أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৮৫)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৩২-৪৪ নং আয়াত:-
[مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ ۚ
‘‘আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে; আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।’’]
www.motaher21.net
وَ اضۡرِبۡ لَہُمۡ مَّثَلًا رَّجُلَیۡنِ جَعَلۡنَا لِاَحَدِہِمَا جَنَّتَیۡنِ مِنۡ اَعۡنَابٍ وَّ حَفَفۡنٰہُمَا بِنَخۡلٍ وَّ جَعَلۡنَا بَیۡنَہُمَا زَرۡعًا ﴿ؕ۳۲﴾
তুমি তাদের কাছে পেশ কর দুই ব্যক্তির একটি উপমা; তাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দু’টি আঙ্গুর বাগান এবং সে দু’টিকে আমি খেজুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করেছিলাম। আর এই দুয়ের মধ্যবর্তী স্থানকে করেছিলাম শস্যক্ষেত্র।
کِلۡتَا الۡجَنَّتَیۡنِ اٰتَتۡ اُکُلَہَا وَ لَمۡ تَظۡلِمۡ مِّنۡہُ شَیۡئًا ۙ وَّ فَجَّرۡنَا خِلٰلَہُمَا نَہَرًا ﴿ۙ۳۳﴾
উভয় বাগানই ফল দান করত এবং এতে কোন ত্রুটি করত না আর আমরা উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম নহর।
وَّ کَانَ لَہٗ ثَمَرٌ ۚ فَقَالَ لِصَاحِبِہٖ وَ ہُوَ یُحَاوِرُہٗۤ اَنَا اَکۡثَرُ مِنۡکَ مَالًا وَّ اَعَزُّ نَفَرًا ﴿۳۴﴾
তার প্রচুর ধন-সম্পদ ছিল। অতঃপর কথা প্রসঙ্গে সে তার বন্ধুকে বলল, ‘ধন-সম্পদে তোমার তুলনায় আমি শ্রেষ্ঠ এবং জনবলে তোমার তুলনায় আমি বেশী শক্তিশালী।’
وَ دَخَلَ جَنَّتَہٗ وَ ہُوَ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِہٖ ۚ قَالَ مَاۤ اَظُنُّ اَنۡ تَبِیۡدَ ہٰذِہٖۤ اَبَدًا ﴿ۙ۳۵﴾
এভাবে নিজের প্রতি যুলুম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটা কখনও ধ্বংস হয়ে যাবে।
وَّ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّ لَئِنۡ رُّدِدۡتُّ اِلٰی رَبِّیۡ لَاَجِدَنَّ خَیۡرًا مِّنۡہَا مُنۡقَلَبًا ﴿۳۶﴾
‘আমি মনে করি না যে, কেয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি আমার রব-এর কাছে ফিরিয়ে নেয়াও হয়, তবে আমি তো নিশ্চয় এর চেয়ে উৎকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল পাব!
قَالَ لَہٗ صَاحِبُہٗ وَ ہُوَ یُحَاوِرُہٗۤ اَکَفَرۡتَ بِالَّذِیۡ خَلَقَکَ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ سَوّٰىکَ رَجُلًا ﴿ؕ۳۷﴾
উত্তরে তাকে তার বন্ধু বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে ও পরে বীর্য হতে এবং তারপর পূর্ণাঙ্গ করেছেন মনুষ্য আকৃতিতে?
لٰکِنَّا۠ ہُوَ اللّٰہُ رَبِّیۡ وَ لَاۤ اُشۡرِکُ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا ﴿۳۸﴾
কিন্তু আমি বলি, তিনি আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরীক করি না।
وَ لَوۡ لَاۤ اِذۡ دَخَلۡتَ جَنَّتَکَ قُلۡتَ مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ ۚ اِنۡ تَرَنِ اَنَا اَقَلَّ مِنۡکَ مَالًا وَّ وَلَدًا ﴿ۚ۳۹﴾
তুমি যখন ধনে ও সন্তানে তোমার তুলনায় আমাকে কম দেখলে, তখন তোমার বাগানে প্রবেশ করে তুমি কেন বললে না, ‘‘আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে; আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।’’
فَعَسٰی رَبِّیۡۤ اَنۡ یُّؤۡتِیَنِ خَیۡرًا مِّنۡ جَنَّتِکَ وَ یُرۡسِلَ عَلَیۡہَا حُسۡبَانًا مِّنَ السَّمَآءِ فَتُصۡبِحَ صَعِیۡدًا زَلَقًا ﴿ۙ۴۰﴾
‘তবে হয়ত আমার রব আমাকে তোমার বাগানের চেয়ে উৎকৃষ্টতর কিছু দেবেন এবং তোমার বাগানে আকাশ থেকে নির্ধারিত বিপর্যয় পাঠাবেন , যার ফলে তা উদ্ভিদশূন্য ময়দানে পরিণত হবে।
اَوۡ یُصۡبِحَ مَآؤُہَا غَوۡرًا فَلَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ لَہٗ طَلَبًا ﴿۴۱﴾
অথবা ওর পানি ভূ-গর্ভে অন্তর্হিত হবে এবং তুমি কখনো ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’
وَ اُحِیۡطَ بِثَمَرِہٖ فَاَصۡبَحَ یُقَلِّبُ کَفَّیۡہِ عَلٰی مَاۤ اَنۡفَقَ فِیۡہَا وَ ہِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِہَا وَ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُشۡرِکۡ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا ﴿۴۲﴾
আর তার ফল-সম্পদ বিপর্যয়ে বেষ্টিত হয়ে গেল এবং সে তাতে যা ব্যয় করেছিল তার জন্য হাতের তালু মেরে আক্ষেপ করতে লাগল যখন তা মাচানসহ ভুমিতে লুটিয়ে পড়ল। সে বলতে লাগল, ‘হায় আমি যদি কাউকেও আমার রব-এর সাথে শরীক না করতাম !
وَ لَمۡ تَکُنۡ لَّہٗ فِئَۃٌ یَّنۡصُرُوۡنَہٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ مَا کَانَ مُنۡتَصِرًا ﴿ؕ۴۳﴾
আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোন লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকারে সমর্থ হল না।
ہُنَالِکَ الۡوَلَایَۃُ لِلّٰہِ الۡحَقِّ ؕ ہُوَ خَیۡرٌ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ عُقۡبًا ﴿٪۴۴﴾
এই ক্ষেত্রে সাহায্য করবার অধিকার সত্য আল্লাহরই। পুরস্কারদানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।
৩২-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৩২-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দু’ ব্যক্তির উদাহরণ দেয়ার মাধ্যমে যারা গর্ব-অহঙ্কার ও আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করে তাদের পরিণাম এবং যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে ও তাঁর শুকরিয়া আদায় করে আর তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে না তাদের প্রতিদানের কথা তুলে ধরেছেন।
তাহল আল্লাহ তা‘আলা এক ব্যক্তিকে দুটি উদ্যান দান করেছিলেন আর ঐ উদ্যানকে খর্জুর বৃক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত করে দিয়েছেন এবং এ দু’ বাগানের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল শস্যক্ষেত্র। উভয় বাগান থেকে ফল আসত আর তার ফাঁকে ফাঁকে ছিল নহর প্রবাহিত। এই সকল কারণে বাগানের মালিক অহঙ্কারী হয়ে পড়ে এবং আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করে ও কিয়ামতকে অস্বীকার করে বসে। এমনকি সে অহঙ্কার করে বলে যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করি তবে আমাকে তার চেয়ে আরও উত্তম জিনিস দেয়া হবে। যেমন সে বলত:
(وَّلَئِنْ رُّجِعْتُ إِلٰي رَبِّيْٓ إِنَّ لِيْ عِنْدَه۫ لَلْحُسْنٰي)
“আর আমি যদি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হইও তবে তাঁর নিকট তো আমার জন্য কল্যাণই থাকবে।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১:৫০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(أَفَرَأَيْتَ الَّذِيْ كَفَرَ بِاٰيٰتِنَا وَقَالَ لَأُوْتَيَنَّ مَالًا وَّوَلَدًا )
“তুমি কি লক্ষ্য করেছ সে ব্যক্তিকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং সে বলে, ‘আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবেই।’’ (সূরা মারইয়াম ১৯:৭৭)
কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার এই অহঙ্কারের কারণে তার সকল কিছু ধ্বংস করে দিলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলার এই আযাব থেকে কেউ তা রক্ষা করতে পারেনি এবং সেও পারেনি। সেক্ষেত্রে সে যদি গর্ব-অহঙ্কার না করত এবং আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক না করত ও আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার এই সমস্ত জিনিস ধ্বংস করতেন না। বরং তাকে তার চেয়েও আরো উত্তম জিনিস দান করতেন।
সুতরাং ধন-সম্পদ যতই হোক না কেন, সেজন্য গর্ব-অহঙ্কার করা যাবে না, বরং আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং সম্পদের হক তথা যাকাত আদায় করতে হবে। আর আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করা থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তাহলেই সে সম্পদ আখিরাতে উপকারে আসবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে।
২. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
৩. যে কোন কাজ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য অন্বেষণ করতে হবে।
৪. কোন প্রকার গর্ব-অহঙ্কার করা যাবে না।
৫. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে।
৬. শাস্তি আসার পূর্বে ঈমান আনতে হবে, শাস্তি এসে গেলে ঈমান এনে আর কোন লাভ হবে না।
৭. কেউ সৎ পরামর্শ দিলে তা গ্রহণ করা উচিত।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*আরো একটি চমকপ্রদ ঘটনা : এরপর দুই ব্যক্তি ও দুটি বাগানের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এ কাহিনীর মধ্য দিয়ে ক্ষণস্থায়ী জীবন ও চিরস্থায়ী জীবনের দৃষ্টান্ত দেয়া হয়েছে, তুলে ধরা হয়েছে পার্থিব জীবনের ঐশ্বর্য ধন্য এক ব্যক্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সাধনায় গৌরব বােধকারী অপর এক ব্যক্তির সুস্পষ্ট দুটো নমুনা। তারা উভয়ে দুটো মানব শ্রেণীর চরিত্রের প্রতিনিধি। যে ব্যক্তি দুটো বাগানের মালিক, সে এমন এক ধনাঢ্য ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যাকে সম্পদ ও প্রাচুর্যের আধিক্য দিশেহারা করে দিয়েছে এবং মানুষের জীবন ও ভাগ্যের নিয়ন্তা সর্বোচ্চ শক্তিমান সত্ত্বার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। সে পৃথিবীর এই সম্পদকে চিরস্থায়ী ও অবিনশ্বর মনে করে। সে ভাবে, পৃথিবীর কোনাে শক্তি বা প্রতাপশালী ব্যক্তি যেন তার কোনাে ক্ষতি করতে পারবে না। আর তার বন্ধু এমন এক ধরনের মানুষের নমুনা, যে নিজের ঈমান নিয়েই যথেষ্ট গৌরব বােধ করে, যে সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, সকল নেয়ামত নেয়ামতদাতার প্রশংসা ও স্মরণকে অপরিহার্য করে তােলে বলে বিশ্বাস করে এবং তার প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তাকে অস্বীকার করার কোনাে অবকাশ রাখে না। বিপুল সমৃদ্ধি ও সমারােহে পরিপূর্ণ দুটো বাগানের দৃশ্য বর্ণনার মাধ্যমে এ কাহিনী শুরু হয়েছে, ‘তাদের কাছে তুমি সেই দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত তুলে ধরাে, যাদের একজনকে আমি আংগুরের দুটো বাগান দিয়েছিলাম এবং সেই দুটোকে আমি খেজুরের বাগান দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম। আর এ দুটোর মধ্যে শস্যখামারও তৈরী করে রেখেছিলাম…'(আয়াত ৩২-৩৩) খেজুরের বাগানে ঘেরা দুটো ফলবান আংগুরের বাগান, তার মাঝে ফসলের ক্ষেত এবং এগুলাের মধ্যদিয়ে বয়ে গেছে নদী। এ এক মনােরম দৃশ্য, এক চমৎকার প্রাণােচ্ছল পরিবেশ, মনােমুগ্ধকর সম্পদের বিবরণ, উভয় বাগানই নিজ নিজ ফল পূর্ণ রূপে দিত এবং ফলদানে মােটেই যুলুম করতাে না। ‘যুলুম করতাে না’ কথাটার অর্থ হলাে, ফল কম দিতাে না। ‘যুলুম’ শব্দটা ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হলাে বাগান দুটো ও তাদের মালিকের চরিত্র যে সম্পূর্ণ পরস্পর বিরােধী তা দেখানাে। কেননা বাগানের মালিক অহংকার করে ও অকৃতজ্ঞ হয়ে নিজের ওপর যুলুম করেছিলাে। বাগানের মালিক বাগান দেখে উৎফুল্প হয়ে ওঠে। সে মােরগের মতাে লম্ফ ঝম্ফ করে, ময়ূরের মতাে দম্ভে মেতে ওঠে এবং তার দরিদ্র বন্ধুর ওপর আভিজাত্য ফলায়, ‘সে তার বন্ধুকে বললো, আমি তোমার চেয়ে ধন সম্পদেও বড়, জনশক্তিতেও পরাক্রমশালী।’ এরপর সে তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে একটা বাগানে প্রবেশ করে, অহংকারে মত্ত হয়ে আল্লাহকে এবং আল্লাহর নেয়ামতের শােকর আদায় করতে ভুলে যায় । সে ভাবে যে, এই সব ফলবান বাগান কখনাে ধ্বংস হবে না এবং কেয়ামত কখনাে হবে না। তবে যদি তা হয়েই বসে, তবে সেখানে সে যথেষ্ট সুযােগ সুবিধা পাবে। সে যখন পৃথিবীর একজন জমীদার, তখন আখেরাতে তার সম্মান ও মর্যাদার দিকে নিশ্চয়ই লক্ষ্য রাখতে হবে। সে নিজের ওপর যুলুম করতে থাকা অবস্থায় নিজের বাগানে ঢুকলাে…'(আয়াত ৩৫-৩৬) আসলে অহংকারের বশেই সম্পদশালী ও পরাক্রমশালীরা মনে করে যে, তারা নশ্বর দুনিয়ার অধিবাসীদের ওপর যে কর্তৃত্ব ও আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে, তা পরকালেও তাদের জন্যে সংরক্ষিত থাকবে। পক্ষান্তরে তার দরিদ্র বন্ধু, যার ধনবল, জনবল, ক্ষেতখামার, ফসল ইত্যাদি কিছুই নেই, সে দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদের চেয়ে শ্রেষ্ঠতর ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পদ ঈমানের অধিকারী বলে গৌরবান্বিত এবং নিজের প্রতিপালক আল্লাহর আনুগত্য করতে পেরে গর্বিত। সে তার বন্ধুর দম্ভ ও অহংকারকে অপছন্দ করে এবং তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সে মাটি ও পানির ন্যায় তুচ্ছ ও নগণ্য বস্তু থেকে সৃষ্ট। তাকে মনে করিয়ে দেয় যে, তার সকল সম্পদের দাতা মহান আল্লাহর প্রতি তার অধিকতর সম্মান ও আদব প্রদর্শন করা উচিত। তাকে অহংকারের পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করে দেয় এবং নিজের জন্যে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বাগান ও ফসলের চেয়ে উৎকৃষ্ট জিনিস। তার বন্ধু তার সাথে আলাপ প্রসংগে তাকে বললাে, যিনি তােমাকে প্রথমে মাটি থেকে এবং পরে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন… তাকে তুমি অস্বীকার করলে…'(আয়াত ৩৭-৪১) এভাবে ঈমানদার মানুষ নিজের ঈমানকে নিয়ে গৌরব বােধ করে, ধনবল ও জনবলের পরােয়া করে না, বিস্তবৈভব ও অহংকারকে প্রশ্রয় দেয় না, সত্যের ব্যাপারে আপনজনদের সাথেও আপােষ করে না। সম্পদশালী পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তির চেয়ে নিজেকে ক্ষমতাশালী ও প্রতাপশালী মনে করে, আল্লাহর কাছে তার জন্যে যে প্রতিদান রক্ষিত আছে, তাকে সে দুনিয়ার যাবতীয় সম্পত্তির চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করে, আল্লাহর অনুগ্রহকে সে সর্বোত্তম জিনিস মনে করে এবং সে আল্লাহর অনুগ্রহই কামনা করে। সে জানে যে, আল্লাহর প্রতিশোধ অত্যন্ত ভয়ংকর এবং অহংকারীদের কাছ থেকে তার এই প্রতিশােধ গ্রহণে বেশী দেরী নেই। এরপরই সহসা আমরা সমৃদ্ধি ও উৎপাদনের দৃশ্য থেকে ধ্বংসের দৃশ্যে উপনীত হই। উপনীত হই অহংকারের অবস্থা থেকে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার অবস্থায়। বাস্তবিকই মােমেন ব্যক্তিটি যা আশঙ্কা করেছিলাে, সেটাই কার্যকরী হলাে, ‘তার ফসল বিপদে ঘেরাও হয়ে গেলে…'(আয়াত ৪২) এখানে একটা পূর্ণাংগ দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। সমগ্র উৎপন্ন ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বদিক থেকে তা দুর্যোগে আক্রান্ত হয়ে বিনষ্ট হয়েছে এবং কিছুই অক্ষত থাকেনি। গােটা বাগান বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আর তার মালিক অনুশােচনায় হাত কচলাচ্ছে যে তার সমস্ত চেষ্টা নস্যাত ও সমস্ত ফসল বরবাদ হয়ে গেলাে। সে আল্লাহর সাথে শরীক করার জন্যে অনুতপ্ত। এখন সে স্বীকার করছে যে, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক। সে যদিও স্পষ্ট ভাষায় শিরকের কথা উচ্চারণ করেনি, কিন্তু ঈমানের চেয়ে পার্থিব সম্পদকে বেশী মূল্যবান মনে করা ও তার জন্যে অহংকারে মত্ত হওয়াই শিরকের পর্যায়ভুক্ত ছিলো, যাকে সে এখন অস্বীকার করছে, যার জন্যে অনুতাপ করছে এবং যা থেকে আশ্রয় চাইছে-যদিও সময় গড়িয়ে যাওয়ার পর। এই পর্যায়ে সে আল্লাহর একক প্রভুত্ব ও একক ক্ষমতা মেনে নেয়। সে স্বীকার করে যে, আল্লাহর শক্তি ও সাহায্যের কোনাে বিকল্প নেই, তার প্রতিদানই উৎকৃষ্টতম প্রতিদান এবং আল্লাহর কাছে মানুষের যা সংরক্ষিত থাকে, তাই শ্রেষ্ঠতম সম্পদ।(আয়াত ৪৩-৪৪) এখানেই যবনিকাপাত ঘটে বিধ্বস্ত বাগানের দৃশ্য, বাগানের মালিকের অনুশােচনা এবং আল্লাহর প্রতাপ ও পরাক্রমের সামনে মানুষের চরম অক্ষমতার বর্ণনার।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
#এ উদারহরণটির প্রাসঙ্গিক সম্পর্ক বুঝার জন্য পেছনের রুকূ’র বিশেষ আয়াতটি সামনে থাকা দরকার যাতে মক্কার অহংকারী সরদারদের কথার জবাব দেয়া হয়েছিল। সরদাররা বলেছিল, আমরা গরীব মুসলমানদের সাথে বসতে পারি না, তাদেরকে সরিয়ে দিলে আমরা তোমার কাছে গিয়ে বসে তুমি কি বলতে চাও তা শুনতে পারি। সূরা আল কালামের ১৭ থেকে ৩৩ আয়াতে যে উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে তাও এখানে নজরে রাখা উচিত। তাছাড়া সূরা মারয়ামের ৭৩-৭৪ আয়াত , আল ম’মিনুনের ৫৫ থেকে ৬১ আয়াত, সাবার ৩৪-৩৬ আয়াত এবং হা-মীম সাজাদার ৪৯-৫০ আয়াতের ওপরও একবার নজর বুলিয়ে নেয়া দরকার।
# যে বাগানগুলোকে সে নিজের বেহেশত মনে করছিল। অর্বাচীন লোকেরা দুনিয়ায় কিছু ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শান-শওকতের অধিকারী হলেই হামেশা এ বিভ্রান্তির শিকার হয় যে, তারা দুনিয়াতেই বেহেশত পেয়ে গেছে। এখন আর এমন কোন্ বেহেশত আছে যা অর্জন করার জন্য তাকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে?
# যদি পরকাল থেকেই থাকে তাহলে আমি সেখানে এখানকার চেয়েও বেশী সচ্ছল থাকবো। কারণ এখানে আমার সচ্ছল ও ধনাঢ্য হওয়া একথাই প্রমাণ করে যে, আমি আল্লাহর প্রিয়।
# যদিও এ ব্যক্তি আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেনি বরং (আরবী———————–) এর শব্দাবলী প্রকাশ করছে যে, সে আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করতো, তবুও তার প্রতিবেশী তাকে আল্লাহর সাথে কুফরী করার দায়ে অভিযুক্ত করলো। এর কারণ হচ্ছে, আল্লাহর কুফরী করা নিছক আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করার নাম নয় বরং অহংকার, গর্ব, দম্ভ ও আখেরাত অস্বীকারও কুফরী হিসেবে গণ্য। যে ব্যক্তি মনে করলো, আমি সব, আমার ধন-সম্পদ ও শান-শওকত কারোর দান নয় বরং আমার শক্তি ও যোগ্যতার ফল এবং আমার সম্পদের ক্ষয় নেই, আমার কাছে থেকে তা ছিনিয়ে নেবার কেউ নেই এবং কারোর কাছে আমাকে হিসেব দিতেও হবে না, সে আল্লাহকে মানলেও নিছক একটি অস্তিত্ব হিসেবেই মানে, নিজের মালিক প্রভু এবং শাসনকর্তা হিসেবে মানে না। অথচ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার মানেই হচ্ছে উপরোক্ত ক্ষমতাগুলো একমাত্র আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত বলে স্বীকার করা, আল্লাহকে নিছক একটি অস্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার নাম ঈমান নয়।
# “অর্থাৎ আল্লাহ যা চান তাই হবে। আমাদের ও অন্য কারোর কোন ক্ষমতা নেই। আমাদের যদি কোন জোর চলতে পারে তাহলে তা চলতে পারে একমাত্র আল্লাহরই সুযোগ ও সাহায্য-সহযোগিতা দানের মাধ্যমেই।”
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩২-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বে দরিদ্র মুসলমান ও সম্পদশালী কাফিরের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এখানে তাদের একটি দৃষ্টান্ত আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন। দুটি লোকছিল, তাদের একজন ছিল সম্পদশালী। তার ছিল আঙ্গুর ও খেজুরের বাগান এবং এই দুয়ের মাঝে ছিল শস্যক্ষেত্র। বাগান ছিল ফলে ফুলে ভরপুর এবং শস্যক্ষেত্র ছিল শ্যামল-সবুজ। ক্ষতির কোন আশংকা ছিল না। এদিকে ওদিকে নদীনালা প্রবাহিত ছিল। তার কাছে সব সময় নানা প্রকারের শস্য ও ফলমল বিদ্যমান থাকতো। এরকম ছিল সে সম্পদশালী (আরবী) শব্দটির দ্বিতীয় পঠন (আরবী) ও রয়েছে। এটা (আরবী) শব্দের বহুবচন। যেমন (আরবী) শব্দের বহু বচন (আরবী) সে থাকে।
মোট কথা, এই ধনী লোকটি একদিন তার এক বন্ধুকে ফখর ও গর্ব করে বললোঃ “আমি ধন-সম্পদে, মান-সম্মানে, সন্তান-সন্ততিতে, জায়গাজমিতে এবং চাকর-বাকরে তোমা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।” পাপাচারী ব্যক্তির আশা। আকাংখা এইরূপই হয়ে থাকে যে, দুনিয়ার এই জিনিসগুলি যেন তার কাছে প্রচুর পরিমাণে থাকে। একদা সে নিজের বাগানে গেল এভাবে নিজের উপর যুলুমকৃত অবস্থায়। অর্থাৎ সে গর্ব ও অহংকার, কিয়ামতকে অস্বীকার এবং কুফরী করার কাজে এতো মত্ত ছিল যে, তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেলঃ “আমার এই সবজ-শ্যামল শস্য ক্ষেত্র, ফলফলে ভরপর বাগান এবং প্রবাহিত নদীনালা যে কখনো ধ্বংস হয়ে যাবে এটা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল তার নির্বুদ্ধিতা, বেঈমানী, দুনিয়ার প্রতি কঠিন আকর্ষণ এবং আল্লাহর সাথে কুফরী করারই কারণ। এই জন্যেই সে বলে ফেললোঃ “আমার ধারণা তো কিয়ামত সংঘটিত হবেই না। আর যদি হয়ও বা তবে এটা তো স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান যে, আমি আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা। তা না হলে তিনি আমাকে এতে বেশী ধন-সম্পদ দান করলেন কি রূপে? কাজেই তিনি পরকালেও আমাকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আমি আমার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবৃত্ত হই, তবে সেখানে আমার জন্যে উত্তম ব্যবস্থা থাকবে।” (৪১:৫০) আর এক আয়াতে আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি কি তাকে দেখেছো, যে আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তা সত্ত্বেও সে বলেঃ কিয়ামতের দিনেও আমাকে প্রচুর ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে?” (১৯:৭৭) সে আল্লাহ তাআলার সামনে বীরত্বপনা প্রকাশ করছে এবং তার পক্ষ থেকে বানিয়ে কথা বলছে, অর্থাৎ আল্লাহ বলেন নাই, অথচ সে আল্লাহর নাম দিয়ে কথা বলছে। এই আয়াতটি আস ইবনু ওয়ায়েলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এটা যথা স্থানে বর্ণিত হবে ইনশা আল্লাহ।
# ৩৭-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:
ঐ সম্পদশালী কাফির ব্যক্তিকে তার বন্ধু দরিদ্র মুসলমানটি যে উত্তর দিয়েছিল, আল্লাহ তাআলা এখানে তারই বর্ণনা দিচ্ছেন। সে তাকে বহু উপদেশ দেয় এবং তাকে ঈমান ও বিশ্বাসের হিদায়াত করে এবং বিভ্রান্তি ও অহংকার হতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে। তাকে বলেঃ “যে আল্লাহ মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি দ্বারা এবং এরপর শুক্রের মাধ্যমে বংশ ক্রম চালু রেখেছেন, তুমি তাঁর সাথে কুফরী করছো?” যেমন আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ কেমন করে তোমরা আল্লাহর না-শুকরী করছো? অথচ তোমরা ছিলে নির্জীব, তৎপর তিনি তোমাদেরকে জীবন দান করলেন।” (২:২৮) কি করে তুমি এই মহান প্রতিপালকের সত্ত্বা ও তার নিয়ামতরাজিকে অস্বীকার করছো? তার নিয়ামতসমূহ ও তাঁর মহাশক্তির অসংখ্য নমুনা স্বয়ং তোমার মধ্যে ও তোমার উপরে বিদ্যমান রয়েছে। কোন্ অজ্ঞ এমন আছে যে, পূর্বে সে কিছুই ছিল না, আল্লাহই তাকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন, এটা সে জানে না? নিজে নিজেই হয়ে যাবার ক্ষমতা তার ছিল না। আল্লাহ তাআলাই তাকে সৃষ্টি করেছেন। সে আল্লাহ অস্বীকারের যোগ্য কেমন করে হয়ে গেলেন? তার একত্ব। ও আল্লাহত্ব কে অস্বীকার করতে পারে?
মুসলমানটি তাকে আরো বললোঃ “আমি তোমার সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলছি যে, ঐ আল্লাহই আমার প্রতিপালক। তিনি এক ও অংশী বিহীন। আমার প্রতিপালকের সাথে শরীক স্থাপন করাকে আমি অপছন্দ করি। এরপর তাকে সে কল্যাণের প্রতি উৎসাহিত করার জন্যে বলেঃ “তুমি তোমার সবুজ শ্যামল শস্য ক্ষেত্র এবং ফল-মূলে পরিপূর্ণ বাগান দেখে মহান প্রতিপালকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছো না কেন? কেন তুমি (আরবী) বলছো না?” অর্থাৎ “আল্লাহ যা চেয়েছেন তা-ই হয়েছে, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত কোন শক্তি নেই।”
এই আয়াতকে সামনে রেখেই পূর্বযুগীয় কোন কোন গুরুজন বলেছেন যে, যে ব্যক্তি তার সন্তান-সন্ততি বা ধন সম্পদ অথবা অবস্থা দেখে আনন্দিত। হয়, তার এই কালেমাটি পড়ে নেয়া উচিত। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা তাঁর যে বান্দাকে কোন নিয়ামত দান করেন, পরিবারবর্গ হোক বা ধন-সম্পদ হোক অথবা পুত্র-সন্তান হোক, যদি সে উপরোক্ত কালেমাটি পাঠ করে নেয় তবে ওগুলির উপর কোন বিপদআপদ আসবে না মৃত্যু ছাড়া। (এ হাদীসটি আবু ইয়ালা মৃসিলী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাফিয আবুল ফাতাহ (রঃ) বলেছেন যে, এই হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়) আর একটি হাদীসে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের একটি কোষাগারের কথা বলবো? ঐ কোষাগার হচ্ছে (আরবী) এই কালেমাটি পাঠ করা।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে) আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “এই বান্দা আমাকে মেনেছে ও আমার উপর সমর্পণ করেছে। হযরত আবু হুরাইরাকে (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “শুধমাত্র (আরবী) নয়, বরং ওটাই যা সূরায়ে কাফে রয়েছে। অর্থাৎ (আরবী) এই কালেমাটি।”
এরপর মহান আল্লাহ বলেন যে, ঐ সৎ লোকটি ঐ কাফির ধনী লোকটিকে বললোঃ “আল্লাহ তাআলার কাছে আমি আশা রাখি যে, তিনি আমাকে আখেরাতের উত্তম নিয়ামত দান করবেন। আর তোমার এই বাগানটিকে তিনি ধ্বংস করে দিবেন যা তুমি চিরস্থায়ী মনে করে নিয়েছে। তিনি আকাশ হতে ওর উপর শাস্তি পাঠিয়ে দিবেন। আকাশ হতে তিনি অগ্নি বর্ষণ করবেন যার ফলে ওটা উদ্ভিদ শূন্য মৃত্তিকায় পরিণত হয়ে যাবে। অথবা তিনি ওর পানি ভূ-গর্ভে অন্তর্হিত করবেন এবং তুমি কখনো ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।
(আরবী) শব্দটি (আরবী) যা (আরবী) অর্থাৎ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থের আধিক্য বুঝানোর জন্যে এটাকে আনয়ন করা হয়েছে।
# ৪২-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
ঐ লোকটির সমস্ত মাল ধ্বংস হয়ে গেল। ঐ মু’মিন লোকটি তাকে যা থেকে ভয় প্রদর্শন করছিল তা হয়েই গেল। ধন-মাল ধ্বংস হয়ে যাবার পর সে দুঃখে হাত মলতে লাগলো এবং অকাংখা করে বললোঃ হায়! যদি আমি আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক না করতাম তবে কতই না ভাল হতো!’ যেগুলির উপর সে গর্ব করতো সেগুলি ঐ সময় তার কোনই কাজে আসলো না। সন্তান-সন্ততি, কবীলা-গোত্র সব থেকে গেল। কেউই তাকে সাহায্য করতে পারলো না। তার গর্ব অহংকার মাটির সাথে মিশে গেল। না কেউ তার সাহায্যার্থে এগিয়ে এলো, না সে নিজে প্রতিকারে সমর্থ হলো। কেউ কেউ (আরবী) এর উপর (আরবী) বা বিরতি মেনে থাকেন এবং প্রথম বাক্যটিকে ওর সাথে মিলিয়ে নেন। অর্থাৎ সেখানে সে প্রতিশোধ নিতে পারলো না। আবার কেউ কেউ (আরবী) এর উপর আয়াত শেষ করে পর থেকে নতুন বাক্য। শুরু করেন (আরবী) শব্দটি দ্বিতীয় পঠনে (আরবী) ও রয়েছে। প্রথম পঠনে ভাবার্থ হবেঃ প্রত্যেক মু’মিন ও কাফির আল্লাহ তাআলার নিকটই প্রত্যাবর্তনকারী, তাঁর নিকট ছাড়া আর কোন আশ্রয় স্থল নেই। শাস্তির সময় তিনি ছাড়া অন্য কেউই কাজে আসবে না। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা আমার শাস্তি দেখে বলতে লাগলোঃ আমরা এক আল্লাহর উপর ঈমান আনছি।” (৪০:৮৪) যেমন ফিরাউন ডুবে যাওয়ার সময় বলেছিলঃ “আমি আল্লাহর উপর ঈমান আনছি যার উপর বাণী ইসরাঈল ঈমান এনেছে এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি।” ঐ সময় উত্তরে বলা হয়েছিলঃ “এখন তুমি ঈমান আনছো? অথচ ইতিপূর্বে তুমি নাফরমান ছিলে এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভুক্ত রয়ে গিয়েছিলে।”
(আরবী) এ যের দেয়া অবস্থায় অর্থ হবেঃ ‘সেখানে সঠিকভাবে হুকুম আল্লাহর জন্যেই।’ এর দ্বিতীয় কিরআত এর উপর পেশ দিয়ে রয়েছে। কেননা, এটা এর বা বিশেষণ। যেমন (আরবী) (২৫:২৬)
এই জায়গায় রয়েছে। আবার কেউ কেউ (আরবী) কে যের সহ পড়ে থাকেন। তাদের মতে এটা (আরবী) এর (আরবী) বা বিশেষণ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ অর্থাৎ (আরবী) (৬:৬২) “অতঃপর তাদেরকে সেই আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে যিনি তাদের প্রকৃত ও সত্য মাওলা।”
এজন্যেই আবার তিনি বলেনঃ যে আমল শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যেই হয় তার পুণ্য খুব বেশী হয় এবং পরিণাম হিসেবেও হয় খুবই উত্তম।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#885)
Sura:18
Sura:
Ayat: 32-44
[ مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ ۚ
What Allah willed ; there is no power except in Allah!]
www.motaher21.net
18:32
وَ اضۡرِبۡ لَہُمۡ مَّثَلًا رَّجُلَیۡنِ جَعَلۡنَا لِاَحَدِہِمَا جَنَّتَیۡنِ مِنۡ اَعۡنَابٍ وَّ حَفَفۡنٰہُمَا بِنَخۡلٍ وَّ جَعَلۡنَا بَیۡنَہُمَا زَرۡعًا ﴿ؕ۳۲﴾
And present to them an example of two men: We granted to one of them two gardens of grapevines, and We bordered them with palm trees and placed between them [fields of] crops.
The Example of the Rich Idolators and the Poor Muslims
Allah says,
وَاضْرِبْ لَهُم مَّثَلًا رَّجُلَيْنِ جَعَلْنَا لاِاَحَدِهِمَا جَنَّتَيْنِ مِنْ أَعْنَابٍ وَحَفَفْنَاهُمَا بِنَخْلٍ وَجَعَلْنَا بَيْنَهُمَا زَرْعًا
And put forward to them the example of two men:unto one of them We had given two gardens of grapes, and We had surrounded both with date palms; and had put between them green crops (cultivated fields).
After mentioning the idolators who were too arrogant to sit with the poor and weak among Muslims, showing off before them with their wealth and noble lineage, Allah then gives a parable for them of two men, one of whom Allah gave two gardens of grapes, surrounded with palm trees and cultivated with crops throughout. All of the trees and plants were abundantly fruitful, providing readily accessible, good quality produce.
Allah says
18:33
کِلۡتَا الۡجَنَّتَیۡنِ اٰتَتۡ اُکُلَہَا وَ لَمۡ تَظۡلِمۡ مِّنۡہُ شَیۡئًا ۙ وَّ فَجَّرۡنَا خِلٰلَہُمَا نَہَرًا ﴿ۙ۳۳﴾
Each of the two gardens produced its fruit and did not fall short thereof in anything. And We caused to gush forth within them a river.
كِلْتَا الْجَنَّتَيْنِ اتَتْ أُكُلَهَا
Each of those two gardens brought forth its produce,
meaning, produced its fruits,
وَلَمْ تَظْلِمْ مِنْهُ شَيْيًا
and failed not in the least therein,
meaning, nothing at all was diminishing.
وَفَجَّرْنَا خِلَلَهُمَا نَهَرًا
and We caused a river to gush forth in the midst of both.
means, rivers were flowing through them here and there
18:34
وَّ کَانَ لَہٗ ثَمَرٌ ۚ فَقَالَ لِصَاحِبِہٖ وَ ہُوَ یُحَاوِرُہٗۤ اَنَا اَکۡثَرُ مِنۡکَ مَالًا وَّ اَعَزُّ نَفَرًا ﴿۳۴﴾
And he had fruit, so he said to his companion while he was conversing with him, “I am greater than you in wealth and mightier in [numbers of] men.”
وَكَانَ لَهُ ثَمَرٌ
And he had Thamar,
It was said that what was meant here was wealth, and it was said that what was meant were fruits, which is the more apparent meaning here.
This is also supported by the alternative recitation, Thumr, which is the plural of Thamrah (fruit) just as Khushb is the plural of Khashab (wood). Others recite it as Thamar.
فَقَالَ
and he said
the owner of the two gardens
لِصَاحِبِهِ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ
to his companion in the course of discussion,
means, while he was disputing with him and boasting to him and showing off,
أَنَا أَكْثَرُ مِنكَ مَالاً وَأَعَزُّ نَفَرًا
I am greater than you in wealth and have a mightier entourage.
meaning, `I have more servants, attendants and children.’
Qatadah said,
“This, by Allah, is the wish of the immoral to have a lot of wealth and a large entourage.
18:35
وَ دَخَلَ جَنَّتَہٗ وَ ہُوَ ظَالِمٌ لِّنَفۡسِہٖ ۚ قَالَ مَاۤ اَظُنُّ اَنۡ تَبِیۡدَ ہٰذِہٖۤ اَبَدًا ﴿ۙ۳۵﴾
And he entered his garden while he was unjust to himself. He said, “I do not think that this will perish – ever.
وَدَخَلَ جَنَّتَهُ وَهُوَ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهِ
And he went into his garden having been unjust to himself.
meaning, in his disbelief, rebellion, arrogance and denial of the Hereafter.
قَالَ مَا أَظُنُّ أَن تَبِيدَ هَذِهِ أَبَدًا
He said:”I do not think this will ever perish.”
Thus he was allowing himself to be deceived because of the plants, fruits and trees that he saw, and the rivers flowing through the different parts of his gardens. He thought that it could never come to an end or cease or be destroyed.
This was because of his lack of understanding and the weakness of his faith in Allah, and because he was enamored with this world and its adornments, and because he disbelieved in the Hereafter. So he said
18:36
وَّ مَاۤ اَظُنُّ السَّاعَۃَ قَآئِمَۃً ۙ وَّ لَئِنۡ رُّدِدۡتُّ اِلٰی رَبِّیۡ لَاَجِدَنَّ خَیۡرًا مِّنۡہَا مُنۡقَلَبًا ﴿۳۶﴾
And I do not think the Hour will occur. And even if I should be brought back to my Lord, I will surely find better than this as a return.”
وَمَا أَظُنُّ السَّاعَةَ قَايِمَةً
“And I do not think the Hour will ever come…”
meaning, will ever happen
وَلَيِن رُّدِدتُّ إِلَى رَبِّي لَاَجِدَنَّ خَيْرًا مِّنْهَا مُنقَلَبًا
and if indeed I am brought back to my Lord, I surely shall find better than this when I return to Him.
meaning, `if there is a Hereafter and a return to Allah, then I will have a better share than this with my Lord, for if it were not that I am dear to Him, He would not have given me all this.’
As Allah says elsewhere:
وَلَيِن رُّجِّعْتُ إِلَى رَبِّى إِنَّ لِى عِندَهُ لَلْحُسْنَى
But if I am brought back to my Lord, surely there will be for me the best with Him. (41:50)
أَفَرَأَيْتَ الَّذِى كَفَرَ بِـَايَـتِنَا وَقَالَ لاوتَيَنَّ مَالاً وَوَلَداً
Have you seen him who disbelieved in Our Ayat and said:”I shall certainly be given wealth and children (if I will be alive again).” (19:77)
He took it for granted that Allah would give him this, without any sound evidence for that.
The reason why this Ayah was revealed was because of Al-`As bin Wa’il, as we will explain in the appropriate place, if Allah wills. In Allah we put our trust.
18:37
قَالَ لَہٗ صَاحِبُہٗ وَ ہُوَ یُحَاوِرُہٗۤ اَکَفَرۡتَ بِالَّذِیۡ خَلَقَکَ مِنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ سَوّٰىکَ رَجُلًا ﴿ؕ۳۷﴾
His companion said to him while he was conversing with him, “Have you disbelieved in He who created you from dust and then from a sperm-drop and then proportioned you [as] a man?
The Response of the Poor Believer
Allah tells:
قَالَ لَهُ صَاحِبُهُ وَهُوَ يُحَاوِرُهُ
His companion said to him during his discussion:
Allah tells us how the rich man’s believing companion replied to him, warning and rebuking him for his disbelief in Allah and allowing himself to be deceived.
أَكَفَرْتَ بِالَّذِي خَلَقَكَ مِن تُرَابٍ
Do you disbelieve in Him Who created you out of dust…
This is a denunciation, pointing out the seriousness of his rejection of his Lord Who created and formed man out of dust — that is, referring to Adam —
ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ ثُمَّ سَوَّاكَ رَجُلً
then out of Nutfah, then fashioned you into a man!”
then made his offspring from despised liquid, as Allah says:
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَتًا فَأَحْيَـكُمْ
How can you disbelieve in Allah Seeing that you were dead and He gave you life. (2:28)
meaning, how can you reject your Lord and His clear signs to you, which every one recognizes in himself, for there is no one among His creatures who does not know that he was nothing, then he came to be, and his existence is not due to himself or any other creature. He knows that his existence is due to his Creator, beside Whom there is no other god, the Creator of all things.
So the believer said
18:38
لٰکِنَّا۠ ہُوَ اللّٰہُ رَبِّیۡ وَ لَاۤ اُشۡرِکُ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا ﴿۳۸﴾
But as for me, He is Allah, my Lord, and I do not associate with my Lord anyone.
لَّكِنَّا هُوَ اللَّهُ رَبِّي
But as for my part, (I believe) that He is Allah, my Lord,
meaning, `I do not say what you say; rather I acknowledge the Oneness and Lordship of Allah,’
وَلَا أُشْرِكُ بِرَبِّي أَحَدًا
and none shall I associate as partner with my Lord.
meaning, He is Allah, the One Who is to be worshipped Alone, with no partner or associate.
Then he said:
وَلَوْلَا إِذْ دَخَلْتَ جَنَّتَكَ قُلْتَ مَا شَاء اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ إِن تُرَنِ أَنَا أَقَلَّ مِنكَ مَالاً وَوَلَدًا
18:39
وَ لَوۡ لَاۤ اِذۡ دَخَلۡتَ جَنَّتَکَ قُلۡتَ مَا شَآءَ اللّٰہُ ۙ لَا قُوَّۃَ اِلَّا بِاللّٰہِ ۚ اِنۡ تَرَنِ اَنَا اَقَلَّ مِنۡکَ مَالًا وَّ وَلَدًا ﴿ۚ۳۹﴾
And why did you, when you entered your garden, not say, ‘What Allah willed [has occurred]; there is no power except in Allah ‘? Although you see me less than you in wealth and children,
It was better for you to say, when you entered your garden, `That which Allah wills! There is no power but with Allah!’ If you see me less than you in wealth, and children.
Here he was urging and encouraging him to say that, as if he was saying, “When you entered your garden and looked at it and liked it, why wouldn’t you praise Allah for the blessings He gave you and the wealth and children that He has given to you and not to others! Why did you not say `That which Allah wills! There is no power but with Allah!”‘
One of the Salaf said,
“Whoever is delighted with something in his circumstances or his wealth or his children, let him say, `That which Allah wills! There is no power but with Allah!”‘
This is based on this Ayah.
It was reported in the Sahih from Abu Musa that the Messenger of Allah said:
أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ
Shall I not tell you about some of the treasure of Paradise?
لَاا حَوْلَ وَلَاا قُوَّةَ إِلاَّ بِالله
There is no power or might but with Allah
18:40
فَعَسٰی رَبِّیۡۤ اَنۡ یُّؤۡتِیَنِ خَیۡرًا مِّنۡ جَنَّتِکَ وَ یُرۡسِلَ عَلَیۡہَا حُسۡبَانًا مِّنَ السَّمَآءِ فَتُصۡبِحَ صَعِیۡدًا زَلَقًا ﴿ۙ۴۰﴾
It may be that my Lord will give me [something] better than your garden and will send upon it a calamity from the sky, and it will become a smooth, dusty ground,
فَعَسَى رَبِّي أَن يُوْتِيَنِ خَيْرًا مِّن جَنَّتِكَ
It may be that my Lord will give me something better than your garden, (in the Hereafter),
وَيُرْسِلَ عَلَيْهَا
and will send on it,
on your garden in this world, which you think will never come to an end or cease to be,
حُسْبَانًا مِّنَ السَّمَاء
Husban from the sky,
Ibn Abbas, Ad-Dahhak and Qatadah said — and Malik narrated that Az-Zuhri said — a punishment from heaven.
The apparent meaning is that it is a mighty rain which would disrupt his garden and uproot its plants and trees.
As he said:
فَتُصْبِحَ صَعِيدًا زَلَقًا
then it will be as a barren slippery earth.
meaning, smooth mud in which one cannot get a foothold.
Ibn Abbas said,
“Like land without vegetation, where nothing grows.
18:41
اَوۡ یُصۡبِحَ مَآؤُہَا غَوۡرًا فَلَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ لَہٗ طَلَبًا ﴿۴۱﴾
Or its water will become sunken [into the earth], so you would never be able to seek it.”
أَوْ يُصْبِحَ مَاوُهَا غَوْرًا
Or the water thereof becomes Ghawran,
means, it disappears into the earth, which is the opposite of flowing water that seeks the surface of the earth.
So Gha’ir is to go lower. as Allah says:
قُلْ أَرَءَيْتُمْ إِنْ أَصْبَحَ مَأوُكُمْ غَوْراً فَمَن يَأْتِيكُمْ بِمَأءٍ مَّعِينٍ
Say:”Tell me! If your water were Ghawran, who then can supply you with flowing water!” (67:30)
meaning, water that flows in all directions.
And here Allah says:
أَوْ يُصْبِحَ مَاوُهَا غَوْرًا فَلَن تَسْتَطِيعَ لَهُ طَلَبًا
Or the water thereof (of the gardens) becomes deep-sunken (underground) so that you will never be able to seek it.
Ghawr is from the same root as Gha’ir and has a similar meaning, but is more intensive
18:42
وَ اُحِیۡطَ بِثَمَرِہٖ فَاَصۡبَحَ یُقَلِّبُ کَفَّیۡہِ عَلٰی مَاۤ اَنۡفَقَ فِیۡہَا وَ ہِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِہَا وَ یَقُوۡلُ یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُشۡرِکۡ بِرَبِّیۡۤ اَحَدًا ﴿۴۲﴾
And his fruits were encompassed [by ruin], so he began to turn his hands about [in dismay] over what he had spent on it, while it had collapsed upon its trellises, and said, “Oh, I wish I had not associated with my Lord anyone.”
The Evil Results of Kufr
Allah says:
وَأُحِيطَ بِثَمَرِهِ
So his fruits were encircled,
meaning his wealth, or according to the other opinion, his crops.
What is meant is that what this disbeliever was afraid of and what the believer had terrified him actually had happened. A storm struck his garden, a garden which he had erroneously thought would last forever, distracting him from thoughts of Allah, may He be glorified.
فَأَصْبَحَ يُقَلِّبُ كَفَّيْهِ عَلَى مَا أَنفَقَ فِيهَا
And he began Yuqallibu his hands over what he had spent upon it,
Qatadah said:
“He was clasping his hands together in a gesture of regret and grief for the wealth he had lost.”
وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا
while it was all destroyed on its trellises,
وَيَقُولُ يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا
18:43
وَ لَمۡ تَکُنۡ لَّہٗ فِئَۃٌ یَّنۡصُرُوۡنَہٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ مَا کَانَ مُنۡتَصِرًا ﴿ؕ۴۳﴾
And there was for him no company to aid him other than Allah, nor could he defend himself.
وَلَمْ تَكُن لَّهُ فِيَةٌ
and he could only say:”Would that I had ascribed no partners to my Lord!” And he had no group of men,
meaning a clan or children, as he had vainly boasted,
يَنصُرُونَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَمَا كَانَ مُنتَصِرًا
18:44
ہُنَالِکَ الۡوَلَایَۃُ لِلّٰہِ الۡحَقِّ ؕ ہُوَ خَیۡرٌ ثَوَابًا وَّ خَیۡرٌ عُقۡبًا ﴿٪۴۴﴾
There the authority is [completely] for Allah, the Truth. He is best in reward and best in outcome.
هُنَالِكَ الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ
to help him against Allah, nor could he defend himself. There, Al-Walayah will be for Allah, the True God.
Here there are differences in recitation. Some of the reciters pause at the word there,
وَمَا كَانَ مُنتَصِرًا
هُنَالِكَ
(nor could he defend himself there), i.e., at that time, when Allah sends the punishment upon him, there will be no one to save him. Then they start the next phrase with Al-Walayah;
(Al-Walayah will be for Allah, the True God).
Some of them pause at the phrase
وَمَا كَانَ مُنتَصِرًا
(nor could he defend himself) and start the next phrase;
هُنَالِكَ
الْوَلَايَةُ لِلَّهِ الْحَقِّ
(There, Al-Walayah will be for Allah, the True God).
There is a further difference in the recitation of the word Al-Walayah. Some read it as Al-Walayah, which gives the meaning that all allegiance will be to Allah,
i.e., on that Day everyone, believer or disbeliever, will return to Allah, for allegiance and submission to Him when the punishment comes to pass.
This is like the Ayah:
فَلَمَّا رَأَوْاْ بَأْسَنَا قَالُواْ ءَامَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَـفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ
So when they saw Our punishment, they said:”We believe in Allah Alone and reject (all) that we used to associate with Him as partners.” (40:84)
and Allah says concerning the Fir`awn;
وَجَاوَزْنَا بِبَنِى إِسْرَءِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ ءَامَنتُ أَنَّهُ لا إِلِـهَ إِلاَّ الَّذِى ءَامَنَتْ بِهِ بَنواْ إِسْرَءِيلَ وَأَنَاْ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
ءَالَنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
Till when drowning overtook him, he said:”I believe that none has the right to be worshipped but He in Whom the Children of Israel believe, and I am one of the Muslims.” Now! While you refused to believe before and you were one of the mischief-makers. (10:90-91)
Some others read it as Al-Wilayah,
meaning that on that Day the rule will belong to Allah, the True God.
Some read Haqqu (True) referring to Al-Wilayah, as in the Ayah;
الْمُلْكُ يَوْمَيِذٍ الْحَقُّ لِلرَّحْمَـنِ وَكَانَ يَوْماً عَلَى الْكَـفِرِينَ عَسِيراً
The sovereignty on that Day will be the true (sovereignty), belonging to the Most Gracious (Allah), and it will be a hard Day for the disbelievers. (25:26)
Others it read Haqqi referring to Allah, may He be glorified, as in the Ayah:
ثُمَّ رُدُّواْ إِلَى اللَّهِ مَوْلَـهُمُ الْحَقِّ
Then they are returned to Allah, their True Protector. (6:62)
So Allah says:
هُوَ خَيْرٌ ثَوَابًا وَخَيْرٌ عُقْبًا
He (Allah) is the best to reward and the best for the final end
for deeds that were done for the sake of Allah, their reward is good and their consequences are all good
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran