أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#870)[Turning away from Allah at Times of Ease.]
Sura:17
Sura: Bony Israyel.
Ayat: 82-84
[ وَ اِذَاۤ اَنۡعَمۡنَا عَلَی الۡاِنۡسَانِ اَعۡرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِہٖ ۚ
When We bestow favor upon the disbeliever, he turns away and distances himself ;]
www.motaher21.net
17:82
وَ نُنَزِّلُ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ مَا ہُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحۡمَۃٌ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۙ وَ لَا یَزِیۡدُ الظّٰلِمِیۡنَ اِلَّا خَسَارًا ﴿۸۲﴾
And We send down of the Qur’an that which is healing and mercy for the believers, but it does not increase the wrongdoers except in loss.
17:83
وَ اِذَاۤ اَنۡعَمۡنَا عَلَی الۡاِنۡسَانِ اَعۡرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِہٖ ۚ وَ اِذَا مَسَّہُ الشَّرُّ کَانَ یَــُٔوۡسًا ﴿۸۳﴾
And when We bestow favor upon the disbeliever, he turns away and distances himself; and when evil touches him, he is ever despairing.
17:84
قُلۡ کُلٌّ یَّعۡمَلُ عَلٰی شَاکِلَتِہٖ ؕ فَرَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ہُوَ اَہۡدٰی سَبِیۡلًا ﴿٪۸۴﴾
Say, “Each works according to his manner, but your Lord is most knowing of who is best guided in way.”
Tafsir Ibne Kasir Said:-
The Qur’an is a Cure and a Mercy
Allah tells:
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْانِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُوْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا
And We send down of the Qur’an that which is a cure and a mercy to the believers, and it increases the wrongdoers in nothing but loss.
Allah tells us that His Book, which He has revealed to His Messenger Muhammad, the Qur’an to which falsehood cannot come, from before it or behind it, (it is) sent down by the All-Wise, Worthy of all praise, is a cure and a mercy for the believers, meaning that it takes away whatever is in their hearts of doubt, hypocrisy, Shirk, confusion and inclination towards falsehood. The Qur’an cures all of that.
It is also a mercy through which one attains faith and wisdom and seeks goodness. This is only for those who believe in it and accept it as truthful, it is a cure and a mercy only for such people.
As for the disbeliever who is wronging himself by his disbelief, when he hears the Qur’an, it only makes him further from the truth and increases him in his disbelief. The problem lies with the disbeliever himself, not with the Qur’an, as Allah says:
قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدًى وَشِفَأءٌ وَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ فِى ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى أُوْلَـيِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ
Say:”It is for those who believe, a guide and a cure. And as for those who disbelieve, there is heaviness in their ears, and it is blindness for them. They are those who are called from a place far away (so they neither listen nor understand).” (41:44)
وَإِذَا مَأ أُنزِلَتْ سُورَةٌ فَمِنْهُمْ مَّن يَقُولُ أَيُّكُمْ زَادَتْهُ هَـذِهِ إِيمَـناً فَأَمَّا الَّذِينَ ءامَنُواْ فَزَادَتْهُمْ إِيمَـناً وَهُمْ يَسْتَبْشِرُونَ
وَأَمَّا الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَتْهُمْ رِجْسًا إِلَى رِجْسِهِمْ وَمَاتُواْ وَهُمْ كَـفِرُونَ
And whenever there comes down a Surah, some of them (hypocrites) say:”Which of you has had his faith increased by it!”
As for those who believe, it has increased their faith, and they rejoice. But as for those in whose hearts is a disease, it will add suspicion and doubt to their suspicion, disbelief and doubt; and they die while they are disbelievers. (9:124-125)
And there are many other similar Ayat.
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْانِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُوْمِنِينَ
And We send down of the Qur’an that which is a cure and a mercy to the believers,
Qatadah said,
“When the believer hears it, he benefits from it and memorizes it and understands it.”
وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا
and it increases the wrongdoers in nothing but loss.
They do not benefit from it or memorize it or understand it, for Allah has made this Qur’an a cure and a mercy for the believers
Turning away from Allah at Times of Ease and despairing at Times of Calamity
Allah tells:
وَإِذَا أَنْعَمْنَا عَلَى الاِنسَانِ أَعْرَضَ وَنَأَى بِجَانِبِهِ وَإِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ يَوُوسًا
And when We bestow Our grace on man, he turns away and becomes arrogant. And when evil touches him, he is in great despair.
Allah tells us about the weakness that is inherent in man, except for those whom He protects at both times of ease and calamity. If Allah blesses a man with wealth, good health, ease, provision and help, and he gets what he wants, he turns away from the obedience and worship of Allah, and becomes arrogant.
Mujahid said,
“(It means) he goes away from Us.”
I say, this is like the Ayah:
فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَأ إِلَى ضُرٍّ مَّسَّهُ
But when We have removed his harm from him, he passes on as if he had never invoked Us for a harm that touched him! (10:12)
and;
فَلَمَّا نَجَّـكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ
But when He brings you safe to land, you turn away. (Ayah 67)
When man is stricken with evil, which means disasters, accidents and calamities,
كَانَ يَوُوسًا
he is in great despair,
meaning that he thinks he will never have anything good again.
As Allah says,
وَلَيِنْ أَذَقْنَا الاِنْسَـنَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَيُوسٌ كَفُورٌ
وَلَيِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَأءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّيَاتُ عَنِّي إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ وَعَمِلُواْ الصَّـلِحَاتِ أُوْلَـيِكَ لَهُمْ مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
And if We give man a taste of mercy from Us, and remove it from him, verily, He is despairing, ungrateful. But if We let him taste good after evil has touched him, he is sure to say:”Ills have departed from me.”
Surely, he is exultant, and boastful. Except those who show patience and do righteous good deeds:those, theirs will be forgiveness and a great reward. (11:9-11).
قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَى شَاكِلَتِهِ
Say:”Each one does according to Shakilatihi…”
Ibn `Abbas said,
“According to his inclinations.”
Mujahid said,
“According to his inclinations and his nature.”
Qatadah said,
“According to his intentions.”
Ibn Zayd said,
“According to his religion.”
All these suggestions are close in meaning.
This Ayah – and Allah knows best – is a threat and a warning to the idolators, like the Ayah:
وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ اعْمَلُواْ عَلَى مَكَانَتِكُمْ
And say to those who do not believe:”Act according to your ability and way.” (11:121)
So Allah says:
قُلْ كُلٌّ يَعْمَلُ عَلَى شَاكِلَتِهِ فَرَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَنْ هُوَ أَهْدَى سَبِيلً
Say:”Each one does according to Shakilatihi, and your Lord knows best of him whose path is right.”
meaning either us or you. Everyone will be rewarded in accordance with his deeds, for nothing whatsoever is hidden from Allah
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৭০)[মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন আমি তাকে নিয়ামত দান করি তখন সে গর্ব করে।]
সুরা: আল্ বনি ইসরাইল
সুরা:১৭
৮২-৮৪ নং আয়াত:-
[ وَ اِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَى الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ١ۚ
মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন আমি তাকে নিয়ামত দান করি তখন সে গর্ব করে ও পিঠ ফিরিয়ে নেয়।]
www.motaher21.net
সুরা: বনী ইসরাঈল
আয়াত নং :-৮২
وَ نُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَآءٌ وَّ رَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِیْنَ١ۙ وَ لَا یَزِیْدُ الظّٰلِمِیْنَ اِلَّا خَسَارًا
আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যা বিশ্বাসীদের জন্য আরোগ্য ও করুণা, কিন্তু তা সীমালংঘনকারীদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।
আয়াত নং :-৮৩
وَ اِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَى الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ١ۚ وَ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ یَئُوْسًا
মানুষের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যখন আমি তাকে নিয়ামত দান করি তখন সে গর্ব করে ও পিঠ ফিরিয়ে নেয় এবং যখন সামান্য বিপদের মুখোমুখি হয় তখন হতাশ হয়ে যেতে থাকে।
আয়াত নং :-৮৪
قُلۡ کُلٌّ یَّعۡمَلُ عَلٰی شَاکِلَتِہٖ ؕ فَرَبُّکُمۡ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ہُوَ اَہۡدٰی سَبِیۡلًا ﴿٪۸۴﴾
বলুন, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে এবং আপনার রব সম্যক অবগত আছেন চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল।‘
৮২-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
মু’মিনদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে শিফা বা আরোগ্য লাভের মাধ্যম ও রহমতস্বরূপ নাযিল করেছেন। এটা শুধু মু’মিনদের জন্য সীমাবদ্ধ, কোন কাফির বা মুশরিক তা পাবে না। যেমন সূরা তাওবার ১২৪-১২৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কুরআন দুপ্রকার চিকিৎসাই দিয়ে থাকে (১) অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসা যাদের অন্তরে সংশয়-সন্দেহ, নিফাকী, অজ্ঞতা ও খারাপ কাজের প্রতি লালসা রয়েছে কুরআন তাদের যথার্থ চিকিৎসা দিয়েছে। একজন ব্যক্তি কুরআনের এ চিকিৎসা যথাযথভাবে গ্রহণ করলে অন্তরের ব্যাধি ভাল হয়ে যাবে। (২) শারীরিক চিকিৎসা যেমন কুরআন দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা। এ ব্যাপারে সে প্রসিদ্ধ ঘটনা উল্লেখ্য যেখানে সাহাবীরা সূরা ফাতিহার মাধ্যমে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে সাপেকাটা ব্যক্তির চিকিৎসা করেছিলেন। ফলে সে ব্যক্তি সুস্থ হয়েছিল এবং তারা সে কাজের বিনিময়ে এক পাল বকরী নিয়েছিলেন। সূরা ফাতিহার ফযীলতে তা বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (عليه السلام)-এর একটি কিতাব রয়েছে “তিব্বুন নাবাবী”। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের ৫৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। তবে কুরআনের তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখলে আরোগ্য লাভ করা যাবে না। এতে আরোগ্য হলেও তা হবে শয়তানের আরোগ্য, কুরআনের আরোগ্য নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবীজ ব্যবহার করা শিরক বলে উল্লেখ করেছেন। সেখানে কুরআনের তাবীজ আর অন্য তাবীজের মাঝে পার্থক্য উল্লেখ করেননি। (মুসনাদ আহমাদ হা: ১৭৪২২, সহীহ)
কিন্তু যারা কাফির-মুশরিক তাদের জন্য কুরআন ক্ষতিই নিয়ে আসে। দুনিয়াতেও তাদের ক্ষতি আখিরাতেও তাদের ক্ষতি।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের একটি বদ অভ্যাসের কথা উল্লেখ করছেন যে, যদি মানুষকে কল্যাণ দান করা হয়, যেমন কোন সম্পদ বা মূল্যবান কিছু দেয়া হয় তখন সে খুবই অহংকারী হয়ে পড়ে এবং আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে যেয়ে নিজের আত্মগরীমা প্রকাশ করে। আবার যখন অমঙ্গল স্পর্শ করে তখন সে নিরাশ হয়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَإِذَآ أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً فَرِحُوْا بِهَا ط وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌۭ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيْهِمْ إِذَا هُمْ يَقْنَطُوْنَ)
“আর যখন মানুষকে রহমতের স্বাদ ভোগ করাই, তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়, আর যদি তাদের কাজ-কর্মের দরুন তাদের ওপর কোন বিপদ আসে, তবে তখনই তারা নিরাশ হয়ে পড়ে।” (সূরা রূম ৩০:৩৬)
এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের ১২ এবং সূরা হুদের ৯ ও ১০ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
شاكلة মুজাহিদ বলেন: এর অর্থ স্বভাব; কাতদাহ বলেন: নিয়ত, মুকাতিল বলেন: প্রকৃতি। এছাড়াও অনেক অর্থ রয়েছে তবে সবগুলোর অর্থই কাছাকাছি। যার মোট কথা হল: প্রত্যেক মানুষ তার প্রকৃতি, স্বভাব ও অবস্থানুপাতে আমল করে। যদি সে সৎ ও স্বচ্ছ হৃদয়ের অধিকারী হয় তাহলে তার আমলগুলো আল্লাহ তা‘আলার জন্য হয়, আর যদি বদস্বভাব ও খারাপ প্রকৃতির হয় তাহলে তার আমলগুলো সেরূপ হয়ে যায়। এখানে মু’মিনদের প্রশংসা ও কাফিরদের তিরস্কার করা হয়েছে। এরূপ আলোচনা সূরা হূদ এর ১২১-১২২ নং আয়াতে করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআন মু’মিনদের জন্য চিকিৎসা ও রহমতস্বরূপ।
২. সুখের পর দুঃখ আসলে তাতে নিরাশ হওয়া যাবে না।
৩. প্রত্যেককে তার কাজ অনুপাতে ফলাফল দেয়া হবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
#কোরআন মােমেনদের জন্যে রহমত ও নিরাময় : এরপর আলােচনা এসেছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন সম্পর্কে। বলা হয়েছে, সংশয়-সন্দেহ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বের উপসম হয় পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে। কারণ এই কোরআন আল্লাহর সাথে মানব-হৃদয়ের সংযােগ স্থাপন করে। ফলে হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, নিরাপত্তাবােধ জন্ম নেয়। আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি ও আস্থা বােধ জন্ম নেয়। তখন মানুষ জীবনের প্রতি আগ্রহ খুঁজে পায়। আমরা জানি উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা হচ্ছে একটি রােগ। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব হচ্ছে এক প্রকার মানসিক প্রবঞ্চনা। অপর দিকে সংশয় সন্দেহ হচ্ছে একটা কঠিন ব্যাধি। এসব মানসিক রোগ-ব্যাধির ক্ষেত্রে মুমিন বান্দাদের জন্যে পবিত্র কোরআন হচ্ছে সত্যিই এক খােদায়ী রহমত। চিন্তা-চেতনার বৈকল্যের নিরাময়ও রয়েছে এই পবিত্র কোরআনেই। কারণ, পবিত্র কোরআন মানব মস্তিষ্ক অলীক ধ্যান-ধারণার কবল থেকে রক্ষা করে। যা কল্যাণকর ও ফলপ্রসূ সেসব বিষয়ে চিন্তা-ফিকির করার পূর্ণ স্বাধীনতা দান করে, আর যেসব বিষয় অনর্থক ও অনাকাঙ্খিত সেগুলাে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে বারণ করে। চিন্তার ক্ষেত্রে একটি সুষ্ঠু ও যথার্থ পদ্ধতির অধীনে মস্তিষ্ক পরিচালনা করে। ফলে এর প্রতিটি কর্মকাণ্ড হয় অর্থপূর্ণ ও গঠনমূলক। এতে অলীক ধ্যান-ধারণা ও আকাশ-কুসুম চিন্তা-চেতনার কোনাে অবকাশ থাকে না। চিন্তা শক্তিকে একটা নিয়মের অধীনে এবং প্রয়ােজন অনুসারে ব্যয় করতে নির্দেশ দেয় বলেই তা সুস্থ ও সবল থাকে, অর্থপূর্ণ ও কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। কাজেই পবিত্র কোরআন এদিক থেকেও মােমেন বান্দাদের জন্যে রহমত স্বরূপ। কাম-ক্রোধ, লােভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও শয়তানী প্ররােচনার চিকিৎসাও রয়েছে এই পবিত্র কোরআনেই। কারণ, এগুলাে হচ্ছে অন্তরের রােগ। এই রােগে আক্রান্ত হলে মানুষের অন্তর দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কাজেই পবিত্র কোরআন এদিক থেকেও মােমেন বান্দাদের জন্যে রহমত স্বরূপ। যে সকল সামাজিক ব্যাধি সমাজের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দেয় এবং সমাজের শান্তি শৃংখলা ও নিরাপত্তাকে বিনষ্ট করে দেয় সে সব ব্যাধির চিকিৎসাও এই পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। কারণ, কোরআনভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা ও সামাজিক ন্যায় বিচারের অধীনে মানব গােষ্ঠী সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারে, নিরাপত্তা লাভ করতে পারে। কাজেই পবিত্র কোরআন এদিক থেকেও মােমেন বান্দার জন্যে রহমত স্বরূপ। তবে যারা অত্যাচারী ও সীমালঙ্ঘনকারী, তারা এই পবিত্র কোরআন থেকে কোনাে ভাবেই উপকৃত হতে পারে না। বরং এর দ্বারা তাদের ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পায়। এ কথাই আলােচ্য আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, (দেখাে) আমি কোরানে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে (সমস্ত মানসিক রােগের) উপসমকারী ও রহমত (স্বরূপ;) কিন্তু এসত্তেও তা যালেমদের জন্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের রহমত ও বরকত এবং এর কল্যাণকর প্রভাব থেকে এরা বঞ্চিত। শুধু তাই নয়, বরং এই কোরআনের বদৌলতে মােমেনরা যে বিজয় ও সফলতা লাভ করে তার কারণে ওরা ভীষণ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। হিংসা-বিদ্বেষ ও আত্মগরিমার বশবর্তী হয়ে ওরা যুলুম-অত্যাচার, নৈরাজ্য ও বিশৃংখলায় লিপ্ত হয়। কারণ, পৃথিবীর বুকে তারা এই পবিত্র কোরআনের ধারক ও বাহকদের দ্বারা পরাস্ত । তারা ক্ষতিগ্রস্ত। পরকালেও তারা নিজেদের কুফুরী, নাফরমানী এবং অনাচার ও অবিচারের কারণে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। কাজেই তারা সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত।
# মানুষ যখন পবিত্র কোরআনের রহমত, বরকত এবং এর কল্যাণকর প্রভাব থেকে বঞ্চিত হয়ে নিজের নফস বা খেয়াল-খুশীর হাতে বন্দী হয়ে পড়ে তখন সে সুখ-সাচ্ছন্দে অহংকারী হয়ে ওঠে আল্লাহকে ভুলে যায় এবং তার নেয়ামতকে অস্বীকার করে। আর যখন বিপদে পড়ে এবং দুঃখ কষ্টের সম্মুখীন হয় তখন হতাশ হয়ে পড়ে, চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে থাকে, জীবনের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে পড়ে। এ কথাই পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যখন আমি মানুষদের ওপর কোনােরকম অনুগ্রহ করি তখন তারা কৃতজ্ঞতার বদলে আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং (অহংকারে) দূরে সরে যায় আবার যখন (কোনােরকম) কষ্ট মুসিবত তাকে স্পর্শ করে তখন সে (একেবারে) নিরাশ হয়ে পড়ে'(আয়াত ৮৩)। অর্থাৎ সুখ-সাচ্ছন্দ ও নেয়ামত লাভ করার পর যদি মানুষ প্রকৃত দাতা আল্লাহকে স্মরণ না করে, তার শােকর আদায় না করে তাহলে এই সুখ-সাচ্ছন্দই থাকে অহংকার ও অনাচারে লিপ্ত করে। তদ্রুপ আল্লাহর সাথে যদি কারাে সম্পর্ক না থাকে, তার প্রতি যদি কারও দৃঢ় বিশ্বাস ও আস্থা না থাকে তাহলে বিপদে পড়লেই সে অধৈর্য হয়ে পড়বে, হতাশ ও নিরাশ হয়ে পড়বে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস থাকলে, তার প্রতি দৃঢ় আস্থা থাকলে বিপদের মুহূর্তে মানুষ আশার আলাে দেখতে পায়, মনে সাহস খুঁজে পায়, আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে আশাবাদী হয়। ফলে সে বিচলিত না হয়ে অধৈর্য না হয়ে বরং শান্ত থাকে এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকে। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, সুখ-সাচ্ছন্দে এবং বিপদে-আপদে ঈমানের মূল্য কতােটুকু, এর গুরুত্ব কতটুকু।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# যারা এ কুরআনকে নিজেদের পথপ্রদর্শক এবং নিজেদের জন্য আইনের কিতাব বলে মেনে নেয়, তাদের জন্য তো এটি আল্লাহর রহমত এবং তাদের যাবতীয় মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক ও তামাদ্দুনিক রোগের নিরাময়। কিন্তু যেসব জালেম একে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পথনির্দেশনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করে এ কুরআন তাদেরকে এর নাযিল হবার বা একে জানার আগে তারা যে অবস্থায় ছিল তার ওপরও টিকে থাকতে দেয় না। বরং তাদেরকে আরো বেশী ক্ষতির মধ্যে ঠেলে দেয়। এর কারণ, যতদিন কুরআন আসেনি অথবা যতদিন তারা কুরআনের সাথে পরিচিত হয়নি ততদিন তাদের ক্ষতি ছিল নিছক মূর্খতা ও অজ্ঞতার ক্ষতি।
কিন্তু যখন কুরআন তাদের সামেন এসে গেলো এবং সে হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেখিয়ে দিল তখন তাদের ওপর আল্লাহর দাবী অকাট্যভাবে সঠিক প্রমাণিত হয়ে গেলো। এখন যদি তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে গোমরাহীর ওপর অবিচল থাকার জন্য জোর দেয় তাহলে এর অর্থ হয় তারা অজ্ঞ নয় বরং জালেম ও বাতিল পন্থী এবং সত্যের প্রতি বিরূপ। এখন তাদের অবস্থা হবে এমন ব্যক্তির মতো যে বিষ ও বিষের প্রতিষেধক উভয়টি দেখে বিষকে বেছে নেয়। নিজেদের গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার জন্য এখন তারা নিজেরাই হয় পুরোপুরি দায়ী এবং এরপর তারা যে কোন পাপ করে তার পূর্ণ শাস্তির অধিকারীও তারাই হয়। এটি অজ্ঞতার নয় বরং জেনে শুনে দুষ্টামি ও দুষ্কৃতিতে লিপ্ত হওয়ার ক্ষতি এবং অজ্ঞতার ক্ষতির চাইতে এর পরিমাণ বেশী হওয়া উচিত। একথাটিই নবী ﷺ একটি ছোট তাৎপর্যবহ বাক্যের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ (আরবী—————————) অর্থাৎ কুরআন হয় তোমার সপক্ষে প্রমাণ আর নয়তো তোমার বিপক্ষে প্রমাণ।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
#যে কিতাবে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই, মহান আল্লাহ তাঁর সেই কিতাব সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, এই কিতাব অর্থাৎ কুরআন ঈমানদারদের অন্তরের রোগসমূহের জন্যে উপশান্তি স্বরূপ। সন্দেহ, কপটতা, শিরক, বক্রতা, মিথ্যার সংযোগ ইত্যাদি সব কিছু এর মাধ্যমে বিদূরিত হয়। ঈমান, হিকমত, কল্যাণ, করুণা, সৎকার্যের প্রতি উৎসাহ ইত্যাদি -এর দ্বারা লাভ করা যায়। যে কেউই এর উপর ঈমান আনবে, একে সত্য মনে করে এর অনুসরণ করবে, এ কুরআন তাকে আল্লাহর রহমতের নীচে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে। পক্ষান্তরে, যে অত্যচারী হবে এবং একে অস্বীকার করবে সে আল্লাহর থেকে দূরে সরে পড়বে। কুরআন শুনে তার কুফরী আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং এই বিপদ স্বয়ং কাফিরের পক্ষ থেকে তার কুফরীর কারণেই ঘটে থাকে, কুরআনের পক্ষ থেকে নয়। এতে সরাসরি রহমত ও উপশান্তি। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ!) তুমি বলে দাওঃ এটা (কুরআন) মু’মিনদের জন্যে হিদায়াত ও উপশান্তি, আর বেঈমানদের কর্ণে বধিরতা ও চোখে অন্ধত্ব রয়েছে, এদেরকে তো বহু দূর থেকে ডাক দেয়া হয়ে থাকে।” (৪১:৪৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ
অর্থাৎ “যখনই কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন একদল প্রশ্ন করতে শুরু করে দেয়ঃ এটা তোমাদের কারো ঈমান বর্ধিত করেছে কি? জেনে রেখো যে, এতে ঈমানদারদের ঈমান তো বৃদ্ধি পেয়ে থাকে এবং তারা আনন্দিত ও প্রফুল্ল হয়, আর যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে তাদের মলিনতা আরো বৃদ্ধি পায় এবং তারা মৃত্যু পর্যন্ত কুফরীর উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকে।” (৯:১২৪-১২৫) এই বিষয়ের আরো আয়াত রয়েছে। মোট কথা, মু’মিন এই পবিত্র কিতাব শুনে উপকার লাভ করে থাকে। সে একে মুখস্থ করে এবং মনে রাখে। আর অবিবেচক লোক এর দ্বারা কোন উপকারও পায় না, একে মুখস্থও করে না। এর রক্ষণা বেক্ষণাও করে না। আল্লাহ একে উপশান্তি ও রহমত বানিয়েছেন শুধু মাত্র মুমিনদের জন্যে।
# ৮৩-৮৪ নং আয়াতের তাফসীর
ভাল ও মন্দ কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে মানুষের যে অভ্যাস রয়েছে, কুরআন কারীমের এই আয়াতে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। মানুষের অভ্যাস এই যে, সে মাল, দৈহিক সুস্থতা, বিজয়, জীবিকা, সাহায্য, পৃষ্ঠপোষকতা, স্বচ্ছলতা এবং সুখ শান্তি পেলেই চক্ষু ফিরিয়ে নেয় এবং আল্লাহ হতে দূরে সরে পড়ে। দেখে মনে হয় যেন সে কখনো বিপদে পড়ে নাই বা পড়বেও না।
পক্ষান্তরে যখন তার উপর কষ্ট ও বিপদ-আপদ এসে পড়ে তখন সে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে এবং মনে করে যে, সে আর কখনো কল্যাণ, মুক্তি ও সুখ-শান্তি লাভ করবেই না। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যখন আমি মানুষকে আমার করুণার স্বাদ গ্রহণ করাই, অতঃপর তা তার থেকে টেনে নিই, তখন সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হয়ে যায়। আর যদি তাকে বিপদ-আপদ স্পর্শ করার পর আমি তাকে নিয়ামতের স্বাদ গ্রহণ করাই, তখন সে বলেঃ বিপদ-আপদ আমা থেকে দূর হয়ে গেছে, তখন সে আনন্দিত ও অহংকারী হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা ধৈর্য ধারণ করে ও সৎ কার্যাবলী সম্পাদন করে তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও বড় প্রতিদান।” (১১:৯-১১)
আল্লাহ পাক বলেনঃ প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে চলার পথে কে সর্বাপেক্ষা নির্ভুল তা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। এতে মুশরিকদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। তারা যে নীতির উপর কাজ করে যাচ্ছে এবং ওটাকেই সঠিক মনে করছে, কিন্তু এটা যে, সঠিক পন্থা নয় তা তারা আল্লাহ তাআলার কাছে গিয়ে জানতে পারবে। তারা যে পথে রয়েছে। তা যে কত বড় বিপজ্জনক পথ তা সেইদিন তারা বুঝতে পারবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি বেঈমানদেরকে বলে দাওঃ আচ্ছা ঠিক আছে, তোমরা নিজের জায়গায় কাজ করে যাও (শেষ পর্যন্ত)।” প্রতিদানের সময় এটা নয়, এটা হবে কিয়ামতের দিন। সেই দিনই হবে পাপ ও পূণ্যের পার্থক্য। ঐদিন সবাই নিজনিজ কৃতকর্মের প্রতিদান পেয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছুই গোপন নেই।