أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 822)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১০১-১০২ নং আয়াত:-
[ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
Rather, most of them know not. ]
www.motaher21.net
وَ اِذَا بَدَّلۡنَاۤ اٰیَۃً مَّکَانَ اٰیَۃٍ ۙ وَّ اللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا یُنَزِّلُ قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُفۡتَرٍ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾
আমি যখন এক আয়াতের পরিবর্তে অন্য এক আয়াত অবতীর্ণ করি — আর আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেন, তা তিনিই ভাল জানেন — তখন তারা বলে, ‘তুমি তো শুধু একজন মিথ্যা উদ্ভাবনকারী।’ কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
And when We substitute a verse in place of a verse – and Allah is most knowing of what He sends down – they say, “You, [O Muhammad], are but an inventor [of lies].” But most of them do not know.
قُلۡ نَزَّلَہٗ رُوۡحُ الۡقُدُسِ مِنۡ رَّبِّکَ بِالۡحَقِّ لِیُـثَبِّتَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ ہُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾
বলুন, ‘আপনার রবের কাছ থেকে রূহুল-কুদুস (জিবরীল) যথাযথ ভাবে একে নাযিল করেছেন, যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সুদৃঢ় করার জন্য এবং হিদায়াত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ’।
Say, [O Muhammad], “The Pure Spirit has brought it down from your Lord in truth to make firm those who believe and as guidance and good tidings to the Muslims.”
১০১-১০২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন আয়াত অবতীর্ণ করে অতঃপর তা পরিবর্তন করা অর্থাৎ রহিত করে বা ভুলিয়ে দিয়ে অন্য কোন উত্তম বা তদ্রƒপ আয়াত নিয়ে আসার কাজ তিনিই করে থাকেন। তিনি যখন খুশি তা অবতীর্ণ করেন আবার ইচ্ছা হলে তা পরিবর্তন করে একটি নতুন বিধান ঐ স্থানে নিয়ে আসেন। আর এই কারণে কাফির-মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যাবাদী মনে করত। তারা বলত: এটা যদি আল্লাহ তা‘আলার বিধান হয় তাহলে এটা পরিবর্তন করা হয় কেন? আল্লাহ তা‘আলার বিধান তো স্থির থাকবে। এটা তাদের জ্ঞানের স্বল্পতার পরিচয়। আল্লাহ তা‘আলা কি অবতীর্ণ করবেন এবং কী জন্য পরিবর্তন করবেন তা তিনিই ভাল জানেন। আর এ পরিবর্তন তিনিই করেন এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিজের পক্ষ থেকে করেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَا نَنْسَخْ مِنْ اٰيَةٍ أَوْ نُنْسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَآ أَوْ مِثْلِهَا ط أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّٰهَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)
“আমি কোন আয়াত রহিত করলে কিংবা আয়াতটিকে বিস্মৃত করিয়ে দিলে তার চেয়ে উত্তম বা তদনুরূপ আনয়ন করি; তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সর্ব বিষয়ের ওপরই ক্ষমতাবান?” (সূরা বাক্বারাহ ২:১০৬)
তবে কোন বিধানকে রহিত করে অন্য বিধান নিয়ে আসার পেছনে কী হিকমত রয়েছে তা সূরা বাকারার ১০৬ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে জিবরীল (عليه السلام)-এর মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়েছে। আর এটা সত্য কিতাব।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ مَنْ كَانَ عَدُوًّا لِّجِبْرِيْلَ فَإِنَّه۫ نَزَّلَه۫ عَلٰي قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّٰهِ)
“তুমি বল যে ব্যক্তি জিবরীলের সাথে শত্র“তা রাখে (সে হিংসায় মরে যাক) সে তো আল্লাহর হুকুমে এ কুরআনকে তোমার অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছিয়েছেন।” (সূরা বাকারাহ ২:৯৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَاِنَّھ۫ لَتَنْزِیْلُ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَﰏﺚنَزَلَ بِھِ الرُّوْحُ الْاَمِیْنُﰐﺫعَلٰی قَلْبِکَ لِتَکُوْنَ مِنَ الْمُنْذِرِیْنَﰑﺫبِلِسَانٍ عَرَبِیٍّ مُّبِیْنٍﰒﺚ)
“নিশ্চয়ই এ কুরআন জগতসমূহের প্রতিপালক হতে অবতীর্ণ। জিব্রীল এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার। (অবতীর্ণ করা হয়েছে) সুস্পষ্ট আরবি ভাষায়।” (সূরা শু‘আরা ২৬:১৯২-১৯৫)
এ কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে ঈমানের ওপর অটল রাখেন এবং সুসংবাদ প্রদান করেন। যখন মু’মিনরা কোন বিপদে পড়ে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আখিরাতের উত্তম প্রতিদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন ফলে তারা ঈমানের পথে ধৈর্য ধারণ করে। অতএব এতে কোন প্রকার মিথ্যা কোন কিছু নেই। এটা বাস্তবই আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে। কিন্তু তারা নির্বোধ যার কারণে এমনটি মনে করে থাকে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছানুসারে কুরআনের কোন বিধান পরিবর্তন করে নতুন বিধান অবতীর্ণ করতেন, এটা সত্য।
২. কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব।
৩. কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে জিবরীল (عليه السلام)-এর মাধ্যমে।
৪. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীনের মধ্যে নিজের কোন মতামত প্রবেশ করাননি।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এক আয়াতের জায়গায় অন্য আয়াত নাযিল করার অর্থ একটি হুকুমের পরে অন্য একটি হুকুম পাঠানোও হতে পারে। কারণ কুরআন মজীদের বিধানগুলো পর্যায়ক্রমে নাযিল হয়েছে এবং বহুবার একই ব্যাপারে কয়েক বছর পর পর ধারাবাহিকভাবে, একটি করে, দু’টি করে বা তিনটি করে হুকুম পাঠানো হয়েছে। যেমন মদের ব্যাপারে বা যিনার শাস্তির ব্যাপারে ঘটেছে। কিন্তু এ অর্থ গ্রহণ করতে আমি ইতস্তত করছি এজন্য যে, সূরা নাহলের এ আয়াতটি মক্কী যুগে নাযিল হয়। আর যতদূর আমি জানি সে সময় নাযিলকৃত বিধিসমূহে এ পর্যায়ক্রমিক ধারা অবলম্বনের কোন দৃষ্টান্ত নেই। তাই আমি এখানে “এক আয়াতের জায়গায় অন্য এক আয়াত নাযিল করা”র অর্থ এই মনে করি যে, কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে কখনো একটি বিষয়স্তুকে একটি উপমা বা দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝানো হয়েছে আবার কখনো ঐ একই বিষয়বস্তু বুঝাবার জন্য অন্য একটি দৃষ্টান্ত বা উপমার সাহায্য নেয়া হয়েছে। একই কাহিনী বারবার এসেছে এবং প্রত্যেক বারই তাকে ভিন্ন শব্দে বর্ণনা করা হয়েছে। একটি বিষয়ের কখনো একটি দিক পেশ করা হয়েছে এবং কখনো সেই একই বিষয়ের অন্য একটি দিক সামনে আনা হয়েছে। একটি কথার জন্য কখনো একটি যুক্তি পেশ করা হয়েছে আবার কখনো পেশ করা হয়েছে অন্য একটি যুক্তি।
একটি কথা এক সময় সংক্ষেপে বলা হয়েছে এবং অন্য সময় বলা হয়েছে বিস্তারিতভাবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, নাউযুবিল্লাহ, নিজেই এ কুরআন রচনা করেন বলে মক্কার কাফেররা যে কথা বলতো— এ জিনিসটিকেই তারা তার প্রমাণ গণ্য করতো। তাদের যুক্তি ছিল, আল্লাহর জ্ঞান যদি এ বাণীর উৎস হতো, তাহলে সব কথা একই সঙ্গে বলে দেয়া হতো। আল্লাহ তো মানুষের মত অপরিপক্ব ও কম জ্ঞানের অধিকারী নন। কাজেই তিনি কেন চিন্তা করে করে কথা বলবেন, ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে তথ্য জ্ঞান লাভ করতে থাকবেন এবং একটি কথা সঠিকভাবে খাপখেয়ে না বসতে পারলে অন্য এক পদ্ধতিতে কথা বলবেন? তোমার এ বাণীর মধ্যে তো মানবিক জ্ঞানের দুর্বলতা ধরা পড়েছে।
# “রূহুল কুদস” এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে ‘পবিত্র রূহ’ বা ‘পবিত্রতার রূহ।’ পারিভাষিকভাবে এ উপাধিটি দেয়া হয়েছে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালামকে। এখানে অহী বাহক ফেরেশতার নাম না নিয়ে তার উপাধি ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রোতাদেরকে এ সত্যটি জানানো যে, এমন একটি রূহ এ বাণী নিয়ে আসছেন যিনি সকল প্রকার মানবিক দুর্বলতা ও দোষ-ত্রুটি মুক্ত। তিনি এমন পর্যায়ের অবিশ্বস্ত নন যে, আল্লাহ যা পাঠান, তিনি নিজের পক্ষ থেকে তার সাথে অন্য কিছু মিশিয়ে দিয়ে তাকে অন্য কিছু বানিয়ে দেন। তিনি কোন দুরভিসন্ধিকারী বা কুচক্রী নন যে, নিজের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থে ধোঁকাবাজী ও প্রবণতার আশ্রয় নেবেন। তিনি একটি নিখাদ পবিত্র পরিচ্ছন্ন রূহ। আল্লাহর কালাম পূর্ণ আমানতদারীর সাথে পৌঁছিয়ে দেয়াই তাঁর কাজ।
# তার পর্যায়ক্রমে এ বাণী আসার এবং একই সময় সবকিছু না নিয়ে আসার কারণ এ নয় যে, আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার মধ্যে কোন ত্রুটি আছে, যেমন তোমরা নিজেদের অজ্ঞতার কারণে বুঝে নিয়েছো। বরং এর কারণে হচ্ছে এই যে, মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি, বোধশক্তি ও গ্রহণ শক্তির মধ্যে ত্রুটি রয়েছে, যে কারণে একই সঙ্গে সে সমস্ত কথা বুঝতে পারে না এবং একই সময় বুঝানো সমস্ত কথা তার মনে দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূলও হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ আপন প্রজ্ঞা বলে এ ব্যবস্থা করেন যে, রূহুল কুদুস এ কালামকে সামান্য সামান্য করে আনবেন। কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিত বর্ণনার আশ্রয় নেবেন। কখনো এক পদ্ধতিতে বুঝাবেন আবার কখনো অন্য পদ্ধতিতে। কখনো এক বর্ণনা রীতি অবলম্বন করবেন আবার কখনো অবলম্বন করবেন অন্য বর্ণনা রীতি। একই কথাকে বারবার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করবে, যাতে বিভিন্ন যোগ্যতা সম্পন্ন সত্যানুসন্ধানীরা ঈমান আনতে পারে এবং ঈমান আনার পর তাদের জ্ঞান, বিশ্বাস, প্রত্যয়, বোধ ও দৃষ্টি পাকাপোক্ত হতে পারে।
# এটি হচ্ছে এ পর্যায়ক্রমিক কার্যক্রমের দ্বিতীয় উপযোগিতা ও স্বার্থকতা। অর্থাৎ যারা ঈমান এনে আনুগত্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে তাদেরকে ইসলামী দাওয়াতের কাজে এবং জীবন সমস্যার ক্ষেত্রে যে সময় যে ধরনের পথনির্দেশনার প্রয়োজন হবে তা যথাসময়ে দেয়া হবে। একথা সুস্পষ্ট যে, ঠিক সময়ের আগে তাদেরকে এ পথনির্দেশনা দেয়া সঙ্গত হতে পারে না এবং একই সমস্ত পথনির্দেশনা দেয়া তাদের জন্য উপকারীও হবে না।
# এটি হচ্ছে তার তৃতীয় স্বার্থকতা। অর্থাৎ অনুগতদের যেসব বাধা-বিপত্তি ও বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, যেভাবে তাদেরকে নির্যাতন করা ও কষ্ট দেয়া হচ্ছে এবং ইসলামী দাওয়াতের কাজে সমস্যা ও সংকটের যেসব পাহাড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, যে সবের কারণে বারবার সুসংবাদের মাধ্যমে তাদের হিম্মত ও সাহস বাড়ানো এবং শেষ পরিণতিতে তাদেরকে সুনিশ্চিত সফলতার আশ্বাস দেয়া অপরিহার্য হয়ে ওঠে, যাতে তারা আশাদীপ্ত হতে পারে এবং হতাশ বিষণ্ণ বদনে তাদের দিন কাটাতে না হয়।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*কোরআনের নাসেখ মানসুখ : এখানে মুশরিকদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে কোরআনে কারীমে তাদের সম্পর্কে তাদের এক সাথে উক্তি পেশ করা হচ্ছে, ‘আমি, যখন কোনাে আয়াতের বদলে অন্য কোনাে আয়াত নাযিল করি, আর অবশ্যই আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন তিনি নাযিল করেন, তখন ওরা বলতে থাকে, তুমি তাে নিজে তৈরী করে (মনগড়া) কথা বলছো… যারা ঈমান আনে না-মনগড়া কথাতো তারাই বলছে যারা আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না, আর তারাই মিথ্যাবাদী।'(১০১-১০৫) আসলে মোশরেকরা জানে না যে এ মহান কিতাবের উদ্দেশ্য কি এবং কোন মহান দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়ার জন্য এ কিতাবকে পাঠানাে হয়েছে, জানেনা তারা যে এ মহান কিতাব পাঠানাে হয়েছে একটি বিশ্বজনীন সমাজ গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে, আর তার জন্যে সর্বপ্রথম প্রয়ােজন একটি আদর্শ দল গড়ে তােলা, যারা ওই বিশ্ব সমাজকে পরিচালনা করবে এবং নবী মােহাম্মদ(স.)-এর রেসালাতই হলাে শেষ রেসালাত। অর্থাৎ আল্লাহর বার্তা শেষ বারের মতাে নবী মােহাম্মদ(স.)-এর কাছে নাযিল হয়েছে। এরপর আর কোনাে সময়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনাে বার্তা আসবে না, আসবে না কোনাে সংশোধনী, আর আল্লাহ তায়ালাই সেই মহান সত্তা যিনি মানবমন্ডলীকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই জাননেওয়ালা (সর্ব বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে) তিনিই জানেন ইসলামের নিয়ম নীতি ও আইন কানুনের কোন অংশকে কখন কিভাবে শােধরাতে হবে। এমতাবস্থায়, যদি কোনাে আয়াতকে পরিবর্তন করে অন্য কোনাে আয়াত নাযিল করার প্রয়ােজন তিনি বোধ করেন, যদি তিনি মনে করেন বিশেষ কোনাে সময়ের জন্যে কোনাে আয়াতের কার্যকরিতা ছিলাে, এখন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে ওই আয়াতের কার্যকরিতা আর নাই এবং ভবিষ্যতেও ওই আয়াতের ক্ষেত্র আর আসবে না তাহলে তিনি অবশ্যই তা পরিবর্তন করবেন। বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব কিছু সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন, আর কারও পক্ষে তা যা জানা সম্ভব নয়। এতে কারও কিছু বলার কি অধিকার থাকতে পারে? বিশ্ব এগিয়ে চলেছে। রাসূলুল্লাহ(স.)-এর সময়ে ও তার পরবর্তীতে সামাজিক পরিবর্তন আসবে, উপরের আয়াতাংশে তারই মহড়া হয়ে গেছে এবং অবশেষে বুঝানাে হচ্ছে, অবতীর্ণ এই আয়াতের পরিবেশ বিরাজ করবে পরবর্তীকালে-এইজন্যে শেষের দিকে সংশােধিত আয়াতগুলােই চিরদিনের জন্যে প্রযােজ্য-একথা একমাত্র তিনিই জানেন যিনি সকল যুগের সকল পরিস্থিতি জানেন। এরপর কিছু বিষয় মানুষের জ্ঞান-গবেষণার জন্যে ছেড়ে দেয়া হয়েছে সেসব বিষয়ে সমকালীন পারদর্শী ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ ভিত্তিক সিদ্ধান্ত সমূহ অনুসারে সেই সব বিষয়ে আইন ও বিধান রচিত হতে পারবে, যার উল্লেখ কোরআন হাদীসে নাই, এবং সেসব সিদ্ধান্ত কোরআন হাদীসের অকাট্য নিদের্শাবলীর বিপরীত অবশ্যই হবে না। এসব বিষয়ে মহাজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালাই জানেন আর কেউ জানেনা-এজন্যে বর্তমান প্রসংগে অবতীর্ণ আয়াতে উল্লেখিত মন্তব্য ব্যধিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্যে ওষুধ স্বরূপ নাযিল হয়েছে। এরপর সাধারণ মানুষের জন্যে নসীহত করা হয়েছে যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালাই জানেন কখন কী নাযিল করতে হবে। একথাটা সর্বকালের সকল মানুষের জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য। *কোরআন সম্পর্কে একটি মিথ্যা অপবাদ : মােশরেকরা এসব বিষয়ে কিছুই জানেনা, এজন্যে রসূলুল্লাহ(স.)-এর জীবদ্দশায় তারা কোনাে আয়াতের পরিবর্তে অন্য কোনাে আয়াত নাযিল হবে তার রহস্য ও তাৎপর্য তাদের পক্ষে কোনাে ভাবে বুঝা সম্ভব হয়নি, এজন্যে তারা মনে করেছে বােধ হয় মােহাম্মদ নিজে কথাগুলাে বানিয়ে বানিয়ে বলেছেন আর এজন্যেই তাঁর ইচ্ছামত এগুলাে তিনি পরিবর্তন করেছেন, অথচ তারা জানে এবং তাদেরই ঘােষণা ছিলাে যে তিনি পরম সত্যবাদী বিশ্বস্ত ও আমানতদার, যিনি কোনাে সময়ে কোনাে মিথ্যা বলেননি। তাই এরশাদ হয়েছে, ‘বরং ওদের অধিকাংশ লােকই জানেনা বা তাদের জ্ঞানের সদ্যবহার করে না।’ আরও এরশাদ হচ্ছে, ‘বলাে (হে রসূল, এ কিতাবকে সঠিকভাবে নিয়ে এসেছেন, তােমার রবের কাছ থেকে মনগড়া হতে পারে না। আর এ কিতাবকে ‘রহুল কুদুস’ (পবিত্র আত্মা) জিবরাঈল(আ.) নাযিল করেছেন ‘তােমার রবের কাছ থেকে’ তােমার নিজের কাছ থেকে নয়, ‘সত্য-সহ,’ অর্থাৎ সত্য বহনকারী হিসেবে, যার মধ্যে মিথ্যার কোনো নিশান থাকতে পারে না। ‘যাতে করে, এ কিতাব, ঈমানদারদেরকে দৃঢ়তা দান করে।’ অর্থাৎ যেন এসব ঈমানদারদের অন্তর আল্লাহর সাথেই সম্পৃক্ত হয়ে যায়। এভাবে এই অন্তরগুলাে জানতে পারবে যে এ কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাযিল হয়েছে, এইভাবেই তারা সত্যের ওপর দৃঢ় হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তর নিশ্চিন্ততার সাথে সত্যের দিকে ঝুঁকে পড়বে। ‘আর এ কিতাব পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদ দানকারী মুসলমানদের জন্যে।’ অর্থাৎ, এ কিতাব মানুষকে সরল সঠিক ও মযবুত পথের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং শীঘ্রই আল্লাহর সাহায্য আসবে বলে সুসংবাদ দিচ্ছে এবং আরও জানাচ্ছে যে মুসলমানদের অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা শাসন ক্ষমতা দান করবেন। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর অবশ্য আমি, মহান আল্লাহ, জানি যে, ওরা (তােমার সম্পর্কে) বলছে, তাকে একজন মানুষ শিক্ষা দেয়, শিক্ষা দেয় এমন এক ব্যক্তি যার কথা ওরা বলছে, তার ভাষা হচ্ছে আজমী (অনারব ভাষা), অথচ (কুরআন) এ ভাষা তাে সুস্পষ্ট আরবী।’ আর একটি জলজ্যন্ত মিথ্যা হলাে, এই নির্লজ্জ মােশরেকরা রসূলুল্লাহ(স.)-এর প্রতি যে কথাটি আরােপ করতাে। এ বেওকুফরা বলতাে যে এক আজমী (অনারব) ব্যক্তি তাকে কোরআন শেখায়, অথচ এ মহান কিতাব তাে বিশুদ্ধ ও এমন সুমহান ভাষায় লেখা যা কোনাে অনারব তাে দুরের কথা, আরবের শ্রেষ্ঠ কবিরাও যার একটি আয়াতের বা সমকক্ষ কোনাে আয়াত বানাতে পারেনি। সে অনারব ব্যক্তি কে ছিলাে? এ বিষয়ে নানাজন নানাবিধ নাম উচ্চারণ করেছে, কিন্তু কোনাে নামের ওপরেই তারা একমত হতে পারেনি, তবে সবাই ইংগীত করেছে, একজন আজমী ব্যক্তির দিকে যে কোনাে কুরাইশ নারীর পেটে জন্ম গ্রহণ করেছিলাে, ওই ব্যক্তিটি সাফা পাহাড়ের পদদেশে কিছু বেচাকেনা করতাে। কখনও কখনও রসূলুল্লাহ(স.) তার কাছে বসে কিছু কথাবার্তা বলতেন। তার ভাষা তাে ছিলাে আজমী সে আরবী জানতােনা, তার কাজ চালানাের মতাে একান্ত জরুরী কিছু সওয়াল জওয়াব সে শিখে নিয়েছিলাে মাত্র। মােহাম্মদ ইবনে ইসহাক তার রচিত রসূলুল্লাহ(স.)-এর জীবনী সীরাতে ‘ইবনে হিশাম’-গ্রন্থে বলেন, যতােটা আমি জানি তাতে রসূলুল্লাহ(স.) মারওয়া পাহাড়ের নীচে আরবী বংশােদ্ভুত এক ব্যক্তির কাছে মাঝে মাঝে বসতেন। লােকটি ছিলাে জাবর নামক একজন খৃস্টান ব্যক্তির পুত্র। ওই খৃষ্টানটি এক হাযরামী বংশোঙ্ভূত লােকের দাস ছিলাে। অতপর আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন, ‘অবশ্যই আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ জানি যা কিছু ওরা বলাবলি করছে, (ওদের কথামতাে) এক ব্যক্তি তাকে কোরআন শিখায় তবে যে ব্যক্তি কোরআন শিখায় বলে ওরা বলাবলি করছে (তার কাছে কোরআন শিখা কি করে সম্ভব?)-এটা সম্পূর্ণ একটা অবাস্তব কথা- ও তাে একজন আজমী ব্যক্তি, সে কি করে বিশুদ্ধ আরবী ভাষার এই কোরআন তাকে শেখাবে?’ আব্দুল্লাহ ইবনে কাসীর ইকরামা ও কাতাদার বরাত দিয়ে বলেন, ‘সে ব্যক্তির নাম ছিলাে ইয়ায়ীশ।’ ইবনে জারীর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস(রা.)-এর বরাত দিয়ে বলেন, মক্কায় বালায়ম নামক একজন ক্রীতদাসকে তিনি জানতেন, তার ভাষা ছিলাে আজমী, মােশরেকরা রসূলুল্লাহ(স.) কে তার কাছে যাতায়াত করতে দেখেছে, এ কারণে তারা বলেছে যে তাকে বালায়ম এসব শিখিয়েছে, অতপর এ আয়াতটি নাযিল হয়। যে কথাগুলাে দিয়ে কাফেরদের মিথ্যা দাবীকে যেভাবে রদ করা হচ্ছিলাে তা ছিলাে এতােই অকাট্য যে তার ওপর আর কোনাে বিতর্কের সুযােগ থাকে না যে ভাষাটির কথা বলে তারা রসূল(স.)-কে অমান্য করছিলাে তা তাে ছিলাে অনারব এক ভাষা, আর (আল-কোরআনের) এ ভাষা হচ্ছে পরিষ্কারভাবে বর্ণনাকারী আরবী ভাষা সুতরাং যার ভাষা আরবী নয়, যে একজন অনারব, নিজের ভাষা ছাড়া যে আরবী জানে না, তারপক্ষে এই মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের কল্পনাতীত সমৃদ্ধশালী ভাষা শেখানাে কেমন করে সম্ভব? *আল কোরআনের সার্বজনীনতা : কোরআন সম্পর্কে কাফেরদের এই মন্তব্যের কারণ দুনিয়াবাসীর কাছে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা জেনে বুঝে, নবী(স.)-কে প্রতিহত করার জন্যে, বহু চিন্তা-ভাবনা করে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে এক মারাত্মক ষড়যন্ত্র করেছিলাে। এটা ছিলাে তাদের মনগড়া এবং এমন তৈরী করা মিথ্যা যা কোনাে যুক্তি ধােপে টেকে না। আসলে সত্যের দাওয়াতকে পর্যুদন্ত করার জন্যে এটা ছিলাে গভীর এক চক্রান্ত, তা না হলে তারা কেমন করে এমন নির্জলা মিথ্যা কথা বলতে পারে; যার মিথ্যা হওয়ার মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্যেও কোনাে সন্দেহ ছিলাে না যেহেতু আল-কোরআনের মর্যাদা, তার ভাষার তেজস্বিনী, তার অসাধারণ গতিময় ছন্দ এবং তার অভূতপূর্ব অর্থপূর্ণ শব্দ-ভান্ডারের প্রাচুর্যের কথা তাদের থেকে আর কে বেশী জানত। ঠিক ওই মূর্খের গােষ্ঠির প্রতি, এমন নির্লজ্জ মিথ্যা বলায় তারা বিশ্ব-বিবেকের কাছে কতাে নিন্দিত-ধিকৃত ও ঘৃণিত হয়ে যাচ্ছিল, শত্রুতার প্রচন্ডতায় এই সহজ কথাটুকু পর্যন্ত বুঝাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। তারা বলে, একজন আজমী ব্যক্তি মােহাম্মাদকে এই আল-কিতাব শেখাচ্ছে। অথচ সারা বিশ্বে এর দ্বিতীয় নাই, কোনাে দিন ছিলাে না আর কোনাে দিন হবেও না। এটা হচ্ছে অবিকল সেই মহা-কিতাব যা লিখিত রয়েছে সপ্ত-আকাশের ওপর চির-সুরক্ষিত মহাফলকে-সেই পবিত্র আরবী ভাষায় যে ভাষায় মােহাম্মাদ(স)-এর কাছে এ কিতাবকে পৌছানাে হয়েছে, পুরােপুরি সেই সকল শব্দ বিন্যাসে কি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত অবস্থায় জিবরাঈল আল-আমীনের মাধ্যমে মােহাম্মাদ(স.)-এর কাছে নাযিল করা হয়েছে। আর ওই আজমি ব্যক্তি যদি মােহাম্মাদ(স.)-কে শেখানাের মতাে যােগ্যতার অধিকারী হতাে তাহলে তো সে নিজেই এ কাজ করতে পারতাে। আর আজকে এতােগুলাে যুগ পর এবং এতােসব বিদগ্ধ ও বিচক্ষণ জ্ঞানী গুনীজনের জ্ঞান-গবেষণা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এতাে উন্নতি হওয়ার পরও আল-কোরআনের কোনাে কথাকে কেউ আজ পর্যন্ত অপ্রমাণিত করতে পারেনি। বিশ্বে এ পর্যন্ত কতাে উন্নতমানের গ্রন্থ রচিত হয়েছে কতাে নিয়ম-শৃঙ্খলা, কতাে আইন-কানুন গঠিত হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে কতাে সমাজ শৃংখলার, মানব-সমাজের কতাে উন্নতি ও সমৃদ্ধি হয়েছে, রচিত হয়েছে কতাে সংবিধান, কিন্তু এসবের কোনােটিই কোনাে দিক দিয়েই এ মহাগ্রন্থের কাছাকাছি পৌছুতে পারেনি-এ অনবদ্য সৃষ্টি একমাত্র আল্লাহরই, তাই এ গ্রন্থের সমান কোনাে গ্রন্থ বা কথা কোনাে মানুষ তৈরী করতে পারে না, এটা কোনাে মানুষের কাজ হতে পারে না! এমনকি বস্তুবাদী, নাস্তিক ও সমাজতান্ত্রিক রুশরাও ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাচ্যের এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্স এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন মােহাম্মাদ নামক কোনাে এক ব্যক্তির পক্ষে রচনা করা সম্ভব হয়নি এবং শুধু যে আরব উপদ্বীপে এ গ্রন্থ রচিত হয়েছে তাও নয় (এর বিশ্বজনীনতা একথা জানায় যে) এ গ্রন্থের অংশ বিশেষ আরবের বাইরে থেকেও সংগৃহীত হয়েছে। এ কথা-দ্বারা তারা বুঝাতে চেয়েছে যে এ কিতাব আন্তর্জাতিকভাবে এতাে বেশী গ্রহণ যােগ্যতা লাভ করেছে যে কোনাে এক ব্যক্তি এটা এনেছে, বা কোনাে এক ব্যক্তি কর্তৃক এ গ্রন্থ রচিত হয়েছে-তা কিছুতেই হতে পারে না, অথবা কোনাে একদল লােক বা একটি জাতির সৃষ্টি এ কোরআন তাও সম্ভব নয়, এর ব্যাপকতা, এর সার্বজনীনতা, কালের সীমা ডিংগিয়ে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে এর গ্রহণ যােগ্যতা এবং সকল জনপদের সকল প্রয়ােজন ও সমস্যা সমাধান দানে এর উপযােগিতা-সব কিছু মিলে একথারই সাক্ষ্য বহন করে যে, এ কিতাব নির্দিষ্ট কোনাে ব্যক্তি বা কোনাে জনগােষ্ঠি দ্বারা রচিত হওয়া সম্ভব নয়। সে কনফারেন্সে, এ কিতাবের মধ্যে যেসব তত্ত্ব ও তথ্যাদি রয়েছে, যে বিষয়ের আলােচনায় তারা যায়নি, এ কিতাব যে সঠিক ও সত্যনিষ্ঠ মানব-প্রকৃতির কণ্ঠস্বর তাও তারা অনুধাবন করতে পারেনি, এজন্যে তারা বলেনি, বলতে পারেনি যে এ কিতাব আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে ওহী স্বরূপ নাযিল হয়েছে। নাযিল হয়েছে তাই, যা মানুষের সুস্থ প্রকৃতি চায়, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রেরিত ওহীতে জানানাে হয়েছে যে সৃষ্টি জগতের মালিক ও পালন কর্তা মহাশক্তিমান এক সত্ত্বা আছেন একথা অনেকে মানতে চায় না, মানতে চায় না ওহী রসূল ও নবীদের আগমনের কথা। অবশ্য আজ এই শতাব্দীর কিছু সংখ্যক বৈজ্ঞানিকও এমন ধারণা পােষণ করে। এই ভ্রান্ত ধারণার জওয়াব দিতে গিয়ে আল কোরআন বলছে, যে আল্লাহর আয়াত সমূহের ওপর ঈমান আনে না, তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা পথ দেখান না, আর তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। ওপরের আয়াতের আলােকে বুঝা যাচ্ছে ওই বেঈমানদেরকে এই কিতাবের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সত্য সঠিক পথ দেখাননি তাদেরকে তিনি সত্যপথ দেখার সুযােগ করে দেননি যেহেতু তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেনি, শুধু তাই নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের সত্য থেকে দূরে থাকার কারণে কোনাে বিষয়েই এহেন ব্যক্তিরা সঠিক পথ বেছে নিতে পারবে না। সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ায় এবং তাদের হেদায়েতের জন্যে অবতীর্ণ আয়াত সমূহকে অস্বীকার করার শাস্তি হিসাবেই তাদেরকে সঠিক পথে আসার আর কোনাে সুযােগ দেয়া হবে না। জীবনের দীর্ঘস্থায়ী গােমরাহীর পর পরবর্তী জীবনে রয়েছে তাদের জন্যে ভীষণ বেদনা দায়ক শাস্তি। একথাটাই এরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের জন্যে রয়েছে বেদনা দায়ক আযাব।’ এরপর জানানাে হচ্ছে যে মিথ্যা তৈরী করে বলা, এটা তাদের পক্ষেই সম্ভব, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না, তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তিনি সর্বশক্তিমান জীবন-মৃত্যুর মালিক ও সকল প্রকার কল্যাণের চাবিকাঠি একমাত্র তারই হাতে-এ কথা তারা মানে না-মানে না যে তিনি সর্বত্র ও সকল সময় উপস্থিত, সবকিছু দেখেন এবং সকল কিছুর ব্যাপারে তারই কাছে হিসাব দিতে হবে। যিনি তাঁরই সরাসরি প্রতিনিধি, যার জীবন, একমাত্র আল্লাহর বার্তা তার বান্দাদের কাছে পৌছে দেওয়ার কাজে নিবেদিত, যিনি চির আমানতদার বলে তাদের সবার কাছে স্বীকৃত যিনি ‘সদুকুল আমীন’ বলে পরিচিত, যার জীবনটা শুধু মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানাের কাজে নিয়ােজিত, সেই মহানবী(স.)-এর পক্ষে মিথ্যা তৈরী করে বলা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘নিসন্দেহে তারাই মিথ্যা তৈরী করে বলে, যারা আল্লাহর আয়াতসমূহের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, আসলে এরাই হচ্ছে মিথ্যাবাদী।’ মিথ্যা হচ্ছে এক নির্লজ্জ অপরাধ, যা কোনাে মােমেন ব্যক্তিই বলতে পারে না। রসূলুল্লাহ(স.) মিথ্যা কথা বলার ওপর চূড়ান্তভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। তিনি বলেছেন কোনাে মুসলমান অন্য যতাে অপরাধই করুক না কেন, সে মিথ্যা কথা বলতে পারে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১০১-১০২ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের জ্ঞানের স্বল্পতা, অস্থিরতা এবং বেঈমানির বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য কিরূপে লাভ করবে? এরা তো অনন্তকাল হতেই হতভাগ্য। যখন কোন আয়াত মানসূখ বা রহিত হয়। তখন তারা বলেঃ “দেখো, তাদের অপবাদ খুলেই গেল।” তারা এতটুকুও বুঝে না যে, ব্যাপক ক্ষমতাবান আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, তাই করে থাকেন এবং যা ইচ্ছা, তাই হুকুম করে থাকেন। এক হুকুমকে উঠিয়ে দিয়ে অন্য হুকুম ঐ স্থানে বসিয়ে দেন। যেমন তিনি (আরবি)
(২:১০৬) এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র রূহ অর্থাৎ জিবরাঈল (আঃ) ওটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য এবং আদল ও ইনসাফের সাথে রাসূলুল্লাহর (সঃ) কাছে নিয়ে আসেন, যেন ঈমানদাররা ঈমানের উপর অটল থাকে। একবার অবতীর্ণ হলো তখন মানলো, আবার অবতীর্ণ হলো আবার মানলো। তাদের অন্তর আল্লাহ তাআলার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আল্লাহর নতুন ও তাজাতাজা কালাম তারা শুনে থাকে। মুসলমানদের জন্যে হিদায়াত ও সুসংবাদ হয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে (সঃ) মান্যকারীরা সুপথ প্রাপ্ত হয়ে খুশী হয়ে যায়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 101-102
بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ]
Rather, most of them know not. ]
وَ اِذَا بَدَّلۡنَاۤ اٰیَۃً مَّکَانَ اٰیَۃٍ ۙ وَّ اللّٰہُ اَعۡلَمُ بِمَا یُنَزِّلُ قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُفۡتَرٍ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾
And when We substitute a verse in place of a verse – and Allah is most knowing of what He sends down – they say, “You, [O Muhammad], are but an inventor [of lies].” But most of them do not know.
قُلۡ نَزَّلَہٗ رُوۡحُ الۡقُدُسِ مِنۡ رَّبِّکَ بِالۡحَقِّ لِیُـثَبِّتَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ ہُدًی وَّ بُشۡرٰی لِلۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۱۰۲﴾
Say, [O Muhammad], “The Pure Spirit has brought it down from your Lord in truth to make firm those who believe and as guidance and good tidings to the Muslims.”
The Idolators’ Accusation that the Prophet was a Liar since some Ayat were abrogated, and the Refutation of their Claim
Allah says:
وَإِذَا بَدَّلْنَا ايَةً مَّكَانَ ايَةٍ وَاللّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ قَالُواْ
And when We change a verse in place of another – and Allah knows best what He reveals – they (the disbelievers) say:”You (O Muhammad) are but a forger.”
Allah tells us of the weak minds of the idolators, and their lack of faith and conviction. He explains that it is impossible for them to have faith when He has decreed that they are doomed. When they saw that some rulings had been changed by being abrogated, they said to the Messenger of Allah:
إِنَّمَا أَنتَ مُفْتَرٍ
You are but a forger,
meaning one who tells lies.
But Allah is the Lord Who does whatever He wills, and rules as He wants.
بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
Rather, most of them know not.
بَدَّلْنَا ايَةً مَّكَانَ ايَةٍ
And when We change a verse (of the Qur’an) in place of another,
Mujahid said:
this means, “We remove one and put another in its place.”
Qatadah said:
this is like the Ayah:
مَا نَنسَخْ مِنْ ءَايَةٍ أَوْ نُنسِهَا
Whatever verse We change (abrogate) or omit (the abrogated)…” (2:106)
Allah said, in response to them.
قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ
Say:”Ruh-ul-Qudus has brought it…” (meaning, Jibril),
مِن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ
from your Lord with truth,
meaning, with truthfulness and justice
لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ امَنُواْ
for the conviction of those who believe,
so that they will believe what was revealed earlier and what was revealed later, and humble themselves towards Allah.
وَهُدًى وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ
and as a guide and good news for the Muslims.
meaning He has made it a guide and good news to the Muslims who believe in Allah and His Messengers.