أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 820)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
৯৭ নং আয়াত:-
[ مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی
মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে,
Whoever does righteousness, whether male or female,]
www.motaher21.net
مَنۡ عَمِلَ صَالِحًا مِّنۡ ذَکَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ ہُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَنُحۡیِیَنَّہٗ حَیٰوۃً طَیِّبَۃً ۚ وَ لَنَجۡزِیَنَّہُمۡ اَجۡرَہُمۡ بِاَحۡسَنِ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۹۷﴾
মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, অবশ্যই আমরা তাকে পবিত্র জীবন দান করব। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে তারা যা করত তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেব।
Whoever does righteousness, whether male or female, while he is a believer – We will surely cause him to live a good life, and We will surely give them their reward [in the Hereafter] according to the best of what they used to do.
৯৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন যে, কোন পুরুষ বা নারী যদি ঈমানের সাথে সৎ আমল করে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুটি উপহার দেবেন একটি দুনিয়াতে অপরটি আখিরাতে। দুনিয়াতে তাকে حَيٰوةً طَيِّبَةً তথা সুখী-সুন্দর জীবন দান করবেন। অর্থাৎ দুনিয়াতে পবিত্র ও হালাল রিযিক, সুখ সম্ভোগ, মনের তৃপ্তি, ইবাদতের স্বাদ, আনুগত্যের মজা ইত্যাদি সবই দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ঐ ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে যথেষ্ট পরিমাণ রিযিক দান করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দিয়েছেন তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থেকেছে। (তিরমিযী হা: ২৩৪৮, সহীহ)
আর আখিরাতে তাকে কাজের চেয়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিদান দেবেন। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَعْدَدْتُ لِعِبَادِيَ الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ، وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلَا خَطَرَ عَلَي قَلْبِ بَشَرٍ)
আমি আমার সৎ বান্দাদের জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তর কল্পনাও করেনি। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৪)
তবে কোন আমল সৎ আমল হিসেবে গণ্য হবার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে
১. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أُمِرُوْآ إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَا۬ءَ وَيُقِيْمُوا الصَّلٰوةَ وَيُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ)
“তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা বিশুদ্ধচিত্তে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। ” (সূরা বাইয়্যেনাহ ৯৮:৫)
২. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ ج وَمَا نَهٰكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا)
“রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।”(সূরা হাশর ৫৯:৭)
সুতরাং কোন মুসলিম ব্যক্তি উক্ত শর্ত ছাড়া আমল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবার আশা করা যায় না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা সৎ আমল করবে তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সফলকাম হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এ আয়াতে মু’মিন ও কাফের উভয় দলের এমন সব সংকীর্ণচেতা ও বেসবর লোকদের ভুল ধারণা দূর করা হয়েছে, যারা মনে করে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বিশ্বস্ততা ও পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতার পথ অবলম্বন করলে মানুষের পরকালে সাফল্য অর্জিত হলেও তার পার্থিব জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের জবাবে আল্লাহ বলছেন, তোমাদের এ ধারণা ভুল। এ সঠিক পথ অবলম্বন করলে শুধু পরকালীন জীবনই সুগঠিত হয় না, দুনিয়াবী জীবনও সুখী সমৃদ্ধিশালী হয়। যারা প্রকৃতপক্ষে ঈমানদার, পবিত্র-পরিচ্ছন্ন এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ও সৎ তাদের পার্থিব জীবন, বেঈমান ও অসৎকর্মশীল লোকদের তুলনায় সুস্পষ্টভাবে ভাল ও উন্নত হয়। নিজেদের নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের কারণে তারা যে প্রকৃত সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করেন তা অন্যেরা লাভ করতে পারে না। যেসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উত্তম সাফল্য তারা লাভ করে থাকেন তাও অন্যেরা লাভ করতে পারে না। কারণ অন্যদের প্রতিটি সাফল্য হয় নোংরা ও ঘৃণিত পদ্ধতি অবলম্বনের ফসল। সৎলোকেরা ছেঁড়া কাঁথায় শয়ন করেও যে মানসিক প্রশান্তি ও চিন্তার স্থৈর্য লাভ করেন তার সামান্যতম অংশও প্রাসাদবারী বেঈমান দুষ্কৃতিকারী লাভ করতে পারে না।
# আখেরাতে তাদের মর্যাদা তাদের সর্বোত্তম কর্মের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত হবে। অন্য কথায় যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ছোট বড় সব রকমের সৎকাজ করে থাকবে তাকে তার সবচেয়ে বড় সৎকাজের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতম মর্যাদা দান করা হবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*উত্তম কাজের পুরস্কারের ব্যাপারে কোরআনের মূলনীতি : এরশাদ হচ্ছে, ‘আর অবশ্যই আমি সবরকারীদেরকে তাদের সুন্দর কাজের জন্যে মহা প্রতিদান দেবাে'(আয়াত ৯৭) আর এ পর্যন্ত (আল্লাহর হুকুমের বিপরীত) যা কিছু অন্যায় কাজ সংঘটিত হয়েছে আল্লাহ তায়ালা তা মাফ করে দেবেন, যাতে করে ভাল কাজের পুরস্কার নিশ্চিত হয়ে যায় এবং অন্যায় কাজের দ্বার রদ্ধ হতে থাকে। এ পর্যায়ে এসে ভাল কাজ ও তার পুরস্কার সম্বন্ধীয় কিছু সাধারণ মূলনীতি পেশ করা হচ্ছে, পুরুষ বা নারী, যে কেউ কোনাে ভাল করবে, যদি সে মােমেন হয়, তাহলে তাকে আমি মহান আল্লাহ দান করব এক পবিত্র জীবন এবং যা কিছু ভাল কাজ তারা করবে তার উত্তম প্রতিদান দেব।’ এই প্রতিশ্রুতির ফলশ্রুতিতে নীচে বর্ণিত কিছু মূলনীতি নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে, প্রথম পুরুষ ও নারী-এই যে দুই মানব শ্রেণী, তারা কাজ ও তার পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে সমান অধিকারী, তাদের এ নেক কাজের দরুণ আল্লাহর সাথে সমানভাবে তাদের সম্পর্ক স্থাপিত হবে এবং উভয়েই তারা একইভাবে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করবে। এখানে লক্ষ্যযােগ্য, ‘মান’ শব্দটি পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্যেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তবে যদি কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে এ শব্দটি দ্বারা কোনাে এক শ্রেণীকে চিহ্নিত করা হয়, তবে আলাদা কথা। এরশাদ হচ্ছে, ‘পুরুষ নারী যেইই হােক না কেন’ একথাটি আল্লাহর মূল বিবৃতির মধ্যে একটি অতিরিক্ত সংযােজন, অর্থাৎ মূল বিষয় হচ্ছে চুক্তি রক্ষা, তার সাথে-এই কাজ পুরুষ-নারী যেইই করুক তার জন্যে রয়েছে মহাপ্রতিদান- একথাটা বলা হয়েছে সেই সূরাতে যেখানে জাহেলিয়াতের যামানায় নারীদের সাথে করা দুর্ব্যবহারের বিস্তারিত বিবরণ এসেছে, এসেছে ওই সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভংগীর কথা, আরও এসেছে কন্যা সন্তান জন্মের খবরে আরববাসীর মুখ কালো হয়ে যাওয়ার কথা, আরও এসেছে, ওই জাহেলি সমাজে কন্যা সন্তান জন্মের খবর শােনার সাথে সাথে লজ্জায়, দুঃখ ও আত্ম-গ্লানির কারণে মুখ লুকিয়ে বেড়ানাের কথা। অবশ্যই উত্তম কাজের জন্যে এমন কিছু মূলনীতি থাকা প্রয়ােজন যাকে কেন্দ্র করে মানুষের আচার ব্যাবহার আবতির্ত হতে পারে-এ মূলনীতি হচ্ছে, আল্লাহর শক্তি ক্ষমতার উপর ঈমান, অর্থাৎ প্রগাঢ় বিশ্বাস ও দৃঢ় আস্থা। এই জন্যে শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে ‘অহুয়া মুমিন’-অর্থাৎ যদি সে পুরুষ বা নারী-‘মুমিন’ হয়, এই মূল নীতির ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে মুসলিম-জীবনের যে প্রাসাদ তা ধ্বংস স্তুপে পরিণত হবে যদি এ মূলনীতি নড়বড়ে হয়ে যায়-বরং আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, যদি বিশ্বাসের এই বুনিয়াদ দুর্বল হয়ে যায় তাহলে মুসলিম সমাজের প্রাসাদ কিছুতেই মযবুত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না-ঈমানের এই সম্পর্কের কারণে মুসলিম সমাজের মধ্যে ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে যে দৃঢ় সম্বন্ধ গড়ে ওঠে তার কল্পনাও করা যায় না ঈমানী মযবুতীর অভাবে। ঈমানের দাবী হচ্ছে, আল্লাহ ও রসূল(স.)-এর পক্ষ থেকে যখন কোনাে ফয়সালা এসে যাবে তখন কোনাে পুরুষ বা নারী যেই হােক না কেন, তার স্বাধীন কোনাে মতামত বা অধিকার সে খাটাতে পারবে না-নতশীরে সে বলবে ‘আ-মান্না ওয়া সাল্লামানা’-বিশ্বাস করলাম ও মেনে নিলাম। আর যেহেতু মুসলিম সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি এইভাবে আল্লাহ ও রসূলের হুকুম মেনে নেবে, এই জন্যে তাদের নিজ নিজ মতামত খাটিয়ে গন্ডগােল বাধানাের সুযােগ কমে যাবে। কাজেই এই বিশ্বাসই এমন এক মযবুত কেন্দ্রবিন্দু বা মধ্য খুঁটি যাকে কেন্দ্র করে মুমিন যিন্দেগীর সকল কাজ ও ব্যবহার আবর্তিত হয়। এই মূলনীতি দৃঢ়ভাবে স্থাপিত না হলে মুসলিম সমাজের ব্যক্তিদের মধ্যে অবস্থিত বিভিন্নমুখী চিন্তাধারা তাদেরকে বিছিন্ন করে ফেলবে এবং তাদের পারস্পরিক বন্ধন হয়ে যাবে শিথিল। ঈমানের এই রশিটি দুর্বল হয়ে গেলে তাগুতি শক্তির সামান্য ধাক্কাতেই তারা পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যাবে। সুতরাং সন্দেহাতীতভাবে এটা প্রমাণিত হলাে যে, যে কোনাে ভাল কাজের জন্যে এই বিশ্বাসই হচ্ছে মূল পরিচালিকা শক্তি, যা ভাল কে মূল শিকড়ের সাথে মযবুতভাবে জুড়ে রাখে এই বিশ্বাস এতােটা মযবুত হতে হবে যে মানুষের কুপ্রবৃত্তি বা স্বাধীন ইচ্ছার প্রচন্ড ধাক্কায় এটা যেন নড়বড়ে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ বিশ্বাস সাময়িক কোনাে আবেগ নয় যে এখন আছে তখন নেই, আজ আছে, কাল শেষ হয়ে যাবে-এই হৃদয়াবেগই হচ্ছে সেই স্থায়ী ও অমােঘ শক্তি যা দুনিয়ার যে কোনাে ঝড়-ঝাপটার মােকাবেলায় দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। বাত্যাতাড়িত হয়ে বেতসী পত্রের ন্যায় এদিকে সেদিকে ঝুঁকে পড়ে না। আল্লাহর ওপর ঈমান অথবা আল্লাহর অস্তিত্ব, শক্তি ও ক্ষমতার প্রতি দৃঢ় আস্থার সাথে এর পরিচয়বাহী আমলে সালেহ ভালাে কাজ যার দ্বারা মানুষের উপকার হয় তা অবশ্যই করতে হবে। আবারও বলছি, এই আমলে সালেহ চায় প্রেরণাদায়ক এক মযবুত পরিচালিকা শক্তি, যাকে কেন্দ্র করে এই আমলে সালেহ চলতে পারে, আবর্তিত হতে পারে ঘুরতে পারে সেই বুনিয়াদী খুঁটিকে কেন্দ্র করে যেমন করে অনুগত পশুরা ফসল মাড়াইয়ের জন্যে মধ্য খুঁটিকে কেন্দ্র করে পরিচালকের ইচ্ছামত ঘুরতে থাকে। এহেন ঈমান বিজড়িত আমালে সালেহ (নেক কাজ)-এর পুরস্কার হচ্ছে পার্থিব সকল প্রকার কলুষতা মুক্ত এক পবিত্র যিন্দেগী। ঈমান সমৃদ্ধ উদ্বেগ মুক্ত পার্থিব এ যিন্দেগীতে দেখা যায় শান্তি-সমৃদ্ধি-সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি, দয়া-ভালবাসা সহযােগিতা সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতা। এ যিন্দেগী উন্নতি হয় সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, আত্মম্ভরিতা ও নিষ্ঠুরতার উর্ধে। এই ঈমানের অভাবে গােটা জীবনই হয়ে যায় ছাইয়ের মতাে ধূলাবালি, যা ঝড়ের দিনে প্রচন্ড বাতাসের তাড়নে অতি সহজেই উড়তে থাকে। মােমেনের জীবনে আকীদা বিশ্বাসই তার জন্যে এক মযবুত লক্ষ্য স্থির করে দেয়, এই লক্ষ্যে পৌছানাের জন্যে মােমেনের মধ্যে সারাক্ষণ চিন্তা চেষ্টা বিরাজ করতে থাকবে, যা তাকে নিয়ে যায় তার মূল কেন্দ্রের দিকে যেখান থেকে তার জীবনের যাত্রা হয়েছিলাে শুরু। তখন এটা স্থায়িত্বহীন কোনাে সাময়িক আবেগ থাকে না, যা নফসানিয়াতের যে কোনাে দোলায় নুয়ে পড়বে, হারিয়ে ফেলবে জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে। ঈমানের সাথে আমলে সালেহ যুক্ত হয়ে বয়ে আনে পবিত্র এক জীবন। এমনই এক যিন্দেগীতে মােমেনরা আখেরাতের উদ্দেশ্যে যে সংযম সাধনা করে, আত্মনিয়ন্ত্রণ করে ও সর্বপ্রকার প্রতিকূল অবস্থায় অবিচল থেকে রসূলুল্লাহ (স.)-এর অনুসরণে সর্বপ্রকার ভাল কাজে আত্মনিয়ােগ করে, তাদের জন্যে রয়েছে, দুনিয়ার পবিত্র জীবন শেষে আখেরাতের উত্তম বিনিময়-নেয়ামত ভরা বেহেশত। এসব বলিষ্ঠ ঈমানের অধিকারী ব্যক্তিরা দুনিয়ায় সুখ সম্পদ কতােটা পেলাে তার পরওয়া করে না, তাই বলে তারা যে দুনিয়ায় কিছু পায় না তাও নয়, দুনিয়াতে আল্লাহর ইচ্ছাতে তার বরাদ্দকৃত বস্তুগত নেয়ামতের একটা হিসসা অবশ্যই তারা পায়, কিন্তু এ বস্তুগত নেয়ামত ছাড়া তারা আরাে এমন মূল্যবান কিছু পায়, যার কারণে তৃপ্তিতে তাদের হৃদয়মন পুলকিত হয়ে যায়; আর তা হচ্ছে কলুষতা মুক্ত পবিত্র জীবনের এক অনুভূতি: এই অনুভূতির সাথে জড়িয়ে থাকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের মধুর পরশ, তার প্রতি বিশ্বস্ত থাকার আত্মবিশ্বাস এবং সর্বাবস্থায় তার পরিচালনায়, হেফাযতে ও সন্তুষ্টির মধ্যে থাকতে পারার পরম তৃপ্তি। আরাে থাকে আমলে সালেহপূর্ণ জীবনে সঠিক পথে টিকে থাকতে পারার বলিষ্ঠ চেতনা, নিরুদ্বেগ ও শান্ত সৌম্য চালচলন, সন্তুষ্টি ও বরকত প্রাপ্তির নিশ্চিন্ত, ঘরের শান্তি এবং পারস্পরিক ভালবাসাবাসির পরিবেশ; উপরন্তু ভাল কাজ করতে পারার এক অনাবলি শান্তি ও খুশী এবং এ খুশীর ছাপ গােটা দেহ-মন ও জীবনের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হওয়ায় তারা হয়ে যায় নিশ্চিন্ত, নির্লিপ্ত পরম পরিতৃপ্ত ও ধন্য। দুনিয়ার জীবনের জন্যে বস্তুগত সম্পদ মানুষের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার একটি মাত্র উপকরণ যা সেই দিন বুঝবে যেদিন তারা মিলিত হবে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইযযতের সাথে, যে দিন তার সান্নিধ্যে গিয়ে তারা দেখতে পাবে তাদের নেক আমলগুলাে বয়ে এনেছে তাদের জন্যে আরাে অনেক বড়, আরাে পবিত্র এবং আরাে স্থায়ী সওগাত। তাদের অনন্ত জীবনের জন্য, এক নগণ্য ভূমিকা পালন করে-এটা সঠিকভাবে তারা আর এটাও বিবেচনাযােগ্য যে দুনিয়ার মধ্যে, আমলে সালেহ করার কারণে, এখানে যেমন পাওয়া যাচ্ছে অনাবিল শান্তি, তেমনি আখেরাতের জীবনে পাওনাও তাদের কোনাে অংশে কমে যাবে না। আর আখেরাতের প্রতিদান তাে এজন্যেই আসবে যে, দুনিয়ার জীবনে মােমেনরা সর্বোত্তম কাজলাে করেছে; আরাে আশার কথা, ভালাে কাজ করতে থাকার প্রবণতা ও প্রচেষ্টার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্রটিবিচ্যুতিগুলাে ক্ষমা করে দেবেন বলে এখানে পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা দিচ্ছেন। এর থেকে উত্তম প্রতিদান আর কি হতে পারে!
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা ওয়াদা করছেনঃ “আমার যে সব বান্দা অন্তরে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) উপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখে এবং কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলিল্লাহ (সঃ)-কে সামনে রেখে ভাল কাজ করতে থাকে, আমি তাদেরকে দুনিয়াতেও উত্তম ও পবিত্র জীবন দান করবো, সুখে-শান্তিতে তারা জীবন যাপন করবে, তারা পুরুষই হোক বা নারীই হোক, আর আখেরাতেও তাদেরকে তাদের সৎ আমলের উত্তম প্রতিদান প্রদান করবো। তারা দুনিয়ায় পবিত্র ও হালাল জীবিকা, সুখ সম্ভোগ, মনের তৃপ্তি, ইবাদতের স্বাদ, আনুগত্যের মজা ইত্যাদি সবই আমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ ব্যক্তি সফলকাম হলো যে মুসলমান হলো, বরাবরই তাকে জীবিকা দান করা হলো এবং আল্লাহ তাকে যা দিলেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকলো। (হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ফুযালা ইবনু আবীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছেনঃ “যাকে ইসলামের জন্যে হিদায়াত দান করা হয়েছে, পেট পালনের জন্যে রুজী দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতেই সন্তুষ্ট হয়েছে, সে সফলকাম হয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা তাঁর মুমিন বান্দার উপর যুলুম করেন না। বরং তার সৎ কাজের পূণ্য তাকে দেন। আর কাফির তার ভাল কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই পেয়ে যায়, আখেরাতে তার জন্যে কোন অংশ বাকী থাকে না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) একাই এটা তাখরীজ করেছেন)।
Tafsir Ibne Kasir said:-
Righteous Deeds and their Reward
Allah says:
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَى وَهُوَ مُوْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
Whoever does righteous deeds – whether male or female – while he (or she) is a believer; then We will certainly give them a good life, and We will certainly grant them their rewards in proportion to the best of what they used to do.
This is a promise from Allah to those Children of Adam, male or female, who do righteous deeds – deeds in accordance with the Book of Allah and the Sunnah of His Prophet, with a heart that believes in Allah and His Messenger, while believing that these deeds are commanded and enjoined by Allah.
Allah promises that He will give them a good life in this world and that He will reward them according to the best of their deeds in the Hereafter.
The good life includes feeling tranquility in all aspects of life.
It has been reported that;
Ibn Abbas and a group (of scholars) interpreted it to mean good, lawful provisions.
It was reported that Ali bin Abi Talib interpreted as;
contentment.
This was also the opinion of Ibn Abbas, Ikrimah and Wahb bin Munabbih.
Ali bin Abi Talhah recorded from Ibn Abbas that;
it meant happiness.
Al-Hasan, Mujahid and Qatadah said:
“None gets (this) good life (mentioned) except in Paradise.”
Ad-Dahhak said:
“It means lawful provisions and worship in this life.”
Ad-Dahhak also said:
“It means working to obey Allah and finding joy in that.”
The correct view is that a good life includes all of these things. as found in the Hadith recorded by Imam Ahmad from Abdullah bin `Amr that the Messenger of Allah said:
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ أَسْلَمَ وَرُزِقَ كَفَافًا وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا اتَاه
He who submits (becomes a Muslim) has succeeded, is given sufficient provisions, and is content with Allah for what he is given.
It was also recorded by Muslim.