(বই#৮৯৩) সূরা:- আল-কাহাফা। সুরা:১৮ ৯৯-১০৬ নং আয়াত:- [ وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৮৯৩)
সূরা:- আল-কাহাফা।
সুরা:১৮
৯৯-১০৬ নং আয়াত:-

[ وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করছে।]
www.motaher21.net

সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-৯৯

وَ تَرَكْنَا بَعْضَهُمْ یَوْمَئِذٍ یَّمُوْجُ فِیْ بَعْضٍ وَّ نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَجَمَعْنٰهُمْ جَمْعًاۙ

আর সে দিন আমি লোকদেরকে ছেড়ে দেবো, তারা (সাগর তরংগের মতো) পরস্পরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে আর শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে এবং আমি সব মানুষকে একত্র করবো।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-১০০

وَّ عَرَضْنَا جَهَنَّمَ یَوْمَئِذٍ لِّلْكٰفِرِیْنَ عَرْضَاۙ

আর সেদিন আমি জাহান্নামকে সেই কাফেরদের সামনে আনবো,
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-101

اِ۟لَّذِیْنَ كَانَتْ اَعْیُنُهُمْ فِیْ غِطَآءٍ عَنْ ذِكْرِیْ وَ كَانُوْا لَا یَسْتَطِیْعُوْنَ سَمْعًا۠

যারা আমার উপদেশের ব্যাপারে অন্ধ হয়েছিল এবং কিছু শুনতে প্রস্তুতই ছিল না।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-102

اَفَحَسِبَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْۤا اَنْ یَّتَّخِذُوْا عِبَادِیْ مِنْ دُوْنِیْۤ اَوْلِیَآءَ١ؕ اِنَّاۤ اَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكٰفِرِیْنَ نُزُلًا

তাহলে কি যারা কুফরী অবলম্বন করেছে তারা একথা মনে করে যে, আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দাদেরকে নিজেদের কর্ম সম্পাদনকারী হিসেবে গ্রহণ করে নেবে? এ ধরনের কাফেরদের আপ্যায়নের জন্য আমি জাহান্নাম তৈরি করে রেখেছি।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-103

قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِیْنَ اَعْمَالًاؕ

হে মুহাম্মাদ! এদেরকে বলো, আমি কি তোমাদের বলবো নিজেদের কর্মের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত কারা?

সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-104

اَلَّذِیْنَ ضَلَّ سَعْیُهُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ هُمْ یَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ یُحْسِنُوْنَ صُنْعًا

তারাই, যাদের দুনিয়ার জীবনের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম সবসময় সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত থাকতো এবং যারা মনে করতো যে, তারা সবকিছু সঠিক করে যাচ্ছে।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-105

اُولٰٓئِكَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا بِاٰیٰتِ رَبِّهِمْ وَ لِقَآئِهٖ فَحَبِطَتْ اَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِیْمُ لَهُمْ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ وَزْنًا

এরা এমন সব লোক যারা নিজেদের রবের নিদর্শনাবলী মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এবং তাঁর সামনে হাযির হবার ব্যাপারটি বিশ্বাস করেনি। তাই তাদের সমস্ত কর্ম নষ্ট হয়ে গেছে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কোন গুরুত্ব দেবো না।
সুরা: আল-কাহাফ
আয়াত নং :-106

ذٰلِكَ جَزَآؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوْا وَ اتَّخَذُوْۤا اٰیٰتِیْ وَ رُسُلِیْ هُزُوًا

যে কুফরী তারা করেছে তার প্রতিফল স্বরূপ এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলদের সাথে যে বিদ্রূপ তারা করতো তার প্রতিফল হিসেবে তাদের প্রতিদান জাহান্নাম।

৯৯-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# কিয়ামতের দিন। কিয়ামতের সত্য প্রতিশ্রুতির প্রতি যুলকারনাইন যে ইঙ্গিত করেছিলেন তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার কথাটি বাড়িয়ে এখানে এ বাক্যাংশটি বলা হচ্ছে।

#এ হচ্ছে সমস্ত সূরাটার শেষ কথা। তাই যুলকরনাইনের ঘটনার সাথে নয় বরং সূরার সামগ্রিক বিষয়বস্তুর সাথে এর সম্পর্ক সন্ধান করা উচিত। সূরার সামগ্রিক বিষয়বস্তু হচ্ছে, নবী ﷺ নিজের জাতিকে শিরক ত্যাগ করে তাওহীদ বিশ্বাস অবলম্বন করার এবং বৈষয়িক স্বার্থপূজা ত্যাগ করে আখেরাতে বিশ্বাস করার দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু জাতির প্রধান সমাজপতি ও সরদাররা নিজেদের সম্পদ ও পরাক্রমের নেশায় মত্ত হয়ে কেবল তাঁর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত থাকেনি বরং যে গুটিকয় সত্যাশ্রয়ী মানুষ এ দাওয়াত গ্রহণ করেছিলেন তাদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালাচ্ছিল এবং তাদেরকে অপদস্থ ও হেয় প্রতিপন্ন করছিল। এ অবস্থার ওপর এ সমগ্র ভাষণটি দেয়া হয়েছে। ভাষণটি শুরু থেকে এ পর্যন্ত চলে এসেছে এবং এর মধ্যেই বিরোধীরা পরীক্ষা করার জন্য যে তিনটি কাহিনীর কথা জিজ্ঞেস করেছিল সেগুলোও একের পর এক ঠিক জায়গা মতো নিখুঁতভাবে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ভাষণ শেষ করতে গিয়ে কথার মোড় আবার প্রথমে যেখান থেকে বক্তব্য শুরু করা হয়েছিল এবং ৪ থেকে ৮ রুকূ’ পর্যন্ত যে বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করা হয়েছে সেদিকেই ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

# এসব কিছু শোনার পরও কি তারা মনে করে যে, এই নীতি তাদের জন্য লাভজনক হবে?

# এ আয়াতের দু’টি অর্থ হতে পারে। অনুবাদে আমি একটি অর্থ গ্রহণ করেছি। এর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, “যাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ও সাধনা দুনিয়ার জীবনের মধ্যেই হারিয়ে গেছে।” অর্থাৎ তারা যা কিছু করেছে আল্লাহর প্রতি সম্পর্কহীন হয়ে ও আখেরাতের চিন্তা না করেই শুধুমাত্র দুনিয়ার জন্যই করেছে। দুনিয়ার জীবনকেই তারা আসল জীবন মনে করেছে। দুনিয়ার সাফল্য ও সচ্ছলতাকেই নিজেদের উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে। আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও তাঁর সন্তুষ্টি কিসে এবং তাঁর সামনে গিয়ে আমাদের কখনো নিজেদের কাজের হিসেব দিতে হবে, এ কথা কখনো চিন্তা করেনি। তারা নিজেদেরকে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বহীন বুদ্ধিমান জীব মনে করতো, যার কাজ দুনিয়ার এ চারণ ক্ষেত্র থেকে কিছু লাভ হাতিয়ে নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

# এ ধরনের লোকেরা দুনিয়ায় যতই বড় বড় কৃতিত্ব দেখাক না কেন, দুনিয়া শেষ হবার সাথে সাথে সেগুলোও শেষ হয়ে যাবে। নিজেদের সুরম্য অট্টালিকা ও প্রাসাদ, নিজেদের বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও সুবিশাল লাইব্রেরী, নিজেদের সুবিস্তৃত রাজপথ ও রেলগাড়ী, নিজেদের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনসমূহ, নিজেদের শিল্প ও কলকারখানা, নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও আর্ট গ্যালারী এবং আরো অন্যান্য যেসব জিনিস নিয়ে তারা গর্ভ করে তার মধ্য থেকে কোন জিনিসও তারা আল্লাহর তুলাদণ্ডে ওজন করার জন্য নিজেদের সাথে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাযির হতে পারবে না। সেখানে থাকবে শুধুমাত্র কর্মের উদ্দেশ্য এবং তার ফলাফল। যদি কারোর সমস্ত কাজের উদ্দেশ্য দুনিয়ার জীবন পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থেকে থাকে, ফলাফলও সে দুনিয়াতেই চেয়ে থাকে এবং দুনিয়ায় নিজের কাজের ফল দেখেও থাকে, তাহলে তার সমস্ত কার্যকলাপ এ ধ্বংসশীল দুনিয়ার সাথেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আখেরাতে যা পেশ করে সে কিছু ওজন পেতে পারে, তা অবশ্যি এমন কোন কর্মকাণ্ড হতে হবে, যা সে আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার জন্য করেছে, তাঁর হুকুম মোতাবেক করেছে এবং যেসব ফলাফল আখেরাতে প্রকাশিত হয় সেগুলোকে উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করে করেছে। এ ধরনের কোন কাজ যদি তার হিসেবের খাতায় না থাকে তাহলে দুনিয়ায় সে যা করেছিল সবই নিঃসন্দেহে বৃথা যাবে।

ফী ‌‌ জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

৯৯-১০১ আয়াতে আমরা জুলকারনাইনের বক্তব্যে কেয়ামতের কয়েকটি চিত্র পাই। আলােচ্য আয়াতে বর্ণিত চিত্রটিতে আমরা এমন একটি চলমান মানব সমাজকে দেখতে পাই যারা বিভিন্ন বর্ণের, বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রজন্মের, বিভিন্ন সময়ের ও বিভিন্ন যুগের। তাদেরকে কবর থেকে উঠিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে রাখা হয়েছে। তাদের মাঝে কোনাে শৃংখলা নেই, তারা পরস্পরের মাঝে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঢেউয়ের ন্যায় তারা পরস্পরের ওপর আছাড় খেয়ে পড়ছে। কারও কোনাে দিকের খেয়াল নেই। এক চরম অরাজকতাপূর্ণ পরিস্থিতি তাদের মাঝে বিরাজ করছে। এরপরই সুশৃংখল হওয়ার জন্যে শিংগারে ফুৎকার দেয়া হবে। তখন তারা সবাই সুশৃংখল হয়ে দাঁড়াবে। আয়াত নং ৯৯ এর ওয়ানুফিখা থেকে আয়াতের শেষ পর্যন্ত এ কথাই বলা হয়েছে। তখন অবিশ্বাসী ও খােদাদ্রোহী লােকেরা অনুভব করবে যেন তাদের চোখের ওপর পর্দা রাখা হয়েছে এবং তাদের শ্রবণ শক্তি লােপ পেয়েছে। তাদের সামনে জাহান্নাম এনে রাখা হবে। কিন্তু তারা এই জাহান্নাম থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না যেমনটি তারা পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে করতাে। হঠাৎ করে যখন তাদের চোখের সামনে থেকে পর্দা উঠিয়ে নেয়া হবে তখন তারা তাদের কৃতকর্মের যথার্থ ও উপযুক্ত শাস্তি স্বচক্ষে দেখতে পাবে। দ্বীনকে বর্জন করার শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামকে বরণ করে নেয়ার চিত্রটি পবিত্র কোরআনের নিজস্ব ও ব্যতিক্রমধর্মী শৈল্পিক বর্ণনা ভংগিতে অত্যন্ত চমৎকারভাবে চিত্রায়িত হয়েছে। এরপর ওদের এই করুণ পরিণতির বিষয়টি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ ও ব্যাংগাত্তক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে, ‘ওরা কি ভেবেছিলো যে, আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁরই নির্দেশের দাস কিছু সংখ্যক মাখলুক আল্লাহর বিরুদ্ধে ওদেরকে সাহায্য করবে, ওদেরকে তার কবল থেকে রক্ষা করবে। যদি তাই মনে করে থাকে তাহলে এই ভ্রান্ত ধারণার শাস্তি আভা ওরা নিজেরাই দেখে নিক। আমি ওদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত রেখেছি। ওরা আসুক! ওদের অভ্যর্থনার জন্যে স্বয়ং জাহান্নামই প্রস্তুত রয়েছে। এখানে প্রবেশ করতে ওদের কোনাে বেগ পােহাতে হবে না, কোনাে কষ্ট করতে হবে না ।

*যাদের সকল আমল মূল্যহীন : আলােচ্য সূরাটি শেষ করার আগে এখানে কয়েকটি নিগুঢ় তত্ত্বের প্রতি আমি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রথম তত্ত্বটি হচ্ছে মানদন্ড ও মূল্যবােধ সম্পর্কিত। বিশেষ করে কর্ম ও ব্যক্তির মূল্য নির্ধারণের মানদন্ড। কারণ, এ সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত মতবাদ রয়েছে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় কর্ম ও ব্যক্তির মূল্যায়ন এভাবে এসেছে। (আয়াত ১০৩ ও ১০৪) অর্থাৎ তারাই ব্যর্থ, তারাই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত, জাগতিক জীবনের সকল সাধনাই যাদের ব্যর্থ। কারণ, তাদের সাধনা তাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারেনি, তাদেরকে কোনাে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে পৌছাতে পারেনি। এই সাধনা তাদের জন্যে কোনাে ফলাফল বয়ে আনেনি। তা সত্তেও তারা মনে করে যে, তারা যা করছে তা ঠিকই করছে। কারণ, তারা গাফলতি ও অজ্ঞতার মাঝে ডুবে আছে। তাদের হিতাহিত জ্ঞান লােপ পেয়েছে। ফলে তারা বুঝতেই পারছে না যে, তাদের সকল চেষ্টা সাধনা বৃথা ও ফলাফল শূন্য। এই ব্যর্থ ও ভ্রান্ত সাধনার পেছনেই নিজেদের জীবন যৌবন নষ্ট করে চলছে। এরা কারা? এদের পরিচয়টা আমি কি তােমাদেরকে জানিয়ে দিব? তাহলে শােনাে! এরা হচ্ছে তারা যারা নিজেদের পালনকর্তার কোনাে আয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং তার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে। ফলে তাদের সব আমল বিনষ্ট হয়ে গেছে। এ প্রসংগটিই নিচের আয়াতে বলা হয়েছে, (আয়াত ১০৫) আল হুবুত শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে বিষাক্ত ঘাস খাওয়ার ফলে পশুর পেট ফেঁপে যাওয়া। যার ফলে পশুটি মারা যায়। এই শব্দটি দ্বারা আমল বিনষ্ট হওয়ার অর্থটি যথার্থ রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কারণ, ভ্রান্ত পথের পথিক আর খােদাদ্রোহী লােকদের কাজগুলাে ফুলে ফেপে যখন তাদের সামনে প্রকাশ পায় তখন তারা এগুলােকে সঠিক, সার্থক এবং ফলপ্রসূ মনে করে। কিন্তু পরিণামে এগুলাে ব্যর্থ ও ভ্রান্ত বলেই প্রমাণিত হয়। ফলে আল্লাহর কাছে এগুলাের কানাকড়িও মূল্য হয় না। কেয়ামতের দিন ভাল মন্দের চূড়ান্ত মানদন্ডে এগুলাের কোনাে স্থান নেই, কোনাে মূল্য নেই। তাই এ সবের কর্তাদের পরিণতি জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই হবে না।

 

তাফসীরে‌ হাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

১০০-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর:

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করবেন উক্ত আয়াতগুলোতে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। কিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করার পূর্বেই জাহান্নামকে কাফির-মুশরিকদের সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا عَلَي النَّارِ)

“তারপর যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের সামনে নিয়ে দাঁড় করানো হবে।” (সূরা আহকাফ ৪৬: ২০)

কারণ দুনিয়াতে তাদের চোখ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তা‘আলার যিকির তথা কুরআন থেকে আচ্ছাদিত ছিল। কুরআনের দিকে দৃষ্টিপাত করেনি। যা মন চেয়েছে তাই করেছে, কোন কিছুর ধার ধারেনি। ঈমানের পথ দেখায়, সংশোধন হওয়ার দিকে আহ্বান করে এমন কোন কথাও তারা শোনেনি। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের শাস্তি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يُضٰعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُ ط مَا كَانُوْا يَسْتَطِيْعُوْنَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوْا يُبْصِرُوْنَ)‏

“তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে; তাদের শোনার সামর্থ্যও ছিল না এবং তারা দেখতেও পেত না।” (সূরা হূদ ১১:২০)

বরং উল্টো সর্বদা তারা খারাপ কাজে লিপ্ত ছিল। ইসলাম বিদ্বেষী ছিল, আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের নাম শুনতে পারত না।

حَسِبَ অর্থ ধারণা করা, অর্থাৎ যে সকল কাফিররা আমাকে বাদ দিয়ে আমার বান্দা তথা ফেরেশতা, ঈসা, উজাইর ও অন্যান্য ওলী-আওলিয়া যাদেরকে বিপদ থেকে মুক্তিদানকারী ও কল্যাণ আনয়ণকারী, আল্লাহ তা‘আলার কাছে পৌঁছার মাধ্যম, আখিরাতে তাদের জন্য সুপারিশকারী মনে করে ইবাদত করে থাকে তারা কি ভেবেছে তাদের ঐ সকল অভিভাবকরা তাদের উপকার করতে পারবে? কক্ষনো নয়, তাদের এ সকল ধারণা ভুল। বরং তারা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে এবং তাদের শত্র“ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوْا لَهُمْ أَعْدَا۬ءً وَّكَانُوْا بِعِبَادَتِهِمْ كٰفِرِيْنَ)‏

“(হাশরের ময়দানে) যখন সব মানুষকে একত্রিত করা হবে তখন তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের দুশমন হয়ে যাবে এবং তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে।” (সূরা আহকাফ ৪৬:৬)

سَعي অর্থ: প্রচেষ্টা করা, ضَلَّ অর্থ: নষ্ট হয়ে যাওয়া। কুরআনে ضَلَّ শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে এটি একটি। (আযওয়াউল বায়ান) অর্থাৎ তারা দুনিয়াতে এমন আমল করার প্রচেষ্টা করেছে যা আল্লাহ তা‘আলার কাছে অপছন্দনীয়। ফলে তার প্রতিদান নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তারা মনে করত যে, আমরা খুব ভাল আমল করছি। এরাই হবে আমলের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ সকল আমল ওজনও করবেন না। বরং তা উড়িয়ে দেবেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَدِمْنَآ إِلٰي مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنٰهُ هَبَا۬ءً مَّنْثُوْرًا)‏

“আমি তাদের কৃতকর্মের দিকে অগ্রসর হব, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।” (সূরা ফুরকান ২৫:২৩)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(مَثَلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا بِرَبِّهِمْ أَعْمَالُهُمْ كَرَمَادِ نِاشْتَدَّتْ بِهِ الرِّيْحُ فِيْ يَوْمٍ عَاصِفٍ)

“যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের উপমা হচ্ছে তাদের কর্মসমূহ ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনের বাতাস প্রচণ্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:১৮)

মুসআব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম

(اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا)

আয়াতে যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা হল “হারুরা” গ্রামের বাসীন্দা। তিনি বলেন: না, তারা হচ্ছে ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান। কেননা, ইয়াহূদীরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল এবং খ্রিস্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করত এবং বলত সেখানে কোন খাদ্য পানীয় নেই। আর হারুরী হল তারা যারা আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করার পরও তা ভঙ্গ করেছিল, সা‘দ (রাঃ) তাদেরকে ফাসিক বলতেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭২৮)

সঠিক কথা হল এরা কাফির, তারা বিশ্বাস করত তারা যে কুফরী করছে তা-ই সঠিক, এতেই আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. জাহান্নামকে কিয়ামতের দিন কাফিরদের সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।
২. ভ্রান্ত মা‘বূদরা আল্লাহ তা‘আলার দরবারে তাদের ভক্তদের জন্য কোনই উপকার করতে পারবে না। বরং তারা তাদের শত্র“তে পরিণত হবে।
৩. জাহান্নাম এখনো তৈরী করা আছে।
৪. যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করবে তাদের সৎ আমল নষ্ট হয়ে যাবে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল এবং তাঁর বিধি-বিধান নিয়ে হাসি-তামাশা করা যাবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

১০০-১০২ নং আয়াতের তাফসীর:

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা কাফিরদের ব্যাপারে কি করবেন এখানে তিনি তারই খবর দিচ্ছেন যে, তারা জাহান্নামে যাওয়ার পূর্বেই জাহান্নাম এবং ওর শাস্তি অবলোকন করবে। তাদেরকে ঐ জাহান্নামের মধ্যে প্রবিষ্ট করা হবেই এই বিশ্বাস রেখে ওর মধ্যে প্রবেশ করার পূর্বেই তারা চরমভাবে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।

হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে হেঁচড়িয়ে টেনে আনা হবে। ওর সত্তর হাজার লাগাম হবে। প্রত্যেকটি লাগামের উপর সত্তর হাজার করে ফেরেশতা থাকবে।

এই কাফিররা পার্থিব সারা জীবনে নিজেদের চক্ষু ও কর্ণকে বেকার করে রেখেছে। না তারা সত্যকে দেখেছে ও শুনেছে এবং না আমল করেছে। তারা শয়তানের সঙ্গী হয়েছে এবং রহমানের (আল্লাহর) স্মরণ থেকে উদাসীন রয়েছে। তারা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের বাতিল মা’বূদরাই তাদের পুরো মাত্রায় উপকার করবে। আর তাদের সমস্ত বিপদ-আপদ দূর করে দেবে। এটা কিন্তু তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। বরং তারা তাদের ইবাদতকেও অস্বীকার করে বসবে। সেইদিন (কিয়ামতের দিন) তারা তাদের শত্রু হয়ে যাবে। এই কাফিরদের বাসস্থান তো জাহান্নাম। এই জাহান্নাম এখনও প্রস্তুত রয়েছে।

১০৩-১০৬ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত মুসআব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি আমার পিতা অর্থাৎ হযরত সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাসকে (রাঃ) আল্লাহ তাআলার (আরবী) এই উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, এর দ্বারা কি হারুরিয়্যা বা খারেজীদেরকে বুঝানো হয়েছে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “না, বরং এর দ্বারা ইয়াহুদী ও খৃস্টানরা উদ্দেশ্য। ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। আর খৃস্টানরা জান্নাতকে অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, সেখানে খাদ্য ও পানীয় কিছুই নেই। হাঁ তবে খারেজীরা আল্লাহর প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ়তার পর ভঙ্গ করে দিয়েছে।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত সা’দ (রাঃ)। খারেজীদেরকে ফাসেক বলতেন। হযরত আলী (রাঃ) প্রভৃতি সাহাবীদের মতে এর দ্বারা খারেজীরাই উদ্দেশ্য। ভাবার্থ এই যে, এই আয়াত দ্বারা যেমন ইয়াহুদী ও খৃস্টানরা উদ্দেশ্য, অনুরূপভাবে খারেজীরাও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, আয়াতটি সাধারণ। যে কেউই আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও আনুগত্য ঐ পন্থায় করবে, যে পন্থা আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় নয়, তারা সবাই এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। যদিও তারা নিজেদের আমলে খুশী হয় এবং মনে করে নেয় যে, তারা আখেরাতের পাথেয় অনেক কিছু সংগ্রহ করে নিয়েছে এবং তাদের নেক আমল আল্লাহ তাআলার নিকট পছন্দনীয় ও তাদের সৎ আমলের বিনিময় তারা অবশ্যই লাভ করবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তাদের আমল আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহনীয় নয়, বরং বর্জনীয়। তার ভুল ধারণাকারী লোক।

এটা মক্কায় অবতারিত আয়াত। আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, মক্কায় অবতারিত আয়াতগুলি দ্বারা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে সম্বোধন করা হয় নাই এবং তখন পর্যন্ত খারেজীদের তো কোন অস্তিত্বই ছিল না। সুতরাং ঐ গুরুজনদের উদ্দেশ্য এটাই যে, আয়াতের সাধারণ শব্দগুলি এদের সবাইকে এবং এদের মত অন্য যারা রয়েছে তাদের সবাইকে এই হুকুমের অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন সূরায়ে গাশিয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “বহু মুখমণ্ডল সেই দিন লাঞ্ছিত, কষ্টভোগী (এবং কষ্টভোগের দরুন) কাতর হবে। (তারা) দগ্ধকারী অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” (৮৮:২-৪) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “সামনে বেড়ে গিয়ে আমি তাদের কৃত সমস্ত আমলকে বেকার ও মূল্যহীন করে দিবো।” (২৫:২৩) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা কাফির, তাদের আমলসমূহ যেন একটি মরুভূমির মরিচিকা, পিপাসার্ত লোক যাকে পানি বলে মনে করে; শেষ পর্যন্ত যখন ওর নিকট পৌঁছে তখন ওকে কিছুই পায় না।” (২৪:৩৯)

এরা ঐ সব লোক যারা নিজেদের পন্থায় ইবাদত ও আমল তো করে এবং মনেও করে যে, তারা অনেক কিছু পূণ্যময় কাজ করলো এবং সেগুলো আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণীয় ও পছন্দনীয়। কিন্তু তাদের ঐ আমলগুলো আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পন্থায় ছিল না এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) নির্দেশ মুতাবেকও ছিল না বলে সেগুলো গ্রহণীয় হওয়ার পরিবর্তে বর্জনীয় হয়ে। গেলো এবং প্রিয় হওয়ার পরিবর্তে অপ্রিয় ও অপছন্দনীয় হয়ে গেলো। কেননা, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতো। আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর রাসূলের (সঃ) রিসালাতের সমস্ত প্রমাণ তাদের সামনে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু তারা ওগুলি হতে চক্ষু বন্ধ করে নেয় এবং মেনে নেয়ার পরেও অমান্য করে। তাদের পুণ্যের পাল্লা সম্পূর্ণ শূন্য থাকবে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন একটি মোটা তাজা ও ভারী ওযনের লোককে আনয়ন করা হবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে তার ওজন একটি মশার পাখার সমানও হবে না।” তারপর তিনি বলেনঃ “তোমরা ইচ্ছা করলে- (আরবী) এই আয়াতটি পাঠ করে নাও।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমের রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, খুব বেশী পানা হারকারী মোটা তাজা লোককে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সামনে। হাজির করা হবে। কিন্ত তার ওজন শস্যের দানার সমানও হবে না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতটি পাঠ করেন।

মসনাদে বায়্যারে রয়েছে যে, একজন কুরায়েশী হুল্লা (লম্বা পোষাক বিশেষ) পরিধান করে অহংকার ভরে রাসুলুল্লাহর (সঃ) পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত বুরাইদাকে (রাঃ) বলেনঃ “এই লোকটি ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদের আল্লাহ তাআলার নিকট কিয়ামতের দিন কোনই ওজন হবে না।” মারফু হাদীসের মত হযরত কা’বের (রাঃ) উক্তিও বর্ণিত আছে।

এটা হচ্ছে তাদের কুফরী, সত্যকে প্রত্যাখ্যান এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও তাঁর রাসূলদেরকে বিদ্রুপের পাত্র হিসেবে গ্রহণ করারই প্রতিফল।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#893)
Sura:18
Sura: Kahaf
Ayat: 99-106
[ وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا

They thought that they were acquiring good by their deeds.]
www.motaher21.net

18:99

وَ تَرَکۡنَا بَعۡضَہُمۡ یَوۡمَئِذٍ یَّمُوۡجُ فِیۡ بَعۡضٍ وَّ نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَجَمَعۡنٰہُمۡ جَمۡعًا ﴿ۙ۹۹﴾

And We will leave them that day surging over each other, and [then] the Horn will be blown, and We will assemble them in [one] assembly.

 

Tafsir Ibne Kasir Said:-

وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ

We shall leave some of them,

meaning mankind, on that day, the day when the barrier will be breached and these people (Ya’juj and Ma’juj) will come out surging over mankind to destroy their wealth and property.

وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَيِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ

We shall leave some of them to surge like waves on one another;

As-Suddi said:

“That is when they emerge upon the people.”

All of this will happen before the Day of Resurrection and after the Dajjal, as we will explain when discussing the Ayat:

حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُمْ مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ

وَاقْتَرَبَ الْوَعْدُ الْحَقُّ

Until, when Ya’juj and Ma’juj are let loose, and they swoop down from every Hadab. And the true promise shall draw near… (21:96-97)

وَنُفِخَ فِي الصُّورِ

and As-Sur will be blown.
As-Sur, as explained in the Hadith, is a horn that is blown into. The one who will blow into it is (the angel) Israfil, peace be upon him, as has been explained in the Hadith quoted at length above, and there are many Hadiths on this topic.

According to a Hadith narrated from Atiyah from Ibn Abbas and Abu Sa`id, and attributed to the Prophet,

كَيْفَ أَنْعَمُ وَصَاحِبُ الْقَرْنِ قَدِ الْتَقَمَ الْقَرْنَ وَحَنَى جَبْهَتَهُ وَاسْتَمَعَ مَتَى يُوْمَرُ

How can I relax when the one with the Horn has put the Horn in his mouth and has knelt down, listening out for the command to be given to him?

They said, “What should we say?”

He said:

قُولُوا

حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَا

Say:

“Allah is Sufficient for us and the best Disposer of affairs, in Allah have we put our trust.”

فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا

and We shall collect them (the creatures) all together.

means, `We shall bring them all together for Reckoning.’

قُلْ إِنَّ الاٌّوَّلِينَ وَالاٌّخِرِينَ

لَمَجْمُوعُونَ إِلَى مِيقَـتِ يَوْمٍ مَّعْلُومٍ

Say:”(Yes) verily, those of old, and those of later times. All will surely be gathered together for appointed meeting of a known Day. (56:49-50)

وَحَشَرْنَـهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَداً

and we shall gather them all together so as to leave not one of them behind. (18:47)

18:100

وَّ عَرَضۡنَا جَہَنَّمَ یَوۡمَئِذٍ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ عَرۡضَۨا ﴿۱۰۰﴾ۙ

And We will present Hell that Day to the Disbelievers, on display –

 

Hell will be displayed before the Disbelievers on the Day of Resurrection

Allah says:

وَعَرَضْنَا جَهَنَّمَ يَوْمَيِذٍ لِّلْكَافِرِينَ عَرْضًا

And on that Day We shall present Hell to the disbelievers, plain to view.

Allah tells us what He will do to the disbelievers on the Day of Resurrection. He will show Hell to them, meaning He will bring it forth for them to see its punishment and torment before they enter it. This will intensify their distress and grief.

In Sahih Muslim it is recorded that Ibn Mas`ud said,

“The Messenger of Allah said,

يُوْتَى بِجَهَنَّمَ تُقَادُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِسَبْعِينَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَك

Hell will be brought forth on the Day of Resurrection, pulled by means of seventy thousand reins, each of which will be held by seventy thousand angels.

Then Allah says of them

18:101

الَّذِیۡنَ کَانَتۡ اَعۡیُنُہُمۡ فِیۡ غِطَـآءٍ عَنۡ ذِکۡرِیۡ وَ کَانُوۡا لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ سَمۡعًا ﴿۱۰۱﴾٪

Those whose eyes had been within a cover [removed] from My remembrance, and they were not able to hear.

 

الَّذِينَ كَانَتْ أَعْيُنُهُمْ فِي غِطَاء عَن ذِكْرِي

(To) those whose eyes had been under a covering from My Reminder,

meaning, they neglected it, turning a blind eye and a deaf ear to it, refusing to accept guidance and follow the truth.

As Allah says:

وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَـنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَاناً فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ

And whosoever turns away blindly from the remembrance of the Most Gracious, We appoint for him a Shaytan to be a companion for him. (43:36)

And here Allah says:

وَكَانُوا لَا يَسْتَطِيعُونَ سَمْعًا

and they could not bear to hear (it).

meaning, they did not understand the commands and prohibitions of Allah.

Then He says

18:102

اَفَحَسِبَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَنۡ یَّتَّخِذُوۡا عِبَادِیۡ مِنۡ دُوۡنِیۡۤ اَوۡلِیَآءَ ؕ اِنَّـاۤ اَعۡتَدۡنَا جَہَنَّمَ لِلۡکٰفِرِیۡنَ نُزُلًا ﴿۱۰۲﴾

Then do those who disbelieve think that they can take My servants instead of Me as allies? Indeed, We have prepared Hell for the disbelievers as a lodging.

 

أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَن يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِن دُونِي أَوْلِيَاء

Do then those who disbelieved think that they can take My servants as Awliya’ (protectors) besides Me!

meaning, do they think that this is right for them and that it is going to benefit them!

كَلَّ سَيَكْفُرُونَ بِعِبَـدَتِهِمْ وَيَكُونُونَ عَلَيْهِمْ ضِدّاً

Nay, but they will deny their worship of them, and become opponents to them. (19:82)

إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلاً

Verily, We have prepared Hell as an entertainment for the disbelievers.

Allah says that He has prepared Hell as their abode on the Day of Resurrection

18:103

قُلۡ ہَلۡ نُنَبِّئُکُمۡ بِالۡاَخۡسَرِیۡنَ اَعۡمَالًا ﴿۱۰۳﴾ؕ

Say, [O Muhammad], “Shall we [believers] inform you of the greatest losers as to [their] deeds?

 

The Greatest Losers in respect of (Their) Deeds

Al-Bukhari recorded from Amr that Mus`ab who said:

“I asked my father — meaning Sa`d bin Abi Waqqas — about Allah’s saying,

قُلْ هَلْ نُنَبِّيُكُمْ بِالاَْخْسَرِينَ أَعْمَالاً

Say:”Shall We tell you the greatest losers in respect of (their) deeds!”

`Are they the Haruriyyah?’

He said, `No, they are the Jews and Christians.

As for the Jews, they disbelieved in Muhammad, and

as for the Christians, they disbelieved in Paradise and said that there is no food or drink there, and

the Haruriyyah are those who break Allah’s covenant after ratifying it.’

Sa`d used to call them Al-Fasiqin (the corrupt).

Ali bin Abi Talib, Ad-Dahhak and others said:

“They are the Haruriyyah,”

so this means, that according to Ali, may Allah be pleased with him, this Ayah includes the Haruriyyah just as it includes the Jews, the Christians and others.

This does not mean that the Ayah was revealed concerning any of these groups in particular; it is more general than that, because the Ayah was revealed in Makkah, before the Qur’an addressed the Jews and Christians, and before the Khawarij existed at all.

So the Ayah is general and refers to everyone who worships Allah in a way that is not acceptable, thinking that he is right in doing that and that his deeds will be accepted, but he is mistaken and his deeds will be rejected, as Allah says:

وُجُوهٌ يَوْمَيِذٍ خَـشِعَةٌ

عَامِلَةٌ نَّاصِبَةٌ

تَصْلَى نَاراً حَامِيَةً

Some faces, that Day will be humiliated. Laboring, weary. They will enter in the hot blazing Fire. (88:2-4)

وَقَدِمْنَأ إِلَى مَا عَمِلُواْ مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَأءً مَّنثُوراً

And We shall turn to whatever deeds they did, and We shall make such deeds as scattered floating particles of dust. (25:23)

وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَعْمَـلُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْأنُ مَأءً حَتَّى إِذَا جَأءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْياً

As for those who disbelieved, their deeds are like a mirage in a desert. The thirsty one thinks it to be water, until he comes up to it, he finds it to be nothing. (24:39)

And in this Ayah Allah says:

قُلْ هَلْ نُنَبِّيُكُمْ

Say:”Shall We tell you…”

meaning, `Shall We inform you;’

بِالاْاَخْسَرِينَ أَعْمَالاًا

the greatest losers in respect of (their) deeds.

Then Allah explains who they are, and says

18:104

اَلَّذِیۡنَ ضَلَّ سَعۡیُہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ ہُمۡ یَحۡسَبُوۡنَ اَنَّہُمۡ یُحۡسِنُوۡنَ صُنۡعًا ﴿۱۰۴﴾

[They are] those whose effort is lost in worldly life, while they think that they are doing well in work.”

 

الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا

Those whose efforts have been wasted in this life,

meaning, they did deeds that do not count, deeds that are not in accordance with the prescribed way that is acceptable to Allah.

وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا

while they thought that they were acquiring good by their deeds.

means, they thought that there was some basis for their deeds and that they were accepted and loved

18:105

اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ رَبِّہِمۡ وَ لِقَآئِہٖ فَحَبِطَتۡ اَعۡمَالُہُمۡ فَلَا نُقِیۡمُ لَہُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ وَزۡنًا ﴿۱۰۵﴾

Those are the ones who disbelieve in the verses of their Lord and in [their] meeting Him, so their deeds have become worthless; and We will not assign to them on the Day of Resurrection any importance.

 

أُولَيِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَايِهِ

They are those who deny the Ayat of their Lord and the meeting with Him.

they denied the signs of Allah in this world, the proofs that He has established of His Oneness and of the truth of His Messengers, and they denied the Hereafter.

فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ

So their works are in vain,

فَلَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا

and on the Day of Resurrection, We shall assign no weight for them.

means, `We will not make their Balance heavy because it is empty of any goodness.’

Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said:

إِنَّهُ لَيَأْتِي الرَّجُلُ الْعَظِيمُ السَّمِينُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَنَاحَ بَعُوضَةٍ وَقَالَ اقْرَءُوا إِنْ شِيْتُمْ

فَلَ نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا

A huge fat man will come forward on the Day of Resurrection and he will weigh no more than the wing of a gnat to Allah. Recite, if you wish:

and on the Day of Resurrection, We shall assign no weight for them.

It was also recorded by Muslim

18:106

ذٰلِکَ جَزَآؤُہُمۡ جَہَنَّمُ بِمَا کَفَرُوۡا وَ اتَّخَذُوۡۤا اٰیٰتِیۡ وَ رُسُلِیۡ ہُزُوًا ﴿۱۰۶﴾

That is their recompense – Hell – for what they denied and [because] they took My signs and My messengers in ridicule.

 

ذَلِكَ جَزَاوُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا

That shall be their recompense, Hell; because they disbelieved,

means, `We will punish them with that because of their disbelief and because they took the signs and Messengers of Allah as a joke, mocking them and disbelieving them in the worst way.’

وَاتَّخَذُوا ايَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا

and took My Ayat and My Messengers for jest.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply