(বই#৮৪২) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৫] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৩০ নং [ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দারিদ্র্য-ভয়ে হত্যা করো না।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪২) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৫]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৩০ নং

[ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ
তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দারিদ্র্য-ভয়ে হত্যা করো না।]
www.motaher21.net
وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ خَشۡیَۃَ اِمۡلَاقٍ ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُہُمۡ وَ اِیَّاکُمۡ ؕ اِنَّ قَتۡلَہُمۡ کَانَ خِطۡاً کَبِیۡرًا ﴿۳۱﴾
তোমাদের সন্তানদেরকে তোমরা দারিদ্র্য-ভয়ে হত্যা করো না, আমিই তাদেরকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি এবং তোমাদেরকেও। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।

৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

#যেসব অর্থনৈতিক চিন্তাধারার ভিত্তিতে প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যুগে যুগে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন আন্দোলন দানা বেঁধেছে, এ আয়াতটি তার ভিত পুরোপুরি ধ্বসিয়ে দিয়েছে। প্রাচীন যুগে দারিদ্র্য ভীতি শিশু হত্যা ও গর্ভপাতের কারণ হতো। আর আজ তা দুনিয়াবাসীকে তৃতীয় আর একটি কৌশল অর্থাৎ গর্ভনিরোধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামের ঘোষণাপত্রের এ ধারাটি তাকে অন্নগ্রহণকারীদের সংখ্যা কমাবার ধ্বংসাত্মক প্রচেষ্টা ত্যাগ করে এমনসব গঠনমূলক কাজে নিজের শক্তি ও যোগ্যতা নিয়োগ করার র্নিদেশ দিচ্ছে যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী রিযিক বৃদ্ধি হয়ে থাকে। এ ধারাটির দৃষ্টিতে অর্থনৈতিক উপায়-উপকরণের স্বল্পতার আশঙ্কায় মানুষের বারবার সন্তান উৎপাদনের সিলসিলা বন্ধ করে দিতে উদ্যত হওয়া তার বৃহত্তম ভুলগুলোর অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এ ধারাটি মানুষকে এ বলে সাবধান করে দিচ্ছে যে, রিযিক পৌঁছাবার ব্যবস্থাপনা তোমার আয়ত্বাধীন নয় বরং এটি এমন এক আল্লাহর আয়ত্বাধীন যিনি তোমাকে এ যমীনে আবাদ করেছেন। পূর্বে আগমনকারীদেরকে তিনি যেভাবে রুজি দিয়ে এসেছেন তেমনিভাবে তোমাদেরকেও দেবেন। ইতিহাসের অভিজ্ঞতাও একথাই বলে, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি হতে থেকেছে ঠিক সেই পরিমাণে বরং বহু সময় তার চেয়ে অনেক বেশী পরিমাণে অর্থনৈতিক উপায়-উপকরণ বেড়ে গিয়েছে। কাজেই আল্লাহর সৃষ্টি ব্যবস্থাপনায় মানুষের অযথা হস্তক্ষেপ নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ শিক্ষার ফলেই কুরআন নাযিলের যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন যুগে মুসলমানদের মধ্যে জন্ম শাসনের কোন ব্যাপক ভাবধারা জন্ম লাভ করতে পারেনি।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
# *জন্ম নিয়ন্ত্রনের কুফল : জাহেলী যুগের কিছু কিছু লােক অভাব অনটনের আশংকায় মেয়েদেরকে হত্যা করতাে। পূর্ববর্তী আয়াতে যখন বলা হয়েছে যে, জীবিকা কমানাে বাড়ানাের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর হাতেই নিবন্ধ, তখন সেই প্রসংগেই যথােচিত জায়গায় অভাবের আশংকায় সন্তান হত্যার ওপর নিষেধাজ্ঞা উচ্চারিত হয়েছে। জীবিকা যতােক্ষণ আল্লাহর হাতে থাকছে, ততােক্ষণ জনসংখ্যার সাথে অভাবের কোনাে ওৎপ্রোত সম্পর্ক নেই। সব কিছুই আল্লাহর ফয়সালার ওপর নির্ভরশীল। দরিদ্র ও জনসংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক আছে-এ ধারণা যখন মানুষের মন থেকে মুছে যাবে এবং এ ব্যাপারে মানুষের আকীদা বিশ্বাস যখন বিশুদ্ধ রূপ নেবে, তখন মানুষের বংশ বিস্তারের পরিপন্থী ওই পৈশাচিক কাজটায় প্ররােচনা দানকারী উপাদান আর থাকবে না। ৩১ নং আয়াত লক্ষ্য করুন, ‘তােমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করাে না অভাবের ভয়ে। আমিই তাে তাদেরকে ও তােমাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি। তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।’ আকীদা বিশ্বাসের বিকৃতি ও বিভ্রান্তি শুধু বিশ্বাস ও এবাদাত উপাসনার পরিবেশের বিকৃতি সাধন করেই ক্ষান্ত থাকে না, বরং সমাজ জীবনের ওপরও প্রচন্ড প্রভাব বিস্তার করে থাকে। পক্ষান্তরে আকীদা বিশ্বাসের বিশুদ্ধতা, আবেগ অনুভূতির স্বচ্ছতা ও সুস্থতা এবং সামষ্টিক জীবনের সুস্থতা ও স্থীতির নেয়ামক হয়ে থাকে। সমাজ জীবনে আকীদা বিশ্বাসের প্রভাব যে কতাে তীব্র ও প্রবল হয়ে থাকে, তার একটা উদাহরণ হলাে মেয়ে শিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়ার জাহেলী প্রথা। এই উদাহরণ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, জীবন আকীদা-বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত না হয়েই পারে না এবং আকীদা বিশ্বাস বাস্তব জীবন থেকে বিচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকতেও পারে না। এখানে কোরআনের কয়েকটি বিস্ময়কর সূক্ষ্মতত্ত্বের দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়ােজন। এখানে সন্তানদের জীবিকার বিষয়টি পিতামাতার (নিজেদের) জীবিকার আগে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আমিই তাে তাদেরকে ও তােমাদেরকে জীবিকা দান করে থাকি।’ পক্ষান্তরে সূরা আনয়ামে পিতামাতার জীবিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সন্তানদের জীবিকার আগে । যথা ‘আমিই তােমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি। উভয় সূরার আয়াত দুটোর বক্তব্যের বিভিন্নতার কারণেই এটা ঘটেছে। এখানকার আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অভাবের ভয়ে তােমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করাে না। আমিই তাে তাদেরকে ও তােমাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি।’ এখানে সন্তান হত্যার মূলে রয়েছে সন্তানদের কারণে অভাব দেখা দেয়ার আশংকা। তাই সন্তানদের জীবিকার কথা প্রথমে বলা হয়েছে। আর সূরা আনয়ামে সন্তান হত্যার মূলে রয়েছে পিতামাতার অভাবের বাস্তব উপস্থিতি। তাই পিতামাতার জীবিকার উল্লেখ প্রথমে করা হয়েছে। সুতরাং উভয় জায়গায় আগ-পাছ-করার ক্ষেত্রে যে পার্থক্য দেখা যায়, বক্তব্যের বিভিন্নতার দাবী অনুসারেই তা হয়েছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ দেখো, আমি তোমাদের উপর তোমাদের পিতামাতার চেয়েও বেশী দয়ালু। একদিকে তিনি পিতা-মাতাকে নিদের্শ দিচ্ছেন যে, তারা যেন তাদের সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে ধন-মাল প্রদান করে। আর অন্যদিকে তাদেরকে আদেশ করছেন যে, যেন তারা তাদের সন্তানদেরকে হত্যা না করে। অজ্ঞতার যুগে মানুষ তাদের কন্যাদেরকে উত্তরাধিকার সূত্রে মাল প্রদান করতো না এবং তাদেরকে জীবিত রাখাও পছন্দ করতো না। এমনকি কন্যা-সন্তানকে জীবন্ত কবর দেয়া তাদের একটা সাধারণ প্রথায় পরিণত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা এই জঘন্য প্রথাকে খণ্ডন করছেন। তিনি বলেছেনঃ এটা কতই না অবাস্তব ধারণা যে, তোমরা তাদেরকে খাওয়াবে কোথা থেকে?

জেনে রেখো যে, কারো জীবিকার দায়িত্ব কারো উপর নেই। সবারই জীবিকার ব্যবস্থা মহান আল্লাহই করে থাকেন। সূরায়ে আনআমে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের সন্তানদেরকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করো না, আমিই তাদেরকে ও তোমাদেরকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি।” তাদের হত্যা করা মহাপাপ।

(আরবি) শব্দটি অন্য পঠনে (আরবি) রয়েছে। উভয়ের একই অর্থ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে বড় পাপ। এই যে, তুমি তাঁর শরীক স্থাপন করবে, অথচ তিনি একাই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” তিনি আবার জিজ্ঞেস করেনঃ “এরপর কোনটি? তিনি জবাবে বলেনঃ “তুমি তোমার সন্তানদেরকে এই ভয়ে হত্যা করে ফেলবে যে, সে তোমার সাথে খাবে।” তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “এরপর কোনটি?” তিনি। উত্তর দেনঃ “তুমি তোমার প্রতিবেশিণীর সাথে ব্যভিচার করবে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতে রিযিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি মানবসহ সকল প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব নিয়েছেন এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর মানুষকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন দারিদ্রতার ভয়ে সন্তান হত্যা না করে। কারণ তিনিই তোমাদেরকে এবং তোমাদের সন্তানদেরকে রিযিক দিয়ে থাকেন। আমরা জানি মানুষ সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে রিযিক নির্ধারণ করে রাখা হয়। সুতরাং যিনি দুনিয়াতে মানুষ প্রেরণ করবেন তিনি তার রিযিকের ব্যাবস্থা করেই প্রেরণ করবেন। দারিদ্রতার ভয়ে সন্তান হত্যা করা শিরকের পর বড় ধরণের একটি গুনাহ বলে হাদীসে এসেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি তোমার নিজ সন্তানকে এই ভয়ে হত্যা করো না যে, সে তোমার সাথে খাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৭৭)

অনেকে মনে করে থাকে, এটা অপরাধ হবে বাচ্চা দুনিয়াতে আসার পর হত্যা করলে। না, ছোট ও সুখী পরিবারের নামে বা অর্থ সম্পদ নেই, বেশি সন্তান হলে খাবার দেব কোথা থেকে, বা মহিলাদের সৌন্দর্য অক্ষত রাখার জন্য সন্তান কম নেয়াই হল সন্তান হত্যা করা। এসব যেকোন পদ্ধতিতেই হোক না কেন এ অপরাধের শামিল হবে। এ সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ১৫১ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. যেকোন পদ্ধতি অবলম্বন করে দারিদ্রতার ভয়ে সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ।
২. রিযিক দেয়ার মালিক আল্লাহ তা‘আলা।

Leave a Reply