أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪৭) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-১০
وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। ]
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
৩৬ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
وَ لَا تَقۡفُ مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ ؕ اِنَّ السَّمۡعَ وَ الۡبَصَرَ وَ الۡفُؤَادَ کُلُّ اُولٰٓئِکَ کَانَ عَنۡہُ مَسۡـُٔوۡلًا ﴿۳۶﴾
যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।
৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
قفا-يقفو এর অর্থ পেছনে পড়া। অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার পেছনে পড়ো না, আন্দাজে কথা বলো না। ইবনু আব্বাস ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: যা দেখনি বলো না, দেখেছি। যা শোননি বলো না, শুনেছি। আর যা জান না বলো না, জানি। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন: এমন কাউকে তিরস্কার করো না যার ব্যাপারে তোমার কোন জ্ঞান নেই। সুতরাং যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলা, যা সঠিকভাবে শোনা নেই তা বলা সম্পূর্ণ নিষেধ। তা দুনিয়ার কোন ব্যাপারে হোক আর ধর্মীয় কোন ব্যাপারে হোক। ধর্মীয় ব্যাপারে আরো কঠোরভাবে নিষেধ রয়েছে। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
كَفَي بِالْمَرْءِ كَذِبًا أَنْ يُحَدِّثَ بِكُلِّ مَا سَمِعَ
একজন ব্যক্তি মিথ্যুক হওয়ার জন্য এতটুকুই যতেষ্ট যে, সে যা শুনবে (যাচাই বাছাই না করে) তাই বলে বেড়ায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اجْتَنِبُوْا كَثِيْرًا مِّنَ الظَّنِّ ز إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ)
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা বেশি বেশি অনুমান করা থেকে বিরত থাক। কারণ, কোন কোন অনুমান গুনাহের কাজ।” (সূরা হুজরাত ৪৯:১২)
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, ধারণা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যা কথা। (সহীহ বুখারী হা: ৫১৪৩, সহীহ মুসলিম হা: ১৪১৩)
কারণ কিয়ামতের দিন মানুষের চক্ষু, কর্ণ ও অন্তরকে জিজ্ঞেস করা হবে। চক্ষুকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী দেখেছিল, কর্ণকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী শুনেছিল, আর অন্তরকে জিজ্ঞেস করা হবে সে কী চিন্তা ভাবনা করেছে। কিয়ামতের দিন এদের বাকশক্তি দেয়া হবে আর এরা তখন স্বাক্ষী দেবে। এ আয়াত থেকে অনেক বিদ্বানগণ তাকলীদ করা নিষেধ করেছেন, কারণ যিনি তাকলীদ করেন তিনি বিনা জ্ঞানে যার তাকলীদ করা হয় তার অনুসরণ করে থাকেন। অথচ যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমল করতে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন। (আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর)
অতএব কোন কিছু বলার পূর্বে আমাদের ভেবেচিন্তে বলা উচিত, যা বলছি তা কি আমি সঠিকভাবে জানি? যদি না জানা থাকে তাহলে বিরত থাকাই কল্যাণকর।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকলে সে বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।
২. ধারণা করে কথা বলা একটি জঘন্যতম পাপ।
৩. চক্ষু, কর্ণ, অন্তর এদের জবান কিয়ামতের দিন খুলে দেয়া হবে আর এরা তখন সাক্ষ্য দেবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# এ ধারাটির অর্থ হচ্ছে লোকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধারণা ও অনুমানের পরিবর্তে “জ্ঞানের” পেছনে চলবে। ইসলামী সমাজে এ ধারাটির প্রয়োগ ব্যাপকভাবে নৈতিক ব্যবস্থায়, আইনে, রাজনীতিতে, দেশ শাসনে, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় তথা জীবনের সকল বিভাগে সুষ্ঠুভাবে করা হয়েছে। জ্ঞানের পরিবর্তে অনুমানের পেছনে চলার কারণে মানুষের জীবনে যে অসংখ্য দুষ্ট মতের সৃষ্টি হয় তা থেকে চিন্তা ও কর্মকে মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। নৈতিকতার ক্ষেত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কুধারণা থেকে দূরে থাকো এবং কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার অনুসন্ধান ছাড়াই কোন দোষারোপ করো না। আইনের ক্ষেত্রে এ মর্মে একটি স্থায়ী মূলনীতিই স্থির করে দেয়া হয়েছে যে, নিছক সন্দেহ বশত কারো বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না। অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে নীতি নির্দেশ করা হয়েছে যে, অনুমানের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার, মারধর বা জেলে আটক করা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিজাতিদের সাথে আচার-আচরণের ক্ষেত্রে এ নীতি-নির্ধারণ করা হয়েছে যে, অনুসন্ধান ছাড়া কারোর বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না এবং নিছক সন্দেহের ভিত্তিতে কোন গুজব ছড়ানোও যাবে না। শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও যেসব তথাকথিক জ্ঞান নিছক আন্দাজ-অনুমান এবং দীর্ঘসূত্রীতাময় ধারণা ও কল্পনা নির্ভর, সেগুলোকেও অপছন্দ করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই যে, আকীদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ধারণা, কল্পনা ও কুসংস্কারের মূল উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং ঈমানদারদেরকে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রসূল প্রদত্ত জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রমাণিত বিষয় মেনে নেবার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
# *আকীদা বিশ্বাসের স্বচ্ছতা : ইসলামী আকীদা বিশ্বাস স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা ও স্পষ্টতার প্রতীক। এর কোনাে একটাও সন্দেহ, সংশয়, কিংবা কাল্পনিক ধ্যান ধারণা ভিত্তিক নয়। (আয়াত ৩৬)’তোমার যা জানা নেই, তার পেছনে ছুট না…’ এই ক্ষুদ্র আয়াতটা মন ও বিবেকের সামনে এমন একটা পূর্ণাংগ মতবাদ তুলে ধরে যে আধুনিক কালের বৈজ্ঞানিক মতবাদগুলােও এর আওতায় পড়ে। তৎসহ মনের দৃঢ়তা ও আল্লাহর স্মরণ আধুনিক বাতিল মতবাদসমূহের ওপর ইসলামের বাড়তি বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য হয়। প্রত্যেক সংবাদ, তত্ত্ব, তথ্য ও তৎপরতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তার সত্যাসত্য সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরী। এই হলাে কোরআনের বক্তব্য। এই হলাে ইসলামের নির্ভুল তত্ত্ব। মন ও বিবেক এই নির্ভুল তত্ত্বের ওপর দৃঢ় আস্থা স্থাপন করলে আকীদা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আর কোনাে বিভ্রান্তি বা কল্পনা বিলাসের অবকাশ থাকে না। সন্দেহ সংশয়ের ভিত্তিতে কোনাে সিদ্ধান্তে উপনীত হবার এবং পারস্পরিক আচরণ ও লেনদেনের অবকাশ থাকে । অনুরূপভাবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও কাল্পনিক তত্ত্ব ও ভ্রান্ত স্থূল সিদ্ধান্তের অবকাশ থাকে না। আধুনিক যুগের মানুষ যে বৈজ্ঞানিক সততার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা আসলে সেই বুদ্ধিবৃত্তিক ও মনস্তাত্তিক সততারই অংশ, যা কোরআন তৈরী করেছিলাে। কোরআন মানুষকে সতর্ক করেছিলাে যে, তার চোখ, কান, ও মন সম্পর্কে আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে। সেই সতর্কবাণীর ওপর ভিত্তি করেই বুদ্ধিবৃত্তিক সততা ও বিশ্বস্ততা গড়ে উঠেছিলো এটা আসলে চেতনা, অনুভুতি বিবেক ও মনের সততা ও বিশ্বস্ততা। এ সম্পর্কে মানুষ জিজ্ঞাসিত হবে । হৃদয়, মন, চোখ, কান সবাইকেই জিজ্ঞেস করা হবে। এই সততার বিরাটত্ব ও সুক্ষ্মতার কথা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। যখনই মানুষ কোনাে কথা উচ্চারণ করে, যখন কেউ কোনাে কথা বর্ণনা করে এবং যখনই কেউ কোনাে ব্যক্তি বা ঘটনার সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করে, তখনই তার ঘাড়ে এই সততা প্রদর্শনের দায়িত্ব ন্যস্ত হয়। ‘তুমি যা জাননা তার পেছনে ছুট না…’ অর্থাৎ সুনিশ্চিতভাবে না জেনে তুমি কোনাে কিছুর অনুসরণ করাে না। কোনাে কথা, বর্ণনা, তথ্য বা ঘটনার নির্ভুলতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনাে মতামত বা সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করাে না। অনুরূপভাবে শরীয়তসংক্রান্ত কোনাে বিধি এবং আকীদাসংক্রান্ত কোনাে তত্ত্ব সম্পর্কেও ভালােভাবে না জেনে শুনে কোনাে রায় দেয়া উচিত নয়। হাদীসে আছে, সাবধান! অনর্থক ধারণা পােষণ করাে না। কেননা ধারণা হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যে কথা। সুনান আবু দাউদে আছে, মানুষের গুযব রটানাের নিকৃষ্টতম বাহন হলাে, ‘লােকেরা বলাবলি করেছে’ এ কথাটা। অপর হাদীসে আছে, সবচেয়ে বড় ধোকাবাজি হলাে, নিজের চোখ যা দেখেনি, তা তাকে দেখানাে। (অর্থাৎ না দেখেও এরূপ বলা যে স্বচক্ষে দেখেছি) এভাবে একাধিক আয়াত ও হাদীস থেকে ইসলামের ওই পূর্ণাংগ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ মতবাদটাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়। এই মতবাদ শুধু বিবেক বুদ্ধি ও যুক্তির আলােকেই প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং আবেগ উদ্দীপনা ও চেতনা দ্বারাও প্রতিষ্ঠিত হয়। মুখ দিয়ে এর যে শব্দটাই উচ্চারণ করা হােক বা যে ঘটনাই বর্ণনা করা হােক, বিবেক যে সিদ্ধান্তই নিক এবং যে সংকল্প গ্রহণ করুক, প্রতিটি কর্মকান্ড থেকেই ওই খােদায়ী মতবাদের যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়। আল্লাহ তায়ালা সূরার শুরুতে এই মতবাদ সম্পর্কেই বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই এই কোরআন সবচেয়ে নির্ভুল ও মযবুত বিধানের দিকেই পথ দেখায়।’ আল্লাহর এই চিরঞ্জীব মতবাদ ও বিধান সম্পর্কে কোরআনের এ উক্তি অত্যন্ত বাস্তব ও সত্য।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমার যেটা জানা নেই সে বিষয়ে মুখ খুলো না। না জেনে কারো উপর দোষারোপ করো না এবং কাউকেও মিথ্যা অপবাদ দিয়ো না, না দেখে দেখেছি’ বলো না, না শুনে শুনেছি’ বলো না এবং না জেনে জানার কথাও বলো না। কেননা, আল্লাহ তাআলার কাছে এই সব কিছুরই জবাবদিহি করতে হবে। মোট কথা, সন্দেহ ও ধারণার বশবর্তী হয়ে কিছু বলতে নিষেধ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ যেমন এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা অনেক অনুমান ও ধারণা হতে বেঁচে থাকো, কেননা, কোন কোন ধারণা পাপজনক হয়ে থাকে।” (৪৯:১২)
হাদীস শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো, ধারণা হচ্ছে জঘন্য মিথ্যা কথা।” সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষের এ ধরনের কথা খুবই খারাপ যে, মানুষ ধারণা করে থাকে। অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জঘন্যতম অপবাদ এই যে, মানুষ মিথ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে কোন স্বপ্ন বানিয়ে নেয়।” অন্য একটি সহীহ হাদীসে আছে যে, যে ব্যক্তি এরূপ স্বপ্ন নিজে বানিয়ে নেয়, কিয়ামতের দিন তাকে এই কষ্ট দেয়া হবে যে যেন দু’টি যবের। মধ্যে গিরা লাগিয়ে দেয়, যা তার দ্বারা কখনোই সম্ভবপরহবে না। কিয়ামতের দিন চক্ষু, কর্ণ ও হৃদয়ের কাছে কৈফিয়ত তলব করাহবে। ওষ্ঠকে জবাবদিহি করতে হবে। এখানে (আরবি) এর স্থলে (আরবি) ব্যবহার করাহয়েছে। এরূপ ব্যবহার আরবদের মধ্যে বরাবরই চলে আসছে। এই ব্যবহার কবিদের কবিতার মধ্যেও রয়েছে।