(বই#৯১৬) [ رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا ‘হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন।] সূরা:- ত্বাহা। সুরা:২০ ১১৩-১১৪ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১৬)
[ رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
‘হে আমার রব! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ করুন।]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
১১৩-১১৪ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:১১৩
وَ كَذٰلِكَ اَنْزَلْنٰهُ قُرْاٰنًا عَرَبِیًّا وَّ صَرَّفْنَا فِیْهِ مِنَ الْوَعِیْدِ لَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ اَوْ یُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا

আর হে মুহাম্মাদ! এভাবে আমি একে আরবী কুরআন বানিয়ে নাযিল করেছি এবং এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সতর্কবাণী করেছি হয়তো এরা বক্রতা থেকে বাঁচবে বা এদের মধ্যে এর বদৌলতে কিছু সচেতনতার নিদর্শন ফুটে উঠবে।
২০:১১৪
فَتَعٰلَى اللّٰهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ١ۚ وَ لَا تَعْجَلْ بِالْقُرْاٰنِ مِنْ قَبْلِ اَنْ یُّقْضٰۤى اِلَیْكَ وَحْیُهٗ١٘ وَ قُلْ رَّبِّ زِدْنِیْ عِلْمًا

কাজেই প্রকৃত বাদশাহ আল্লাহ‌ হচ্ছেন উন্নত ও মহান। আর দেখো, কুরআন পড়ার ব্যাপারে দ্রুততা অবলম্বন করো না যতক্ষণ না তোমার প্রতি তার অহী পূর্ণ হয়ে যায় এবং দোয়া করো, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে আরো জ্ঞান দাও।

১১৩-১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# এমনিতর বিষয়বস্তু, শিক্ষাবলী ও উপদেশমালায় পরিপূর্ণ। এখানে শুধুমাত্র ওপরের আয়াতগুলোতে বর্ণিত নিকটবর্তী বিষয়বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি। বরং কুরআনের যেসব বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে সেসব দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। আবার কুরআন সম্পর্কে সূরার সূচনায় এবং তারপর মূসার কাহিনীর শেষ পর্যায়ের আয়াতগুলোতে যা বলা হয়েছে এর বর্ণনা পরম্পরা সেগুলোর সাথে সম্পর্কিত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, তোমার প্রতি যে “স্মারক” পাঠানো হয়েছে এবং আমার কাছ থেকে বিশেষভাবে আমি যে “স্মরণ” তোমাকে দিয়েছি তা এ ধরনের মর্যাদাসম্পন্ন স্মারক ও স্মরণ।

# এরা নিজেদের গাফলতি থেকে সজাগ হবে, ভুলে যাওয়া শিক্ষাকে কিছুটা স্মরণ করবে এবং পথ ভুলে কোন পথে যাচ্ছে আর এই পথ ভুলে চলার পরিণাম কি হবে সে সম্পর্কে এদের মনে বেশ কিছুটা অনুভূতি জাগবে।
# কুরআনে সাধারণত একটি ভাষণ শেষ করতে গিয়ে এ ধরনের বাক্য বলা হয়ে থাকে এবং আল্লাহর কালামের সমাপ্তি তাঁর প্রশংসা বাণীর মাধ্যমে করাই হয় এর উদ্দেশ্য। বর্ণনাভংগী ও পূর্বাপর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে পরিষ্কার বুঝা যায় যে এখানে একটি ভাষণ শেষ হয়ে গেছে এবং وَلَقَدْ عَهِدْنَا إِلَى آدَمَ থেকে দ্বিতীয় ভাষণ শুরু হচ্ছে। বেশীর ভাগ সম্ভাবনা এটাই যে, এ দু’টি ভাষণ বিভিন্ন সময় নাযিল হয়ে থাকবে এবং পরে নবী ﷺ আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী দু’টিকে এক জায়গায় একত্র করে দিয়ে থাকবেন। একত্র করার কারণ উভয় ভাষণের বিষয়গত সাদৃশ্য। এ বিষয়টি আমি পরবর্তী আলোচনায় সুস্পষ্ট করে দেবো।

# فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ বাক্যেই ভাষণ খতম হয়ে গেছে। এরপর বিদায় নেবার সময় ফেরেশতারা আল্লাহর হুকুমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছেন। অহী নাযিল করার সময় এটা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু মাঝখানে সংশোধন করে দেয়া সঙ্গত মনে করা হয়নি। তাই বাণী পাঠানোর কাজ শেষ হবার পর এখন তার এ সংশোধনী দিচ্ছেন। সতর্কবাণীর শব্দাবলী থেকে একথা প্রকাশ হচ্ছে যে, কি ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। অহীর বাণী গ্রহণ করার সময় নবী ﷺ তা স্মরণ রাখার এবং মুখে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করে থাকবেন। এ প্রচেষ্টার কারণে তাঁর মনোযোগ বারবার সরে গিয়ে থাকবে। ফলে অহী গ্রহণের ধারাবাহিকতার মধ্যে বাধার সৃষ্টি হয়ে থাকবে। বাণী শোনার প্রতি মনোযোগ পুরোপুরি আকৃষ্ট হয়ে থাকবে। এ অবস্থা দেখে এ প্রয়োজন অনুভব করা হয়েছে যে, তাঁকে অহীর বাণী গ্রহণ করার সঠিক পদ্ধতি বুঝাতে হবে এবং মাঝখানে মাঝখানে স্মরণ রাখার জন্য যে চেষ্টা তিনি করেন তা থেকে তাঁকে বিরত রাখতে হবে।

এ থেকে জানা যায়, সূরা “ত্ব-হা”র এ অংশটি প্রথম যুগের অহীর অন্তর্ভুক্ত। প্রথম যুগে তখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে অহী গ্রহণ করার অভ্যাস ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। এ অবস্থায় কয়েকবার তিনি এ কাজ করেছেন। প্রত্যেকবার এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করে দেবার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন না কোন বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে। সূরা “কিয়ামাহ” নাযিলের সময়ও এমনটিই হয়েছিল। তাই তখন বাণীর ধারাবাহিকতা ছিন্ন করে তাঁকে এই বলে সতর্ক করা হয়েছিলঃ

لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ – إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ – فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ – ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ –

“কুরআনকে দ্রুত স্মরণ করার জন্য তোমার জিহবা বার বার সঞ্চালন করো না। তা স্মরণ করিয়ে ও পড়িয়ে দেবার দায়িত্ব আমার। কাজেই যখন আমি তা শুনাচ্ছি তখন তুমি গভীর মনোযোগ সহকারে তা শুনতে থাকো, তারপর তার অর্থ বুঝিয়ে দেবার দায়িত্বও আমার।”

সূরা আ’লায়েও তাঁকে এ নিশ্চিন্ততা দেয়া হয়েছে যে,”আমি তা পড়িয়ে দেবো এবং তুমি তা ভুলে যাবে না।” سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنْسَى -পরে যখন তিনি অহীর বাণী গ্রহণ করার ব্যাপারে ভালো মতো পারদর্শিতা লাভ করেন তখন তিনি আর এ ধরনের অবস্থার সম্মুখীন হননি। এ কারণে পরবর্তী সূরাগুলোয় এ ধরনের কোন সতর্কবাণী আমরা দেখি না।

 

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

মহাশক্তিমান, সকল মর্যাদার অধিকারী আল্লাহর সুমহান মর্যাদা পরিব্যাপ্ত থাকবে সব কিছুর ওপর- তাঁরই সম্মান ঢেকে রাখবে গােটা পরিবেশকে; কিন্তু তিনি যে রহমান- পরম দয়াময়, তার দয়ার মহিমা বিজয়ী অবস্থায় বিরাজ করতে থাকবে সব কিছুর ওপর। এসব কথা নিয়েই আসছে মহান রাব্বুল আলামীনের পরবর্তী কথা আর এমনি করে ‘আমি মহান আল্লাহ নাযিল করেছি এই কোরআনে করীম আরবী ভাষায় এবং তার মধ্যে সে ভয়ংকর অবস্থার কথা জানিয়ে সবাইকে সময় থাকতেই সতর্ক করে দিয়েছি, এবং ভয়ানক ও কঠিন আযাবের ভয়ও দেখিয়েছি, যেন আল্লাহর ভয়ে তারা বাছ-বিচার করে চলতে পারে অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার উদ্রেক করে।’ এভাবে বিভিন্ন প্রসংগে কোরআনের মধ্যে নানা প্রকার আযাবের ভয় দেখিয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। কোথায় কাকে কিভাবে আযাব দেয়া হবে সে বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ পৃথক পৃথকভাবে পেশ করা হয়েছে, যাতে করে এসব কথা অপরাধীদের অন্তরে ভয় জাগায়, অথবা আখেরাতে কি ঘটবে সে বিষয়ে প্রত্যাখ্যানকারীদের হৃদয়ে চিন্তা জাগে এবং অন্যায় কাজ ও আচরণ থেকে তারা আজই বিরত হয়ে যায়। এই কথা সুরার শুরুতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তুলে ধরেছেন। বলছেন, ‘আমি মহান আল্লাহ, তােমার কাছে আল কোরআন তােমাকে কষ্ট দেয়ার জন্যে পাঠাইনি বরং এ পাক কালাম হচ্ছে এক মহা উপদেশ সেই ব্যক্তির জন্যে যে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে।’ অবশ্যই এটা দেখা যেতে, যখন রসূলুল্লাহ(স.) কোন ওহী পেতেন তখন সে ওহী নাযিল শেষ হওয়ার পূর্বে কোরআনের শব্দ ও আয়াতগুলাে তিনি বার বার উচ্চারণ করতেন। এই ভয়ে তিনি বার বার আওড়াতেন যেন কোনাে শব্দ বা বাক্য ছুটে না যায় বা ভুল না হয়ে যায়, কোরআন নাযিল হওয়ার সময় তাঁর অবশ্যই কষ্ট হতাে; এজন্যে আলােচ্য আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে সেই আমানতের গুরুভার বহন করার জন্যে সান্ত্বনা দিতে চাইছেন যার বিরাট বােঝা তাকে বহন করতে হচ্ছে বলছেন, ‘আল্লাহ সুমহান, যিনি প্রকৃতপক্ষে হক মালিক। না, আল কোরআন আয়ত্ত করতে গিয়ে তুমি জলদি করাে না- যতােক্ষণ পর্যন্ত না তার ওহী আসা সম্পূর্ণ হয় বরং তুমি বলাে, হে আমার রব, তুমি আমার এলেম (জ্ঞান) বাড়িয়ে দাও।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালাই সুমহান মালিক, তিনিই প্রকৃতপক্ষে বরহক মালিক যার সামনে সকল চেহারা বিনয়াবনতভাবে ঝুঁকে পড়ে এবং তার সামনে সকল যালেম গােষ্ঠী ব্যর্থ হয়ে যায়, আর নিরাপত্তা লাভ করে নেককার মােমেন… তিনিই তাে এই মহাগ্রন্থ আল কোরআন তার নিজ মর্যাদাপূর্ণ স্থান থেকে পাঠিয়েছেন, সুতরাং তােমার জিহবা (এ পাক কালাম) উচ্চারণ করার ব্যাপারে যেন ব্যস্ত না হয়ে যায়, অবশ্যই আল কোরআন নাযিল হচ্ছে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে তাঁর কাছ থেকে, যিনি এ পাক কালাম পাঠাচ্ছেন, কিন্তু তিনি একে ক্ষতিগ্রস্ত হতে অথবা হারিয়ে যেতে দেবেন না। তােমার দায়িত্ব তাে শুধু এতােটুকু যে, তুমি জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে তােমার রবের কাছে দোয়া করতে থাকবে। এরপর, যা তিনি তােমাকে দেবেন তা নিয়ে তুমি নিশ্চিন্ত হয়ে যেয়াে তােমার কাছ থেকে কিছু চলে যাবে বা হারিয়ে যাবে এ আশংকা তুমি করাে না। সাফ সাফ জেনে নাও, এলেম বা নির্ভুল ও সুনিশ্চিত জ্ঞান তাই যা আল্লাহ তায়ালা তােমাকে শেখাচ্ছেন আর অবশ্যই তিনি চিরস্থায়ীভাবে তার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রয়েছেন, তিনি উপকার করেন, ক্ষতি করেন না, তিনি কৃতকার্য করেন, কাউকে ব্যর্থ করেন না।

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

১১৩-১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআনকে আরবি ভাষায় নাযিল করেছেন যাতে মানুষ সহজে অনুধাবন করতে পারে, বুঝতে পারে এবং তাতে বিভিন্ন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন যাতে মানুষ তাকওয়া অবলম্বন করে। অর্থাৎ সকল প্রকার পাপকার্য ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন এমন কোন কাজে জড়িত হবে না এবং আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা পালন করবে। অথবা এ কুরআন তার জন্য উপদেশের বাণী হবে। পূর্ববর্তীদের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সংশোধন করবে।

(وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْاٰنِ)

এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করছেন তিনি যেন, কুরআন মুখস্ত করার ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করেন। বরং যখন ওয়াহী নাযিল হবে তখন মনযোগসহ শ্রবণ করবেন, অতঃপর জিবরীল (عليه السلام) চলে গেলে মুখস্ত করবেন, আল্লাহ মুখস্থ করিয়ে দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَا تُحَرِّکْ بِھ۪ لِسَانَکَ لِتَعْجَلَ بِھ۪ﭟﺚ اِنَّ عَلَیْنَا جَمْعَھ۫ وَقُرْاٰنَھ۫ﭠﺊ فَاِذَا قَرَاْنٰھُ فَاتَّبِعْ قُرْاٰنَھ۫ﭡﺆ ثُمَّ اِنَّ عَلَیْنَا بَیَانَھ۫)

“তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ব করার জন্য তুমি তোমার জিহ্বা ওর সাথে দ্রুত সঞ্চালন কর‎ না। তা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা (জিবরাঈল-এর মাধ্যমে) পাঠ করি তুমি তখন সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:১৬-১৯)

হাদীসে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, প্রথম দিকে যখন জিবরীল (عليه السلام) ওয়াহী নিয়ে আসতো তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে সাথেই পাঠ করতেন। তাতে তাঁর খুব কষ্ট হত। অতঃপর যখন উক্ত আয়াতগুলো নাযিল করা হল তখন তাঁর থেকে ঐ কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং তিনি প্রশান্তি লাভ করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৩০৮)

আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন তাঁর জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলার নিকট দু‘আ করে বলেন: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞানে সমৃদ্ধ কর‎।’

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন:

اللّٰهُمَّ انْفَعْنِي بِمَا عَلَّمْتَنِي، وَعَلِّمْنِي مَا يَنْفَعُنِي، وَزِدْنِي عِلْمًا

হে আল্লাহ তা‘আলা! আপনি যা আমাকে শিখিয়েছেন তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমার উপকার করে এবং আমার ইলম বৃদ্ধি করুন। (ইবনু মাজাহ হা: ৩৫৯৯, সহীহ)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কুরআন হল মানুষের জন্য সতর্কবাণী।
২. আল্লাহ তা‘আলা কোন জাতিকে সতর্ক না করে শাস্তি প্রদান করেন না।
৩. জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য যে দু‘আ পাঠ করতে হয় তা জানতে পারলাম।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

১১৩-১১৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ কিয়ামতের দিন অবশ্যই আসবে এবং সেইদিন ভাল ও মন্দ কাজের প্রতিফল অবশ্যই পেতে হবে, তাই আমি লোকদেরকে সতর্ক করার জন্যে সুসংবাদ দানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী আমার পবিত্র কালাম পরিষ্কার আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে মানুষ বুঝতে পারে। আমি তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে ভয় প্রদর্শন করেছি যাতে তারা পাপ থেকে বাঁচতে পারে, কল্যাণ লাভের কাজে লেগে যায়, তাদের অন্তরে চিন্তা ভাবনা ও উপদেশ এসে যায়, তারা আনুগত্যের দিকে ঝুঁকে পড়ে এবং ভাল কাজের চেষ্টায় লেগে পড়ে। সুতরাং মহান ও পবিত্র ঐ আল্লাহ যিনি প্রকৃত অধিপতি। এবং ইহজগত ও পরজগতের একচ্ছত্র মালিক। তিনি স্বয়ং সত্য, তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য, তঁর ভয় প্রদর্শন সত্য, তাঁর রাসূলগণ সত্য এবং তার জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য। তাঁর ফরমান এবং তার পক্ষ হতে যা কিছু হয় সবই ন্যায় ও সত্য। তাঁর সত্ত্বা এর থেকে পবিত্র যে, তিনি পূর্বে সতর্ক না করেই কাউকেও শাস্তি প্রদান করবেন। তিনি সবারই ওজরের সুযোগ কেটে দেন এবং কারো সন্দেহ তিনি বাকী রাখেন না। তিনি সত্য উদঘাটিত করেন। অতঃপর তিনি মুশরিকদেরকে ন্যায়ের সাথে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমার প্রতি আমার ওয়াহী সম্পূর্ণ হবার পূর্বে কুরআন পাঠে তুমি ত্বরা করে না। প্রথমে ভাল রূপে শুনে নাও। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ “তাড়াতাড়ি ওয়াহী আয়ত্ত করার জন্যে তুমি তোমার জিহবা ওর সাথে সঞ্চালন করো না। এটা সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। সুতরাং যখন আমি তা পাঠ করি তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর। অতঃপর এর বিশদ ব্যাখ্যার দায়িত্ব আমারই।”

হাদীসে আছে যে, প্রথম দিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত জিবরাঈলের (আঃ) সাথে সাথেই পড়তেন। তাতে তার খুব কষ্ট হতো। যখন উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন তার থেকে ঐ কষ্ট দূর হয়ে যায় এবং তিনি প্রশান্তি লাভ করেন যে, আল্লাহ যতগুলিই ওয়াহী নাযিল করুন না কেন তার মুখস্থ। হবেই। একটা অক্ষরও তিনি ভুলবেন না। কেননা, আল্লাহ ওয়াদা করেছেন এবং তার ওয়াদা সত্য। এখানেও একথাই বলা হচ্ছে যে, তিনি যেন ফেরেশতার কুরআন পাঠ শ্রবণ করেন এবং তাঁর পাঠ শেষে যেন তিনি পাঠ শুরু করেন। আর তাঁর কর্তব্য হবে জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। সুতরাং তিনি দুআ করেন এবং আল্লাহ তাআলা তার দুআ ককূল করেন। তাই, মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর ইলম বাড়তেই থাকে।

হাদীসে আছে যে, বরাবরই পর্যায়ক্রমে ওয়াহী আসতে থাকে, এমনকি যেদিন তিনি দুনিয়া হতে চিরবিদায় গ্রহণ করেন সেদিনও বহু সংখ্যক ওয়াহী অবতীর্ণ হয়।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি যা আমাকে শিখিয়েছেন তা দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন এবং আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমার উপকার করে এবং আমার ইলম বৃদ্ধি করুন! আর সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। জামে তিরমিযীতেও এ হাদীসটি রয়েছে। তাতে নিম্নের কথাটুকু বেশী রয়েছে; (আরবী) অর্থাৎ “আমি জাহান্নামবাসী অবস্থা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি)

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#916)
[ رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
“My Lord! Increase me in knowledge.”]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 113-114
www.motaher21.net

20:113

وَ کَذٰلِکَ اَنۡزَلۡنٰہُ قُرۡاٰنًا عَرَبِیًّا وَّ صَرَّفۡنَا فِیۡہِ مِنَ الۡوَعِیۡدِ لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ اَوۡ یُحۡدِثُ لَہُمۡ ذِکۡرًا ﴿۱۱۳﴾

And thus We have sent it down as an Arabic Qur’an and have diversified therein the warnings that perhaps they will avoid [sin] or it would cause them remembrance.

 

The Qur’an was revealed so that the People would have Taqwa and reflect

Allah says,

وَكَذَلِكَ أَنزَلْنَاهُ قُرْانًا عَرَبِيًّا

And thus We have sent it down as a Qur’an in Arabic,

After Allah, the Exalted, mentions that on the Day of Judgement both the good and the evil will be recompensed and there is no avoiding it, He then explains that the Qur’an was revealed as a bringer of glad tidings and a warner in the clear and eloquent Arabic language. There is no confusion or deficiency in it.

وَصَرَّفْنَا فِيهِ مِنَ الْوَعِيدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

and have explained therein in detail the warnings, in order that they may have Taqwa of,

This means:so that they will leave off sins, forbidden things and lewd abominations.

أَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا

or that it may cause them to have a lesson from it.

This means:to produce acts of obedience and deeds that will bring one closer to Allah
20:114

فَتَعٰلَی اللّٰہُ الۡمَلِکُ الۡحَقُّ ۚ وَ لَا تَعۡجَلۡ بِالۡقُرۡاٰنِ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یُّقۡضٰۤی اِلَیۡکَ وَحۡیُہٗ ۫ وَ قُلۡ رَّبِّ زِدۡنِیۡ عِلۡمًا ﴿۱۱۴﴾

So high [above all] is Allah, the Sovereign, the Truth. And, [O Muhammad], do not hasten with [recitation of] the Qur’an before its revelation is completed to you, and say, “My Lord, increase me in knowledge.”

 

فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ

Then High above all be Allah, the True King.

This means:Most Holy and Majestic is He, the True King, Who is Himself the Truth and His promise is true. Likewise, His threat is true, His Messengers are true, the Paradise is true, the Hellfire is true and everything from Him is true. His justice is that He does not punish anyone before warning them, sending Messengers to them and granting excuses to His creatures, so that no one will have any argument or doubt (on Judgment Day).
The Command to the Prophet to listen to the Qur’an when it is revealed without making haste to recite it

Concerning Allah’s statement,

وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْانِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ

And be not in haste with the Qur’an before its revelation is completed to you,

This is similar to Allah’s statement,

لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ

إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْءَانَهُ

فَإِذَا قَرَأْنَـهُ فَاتَّبِعْ قُرْءَانَهُ

ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ

Move not your tongue to make haste therewith. It is for Us to collect it and to give you the ability to recite it. And when We have recited it to you, then follow its recital. Then it is for Us to made it clear (to you). (75:16-19)

It is confirmed in the Sahih on the authority of Ibn Abbas, who said that;

the Messenger of Allah used to go through great pains to retain the revelation. In doing so he used to move his tongue rapidly with its recital. Then, Allah revealed this Ayah. This means that whenever Jibril would say an Ayah, the Prophet would say it with him due to his eagerness to memorize it. Then, Allah guided him to that which was easier and lighter in this matter, to relieve him of this difficulty.

Allah said,

لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ

إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْءَانَهُ

Move not your tongue to make haste therewith. It is for Us to collect it and to give you the ability to recite it. (75:16-17)

Meaning, “We will gather it in your chest, then you will recite it to the people without forgetting anything of it.”

فَإِذَا قَرَأْنَـهُ فَاتَّبِعْ قُرْءَانَهُ

ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ

And when We have recited it to you, then follow its recital. Then it is for Us to made it clear (to you). (75:18-19)

And He said in this Ayah,

وَلَا تَعْجَلْ بِالْقُرْانِ مِن قَبْلِ أَن يُقْضَى إِلَيْكَ وَحْيُهُ

And be not in haste with the Qur’an before its revelation is completed to you,

This is a command to the Prophet to listen quietly:`Then, when the angel (Jibril) completes reciting to you, you recite it after him.’

وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا

and say:”My Lord! Increase me in knowledge.”

meaning, “Give me more knowledge from You.”

Ibn Uyaynah said,

“The Prophet did not cease increasing (in knowledge) until Allah, the Mighty and Sublime, took him (i.e. he died).

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply