيَا مَعَ مَا يَدَّخِرُ لِصَاحِبِهِ فِي الاْاخِرَةِ مِنَ الْبَغْيِ وَقَطِيعَةِ الرَّحِم
There is no sin more deserving of having its punishment hastened in this world, as well as what is reserved in the Hereafter for the one who does it, than tyrannical aggression and cutting the ties of kinship.
يَعِظُكُمْ
He admonishes you,
meaning, He commands what He commands you of good and He forbids what He forbids you of evil;
لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
so that perhaps you may take heed.
Ash-Sha`bi reported that Shatiyr bin Shakl said:
“I heard Ibn Mas`ud say:
`The most comprehensive Ayah in the Qur’an is in Surah An-Nahl:
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ
Verily, Allah enjoins justice and kindness…”‘
It was reported by Ibn Jarir.
The Eyewitness Account of `Uthman
Concerning the revelation of this Ayah, Imam Ahmad reported a Hasan Hadith from Abdullah bin Abbas who said:
“While the Messenger of Allah was sitting in the courtyard of his house, Uthman bin Maz`un passed by and smiled at the Messenger of Allah.
The Messenger of Allah said to him,
أَلَا تَجْلِسُ
(Won’t you sit down)?
He said, `Certainly.’
So the Messenger of Allah sat facing him, and while they were talking, the Messenger of Allah began looking up at the sky, looking at it for a while, then he brought his gaze down until he was looking at the ground to his right. Then the Messenger of Allah turned slightly away from his companion Uthman to where he was looking. Then he began to tilt his head as if trying to understand something, and Ibn Maz`un was looking on.
When the matter was finished and he had understood what had been said to him, the Messenger of Allah stared at the sky again as he had the first time, looking at whatever he could see until it disappeared. Then he turned back to face Uthman again.
Uthman said, `O Muhammad, I have never seen you do anything like you did today while I was sitting with you.’
The Messenger of Allah said:
وَمَا رَأَيْتَنِي فَعَلْتُ
What did you see me do?
Uthman said:`I saw you staring at the sky, then you lowered your gaze until you were looking to your right, then you turned to him and left me. Then you tilted your head as if you were trying to understand something that was being said to you.’
The Messenger of Allah said,
وَفَطِنْتَ لِذَلِكَ
Did you notice that?
Uthman said, `Yes’.
The Messenger of Allah said:
أَتَانِي رَسُولُ اللهِ انِفًا وَأَنْتَ جَالِس
A messenger from Allah came to me just now, when you were sitting here.
Uthman said, `A messenger from Allah!’
The Messenger of Allah said, Yes.
Uthman said, `And what did he say to you?’
The Messenger of Allah said:
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالاِحْسَانِ
Verily, Allah orders justice and kindness…
Uthman said:
That was when faith was established in my heart and I began to love Muhammad.”
It is a Hasan Hadith having a good connected chain of narrators in which their hearing it from each other is clear.