(বই#৯১৫) [ وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ -এ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড়গুলো কোথায় চলে যাবে? ] সূরা:- ত্বাহা। সুরা:২০ ১০৫- ১১২ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১৫)
[ وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ
-এ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড়গুলো কোথায় চলে যাবে? ]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
১০৫- ১১২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:১০৫
وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ یَنْسِفُهَا رَبِّیْ نَسْفًاۙ

-এ লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, সেদিন এ পাহাড়গুলো কোথায় চলে যাবে? বলো, আমার রব তাদেরকে ধূলি বানিয়ে উড়িয়ে দেবেন।
২০:১০৬
فَیَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًاۙ

এবং যমীনকে এমন সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেবেন যে,

২০:১০৭
لَّا تَرٰى فِیْهَا عِوَجًا وَّ لَاۤ اَمْتًاؕ

তার মধ্যে তোমরা কোন উঁচু নিচু ও ভাঁজ দেখতে পাবে না।
২০:১০৮
یَوْمَئِذٍ یَّتَّبِعُوْنَ الدَّاعِیَ لَا عِوَجَ لَهٗ١ۚ وَ خَشَعَتِ الْاَصْوَاتُ لِلرَّحْمٰنِ فَلَا تَسْمَعُ اِلَّا هَمْسًا

–সেদিন সবাই নকীবের আহবানে সোজা চলে আসবে, কেউ সামান্য দর্পিত ভংগীর প্রকাশ ঘটাতে পারবে না এবং করুণাময়ের সামনে সমস্ত আওয়াজ স্তব্ধ হয়ে যাবে, মৃদু খসখস শব্দ ছাড়া তুমি কিছুই শুনবে না।

২০:১০৯
یَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَ رَضِیَ لَهٗ قَوْلًا

সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি করুণাময় কাউকে অনুমতি দেন এবং তার কথা শুনতে পছন্দ করেন।
২০:১১০
یَعْلَمُ مَا بَیْنَ اَیْدِیْهِمْ وَ مَا خَلْفَهُمْ وَ لَا یُحِیْطُوْنَ بِهٖ عِلْمًا

-তিনি লোকদের সামনের পেছনের সব অবস্থা জানেন এবং অন্যেরা এর পুরো জ্ঞান রাখে না।
২০:১১১
وَ عَنَتِ الْوُجُوْهُ لِلْحَیِّ الْقَیُّوْمِ١ؕ وَ قَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا

-লোকদের মাথা চিরঞ্জীব ও চির প্রতিষ্ঠিত সত্তার সামনে ঝুঁকে পড়বে, সে সময় যে জুলুমের গোনাহের ভার বহন করবে সে ব্যর্থ হবে।
২০:১১২
وَ مَنْ یَّعْمَلْ مِنَ الصّٰلِحٰتِ وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَلَا یَخٰفُ ظُلْمًا وَّ لَا هَضْمًا

আর যে ব্যক্তি সৎকাজ করবে এবং সেই সাথে সে মুমিনও হবে তার প্রতি কোন জুলুম বা অধিকার হরণের আশঙ্কা নেই।

১০৫-১১২ নং আয়াতের তাফসীর:

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
আবার তাদের মনে ফিরে আসবে পাহাড় পর্বত সম্পর্কে ওই প্রশ্ন, যা জীবদ্দশায় তারা বার বার জিজ্ঞেস করেছে। আজকে ওইসব কথার জওয়াব তারা বাস্তবে দেখবে, অর্থাৎ তাদের সামনেই তারা দেখতে পাবে সবকিছু ধূলিকণায় রূপান্তরিত হয়ে পরিণত হয়েছে এমন এক সুপ্রশস্ত ময়দানে, যার কোনাে সীমা শেষ তাদের নযরে পড়বে না এসব কিছু যতাে বেশী তারা দেখতে থাকবে ততােই তাদের আতংক বাড়তে থাকবে। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘ওরা তােমাকে জিজ্ঞেস করছে পর্বতমালা সম্পর্কে, অতএব তুমি বলাে, এগুলােকে ধূলিকণা বানিয়ে আমার রব উড়িয়ে দেবেন… আর ঈমান আনার পর যে ব্যক্তি সকল প্রকার ভালাে কাজ করবে, তার প্রতি কোনাে যুলুম হবে বলে তার কোনাে ভয় হবে না, আর সে ধ্বংস হয়ে যাবে বলেও শংকিত হবে না।'(আয়াত ১০৫-১১২) এই আয়াতগুলাে পাঠকালে সে ভয়ানক দৃশ্যের ছবি যেন পাঠকের চোখের সামনে ভাসতে থাকে, যে পাহাড় পর্বত সব ভেংগে চুরমার হয়ে গােটা বিশ্ব একটি বিশাল প্রান্তরে পরিণত হয়ে যাচ্ছে এবং কোথাও কোনাে বাঁকা তেড়া বা উঁচু-নীচু দেখা যাচ্ছে না- সুবৃহৎ একটি থালার মতাে সব কিছু এক মসৃণ ভূমির আকার ধারণ করেছে। পাঠকের হৃদয়ে এই অধ্যায়টি অধ্যয়নের সময়ে তীব্রভাবে এই অনুভূতি আসবে যে উন্মুক্ত এক তুফানের পর সকল পাহাড় পর্বত ভেংগে চুরমার হয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে গেছে এবং এসব ধুলা সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে এক অন্তহীন সমান্তরাল প্রান্তরের রূপ ধারণ করেছে, এমনভাবে সব কিছু সমান হয়ে গেছে যে, কোনাে জায়গায় উঁচুনীচু নেই। নেই কোনোখানে কোনাে বাঁকা-তেড়া ভূমি নেই সম্মিলিত অগণিত জনতার ভিড় উর্ধ্বশ্বাসে ছুটোছুটি করছে। কোনাে কিছুর নেই কোলাহল, নেই কোনাে গন্ডগােল- সবাই নির্বাক নীরব নিথর, অজানা-অচেনা প্রচন্ড আতংকে সবার বাক রুদ্ধ হয়ে গেছে, কি করবে, কোথায় যাবে, কি হবে? কিছুই ভেবে না পেয়ে থেমে যাচ্ছে তাদের কাতরানি, মন্থর হয়ে যাচ্ছে তাদের গতি। এসময়ে উত্থিত হচ্ছে ঘোষকের আহ্বান! সে ডাকে সাড়া দিয়ে বিশাল এ জামায়াত অগ্রসর হচ্ছে একমুখী হয়ে এবং একযােগে নীরবে নিশব্দে, পরিপূর্ণ অনুগতভাবে, কেউ এদিকে ওদিকে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে না, পিছিয়েও থাকছে না কেউ, অথচ এমনও একদিন ছিলাে যখন তাদের ডাকা হতাে, কিন্তু তখন কেউ তাে পিছিয়ে থাকতাে আর মুখ ফিরিয়ে চলেও যেতো কেউ। তাই সে ভয়ংকর দিনের ডাকে সাড়া দিয়ে আনুগত্য করার অর্থ এভাবে করা হচ্ছে, ‘তারা আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিচ্ছে এমন আনুগত্যের সাথে যে, এ হুকুম পালন করার মধ্যে কোনাে বক্রতা নেই।’ অর্থাৎ আজকের এই আনুগত্যের মধ্যে শরীর ও অন্তর দুই শরীক আছে সমস্ত দিল ও জান দিয়ে তারা তেমনি করে আনুগত্য করছে, যেমন করে পাহাড় পর্বতগুলাে বিনাবাক্যে ওই কেয়ামতের দিনে আনুগত্য করেছে। তারপর সে ভয়ংকর নীরবতা ও পরিপূর্ণ শান্ত অবস্থার চিত্র এভাবে আঁকা হচ্ছে, ‘আর মহা-দয়াময় পরওয়ারদেগারের কথা শােনার জন্যে উন্মুখ জনতার সকল শব্দ স্তিমিত হয়ে যাবে, সেদিন তুমি মৃদু গুঞ্জরণ ধ্বনি ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাবে না।… আর শ্রান্ত-ক্লান্ত সকলের চেহারা চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী আল্লাহর সামনে ঝুঁকে থাকবে।’ এভাবে ওই গােটা পরিবেশে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের মর্যাদা প্রকাশিত হবে এবং তার মর্যাদা সে সময় প্রান্তরব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে যার পরিধি অনুমান করতে পারবে না কোনাে চোখ, আর ভয়ে ও মিনতিতে কেউ কোনাে দিকে তাকাতেও সাহস পাবে না। সুতরাং কিছু গুঞ্জন ধ্বনি শােনা যাবে, ফিসফিসিয়ে একে অপরকে কিছু জিজ্ঞেস করবে, কিন্তু বিনয়াবনতভাবে নীচের দিকে ঝুঁকে থাকা চেহারা থেকে সেসব শব্দ বেরুবে। চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী আল্লাহর সুমহান মর্যাদা ভীষণভাবে সকলের ওপর ছেয়ে থাকবে। সেদিন সেই ব্যক্তি ছাড়া কেউ কারাে জন্যে শাফায়াত করতে পারবে না, যার ওপর আল্লাহ তায়ালা খুশী হয়ে যাবেন। আর সব কিছুর যাবতীয় জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই থাকবে, অর্থাৎ একমাত্র কি হবে না হবে সে বিষয়ে তিনি ছাড়া কেউ কিছুই জানবে না। সে দিন অত্যাচারী যালেম ব্যক্তিরা তাদের যুলুমের বােঝা কাধে নিয়ে শাস্তির নির্দেশের জন্যে প্রহর গুনতে থাকবে এবং তারপর তাদের নিক্ষেপ করা হবে চরম হীনতা ভরা স্থানে। অপরদিকে যারা ঈমান এনেছে তারা থাকবে নিশ্চিন্ত পরিতৃপ্ত অবস্থায় হিসাব নিকাশের ব্যাপারে তাদের প্রতি কোনাে যুলুম করা হবে বলে তারা কোন ভয় করবে না এবং যেসব ভালাে কাজ তারা করেছে তার কোনােটা বাতিল করে দেয়া হবে বলেও তারা মনে করবে না।

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# এটিও একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। ভাষণের মাঝখানে কোন শ্রোতার প্রশ্নের জবাবে এ বাক্যটি বলা হয়েছে। মনে হয় যখন এ সূরাটি একটি ঐশী ভাষণ হিসেবে শুনানো হচ্ছিল তখন কেই বিদ্রূপ করার জন্য এ প্রশ্নটি উঠিয়েছিল যে, কিয়ামাতের যে চিত্র আপনি আঁকছেন তাতে তো মনে হচ্ছে সারা দুনিয়ার লোকেরা কোন সমতল প্রান্তরের ওপর দিয়ে ছুটে চলতে থাকবে। তাহলে এ বিশালাকৃতির পাহাড়গুলো তখন কোথায় চলে যাবে? এ প্রশ্নের সুযোগটি বুঝার জন্য যে পরিবেশে এ ভাষণ দেয়া হচ্ছিল সেটি সামনে রাখতে হবে। মক্কা যে স্থানে অবস্থিত তার অবস্থা একটি জলাধারের মতো, যার চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। প্রশ্নকারী এ পাহাড়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে একথা বলে থাকবে। অহীর ইশারায় উপস্থিত ক্ষেত্রে তখনই এর এ জবাব দেয়া হয়েছে যে, এ পাহাড়গুলো ভেঙ্গে বালুকা রাশির মতো গুঁড়ো গুঁড়ো করে দেয়া হবে এবং সেগুলো ধূলোমাটির মতো সারা দুনিয়ার বুকে ছড়িয়ে সমগ্র দুনিয়াকে এমন একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করে দেয়া হবে যেখানে কোন উঁচু নীচু, ঢালু বা অসমতল জায়গা থাকবে না। তার অবস্থা এমন একটি পরিষ্কার বিছানার মতো হবে যাতে সামান্যতমও খাঁজ বা ভাঁজ থাকবে না।
# পরকালীন জগতে পৃথিবী যে নতুন রূপ নেবে কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় তা বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইনশিকাকে বলা হয়েছে إِذَا الْأَرْضُ مُدَّتْ ”যখন পৃথিবী বিস্তৃত করে দেয়া হবে।” সূরা ইনফিতারের বলা হয়েছে إِذَا الْبِحَارُ فُجِّرَتْ “যখন সাগর চিরে ফেলা হবে।” এর অর্থ সম্ভবত এই যে, সমুদ্রের তলদেশ ফেটি যাবে এবং সমস্ত পানি পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগে চলে যাবে। সূরা তাকবীররে বলা হয়েছেঃ إِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ ”যখন সমুদ্র ভরে দেয়া হবে বা সমান করে দেয়া হবে।” এখানে বলা হচ্ছে যে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে সারা পৃথিবীকে একটি সমতল প্রান্তরে পরিণত করা হবে। মনের পাতায় এর যে আকৃতি গড়ে উঠে তা হচ্ছে এই যে, পরকালীন দুনিয়ায় সমস্ত সমুদ্র ভরাট করে, পাহাড়গুলো ভেঙ্গে উঁচু নীচু সমান করে, বন-জংগল সাফ করে পুরোপুরি একটি বলের গাত্রাবরণের মতো সমান ও মসৃণ করে দেয়া হবে। এ আকৃতি সম্পর্কে সূরা ইবরাহীমের ৪৮আয়াতে বলা হয়েছে يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ “এমন দিন যখন পৃথিবীকে পরিবর্তিত করে ভিন্ন কিছু করে দেয়া হবে।” এ আকৃতির পৃথিবীর ওপর হাশর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আল্লাহ‌ সেখানে আদালত তথা ন্যায়বিচার কায়েম করবেন। তারপর সবশেষে তাকে যে আকৃতি দান করা হবে সূরা যুমারের ৭৪ আয়াতে তা এভাবে বলা হয়েছেঃ

وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي صَدَقَنَا وَعْدَهُ وَأَوْرَثَنَا الْأَرْضَ نَتَبَوَّأُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ نَشَاءُ فَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

অর্থাৎ মুত্তাকীরা “বলবে, সেই আল্লাহর শোকর যিনি আমাদের দ্বারা তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদের পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন। আমরা এ জান্নাতে যেখানে ইচ্ছা নিজেদের জায়গা বানিয়ে নিতে পারি। কাজেই সৎকর্মশীলদের জন্য রয়েছে সর্বোত্তম প্রতিদান।”

এ থেকে জানা যায়, সবশেষে এ সমগ্র পৃথিবীটিকেই জান্নাতে পরিণত করা হবে এবং আল্লাহর মুত্তাকী ও সৎকর্মশীল বান্দারা হবে এর উত্তরাধিকারী। সে সময় সারা পৃথিবী একটি দেশে পরিণত হবে। পাহাড়-পর্বত, সাগর, নদী, মরুভূমি আজ পৃথিবীকে অসংখ্য দেশে বিভক্ত করে রেখেছে এবং এ সাথে বিশ্বমানবতাকেও বিভক্ত করে দিয়েছে। এগুলোর সেদিন কোন অস্তিত্বই থাকবে না। (উল্লেখ্য, সাহাবা ও তাবেঈদের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.) ও কাতাদাহও এ মত পোষন করতেন যে জান্নাত এ পৃথিবীতেই প্রতিষ্ঠিত হবে। সূরা নাজম এর عِنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى – عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى আয়াতের ব্যাখ্যা তারা এভাবে করেন যে, এখানে এমন জান্নাতের কথা বলা হয়েছে যেখানে এখন শহীদদের রূহ রাখা হয়।)

# মূলে ‘হাম্স’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এ শব্দটি পায়ের আওয়াজ, চুপিচুপি কথা বলার আওয়াজ, উটের চলার আওয়াজ এবং আরো এ ধরনের হালকা আওয়াজের জন্য বলা হয়। এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে, সেখানে চলাচলকারীদের পায়ের আওয়াজ ছাড়া চুপিচুপি গুনগুন করে কথা বলার কোন আওয়াজ শোনা যাবে না। চতুর্দিকে একটি ভয়ংকর ভীতিপ্রদ পরিবেশ বিরাজ করবে।
# এ আয়াতের দু’টি অনুবাদ হতে পারে। একটি অনুবাদ আমরা অবলম্বন করেছি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, “সেদিন সুপারিশ কার্যকর হবে না, তবে যদি কারো পক্ষে করুণাময় এর অনুমতি দেন এবং তার জন্য কথা শুনতে রাজি হয়ে যান।” এখানে এমন ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যা উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর প্রকৃত ব্যাপারও এই যে, কিয়ামতের দিন কারো সুপারিশ করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মুখ খোলা তো দূরের কথা, টুঁশব্দটি করারও কারোর সাহস হবে না। আল্লাহ‌ যাকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র সেই-ই সুপারিশ করতে পারবে। এ দু’টি কথা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। একদিকে বলা হয়েছেঃ مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ “কে আছে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর সামনে সুপারিশ করতে পারে? ” (আল বাকারাহ, ২৫৫ আয়াত ) আরো বলা হয়েছেঃ يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَائِكَةُ صَفًّا لَا يَتَكَلَّمُونَ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا “সেদিন যখন রূহ ও ফেরেশতারা সবাই কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াবে, একটুও কথা বলবে না, শুধুমাত্র সে-ই বলতে পারবে যাকে করুণাময় অনুমতি দেবেন এবং যে ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে।” (আন নাবা, ৩৮ আয়াত ) অন্যদিকে বলা হয়েছেঃ لَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ “আর তারা কারোর সুপারিশ করে না সেই ব্যক্তির ছাড়া যার পক্ষে সুপারিশ শোনার জন্য (রহমান) রাজী হবেন এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত হয়ে থাকে।” (আল আম্বিয়া, ২৮ আয়াত ) আরো বলা হয়েছেঃ

وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى

“কত ফেরেশতা আকাশে আছে, তাদের সুপারিশ কোনই কাজে লাগবে না, তবে একমাত্র তখন যখন আল্লাহর কাছ থেকে অনুমতি নেবার পর সুপারিশ করা হবে এবং এমন ব্যক্তির পক্ষে করা হবে যার জন্য তিনি সুপরিশ শুনতে চান এবং পছন্দ করেন। (আন নাজম, ২৬ আয়াত )।
# সুপারিশের প্রতি এ বিধি-নিষেধ আরোপিত কেন, এর কারণ এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। ফেরেশতা, আম্বিয়া বা আউলিয়া যে-ই হোন না কেন কারো রেকর্ড সম্পর্কে এদের কারো কিছুই জানা নেই এবং জানার কোন ক্ষমতাও এদের নেই। দুনিয়ায় কে কি করতো এবং আল্লাহর আদালতে কে কোন ধরনের ভূমিকা ও কার্যাবলী এবং কেমন দায়িত্বের বোঝা নিয়ে এসেছে তাও কেউ জানে না। অপরদিকে আল্লাহ‌ প্রত্যেকের অতীতের ভূমিকা ও কর্মকাণ্ড জানেন। তার বর্তমান ভূমিকাও তিনি জানেন। সে সৎ হলে কেমন ধরনের সৎ। অপরাধী হলে কোন পর্যায়ের অপরাধী। তার অপরাধ ক্ষমা যোগ্য কি না। সে কি পূর্ণ শাস্তি লাভের অধিকারী অথবা কম শাস্তির। এহেন অবস্থায় কেমন করে ফেরেশতা, নবী ও সৎলোকদেরকে তাদের ইচ্ছা মতো যার পক্ষে যে কোন ধরনের সুপারিশ তারা চায় তা করার জন্য তাদেরকে অবাধ অনুমতি দেয়া যেতে পারে? একজন সাধারণ অফিসার তার নিজের ক্ষুদ্রতম বিভাগে যদি নিজের প্রত্যেকটি বন্ধু ও আত্মীয়ের সুপারিশ শুনতে শুরু করে দেন তাহলে মাত্র চারদিনেই সমগ্র বিভাগটিকে ধ্বংস করে ছাড়বেন। তাহলে আকাশ ও পৃথিবীর শাসনকর্তার কাছ থেকে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, তার দরবারে ব্যাপকভাবে সুপারিশ চলতে থাকবে এবং প্রত্যেক বুযর্গ সেখানে গিয়ে যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়ে আনবেন। অথচ তাদের কেউই যাদের সুপারিশ তারা করছেন তাদের কার্যকলাপ কেমন তা জানেন না। দুনিয়ায় যে কর্মকর্তা দায়িত্বের সামান্যতম অনুভূতিও রাখেন তার কর্মনীতি এ পর্যায়েরই হয়ে থাকে যে, যদি তার কোন বন্ধু তার কোন অধস্তন কর্মচারীর সুপারিশ নিয়ে আসে তাহলে সে তাকে বলে, আপনি জানেন না এ ব্যক্তি কত বড় ফাঁকিবাজ, দায়িত্বহীন, ঘুষখোর ও অত্যাচারী। আমি এর যাবতীয় কীর্তিকলাপের খবর রাখি। কাজেই আপনি মেহেরবানী করে অন্তত আমার কাছে তার সুপারিশ করবেন না। এ ছোট্ট উদাহরণটির ভিত্তিতে অনুমান করা যেতে পারে যে, এ আয়াতে সুপারিশ সম্পর্কে যে নিয়ম বর্ণনা করা হয়েছে তা কতদূর সঠিক, যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায়ভিত্তিক। আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার দরজা বন্ধ হবে না। আল্লাহর সৎ বান্দারা, যারা দুনিয়ায় মানুষের সাথে সহানুভূতিশীল ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিলেন তাদেরকে আখেরাতেও সহানুভূতির অধিকার আদায় করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু তারা সুপারিশ করা আগে অনুমতি চেয়ে নেবেন। যার পক্ষে আল্লাহ‌ তাদেরকে বলার অনুমতি দেবেন একমাত্র তার পক্ষেই তারা সুপারিশ করতে পারবেন। আবার সুপারিশ করার জন্যও শর্ত হবে যে, তা সঙ্গত এবং ন্যায়ভিত্তিক হতে হবে যেমন وَقَالَ صَوَابًا এবং ঠিক কথা বলবে) আল্লাহর এ উক্তিটি পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, সেখানে আজেবাজে সুপারিশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। যেমন একজন দুনিয়ায় শত শত হাজার হাজার লোকের অধিকার গ্রাস করে এসেছে কিন্তু কোন এক বুযুর্গ হঠাৎ উঠে তার পক্ষে সুপারিশ করে দিলেন যে, হে আল্লাহ! তাকে পুরস্কৃত করুন কারণ সে আমার বিশেষ অনুগ্রহ ভাজন।

# কারণ সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যক্তিগত গুণাবলীর () ভিত্তিতে ফয়সালা হবে। যে ব্যক্তি কোন জুলুমের গোনাহের বোঝা বহন করে নিয়ে আসবে, সে আল্লাহর অধিকারের বিরুদ্ধে জুলুম করুক বা আল্লাহর বান্দাদের অধিকারের বিরুদ্ধে অথবা নিজের নফসের বিরুদ্ধে জুলুম করুন না কেন যে কোন অবস্থায়ই এগুলো তাকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে না। অন্যদিকে যারা ঈমান ও সৎকাজ (নিছক সৎকাজ নয় বরং ঈমান সহকারে সৎকাজ এবং নিছক ঈমানও নয় বরং সৎকাজ সহকারে ঈমান) নিয়ে আসবে তাদের ওপর সেখানে জুলুম হবার কোনআশঙ্কা নেই অর্থাৎ নিরর্থক তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে না এবং তাদের যাবতীয় কার্যাবলী একেবারে ধ্বংস করে দেয়া হবে এবং সমস্ত অধিকার গ্রাস করে নেয়া হবে এমন কোন আশঙ্কাও সেখানে থাকবে না।

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৯৯-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:

অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়ে বলছেন; আমি তোমার কাছে পূর্ববর্তীদের ঘটনা ও সংবাদ সেভাবে বর্ণনা করি যেভাবে মূসা, হারূন, ফির‘আউন ও সামিরীর ঘটনা সত্যসহ বর্ণনা করেছি। তুমি এসকল ঘটনা জানতে না, পড়নি এবং যারা পড়েছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষাও নাওনি। আর আহলে কিতাবরা এ সব ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং তুমি তাদের কাছে এসব ঘটনা সঠিকভাবে বর্ণনা করে দিচ্ছো। এতেই প্রমাণিত হয়, তুমি একজন আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত রাসূল, তুমি যা নিয়ে এসেছ তা সত্য। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ‘আমি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ’ তা হল কুরআন।

সুতরাং মানুষ এ কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করে সতর্ক হবে, পূর্ববর্তীদের ন্যায় অবাধ্য হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে না।

وِزْرًا অর্থ বোঝা, অর্থাৎ যারা এসকল পূর্ববর্তী অবাধ্য লোকদের পরিণতি জানার পরও ঈমান আনবে না বরং মুখ ফিরিয়ে নেবে তারা কিয়ামতের দিন তাদের পাপের বোঝা বহন করবে। আর তা তাদের জন্য কতই না মন্দ।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قَدْ خَسِرَ الَّذِیْنَ کَذَّبُوْا بِلِقَا۬ئِ اللہِﺚ حثج اِذَا جَا۬ءَتْھُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا یٰحَسْرَتَنَا عَلٰی مَا فَرَّطْنَا فِیْھَاﺫ وَھُمْ یَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَھُمْ عَلٰی ظُھُوْرِھِمْﺚ اَلَا سَا۬ئَ مَا یَزِرُوْنَ)‏

“যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে (পুনরুত্থান) মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি অকস্মাৎ তাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, ‘হায় আফসোস! একে যে আমরা অবহেলা করেছি।” তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে; দেখ, তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট!” (সূরা আন‘আম ৬:৩১)
১০২-১০৪ নং আয়াতে তাফসীর:

الصُّوْرِ অর্থ শিংগা, অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার আদেশে যে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার জন্য ইসরাফিল (عليه السلام) অপেক্ষমান রয়েছে সেই শিংগা। যখন আদেশ দেয়া হবে তখনই শিংগায় ফুঁ দেবেন। প্রথম ফুঁৎকারে জীবিত সবাই মারা যাবে, দ্বিতীয় ফুঁৎকারে কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর তৃতীয় ফুৎকারে সবাই জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে সমবেত হবে। এখানে তৃতীয় ফুঁৎকার উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেছেন, ফুঁৎকার মাত্র দুটি হবে। এ সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ৭৩ নং আয়াতসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

زُرْقًا অর্থাৎ কাফিরদের চক্ষু ও রঙ বিবর্ণ অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। আর তারা ভীষণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার কারণে একজন অপর জনের সাথে চুপি চুপি বলবে, তোমরা দুনিয়াতে মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ৫ لا مَا لَبِثُوْا غَيْرَ سَاعَةٍ ط كَذٰلِكَ كَانُوْا يُؤْفَكُوْنَ)

“যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। এভাবেই তাদেরকে উল্টা দিকে পরিচালিত করা হত। ” (সূরা রূম ৩০:৫৫)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِيْنَ ‏ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَسْئَلِ الْعَادِّيْنَ ‏ قَالَ إِنْ لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيْلًا لَّوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ ‏)‏

“আল্লাহ বলবেন: ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বৎসর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ; তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস কর।’ তিনি বলবেন: ‘তোমরা অল্প কালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে!” (সূরা মু’মিনূন ২৩:১১২-১১৪)

আর প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় এরূপই অর্থাৎ অতি অল্পকালের কিন্তু মানুষ দুনিয়াতে তা মনে রাখে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার জন্য ইসরাফিল (عليه السلام) প্রস্তুত, আল্লাহ নির্দেশ দিলেই ফুঁ দেবেন।
২. কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে অপরাধীদের চোখ ও রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
৩. দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় অতি অল্প সময়ের এবং খুবই নগণ্য।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৯৯-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) বলছেনঃ যেমন আমি মূসার (আঃ) ঘটনাকে প্রকৃতরূপে তোমার সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি, তেমনিভাবে আরো অনেক অতীতের ঘটনা তোমার সামনে আমি হুবহু বর্ণনা করেছি। আমি তোমাকে মহান কুরআন দান করেছি। ইতিপূর্বে কোন বীকে এর চেয়ে বেশী পূর্ণতা প্রাপ্ত, বেশী অর্থবহ এবং বেশী বরকতময় কিতাব প্রদান করা হয় নাই। এই কুরআন কারীমই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী উন্নতমানের কিতাব। এর মধ্যে অতীতের ঘটনাবলী, ভবিষ্যতের কার্যাবলী এবং প্রতিটি কাজের পন্থা বর্ণিত হয়েছে। যারা এটাকে মানে না, এর থেকে বিমুখ হয়, এর আহকাম হতে পালিয়ে যায় এবং এটাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতেই হিদায়াত অনুসন্ধান করে সে পথভ্রষ্ট এবং জাহান্নামী। কিয়ামতের দিন সে নিজের বোঝা নিজেই বহন করবে এবং ওটা হবে খুবই মন্দ বোঝা। যে এর সাথে কুফরী করবে সে জাহান্নামে যাবে। কিতাবী হোক বা গায়ের কিতাবী হোক, আরবী হোক বা আজমী হোক যেই এটাকে অস্বীকার করবে সেই জাহান্নামী হবে। যেমন ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করছি এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছবে।” (৬:১৯) সুতরাং এর অনুসরণকারী হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং এর বিরোধিতাকারী পথভ্রষ্ট ও হতভাগ্য। দুনিয়াতেও সে ধ্বংস হলো এবং আখেরাতেও হবে সে জাহান্নামী। ঐ আযাব থেকে সে কখনো মুক্তি ও পরিত্রাণ ও পাবে না এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হবে না। সেই দিন তারা যে বোঝা বহন করবে তা হবে খুবই মন্দ বোঝা।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#915)
[ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡجِبَالِ
And they ask you about the mountains,]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 105-112
www.motaher21.net
20:105

وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡجِبَالِ فَقُلۡ یَنۡسِفُہَا رَبِّیۡ نَسۡفًا ﴿۱۰۵﴾ۙ

And they ask you about the mountains, so say, “My Lord will blow them away with a blast.

 

The destruction of the Mountains, and the Earth becomes a Smooth Plain

Allah says,

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْجِبَالِ

And they ask you concerning the mountains.

This is a question, will they remain on the Day of Resurrection or will they cease to exist

فَقُلْ يَنسِفُهَا رَبِّي نَسْفًا

Say:”My Lord will blast them and scatter them as particles of dust.”

This means that He will take them away from their places, wipe them out and remove them completely

20:106

فَیَذَرُہَا قَاعًا صَفۡصَفًا ﴿۱۰۶﴾ۙ

And He will leave the earth a level plain;

 

فَيَذَرُهَا

Then He shall leave it,

referring to the earth;

قَاعًا صَفْصَفًا

as a level smooth plain.

This means one expanse spread out.

The word Qa` means a piece of land that is level and the word Safsafa is used to place emphasis on this meaning.

It has also been said that Safsafa means that which has no vegetation growing in it.

The first meaning is preferred, even though the second meaning is also included by necessity.

In reference to this, Allah says,

لَاا تَرَى فِيهَا عِوَجًا وَلَاا أَمْتًا
20:107

لَّا تَرٰی فِیۡہَا عِوَجًا وَّ لَاۤ اَمۡتًا ﴿۱۰۷﴾ؕ

You will not see therein a depression or an elevation.”

 

You will see therein no crookedness nor curve.

meaning, `on that Day you will not see in the earth any valley, hill, or any place, whether low or elevated.’

Ibn Abbas, Ikrimah, Mujahid, Al-Hasan Al-Basri, Ad-Dahhak, Qatadah and others of the Salaf all said the same.
The People will rush towards the Voice of the Caller

Allah says

20:108

یَوۡمَئِذٍ یَّتَّبِعُوۡنَ الدَّاعِیَ لَا عِوَجَ لَہٗ ۚ وَ خَشَعَتِ الۡاَصۡوَاتُ لِلرَّحۡمٰنِ فَلَا تَسۡمَعُ اِلَّا ہَمۡسًا ﴿۱۰۸﴾

That Day, everyone will follow [the call of] the Caller [with] no deviation therefrom, and [all] voices will be stilled before the Most Merciful, so you will not hear except a whisper [of footsteps].

 

يَوْمَيِذٍ يَتَّبِعُونَ الدَّاعِيَ لَا عِوَجَ لَهُ

On that Day mankind will follow strictly Allah’s caller, no crookedness will they show him.

On the Day, they see these conditions and these frightening sights, they will hastily respond to the caller. Wherever they are commanded to go, they will rush to it. If they had been like this in the worldly life, it would have been more beneficial for them, but here it does not benefit them.

This is as Allah says,

أَسْمِعْ بِهِمْ وَأَبْصِرْ يَوْمَ يَأْتُونَنَا

How clearly will they see and hear, the Day when they will appear before Us! (19:38)

Allah also says,

مُّهْطِعِينَ إِلَى الدَّاعِ

hastening towards the caller. (54:8)

Concerning Allah’s statement,

وَخَشَعَت الاَْصْوَاتُ لِلرَّحْمَنِ

And all voices will be humbled for the Most Gracious,

Ibn Abbas said,

“This means they will be silent.”

As-Suddi also said the same.

فَلَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا

And nothing shall you hear except Hamsa.

Sa`id bin Jubayr related that Ibn Abbas said,

“This means the steps of feet.”

Ikrimah, Mujahid, Ad-Dahhak, Ar-Rabi` bin Anas, Qatadah, Ibn Zayd and others all said the same.

Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas said,
فَلَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا
(And nothing shall you hear except Hamsa),

“Hamsa means a hidden voice.”

This has also been reported from Ikrimah and Ad-Dahhak. Sa`id bin Jubayr said,
فَلَ تَسْمَعُ إِلاَّ هَمْسًا
(And nothing shall you hear except Hamsa),

“Hamsa means the secret speech and the steps of feet.

20:109

یَوۡمَئِذٍ لَّا تَنۡفَعُ الشَّفَاعَۃُ اِلَّا مَنۡ اَذِنَ لَہُ الرَّحۡمٰنُ وَ رَضِیَ لَہٗ قَوۡلًا ﴿۱۰۹﴾

That Day, no intercession will benefit except [that of] one to whom the Most Merciful has given permission and has accepted his word.

 

The Intercession and the Recompense

Allah, the Exalted, says,

يَوْمَيِذٍ

On that day,

the Day of Resurrection,

لاَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ

no intercession shall avail.

meaning with Him (Allah).

إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلاً

except the one for whom the Most Gracious has given permission and whose word is acceptable to Him.

This is similar to His statement,

مَن ذَا الَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ

Who is he that can intercede with Him except with His permission. (2:255)

It is also similar to His statement,

وَكَمْ مِّن مَّلَكٍ فِى السَّمَـوَتِ لَا تُغْنِى شَفَـعَتُهُمْ شَيْياً إِلاَّ مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَن يَشَأءُ وَيَرْضَى

And there are many angels in the heavens, whose intercession will avail nothing except after Allah has given leave for whom He wills and is pleased with. (53:26)

He also says,

وَلَا يَشْفَعُونَ إِلاَّ لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِّنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ

And they cannot intercede except for him with whom He is pleased. And they stand in awe for fear of Him. (21:28)

He also says,

وَلَا تَنفَعُ الشَّفَـعَةُ عِندَهُ إِلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ

Intercession with Him profits not except for him whom He permits. (34:23)

And He says,

يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلَـيِكَةُ صَفّاً لاَّ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـنُ وَقَالَ صَوَاباً

The Day that Ar-Ruh and the angels will stand forth in rows, they will not speak except him whom the Most Gracious allows, and he will speak what is right. (78:38)

In the Two Sahihs it is reported from the leader of the Children of Adam and the Noblest of all the creatures to Allah, Muhammad:

اتِي تَحْتَ الْعَرْشِ وَأَخِرُّ للهِ سَاجِدًا وَيَفْتَحُ عَلَيَّ بِمَحَامِدَ لَا أُحْصِيهَا الاْنَ فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يَقُولُ يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ وَقُلْ يُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُود

I will come under the Throne and I will fall down into prostration. Then, I will be inspired to make praises (of Allah) that I am not able to recall them now. Allah will leave me in this condition as long as He wishes. Then, He will say, “O Muhammad, raise your head. Speak and you will be heard, intercede and your intercession will be accepted.”

Then, a designated group will be allowed for me (to intercede on their behalf). Allah will then enter them into Paradise and I will return (to repeat the process again).

The Prophet mentioned doing this four times. May Allah’s blessings and peace be upon him and the rest of the Prophets as well.

In another Hadith it also mentions that he said,

يَقُولُ تَعَالَى أَخْرِجُوا مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةٍ مِنْ إِيمَانٍ

فَيُخْرِجُونَ خَلْقًا كَثِيرًا

ثُمَّ يَقُولُ أَخْرِجُوا مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ نِصْفُ مِثْقَالٍ مِنْ إِيمَانٍ

أَخْرِجُوا مِنَ النَّارِ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مَا يَزِنُ ذَرَّةً

مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ أَدْنَى أَدْنَى مِثْقَالِ ذَرَّةٍ مِنْ إِيمَان

Allah, the Exalted, will say, “Bring out of the Fire whoever has a seed’s weight of faith in his heart.”

So a large number of people will be brought out.

Then He will say,

“Bring out of the Fire whoever has a half of a seed’s weight of faith in his heart.

Bring out whoever has the weight of a speck of dust in his heart.

Bring out whoever has the weight of the smallest and tiniest particle of dust of faith in his heart.”

And the Hadith continues.

Concerning Allah’s statement

20:110

یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ مَا خَلۡفَہُمۡ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِہٖ عِلۡمًا ﴿۱۱۰﴾

Allah knows what is [presently] before them and what will be after them, but they do not encompass it in knowledge.

 

يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ

He knows what happens to them and what will happen to them,

He encompasses all creation with His knowledge.

وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا

but they will never encompass anything of His knowledge.

This is like His statement,

وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَأءَ

And they will never encompass anything of His knowledge except that which He wills. (2:255)

Concerning Allah’s statement

20:111

وَ عَنَتِ الۡوُجُوۡہُ لِلۡحَیِّ الۡقَیُّوۡمِ ؕ وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ حَمَلَ ظُلۡمًا ﴿۱۱۱﴾

And [all] faces will be humbled before the Ever-Living, the Sustainer of existence. And he will have failed who carries injustice.

 

وَعَنَتِ الْوُجُوهُ لِلْحَيِّ الْقَيُّومِ

And (all) faces shall be humbled before the Ever Living, the Sustainer.

Ibn Abbas and others said,

“This means that the creatures will be humbled, submissive and compliant to their Compeller, the Ever Living, Who does not die, the Sustainer of all, Who does not sleep.”

He is the maintainer of everything. He determines the affairs of everything and preserves everything. He is perfect in His Self. He is the One Whom everything is in need of and whom nothing could survive without.

Concerning His statement,
.
وَقَدْ خَابَ مَنْ حَمَلَ ظُلْمًا

And he who carried wrongdoing, will be indeed a complete failure.

meaning on the Day of Resurrection. For verily, Allah will give every due right to the one who deserved it. Even the ram who lost its horn will be given revenge against the one who had horns.

In the Sahih, it is recorded that the Prophet said,

إِيَّاكُمْ وَالظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَة

Beware of wrongdoing (or oppression), for verily, wrongdoing will be darknesses on the Day of Resurrection.

And the true failure is for whoever meets Allah while associating partners with Him. Allah the Exalted says,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
(“Verily, associating partners with Me is the great wrongdoing”).

Allah’s statement,

وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ وَهُوَ مُوْمِنٌ فَلَ يَخَافُ ظُلْمًا وَلَا هَضْمًا

20:112

وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِنَ الصّٰلِحٰتِ وَ ہُوَ مُؤۡمِنٌ فَلَا یَخٰفُ ظُلۡمًا وَّ لَا ہَضۡمًا ﴿۱۱۲﴾

But he who does of righteous deeds while he is a believer – he will neither fear injustice nor deprivation.

 

And he who works deeds of righteousness, while he is a believer, then he will have no fear of injustice, nor of any curtailment.

After Allah mentions the wrongdoers and their threat, He then commends the pious people and mentions the judgement they receive. Their judgement is that they will not be wronged nor oppressed.

This means that their evils will not be increased and their good deeds will not be decreased.

This was stated by Ibn Abbas, Mujahid, Ad-Dahhak, Al-Hasan, Qatadah and others.
Zulm means an increase that comes from the sins of others being placed upon the person, and Hadm means a decrease

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply