(বই‌ নং #৮২৭) সুরা: আন- নহল সুরা:১৬ ১২০-১২৫ নং আয়াত:- [ اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ আপনি মানুষকে দা’ওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায় । Invite to the way of your Lord with wisdom and good instruction, and argue with them in a way that is best.] www.motaher21.net اِنَّ اِبۡرٰہِیۡمَ کَانَ

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই‌ নং #৮২৭)
সুরা: আন- নহল
সুরা:১৬
১২০-১২৫ নং আয়াত:-
[ اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ
আপনি মানুষকে দা’ওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায় ।
Invite to the way of your Lord with wisdom and good instruction, and argue with them in a way that is best.]
www.motaher21.net
اِنَّ اِبۡرٰہِیۡمَ کَانَ اُمَّۃً قَانِتًا لِّلّٰہِ حَنِیۡفًا ؕ وَ لَمۡ یَکُ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾ۙ
নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিল একজন ইমাম। আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং সে ছিল না অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।
Indeed, Abraham was a [comprehensive] leader, devoutly obedient to Allah, inclining toward truth, and he was not of those who associate others with Allah .
شَاکِرًا لِّاَنۡعُمِہٖ ؕ اِجۡتَبٰہُ وَ ہَدٰىہُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۱۲۱﴾
সে ছিল আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে।
[He was] grateful for His favors. Allah chose him and guided him to a straight path.
وَ اٰتَیۡنٰہُ فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً ؕ وَ اِنَّہٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ لَمِنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۱۲۲﴾ؕ
আমি তাকে ইহকালে দিয়েছিলাম মঙ্গল এবং নিশ্চয়ই পরকালেও সে হবে সৎকর্মপরায়ণদের অন্যতম।
And We gave him good in this world, and indeed, in the Hereafter he will be among the righteous.
ثُمَّ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ اَنِ اتَّبِعۡ مِلَّۃَ اِبۡرٰہِیۡمَ حَنِیۡفًا ؕ وَ مَا کَانَ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ ﴿۱۲۳﴾
অতঃপর আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর; সে অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
Then We revealed to you, [O Muhammad], to follow the religion of Abraham, inclining toward truth; and he was not of those who associate with Allah .
اِنَّمَا جُعِلَ السَّبۡتُ عَلَی الَّذِیۡنَ اخۡتَلَفُوۡا فِیۡہِ ؕ وَ اِنَّ رَبَّکَ لَیَحۡکُمُ بَیۡنَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡہِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۲۴﴾
শনিবার পালন তো শুধু তাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল, যারা এ সম্বন্ধে মতভেদ করেছে। আর যে বিষয়ে তারা মতভেদ করত আপনার রব তো অবশ্যই কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের বিচার- মীমাংসা করে দেবেন।
The sabbath was only appointed for those who differed over it. And indeed, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection concerning that over which they used to differ.
اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ ﴿۱۲۵﴾
আপনি মানুষকে দা’ওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায় । নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।
Invite to the way of your Lord with wisdom and good instruction, and argue with them in a way that is best. Indeed, your Lord is most knowing of who has strayed from His way, and He is most knowing of who is [rightly] guided.
www.motaher21.net

১২০-১২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (عليه السلام)-এর মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তিনি ছিলেন একজন সৎ ব্যক্তি এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতকারী। তিনি কোন মূর্তিপূজক ছিলেন না। أُمَّةً অর্থ ইমাম, নেতা। অর্থাৎ তিনি এমন নেতা ছিলেন যে, যার মধ্যে একজন নেতার সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান ছিল এবং তিনি সঠিক পথপ্রাপ্ত ও সঠিক পথের দিশারী ছিলেন।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(قَالَ إِنِّيْ جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا) ‏

“নিশ্চয় আমি তোমাকে মানবমণ্ডলীর নেতা করব।” (সূরা বাকারাহ ২:১২৪)

أُمَّةً শব্দটি জাতি অর্থেও ব্যবহার হয়, সে অর্থে তিনি একাই ছিলেন একটি জাতি। যদি একজন লোকই তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে সে একাই একটি জাতি। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে অনেক নেয়ামত দান করেছিলেন, তিনিও আল্লাহ তা‘আলার শুকরগুজার বান্দা ছিলেন।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইবরাহীম (عليه السلام)-এর তাওহীদের দীন অনুসরণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকল নাবীদের ইমাম হওয়া সত্ত্বেও ইবরাহীম (عليه السلام)-এর দীনের অনুসরণ করতে বলছেন কারণ তাঁর দীন ছিল সকল শিরকমুক্ত ও তাওহীদভিত্তিক। তাছাড়া এতে ইবরাহীম (عليه السلام) মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও সকল নাবীদের দীন একই ছিল।

অতএব প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য ইবরাহীম (عليه السلام)-এর মত পরিপূর্ণভাবে ঈমানদার হওয়া এবং আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ পালন করা।
# উক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে যে, ইয়াহূদীরা শনিবারের ব্যাপারে মতানৈক্য করেছিল। তাদের ইবাদতের জন্য শুক্রবারকে নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছিল কিন্তু তারা এটা মেনে নেয়নি। তারা ইবাদতের জন্য শনিবারকে বেছে নেয়। আর খ্রিস্টানরা রবিবারকে বেছে নেয়। আর মুসলিমদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং শুক্রবারকে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, আমরা সবার পরে হয়েও কিয়ামতের দিন সবার আগে থাকব। যদিও তারা আমাদের পূর্বে কিতাব লাভ করেছে। অতঃপর এই দিনটি (শুক্রবার) তাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে মতানৈক্য করল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছেন। মানুষেরা এ ব্যাপারে আমাদের অনুসারী। ইয়াহূদীরা আমাদের পরের দিন এবং খ্রিস্টানরা পরের দিনের পরের দিন। (সহীহ বুখারী: ৮৭৬, সহীহ মুসলিম: ৮৫৫)

আর এটাই ছিল তাদের মতানৈক্যের বিষয়।

(ادْعُ إِلٰي سَبِيْلِ رَبِّكَ….)

উক্ত আয়াতে ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। তা হল মানুষকে দীনের দিকে আহ্বান করতে হবে হিকমত দ্বারা এবং সদুপদেশের মাধ্যমে। এখানে হিকমত বলতে ঐ পদ্ধতিকে বুঝানো হয়েছে, স্থান-কাল-পাত্রভেদে যে পদ্ধতি অবলম্বন করলে মানুষের বুঝতে সুবিধা হবে এবং উপযোগী হয়। আর তা হতে হবে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে। ঐ দীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে যদি তর্কও করতে হয় তাহলে তা হতে হবে সদ্ভাবে। কর্কশ ও রূঢ় স্বভাবের হওয়া চলবে না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَا تُجَادِلُوْآ أَهْلَ الْكِتٰبِ إِلَّا بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ)

“তোমরা উত্তম পন্থা ব্যতীত কিতাবীদের সাথে বিতর্ক কর না।” (সূরা আনকাবুত ২৯:৪৬)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন যে,

(فَقُوْلَا لَه۫ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّه۫ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشٰي)‏

‘তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সূরা ত্বা-হা- ২০:৪৪)

তবে দাওয়াতকে উপক্ষো করে যদি মুসলিমদের ওপর হামলা করে তাহলে তাদেরকে সেভাবেই জবাব দিতে হবে যেভাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিয়েছেন।

সুতরাং হে নাবী! দাওয়াতী কাজ উল্লিখিত নীতি অনুসারে চালিয়ে যাও, কে সুপথ পাবে আর কে পথ ভ্রষ্ট হবে তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। তবে পথভ্রষ্ট ও মিথ্যুকদের অনুসরণ করা যাবে না।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِه۪ ص وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ – ‏ فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِيْنَ )‏

“তোমার প্রতিপালক ভালভাবে জানেন যে, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি তাদের সম্পর্কেও ভাল জানেন যারা হেদায়েত প্রাপ্ত। অতএব তুমি মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ কর‎ না।” (সূরা ক্বালাম ৬৮:৭-৮)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. উম্মতে মুহাম্মাদী পরে এসেও কিয়ামতের দিন অগ্রগামী হবে।
২. জুমু‘আ/শুক্রবারের মর্যাদা জানা গেল।
৩. দীনের পথে সুন্দরভাবে হিকমতের মাধ্যমে মানুষকে ডাকতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# তিনি একাই ছিলেন একটি উম্মতের সমান। যখন দুনিয়ায় কোন মুসলমান ছিল না তখন একদিকে তিনি একাই ছিলেন ইসলামের পতাকাবাহী এবং অন্যদিকে সারা দুনিয়ার মানুষ ছিল কুফরীর পতাকাবাহী। আল্লাহর এ একক বান্দাই তখন এমন কাজ করেন যা করার জন্য একটি উম্মতের প্রয়োজন ছিল। তিনি এক ব্যক্তি মাত্র ছিলেন না, ব্যক্তির মধ্যে তিনি ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
# এটি হচ্ছে আপত্তিকারীদের প্রথম আপত্তিটির পূর্ণাংগ জবাব। এ জবাবের দু’টি অংশ। একটি হচ্ছে, আল্লাহর শরীয়াতে বৈপরীত্য নেই, যেমনটি তুমি ইহুদীদের ধর্মীয় আইন ও মুহাম্মাদী শরীয়াতের বাহ্যিক পার্থক্য দেখে ধারণা করেছো। বরং আসলে ইহুদীদেরকে বিশেষ করে তাদের নাফরমানীর কারণে কতিপয় নিয়ামত থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। এ নিয়ামতগুলো থেকে অন্যদেরকে বঞ্চিত করার কোন কারণ ছিল না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে পদ্ধতি অনুসরণের হুকুম দেয়া হয় তা হচ্ছে ইবরাহীম আলাইহি ওয়া সালামের পদ্ধতি, আর তোমরা জানো ইহুদীদের জন্য যেসব জিনিস হারাম ছিল মিল্লাতে ইবরাহীমীর জন্য সেগুলো হারাম ছিল না। যেমন ইহুদীরা উটের গোশত খায় না। কিন্তু মিল্লাতে ইবরাহীমীর জন্য এ গোশত হালাল ছিল, ইহুদীদের শরীয়াতে উটপাখি, হাঁস, খরগোশ ইত্যাদি হারাম কিন্তু মিল্লাতে ইবরাহীমীতে এসব জিনিস হালাল ছিল। এ জবাবের সাথে সাথে মক্কার কাফেরদেরকে এ মর্মেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের যেমন ইবরাহীমের সাথে কোন সম্পর্ক নেই, তেমনি ইহুদীদের সাথেও নেই। কারণ তোমরা উভয় দলই শিরক করছো। মিল্লাতে ইবরাহীমীর যদি কেউ সঠিক অনুসারী থেকে থাকে তবে তিনি হচ্ছেন এই নবী মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ। এদের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডে শিরকের নামগন্ধও নেই।
# এটি হচ্ছে মক্কার কাফেরদের দ্বিতীয় আপত্তির জবাব। শনিবার ইহুদীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল এবং ইবরাহীমী মিল্লাতে শনিবারের কোন ধারণাই ছিল না, একথা বলার এখানে কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ মক্কার কাফেররাও একথা জানতো। তাই এখানে শুধুমাত্র এতটুকু ইঙ্গিত দেয়াই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, ইহুদীদের আইনে তোমরা যে কঠোরতা দেখছো তা তাদের প্রাথমিক বিধানে ছিল না বরং পরবর্তীকালে ইহুদীদের দুষ্কৃতি এবং আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধাচরণের কারণে তাদের ওপর এগুলো আরোপিত হয়েছিল। একদিকে বাইবেলের যেসব অধ্যায়ে শনিবারের বিধান বর্ণিত হয়েছে সেগুলো অধ্যয়ন না করা (যেমন যাত্রা পুস্তক ২০: ৮-১১, ২৩: ১২ ও ১৩, ৩১: ১২-১৭, ৩৫: ২ ও ৩, গণনা পুস্তক ১৫: ৩২-৩৬) এবং অন্যদিকে শনিবারের বিধি-নিষেধ ভাঙার জন্য ইহুদীরা যেসব অপচেষ্টা চালিয়েছিল সেগুলো না জানা পর্যন্ত (যেমন যিরমিয় ১৭: ২১-২৭ এবং যিহিষ্কেল ২০: ১২-২৪) কোন ব্যক্তি কুরআন মজীদের এ ইঙ্গিতগুলো ভালভাবে বুঝতে পারবেন না।
# দাওয়াত দেবার সময় দু’টি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুই, সদুপদেশ।

জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার মানে হচ্ছে, নির্বোধদের মত চোখ বন্ধ করে দাওয়াত প্রচার করবে না। বরং বুদ্ধি খাটিয়ে যাকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে তার মন-মানস, যোগ্যতা ও অবস্থার প্রতি নজর রেখে এবং এ সঙ্গে পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে। একই লাঠি দিয়ে সবাইকে তাড়িয়ে নেয়া যাবে না। যে কোন যুক্তি বা দলের মুখোমুখি হলে প্রথমে তার রোগ নির্ণয় করতে হবে তারপর এমন যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তার রোগ নিরসনের চেষ্টা করতে হবে যা তার মন-মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করে তার রোগের শিকড় উপড়ে ফেলতে পারে।

সদুপদেশের দুই অর্থ হয়। এক, যাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে তাকে শুধুমাত্র যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে তৃপ্ত করে দিয়ে ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং তার আবেগ-অনুভূতির প্রতিও আবেদন জানাতে হবে। দুষ্কৃতি ও ভ্রষ্টতাকে শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে বাতিল করলে হবে না বরং সেগুলোর অশুভ পরিণতির ভয় দেখাতে হবে। ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ ও সৎকাজে আত্মনিয়োগ শুধু যে ন্যায়সঙ্গত ও মহৎ গুণ, তা যৌক্তিকভাবে প্রমাণ করলে চলবে না বরং সেগুলোর প্রতি আকর্ষণও সৃষ্টি করতে হবে। দুই, উপদেশ এমনভাবে দিতে হবে যাতে আন্তরিকতা ও মঙ্গলাকাংখা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। যাকে উপদেশ দান করা হচ্ছে সে যেন একথা মনে না করে যে, উপদেশদাতা তাকে তাচ্ছিল্য করছে এবং নিজের শ্রেষ্ঠত্বের অনুভূতির স্বাদ নিচ্ছে। বরং সে অনুভব করবে উপদেশদাতার মনে তার সংশোধনের প্রবল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে এবং আসলে সে তার ভাল চায়।

# এটি যেন নিছক বিতর্ক, বুদ্ধির লড়াই ও মানসিক ব্যায়াম পর্যায়ের না হয়। এ আলোচনায় পেঁচিয়ে কথা বলা, মিথ্যা দোষারোপ ও রূঢ় বাক্যবাণে বিদ্ধ করার প্রবণতা যেন না থাকে। প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিয়ে নিজের গলাবাজী করে যেতে থাকা এর উদ্দেশ্য হবে না। বরং এ বিতর্ক আলোচনায় মধুর বাক্য ব্যবহার করতে হবে। উন্নত পর্যায়ের ভদ্র আচরণ করতে হবে। যুক্তি প্রমাণ হতে হবে ন্যায়সঙ্গত ও হৃদয়গ্রাহী। যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে তার মনে যেন জিদ, একগুঁয়েমী এবং কথার প্যাঁচ সৃষ্টি হবার অবকাশ না দেখা দেয়। সোজাসুজি তাকে কথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে এবং যখন মনে হবে যে, সে কূটতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছে তখনই তাকে তার অবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে যাতে ভ্রষ্টতার নোংরা কাদামাটি সে নিজের গায়ে আরো বেশী করে মেখে নিতে পারে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

ইহুদী জাতির জন্যে হারাম ঘােষিত বিষয়াদি বর্ণনা করতে গিয়ে এবং কোরায়শ বংশীয় মােশরেকদের পক্ষ থেকে ‘ইব্রাহীম এর আদর্শের’ অনুসারী বলে দাবী করার বিষয়টি আলােচনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক স্বয়ং ইবরাহীম(আ.)-এর আদর্শ ও বিধানের স্বরূপও বর্ণনা করছেন। এর মাধ্যমে তার ধর্মের আসল চিত্রটি ধরা পড়বে এবং এই ধর্মের সাথে শেষ নবী হযরত মােহাম্মদ(স.)-এর ধর্মের কি মিল ও সামঞ্জস্য রয়েছে, সেটাও পরিষ্কার হয়ে যাবে। সাথে সাথে এর দ্বারা এটাও প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, ইহুদীরা যা কিছু নিজেদের জন্য হারাম করে নিয়েছে সেগুলাে ইবরাহীম(আ.)-এর আমলে হারাম ছিলাে না। নিচের আয়াতে এ প্রসংগেই আলােচনা করা হয়েছে। ‘নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলাে একটি উম্মত (-এর সমমর্যাদাবান, সে ছিলো) আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ (বান্দা), সে কখনাে মােশরেকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাে না, (সে ছিলাে) আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তায়ালা তাকে (নবুওতের জন্যে) বাছাই করেছেন এবং তাকে তিনি সরল পথে পরিচালিত করেছেন। আমি তাকে দুনিয়াতেও (প্রচুর) কল্যাণ দান করেছি, আর পরকালেও সে নিসন্দেহে নেক মানুষদের অন্তর্ভুক্ত (হবে); অতপর (হে নবী,) আমি তােমার ওপর ওহী পাঠালাম যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাত অনুসরণ করাে; আর সে কখনাে মােশরেকদের দলভুক্ত ছিলাে না। শনিবার (পালন করা) তাে কেবল তাদের জন্যেই (বাধ্যতামূলক) করা হয়েছিলাে, যারা এ (বিষয়টি) নিয়ে (অযথা) মতবিরােধ করেছে; অবশ্যই তােমার মালিক কেয়ামতের দিন তাদের মাঝে সে সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেবেন, যেসব বিষয়ে সেখানে তারা মতবিরােধ করতাে।'(আয়াত ১২০-১২৪)  *হযরত ইবরাহীমের বিশেষ মর্যাদা : পবিত্র কোরআনে হযরত ইবরাহীম(আ.)-কে সত্যের অনুসারী, অনুগত, কৃতজ্ঞ এবং আল্লাহমুখী একজন আদর্শ মানব রূপে পেশ করে। তাঁর সম্বন্ধে এখানে ওই ভাবে বর্ণনা দিয়ে বলা হচ্ছে যে, তিনি একটা জাতি ছিলেন। জাতি শব্দ প্রয়ােগ করে সম্ভবত এ কথা বলা হচ্ছে যে, একটি গােটা জাতির মাঝে যে পরিমাণ মঙ্গল, আনুগত্য ও বরকত থাকতে পারে তার একার মাঝেই তা বিদ্যমান ছিলো। সুতরাং এদিক থেকে তিনি একটা পূর্ণাংগ জাতির সমপর্যায়ের। অথবা উম্মত’ শব্দ দ্বারা ইমাম’ বা নেতা বুঝানাে হয়েছে যাকে মানুষ, সৎ, মঙ্গল ও ন্যায়ের ক্ষেত্রে অনুসরণ করে হাদীস নির্ভর তাফসীরে এই উভয় অর্থই গ্রহণ করা হয়েছে। দুটো অর্থই কাছাকাছি। কারণ যে ধর্মীয় নেতা মানুষকে সত্যের সন্ধান দেন, ন্যায়ের পথে তাদেরকে পরিচালিত করেন তিনি নিজেও ওই সব লােকদের ন্যায় সওয়াবের ভাগী হবেন। অর্থাৎ গােটা উম্মত তার মাধ্যমে হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়ে যে সব কাজ করবে তাদের সকলের সওয়াব একত্রে তিনি একাই পাবেন। এই হিসাবে তিনি অবশ্যই একটি উম্মত বা জাতির সমতুল্য, কোনাে একক ব্যক্তির সমতুল্য নন। তিনি ছিলেন আল্লাহর একান্ত অনুগত, ভক্ত ও অনুরক্ত। তিনি ছিলেন সত্যের অনুসারী, সত্যের সমর্থক। তিনি আদৌ মােশরেকদের দলে ছিলেন না। কাজেই তার সাথে মােশরেকদের কোনােই সম্পর্ক নেই। তিনি তো কথায় ও কাজে আল্লাহর প্রতি সদা কৃতজ্ঞ ছিলেন। তিনি সেই সব মােশরেকদের মতো নন যার কথার দ্বারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে, কার্যে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের ক্ষেত্রে শিরক ও কুফুরীমূলক আচরণ করে। কুসংস্কারের ও নিজেদের খেয়াল-খুশীর বশবর্তী হয়ে হালালকে হারাম করে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাকে খাঁটি ও নির্ভেজাল তাওহীদের পথে পরিচালনা করার জন্যে নির্বাচিত করেছেন। কাজেই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ভিন্ন। এই হচ্ছে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর সঠিক পরিচয় যার সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে ইহুদীরা দাবী করে থাকে এবং যাঁর দোহাই দিয়ে মােশরেকরা নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যায়। রসূলুল্লাহ(স.)-কে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে। (আয়াত ১২৩) এই নির্দেশের মাধ্যমে বিপন্ন তাওহিদী মতবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে সাথে সাথে পুনরায় ঘােষণা করা হচ্ছে যে, ইবরাহীম(আ.) শিরকবাদীদের দলে ছিলেন না। কাজেই তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের কেবল একটাই পথ। আর সেটা হলাে খাটি ইসলামের পথ। তার সাথে শেষ নবীর সম্পর্ক এই ইসলামের মাধ্যমে। তবে শনিবার সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারটা ইবরাহীম(আ.)-এর যুগের সাথে নয় বরং ইহদী সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত কাজেই ইবরাহীমের আদর্শে অনুপ্রাণিত মােহাম্মদ(স.)-এর ধর্মে তার কোানাে প্রভাব নেই। এ প্রসংগেই ওপরে বলা হচ্ছে, (আয়াত ১২৪) ওদের বিচারের ভার আল্লাহর হাতেই ন্যাস্ত।

*দাওয়াতের উত্তম কৌশল : পূর্বের আয়াতে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর তাওহিদী মতবাদ এবং ইহুদী ও মােশরেক সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত ও বিকৃত মতবাদের মাঝে সন্দেহের যে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছিলাে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। তাতে বলা হয়েছে যে, উভয় মতবাদের মাঝে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ(স.)-কে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং তাকে বলা হচ্ছে, তিনি যেন তাওহিদ বা একত্ববাদ এর প্রতি, আল্লাহর দেখানাে সঠিক পথের প্রতি হেকমত, বিচক্ষণতা এবং সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে মানুষকে আহ্বান করেন। প্রয়োজন হলে সেই মতবাদের পক্ষে সঠিক ও সুন্দর পদ্ধতিতে তর্ক বিতর্ক লিপ্ত হন। যদি বিরূদ্ধবাদীরা তাঁর ওপর এবং তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করে বসে তাহলে ওদেরকে প্রতিহত করবেন, তাদের সমুচিত জবাব দেবেন। তবে শক্তি-সামর্থ থাকা সত্তেও ওদেরকে ক্ষমা করে দিলে সেটা হবে একটা সুন্দর দৃষ্টান্ত। এক্ষত্রে মনে মনে আক্ষেপ করার কিছুই নেই। ওরা সত্যের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছে না বলে দুঃখ করার কিছুই নেই। মােমেনদের বিরুদ্ধে ওদের ষড়যন্ত্র ও কুট কৌশলের কারণে বিচলিত হওয়ারও কিছু নেই। কারণ, উত্তম পরিণতি কেবল মােমেন-মােত্তাকীন তথা সত্যের অনুসারী ও ধারক-বাহকদের জন্যেই নির্ধারিত। এই বাস্তব কথাটাই নিচের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘(হে নবী,) তুমি তােমার মালিকের পথে (মানুষদের) প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা আহ্বান করাে, (কখনাে তর্কে যেতে হলে) তুমি এমন এক পদ্ধতিতে যুক্তিতর্ক করাে যা সবচাইতে উৎকৃষ্ট পন্থা; তােমার মালিক (এটা) ভালাে করেই জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিপথগামী হয়ে গেছে, (আবার) যে ব্যক্তি (হেদায়াতের) পথে রয়েছে তিনি তার সম্পর্কেও সবিশেষ অবহিত আছেন। যদি তােমরা কাউকে শাস্তি দাও তাহলে ঠিক ততােটুকু শাস্তিই দেবে যতােটুকু (অন্যায়) তােমাদের সাথে করা হয়েছে; অবশ্য যদি তােমরা ধৈর্য ধারণ করাে তাহলে (জেনে রেখাে,) ধৈর্যশীলদের জন্যে তাই হচ্ছে উত্তম। (হে নবী,) তুমি (নির্যাতন নিপীড়নে) ধৈর্য ধারণ করাে, তােমার ধৈর্য (সম্ভব হবে) শুধু আল্লাহ তায়ালার সাহায্য দিয়েই, এদের (আচরণের) ওপর দুঃখ করাে না, এরা যে সব ষড়যন্ত্র করে চলেছে তাতে তুমি মনােক্ষুন্ন হয়াে না। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাদের সাথে রয়েছেন যারা (জীবনের সর্বত্র) আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলে, (সর্বোপরি) তারা হবে সৎকর্মশীল'(আয়াত ১২৫-১২৮) আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ পাক ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগের নীতি ও পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। এই দাওয়াতের উপায় উপকরণ কি হবে, কোন নীতি ও পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে রসূলুল্লাহ(স.) এবং পরবর্তীতে তাঁর উম্মতের মােবাল্লেগরা দাওয়াতী কাজ পরিচালনা কবেন তার রূপরেখাও উক্ত আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই আমাদের সকলেরই উচিত, দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্ব পালন করার পূর্বে আমরা যেন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই মূলনীতিগুলাের প্রতি দৃষ্টিপাত করি। দাওয়াত ও তাবলীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকা; স্বয়ং মােবাল্লেগের প্রতি বা তার জাতির প্রতি আহ্বান করা নয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, একজন মােবাল্পেগ তাঁর দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্যই পালন করছেন। এটা কেবলই একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য। কাজেই এই দায়িত্ব পালন করার দ্বারা কোনাে মােবাল্লেগ কারও প্রতি কোনাে দয়া বা করুণা করছে না, খােদ দাওয়াত ও তাবলীগের প্রতিও নয় এবং যারা তার মাধ্যমে হেদায়াত প্রাপ্ত হচ্ছে-তাদের প্রতিও নয়। তবে এই মহান কাজ আঞ্জাম দেয়ার জন্যে সে আল্লাহর কাছে উত্তম প্রতিদান পাবে। আলোচ্য আয়াতে বিচক্ষণতার সাথে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, যাদের সামনে দাওয়াত পেশ করা হবে তাদের অবস্থা ও পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। কতােটুকু বক্তব্য তাদের সামনে উপস্থাপন করলে তারা বিরক্ত হবে না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মানসিক প্রস্তুতির পূর্বেই তাদেরকে যেন কোনাে ধর্মীয় বিধান পালনে বাধ্য করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোন পদ্ধতিতে বক্তব্য পেশ করলে অধিক ফলপ্রসূ হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সর্বোপরি শ্রোতাদের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্যের ধরন-ধারণের বৈচিত্র আনতে হবে। সাথে সাথে এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে যেন বক্তব্যের মাধ্যমে অহেতুক উত্তেজনা, অনাকাংখিত চাঞ্চল্য এবং ধর্মীয় উগ্রতা সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় দাওয়াত ও তাবলীগের আসল উদ্দেশ্যেই ব্যহত হবে যা হেকমত ও বিচক্ষণতার পরিপন্থী। আলােচ্য আয়াতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আঞ্জাম দিতে বলা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, নরম ও সুন্দর ভাষায় কথা বলতে হবে যেন তা মানুষের মনের গভীরে রেখাপাত করে এবং তাদের অনুভূতিকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। অহেতুক সুরে এবং চিৎকার করে বক্তব্য প্রদান করা উচিত নয়। তদ্রুপ কারও কোনাে দোষ-ক্রটি নিয়ে প্রকাশ্য মজলিসে আলােচনা করাও উচিত নয়। মনে রাখতে হবে নরম ও মার্জিত ভাষায় উপদেশ প্রদান করলে তা অনেক সময় কঠিন হৃদয়কেও নাড়া দেয়, ধর্ম বিমুখ লােকদের মনেও সাড়া জাগায় এবং এসব লােকদেরকে সত্যের পথে পরিচালিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। নরম ও সুন্দর উপদেশ যতটুকু মঙ্গল বয়ে আনে ততােটুকু ধমক, উত্তেজনাকর বক্তব্য এবং ভৎর্সনা-গঞ্জনা দ্বারা তা কখনােই সম্ভব হয় না। প্রয়ােজন হলে সুন্দর ও সঠিক পদ্ধতিতে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হতে হবে। তবে তর্ক করতে গিয়ে কখনও বিপক্ষের লােকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে তদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। তারা যেন উপলব্ধি করতে পারে যে, এই তর্ক-বিতর্কের উদ্দেশ্য কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাই নয়, বরং তাকে সন্তুষ্ট চিত্তে সত্য ও বাস্তবতাকে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করা। কারণ প্রত্যেকের মনেই কিছুটা অহমিকা ও আত্মম্ভরিতা থাকে। ফলে মানুষ সহজেই অন্যের মতামতকে বিনা বাক্যে মেনে নিতে চায় না। তবে ভদ্রতা ও নম্রতার সাথে বুঝালে মানুষ বুঝতে চেষ্টা করে এবং অন্যের মতামত গ্রহণ করতেও প্রস্তুত হয়। কারণ এক্ষেত্রে পরাজয়ের কোনাে মনােভাব তার মাঝে সৃষ্টি হয় না। মানুষের সামনে যখন কোনাে ভিন্ন মত ও বক্তব্য পেশ করা হয় তখন সে চিন্তা করে দেখে যে, মানুষের কাছে এর মূল্য কি। যখন সে বুঝতে পারে যে, নিজস্ব মতামত ত্যাগ করে ভিন্ন কোনাে মত ও রায়কে মেনে নেয়া এক ধরনের পরাজয় তখন সে ওই ভিন্ন মত গ্রহণ করাকে নিজের ব্যক্তিত্ব, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও মান-সম্মানের জন্যে ক্ষতিকর মনে করে। তবে মার্জিত ভাষায়, ভদ্র ও নম্র ভাষায় তর্কের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করলে প্রতিপক্ষের কাছে তা গ্রহণযােগ্য হয়। সে তখন বুঝতে পারে যে, তর্কের উদ্দেশ্য তার ব্যক্তিগত মান-মর্যাদাকে খাটো করা নয়। বরং তার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সত্য বিষয়কে প্রমাণিত করা এবং সেটাকে গ্রহণ করা। সে তখন আরও বুঝতে পারে যে, এই তর্কের উদ্দেশ্য কেবল আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর দ্বীন। ওই তার্কিক মােবাল্লেগের ব্যক্তিগত মতামতকে প্রাধান্য দেয়া নয় এবং তার ব্যক্তিগত জয়-পরাজয়ও নয়। মােবাল্লেগ বা দাওয়াতী কাজে নিয়ােজিত ব্যক্তিরা যেন অহেতুক উত্তেজনা ও অতি উৎসাহের বশবর্তী না হয়ে পড়ে সে জন্যে আল্লাহ পাক স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেন যে, কে পথহারা এবং কে সত্য পথের অনুসারী তা একমাত্র তিনিই ভালােভাবে অবগত আছেন। কাজেই প্রতিপক্ষের সাথে তর্ক করতে গিয়ে অহেতুক ঝগড়াঝাটি বা বাদানুবাদের প্রয়ােজন নেই। বরং সত্যকে সঠিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা ও প্রমাণিত করাই প্রকৃত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহর হাতেই ন্যস্ত। মৌখিক দাওয়াত এবং যুক্তি মাধ্যমে তর্ক-বিতর্কের ক্ষেত্রে এটাই হচ্ছে সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম-নীতি। তবে দাওয়াতী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপর আক্রমন হলে তখন নীতি পাল্টে যাবে এবং পন্থা ও পদ্ধতিও পাল্টে যাবে। কারণ আক্রমন হচ্ছে একটি ব্যবহারিক কর্মকান্ড। তাই সত্যের মর্যাদা রক্ষার খাতিরেই এবং বাতিলের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে অনুরূপ পন্থা ও পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। তবে বাতিলের মােকাবেলা করতে গিয়ে যাতে সীমালংঘন না হয়ে যায়, বাড়াবাড়ির পর্যায় গিয়ে না পৌছে-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ, ইসলাম হচ্ছে একটি ন্যায়ভিত্তিক ধর্ম, ভারসাম্যপূর্ণ ধর্ম, শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। কাজেই এই ধর্মে যুলুম-অত্যাচার থেকে নিজেকে এবং অন্যান্য মুসলমানদেরকে রক্ষা করার অনুমতি আছে। তবে যুলুম-অত্যাচার করার অনুমতি নেই। এই জন্যেই বলা হয়েছে, তবে যদি তােমাদেরকে শান্তি দেয়া হয় তাহলে তােমরাও তাদের শাস্তি দাও, তবে ঠিক ততােটুকু- যতােটুকু তােমাদের দেয়া হয়েছে, আর যদি তােমরা ধৈর্য্য…’ এমনটি করা দাওয়াত ও তাবলীগের আদর্শ মূলনীতির পরিপন্থী নয়; বরং এর একটা অংশ। ন্যায় ও সাম্যের চৌহদ্দির ভেতরে থেকে দাওয়াতী কাজকে রক্ষা করা হলে এর মান-মর্যাদা রক্ষা পাবে। মানুষের মনে এর স্থান তুচ্ছ ও নগণ্য বলে বিবেচিত হবে না। মনে রাখতে হবে, মানুষ কখনও তুচ্ছ ও মর্যাদাহীন কোনাে আদর্শের আহ্বানে সাড়া দেয় না। তারা এটাকে আল্লাহর দাওয়াত বলেও বিশ্বাস করে না। কারণ, আল্লাহর দাওয়াত কোনাে হেলা-খেলার বস্তু নয় যে, তা পদদলিত হতে থাকবে আর তাকে রক্ষা করার মতাে কেউ থাকবে না। তদ্রুপ যারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী তারা বিনা বাক্যে অন্যায় অবিচারকে মেনে নেবে, এমনটি নয়। কারণ, তারা আল্লাহর প্রতিনিধি। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশিত হয়েই তারা এই পৃথিবীর বুকে সত্যের প্রতিষ্ঠায় মানব সমাজে ন্যায় নীতির প্রতিষ্ঠায় এবং মানবতাকে সত্যের পথে পরিচালনায় নিজেদেরকে নিয়ােজিত রেখেছে। যদি তারা কেবলই অত্যাচারিত হতে থাকে, নির্যাতিত হতে থাকে আর এর প্রতিকারের ক্ষমতা তাদের না থাকে-তাহলে এসব গুরু দায়িত্ব পালন করা তাদের পক্ষে কিভাবে সম্ভব হবে? যদিও ইসলাম ধর্মে সমতার ভিত্তিতে প্রতিশােধ গ্রহণ করার নীতি স্বীকৃত, তা সত্তেও পবিত্র কোরআন ধৈর্য ও ক্ষমার আদর্শেই মনুষকে অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে অন্যায় ও অবিচারকে প্রতিহত করার মতাে ক্ষমতা ও শক্তি মুসলমানদের থাকা সত্তেও এই ক্ষমা ও ধৈর্যের নীতিই গ্রহণ করার জন্যে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে যদি এর দ্বারা ভাল ফল লাভ হয় এবং দাওয়াতী কাজে এর প্রভাব ইতিবাচক হয়। যদি দাওয়াত ও আদর্শের স্বার্থে এই ক্ষমা আর সহিষ্ণুতাই ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে এক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থ আদৌ কোনাে বিবেচ্য বিষয় বলে গণ্য হবে না। আর যদি ক্ষমা ও ধৈর্য প্রদর্শনের ফলে আদর্শের মর্যাদাহানী ঘটে, আদর্শকে মানুষের চোখে হাল্কা করে ফেলে তাহলে প্রতিশােধের নীতি গ্রহণ করাই উত্তম। ধৈর্যের জন্যে প্রয়ােজন উত্তেজনাকে প্রতিহত করা, আবেগ-অনুভূতিকে দমন করা এবং একটি স্বভাবজাত প্রবৃত্তিকে দমন করা। কাজেই পবিত্র কোরআন এই কঠিন কাজটিকে আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট করে এর শুভ পরিণতির বার্তা শুনাচ্ছে। (আয়াত ১২৬-১২৭) অর্থাৎ আল্লাহর মেহেরবানী ও নেক দৃষ্টির বদৌলতেই মানুষের পক্ষে ধৈর্য ও আত্মসংযম প্রদর্শন করা সম্ভব হয়। কারণ তিনিই মানুষের মন থেকে প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার মতাে স্বভাবজাত প্রবৃত্তিকে মিটিয়ে দেন এবং ক্ষমা প্রদর্শনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন। এখানে পবিত্র কোরআন রসূলুল্লাহ(স.)-কে একটি উপদেশ দিচ্ছে। উপদেশটি কেবল তাঁর জন্যেই নয়। বরং তার উম্মতের সকল মােবাল্লেগদের জন্যেই প্রযােজ্য। আর সেটা হলাে এই যে, মানুষ যদি তাদের আহ্বানে সাড়া না দেয় এবং তারা যদি সত্য পথের অনুসারী না হয় তাহলে এর কারণে যেন তারা মনক্ষুন্ন না হয়। কারণ তাদের দায়িত্ব কেবল মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান করা। আর হেদায়াত ও গােমরাহীর ব্যাপারটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে ন্যস্ত। কারা হেদায়াত প্রাপ্ত হবে আর কারা হবে না-এসব বিষয় সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর নির্ধারিত বিধান মতেই হয়ে থাকে। এখানে মানুষের কোনাে হাত নেই। কাজেই এর কারণে মন খারাপ করার কিছুই নেই। একজন মােবাল্লেগ আল্লাহর পথের দিশারী, কাজেই আল্লাহই তাকে সব ধরনের অনিষ্ট ও অমঙ্গলের হাত থেকে রক্ষা করবেন। সে যদি প্রকৃত মােবাল্লেগ হয়, নিষ্ঠাবান ও নিবেদিত প্রাণ মােবাল্লেগ হয় তাহলে ষড়যন্ত্রকারীদের কোনাে ষড়যন্ত্রই তার এতােটুকুও ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তায়ালা সর্বদা তার সহায়ক ও রক্ষক থাকবেন। হয়তাে কখনও তাকে পরীক্ষা করার জন্যে বিপদের সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহর প্রতি তার কতােটুকু আস্থা আছে-তা পরখ করার জন্যে আল্লাহর কাংখিত সাহায্য ও মদদ বিলম্বিতও হতে পারে। কিন্তু শেষ পরিণতি কি হবে, এবং কার স্বার্থে যাবে, এটা চূড়ান্ত ও নির্ধারিত। বলা হচ্ছে, (আয়াত ১২৮)। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আছেন, তাই কিসের ভয়? নিন্দুকেরা, ষড়যন্ত্রকারীরা তার কিইবা ক্ষতি করতে পারবে। এটাই হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত দাওয়াত ও তাবলীগের মূলনীতি। আর আল্লাহর ওয়াদা মােতাবেক দাওয়াতী কাজের সাফল্য এই মূলনীতির অনুসরণের মাঝেই নিহিত। আল্লাহর ওয়াদা সত্য হবে না তাে আর কার ওয়াদা সত্য হবে?

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১২০-১২৩ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দা, রাসূল, তার বন্ধু, নবীদের পিতা এবং বড় মর্যাদা সম্পন্ন রাসূল হযরত ইবরাহীমের (আঃ) প্রশংসা করছেন এবং মুশরিক, ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের থেকে তাঁকে পৃথক করছেন। (আরবি) এর অর্থ হলো ইমাম, যার অনুসরণ করা হয়। (আরবি) বলা হয় অনুগত ও বাধ্যকে। (আরবি) এর অর্থ হচ্ছে শিরক থেকে সরে গিয়ে তাওহীদের দিকে আগমনকারী। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তিনি ছিলেন মুশরিকদের থেকে বিমুখ।

হযরত ইবনু মাসঊদকে (রাঃ) (আরবি) এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “মানুষকে ভাল শিক্ষাদানকারী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য স্বীকারকারী। হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বলেন যে, (আরবি) এর অর্থ হলো লোকদের দ্বীনের শিক্ষক।

একবার হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হযরত মুআয (রাঃ) (আরবি) ও (আরবি) ছিলেন।” তখন একজন লোক মনে মনে বলেনঃ “হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) ভুল বলছেন। আল্লাহর সাক্ষ্য অনুযায়ী তো এই গুনের অধিকারী ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)।” তারপর প্রকাশ্যভাবেও তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) তো (আরবি) বলেছেন?” তাঁর এ কথার জবাবে হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “তুমি (আরবি) এর অর্থ (আরবি) এর অর্থ জান কি? ‘উম্মত তাকেই বলা হয়, যিনি লোকদেরকে মঙ্গল শিক্ষা দেন আর ‘কানেত’ তাঁকে বলা হয় যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) আনুগত্যের কাজে লেগে থাকেন। নিশ্চয়ই হযরত মুআয (রাঃ) এই রূপই ছিলেন।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) একাকী উম্মাত ছিলেন এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত ছিলেন। তাঁর যুগে তিনি একাই একত্ববাদী ছিলেন, বাকী সব লোকই ছিল সেই সময় কাফির। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তিনি ছিলেন হিদায়াতের ইমাম এবং আল্লাহর গোলাম। তিনি আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন এবং তাঁর সমস্ত হুকুম মেনে চলতেন। যেমন মহান আল্লাহ স্বয়ং বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “সেই ইবরাহীম (আঃ) যে পূর্ণ করেছে।” (৫৩:৩৭) অর্থাৎ আল্লাহর সমস্ত হুকুম পালন করেছে। যেমন তিনি বলেন (আরবি) অর্থাৎ “ইতিপূর্বে আমি অবশ্যই ইবরাহীমকে (আঃ) রুশ ও হিদায়াত। দান করেছিলাম এবং তাকে আমি খুব ভাল রূপেই জানতাম।” (২১:৫১)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলাম। সে শুধু এক ও অংশীবিহীন আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করতো এবং তাঁর পছন্দনীয় শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আমি তাকে দ্বীন ও দুনিয়ার মঙ্গল দান করেছিলাম। পবিত্র জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উত্তমগুণ তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। আর আখেরাতেও নিশ্চয়ই সে সংশীলদের অন্যতম।”

তাঁর পবিত্র যিকর দুনিয়াতেও বাকী রয়েছে এবং আখেরাতেও তিনি বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবেন। তাঁর চরমোৎকর্ষ, তার শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর তাওহীদের প্রতি ভালবাসা এবং তাঁর ন্যায় পথে প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতি এমন ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় শেষ নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের (আঃ) অনুসরণ কর এবং জেনে রেখো যে, সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল ।” সূরায়ে আনআ’মে এরশাদ হয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলঃ নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমাকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন, যা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম ও একনিষ্ঠ ইবরাহীমের (আঃ) ধর্ম, আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।” (৬:১৬১) অতঃপর ইয়াহূদীদের উক্তির প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
# এতে কোন সন্দেহ নেই যে, প্রত্যেক উম্মতের জন্যে আল্লাহ তাআলা এমন একটা দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন যেই দিনে তারা একত্রিত হয়ে তাঁর ইবাদত করবে খুশীর পর্ব হিসেবে। এই উম্মতের জন্যে ঐ দিন হচ্ছে শুক্রবারের দিন। কেননা, ওটা হচ্ছে ৬ষ্ঠ দিন, যে দিন আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি কার্যপূর্ণতায় পৌঁছিয়ে দেন এবং সমস্ত মাখলুকের সৃষ্টি সমাপ্ত হয়। আর তিনি তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত নিয়ামত দান করেন।

বর্ণিত আছে যে, হযরত মূসার (আঃ) ভাষায় বাণী ইসরাঈলের জন্যে এই দিনটিকেই নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তারা এইদিন থেকে সরে গিয়ে শনিবারকে গ্রহণ করে। তারা এই শনিবারকে এই হিসেবে গ্রহণ করে যে, শুক্রবারে সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত হয়েছে। শনিবারে আল্লাহ তাআলা কোন জিনিস সৃষ্টি করেন। নাই। সুতরাং তাওরাত অবতীর্ণ হলে তাদের জন্যে ঐ দিনকেই অর্থাৎ শনিবারকেই নির্ধারণ করা হয়। আর তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়, তারা যেন দৃঢ়তার সাথে এ দিনকে ধারণ করে। তবে একথা অবশ্যই বলে দেয়াহয়েছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যখনই আসবেন তখনই সবকে ছেড়ে দিয়ে শুধু তাঁরই অনুসরণ করতে হবে। ঐ কথার উপর তাদের কাছে ওয়াদাও নেয়া হয়। সুতরাং শনিবারের দিনটি তারা নিজেরাই বেছে নিয়েছিল এবং শুক্রবারকে ছেড়ে দিয়েছিল।

হযরত ঈসার (আঃ) যুগ পর্যন্ত তারা এর উপরই থাকে। বলা হয়েছে যে, পরে হযরত ঈসা (আঃ) তাদেরকে রবিবারের দিকে আহ্বান করেছিলেন। একটি উক্তি রয়েছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) কয়েকটি মানসূখ হুকুম ছাড়া তাওরাতের শরীয়তকে পরিত্যাগ করেন নাই এবং শনিবারের হিফাযত তিনি বরাবরই করে এসেছিলেন। যখন তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন তাঁর পরে কুসতুনতীন বাদশাহর যুগে শুধু ইয়াহূদীদের হঠকারিতার কারণে ঐ বাদশাহ পূর্ব দিককে তাদের কিবলা নির্ধারণ করে এবং শনিবারের পরিবর্তে রবিবারকে ধার্য করে নেয়।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা (দুনিয়ায় সর্বশেষে আগমনকারী, আর কিয়ামতের দিন আমরা সবারই আগে থাকবো। তাদেরকে আল্লাহর কিতাব আমাদের পূর্বে দেয়া হয়েছিল এবং এই দিনটিকেও আল্লাহ তাআলা তাদের উপর ফরয করে। ছিলেন। কিন্তু তাদের মতানৈক্যের কারণে তারা তা নষ্ট করে দিয়েছে। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাদেরকে ওর প্রতি হিদায়াত করেছেন। সুতরাং এসব লোক আমাদের পিছনেই রয়েছে। ইয়াহূদীরা একদিন পরে এবং খৃষ্টানরা দু’দিন পরে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। তবে এটা ইমাম বুখারীর (রঃ) শব্দ)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে আল্লাহ তাআলা জমআর। (শুক্রবারের) দিন হতে বঞ্চিত করেছেন। ইয়াহুদীদের জন্যে হলো শনিবারের দিন এবং খৃস্টানদের জন্যে হলো রবিবারের দিন। আর আমাদের জন্যে হলো শুক্রবারের দিন। সুতরাং এই দিক দিয়ে যেমন তারা আমাদের পরে রয়েছে কিয়ামতের দিনেও তারা আমাদের পিছনেই থাকবে। দুনিয়ার হিসেবে আমরা পিছনে, আর কিয়ামতের হিসেবে আগে। অর্থাৎ সমস্ত মাখলুকের মধ্যে সর্বপ্রথম ফায়সালা হবে আমাদের।” (এ হাদীসটি এই ভাষায়) ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
# আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসূল (সঃ) হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি যেন আল্লাহর মাখলুককে তাঁর পথের দিকে আহ্বান করেন। ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) উক্তি অনুযায়ী ‘হিকমত’ দ্বারা কালামুল্লাহ ও হাদীসে রাসূল (সঃ) উদ্দেশ্য। আর সদুপদেশ দ্বারা ঐ উপদেশকে বুঝানোহয়েছে যার মধ্যে ভয় ও ধমকও থাকে যে, যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে এবং আল্লাহর শাস্তি হতে বাঁচবার উপায় অবলম্বন করে। হাঁ, তবে এটার প্রতিও খেয়াল রাখা দরকার যে, যদি কারো সাথে তর্ক ও বচসা করার প্রয়োজন হয়, তবে যেন নরম ও উত্তম ভাষায় তা করা হয়। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আহলে কিতাবের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার সময় উত্তম পন্থা অবলম্বন করো।” (২৯:৪৬) অনুরূপভাবে হযরত মূসাকেও (আঃ) নরম। ব্যবহারের হুকুম দেয়া হয়েছিল। দু’ভাইকে ফিরাউনের নিকট পাঠাবার সময় বলে দেনঃ “তোমরা তাকে নরম কথা বলবে, তাহলে হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ। করবে অথবা ভয় করবে।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপদগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে সেটাও তিনি সম্যক অবগত। কে হতভাগ্য এবং কে ভাগ্যবান এটাও তার অজানা নয়। সমস্ত আমলের পরিণাম সম্পর্কেও তিনি পূর্ণভাবে অবহিত। হে নবী (সঃ)! তুমি আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে থাকো। কিন্তু যারা মানে না তাদের পিছনে পড়ে তুমি নিজেকে ধ্বংস করে দিয়ো না। তুমি হিদায়াতের যিম্মাদার নও। তুমি শুধু। তাদেরকে সতর্ককারী। তোমার দায়িত্ব শুধু আমার পয়গাম তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দেয়া। হিসাব নেয়ার দায়িত্ব আমার। হিদায়াত তোমার অধিকারের জিনিস নয় যে, তুমি যাকে ভালবাস তাকে হিদায়াত দান করবে। এটা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার অধিকারের জিনিস।”

(Book# 827)
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura:- An-Nahl
Sura: 16
Verses :- 120-125
[ اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ؕ
Invite to the way of your Lord with wisdom and good instruction, and argue with them in a way that is best.]
www.motaher21.net

Allah says:

إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِلّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

شَاكِرًا لاَِّنْعُمِهِ اجْتَبَاهُ

Verily, Ibrahim was (himself) an Ummah, obedient to Allah, a Hanif (monotheist), and he was not one of the idolators.(He was) thankful for His favors. He (Allah) chose him

He selected him, as Allah says:

وَلَقَدْ ءَاتَيْنَأ إِبْرَهِيمَ رُشْدَهُ مِن قَبْلُ وَكُنَّا بِهِ عَـلِمِينَ

And before, We indeed gave Ibrahim his integrity, and We were indeed most knowledgeable about him. (21:51).

Then Allah says:

وَهَدَاهُ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

and guided him to a straight path.

which means to worship Allah alone, without partners or associate, in the manner that He prescribed and which pleases Him
وَاتَيْنَاهُ فِي الْدُّنْيَا حَسَنَةً

And We gave him good in this world,

meaning, `We granted him all that a believer may require for a good and complete life in this world.’

وَإِنَّهُ فِي الاخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ

and in the Hereafter he shall be of the righteous.

Concerning the Ayah:
وَاتَيْنَاهُ فِي الْدُّنْيَا حَسَنَةً
(And We gave him good in this world), Mujahid said:

“This means a truthful tongue.
ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا

Then, We have sent the revelation to you:”Follow the religion of Ibrahim (he was a) Hanif…

meaning, `because of his perfection, greatness, and the soundness of his Tawhid and his way, We revealed to you, O Seal of the Messengers and Leader of the Prophets,’

أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

Follow the religion of Ibrahim (he was a) Hanif and he was not of the idolators.

This is like the Ayah in Surah Al-An`am:

قُلْ إِنَّنِى هَدَانِى رَبِّى إِلَى صِرَطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

Say:”Truly, my Lord has guided me to a straight path, a right religion, the religion of Ibrahim, (he was a) Hanif and he was not of the idolators.” (6:161).

Then Allah rebukes the Jews,

إِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِيهِ وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُواْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

The Sabbath was only prescribed for those who differed concerning it, and verily, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection about what they differed over.
The Prescription of the Sabbath for the Jews

There is no doubt that for every nation, Allah prescribed one day of the week for people to gather to worship Him. For this Ummah He prescribed Friday, because it is the sixth day, on which Allah completed and perfected His creation. On this day He gathered and completed His blessings for His servants.

It was said that Allah prescribed this day for the Children of Israel through His Prophet Musa, but they changed it and chose Saturday because it was the day on which the Creator did not create anything, as He had completed His creation on Friday. Allah made observance of the Sabbath obligatory for them in the laws of the Tawrah (Torah), telling them to keep the Sabbath.

At the same time, He told them to follow Muhammad when he was sent, and took their promises and covenant to that effect.

Hence Allah says:

إِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِيهِ

The Sabbath was only prescribed for those who differed concerning it,

Mujahid said:

“They observed the Sabbath (Saturday) and ignored Friday.”

Then they continued to observe Saturday until Allah sent `Isa bin Maryam. It was said that he told them to change it to Sunday, and it was also said that he did not forsake the laws of the Tawrah except for a few rulings which were abrogated, and he continued to observe the Sabbath until he was taken up (into heaven).

Afterwards, the Christians at the time of Constantine were the ones who changed it to Sunday in order to be different from the Jews, and they started to pray towards the east instead of facing the Dome (i.e., Jerusalem). And Allah knows best.

It was reported in the Two Sahihs that Abu Hurayrah heard the Messenger of Allah say:

نَحْنُ الاْخِرُونَ السَّابِقُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بَيْدَ أَنَّهُمْ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِنَا ثُمَّ هَذَا يَوْمُهُمُ الَّذِي فَرَضَ اللهُ عَلَيْهِمْ فَاخْتَلَفُوا فِيهِ فَهَدَانَا اللهُ لَهُ فَالنَّاسُ لَنَا فِيهِ تَبَعٌ الْيَهُودُ غَدًا وَالنَّصَارَى بَعْدَ غَد

We are the last, but we will be the first on the Day of Resurrection, even though they were given the Book before us. This is the day that Allah obligated upon them, but they differed concerning it. Allah guided us to this day, and the people observe their days after us, the Jews on the following day and the Christians on the day after that.

This version was recorded by Al-Bukhari.

It was reported that Abu Hurayrah and Hudhayfah said that the Messenger of Allah said:

أَضَلَّ اللهُ عَنِ الْجُمُعَةِ مَنْ كَانَ قَبْلَنَا فَكَانَ لِلْيَهُودِ يَوْمُ السَّبْتِ وَكَانَ لِلنَّصَارَى يَوْمُ الاَْحَدِ فَجَاءَ اللهُ بِنَا فَهَدَانَا اللهُ لِيَوْمِ الْجُمُعَةِ فَجَعَلَ الْجُمُعَةَ وَالسَّبْتَ وَالاَْحَدَ وَكَذَلِكَ هُمْ تَبَعٌ لَنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ نَحْنُ الاْخِرُونَ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا وَالاَْوَّلُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَالْمَقْضِيُّ بَيْنَهُمْ قَبْلَ الْخَلَيِق

Allah let the people who came before us stray from Friday, so the Jews had Saturday and the Christians had Sunday. Then Allah brought us and guided us to Friday. So now there are Friday, Saturday and Sunday, thus they will follow us on the Day of Resurrection. We are the last of the people of this world, but will be the first on the Day of Resurrection, and will be the first to be judged, before all of creation.

It was reported by Muslim.

The Command to invite people to Allah with Wisdom and Good Preaching

Allah says:

ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ

Invite to the way of your Lord with wisdom,

Allah commands His Messenger Muhammad to invite the people to Allah with Hikmah (wisdom).

Ibn Jarir said:

“That is what was revealed to him from the Book and the Sunnah.”

وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ

and fair preaching,

meaning, with exhortation and stories of the events that happened to people that are mentioned in the Qur’an, which he is to tell them about in order to warn them of the punishment of Allah.

وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ

and argue with them with that which is best.

meaning, if any of them want to debate and argue, then let that be in the best manner, with kindness, gentleness and good speech, as Allah says elsewhere:

وَلَا تُجَـدِلُواْ أَهْلَ الْكِتَـبِ إِلاَّ بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ إِلاَّ الَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنْهُمْ

And do not argue with the People of the Book, unless it be with that which is best, except for those who purposefully do wrong. (29:46)

Allah commanded him to speak gently, as He commanded Musa and Harun to do when he sent them to Pharaoh, as He said:

فَقُولَا لَهُ قَوْلاً لَّيِّناً لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى

And speak to him mildly, perhaps he may accept admonition or fear (Allah). (20:44)

إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ

Truly, your Lord best knows who has strayed from His path,

meaning, Allah already knows who is doomed (destined for Hell) and who is blessed (destined for Paradise).

وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

and He best knows those who are guided.

This has already been written with Him and the matter is finished, so call them to Allah, but do not exhaust yourself with regret over those who go astray, for it is not your task to guide them. You are just a warner, and all you have to do is convey the Message, and it is He Who will bring them to account.

إِنَّكَ لَا تَهْدِى مَنْ أَحْبَبْتَ

You cannot guide whom you love. (28:56)

لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـكِنَّ اللَّهَ يَهْدِى مَن يَشَأءُ

It is not up to you to guide them, but Allah guides whom He wills. (2:72)

Leave a Reply