(বই#৮৪৫) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৮(وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ) ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খাওয়ার জন্য তাদের সম্পদের নিকটে যেয়ো না। ] সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল সুরা:১৭ ৩৪ নং www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪৫) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-৮(وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ)
ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খাওয়ার জন্য তাদের সম্পদের নিকটে যেয়ো না। ]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৩৪ নং
www.motaher21.net
وَ لَا تَقۡرَبُوۡا مَالَ الۡیَتِیۡمِ اِلَّا بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ حَتّٰی یَبۡلُغَ اَشُدَّہٗ ۪ وَ اَوۡفُوۡا بِالۡعَہۡدِ ۚ اِنَّ الۡعَہۡدَ کَانَ مَسۡـُٔوۡلًا ﴿۳۴﴾
সাবালক না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্যে ছাড়া এতীমের সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না। আর প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।

৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
(وَلَا تَقْرَبُوْا مَالَ الْيَتِيْمِ)

অর্থাৎ ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খাওয়ার জন্য তাদের সম্পদের নিকটে যেয়ো না। সাধারণত এ কাজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ইয়াতীমদের দায়িত্বশীলদের দ্বারা। সূরা নিসার শুরুর দিকে উল্লেখ করা হয়েছে “ইয়াতীমদের সম্পদ নিজেদের সম্পদের সাথে মিশ্রণ করে খেওনা”।

(حَتّٰي يَبْلُغَ أَشُدَّه)

অর্থাৎ ইয়াতিমরা সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তাদের সম্পদ দেখাশোনা করতে গিয়ে যদি নিজের উপার্জনে বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে অন্যের কাজ করলে যেমন একটা পারিশ্রমিক পাওয়া যেত তেমন ন্যায্যভাবে কিছু সম্পদ খাওয়া যাবে তাতে কোন গুনাহ হবে না। এ সম্পর্কে সূরা নিসার ৬নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

أَشُدَّه শব্দের অর্থ:

أَشُدَّه শব্দের অর্থ হচ্ছে বালেগ হওয়া। আকেল সম্পন্ন হওয়া। যখন তার থেকে শৈশবের প্রভাব কেটে যাবে এবং সে নিজেই নিজের দায়িত্ব বুঝতে পারবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা অঙ্গীকারের কথা স্বরণ করিয়ে দিচ্ছেন। অঙ্গীকার বলতে বান্দা ও আল্লাহ তা‘আলার মাঝে অঙ্গীকার ও মানুষ পরস্পরের মাঝে যেসকল অঙ্গীকার করে থাকে সবই শামিল। উভয় প্রকার অঙ্গীকার পালন করা জরুরী, কারণ সে সম্পর্কে কিয়ামতের মাঠে জিজ্ঞেস করা হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করা যাবে না।
২. যে কোন প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে আখিরাতে জিজ্ঞেস করা হবে।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*এতীমের সম্পদ সংরক্ষণ : নরহত্যা ও ব্যাভিচার নিষিদ্ধ করার পর আল্লাহ তায়ালা এতীমের সম্পত্তি আত্মসাত করা ও ওয়াদা লংঘন করাকে নিষিদ্ধ ঘােষণা করেছেন। ৩৪নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তােমরা এতীমের সম্পত্তির কাছেও যেয়াে না এবং ওয়াদা পালন করাে…’ ইসলাম যদিও মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সন্ত্রম রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং রসূল(স.) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত সম্ভ্রম ও সম্পদ অপর মুসলমানের জন্যে নিষিদ্ধ, কিন্তু সে এতীমের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণে আরাে কঠোর। মুসলমানদেরকে সে কল্যাণকর পন্থায় ছাড়া এতীমের সম্পত্তির ধারে ঘেঁষতেই নিষেধ করে। কেননা এতীম তার সম্পত্তির পরিচালনা ও সংরক্ষণে দুর্বল । ইসলাম এতীম ও তার সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব মুসলিম সমাজের ঘাড়ে ন্যস্ত করে যতােক্ষণ সে প্রাপ্তবয়স্ক না হয়, নিজের ভালাে মন্দ ও ন্যায় অন্যায় বুঝতে সক্ষম না হয় এবং নিজের সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণে সমর্থ না হয়। এই আদেশ ও নিষেধগুলাের মধ্যে একটা জিনিস লক্ষণীয়। সেটি হলাে, যে আদেশ বা নিষেধ কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দেয়া হয়েছে, সেটা দেয়া হয়েছে একবচনের ক্রিয়ার মাধ্যমে। আর যেটা সমগ্র সমাজের সাথে যুক্ত সে সম্পর্কে আদেশ বা নিষেধ এসেছে বহু বচনে। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার আত্মীয় স্বজন, দরিদ্র ও পথিককে সাহায্য করা, অপব্যয় না করা, কার্পণ্য ও মাত্রাতিরিক্ত দানশীলতার মাঝে ভারসাম্যপূর্ণ দান করা, সত্যের ওপর অবিচল থাকা এবং অহংকার ও দাম্ভিকতা পরিহার করার নির্দেশাবলী একবচনে উল্লেখ করা হয়েছে পক্ষান্তরে সন্তান হত্যা, ব্যাভিচার, নরহত্যার নিষেধাজ্ঞা এবং এতীমের সম্পদ সংরক্ষণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা, মাপে কম বেশী না করা, এ সবের নির্দেশাবলী এসেছে বহুবচনে। কেননা, এগুলাের ভেতরে সামষ্টিকতার ছাপ রয়েছে। এ কারণেই কল্যাণধর্মী পন্থায় ছাড়া এতীমের সম্পত্তির নিকটবর্তী হতে নিষেধ করা হয়েছে বহুবচনে যাতে গােটা সমাজ এতীম ও তার সম্পদের জন্যে দায়ী থাকে। এটা তার সামষ্টিক দায়িত্ব। আর যেহেতু এতীমের সম্পত্তির তত্ত্বাবধান সমাজের দায়িত্ব, তাই তার সাথে প্রতিশ্রুতি পালনের নির্দেশ সংযুক্ত করা হয়েছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

#এটিও নিছক একটি নৈতিক নির্দেশনামা ছিল না। বরং পরবর্তীকালে যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এতিমদের অধিকার সংরক্ষণ করার জন্য প্রশাসনিক ও আইনগত উভয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। এর বিস্তারিত বিবরণ আমরা হাদীস ও ফিকাহর কিতাবগুলোতে পাই। তারপর এখান থেকে এ ব্যাপক ভিত্তিক মূলনীতি গ্রহণ করা হয় যে, ইসলামী রাষ্ট্রের যেসব নাগরিক নিজেরা তাদের নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার ক্ষমতা ও যোগ্যতা রাখে না রাষ্ট্রই তাদের স্বার্থের সংরক্ষক। নবী ﷺ বলেছেনঃ যার কোন অভিভাবক নেই আমি তার অভিভাবক, -এ হাদীসটি এদিকেই ইঙ্গিত করে এবং এ ইসলামী আইন একটি বিস্তৃত অধ্যায়ের ভূমিকা রচনা করে।

# এটিই নিছক ব্যক্তিগত নৈতিকতারই একটি ধারা ছিল না। বরং যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তখন একেই সমগ্র জাতির আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রাজনীতির ভিত্তি প্রস্তর গণ্য করা হয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ তোমরা অসদুদ্দেশ্যে ইয়াতীম বা পিতৃহীনের মালে হেরফের করো না। তাদের বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার পূর্বেই তাদের মাল খেয়ে ফেলার অপবিত্র নিয়ত থেকে দূরে থাকো। যার তত্ত্বাবধানে পিতৃহীন শিশু রয়েছে সে যদি স্বয়ং মালদার হয় তবে তার উচিত পিতৃহীনের মাল থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক থাকা। আর যদি সে দরিদ্র হয় তবে উত্তম ও প্রচলিত পন্থায় তা থেকে খাবে।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু যারকে (রাঃ) বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ) । আমি তোমাকে খুবই দুর্বল দেখছি এবং তোমার জন্যে আমি ওটাই পছন্দ করছি যা নিজের জন্যে পছন্দ করে থাকি। সাবধান! তুমি কখনো দুই ব্যক্তির ওয়ালী হবে না এবং কখনো পিতৃহীনের মালের মুতাওয়াল্লী হবে না।” (এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করো। যে প্রতিশ্রুতি ও লেনদেন হয়ে যাবে তা পালন করতে বিন্দুমাত্র ত্রুটি করো না। জেনে রেখো যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জবাব দিহি করতে হবে।

Leave a Reply