أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৮৯)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৫৫-৫৯ নং আয়াত:-
[مَاۤ اُنۡذِرُوۡا ہُزُوًا ﴿۵۶﴾
সে সবকে বিদ্রূপের বিষয়রূপে গ্রহণ করে থাকে।]
www.motaher21.net
وَ مَا مَنَعَ النَّاسَ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡۤا اِذۡ جَآءَہُمُ الۡہُدٰی وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّہُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ تَاۡتِیَہُمۡ سُنَّۃُ الۡاَوَّلِیۡنَ اَوۡ یَاۡتِیَہُمُ الۡعَذَابُ قُبُلًا ﴿۵۵﴾
যখন মানুষের কাছে পথ-নির্দেশ আসে, তখন এই প্রতীক্ষাই তাদেরকে বিশ্বাস স্থাপন হতে ও তাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা হতে বিরত রাখে যে, তাদের পূর্ববর্তীদের অবস্থা তাদের নিকট উপস্থিত হবে অথবা উপস্থিত হবে (সরাসরি) বিবিধ শাস্তি।
وَ مَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ ۚ وَ یُجَادِلُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِالۡبَاطِلِ لِیُدۡحِضُوۡا بِہِ الۡحَقَّ وَ اتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَ مَاۤ اُنۡذِرُوۡا ہُزُوًا ﴿۵۶﴾
আমি শুধু সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই রসূলদেরকে পাঠিয়ে থাকি, কিন্তু সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা মিথ্যা অবলম্বনে বিতন্ডা করে; যাতে তার দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়। আর তারা আমার নিদর্শনাবলী ও যার দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, সে সবকে বিদ্রূপের বিষয়রূপে গ্রহণ করে থাকে।
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ ذُکِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّہٖ فَاَعۡرَضَ عَنۡہَا وَ نَسِیَ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰہُ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ اَکِنَّۃً اَنۡ یَّفۡقَہُوۡہُ وَ فِیۡۤ اٰذَانِہِمۡ وَقۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَدۡعُہُمۡ اِلَی الۡہُدٰی فَلَنۡ یَّہۡتَدُوۡۤا اِذًا اَبَدًا ﴿۵۷﴾
কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তবে তার অপেক্ষা অধিক সীমালংঘনকারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়েছি; যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা সৃষ্টি করেছি। তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথ পাবে না।
وَ رَبُّکَ الۡغَفُوۡرُ ذُو الرَّحۡمَۃِ ؕ لَوۡ یُؤَاخِذُہُمۡ بِمَا کَسَبُوۡا لَعَجَّلَ لَہُمُ الۡعَذَابَ ؕ بَلۡ لَّہُمۡ مَّوۡعِدٌ لَّنۡ یَّجِدُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖ مَوۡئِلًا ﴿۵۸﴾
তোমার প্রতিপালক পরম ক্ষমাশীল, দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য তিনি তাদেরকে পাকড়াও করলে তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহূর্ত; যা হতে তাদের কোন আশ্রয়স্থল নেই।
وَ تِلۡکَ الۡقُرٰۤی اَہۡلَکۡنٰہُمۡ لَمَّا ظَلَمُوۡا وَ جَعَلۡنَا لِمَہۡلِکِہِمۡ مَّوۡعِدًا ﴿٪۵۹﴾
ঐসব জনপদ; তাদের অধিবাসীবৃন্দকে আমি ধ্বংস করেছিলাম, যখন তারা সীমালংঘন করেছিল এবং তাদের ধ্বংসের জন্য আমি স্থির করেছিলাম এক নির্দিষ্ট ক্ষণ।
৫৫-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৫-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মানুষের কাছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ, ঈমানের পথ ও কুফরীর পথের পার্থক্য নির্ণয়ক হিদায়াত নিয়ে আসার পরেও ঈমান আনে না এবং পূর্বের অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে না। কারণ হল তারা সীমালংঘণকারী ও অবাধ্য, তারা বাকীতে বিশ্বাসী নয়। তবে তারা ঈমান আনবে যদি পূর্ববর্তীদের মত তাদের ওপরেও আল্লাহ তা‘আলার সুন্নাত চলে আসে। অর্থাৎ ঈমান না আনার কারণে পূর্ববর্তীদের ওপর যেমন শাস্তি এসেছিল, শাস্তি দেখে ঈমান এনেছিল, এরাও সে অপেক্ষা করছে। অথবা সরাসরি শাস্তি আসলে ঈমান আনবে কিন্তু তখন ঈমান এনে কোন লাভ হবে না। যেমন শাস্তির কবলে পড়ে ফির‘আউন মুমূর্ষু অবস্থায় ঈমান এনেছিল, কিন্তু তার ঈমান কাজে আসেনি তেমনি মানুষ শাস্তি প্রত্যক্ষ করার পর মুমূর্ষু অবস্থায় ঈমান আনলে তা কাজে আসবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ السَّيِّاٰتِ ج حَتّٰيٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّيْ تُبْتُ الْئٰنَ)
“আর তাদের জন্য কোন তাওবাহ কবূল করা হয় না যারা পাপ কাজ করতেই থাকে এমনকি তাদের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে আমি এখন তাওবা করছি।” (সূরা নিসা ৪:১৮)
(مُبَشِّرِيْنَ وَمُنْذِرِيْنَ)
অর্থাৎ প্রত্যেক রাসূল দুটি জিনিস নিয়ে আগমন করেছেন এক, যারা তার অনুসারী হবে, ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের জন্য রাসূল জান্নাতের সুসংবাদ দেবেন। আর যারা অবাধ্য হবে ঈমান ও আমলের পরওয়া করবে না তাদের জন্য জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করবেন।
ادحض-يدحض
অর্থ বাতিল করা, ব্যর্থ করা, নস্যাৎ করা। অর্থাৎ কাফিরদের কাছে সত্য আগমন করলে তারা বাতিল কথা-বার্তা ও চিন্তা-চেতনা দিয়ে সত্যকে ব্যর্থ করা ও নস্যাৎ করার জন্য তর্ক-বিতর্ক করতো। আর তারা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন এবং যে বিষয়ে তাদেরকে ভয় দেখানো হত তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রƒপ করতো। যেমন হাজ্জ ও হাজ্জের স্থান আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন, আযান আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন নিদর্শন, এরূপ শরীয়তের সব আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন ও রাসূলরা যেসব বিষয়ে ভয় দেখাতেন তা নিয়ে ঠাট্টা করা যেমন জান্নাত-জাহান্নাম বলতে কিছু নেই, কবরের শাস্তি বলতে কিছু নেই, এরূপ গায়েবের সকল কিছু এর মধ্যে শামিল। এ সকল নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে থাকে একমাত্র কাফিররাই। কোন মুসলিম এসব ইসলামের কোন নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করলে তার ঈমান থাকবে না। সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
অতঃপর আল্লাহ দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জালিমের পরিচয় দিয়ে বলেন: সবচেয়ে বড় জালিম হল তারা যাদেরকে আমাদের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরেও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ইতোপূর্বে যে সকল অপরাধ করেছে তা স্মরণই করে না। মূলত এদের অন্তর আল্লাহ তা‘আলা আচ্ছাদিত করে দিয়েছেন এবং কানে পর্দা দিয়েছেন। ফলে তারা সত্য অনুধাবণ করতে পারে না এবং শুনতেও পায় না। তাদেরকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করলে তারা হিদায়াতের দিকে আসবে না।
(لَوْ يُؤَاخِذُهُمْ بِمَا كَسَبُوْا)
অর্থাৎ মানুষ যে অপরাধসমূহ করে থাকে আল্লাহ তা‘আলা যদি দয়াময় না হতেন তাহলে অপরাধের শাস্তি দুনিয়াতেই তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতেন। যেহেতু বিচার ফায়সালার একটি নির্দিষ্ট সময়ের ওয়াদা দেয়া আছে তাই দিচ্ছেন না। مَوْئِلً শব্দের অর্থ আশ্রয়স্থল।
(وَتِلْكَ الْقُرٰٓي أَهْلَكْنٰهُمْ)
এ থেকে ‘আদ, সামূদ ও শুআইব (عليه السلام)-এর অবাধ্য সম্প্রদায়কে বুঝানো হয়েছে। যারা হিজাযবাসীদের নিকটে এবং তাদের পথের ধারে আবাদ করত। তাদের জুলুমের কারণে তাদেকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তাদের ওপর শাস্তি আপতিত হওয়ার পূর্বে অনেক সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারা অবাধ্যতার ওপর বহাল থেকেই গেল। যখন একথা পরিস্কার হয়ে গেল যে, তারা অবাধ্যতা থেকে ঈমানের পথে ফিরে আসবে না তখন শাস্তি দিয়ে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হল। তাদের ধ্বংসাবশেষ রেখে দেয়া হয়েছে যাতে পৃথিবীর সকল অবাধ্য জাতি তা থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হতে পারে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অধিকাংশ মানুষ শাস্তি প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত ঈমান আনে না, তবে শাস্তি দেখে ঈমান আনলে তা কাজে আসবে না।
২. বাতিল দ্বারা সত্যকে প্রতিহত করার চেষ্টা করা আল্লাহ তা‘আলার সাথে বিদ্রোহ করার শামিল।
৩. ইসলামের কোন নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করা কুফরী কাজ, কেউ তা করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
৪. যাদের অন্তরকে আল্লাহ কুফরী দ্বারা আচ্ছাদিত করে দিয়েছেন তাদেরকে হিদায়াত দেয়া যাবে না।
৫. পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, কেন তাদেরকে ধ্বংস করা হয়েছিল।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*দ্বীন গ্রহণে প্রধান দুটি বাধা : এরপর, যারা কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা বিশ্বাস করেনি এবং প্রকৃতপক্ষে সকল নবী রসূলদের যামানায় তাদের সংখ্যাই বেশী, ওই সব অবিশ্বাসীদের কথা পেশ করতে গিয়ে বলা হচ্ছে, হেদায়েত যখন এসে গেলাে তখন ওই সকল মানুষকে পেছনের রীতি নীতি অনুসরণের মানসিকতা ছাড়া অন্য কোনাে জিনিস বা অন্য কোনাে বুঝ ঈমান আনতে এবং তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধা দেয়নি অথবা তাদেরকে ঈমান আনতে বাধা দিয়েছিলাে এই চিন্তা যে ‘আযাব আসুক’ তারপর দেখা যাবে ঈমান আনা প্রয়ােজন কিনা।(আয়াত ৫৫) তাদের কাছে তাে হেদায়াতের কথা এমন স্পষ্টভাবে এসেছিলাে যে, খেয়াল করলে এবং হেদায়াতের কথাগুলাে বুঝার চেষ্টা করলে সঠিক পথ গ্রহণ করা তাদের জন্যে মােটেই কঠিন ছিলাে না, কিন্তু আফসােস, এমনই হঠকারী ছিলাে তারা যে হেদায়াতের পথের যে বর্ণনা তারা আল্লাহর পয়গম্বরদের কাছে শুনেছে তাতে তারা কান দেয়নি, চিন্তা করেনি। বুঝারও চেষ্টা করেনি এবং অতীত জাতিসমূহের ওপর কোনাে কারণে আযাব নাযিল হয়েছিলাে তাও বুঝার চেষ্টা করেনি। যার ফলে তাদের ওপর আযাব নাযিল হওয়াকে তারা হালাল বানিয়ে ফেললাে তাদের মনকে তারা ঠাট্টা মস্কারি ও উপহাস বিদ্রুপ দ্বারা হেদায়াতের পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে গেলাে অথবা তারা চাইল যে আযাব সামনাসামনি এসে গেলে তখন ঈমান আনাটা সমীচীন হবে এবং বিশ্বাস পাকাপোক্ত হবে। কিন্তু রসূলদের কাজের ধারা এটা ছিলাে না, যার ফলে সত্যকে প্রত্যাখ্যানকারীদের ওপর, অতীতের মতাে ধ্বংস নেমে এল। অতীতে যেমন করে রাসূলের কাছে আসা মােজেযা দেখা সত্তেও ঈমান না আনার কারণে আযাব নাযিল হয়েছিলাে, তেমনি এদের ওপরও আযাব নাযিল হয়ে গেলাে। এসব কিছুর সিদ্ধান্ত তাে আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছিলাে, রসূলরা তাে শুধু সুসংবাদ দানকারী অথবা আযাব সম্পর্কে সতর্ককারী মাত্র; এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি রসূলদেরকে একমাত্র সুসংবাদ দানকারী ও সতর্ককারী হিসাবেই পাঠিয়েছি। আর কাফেররা তাে তাদের সাথে অন্যায়ভাবে তর্কবিতর্ক করেছে এবং …আল্লাহর আয়াতগুলােকে উপহাস বিদ্রুপের বিষয় হিসাবে গ্রহণ করেছে এবং নবীদেরকেও তারা বিদ্রুপ করেছে'(আয়াত ৫৬) আর সত্য তার সুস্পষ্ট ও সকল প্রকার সন্দেহমুক্ত, কিন্তু কাফেররা সত্যকে পরাভূত করে এবং সত্যের ওপর জয়ী হওয়ার অসৎ উদ্দেশ্যেই অন্যায়ভাবে এবং খামাখা তর্ক করে, আর এজন্যে তারা অলৌকিক কোনাে ক্ষমতা দেখানাের দাবী করে এবং আযাব নিয়ে আসার জন্যে ব্যস্ততা দেখায়। এর অর্থ অবশ্যই এটা নয় যে আযাব এসে গেলে তারা খুব ধৈর্যের সাথে আযাব সহ্য করে যেতে পারবে; বরং এসব ব্যস্ততা দেখানাের উদ্দেশ্য হচ্ছে আযাব সম্পর্কিত আল্লাহর আয়াতগুলােকে অস্বীকার করা ও সেগুলােকে মিথ্যা মনে করে বিদ্রুপ করা। তারা বলে- রাখাে তােমার আযাবের ভয় দেখানাে, পারলে নিয়ে এসাে না দেখি কেমন আযাব আনতে পার। অর্থাৎ তােমার ওসব ভুয়া কথা রেখে দাও! তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘ঐ ব্যক্তি থেকে বড় যালেম আর কে হতে পারে যাকে তার রবের পক্ষ থেকে আসা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেগুলাে থেকে সে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং আর যখন তাদেরকে হেদায়াতের দিকে তুমি ডাক তখন তারা কিছুতেই সে পথ গ্রহণ করে না'(আয়াত ৫৭) এরা হচ্ছে ওইসব মানুষ যারা আল্লাহর আয়াত গুলোকে উপহাস-বিদ্রুপ করে প্রত্যাখ্যান করেছে, আমিও তাদেরকে ঢিল দিয়ে রেখেছি, আসলে এমনই হতভাগ্য তারা যে তারা এ কোরআনের কথা শুনবে বলে আশা করা যায় না বা এর থেকে কোনাে ফায়দাও তারা হাসিল করতে পারবে বলে মনে হয় না। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরের ওপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন যার কারণে তাদের বুঝ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে এবং তাদের কানের ওপর এমন কিছু বােঝা চাপিয়ে দিয়েছেন যার কারণে তারা বধিরের মতাে হয়ে গেছে সত্যের আহ্বান তারা কিছুই শুনতে পায় না এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়, আর এই কারণে আল্লাহ তায়ালা গােমরাহীকেই তাদের ভাগ্য লিখন বানিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে তারা আর কোনােদিন সঠিক পথে ফিরে আসতে পারবে না, কেননা হেদায়াত গ্রহণ করার জন্যে প্রয়ােজন এমন খােলা মন যে সত্যকে গ্রহণ করার জন্যে উদগ্রীব হয়ে থাকে। এহেন হৃদয়বানদের জন্যে আল্লাহর আশ্বাস বাণী, ‘আর তােমার রব বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই করুণাময় তিনি ওদের অপরাধগুলাের জন্যে ওদেরকে পাকড়াও করতে চাইলে তাে শীঘ্রই তাদের ওপর আবার এসে যেতাে'(আয়াত ৫৮) কিন্তু না, তিনি সাথে সাথে পাকড়াও করেন না, বরং তিনি বড় মেহেরবানী করে তাদেরকে সময় দিয়ে রাখেন এবং ‘ধ্বংস নেমে আসুক’ বলে তারা যে ব্যস্ততা দেখাচ্ছে তাকে তিনি বিলম্বিত করেন; অবশ্য এর অর্থ মােটেই এমন নয় যে তিনি তাদেরকে একেবারেই ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই তাদের জন্যে রয়েছে ওয়াদা করা একটি নির্দিষ্ট সময়, যার থেকে সরে যাওয়ার কোনাে জায়গা তারা খুঁজে পাবে না'(আয়াত ৫৮) অর্থাৎ, ওয়াদা করা এসময় দুনিয়াতেই আসবে যখন তাদের ওপর কিছু না কিছু আযাব হালাল হয়ে যাবে। এরপর আখেরাতের ওয়াদাকৃত চিরস্থায়ী আযাব তো আছেই সেখানে হিসাব নিকাশ করে যার যা পাওনা তাদেরকে তা পুরােপুরিই দেয়া হবে। তারা যুলুম করেছিলাে, এজন্যে পূর্ববর্তীদের মতাে তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে অথবা আযাবের হকদার হয়ে গেছে যদি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে টিল দেয়ার জন্যে পূর্বেই সিদ্ধান্ত না হয়ে থাকতাে, তাহলে অবশ্যই তাদের জঘন্য আচরণের শাস্তি অচিরেই তাদের ওপর নেমে আসতাে। তাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত এটা আল্লাহর এক হেকমত যার তাৎপর্য একমাত্র তিনিই জানেন। তাই দেখা যায়, তাদের এতাে হঠকারিতা, এতাে সত্য বিরােধিতা, এত যুলুম এবং এতাে নিষ্ঠুরতা সত্তেও আল্লাহ তায়ালা অতীতের জাতিসমূহের ওপর আগত সর্বাত্মক শাস্তির মতাে শাস্তি মােহাম্মদ(স.)-এর কওমের ওপর নাযিল করেননি; বরং, আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে আর একটি সময়ের ওয়াদা করে রেখেছেন এবং ওয়াদাকৃত সেই দিনটিতে আযাব দানের কথা আর কিছুতেই খেলাফ হবে না। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘আর ঐসব এলাকাবাসীদেরকে আমি তখনই ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা যুলুম করেছে, কিন্তু এদের ধ্বংসের জন্যে আমি, একটি সময় নির্দিষ্ট করে রেখেছি'(আয়াত ৫৯) অতএব, তাদেরকে ঢিল দেয়ায় এবং তাদের ওপর আযাব নাযিল করার ব্যাপারে বিলম্বিত করায় তারা যেন কোনাে ধোকার মধ্যে না পড়ে। নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার পর তাদের জন্যে ওয়াদাকৃত আযাবের দিনটি অবশ্যই আসবে-এবং অবশ্যই এটা সত্য কথা যে চিরাচরিত নিয়ম কখনই বদলাবে না। অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তার নিয়মকে কখনই পরিবর্তন করেন না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
আল্লাহ তাআলা পূর্ব যুগের ও বর্তমান সময়ের কাফিরদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরেও তারা তা হতে দূরে সরে থাকছে। তারা আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখে নেয়া কামনা করছে। কেউ কেউ আকাংখা করছে যে, তাদের উপর যেন আকাশ ফেটে পড়ে যায়। তাদের কেউ কেউ বলেঃ যদি শাস্তি আনতে পার নিয়ে এসো। কুরায়েশরাও প্রার্থনা করে বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! এটা যদি সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ করুন কিংবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শান্তি আমাদের উপর নাযিল করুন!” তারা এও বলেছিলঃ “হে নবী (সঃ)! আমরা তো তোমাকে পাগল মনে করছি। যদি তুমি প্রকৃতই সত্য নবী হও তবে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে কেন আনছো না?” ইত্যাদি ইত্যাদি। সূতরাং তারা আল্লাহ তাআলার শাস্তির অপেক্ষায় থাকছে এবং তা দেখতে চাচ্ছে। রাসূলদের কাজ তো শুধু মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়া এবং কাফিরদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা মিথ্যা অবলম্বনে বিতণ্ডা করে তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে চায় এবং দূর করে দেয়ার ইচ্ছা করে। কিন্তু তাদের এই মনোবাঞ্ছা তো কখনও পূর্ণ হবার নয়। হক তাদের মিথ্যা কথায় দমে যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ এই লোকগুলি আমার নিদর্শনাবলীকে এবং যদ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলিকে বিদ্রুপের বিষয়রূপে গ্রহণ করছে এবং নিজেদের বেঈমানীতে আরো বেড়ে চলছে।
আল্লাহ তাআলা পূর্ব যুগের ও বর্তমান সময়ের কাফিরদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরেও তারা তা হতে দূরে সরে থাকছে। তারা আল্লাহর শাস্তি স্বচক্ষে দেখে নেয়া কামনা করছে। কেউ কেউ আকাংখা করছে যে, তাদের উপর যেন আকাশ ফেটে পড়ে যায়। তাদের কেউ কেউ বলেঃ যদি শাস্তি আনতে পার নিয়ে এসো। কুরায়েশরাও প্রার্থনা করে বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! এটা যদি সত্য হয় তবে আমাদের উপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ করুন কিংবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শান্তি আমাদের উপর নাযিল করুন!” তারা এও বলেছিলঃ “হে নবী (সঃ)! আমরা তো তোমাকে পাগল মনে করছি। যদি তুমি প্রকৃতই সত্য নবী হও তবে আমাদের সামনে ফেরেশতাদেরকে কেন আনছো না?” ইত্যাদি ইত্যাদি। সূতরাং তারা আল্লাহ তাআলার শাস্তির অপেক্ষায় থাকছে এবং তা দেখতে চাচ্ছে। রাসূলদের কাজ তো শুধু মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়া এবং কাফিরদেরকে ভয় প্রদর্শন করা। সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা মিথ্যা অবলম্বনে বিতণ্ডা করে তা দ্বারা সত্যকে ব্যর্থ করে দিতে চায় এবং দূর করে দেয়ার ইচ্ছা করে। কিন্তু তাদের এই মনোবাঞ্ছা তো কখনও পূর্ণ হবার নয়। হক তাদের মিথ্যা কথায় দমে যাবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ এই লোকগুলি আমার নিদর্শনাবলীকে এবং যদ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলিকে বিদ্রুপের বিষয়রূপে গ্রহণ করছে এবং নিজেদের বেঈমানীতে আরো বেড়ে চলছে।
৫৭-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মহান আল্লাহ বলেনঃ প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বড় পাপী ও অপরাধী আর কে হতে পারে? যার সামনে তার প্রতিপালকের কালাম যখন পাঠ করা হয় তখন সে ওর প্রতি ক্ষেপও করে না এবং ওর প্রতি আকৃষ্টও হয় না, বরং মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং পূর্বে যে সব দুষ্কর্ম করেছে সেগুলি সবই ভুলে যায়? তার এই দুর্ব্যবহারের শাস্তি এই হয় যে, তার অন্তরের উপর পর্দা পড়ে যায়। ফলে ভাল কাজের প্রতি তার কোন মনোযোগই থাকে না এবং করআন বুঝতে পারে না। তার কানেও বধিরতা এসে যায়। সুতরাং তাকে হিদায়াতের প্রতি লাখো লাখো দাওয়াত দেয়া যাক না কেন সুপথ প্রাপ্তি তার জন্যে অসম্ভব। হে নবী (সঃ)! তোমার প্রতিপালক বড়ই দয়াবান। তিনি উচ্চ মানের করুণার অধিকারী। যদি তিনি পাপীদেরকে তাড়াতাড়ি শাস্তি দিয়ে দিতেন তবে ভূ-পৃষ্ঠে কোন প্রাণী আজ বাকী থাকতো না। তিনি লোকদের অত্যাচার ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন ও ক্ষমা করে থাকেন। কিন্তু এর দ্বারা এটা মনে করা চলবে না যে, তিনি পাকড়াও করবেনই না। জেনে রেখো যে, তিনি কঠিন শাস্তি দাতা। এটা তো শুধু তার সহনশীলতা, গোপনতার রক্ষণ ও ক্ষমা, যাতে পথভ্রষ্টরা পথে ফিরে আসে এবং পাপীরা তাওবা করতঃ তাঁর করুণার অঞ্চল ধরে নেয়। কিন্তু যারা তার এই সহনশীলতা দ্বারা উপকার লাভ করবে না এবং নিজেদের ঔদ্ধত্য ও হঠকারিতার উপরই প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তাদের এটা জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহর পাকড়াও করার দিন অতি নিকটবর্তী। ওটা এমন কঠিন দিন যে, শিশু বুড়ো হয়ে যাবে এবং গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। ঐ দিন কোন আশ্রয় স্থল থাকবে না এবং পরিত্রাণেরও কোন উপায় দেখা যাবে না। তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতেরাও তোমাদের মতই আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং কুফরীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। শেষে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং দুনিয়ার বুক থেকে তাদের নাম ও নিশানা মুছে ফেলেছি। তাদের ধ্বংস হওয়ার নির্ধারিত সময় এসে পড়ায় তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। সুতরাং হে মুশরিকদের দল! তোমরাও আমার শাস্তির ভয় করো। তোমরা শ্রেষ্ঠ নবীকে (সঃ) কষ্ট দিচ্ছ এবং তাঁর প্রতি অত্যাচার করছো! তাঁকে অবিশ্বাস করছে। অথচ পূর্ববর্তী কাফিরদের তুলনায় তোমাদের শক্তি ও সাজ সরঞ্জাম খুবই কম। সুতরাং তোমরা সবসময় আমার শাস্তির ভয় রেখো এবং উপদেশ গ্রহণ করো।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
#যুক্তি প্রমাণের সাহায্যে সত্যকে সুস্পষ্ট করে তোলার ব্যাপারে কুরআন কোন ফাঁক রাখেনি। মন ও মস্তিষ্ককে আবেদন করার জন্য যতগুলো প্রভাবশালী পদ্ধতি অবলম্বন করা সম্ভবপর ছিল সর্বোত্তম পদ্ধতিতে তা এখানে অবলম্বিত হয়েছে। এখন সত্যকে মেনে নেবার পথে তাদের কি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? শুধুমাত্র এটিই যে তারা আযাবের অপেক্ষা করছে। পিটুনি খাওয়া ছাড়া তারা সোজা হতে চায় না।
# এ আয়াতেরও দু’টি অর্থ হতে পারে এবং এ দু’টি অর্থই এখানে প্রযোজ্যঃ
একটি অর্থ হচ্ছে, রসূলদেরকে আমরা এজন্য পাঠাই যে, ফায়সালার সময় আসার আগে তারা লোকদেরকে আনুগত্যের ভাল ও নাফরমানির খারাপ পরিণতির ব্যাপারে সজাগ করে দেবেন। কিন্তু এ নির্বোধ লোকেরা সতর্কবাণী থেকে লাভবান হবার চেষ্টা করছে না এবং রসূল তাদেরকে যে অশুভ পরিণাম থেকে বাঁচাতে চান তারই মুখোমুখি হবার জন্য বদ্ধপরিকর হয়েছে।
দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, যদি আযাব ভোগ করাই তাদের কাছে কাংখিত হয়ে থাকে তাহলে নবীর কাছে তার দাবী না করা উচিত। কারণ নবীকে আযাব দেবার জন্য নয় বরং আযাব দেবার পূর্বে শুধুমাত্র সাবধান করার জন্য পাঠান হয়।
# যখন কোন ব্যক্তি বা দল যুক্তি, প্রমাণ ও শুভেচ্ছামূলক উপদেশের মোকাবিলায় বিতর্ক প্রিয়তায় নেমে আসে, মিথ্যা ও প্রতারণার অস্ত্র দিয়ে সত্যের মোকাবিলা করতে থাকে এবং নিজের কৃতকর্মের খারাপ পরিণতি দেখার আগে কারোর বুঝাবার পর নিজের ভুল মেনে নিতে প্রস্তুত হয় না তখন আল্লাহ তার অন্তরকে তালাবদ্ধ করেন, সত্যের প্রত্যেকটি ধ্বনির জন্য তার কানকে বধির করে দেন। এ ধরনের লোকেরা উপদেশবাণীর মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে না বরং ধ্বংসের গর্তে পড়ে যাবার পরই এদের নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মে যে, এরা যে পথে এগিয়ে চলছিল সেটিই ছিল ধ্বংসের পথ।
# কেউ কোন দোষ করলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে পাকড়াও করে শাস্তি দিয়ে দেয়া আল্লাহর রীতি নয়। তাঁর দয়াগুণের দাবী অনুযায়ী অপরাধীদেরকে পাকড়াও করার ব্যাপারে তিনি তাড়াহুড়া করেন না এবং তাদের সংশোধিত হবার জন্য সুযোগ দিতে থাকেন দীর্ঘকাল। কিন্তু বড়ই মূর্খ তারা যারা এ ঢিল দেয়াকে ভুল অর্থে গ্রহণ করে এবং মনে করে তারা যাই কিছু করুক না কেন তাদেরকে কখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।
# এখানে সাবা, সামূদ, মাদায়েন ও লূতের জাতির বিরাণ এলাকাগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কুরাইশরা নিজেদের বাণিজ্যিক সফরের সময় যাওয়া আসার পথে এসব জায়গা দেখতো এবং আরবের অন্যান্য লোকেরাও এগুলো সম্পর্কে ভালভাবে অবগত ছিল।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#889)
Sura:18
Sura: Kahaf
Ayat: 55-59
[ مَاۤ اُنۡذِرُوۡا ہُزُوًا ﴿۵۶﴾
They take My Ayat,as a jest and mockery.]
www.motaher21.net
18:55
وَ مَا مَنَعَ النَّاسَ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡۤا اِذۡ جَآءَہُمُ الۡہُدٰی وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّہُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ تَاۡتِیَہُمۡ سُنَّۃُ الۡاَوَّلِیۡنَ اَوۡ یَاۡتِیَہُمُ الۡعَذَابُ قُبُلًا ﴿۵۵﴾
And nothing has prevented the people from believing when guidance came to them and from asking forgiveness of their Lord except that there [must] befall them the [accustomed] precedent of the former peoples or that the punishment should come [directly] before them.
18:56
وَ مَا نُرۡسِلُ الۡمُرۡسَلِیۡنَ اِلَّا مُبَشِّرِیۡنَ وَ مُنۡذِرِیۡنَ ۚ وَ یُجَادِلُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِالۡبَاطِلِ لِیُدۡحِضُوۡا بِہِ الۡحَقَّ وَ اتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَ مَاۤ اُنۡذِرُوۡا ہُزُوًا ﴿۵۶﴾
And We send not the messengers except as bringers of good tidings and warners. And those who disbelieve dispute by [using] falsehood to [attempt to] invalidate thereby the truth and have taken My verses, and that of which they are warned, in ridicule.
18:57
وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ ذُکِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّہٖ فَاَعۡرَضَ عَنۡہَا وَ نَسِیَ مَا قَدَّمَتۡ یَدٰہُ ؕ اِنَّا جَعَلۡنَا عَلٰی قُلُوۡبِہِمۡ اَکِنَّۃً اَنۡ یَّفۡقَہُوۡہُ وَ فِیۡۤ اٰذَانِہِمۡ وَقۡرًا ؕ وَ اِنۡ تَدۡعُہُمۡ اِلَی الۡہُدٰی فَلَنۡ یَّہۡتَدُوۡۤا اِذًا اَبَدًا ﴿۵۷﴾
And who is more unjust than one who is reminded of the verses of his Lord but turns away from them and forgets what his hands have put forth? Indeed, We have placed over their hearts coverings, lest they understand it, and in their ears deafness. And if you invite them to guidance – they will never be guided, then – ever.
18:58
وَ رَبُّکَ الۡغَفُوۡرُ ذُو الرَّحۡمَۃِ ؕ لَوۡ یُؤَاخِذُہُمۡ بِمَا کَسَبُوۡا لَعَجَّلَ لَہُمُ الۡعَذَابَ ؕ بَلۡ لَّہُمۡ مَّوۡعِدٌ لَّنۡ یَّجِدُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖ مَوۡئِلًا ﴿۵۸﴾
And your Lord is the Forgiving, full of mercy. If He were to impose blame upon them for what they earned, He would have hastened for them the punishment. Rather, for them is an appointment from which they will never find an escape.
18:59
وَ تِلۡکَ الۡقُرٰۤی اَہۡلَکۡنٰہُمۡ لَمَّا ظَلَمُوۡا وَ جَعَلۡنَا لِمَہۡلِکِہِمۡ مَّوۡعِدًا ﴿٪۵۹﴾
And those cities – We destroyed them when they wronged, and We made for their destruction an appointed time.
Tafsir Ibne Kasir Said:-
The Rebellion of the Disbelievers
Allah tells:
وَمَا مَنَعَ النَّاسَ أَن يُوْمِنُوا إِذْ جَاءهُمُ الْهُدَى وَيَسْتَغْفِرُوا رَبَّهُمْ
And nothing prevents men from believing, while the guidance has come to them, and from asking forgiveness of their Lord,
Allah tells us about the rebellion of the disbelievers in ancient times and in more recent times, and how they rejected the obvious truth even when they witnessed clear signs and proofs. Nothing stopped them from following the truth except their demand to witness with their own eyes the punishment which they were being warned about. As some of them said to their Prophet:
فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفاً مِّنَ السَّمَأءِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّـدِقِينَ
So cause a piece of the heaven to fall on us, if you are of the truthful! (26:187)
Others said:
ايْتِنَا بِعَذَابِ اللَّهِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّـدِقِينَ
Bring Allah’s torment upon us if you are one of the truthful. (29:29)
The Quraysh said:
اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَـذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَأءِ أَوِ ايْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
O Allah! If this is indeed the truth from You, then rain down stones on us from the sky or bring upon us a painful torment. (8:32)
وَقَالُواْ يأَيُّهَا الَّذِى نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
لَّوْ مَا تَأْتِينَا بِالْمَلَـيِكَةِ إِن كُنتَ مِنَ الصَّـدِقِينَ
And they say:”O you to whom the Reminder has been sent down! Verily, you are a mad man! Why do you not bring angels to us if you are of the truthful!” (15:6-7)
There are other Ayat referring to the same thing.
Then Allah says:
إِلاَّ أَن تَأْتِيَهُمْ سُنَّةُ الاَْوَّلِينَ
except that the ways of the ancients be repeated with them,
meaning, their overwhelming punishment, destroying every last one of them.
أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ قُبُلً
or the torment be brought to them face to face.
they see it with their own eyes, being directly confronted with it.
Then Allah says
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلاَّ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ
And We send not the Messengers except as bearers of good news and warners.
before the punishment they give good news to those who believe in them and follow them, and warnings to those who reject them and oppose them.
Then Allah tells us about the disbelievers:
وَيُجَادِلُ الَّذِينَ كَفَرُوا
But those who disbelieve, argue
بِالْبَاطِلِ لِيُدْحِضُوا بِهِ الْحَقَّ
with falsehood, in order to refute the truth thereby.
they try to weaken the truth that the Messengers brought, but they cannot achieve that.
وَاتَّخَذُوا ايَاتِي وَمَا أُنذِرُوا هُزُوًا
And they take My Ayat and that which they are warned for jest!
they take the proof, evidence and miracles sent with the Messengers to warn them, and make them fear the punishment;
هُزُوًا
(as a jest and mockery),
and they make fun of them, which is the worst type of disbelief
The Worst People are Those Who turn away after being reminded
Allah says,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِأيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا
And who does more wrong than he who is reminded of the Ayat (signs) of his Lord, but turns away from them,
Allah says, `Who among My creatures does more wrong than one who is reminded of the signs of Allah then turns away from them,’ i.e., ignores them and does not listen or pay attention to them.
وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ
forgetting what his hands have sent forth.
means, bad deeds and evil actions.
إِنَّا جَعَلْنَا عَلَى قُلُوبِهِمْ
Truly, We have set over their hearts,
means, the hearts of these people,
أَكِنَّةً
Akinnah,
means, coverings.
أَن يَفْقَهُوهُ
lest they should understand this,
means, so that they will not understand this Qur’an and its clear Message.
وَفِي اذَانِهِمْ وَقْرًا
and in their ears, deafness.
means that they will be deaf in an abstract way, to guidance.
وَإِن تَدْعُهُمْ إِلَى الْهُدَى فَلَن يَهْتَدُوا إِذًا أَبَدًا
And if you call them to guidance, even then they will never be guided.
وَرَبُّكَ الْغَفُورُ ذُو الرَّحْمَةِ
And your Lord is Most Forgiving, Owner of mercy.
means, `your Lord, O Muhammad, is forgiving and has great mercy.’
لَوْ يُوَاخِذُهُم بِمَا كَسَبُوا لَعَجَّلَ لَهُمُ الْعَذَابَ
Were He to call them to account for what they have earned, then surely, He would have hastened their punishment.
This is like the Ayah:
وَلَوْ يُوَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُواْ مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِن دَابَّةٍ
And if Allah were to punish men for that which they earned, He would not leave a moving creature on the surface of the earth. (35:45)
وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَى ظُلْمِهِمْ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ
But verily, your Lord is full of forgiveness for mankind in spite of their wrongdoing. And verily, your Lord is (also) severe in punishment. (13:6)
And there are many Ayat which say the same thing.
Then Allah tells us that He is patient, He conceals faults and forgives sins. He may guide some of them from wrongdoing to true guidance, and whoever continues in his evil ways, then there will come to him a Day when infants will turn grey and every pregnant female will shed her load.
He says:
بَل لَّهُم مَّوْعِدٌ لَّن يَجِدُوا مِن دُونِهِ مَوْيِلً
But they have their appointed time, beyond which they will find no escape.
meaning, they will find no way out
وَتِلْكَ الْقُرَى أَهْلَكْنَاهُمْ لَمَّا ظَلَمُوا
And these towns, We destroyed them when they did wrong.
This refers to earlier nations in times past; `We destroyed them because of their stubborn disbelief.’
وَجَعَلْنَا لِمَهْلِكِهِم مَّوْعِدًا
And We appointed a fixed time for their destruction.
`We appointed for them a set time limit, not to be increased or decreased. The same applies to you, O idolators, so beware or what happened to them will happen to you too, for you have rejected the noblest Messenger and greatest Prophet, and you are not dearer to Us than them, so fear My punishment and wrath.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran