(Book#848)[Your Lord Has Declared=:-11 وَلَا تَمْشِ فِي الَارْضِ مَرَحًا And walk not on the earth with conceit and arrogance. ] Sura:17 Sura: Bony Israyel. Ayat: 37-39.] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#848)[Your Lord Has Declared=:-11
وَلَا تَمْشِ فِي الَارْضِ مَرَحًا

And walk not on the earth with conceit and arrogance. ]
Sura:17
Sura: Bony Israyel.
Ayat: 37-39.]
www.motaher21.net

فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ۚ اِنَّکَ لَنۡ تَخۡرِقَ الۡاَرۡضَ وَ لَنۡ تَبۡلُغَ الۡجِبَالَ طُوۡلًا ﴿۳۷﴾
And do not walk upon the earth exultantly. Indeed, you will never tear the earth [apart], and you will never reach the mountains in height.
کُلُّ ذٰلِکَ کَانَ سَیِّئُہٗ عِنۡدَ رَبِّکَ مَکۡرُوۡہًا ﴿۳۸﴾
All that – its evil is ever, in the sight of your Lord, detested.
ذٰلِکَ مِمَّاۤ اَوۡحٰۤی اِلَیۡکَ رَبُّکَ مِنَ الۡحِکۡمَۃِ ؕ وَ لَا تَجۡعَلۡ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتُلۡقٰی فِیۡ جَہَنَّمَ مَلُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ﴿۳۹﴾
That is from what your Lord has revealed to you, [O Muhammad], of wisdom. And, [O mankind], do not make [as equal] with Allah another deity, lest you be thrown into Hell, blamed and banished.

Tafsir Ibne Kasir Said:-

Condemnation of strutting

Allah forbids His servants to strut and walk in a boastful manner:

وَلَا تَمْشِ فِي الَارْضِ مَرَحًا

And walk not on the earth with conceit and arrogance.

meaning, walking in boastful manner and acting proud, like those who are arrogant oppressors.

إِنَّكَ لَن تَخْرِقَ الَارْضَ

Verily, you can neither rend nor penetrate the earth,

means, you cannot penetrate the earth with your walking.

This was the opinion of Ibn Jarir.

وَلَن تَبْلُغَ الْجِبَالَ طُولاً

nor can you attain a stature like the mountains in height.

كُلُّ ذَلِكَ كَانَ سَيٍّيُهُ عِنْدَ رَبِّكَ مَكْرُوهًا
All the bad aspects of these (the above mentioned things) are hateful to your Lord
Everything previously mentioned is Revelation and Wisdom

Allah says:

ذَلِكَ مِمَّا أَوْحَى إِلَيْكَ رَبُّكَ مِنَ الْحِكْمَةِ

This is (part) of Al-Hikmah (wisdom) which your Lord has revealed to you.

Allah says, `What We have commanded you to do is part of good manners, and what We have forbidden you are evil qualities. We have revealed this to you, O Muhammad, so that you may command the people likewise.’

وَلَا تَجْعَلْ مَعَ اللّهِ إِلَهًا اخَرَ فَتُلْقَى فِي جَهَنَّمَ مَلُومًا

And set not up with Allah any other god lest you should be thrown into Hell, blameworthy,

meaning, your own self will blame you, as will Allah and His creation.

مَّدْحُورًا

rejected,

means far removed from everything good.

Ibn Abbas and Qatadah said:

“(It means) cast out.”

This is an address to the Ummah via the Messenger, for he is infallible.

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৪৮) [তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন =:-১১
وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ۚ
ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না,]
সুরা: আল্ বনি‌ ইসরাইল
সুরা:১৭
৩৭-৩৯ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ۚ اِنَّکَ لَنۡ تَخۡرِقَ الۡاَرۡضَ وَ لَنۡ تَبۡلُغَ الۡجِبَالَ طُوۡلًا ﴿۳۷﴾
ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হতে পারবে না।
کُلُّ ذٰلِکَ کَانَ سَیِّئُہٗ عِنۡدَ رَبِّکَ مَکۡرُوۡہًا ﴿۳۸﴾
এ সবের মধ্যে যেগুলি মন্দ সেগুলি তোমার প্রতিপালকের নিকট ঘৃণ্য।
ذٰلِکَ مِمَّاۤ اَوۡحٰۤی اِلَیۡکَ رَبُّکَ مِنَ الۡحِکۡمَۃِ ؕ وَ لَا تَجۡعَلۡ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتُلۡقٰی فِیۡ جَہَنَّمَ مَلُوۡمًا مَّدۡحُوۡرًا ﴿۳۹﴾
আপনার রব ওহীর দ্বারা আপনাকে যে হিকমত দান করেছেন এগুলো তার অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ স্থির করো না, করলে নিন্দিত ও বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।

৩৭-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩৭-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর:

গর্ব-অহংকার করা একটি নিন্দনীয় চরিত্রের লক্ষণ। অহংকারীকে আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না, এমনকি কোন মানুষও পছন্দ করে না। তাই গর্ব-অহংকার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা পৃথিবীতে গর্ব-অহংকার করে চলাফেরা করো না। এই গর্ব-অহংকার করে চলাফেরা করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা কারূনকে জমিনে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(فَخَسَفْنَا بِھ۪ وَبِدَارِھِ الْاَرْضَﺤ فَمَا کَانَ لَھ۫ مِنْ فِئَةٍ یَّنْصُرُوْنَھ۫ مِنْ دُوْنِ اللہِﺠ وَمَا کَانَ مِنَ الْمُنْتَصِرِیْنَﮠ)‏

“অতঃপর আমি কারূনকে তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে প্রোথিত করলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তি হতে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।” (সূরা ক্বাসাস ২৮:৮১)

হাদীসে এসেছে, ইবনু ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, নাবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একজন ব্যক্তি অহংকার করতঃ তার কাপড় টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরত। ফলে তাকে ধ্বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি সে কিয়ামত পর্যন্ত এভাবে জমিনের গভীরে যেতে থাকবে।” (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৮৫)

তাই লুকমান (عليه السلام) তার ছেলেকে এহেন জঘন্য চরিত্র থেকে মুক্ত থাকার জন্য সাবধান করে বলেন: “আর তুমি অহংকারবশে মানুষকে অবহেলা কর‎ না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে বিচরণ কর‎ না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংঙ্কারকারীকে ভলোবাসেন না।” (সূরা লুকমান ৩১:১৮)

সেজন্য মু’মিনের চরিত্রের বর্ণনা দিতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَعِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِيْنَ يَمْشُوْنَ عَلَي الْأَرْضِ هَوْنًا)

‘রাহ্মান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে” (সূরা ফুরকান ২৫:৬৩)

অতএব আল্লাহ তা‘আলার এই রাজত্বে আল্লাহ তা‘আলা কাউকে গর্ব-অহঙ্কার করে চলাফেরা করার অনুমতি দেননি। তাই এভাবে চলাফেরা করা যাবে না। বরং নম্র-ভদ্রভাবে চলাফেরা করতে হবে। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার জন্য নত হয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে উঁচু করেন অর্থাৎ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। (মিশকাত হা: ৫১১৯)

তারপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন: তুমি অহংকার করছ কিসের ক্ষমতায়? তুমি তো ভূ-পৃষ্ঠকে বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায় পাহাড়ের সমান হতে পারবে না। সুতরাং তোমার অহংকার করা শোভা পায় না। এসব আল্লাহ তা‘আলার কাছে ঘৃণিত চরিত্র ও নিন্দনীয়। তাই এসব চরিত্র থেকে বেঁচে থেকে নিজেদেরকে উত্তম চরিত্রে গঠন করা উচিত।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. গর্ব-অহংকার করা যাবে না।
২. নম্রভাবে চলাফেরা করা মু’মিনের বৈশিষ্ট্য।
৩. টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হারাম।
৪. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# এর মানে হচ্ছে, ক্ষমতাগর্বী ও অহংকারীদের মতো আচরণ করো না। এ নির্দেশটি ব্যক্তিগত কর্মপদ্ধতি ও জাতীয় আচরণ উভয়ের ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য। এ নির্দেশের বদৌলতেই এ ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে মদীনা তাইয়েবায় যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় তার শাসকবৃন্দ, গভর্নর ও সিপাহসালারদের জীবনে ক্ষমতাগর্ব ও অহংকারের ছিঁটেফোটাও ছিল না। এমনকি যুদ্ধরত অবস্থায়ও কখনো তাদের মুখ থেকে দম্ভ ও অহংকারের কোন কথাই বের হতো না। তাদের ওঠা-বসা, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি, সওয়ারী ও সাধারণ আচার-আচরণের নম্রতা ও কোমলতা বরং ফকিরী ও দরবেশীর ছাপ স্পষ্ট দেখা যেতো। যখন তারা বিজয়ীর বেশে কোন শহরে প্রবেশ করতেন তখনও দর্প ও অহংকার সহকারে নিজেদের ভীতি মানুষের মনে বসিয়ে দেবার চেষ্টা করতেন না।

# এগুলোর মধ্য থেকে যেগুলোই নিষিদ্ধ সেগুলো করা আল্লাহ‌ অপছন্দ করেন। অথবা অন্য কথায় বলা যায়, আল্লাহর যে কোন হুকুম অমান্য করা অপছন্দনীয় কাজ।

# আপাতদৃষ্টে এখানে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের অবস্থায় মহান আল্লাহ‌ নিজের নবীকে সম্বোধন করে যে কথা বলেন তা আসলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে বলা হয়।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
# *অহমিকার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী : তাওহীদ বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট এসব নির্দেশের সর্বশেষ নির্দেশ হলাে অন্তসারশুন্য অহংকার ও মিথ্যে দম্ভের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত, ‘পৃথিবীতে দাম্ভিকতার সাথে বিচরণ করাে না। তুমি পৃথিবীকে ফেড়ে ফেলতেও পারবে না, পাহাড়ের সমান উঁচু হতে পারবে না।’ (আয়াত ৩৭) আল্লাহ তায়ালা যে তার বান্দাদের ওপর পরাক্রমশালী, সে কথা যখন মানুষ ভুলে যায়, তখনই সে নিজের বিত্তবৈভব, ক্ষমতা ও সৌন্দর্যের প্রভাবে অহংকারে মেতে ওঠে। সে যদি স্মরণ রাখতাে যে, তার যা কিছু সম্পদ ও সম্পত্তি রয়েছে, তা আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন এবং আল্লাহর শক্তি ও প্রতাপের সামনে সে একবারেই দুর্বল ও অসহায়, তাহলে তার অহংকার কমে যেতাে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বড়ত্ব উপলব্ধি করে সে বিনয়ী হতাে এবং পৃথিবীর ওপর অহংকারের সাথে নয় বরং বিনয়ের সাথে চলাফেরা করতাে। নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতা ও ক্ষুদ্রতা সত্তেও যে ব্যক্তি দম্ভের সাথে চলাফেরা করে ও অহংকার করে, তাকে কোরআন নিম্নরূপ জবাব দেয়, ‘তুমি কখনাে পৃথিবীকে ফেড়ে ফেলতে পারবে না এবং পাহাড়ের সমান উঁচুও হতে পারবে না।’ মানুষ শারীরিকভাবে এতটা ক্ষুদ্র ও দুর্বল যে, আল্লাহর বহু প্রকান্ড প্রকান্ড সৃষ্টির সামনে সে আদৌ কোনাে বস্তু বলেই গণ্য হয় না। সুতরাং তাকে বুঝতে হবে যে, তার যেটুকু ক্ষমতা, প্রতাপ, সম্মান ও মর্যাদা রয়েছে, তা আল্লাহর প্রদত্ত । সে যাতে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখে, তার দিকে মন রুজু রাখে এবং তাকে ভুলে না যায়, সে জন্যে তিনি তাকে রূহ বা আত্মা দিয়ে সম্মানিত করেছেন । কোরআন অহংকার পরিত্যাগ করে বিনয় ও বিনম্রতা অবলম্বনের যে আহবান জানিয়েছে, তা আল্লাহর সাথে ও জনগণের সাথে উভয়ের সাথেই সুশীল ও সুসভ্য আচরণ হিসাবে পরিগণিত হয়ে থাকে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই এটা একমাত্র গ্রহণযােগ্য নৈতিক ও ভদ্র রীতি। এই সুসভ্য ও ভদ্র রীতিকে পরিত্যাগ করে অহংকার ও দাম্ভিকতা অবলম্বন করে শুধু সেই বিবেকহীন, সংকীর্ণমনা ও অবিবেচক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তায়ালাও পছন্দ করেন না। জনগণও নয়। আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না তার দেয়া নেয়ামতকে ভুলে যাওয়া ও ঔদ্ধত্য প্রদর্শনের জন্যে, আর জনগণ পছন্দ করে না তার বাড়াবাড়ি ও ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্যে। রসূল(স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিনয়ী হয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে উন্নতি দান করেন। সে নিজের কাছে ক্ষুদ্র, কিন্তু সমাজের কাছে বড়। আর যে অহংকার করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে অধপতিত করেন। সে নিজের কাছে বড়, কিন্তু জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হয়। এমনকি সমাজের চোখে সে কুকুর ও শুকরের চেয়েও ঘৃণিত হয়ে থাকে।'(তাফসীরে ইবনে কাসীর) এ পর্যন্ত এসে এই নির্দেশাবলী শেষ হয়েছে। এর বেশীর ভাগই নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত, যা অত্যন্ত ঘৃণিত কার্যকলাপ ও কু-স্বভাবসমূহের বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে। ‘এই সব দোষের মধ্যে যেগুলাে অপেক্ষাকৃত খারাপ, তা তােমার প্রতিপালকের কাছে ঘৃণিত'(আয়াত ৩৮) উপসংহারে এই মােদ্দা কথাটুকু স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে এসব নির্দেশের ভিত্তি হলাে, এ সবের মধ্য থেকে যেগুলাে খারাপ, সেগুলাে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত। আর যে কটা ভালা কাজের আদেশ এর ভেতর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা নিয়ে কোনাে কথা বলা হয়নি। কেননা নিষিদ্ধ খারাপ কাজের সংখ্যা এথানে বেশী। সর্বশেষে এসব আদেশ ও নিষেধকে আল্লাহর একত্বের সাথে ও তার সাথে শরীক করার বিরুদ্ধে উচ্চারিত সতর্কবাণীর সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছে শুরুতেও। সেই সাথে এ কথাও বলা হয়েছে যে, এগুলাের ভেতরে সেসব প্রাজ্ঞ ও বিজ্ঞানময় বাণীও (হেকমত) রয়েছে, যার প্রতি কোরআন বিশেষভাবে পথনির্দেশ দেয়। ‘এ হচ্ছে তােমার প্রতিপালক তােমার কাছে যে বিজ্ঞানময় বাণী নাযিল করেছেন, তার অংশ বিশেষ…'(আয়াত ৩১) এই উপসংহারেরও সূচনার সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। এর দু’দিকেই রয়েছে ইসলামের সেসব প্রধান মূলনীতি, যার ওপর সে মানব জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলেছে। সেই মূলনীতিটা হলাে আল্লাহর একত্ব এবং তার এবাদাত ও আনুগত্যে অন্য কাউকে শরীক না করা।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩৭-৩৯ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে দর্পভরে ও বাবুয়ানা চালে চলতে নিষেধ করেছেন। উদ্ধত ও অহংকারী লোকদের এটা অভ্যাস। এরপর তাদেরকে নীচু করে দেখবার জন্যে আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ তুমি যতই মাথা উঁচু করে চল না কেন, তুমি পাহাড়ের উচ্চতা থেকে নীচেই থাকবে। আর যতই খট খট করে দম্ভভরে মাটির উপর দিয়ে চল না কেন, তুমি যমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না। বরং এরূপ লোকদের অবস্থা বিপরীত হয়ে থাকে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, এক ব্যক্তি গায়ে চাদর জড়িয়ে দর্পভরে চলছিল, এমতাবস্থায় তাকে যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয় এবং এখন পর্যন্ত সে নীচে নামতেই আছে। কুরআন কারীমে কারূণের কাহিনী বর্ণিত আছে যে, তাকে তার প্রাসাদসহ যমিনে ধ্বসিয়ে দেয়া হয়। পক্ষান্তরে, যারা নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ। করে তাদের মর্যাদা আল্লাহ তাআলা উঁচু করে দেন। হাদীসে এসেছে যে, যারা নত হয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী করে দেন। তারা নিজেদের তুচ্ছ জ্ঞান করে, আর জনগণ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী মনে করে। পক্ষান্তরে যারা নিজেদেরকে বড় মর্যাদাবান মনে করে ও অহংকার করে, তাদেরকে জনগণ অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। এমনকি তারা তাদেরকে কুকুর ও শূকর অপেক্ষাও নিকৃষ্ট মনে করে।

ইমাম আবু বকর ইবনু আবিদ দুনিয়া (রাঃ) তাঁর কিতাবুল খুমূল ওয়াত তাওয়াল’ নামক গ্রন্থে এনেছেন যে, ইবনুল আহীম নামক একজন লোক খলীফা মনসরের দরবারে যাচ্ছিল। এ সময় তার পরণে ছিল রেশমী জব্বা এবং ওটা পায়ের গোছার উপর থেকে উলটিয়ে সেলাই করা ছিল যাতে নীচে থেকে কুবাও (লম্বা পোষাক বিশেষ) দেখা যায়। এভাবে সে অত্যন্ত বাবুয়ানা চালে দর্পপদক্ষেপে চলছিল। হযরত হাসান বসরী (রঃ) তাকে এ অবস্থায় দেখে তাঁর সঙ্গীদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ “ঐ দেখো, ঐ যে মাথা উঁচু করে, গাল ফুলিয়ে ডাট দেখিয়ে আল্লাহ তাআলার নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভুলে গিয়ে, প্রতিপালকের আহকাম ছেড়ে দিয়ে, আল্লাহর হককে ভেঙ্গে দিয়ে পাগলদের চালে অভিশপ্ত শয়তানের সঙ্গী চলে যাচ্ছে।” তাঁর একথাগুলি ইবনুল আহীম শুনতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ তাঁর কাছে ফিরে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তখন তিনি তাকে বলেনঃ “আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে কি হবে? তুমি আল্লাহ তাআলার কাছে তাওবা কর এবং এটা পরিত্যাগ কর। তুমি কি মহান আল্লাহর এই নিষেধাজ্ঞা শুন নাই? (আরবি) অর্থাৎ “তুমি দম্ভভরে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করো না।” (১৭:৩৭)
আবেদ নাজতারী (রাঃ) হযরত আলীর (রাঃ) বংশের একজন লোককে দর্পভরে চলতে দেখে বলেনঃ “হে এই ব্যক্তি! যিনি তোমাকে এই মর্যাদা দিয়েছেন তাঁর চালচলন এইরূপ ছিল না।” সে তৎক্ষণাৎ তওবা করে নেয়।

হযরত ইবনু উমার (রাঃ) এইরূপ একটি লোককে দেখে বলেনঃ “এইরূপ লোকই শয়তানের ভাই হয়ে থাকে।”

ইবনু আবিদ দুনিয়ার (রঃ) হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আমার উম্মত দর্প ও অহংকারের চালে চলবে এবং পারসিক ও রোমকদেরকে নিজেদের খিদমতে লাগিয়ে দেবে তখন আল্লাহ তাআলা এককে অপরের উপর আধিপত্য দান করবেন।

(আরবি) এর দ্বিতীয় (আরবি) পঠন রয়েছে। তখন অর্থ হবেঃ “আমি তোমাদেরকে যে সব কাজ থেকে নিষেধ করেছি ঐ সব কাজ অত্যন্ত মন্দ এবং আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয়।” অর্থাৎ ‘সন্তানদেরকে হত্যা করো না’ থেকে। নিয়ে ‘দর্পভরে চলো না পর্যন্ত সমস্ত কাজ। আর (আরবি) পড়লে অর্থ হবেঃ (আরবি) হতে এখন পর্যন্ত যে হুকুম আহকাম ও নিষেধাজ্ঞার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তাতে যত খারাপ কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ওগুলো সবই আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় কাজ। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই ব্যাখ্যাই দিয়েছেন।

 

#আল্লাহ তাআলা বলছেনঃ হে নবী (সঃ)! যে সব হুকুম আমি নাযিল করেছি সবগুলিই উত্তম গুণের অধিকারী এবং যে সব জিনিস থেকে আমি নিষেধ করেছি সেগুলি সবই জঘন্য। এসব কিছু আমি তোমার কাছে ওয়াহীর মাধ্যমে নাযিল করেছি যে, তুমি লোকদেরকে নির্দেশ দিবে এবং নিষেধ করবে। দেখো, আমার সাথে অন্য কোন মা’বূদ স্থির করবে না। অন্যথায় এমন এক সময় আসবে যখন তুমি নিজেকেই ভৎসনা করবে এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেও তুমি তিরস্কৃত হবে। আর তোমাকে সমস্ত কল্যাণ থেকে দূর করে দেয়া হবে। এই আয়াতে রাসূলুল্লাহর (সঃ) মাধ্যমে তাঁর উম্মতকে সম্বোধন করা হয়েছে। কেননা, তিনি তো সম্পূর্ণরূপে নিস্পাপ।

Leave a Reply