أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯১৪)
[ نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا یَقُوْلُوْنَ
আমি ভালোভাবেই জানি তারা কিসব কথা বলবে,]
সূরা:- ত্বাহা।
সুরা:২০
৯৯-১০৪ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২০:৯৯
كَذٰلِكَ نَقُصُّ عَلَیْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ مَا قَدْ سَبَقَ١ۚ وَ قَدْ اٰتَیْنٰكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًاۖۚ
এভাবে আমি অতীতে যা ঘটে গেছে তার অবস্থা তোমাকে শুনাই এবং আমি বিশেষ করে নিজের কাছ থেকে তোমাকে একটি ‘যিকির’ দান করেছি।
২০:১০০
مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ یَحْمِلُ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وِزْرًاۙ
যে ব্যক্তি এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে কিয়ামতের দিন কঠিন গোনাহের বোঝা উঠাবে।
২০:১০১
خٰلِدِیْنَ فِیْهِ١ؕ وَ سَآءَ لَهُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ حِمْلًاۙ
আর এ ধরনের লোকেরা চিরকাল এ দুর্ভাগ্য পীড়িত থাকবে এবং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য (এই অপরাধের দায়ভার) বড়ই কষ্টকর বোঝা হবে।
২০:১০২
یَّوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ وَ نَحْشُرُ الْمُجْرِمِیْنَ یَوْمَئِذٍ زُرْقًاۚۖ
সেদিন যখন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং আমি অপরাধীদেরকে এমনভাবে ঘেরাও করে আনবো যে, তাদের চোখ (আতংকে) দৃষ্টিহীন হয়ে যাবে।
২০:১০৩
یَّتَخَافَتُوْنَ بَیْنَهُمْ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا عَشْرًا
তারা পরস্পর চুপিচুপি বলাবলি করবে, দুনিয়ায় বড়জোর তোমরা দশটা দিন অতিবাহিত করেছো”
২০:১০৪
نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا یَقُوْلُوْنَ اِذْ یَقُوْلُ اَمْثَلُهُمْ طَرِیْقَةً اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا یَوْمًا۠
— আমি ভালোভাবেই জানি তারা কিসব কথা বলবে,(আমি এও জানি) সে সময় তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশী সতর্ক অনুমানকারী হবে সে বলবে, না, তোমাদের দুনিয়ার জীবন তো মাত্র একদিনের জীবন ছিল।
৯৯-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সূরাটি শুরু হয়েছিলাে কোরআন সম্পর্কিত বর্ণনা দিয়ে। কোন উদ্দেশ্যে তা নাযিল হয়েছে এবং কি কাজের জন্যে এসেছে সে কথা বলতে গিয়ে বলা হয়েছে, কিছুতেই এ পবিত্র গ্রন্থ রসূল মােহাম্মদ(স.)-কে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে নাযিল হয়নি, অথবা এটাও নয় যে, এ মহাগ্রন্থের কারণে তার ওপর কষ্ট নেমে আসবে। পরবর্তীতে এ সূরার মধ্যে মূসা(আ.)-এর কিসসার বিস্তারিত বিবরণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি এ বর্ণনাধারার মধ্যে মূসা(আ.)-কে আল্লাহর পরিচালনা, তার প্রতি, তার ভাই ও তার জাতির প্রতি আল্লাহর অপরিসীম মেহেরবানীর বর্ণনা। এবারে আমরা দেখতে পাচ্ছি, আবার আলােচ্য প্রসংগের মােড় ঘুরে যাচ্ছে আল কোরআন ও তার মূল কাজের দিকে। তাদের পরিণতি সম্পর্কিত আলােচনার দিকে যারা এ মহান কিতাব থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয় এবং জানানাে হচ্ছে যে, তাদের এ কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে মূলত আখেরাতের জীবনে, আর এজন্যে কেয়ামতের দৃশ্যাবলীর মধ্যে তাদের শাস্তির দৃশ্যটি বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে; নশ্বর এ পৃথিবীর জীবনের তুচ্ছতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সে ভয়ংকর দিনে পাহাড় পর্বতের কোনাে অস্তিত্ব থাকবে না, সব কিছু সমান হয়ে এক বিশাল প্রান্তরে পরিণত হয়ে যাবে, আর তখন (আজকের) বলদর্পী শক্তিমানদের গর্ব খর্ব হয়ে মহা দয়াময় পরওয়ারদিগারের সামনে সবার কন্ঠস্বর এমন ক্ষীণ হয়ে যাবে যে, তাদের কণ্ঠ থেকে কোনাে আওয়াযই বেরােতে চাইবে না, চিরন্তন ও চিরস্থায়ী মালিকের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রান্তি-ক্লান্তির গ্লানিতে সবাই মুহ্যমান হয়ে থাকবে। আল কোরআনের মধ্যে আগত ‘অন্যান্য ধমকের কথার সাথে এ বিবরণী সামনে আসায় আশা করা যায় মানুষের চেতনা প্রভাবিত হবে এবং তারা সত্য সচেতনতার দিকে এগিয়ে আসবে; তাদের মনে আল্লাহর স্মরণ জেগে উঠবে এবং তার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যে তারা উদগ্রীব হয়ে ওঠবে। তারপর এ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটছে, অবতরণকালে তাঁর ওপর যে কষ্ট নেমে আসতো সেই অবস্থার ওপর তাকে সান্ত্বনার বাণী শােনাতে গিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি ভুলে যাবেন মনে করে যেন জলদি না করেন এবং একথা মনে করে যেন কোনাে কষ্ট না নেন। আল্লাহ তায়ালাই তার জন্যে সব কিছু সহজ করে দিবেন এবং তাকে আল কোরআনের হাফেয বানিয়ে দেবেন; তবে অবশ্যই তিনি তার জ্ঞান বৃদ্ধির জন্যে তার রবের কাছে দোয়া করতে থাকবেন। প্ৰসংগক্রমে উল্লেখ করা যায় যে, আদি পিতা আদম আল্লাহর সাথে যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং তার সকল হুকুম মেনে চলবেন বলে তিনি যে ওয়াদা করেছিলেন, সে কথা স্মরণ করে রসূলুল্লাহ(স.)ও পেরেশান হচ্ছিলেন যে, তিনি আবার কোনাে কথা ভুলে যান কি না, বিশেষ করে যখন যালেম ও মরদুদ শয়তান সদা-সর্বদা পেছনে লেগে রয়েছে এবং যখন আদম সন্তানদের বিরুদ্ধে সে দুশমনী করবেই বলে ঘােষণা দিয়ে রেখেছে। নবী মােহাম্মদ(আ.)-এর সামনে সকল সময়ে ভাসতে থাকত আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তির কথা ও বনী আদমের মধ্যে যারা না-ফরমানী করে তাদের করুণ পরিণতির কথা, আর নশ্বর জীবনের সফর শেষে অনাগত কেয়ামতের কঠিন অবস্থার দৃশ্য তাকে নিশিদিন পেরেশান করে রাখতাে। তিনি কখনও ভুলতে পারতেন না যে, এ সফর শুরু হয়েছে সর্বোচ্চ আকাশে অবস্থিত বেহেশতের মনযিল থেকে, তার পরিসমাপ্তি তাে পুনরায় সেখানেই গিয়ে ঘটবে। অতএব এ জীবন তাে মাত্র একটি সরাইখানা। এখানে নিশ্চিন্তভাবে থাকা যায় না। আবারও একবার আলােচ্য অধ্যায়টি এখানে শেষ হচ্ছে বলে জানানাে হলাে। পরিশেষে রসূলুল্লাহ(স.)-কে সাম্তনার বাণী শােনাতে গিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি যেন বিরুদ্ধবাদীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন এবং যারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছে তাদের কথায় কান না দেন- বলুক না তারা যা ইচ্ছা তাই, তাতে কি আসে যায়? স্বয়ং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা যখন তার সহায় রয়েছেন তখন তিনিই তাে সকল দিক সামাল দেবেন; তারা যেভাবে যতাে চেষ্টাই করুক না কেন তাকে কিছুতেই কষ্ট দিতে পারবে না এবং তার ভাগ্যের কোনাে পরিবর্তনই তারা করতে পারবে না; বরং তাদের জন্যে এবং তাদের সব কর্মকান্ডের জন্যে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ব থেকেই ঠিক করা রয়েছে, সে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে অবশ্যই তারা পাকড়াও হয়ে যাবে এবং শেষ হয়ে যাবে তাদের সকল জারিজুরি। তারা যেসব ধন-দৌলতের বদৌলতে এমন বাড়াবাড়ি করে চলেছে, কাল কেয়ামতে সেসব কিছুই হবে তাদের জন্যে কাল । আসলে, প্রাচুর্যের আধিক্যে আজকে তারা এটা কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে, পার্থিব ধন-দৌলত, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্য এসব কিছুই তাদেরকে এক পরীক্ষা স্বরূপ দেয়া হয়েছে। অতএব, তিনি যেন ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর আনুগত্য ও তার স্মরণে আত্মনিয়ােগ করেন, তাহলেই তিনি খুশী হয়ে যেতে পারবেন এবং সকল অবস্থার মধ্যে নিশ্চিন্ততা লাভ করতে পারবেন। অবশ্যই তিনি জেনেছেন, ইতিপূর্বে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা বেঁচে থেকেছে, তাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা চেয়েছেন যে, শেষ রসূলের মাধ্যমে তাদের ক্ষমা করে দেবেন। অতএব, যারা জেনে বুঝে নাফরমানী করেছে তাদের বিষয় থেকে তিনি যেন হাত গুটিয়ে নেন এবং তাদের চূড়ান্ত ও করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে যেন তিনি। তাদের ছেড়ে দেন। দেখুন, এরশাদ হচ্ছে, ‘বলাে, প্রত্যেকেই তাদের অন্তিম অবস্থা লাভের জন্যে এন্তেজার করে চলেছে। অতএব, তােমরাও এন্তেজার করাে, অতপর শীঘ্রই সঠিক পথের অনুসারীদের সম্পর্কে তােমরা জানতে পারবে এবং আরাে জানতে পারবে তাদের সম্পর্কেও, যারা হেদায়াত গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে। এভাবেই আমি তোমাকে জানাচ্ছি, হে আমার নবী, অতীতের ঘটনাবলী… আমি জানি ওরা যা বলছে, ওদের মধ্যে যে একটু ভালো পথের পথিক ছিলো সে অবশ্যই সে কঠিন দুঃসময়ে বলবে, তােমরা তাে দুনিয়ায় মাত্র একটি দিনই অবস্থান করেছিলে…'(আয়াত ৯৯-১০৪) অর্থাৎ, এভাবে, যেমন করে আমি মহান আল্লাহ মূসা(আ.)-এর ঘটনাবলী সম্পর্কে তােমাকে জানাচ্ছি, তেমনি করে আমি অতীতের আরাে বহু ঘটনাবলী তােমাকে জানাব যেগুলাের বর্ণনা তুমি এই কোরআনের মধ্যেই পাবে। এজন্যে আল কোরআনের আর এক নাম দেয়া হয়েছে উপদেশ বা স্মৃতিচারণ। যেহেতু এ গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়েছে আল্লাহর স্মরণের জন্যে এবং আল্লাহর আয়াতসমূহকে জানা ও বুঝার জন্যে, আরো এসেছে এ মহান গ্রন্থ আল্লাহর সে নিদর্শনসমূহ জানাতে যা অতীতে ঘটেছে। দেখুন, কী চমৎকারভাবে অস্বীকারকারীদের সামনে এ মহা উপদেশবাণী ছবির মতাে তুলে ধরা হয়েছে। এতে ওই অস্বীকারকারীদের অপরাধী বলে অভিহিত করা হয়েছে। এখানে কেয়ামতের একটি দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে, ওই অপরাধীরা তেমনি করে তাদের বােঝাগুলাে বহন করছে যেমন করে কোনাে মুসাফির তার বােঝা বহন করে থাকে, আর আজকের মুসাফিররা যেভাবে বােঝা বইতে বইতে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে যায়, তার থেকে অনেক বেশী ওদের ক্লান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। তারপর, প্রকৃতপক্ষে যখন সবাইকে একত্রিত করার জন্যে শিংগায় ফুক দেয়া হবে তখন সেসব অপরাধী ব্যক্তি দুঃসহ দুঃখের জ্বালায় কালিমা লিপ্ত চেহারা নিয়ে হাশরের ময়দানে দলে দলে হাযির হয়ে যাবে, তারা নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে কথা বলতে থাকবে, ভয় ও আতংকে তাদের আওয়ায বসে যাবে আর সে উন্মুক্ত হাশরের ময়দানে আতংক তাদের এমনভাবে ঘিরে ফেলবে যে, তা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনাে উপায় তারা খুঁজে পাবে না। এসময়ে কোন বিষয়ে তারা কানাঘুষা করবে? তখন তারা তাদের পার্থিব জীবনের কার্তিকলাপ স্মরণ করতে থাকবে এবং আন্দায করতে থাকবে যে, সেই শাস্তি বােধ হয় তাদের জন্যে এগিয়ে আসছে যার কথা তাদের পূর্ব জীবনে বলা হতাে। তখন ফেলে আসা যিন্দেগী তাদের কাছে বড়ােই তুচ্ছ মনে হতে থাকবে এবং অতীতের সে জীবনে তারা সামান্য কটি দিন মাত্র কাটিয়েছে বলে মনে হবে। তাদের সেই পারস্পরিক কথার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে বলা হচ্ছে, ‘তােমরা বড়াে জোর দিন দশেক দুনিয়ায় ছিলে। কিন্তু ওদের মধ্যে যার কথা বেশী গ্রহণ করার যােগ্য হবে, সে পার্থিব জীবনের স্থায়িত্ব আরাে কম করে দেখবে, বলবে, না না, একদিনের বেশী দুনিয়ায় কেউ তোমরা থাকোনি।’ এভাবে ফেলে আসা জীবন সম্পর্কে তাদের ধারণা বিভিন্ন প্রকার হবে এবং মনে হবে গােটা জীবন যেন তাদের হাতের মুঠোর মধ্যে রয়েছে। সে দিন সারা জীবনের সঞ্চয় ও আশা-আকাংখা এবং দুঃখ-বেদনা বড়ােই তুচ্ছ মনে হবে। এখন চিন্তা করে দেখুন, দুনিয়ার জীবনের দশটি দিন, তা যতােই সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ থাকুক না কেন অনন্ত অসীম জীবনের তুলনায় তার কি মূল্য আছে!- একথা তাদের তখনই মনে হতে থাকবে যখন প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হবে, হায় হায়, অতীতের এই তুচ্ছ জীবনের জন্যে আমরা এতো অন্যায় কাজ ও মন্দ আচরণে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিলাম, আর ভুলে গিয়েছিলাম এই অফুরন্ত যিন্দেগীর কথা ভুলে গিয়েছিলাম সেই কঠিন পরিণতির কথা যার নেই কোনাে অন্ত, নেই কোনাে শেষ! তখনই তারা সঠিকভাবে বুঝবে যে, আসল ও অনন্ত জীবন তাে তাই যা এই হাশরের দিন থেকে শুরু হয়ে গেলাে। এজন্যে তখন ওদের বার বার মনে হতে থাকবে, যতো সৌভাগ্য ও সুন্দর সচ্ছল জীবন তারা পৃথিবীর জীবনে অতিবাহিত করে থাকুক না কেন, তা তাে ছিলো মাত্র একটি দিন বা একটি রজনীর শামিল। তার জন্যেই তারা কি দুঃসহ জ্বালা খরীদ করে নিয়েছে! হায়, তাদের আজ কি হবে? এসব কথা মনে হতে থাকবে এবং বাড়তে থাকবে তাদের ভীতি ও আতংক, যার কারণে তাদের সামনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন বাড়তেই থাকবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# মূসা আলাইহিস সালামের কাহিনী খতম করে আবার ভাষণের মোড় সেদিকে ফিরে যাচ্ছে যা দিয়ে সূরার সূচনা হয়েছিল। সামনে এগিয়ে যাবার আগে আর একবার সূরার সেই প্রারম্ভিক আয়াতগুলো পড়ে নিন—-যেগুলোর পর হঠাৎ হযরত মূসার কাহিনী শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ থেকে ভালোভাবে বুঝা যাবে, সূরার আসল আলোচ্য বিষয় কি, মাঝখানে মূসার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে কেন এবং কাহিনী খতম করে কিভাবে ভাষণটি তার মূল বিষয়বস্তুর দিকে ফিরে আসছে।
# এ সূরার প্রথমে যে কুরআনের কথা বলা হয়েছিল সেটা এমন কোন বিষয় ছিল না যার মাধ্যমে তোমাদের কোন অসম্ভব কাজে লিপ্ত করা বা তোমাদের ওপর অনর্থক একটা কষ্টকর কাজ চাপিয়ে দেবার জন্য তা নাযিল করা হয়েছিল। সেটা তো ছিল একটা স্মারক ও উপদেশ (তাযকিরাহ), এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য যে অন্তরে আল্লাহকে ভয় করে।
# এখানে প্রথমত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি এ উপদেশ বাণী অর্থাৎ কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তার বিধান ও পথ নির্দেশনা গ্রহণে অস্বীকার করবে সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এবং তাঁকে প্রেরণকারী আল্লাহর কোন ক্ষতি হবে না। তার এ নির্বুদ্ধিতা হবে তার নিজেরই সাথে শত্রুতারই নামান্তর। দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে, যে ব্যক্তির কাছে কুরআনের এ নসীহত পৌঁছে গেছে এবং সে এটা গ্রহণ করতে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে ও ইতস্তত করছে সে আখেরাতে শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। আয়াতের শব্দাবলী ব্যাপক অর্থ প্রকাশক। কোন দেশ, জাতিও সময়ের সাথে সেগুলো বিশেষভাবে সম্পর্কিত নয়। যতদিন এ কুরআন দুনিয়ায় থাকবে, যেখানে, যে দেশে এবং জাতি ও ব্যক্তির কাছে এটা পৌঁছে যাবে সেখানে তার জন্য দুটোই পথ খোলা থাকবে। তৃতীয় কোন পথ সেখানে থাকবে না। হয় একে মেনে নিয়ে এর আনুগত্য করতে হবে আর নয়তো একে অস্বীকার করে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে। প্রথম পথ অবলম্বনকারী পরিণতি সামনের দিকে বর্ণনা করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় পথ অবলম্বকারীদের পরিণতি এ আয়াতে বাতলে দেয়া হয়েছে।
# শিঙ্গা মানে রণভেরী, রণতুর্য। আজকাল এর বিকল্প হিসেবে বিউগল বলা যেতে পারে। সেনাদলকে একত্র ও বিক্ষিপ্ত করার এবং নির্দেশ দেবার জন্য বিউগল বাজানো হয়। আল্লাহ তাঁর বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনা বুঝাবার জন্য এমন সব শব্দ ও পরিভাষা ব্যবহার করে থাকেন যা মানুষের জীবন ব্যবস্থা পরিচালনায় ব্যবহৃত শব্দের সাথে সাদৃশ্য রাখে। এ শব্দ ও পরিভাষাগুলো ব্যবহার করার মূল লক্ষ হচ্ছে আমাদের ধারণা, কল্পনা ও চিন্তাশক্তিকে আসল জিনিসের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া। আমরা সত্যিই আল্লাহর রাজ্যের বিভিন্ন জিনিসকে হুবহু এ সীমিত অর্থে গ্রহণ করবো এবং সেগুলোকে এসব সীমিত আকারের জিনিস মনে করে নেবো যেমন আমাদের জীবনে পাওয়া যায়, এটা কখনোই এর উদ্দেশ্য নয়। প্রাচীন যুগ থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত লোকদের জমা করার এবং কোন গুরুত্বপূর্ণ কথা ঘোষণা করার জন্য এমন কোন না কোন জিনিস বাজানো বা কোন কিছুতে ফুঁক দিয়ে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি করা হয় যা রনভেরী, রনতুর্য বা বিউগলের সাথে সাদৃশ্য রাখে। আল্লাহ বলেন, কিয়ামতের দিন এমনি একটি জিনিস ফুঁক দেয়া হবে (যা আমাদের বিউগলের মতো। একবার তাতে ফুঁক দেয়া হবে) তখন সবাই মারা পড়বে। দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়া হবে, তখন সবাই জেগে উঠবে এবং পৃথিবীর সব দিক থেকে বের হয়ে হাশরের ময়দানের দিকে ছুটে আসতে থাকবে। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন নামল ১০৬ টীকা)।
#.মুল শব্দ “যুরকান।” এটা হচ্ছে “আযরাক”-এর বহুবচন। কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন যারা ‘আযরাক’বা সাদাটে নীলচে ভাব ধারণ করবে। কারণ ভয়ে ও আতংকে তাদের রক্ত শুকিয়ে যাবে এবং তাদের অবস্থা এমন হয়ে যাবে যেন তাদের শরীরে এক বিন্দুও রক্ত নেই। আবার অন্য কিছু লোক এ শব্দকে “আযরাকুল আয়েন” বা নীল চক্ষুওয়ালার অর্থে গ্রহণ করেছেন। তারা এর অর্থ করেন অত্যাধিক ভয়ে তাদের চোখের মনি থির হয়ে যাবে। যখন কারোর চোখ আলোহীন হয়ে পড়ে তখন তার চোখের মনি সাদা হয়ে যায়।
# এর আরেকটি মানে এ হতে পারে মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত তোমাদের বড় জোর দশ দিন অতিবাহিত হয়ে থাকবে।” কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থান থেকে জানা যায়, কিয়ামতের দিন লোকেরা নিজেদের দুনিয়াবী জীবন সম্পর্কেও আন্দাজ করে নেবে যে, তা ছিল অতি সামান্য দিনের এবং মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে সময়কাল অতিবাহিত হয়ে থাকবে সে সম্পর্কেও তাদের এ প্রায় একই ধরনের অনুমান হবে। কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ
قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِينَ – قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَادِّينَ
“আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা পৃথিবীতে কত বছর ছিলে? জবাব দেবে, একদিন বা দিনের এক অংশ থেকেছি, গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে নিন।” ( আল মু’মিনূনঃ ১১২-১১৩ ) অন্য জায়গায় বলা হচ্ছেঃ
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُوا غَيْرَ سَاعَةٍ كَذَلِكَ كَانُوا يُؤْفَكُونَ – وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَالْإِيمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْبَعْثِ فَهَذَا يَوْمُ الْبَعْثِ وَلَكِنَّكُمْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
“আর যেদিন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে তখন অপরাধীরা কসম খেয়ে খেয়ে বলবে, আমরা (মৃত অবস্থায়) এক ঘণ্টার বেশী সময় পড়ে থাকিনি। এভাবে তারা দুনিয়ায়ও ধোকা খেতে থেকেছে। আর যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছিল তারা বলবে, আল্লাহর কিতাবের বক্তব্য অনুযায়ী তোমরা তো পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত পড়ে থেকেছো এবং আজ সে পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না।” ( আর-রূমঃ ৫৫-৫৬ )
এসব সুস্পষ্ট বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয় দুনিয়ার জীবন ও আলমে বরযখের (মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত) জীবন উভয়কে তারা সামান্য মনে করবে। দুনিয়ার জীবন সম্বন্ধে তারা এ কথা এজন্য বলবে যে, নিজেদের আশা-আকাংখার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থায় একটি চিরন্তন জীবনে যখন তাদের চোখ মেলতে হবে এবং যখন তারা দেখবে এখানকার জন্য তারা কিছুই তৈরী করে আনেনি, তখন চরম আক্ষেপ ও হতাশার সাথে তারা নিজেদের পৃথিবীর জীবনের দিকে ফিরে দেখবে এবং দুঃখ করে বলতে থাকবে, হায়! মাত্র দু’দিনের আনন্দ ও ভোগ বিলাসের লোভে আমরা চিরকালের জন্য নিজেদের পায়ে কুড়াল মারলাম। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জীবনকাল তাদের কাছে সামান্য মনে হবে, কারণ মৃত্যুপরের জীবনকে তারা দুনিয়ায় অসম্ভব মনে করতো এবং কুরআন বর্ণিত পরকালীন জগতের ভূগোল কখনোই গুরুত্ব সহকারে তাদের কাছে গৃহীত হয়নি। এ ধারণা-কল্পনা নিয়েই তারা দুনিয়ার জীবনের সচেতন মুহূর্তগুলো নিঃশেষ করেছিল। আর এখন হঠাৎ চোখ মেলতেই সামনে দেখবে দ্বিতীয় জীবনের সূচনা। এ জীবনের শুরুতেই বিউগলের বিকট আওয়াজে নিজেদের দেখবে মার্চ করতে করতে এগিয়ে যেতে। ভীষণ আতংকের মধ্যে এখন তারা মনে করতে থাকবে অমুক হাসপাতালে বেহুশ হবার পর থেকে এ পর্যন্ত কতটুকু সময়ই বা কেটে গেছে। তাদের মগজে একথা আসবেই না যে, দুনিয়ায় তারা মারা পড়েছিল এবং এখন সে দ্বিতীয় জীবনটিই শুরু হয়েছে, যাকে তারা একেবারে অর্থহীন ও অযৌক্তিক বলে ঠাট্টা করে হেসে উড়িয়ে দিতো। তাই তাদের প্রত্যেকেই একথা মনে করতে থাকবে, সম্ভবত আমি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন বেহুশ হয়ে পড়েছিলাম এবং এখন এমন এক সময় আমার চেতনা ফিরে এসেছে অথবা ঘটনাক্রমে এমন এক জায়গায় আমি পৌঁছে গেছি যেখানে কোন রকমের দুর্ঘটনার কারণে লোকেরা একদিকে দৌড়ে চলছে। এটাও অসম্ভব মনে হয় না যে, আজকাল যারা মরছে তারা কিয়ামতের শিংগার আওয়াজকে কিছুক্ষণ পর্যন্ত বিমান আক্রমণের পূর্বের সতর্কতামূলক সাইরেন ধ্বনি বলে মনে করতে থাকবে।
# এটি একটি প্রাসঙ্গিক বাক্য। ভাষণের মাঝখানে এর সাহায্যে শ্রোতাদের সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে। শ্রোতাদের মনে এ সন্দেহ জাগার সম্ভাবনা রয়েছে যে, সে সময় হাশরের ময়দানে ছুটে চলা লোকেরা চুপিসারে যে আলাপ করবে তা আজ এখানে কেমন করে বর্ণনা করা হচ্ছে?
তাফসীরে হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৯-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের বর্ণনা দিয়ে বলছেন; আমি তোমার কাছে পূর্ববর্তীদের ঘটনা ও সংবাদ সেভাবে বর্ণনা করি যেভাবে মূসা, হারূন, ফির‘আউন ও সামিরীর ঘটনা সত্যসহ বর্ণনা করেছি। তুমি এসকল ঘটনা জানতে না, পড়নি এবং যারা পড়েছে তাদের কাছ থেকে শিক্ষাও নাওনি। আর আহলে কিতাবরা এ সব ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং তুমি তাদের কাছে এসব ঘটনা সঠিকভাবে বর্ণনা করে দিচ্ছো। এতেই প্রমাণিত হয়, তুমি একজন আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত রাসূল, তুমি যা নিয়ে এসেছ তা সত্য। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: ‘আমি আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দান করেছি উপদেশ’ তা হল কুরআন।
সুতরাং মানুষ এ কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ করে সতর্ক হবে, পূর্ববর্তীদের ন্যায় অবাধ্য হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে না।
وِزْرًا অর্থ বোঝা, অর্থাৎ যারা এসকল পূর্ববর্তী অবাধ্য লোকদের পরিণতি জানার পরও ঈমান আনবে না বরং মুখ ফিরিয়ে নেবে তারা কিয়ামতের দিন তাদের পাপের বোঝা বহন করবে। আর তা তাদের জন্য কতই না মন্দ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَدْ خَسِرَ الَّذِیْنَ کَذَّبُوْا بِلِقَا۬ئِ اللہِﺚ حثج اِذَا جَا۬ءَتْھُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوْا یٰحَسْرَتَنَا عَلٰی مَا فَرَّطْنَا فِیْھَاﺫ وَھُمْ یَحْمِلُوْنَ اَوْزَارَھُمْ عَلٰی ظُھُوْرِھِمْﺚ اَلَا سَا۬ئَ مَا یَزِرُوْنَ)
“যারা আল্লাহর সম্মুখীন হওয়াকে (পুনরুত্থান) মিথ্যা বলেছে তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এমনকি অকস্মাৎ তাদের নিকট যখন কিয়ামত উপস্থিত হবে তখন তারা বলবে, ‘হায় আফসোস! একে যে আমরা অবহেলা করেছি।” তারা তাদের পিঠে নিজেদের পাপ বহন করবে; দেখ, তারা যা বহন করবে তা অতি নিকৃষ্ট!” (সূরা আন‘আম ৬:৩১)
১০২-১০৪ নং আয়াতে তাফসীর:
الصُّوْرِ অর্থ শিংগা, অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার আদেশে যে শিংগায় ফুৎকার দেয়ার জন্য ইসরাফিল (عليه السلام) অপেক্ষমান রয়েছে সেই শিংগা। যখন আদেশ দেয়া হবে তখনই শিংগায় ফুঁ দেবেন। প্রথম ফুঁৎকারে জীবিত সবাই মারা যাবে, দ্বিতীয় ফুঁৎকারে কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর তৃতীয় ফুৎকারে সবাই জীবিত হয়ে হাশরের ময়দানে সমবেত হবে। এখানে তৃতীয় ফুঁৎকার উদ্দেশ্য। কেউ কেউ বলেছেন, ফুঁৎকার মাত্র দুটি হবে। এ সম্পর্কে সূরা আন‘আমের ৭৩ নং আয়াতসহ বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
زُرْقًا অর্থাৎ কাফিরদের চক্ষু ও রঙ বিবর্ণ অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। আর তারা ভীষণভাবে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার কারণে একজন অপর জনের সাথে চুপি চুপি বলবে, তোমরা দুনিয়াতে মাত্র দশ দিন অবস্থান করেছো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيَوْمَ تَقُوْمُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُوْنَ ৫ لا مَا لَبِثُوْا غَيْرَ سَاعَةٍ ط كَذٰلِكَ كَانُوْا يُؤْفَكُوْنَ)
“যেদিন কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন পাপীরা শপথ করে বলবে যে, তারা মুহূর্তকালের বেশি অবস্থান করেনি। এভাবেই তাদেরকে উল্টা দিকে পরিচালিত করা হত। ” (সূরা রূম ৩০:৫৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(قَالَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِي الْأَرْضِ عَدَدَ سِنِيْنَ قَالُوْا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَسْئَلِ الْعَادِّيْنَ قَالَ إِنْ لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيْلًا لَّوْ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ )
“আল্লাহ বলবেন: ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বৎসর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ; তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস কর।’ তিনি বলবেন: ‘তোমরা অল্প কালই অবস্থান করেছিলে, যদি তোমরা জানতে!” (সূরা মু’মিনূন ২৩:১১২-১১৪)
আর প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় এরূপই অর্থাৎ অতি অল্পকালের কিন্তু মানুষ দুনিয়াতে তা মনে রাখে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার জন্য ইসরাফিল (عليه السلام) প্রস্তুত, আল্লাহ নির্দেশ দিলেই ফুঁ দেবেন।
২. কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে অপরাধীদের চোখ ও রঙ পরিবর্তন হয়ে যাবে।
৩. দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় অতি অল্প সময়ের এবং খুবই নগণ্য।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৯৯-১০১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) বলছেনঃ যেমন আমি মূসার (আঃ) ঘটনাকে প্রকৃতরূপে তোমার সামনে বর্ণনা করে দিয়েছি, তেমনিভাবে আরো অনেক অতীতের ঘটনা তোমার সামনে আমি হুবহু বর্ণনা করেছি। আমি তোমাকে মহান কুরআন দান করেছি। ইতিপূর্বে কোন বীকে এর চেয়ে বেশী পূর্ণতা প্রাপ্ত, বেশী অর্থবহ এবং বেশী বরকতময় কিতাব প্রদান করা হয় নাই। এই কুরআন কারীমই হচ্ছে সবচেয়ে বেশী উন্নতমানের কিতাব। এর মধ্যে অতীতের ঘটনাবলী, ভবিষ্যতের কার্যাবলী এবং প্রতিটি কাজের পন্থা বর্ণিত হয়েছে। যারা এটাকে মানে না, এর থেকে বিমুখ হয়, এর আহকাম হতে পালিয়ে যায় এবং এটাকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুতেই হিদায়াত অনুসন্ধান করে সে পথভ্রষ্ট এবং জাহান্নামী। কিয়ামতের দিন সে নিজের বোঝা নিজেই বহন করবে এবং ওটা হবে খুবই মন্দ বোঝা। যে এর সাথে কুফরী করবে সে জাহান্নামে যাবে। কিতাবী হোক বা গায়ের কিতাবী হোক, আরবী হোক বা আজমী হোক যেই এটাকে অস্বীকার করবে সেই জাহান্নামী হবে। যেমন ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এর দ্বারা তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করছি এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছবে।” (৬:১৯) সুতরাং এর অনুসরণকারী হিদায়াতপ্রাপ্ত এবং এর বিরোধিতাকারী পথভ্রষ্ট ও হতভাগ্য। দুনিয়াতেও সে ধ্বংস হলো এবং আখেরাতেও হবে সে জাহান্নামী। ঐ আযাব থেকে সে কখনো মুক্তি ও পরিত্রাণ ও পাবে না এবং সেখান থেকে পালিয়ে যেতেও সক্ষম হবে না। সেই দিন তারা যে বোঝা বহন করবে তা হবে খুবই মন্দ বোঝা।
১০২-১০৪ নং আয়াতের তাফসীর:
হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করা হয় সূর’ বা শিংগা কি জিনিস?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “ওটা এমন একটা শিংগা যাতে ফুৎকার দেয়া হবে। ওর বেড় হবে আসমান ও যমীনের সমান। হযরত ইসরাফীল (আঃ) তাতে ফু দিবেন।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে অেিছ যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কিরূপে শান্তি লাভ করবো? অথচ শিংগায় ফুৎকারদানকারী শিংগায় মুখ লাগিয়ে কপাল ঝুঁকিয়ে রয়েছেন এবং আল্লাহর হুকুমের শুধু অপেক্ষায় রয়েছেন। জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! তাহলে আমরা পাঠ করবো কি?” জবাবে তিনি বললেনঃ “তোমরা পড়তে থাকোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মকর্তা, আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করেছি।”
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেই দিন আমি অপরাধীদের দৃষ্টিহীন অব স্থায় সমবেত করবো। তারা তাদের পরস্পরের মধ্যে চুপি চুপি বলাবলি করবেঃ আমরা দুনিয়ায় মাত্র দশ দিন অর্থাৎ অতি অল্প সময় অবস্থান করেছি। আমি তাদের ঐ গোপন কথাবার্তাও সম্যক অবগত আছি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎপথে ছিল সে বলবেঃ আমরা মাত্র একদিন অবস্থান করেছিলাম। মোট কথা, কাফিরদের কাছে দুনিয়ার জীবন অতি অল্প সময় বলে মনে হবে। ঐ সময় তারা শপথ করে করে বলবেঃ “আমরা তো দুনিয়ায় শুধু এক ঘন্টাকাল কাটিয়েছি। অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার মত বয়স প্রদান করেছিলাম না? তোমাদের কাছে তো ভয় প্রদর্শকও এসেছিল?” (৩৫:৩৭)
আর এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “তোমরা যমীনে কতকাল অব স্থান করেছিলে? (উত্তরে) তারা বলবেঃ “একদিন বা একদিনের কিছু অংশ (আমরা অবস্থান করেছিলাম। আসলে আখেরাতের তুলনায় দুনিয়া এরূপই বটে। কিন্তু তোমরা যদি এটা জানতে বা বুঝতে তবে এই অস্থায়ী জগতকে ঐ স্থায়ী জগতের উপর কখনো প্রাধান্য দিতে না, বরং এই দুনিয়াতেই তোমরা আখেরাতের পূজি সংগ্রহ করে নিতে।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#914)
[ نَحْنُ اَعْلَمُ بِمَا یَقُوْلُوْنَ
We are most knowing of what they say,]
Sura:20
Sura: Taa-Haa
Ayat: 99-104
www.motaher21.net
20:99
کَذٰلِکَ نَقُصُّ عَلَیۡکَ مِنۡ اَنۡۢبَآءِ مَا قَدۡ سَبَقَ ۚ وَ قَدۡ اٰتَیۡنٰکَ مِنۡ لَّدُنَّا ذِکۡرًا ﴿ۖۚ۹۹﴾
Thus, [O Muhammad], We relate to you from the news of what has preceded. And We have certainly given you from Us the Qur’an.
The Entire Qur’an is the Remembrance of Allah and mentioning the Punishment of Those Who turn away from It
Allah the Exalted says,
كَذَلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاء مَا قَدْ سَبَقَ وَقَدْ اتَيْنَاكَ مِن لَّدُنَّا ذِكْرًا
Thus We relate to you some information of what happened before. And indeed We have given you from Us a Reminder.
Allah, the Exalted, is saying to Prophet Muhammad, `We have told you (O Muhammad) the story of Musa and what happened with him, Fir`awn and his armies, just as it actually happened.
Likewise, We relate to you the information of the past just as it happened, without any increase or decrease.
We also gave you a remembrance from Us, the Mighty Qur’an, no falsehood comes to it from before it or behind it.’ It is a revelation from One Most Wise, Most Praiseworthy.
No Prophet was given any Book like it or more complete than it, since the time of the previous Prophets who were sent, until their being sealed off with the coming of Muhammad.
No Prophet was given any Book containing as much information than the Qur’an about what has past and what would be. The judgement concerning the distinction between mankind is taken from it. Therefore, Allah says about it
20:100
مَنۡ اَعۡرَضَ عَنۡہُ فَاِنَّہٗ یَحۡمِلُ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وِزۡرًا ﴿۱۰۰﴾ۙ
Whoever turns away from it – then indeed, he will bear on the Day of Resurrection a burden,
مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ
Whoever turns away from it,
This means whoever denies it and turns away from following its commands and instructions, while seeking guidance from other than it, then Allah will mislead him and send him on the path to Hell.
This is why Allah says,
مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
Whoever turns away from it, verily, they will bear a heavy burden on the Day of Resurrection.
Burden here means sin.
This is as Allah says,
وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الاٌّحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ
But those of the sects that reject it, the Fire will be their promised meeting place. (11:17)
This applies generally to whoever the Qur’an reaches of the Arabs, the non-Arabs, the People of the Book and others.
This is as Allah says,
لااٌّنذِرَكُمْ بِهِ وَمَن بَلَغ
That I may therewith warn you and whomsoever it may reach. (6:19)
The Qur’an is a final warning for everyone it reaches. Whoever follows it, then he is rightly guided and whoever opposes it and turns away from it, then he is misguided. He will be wretched in this life, and he is promised that on the Day of Resurrection his abode will be the Hellfire. For this reason Allah says,
مَنْ أَعْرَضَ عَنْهُ فَإِنَّهُ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا
20:101
خٰلِدِیۡنَ فِیۡہِ ؕ وَ سَآءَ لَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ حِمۡلًا ﴿۱۰۱﴾ۙ
[Abiding] eternally therein, and evil it is for them on the Day of Resurrection as a load –
خَالِدِينَ فِيهِ
Whoever turns away from it, verily, they will bear a heavy burden on the Day of Resurrection. They will abide in that.
They will not be able to avoid this or escape it.
وَسَاء لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلً
And evil indeed will it be that load for them on the Day of Resurrection
20:102
یَّوۡمَ یُنۡفَخُ فِی الصُّوۡرِ وَ نَحۡشُرُ الۡمُجۡرِمِیۡنَ یَوۡمَئِذٍ زُرۡقًا ﴿۱۰۲﴾ۚۖ
The Day the Horn will be blown. And We will gather the criminals, that Day, blue-eyed.
The Blowing of the Sur and the Day of Resurrection
Allah the Exalted says,
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَيِذٍ زُرْقًا
The Day when the Sur will be blown:that Day, We shall gather the criminals blue-eyed.
It has been confirmed in a Hadith that the Messenger of Allah was asked about the Sur and he replied,
قَرْنٌ يُنْفَخُ فِيه
It is a horn that will be blown into.
It has been related in a Hadith about the Sur, on the authority of Abu Hurayrah that;
it is a huge horn that has a circumference as large as the heavens and the earth. The angel Israfil will blow into it.
Another Hadith has been related which states that the Prophet said,
كَيْفَ أَنْعَمُ وَصَاحِبُ الْقَرْنِ قَدِ الْتقَمَ الْقَرْنَ وَحَنَى جَبْهَتَهُ وَانْتَظَرَ أَنْ يُوْذَنَ لَه
How can I be comfortable when the one with the horn is holding it in his lips and his forehead is leaning forward, waiting to be given permission (to blow it).
The people said, “O Messenger of Allah, what should we say!”
He said,
قُولُوا
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَا
Say:
Allah is sufficient for us and what a good protector He is. Upon Allah we place our trust.
Concerning His statement,
..
وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِينَ يَوْمَيِذٍ زُرْقًا
And We shall gather the criminals blue-eyed.
It has been said that this means having blue eyes due to the severity of their horrifying situation
20:103
یَّتَخَافَتُوۡنَ بَیۡنَہُمۡ اِنۡ لَّبِثۡتُمۡ اِلَّا عَشۡرًا ﴿۱۰۳﴾
They will murmur among themselves, “You remained not but ten [days in the world].”
يَتَخَافَتُونَ بَيْنَهُمْ
They will speak in a very low voice to each other.
Ibn Abbas said,
“This means whispering among themselves.”
This means that some of them will be saying to others,
إِن لَّبِثْتُمْ إِلاَّ عَشْرًا
You stayed not longer than ten.
meaning in the abode of the worldly life, you only tarried there for a little while. The time was equivalent to ten days or so.
Allah, the Exalted, then says
20:104
نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَقُوۡلُوۡنَ اِذۡ یَقُوۡلُ اَمۡثَلُہُمۡ طَرِیۡقَۃً اِنۡ لَّبِثۡتُمۡ اِلَّا یَوۡمًا ﴿۱۰۴﴾٪
We are most knowing of what they say when the best of them in manner will say, “You remained not but one day.”
نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَقُولُونَ
We know very well what they will say,
This means in their condition of conversing amongst themselves.
إِذْ يَقُولُ أَمْثَلُهُمْ طَرِيقَةً
when the best among them in knowledge and wisdom will say;
the one with perfect intelligence amongst them,
إِن لَّبِثْتُمْ إِلاَّ يَوْمًا
You stayed no longer than a day!
This is because on the Day of Judgement they will sense the shortness of the worldly life within themselves. For the worldly life, with its repetitious time periods and successive nights, days and hours, is as if it is just one day. For this reason, on the Day of Resurrection the disbelievers will think the worldly life was very short. By this they mean to prevent the establishment of the evidence against them due to the shortness of time that they had.
Allah says about this,
وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُواْ غَيْرَ سَاعَةٍ
And on the Day that the Hour will be established, the criminals will swear that they stayed not but an hour, until His statement,
وَلَكِنَّكُمْ كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
(but you knew not”). (30:55-56)
Allah also says,
أَوَلَمْ نُعَمِّرْكُمْ مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَأءَكُمُ النَّذِيرُ
Did We not give you lives long enough, so that whosoever would receive admonition could receive it! And the warner came to you. (35:37)
Allah, the Exalted, also says,
قَـلَ كَمْ لَبِثْتُمْ فِى الاٌّرْضِ عَدَدَ سِنِينَ
قَالُواْ لَبِثْنَا يَوْماً أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ فَاسْأَلِ الْعَأدِّينَ
قَالَ إِن لَّبِثْتُمْ إِلاَّ قَلِيلً لَّوْ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
(Allah will say):What number of years did you stay on earth!
They will say:”We stayed a day or part of a day. Ask of those who keep account.”
He (Allah) will say:”You stayed not but a little, if you had only known!” (23:112-114)
This means that you only remained in it (the earth) a little while. If you only knew, you would have preferred the eternal life over the temporal life. Yet, you conducted yourselves in an evil manner. You gave the present, temporary life precedence over the eternal and everlasting life
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran