أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৮৮)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৫০-৫৪ নং আয়াত:-
[وَكَانَ الاِْنسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلاً
আর মানুষ সবচেয়ে বেশি বিতর্কপ্রিয়।
But, man is ever more quarrelsome than anything.” ]
www.motaher21.net
وَ اِذۡ قُلۡنَا لِلۡمَلٰٓئِکَۃِ اسۡجُدُوۡا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوۡۤا اِلَّاۤ اِبۡلِیۡسَ ؕ کَانَ مِنَ الۡجِنِّ فَفَسَقَ عَنۡ اَمۡرِ رَبِّہٖ ؕ اَفَتَتَّخِذُوۡنَہٗ وَ ذُرِّیَّتَہٗۤ اَوۡلِیَآءَ مِنۡ دُوۡنِیۡ وَ ہُمۡ لَکُمۡ عَدُوٌّ ؕ بِئۡسَ لِلظّٰلِمِیۡنَ بَدَلًا ﴿۵۰﴾
(স্মরণ কর,) আমি যখন ফিরিশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’, তখন ইবলীস ছাড়া সবাই সিজদা করল; সে ছিল জীনদের একজন। সে তার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করল; তবে কি তোমরা আমার পরিবর্তে তাকে ও তার বংশধরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে; অথচ তারা তোমাদের শত্রু? সীমালংঘনকারীদের পরিবর্ত কত নিকৃষ্ট!
مَاۤ اَشۡہَدۡتُّہُمۡ خَلۡقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لَا خَلۡقَ اَنۡفُسِہِمۡ ۪ وَ مَا کُنۡتُ مُتَّخِذَ الۡمُضِلِّیۡنَ عَضُدًا ﴿۵۱﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি তাদেরকে (উপস্থিত) সাক্ষী রাখিনি এবং তাদের সৃজনকালেও নয়। আর আমি এমনও নই যে, বিভ্রান্তকারীদেরকে সহায়করূপে গ্রহণ করব।
وَ یَوۡمَ یَقُوۡلُ نَادُوۡا شُرَکَآءِیَ الَّذِیۡنَ زَعَمۡتُمۡ فَدَعَوۡہُمۡ فَلَمۡ یَسۡتَجِیۡبُوۡا لَہُمۡ وَ جَعَلۡنَا بَیۡنَہُمۡ مَّوۡبِقًا ﴿۵۲﴾
আর (স্মরণ কর,) যেদিন তিনি বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে আহবান কর!’ তারা তখন তাদেরকে আহবান করবে; কিন্তু তারা তাদের আহবানে সাড়া দেবে না এবং আমি তাদের উভয়ের মধ্যস্থলে রেখে দেব এক ধ্বংস-গহ্বর।
وَ رَاَ الۡمُجۡرِمُوۡنَ النَّارَ فَظَنُّوۡۤا اَنَّہُمۡ مُّوَاقِعُوۡہَا وَ لَمۡ یَجِدُوۡا عَنۡہَا مَصۡرِفًا ﴿٪۵۳﴾
অপরাধীরা জাহান্নাম দেখে বুঝবে যে, তারা সেখানে পতিত হবে এবং তারা ওটা হতে কোন পরিত্রাণ স্থল পাবে না।
وَ لَقَدۡ صَرَّفۡنَا فِیۡ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ لِلنَّاسِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ ؕ وَ کَانَ الۡاِنۡسَانُ اَکۡثَرَ شَیۡءٍ جَدَلًا ﴿۵۴﴾
আমি অবশ্যই মানুষের জন্য এই কুরআনে সর্বপ্রকার উপমা বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু মানুষ সর্বাধিক বিতর্ক-প্রিয়।
৫০-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আদম ও আদম সন্তানের সাথে ইবলীস শয়তানের শত্র“তার সংবাদ দিচ্ছেন। আল্লাহ তা‘আলা আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করার পর সকল ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সম্মান ও তাঁর নির্দেশ পানলার্থে আদম (عليه السلام) কে সিজদা দেয়ার জন্য। তখন সকলেই সিজদা করল কিন্তু ইবলীস করল না। এ সম্পর্কে সূরা হিজর ও সূরা আ‘রাফ- এ বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ ইবলীস শয়তান জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত, সে আগুনের তৈরি, সে আদম সন্তানের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সূরা আ‘রাফ ৭:১২) অর্থাৎ সে আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ ভঙ্গ করল, নিজের অহংকার ও বড়ত্বের কারণে সিজদা করল না। সে বলল (أَأَسْجُدُ لِمَنْ خَلَقْتَ طِينًا) “আমি কি তাকে সিজদা করবো যাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?” (সূরা ইসরা ১৭:৬১)
যে শয়তান আল্লাহ তা‘আলা ও মানব জাতির পিতা আদম (عليه السلام)-এর সাথে এমন আচরণ করল তার ব্যাপারে সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা কি এ শয়তান ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নেবে? তারা তো তোমাদের শত্র“। সুতরাং এরপরেও যারা শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে নেবে, এসব জালিমদের প্রতিদান কতইনা খারাপ হবে।
অতএব শয়তানকে কখনো ওলী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না এবং তার অনুসারীদেরকেও ওলী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ তারা কখনো ভাল পথ দেখায় না বরং আলোর পথ থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। (সূরা ফাতির ৩৫:৬)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শয়তানের পথ বাহ্যিকভাবে যতই ভাল হোক না কেন তার অনুসরণ করা যাবে না।
২. শয়তান মানুষের কল্যাণ চায় না, সে কল্যাণের নামে অকল্যাণের দিকে নিয়ে যায়।
৫১-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর:
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, তিনিই একমাত্র মা‘বূদ। তিনিই সকল ইবাদত পাওয়া হকদার। তিনি তখন থেকেই আছেন যখন কিছুই ছিল না, তিনি তখনও থাকবেন যখন কিছুই থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার সময় শয়তান ও পথভ্রষ্টকারীদেরকে উপস্থিত রাখিনি যে, আমি তাদের থেকে সৃষ্টির কাজে সহযোগিতা নিব বা এ ব্যাপারে সাক্ষী থাকবে, এমনকি তাদেরকে সৃষ্টি করার ক্ষেত্রেও উপস্থিত রাখিনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(هٰذَا خَلْقُ اللّٰهِ فَأَرُوْنِيْ مَاذَا خَلَقَ الَّذِيْنَ مِنْ دُوْنِه۪ ط بَلِ الظَّالِمُوْنَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ)
“এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। তোমরা আমাকে দেখাও, তিনি ছাড়া অন্যেরা কী সৃষ্টি করেছে। বরং জালিমরা রয়েছে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায়।” (সূরা লুকমান ৩১:১১)
মুশরিকদেরকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন: তোমরা যাদের সহযোগিতা ও সুপারিশ পাওয়ার আশায় আমার সাথে অংশীদার বানিয়েছিলে তাদেরকে আহ্বান কর। তারা আল্লাহ তা‘আলার কথা মত আহ্বান করবে কিন্তু তারা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে না বরং তাদের থেকে উধাও হয়ে যাবে। কারণ সেদিন তাদের কোন ক্ষমতা থাকবে না, বরং সকল ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলার হাতে থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন “এবং সেদিন তিনি তাদেরকে আহ্বান করে বলবেন: ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক গণ্য করতে, তারা কোথায়?’ যাদের জন্য শাস্তি অবধারিত হয়েছে তারা বলবে: হে আমাদের প্রতিপালক এদেরকেই আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম; এদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরাও বিভ্রান্ত হয়েছিলাম; আপনার সমীপে আমরা দায়িত্ব হতে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। এরা আমাদের ‘ইবাদত করত না।’’ (সূরা ক্বাসাস ২৮:৬২-৬৪)
عَضُدًا সাহায্যকারী, কারো দ্বারা সহযোগিতা নেয়া।
مَّوْبِقًا অর্থ ধ্বংস হওয়া, অর্থাৎ মুশরিক ও তাদের বানানো মা‘বূদ আলাদা হয়ে যাবে, মুশরিকরা যে তাদের ইবাদত করত তারা সে ইবাদত অস্বীকার করবে। ফলে সবাই জাহান্নামের আগুনে পতিত হবে। তারা সেই জাহান্নামের আগুন থেকে কোন পরিত্রাণ পাবে না। সুতরাং যারা ভ্রান্ত তারা তথায় কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। আর তাদের সেই শাস্তি একটুও কমানো হবে না। কারণ, তারা আল্লাহ তা‘আলার বিধানের নাফরমানী করেছিল এবং তাঁর শরীক স্থাপন করেছিল।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আকাশ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ, কেউ আল্লাহর সাথে সহযোগিতা করেনি।
২. আল্লাহ তা‘আলা কোন অন্যায়কারীকে সাহায্য করেন না।
৩. দুনিয়ায় যারা আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে অন্যদেরকে আহ্বান করত সে সকল নেতারা কিয়ামতের দিন তাদের আহ্বানকারীদের ডাকে সাড়া দেবে না।
৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
মানুষের কাছে সঠিক পথ তুলে ধরার জন্য কুরআনে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে। কখনো ওয়াজ-নসিহত করার পথ অবলম্বন করা হয়েছে, কখনো ঘটনাবলী উল্লেখ করা হয়েছে, আবার কখনো উদাহরণ বর্ণনা করা হয়েছে। উপমা একটি ভাষা অলংকার, প্রত্যেক ভাষায় উপমার ব্যবহার পাওয়া যায়। উপমার দ্বারা উপমিত বস্তু বা বিষয়কে সহজে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। তাই বলা হয়-
ضرب الامثال لتقريب الاذهان
উপমা বর্ণনা করা হয় সহজে বুঝানোর জন্য। তাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে প্রত্যেক প্রকার উপমা বর্ণনা করেছেন, যাতে মানুষ সঠিক পথ সহজে বুঝতে পেরে তার অনুসরণ করে। কুরআনে অনেক উপমা সম্বলিত আয়াত রয়েছে। যেমন- মু’মিন মুনাফিকদের উপমা সূরা বাকারার শুরুর দিকে রয়েছে, যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ও যারা মানুষকে দেখানোর জন্য ব্যয় করে তাদের উপমা সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে, যারা সুদ খায় তাদের উপমা সূরা বাকারার ২৭৫ নং আয়াতে, দুনিয়ার জীবনের উপমা সূরা ইউনুসের ২৪ নং আয়াতে, জান্নাতের উপমা সূরা মুহাম্মাদের ১৫ নং আয়াতে; এভাবে যারা সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত ও যারা পথভ্রষ্ট তাদের উপমা, যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে তাদের উপমা কুরআনে বর্ণিত আছে।
(وَكَانَ الْإِنْسَانُ أَكْثَرَ شَيْءٍ جَدَلًا)
এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী (রহঃ) উল্লেখ করেন
“একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতেমা ও আলীর (রাঃ) বাড়িতে আগমন করেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন: তোমরা যে শুয়ে রয়েছ, সালাত আদায় করছ না কেন? উত্তরে আলী (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের প্রাণ আল্লাহ তা‘আলার হাতে রয়েছে। যখন তিনি ইচ্ছা করেন তখনই আমাদের উঠিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলীর মুখে এ কথা শুনে আর কিছু না বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন। ফেরবার পথে তিনি হাঁটুর ওপর হাত মেরে বলতে বলতে যাচ্ছিলেন: মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক করে। (মুসনাদ আহমাদ ১/১১২, সহীহ বুখারী: ৪৭২৪)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে বেশি বেশি তর্ক-বিতর্ক করা যাবে না।
২. কুরআনে প্রত্যেক প্রকার উপমা বর্ণনা করা হয়েছে যাতে সঠিক পথ চিনতে ভুল না হয়।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
এ বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় আদম ও ইবলীসের কাহিনীর প্রতি ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে পথভ্রষ্ট লোকদেরকে তাদের এ বোকামির ব্যাপারে সজাগ করে দেয়া যে, তারা নিজেদের স্নেহশীল ও দয়াময় আল্লাহ এবং শুভাকাংখী নবীদেরকে ত্যাগ করে এমন এক চিরন্তন শত্রুর ফাঁদে পা দিচ্ছে যে সৃষ্টির প্রথম দিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
# ইবলীস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল না। বরং সে ছিল জিনদের একজন। তাই তার পক্ষে আনুগত্য থেকে বের হয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। ফেরেশতাদের ব্যাপারে কুরআন সুস্পষ্ট ভাষায় বলে, তারা প্রকৃতিগতভাবে অনুগত ও হুকুম মেনে চলেঃ
لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰہَ مَاۤ اَمَرَہُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
“আল্লাহ তাদেরকে যে হুকুমই দেন না কেন তারা তার নাফরমানী করে না এবং তাদেরকে যা হুকুম দেয়া হয় তাই করে।” (আত্ তাহরীমঃ ৬)
یَخَافُوۡنَ رَبَّہُمۡ مِّنۡ فَوۡقِہِمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
“তারা অবাধ্য হয় না, তাদের রবকে, যিনি তাদের ওপর আছেন, ভয় করে এবং তাদেরকে যা হুকুম দেয়া হয় তাই করে।” (আন্ নহলঃ ৫০)
অন্য দিকে জিন হচ্ছে মানুষের মতো একটি স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টি। তাদেরকে জন্মগত আনুগত্যশীল হিসেবে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তাদেরকে কুফর ও ঈমান এবং আনুগত্য ও অবাধ্যতা উভয়টি করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। এ সত্যটিই এখানে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইবলীস ছিল জিনদের দলভুক্ত, তাই সে স্বেচ্ছায় নিজের স্বাধীন ক্ষমতা ব্যবহার করে ফাসেকীর পথ বাছাই করে নেয়। এ সুস্পষ্ট বক্তব্যটি লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এক ধরনের ভুল ধারণা দূর করে দেয়। এ ধারণাটি হচ্ছেঃ ইবলীস ফেরেশতাদের দলভুক্ত ছিল এবং তাও আবার সাধারণ ও মামুলি ফেরেশতা নয়, ফেরেশতাদের সরদার। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আল হিজর ২৭ এবং আল জিন ১৩-১৫ আয়াত)
এখন প্রশ্ন থেকে যায়, যদি ইবলীস ফেশেতাদের দলভুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে কুরআনের এ বর্ণনা পদ্ধতি কেমন করে সঠিক হতে পারে যে, “আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদমকে সিজাদ করো, তখন তারা সবাই সিজদা করলো কিন্তু ইবলীস করলো না? ” এর জবাব হচ্ছে, ফেরেশতাদেরকে সিজদা করার হুকুম দেবার অর্থ এ ছিল যে, ফেরেশতাদের কর্ম ব্যবস্থাপনায় পৃথিবী পৃষ্ঠে অস্তিত্বশীল সকল সৃষ্টিও মানুষের হুকুমের অনুগত হয়ে যাবে। কাজেই ফেরেশতাদের সাথে সাথে এ সমস্ত সৃষ্টিও সিজদাবনত হলো কিন্তু ইবলীস তাদের সাথে সিজদা করতে অস্বীকার করলো। (ইবলীস শব্দের অর্থ জানার জন্য মু’মিনুনের ৭৩ টীকা দেখুন)।
#এর অর্থ হচ্ছে এ শয়তানরা তোমাদের আনুগত্য ও বন্দেগী লাভের হকদার হয়ে গেলো কেমন করে? বন্দেগী তো একমাত্র স্রষ্টারই অধিকার হতে পারে। আর এ শয়তানদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, এদের আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্মে শরীক হওয়া তো দূরের কথা এরা নিজেরাই তো সৃষ্টি মাত্র।
#এখানে আবার সেই একই বিষয়বস্তু বর্ণনা করা হয়েছে যা ইতিপূর্বে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহর বিধান ও তাঁর নির্দেশাবলী অমান্য করে অন্য কারো বিধান ও নেতৃত্ব মেনে চলা আসলে তাকে মুখে আল্লাহর শরীক বলে ঘোষণা না দিলেও আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব তাকে শরীক করারই শামিল। বরং ঐ ভিন্ন সত্তাদের প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করেও যদি আল্লাহর হুকুমের মোকাবিলায় তাদের হুকুম মেনে চলা হয় তাহলেও মানুষ শিরকের অপরাধে অভিযুক্ত হবে। কাজেই এখানে শয়তানদের ব্যাপারে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে, দুনিয়ায় সবাই তাদের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করছে কিন্তু এ অভিশাপের পরও যারা তাদের অনুসরণ করে কুরআন তাদের সবার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনছে যে, তোমরা শয়তানদেরকে আল্লাহর শরীক করে রেখেছো। এটি বিশ্বাসগত শিরক নয় বরং কর্মগত শিরক এবং কুরআন একেও শিরক বলে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, ১ খণ্ড, আন নিসা, টীকা ৯১-১৪৫ , আল আন ’আম ৮৭-১০৭ ; ২ খণ্ড, আত তাওবাহ, টীকা ৩১ ; ইবরাহীম, টীকা ৩২; ৩ খণ্ড মারয়াম , ৩৭ টীকা; আল মু’মিনুন, ৪১ টীকা; আল ফুরকান ৫৬ টীকা, আল কাসাস, ৮৬ টীকা; ৪ খণ্ড সাবা ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩; ইয়াসীন ৫৩ টীকা; আশ শূরা, ৩৮ টীকা; আল-জাসিয়াহ, ৩০ টীকা) ।
# মুফাস্সিরগণ এ আয়াতের দু’টি অর্থ গণনা করেছেন। একটি অর্থ আমি অনুবাদে অবলম্বন করেছি এবং দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, “আমি তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করবো।” অর্থাৎ দুনিয়ায় তাদের মধ্যে যে বন্ধত্ব ছিল আখেরাতে তা ঘোরতর শত্রুতায় পরিবর্তিত হবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*শয়তান যখন বন্ধু : এই অবস্থানে পৌছানাের পরই ওই অপরাধীরা বুঝতে পারবে যে মরদূদ শয়তান তাদের কতাে বড় দুশমন। কিন্তু হায়, জীবদ্দশায়, না বুঝে তারা তারই অনুসরণ করেছে, আর সেও তাদেরকে অবলীলাক্রমে চালিয়েছে ভুল পথে তাদের দুনিয়ার লােভে মেতে থাকার কারণে। যার ফলে তাদেরকে এই কঠিন দিনের দিকে এগিয়ে নেয়ার সুযােগ সে পেয়ে গেছে। এর থেকে আশ্চর্যের বিষয় আর কী হতে পারে, মানুষ জানে যে মরদূদ এই ইবলিস শয়তান তো তাদের আদি পিতা আদম(আ.) ও বিবি হাওয়াকে বিপথগামী করেছিলাে-এতদসত্তেও তাকেই তারা বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে ইবলিসকে তাে মানুষ দেখতে পারে না সে অবস্থায় তাকে কিভাবে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে? জওয়াব হচ্ছে, মানুষকে সঠিক পথে চালানাের জন্যে আল্লাহ তায়ালা সর্বযুগেই এবং সকল দেশে তার নবীদের পাঠিয়েছেন, তাদের পথই আল্লাহর পথ। এ পথ বাদ দিয়ে অন্য যে কোনাে পথই শয়তানের পথ। এই জিন শয়তান কখনও মানুষ রূপে এসে তাকে আল্লাহর পথের বাইরে অন্য পথে চালায়, আবার কখনও জ্বিন শয়তান নিজে এসে অন্য পথে নিয়ে যায়। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর স্মরণ করে দেখাে ওই সময়ের কথা যখন আমি, আল্লাহ তায়ালা বললাম ফেরেশতাদের সিজদা করাে আদমকে, তখন সিজদা করলাে তারা ইবলিস ছাড়া… নিকৃষ্ট প্রতিদান রয়েছে সীমালংঘনকারী (যালেমদের) জন্য।’ এখানে পেছনের ঘটনার দিকে ইশারা করে বনি আদমকে স্মরণ করানাে হচ্ছে যে, বাবা আদম ও মা হাওয়াকে বিপথগামী করার পূর্বে ইবলিস যে প্রতিজ্ঞা করেছিলাে যে, ‘আদম ও তার বংশের পেছনে সে সর্বদা লেগে থাকবে’ একথা সে এক মুহূর্তের জন্যেও ভুলে যায়নি। এমতাবস্থায় চির দুশমন যে ইবলিস শয়তানের চির দুশমনির প্রতিজ্ঞার কথা মানুষ কেমন করে ভুলে যায় এবং কেমন করে তাকে ও তার চেলাচামুন্ডাদেরকে মানুষ কল্যাণকামী বা বন্ধু-রূপে গ্রহণ করতে পারে!-একথা বলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ভ্রান্ত বনী আদমের আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করছেন। ইবলিস ও তার বংশধরদেরকে বন্ধু বা কল্যাণকামী মনে করার অর্থ হচ্ছে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে অন্যায় ও বিবেক বিরুদ্ধ কাজ করতে প্রস্তুত হয়ে যাওয়া। এখানে প্রশ্ন জাগে, কেন মানুষেরা তাদের এহেন নিকৃষ্ট দুশমনের ডাকে সাড়া দিতে যায়, অথচ তাদের কাছে না আছে সঠিক কোনাে জ্ঞান অথবা কোনাে স্থায়ী শক্তি, যার দ্বারা জোর করে কারাে দ্বারা কিছু তারা করাতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে আসমান যমীনের সৃষ্টি কৌশল দেখাননি বা তাদের নিজেদের সৃষ্টি রহস্যের কথাও তাদেরকে জানাননি, যার কারণে তারা আল্লাহর গায়েবী রহস্যাবলী সম্পর্কে ওয়াকেফহাল হতে পারে। আর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তার সহকারীও বানাননি, যার কারণে তাদের কিছু শক্তি থাকতে পারে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আমি তাদেরকে আসমান যমীনের সৃষ্টি কৌশল বা তাদের নিজেদের সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কেও কিছু জানাইনি। আর আমি ওই পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদেরকে কোনো সাহায্যকারী হিসাবেও গ্রহণ করিনি।’ প্রকৃতপক্ষে এটাই তাে হচ্ছে বাস্তব সত্য যে ওরা আল্লাহর সৃষ্টিকুলের মধ্যে একটি সৃষ্টি মাত্র, যারা কোনাে গায়েব বা অদৃশ্য জিনিস সম্পর্কে কিছুই জানেনা বা পবিত্র আল্লাহ তায়ালা তাদের কাছে কোন সাহায্যও চান না। আয়াতের শেষ অংশটুকুর দিকে আবারও খেয়াল করুন, ‘আর আমি এই ভুল পথের পথিকদেরকে কখনও সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করতে পারি না।’ কেউ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে কি যারা পথভ্রষ্ট নয় তাদেরকে তিনি সাহায্যকারী হিসাবে গ্রহণ করেন? এর জওয়াব হচ্ছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই সকল শক্তি ক্ষমতার মালিক। তার ক্ষমতার মধ্যে এমন কোনাে কমতি নেই যে, কারাে সাহায্য নেয়ার প্রয়ােজন হবে, অর্থাৎ যে সব দুর্বলতার কারণে কারাে কাছে সাহায্য চাওয়ার দরকার হতে পারে সে সব কমতি থেকে তিনি বহু বহু উর্ধে। তার শক্তি ক্ষমতার কোন শেষ নেই-নেই কোনাে স্থায়ীত্বের অভাব। মােশরেকদের কাল্পনিক নানা প্রকার মিথ্যা শক্তি নির্ভরতা দূর করার জন্যে বিবেকবান মানুষের কাছে আল্লাহ তায়ালা সব থেকে উপযুক্ত পদ্ধতিতে তার ক্ষমতা উপস্থাপনা করেছেন এবং তার শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সকল কিছুর শক্তির দম্ভ চূর্ণ করে দিয়েছেন। সুতরাং, যেসব নির্বোধ ও অপরিণামদর্শী লােকেরা শয়তানকে বন্ধু ও পরিচালক মনে করে এবং আল্লাহর শক্তি ক্ষমতায় তাকে অংশীদার মনে করে, নিছক অলীক কল্পনার ওপরেই তারা এটা মনে করে, তারা ভাবে শয়তানের গােপন কিছু বিদ্যাবুদ্ধি আছে এবং সে বেশ কিছু অত্যাশ্চার্য শক্তির অধিকারী, অথচ (এটা সে হিসাব করে না যে) শয়তান নিজে পথভ্রষ্ট এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা ভুল পথ ও এই ভুল পথের পথিককে পছন্দ করেন না এবং তাকে চরমভাবে ঘৃণা করেন। আসলে এই আনুমানিক কথাটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানুষের বুঝ শক্তির কাছে শুধু একটা উদাহরণ বা ব্যাখ্যা হিসাবে আয়াতগুলাে পেশ করা হয়েছে।
*মােশরেকদের করুণ পরিণতি : এরপর কেয়ামতের দৃশ্যাবলীর মধ্য থেকে সেই দৃশ্যটি দেখানাে হচ্ছে যার মধ্যে দেখা যাচ্ছে ওইসব শরীকদারকে যাদেরকে আল্লাহর ক্ষমতার অংশীদার মনে করা হয়েছিলাে এবং সেখানে ওই সব অপরাধীদের ছবিও ফুটে উঠেছে যারা জেনে বুঝে অন্যায় কাজে লিপ্ত ছিলাে। এরশাদ হচ্ছে, ‘স্মরণ করে দেখাে ওই সব শরীকদারদেরকে যাদেরকে তােমরা আমার… ওই অপরাধীরা দোযখের আগুন দেখবে এবং ভাবতে থাকবে যে তাদেরকে তাে ওখানেই নিক্ষেপ করা হবে এবং ওই বিপদ দূর করার কোনাে উপায় তারা খুঁজে পাবে না।'(৫২-৫৩) তারা এমন এক অবস্থানে থাকবে যেখানে কোনাে দলীল প্রমাণ ছাড়া কোনাে কথা গ্রহণ করা হবে না এবং তাদেরকে ডাক দিয়ে তাদের কাল্পনিক শরীকদারদেরকে হাযির করতে বলা হবে, কিন্তু এমন পেরেশানীর মধ্যে তারা থাকবে যে তাদের মনেই হবে না যে তারা আখেরাতের যিন্দেগীতে উপনীত হয়েছে, এজন্যে তারা দিশেহারাভাবে তাদের ওই সব মুরুব্বী বা দেব-দেবীদেরকে সাহায্যের জন্যে ডাকতে থাকবে যাদের কথামতাে তারা চলত বা যাদের পূজা অর্চনা করতাে। কিন্তু আল্লাহর ক্ষমতায় যাদেরকে তারা অংশীদার মনে করত তারা কেউ সে দিন তাদেরকে সামান্যতম সাহায্য করার জন্যেও এগিয়ে আসবে না। এরা ওই কঠিন দিনে অপরকে কি সাহায্য করবে, নিজেদেরকেই তারা কোনাে সাহায্য করতে পারবে না। সেদিন ওই উপাস্য ও উপাসকদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা এমনই ধ্বংসাত্বক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন যা অতিক্রম করা ওদের কারাে পক্ষেই সম্ভব হবে না। সে অবস্থা হবে দোযখের দগদগে আগুন। তারই কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, আমি তাদের মধ্যে এক ধ্বংসাত্মক ব্যবধান, আগুনের উপত্যকা বানাবো। অপরাধীরাই এই কঠিন অবস্থা প্রত্যক্ষ করবে এবং তাদের অন্তর প্রচন্ড ভয়-ভীতিতে ভরে যাবে, প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে হতে থাকবে যে এখনই বােধ হয় তাদেরকে ওখানে নিক্ষেপ করা হবে। আসলে যে আযাবের দৃশ্য তাদের সামনে তারা দেখতে পাবে, তার মধ্যে পতিত হওয়ার এই সার্বক্ষণিক আশংকা মােটেই কম বেদনাদায়ক নয় এবং তারা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত থাকবে যে ওই কঠিন দোযখ থেকে তাদের বাঁচার কোনাে উপায় নেই, বা কেউ নাই তাদেরকে উদ্ধারকারী। একথাটাই ফুটে উঠেছে নীচের আয়াতাংশে, ‘আর, অপরাধীরা দোযখের ওই ভয়ানক আগুনকে দেখবে এবং ভাবতে থাকবে যে ওখানে অবশ্যই তাদেরকে নিক্ষেপ করা হবে-আর ওই কঠিন আযাব থেকে বাঁচানেওয়ালা কাউকে তারা খুঁজে পাবে না।’ (৫৩) ওরা সবাই ভালাে করেই জানে যে এ জীবন চিরস্থায়ী নয় এবং যে কোনাে অন্যায় কাজের প্রতিক্রিয়া তাদেরকে অবশ্যই ভােগ করতে হবে। এই জীবদ্দশাতেই যদি তারা বিবেকের ডাকে সাড়া দেয় এবং নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে তাহলেই তারা আসন্ন ওই কঠিন পরিণতি থেকে বাঁচতে পারে- আযাব থেকে বাঁচার এক উপায় তাদের অবশ্যই ছিলাে; যদি তারা আল-কোরআনের দিকে মুখ ফেরাতাে এবং তাদের কাছে আগত সত্যের বিরুদ্ধাচারণ না করতাে-তাহলেই তারা ওই দিনের আযাব থেকে বাঁচতে পারতাে। ওই দিনের আযাব সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা বহু প্রকার উদাহরণ দিয়ে তাদেরকে বুঝিয়েছেন; এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই আমি, মহান আল্লাহ, এই কোরআনের মধ্যে বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে মানুষকে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়েছি, কিন্তু মানুষ অধিকাংশ বিষয়ে শুধু তর্কই করেছে'(আয়াত ৫৪) এই বুঝানাের উদ্দেশ্য হচ্ছে যেন মানুষ নিজের অহংকারকে দমন করে এবং আত্মম্ভরিতাকে প্রশমিত রাখে, আর চিন্তা করে যে তারা অন্যান্য সৃষ্টির মতােই এক নম্বর সৃষ্টি মাত্র-তবুও তাদের অধিকাংশ বিষয়ের ওপর তর্কের এই প্রবণতা কি কখনও শােভা পায়। কোরআনের মধ্যে সব কিছু সম্পর্কে এত বিস্তারিত উদাহরণ দেয়া সত্তেও কি তাদের বুঝা উচিত নয়।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
মহান আল্লাহ বলছেনঃ ইবলীস তোমাদের এমনকি তোমাদের মূল পিতা হযরত আদমেরও (আঃ) প্রাচীন শত্রু। সুতরাং নিজেদের সৃষ্টিকর্তা ও মালিককে ছেড়ে তার অনুসরণ করা তোমাদের জন্যে মোটেই সমীচীন নয়। আল্লাহর অনুগ্রহ, দয়া ও স্নেহ-মমতার প্রতি লক্ষ্য কর যে, তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে প্রতিপালন করেছেন। সুতরাং তাকে ছেড়ে তার এবং তোমাদের নিজেদেরও শত্রুকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা কত সাংঘাতিক ও মারাত্মক ভুল! এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে বাকারার শুরুতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা প্রকাশার্থে সমস্ত ফেরেশতাকে তার সামনে সিজদাবনত হওয়ার নির্দেশ দেন। সবাই হুকুম পালন করে কিন্তু ইবলীসের মূল ছিল খারাপ, তাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল, তাই সে মহান আল্লাহর আদেশ অমান্য করে এবং পাপাচারী হয়ে যায়। ফেরেশতাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতাদেরকে সৃষ্টি করা হয় নূর (জ্যোতি) থেকে, ইবলীস সৃষ্ট হয় অগ্নিশিখা হতে, আর আদমকে (আঃ) যা থেকে সৃষ্টি করা হয় তার বর্ণনা তোমাদের সামনে পেশ করে দেয়া হয়েছে। এটা প্রকাশ্য ব্যাপার যে, প্রত্যেক জিনিসই তার মূলের উপর এসে থাকে। ইবলীস যদিও ফেরেশতাদের মতই আমল করছিল এবং তাদের সাথেই সাদৃশ্যযুক্ত ছিল আর আল্লাহর ইবাদতের কাজে দিনরাত নিমগ্ন ছিল, কিন্তু আল্লাহর ঐ নির্দেশ শোনা মাত্রই তার আসল রূপ ফুটে উঠলো। সুতরাং সে অহংকার করলো এবং পরিষ্কারভাবে আল্লাহ তাআলার আদেশ অমান্য করে বসলো। তার সৃষ্টিই তো ছিল আগুন থেকে। যেমন সে নিজেই বলেছেঃ “আমাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।” ইবলীস কখনই ফেরশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে হচ্ছে জ্বিনদের মূল, যেমন হযরত আদম (আঃ) হলেন মানুষের মূল।
এটাও বর্ণিত আছে যে, এই জ্বিনেরাও ছিল ফেরেশতাদের একটি শ্রেণী, যাদেরকে তেজ আগুন দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইবলীসের নাম ছিল হারত। সে ছিল জান্নাতের দারোগা। এই দলটি ছাড়া অন্যান্য ফেরেশতারা ছিল নূরী (জ্যোতির্ময়)। জ্বিনের অগ্নিশিখা দ্বারা সৃষ্ট ছিল।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইবলীস সম্রান্ত ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সে ছিল সম্রান্ত গোত্রভুক্ত। জান্নাত সমূহের সে দারোগা ছিল। সে ছিল দুনিয়ার আকাশের বাদশাহ। যমীনেরও সম্রাট সে-ই ছিল। এ কারণেই তার মনে অহংকার এসে গিয়েছিল যে, সে সমস্ত আকাশবাসী হতে শ্রেষ্ঠ। তার সেই অহংকার বেড়েই চলছিল। এর সঠিক পরিমাণ আল্লাহ তাআলাই জানতেন। সুতরাং এটা প্রকাশকরণার্থেই তিনি হযরত আদমকে (আঃ) সিজ্বদা করার তাকে নির্দেশ দেন। সাথে সাথেই তার অহংকার প্রকাশ পেয়ে যায়। অহংকার বশতঃই সে স্পষ্টভাবে আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অমান্য করে এবং কাফির হয়ে যায়। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সে জ্বিন ছিল এবং জান্নাতের দারোগা ছিল; যেমন লোকদেরকে শহরের দিকে সম্পর্ক লাগিয়ে বলা হয়-মক্কী, মাদানী, বসরী, কূফী ইত্যাদি। সে জান্নাতের খাজাঞ্চি ছিল। সে ছিল দুনিয়ার আকাশের কামান বাহক। এখানকার ফেরেশতাদের সে ছিল নেতা। এই অবাধ্যাচরণের পূর্বে সে ফেরেশতাদের • অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু থাকতো সে যমীনে। সমস্ত ফেরেশতা অপেক্ষা সে ছিল। বেশী ইবাদতকারী এবং সবচেয়ে বড় আলেম। একারণেই সে গর্বে ফুলে উঠেছিল। তার গোত্রের নাম ছিল জুিন। আসমান ও যমীনের মাঝে সে চলাফেরা করতো। প্রতিপালকের নাফরমানীর কারণে সে তার রোষানলে পতিত হয়। ফলে সে বিতাড়িত শয়তান হয়ে যায় এবং অভিশপ্ত হয়। সুতরাং অহংকারীর তাওবার কোন আশা নেই। তবে, যদি সে অহংকারী না হয় এবং তার দ্বারা কোন পাপকার্য হয়ে যায় তা হলে তার নিরাশ হওয়া উচিত নয়।
বর্ণিত আছে যে, যারা জান্নাতের মধ্যে কাজকাম করতো, এই ইবলীস ছিল তাদের দলভুক্ত। পূর্বযুগীয় গুরুজন হতে এ ব্যাপারে আরো বহু ‘আছার’ বর্ণিত আছে। কিন্তু এগুলির অধিকাংশই বানী ইসরাঈলী ‘আছার’। এর অধিকাংশের সঠিক অবস্থা আল্লাহ তাআলাই অবগত রয়েছেন। এটা সত্য কথা যে, বানী ইসরাঈলের রিওয়াইয়াতগুলি সম্পূর্ণরূপে খণ্ডন ও পরিত্যাগ যোগ্য হবে যদি ওগুলি আমাদের কাছে বিদ্যমান দলীলগুলির বিপরীত হয়। কথা এই যে, আমাদের জন্যে তো কুরআনই যথেষ্ট। পূর্বের কিতাবগুলি আমাদের কোনই প্রয়োজন নেই। আমরা ওগুলি থেকে সম্পূর্ণরূপে অভাবমুক্ত। কেননা ওগুলি পরিবর্তন ও পরিবর্ধন মুক্ত নয়। বহু বানানো কথা ওগুলির মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাদের মধ্যে এমন কোন লোক পাওয়া যায় না, যারা উচ্চমানের হাফিয, যারা ঐ সব কিতাবকে দোষমুক্ত করতে পারে। পক্ষান্তরে মহামহিমান্বিত আল্লাহ এই উম্মতের মধ্যে স্বীয় ফল ও করমে এমন ইমাম, আলেম, বুযুর্গ, খোদাভীরু ও হাফিযের জন্ম দিয়েছেন যারা হাদীসগুলিকে জমা করে লিপিবদ্ধ করেছেন। তারা সহীহ হাসান, যঈফ, মুনকার, মাতরূক, মাওযূ’ ইত্যাদি সবগুলিকেই পৃথক পৃথক করে দিয়েছেন। তারা তাদেরকেও ছাটাই করে পৃথক করে দিয়েছেন। যারা নিজেরাই কথা বানিয়ে নিয়ে হাদীস নামে প্রচার করেছে। যাতে নবীকুল শিরোমণি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফার (সঃ) পবিত্র ও বরকতময় কথাগুলি রক্ষিত হয় এবং মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকে। কারো যেন সাধ্য না হয় মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করে দেয়। আমরা মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি যে, তিনি যেন এই শ্রেণীর সমস্ত লোকের উপর স্বীয় করুণা বর্ষণ করেন এবং তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন ও তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখেন! আমীন, আমীন! আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন! আর তারা নিঃসন্দেহে এরই যোগ্য বটে। সুতরাং তিনি তাদের প্রতি খুশী থাকুন ও তাদেরকে খুশী করুন!
মোট কথা, ইবলীস আল্লাহর আনুগত্য হতে বেরিয়ে গেল। সুতরাং হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করো না এবং আমাকে (আল্লাহকে) ছেড়ে তার সাথে সম্পর্ক জুড়ে দিয়ো না। অত্যাচারী ও সীমালংঘনকারীরা মন্দ প্রতিফল পাবে। এটা ঠিক ঐরূপ যেইরূপভাবে সূরায়ে ইয়াসীনে কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের এবং পাপী ও পুণ্যবানদের পরিণাম বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবী) “হে অপরাধীরা আজ তোমরা (মু’মিনগণ হতে) পৃথক হয়ে যাও।” (৩৬:৫৯)
মহান আল্লাহ মানবমণ্ডলীকে সম্বোধন করে বলছেনঃ আল্লাহ ছাড়া যাকে যাকে তোমরা তোমাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে তারা তোমাদের মতই আমার গোলাম। তাদের কোন কিছুরই মালিকানা নেই। আকাশমণ্ডলী ও পথিবীর সষ্টিকালে আমি তাদেরকে আহবান করি নাই। বরং তারা নিজেরাই সেই সময় বিদ্যমান ছিল না; সমস্ত কিছু একমাত্র আমিই সৃষ্টি করেছি। সবকেই আমিই পরিচালনা করে থাকি। আমার কোন অংশীদার, উযীর ও পরামর্শদাতা নেই। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যাদেরকে তোমরা নিজেদের ধারণায় কিছু একটা মনে করে রেখেছে তাদের সকলকেই আল্লাহ ব্যতীত ডেকে দেখো। জেনে রেখো যে, আসমান ও যমীনে তাদের কারো এক অনুপরিমাণও অধিকার ও মালিকানা নেই, না তাদের কেউ আল্লাহর অংশীদার, না তাঁরা সাহায্যকারী, না তাদের কেউ আল্লাহর কাছে তার অনুমতি ছাড়া কারো জন্যে শাফাআত করতে পারে।” (৩৪:২২)
মহান আল্লাহ বলেনঃ আমার জন্যে এটা শোভনীয়ও নয় এবং আমার কোন প্রয়োজনও নেই যে, তাদেরকে এবং বিশেষ করে বিভ্রান্তকারীদেরকে নিজের বন্ধু ও সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করবো।
৫২-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর:
সমস্ত মুশরিককে কিয়ামতের দিন লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে সবারই সামনে বলা হবেঃ আজ তোমরা তোমাদের ঐ শরীকদেরকে আহবান কর যাদেরকে দুনিয়ায় আহবান করতে, যাতে তারা তোমাদেরকে আজকের বিপদ হতে রক্ষা করে। তারা তখন আহবান করবে, কিন্তু কোন সাড়া পাবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এভাবে তোমাদেরকে একক ভাবে এনেছি যেমন ভাবে তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। দুনিয়ায় আমি তোমাদেরকে যা কিছু দিয়ে রেখেছিলাম সে সবগুলি তোমরা তোমাদের পিছনে ছেড়ে এসেছে। আজ তো আমি তোমাদের সাথে তোমাদের ঐ সব শরীককে দেখছি না যাদেরকে তোমরা আল্লাহর শরীক বানিয়ে রেখেছিলে এবং বিশ্বাস রেখেছিলে যে, তারা তোমাদের জন্যে শাফাআত করবে। তোমাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে গেছে।” (৬:৯৪) অন্য আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “বলা হবে তোমাদের দেবতাগুলিকে আহ্বান কর। তারা তখন আহ্বান করবে কিন্তু তারা তাদের আহ্বানে কোন সাড়া দেবে।” (২৮ :৬৪) এই বিষয়েরই আয়াত। হতে দু’আয়াত পর্যন্ত। সূরায়ে মারইয়ামে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তারা। আল্লাহ ছাড়া অন্য মাবুদ গ্রহণ করে নিয়েছে এই জন্যে, যাতে তারা তাদের সহায় হয় না, এই ধারণা অবাস্তব, তারা তাদের ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে ও তাদের বাতিল মাবুদের মধ্যে পর্দা ও ধ্বংসের গর্ত বানিয়ে দেবো; যেন তারা পরস্পর মিলিত হতে না পারে। যেন সুপথ প্রাপ্ত ও পথভ্রষ্টরা পৃথক পৃথক ভাবে থাকে। জাহান্নামের এই উপত্যকা তাদেরকে পরস্পরে মিলিত হতে দেবে না। বর্ণিত আছে যে, এটা হবে রক্ত ও পূজের উপত্যকা। তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা হয়ে যাবে। বাহ্যতঃ জানা যাচ্ছে যে, এর দ্বারা ধ্বংস উদ্দেশ্য। আবার এটাও হতে পারে যে, এর দ্বারা জাহান্নামের কোন উপত্যকাকে বুঝানো হয়েছে। কিংবা প্রভেদ ও ব্যবধান সষ্টিকারী অন্য কোন উপত্যকা হবে। উদ্দেশ্য এই যে, ঐ উপাস্যরা ঐ উপাসকদেরকে জবাব পর্যন্ত দিবে না। তাদের পরস্পরের মধ্যে মিলনও ঘটবে না। কেননা, তাদের মাঝে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ আমি ঐ মুশরিক ও মুসলমানদের মাঝে আড়াল করে দেবে। যেমন- (আরবী) (৩০:১৪) (আরবী) ও (৩০:৪৩) এবং (আরবী) ইত্যাদি আয়াতসমূহে রয়েছে। এই পাপী ও অপরাধীরা এমন অবস্থায় জাহান্নাম দেখবে যে, সত্তর হাজার লাগামে তারা আবদ্ধ থাকবে। প্রত্যেক লাগামের উপর সত্তর হাযার করে ফেরেশতা থাকবে। দেখেই তারা বুঝতে পারবে যে, ওটাই তাদের কয়েদখানা। জাহান্নামে প্রবেশের পূর্বেই তাদের উপর কঠিন বিপদ, দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে। এগুলো হবে প্রকৃত শাস্তির পর্বের শাস্তি। কিন্তু তারা তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় খুঁজে পাবে না। হাদীস শরীফে আছে যে, পাঁচ হাজার বছর পর্যন্ত কাফিররা ঐ ভয়াবহ ও কম্পমান অবস্থাতেই থাকবে যে, তাদের সামনেই রয়েছে জাহান্নাম, আর ওর পূর্বেই তারা ঐরূপ শাস্তি ভোগ করতে রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মানুষের জন্যে আমি আমার কিতাবে সমস্ত কথা খুলে খুলে বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে মানুষ সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে না পড়ে এবং হিদায়াতের পথ হতে সরে না যায়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও মুষ্টিমেয় কিছুলোক ছাড়া সবাই মুক্তির পথ থেকে সরে পড়ে। মুসনাদে আহমাদ বর্ণিত আছে যে, একদা রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) ও হযরত আলীর (রাঃ) বাড়ীতে আগমন করেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা যে শুয়ে রয়েছে, নামায পড়ছো না কেন?” উত্তরে হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের প্রাণ আল্লাহ তাআলার হাতে রয়েছে। যখন তিনি ইচ্ছা করেন তখনই আমাদের উঠিয়ে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলীর (রাঃ) মুখে একথা শুনে আর কিছু না বলে ফিরে যেতে উদ্যত হন। ফিরবার পথে তিনি হাঁটুর উপর হাত মেরে বলতে বলতে যাচ্ছিলেনঃ “মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই সবচেয়ে বেশী বিতর্ক প্রিয়।”