Engr Motaher: Requested for your feedback.
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم
আসসালামুয়ালাইকুম।
মুহতারাম,
মহান আল্লাহ তায়ালা শুকরিয়া জানাই, আল্ হাম্ দু লিল্লাহ।
……..……………………
শুধু ১ টি কোটেসান বলা হয়ত সুন্দর ও আকর্ষণীয়।
কিন্তু তাতে মানুষ পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে না।
তাই চেষ্টা করছি মুল বিষয় যাতে সবাই বুঝতে পারে।
এতে আমি কম-বেশি এক ডজন (+/-) তাফসীর সহাযোগিতা নিচ্ছি।
যেমন:- ইবনে কাসীর, ফী যিলালিল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন, কুরআনুল কারীম, মাও: আশরাফ আলী, আবুবকর যাকারিয়া, আহসানুল বায়ান, তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ,
English Tafsir Ibn Kathir,
The Noble Quran…..
………………..
আসসালামুয়ালাইকুম।
দোস্ত তোমরা কয়েকজন হয়তো বুঝতে পারছো।
কিন্তু অনেকেই বুঝতে পারছি না।
আমি ধারাবাহিক কুরআন শরীফ এর আলোচনা করছি।
বাংলা, English এবং عرب তিন ভাষায় লিখিত।
তাই একটু সময় দিতে হবে। এবং একটু লম্বা হতে পারে।
যেন আমাদের ছেলেমেয়েরা ও সবাই মিলে বুঝতে পারে।
তোমরা নিজেদের অবস্থান ও সময় মত সবাই দেখতে পাবে।
১) সুরা ফাতিহা,২)বাকারা, ৩) আলে ইমরান,৪) নিছা,৫)মায়েদা,৬)আল আনআম, ৭)আল্ আরাফ, ৮)আল্ আন্ ফাল,৯) আত্ তাওবা, আলোচনা করা হয়েছে। ১০) সুরা ইউনুস ১১) সুরা হুদ ১২)সুরা ইউসুফ ১৩) সুরা রাদ ১৪) সুরা ইব্রাহিম ১৫)সুরা হিজর ১৬) সুরা নহল ১৭)সুরা বনি ইসরাইল চলছে…।
ধারাবাহিক কুরআন এর আলোচনা করা হচ্ছে..
এর আগেও সুরা হুজরাত(৪৯) সুরা সফ (৬১)
সুরা মুজাম্মাল (৭৩) ইত্যাদি আরো কয়েকটি সুরা আলোচনা করা হয়েছে।
আমি মনে করি সবাই বুদ্ধিমান।
এটা সবাই বুঝতে পারে।
………
একটা বিষয় লিখা হলে Facebook-এ ১০,০০,০০০/(দশ লক্ষ +/- ) এর বেশি লোক কে পাঠানো হয়।
What’s app তে ৪০(+/-) টি গ্রুপে ও tweete-এ পাঠানো হয়।
………………
আমার প্রকাশের অপেক্ষায় ৫টি
বই কেন আপনি ছাপাবেন ইনশাআল্লাহ :-
১) আল্ হাম্ দু লিল্লাহ, আমি এখন পর্যন্ত ৮৫৬ টি বই লিখেছি।
২) এখন পর্যন্ত ছাপানো হয়েছে ১০
টি বই ।
৩) Durban R S A থেকে Ahmed Hossen Deedat (2004 সালে) প্রকাশ করেছেন।
তিনি এই বইগুলো ৫৬ টি দেশে পাঠিয়ে ছিলেন।
৪) ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়াম) ২০০৭ সালে প্রকাশ করেছেন ।
ওয়ামী বই সিরিজ ২৬।
৫) Australian Islamic Library
2015 সালে প্রকাশ করেছেন
৬) এই পর্যন্ত কম বা বেশি ১০ লক্ষ (+/-) বই বিতরণ বা বিক্রয় করা হয়েছে।
৭) প্রকাশিতব্য বই ৫টি ছাপানো হলে আমি ইনশাআল্লাহ ১০০০ এক হাজার বই ক্রয় করবো।
………….
বই ৫টি পছন্দ করেছি :-
আমার লেখা ৮৫৬ টি বই এর মধ্যে এগুলো সর্ব উত্তম ৫টি।
১) কুরআন এর আলোকে আমাদের প্রতি দিন কেমন কাজকর্ম করতে হবে এই বিষয়ে বলা হয়েছে।
“ঘুম থেকে কাজ উত্তম ” এই বইতে পাঠকগণ ইনশাআল্লাহ বুঝতে পারবেন।
২) আমরা অনেকেই আল্লাহ তায়ালা কে ভালোবাসার দাবি করি।
আর আখেরাতে নাজাত পেতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে বাস্তব জীবনে ভালোবাসতে হবে।
“আল্লাহকে কতটুকু ভালোবাসি”?
এই বইতে সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৩) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বার বার বলেছেন যে আমাদের সঠিক কথা বলতে হবে,
সঠিক কাজটি করতে হবে।
“এমন কথা কেন বল?”
এই বইতে পাঠকগণকে সেটা সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৪) সুরা বনি ইসরাইলে ২৩ নং আয়াত থেকে ৩৯ নং আয়াত পর্যন্ত (৩ তৃতীয় রুকু ও ৪ চতুর্থ রুকু তে) বিস্তারিত আলোচনা করেছেন :-
আমাদের সমাজ ও জীবন কিভাবে পরিচালিত করা দরকার !
এই বিষয়ে চমৎকারভাবে বলেছেন।
“আপনার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন”
বইতে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
৫) “ইসলামের বিজয়” বইটিতে
ক) আমাদের অধ্যায়ন, খ)বই পড়া ও বিতরণ, গ) মুমিন, কাফের,মুনাফীক ও মানুষ ঘ) লেনদেন । ঙ) ২৪ ঘন্টার রুটিন । চ) ইসলামের বিজয় কি ভাবে করা যাবে। ছ) আল্লাহকে ভালোবাসা, জ) আন্তর্জাতিক বিশ্বে দাওয়াত ।
এই সকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
তাই এটা অবশ্যই পড়া প্রয়োজন।
আমরা সবাই ইনশাআল্লাহ নিজে পড়ব , অন্যকেও পড়তে উৎসাহিত করব।
…….
ইন্জিনিয়ার মুহাম্মদ মোতাহার হোসেন
House # 12
Road # 03, Block-B
Pink city Model Town,
Khilkhet, Dhaka1229, Bangladesh.
Phone: +88-01883385800/01827764252 email: motaher7862004@ya hoo.com/engrmotaher440@gmail.com
FB:Muhammed Motaher Hossain/ Motaher’s Fan Page
Engr Motaher: https://motaher21.net/about-author/
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৫৮) [মুনাফিক কি?বই নং ২৪]
সুরা: ৬৩ আল-মুনাফিকুন
৫-৮ নং আয়াত:-
[ وَ لٰکِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۷﴾
কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।]
www.motaher21.net
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ تَعَالَوۡا یَسۡتَغۡفِرۡ لَکُمۡ رَسُوۡلُ اللّٰہِ لَوَّوۡا رُءُوۡسَہُمۡ وَ رَاَیۡتَہُمۡ یَصُدُّوۡنَ وَ ہُمۡ مُّسۡتَکۡبِرُوۡنَ ﴿۵﴾
যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা এসো, আল্লাহর রসূল তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন’, তখন তারা মাথা ফিরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তারা দম্ভভরে ফিরে যায়।
سَوَآءٌ عَلَیۡہِمۡ اَسۡتَغۡفَرۡتَ لَہُمۡ اَمۡ لَمۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَہُمۡ ؕ لَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰہُ لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ ﴿۶﴾
আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন বা না করুন, উভয়ই তাদের জন্য সমান। আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসিক সম্পপ্রদায়কে হেদায়াত দেন না।
ہُمُ الَّذِیۡنَ یَقُوۡلُوۡنَ لَا تُنۡفِقُوۡا عَلٰی مَنۡ عِنۡدَ رَسُوۡلِ اللّٰہِ حَتّٰی یَنۡفَضُّوۡا ؕ وَ لِلّٰہِ خَزَآئِنُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰکِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۷﴾
তারাই বলে, ‘তোমারা আল্লাহর রাসূলের সহচরদের জন্য ব্যয় করো না, যাতে তারা সরে পড়ে।’ অথচ আসমানসমূহ ও যমীনের ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই ; কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না।
یَقُوۡلُوۡنَ لَئِنۡ رَّجَعۡنَاۤ اِلَی الۡمَدِیۡنَۃِ لَیُخۡرِجَنَّ الۡاَعَزُّ مِنۡہَا الۡاَذَلَّ ؕ وَ لِلّٰہِ الۡعِزَّۃُ وَ لِرَسُوۡلِہٖ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ لٰکِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ٪﴿۸﴾
তারা বলে, ‘আমরা মদীনায় ফিরে আসলে সেখান থেকে শক্তিশালীরা অবশ্যই দুর্বলদেরকে বের করে দেবে ।’ অথচ শক্তি-সম্মান তো আল্লাহরই, আর তাঁর রাসূল ও মুমিনদের। কিন্তু মুনাফিকরা এটা জানে না।
৫-৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা নং আয়াতে পড়ুন।:-
তাফসীর :
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্যের কথা এখানে তুলে ধরে বলছেন। এদেরকে যদি বলা হয়, তোমরা তোমাদের কৃত অপরাধ ও কুফরীর জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাও, তিনি তোমাদের জন্য ক্ষমা চাইবেন। অথচ তারা ক্ষমা না চেয়ে উদ্ধত্য ও বড়ত্ব প্রকাশ করে মাথা ফিরিয়ে নিবে। তারা কখনো ক্ষমা চাইবে না। কারণ তারা ক্ষমা চাইলেই নিজেদেরকে অপমানিত মনে করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ষমা চান আর না চান তিনি ক্ষমা করবে না।
(هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لَا تُنْفِقُوْا عَلٰي مَنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللّٰهِ) শানে নুযূল :
জায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) বলছেন : যখন আব্দুল্লাহ বিন উবাই বলল : আল্লাহ তা‘আলার রাসূলের নিকট যারা আছে (অর্থাৎ সাহাবীরা) তাদের জন্য কিছুই ব্যয় করো না। এবং আরো বলল : যদি আমরা মদীনায় ফিরে যাই তাহলে সম্মানিত ব্যক্তিরা অসম্মানিতদেরকে বের করে দেব। আমি এ কথা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালাম (এ কথা শুনে) আনসারীরা আমাকে তিরস্কার করতে লাগলে। আব্দুল্লাহ বিন উবাই শপথ করে বলল : সে এসব কথা বলেনি। আমি বাড়িতে ফিরে আসলাম এবং ঘুমিয়ে গেলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডাকলেন আমি তাঁর কাছে আসলাম। তিনি বললেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে সত্য বলে উল্লেখ করেছেন এবং
(هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لَا تُنْفِقُوْا)
আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯০২, সহীহ মুসলিম হা. ২৭৭২)
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : একদা আমরা কোন এক যুদ্ধে ছিলাম। (যাকে ঐতিহাসিকগণ মুরাইসী অথবা বানী মুসতালিক বলেছেন)। জনৈক মুহাজির আনসারীদের এক ব্যক্তিকে নিতম্বে আঘাত করলেন। তখন আনসারী সাহাবী “মুহাজির ভাইগণ” বলে ডাক দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলের কানে এ কথা পৌঁছে দিলেন। তিনি বললেন : এটা কেমন ডাকাডাকি। অন্য বর্ণনায় রয়েছে : তোমাদের কী হল যে, জাহিলিয়া যুগের প্রথা ডেকে নিয়ে আসছো। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯০৫) উপস্থিত লোকেরা বললেন : জনৈক মুহাজির ব্যক্তি এক আনসারী ব্যক্তির নিতম্বে আঘাত করেছে। আনসারী ব্যক্তি হে আনসারী ভাইগণ বলে আর মুহাজির ব্যক্তি হে মুহাজির ভাইগণ বলে নিজ নিজ গোত্রকে ডাক দিলেন। এ কথা শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : এ রকম ডাকাডাকি ত্যাগ কর, এগুলো অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত কথা। জাবের (রাঃ) বলছেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় হিজরত করে আসেন তখন আনসারী সাহাবীদের সংখ্যা বেশি ছিল। পরে মুহাজিরদের সংখ্যা বেশি হয়ে যায়। এ কথা শুনে আব্দুল্লাহ বিন উবাই বলল : সত্যিই তারা কি এমন করেছে? আল্লাহ তা‘আলার শপথ আমরা মদীনায় ফিরে গেলে সম্মানিত ব্যক্তিরা অসম্মানিত ব্যক্তিদের বের করে দেব। উমার (রাঃ) বলছেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে ছেড়ে দিন, আমি এ মুনাফিকদের গর্দান উড়িয়ে দিই। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : উমার (রাঃ) তাকে ছেড়ে দাও যাতে লোকেরা এমন কথা বলতে না পারে মুহাম্মাদ তাঁর সাথীদের হত্যা করে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯০৭, সহীহ মুসলিম হা. ২৫৮৪)
আব্দুল্লাহ বিন উবাই সম্মানিত বলতে নিজের দলবলের লোকদের বুঝাতো আর অসম্মানিত বলতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদেরকে বুুঝাতো। মূলত সম্মান তো কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল ও মু’মিনদের জন্য।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মু’মিনদের সাথে মুনাফিকদের চরম শত্রুতার কথা জানতে পারলাম।
২. মুনাফিকদের জন্য দু‘আ প্রার্থনা উপকারে আসবে না।
৩. রিযিক ও মান সম্মানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন।
৪. মুনাফিকরা মু’মিনদের বিপদ-আপদের সুযোগ খুঁজে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
৫-৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা নং আয়াতে পড়ুন।:-
*মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ বিন উবাই : এই চারটি আয়াতে মুনাফিকদের এই দ্বিমুখী মানসিকতা, রসূল(স.)-এর বিরুদ্ধে। চক্রান্ত আঁটা এবং সামনাসামনি মিথ্যা বলার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এগুলাে মুনাফিকদের সুপ্রসিদ্ধ বৈশিষ্ট্য। যখন তাদের বলা হয়, ‘এসাে, রাসূল তােমাদের জন্যে ক্ষমা চাইবেন…’ একাধিক প্রাচীন তাফসীরকার বলেছেন, এ আয়াতগুলাে সবই নাযিল হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সলুল প্রসংগে। ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক বনুল মুসতালিক যুদ্ধের বিবরণ দিতে গিয়ে নাযিল হওয়ার সেই পটভূমি বিশদভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ হিজরীতে বনুল মুসতালিকের একটি জলাশয়ের কাছে এই ঘটনা ঘটে। যুদ্ধ শেষে রসূল(স.) যখন উক্ত জলাশয়ের পাশে অবস্থান করছেন, তখন মুসলমানদের একটি দল সে জলাশয়ে পানি আনতে গেলাে। হযরত ওমরের সংগে ছিলো তাঁর একজন বেতনভুক্ত ভৃত্য- বনু গিফার গােত্রের জাহজাহ ইবনে মাসউদ। সে তার ঘােড়া নিয়ে জলাশয়ে গেলাে। সেখানে সিনান ইবনে ওয়াবার জুহানীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। অতপর তারা উভয়ে লড়াই বাধিয়ে বসে। সিনান ছিলাে আনসারী অর্থাৎ মদীনার স্থানীয় অধিবাসী, আর জাহজাহ মক্কা থেকে আগত মোহাজের। প্রথমে সিনান চিৎকার করে ওঠলাে, ‘ওহে আনসারীরা, কে কোথায় আছে, আমাকে বাচাও। অতপর জাহজাহ চিতকার করলাে, ওহে মােহাজেররা, কে কোথায় আছে, আমাকে রক্ষা করাে।’ মুনাফিকদের নেতা হিসাবে পরিচিত আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সলুল এতে মদীনার স্থানীয়দের পক্ষ নিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠলাে। তার সাথে তার স্বগােত্রীয় কয়েকজন ছিলাে। তাদের মধ্যে যায়দ ইবনে আরকাম নামক একজন নবীন যুবক ছিলাে। তাদের লক্ষ্য করে আবদুল্লাহ বললাে, ওরা (মােহাজেররা) এ কান্ডটা ঘটিয়েই ছাড়লাে? ওরা আমাদের দেশে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এখন তাে সংখ্যায়ও ওরা বিরাট এক গােষ্ঠী। আল্লাহর কসম, এই প্রবাসী কোরায়শদের ও আমাদের অবস্থা সেই প্রবাদ বাক্যের মতােই হতে যাচ্ছে, তা আমি দিব্যি দেখতে পাচ্ছি। প্রবাদে আছে, তােমার কুকুরটাকে খাইয়ে-দাইয়ে মােটাতাজা বানাও, যেন সে একদিন তােমাকেই খেয়ে সাবাড় করে। আল্লাহর কসম করে বলছি, এবার মদীনায় ফিরে গেলে সবলেরা দুর্বলদের সেখান থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে। তারপর সে তার আশপাশে জড়াে হওয়া স্বগােত্রীয়দের দিকে তাকিয়ে বললাে, ‘এ সব তােমাদেরই কর্মফল। তোমরা এদের তোমাদের এলাকায় থাকতে দিয়েছ। তাদের তােমাদের জমিজমা, সহায় সম্পদ ভাগ করে দিয়েছে। আল্লাহর কসম, তােমরা যদি তাদের সহায়তা না করতে এবং আশ্রয় না দিতে, তাহলে তারা অন্যত্র চলে যেতাে। যায়দ ইবনে আরকাম তার এ কথাগুলাে শুনে রাসূল(স.)-কে গিয়ে জানালো। তখন রসূল(স.) শত্রুদের সাথে বােঝাপড়া শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তার কাছে ওমর ইবনুল খাত্তাবও ছিলেন। ওমর(রা.) বললেন, ‘হে রসূল, উব্বাদ বিন বিশরকে আদেশ দিন ওকে (আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে) হত্যা করে ফেলুক। রসূল(স.) বললেন, ওহে ওমর! লােকেরা যখন বলবে মােহাম্মদ নিজের সহচরদের হত্যা করে, তখন কেমন হবে? এটা করা যাবে না। তুমি বরং লােকদের জানিয়ে দাও, অবিলম্বে এখান থেকে প্রস্থান করা হােক। অথচ রসূল(স.) সচরাচর এ রকম সময়ে কোথাও রওনা হতেন না। অগত্যা লােকেরা রওনা হলাে। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যখন জানতে পারলাে, যায়দ বিন আরকাম তার কথাগুলাে রসূল(স.)-কে জানিয়ে দিয়েছে। তখন সে রসূল(স.)-এর কাছে ছুটে গেলাে এবং কসম খেয়ে বলতে লাগলাে, যায়দ যা বলেছে তা ঠিক নয়। আমি ওসব কথা বলিনি। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই নিজ গােত্রে একজন মান্যগণ্য ব্যক্তি ছিলাে। উপস্থিত আনসারী সাহাবীরা বললেন, ‘হে রসূলুল্লাহ যায়দ হয়তাে বা ভুল শুনেছে। হয়তাে বা এই ব্যক্তি যা বলেছে তা হুবহু মনে রাখতে পারেনি।’ এভাবে তারা আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করলেন ও তাকে রক্ষা করলেন। ইবনে ইসহাক বলেন, অতপর যখন রসূল(স.) রওনা হলেন, তখন ওসায়দ বিন হুযায়র নামক জনৈক আনসারী সাহাবী তাঁর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, ‘হে রসূল! আপনি খুবই অসময়ে রওনা দিয়েছেন। ইতিপূর্বে আপনি কখনাে এমন সময়ে কোথাও যাত্রা করতেন না।’ রসূল(স.) বললেন, তােমাদের সংগী কী বলেছে শোননি? ওসায়েদ : কোন সংগী হে রাসূল। রসূল(স.) : আবদুল্লাহ ইবনে উবাই। উসায়দ, সে কী বলছে? রাসূল (স.) : সে বলেছে, মদীনায় গেলে সবলরা দুর্বলদের সেখান থেকে বের করে দেবে। ওসায়দ : হে রসূল, আল্লাহর কসম, আপনি ইচ্ছা করলে এ ব্যাটাকে মদীনা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারেন। কেননা, আপনি সবল আর সে দুর্বল। তবে হে রসূল, আপনি ওর প্রতি একটু উদারতা প্রদর্শন করুন। আল্লাহর কসম, তিনি আমাদের কাছে আপনাকে এমন সময়ে এনে দিয়েছেন, যখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর গােত্র তাকে মুকুট পরিয়ে রাজা হিসাবে বরণ করে নেয়ার জন্যে উৎসবের আয়ােজন করছিলাে। এ জন্যে সে মনে করে আপনি তার রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন। এরপর রসূল(স.) সদলবলে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত এবং সকাল থেকে সূর্যের কিরণ প্রখর হওয়া পর্যন্ত এক টানা পথ চললেন। অতপর এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলেন। প্রচন্ড ক্লান্তির কারণে তারা সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন। রসূল(স.)-এর এই অসময়ের যাত্রার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলাে এই যে, তার সফর সংগীদের মনে আগের দিন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর কথা শুনে যে ক্ষোভ ও ক্রোধের সঞ্চার হয়েছিলো, তা যেন তারা ভুলে যায় এবং তাদের মন অন্য বিষয়ে ব্যস্ত হয়। ইবনে ইসহাক বলেন, যে সূরাটিতে আল্লাহ তায়ালা মােনাফেকদের বিষয়ে আলােচনা করেছেন, তা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এবং তার সমতুল্য লােকদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। সূরাটি নাযিল হবার পর রাসূল(স.) যায়দ ইবনে আরকামের কান ধরে (আদর করে) বললেন, এই হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে নিজের কান দিয়ে আল্লাহর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে।’ ইতিমধ্যে আবদুল্লাহ বিন উবাইর ছেলে আবদুল্লাহর কাছেও তার পিতার দুষ্কর্মের খবর পৌঁছে গেলো। ইবনে ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর ছেলে আবদুল্লাহ রসূল(স.)-এর কাছে এসে বললাে, ইয়া রসূলাল্লাহ, আমি শুনেছি, আপনি আমার পিতা আবদুল্লাহ সম্পর্কে যা জানতে পেরেছেন তার জন্যে তাকে হত্যা করতে চান। এটা যদি আপনি করতে বদ্ধপরিকর হয়ে থাকেন, তাহলে আমাকেই আদেশ করুন। আমি তার মাথা আপনার কাছে নিয়ে আসি। আল্লাহর কসম, খাযরাজ গোত্র জানে, এ গোত্রে আমার চেয়ে অধিক পিতৃভক্ত কোনাে লােক নেই । তথাপি আপনি আদেশ দিলে এ কাজ আমাকেই করতে হবে। কেননা, আমার আশংকা, আপনি যদি আমাকে ছাড়া আর কাউকে আদেশ দিয়ে এ কাজ করান, তাহলে আমি আমার পিতার হত্যাকারীকে চোখের সামনে ঘােরাঘুরি করতে দেখে একদিন হয়তাে হত্যা করে বসবাে এবং একজন কাফেরের বদলায় মােমেনকে হত্যা করে জাহান্নামের কাঠ হবো। রসূল(স.) বললেন, ‘না, ওসবের দরকার নেই। আমরা বরঞ্চ তার প্রতি উদারতা দেখাতে থাকি এবং যতােদিন সে আমাদের সাথে থাকে ততােদিন তার সাথে ভালাে আচরণ করে যেতে থাকবাে।’ এরপর আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যখনই কোনাে অপকীর্তি ঘটাতাে, অমনি তার গােত্রের লােকেরাই তাকে পাকড়াও করতাে ও তিরস্কার করতাে। তখন রাসূল(স.) ওমর ইবনুল খাত্তাবকে ডেকে বলতেন, ‘কেমন দেখছাে ওমর! আল্লাহর কসম, যেদিন তুমি ওকে হত্যা করতে চেয়েছিলে, সেদিন যদি হত্যা করতে, তবে ওর জন্যে পাহাড়ের চূড়াগুলাে পর্যন্ত শিউরে ওঠতাে, কিন্তু আজ আমি যদি সেসব পাহাড়ের চূড়াকে আদেশ দেই, তবে তারাই ওকে হত্যা করবে।’ এরপর যখন রাসূল(স.)-এর সহযাত্রী মােজাহেদরা মদীনায় প্রবেশ করতে লাগলাে, তখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর ছেলে আবদুল্লাহ মদীনার দ্বারপ্রান্তে নগ্ন তরবারি হাতে দাঁড়িয়ে রইলেন। লােকজন তার সামনে দিয়ে যেতে লাগলাে। যখন তার পিতা আসলাে, অমনি পুত্র বলে ওঠলাে, থামুন! সে বললো, কী হয়েছে। পুত্র বললাে, যতােক্ষণ রসূলুল্লাহ(স.) আপনাকে মদীনায় প্রবেশের অনুমতি না দেবেন, ততােক্ষণ আপনি প্রবেশ করতে পারবেন না। কেননা, তিনি সবল, আপনি দুর্বল। এই সময়ে রসূল(স.) পশ্চাদবর্তী বাহিনীর সাথে ছিলেন এবং কেউ পেছনে পড়ে রইলাে কিনা, নিখোঁজ হলো কিনা, বা কারাে কোনাে সাহায্যের দরকার আছে কিনা, তার খোঁজখবর নিতে নিতে এখানে এসে পড়লেন। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার কাছে স্বীয় পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযােগ করলাে। তার পুত্র আবদুল্লাহ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তিনি মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেন না। রসূল(স.) তাকে অনুমতি দিলেন। তখন আবদুল্লাহ বললেন, ঠিক আছে। রসূল(স.) যখন আপনাকে অনুমতি দিয়েছেন, তখন যেতে পারেন।'{উল্লেখ্য যে, এই যুদ্ধ থেকে ফেরার পরই হযরত আয়শার বিরুদ্ধে অপবাদ রচনার সেই কুখ্যাত ঘটনাটা ঘটে এবং তার প্রধান হােতা ছিলাে এই আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-গ্রন্থকার} এখানে আমরা একবার সে সময়কার ঘটনাবলীর দিকে, একবার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের দিকে এবং এর কোরআনের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা রসূল(স.)-এর জীবনাদর্শ, আল্লাহর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এবং বিশ্ব পরিচালনায় আল্লাহর বিস্ময়কর পরিকল্পনার সাক্ষাত পাই। অপরদিকে দেখতে পাই, মুসলিম সমাজে কিভাবে মুনাফিকরা অনুপ্রবেশ করে, কিভাবে তারা স্বয়ং রাসূল(স.)-এর জীবদ্দশায় মুসলিম সমাজে প্রায় দশ বছর যাবত অবস্থান করে, অথচ তিনিও তাদের সমাজ থেকে বহিষ্কার করেন না, আল্লাহও তাদের মৃত্যুর সামান্য আগে ছাড়া তাদের নাম পরিচয় প্রকাশ করেন না। যদিও রসূল(স.) তাদের কথার সুর শুনে, চালচলন, হাবভাব, গতিবিধি, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি দেখেই তাদের চিনতেন। এর কারণ এই যে, আল্লাহ তায়ালা চান না মানুষেরা নিজেরাই একে অপরের মনের ওপর খবরদারী করুক। কেননা, মানুষের মনের উপর আল্লাহর একচ্ছত্র ও নিরংকুশ আধিপত্য অধিকার বিদ্যমান। তিনিই জানেন কার মনে কী আছে এবং তিনিই তার হিসাব নিকাশ নেবেন। মানুষের কর্তব্য হলাে, অন্য মানুষের কেবল বাহ্যিক অবস্থা বিবেচনায় আনা, আভ্যন্তরীণ অবস্থা নয়। মানুষ অন্য মানুষের ওপর নিজের ধারণা অনুযায়ী কোনাে অভিযােগ আরােপ বা বিচার ফয়সালা করার অধিকারী নয়। এমনকি আমরা এও দেখতে পাই, আল্লাহ তায়ালা যখন রসূল(স.)-কে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মুনাফিক সুলভ আচরণকারী লােকগুলাের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছেন, তখনও তিনি তাদের বাহ্যিক ইসলামী চালচলন ও ইসলামের ফরযসমূহ পালনরত থাকা অবধি তাদের মুসলিম সমাজ থেকে বহিষ্কার করেননি। এই সকল মুনাফিককে শুধু রসূল(স.) চিনতেন এবং তিনি মাত্র একজন সাহাবীকে তাদের পরিচয় জানিয়েছেন। এই সাহাবী ছিলেন হােযায়ফা ইবনুল ইয়ামান(রা.)। সাধারণ মুসলমানদের কাছে এটা প্রকাশ করেননি। এমনকি হযরত ওমর(রা.) পর্যন্ত হােযায়ফার কাছে এসে নিজের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন, রাসূল(স.) তাকে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করেননি তাে! হােযায়ফা শুধু বলতেন, ‘হে ওমর! আপনি তাদের অন্তর্ভুক্ত নন। এর বেশী একটি কথাও বলতেন না। রাসুল(স.)-কে কোনাে মুনাফিকের জানাযার নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছিলাে। যখন রসুল(স.) কারাে জানাযার নামায পড়া থেকে বিরত থাকতেন, কেবল তখনই মুসলমানরা একজন মুনাফিককে চিনতে পারতেন। রাসূল(স.)-এর ইন্তেকালের পর হােযায়ফা যাকে যাকে মুনাফিক বলে জানতেন তাদের জানাযা পড়তেন না। আর হযরত ওমর(রা.) যতােক্ষণ পর্যন্ত কোনাে জানাযার নামাযে হােযায়ফা(রা)-কে উপস্থিত না দেখতেন, ততােক্ষণ তিনিও সেই জানাযা পড়তেন না। হােযায়ফাকে দেখলেই নিশ্চিত হতেন, মৃত ব্যক্তি মুনাফিক গােষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নয়। তাকে না দেখলে সেখান থেকে নীরবে কেটে পড়তেন। মুসলিম সমাজের চরিত্র গঠন এবং তাদের সুষ্ঠু ইসলামী আচরণ ও নীতিমালা শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তায়ালা সুপরিকল্পিতভাবে এই রীতির প্রচলন করেছিলেন। *দ্বীনের কারণে পিতৃহত্যাও সহজ হয়ে যায় : আলােচ্য আয়াতগুলাে নাযিল হওয়ার উপলক্ষ এই ঘটনাটিতে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল রসূল(স.)-এর একেবারে কাছাকাছিই অবস্থান করত এবং মুসলমানদের মধ্যেই থাকতাে। ইসলামের সত্যতা ও রাসূল(স.)-এর রেসালাতের বিশুদ্ধতা সম্পর্কে তার সামনে অগণিত অকাট্য সাক্ষ্য প্রমাণ নিরন্তর উপস্থিত হতাে। কিন্তু আল্লাহ তার হৃদয়কে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করলেন না। কেননা, এই মহান নেয়ামত আল্লাহ তার জন্যে বরাদ্দ করেননি। তার এই অমূল্য সম্পদ লাভের পথে একমাত্র অন্তরায় ছিলাে তার মনের এই আক্ষেপ, রাসূল(স.) মদীনায় আগমন করায় তার আওস ও খাযরাজের রাজা হওয়ার সাধ ধুলায় মিশে গেলে। মদীনায় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটছিলাে, অথচ সে ইসলামের আলাে থেকে বঞ্চিত থেকে গেলাে। পক্ষান্তরে তার ছেলে আবদুল্লাহ নিষ্ঠাবান ও অনুগত মুসলমানের এক মহিমান্বিত ও উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। নিজের পিতার কার্যকলাপ ও আচরণে তিনি দুঃখিত, লজ্জিত ও বিব্রত। তা সত্তেও একজন পিতৃভক্ত পুত্রের ন্যায় তার অন্তরে পিতার প্রতি ভালােবাসা সুপ্ত থাকে। যখন শুনলেন, তার পিতাকে রাসূল(স.) হত্যা করতে চান, তখন তার মন পরস্পর বিরােধী আবেগে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ও দৃঢ়তার সাথে এই উভয় সংকট নিরসন করেন। তিনি ইসলামকে ভালােবাসেন, রসূলের আনুগত্য পছন্দ করেন এবং তাঁর আদেশ যদি তার পিতার বিরুদ্ধেও যায় তথাপি কামনা করেন, তা কার্যকর হােক। তবে অন্য কেউ উদ্যোগী হয়ে তার পিতাকে হত্যা করুক এবং তারপর তার সামনে দিয়ে বহাল তবিয়তে বিচরণ করতে থাকুক এটা তিনি বরদাশত করতে অক্ষম। তিনি আশংকা করেন, তেমনটি ঘটলে তার প্রবৃত্তি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসতে পারে এবং তিনি বংশীয় কৌলীন্য ও জিঘাংসার শয়তানের কাছে পরাভূত হতে পারেন। তাই তিনি তার মনের এই দ্বিমুখী টানাপড়েন থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে স্বীয় রাসূল ও নেতার সাহায্য কামনা করেন। তিনি তাকে অনুরােধ করেন, যদি কাজটা তার করতেই হয় তবে তিনি যেন তাকেই তার (পিতার হত্যার) আদেশ দেন। তিনি রসূল(স.)-কে আশ্বাস দেন, তিনি তার আদেশ সর্বতােভাবে পালন করবেন এবং তার মাথা রসূল(স.)-এর দরবারে হাযির করবেন। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলাে অন্য কেউ যেন এ কাজ না করে এবং তিনি তার পিতৃহন্তাকে ঘােরাফেরা করতে দেখে হত্যা করে জাহান্নামী হতে বাধ্য না হন। মানুষের মনে যে কি বিস্ময়কর ঈমান থাকতে পারে, এ ঘটনা থেকে তাও পরিষ্কারভাবে জানা যায়। এই তরুণ সাহাবী রসূল(স.)-এর সাথে সাক্ষাত করে পূর্ণ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে দাবী জানান, যে কাজটি তার জন্যে সবচেয়ে কষ্টকর, তা অর্থাৎ তার পিতাকে হত্যা করার কাজ তাকেই অর্পণ করা হােক। কেননা, এ দ্বারা তিনি এর চেয়েও কষ্টকর ও মারাত্মক পরিণতি থেকে নিষ্কৃতি পেতে চান। সেই পরিণতি হলাে, মানবীয় দুর্বলতা ও ঝোঁকের বশে একজন কাফেরের বদলায় একজন মােমেনকে হত্যা করে অবধারিতভাবে জাহান্নামে যাওয়া। আপন পিতার প্রতি মানবীয় দুর্বলতা ও অনুরাগের মােকাবেলা করতে যেয়ে তিনি বিস্ময়কর সত্যবাদিতা ও স্পষ্টভাষিতার পরিচয় দেন। তিনি বলেন, ‘আমার চেয়ে পিতৃভক্ত ছেলে যে খাযরাজ গোত্রে নেই, তা গােটা খাযরাজ গোত্রের কাছে সুবিদিত।’ অতপর তিনি স্বীয় নবী ও নেতার কাছে এই মর্মে সাহায্য চান যেন তিনি তাকে এই উভয় সংকট থেকে উদ্ধার করেন। অথচ ঘূর্ণাক্ষরেও এ দাবী জানান না যে, তার পিতার হত্যার আদেশ প্রত্যাহার বা পরিবর্তন করা হােক; বরং আদেশকে তিনি শিরােধার্য মেনে নিয়েছেন বরং তা কার্যকর হতেই হবে বলে দ্ব্যর্থহীন মত দিয়েছেন। যে বিষয়টা তিনি চেয়েছেন তা হচ্ছে, আদেশটি কার্যকর করার দায়িত্ব তাকেই দেয়া হােক এবং তিনি নিজেই তার মাথা কেটে আনবেন। অন্যদিকে দয়া ও মহানুভবতার মূর্ত প্রতীক রসূল(স.) ঈমানী তেজোদ্দীপ্ত এই যুবকের উভয় সংকট উপলব্ধি করে তাকে পরম উদারতা ও সহনশীলতা সহকারে জানান, আমরা বরং তার সাথে উদার আচরণ করবাে এবং যতদিন সে আমাদের সাথে থাকে, ততােদিন তার সাথে ভালাে ব্যবহার করবো। ইতিপূর্বে তিনি ওমর ইবনুল খাত্তাব(রা.)-কে এই বলে হত্যা থেকে বিরত রাখেন যে, হে ওমর! লােকেরা যখন বলাবলি করবে, মােহাম্মদ(স.) নিজের সহচরদের হত্যা করে, তখন কেমন হবে? এরপর রসূল(স.) অসময়ে যাত্রা করা এবং ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত সফর অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়ে একদিকে যেমন গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন, অপরদিকে তেমনি আল্লাহর ইংগিতও কার্যকর করেন। এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিলাে মুসলিম বাহিনীর মনােযােগ আঞ্চলিক ও গােষ্ঠীগত বিদ্বেষের নােংরামি থেকে ভিন্ন দিকে ফেরানাে। একজন আনসার যখন ‘হে আনসাররা আমাকে বাঁচাও’ এবং একজন মােহাজের ‘হে মােহাজেররা আমাকে বাঁচাও’ বলে চিৎকার দিয়েছিলাে তখনই এই নােংরা আঞ্চলিক ও গােষ্ঠী বিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছিলাে। মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল আনসার ও মােহাজেরদের ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার যে ষড়যন্ত্র পাকিয়েছিলাে, তা নস্যাৎ করে দেয়াও উক্ত পদক্ষেপের অন্যতম লক্ষ্য ছিলাে। বস্তুত এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিলাে গােটা মানব জাতির ইতিহাসে এবং আদর্শগত আন্দোলনের ইতিহাসে নযীরবিহীন। এ ঘটনার মধ্যে রসূল(স.) ও ওসায়দ ইবনে হােযায়র(রা.)-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত কথাবার্তাও খুবই শিক্ষাপ্রদ। এই সংক্ষিপ্ত কথােপকথনের মধ্যে একদিকে যেমন সে ষড়যন্ত্র প্রতিরােধের মানসিক প্রস্তুতি নিহিত ছিলাে, তেমনি এই ষড়যন্ত্রের হােতাকে প্রতিহত করার উদ্যোগ ও ছিল। অথচ এ কাজটি সহজ ছিলাে না। কেননা, ষড়যন্ত্রের হােতা নিজ গােত্রের ইসলাম গ্রহণ করার পরও তাদের ওপর যথেষ্ট প্রভাবশালী ছিলাে। সর্বশেষে আরাে একটি বিস্ময়কর দৃশ্যের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। তা হচ্ছে, মােনাফেক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-র ঈমানদার ছেলে আবদুল্লাহর দৃঢ়তা। আবদুল্লাহ নিজের তরবারি হাতে নিয়ে পিতাকে শহরে ঢুকতে না দেয়ার অভিপ্রায়ে মদীনার প্রবেশদ্বারে দাড়িয়ে গেলেন। কেননা, তার পিতা বলেছিলাে, ‘সবল দুর্বলকে মদীনা থেকে বের করে দেবে। আবদুল্লাহ তার পিতার এই উক্তিকেই সত্য প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন, যাতে সে নিশ্চিত হতে পারে যে, রসূলুল্লাহ(স.) যথার্থই সবল এবং আবদুল্লাহ ইবনে উবাই দুর্বল। তিনি বদ্ধপরিকর ছিলেন, রসূল(স.) মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে তার পিতাকে শহরে প্রবেশের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত তিনি প্রবেশ করতে দেবেন না। তিনি অনুমতি দেবেন, তবেই সে প্রবেশ করবে। এভাবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হবে কে সবল এবং কে দুর্বল। বস্তুত এ হচ্ছে সেই সর্বোচ্চ মান, যেখানে এই ব্যক্তিরা ঈমানের বলেই উন্নীত হয়েছিলেন। এই সর্বোচ্চ মানে উন্নীত হওয়ার পরও তারা মানুষই ছিলেন এবং তাদের মধ্যে মানবীয় দুর্বলতা মানবীয় ভাবাবেগ— সবই ছিলাে। বস্তুত মানুষ যখন ইসলামের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের মানবরূপী চলমান প্রতীক হয়ে বিচরণ করে ও পানাহার ইত্যাদি করে, তখন ইসলামের সবচেয়ে সুন্দর ও সবচেয়ে বাস্তব রূপটিই পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। *মুনাফিকের আরো কিছু ঘৃণ্য বৈশিষ্ট্য : এবারে আমরা দৃষ্টি দেবাে উল্লিখিত ঘটনাবলীর বিবরণ সম্বলিত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে। এই সূরার ৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন তাদের বলা হয়, এসাে, আল্লাহর রাসূল তােমাদের জন্যে ক্ষমা চাইবেন, তখন তারা মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং তুমি তাদের দেখবে দাম্ভিকতার সাথে বিরােধিতায় লিপ্ত। বস্তুত তারা তাদের মুনাফিকসুলভ অপতৎপরতা ও খারাপ কথাবার্তা যথারীতি চালিয়ে যায়, কিন্তু যখনই জানতে পারে, রসূল(স.)-এর কাছে তা ফাঁস হয়ে গেছে, তখন কাপুরুষতা প্রদর্শন করে, লজ্জা পেয়ে এবং কসম খেয়ে খেয়ে বলতে থাকে, আমি ওসব কথা বলিনি। এভাবে কসম ঢাল হয়ে তাদের রসূল(স.) ও মুসলমানদের রােষ থেকে রক্ষা করে। অতপর যখন কেউ বলে, ‘এসো, আল্লাহর রসূল তােমাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, অথচ তখনাে তারা রসূলের সম্মুখীন হওয়া থেকে নিরাপদ ছিলাে, তখন তারা দাম্ভিকতার সাথে মাথা ঘুরিয়ে নেয়।’ একদিকে উপরােক্ত কাপুরুষতা ও লজ্জা, অপরদিকে এই দাম্ভিকতা ও মাথা ঘুরিয়ে নেয়া এই দুটো হচ্ছে মােনাফেকদের অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য। এ ধরনের আচরণ যদিও সচরাচর প্রভাবশালী ও গণ্যমান্য শ্রেণীর লােকদের মধ্যেই দৃষ্টিগােচর হয়ে থাকে, কিন্তু এই শ্রেণীর লােকেরা স্বভাবগতভাবে কিছুটা ভীরু এবং কাপুরুষও হয়ে থাকে। তারা মুসলমানদের ও তাদের নেতার মুখােমুখি হতে ভয় পায়। যতোক্ষণ মুখােমুখি হওয়ার আশঙ্কা থাকে ততােক্ষণ তারা অহংকার ও দাম্ভিকতা প্রদর্শন করতে থাকে, আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে ফেরাতে থাকে এবং মাথা ঘুরিয়ে অবাধ্যতা প্রদর্শন করতে থাকে। কিন্তু যখনই তাদের নেতার মুখােমুখি হতে হয় অমনি কাপুরুষতা, লজ্জা ও কসম খাওয়া শুরু করে দেয়। এ কারণে তাদের সম্পর্কে আল্লাহর চুড়ান্ত ফয়সালা এবং এই ফয়সালার পর তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে যে কোনাে লাভ নেই, সে কথা পরবর্তী আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘তাদের জন্যে তুমি ক্ষমা চাও আর না চাও উভয়ই সমান, আল্লাহ তায়ালা তাদের কখনাে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তায়ালা ফাসেকদের সুপথ দেখান না।’ অতপর যে ফাসেকীর কারণে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর এই চূড়ান্ত ফয়সালা কার্যকর হয়েছে। সেই ফাসেকীর একটি দিক তুলে ধরা হয়েছে পরবর্তী আয়াতে। ‘তারা হচ্ছে সেসব লােক, যারা জনগণকে বলে, আল্লাহর রাসূলের কাছে অবস্থানকারীদের জন্যে অর্থ ব্যয় করাে না, যতক্ষণ না তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে চলে যায়…’ বস্তুত মুনাফিকরা যে কাল ও যে স্থানেরই অধিবাসী হােক না কেন, এ ধরনের কথা বলা তাদের চিরন্তন রীতি। এ ধরনের কথাবার্তার মধ্য দিয়ে তাদের মজ্জাগত নােংরা স্বভাবই পরিস্ফুট হয়ে থাকে। সত্য ও ঈমানের শত্রুরা চিরকাল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই চালানাের জন্যে মােমেনদের অনাহারে মারার অপকৌশল অবলম্বন করে। যেহেতু তারা নিজেদের ইতর সুলভ মানসিকতার কারণে খাদ্য ও জীবন যাপনের উপকরণকেই জীবনের সব কিছু মনে করে, সেহেতু এই উপকরণটির সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েই তারা মােমেনদের বিরুদ্ধে লড়াই করে থাকে। এই অস্ত্রটি দিয়েই কোরায়শ বনু হাশেমের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলো। পর্বতের উপত্যকার মধ্যে তাদের বন্দী করে ও বয়কট করে চাপ প্রয়ােগ করেছিলাে, যাতে তারা (বনু হাশেম) রসূল(স.)-এর সাহায্য করা থেকে বিরত হয় এবং তাঁকে মোশরেকদের কাছে হস্তান্তর করে। আলোচ্য আয়াত থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাসূল(স.)-এর সাহাবীরা যাতে ক্ষুধা ও অনাহারের চাপে পড়ে তাকে ছেড়ে চলে যায়, সে জন্যে মুনাফিকরাও তাদের বিরুদ্ধে এই অস্ত্র প্রয়ােগ করতাে। তারা যাতে অনাহারে কষ্ট পায়, সেজন্যে তাদের দান করা থেকে জনগণকে বিরত রাখতে চেষ্টা করতাে। এই অস্ত্র কমিউনিষ্টরাও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর বিরুদ্ধে প্রয়ােগ করে থাকে। খাদ্য সরবরাহের জন্যে প্রচলিত রেশনকার্ড থেকে তাদের বঞ্চিত রাখে, যাতে তারা ক্ষুধায় মরে তাে মরুক, নচেত আল্লাহকে অস্বীকার ও নামায ত্যাগ করুক। তথাকথিত নামধারী মুসলিম দেশগুলােতেও এই অস্ত্রের প্রয়ােগ চলছে। আল্লাহর দিকে আহবান ও ইসলামের পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে যারা ঠেকাতে চায়, তারা অকমিউনিষ্ট হলেও অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরােপ, অনাহার চাপিয়ে দেয়া এবং কর্মসংস্থানে ও জীবিকা উপার্জনে বাধাদানের অপকৌশল অবলম্বন তারা করেই চলেছে। এভাবে আবহমানকাল ধরে ইসলামের শত্রুরা এই ঘৃণ্য পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। অথচ তারা অত্র আয়াতের শেষ অংশে বর্ণিত সত্যটি জানে না যে আকাশ ও পৃথিবীর যাবতীয় সহায়-সম্পদ আল্লাহর, কিন্তু মুনাফিকরা তা বােঝে না।’ মুসলমানদের জীবিকা নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট এসব মুসলিম নামধারী মুনাফিকরাও আকাশ ও পৃথিবীতে বিরাজমান আল্লাহর সৃষ্ট জীবিকার অবারিত উৎস থেকেই নিজেদের জীবিকা উপার্জন করে থাকে। তারা নিজেরা নিজেদের জীবিকার স্রষ্টা নয়। অথচ তারাই কিনা অন্যের জীবিকা বন্ধ করতে সচেষ্ট । কতাে মূর্খ কতো নির্বোধ তারা! আকাশ ও পৃথিবীতে বিরাজমান জীবিকার উৎসগুলাে যে আল্লাহর শত্রু ও বন্ধু নির্বিশেষে সকলেরই জীবিকার উৎস, সে কথা বলে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা মােমেনদের প্রবোধ দিচ্ছেন এবং আল্লাহর শত্রুদের গৃহীত পাশবিক ও হীন কর্মপন্থার মােকাবেলায় টিকে থাকার জন্যে মােমেনদের মনােবল বৃদ্ধি করছেন। যে আল্লাহ তায়ালা তার দুশমনদের পর্যন্ত জীবিকা দিতে ভােলেন না, তিনি তার বন্ধুদের ভুলতে পারেন না। তিনি এত দয়ালু যে, তার শত্রুদের পর্যন্ত জীবিকা থেকে বঞ্চিত করেন না ও না খাইয়ে রাখেন না। অথচ তিনি জানেন যে, তিনি যদি তার বান্দাদের জীবিকা থেকে বঞ্চিত করেন, তবে তারা নিজেদের জন্যে জীবিকা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে না। আল্লাহ তায়ালা এতােটা উদার যে, তার শত্রুদের পর্যন্ত যে কাজে তারা সক্ষম নয়, সে কাজে বাধ্য করেন না। বস্তুত ভাতে পানিতে মারার কৌশলটি এমন অপকৌশল, যার কথা জঘন্যতম ইতর ও পাষন্ডতম লোক ছাড়া আর কেউ চিন্তা করে না। পরবর্তী আয়াতে মুনাফিকদের অপর একটি নিকৃষ্ট উক্তি তুলে ধরে তার সমালােচনা করা হয়েছে। ‘তারা বলে, আমরা যদি মদীনায় ফিরে যাই তাহলে সবল সেখান থেকে দুর্বলকে তাড়িয়ে দেবো।’ ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-র ছেলে আবদুল্লাহ এ কথাটা বাস্তবায়িত করেছেন এবং কিভাবে মদীনায় সবলের অনুমতি ছাড়া দুর্বল প্রবেশ করতে পারেনি। বস্তুত সমস্ত প্রতাপ ও সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহর, তাঁর রসূলের ও মােমেনদের। অথচ মুনাফিকরা তা জানে না। এখানে আল্লাহ তায়ালা নিজের পাশাপাশি তাঁর রসূল ও মােমেনদের কথা উল্লেখ করেছেন। এটা রসূল ও মােমেনদের জন্যে এক দুর্লভ সম্মানের প্রতীক। তিনি যেন বলছেন, এই তাে আমরা, এ হচ্ছে সবল ও সম্মানিতদের পতাকা, এই হচ্ছে প্রতাপশালীদের সারি। বস্তুত রসূল(স.) ও মােমেনদের নিজের পার্শ্বে রেখে তিনি মহাপ্রতাপান্বিত একটি শিবির স্থাপন করেছেন। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সত্য কথাই বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা সকল সম্মান, শক্তি ও প্রতাপের উৎস হিসাবে মােমেনের হৃদয়ে বিদ্যমান ঈমানকেই চিহ্নিত করেছেন। এই সম্মান প্রতিপত্তি আল্লাহর সম্মান প্রতিপত্তি থেকেই উদ্ভূত। এ সম্মান ও প্রতিপত্তি কখনাে কাউকে দুর্বল করে না, নিজেও দুর্বল হয় না। মােমেনের হৃদয় থেকে তা চরম সংকটজনক মুহূর্তেও দূরে সরে যায় না। কেবল দুর্বল ও দোদুল্যমান হতে পারে। এই দুর্বলতা ও দোদুল্যমানতা কাটিয়ে ওঠলে মােমেনের সম্মান, শক্তি, প্রতিপত্তি অটল ও স্থিতিশীল হয়ে যায়। ‘অথচ মােনাফেকরা তা জানে না। তারা যখন এই সম্মান প্রতিপত্তির স্বাদ পায়নি এবং এর মূল উৎসের সাথে তাদের যােগাযােগ নেই, তখন তারা কেমন করেই বা তার কথা জানবে।
# ফী জিলালিল কুরআন:
(আত তাওবা, আয়াত ৮৪)।
সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-৮৪
اِسْتَغْفِرْ لَهُمْ اَوْ لَا تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ١ؕ اِنْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ سَبْعِیْنَ مَرَّةً فَلَنْ یَّغْفِرَ اللّٰهُ لَهُمْ١ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ١ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهْدِی الْقَوْمَ الْفٰسِقِیْنَ۠
হে নবী! তুমি এ ধরনের লোকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো, তুমি যদি এদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তাহলেও আল্লাহ তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলের সাথে কুফরী করেছে। আর আল্লাহ ফাসেকদেরকে মুক্তির পথ দেখান না।
তাপসীর:-
মুমিনদের প্রতি মুনাফিকদের কটাক্ষ : এবারে যাকাত সম্পর্কে মোনাফেকদের চিন্তাধারার আর একটি দিক তুলে ধরা হচ্ছে, যার কারণে তারা সত্যনিষ্ঠ মোমেনদের মধ্যে থেকেও এ কল্যাণকর ব্যবস্থার বিরোধিতা করতো এবং তাদের এ বিরোধিতা প্রকাশ পেতো তাদের চোখের ইশারা ইংগিতে এবং অনেক সময়ে মুখের ওপর তাদের দোষারোপের মাধ্যমেও। এসব অসদাচরণ দ্বারা তাদের প্রকৃতির মধ্যে দ্বীনের নির্দেশাবলী অমান্য করার যে প্রবণতা লুকিয়ে ছিলো, তারই বহিপ্রকাশ ঘটাত ৷ তাই এরশাদ হচ্ছে, “ওরা হচ্ছে সেই সব ব্যক্তি, যারা অনুগত ও সত্যনিষ্ঠ মোমেনদেরকে আল্লাহর পথে দান করার ব্যাপারে মুখের ওপর দোষ দিয়ে নানা প্রকার কটুক্তি করতো, আর বিদ্রুপ করতো ওই সব অভাবগ্রস্ত মানুষকে যারা যথাসাধ্য আল্লাহর হুকুম মানার চেষ্টা করতো এবং শ্রম দেয়া ছাড়া দেয়ার মতো (তাদের কাছে) আর কিছুই ছিলো না। আল্লাহ্ তায়ালাও তাদের প্রতি বিদ্রুপবাণ বর্ষণ করছেন এবং পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি ।” এ আয়াতটির শানে নুযুল সম্পর্কে যা জানা যায় তা হচ্ছে, আল্লাহর পথে খরচ করার ব্যাপারে বিরোধী মনোভাবাপন্ন মোনাফেকদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিলো এবং তার যে বহিপ্রকাশ তারা ঘটিয়েছিলো, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা। ইবনে জারীর এ আয়াতটির ব্যাখ্যায় বিডিন্ন শব্দে উচ্চারিত এবং নানা সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা হচ্ছে, ইকরামা বলেন, তাবুক যুদ্ধের অভিযানের প্রাক্কালে যথাসম্ভব দান করার জন্যে লোকদেরকে রসূলুল্লাহ (স.) অনুপ্রাণিত করলেন তখন হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) চার হাজার স্বর্ণ-মুদ্রা নিয়ে হাযির হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার কাছে ছিলোই সর্বসাকুল্যে মোট আট হাজার, তার থেকে আমি অর্ধেক নিয়ে এসেছি এবং অর্ধেক রেখে এসেছি ।’ তখন রসূলুল্লাহ তাকে দোয়া দিতে গিয়ে বললেন, “তুমি যা রেখে এসেছো এবং যা নিয়ে এসেছো তার প্রতি আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করুন৷” আবু উকায়েল আসলেন এক সা” (এক সের সাড়ে বারো ছটাক পরিমাণ) খোরমা নিয়ে । তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, আমার ছিলো দুই সা, খোরমা, তার থেকে এক সা’ আমার রবের জন্যে নিয়ে এসেছি এবং আমার পরিবারের জন্যে রেখে এসেছি এক সা” ৷ বর্ণনাকারী ইকরামা বলেন, তখন মোনাফেকরা এ দেখে বিদ্রুপ করে বলে উঠলো, আবদুর রহমান তো মানুষকে দেখানোর জন্যে এ পরিমাণ অর্থ নিয়ে এসেছে. …… তারপর ওই এক সা’ খোরমার দিকে ইংগিত করে বললো, আল্লাহ ও তার রসূল কি এ এক সা’ পরিমাণ খোরমার ভুখা নাকি? অবশ্যই না। অন্য আরো কিছু বর্ণনায় জানা যায়, আবু উকায়েল সম্পর্কে ওরা এ কথাগুলো বলেছিলো । অথচ তার অবস্থা তো ছিলো এই যে, গতকাল সে যে কায়িক শ্রমের কাজ করেছিলো, তার মজুরী বাবদ সে পেয়েছিলো মাত্র দুই সা” খোরমা ৷ তার মধ্য থেকেই তো সে আল্লাহর রসূলের কাছে এক সা’ নিয়ে হাযির হয়েছিলো ৷ এ কথাটাই তো সে নিজে বলতে চেয়েছিলো! কিন্তু হায়, সব কথা সে খুলে বলতে পারেনি । আর এভাবেই তো তোমরা (হে মোনাফেকরা) সেই সব লোকের দানের প্রতি কটাক্ষপাত করছো যারা কষ্টার্জিত পয়সা থেকে যতোদূর সম্ভব আনুগত্যভরা মন নিয়ে পরম প্রশান্ত বদনে এবং জেহাদে অংশ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে দান করার জন্যে বেরিয়ে এসেছে। আর এটাই ছিলো মোমেনদের চরম ত্যাগ ও জেহাদের জন্যে পরম আগ্রহের নমুনা। আখেরাতে আল্লাহর কাছে পাওয়ার পবিত্র এক আশা ছাড়া শুধু বিবেকের ডাকে এভাবে দান করা সম্ভব হয় না। মানুষের পরিবর্তনশীল চেতনা আপনা থেকেই এতাবে তাকে এমন কঠিন ত্যাগ স্বীকারে উদ্বুদ্ধ করতে পারে না, পারে না এভাবে তাকে ঈমানের দাবী পূরণে উজ্জীবিত করতে ৷ এভাবে ত্যাগ করতে এবং এভাবে জেহাদে শরীক হতে ৷ একথা না বুঝার কারণেই ওই হতভাগা কপট কদাচাররা অধিক দানকারী ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষ দেখানো দান বলে এমন হীন মন্তব্য করতে পারে এবং তুচ্ছ জ্ঞান করতে পারে দরিদ্র মোমেনের সামান্য এ দানকে ৷ এ সব দরিদ্র ব্যক্তি তো স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে খরচ করে! অপরদিকে তারা ধনীদেরকে বেশী দান করার জন্যে টিপ্পনী কাটে, আর গরীবদেরকে তাদের সামান্য দান করার কারণে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। এ দু’দলের কেউ তাদের খোঁচা মারা কথা থেকে রেহাই পায় না। অথচ তারা নিজেরা ঘরে বসে থাকে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে যাওয়া থেকে পেছনে পড়ে থাকে এবং আল্লাহর রাহে দান করা থেকে এমনভাবে হাত সংকুচিত করে রাখে যে তাদের চরম কৃপণতা ফুটে ওঠে । আর কোনো সময় কিছু খরচ যদি তারা করে তো নিছক লোককে দেখানোর জন্যেই করে। আর এ হীন উদ্দেশ্য ছাড়া তাদের মনে অন্য কোনো মহান উদ্দেশ্য কিছুতেই জাগরিত হয় না। তাদের এসব ঘৃণ্য ব্যবহারের জওয়াবে আল্লাহ তায়ালা এক চূড়ান্ত ও সুনির্দিষ্ট কথা বলছেন, “আল্লাহ্ তায়ালাও তাদের প্রতি বিদ্রুপবাণ নিক্ষেপ করছেন এবং (অবশেষে) তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি ৷” হায়, কি ভয়ানক তাদের এ বিদ্রুপ এবং কতো ভয়ানক হবে এর পরিণতি! এ তুচ্ছ, দুর্বল ও ধ্বংসশীল মানুষের পক্ষে মহা ক্ষমতাধর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সমালোচনা করা কি কঠিন কথা, কতো বড় অপরাধ এবং কতো ভয়ানক হতে পারে তার পরিণতি একথা কি এসব ভ্রান্ত মানুষ একবার চিন্তা করে দেখেছে? দেখো, একবার চিন্তা করে দেখো হে অর্বাচীন কপটের দল, কতো মারাত্মক পরিস্থিতি তোমাদের দিকে এগিয়ে আসছে । এরশাদ হচ্ছে, “(হে নবী) তাদের জন্যে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা করো আর নাই বা করো, উভয় অবস্থা তাদের জন্যে সমান । তুমি সত্তর বারও যদি তাদের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা চাও, তবু তিনি তাদের মাফ করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ্ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে। আর আল্লাহ তায়ালা এ মহা অপরাধী জাতিকে ক্ষমা করেন না ।” এ আয়াতে ওইসব মোনাফেকের কথা বলা হয়েছে, যারা সদকা-যাকাত সম্পর্কে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছে এবং আল্লাহর নেক ও ফরমাবর্দার লোকদের প্রতি ঠাট্টা বিদ্বূপ করেছে। তাদের প্রত্যাবর্তন-স্থল নির্ধারিত হয়ে গেছে, সেখানে তাদের যেতেই হবে, সেখান থেকে ফেরার আর কোনো পথ তাদের নেই৷ এরশাদ হচ্ছে, “আর কিছুতেই তাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমা করবেন না ।” তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কোনোই কাজে লাগবে না। কাজেই তাদের জন্যে ক্ষমা চাওয়া না চাওয়া উভয় অবস্থাই তাদের জন্যে সমান। প্রকাশ থাকে যে, রসূলুল্লাহ (স.) অপরাধীদের প্রতি এতোই দরদী ছিলেন যে, প্রতি মুহূর্তেই তাঁর মনে হতো এই বুঝি ওদের ওপর আযাব এসে পড়ে ৷ এজন্যে তাদের জন্যে তিনি আল্লাহর কাছে বারবার মাফ চাইতেন- যদি আল্লাহ রব্বুল ইযযত মেহেরবানী করে তাদের তাওবা কবুল করেন! এজন্যে তাকে জানিয়ে দেয়া হলো যে, তাদের গন্তব্যস্থল চূড়ান্তভাবে স্থির হয়ে গেছে, সেখান থেকে তাদেরকে ফেরানোর আর কোনো পথ নেই । এরশাদ হচ্ছে, “তাদের এ পরিণতি এ জন্যে যে, তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে ….. আর আল্লাহ তায়ালা অপরাধী জাতিকে সঠিক পথ দেখান না ।” ওই সকল লোক সঠিক পথ থেকে সরে গেছে। অতএব, সেখান থেকে ফিরে আসার আর কোনো উপায় দেখা যায় না এবং তাদের অন্তরগুলোও পচে গেছে। ওই অবস্থা থেকে নিরাময় হওয়ারও আর কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এরশাদ হচ্ছে, “যদি তুমি তাদের জন্যে সত্তর বারও ক্ষমা চাও, তবু কিছুতেই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করবেন না ।” আরবী ভাষায় সত্তর শব্দটি আসলে ‘আধিক্য’ বোঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়। শুধু ওই সংখ্যার মধ্যে এর অর্থ সীমাবদ্ধ নয়। এর দ্বারা সাধারণ যে অর্থটি বোধগম্য হয় তা হচ্ছে, তাদের জন্যে ক্ষমার কোনো আশা নেই । কারণ তাদের তাওবা কবুল হওয়ার কোনো পথ নেই । আর মানুষের অন্তর বিগড়ে যেতে যেতে এমন একটি পর্যায়ে এসে যায়, যখন সেটাকে শোধরানোর আর কোনো উপায় থাকে না। একইভাবে পথভ্রষ্টতা, অর্থাৎ ভুল পথে চলতে চলতে এমন এক স্তরে মানুষ পৌছে যায়, যখন তার জন্যে সঠিক পথ পাওয়ার আর কোনোই আশা থাকে না। আর আল্লাহ তায়ালাই সকল মনের খবর ভালো জানেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
৫-৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা নং আয়াতে পড়ুন।:-
# তারা ইসতিগফারের জন্য রসূলের কাছে আসে না শুধু তাই নয়, বরং এ কথা শুনে অহংকার ও গর্ব মাথা ঝাঁকুনি দেয়। রসূলের কাছে আসা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাকে নিজেদের জন্য অপমানজনক ও মর্যাদাহানিকর মনে করে আপন অবস্থানে অনড় থাকে। তারা যে ঈমানদার নয় এটা তার স্পষ্ট প্রমাণ।
# একথাটি সূরা তাওবাতে (যা সূরা মুনাফিকূনের তিন বছর পর নাযিল হয়) আরো অধিক জোর দিয়ে বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহর তা’আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেছেনঃ “তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না করো, এমনকি যদি তাদের জন্য সত্তরবারও ক্ষমা প্রার্থনা কর তবুও আল্লাহ কখনো তাদেরকে মাফ করবেন না। কারণ, তারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে। আল্লাহ ফাসিকদের হিদায়াত দান করেন না। (আত তাওবা, আয়াত ৮০ ) পরে আরো বলা হয়েছেঃ তাদের কেউ মারা গেলে তুমি কখনো তার জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের পাশেও দাঁড়াবে না। এরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে কুফরী করেছে এবং কাফেক অবস্থায় মারা গেছে।
# সুরা: আত-তওবা
আয়াত নং :-৮৪
وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤى اَحَدٍ مِّنْهُمْ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمْ عَلٰى قَبْرِهٖ١ؕ اِنَّهُمْ كَفَرُوْا بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِهٖ وَ مَاتُوْا وَ هُمْ فٰسِقُوْنَ
আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার জানাযার নামাযও তুমি কখনো পড়বে না এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাসেক অবস্থায়।
তাফসীর :
# তাবুক থেকে ফিরে আসার পর বেশী দিন যেতে না যেতেই মুনাফীক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলো। তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ছিলেন নিষ্ঠাবান মুসলমান। তিনি নবী (সা.) এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফনে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন। তিনি অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তা দিয়ে দিলেন। তারপর আবদুল্লাহ তাঁকেই জানাযার নামায পড়াবার জন্য অনুরোধ করলেন। তিনি এ জন্যও তৈরী হয়ে গেলেন। হযরত উমর(রা.) বারবার এ মর্মে আবেদন জানাতে লাগলেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এমন ব্যক্তির জানাযার নামায পড়াবেন যে অমুক অমুক কাজ করেছে? কিন্তু তিনি তার এ সমস্ত কথা শুনে মুচকি হাসতে লাগলেন। তার অন্তরে শত্রু মিত্র সবার প্রতি যে করূনার ধারা প্রবাহিত ছিল তারি কারণে তিনি ইসলামের এ নিকৃষ্টতম শত্রুর মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেও ইতস্তত করলেন না। শেষে যখন, তিনি জানাযার নামায পড়াবার হুকুমে তাকে নামায পড়াবার জন্য দাঁড়িয়েই গেলেন, তখন এ আয়াতটি নাযিল হলো এবং সরাসরি আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো। কারণ এ সময় মুনাফিকদের ব্যাপারে স্থায়ী নীতি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, যে, মুসলমানদের সমাজে আর মুনাফিকদেরকে কোন প্রকারে শিকড় গেড়ে বসার সুযোগ দেয়া যাবে না এবং এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে এ দলটির সাহস বেড়ে যায়।
এ থেকে শরীয়াতের এ বিষয়টি স্থিরকৃত হয়েছে যে, ফাসেক, অশ্লীল ও নৈতিকতা বিরোধী কাজকর্মের লিপ্ত ব্যক্তি এবং ফাসেক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির জানাযার নামায মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়। তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়। এ আয়াত গুলো নাযিল হবার পর নবী (সা.) নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে কোন জানাযার শরীক হবার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন ছিল। যদি জানতে পারতেন সে অসৎ চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পারো।
# এ আয়াতটিতে দু’টি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। এক, মাগফিরাতের জন্য দোয়া শুধু হিদায়াত প্রাপ্ত লোকদের জন্যই ফলপ্রসূ ও কল্যাণকর হতে পারে। যে ব্যক্তি হিদায়াতের পথ থেকে সরে গিয়েছে এবং যে ব্যক্তি আনুগত্যের পরিবর্তে গোনাহ ও অবাধ্যতার পথ অবলম্বন করেছে তার জন্য কোন সাধারণ মানুষের দোয়া তো দূরের কথা আল্লাহর রসূল নিজেও যদি তার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন তবুও তাকে ক্ষমা করা যেতে পারে না। দুই, যারা আল্লাহর হিদায়াত পেতে আগ্রহী নয় তাদের হিদায়াত দান করা আল্লাহর নীতি নয়। কোন ব্যক্তি নিজেই যদি আল্লাহর হিদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে বরং তাকে হিদায়াতের দিকে আহবান জানালে মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে অহংকার ভরে সে আহবান প্রত্যাখ্যান করে তাহলে আল্লাহর কি প্রয়োজন পড়েছে যে, তার পিছনে পিছনে নিজের হিদায়াতের ফেরি করে বেড়াবেন এবং তোষামোদে করে তাকে সত্যপথে নিয়ে আসবেন।
# হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম বলেনঃ আমি যখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের এ কথা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললাম এবং সে এসে শপথ করে পরিষ্কার ভাষায় তা অস্বীকার করলো তখন আনসারদের প্রবীণ ও বয়োবৃদ্ধ লোকজন এবং আমার আপন চাচা আমাকে অনেক তিরস্কার করলেন। এমনকি আমার মনে হলো নবীও ﷺ আমাকে মিথ্যাবাদী এবং আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে সত্যবাদী মনে করেছেন। এতে আমার এত দুঃখ ও মনঃকষ্ট হলো যা সারা জীবনে কখনো হয়নি। আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে নিজের জায়গায় বসে পড়লাম। পরে এ আয়াতগুলো নাযিল হলে রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে ডেকে হাসতে হাসতে আমার কান ধরে বললেনঃ ছোকরাটার কান ঠিকই শুনেছিল। আল্লাহ নিজে তা সত্য বলে ঘোষণা করেছেন। (ইবনে জারীর। এ বর্ণনা অনুরূপ বর্ণনা তিরমিযীতেও আছে)। ও মর্যাদা মূলত আল্লাহর সত্তার জন্য নির্দিষ্ট আর রসূলের মর্যাদা রিসালাতের কারণে এবং ঈমানদারদের মর্যাদা তাদের ঈমানের কারণে। এরপর থাকে কাফের, ফাসেক ও মুনাফিকদের মর্যাদার ব্যাপার। কিন্তু প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদায় তাদের কোন অংশ নেই।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫-৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা অভিশপ্ত মুনাফিকদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে বলেনঃ তাদের কৃত পাপের ব্যাপারে খাঁটি মুসলমানরা যখন তাদেরকে বলেঃ এসো, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাদের পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন তারা গর্বভরে মাথা দুলিয়ে থাকে। এভাবে তারা বিমুখ হয়ে যায়। এর প্রতিফল হলো এই যে, তাদের জন্যে ক্ষমার দর বন্ধ। তাদের জন্যে নবী (সঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা তাদের কোনই উপকারে আসবে না। আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না। সূরায়ে বারাআতে এই বিষয়েই আয়াত গত হয়েছে এবং সেখানে এর তাফসীর এবং সাথে সাথে এই সম্পর্কীয় হাদীসসমূহও বর্ণিত হয়েছে।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে যে, মুনাফিক সুফইয়ান তার মুখখানা ডান দিকে ফিরিয়ে নিয়েছিল এবং ক্রোধ ও গর্বের সাথে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছিল। ওরই বর্ণনা এই আয়াতে রয়েছে। এগুলো সবই আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল সম্পর্কে বর্ণনা, এরূপ মন্তব্য করেছেন পূর্বযুগীয় অধিকাংশ গুরুজন। যেমন এটা সত্বরই আসছে ইনশাআল্লাহ।
সীরাতে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের মধ্যে রয়েছে যে, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল তার কওমের মধ্যে এক বড় সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিল। জুমআ’র দিন নবী (সঃ) যখন খুৎবাহ দেয়ার জন্যে দাঁড়াতেন তখন সে দাঁড়িয়ে গিয়ে বলতোঃ “হে জনমণ্ডলী! ইনি হলেন আল্লাহর রাসূল (সঃ)। ইনি তোমাদের মধ্যেই বিদ্যমান রয়েছেন। এরই কারণে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন। সুতরাং তাঁকে সাহায্য করা এখন তোমাদের অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তোমরা তাঁকে সম্মান করবে ও মর্যাদা দিবে এবং তিনি যা কিছু বলবেন সবই মেনে চলবে।” এ কথা বলে সে বসে পড়তো। উহুদের যুদ্ধে তার কপটতা প্রকাশ পেয়ে যায়। সেখান হতে সে প্রকাশ্যভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অবাধ্যাচরণ করে এক তৃতীয়াংশ সৈন্য নিয়ে মদীনায় ফিরে আসে। যুদ্ধ শেষে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন মদীনায় ফিরে আসেন এবং জুমআ’র দিনে মিম্বরের উপর উপবিষ্ট হন তখন অভ্যাসমত আবদুল্লাহ ইবনে উবাই সেদিনও দাঁড়িয়ে যায় এবং সে কথা বলতে যাবে এমতাবস্থায় কয়েক জন সাহাবী এদিক ওদিক দাঁড়িয়ে যান এবং তার কাপড় ধরে নিয়ে বলে ওঠেনঃ “ওরে আল্লাহর দুশমন! তুই বসে যা। এখন তোর কথা বলার মুখ নেই। তুই যা কিছু করেছিস তা আর কারো কাছে গোপন নেই। তোর আর ঐ যোগ্যতা নেই যে, মন যা চাইবে তাই বলবি।” সে তখন অসন্তুষ্ট হয়ে জনগণের ঘাড়ের উপর দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। সে বলতে বলতে গেলঃ “আমি কি কোন মন্দ কথা বলার জন্যে দাঁড়িয়েছিলাম? আমি তো তাঁর কাজ মযবুত করার উদ্দেশ্যেই দাঁড়িয়েছিলাম।” মসজিদের দরজার উপর কয়েক জন আনসারীর সাথে তার সাক্ষাৎ হলো। তারা তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ব্যাপার কি?” উত্তরে সে বললঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাজকে দৃঢ় করার উদ্দেশ্যেই দাঁড়িয়েছিলাম এমন সময় কয়েকজন সাহাবী আমার উপর লাফিয়ে পড়ে আমাকে টানা-হেঁচড়া করতে শুরু করে এবং আমাকে ধমকাতে থাকে। তাদের ধারণায় আমি যেন কোন মন্দ কথা বলার জন্যে দাঁড়িয়েছিলাম। অথচ আমার উদ্দেশ্য শুধু এই ছিল যে, আমি তাঁর কথা ও কাজেরই পৃষ্টপোষকতা করবো।” একথা শুনে ঐ আনসারীগণ বললেনঃ “ভাল কথা, তুমি ফিরে চল। আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর নিকট আবেদন জানাবো যে, তিনি যেন তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সে তখন বললোঃ “আমার এর কোন প্রয়োজন নেই।”
হযরত কাতাদাহ (রঃ) ও হযরত সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। ঘটনাটি ছিল এই যে, তারই কওমের একজন যুবক মুসলমান তার এ ধরনের কার্যকলাপের কথা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট পৌঁছিয়ে দেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে ডাকিয়ে নেন। সে সরাসরি অস্বীকার করে। সে মিথ্যা শপথও করে। তখন আনসারীগণ ঐ সাহাবীকে তিরস্কার এবং শাসন-গর্জন করেন ও মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করেন। ঐ সময় এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এতে আল্লাহ্ তা’আলা মুনাফিকের মিথ্যা শপথের এবং যুবক সাহাবীটির সত্যবাদীতার বর্ণনা দিয়েছেন। অতঃপর ঐ মুনাফিককে বলা হয়ঃ “চলো, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মাধ্যমে তোমার পাপের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করিয়ে নাও।” তখন সে অস্বীকার করে এবং মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যায়।
হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কোন মনযিলে অবতরণ করলে সেখানে নামায না পড়া পর্যন্ত যাত্রা শুরু করতেন না। তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খবর পেলেন যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলছেঃ “আমরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল ও সম্মানীরা দুর্বল ও লাঞ্ছিতদেরকে বহিষ্কার করবেই।” অর্থাৎ আমরা এই দুর্বল ও মর্যাদাহীন মুহাজিরদেরকে আমাদের শহর মদীনা হতে বের করে দিবো। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দিনের শেষ ভাগে অবতরণের পূর্বেই যাত্রা শুরু করে দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে বলা হয়ঃ “রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে তোমার অপরাধের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর।” তখন আল্লাহ্ তা’আলা (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ ইবনে সীরীন পর্যন্ত তো সঠিক বটে, কিন্তু এটা তাবূকের ঘটনা একথা বলার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে, এমনকি এটা সঠিক কথাই নয়। কেননা, তাবূকের যুদ্ধে তো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই হাযিরই ছিল না, বরং সে তার একটি দল নিয়ে ফিরে গিয়েছিল। কুতুবে। মাগাযী ও সিয়ারের লেখকগণ এ মন্তব্য করেছেন যে, এ মুরীসী যুদ্ধের ঘটনা এবং ???)
এই ঘটনায় হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনে হিব্বান (রঃ), হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আবি বকর (রঃ) এবং হযরত আসিম ইবনে উমার ইবনে কাতাদাহ্ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই যুদ্ধস্থলে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এক জায়গায় অবস্থান করছিলেন। তথায় পানির জায়গার উপর যে জনসমাবেশ ছিল ওর মধ্যে হযরত জাহজাহ ইবনে সাঈদ গিফারী (রঃ) ও হযরত সিনান ইবনে ইয়াযীদ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু ঝগড়া হয়ে যায়। হযরত জাহজাহ (রাঃ) হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর একজন কর্মচারী ছিলেন। ঝগড়া চরম আকার ধারণ করে। হযরত সিনান (রাঃ) সাহায্যের জন্যে আনসারদেরকে আহবান করেন এবং হযরত জাহজাহ্ (রাঃ) আহ্বান করেন মুহাজিরদেরকে। ঐ সময় হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) প্রমুখ আনসারদের একটি দল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর পাশে উববিষ্ট ছিলেন। এই ফরিয়াদ শুনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই বলতে শুরু করেঃ “আমাদের শহরেই এ লোকগুলো আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে দিলো? আমাদের ও এই কুরায়েশদের দৃষ্টান্ত ওটাই যাকে একজন বলেছে- ‘স্বীয় কুকুরকে তুমি মোটা-তাজা কর যাতে সে তোমাকেই কামড় দেয়। আল্লাহর শপথ! আমরা মদীনায় ফিরে গেলে তথা হতে প্রবল দুর্বলকে বহিষ্কার করবেই।” অতঃপর সে তার পাশে উপবিষ্ট লোকদেরকে সম্বোধন করে বলতে শুরু করলোঃ “সব বিপদ তোমরা নিজেরাই নিজেদের হাতে টেনে এনেছো। তোমরা এই মুহাজিরদেরকে তোমাদের শহরে জায়গা দিয়েছে এবং নিজেদের সম্পদের অর্ধাংশ দান করেছে। এখনো যদি তোমরা তাদেরকে আর্থিক সাহায্য না কর তবে তারা সংকটে পড়ে মদীনা হতে বেরিয়ে যাবে।” হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) এসব কথাই শুনলেন। ঐ সময় তিনি অল্প বয়স্ক ছিলেন। তিনি সরাসরি নবী (সাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন। ঐ সময় তাঁর নিকট হযরত উমার ইবনে খাত্তাবও (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। রাগান্বিত হয়ে তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (রঃ)! আমাকে নির্দেশ দিন, আমি তার গদান উড়িয়ে দিই।” তাঁর এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “এ কাজ করলে এটা প্রচারিত হয়ে পড়বে যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজের সঙ্গী-সাথীদেরকেও হত্যা করে থাকেন। এটা ঠিক হবে না। যাও, লোকদেরকে যাত্রা শুরু করার হুকুম দিয়ে দাও।” আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই যখন এ খবর পেলো যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তার কথা জেনে ফেলেছেন তখন সে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো এবং তাঁর দরবারে হাযির হয়ে ওযর-আপত্তি, হীলা-বাহানা করতে লাগলো এবং কথা পাল্টাতে শুরু করলো। আর শপথ করে বলতে লাগলো যে, সে এরূপ কথা কখনো বলেনি। এই লোকটি তার সম্প্রদায়ের মধ্যে খুবই মর্যাদাবান ও প্রভাবশালী ছিল। তাছাড়া লোকেরাও বলতে লাগলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! সম্ভবতঃ এই বালকটিই ভুল বলেছে। সে হয়তো ধারণা করেছে, প্রকৃত ঘটনা হয়তো এটা নয়।” রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সময়ের পূর্বেই এখান হতে তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেন। পথে হযরত উসায়েদ ইবনে হুযায়ের (রাঃ) তাঁর সাথে মিলিত হন এবং তাঁর নবুওয়াতের যথাযোগ্য আদবের সাথে তাঁকে সালাম করেন। অতঃপর আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আজ যে সময়ের পূর্বেই যাত্রা শুরু করেছেন, ব্যাপার কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেনঃ “তোমার কি জানা নেই যে, তোমাদের সঙ্গী আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই বলেছেঃ “মদীনায় পৌঁছে আমরা সম্মানিত ব্যক্তিরা লাঞ্ছিত ব্যক্তিদেরকে অর্থাৎ মুহাজিরদেরকে বহিষ্কার করে দিবো?” তখন হযরত উসায়েদ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! সম্মানিত তো আপনিই, আর লাঞ্ছিত হলো তো সেই। আপনি তার কথাকে মোটেই পরোয়া করবেন না। আসলে মদীনায় আপনার আগমনে সে ক্রোধে ও হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে। মদীনাবাসীরা তাকে নেতা নির্বাচন করার উপর ঐকমত্যে পৌঁছেছিল এবং তার মাথার মুকুটও তৈরী হচ্ছিল। এমতাবস্থায় আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামীন আপনাকে এখানে আনিয়েছেন এবং রাজত্ব তার হাত হতে ছুটে গেছে। কাজেই আপনার উপর সে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছে। হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! চলতে থাকুন।” তাঁরা দুপুরেই যাত্রা শুরু করেছিলেন। সন্ধ্যা হলো, রাত্রি হলো, সকাল হলো, এমনকি রৌদ্রের প্রখরতা এসে গেলে তিনি শিবির স্থাপন করলেন, যাতে জনগণ আব্দুল্লাহ্ ইবনে উবাই-এর ঐ কথায় মুষড়ে না পড়ে। জনগণের ক্লান্তি ও রাত্রি জাগরণ ছিল বলে অবতরণ করা মাত্রই সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। আর এদিকে এই সূরায়ে মুনাফিকূন অবতীর্ণ হয়ে গেল। (এটা সীরাতে ইসহাক নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে ছিলাম। একজন মুহাজির একজন আনসারকে পাথর মেরে দেন। এটাকে কেন্দ্র করে কথা বেড়ে চলে এবং উভয়েই নিজ নিজ দলের নিকট ফরিয়াদ জানান এবং তাঁদেরকে আহ্বান করেন। এতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং বলেনঃ “একি অজ্ঞতার যুগের কাজ-কারবার শুরু করলে তোমরা? এই বেদুঈনী অভ্যাস পরিত্যাগ কর।” আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালূল বলতে লাগলোঃ “এখন মুহাজিরগণ এরূপ করতে শুরু করলো? আল্লাহর কসম! মদীনায় পৌঁছেই আমরা সম্মানীরা এই লাঞ্ছিতদেরকে মদীনা হতে বের করে দিবো।” ঐ সময় মদীনায় আনসারদের সংখ্যা মুহাজিরদের অপেক্ষা বহু গুণে বেশী ছিল। তবে পরবর্তীতে মুহাজিরদের সংখ্যা অনেক হয়ে যায়। হযরত উমার (রাঃ) যখন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর এ কথা শুনতে পেলেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট তাকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে এ কাজ হতে বিরত রাখলেন।” (এ হাদীসটি হাফিয আবূ বকর বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) বলেনঃ “আমি তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই বললোঃ “আমরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল দুর্বলকে বহিষ্কার করবেই।” আমি তার এ কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বর্ণনা করলাম। কিন্তু সে এসে অস্বীকার করে বসলো ও শপথ করলো। ঐ সময় আমার সম্প্রদায় আমাকে বহু কিছু গাল মন্দ দিলো এবং নানা প্রকারে তিরস্কার করলো যে, আমি এরূপ কেন করলাম? আমি দুঃখিত মনে সেখান হতে চলে আসলাম। আমার দুঃখের কোন সীমা থাকলো না। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা তোমার ওযর ও সত্যবাদিতা (সম্পৰ্কীয় আয়াত) অবতীর্ণ করেছেন। ঐ সময় … (আরবি)-এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
মুসনাদে আহমাদে এটা এভাবেও বর্ণিত আছে যে, হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) বলেনঃ “আমি আমার চাচার সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। আমি আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে এ দু’টি কথা বলতে শুনলামঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সহচরদের জন্যে ব্যয় করো না” এবং “তারা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে তথা হতে প্রবল দুর্বলকে বহিষ্কার করবেই।” আমি এটা আমার চাচার নিকট বর্ণনা করি এবং আমার চাচা তা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডেকে পাঠালে সে সম্পূর্ণরূপে কথাগুলো অস্বীকার করে এবং শপথও করে নেয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার কথা সত্য ও আমার কথা মিথ্যা বলে মেনে নেন। আমার চাচাও আমাকে বহু তিরস্কার করেন। আমি এতে এতো বেশী দুঃখিত ও লজ্জিত হই যে, বাড়ী হতে বের হওয়া পরিত্যাগ করি। শেষ পর্যন্ত এই সূরাটি অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার সত্যতা স্বীকার করেন এবং সূরাটি আমাকে পড়ে শুনিয়ে দেন।
মুসনাদে আহমাদের অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, এক সফরে সাহাবীগণ সংকটময় অবস্থায় পতিত হলে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই উপরোক্ত কথা দু’টি বলে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে ডেকে পাঠিয়ে একথা জিজ্ঞেস করলে সে তা অস্বীকার করে এবং শপথ করে বলে যে, সে এরূপ কথা কখনো বলেনি। তখন জনগণ যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-কে মিথ্যাবাদী রূপে সাব্যস্ত করেন। এতে হযরত যায়েদ (রাঃ) খুবই দুঃখিত ও লজ্জিত হন। ঐ সময় আল্লাহ তা’আলা এ সূরাটি অবতীর্ণ করেন। আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তাদেরকে (মুনাফিকদেরকে) ডাকলে তারা মাথা ফিরিয়ে নেয়।
আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদেরকে দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ এই কারণে বলেছেন যে, তারা দৈহিক গঠনের দিক দিয়ে সুন্দর ছিল।
জামে তিরমিযীতে হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “আমরা এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে বের হই। কিছু বেদুঈনও আমাদের সাথে ছিল। পানির জায়গায় তারা প্রথমেই পৌঁছতে চাইতো। অনুরূপভাবে আমরাও ঐ চেষ্টাতেই থাকতাম। একদা একজন বেদুঈন গিয়ে পানি দখল করে নেয় এবং হাউয পূর্ণ করে হাউযের চতুর্দিকে সে পাথর রেখে দেয় এবং উপর হতে চামড়া ছড়িয়ে দেয়। একজন আনসারী এসে ঐ হাউযের মধ্য হতে নিজের উটকে পানি পান করাবার ইচ্ছা করে। বেদুঈন তাকে বাধা দেয়। আনসারী জোরপূর্বক পানি পান করাতে গেলে ঐ বেদুঈন লাঠি দ্বারা আনসারীর মাথায় আঘাত করে। ফলে আনসারীর মাথা জখম হয়। আনসারী আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর লোক ছিল বলে সরাসরি তার কাছে চলে যায় এবং ঘটনাটি বর্ণনা করে। এতে সে ভীষণ রাগান্বিত হয় এবং বলেঃ “এই বেদুঈনদেরকে কিছুই দিয়ো না, তাহলে তারা আপনা আপনি ক্ষুধার জ্বালায় পালিয়ে যাবে। এই বেদুঈনরা আহারের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আসতো এবং খেয়ে নিতো। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তার সঙ্গীদেরকে বললোঃ “তোমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খাদ্য নিয়ে এমন সময় যাবে যখন এই বেদুঈনরা থাকবে না। তিনি তাঁর সঙ্গীদেরকে নিয়ে খাদ্য খেয়ে নিবেন এবং এরা খেতে পাবে না। তখন এরা না খেয়ে খেয়ে আপনা আপনি পালিয়ে যাবে। আর আমরা মদীনায় গিয়ে এ হীন ও ছোট লোকদেরকে মদীনা হতে বের করে দিবো।” আমি আমার চাচার পিছনে বসতাম। আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যা কিছু বললো আমি তার সবই শুনলাম এবং আমার চাচার নিকট বর্ণনা করলাম। আমার চাচা তা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে ডাকিয়ে নিলেন। সে সবকিছুই অস্বীকার করলো এবং শপথও করলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে সত্যবাদী মনে করলেন এবং আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলেন। আমার চাচা আমার কাছে এসে আমাকে বললেনঃ “তুমি এটা করলে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করেছেন। অন্যান্য মুসলমানরাও তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করেছে।’ এ কথা শুনে তো আমার উপর দুঃখের পাহাড় ভেঙ্গে পড়লো। আমি অত্যন্ত দুঃখিত অবস্থায় মাথা নীচু করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে চলছিলাম। অল্পক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার নিকট আসলেন এবং আমার কান ধরলেন। আমি ফিরে তাকিয়ে দেখি যে, তিনি মুচকি হাসছেন। আল্লাহর শপথ! ঐ সময় আমি এতো বেশী খুশী হয়েছিলাম যে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। যদি আমি দুনিয়ার চিরস্থায়ী জীবন লাভ করতাম তবুও এতো খুশী হতে পারতাম না। অতঃপর হযরত আবূ বকর (রাঃ) আমার কাছে এসে আমাকে বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাকে কি বললেন?” আমি উত্তরে বললাম, তিনি কিছুই আমাকে বলেনি, শুধু মুচকি হেসে চলে গেলেন। তখন তিনি বললেনঃ “ঠিক আছে, তুমি খুশী হও।” তাঁর চলে যাওয়ার পরেই হযরত উমার (রাঃ) আমার কাছে আসলেন এবং ঐ প্রশ্নই আমাকে করলেন। আমিও ঐ একই জবাব দিলাম। সকালে সূরায়ে মুনাফিকূন অবতীর্ণ হলো।” অন্য রিওয়াইয়াতে সূরাটি (আরবি) পর্যন্ত পড়াও বর্ণিত আছে।
আবদুল্লাহ ইবনে লাহীআহ (রঃ) এবং মূসা ইবনে উকবাও (রঃ) এই হাদীসটি মাগাযীর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু এ দু’জনের বর্ণনায় সংবাদদাতার নাম আউস ইবনে আকরাম রয়েছে, যে বানু হারেস ইবনে খাযরাজ গোত্রভুক্ত ছিল। তাহলে সম্ভবতঃ হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) ও খবর পৌঁছিয়েছিলেন এবং হযরত আউসও (রাঃ) পৌঁছিয়েছিলেন। আবার এও হতে পারে যে, বর্ণনাকারী নামে ভুল করেছেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়ের (রাঃ) এবং হযরত আমর ইবনে সাবিত আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এটা গাযওয়ায়ে মুরীসীর ঘটনা। এটা ঐ যুদ্ধ যাতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত খালেদ (রাঃ)-কে প্রেরণ করে ‘মানাত’ প্রতিমাকে ভাঙ্গিয়েছিলেন যা কিফা মুশাললাল ও সমুদ্রের মধ্যস্থলে অবস্থিত ছিল। এই যুদ্ধেই দুই জন লোকের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। একজন ছিলেন মুহাজির এবং অন্যজন ছিলেন বাহায় গোত্রের লোক। বাহায গোত্র আনসারদের মিত্র ছিল। বাহযী আনসারদেরকে এবং মুহাজির মুহাজিরদেরকে আহ্বান করে। উভয়পক্ষের কিছু লোক দাঁড়িয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়া শেষ হলে মুনাফিক ও রোগা অন্তরের লোকেরা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর নিকট একত্রিত হয় এবং তাকে বলেঃ “আপনার কাছে তো আমরা বহু কিছু আশা করেছিলাম। আমাদের শত্রুদের ব্যাপারে আপনি ছিলেন আমাদের রক্ষক। এখন তো আপনি একেবারে অকেজো ও কর্ম বিমুখ হয়ে পড়েছেন। এখন না আছে আপনার কোন উপকারের চিন্তা, না ক্ষতির চিন্তা। আপনিই তো এই মুহাজিরদেরকে এতোটা উপরে উঠিয়ে দিয়েছেন? কথায় কথায় তারা আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। নতুন মুহাজিরদেরকে তারা জালাবীব বলতো। আল্লাহর ঐ শত্রু জবাবে বললোঃ “আল্লাহর কসম! আমরা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করলে অবশ্যই প্রবলরা দুর্বলদেরকে বহিষ্কার করবে।” মুনাফিক মালিক ইবনে দাখশান বললোঃ “আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, এদের সঙ্গে সুসম্পর্ক পরিত্যাগ করা হোক, তাহলে তারা আপনা আপনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে?” হযরত উমার (রাঃ) এসব কথা শুনে নেন। তিনি নবী পাক (সাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ লোকদের মধ্যে হাঙ্গামার গোড়া পত্তনকারী এই লোকটির ব্যাপারে আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিই।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “আমি যদি তোমাকে অনুমতি দিই তবে কি তুমি তাকে হত্যা করে ফেলবে?” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “আল্লাহর কসম! এখনই আমি তাকে নিজ হাতে হত্যা করে ফেলবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আচ্ছা, বসে পড়।” ইতিমধ্যে হযরত উসায়েদ ইবনে হুযায়েরও (রাঃ) ঐ কথা বলতে বলতে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকেও ঐ একই প্রশ্ন করলেন এবং তিনিও ঐ একই উত্তর দিলেন। তাঁকেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) বসে যেতে বললেন। এরপর কিছুক্ষণ অতিবাহিত হলে তিনি সকলকে তথা হতে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেন এবং সময়ের পূর্বেই তারা সেখান হতে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তারা ঐ দিন-রাত এবং পরবর্তী দিনের সকাল পর্যন্ত বরাবর চলতেই থাকলেন। যখন রৌদ্র প্রখর হয়ে উঠলো তখন অবতরণের হুকুম করলেন। দ্বিপ্রহর ঢলে পড়ার সাথে সাথেই পুনরায় তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেন। এভাবে চলতে চলতে তৃতীয় দিনের সকাল বেলায় কিফা মুশাললাল হতে মদীনা শরীফে পৌছে গেলেন। হযরত উমার (রাঃ)-কে ডেকে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “আবদুল্লাহ ইবনে উবাইকে হত্যা করার আমি নির্দেশ দিলে সত্যিই কি তুমি তাকে হত্যা করে ফেলতে?” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “নিশ্চয়ই আমি তার মাথা দেহ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতাম।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “যদি তুমি সেই দিন তাকে হত্যা করে ফেলতে তবে বহু লোকের নাক ধূলো-মলিন হয়ে যেতো। কেননা, যদি আমি তাদেরকে বলতাম তবে তারাও তাকে হত্যা করতে মোটেই দ্বিধাবোধ করতো না। তখন লোকদের একথা বলার সুযোগ হয়ে যেতো যে, মুহাম্মাদ (সঃ) স্বীয় সহচরদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে থাকেন। এই ঘটনারই বর্ণনা এই আয়াতগুলোতে রয়েছে।” (এ বর্ণনাটি খুবই গরীব। এতে এমন কতকগুলো চমকপ্রদ কথা রয়েছে, যেগুলোর অন্যান্য রিওয়াইয়াতে নেই)
সীরাতে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকে রয়েছে যে, মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ), যিনি একজন খাঁটি মুসলমান ছিলেন, এই ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি শুনেছি যে, আমার পিতা যে উক্তি করেছে তার প্রতিশোধ হিসেবে আপনি তাকে হত্যা করতে চান। যদি এটা সত্য হয়, তবে তাকে হত্যা করার আদেশ আপনি অন্য কাউকেও দিবেন না। আমিই যাচ্ছি এবং তার কর্তিত মস্তক এনে আপনার পদতলে নিক্ষেপ করছি। আল্লাহর কসম! খাযরাজ গোত্রের প্রত্যেকেই জানে যে, কোন ছেলে তার পিতাকে আমার চেয়ে বেশী শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনকারী নেই। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে আমার প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় পিতাকেও হত্যা করতে প্রস্তুত আছি। যদি আপনি অন্য কাউকেও নির্দেশ দেন এবং সে আমার পিতাকে হত্যা করে তবে আমার ভয় হচ্ছে যে, না জানি হয়তো প্রতিশোধ গ্রহণের নেশায় উন্মত্ত হয়ে তাকে হত্যা করে ফেলবো। আর যদি আমার দ্বারা এ কাজই হয়ে যায় তবে একজন কাফিরের বিনিময়ে একজন মুসলমানকে হত্যা করার অপরাধে আমি জাহান্নামী হয়ে যাবো। সুতরাং এখন আপনি আমার পিতাকে হত্যা করার আদেশ আমাকেই করুন।” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “না, না। আমি তাকে হত্যা করতে চাই না। আমি তো তার সাথে আরো উত্তম ও নম্র ব্যবহার করতে চাই যতক্ষণ সে আমাদের সাথে রয়েছে।”
হযরত ইকরামা (রঃ) ও হযরত ইবনে যায়েদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, সেনাবাহিনীসহ রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন মদীনায় পৌঁছেন তখন ঐ মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই এর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) মদীনা শরীফের দরবার উপর দাঁড়িয়ে যান ও তরবারী তুলে ধরেন। জনগণ মদীনায় প্রবেশ করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত তার পিতা এসে পড়ে। তিনি স্বীয় পিতাকে সম্বোধন করে বলেনঃ “দাঁড়িয়ে যাও, মদীনায় প্রবেশ করো না।” সে বললোঃ “ব্যাপার কি? আমাকে বাধা দিচ্ছ কেন?” হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “তুমি মদীনায় প্রবেশ করতে পার না যে পর্যন্ত না রাসূলুল্লাহ (সঃ) অনুমতি দেন। সম্মানিত তিনিই এবং লাঞ্ছিত তুমিই।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আসলেনঃ তার অভ্যাস ছিল এই যে, তিনি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ অংশে থাকতেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দেখে ঐ মুনাফিক তাঁর কাছে স্বীয় পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার পিতাকে আটক করে রেখেছো কেন?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আপনি অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত আমার পিতাকে আমি মদীনায় প্রবেশ করতে দিবো না।” অতঃপর নবী (সঃ)-এর অনুমতিক্রমে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতাকে মদীনায় প্রবেশ করতে দিলেন।
মুসনাদে হুমাইদীতে রয়ছে যে, হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতাকে বলেনঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি নিজের মুখে একথা না বলবে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হলেন সম্মানিত এবং তুমি লাঞ্ছিত, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাকে আমি মদীনায় প্রবেশ করতে দিবো না। এর পূর্বে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে আরয করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার পিতার অত্যধিক গাম্ভীর্য ও প্রভাবের কারণে আজ পর্যন্ত আমি তার মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করিনি, কিন্তু আপনি যদি তার উপর অসন্তুষ্ট থাকেন তবে আমাকে নির্দেশ দিন, আমি তার মাথা কেটে নিয়ে আপনার নিকট হাযির করছি। অন্য কাউকেও তাকে হত্যা করার নির্দেশ দিবেন না। এমনও হতে পারে যে, আমার পিতৃহন্তাকে আমি চলাফেরা অবস্থায় দেখতে পারবো না।”
(বই#৮৫৭) [মুনাফিক কি?বই নং ২৩]
সুরা: ৬৩ আল-মুনাফিকুন
১-৪ নং আয়াত:-
[اِذَا جَآءَکَ الۡمُنٰفِقُوۡنَ قَالُوۡا
যখন মুনাফিকরা আপনার কাছে আসে তখন তারা বলে,]
www.motaher21.net
Motaher21.net
SEARCH RESULTS FOR: মুনাফিক
(Book# 744)[মুনাফিক কি?বই নং ২২] (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net Sura: 13 Verses :- 25
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 744)[মুনাফিক কি?বই নং ২২] (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ[…]
READ MORE
(Book# 647){মুনাফিক কি? ২১ নং বই} [أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না যে? See they not that they are put in trial?] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 647){মুনাফিক কি? ২১ নং বই} [أَوَلَا يَرَوْنَ أَنَّهُمْ يُفْتَنُونَ মুনাফিক কি লক্ষ্য করে না[…]
READ MORE
Book# 640){মুনাফিক কি? ২০ নং বই}[মসজিদে জিরার।] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 640){মুনাফিক কি? ২০ নং বই}[মসজিদে জিরার।] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ১০৭-১১০ নং আয়াত:-[…]
READ MORE
(Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফেক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 635)[তোমাদের আশপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফেক।]{মুনাফিক কি? ১৯ নং বই} www.motaher21.net সুরা: আত্[…]
READ MORE
(Book# 632)[মুনাফিক কি? ১৮ নং বই]{তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 632)[মুনাফিক কি? ১৮ নং বই]{তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে।} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ[…]
READ MORE
(Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 630)[মুনাফিক কি?১৭ নং বই] {‘শক্তিসামর্থ্য’দ্বারা উদ্দেশ্য সামর্থবান, ধনী শ্রেণির লোক..} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ[…]
READ MORE
(Book# 629)[মুনাফিক কি? ১৬ নং বই] {তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য জানাযার সালাত পড়বেন না।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 629)[মুনাফিক কি? ১৬ নং বই] {তাদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে আপনি কখনো তার জন্য[…]
READ MORE
(Book# 628)[মুনাফিক কি? ১৫ নং বই]{তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং আমার সাথী হয়ে কোন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করবে না।} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 628)[মুনাফিক কি? ১৫ নং বই]{তুমি বল, তোমরা কখনো আমার সাথে বের হবে না এবং[…]
READ MORE
(Book# 627)[মুনাফিক কি? ১৪ নং বই]{ মুনাফিককে আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না।}
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 627)[মুনাফিক কি? ১৪ নং বই]{ মুনাফিককে আল্লাহ কখনই ক্ষমা করবেন না।} www.motaher21.net সুরা: আত্[…]
READ MORE
(Book# 626)[মুনাফিক কি? ১৩ নং বই]{মু’মিনদের নিয়ে কটাক্ষ করা, উপহাস করা ও অপবাদ দেয়া মুনাফিকদের নিদর্শন।}
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 626)[মুনাফিক কি? ১৩ নং বই]{মু’মিনদের নিয়ে কটাক্ষ করা, উপহাস করা ও অপবাদ দেয়া মুনাফিকদের[…]
READ MORE
(Book# 625)[মুনাফিক কি? ১২ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 625)[মুনাফিক কি? ১২ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৭৫-৭৮ নং আয়াত:- مِن[…]
READ MORE
(Book# 624)[কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।]{মুনাফিক কি?বই নং ১১} www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 624)[কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর।]{মুনাফিক কি?বই নং ১১} www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯[…]
READ MORE
(Book# 622)[মুনাফিক কি? ১০ নং বই] www.motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 622)[মুনাফিক কি? ১০ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬৭-৭০ নং আয়াত:- الْمُنَافِقُونَ[…]
READ MORE
(Book# 621)[মুনাফিক কি? ৯ নং বই ]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 621)[মুনাফিক কি? ৯ নং বই ] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬৫- ৬৬[…]
READ MORE
(Book# 620)[মুনাফিক কি? ৮ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 620)[মুনাফিক কি? ৮ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৬১-৬৪ নং আয়াত:- يَحْلِفُونَ[…]
READ MORE
(Book# 618) [মুনাফিক কি? ৭ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 618) [মুনাফিক কি? ৭ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৫৬-৫৯ নং আয়াত:-[…]
READ MORE
(Book# 617)[মুনাফিক কি? ৬ নং বই]
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم (Book# 617)[মুনাফিক কি? ৬ নং বই] www.motaher21.net সুরা: আত্ তাওবাহ সুরা:০৯ ৫০-৫৫ নং আয়াত:- Sura[…]
READ MORE
(Book# 114/١٦٢)-৩৬৪ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। Verily, the hypocrites will be in the lowest depths of the Fire; সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪৪-১৪৭
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٦٢)-৩৬৪ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار নিশ্চয়[…]
READ MORE
(Book# 114/١٦١)-৩৬৩ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ Verily, the hypocrites seek to deceive Allah, but it is He Who deceives them. নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪২-১৪৩
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٦١)-৩৬৩ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ Verily, the[…]
READ MORE
(Book# 114/١٤١)-৩৪৩ www.motaher21.net فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِيَتَيْنِ মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের কী হল যে, তোমরা দু’ দল হয়ে গেলে? What is the matter with you that you are divided into two parties about the hypocrites? সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-৮৮-৯১
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (Book# 114/١٤١)-৩৪৩ www.motaher21.net فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِيَتَيْنِ মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমাদের[…]
READ MORE
(Book# 114/ন) মুনাফিকদের চরিত্র । The character of hypocrites . وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ
The character of hypocrites
READ MORE