(Book# 818) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ৯১-৯২ নং আয়াত:- [ وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর, Fulfill the covenants.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 818)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৯১-৯২ নং আয়াত:-
[ وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ
তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর,
Fulfill the covenants.]
www.motaher21.net

وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ اللّٰہِ اِذَا عٰہَدۡتُّمۡ وَ لَا تَنۡقُضُوا الۡاَیۡمَانَ بَعۡدَ تَوۡکِیۡدِہَا وَ قَدۡ جَعَلۡتُمُ اللّٰہَ عَلَیۡکُمۡ کَفِیۡلًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُ مَا تَفۡعَلُوۡنَ ﴿۹۱﴾
তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর, তখন আল্লাহর অঙ্গীকার পূরণ করো এবং আল্লাহকে তোমাদের যামিন করে শপথ দৃঢ় করবার পর তোমরা তা ভঙ্গ করো না; তোমরা যা কর, অবশ্যই আল্লাহ তা জানেন।
And fulfill the covenant of Allah when you have taken it, [O believers], and do not break oaths after their confirmation while you have made Allah, over you, a witness. Indeed, Allah knows what you do.
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّتِیۡ نَقَضَتۡ غَزۡلَہَا مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ اَنۡکَاثًا ؕ تَتَّخِذُوۡنَ اَیۡمَانَکُمۡ دَخَلًۢا بَیۡنَکُمۡ اَنۡ تَکُوۡنَ اُمَّۃٌ ہِیَ اَرۡبٰی مِنۡ اُمَّۃٍ ؕ اِنَّمَا یَبۡلُوۡکُمُ اللّٰہُ بِہٖ ؕ وَ لَیُبَیِّنَنَّ لَکُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ مَا کُنۡتُمۡ فِیۡہِ تَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۹۲﴾
আর তোমরা সে নারীর মত হয়ো না , যে তার সূতা মজবুত করে পাকাবার পর সেটার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়। তোমাদের শপথ তোমরা পরস্পরকে প্রবঞ্চনা করার জন্য ব্যবহার করে থাক, যাতে একদল অন্যদলের চেয়ে বেশী লাভবান হও। আল্লাহ্‌ তো এটা দিয়ে শুধু তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন । আর অবশ্যই আল্লাহ্‌ কিয়ামতের দিন তা তোমাদের কাছে স্পষ্ট বর্ণনা করে দেবেন যাতে তোমরা মতভেদ করতে।
And do not be like she who untwisted her spun thread after it was strong [by] taking your oaths as [means of] deceit between you because one community is more plentiful [in number or wealth] than another community. Allah only tries you thereby. And He will surely make clear to you on the Day of Resurrection that over which you used to differ.

সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৯১-৯২ নং আয়াত:-
[ وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ
তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর,
Fulfill the covenants.]
www.motaher21.net

৯১-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যদি কোন বিষয়ে ওয়াদাবদ্ধ হয় তাহলে তা যেন পূর্ণ করে। এ ওয়াদা আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মাঝে হতে পারে, অথবা বান্দা ও অন্য কোন মানুষের সাথে হতে পারে। ওয়াদা ভঙ্গ করা কোন মু’মিন ব্যক্তির কাজ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَبِعَهْدِ اللّٰهِ أَوْفُوْا ط ذٰلِكُمْ وَصّٰكُمْ بِهٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ)‏

“আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (সূরা আন‘আম ৬:১৫২)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَأَوْفُوْا بِالْعَهْدِ ج إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُوْلًا)

“প্রতিশ্রুতি পালন কর; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা ইসরা ১৭:৩৪)

আর আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করছেন যেন তারা ওয়াদা করার পর তা ভঙ্গ না করে। কেননা ওয়াদা ভঙ্গ করলে তার ক্ষতি নিজের ওপর বর্তাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَمَنْ نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنْكُثُ عَلٰي نَفْسِه۪ ج وَمَنْ أَوْفٰي بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللّٰهَ فَسَيُؤْتِيْهِ أَجْرًا عَظِيْمًا )

“সুতরাং যে এ ওয়াদা ভঙ্গ করবে এর কুফল তার ওপরই পড়বে। আর আল্লাহর সাথে ওয়াদা করে যে তা পূরণ করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে মহা পুরস্কার দেবেন।” (সূরা ফাতহ ৪৮:১০)

এক প্রকার শপথ হল যা কোন কথা অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি সুদৃঢ় করার জন্য করা হয়। আর দ্বিতীয় হল যা অনেকে কোন সময় শপথ করে বলে ‘আমি এ কাজ করব অথবা করব না’। এখানে প্রথম অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বলা হয়েছে তোমরা শপথ করে আল্লাহ তা‘আলাকে জামিন করেছ, অতএব এখন তা ভঙ্গ করো না। বরং সে অঙ্গীকার পূরণ কর, যার জন্য তুমি শপথ করেছ। কারণ দ্বিতীয় শপথের ব্যাপারে হাদীসে আদেশ করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি কোন কাজের জন্য শপথ করে সে যদি বুঝে যে, বিপরীত করলে তার মঙ্গল হবে তাহলে তার উচিত হবে মঙ্গল কাজে জড়িত হওয়া এবং শপথের কাফ্ফারা দিয়ে দেয়া। যারা শপথ করার পর ভঙ্গ করে তাদের একটি উপমা দেয়া হয়েছে, তা হল কোন নারী সূতো মজবুত করে পাকানোর পর খুলে নষ্ট করা যেমন, শপথ করার পর ভঙ্গ করাও তেমন।

(تَتَّخِذُوْنَ أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا)

অর্থাৎ একজন অন্য জনের থেকে অধিক লাভবান হবার জন্য শপথকে ধোঁকা ও প্রবঞ্চনাস্বরূপ ব্যবহার করে থাক? এরূপ করো না। অতএব কোন বিষয়ে ওয়াদা ও শপথ করার পর তা পূর্ণ করতে হবে, ভঙ্গ করা যাবে না। কারণ ওয়াদা ভঙ্গ করা মুনাফিকের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমনটি সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে। মুনাফিকের আলামত তিনটি তন্মধ্যে একটি হল ওয়াদা ভঙ্গ করা (সহীহ বুখারী হা: ৩৩-৩৪, সহীহ মুসলিম হা: ৫৮-৫৯)

মূলত আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন কে বিধান লঙ্ঘন করে; আর কে সংরক্ষণ করে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ওয়াদা ভঙ্গ করা যাবে না।
২. শপথ করার পর তা পূর্ণ করতে হবে।
৩. দুনিয়ার কৃতকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*ওয়াদা ও চুক্তি রক্ষায় ইসলামের কঠোরতা : এরপর আলােচনা এসেছে চুক্তিরক্ষা ও ওয়াদা পালন প্রসংগে এরশাদ হচ্ছে, ‘আর, যখনই আল্লাহর সাথে কেউ কোনাে চুক্তি করবে, তা অবশ্যই যেন পূরণ করে এবং পাকাপাকিভাবে কোনাে কসম খেলে তা কখনও ভংগ করাে না কারণ তােমরা তাে আল্লাহকে তােমাদের পরিচালক ও তত্বাধায়ক হিসাবে গ্রহণ করেছ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা জানেন যা তােমরা করে চলেছে।’ রসূল(স.)-এর হাতে মুসলমানদের বাইয়াত করা আল্লাহর সাথে করা চুক্তিসমূহের একটি। এইভাবে আল্লাহ তায়ালা মানুষের ভালাের জন্যে যা কিছু নির্দেশ দিয়েছেন, তা সবই এই চুক্তির অন্তর্গত। মানুষের মধ্যে আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এসব বিভিন্ন চুক্তিই মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করে। লেনদেনের ক্ষেত্রে এসব বিশ্বস্ততা মানুষের মধ্যে না থাকলে কোনাে সমাজই টিকে থাকতে পারতাে না এবং কোনাে মানুষের অস্তিত্ব থাকতাে না। আর আল্লাহ সােবহানাহ ওয়া তায়ালার বাণী কঠিনভাবে ওয়াদাকারীদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছে, যেন পাকাপাকি ওয়াদা করার পর কোনাে অবস্থাতেই তা ভংগ না করা হয়, অথচ তারা তাে আল্লাহকে তাদের কসমের যামীন হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং তাদের ওয়াদার ব্যাপারে আল্লাহকেই তারা সাক্ষী মেনেছে। তারা ওয়াদা পূরণ করবে বলে আল্লাহকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করেছে। এরপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে মৃদুভাবে তিরস্কার করতে গিয়ে বলছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন যা তােমরা করছে।’ ওয়াদা পূরণ করার ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত কঠোরতা অবলম্বন করেছে, কোনাে অবস্থাতেই ইসলাম ওয়াদা ভংগকারীকে ক্ষমা করেনি। কারণ লেনদেনের মূল বুনিয়াদই হচ্ছে এই ওয়াদা। এটাই যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে লেনদেনের বুনিয়াদই ধ্বসে যাবে, যার ফলে মানুষে মানুষে আদান-প্রদানের মনমানসিকতা সম্পূর্ণভাবে বিগড়ে যাবে এবং এরপর ইচ্ছা ও উপায় থাকলেও কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারবে না। এমতাবস্থায়, দলীয় জীবনের বন্ধন শুধু শিথিলই হয়ে যাবে তা নয়, বরং এ বন্ধন সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ প্রসংগে আলােচনা করতে গিয়ে কোরআনে কারীম ওয়াদা পূরণ করার নির্দেশ দান করছে এবং ওয়াদা খেলাফীকে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, এটাকে এক নৈতিক দায়িত্ব হিসাবে চিহ্নিত করেছে, ওয়াদা ভংগকে এক চরম নিন্দনীয় ও কদর্য আচরণ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ঐসব বাজে ওজুহাত পেশ করতে কড়াকড়িভাবে নিষেধ করেছে যা সাধারণভাবে মানুষ পেশ করে থাকে।

# এরশাদ হচ্ছে, ‘আর তােমরা ওই সব মহিলার মতাে হয়াে না, যে নিজে হাতে সূতাকাটার পর তা নিজেই ছিড়ে ফেলে দেয়’, অর্থাৎ তোমরা ওই মহিলার মতাে হয়াে না যে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে সারা দিন সুতা কেটেছে, তারপর সে নিজেই তা ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে। তােমরা তােমাদের কসমগুলােকে একে অপরকে ধােকা দেয়ার হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছো-যেন এক দল অপর দলের ওপর আর্থিক দিক দিয়ে বেশী লাভবান হতে পারো। অথচ আল্লাহ তায়ালা তাে এই ওয়াদা পূরণ করার মাধ্যমে তােমাদের (ঈমান)কে পরীক্ষা করছেন, আর অবশ্যই কেয়ামতের দিন তিনি তােমাদেরকে জানিয়ে দেবেন সেসব বিষয়ে, যা নিয়ে তােমরা পৃথিবীর বুকে মতভেদ করতে।’ অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ওয়াদা ভংগ করে সে হচ্ছে সেই নির্বোধ, অপরিনামদর্শী, দুর্বলচেতা স্ত্রী লােকের মতাে, যে বহু পরিশ্রম করে সূতা কাটে, তারপর নিজেই তা ছিড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলে দেয়। এমনভাবে সেগুলােকে সে ছিড়ে ফেলে যে তা আর কোনাে কাজে লাগে না। এরপর যখন দেখে তার এতাে কষ্টলব্ধ সুতাগুলাে কোনাে কাজেই লাগলাে না তখন তার কৃত কর্মকে স্মরণ করে চরমভাবে দুঃখিত হয় এবং আফসােস করতে থাকে, কিন্তু তার কষ্ট বাড়ানাে ছাড়া তার এই আফসােস আর কোনাে কাজে লাগে না। চিন্তা করে দেখুন অবশ্যই কোনাে সুরুচিসম্পন্ন, আত্ম সম্ভ্রমশীল, বুদ্ধিমান ও সময় সচেতন ব্যক্তি ওই অস্থির মতি বেওকুফ স্ত্রীলােকের মতাে নিজের সমস্ত শ্রমকে পন্ড করে দিতে পছন্দ করবে না যে সারা জীবন সিদ্ধান্তহীনতায় ভােগে এবং নিজের পরিশ্রমের সঠিক ফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। রসূলুল্লাহ(স.)-এর সময় কুরাইশদের মধ্যে এ ধরনের কিছু লোক ছিলাে যারা রসূলুল্লাহ(স.)-এর সাথে কৃত চুক্তি ভংগ করা ও ওয়াদা খেলাফী করাকেই বাহাদুরী মনে করতাে এবং এমন একটা ধৃষ্টতাপূর্ণ ব্যবহার করতে পেরে মনে করতাে তারা বুঝি একটা সাফল্য অর্জন করে ফেলেছে, তারা মনে করতাে, মােহাম্মদ ও তার সংগীরা তাে দুর্বল, তাদের সাথে কোনাে ওয়াদা ভংগ করলে তারা কোনােই ব্যবস্থা নিতে পারবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে হুশিয়ার করতে গিয়ে বলছেন, যে কাউকে ধােকা দেয়ার মধ্যে কোনাে বাহাদুরী নেই। তারা মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে ধােকা দেবে এবং এরপরও তাদের সাথে মৈত্রী ও ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইবে-এটা কি কখনও সম্ভব। সে জন্যে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তাদের কল্যাণার্থে অত্যন্ত তাদেরকে হুশিয়ার করছেন, কড়া ভাষায় ডাক দিয়ে বলছেন, ‘খবরদার, তােমাদের কসমগুলােকে তােমরা নিজেদের মধ্যে ধােকা দেয়ার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করােনা এ ধরনের ব্যবহার দ্বারা তােমাদের এক দল অপর দলের ওপর কি প্রাধান্য বিস্তার করতে চাও’ অর্থাৎ, একদল সংখ্যা ও শক্তিতে অন্য দল থেকে বেশী হওয়ার কারণে তারা মনে করে যে তারা কল্যাণের হকদার বেশী-কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের এই মনে করাটাকে বাস্তবে অপ্রমাণিত করে দিয়েছেন। এ মহান কিতাবের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা দৃঢ়তার সাথে জানিয়েছেন যে ওয়াদা ও চুক্তি শান্তি ও সংহতি রক্ষায় কতাে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে, অতচ আজকের পৃথিবীতে রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্যে ধােকা- দেয়াকে এক অপরিহার্য কৌশল হিসাবে শুধু বৈধই মনে করা হয় না, এটাকে রাষ্ট্রীয় কূটনীতি মনে করা হয়, যার কারণে এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে কোনাে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার পর অবলীলাক্রমে সে এই ওজুহাতে এ চুক্তিকে ভংগ করে যে, সে অপরের থেকে শক্তি, সামর্থ ও সম্পদে বেশী-এটাকে তারা রাষ্ট্রের স্বার্থে যুক্তিসংগত ও বৈধ মনে করে। অপরদিকে ইসলাম কোনাে অবস্থাতেই এটাকে রাষ্ট্রের জন্যে কল্যাণকর মনে করে না। ইসলাম এসেছে মানুষের শান্তি ও মংগলের জন্যে। এজন্যে ইসলাম এমন কোনাে ব্যবহার বা কাজ করতে পারে না যার দ্বারা কোনাে জনপদের অকল্যাণের বিনিময়ে কারাে কল্যাণ হবে। ইসলাম ওয়াদা পূরণ ও চুক্তি রক্ষাকে ফরয বলে ঘােষণা দিয়েছে, চুক্তি ভংগ করার মাধ্যমে কাউকে ধােকা দেয়া বা কারাে অধিকারে হস্তক্ষেপ করাকে ইসলাম নিষিদ্ধ (হারাম) ঘােষণা করেছে। ইসলাম নির্দেশ দিয়েছে, ‘নেকী (কল্যাণকর কাজ)ও আল্লাহর ভয়ে বাছবিচার করে চলার কাজে পরস্পর সহযােগিতা করাে, আর খবরদার অপরাধজনক ও বিদ্রোহাত্মক কোনাে কাজে কেউ কারাে কোনাে সহযােগিতা করাে না।’ কাউকে ধােকা দেয়াকে এবং কারাে দুর্বলতার সুযােগ নিয়ে তার ওপর চড়াও হওয়া বা তার কিছু দখল করে নেয়াকে ইসলাম কোনাে ভাল কাজ মনে করে না-এ আচরণকে ইসলাম উপরােক্ত আয়াতের খেলাফ বলে বুঝে। এজন্যে, কোনাে ‘ভালো’ বা কোনাে কল্যাণের ওজুহাতে কাউকে বা কোনাে রাষ্ট্রকে বিপাকে ফেলাকে ইসলাম বৈধ বলে না। নাফরমানী মূলক কাজ বা আচরণ বা কারাে কোনাে হক নষ্ট করা বা নিজেদের স্বার্থে কোনাে ব্যক্তি, জনপদ বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনাে বিদ্রোহাত্মক কাজকে অনুমতি দেয় না। আর এই মূলনীতির ভিত্তিতেই ইসলামী দল গঠিত হয়েছে, গঠিত হয়েছে ইসলামী রাষ্ট্র, যার ফলে জগতকে ইসলামী বিধানের সন্ধান দিতে পেরেছে, শাস্তিপূর্ণ এবং আস্থাযােগ্য এক সমাজে উন্নতি হতে পেরেছে। ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে ও রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও যে কোনাে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের এবং আদান প্রদানের এক সুষ্ঠু নীতি-ইসলাম তার সূচনালগ্ন থেকেই এ আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। আল কোরআন এসব অজুহাত সৃষ্টিকারীদেরকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছে এবং এ ধরনের অবস্থা চালু যাতে না করা হয় তার জন্যে ইসলামী সমাজকে চূড়ান্তভাবে সতর্ক করছে এরশাদ হচ্ছে, ‘(কসম খেয়ে বা চুক্তি করে তা এই জন্যে ভংগ করা হয়) যেন একদল আর এক দলের ওপর প্রাধান্য লাভ করে বা বেশী ফায়দা হাসিল করে।’ প্রকৃতপক্ষে, কসম খেয়ে তা ভংগ করে লাভবান হওয়ার সুযােগ তখন হয় যখন এক পক্ষ সরল হৃদয়ে আর এক পক্ষকে বিশ্বাস করে এবং তার কসমকে মূল্য দেয়, যার সুযােগ নিয়ে কসম ভাংগা হয় বা ধােকা দেয়া হয়। এক পক্ষের সরলতার সুযোগ তাে আল্লাহ তায়ালাই দিয়ে থাকেন এবং তাদের নিয়ত ঈমান ও সততার পরীক্ষার জন্যে এসব সুযােগ দেয়া হয়, এসব সুযােগ সৃষ্টি করা হয় তাদের জন্যে যাতে করে তাদের ওয়াদা পূরণের সততা ও তাদের আত্মসন্মান-বােধের পরীক্ষা হয়ে যায়। এ আত্মসন্মানবােধ ও সততা ওয়াদা ভংগের দ্বারা বিনষ্ট হয় এবং এর দ্বারা তারা নিজেদের কাছেই নিজেরা ছােট হয়ে যায় । তাই বলা হচ্ছে, ‘অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এর দ্বারা তােমাদেরকে পরীক্ষা করছেন।’ তারপর বিভিন্ন দল ও জাতির মধ্যে গড়ে উঠা মতভেদের বিষয়গুলােকে কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে পেশ করা হবে এবং তার কাছেই ফয়সালা চাওয়া হবে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘আর অবশ্যই কেয়ামতের দিন তিনি তােমাদেরকে সেসব বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা জানিয়ে দেবেন যা নিয়ে তােমরা পৃথিবীর জীবনে মতভেদ করতে থেকেছ। সে দিন আল্লাহ তায়ালা ওয়াদা পূরণকারী ও ওয়াদা ভংগকারীদের মধ্যে সঠিকভাবে বিচার করে ওয়াদাপূরণকারীকে পুরস্কৃত করবেন এবং ওই সব বেঈমানদের জন্যে শান্তি-বিধান করবেন, যারা দুনিয়ার জীবনের লােভ-লাভ ও প্রাধান্যকে বড়ো করে দেখেছিলাে এবং আখেরাতে তাদের কী পরিণতি হবে তার কোনাে পরওয়াই করেনি। এমনকি তারা, তাদের আচরণ দ্বারা তাদের আকীদা বিশ্বাসে প্রমাণও দেয়নি এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ভুল মতামত প্রদান করেছে।

 

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# এখানে পর্যায়ক্রমে তিন ধরনের অঙ্গীকারকে তাদের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করে সেগুলো মেনে চলার হুকুম দেয়া হয়েছে। এক মানুষ আল্লাহর সাথে যে অঙ্গীকার করেছে। এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। দুই, একজন বা একদল মানুষ অন্য একজন বা একদল মানুষের সাথে যে অঙ্গীকার করেছে। এর ওপর আল্লাহর কসম খেয়েছে। অথবা কোন না কোনভাবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে নিজের কথার দৃঢ়তাকে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করেছে। এটি দ্বিতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ। তিন, আল্লাহর নাম না নিয়ে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এর গুরুত্ব উপরের দু’প্রকার অঙ্গীকারের পরবর্তী পর্যায়ের। তবে উল্লিখিত সব কয়টি অঙ্গীকারই পালন করতে হবে এবং এর মধ্য থেকে কোনটি ভেঙে ফেলা বৈধ নয়।

# এখানে বিশেষ করে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ধরনের অঙ্গীকার ভঙ্গের নিন্দা করা হয়েছে। এ ধরনের অঙ্গীকার ভঙ্গ দুনিয়ায় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উচ্চ পর্যায়ের বড় বড় লোকেরাও একে সৎ কাজ মনে করে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের জাতি ও সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাহবা কুড়ায়। জাতি ও দলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় সংঘাতের ক্ষেত্রে প্রায়ই এমনটি হতে দেখা যায়। এক জাতির নেতা এক সময় অন্য জাতির সাথে একটি চুক্তি করে এবং অন্য সময় শুধুমাত্র নিজের জাতীয় স্বার্থের খাতিরে তা প্রকাশ্যে ভঙ্গ করে অথবা পর্দান্তরালে তার বিরুদ্ধাচরণ করে অবৈধ স্বার্থ উদ্ধার করে। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে খুবই সত্যনিষ্ঠ বলে যারা পরিচিত, তারাই সচরাচর এমনি ধরনের কাজ করে থাকে। তাদের এসব কাজের বিরুদ্ধে শুধু যে সমগ্র জাতির মধ্য থেকে কোন নিন্দাবাদের ধ্বনি ওঠে না তা নয় বরং সব দিক থেকে তাদেরকে বাহবা দেয়া হয় এবং এ ধরনের ঠগবাজী ও ধুর্তামীকে পাকাপোক্ত ডিপ্লোমেসী মনে করা হয়। আল্লাহ এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রত্যেকটি অঙ্গীকার আসলে অঙ্গীকারী ব্যক্তি ও জাতির চরিত্র ও বিশ্বস্ততার পরীক্ষা স্বরূপ। যারা এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে তারা আল্লাহর আদালতে জবাবদিহির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না।

# যেসব মতবিরোধের কারণে তোমাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলছে সেগুলোর ব্যাপারে কে সত্যবাদী এবং কে মিথ্যাবাদী তার ফায়সালা তো কিয়ামতের দিন হবে। কিন্তু যে কোন অবস্থায়ই কেউ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও এবং তার প্রতিপক্ষ পুরোপুরি গোমরাহ ও মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকলেও তার জন্য কখনো কোনভাবে নিজের গোমরাহ প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় অঙ্গীকার ভংগ, মিথ্যাচার ও প্রতারণার অস্ত্র ব্যবহার করা বৈধ হতে পারে না। যদি সে এ পথ অবলম্বন করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহর পরীক্ষায় সে অকৃতকার্য প্রমাণিত হবে। কারণ সততা ও ন্যায়নিষ্ঠতা কেবলমাত্র আদর্শ ও উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রেই সত্যবাদিতার দাবী করে না বরং কর্মপদ্ধতি ও উপায়-উপকরণের ক্ষেত্রেও সত্য পথ অবলম্বন করতে বলে। বিশেষ করে যেসব ধর্মীয় গোষ্ঠী প্রায়ই এ ধরনের অহমিকা পোষণ করে থাকে যে, তারা যেহেতু আল্লাহর পক্ষের লোক এবং তাদের বিরোধী পক্ষ আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, তাই সম্ভাব্য যেকোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অধিকার তাদের রয়েছে, তাদেরকে সতর্ক করার জন্য এখানে একথা বলা হয়েছে। তারা মনে করে থাকে, আল্লাহর অবাধ্য লোকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় সততা ও বিশ্বস্ততার পথ অবলম্বন এবং অঙ্গীকার পালনের কোন প্রয়োজন পড়ে না এটা তাদের অধিকার। আরবের ইহুদীরাও ঠিক একথাই বলতো। তারা বলতো لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ অর্থাৎ আরবের মুশরিকদের ব্যাপারে আমাদের হাত পা কোন বিধি-নিষেধের শৃংখলে বাঁধা নেই। তাদের সাথে সব রকমের বিশ্বাসঘাতকতা করা যেতে পারে। যে ধরনের কৌশল অবলম্বন করে আল্লাহর প্রিয় পাত্রদের স্বার্থ উদ্ধার এবং কাফেরদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যায়। তা অবলম্বন করা সম্পূর্ণ বৈধ। এজন্য তাদের কোন জিজ্ঞাসাবাদ ও জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে না বলে তারা মনে করতো।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৯১-৯২ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির হিফাজত করে, কসম পুরো করে এবং তা ভঙ্গ না করে। এখানে আল্লাহ তাআলা কসম ভঙ্গ না করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। অন্য আয়াতে আছেঃ “তোমরা আল্লাহকে তোমাদের অঙ্গীকারের লক্ষ্যস্থল করো না।”এর দ্বারাও কসমের হিফাজতের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করাই উদ্দেশ্য। আর এক আয়াতে রয়েছে “ওটাই হচ্ছে তোমাদের কসম ভঙ্গ করার কাফফারা, যখন তোমরা কসম করবে এবং তোমরা তোমাদের কসমের হিফাযত কর।” অর্থাৎ কাফফারা ছাড়া তা পরিত্যাগ করো না।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর কসম! আমি যখন কোন কিছুর উপর শপথ করবো, অতঃপর ওর বিপরীত জিনিসে মঙ্গল দেখবো তখন ইনশাআল্লাহ আমি ঐ মঙ্গলজনক কাজটিই করবো এবং আমার কসমের কাফফারা আদায়। করবো।”এখন উল্লিখিত আয়াত ও হাদীসে যে বৈপরীত্ব রয়েছে এটা যেন মনে করা না হয়। সেই কসম ও অঙ্গীকার, যা পরষ্পরের চুক্তি ও ওয়াদা হিসেবে করা হবে তা পুরো করা তো নিঃসন্দেহে জরুরী ও অপরিহার্য কর্তব্য। আর যে কসম আগ্রহ উৎপাদন বিরত রাখার উদ্দেশ্যে মুখ থেকে বেরিয়ে যায় তা অবশ্যই কাফফারা আদায়ের মাধ্যমে ভঙ্গ করা যেতে পারে। যেমন হযরত জুবাইর ইবনু মুতইম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলামে কোন শপথ নেই, শপথ ছিল জাহেলিয়াতের যুগে, ইসলাম এর দৃঢ়তা বৃদ্ধি করে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমে অনুরূপ বর্ণনা ইবনু আবি শায়বা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে) এর অর্থ এই যে, ইসলাম গ্রহণের পর এক দল অন্য দলের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে এবং একে অপরের সুখে- দুঃখে অংশ নেবে এইরূপ কসম করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। কেননা, ইসলামী সম্পর্ক সমস্ত মুসলমানকে ভাই ভাই করে দেয়। পূর্ব ও পশ্চিমের সুসলমানরা একে অপরের দুঃখে সমবেদনা জ্ঞাপন করে থাকে।

আর যে হাদীসটি হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের বাড়ীতে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে শপথ করিয়েছিলেন।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

এর ভাবার্থ এই যে, তিনি তাঁদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিলেন, এমন কি তারা একে অপরের মালের উত্তরাধিকারী হতেন। শেষ পর্যন্ত তা মানসূখ বা রহিত হয়ে যায়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলার এই নির্দেশ দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ মুসলসানদেরকে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার হুকুম করা যারা রাসূলুল্লাহর (সঃ) হাতে দীক্ষা গ্রহণ করে ইসলামের আহকাম মেনে চলার স্বীকারোক্তি করেছিলেন। তাদেরকে বলা হচ্ছেঃ “এরূপ গুরুত্বপূর্ণ কসম ও পূর্ণ। অঙ্গীকারের পর এটা যেন না হয় যে, মুহাম্মদের (সঃ) দলের স্বল্পতা ও মুশরিকদের দলের আধিক্য দেখে তোমরা কসম ভেঙ্গে দাও।”

হযরত নাফে’ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনগণ যখন ইয়াযীদ ইবনু মুআবিয়ার (রাঃ) বায়আত ভঙ্গ করতে থাকে তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর পরিবারের সমস্ত লোককে একত্রিত করেন এবং আল্লাহর প্রশংসাকীৰ্তন করতঃ (আরবি) বলার পর বলেনঃ “আমরা এই লোকটির (ইয়াযীদের হাতে বায়আত করেছি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) বায়আতের উপর। আর আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে একটি পতাকা গেড়ে দেয়া হবে এবং ঘোষণা করা হবেঃ “এটা হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার পরে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ ও তাঁর। রাসূলের (সঃ) বায়আত কারো হাতে করার পর তা ভেঙ্গে দেয়া হয়। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন এরূপ মন্দ কাজ না করে এবং সীমা ছাড়িয়ে না যায়, অন্যথায় আমার মধ্যে ও তার মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত হুযাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাই-এর কাছে এমন কোন শর্ত করে যা পুরো করার ইচ্ছা তার আদৌ থাকে না, সে ঐ ব্যক্তির মত যে তার প্রতিবেশীকে নিরাপত্তা দান করার পর আশ্রয়হীন অবস্থায় ছেড়ে দেয়।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

এরপর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধমকের সুরে বলেনঃ “যারা অঙ্গীকার ও কসমের হিফাযত করে না তাদের এই কাজ সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ ওয়াকিফহাল।”

মক্কায় একটি স্ত্রী লোক ছিল, যার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়েছিল। সে সূতা কাটতো। সূতা কাটার পরে যখন তা ঠিকঠাক ও মযবুত হয়ে যেতো, তখন সে বিনা কারণে তা ছিড়ে ফেলতো এবং টুকরো টুকরো করে দিতো। এটা দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ব্যক্তির, যে অঙ্গীকার ও কসম মযবুত করার পর তা ভঙ্গ করে দেয়। এটাই হচ্ছে সঠিক কথা। এখন আসলে এই ঘটনার সাথে এরূপস্ত্রীলোক জড়িত ছিল কি না, তা জানার আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। এখানে শুধুমাত্র দৃষ্টান্ত বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য।

এহাদীসটি এর অর্থ হচ্ছে টুকরা টুকরা। সম্ভবতঃ এটা (আরবি) এর (আরবি) হবে। আবার এটাও হতে পারে যে, (আরবি) এর (আরবি) এর (আরবি) হবে। অর্থাৎ তোমরা (আরবি) হয়ো না। এটা (আরবি) এর বহু বচন, (আরবি) হতে।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমরা তোমাদের কসমকে প্রবঞ্চনার মাধ্যম বানিয়ে নিয়ো না। এইভাবে যে, নিজের চেয়ে বড়দেরকে নিজের কসম দ্বারা শান্ত করে এবং ঈমানদারী ও নেকনামীর ছাঁচে নিজেকে ফেলে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানী করতে শুরু কর এবং তাদের সংখ্যাধিক্য দেখে তাদের সাথে সন্ধিস্থাপনের পর সুযোগ পেয়ে আবার যুদ্ধ শুরু করে দাও। খবরদার! এইরূপ করো না। সুতরাং ঐ অবস্থাতেও যখন চুক্তি ভঙ্গ করাহারাম, তখন নিজের বিজয় ও সংখ্যাধিকোর সময় তো আরো হারাম হবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যে, আমরা সূরায়ে আনফালে হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) ঘটনা লিখে এসেছি। তা এই যে, তাঁর মধ্যে ও রোমক সম্রাটের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ঐ মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় নিকটবর্তী হলে তিনি তার সেনাবাহিনীকে রোম সীমান্তে পাঠিয়ে দেন যে, তারা যেন শিবির সন্নিবেশ করে এবং মেয়াদ শেষ হওয়া মাত্রই অকস্মাৎ আক্রমণ চালিয়ে দেয়, যেন তারা প্রস্তুতি গ্রহণে সুযোগ না পায়। হযরত আমর ইবনু উৎবার (রাঃ) কানে যখন এই খবর পৌঁছে, তখন তিনি আমীরুল মু’মিনীন হযরত মুআবিয়ার (রাঃ) নিকট আসেন এবং তাঁকে বলেনঃ “আল্লাহু আকবার! হে মুআবিয়া (রাঃ) ! অঙ্গীকার পূর্ণ করুন এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তি ভঙ্গের দোষ থেকে দূরে থাকুন। আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ যে কওমের সাথে চুক্তি হয়ে যায়, চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন বন্ধন খোলার অনুমতি নেই (অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা চলবে না।” একথা শুনা মাত্রই হযরত মুআবিয়া (রাঃ) তার সেনাবাহিনীকে ফিরে আসতে বলেন।

(আরবি) শব্দের অর্থ হচ্ছে অধিক। এই বাক্যের অর্থ এটাও হতে পারেঃ “যখন দেখলো সৈন্য সংখ্যা অধিক ও শক্তিশালী তখন সন্ধি করে নিলো এবং এই সন্ধিকে প্রবঞ্চনার মাধ্যম করে তাদেরকে অপ্রস্তুত করতঃ অকস্মাৎ আক্রমণ করে বসলো।” আবার ভাবার্থ এও হতে পারেঃ “এক কওমের সঙ্গে চুক্তি করলো। তারপর দেখলো যে, অপর কওম তাদের চেয়ে শক্তিশালী। তখন তাদের দলে ভিড়ে গেল এবং পূর্ববর্তী কওমের সঙ্গে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে দিলো।” এসব নিষিদ্ধ। এই আধিক্য দ্বারা আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন। কিংবা তিনি নিজের এই হুকুম দ্বারা অর্থাৎ অঙ্গীকার পালনের হুকুম দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করেন। আর কিয়ামতের দিন তিনি তোমাদের মধ্যে সঠিক ফায়সালা করবেন। প্রত্যেককে তিনি তার আমলের বিনিময় প্রদান করবেন, ভাল আমলকারীদেরকে ভাল বিনিময় এবং মন্দ আমলকারীদেরকে মন্দ বিনিময়।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 91-92
[ وَ اَوۡفُوۡا بِعَہۡدِ
Fulfill the covenants.]
www.motaher21.net
The Command to fulfill the Covenant

Allah says:

وَأَوْفُواْ بِعَهْدِ اللّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ

And fulfill the covenants (taken in the Name of) Allah when you have taken them,

This is one of the commands of Allah, to fulfill covenants, keep promises and to fulfill oaths after confirming them.

Thus Allah says:

وَلَا تَنقُضُواْ الَايْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا

and do not break the oaths after you have confirmed them.

There is no conflict between this and the Ayat:

وَلَا تَجْعَلُواْ اللَّهَ عُرْضَةً لاًّيْمَـنِكُمْ

And do not use Allah as an excuse in your oaths. (2:224)

ذلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَـنِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ وَاحْفَظُواْ أَيْمَـنَكُمْ

That is the expiation for oaths when you have sworn. And protect your oaths. (5:89)

meaning, do not forgo your oaths without offering the penance.

There is also no conflict between this Ayah (16:91) and the Hadith reported in the Two Sahihs according to which the Prophet said:

إِنِّي وَاللهِ إِنْ شَاءَ اللهُ لَا أَحْلِفُ عَلَى يَمِينٍ فَأَرَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا إِلاَّ أَتَيْتُ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَتَحَلَّلْتُهَا وَفِي رِوَايَةٍ وَكَفَّرْتُ عَنْ يَمِينِي

By Allah, if Allah wills, I will not swear an oath and then realize that something else is better, but I do that which is better and find a way to free myself from the oath.

According to another report he said:

“and I offer penance for my oath.”

There is no contradiction at all between all of these texts and the Ayah under discussion here, which is:
وَلَا تَنقُضُواْ الَايْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا
(and do not break the oaths after you have confirmed them), because these are the kinds of oaths that have to do with covenants and promises, not the kind that have to do with urging oneself to do something or preventing him from doing something.

Therefore Mujahid said concerning this Ayah:
وَلَا تَنقُضُواْ الَايْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا
(and do not break the oaths after you have confirmed them),

“The oath here refers to oaths made during Jahiliyyah.”

This supports the Hadith recorded by Imam Ahmad from Jubayr bin Mut`im, who said that the Messenger of Allah said:

لَاا حِلْفَ فِي الاْاِسْلَامِ وَأَيُّمَا حِلْفٍ كَانَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ لَاا يَزِيدُهُ الاْاِسْلَامُ إِلاَّ شِدَّة

There is no oath in Islam, and any oath made during the Jahiliyyah is only reinforced by Islam.

This was also reported by Muslim.

The meaning is that Islam does not need oaths as they were used by the people of the Jahiliyyah; adherence to Islam is sufficient to do away with any need for what they used to customarily give oaths for.

In the Two Sahihs it was reported that Anas said:

“The Messenger of Allah swore the treaty of allegiance between the Muhajirin (emigrants) and the Ansar (helpers) in our house.”

This means that he established brotherhood between them, and they used to inherit from one another, until Allah abrogated that. And Allah knows best.

وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلً

– and indeed you have appointed Allah as your guarantor.

إِنَّ اللّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

Verily, Allah knows what you do.

This is a warning and a threat to those who break their oaths after confirming them.

Allah says.
وَلَا تَكُونُواْ كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِن بَعْدِ قُوَّةٍ أَنكَاثًا

And do not be like the one who undoes the thread which she has spun, after it has become strong,

Abdullah bin Kathir and As-Suddi said:

“This was a foolish woman in Makkah. Every time she spun thread and made it strong, she would undo it again.”

Mujahid, Qatadah and Ibn Zayd said:

“This is like the one who breaks a covenant after confirming it.”

This view is more correct and more apparent, whether or not there was a woman in Makkah who undid her thread after spinning it.

The word Ankathan could be referring back to the word translated as “undoes”, reinforcing the meaning,

or it could be the predicate of the verb “to be”, meaning, do not be Ankathan, the plural of Nakth (breach, violation), from the word Nakith (perfidious).

Hence after this, Allah says:

تَتَّخِذُونَ أَيْمَانَكُمْ دَخَلً بَيْنَكُمْ

by taking your oaths as a means of deception among yourselves,

meaning for the purposes of cheating and tricking one another.

أَن تَكُونَ أُمَّةٌ هِيَ أَرْبَى مِنْ أُمَّةٍ

when one group is more numerous than another group.

meaning, you swear an oath with some people if they are more in number than you, so that they can trust you, but when you are able to betray them you do so.

Allah forbids that, by showing a case where treachery might be expected or excused, but He forbids it. If treachery is forbidden in such a case, then in cases where one is in a position of strength it is forbidden more emphatically.

Mujahid said:

“They used to enter into alliances and covenants, then find other parties who were more powerful and more numerous, so they would cancel the alliance with the first group and make an alliance with the second who were more powerful and more numerous. This is what they were forbidden to do.”

Ad-Dahhak, Qatadah and Ibn Zayd said something similar.

إِنَّمَا يَبْلُوكُمُ اللّهُ بِهِ

Allah only tests you by this,

Sa`id bin Jubayr said:

“This means (you are tested) by the large numbers.”

This was reported by Ibn Abi Hatim.

Ibn Jarir said:

“It means (you are being tested) by His command to you to adhere to your covenants.”

وَلَيُبَيِّنَنَّ لَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

And on the Day of Resurrection, He will certainly clarify that which you differed over.

Everyone will be rewarded or punished in accordance with his deeds, good or evil.

Leave a Reply