সূরা:- আল-কাহাফা। সুরা:১৮ ৪৭-৪৯ নং আয়াত:- [وَوُضِعَ الْكِتَابُ আর উপস্থাপিত করা হবে ‘আমলনামা, And the Book will be produced, ‌] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৮৭)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৪৭-৪৯ নং আয়াত:-
[وَوُضِعَ الْكِتَابُ
আর উপস্থাপিত করা হবে ‘আমলনামা,
And the Book will be produced, ‌]
www.motaher21.net
وَ یَوۡمَ نُسَیِّرُ الۡجِبَالَ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ بَارِزَۃً ۙ وَّ حَشَرۡنٰہُمۡ فَلَمۡ نُغَادِرۡ مِنۡہُمۡ اَحَدًا ﴿ۚ۴۷﴾
আর স্মরণ করুন, যেদিন আমরা পর্বতমালাকে করব সঞ্চালিত এবং আপনি যমীনকে দেখবেন উন্মুক্ত প্রান্তর , আর আমরা তাদের সকলকে একত্র করব; তারপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।
وَ عُرِضُوۡا عَلٰی رَبِّکَ صَفًّا ؕ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا کَمَا خَلَقۡنٰکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍۭ ۫ بَلۡ زَعَمۡتُمۡ اَلَّنۡ نَّجۡعَلَ لَکُمۡ مَّوۡعِدًا ﴿۴۸﴾
আর তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের নিকট উপস্থিত করা হবে সারিবদ্ধভাবে (এবং বলা হবে), ‘তোমাদেরকে প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবেই তোমরা আমার নিকট উপস্থিত হয়েছ; অথচ তোমরা মনে করতে যে, তোমাদের জন্য প্রতিশ্রুত সময় আমি উপস্থিত করব না?’

وَ وُضِعَ الۡکِتٰبُ فَتَرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا فِیۡہِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ یٰوَیۡلَتَنَا مَالِ ہٰذَا الۡکِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیۡرَۃً وَّ لَا کَبِیۡرَۃً اِلَّاۤ اَحۡصٰہَا ۚ وَ وَجَدُوۡا مَا عَمِلُوۡا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظۡلِمُ رَبُّکَ اَحَدًا ﴿٪۴۹﴾
আর উপস্থাপিত করা হবে ‘আমলনামা, তখন তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে আপনি অপরাধীদেরকে দেখবেন আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবে, ‘হায়, দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা তো ছোট বড় কিছু বাদ না দিয়ে সব কিছুই হিসেব করে রেখেছে ।’ আর তারা যা আমল করেছে তা সামনে উপস্থিত পাবে ; আর আপনার রব তো কারো প্রতি যুলুম করেন না ।
৪৭-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:

 

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
পূর্ববর্তী অধ্যায়টা সমাপ্ত হয়েছে শাশ্বত মূল্যের অধিকারী সৎ কর্মসমূহের উল্লেখের মধ্য দিয়ে। এখানে ওই বিষয়টাকে সেই দিনের বর্ণনার সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যেদিন ওই সব শাশ্বত সৎ কর্মের ওযন থাকবে এবং হিসাব নিকাশ নেয়া হবে। এটাকে কেয়ামতের একটা দৃশ্যের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর অব্যবহিত পরে আলােচিত হয়েছে ইবলীসের ঘটনা। আদমকে সেজদা করতে ইবলীসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে, কিন্তু সে আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেছিলাে। অথচ আদমের সন্তানরা সেই ইবলিস ও তার বংশধর শয়তানদেরকে অভিভাবক ও বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করলাে। এ জন্যে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। কেননা তারা আগেই জেনেছে যে, ওরা মানুষের শত্রু। এ জন্যেই তারা কেয়ামতের দিন আযাব ভােগ করবে। আর যাদেরকে তারা আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করেছে তাদের কাছেই তাদের পূজারীরা যাবে। অথচ সেই প্রতিশ্রুত দিনে তাদের কোনাে প্রার্থনাই মঞ্জুর হবে না। ‘আর স্মরণ করে দেখাে ওই দিনের অবস্থাকে যখন আমি, আল্লাহ তায়ালা চালিয়ে দেবাে পর্বতসমূহকে এবং দেখতে পাবে তােমরা পৃথিবীকে পরিণত করা হয়েছে এক উন্মুক্ত প্রান্তরে… আর পাবে তারা সে সব কিছু যা তারা করেছে, আর তারা দেখবে, তাদের সামনে সব কিছু হাযির (অবস্থায়) আর তােমার রব কোনাে যুলুম করবেন না কারাে ওপর।’  *কেয়ামতের জীবন্ত চিত্র : এখানে এমন একটি দৃশ্যের অবতারণা করা হয়েছে যা মানব প্রকৃতির পক্ষে বুঝতে পারাটা খুবই সহজ। যে ভয়ানক দৃশ্য এ বর্ণনায় ফুটে উঠেছে তাতে মানব হৃদয়ে এক প্রচন্ড প্রকম্পন সৃষ্টি হয়। সেই মহা প্রলয় যখন শুরু হবে তখন পৃথিবীর সব কিছু মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ হারিয়ে ফেলার কারণে একেবারেই ওযনবিহীন হয়ে পড়বে। সুউচ্চ পর্বতরাশি যা আজকে জমাট পাথর রূপে আমরা পৃথিবীর মধ্যে দৃঢ়বদ্ধভাবে প্রােথিত দেখতে পাচ্ছি সেগুলাে সব স্থানচ্যুৎ হয়ে মাটির উপরিভাগে ভাসাভাসাভাবে চলতে থাকবে, সেগুলাের মধ্যে অবস্থিত অনু-পরমাণুগুলাে পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে ধুলিকণা সম উড়তে থাকবে। চিন্তা করে দেখনু, এ অবস্থার মধ্যে পতিত হয়ে মানব হৃদয়ের কী অবস্থা হতে পারে। গােটা পৃথিবীর সব কিছু ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে এবং নযরে পড়বে দিগন্ত ব্যাপী প্রসারিত এক ধূধূ মহা প্রান্তর। সেখানে কাউকে আপনজন হিসাবে পাওয়া যাবে না। আর না থাকবে সেখানে পথ দেখানাের মতাে কেউ, না কোনাে উঁচু নীচু ভূমি, পাহাড় পর্বত, না কোনাে শস্য শ্যামল ভূমি আর না পানির প্রশ্রবন সম্বলিত কোনাে উপত্যকা। এ সময়ে মানুষের মনে লুকায়িত যাবতীয় গােপন রহস্য খুলে যাবে, সেদিন কেউ কোনাে কথা লুকিয়ে রাখতে পারবে না। আরাে চিন্তা করে দেখুন, এই কঠিন দিনে সমান্তরাল এ পৃথিবীর মধ্যে কোনাে কিছুই আর গােপন থাকবে না। কোনাে মানুষকেও গােপন থাকতে দেখা যাবে না। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘একত্রিত করবাে সবাইকে, ওদের কাউকেই আমি ছাড়ব না।’ ওই মহাসমাবেশের দিনে কাউকে ছেড়ে দেয়া হবে না-সবাই হাযির হয়ে যাবে ওই মহা প্রান্তরে তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ আমল কাজ কর্ম ও ব্যবহার সহ সবাইকে হাযির করা হবে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর তাদেরকে হাযির করা হবে তােমার রব এর সামনে সারিবদ্ধভাবে…’ হাযির করা হবে গােটা মানবমন্ডলীকে যাদের কোনাে সীমা সংখ্যা থাকবে না, অর্থাৎ অগণিত হবে তাদের সংখ্যা। পৃথিবীর বুকে মানব জাতির বসতি শুরু হওয়া থেকে পৃথিবীর মহা প্রলয় পর্যন্ত যতাে মানুষ দুনিয়ায় পয়দা হয়েছে তারা সবাই ওই হাশরের ময়দানে হাযির হয়ে যাবে, কোনাে এক ব্যক্তিও বাকি থাকবে না। পৃথিবীর কোনাে অংশও আর গােপন থাকবে না সব অংশই মানবমন্ডলীর সামনে উপস্থিত থাকবে। এই পর্যায়ে এসে বর্ণনাভংগির পরিবর্তন হয়ে সম্বোধনসূচক বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে, যেন ওই দিনের সমাবেশের সকল জনতা উপস্থিত রয়েছে এবং তাদেরকে সরাসরি সম্বােধন করে কথা বলা হচ্ছে। এ বর্ণনাভংগি পাঠকের সামনে ওই কঠিন দিনের দৃশ্যকে এমন জীবন্ত ছবির মতাে তুলে ধরেছে যেন পাঠক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে হয়রান পেরেশান ওই বিশাল জনসমুদ্রকে। কল্পনায় ওই ভয়াবহ দৃশ্য অবলােকনে দৃষ্টি যেন পাথর হয়ে যেতে চাইছে, আমরাও যেন দেখছি ওই কঠিন অবস্থা আমাদের চোখের সামনে ভাসছে, শুনছি জনতার ওই বিভীষিকাময় কোলাহলকে, দেখছি ঐ সব নাফরমান লােকদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত লজ্জিত অবস্থায়, যারা এ দিনের আগমনকে অস্বীকার করেছিলাে। এমনই এক অবস্থাকে সামনে নিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, ‘হাঁ, অবশ্যই আজ তােমরা সেই অবস্থায় আমার কাছে ফিরে এসেছ যেমন করে প্রথম বারে আমি, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা, তােমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তােমরা তাে ভেবেছিলে এই ওয়াদাকৃত দিবস কখনই আসবে না।’ এই সম্বােধনসূচক বাক্যটি ওই অবস্থাকে জীবন্ত রূপ দিয়েছে এবং কেয়ামতের ওই ভয়াবহ দৃশ্যকে এমন ছবির মতাে ফুটিয়ে তুলেছে যেন এখনই আমাদের সামনে ওই ছবিটা ভাসছে, মনে হচ্ছে এটা ভবিষ্যতের অনুষ্ঠিতব্য এবং অজানা অচেনা কোনাে কেয়ামত নয়। আর অবশ্যই আমরা ওই ভয়ানক দৃশ্যের মধ্যে অপরাধী, পাপিষ্ঠ ও আল্লাহর হুকুম অমান্যকারীদেরকে নানা প্রকার অপমান সইতে দেখছি, বর্ণনা প্রসংগে বাহ্যিক যে দৃশ্য আমাদের নযরে পড়ছে তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি ওই নাফরমানদের লাঞ্চনার গ্লানি অত্যন্ত পরিস্ফুট হয়ে রয়েছে। আল্লাহর সতর্কতা তাঁর কালামে যেভাবে ধ্বনিত হয়েছে তাতে ওদের প্রতি কঠিন ধমকের সুর ফুটে উঠেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘অবশ্যই তােমরা সেই (অসহায় অবস্থায়) আমার কাছে এসেছে যেমন অতি (দুর্বল অবস্থায়) আমি তােমাদেরকে প্রথম বারে সৃষ্টি করেছিলাম অথচ তােমরা মনে করছে…’ ওই সময়কার দৃশ্যের জীবন্ত ছবি আমাদের সামনে হাযির করার পর, পরবর্তী অবস্থা কি হবে সে বিষয়ে আমাদেরকে জানানাে হচ্ছে, ‘হাযির করা হবে (মানুষের সামনে) তাদের জীবনের কার্যতালিকা রেকর্ড বুক তখন অপরাধী ব্যক্তিরা ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় দেখতে পাবে ওই কিতাবের মধ্যে লিপিবদ্ধ তাদের জীবনের সকল বিষয়গুলাে।’ অর্থাৎ তারা দেখতে পাবে তাদের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে তাদের জীবনের সকল কাজ কর্মের পূর্ণাংগ তালিকা। এ সময় তারা চিন্তা করতে থাকবে এবং পেছনের কাজগুলাে স্মরণ করে দেখতে পাবে, যা কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে তার প্রতিটি কথাই সত্য। তখন, তাদের জীবনের সকল দুষ্কর্মের অবশ্যম্ভাবী শাস্তির কথা চিন্তা করে তারা তাদের বুক সংকুচিত হয়ে যাবে, কেননা তারা দেখবে এ রেকর্ড বই তাে ছােটো বড়াে কোনােটাই বাদ দেয়নি। ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যা কিছু তারা করেছে তার প্রতিটি কথা গুণে গুণে এ কর্ম তালিকার মধ্যে লিখে রাখা হয়েছে। সুতরাং তাদের মন বলে উঠবে কি করে তারা রেহাই পাবে এর অনিবার্য শাস্তি থেকে। ‘তখন তারা বলে উঠবে, হায় আফসােস। কী আশ্চর্য কিতাব এটা, ছােট বড় কোনাে অপরাধের কথাই এ কিতাব লিখতে ছাড়েনি, সবই গুণে গুণে এর মধ্যে ভরে রেখে দিয়েছে?’ নিজের ওপর রাগ ও লজ্জা তাদেরকে এমনভাবে ঘিরে ফেলবে যে, ওই কঠিন শাস্তির ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় স্বগোক্তি করতে করতে নিজেদের অজান্তেই উপরােক্ত কথাগুলাে তারা উচ্চারণ করতে থাকবে চাইবে তারা পালিয়ে যেতে কিন্তু কোথায় যাবে তারা? আল্লাহর রাজ্য ছাড়া কোথাও তাে কোনাে আশ্রয় থাকবে না। তারা কাউকে তাদের সম্পর্কে ভুলিয়ে দিতে পারবে না বা কারো চোখে ধুলাে দিয়ে সরেও যেতে পারবে না যেমনটি আজ ওই চতুর লোকেরা মনে করে, তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তারা যা কিছু করেছে সবই হাযির পাবে।’ অর্থাৎ, যা কিছু করে এসেছে তার সমুচিত শাস্তি অবশ্যই তারা পাবে, ‘এবং তােমার রব কারাে ওপর যুলুম করবেন না।’ অর্থাৎ কাউকে তার পাওনা শাস্তি থেকে মােটেই বেশী দেবেন না-কিন্তু পাওনা শাস্তি কম দিলে তাঁকে ঠেকায় কে? এ প্রশ্ন যখন আসে তখন বুঝতে হবে তার হক কেউ নষ্ট করে থাকলে তা মাফ করে দেয়ায় তাকে কেউ বারণ করতে পারে না বা পারবে না কিন্তু কোনো বান্দার হক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার পাওনা ওই অপরাধীদের কাছ থেকে অবশ্যই তিনি বুঝে দেবেন, যেহেতু তাদের পাওনা আদায় করে না দিলে পাওনাদারদের প্রতি যুলুম করা হবে, অবশ্যই তিনি এ যুলুম করবেন না বা কিছুতেই তিনি এ যুলুম হতে দেবেন না। এটাই তার ইনসাফের দাবী। এমতাবস্থায় বান্দার হক কতাে কঠিন তা সহজেই অনুমেয়।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৪৭-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন। সেই দিন যে সব বিস্ময়কর বড় বড় কাজ সংঘটিত হবে, তিনি সেগুলি বর্ণনা করছেন। সেই দিন আকাশ ফেটে যাবে এবং পাহাড়-পর্বত উড়তে থাকবে যদিও তোমরা একে জমাটবদ্ধ দেখতে পাচ্ছ, কিন্তু ঐ দিন তা মেঘমালার মত দ্রুতবেগে চলতে থাকবে এবং ধূনো তুলোর মত হয়ে যাবে। যমীন সম্পূর্ণরূপে সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। তাতে কোন উঁচু-নীচু থাকবে না। এই যমীনে না থাকবে কোন বাড়ীঘর, না থাকবে কোন ছাউনি। কোন আড়াল ছাড়াই সমস্ত সৃষ্টজীব মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে হয়ে যাবে। কেউই তার থেকে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারবে না। কোথাও কোন আশ্রয়স্থল ও মাথা লুকানোর জায়গা থাকবে না। কোন গাছ-পালা, পাথর ও তৃণ-লতা দেখা যাবে না। প্রথম থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত যত লোক রয়েছে সবাই একত্রিত। হবে। ছোট বড় কেউই অনুপস্থিত থাকবে না। সমস্ত লোক আল্লাহ তাআলার সামনে সাবিরুদ্ধভাবে দাড়িয়ে যাবে। রূহ ও ফেরেশতামণ্ডলী কাতারবন্দি হয়ে দাড়াবেন। কারো কোন কথা বলার সাহস হবে না। একমাত্র তারাই কথা বলতে পারবেন যাদেরকে আল্লাহ কথা বলার অনুমতি দান করবেন এবং তারাও সঠিক কথাই বলবেন। সেদিন সমস্ত মানুষের সারি একটি হবে অথবা তারা কয়েকটি সারিতে বিভক্ত হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক আসবেন এবং ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে আসবে।” কিয়ামতকে যারা অস্বীকার করতো তাদেরকে সেইদিন ধমকের সূরে বলা হবেঃ দেখো, যেমন ভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, তেমনিভাবে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করে আমার সামনে দাড় করিয়েছি। তোমরা তো এটা অস্বীকার করতে? আমলনামা তাদের সামনে হাজির করে দেয়া হবে, যাতে ছোট বড়, প্রকাশ্য ও গোপনীয় সমস্ত আমল লিপিবদ্ধ থাকবে। পাপীরা তাদের দুষ্কর্মগুলি দেখে ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে এবং অত্যন্ত আফসোস করে বলবেঃ হায়! আমরা আমাদের জীবন ও আয়ুকে কি অবহেলায় না কাটিয়ে দিয়েছিলাম। বড়ই অনুতাপ যে, আমরা দুনিয়ায় শুধু দুষ্কার্যেই লিপ্ত থাকতাম। দেখো, এমন কোন কাজ নেই যা এই কিতাবে (আমলনামায়) লিখা পড়ে নাই। বরং ছোট-বড় সমস্ত গুনাহর কাজ এতে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

বর্ণিত আছে যে, সাহাবীগণ বলেনঃ “হুনায়েনের যুদ্ধ শেষে আমরা। মদীনায় প্রত্যাবর্তন করছিলাম। পথিমধ্যে এক ময়দানে আমরা সওয়ারী হতে অবতরণ করি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে বলেনঃ “যাও লাকড়ি, খড়ি, ডাল-পাতা, কঞ্চি, ছিটকি যা পাবে কুড়িয়ে নিয়ে এসো।” আমরা এদিক ওদিক ছুটে পড়লাম এবং ডাল, পাতা, কাঁটা খোচ, লাকড়ি, যা কিছু কুড়িয়ে নিয়ে আসলাম এবং এগুলোর একটি বড় ঢেরি হয়ে গেল। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এই ভাবেই গুনাহ্ জমা হয়ে ঢেরি হয়ে যায়। আল্লাহকে তোমরা ভয় করতে থাকো এবং ছোট বড় গুনাহ হতে পরহেয করো। সবই লিখে নেয়া হচ্ছে ও গণনা করা হচ্ছে। ভাল মন্দ যে যা কিছু করেছে তা সে বিদ্যমান পাবে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) যেমন (আরবী) ও (আরবী) এসব আয়াতে রয়েছে। অর্থাৎ সেই দিন গোপনীয় সবকিছুই প্রকাশিত হয়ে যাবে।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে কিয়ামতের দিন একটি পতাকা থাকবে। এই পতাকা হবে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা অনুযায়ী, এর দ্বারা তারা পরিচিত হবে। অন্য হাদীসে আছে যে, ঐ ঝাণ্ডাটি তার উরুর পার্শ্বে থাকবে এবং ঘোষণা করা হবেঃ “এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতা।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি জুলুম করেন না। ক্ষমা ও মাফ করে দেয়া তার বিশেষণ। হাঁ, তবে পাপী ও অপরাধীদেরকে তিনি স্বীয় ক্ষমতা, নিপুণতা এবং আদল ও ইনসাফের সাথে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।”

অপরাধী ও অবাধ্য লোকদের দ্বারা জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। তারপর কাফির ও মুশরিকরা ছাড়া মু’মিনরা পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা এক অনু পরিমাণও অন্যায় করেন না। তিনি পুণ্যকে বৃদ্ধি করে দেন এবং পাপকে সমান রাখেন। ন্যায়ের দাড়িপাল্লা সেদিন সামনে থাকবে। কারো সাথে কোন দুর্ব্যবহার করা হবে না।

হযরত জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে একটি হাদীস শুনেছেন এই খবর অামার কাছে পৌঁছে। ঐ হাদীসটি আমি স্বয়ং তার মুখে শুনবার উদ্দেশ্য একটি উট ক্রয় করি এবং ওর উপর আসবাবপত্র উঠিয়ে নিয়ে সফরে বেরিয়ে পড়ি। সুদীর্ঘ এক মাসের ভ্রমণের পর সন্ধ্যার সময় আমি তাঁর কাছে পৌঁছি। সেখানে পৌঁছে জানতে পারি যে, তিনি হলেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উনায়েস (রাঃ)। আমি দারওয়ানকে বললামঃ যাও, তাকে খবর দাও যে, যাবির (রাঃ) দরবার উপর পঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি খবর পেয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ “জাবির ইবনু আবদিল্লাহ কি?” আমি উত্তরে বললামঃ জ্বি, হাঁ। এটা শোনা মাত্রই তিনি গায়ের চাদর ঠিক করতে করতে তড়িৎ গতিতে আমার কাছে ছুটে আসলেন। এসেই তিনি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মুআনাকার (কাধে কাধ মেলানোর পর আমি তাকে বললামঃ “আমি খবর পেয়েছি যে, আপনি কিসাসের ব্যাপারে কোন একটি হাদীস রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছেন। আমি স্বয়ং আপনার মুখে ঐ হাদীসটি শুনবার উদ্দেশ্য এখানে এসেছি এবং খবর শোনা মাত্রই আমি সফর শুরু করেছি এই ভয়ে যে, এই হাদীসটি শুনবার পূর্বেই হয়তো আমি মৃত্যুবরণ করি অথবা আপনার মৃত্যু হয়ে যায়। এখন আপনি আমাকে ঐ হাদীসটি শুনিয়ে দিন। তিনি তখন বলতে শুরু করলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার সমস্ত বান্দাকে তার সামনে একত্রিত করবেন। ঐ সময় তারা উলঙ্গ দেহ ও খৎনাহীন অবস্থায় থাকবে। তাদের কাছে কোনই আসবাবপত্র থাকবে না। তারপর তাদের সামনে ঘোষণা করা হবে যে, ঘোষণা নিকটবর্তী ও দূরবর্তী সবাই সমানভাবে শুনতে পাবে। মহান আল্লাহ বলবেনঃ “আমি মালিক। আমি বিনিময় প্রদানকারী। ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাহান্নামী জাহান্নামে যাবে না যতক্ষণ না আমি তার ঐ হক আদায় করে না দেবো যা কোন জান্নাতীর জিম্মায় রয়েছে। আর কোন জান্নাতীও জান্নাতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার ঐ প্রাপ্য আদায় করে দেবো যা কোন জাহান্নামীর যিম্মায় রয়েছে। ঐ হক বা প্রাপ্য যতই ক্ষুদ্র হোক না কেন।” আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা সবাই তো সেদিন উলঙ্গ দেহ ও মালধন শূন্য অবস্থায় থাকবে, এ অবস্থায় কেমন করে প্রাপ্য আদায় করা। হবে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “হাঁ (যেভাবেই হোক না কেন), সেই দিন পুণ্যবান ও পাপীদের নিকট থেকে হক বা প্রাপ্য আদায় করে নেয়া হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) অন্য একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন শিং বিহীন বকরীকে যদি কোন শিং বিশিষ্ট বকরী শিং দ্বারা গুঁতো মেরে থাকে তবে তার থেকেও প্রতিশোধ গ্রহণ করিয়ে দেয়া হবে। এর আরো বহু প্রমাণ রয়েছে। যেগুলি আমরা (আরবী) (২১:৪৭) এই আয়াতের তাফসীরে এবং (আরবী) (৬:৩৮) এই আয়াতের তাফসীরে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি।

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৪৭-৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে আকাশ-জমিনে যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হবে তার বর্ণনা দিচ্ছেন। সেদিন যেসব বিস্ময়কর বড় বড় কাজ সংঘটিত হবে তার মধ্যে কয়েকটি তুলে ধরা হয়েছে। সেদিন পাহাড়গুলো উড়তে থাকবে, পৃথিবী শূন্য প্রান্তরে পরিণত হবে। গাছ-পালা, তরু-লতা কোন কিছুই থাকবে না। পৃথিবী ধূ-ধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَّاحِدَةٌ لا‏ وَّحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً لا ‏ فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ)‏

“যখন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে একটি মাত্র ফুৎকার। আর পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। সেদিন যা সংঘটিত হওয়ার তা অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:১৩-১৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(وَّسُيِّرَتِ الْـجِبَالُ فَكَانَتْ سَرَابًا‏)‏

“এবং পাহাড়সমূহকে চলমান করা হবে, ফলে সেগুলো হয়ে যাবে মরীচিকা।” (সূরা নাবা ৭৮:২০) কিয়ামতের পূর্ব অবস্থা ও কিয়ামতের ভয়াবহতা কুরআনের ত্রিশতম পারায় আল্লাহ তা‘আলা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

আর সেদিন সকলকে কাতারবদ্ধভাবে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। মানুষ জন্মের দিন দুনিয়াতে যেভাবে খৎনাবিহীন উলঙ্গ অবস্থায় এসেছিল ঠিক কিয়ামতের দিন সেভাবে আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত হবে।

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِيْنَ

তোমাদেরকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে নগ্ন পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায়। ইচ্ছা করলে এ আয়াত তেলাওয়াত করতে পারো। “যেভাবে আমি প্রথম সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; এ আমার কৃত ওয়াদা, আমি এটা পালন করবই।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৪)

আর তথায় তাদের আমলনামাগুলো পেশ করা হবে। কারো আমলনামায় কোন প্রকার হ্রাস-বৃদ্ধি করা হবে না। বরং যে যা আমল করবে ঠিক তা-ই সেখানে উপস্থিত পাবে, যা দেখে তারা অবাক হয়ে যাবে এবং বলবে: এটা কেমন কিতাব যা ছোট-বড় সবকিছু লিখে রেখেছে যাতে কোন কিছু বাদ নেই।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَكُلَّ إِنْسَانٍ أَلْزَمْنٰهُ طَآئِرَه۫ فِيْ عُنُقِه۪ ط وَنُخْرِجُ لَه۫ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كِتٰبًا يَّلْقَاهُ مَنْشُوْرًا ‏ اِقْرَأْ كِتٰبَكَ ط كَفٰي بِنَفْسِكَ الْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيْبًا) ‏

“প্রত্যেক মানুষের কর্ম আমি তার গ্রীবালগ্ন করেছি এবং কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য বের করব এক কিতাব, যা সে পাবে উন্মুক্ত। ‘তুমি তোমার কিতাব পাঠ কর‎, আজ তুমি নিজেই তোমার হিসেব নিকেশের জন্য যথেষ্ট।’’ (সূরা ইসরা ১৭:১৩-১৪)

আর ঐ কিতাবে মানুষ তাঁর সমস্ত জীবনে যা আমল করেছে তার সকল কিছুই লিপিবদ্ধ থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা সেই আমল অনুপাতে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। বিন্দু পরিমাণ জুলুম করবেন না।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ط وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ط وَكَفٰي بِنَا حٰسِبِيْنَ)‏

“এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও সেটা আমি উপস্থিত করব; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আম্বিয়া ২১:৪৭)

সুতরাং কিয়ামত দিবসে সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন সকল মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সামনে উপস্থিত করা হবে এবং তাদের আমল অনুপাতে বিচার করা হবে, তাদের প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কিয়ামত একদিন অবশ্যই সংঘটিত হবে।
২. সকল মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার সম্মুখে হাজির করা হবে।
৩. মানুষের সকল কাজ-কর্ম লিখে রাখা হয়।
৪. মানুষের প্রতি কোন প্রকার জুলুম করা হবে না।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#887)
Sura:18
Sura: Kahaf
Ayat: 47-49
[ وَوُضِعَ الْكِتَابُ

And the Book will be produced,]

www.motaher21.net

18:47

وَ یَوۡمَ نُسَیِّرُ الۡجِبَالَ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ بَارِزَۃً ۙ وَّ حَشَرۡنٰہُمۡ فَلَمۡ نُغَادِرۡ مِنۡہُمۡ اَحَدًا ﴿ۚ۴۷﴾

And [warn of] the Day when We will remove the mountains and you will see the earth prominent, and We will gather them and not leave behind from them anyone.
18:48

وَ عُرِضُوۡا عَلٰی رَبِّکَ صَفًّا ؕ لَقَدۡ جِئۡتُمُوۡنَا کَمَا خَلَقۡنٰکُمۡ اَوَّلَ مَرَّۃٍۭ ۫ بَلۡ زَعَمۡتُمۡ اَلَّنۡ نَّجۡعَلَ لَکُمۡ مَّوۡعِدًا ﴿۴۸﴾

And they will be presented before your Lord in rows, [and He will say], “You have certainly come to Us just as We created you the first time. But you claimed that We would never make for you an appointment.”

18:49

وَ وُضِعَ الۡکِتٰبُ فَتَرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا فِیۡہِ وَ یَقُوۡلُوۡنَ یٰوَیۡلَتَنَا مَالِ ہٰذَا الۡکِتٰبِ لَا یُغَادِرُ صَغِیۡرَۃً وَّ لَا کَبِیۡرَۃً اِلَّاۤ اَحۡصٰہَا ۚ وَ وَجَدُوۡا مَا عَمِلُوۡا حَاضِرًا ؕ وَ لَا یَظۡلِمُ رَبُّکَ اَحَدًا ﴿٪۴۹﴾

And the record [of deeds] will be placed [open], and you will see the criminals fearful of that within it, and they will say, “Oh, woe to us! What is this book that leaves nothing small or great except that it has enumerated it?” And they will find what they did present [before them]. And your Lord does injustice to no one.

Tafsir Ibne Kasir Said:-

The Major Terrors of the Hour

Allah tells;

وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ

And (remember) the Day We shall cause the mountains to pass away, and you will see the earth as a leveled plain, and We shall gather them so that We will leave not one of them behind.

Allah tells us of the terrors of the Day of Resurrection, and the awesome things that will come to pass, as He says elsewhere:

يَوْمَ تَمُورُ السَّمَأءُ مَوْراً

وَتَسِيرُ الْجِبَالُ سَيْراً

On the Day when the heaven will shake with a dreadful shaking, And the mountains pass moving away. (52:9-10)

meaning, they will move from their places and will vanish.

As Allah says:

وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِىَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ

And you will see the mountains and think them solid, but they shall pass away as the passing away of the clouds. (27:88)

وَتَكُونُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنفُوشِ

And the mountains will be like carded wool. (101:5)

وَيَسْـَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّى نَسْفاً

فَيَذَرُهَا قَاعاً صَفْصَفاً

لااَّ تَرَى فِيهَا عِوَجاً وَلاا أَمْتاً

And they ask you about the mountains, say:”My Lord will pulverize them scattering (their dust). To leave them as a barren plain. You will not see in it crookness or curve. (20:105-107)

Allah tells us that He will cause the mountains to vanish and be leveled, and the earth will be left as a smooth plain, a level surface with nothing crooked or curved therein, no valleys or mountains.

So Allah says:

وَتَرَى الاَْرْضَ بَارِزَةً

and you will see the earth as a leveled plain,

meaning clear and open, with no features that anyone may recognize and nothing for anyone to hide behind. All creatures will be visible to their Lord, and not one of them will be hidden from Him.

Mujahid and Qatadah said,
وَتَرَى الاَْرْضَ بَارِزَةً
(and you will see the earth as a leveled plain),

“No one will be hidden or absent.”

Qatadah said,

“There will be no buildings and no trees.”

وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا

and we shall gather them, so that We will not leave one of them behind.

means, `We shall gather them all, the first of them and the last of them, and We shall not leave anyone behind, young or old.’

As Allah says:

قُلْ إِنَّ الاٌّوَّلِينَ وَالاٌّخِرِينَ

لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَـتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ

Say:”(yes) verily, those of old, and those of later times. All will surely be gathered together for an appointed meeting of a known Day. (56:49,50)

ذلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذَلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ

That is a Day whereon mankind will be gathered together, and that is a Day when all will be present. (11:103).

وَعُرِضُوا عَلَى رَبِّكَ صَفًّا

And they will be set before your Lord, aligned.

This may mean that all of creation will stand before Allah in one row, as Allah says:

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَـيِكَةُ صَفّاً لاَّ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـنُ وَقَالَ صَوَاباً

The Day that Ar-Ruh (Jibril) and the angels will stand aligned, they will not speak except him whom the Most Gracious (Allah) allows, and he will speak what is right); (78:38)

or it may mean that they will stand in rows, as Allah says:

وَجَأءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفّاً صَفّاً

And your Lord comes with the angels in rows. (89:22)

لَّقَدْ جِيْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ

Now indeed, you have come to Us as We created you the first time.

This is a rebuke to those who denied the Hereafter, a reprimand before all creation.

This is why Allah says to them:

بَلْ زَعَمْتُمْ أَلَّن نَّجْعَلَ لَكُم مَّوْعِدًا

Nay, but you thought that We had appointed no meeting for you (with Us).,

meaning, you did not think that this would happen to you or that it would come to pass.

 

 

وَوُضِعَ الْكِتَابُ

And the Book will be produced,

the Book of deeds, which contains a record of everything, major or minor, significant or insignificant, great or small.

فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ

and you will see the criminals, fearful of that which is therein.

of their evil deeds and reprehensible actions.

وَيَقُولُونَ يَا وَيْلَتَنَا

They will say, “Woe to us!”

expressing words of regret for having wasted their lives.

مَالِ هَذَا الْكِتَابِ لَاا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَاا كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا

What sort of Book is this that leaves neither a small thing nor a large thing, but has recorded it with numbers!

it has left no sin, major or minor, and no action, no matter how small, but it has recorded it with the utmost precision and accuracy.

وَوَجَدُوا مَا عَمِلُوا حَاضِرًا

And they will find all that they did, present,

everything, both good and evil, as Allah says,

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا

On the Day when every person will be confronted with all the good he has done. (3:30)

Allah says:

يُنَبَّأُ الاِنسَـنُ يَوْمَيِذِ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ

On that Day man will be informed of what he sent forward, and what he left behind. (75:13)

And Allah says:

يَوْمَ تُبْلَى السَّرَايِرُ

The Day when all the secrets will be exposed. (86:9)

meaning, everything that is hidden in people’s hearts will become known.

Imam Ahmad recorded from Anas that the Prophet said,

لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُعْرَفُ بِه

Every traitor will have a banner on the Day of Resurrection, by which he will be known.

It was also narrated in the Two Sahihs, where one narration says,

يُرْفَعُ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اسْتِهِ بِقَدْرِ غَدْرَتِهِ يُقَالُ هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَنِ بْنِ فُلَن

On the Day of Resurrection, for every traitor a banner will be erected by his backside, and it will be said, “This is the betrayer of so-and-so the son of so-and-so.”

وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

and your Lord treats no one with injustice.

means, He will judge between His creatures for all of their deeds, and He will not treat any of His creatures with injustice. He will overlook and forgive and have mercy, and He will punish whomever He wills by His power, wisdom and justice. He will fill Hell with the disbelievers and those who have been disobedient. Then He will rescue the disobedient, and leave the disbelievers there for eternity. He is the Judge Who never wrongs or oppresses.

Allah says:

إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَإِن تَكُ حَسَنَةً يُضَـعِفْهَا

Surely, Allah wrongs not even of the weight of a speck of dust, but if there is any good, He doubles it. (4:40)

وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْيًا فَلَ تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْيًا

وَإِن كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ

And We shall set up Balances of justice on the Day of Resurrection, then none will be dealt with unjustly in anything. then none will be dealt with unjustly in anything. And if there be the weight of a mustard seed, We will bring it. And sufficient are We to take account. (21:47)

And there are many similar Ayat.

Imam Ahmad recorded that Abdullah bin Muhammad bin Aqil heard Jabir bin Abdullah say,

“I was told about a Hadith which a man heard from the Prophet, so I bought a camel and put my saddle on it, then I traveled on it for a month until I came to Ash-Sham, where Abdullah bin Unays was. I said to the doorkeeper, `Tell him that Jabir is at the door.’

He said, `Jabir bin Abdullah!’

I said, `Yes.’

So he came out, still putting his garment on, and embraced me, and I embraced him, and said:

`I heard a Hadith narrated by you, that you heard from the Messenger of Allah about reciprocal punishments. I was afraid that you or I would die before I could hear it.’

He said, `I heard the Messenger of Allah say:

يَحْشُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ النَّاسَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَوْ قَالَ الْعِبَادَ عُرَاةً غُرْلاً بُهْمًا

Allah will gather the people — or His servants — on the Day of Resurrection, naked, uncircumcised and Buhman.
I asked, `What is Buhman?’ He said,

لَيْسَ مَعَهُمْ شَيْءٌ

ثُمَّ يُنَادِيهِمْ بِصَوْتٍ يَسْمَعُهُ مَنْ بَعُدَ كَمَا يَسْمَعُهُ مَنْ قَرُبَ

أَنَا الْمَلِكُ أَنَا الدَّيَّانُ لَا يَنْبَغِي لاَِحَدٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ أَنْ يَدْخُلَ النَّارَ وَلَهُ عِنْدَ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَقٌّ حَتَّى أُقِصَّهُ مِنْهُ وَلَا يَنْبَغِي لاَِحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ أَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ وَلَهُ عِنْدَ رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ النَّارِ حَقٌّ حَتَّى أُقِصَّهُ مِنْهُ حَتَّى اللَّطْمَة

They will have nothing with them.

Then a voice will call out to them that will be heard by those far away just as easily as it will be heard by those near:

“I am the Sovereign, I am the Judge. None of the people of Hell should enter Hell if he is owed something by one of the people of Paradise, until I have settled the matter, and none of the people of Paradise should enter Paradise if he is owed something by one of the people of Hell, until I settle the matter — even if it is only the case of a slap.”

We said, `How will that be, when we have come before Allah barefooted, naked, uncircumcised and having nothing with us?’

He said,

بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّيَات

By (merit for) good deeds, and (recompense) for evil deeds.

Shubah narrated from Al-Awwam bin Muzahim from Abu Uthman from Uthman bin Affan, may Allah be pleased with him, that the Messenger of Allah said:

إِنَّ الْجَمَّاءَ لَتَقْتَصُّ مِنَ الْقَرْنَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَة

The animal who lost a horn will settle the score with the one that has horns on the Day of Resurrection.

It was recorded by Abdullah the son of Imam Ahmad, and there are corroborating narrations through other routes

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply