(বই#৯০৩) সূরা:- মরিয়ম। সুরা:১৯ ৬৬-৭২ নং আয়াত:- ১৯:৬৬ [ وَ یَقُوْلُ الْاِنْسَانُ ءَاِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ اُخْرَجُ حَیًّا মানুষ বলে, সত্যিই কি যখন আমি মরে যবো তখন আবার আমাকে জীবিত করে বের করে আনা হবে?] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯০৩)
সূরা:- মরিয়ম।
সুরা:১৯
৬৬-৭২ নং আয়াত:-
১৯:৬৬
[ وَ یَقُوْلُ الْاِنْسَانُ ءَاِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ اُخْرَجُ حَیًّا

মানুষ বলে, সত্যিই কি যখন আমি মরে যবো তখন আবার আমাকে জীবিত করে বের করে আনা হবে?]
www.motaher21.net
১৯:৬৭
اَوَ لَا یَذْكُرُ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنٰهُ مِنْ قَبْلُ وَ لَمْ یَكُ شَیْئًا

মানুষের কি স্মরণ হয় না, আমি আগেই তাকে সৃষ্টি করেছি যখন সে কিছুই ছিল না?
১৯:৬৮
فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَ الشَّیٰطِیْنَ ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِیًّاۚ

তোমার রবের কসম, আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে এবং তাদের সাথে শয়তানদেরকেও ঘেরাও করে আনবো, তারপর তাদেরকে এনে জাহান্নামের চারদিকে নতজানু করে ফেলে দেবো।
১৯:৬৯
ثُمَّ لَنَنْزِعَنَّ مِنْ كُلِّ شِیْعَةٍ اَیُّهُمْ اَشَدُّ عَلَى الرَّحْمٰنِ عِتِیًّاۚ

তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে ব্যক্তি করুণাময়ের বেশী অবাধ্য ও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল তাকে ছেঁটে বের করে আনবো।
১৯:৭০
ثُمَّ لَنَحْنُ اَعْلَمُ بِالَّذِیْنَ هُمْ اَوْلٰى بِهَا صِلِیًّا

তারপর আমি জানি তাদের মধ্য থেকে কারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবার বেশী হকদার।
১৯:৭১
وَ اِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَا١ۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِیًّاۚ

তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে জাহান্নাম অতিক্রম করবে না। এতো একটা স্থিরীকৃত ব্যাপার, যা সম্পন্ন করা তোমার রবের দায়িত্ব।
১৯:৭২
ثُمَّ نُنَجِّی الَّذِیْنَ اتَّقَوْا وَّ نَذَرُ الظّٰلِمِیْنَ فِیْهَا جِثِیًّا

তারপর যারা (দুনিয়ায়) মুত্তাকী ছিল তাদেরকে আমি বাঁচিয়ে নেবো এবং জালেমদেরকে তার মধ্যে নিক্ষিপ্ত অবস্থায় রেখে দেবো।

৬৬-৭২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৬৬-৭২ নং আয়াতের তাফসীর:

কিছু কিছু লোক কিয়ামত সংঘটিত হওয়া ও পুনরুত্থান দিবসকে অসম্ভব মনে করে। তাদের বিশ্বাস এটা হতে পারে না, আমরা মরে পচে গলে যাব, অতঃপর কিভাবে আমাদেরকে জীবিত করা হবে? তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদের এরূপ বিশ্বাস ও চিন্তার জবাব দিয়ে বলেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিক সহজ। কারণ তিনি প্রথমবার নমুনা ছাড়াই অস্তিত্বহীন থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। প্রথমবার সৃষ্টি করা কঠিন, নাকি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা কঠিন? অবশ্যই প্রথমবার সৃষ্টি করা কঠিন। তাহলে যে আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করতে পারলেন তিনি কি দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারবেন না!

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

كَانَ رَجُلٌ يُسْرِفُ عَلَي نَفْسِهِ فَلَمَّا حَضَرَهُ المَوْتُ قَالَ لِبَنِيهِ: إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَحْرِقُونِي، ثُمَّ اطْحَنُونِي، ثُمَّ ذَرُّونِي فِي الرِّيحِ، فَوَاللّٰهِ لَئِنْ قَدَرَ عَلَيَّ رَبِّي لَيُعَذِّبَنِّي عَذَابًا مَا عَذَّبَهُ أَحَدًا، فَلَمَّا مَاتَ فُعِلَ بِهِ ذَلِكَ، فَأَمَرَ اللّٰهُ الأَرْضَ فَقَالَ: اجْمَعِي مَا فِيكِ مِنْهُ، فَفَعَلَتْ، فَإِذَا هُوَ قَائِمٌ، فَقَالَ: مَا حَمَلَكَ عَلَي مَا صَنَعْتَ؟ قَالَ: يَا رَبِّ خَشْيَتُكَ، فَغَفَرَ لَهُ

তোমাদের পূর্বে জনৈক ব্যক্তি ছিল যে নিজের প্রতি জুলুম করেছে, যখন তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো তখন সে তার ছেলেদেরকে বলল: আমি যখন মারা যাব তখন আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে, তারপর তা পিষে বাতাসে উড়িয়ে দেবে। আল্লাহর শপথ, আমার রব আমাকে যদি ধরতে সক্ষম হন তাহলে আমাকে এমন শাস্তি দেবেন যা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। যখন সে মারা গেল তা-ই করা হল। অতঃপর আল্লাহ জমিনকে আদেশ দিলেন, তোমার মাঝে তার দেহের যা আছে একত্রিত কর, সে তাই করল। অতঃপর লোকটি জীবিত হয়ে গেল। আল্লাহ বললেন: তুমি কেন এ কাজ করলে? সে বলল: হে রব! আপনাকে ভয় করে এ কাজ করেছি। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৮১) লোকটির বিশ্বাস ছিল আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে দিলে আল্লাহ আমাকে ধরতে পারবে না। আল্লাহ তাকে একত্রিত করে দেখালেন। তাই আল্লাহ পরের আয়াতে শপথ করে বলেছেন: ‘সুতরাং শপথ তোমার প্রতিপালকের! আমি তাদেরকে এবং শয়তানদেরকেসহ একত্রে সমবেত করবই’

(لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا)

অর্থাৎ হাশরের ময়দানে প্রাথমিক অবস্থায় মু’মিন, কাফির সবাই জাহান্নামের চারদিকে সমবেত হয়ে থাকবে। সবাই ভীতবিহ্বল নতজানু অবস্থায় পড়ে থাকবে। এরপর মু’মিন মুত্তাকিদেরকে জাহান্নাম অতিক্রম করিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। ফলে জাহান্নামের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি প্রশংসা করবে।

(وَإِنْ مِّنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا)

“এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে” হাসান বাসরী ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: জাহান্নামের ওপর যে পুলসিরাত রয়েছে সেটা অতিক্রম না করে কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এখানে যে ব্যক্তি পার হওয়ার অনুমতিসহ আসবে, সে ব্যক্তি অতিক্রম করবে। আর যে ব্যক্তি সেটা নিয়ে আসতে পারবেনা সে আটকে যাবে। (তাফসীর কুরতুবী, অত্র আয়াতের তাফসীর)।

এ পুলসিরাত অতি সূক্ষè ও অতীব ধারালো। জাহান্নামী ব্যক্তি পার হতে গিয়ে আটকে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। পক্ষান্তরে জান্নাতীগণ স্বাচ্ছন্দে চোখের পলকে পার হয়ে যাবে এবং কোনরূপ অগ্নিতাপ অনুভব করবে না যেমন পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪৩৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৮৩) আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সহজভাবে পুলসিরাত পার হওয়ার তাওফীক দান করুন! আমীন।

৮ম হিজরীর জুমাদাল উলা মাসে রোমকদের বিরুদ্ধে মুতার যুদ্ধে রওনা দেয়ার সময় প্রথম সেনাপতি আবব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাঃ) কেঁদে ফেললেন। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কাদঁছেন কেন? উত্তরে তিনি বললেন: দেখ! আল্লাহ তা‘আলার শপথ! এর কারণ পৃথিবীর মায়া-মহব্বত কিংবা তোমাদের সঙ্গে আমার মধুর সম্পর্ক নয়, বরং আমি রাসূলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি আয়াত পড়তে শুনেছি যাতে জাহান্নামের কথা উল্লেখ রয়েছে। তা হল এ আয়াত। আমি জানিনা জাহান্নামের নিকট আগমনের পর কেমন করে ফিরে আসতে পারব? (আর রাহিকুল মাখতূম, পৃ: ৪৪৬)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে অস্তিত্বহীন থেকে সৃষ্টি করেছেন।
২. মানুষকে কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত করা হবে এবং শয়তানকেও।
৩. মানুষকে নতজানু অবস্থায় জাহান্নামের সামনে উপস্থিত করা হবে। এবং জাহান্নামে দেয়া হবে।
৪. যারা জাহান্নামী ও যারা জান্নাতী সবাইকে পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে। তবে যারা মুত্তাকি তারা চোখের পলকে তা পার হয়ে যাবে। পার হওয়ার গতি ঈমান ও আমলের তারতম্য অনুপাতে হবে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
‘আর মানুষ বলে, আমরা যখন মরে যাবাে তখন কি আবারও আমাকে যিন্দা করে তোলা হবে?… ওদের মধ্য থেকে কাউকে কি তুমি অনুভব করছাে? অথবা কোনাে মৃদু শব্দও কি শুনতে পাচ্ছ?’ (আয়াত ৬৬-৯৮) এ সূরার আলােচ্য অংশের মধ্যে যাকারিয়া(আ.) ও ইয়াহইয়া(আ.)-এর জন্মের বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে। বর্ণনা করা হয়েছে মারইয়াম ও ঈসা(আ.)-এর জন্ম সংক্রান্ত তথ্যাদি, আলােচনা হয়েছে ইবরাহীম(আ.)-এর ঘটনা ও পিতা থেকে তার পৃথক হয়ে যাওয়ার ইতিহাস, আরাে বর্ণিত হয়েছে তাদের কথা যারা পরবর্তীতে হেদায়াত গ্রহণ করেছে অথবা গােমরাহ হয়ে গেছে এবং এসব ঘটনাবলী শেষে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এক ও অদ্বিতীয় প্রতিপালক মালিকের কর্তৃত্ব সম্পর্কে, যিনি নিরংকুশ ও নিঃশর্ত আনুগত্য পাওয়ার একমাত্র অধিকারী। এই হচ্ছে সেই আসল ও মহা সত্য যা সকল কাহিনী ও ঘটনাবলীর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে, সকল দৃশ্য ও সবার পরিণতির মধ্যে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে এ সত্য। আলােচ্য সূরার শেষ পাঠটির মধ্যে শিরক ও রােয হাশরের দিনে আবার যে যিন্দা হয়ে উঠতে হবে, সে সম্পর্কে যেসব যুক্তি পেশ করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। আর কেয়ামতের যে সব দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে মানব জাতির প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত তথ্য এমন জীবন্ত রূপ নিয়ে ফুটে উঠেছে যে মনে হয় সে সব ঘটনা যেন চোখের সামনে বাস্তবে ঘটে চলেছে এবং এসব ঘটনার সাথে যেন গােটা সৃষ্টির সকল কিছু সহযােগিতা করে চলেছে; আকাশমন্ডলী, পৃথিবী, মানুষ, জ্বিন, এ সৃষ্টিজগতের মধ্যে বিরাজমান সকল মােমেন ও সকল কাফের ব্যক্তি সবাই যেন সে মহাসত্য কেয়ামতের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সত্যকে বাস্তবায়নে সহায়তা করে চলেছে। এরপর আলােচনার গতি ফিরে যাচ্ছে সেসব দৃশ্যের দিকে যা দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী স্থানে বিরাজমান। প্রকৃতপক্ষে দুনিয়া ও আখেরাত পাশাপাশি এবং একটা আর একটার সাথে অংগাংগিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। দুনিয়ার বুকে যে বিবাদ বিসম্বাদ সংঘটিত হয় এসবের ফল পাওয়া যাবে বা মীমাংসা হবে আখেরাতে। এই দুই জীবনের মধ্যে যে দূরত্ব বা পার্থক্য রয়েছে তা কিছু আয়াত বা কিছু শব্দের মাধ্যমে দুর হতে পারে না, অর্থাৎ এ পার্থক্য আছে এবং অবশ্যই থাকবে। এভাবে বুঝা যায় দুনিয়া ও আখেরাত এই দুই জগত একটা আর একটার সাথে পাশাপাশি লেগে আছে, একটার সাথে অন্যজগতের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য এবং একটা আর একটার সম্পূরক। ‘মানুষ বলে, আমরা মরে যাওয়ার পর কি আবার যিন্দা হয়ে উঠবাে? মানুষ কি স্মরণ করে দেখে না যে আমি তাদেরকে সৃষ্টি করেছি এমন অবস্থা থেকে যখন তারা কিছুই ছিলাে না সুতরাং, তোমার রবের কসম, অবশ্যই আমি তাদেরকে এবং শয়তানদেরকে একদিন একত্রিত করবাে, তারপর জাহান্নামের চতুর্দিকে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা অবস্থায়, আমি তাদেরকে জড় করবাে।… তারপর নাজাত দেবো তাদেরকে যারা ভয় করে চলেছে এবং যালেমদেরকে হাঁটু গেড়ে বসে থাকা অবস্থায় ছেড়ে দেবাে।'(আয়াত ৬৬-৭২)   *কেয়ামতের ময়দানে পাপিষ্ঠদের ভয়াবহ অবস্থা : এখানে যে দৃশ্যের বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাতে মানুষ সাধারণভাবে পুনরুত্থান দিবস সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করে তার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বিভিন্ন যুগে এবং বিভিন্ন দেশে মানুষ এ মহা সত্য সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত ব্যক্ত করেছে। এতে বুঝা যায় সকল যুগে কিছু কিছু মানুষ রোজ হাশর সম্পর্কে সন্দেহ পােষণ করেছে এবং নানা প্রকার আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষ বলে, আমরা যখন মরে সাফ হয়ে যাবে, তখন আমরা কি আবারও কি যিন্দা হয়ে উঠবাে?’ এ প্রশ্নের মূলে রয়েছে পুনরুত্থান সম্পর্কে মানুষের প্রচন্ড অজ্ঞতা ও ভীষণ ঔদাসিণ্য। কিন্তু তারা এই আপত্তি তােলার সময় একবারও চিন্তা করে দেখে না যে তারা কোথায় ছিলাে এবং কেমন ছিল? তাদের আদৌ কোনাে অস্তিত্ব না থাকা অবস্থা থেকে তাে তাদেরকে অস্তিত্বে আনা হয়েছে। যে মহাশক্তিমান প্রকৌশলীর পক্ষে এ অসম্ভব সম্ভব হয়েছে, তার পক্ষে সৃষ্টির বুকে লুকিয়ে থাকা অণু পরমাণুগুলােকে একত্রিত করে পুনরায় অস্তিত্ব দান করা মােটেই কোনাে কঠিন কাজ নয়- একথা যে কোনাে চিন্তাশীল লােক সহজে বুঝতে পারে, কারণ প্রথম সৃষ্টি কাজটা করা থেকে দ্বিতীয় সৃষ্টি ক্রিয়া অবশ্যই সহজ। একটু খেয়াল করলেই একথা সহজে মানুষের বােধগম্য হবে। তাই আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষকে ধীরস্থিরভাবে চিন্তা করতে আহ্বান জানাচ্ছেন, বলছেন, ‘মানুষ কি একবার স্মরণ করে দেখে না যে তাকে আমি সেই অবস্থা থেকে অস্তিত্বে এনেছি যখন সে কিছুই ছিলাে না?’ তারপর আল্লাহ তায়ালা, তাদের এই অস্বীকৃতি ও বিদ্রুপাত্মক মনােভাবের প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করছে এবং তাদেরকে আযাবের ধমকি দিতে গিয়ে তার নিজ সত্ত্বার কসম খেয়ে বলছেন যে, অবশ্যই তাদেরকে সুনির্দিষ্ট একটি দিনে একত্রিত করা হবে। অর্থাৎ, তাদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে অণু-পরমাণুগুলােকে একত্রিত করে দ্বিতীয়বার তাদেরকে জীবিত করে তােলার পর হাশরের ময়দানে একত্রিত করা কোনাে ব্যাপারই নয়। তাই এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমার রবের কসম, আমি অবশ্যই তাদেরকে একত্রিত করবেন। অর্থাৎ তারা পৃথক পৃথক থাকবে না, বরং একত্রিত করবাে তাদের সবাইকে একটি বিশাল প্রান্তরে এবং শয়তানদেরকে। আসলে অস্বীকৃতির দিক দিয়ে তারা ও শয়তানেরা একই সমান, কারণ তারাই শয়তান যারা এ মহা সত্যকে অস্বীকার করে এবং অপরের মধ্যে ওয়াসওয়াসা সৃষ্টি করে। তারা নিজেরাতাে গােমরাহ হয়েছেই অপরকেও গােমরাহ হতে প্ররােচিত করে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পয়দা হয় অনুসারী ও অনুসৃত হওয়ার কারণে তাদের একদল হচ্ছে পরিচালক, অপর দল পরিচালিত। এখানে সে অপরাধীদের দারুন এক চিত্র আঁকা হচ্ছে । দেখুন ওরা কেমন হীনতা দীনতার সাথে জাহান্নামের চতুর্দিকে হাঁটু গেড়ে বসে আছে। এরশাদ হচ্ছে, তারপর তাদেরকে জাহান্নামের চারপাশে এনে নতজানু অবস্থায় জড় করবো। এ এক ভয়াবহ চিত্র অসংখ্য মানুষ উপস্থিত থাকবে বিশাল এ সমাবেশে। এরা অপরাধের গ্লানি মাথায় নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসা অবস্থায় থাকবে। তীব্র উত্তপ্ত ওই স্থান থেকে কিছুতেই তারা সরে যেতে পারবে না। ওই ভয়াবহ তাপে তাদের গােটা দেহ ঝলসে যেতে থাকবে এবং প্রতি মুহূর্তে তাদের মনে হবে যে তাদেরকে এখনই ছুড়ে ফেলা হবে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা সে জাহান্নামের আগুনে। ভয় ও অপমানের বােঝা মাথায় নিয়ে সে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার আশংকায় হাঁটু গেড়ে তার প্রহর গুণতে থাকবে। এটাই হবে অহংকারী ও মানুষের ওপর নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠাকারী শ্রেণীর মানুষদের জন্যে সেদিনকার করুন ও অপমানকর দৃশ্য। এদের মধ্যে যারা অধিক অহংকারী ও মানুষের ওপর জবরদস্তিকারী তাদেরকে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলার দৃশ্য হবে আরাে আরাে হৃদয়বিদারক। দেখুন সে দৃশ্যের বর্ণনা কিভাবে পেশ করা হচ্ছে, ‘তারপর প্রত্যেক দল থেকে টেনে হিচড়ে সে হতভাগাদের বের করে নেবো, যারা ছিলাে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার প্রতিবেশী বিদ্রোহী।’ ওদের কথা বলতে গিয়ে এবং ওদের অবস্থার ছবি আঁকতে গিয়ে যে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা এতােই কঠোর এবং তীব্র রােষে পরিপূর্ণ যে কর্ণকুহরে সে শব্দগুলাে এক অকল্পনীয় আতংক জাগায়, বিশেষ করে জাহান্নামে পতনের পূর্বে দলের মধ্য থেকে টেনে হিচড়ে বের করে আনার ওই কঠিন দৃশ্যের বর্ণনা, আর তারপর রয়েছে আগুনে ছুড়ে ফেলার ভয়ংকর চিত্র। এভাবে ওদেরকে ছুঁড়ে ফেলার কথাকে বাস্তবায়িত করার মাধ্যমে তাদের শাস্তির পূর্ণাংগতা বিধান করা হবে। অবশ্যই আল্লাহ রাব্বুল আলামীনই জানেন ওদের মধ্যে কোন কোন গ্রুপকে সর্বাগ্রে আগুনে নিক্ষেপ করতে হবে। এখানে আমাদের অবশ্যই বুঝতে হবে যে তাদেরকে সে অগণিত জনতার ভীড় থেকে আগুনে ফেলার জন্যে হঠাৎ করে এবং অপরিকল্পিতভাবে বের করে আনা হবে তা নয়, ওই চরম অপরাধীরা একে একে চিহ্নিতাবস্থায় বহিস্কৃত হবে এবং সে ভয়াবহ আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। আমিই সবচেয়ে ভালো জানি যে, জাহান্নামে দগ্ধ হবার জন্যে কারা বেশী উপযুক্ত।’ অহংকারী কাফেরদেরকেই জাহান্নামে আগে নিক্ষেপ করা হবে। পক্ষান্তরে মােমেনরা সেই বিভীষিকাময় দৃশ্য অবলােকন করবে মাত্র। ‘তোমাদের কেউ জাহান্নামের কাছে যেতে বাকী থাকবে না। এটা তােমার প্রভুর চূড়ান্ত ফয়সালা।’ অর্থাৎ মােমেনরাও জাহান্নামের কাছে যাবে, তার কাছে দিয়ে অতিক্রম করবে এবং তার ভয়াবহ দহন-ক্রিয়া ও তাতে আল্লাহদ্রোহীদের নিক্ষিপ্ত হওয়ার দৃশ্য দেখতে থাকবে। ‘অতপর আল্লাহভীরুদের আমি মুক্তি দেবো।’ অর্থাৎ জাহান্নামকে তাদের কাছ থেকে দূরে রাখা হবে এবং তারা তা থেকে অব্যাহতি পাবে। ‘আর যলেমদের তার ভেতরে যন্ত্রণা ভােগ করতে রেখে দেবো।

 

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# সেসব শয়তানকে যাদের এর চেলা হয়ে গেছে এবং যাদের প্ররোচনায় পড়ে এরা মনে করে নিয়েছে এ জীবনে যা কিছু আছে ব্যস এ দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই সব শেষ, এরপর আর দ্বিতীয় কোন জীবন নেই যেখানে আমাদের আল্লাহর সামনে হাযির হতে এবং নিজেদের কাজের হিসেব দিতে হবে।
# অবাধ্য ও বিদ্রোহী দলের নেতা।

# অতিক্রম করা মানে কোন কোন রেওয়াতে প্রবেশ করা বলা হয়েছে। কিন্তু এই রেওয়াতগুলোর কোনটির সনদও নবী ﷺ পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য বর্ণনা পরস্পরায় পৌঁছেনি। আবার একথাটি কুরআন মজীদ এবং বিপুল সংখ্যক সহী হাদীসেরও বিরোধী, যেগুলোতে সৎকর্মশীল মু’মিনদের জাহান্নামে প্রবেশ না করার কথা চূড়ান্তভাবে বলে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কুরআনে উল্লেখিত মূল শব্দ وَرُود এর আভিধানিক অর্থও প্রবেশ করা নয়। তাই এটিই এর সঠিক অর্থ যে, সবাইকেই জাহান্নাম অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু যেমন পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, মুত্তাকীদেরকে তা থেকে বাঁচিয়ে নেয়া হবে এবং জালেমদেরকে তার মধ্যে ফেলে দেয়া হবে।

 

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৬৬-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:

কিয়ামতকে অস্বীকারকারী কতকগুলি লোক কিয়ামত সংঘটনকে অসম্ভব মনে করতো এবং মৃত্যুর পরে পুনরুজ্জীবন তাদের কাছে ছিল অবাস্তব। তারা ঐ কিয়ামতের এবং ঐ দিন নতুনভাবে দ্বিতীয়বারের জীবনের অবস্থা শুনে অত্যন্ত বিস্ময়বোধ করতো। যেমন কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে তাদের এই উক্তিটিও বিস্ময় মুক্ত নয়। আমরা যখন মাটি হয়ে যাবো, তখন কি আমরা (পুনরায়) নতুনভাবে

সৃষ্ট হবো?” (১৩:৫) সুরায়ে ইয়াসীনে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়; বলেঃ অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন তা পচে গলে যাবে? বলঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি ওটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।” এখানেও কাফিরদের ঐ প্রতিবাদেরই উল্লেখ করা হয়েছে। তারা বলেঃ আমাদের মৃত্যু হয়ে গেলে আমরা কি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো? জবাবে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ মানুষ কি স্মরণ করে না যে, আমি তাকে পূর্বে সৃষ্টি করেছি, যখন সে কিছুই ছিল না? তারা প্রথমবারের সৃষ্টিকে স্বীকার করছে আর দ্বিতীয়বারের সৃষ্টিকে অস্বীকার করছে? যখন তারা কিছুই ছিল না তখন যিনি তাদেরকে কিছু একটা করতে সক্ষম ছিলেন, তারপরে যখন তারা কিছু না কিছু এটা অবশ্যই হবে তখন কি তিনি নতুনভাবে তাদেরকে সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন না?” সুতরাং প্রথমবার সষ্টি করাতো দ্বিতীয়বারে সষ্টি করারই দলীল। যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তিনি দ্বিতীয়বারও সৃষ্টি করবেন। আর দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করাতো প্রথমবারের সৃষ্টিকরার তুলনায় সহজ হয়ে থাকে।

সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আদম সন্তান আমাকে মিথ্য প্রতিপন্ন করছে, অথচ এটা তার জন্যে উপযুক্ত ছিল না। আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়, অথচ এটাও তার জন্যে সমীচীন নয়। আমাকে তার মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এই যে, সে বলেঃ যেভাবে আল্লাহ আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তিনি আমাকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করবেন না। অথচ এটা স্পষ্টভাবে প্রকাশমান যে, প্রথমবারের সৃষ্টি দ্বিতীয়বারের সৃষ্টির তুলনায় কঠিনতর। আর আমাকে তার কষ্ট দেয়া এই যে, সে বলেঃ আল্লাহর সন্তান রয়েছে। অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী। না আমার পিতামাতা আছে, না সন্তান সন্ততি আছে, না আমার সমতুল্য ও সমকক্ষ কেউ আছে। আমি আমার সত্তার শপথ করে বলছি যে, আমি তাদের সকলকেই জমা করবো এবং আমাকে ছাড়া যে সব শয়তানের তারা ইবাদত করতো তাদেরকেও আমি একত্রিত করবো। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের সামনে আনয়ন করবো যেখানে তারা হাটুর ভরে পতিত হবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি প্রত্যেক উম্মতকে হাঁটুর ভরে পড়ে থাকতে দেখবে।” (৪৫:২৮) একটি উক্তি এও আছে যে, দাঁড়ানো অবস্থায় তাদের হাশর হবে। মহান আল্লাহ বলেনঃ যখন সমস্ত প্রথম ও শেষের মানুষ একত্রিত হয়ে যাবে তখন আমি তাদের মধ্য হতে বড় বড় পাপী ও অবাধ্যদেরকে পৃথক করে দেবো। তাদের সরদার ও আমীর এবং যারা মন্দ ও অসৎ কাজ ছড়াতো, যারা তাদেরকে শিরক ও কুফরীর শিক্ষা দিতো এবং তাদেরকে পাপকার্যের দিকে আকৃষ্ট করতো তাদের সকলকেই আমি পৃথক করবো। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন সেখানে সবাই একত্রিত হয়ে যাবে তখন পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের সম্পর্কে বলবেঃ এই লোকেরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, সুতরাং আপনি তাদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন। (৭:৩৮)।” এরপর খবরের উপর খবরের সংযোগ স্থাপন করে বলেনঃ সবচেয়ে বেশী শাস্তির যোগ্য কারা এবং কারা জাহান্নামের আগুণের উপযুক্ত তা আল্লাহ ভালভাবেই জানেন। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জান না।” (৭:৩৮)
৭১-৭২ নং আয়াতের তাফসীর:

আবু সামিয়্যা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “এই আয়াতে যে (আরবী) বা অতিক্রমকরণ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। কেউ কেউ বলতেন যে, মুমিন তাতে প্রবেশ করবে। আবার অন্য কেউ বলতেন যে, মু’মিন তাতে প্রবেশ করবে বটে, কিন্তু তাদের তাকওয়ার কারণে তারা তার থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। আমি হযরত জাবিরের (রাঃ) সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “অতিক্রম তো সবাই করবে।” অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি বলেনঃ “ভাল লোক ও মন্দলোক সবাই ওটা অতিক্রম করবে, কিন্তু মু’মিনদের উপর ঐ আগুন ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। যেমন হযরত ইবরাহীমের (আঃ) উপর হয়েছিল। এমন কি স্বয়ং ঐ আগুন ঠাণ্ডার অভিযোগ করবে। তারপর মুত্তাকীদের সেখান থেকে পরিত্রাণ দেয়া হবে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল।)

খালেদ ইবনু মা’দান (রঃ) বলেন যে, জান্নাতীরা জান্নাতে পৌঁছে যাওয়ার পর বলবেঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো ওয়াদা করেছিলেন যে, প্রত্যেককেই জাহান্নাম অতিক্রম করতে হবে। কিন্তু আমরা তো তা অতিক্রম করলাম না।” উত্তরে তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা ওটা অতিক্রম করেই এসেছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঐ সময় আগুনকে ঠাণ্ডা করে দিয়েছিলেন।

হযরত কায়েস ইবনু আবি হাযিম (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রাঃ) তার স্ত্রীর জানুর উপর মাথ রেখে শুয়েছিলেন এবং ঐ অবস্থায় তিনি কঁদতে শুরু করেন। তাকে কাঁদতে দেখে তাঁর স্ত্রীও কেঁদে ফেলেন। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) স্ত্রীকে কঁাদার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আপনাকে কাঁদতে দেখেই আমার কান্না এসে গেছে।” তিনি তখন বলেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহর (আরবী) এই উক্তিটি আমার স্মরণ হয়েছে এবং একারণেই আমি কেঁদেছি। কারণ আমি জানি না যে, তার থেকে আমি মুক্তি পাবো কি না। ঐ সময় তিনি রুগ্ন ছিলেন। (এটা আবদুর রাযযাক (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু ইসহাক (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু মায়সারা (রঃ) রাত্রে যখন বিছানায় শয়ন করতে যেতেন, তখন তিনি কঁদতে শুরু করতেন এবং হঠাৎ করে তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেতোঃ হায়! আমার যদি জন্মই না হতো (তবে কতই না ভাল হতো।” তাকে একবার এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ (আরবী) আল্লাহ পাকের এই উক্তিটিই আমার ক্রন্দনের কারণ। এটাতো প্রমাণিত হচ্ছে যে, সেখানে যেতে হবে। আর সেখানে গিয়ে (জাহান্নামের আগুন হতে) পরিত্রাণ পাবো কি না তা আমার জানা নেই (তাই, আমার কান্না এসে যায়)।” (এটা ইমাম ইবন জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক তার ভাইকে বলেনঃ “আমাদেরকে জাহান্নাম অতিক্রম করতে হবে এটা আপনার জানা আছে কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হুঁ, অবশ্যই এটা আমার জানা আছে। আবার তিনি প্রশ্ন করেনঃ “ওটা আপনি পার হয়ে যাবেন এটাও কি আপনার জানা আছে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “না, এটা আমি বলতে পারি না।” তখন তিনি বলেনঃ “তাহলে আমাদের এই হাসি খুশী কেমন?” একথা শোনার পর মৃত্যু পর্যন্ত তার মুখে আর কখনো হাসি দেখা যায় নাই।

বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) মতে এখানে (আরবী) অতিক্রম দ্বারা (আরবী) বা প্রবেশ বুঝানো হয়েছে। কিন্তু নাফে আযরাক তার এই মতের বিরোধী ছিল। একবার হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর এই মতের স্বপক্ষে দলীল দেখাতে গিয়ে না’ফেকে বলেনঃ “দেখো, কুরআন কারীমে রয়েছেঃ (আরবী) (২১:৯৮) এখানে (আরবী) দ্বারা (আরবী) উদ্দেশ্য নয় কি? তিনি আর একটি আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ (আরবী) (১১:৯৮)

এটা পাঠ করে তিনি নাফেকে জিজ্ঞেস করেনঃ আচ্ছা বলতো, ফিরাউন তার কওমকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে কি না? সুতরাং তুমি চিন্তা করে দেখো যে, আমরা জাহান্নামে অবশ্যই প্রবেশ করবো। তবে আমরা তার থেকে বের হবে কি না এটাই প্রশ্ন। কিন্তু তোমার ব্যাপারে নিশ্চিত করে বলা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তোমাকে জাহান্নাম হতে বের করবেন না। কেননা, তুমি এটা অস্বীকারকারী।” তাঁর একথা শুনে নাফে’ হেসে ওঠে। এই নাফে একজন খারেজী ছিল। (এটা আবদুর রাযযাক (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) তার কুনিয়াত (পিতৃ পদবীযুক্ত নাম) ছিল আবু রাশেদ।

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে বুঝাতে গিয়ে (আরবী) এই আয়াতটিও পাঠ করেছিলেন এবং একথাও বলেছিলেন যে, পূর্ব যুগীয় বুযুর্গ ব্যক্তিগণ তাদের প্রার্থনায় বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমাকে নিরাপদে জাহান্নাম হতে বের করুন এবং খুশী ও আনন্দের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন।” আবু দাউদ তায়ালেসী (রঃ) হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে এটাও বর্ণনা করেছেন যে, এর দ্বারা কাফিরদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। হযরত ইকরামা (রঃ) বলেন যে, এরা হচ্ছে যালিম লোক। তিনি বলেনঃ “আমরা এভাবেই এই আয়াত পাঠ করতাম।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ভাল ও মন্দ সবলোকই জাহান্নাম অতিক্রম করবে। তিনি বলেনঃ দেখো, ফিরাউন, তার কওম এবং গুনাহগারদের জন্যেও (আরবী) শব্দটি (আরবী) এর অর্থে স্বয়ং কুরআন কারীমের দুটি আয়াতে এসেছে।

জামে তিরমিযী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অতিক্রম তো সবাই করবে, কিন্তু তাদের ঐ অতিক্রম তাদের আমল অনুযায়ী হবে।

হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, সবকেই পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে। এটাই হচ্ছে আগুনের পার্শ্বে দাড়ানো। কিছু লোক বিদ্যুৎগতিতে পার হয়ে যাবে, কেউ পার হবে বায়ুর গতিতে, কেউ পাখীর গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ দ্রুতগামী উটের গতিতে এবং কেউ দ্রুতগামী মানুষের চলার গতিতে পার হয়ে যাবে। সর্বশেষে যে মুসলমান ওটা অতিক্রম করবে সে হবে ঐ ব্যক্তি যার শুধু পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির উপর নূর (আলো) থাকবে। সে পড়ে উঠে পার হয়ে যাবে। পুলসিরাত হলো পিচ্ছিল জিনিস, যার উপর বাবলা গাছের কাটার মত কাটা রয়েছে। ওর দুধারে ফেরেশতাদের সারি থাকবে, যাদের হাতে জাহান্নামের অংকুশ থাকবে। ওটা দিয়ে ধরে ধরে তারা লোকদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, ঐ পুলসিরাত তরবারীর ধার অপেক্ষা তীক্ষ্ণতর হবে। প্রথম দল বিদ্যুৎ গতিতে মুহূর্তের মধ্যে পার হয়ে যাবে। দ্বিতীয় দল বায়ুর গতিতে যাবে। তৃতীয় দল যাবে দ্রুত গামী ঘোড়ার গতিতে। চতুর্থ দল দ্রুতগামী জন্তুর গতিতে যাবে। ফেরেশতামণ্ডলী সব দিক থেকে প্রার্থনা করতে থাকবেন। তারা বলবেনঃ “হে আল্লাহ! এদেরকে বাচিয়ে নিন।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের বহু মারফু হাদীসেও এই বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। হযরত কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জাহান্নাম স্বীয় পৃষ্ঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবে। যখন সমস্ত পুণ্যবান ও পাপী লোক একত্রিত হবে তখন আল্লাহ তাআলা ওকে নির্দেশ দিবেনঃ “তুমি তোমার নিজের লোকদেরকে পাকড়াও করো এবং জান্নাতীদেরকে ছেড়ে দাও।” তখন জাহান্নাম সমস্ত খারাপ লোককে গ্রাস করে ফেলবে। জাহান্নাম খারাপ লোকদেরকে এমনই চিনতে পারবে যেমন মানুষ নিজেদের সন্তানদেরকে চিনে থাকে বা তার চেয়েও বেশী চিনবে।

জাহান্নামের দারোগাদের দেহ হবে এক শ’ বছরের পথের সমান। তাদের প্রত্যেকের হাতে লৌহ নির্মিত গদা থাকবে। ঐ গদার একটি মাত্র আঘাতে সাতলক্ষ মানুষ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার প্রতিপালকের পবিত্র সত্তার কাছে আমি এই আশা রাখি যে, বদর ও হুদাইবিয়ার যুদ্ধে যে সব মুমিন শরীক ছিল তাদের একজনও জাহান্নামে যাবে না।” তাঁর একথা শুনে হযরত হাফসা (রাঃ) বলেনঃ “এটা কি রূপে সম্ব? কুরআন কারীমে তো ঘোষিত হয়েছেঃ “তোমাদের ওটা (জাহান্নাম) অতিক্রম করতে হবে?” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর পরবর্তী আয়াতটি পাঠ করেনঃ “মুত্তাকীরা তার থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যাবে এবং যালিমরা ওরই মধ্যে রয়ে যাবে।”

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘যার তিনটি সন্তান মারা গেছে তাকে আগুন স্পর্শ করবে না, কিন্তু শুধু কসম পুরো করা হিসেবে (আগুন স্পর্শ করবে)।”এর দ্বারা এই আয়াতই উদ্দেশ্য।

বর্ণিত আছে যে, একজন সাহাবী রোগাক্রান্ত হন। তাকে দেখবার জন্যে সাহাবীগণ সমভিব্যাহারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) গমন করেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “এই জ্বরও একপ্রকার আগুন। এর মধ্যে আমি আমার মুমিন বান্দাদেরকে এজন্যেই জড়িয়ে ফেলি যে, যাতে এটা জাহান্নামের আগুনের বদলা হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা গারীব বা দুর্বল হাদীস) হযরত মুজাহিদও (রঃ) এটাই বর্ণনা করে এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।

হযরত আনাস আল জুহানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সূরায়ে (আরবী) দশবার পড়ে নেয় তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর নির্মিত হয়।” একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “তা হলে তো আমরা বহু ঘর নির্মাণ করিয়ে নিবো।” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার কাছে কোন কিছুরই ঘাটতি নেই। তিনি উত্তম হতে উত্তমতম এবং বহু হতে আরো বহু প্রদানকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে এক হাজার আয়াত পাঠ করে নেয়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার নামটি নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করবেন এবং তাঁরা হলেন সর্বোত্তম সঙ্গী। আর যে ব্যক্তি বেতন ভোগী হিসেবে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মুসলিম সেনাবাহিনীকে হিফাজত করার জন্যে পিছন থেকে পাহারা দেয়, সে তার চোখে জাহান্নামের। আগুন দেখবেও না, শুধু কসম পুরো করার জন্যেই তাকে দেখতে হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমাদের সকলকেই ওটা (জাহান্নাম) অতিক্রম করতে হবে। আল্লাহর পথে তার যিক্র করা তাঁর পথে খরচ করা। হতেও সাতশগুণ বেশী মর্যাদা রাখে। কাতাদা (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে পার হওয়া বা অতিক্রম করা। আবদুর রহমান (রঃ) বলেন যে, মুসলমান পুলসিরাত পার হয়ে যাবে, আর মুশরিক জাহান্নামে পড়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ঐ দিন বহু পুরুষ ও নারী পুলসিরাতের উপর থেকে পিছলিয়ে পড়ে যাবে। ওর দুপার্শ্বে ফেরেশতাদের সারি থাকবে যারা নিরাপত্তার প্রার্থনা জানাতে থাকবেন। এটা তো আল্লাহর কসম যা পুরো হবেই। এর ফায়সালা হয়ে গেছে এবং আল্লাহ তাআলা ওটা নিজের দায়িত্বে নিয়ে নিয়েছেন। পুলসিরাতের উপর যাওয়ার পর খোদাভীরু লোকেরা পার হয়ে যাবে। আর পাপীরা তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামে গড়ে গড়ে পড়তে থাকবে। মু’মিনরাও নিজ নিজ আমল অনুযায়ী মুক্তি পাবে। যে পরিমাণ আমল হবে সেই পরিমাণ সেখানে বিলম্ব হবে। তারপর যারা মুক্তি পাবে তারা তাদের মুসলমান ভাইদের জন্যে সুপারিশ করবে। ফেরেশতামণ্ডলী ও রাসূলগণও শাফাআত করবেন। অতঃপর কতকগুলি লোক এমন অবস্থায় জাহান্নাম হতে বের হবে যে, আগুন তাদেরকে খেয়ে ফেলবে। শুধু চেহারায় সিজদার জায়গাটুকু বাকী থাকবে। তারপর নিজনিজ বাকী ঈমানের পরিমাণ হিসেবে জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে। যাদের অন্তরে দীনার (স্বর্ণ মুদ্রা) পরিমাণ ঈমান থাকবে তারা প্রথমে বের হবে। তারপর বের হবে তাদের চেয়ে কম ঈমানের অধিকারী লোকেরা। এরপর বের হবে ঐ লোকেরা যাদের ঈমান এদের চেয়ে কম হবে। তারপর যাদের ঈমনি হবে সরিষার দানার পরিমাণ তারা বের হবে, এরপরে এরচেয়ে কম ঈমানের অধিকারীদেরকে বের করা। হবে। তারপর ঐ ব্যক্তিকে বের করা হবে যে সারা জীবনে একবার লাইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেছে। যদিও তার অন্য কোন পুণ্য নাও থাকে। এরপর জাহান্নামে শুধু তারাই থাকবে যাদের ভাগ্যে জাহান্নামে চিরস্থায়ী অবস্থান লিখিত আছে। এসবগুলি হচ্ছে ঐ হাদীসসমূহের সারমর্ম যেগুলি সঠিকতার সাথে এসেছে। অতএব, বুঝা গেল যে, পুলসিরাতের উপর যাওয়ার পর পুণ্যবান লোকেরা ওটা পার হয়ে যাবে এবং পাপী লোকেরা কেটে কেটে জাহান্নামে পড়ে যাবে।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#903)
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 66-72
[ وَ یَقُوۡلُ الۡاِنۡسَانُ ءَ اِذَا مَا مِتُّ لَسَوۡفَ اُخۡرَجُ حَیًّا ﴿۶۶﴾

And the disbeliever says, “When I have died, am I going to be brought forth alive?”]
www.motaher21.net
19:66

وَ یَقُوۡلُ الۡاِنۡسَانُ ءَ اِذَا مَا مِتُّ لَسَوۡفَ اُخۡرَجُ حَیًّا ﴿۶۶﴾

And the disbeliever says, “When I have died, am I going to be brought forth alive?”

Man’s Amazement about Life after Death and the Refutation against this Amazement

Allah, the Exalted, informs that mankind is amazed that he could be returned to life after death and he thinks that this is something farfetched.

As Allah says,

وَإِن تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَءِذَا كُنَّا تُرَابًا أَءِنَّا لَفِى خَلْقٍ جَدِيدٍ

And if you wonder, then wondrous is their saying:”When we are dust, shall we indeed then be (raised) in a new creation!” (13:5)

Allah also says,

أَوَلَمْ يَرَ الاِنسَـنُ أَنَّا خَلَقْنَـهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مٌّبِينٌ

وَضَرَبَ لَنَا مَثَلً وَنَسِىَ خَلْقَهُ قَالَ مَن يُحىِ الْعِظَـمَ وَهِىَ رَمِيمٌ

قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِى أَنشَأَهَأ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ

Does not man see that We have created him from Nutfah. Yet behold he (stands forth) as an open opponent. And he puts forth for Us a parable and forgets his own creation. He says:”Who will give life to these bones after they are rotten and have become dust!”

Say:”He will give life to them Who created them for the first time! And He is the All-Knower of every creation!” (36:77-79)

And Allah says here in this Surah,

وَيَقُولُ الاِْنسَانُ أَيِذَا مَا مِتُّ لَسَوْفَ أُخْرَجُ حَيًّا

أَوَلَا يَذْكُرُ الاِْنسَانُ أَنَّا خَلَقْنَاهُ مِن قَبْلُ وَلَمْ يَكُ شَيْيًا

19:67

اَوَ لَا یَذۡکُرُ الۡاِنۡسَانُ اَنَّا خَلَقۡنٰہُ مِنۡ قَبۡلُ وَ لَمۡ یَکُ شَیۡئًا ﴿۶۷﴾

Does man not remember that We created him before, while he was nothing?

 

And man says:”When I am dead, shall I then be raised up alive!”

Does not man remember that We created him before, while he was nothing!

Allah uses the beginning of creation as a proof for its repetition. This means that He, the Exalted, created the human being while he was nothing. So can he not repeat this creation after the human had actually become something.

Similarly Allah says;

وَهُوَ الَّذِى يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ

And He it is Who originates the creation, then He will repeat it; and this is easier for Him. (30:27)

In the Sahih it is recorded that the Messenger of Allah said,

يَقُولُ اللهُ تَعَالَى

كَذَّبَنِي ابْنُ ادَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ أَنْ يُكَذِّبَنِي وَاذَانِي ابْنُ ادَمَ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ أَنْ يُوْذِيَنِي

أَمَّا تَكْذِيبُهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ لَنْ يُعِيدَنِي كَمَا بَدَأَنِي

وَلَيْسَ أَوَّلُ الْخَلْقِ بِأَهْوَنَ عَلَيَّ مِنْ اخِرِهِ

وَأَمَّا أَذَاهُ إِيَّايَ فَقَوْلُهُ إِنَّ لِي وَلَدًا

وَأَنَا الاْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد

Allah, the Exalted said,

“The son of Adam denies Me and he has no right to deny Me. The son of Adam harms Me and he has no right to harm Me.

His denial of Me is his statement that I will never repeat His creation like I created him the first time.

Yet, the second creation is not more difficult upon Me than the first.

His harming Me is his statement that I have a son.

Yet, I am One Alone, the Self-Sufficient Whom all creatures need. He Who does not beget children, nor was He born and there is none coequal or comparable unto Him.”

Concerning Allah’s statement

19:68

فَوَ رَبِّکَ لَنَحۡشُرَنَّہُمۡ وَ الشَّیٰطِیۡنَ ثُمَّ لَنُحۡضِرَنَّہُمۡ حَوۡلَ جَہَنَّمَ جِثِیًّا ﴿ۚ۶۸﴾

So by your Lord, We will surely gather them and the devils; then We will bring them to be present around Hell upon their knees.

 

فَوَرَبِّكَ لَنَحْشُرَنَّهُمْ وَالشَّيَاطِينَ

So by your Lord, surely We shall gather them together, and the Shayatin,

The Lord, Blessed be He the Most High, swears by His Noble Self that He will definitely gather all of those who worshipped other than Allah and their devils as well.

ثُمَّ لَنُحْضِرَنَّهُمْ حَوْلَ جَهَنَّمَ جِثِيًّا

then We shall bring them round Hell, Jithiyya.

Al-Awfi related that Ibn Abbas said,

“This means sitting and it is similar to His statement,

وَتَرَى كُلَّ أُمَّةٍ جَاثِيَةً

And you will see each nation Jathiyah.” (45:28)

As-Suddi commented on the word Jithiyya,

“It means standing.”

It has been reported from Murrah that Ibn Mas`ud said the same.

Concerning Allah’s statement

19:69

ثُمَّ لَنَنۡزِعَنَّ مِنۡ کُلِّ شِیۡعَۃٍ اَیُّہُمۡ اَشَدُّ عَلَی الرَّحۡمٰنِ عِتِیًّا ﴿ۚ۶۹﴾

Then We will surely extract from every sect those of them who were worst against the Most Merciful in insolence.

 

ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ

Then indeed We shall drag out from every sect,

This means from every nation.

This is what Mujahid said.

أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَنِ عِتِيًّا

all those who were worst in obstinate rebellion against the Most Gracious.

Ath-Thawri reported from Ali bin Al-Aqmar, from Abu Al-Ahwas, from Ibn Mas`ud that he said,

“The first of them will be bound to the last of them until their number is complete. Then, they will be brought all together. Then, Allah will begin with the greatest of them in crime and continue in succession.

That is Allah’s statement,

ثُمَّ لَنَنزِعَنَّ مِن كُلِّ شِيعَةٍ أَيُّهُمْ أَشَدُّ عَلَى الرَّحْمَنِ عِتِيًّا

Then indeed We shall drag out from every sect all those who were worst in obstinate rebellion against the Most Gracious.

This is similar to Allah’s statement,

حَتَّى إِذَا ادَّارَكُواْ فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لاٍّولَـهُمْ رَبَّنَا هَـوُلاءِ أَضَلُّونَا فَـَاتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ

Until they will be gathered all together in the Fire. The last of them will say to the first of them:”Our Lord! These misled us, so give them a double torment of the Fire.” Until His saying,
بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
(For what you used to earn). (7:38-39)

The first of them will say to the last of them:”Your were not better than us, so taste the torment for what you used to earn.”

Concerning Allah’s statement,

ثُمَّ لَنَحْنُ أَعْلَمُ بِالَّذِينَ هُمْ أَوْلَى بِهَا صِلِيًّا

19:70

ثُمَّ لَنَحۡنُ اَعۡلَمُ بِالَّذِیۡنَ ہُمۡ اَوۡلٰی بِہَا صِلِیًّا ﴿۷۰﴾

Then, surely it is We who are most knowing of those most worthy of burning therein.

 

Then, verily, We know best those who are most worthy of being burnt therein.

Then, at this point Allah attaches one piece of information to another.

The meaning here is that Allah best knows which of His creatures deserve to be burned in the fire of Hell and remain there forever and who deserves to have his punishment doubled.

This is as He says in the Ayah that was previously mentioned,

قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـكِن لاَّ تَعْلَمُونَ

He will say:”For each one there is double (torment), but you know not.” (7:38)

19:71

وَ اِنۡ مِّنۡکُمۡ اِلَّا وَارِدُہَا ۚ کَانَ عَلٰی رَبِّکَ حَتۡمًا مَّقۡضِیًّا ﴿ۚ۷۱﴾

And there is none of you except he will come to it. This is upon your Lord an inevitability decreed.

 

Everyone will be brought to Hell, then the Righteous will be saved

Ibn Jarir reported from Abdullah that he said concerning Allah’s statement,

وَإِن مِّنكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا

There is not one of you but will pass over it.

“The bridge over Hell is like the sharp edge of a sword. The first group to cross it will pass like a flash of lightning. The second group will pass like the wind. The third group will pass like the fastest horse. The fourth group will pass like the fastest cow. Then, the rest will pass while the angels will be saying, `O Allah save them, save them.”‘

This narration has supporting narrations similar to it from the Prophet in the Two Sahihs and other collections as well. These narrations have been related by Anas, Abu Sa`id, Abu Hurayrah, Jabir and other Companions, may Allah be pleased with them all.

Ahmad also recorded that Umm Mubashshar, the wife of Zayd bin Harithah, said,

“The Messenger of Allah was in the house of Hafsah when he said,

لَاا يَدْخُلُ النَّارَ أَحَدٌ شَهِدَ بَدْرًا وَالْحُدَيْبِيَّة

No one who was present at the battles of Badr and Hudaybiyyah (of the Muslims) will enter into the Hellfire.

Then, Hafsah said, “Doesn’t Allah say,
وَإِن مِّنكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا
(There is not one of you but will pass over it (Hell);),

The Messenger of Allah replied by reciting,
ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا
(Then We shall save those who had Taqwa).

In the Two Sahihs there is a Hadith reported from Az-Zuhri, from Sa`id from Abu Hurayrah that the Messenger of Allah said,

لَاا يَمُوتُ لاِاَحَدٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ ثَلَاثَةٌ مِنَ الْوَلَدِ تَمَسُّهُ النَّارُ إِلاَّ تَحِلَّةَ الْقَسَم

No one of the Muslims who has had three children, who all died, will be touched by the Hellfire, except for an oath that must be fulfilled.

Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam commented on Allah’s statement,
وَإِن مِّنكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا
(There is not one of you but will pass over it (Hell);),

“The passing of the Muslims (over the Hellfire) means their passing over a bridge that is over it. But the passing of the idolators over the Hellfire refers to their admission to the Fire.”

As-Suddi reported from Murrah, from Ibn Mas`ud, that he said concerning Allah’s statement,

كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا

this is with your Lord; a Hatman decree.

“An oath that must be fulfilled.”

Mujahid said,

“Hatman means preordainment.”

Ibn Jurayj said the same.

Concerning Allah’s statement

19:72

ثُمَّ نُنَجِّی الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا وَّ نَذَرُ الظّٰلِمِیۡنَ فِیۡہَا جِثِیًّا ﴿۷۲﴾

Then We will save those who feared Allah and leave the wrongdoers within it, on their knees.

 

ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا

Then We shall save those who had Taqwa.

When all of the creatures passed over the Hellfire, and those disbelievers and the disobedient people who are destined to fall into it because of their disobedience, Allah will save the believers and the righteous people from it because of their deeds.

Therefore, their passing over the bridge and their speed will be based upon their deeds that they did in this life.

Then, the believers who performed major sins will be allowed intercession. The angels, the Prophets and the believers will all intercede. Thus, a large number of the sinners will be allowed to come out of Hell. The fire will have devoured much of their bodies, except the places of prostration on their faces. Their removal from the Hellfire will be due to the faith in their hearts.

The first to come out will be he who has the weight of a Dinar of faith in his heart. Then, whoever has the next least amount after him. Then, whoever is next to that after him, and so forth. This will continue until the one who has the tiniest hint of faith in his heart, equal to the weight of an atom.

Then, Allah will take out of the Fire whoever said “La ilaha illallah,” even one day of his entire life, even if he never performed any good deed.

After this, no one will remain in the Hellfire, except those it is obligatory upon to remain in the Hellfire forever.

This has been reported in many authentic Hadiths from the Messenger of Allah.

This is why Allah says,

ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوا وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا

Then We shall save those who had Taqwa. And We shall leave the wrongdoers in it, Jithyya

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply