(বই#৮৯৫) সূরা:- আল-কাহাফা। সুরা:১৯ ০১-০৬ নং আয়াত:- [ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا আর হে আমার প্রতিপালক! তাকে তুমি সন্তোষভাজন কর।’] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৯৫)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৯
০১-০৬ নং আয়াত:-
[ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا
আর হে আমার প্রতিপালক! তাকে তুমি সন্তোষভাজন কর।’]
www.motaher21.net
সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-০১

كٓهٰیٰعٓصٓ۫ۚ

কা-ফ্ হা-ইয়া-আই-ন্‌-সা-দ।

সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-২

ذِكْرُ رَحْمَتِ رَبِّكَ عَبْدَهٗ زَكَرِیَّاۖۚ

এটি তোমার রবের অনুগ্রহের বিবরণ, যা তিনি তাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি করেছিলেন,
সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-৩

اِذْ نَادٰى رَبَّهٗ نِدَآءً خَفِیًّا

যখন সে চুপে চুপে নিজের রবকে ডাকলো।

সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-৪

قَالَ رَبِّ اِنِّیْ وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّیْ وَ اشْتَعَلَ الرَّاْسُ شَیْبًا وَّ لَمْ اَكُنْۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِیًّا

সে বললো, “হে আমার রব! আমার হাড়গুলো পর্যন্ত নরম হয়ে গেছে, মাথা বার্ধক্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে; হে পরোয়ারদিগার! আমি কখনো তোমার কাছে দোয়া চেয়ে ব্যর্থ হইনি।
সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-৫

وَ اِنِّیْ خِفْتُ الْمَوَالِیَ مِنْ وَّرَآءِیْ وَ كَانَتِ امْرَاَتِیْ عَاقِرًا فَهَبْ لِیْ مِنْ لَّدُنْكَ وَلِیًّاۙ

আমি আমার পর নিজের স্বজন-স্বগোত্রীয়দের অসদাচরণের আশঙ্কা করি এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। (তথাপি) তুমি নিজের বিশেষ অনুগ্রহ বলে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো,
সুরা: মারইয়াম
আয়াত নং :-৬

یَّرِثُنِیْ وَ یَرِثُ مِنْ اٰلِ یَعْقُوْبَ١ۖۗ وَ اجْعَلْهُ رَبِّ رَضِیًّا

যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুব বংশেরও উত্তরাধিকারী হবে। আর হে পরোয়ারদিগার! তাকে একজন পছন্দনীয় মানুষে পরিণত করো।”

০১-০৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

(১৯-মারিয়াম) : নামকরণ:

وَاذْكُرْفِيالْكِتَابِمَرْيَمَ আয়াত থেকে সূরাটির নাম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এমন সূরা যার মধ্যে হযরত মারিয়ামের কথা বলা হয়েছে।

(১৯-মারিয়াম) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

হাবশায় হিজরতের আগেই সূরাটি নাযিল হয়। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে জানা যায়, মুসলিম মুহাজিরদেরকে যখন হাবশায় শাসক নাজ্জাশীর দরবারে ডাকা হয় তখন হযরত জাফর দরবারে উপস্থিত হয়ে এ সূরাটি তেলাওয়াত করেন।

(১৯-মারিয়াম) : ঐতিহাসিক পটভূমি :

যে যুগে এ সূরাটি নাযিল হয় সে সময়কার অবস্থা সম্পর্কে সূরা কাহফের ভূমিকায় আমি কিছুটা ইঙ্গিত করেছি। কিন্তু এ সূরাটি এবং এ যুগের অন্যান্য সূরাগুলো বুঝার জন্য এতটুকু সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত যথেষ্ট নয়। তাই আমি সে সময়ের অবস্থা একটু বেশী বিস্তারিত আকারে তুলে ধরছি।

। কুরাইশ সরদাররা যখন ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে, লোভ-লালসা দেখিয়ে এবং ভয়-ভীতি ও মিথ্যা অপবাদের ব্যাপক প্রচার করে ইসলামী আন্দোলনকে দমাতে পারলো না তখন তারা জুলুম-নিপীড়ন, মারপিট ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার অস্ত্র ব্যবহার করতে লাগলো। প্রত্যেক গোত্রের লোকেরা নিজ নিজ গোত্রের নওমুসলিমদেরকে কঠোরভাবে পাকড়াও করতে থাকলো। তাদেরকে বন্দী করে, তাদের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে, তাদেরকে অনাহারে রেখে এমনকি কঠোর শারীরিক নির্যাতনের যাঁতাকালে নিষ্পেষিত করে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য বাধ্য করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকলো। এই নির্যাতনে ভয়ংকরভাবে পিষ্ট হলো বিশেষ করে গরীব লোকেরা এবং দাস ও দাসত্বের বন্ধনমুক্ত ভৃত্যরা। এসব মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম কুরাইশদের আশ্রিত ও অধীনস্থ ছিল। যেমন বেলাল (রা.) আমের ইবনে ফুহাইরাহ (রা., , উম্মে ‘উবাইস(রা., , যিন্নীরাহ (রা.) আম্মার ইবনে ইয়াসীর (রা., ও তাঁর পিতামাতা প্রমুখ সাহাবীগণ। এদেরকে মেরে মেরে আধমরা করা হলো। কক্ষে আবদ্ধ করে খাদ্য ও পানীয় থেকে বঞ্চিত করা হলো। মক্কার প্রখর রোদ্রে উত্তপ্ত বালুকারাশির ওপর তাদেরকে শুইয়ে দেয়া হতে থাকলো। বুকের ওপর প্রকাণ্ড পাথার চাপা অবস্থায় সেখানে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা কাতরাতে থাকলো। যারা পেশাজীবী ছিল তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক দেবার ব্যাপারে পেরেশান করা হতে থাকলো। বুখারী ও মুসলিমে হযরত খাব্বাব ইবনে আরতের (রা.) রেওয়ায়াতে বলা হয়েছেঃ

। “আমি মক্কায় কর্মকারের কাজ করতাম। আস ইবনে ওয়ায়েল আমার থেকে কাজ করিয়ে নিল। তারপর যখন আমি তার কাছে মজুরী আনতে গেলাম, সে বললো, যতক্ষণ তুমি মুহাম্মাদকে (সা.) অস্বীকার করবে না ততক্ষণ আমি তোমার মজুরী দেবো না”।

। এভাবে যারা ব্যবসা করতো তাদের ব্যবসা নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালানো হতো। যারা সমাজে কিছু মান মর্যাদার অধিকারী ছিল তাদেরকে সর্বপ্রকারে অপমানিত ও হেয় করা হতো। এই যুগের অবস্থা বর্ণনা প্রসংগে হযরত খাব্বাব (রা.) বলেন, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বার ছায়ায় বসেছিলেন। আমি তাঁর কাছে গিয়ে বললাম “হে আল্লাহর রাসূল! এখন তো জুলুম সীমা ছড়িয়ে গেছে, আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেন না?” একথা শুনে তাঁর পবিত্র চেহারা লাল হয়ে গেলো। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী মু’মিনদের ওপর এর চেয়ে বেশী জুলুম নিপীড়ন হয়েছে। তাদের হাড়ের ওপর লোহার চিরুনী চালানো হতো। তাদেরকে মাথার ওপর করাত রেখে চিরে ফেলা হতো। তারপরও তারা নিজেদের দ্বীন ত্যাগ করতো না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ এ কাজটি সম্পন্ন করে ছাড়বেন, এমনকি এমন এক সময় আসবে যখন এক ব্যক্তি সান’আ থেকে হাদারা মাউত পর্যন্ত নিশ্চিন্তে সফর করবে এবং তার আল্লাহ ছাড়া আর কারোর ভয় থাকবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়া করছো”। (বুখারী)

। এ অবস্থা যখন সহ্যের সীমা ছড়িয়ে গেলো তখন ৪৫ হস্তী বর্ষে (৫ নববী সন) নবী (সা.) তাঁর সাহাবীদের বললেনঃ لَو خَرَجْتٌمْ اِلَى اَرْضِ الْحَبْشَةِ فَاِن بِهَا مَلِكًا لَايُطْلَمُ عِنْدَهُ اَحَدٌ وَهِىَ اَرْضُ صِدْقٍ حَتى يَجْعَلَ اللهُ لَكُمْ فَرَجًا مِمَا اَنْتُمْ فِيْهِ- “তোমরা হাবশায় চলে গেলে ভালো হয়। সেখানে এমন একজন বাদশাহ আছেন যার রাজ্যে কারো প্রতি জুলুম হয় না। সেটি কল্যাণের দেশ। যতদিন পর্যন্ত না আল্লাহ তোমাদের এ বিপদ দূর করে দেন ততদিন তোমরা সেখানে অবস্থান করবে”। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বক্তব্যের পর প্রথমে এগারো জন পুরুষ ও চারজন মহিলা হাবশার পথে রওয়ানা হন। কুরাইশের লোকেরা সমুদ্র উপকূল পর্যন্ত তাদের ধাওয়া করে যায়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে শু’আইবা বন্দরে তাঁরা যথাসময়ে হাবশায় যাওয়ার নৌকা পেয়ে যান। এভাবে তারা গ্রেফতারীর হাত থেকে রক্ষা পান। তারপর কয়েক মাস পরে আরো কিছু লোক হিজরত করেন। এভাবে ৮৩ জন পুরুষ, ১১ জন মহিলা ও ৭ জন অ-কুরাইশী মুসলমান হাবশায় একত্র হয়ে যায়। এ সময় মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মাত্র ৪০ জন মুসলমান থেকে গিয়েছিলেন।

। এ হিজরতের ফলে মক্কার ঘরে ঘরে কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। কারণ কুরাইশদের ছোট বড় পরিবারগুলোর মধ্যে এমন কোন পরিবারও ছিল না যার কোন একজন এ মুহাজিরদের দলভুক্ত ছিল না। কারোর ছেলে, কারোর জামাতা, কারোর মেয়ে, কারোর ভাই এবং কারোর বোন এই দলে ছিল। এই দলে ছিল আবু জেহেলের ভাই সালামাহ ইবনে হিশাম, তার চাচাত ভাই হিশাম ইবনে আবী হুযাইফা ও আইয়াশ ইবনে আবী রাবী’আহ এবং তার চাচাত বোন, হযরত উম্মে সালামাহ, আবু সুফিয়ানের মেয়ে উম্মে হাবীবাহ, উত্বার ছেলে ও কলিজা ভক্ষণকারিণী হিন্দার সহোদর ভাই আবু হুযাইফা এবং সোহাইল ইবনে আমেরের মেয়ে সাহলাহ। এভাবে অন্যান্য কুরাইশ সরদার ও ইসলামের সুপরিচিত শত্রুদের ছেলে মেয়েরা ইসলামের জন্য স্বগৃহ ও আত্মীয় স্বজনদের ত্যাগ করে বিদেশের পথে পাড়ি জমিয়েছিল। তাই এ ঘটনায় প্রভাবিত হয়নি এমন একি গৃহও ছিল না। এ ঘটনার ফলে অনেক লোকের ইসলাম বৈরিতা আগের চেয়ে বেড়ে যায়। আবার অনেককে এ ঘটনা এমনভাবে প্রভাবিত করে যার ফলে তারা মুসলমান হয়ে যায়। উদাহরণ স্বরূপ হযরত উমরের (রা.) ইসলাম বৈরিতার ওপর এ ঘটনাটিই প্রথম আঘাত হানে। তাঁর একজন নিকট আত্মীয় লাইলা বিনতে হাশ্মাহ বর্ণনা করেনঃ আমি হিজরত করার জন্য নিজের জিনিসপত্র গোছগাছ করছিলাম এবং আমার স্বামী আমের ইবনে রাবী’আহ কোন কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। এমন সময় উমর এলেন এবং দাঁড়িয়ে আমার ব্যস্ততা ও নিমগ্নতা দেখতে থাকলেন।। কিছুক্ষণ পর বললেন, “আবদুল্লাহর মা!চলে যাচ্ছো?” আমি বললাম, “আল্লাহর কসম! তোমরা আমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছো। আল্লাহর পৃথিবী চারদিকে উন্মুক্ত, এখন আমরা এমন কোন জায়গায় চলে যাবো যেখানে আল্লাহ আমাদের শান্তি ও স্থিরতা দান করবেন”। একথা শুনে উমরের চেহারায় এমন কান্নার ভাব ফুটে উঠলো, যা আমি তার মধ্যে কখনো দেখিনি। তিনি কেবল এতটুকু বলেই চলে গেলেন যে, “আল্লাহ তোমাদের সহায় হোন”।

। হিজরতের পরে কুরাইশ সরদাররা এক জোট হয়ে পরামর্শ করতে বসলো। তারা স্থির করলো, আবদুল্লাহ ইবনে আবী রাবী’আহ (আবু জাহেলের বৈপিত্রেয় ভাই) এবং আমর ইবনে আসকে মূল্যবান উপঢৌকন সহকারে হাবশায় পাঠানো হবে। এরা সেখানে গিয়ে এই মুসলমান মুহাজিরদেরকে মক্কায় ফেরত পাঠাবার জন্য হাবশার শাসনকর্তা নাজ্জাশীকে সম্মত করাবে। উম্মুল মু’মিনীর হযরত সালামা (রা.) (নিজেই হাবশার মুহাজিরদের দলভুক্ত ছিলেন) এ ঘটনাটি বিস্তারিত আকারে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ কুরাইশদের এই দু’জন কূটনীতি বিশারদ দূত হয়ে আমাদের পিছনে পিছনে হাবশায় পৌঁছে গেলো। প্রথমে নাজ্জাশীর দরবারের সভাসদদের মধ্যে ব্যাপকহারে উপঢৌকন বিতরণ করলো। তাদেরকে এই মর্মে রাযী করালো যে, তারা সবাই মিলে এক যোগে মুহাজিরদেরকে ফিরিয়ে দেবার জন্য নাজ্জাশীর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। তারপর নাজ্জাশীর সাথে সাক্ষাত করলো এবং তাকে মহামূল্যবান নযরানা পেশ করার পর বললো, “আমাদের শহরের কয়েকজন অবিবেচক ছোকরা পালিয়ে আপনার এখানে চলে এসেছে। জাতির প্রধানগণ তাদেরকে ফিরিয়ে নেবার আবেদন জানাবার জন্য আপনার কাছে আমাদের পাঠিয়েছেন। এই ছেলেগুলো আমাদের ধর্ম থেকে বের হয়ে গেছে। এবং এরা আমাদের ধর্মেও প্রবেশ করেনি বরং তারা একটি অভিনব ধর্ম উদ্ভাবন করেছে”। তাদের কথা শেষ হবার সাথে সাথেই দরবারের চারদিক থেকে এক যোগে আওয়াজ গুঞ্জরিত হলো “এ ধরনের লোকদেরকে অবশ্যই ফিরিয়ে দেয়া উচিত। এদের দোষ সম্পর্কে এদের জাতির লোকেরাই ভালো জানে। এদেরকে এখানে রাখা ঠিক নয়”। কিন্তু নাজ্জাশী রেগে গিয়ে বললেন, “এভাবে এদেরকে আমি ওদের হাতে সোপর্দ করে দেবো না। যারা অন্যদেশ ছেড়ে আমার দেশের প্রতি আস্থা স্থাপন করেছে এবং এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সাথে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। প্রথমে আমি এদেরকে ডেকে এই মর্মে অনুসন্ধান করবো যে, ওরা এদের ব্যাপারে যা কিছু বলছে সে ব্যাপারে আসল সত্য ঘটনা কি”! অতঃপর নাজ্জাশী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদেরকে নিজের দরবারে ডেকে পাঠালেন।

। নাজ্জাশীর বার্তা পেয়ে মুহাজিরগণ একত্র হলেন। বাদশাহর সামনে কি বক্তব্য রাখা হবে তা নিয়ে তারা পরামর্শ করলেন। শেষে সবাই এক জোট হয়ে ফায়সালা করলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন তাই হুবহু কোন প্রকার কমবেশী না করে তাঁর সামনে পেশ করবো, তাতে নাজ্জাশী আমাদের থাকতে দেন বা বের করে দেন তার পরোয়া করা হবে না। দরবারে পৌঁছার সাথে সাথেই নাজ্জাশী প্রশ্ন করলেন, “তোমরা এটা কি করলে, নিজেদের জাতির ধর্মও ত্যাগ করলে আবার আমার ধর্মেও প্রবেশ করলে না, অন্যদিকে দুনিয়ার অন্য কোন ধর্মও গ্রহণ করলে না?” এর জবাবে মুহাজিরদের পক্ষ থেকে হযরত জা’ফর ইবনে আবু তালেব (রা.) তাৎক্ষণিক একটি ভাষণ দিলেন। এ ভাষণে তিনি প্রথমে আরবীয় জাহেলীয়াতের ধর্মীয়, নৈতিক ও সামাজিক দুষ্কৃতির বর্ণনা দেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি কি শিক্ষা দিয়ে চলেছেন তা ব্যক্ত করেন। তারপর কুরাইশরা নবীর (সা.) আনুগত্য গ্রহণকারীদের ওপর যেসব জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল সেগুলো বর্ণনা করেন এবং সবশেষে একথা বলে নিজের বক্তব্যের উপসংহার টানেন যে, আপনার দেশে আমাদের ওপর কোন জুলুম হবে না এই আশায় আমরা অন্য দেশের পরিবর্তে আপনার দেশে এসেছি”। নাজ্জাশী এ ভাষণ শুনে বললেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নবীর ওপর যে কালাম নাযিল হয়েছে বলে তোমরা দাবি করেছো তা একটু আমাকে শুনাও তো দেখি। জবাবে হযরত জাফর সূরা মারয়ামের গোড়ার দিকের হযরত ইয়াহ্ইয়া ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে সম্পর্কিত অংশটুকু শুনালেন। নাজ্জাশী তা শুনেছিলেন এবং কেঁদে চলছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর দাড়ি ভিজে গেলো। যখন হযরত জাফর তেলাওয়াত শেষ করলেন তখন তিনি বললেন, ”নিশ্চিতভাবেই এ কালাম এবং হযরত ঈসা (আ) যা কিছু এনেছিলেন উভয়ই একই উৎস থেকে উৎসারিত। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে ওদের হাতে তুলে দেবো না”।

। পরদিন আমর ইবনুল আস নাজ্জাশীকে বললো “ওদেরকে ডেকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখুন, ঈসা ইবনে মারয়ামের সম্পর্কে ওরা কি আকীদা পোষণ করে? তাঁর সম্পর্কে ওরা একটা মারাত্মক কথা বলে? নাজ্জাশী আবার মুহাজিরদেরকে ডেকে পাঠালেন। আমরের চালবাজীর কথা মুহাজিররা আগেই জানতে পেরেছিলেন। তারা আবার একত্র হয়ে পরামর্শ করলেন যে, নাজ্জাশী যদি ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রশ্ন করেন তাহলে তার কি জবাব দেয়া যাবে। পরিস্থিতি বড়ই নাজুক ছিল। এ জন্য সবাই পেরেশান ছিলেন। কিন্তু তবুও রসূলুল্লাহর (সা.) সাহাবীগণ এই ফায়সালাই করলেন যে, যা হয় হোক, আমরা তো সেই কথাই বলবো যা আল্লাহ ও তাঁর রসূল শিখিয়েছেন। কাজেই যখন তারা দরবারে গেলেন এবং নাজ্জাশী আমর ইবনুল আসের প্রশ্ন তাদের সামনে রাখলেন তখন জা’ফর ইবনে আবু তালেব উঠে দাঁড়িয়ে নির্দ্বিধায় বললেনঃ هُوَ عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ وَرُوحُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ الْعَذْرَاءِ الْبَتُولِ “তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ ও একটি বাণী, যা আল্লাহ কুমারী মারয়ামের নিকট পাঠান”। একথা শুনে নাজ্জাশী মাটি থেকে একটি তৃণখন্ড তুলে নিয়ে বললেন, ”আল্লাহর কসম! তোমরা যা কিছু বললে হযরত ঈসা তার থেকে এই তৃণখণ্ডের চাইতেও বেশী কিছু ছিলেন না”। এরপর নাজ্জাশী কুরাইশদের পাঠানো সমস্ত উপঢৌকন এই বলে ফেরত দিয়ে দিলেন যে, ”আমি ঘুষ নিই না এবং মুহাজিরদেরকে বলে দিলেন, তোমরা পরম নিশ্চিন্তে বসবাস করতে থাকো”।

(১৯-মারিয়াম) : আলোচ্য বিষয় ও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু :

এ ঐতিহাসিক পটভূমির প্রতি দৃষ্টি রেখে যখন আমরা এ সূরাটি দেখি তখন এর মধ্যে সর্ব প্রথম যে কথাটি সুস্পষ্ট হয়ে আমাদের সামনে আসে সেটি হচ্ছে এই যে, যদিও মুসলমানরা একটি মজলুম শরণার্থী দল হিসেবে নিজেদের স্বদেশভূমি ত্যাগ করে অন্যদেশে চলে যাচ্ছিল তবুও এ অবস্থায়ও আল্লাহ তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সামান্যতম আপোস করার শিক্ষা দেননি। বরং চলার সময় পাথেয় স্বরূপ এ সূরাটি তাদের সাথে দেন, যাতে ঈসায়ীদের দেশে তারা ঈসা আলাইহিস সালামের একেবারে সঠিক মর্যাদা তুলে ধরেন এবং তাঁর আল্লাহর পুত্র হওয়ার ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে অস্বীকার করেন।

। প্রথম দু’ রুকূ’তে হযরত ইয়াহ্ইয়া (আ) ও হযরত ঈসা (আ) এর কাহিনী শুনাবার পর আবার তৃতীয় রুকূ’তে) সমকালীন অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে হযরত ইবরাহীমের (আ) কাহিনী শুনানো হয়েছে। কারণ এ একই ধরনের অবস্থায় তিনিও নিজের পিতা, পরিবার ও দেশবাসীর জুলুম নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে স্বদেশ ত্যাগ করেছিলেন। এ থেকে একদিকে মক্কার কাফেরদেরকে এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, আজ হিজরতকারী মুসলমানরা ইবরাহীমের পর্যায়ে রয়েছে এবং তোমরা রয়েছো সেই জালেমদের পর্যায়ে যারা তোমাদের পিতা ও নেতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে গৃহত্যাগী করেছিল। অন্যদিকে মুহাজিরদের এ সুখবর দেয়া হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেমন স্বদেশ ত্যাগ করে ধ্বংস হয়ে যাননি বরং আরো অধিকতর মর্যাদাশীল হয়েছিলেন তেমনি শুভ পরিণাম তোমাদের জন্য অপেক্ষা করেছে।

। এরপর চতুর্থ রুকূ’তে) অন্যান্য নবীদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে একথা বলাই উদ্দেশ্য যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীনের বার্তা বহন করে এনেছেন সকল নবীই সেই একই দ্বীনের বার্তাবহ ছিলেন। কিন্তু নবীদের তিরোধানের পর তাঁদের উম্মতগণ বিকৃতির শিকার হতে থেকেছে। আজ বিভিন্ন উম্মতের মধ্যে যেসব গোমরাহী দেখা যাচ্ছে এগুলো সে বিকৃতিরই ফসল।

। শেষ দু’ রুকূ’তে) মক্কার কাফেরদের ভ্রষ্টতার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে এবং কথা শেষ করতে গিয়ে মু’মিনদেরকে এই মর্মে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, সত্যের শত্রুদের যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তোমরা জনগণের প্রিয় ভাজন হবেই।

# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য সূরা আলে ইমরানের ৪রুকূ’সামনে রাখুন। সেখানে এ ঘটনাটি অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, ১ খন্ড, ২৪৬-২৫০পৃষ্ঠা)

# এখানে যে হযরত যাকারিয়ার কথা আলোচনা করা হচ্ছে তিনি ছিলেন হযরত হারুনের বংশধর। তাঁর মর্যাদা সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে হলে বনী ইসরাঈলের যাজক ব্যবস্থা(Priesthoo) সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে হবে। ফিলিস্তিন দখল করার পর বনী ইসরাঈল দেশের শাসন ব্যবস্থা এমনভাবে সংঘটিত করেছিল যার ফলে হযরত ইয়াকুবের (আ) সন্তানদের ১২টি গোত্রের মধ্যে সমগ্র দেশ বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং ১৩তম গোত্রটি(অর্থাৎ লাভী ইবনে ইয়াকুবের গোত্র) ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট হয়েছিল। আবার বনী লাভীর মধ্যেও যে পরিবারটি বাইতুল মাকদিসে খোদাবন্দের সামনে ধূপ জ্বালাবার দায়িত্ব পালন এবং পবিত্রতম জিনিসসমূহের পবিত্রতা বর্ণনা করার কাজ করতো তারা ছিল হযরত হারুনের বংশধর। বনী লাভীর অন্যান্য লোকেরা বাইতুল মাকদিসের মধ্যে যেতে পারতো না বরং আল্লাহর গৃহের পরিচর্যার সময় আঙ্গিনায় ও বিভিন্ন কক্ষে কাজ করতো। শনিবার ও ঈদের সময় কুরবানী করতো এবং বাইতুল মাকদিসের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে বনী হারুনকে সাহায্য করতো।

বনী হারুনের চব্বিশটি শাখা ছিল। তারা পালাক্রমে বাইতুল মাকদিসের সেবায় হাযির হতো। এই শাখাগুলোর মধ্যে একটি ছিল আবইয়াহর শাখা। এর সরদার ছিলেন হযরত যাকারিয়া। নিজের গোত্রের পালার দিন তিনিই মাকদিসে যেতেন এবং আল্লাহর সমীপে ধূপ জ্বালাবার দায়িত্ব পালন করতেন। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন বাইবেলের বংশাবলী-১পুস্তক ২৩ ও ২৪ অধ্যায় )।

# এর অর্থ হচ্ছে, আবইয়াহর পরিবারে আমার পরে এমন কাউকে দেখা যায় না, যে ব্যক্তি দ্বীনী ও নৈতিক দিক দিয়ে আমি যে পদে অধিষ্ঠিত আছি তার যোগ্য হতে পারে। তারপর সামনের দিকে যে প্রজন্ম এগিয়ে আসছে তাদের চালচলন বিকৃত দেখা যাচ্ছে।

# আমি কেবলমাত্র নিজের উত্তরাধিকারী চাই না বরং ইয়াকুব বংশের যাবতীয় কল্যাণের উত্তরাধিকারী চাই।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলােচনা : অধিকাংশ মাক্কী সূরার ন্যায় এই সূরাটিতেও তাওহীদ, পুনরুত্থান এবং লা-শরীফ আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কিত মৌলিক বিষয়গুলাে স্থান পেয়েছে। আলােচ্য সূরার প্রধান উপাদান হচ্ছে অতীতের ঘটনাবলীর বিবরণ। এতে গোড়ার দিকে যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, মারইয়াম, ঈসা এবং ইবরাহীম(আ.)-এর ঘটনাবলী স্থান পেয়েছে। পরবর্তী আয়াতগুলােতে ইসহাক, ইয়াকুব, মুসা, হারুন, ইসমাঈল, ইদ্রিস এবং আদম ও নূহ(আ.) প্রমূখ নবী রসূলদের আংশিক আলােচনাও এসেছে। সূরার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ জুড়েই এসব ঘটনাবলীর উল্লেখ রয়েছে। এর মাধ্যমে যে বিষয়গুলাে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে তা হলাে, আল্লাহর একত্ববাদ, পুনরুত্থান, আল্লাহ তায়ালা সন্তানহীন ও শরীকহীন, সত্য পথের অনুসারীদের জীবনাদর্শ এবং সর্বোপরি ভ্রান্ত পথের অনুসারীদের জীবনাদর্শের স্বরূপ। এর পর আলােচনায় স্থান পেয়েছে কিয়ামতের কিছু চিত্র এবং পরকালে অবিশ্বাসী লােকদের সাথে কিছু তর্ক বিতর্ক। শিরককে বর্জন করা, আল্লাহর সন্তান হওয়া দাবীকে অস্বীকার করা, ইহকাল ও পরকালে কাফের মােশরেকদের করুণ পরিণতির বিষয়টি উপস্থাপন করা, এসব কিছুই এসেছে সূরায় মূল বিষয়টির সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে। ফলে এসব আলােচনা সূরার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। সূরায় প্রাসঙ্গিক আলােচনায় একটা তীব্র আবেগ ও অনুভূতির উপস্থিতি লক্ষণীয়। এই আবেগ অনুভূতি মানব হৃদয়ে যেমন পরিলক্ষিত, তেমনি পরিলক্ষিত হচ্ছে পারিপার্শ্বিক জগতে। এই যে বিশাল জগত যা আমাদের কাছে এক অনুভূতিহীন জড় পদার্থ বলে মনে হয়, সেই জগতই আলােচ্য সূরার বর্ণনায় একটা অনুভূতিশীল ও সংবেদনশীল জীবন্ত অস্তিত্ব রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে আমরা আকাশকে চরম ক্রোধে বিদীর্ণ হতে দেখতে পাই, প্রচন্ড আক্রোশে পাহাড়কে দ্বিখন্ডিত হতে পাই। অর্থাৎ জীবন্ত প্রাণীর ন্যায় এসব জড় পদার্থও যে প্রভাবিত হয় তার দৃষ্টান্ত দেখতে পাই। (এই আশংকার কারণ হচ্ছে এটাই) যে, ‘এরা দয়াময় আল্লাহর জন্যে… হিসেবে উপস্থিত হবে না।'(আয়াত ৯০-৯২) অপরদিকে মানবীয় আবেগ অনুভূতির বিষয়টির বর্ণনা এসেছে সূরার গােড়ার দিকে এবং শেষের দিকে। সূরায় বর্ণিত মূল ঘটনা জুড়ে রয়েছে এসব আবেগ অনুভূতির আলােচনা, বিশেষ করে মারইয়াম(আ.) এবং ঈসা(আ.)-এর জন্ম সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মানবীয় আবেগ অনুভূতির আধিক্য ও প্রাধান্য আমরা লক্ষ্য করতে পারি। সূরার অন্তর্নিহিত ভাব ও ভঙ্গির মাঝে দয়া, করুণা, সন্তুষ্টি ও আল্লাহর সাথে বান্দার গভীর যােগসূত্রের চিত্রটি সুস্পষ্ট রূপে ধরা পড়ে। সূরার গোড়ার দিকেই যাকারিয়া(আ.)-এর প্রতি আল্লাহর দয়া ও করুণার প্রসঙ্গ এসেছে। অপরদিকে যাকারিয়া(আ.) স্বীয় প্রভু ও মালিকের সাথে যে একাকী ও নিভৃতে নিজের মনের বাসনা ও আরযিটুকু সকাতর ভাষায় তুলে ধরছেন- সে প্রসংগও এসেছে। সূরার একাধিক স্থানে রহমত শব্দ বা এর সমার্থক শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। সাথে সাথে ‘পরম করুণাময়’ শব্দের অধিক ব্যবহারও এখানে লক্ষণীয়। শুধু তাই নয়, পরকালে মােমেনরা যে সব নেয়ামত ভােগ করবেন সেগুলােকে ভালােবাসা’ রূপে চিত্রায়িত করা হয়েছে। অপরদিকে ইয়াহইয়া(আ.)-এর প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে সেটাকে ‘ম্নেহ বা মমতা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তদ্রুপ ঈসা(আ.)-কে যে মাতৃভক্তি ও মাতৃ প্রীতির গুণ দান করা হয়েছে সেটাকে আখ্যায়িত করা হয়েছে নম্রতা ও কোমলতা বলে। মােটকথা, প্রতিটি শব্দে ও প্রতিটি বাক্যের পরতে পরতে আপনি দয়া, মায়া ও মমতার কোমল স্পর্শ অনুভব করবেন। অপরদিকে যেখানে শিরক এর প্রসংগ এসেছে সেখানে আপনি গােটা সৃষ্টি জগতের মাঝে এক প্রচন্ড দ্রোহ ও ক্ষোভ অনুভব করবেন। মনে হবে যেন আকাশ পাতাল ভেংগে চুরমার হয়ে যাবে। কারণ, একমাত্র আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা মহাপাপ। এই পাপের কথা শুনে আকাশ পাতাল ও প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়তে উপক্রম হয়। বর্ণনাভংগির মাঝেও এক বিচিত্র ছন্দের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। এখানে রয়েছে ছােট ছােট ও ছন্দময় বাক্য। প্রতিটি বাক্যের সমাপ্তি ঘটেছে একটি সুষম মাত্রা ও তালের মাধ্যমে। কোথাও লঘু আবার কোথাও গুরু। ক্ষোভ, আক্রোশ ও দ্রোহ যেখানে বর্ণিত হয়েছে সেখানে শব্দের শেষের অক্ষরটি দ্বিত্ব রূপে এসেছে। ফলে ছন্দ ও তালের মাঝে দৃঢ়তা গাম্ভীর্য ও রুক্ষতার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন : মাদ্দা, দিদ্দা, এদ্দা, হাদ্দা, এয্যা ও আয্যা ইত্যাদি। অর্থাৎ বক্তবাের বৈচিত্রের সাথে তাল মিলিয়ে ছন্দ ও মাত্রার মাঝেও বৈচিত্র্য এসেছে এই সূরার প্রতিটি জায়গায়। বিবৃতি বা কাহিনী ধর্মী বক্তব্যে ছন্দের উপস্থিতি লক্ষ্য করতে পারি। পক্ষান্তরে যেখানে মন্তব্য বা বিশ্লেষণ ধর্মী বক্তব্য এসেছে সেখানে বর্ণনা ভংগি সরল ও গদ্যময়। এই ভাবে বক্তব্যের পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্ণনা ভংগির মাঝেও পরিবর্তন এসেছে সুরার একাধিক স্থানে। আলােচ্য সূরার বিষয়বস্তু তিনটি পর্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এসেছে যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, মারিয়াম ও ঈসা(আ.)-এর ঘটনা। ঘটনা বর্ণনা শেষে মন্তব্যের পালা এসেছে। এখানে ঈসা(আ.)-এর জন্মকে কেন্দ্র করে ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন দল ও গােষ্ঠীর মাঝে যে বিতর্ক চলে আসছে তার পরিসমাপ্তি ঘটানাের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে চূড়ান্ত বক্তব্য এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ইবরাহীম(আ.)-এর ঘটনা এসেছে। এই ঘটনার বর্ণনায় তার পিতার সাথে ও তার সম্প্রদায়ের সাথে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাবলীর প্রসংগ এসেছে। শিরকবাদী সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে সৎ ও ন্যায় পরায়ন সন্তান-সন্তুতির আকারে যে নেয়ামত দান করা হয়েছে তারও বর্ণনা এসেছে। এর পর নবী রসূলদের প্রসংগ এসেছে। সঠিক পথের অনুসারীদের শুভ পরিণতির বক্তব্যও এসেছে। সাথে সাথে ভ্রান্ত পথের অনুসারীদের অশুভ পরিণতির প্রসংগ উল্লেখিত হয়েছে। এই পর্যায়ে সব শেষে লা-শরীক আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতা, অধিকার ও আনুগত্যের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, (কিছু সংখ্যক মূর্খ) মানুষ বলে, (একবার) আমার… পুনরুত্থিত হবো'(আয়াত ৬৫) তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে পুনরুত্থান সম্পর্কিত বিতর্কের বিষয়টি এসেছে। এ প্রসংগে কেয়ামতের কিছু খন্ড চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। সাথে সাথে শিরক ও খােদাদ্রোহীতার প্রতি গােটা সৃষ্টি জগতের প্রচন্ড ক্ষোভ ও আক্রোশের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। পরিশেষে যুগে যুগে ধ্বংসপ্রাপ্ত আল্লাহদ্রোহী জাতিগুলাের করুণ দৃশ্যের প্রতি ইংগিত করে বলা হয়েছে, (এই মূর্খ) লােকেরা বলে, করুণাময় আল্লাহ তায়ালা সন্তান গ্রহণ করেছেন।(আয়াত ৮৭) এখন আমরা বিস্তারিত আলােচনায় ফিরে যাচ্ছি।

#সুরার প্রথমেই পাঁচটি বিক্ষিপ্ত আরবী বর্ণ এসেছে। ইতিপূর্বেও এ জাতীয় বর্ণের সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি। এর ব্যাখ্যায় একাধিক বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে আমাদের কাছে যে বক্তব্যটি সর্বাধিক গ্রহণযােগ্য বলে মনে হয়েছে তা হলাে এই আল কোরআন- যা জাতীয় আরবী বর্ণমালারই সমষ্টির নাম। তবে এ সব বর্ণমালাগুলােকে পবিত্র কোরআনে এমন একটি ধারায় এমন একটি পদ্ধতিতে সাজানাে হয়েছে, যা মানুষের সাধ্যের বাইরে। অথচ মানুষ নিজেও এসব বর্ণ দ্বারা শব্দ ও বাক্য সৃষ্টি করতে সক্ষম। কিন্তু কোরআনের পদ্ধতি ও ধারা অনুযায়ী শব্দ ও বাক্য সৃষ্টি করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারন, এই পদ্ধতি হচ্ছে অভিনব, এই ধারা হচ্ছ অসাধারণ।
#   *হযরত যাকারিয়া(আ.)-এর ঘটনা : এরপর যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া(আ.)-এর ঘটনার বিবরণ দেয়া হচ্ছে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে আল্লাহর রহমত, দয়া ও করুণার বক্তব্য একাধিক বার এসেছে। ফলে পুরাে ঘটনাটিই আল্লাহর রহমত ও দয়ার মূর্ত প্রতীক রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথমেই এসেছে মুনাজাতের কথা, আল্লাহর কাছে যাকারিয়া(আ.)-এর সকাতর ও মিনিতিভরা দোয়ার কথা। সেই সকাতর আরযিতে তিনি স্বীয় প্রভূর উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘যখন সে একান্ত নীরবে… সন্তোষভাজন ব্যক্তি বানাও।'(আয়াত ৩-৬)। তিনি লােক চক্ষুর অন্তরালে, নির্জন ও নিভৃতে একাকী বসে বসে নিজের প্রভু ও মালিকের সামনে নিজের মনের আশা-আকাংখা ও দুঃখ বেদনা তুলে ধরছেন। নিজের প্রভু ও মালিককে সরাসরি ডাকছেন ‘প্রভুগাে’ নিজের এখানে অন্য কাউকে মাধ্যম করা হয়নি। এমন কি সম্বােধনের জন্যে সচরাচর যে ‘হে’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে এখানে সেটাও ব্যবহার করা হয়নি, অর্থাৎ ব্যক্তিগত, শব্দগত সকল প্রকার মাধ্যম ছাড়াই তিনি স্বীয় প্রভু আল্লাহ কে সরাসরি সম্বােধন করছেন যেন তিনি তার সামনেই বসে বসে দোয়া করছেন। এটা ঠিক যে, আল্লাহ তায়ালা দোয়া না করলেও শুনেন, কেউ তাঁকে না ডাকলেও দেখেন। কিন্তু বিপদগ্রস্ত বান্দা তার মনের দুঃখ প্রকাশ করতে চায়, তার মনের আবেগ-অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে চায়। তাই করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সে সুযােগ দিয়েছেন এবং অনুমতিও দিয়েছেন যেন সে তার মনের ব্যথা বেদনা ও যন্ত্রণার কথা তার দরবারে তুলে ধরে। এর মাধ্যমে তার যন্ত্রণা লাঘব হবে, ব্যথায় উপশম হবে, মন হাল্কা হবে। সাথে সাথে তার মনে এই প্রত্যয়ও জন্মাবে যে, সে এমন এক মহা শক্তিশালী প্রভুর দরবারে ফরিয়াদ জানিয়েছে, যিনি কাউকে হতাশ করেন না, নিরাশ করেন না, খালী হাতেও কাউকে ফিরিয়ে দেন না। যাকারিয়া(আ.) নিজের বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার কথা তার প্রভূকে অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ভাষায় জানাচ্ছেন। অস্থি মজ্জা দূর্বল হয়ে পড়েছে, চুলে পাক ধরেছে, শারীরিক ক্ষমতা লােপ পেয়েছে। এমতাবস্থায় একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনাে উপায় নেই, আর কোনা ভরসা নেই। তাই তিনি নিজের দুঃখ-দুর্দশা ও আশা-আকাংখা তার দরবারেই পেশ করছেন। মিনতি ভরা আরযি পেশ করার পর তিনি একটি কথা যােগ করে বলছেন, ‘আপনাকে ডেকে আমি কখনও বিফল মনােরথ হইনি’ এই বক্তব্য দ্বারা তিনি স্বীকার করছেন যে, স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তার দোয়া কবুল করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। কাজেই তিনি তার কাছে দোয়া করে কখনও বিফল হননি। অথচ তখন তিনি শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আর এখন তাে তিনি অক্ষম ও দুর্বল। এই চরম বার্ধক্যে তাে তিনি আরাে দয়া ও করুণার মুখাপেক্ষী। কাজেই আল্লাহ তায়ালা যে, তার ডাকে এখন আরাে বেশী করে সাড়া দেবেন তাতে কোনােই সন্দেহ নেই। নিজের অবস্থার বর্ণনা দেয়ার পর এবং নিজের মনের আশা-আকাংখা তুলে ধরার পর তিনি একটি আশংকার কথা আল্লাহকে জানাচ্ছেন। তার মৃত্যুর পর তার আত্মীয়স্বজনরা হয়তাে তার আদর্শ ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হবে। বনী ইসরাঈলের একজন নেতৃস্থানীয় নবী হিসেবে তার প্রতি অর্পিত মহান দায়িত্ব হচ্ছে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ। এ ছাড়া তিনি যাদের লালন-পালন ও ভরণ-পােষণের দায়িত্বে নিয়ােজিত ছিলেন তার এক জন ছিলেন মারইয়াম(আ.) যার দেখা শােনা তাকেই করতে হবে। অপরদিকে তিনি ধন সম্পদের মালিক ছিলেন, এসব ধন সম্পদ তিনি দেখা-শুনা করতেন এবং সঠিক রাস্তায় খরচ করতেন। এখন তিনি আশংকা করছেন যে, পরবর্তীতে যারা তার স্থলাভিষিক্ত হবে তারা হয়তাে এসকল দায়-দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করবে না, এমন কি হয়তাে তারা তার আদর্শ ও পথও অনুসরণ করবে না। এটা তিনি তাদের আচার আচরণ ও চলন বলন থেকেই জানতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি জানাচ্ছেন যে, তার স্ত্রী একজন বন্ধ্যা নারী, কাজেই তিনি এমন কোনাে পুত্র সন্তান লাভ করেননি যাকে প্রয়ােজনীয় শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে এই গুরু দায়িত্ব পালনের উপযুক্ত করে রেখে যেতে পারবেন। এ কারণেই তিনি আশংকা করছেন এবং ভয় পাচ্ছেন। ফলে তার একজন সুসন্তানের খুবই প্রয়ােজন যার পক্ষে তার রেখে যাওয়া গুরু দায় দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে এবং নিজের পিতা ও পিতামহদের নবুওতী দায়িত্বভার গ্রহণ করাও সম্ভব হবে। এই সুসন্তান কামনা করেই তিনি আরযি পেশ করছেন এই ভাষায়, ‘আমার (মৃত্যুর পর) আমি তাকে একজন সন্তোষভাজন ব্যক্তি বানাও'(আয়াত ৫-৬) তুমি এই চরম বার্ধক্যে তিনি যে সুসন্তানের জন্যে মিনতি জানাচ্ছেন তার একটি গুণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, ‘হে রব, তাকে তুমি রাযী খুশী থাকার (গুণ দিয়ে) সৃষ্টি করবে’ অর্থাৎ সে যেন অহংকারী না হয়, বদমেযাজী না হয়, দাম্ভিক না হয় এবং লােভী না হয়। কারণ যার মাঝে রাযি, খুশী ও সন্তুষ্ট থাকার গুণ পাওয়া যাবে, তার মাঝে কখনও এই দোষগুলা থাকতে পারে না । যাকারিয়া(আ.)-এর এই দোয়া ও মুনাজাত চলছিলাে গােপনে ও নীরবে। এই দোয়ার ভাষা ও বক্তব্য ছিলাে কোমল ও মিনতি ভরা। দোয়া এভাবেই করতে হয় এবং এ ভাবেই তা হওয়া উচিত।

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

নামকরণ:

এ সূরাতে ঈসা (عليه السلام)-এর মা মারইয়াম (عليه السلام) সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে বিধায় উক্ত নামে সূরার নাম রাখা হয়েছে।

এ সূরাটি সূরা ফাতির নাযিল হওয়ার পর অবতীর্ণ হয়। যখন বদর যুদ্ধ সংঘটিত হল এবং যুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নিহত হল তখন কুরাইশরা বলল: তোমাদের বিদ্রোহীরা হাবশায় রয়েছে। হাবশার বাদশা নাজ্জাশীর কাছে কিছু হাদিয়া পাঠাও এবং তোমাদের মধ্য হতে দু’জন জ্ঞানবান লোক প্রেরণ কর, হতে পারে বাদশা তাদেরকে তোমাদের হাতে তুলে দেবেন। ফলে নিয়ে এসে তাদেরকে হত্যা করার মাধ্যমে বদরের যুদ্ধে তোমাদের যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রতিশোধ নিতে পারবে। কুরাইশরা আমর বিন আস ও আব্দুল্লাহ বিন আবূ রবীয়াহকে প্রেরণ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের এ প্রতিনিধি প্রেরণের সংবাদ শুনলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমর বিন উমাইয়া আয-যামরীকে প্রেরণ করলেন এবং সাথে একটি চিঠি দিলেন। তিনি চিঠি নিয়ে নাজ্জাসীর কাছে আগমন করলেন। বাদশা তা পড়ল, অতঃপর বাদশা তখন জাফর বিন আবূ তালেব ও মুহাজিরদেরকে ডাকলেন এবং যারা পণ্ডিত ছিল তাদেরকে একত্রিত করলেন, তারপর বাদশা জাফরকে কুরআনের কিছু তেলাওয়া করতে বললেন। তখন জাফর অত্র সূরা তেলাওয়াত করলেন। কুরআন শুনে বাদশা ও পণ্ডিতদের চোখের অশ্র“ ঝরতেছিল। তাদের ব্যাপারেই নাযিল হয়েছে “অবশ্যই মু’মিনদের প্রতি শত্র“তায় মানুষের মধ্যে ইয়াহূদী ও মুশরিকদেরকেই তুমি সর্বাধিক উগ্র দেখবে এবং যারা বলে ‘আমরা খ্রিস্টান’ মানুষের মধ্যে তাদেরকেই তুমি মু’মিনদের নিকটতর বন্ধুত্বে দেখবে; কারণ তাদের মধ্যে অনেক পণ্ডিত ও সংসার-বিরাগী আছে, আর তারা অহঙ্কারও করে না।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৮২)

১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:

(كٓهٰيٰعٓصٓ) –

(কাফ-হা-ইয়া-‘আঈন-স্ব-দ) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর সঠিক ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা যাকারিয়া (عليه السلام) (যিনি মারইয়াম (عليه السلام) এর খালু) ও যাকারিয়া (عليه السلام) এর ছেলে ইয়াহইয়া (عليه السلام) সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।

যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (عليه السلام) হলেন সুলাইমান (عليه السلام) এর পরবর্তী দু’জন নাবী যারা পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। যাকারিয়া (عليه السلام) এর পরেই ইয়াহইয়া (عليه السلام) নুবওয়াত পান এবং তিনি ঈসা (عليه السلام) এর আপন খালাত ভাই। বয়সে ঈসা (عليه السلام) থেকে তিনি বড়, সে হিসেবে তিনি ঈসা (عليه السلام) এর পূর্বে নবুওয়াত পেয়েছিলেন। যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া (عليه السلام) সম্পর্কে সূরা আলি ইমরানের ৫টি আয়াতে, আন‘আমের ৮৫ নং আয়াতে ও সূরা আম্বিয়ার ৮৯-৯০ নং আয়াতের সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হয়েছে।

যাকারিয়া (عليه السلام) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণনা এসেছে যে, তিনি মারইয়াম (عليه السلام)-এর লালন-পালনকারী ছিলেন। এ সম্পর্কে সূরা আলি ইমরানের ৩৫-৪১ নং আয়াতের উল্লেখ রয়েছে। মারইয়াম (عليه السلام) মসজিদের সংলগ্ন মেহরাবে থাকতেন। যাকারিয়া (عليه السلام) তাকে নিয়মিত দেখাশুনা করতেন।

সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়া (عليه السلام)-এর দু‘আ:

মারইয়াম আলাইহাস সালাম-কে দেখাশুনা করতে গিয়ে যখনই মেহরাবে আসতেন তখনই সেখানে নতুন নতুন তাজা ফল-ফলাদি ও খাদ্য-খাবার দেখতে পেতেন। তিনি একদিন এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে মারইয়াম (عليه السلام) বললেন:

(ھُوَ مِنْ عِنْدِ اللہِﺚ اِنَّ اللہَ یَرْزُقُ مَنْ یَّشَا۬ئُ بِغَیْرِ حِسَابٍ)

“এসব আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয়ই আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অগণিত রিযিক দান করেন।” (সূরা আলি ইমরান ৩:৩৭)

সম্ভবত শিশু মারইয়ামের উপরোক্ত কথা থেকেই নিঃসন্তান বৃদ্ধ যাকারিয়ার মনের কোণে আশার সঞ্চার হয় এবং চিন্তা করেন যে, যিনি ফলের মৌসুম ছাড়াই মারইয়ামকে তাজা ফল সরবরাহ করতে পারেন তিনি অবশ্যই বৃদ্ধ দম্পতিকে সন্তান দিতে সক্ষম। তাই তিনি আশা নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে প্রার্থনা করলেন।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّه ج قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِنْ لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ج إِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَا۬ءِ )

“সেখানেই যাকারিয়া তার রবকে ডেকে বললেন: হে আমার রব! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পবিত্র সন্তান দান করুন। আপনি তো দু‘আ শ্রবণকারী।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:৩৮)

এ কথাটিই অত্র সূরার তৃতীয় আয়াত থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে।

যাকারিয়া (عليه السلام) আল্লাহ তা‘আলাকে গোপনে আহ্বান করলেন। কেননা গোপনে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন। এতে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা থাকে এবং সে ইবাদত কবূলের অধিক আশা করা যায়। সুতরাং উচ্চঃস্বরে হৈ-হুল্লোড় করে সমস্বরে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকা বা তাঁর যিকির করা উত্তম পন্থা নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

( اُدْعُوْا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَّخُفْيَةً ط إِنَّه لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ)‏

“তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৫)

যাকারিয়া (عليه السلام) প্রার্থনা শুরু করলেন এ কথা বলে, তিনি কখনো আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে ব্যর্থ হননি। তাই তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে একটি সন্তান প্রার্থনা করেন, যে তাঁর পরে তাঁর নবুওয়াতের উত্তরাধিকারী হবে। যদিও তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়ে গেছেন। তাঁর মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে এবং তাঁর স্ত্রী বন্ধ্যা। তারপরও তিনি সন্তান কামনা করেছেন। কারণ তিনি জানেন আল্লাহ তা‘আলা চাইলে এ অবস্থাতেও সন্তান দিতে পারেন। তিনি এ জন্য প্রার্থনা করলেন, কারণ তাঁর স্বজাতির মধ্যে আর কেউ নেই যে, তাঁর মৃত্যুর পর মানুষকে ওয়ায-নসীহত করবে। তাই তিনি একটি সন্তান প্রার্থনা করলেন, যে তাঁর এবং ইয়াকুব (عليه السلام)-এর নবুওয়াতের উত্তরাধিকারী হবে এবং লোকদেরকে ওয়ায-নসীহত শুনাবে। মূলত পৃথিবীতে আল্লাহ তা‘আলার বাণী প্রচার করার জন্যই তিনি এ প্রার্থনা করেছেন।

আয়াতে উল্লিখিত উত্তরাধিকারী হওয়া বলতে সম্পদের উত্তরাধিকার বুঝানো হয়নি বরং নবুওয়াতের উত্তরাধিকার বুঝানো হয়েছে। কারণ নাবীরা সম্পদের উত্তরাধিকার বানিয়ে যান না, তারা ইলম তথা নবুওয়াতের উত্তরাধিকার বানিয়ে যান। (আবূ দাঊদ হা: ৩৬৪৩)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কথা শ্রবণ করেন। যদিও তা গোপনে হয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা চাইলে মানুষকে বৃদ্ধাবস্থায়ও সন্তান দান করতে পারেন এবং বন্ধ্যা স্ত্রী থেকেও। তাই সন্তান চাওয়ার জন্য কোন মাযারে বা বাবার কাছে যেতে হবে না, যাকারিয়া (عليه السلام) যেমন দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছে চেয়েছিলেন তেমনিভাবে চাইতে হবে।
৩. আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাওয়ার অন্যতম একটি আদব হল প্রথমে তাঁর প্রশংসা করা এবং তাঁর কাছে বিনয়ী হওয়া তারপর চাওয়া।
৪. আলেমগণ নাবীদের উত্তরাধিকারী, আর সে উত্তরাধিকার হল নবুওয়াতী জ্ঞানের, সম্পদের নয়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
এই সূরার প্রারম্ভিক আয়াতগুলি হযরত জাফর ইবুন আবি তালিব (রাঃ) আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী ও তার সভাসদ বর্গের সামনে পাঠ করেছিলেন। (এটা ‘মুসনাদে আহমাদ ও ‘সীরাতে মুহাম্মদ ইবনু ইসহাক’ গ্রন্থে উল্লিখিত আছে)

১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:

এই সূরার প্রারম্ভে যে পাঁচটি অক্ষর রয়েছে এ গুলিকে ‘হুরূফে মুকাত্তাআহ’ বলা হয়। সূরায়ে বাকারার তাফসীরের প্রারম্ভে আমরা এগুলি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছি। আল্লাহ তাআলার বান্দা ও নবী যাকারিয়ার (আঃ) প্রতি তাঁর যে দয়া ও অনুগ্রহ নাযিল হয় তারই বর্ণনা এখানে দেয়া হচ্ছে। (আরবী) শব্দটি এক কিরআতে (আরবী) রয়েছে। (আরবী) শব্দটির উভয় কিরআতই মশহুর বা প্রসিদ্ধ। তিনি বাণী ইসরাঈলের এক অতি খ্যাতি সম্পন্ন নবী ছিলেন। সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, তিনি ছুতার ছিলেন এবং এ কাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনি স্বীয় প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করতেন। কিন্তু তাঁর এই প্রার্থনা ছিল লোকদের কাছে স্বাভাবিক এবং তাদের মনে খেয়াল জাগতে পারে যে, বুড়ো বয়সে তাঁর সন্তান লাভের চাহিদা হয়েছে, তাই তিনি নিভৃতে মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন। তাঁর নিভৃতে ও নির্জনে প্রার্থনা করার আর একটি কারণ এই যে, নির্জনে ও নিভৃতে প্রার্থনা আল্লাহ তাআলার নিকট খুবই প্রিয়। এ প্রার্থনা তাড়াতাড়ি কবুল হয়ে থাকে। খোদাভীরু অন্তরকে আল্লাহ তাআলা খুব ভালরূপই জানেন। ধীরে ধীরে ও চুপি চুপি কথা বললেও তিনি পূর্ণরূপে শুনতে পান। পূর্ব যুগীয় কোন কোন গুরুজন বলেছেন যে, তিনি রাত্রে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করতেন যখন তার পরিবার পরিজন ও সঙ্গী সাথীরা ঘুমিয়ে থাকতেন। অতঃপর তিনি চুপি চুপি বলতেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! হে আমার পালন কর্তা!’ তখন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ আমি তোমার সামনে হাজির আছি, তোমার সামনে আমি বিদ্যমান রয়েছি, তোমার সম্মুখে আমি উপস্থিত রয়েছি। হযরত যাকারিয়া (আঃ) প্রার্থনায় বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মাথার চুল পেকে সাদা হয়েছে। এর দ্বারা তিনি দুর্বলতা ও বার্ধক্যকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিন সমস্ত শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। ভিতরের ও বাইরের দুর্বলতা আমাকে পরিবেষ্টন করে ফেলেছে।

তিনি আরো বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে প্রার্থনা করে আমি তো কখনো ব্যর্থ মনোরথ হই নাই এবং আপনার দরবার হতে কখনো শূন্য হস্তে ফিরে যাই নাই। বরং যখনই যা কিছু চেয়েছি তাই আপনি আমাকে দান করেছেন।”

কাসাঈ (রঃ) শব্দটিকে (আরবী) পড়েছেন অর্থাৎ (আরবী) অক্ষরে সাকিন বা জযম দিয়ে পড়েছেন। এর দ্বারা কে বুঝানো হয়েছে। (ফারায়েযের পরিভাষায় আল্লাহর কিতাবে যাদের অংশ নির্ধারিত রয়েছে ঐ সব ওয়ারিসকে আসহাবে ফুরূষ বলা হয়। এই অসহাবে ফুরূযকে অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ যে ওয়ারিছরা পেয়ে থাকে তাদেরকে আসাবা বলা হয়)

বর্ণিত আছে যে, হযরত উছমনি (রাঃ) (আরবী) কে (আরবী) পড়েছেন। অর্থাৎ আমার পরে আমার নিজস্ব লোক খুবই কম থাকবে। প্রথম কিরআতে অর্থ হবে “আমার সন্তানাদি নেই বলে আমার আত্মীয় স্বজন যারা রয়েছে তাদের ব্যাপারে আমি আশংকা করছি যে, না জানি আমার পরে তারা আমার মীরাছের সাথে অন্যায় আচরণ করবে। সুতরাং হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সন্তান দান করুন, যে আমার পরে আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করবে।”

এটা মনে করা কখনো উচিত নয় যে, হযরত যাকারিয়ার (আঃ) মাল-ধন এদিক ওদিক হয়ে যাওয়ার আশংকা ছিল। কেননা, নবীগণ (আঃ) এর থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। তাঁরা যে এই উদ্দেশ্যে সন্তান লাভের প্রার্থনা জানাবেন যে, সন্তান না থাকলে তার মীরাছ বা উত্তরাধিকার দূরের আত্মীয়দের মধ্যে চলে যাবে, এটা হতে তাদের মর্যাদা বহু উর্ধ্বে। দ্বিতীয়তঃ এটাও প্রকাশমান যে, হযরত যাকারিয়া (আঃ) সারাজীবন ধরে ছুতারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন, এমতাবস্থায় তাঁর কাছে কি এমন সম্পদ থাকতে পারে যার জন্য তিনি এতো ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বেন যে, ঐ সম্পদ তার হাত ছাড়া হয়ে যাবে? নবীগণ তো এমনিতেই সারা দুনিয়া হতে, অধিক মাল হতে বহু দূরে সরে থাকেন। দুনিয়ার প্রতি তাদের তো কোন আকর্ষণই থাকে না। তৃতীয় কারণ এটাও যে, কয়েকটি সনদে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা নবীদের দল ওয়ারিছ বানাই না। আমরা যা কিছু ছেড়ে যাই সবই সাদকারূপে পরিগণিত হয়।” জামে তিরমিযীতেও সহীহ সনদে এ হাদীস রয়েছে। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, হযরত যাকারিয়া যে আল্লাহ তাআলার নিকট পুত্রের জন্যে প্রার্থনা করেছিলেন যে, তিনি তার ওয়ারিছ হবেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য নবুওয়াতের

ওয়ারিছ, মাল-ধনের ওয়ারিছ নয়। এ জন্যে তিনি বলেছিলেনঃ “সে আমার ওয়ারিছ হবে ও আলে ইয়াকুবের (আঃ) ওয়ারিছ হবে।”যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সুলাইমান (আঃ) দাউদের (আঃ) ওয়ারিছ হলেন। (২৭:১৬) অর্থাৎ নবুওয়াতের ওয়ারিছ হলেন, ধন-মালের ওয়ারিছ নয়। অন্যথায় মালে তো অন্য ছেলেরাও ওয়ারিছ হয়। কাজেই মালে বিশেষত্ব বুঝায় না। চতুর্থ কারণ এটাও যে, ছেলে ওয়ারিছ হওয়া তো সাধারণ কথা। এটা সবারই মধ্যে এবং সমস্ত মাযহাবে আছে। সুতরাং এটার কোন প্রয়োজন ছিল না যে, হযরত যাকারিয়া (রাঃ) নিজের প্রার্থনার এই কারণ বর্ণনা করবেন। এর দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, ঐ উত্তরাধিকার একটা বিশেষ উত্তরাধিকার ছিল এবং সেটাও হলো নবুওয়াতের উত্তরাধিকার। যেমন হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাকারূপে পরিগণিত।” মুজাহিদ (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ইলমের উত্তরাধিকার। হযরত যাকারিয়া (আঃ) হযরত ইয়াকূবের (আঃ) সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আবু সালেহ (রঃ) বলেন যে, উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ তিনিও তার বড়দের মত নবী হবেন। হাসান (রঃ) বলেন যে, নুবওয়াত ও ইলমের ওয়ারিছ হবেন। সুদ্দীর (রঃ) উক্তি এই যে, হযরত যাকারিয়ার (আঃ) উদ্দেশ্য ছিলঃ আমার ঐ সন্তান আমার ও আলে ইয়াকূবের (আঃ) ওয়ারিছ হবে।

মুসনাদে আবদির রাষ্যকে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত যাকারিয়ার (আঃ) উপর দয়া করুন! তার মালের ওয়ারিছের কি প্রয়োজন ছিল? আল্লাহ লুতের (আঃ) উপর রহম করুন! তিনি সুদৃঢ় দুর্গের আকাংখা করে ছিলেন। তাফসীরে ইবনু জারীরে রয়েছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা আমার ভাই যাকারিয়ার (আঃ) উপর রহম করুন! তিনি প্রার্থনা করেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনার নিকট হতে একজন ওয়ালী দান করুন, যে আমার ও আলে ইয়াকুবের ওয়ারিছ হবে।” (কিন্তু এই সব হাদীসই মুরসাল। সাহাবী (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেন নাই, তাবেয়ী বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এগুলো বিশুদ্ধ হাদীস সমূহের সমকক্ষতা লাভ করতে রাখে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন) তিনি আরো বলেনঃ “হে আল্লাহ! তাকে পছন্দনীয় গোলাম বানিয়ে দিন এবং এমন দ্বীনদার ও দিয়ানতদার বানিয়ে দিন যে, যেন আপনার মুহাব্বাত ছাড়াও সমস্ত সৃষ্টজীব তাকে মুহাব্বাত করে। সবাই যেন তার ধর্ম ও চরিত্রকে পছন্দনীয় ও প্রেম প্রীতির দৃষ্টিতে দেখে।”

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#895)
Sura:19
Sura: Maryam.
Ayat: 01-06
[ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا

And make him, my Lord, one with whom You are well-pleased!]
www.motaher21.net
19:1

کٓہٰیٰعٓصٓ ۟﴿ۚ۱﴾

Kaf, Ha, Ya, ‘Ayn, Sad.

 

Tafsir Ibne Kasir Said:-

The Story of Zakariyya and His Supplication for a Son

Allah says:

كهيعص

Kaf Ha Ya `Ain Sad.

The discussion about the separate letters has already preceded at the beginning of Surah Al-Baqarah.

Concerning Allah’s statement,

ذِكْرُ رَحْمَةِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا

19:2

ذِکۡرُ رَحۡمَتِ رَبِّکَ عَبۡدَہٗ زَکَرِیَّا ۖ﴿ۚ۲﴾

[This is] a mention of the mercy of your Lord to His servant Zechariah

 

A reminder of the mercy of your Lord to His servant Zakariyya.

This means that this is a reminder of Allah’s mercy upon His servant Zakariyya.

Yahya bin Ya`mar recited it, (
ذَكَّرَ رَحْمَةِ رَبكَ عَبْدَه زكريا
)

“He has reminded of your Lord’s mercy to His servant Zakariyya.”

The word Zakariyya in the Ayah has been recited with elongation and also shortened. Both recitations are well-known. He was a great Prophet from the Prophets of the Children of Israel. In Sahih Al-Bukhari, it is recorded (that the Prophet said about Zakariyya) that He was a carpenter who used to eat from what he earned with his own hand through carpentry.

Concerning Allah’s statement,

إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاء خَفِيًّا

19:3

اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗ نِدَآءً خَفِیًّا ﴿۳﴾

When he called to his Lord a private supplication.

 

When he called his Lord (with) a call in secret.

He only made his supplication secretly because it is more beloved to Allah.

This is similar to what Qatadah said concerning this Ayah,
إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاء خَفِيًّا
(When he called out his Lord (with) a call in secret),

“Verily, Allah knows the pious heart and he hears the hidden voice.
19:4

قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ وَہَنَ الۡعَظۡمُ مِنِّیۡ وَ اشۡتَعَلَ الرَّاۡسُ شَیۡبًا وَّ لَمۡ اَکُنۡۢ بِدُعَآئِکَ رَبِّ شَقِیًّا ﴿۴﴾

He said, “My Lord, indeed my bones have weakened, and my head has filled with white, and never have I been in my supplication to You, my Lord, unhappy.

 

قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي

He said:”My Lord! Indeed my bones have grown feeble…”

meaning, “I have become weak and feeble in strength.”

وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْبًا

and gray hair has Ashta`al on my head,

means the gray hair has burned into the black hair. The intent is to inform of weakness and old age, and its external and internal traces.

Concerning Allah’s statement,

وَلَمْ أَكُن بِدُعَايِكَ رَبِّ شَقِيًّا

and I have never been unblessed in my invocation to You, O my Lord!

This means, “I have not experienced from You except that You would respond to my supplication and that You would never refuse me in whatever I ask of You.”

Concerning His statement
19:5

وَ اِنِّیۡ خِفۡتُ الۡمَوَالِیَ مِنۡ وَّرَآءِیۡ وَ کَانَتِ امۡرَاَتِیۡ عَاقِرًا فَہَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ وَلِیًّا ۙ﴿۵﴾

And indeed, I fear the successors after me, and my wife has been barren, so give me from Yourself an heir

 

وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِن وَرَايِي

And verily, I fear Mawali after me,

Mujahid, Qatadah and As-Suddi, all said,

“In saying the word Mawali, he (Zakariyya) meant his succeeding relatives.”

وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا

فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا

19:6

یَّرِثُنِیۡ وَ یَرِثُ مِنۡ اٰلِ یَعۡقُوۡبَ ٭ۖ وَ اجۡعَلۡہُ رَبِّ رَضِیًّا ﴿۶﴾

Who will inherit me and inherit from the family of Jacob. And make him, my Lord, pleasing [to You].”

 

يَرِثُنِي

and my wife is barren. So give me from Yourself an heir. Who shall inherit me,

The reason for his fear was that he was afraid that the generation that would succeed him would be a wicked generation. Thus, he asked Allah for a son who would be a Prophet after him, who would guide them with his Prophethood and that which was revealed to him.

In response to this I would like to point out that;

he was not afraid of them inheriting his wealth. For a Prophet is too great in status, and too lofty in esteem to become remorseful over his wealth in this fashion. A Prophet would not disdain to leave his wealth to his successive relatives, and thus ask to have a son who would receive his inheritance instead of them. This is one angle of argument.

The second argument is that Allah did not mention that he (Zakariyya) was wealthy. On the contrary, he was a carpenter who ate from the earnings of his own hand. This type of person usually does not have a mass of wealth. Amassing wealth is not something normal for Prophets, for verily, they are the most abstentious in matters of this worldly life.

The third argument is that it is confirmed in the Two Sahihs, in more than one narration, that the Messenger of Allah said,

لَاا نُورَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَة

We (the Prophets) do not leave behind inheritance (of wealth). Whatever we leave behind, then it is charity.

In a narration recorded by At-Tirmidhi with an authentic chain of narrations, he said,

نَحْنُ مَعْشَرَ الاَْنْبِيَاءِ لَا نُورَث

We, Prophets do not leave behind inheritance (of wealth).

Therefore, the meaning in these Hadiths restricts the meaning of Zakariyya’s statement,
فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا
(So give me from yourself an heir. Who shall inherit me,

inheritance of Prophethood.

For this reason Allah said,

وَيَرِثُ مِنْ الِ يَعْقُوبَ

and inherit (also) the posterity of Yaqub.

This is similar to Allah’s statement,

وَوَرِثَ سُلَيْمَـنُ دَاوُودَ

And Suleiman inherited from Dawud. (27:16)

This means that he inherited Prophethood from him. If this had meant wealth, he would not have been singled with it among his other brothers. There also would have been no important benefit in mentioning it if it was referring to wealth. It is already well-known and established in all of the previous laws and divinely revealed creeds, that the son inherits the wealth of his father. Therefore, if this was not referring to a specific type of inheritance, then Allah would not have mentioned it.

All of this is supported and affirmed by what is in the authentic Hadith:

نَحْنُ مَعَاشِرَ الاَْنْبِيَاءِ لَا نُورَثُ مَا تَرَكْنَا فَهُوَ صَدَقَة

We Prophets do not leave behind any inheritance (of wealth). Whatever we leave behind, then it is charity.

Mujahid said concerning his statement,
يَرِثُنِي

وَيَرِثُ مِنْ الِ يَعْقُوبَ
(Who shall inherit me, and inherit (also) the posterity of Yaqub).

“His inheritance was knowledge, and Zakariyya was one of the descendants of Yaqub.”

Hushaym said, that Ismail bin Abi Khalid informed us that Abu Salih commented about the Ayah:
يَرِثُنِي

وَيَرِثُ مِنْ الِ يَعْقُوبَ
(who shall inherit me, and inherit (also) the posterity of Yaqub),

“He would be a Prophet like his forefathers were Prophets.”

Allah’s statement,

وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا

and make him, my Lord, one with whom You are well-pleased!

means “Make him pleasing to You (Allah) and your creation. Love him and make him beloved to your creatures, in both his religion and his character.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply