أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৩৫)
[ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ
তুমিই সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’]
সূরা:- আল্ আম্বিয়া।
সুরা:২১
৮৯-৯২ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২১:৮৯
وَ زَکَرِیَّاۤ اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗ رَبِّ لَا تَذَرۡنِیۡ فَرۡدًا وَّ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ ﴿ۚۖ۸۹﴾
আর স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহবান করে বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একা (সন্তানহীন) ছেড়ে দিও না এবং তুমিই সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’
২১:৯০
فَاسْتَجَبْنَا لَهٗ١٘ وَ وَهَبْنَا لَهٗ یَحْیٰى وَ اَصْلَحْنَا لَهٗ زَوْجَهٗ١ؕ اِنَّهُمْ كَانُوْا یُسٰرِعُوْنَ فِی الْخَیْرٰتِ وَ یَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّ رَهَبًا١ؕ وَ كَانُوْا لَنَا خٰشِعِیْنَ
কাজেই আমি তাঁর দোয়া কবুল করেছিলাম এবং তাঁকে ইয়াহ্ইয়া দান করেছিলাম, আর তাঁর স্ত্রীকে তাঁর জন্য যোগ্য করে দিয়েছিলাম। তারা সৎকাজে আপ্রাণ চেষ্টা করতো, আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতি সহকারে এবং আমার সামনে ছিল অবনত হয়ে।
২১:৯১
وَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہَا مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ جَعَلۡنٰہَا وَ ابۡنَہَاۤ اٰیَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۹۱﴾
আর স্মরণ কর সেই নারী (মারয়্যাম)এর কথা, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল, অতঃপর তার মধ্যে আমি আমার রূহ্ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন।
২১:৯২
اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُكُمْ اُمَّةً وَّاحِدَةً١ۖ٘ وَّ اَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْنِ
তোমাদের এ উম্মত আসলে একই উম্মত। আর আমি তোমাদের রব। কাজেই তোমরা আমার ইবাদাত করো।
৮৯-৯২ নং আয়াতের তাফসীর:
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*ইয়াহইয়া ও ঈসা(আ.)-এর সংক্ষিপ্ত জন্ম বৃত্তান্ত : এরপর রয়েছে হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহিয়া(আ.) এর ঘটনার প্রতি ইংগিত এবং যাকারিয়ার দোয়া আল্লাহর দরবারে গৃহীত হওয়ার উল্লেখ।(আয়াত ৮৯-৯০) হযরত ইয়াহিয়ার জন্মের ঘটনা বিশদভাবে সূরা মারিয়ামে ও সূরা আলে ইমরানে বর্ণিত হয়েছে। আর এখানে এসেছে পূর্বাপর বক্তব্যের সাথে সংগতি রেখে। প্রথমে হযরত যাকারিয়ার দোয়ার উল্লেখ করা হয়েছে, ‘হে প্রভু, আমাকে নিঃসন্তান রেখে দিয়াে না।’ অর্থাৎ আমার পরে হাইকেলের তত্ত্বাবধানকারী কেউ থাকবে না এমন অবস্থার সৃষ্টি করাে না। উল্লেখ্য যে, হযরত যাকারিয়া হযরত ঈসা(আ.)-এর জন্মের আগে বনী ইসরাঈলের এবাদাতের স্থান হাইকেলের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। হযরত যাকারিয়া এ কথা ভুলে যাননি যে, আল্লাহ তায়ালাই ইসলামের উত্তরাধিকারী ও ধন-সম্পদের উত্তরাধিকারী । তাই তিনি বলেছেন, তুমি তাে সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী। আসলে তিনি শুধু চাইছিলেন তার মৃত্যুর পর তার বংশধরের মধ্যে এমন কেউ জন্ম নিক, যে তার পরিবার পরিজন ইসলাম ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির সর্বোত্তম রক্ষক হবে। কেননা আল্লাহর বান্দারাই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধিরূপে রক্ষক ও শাসকের ভূমিকা পালন করে থাকে। হযরত যাকারিয়ার দোয়া আল্লাহ তায়ালা তৎক্ষণাৎ কবুল করলেন। ‘আমি তার দোয়া কবুল করলাম, তাকে ইয়াহিয়া নামক পুত্র দান করলাম এবং তার স্ত্রীকে যােগ্যতা দান করলাম।’ উল্লেখ্য যে, তার স্ত্রী বন্ধ্যা ও সন্তান ধারণের অযােগ্য ছিলাে। এ আয়াতে এসব বিষয় সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে এবং আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক দোয়া কবুল করার বিষয়টা ত্বরিত এগিয়ে আনা হয়েছে। ‘তারা সৎ কাজে ত্বরিত এগিয়ে যেতাে।’ তাই আল্লাহ তায়ালা ত্বরিত দোয়া কবুল করলেন ‘এবং আমাকে ভীতি ও আশা সহকারে ডাকতাে।’ অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টির আশা ও ক্রোধের ভীতি সহকারে। কেননা আল্লাহর সাথে তাদের হৃদয়ের সম্পর্ক ছিলাে মযবুত এবং তাদের অন্তর ছিলো সর্বক্ষণ সচেতন। ‘আর তারা ছিলাে আমার স্মরণে বিনয়াবনত।’ অহংকারীও নয়, দাম্ভিকতা নয় । যাকারিয়া, তার স্ত্রী ও তাদের পুত্র ইয়াহিয়ার এই গুণাবলীর কারণেই এই পিতামাতা একজন সৎ পুত্র লাভের যােগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তাই এ পরিবারটা ছিলাে কল্যাণময় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের উপযুক্ত পরিবার। সর্বশেষে হযরত ঈসা(আ.)-এর প্রসংগক্রমে তার মা হযরত মারিয়াম সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ‘আর যে নারী নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করেছিলাে তার অভ্যন্তরে আমি আমার পক্ষ থেকে একটা প্রাণ ফুকে দিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্যে নিদর্শন বানালাম।’ এখানে মারইয়ামের নামােল্লেখ করা হচ্ছে না। কেননা নবীদের সংক্রান্ত ধারাবাহিক আলােচনায় তার পুত্র ঈসাই এখানে মূল আলােচ্য বিষয়। মারইয়ামের উল্লেখ শুধু আনুষংগিকভাবে হয়েছে। এখানে তার পুত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট তার শুণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলােচনা করা হচ্ছে, ‘যে নারী নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করেছিলাে।’ অর্থাৎ সে নিজেকে সর্বপ্রকারের যৌন মিলন থেকে সযত্নে রক্ষা করেছিলাে। ‘ইহসান’ শব্দটা দ্বারা সাধারণত বিয়ে (এবং মুহসানা দ্বারা বিবাহিতা নারী) বুঝানাে হয়ে থাকে আনুসংগিকভাবে। কেননা বিয়ে মানুষকে ব্যভিচার থেকে রক্ষা করে। তবে এখানে ‘ইহসান’ শব্দটা তার আসল অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সব ধরনের বৈধ বা অবৈধ যৌন মিলন থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিলাে। মারিয়ামের সাথে ইউসুফ নাজ্জার নামক যে লােকটি হাইকেলের সেবায় নিয়ােজিত ছিলাে, তার সাথে মারইয়ামকে জড়িত করে ইহুদীরা অপবাদ দিয়েছিলাে। সেই অপবাদ থেকে মারিয়ামের পবিত্রতা ঘােষণা করার জন্যেই একথা বলা হয়েছে। প্রচলিত বাইবেল গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, ইউসুফ নাজ্জারের সাথে তার বিয়ে হয়েছিলাে, কিন্তু সে কখনাে তার কাছে যায়নি। আলােচ্য আয়াতে বাইবেলের সে উক্তিও খন্ডন করা হয়েছে। ‘মারইয়াম নিজের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করেছিলো। তাই আমি তার ভেতরে প্রাণ ফুকে দিয়েছিলাম।’ প্রাণ ফুকে দেয়ার ব্যাপারটা এখানে সাধারণভাবে বলা হয়েছে, কোথায় যফুঁকে দেয়া হয়েছে, তা বলা হয়নি। এ বিষয়ে সূরা মারইয়ামে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে। তাই এখানে আর কোনাে বিশদ আলােচনা করছি না। ‘আর আমি তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্যে একটা দৃষ্টান্ত বানিয়েছি।’ এটা এমন এক দৃষ্টান্ত, যার কোনাে নযীর অতীতেও ছিলাে না, ভবিষ্যতেও হবে না। সমগ্র মানবেতিহাসে এটাই একমাত্র নযীরবিহীন দৃষ্টান্ত। কারণ এ ধরনের একটা দৃষ্টান্তই সকল যুগের ও সকল প্রজন্মের মানুষকে সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে যথেষ্ট সাব্যস্ত হয় এবং একথা উপলব্ধি করতে সুবিধে হয় যে, অসীম ক্ষমতাবান আল্লাহ তায়ালা প্রকৃতির নিয়মের স্রষ্টা ও নিয়ন্তা বটে, তবে তিনি প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনও নন এর আওতায় তার হাত পা বাঁধাও নয়। কতিপয় নবী ও রসূল, তাদের পরীক্ষা ও তাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের নমুনা সম্বলিত পর্যালােচনার পর এই পর্যালােচনার সার্বিক উদ্দেশ্য বর্ণনা করে এর উপসংহার টানা হয়েছে এভাবে, ‘এরা সবাই তােমাদেরই উম্মাহ, যা একটি মাত্র উম্মাহ। আর আমি তােমাদের প্রতিপালক। কাজেই তােমরা আমারই এবাদাত করাে।’ অর্থাৎ সকল নবীর উম্মতরা আসলে তােমাদেরই উম্মাত এবং একই উম্মাত। সকলের একই ধর্ম, একই আকীদা বিশ্বাস, একই জীবন ব্যবস্থা এবং তা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করা অন্য কারাে নয়। পৃথিবীতে একটি মাত্র উম্মত, আর মহাবিশ্বে একই মাত্র প্রভু প্রতিপালক, তিনি ছাড়া কোনাে ইলাহ ও মাবুদ নেই। একটি মাত্র জীবন পদ্ধতির অনুসারী একটি উম্মত, যা আকাশ ও পৃথিবীতে একই সত্যের সাক্ষ্য দেয়। এই পর্যন্ত এসে এই পর্যালােচনা গােটা সূরার মূল বক্তব্যের সাথে মিলে একাকার হয়ে গেছে এবং তাওহীদী আকীদা বিশ্বাসের প্রতি সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি ও সৃষ্টি জগতের সাথে একাত্ম হয়ে সমন্বয়ে তার অনুকুলে সাক্ষ্য দিচ্ছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আলে ইমরান ৩৭ থেকে ৪১ আয়াত টীকাসহ , সূরা মারয়াম ২ থেকে ১৫ আয়াত টীকাসহ। স্ত্রীকে যোগ্য করে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, তার বন্ধ্যাত্ব দূর করে দেয়া এবং বার্ধক্য সত্ত্বেও তাকে গর্ভধারণের উপযোগী করা। “সবচেয়ে ভালো উত্তরাধিকারী তুমিই” মানে হচ্ছে, তুমি সন্তান না দিলে কোন দুঃখ নেই। তোমার পবিত্র সত্তা-উত্তরাধিকারী হবার জন্য যথেষ্ট।
# এই প্রেক্ষাপটে যে উদ্দেশ্যে নবীদের উল্লেখ করা হয়েছে তা আবার স্মৃতিপটে জাগিয়ে তুলুন। হযরত যাকারিয়ার (আ) ঘটনা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা হৃদয়ঙ্গম করানো যে, এ সকল নবীই ছিলেন নিছক বান্দা ও মানুষ ইলাহী সার্বভৌমত্বের সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। তারা অন্যদেরকে সন্তান দান করতেন না বরং নিজেরাই আল্লাহর সামনে সন্তানের জন্য হাত পাততেন। হযরত ইউনুসের কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, একজন মহিমান্বিত নবী হওয়া সত্ত্বেও যখন তিনি ভুল করে বসলেন তখন তাঁকে পাকড়াও করা হলো এবং যখন তিনি নিজের রবের সামনে অবনত হলেন তখন তাঁর প্রতি অনুগ্রহও এমনভাবে করা হয়েছে যে, মাছের পেট থেকে তাঁকে জীবিত বের করে আনা হয়েছে। হযরত আইয়ুবের উল্লেখ এজন্য করা হয়েছে যে, নবীর বিপদে পড়া কোন অভিনব ব্যাপার নয় এবং নবীও যখন বিপদে পড়েন তখন একমাত্র আল্লাহরই সামনে ত্রাণের জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি অন্যের ত্রাণকারী নন বরং আল্লাহর কাছে ত্রাণ ভিক্ষাকারী। তারপর এসব কথার সাথে সাথে একদিকে এ সত্যটি মনে বদ্ধমূল করতে চাওয়া হয়েছে যে, এ সকল নবীই ছিলেন তাওহীদের প্রবক্তা এবং নিজেদের প্রয়োজন তাঁরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে পেশ করতেন না আবার অন্যদিকে একথাও বুঝিয়ে দেয়া কাম্য যে, আল্লাহ হামেশা অস্বাভাবিকভাবে নিজের নবীদেরকে সাহায্য করতে থেকেছেন। শুরুতে তাঁরা যতই পরীক্ষার সম্মুখীন হোন না কেন শেষ পর্যন্ত অলৌকিক পদ্ধতিতে তাঁদের প্রার্থনা পূর্ণ হয়েছে।
# এখানে হযরত মার্য়াম আলাইহিস সালামের কথা বলা হয়েছে।
# হযরত আদম আলাইহিস সালাম সম্পর্কেও বলা হয়েছেঃ
إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ – فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ
“আমি মাটি থেকে একটি মানুষ তৈরি করছি। কাজেই (হে ফেরেশতারা!) যখন আমি তাকে পূর্ণরূপে তৈরি করে নেবো এবং তার মধ্যে নিজের রূহ ফুঁকে দেবো তখন তোমরা তার সামনে সিজদায় অবনত হয়ে যাবে।” ( সাদঃ ৭১-৭২ )
একথাই হযরত ঈসা সম্পর্কে বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে। সূরা নিসায় বলা হয়েছেঃ
رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ “আল্লাহর রসূল এবং তাঁর ফরমান, যা মার্য়ামের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং তার পক্ষ থেকে একটি রূহ।” ( ১৭১ আয়াত )
সূরা তাহরীমে বলা হয়েছেঃ
وَمَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْرَانَ الَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِنْ رُوحِنَا
“আর ইমরানের মেয়ে মার্য়াম, যে নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করেছিল, কাজেই ফুঁকে দিলাম আমি তার মধ্যে নিজের রূহ।” ( ১২ আয়াত )
এ সঙ্গে এ বিষয়টিও সামনে থাকা দরকার যে, মহান আল্লাহ হযরত ঈসা (আ) ও হযরত আদমের (আ) জন্মকে পরস্পরের সদৃশ গণ্য করেন। তাই সূরা আলে ইমরানে বলেনঃ
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ
“ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর কাছে আদমের মতো, যাঁকে আল্লাহ মাটি থেকে তৈরি করেন তারপর বলেন, “হয়ে যাও” এবং সে হয়ে যায়। ( ৫৯ আয়াত )
এসব আয়াত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করলে একথা বুঝা যায় যে, স্বাভাবিক সৃষ্টি পদ্ধতির পরিবর্তে যখন আল্লাহ কাউকে নিজের হুকুমের সাহায্যে অস্তিত্বশীল করে জীবন দান করেন তখন একে “নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছি” শব্দাবলীর সাহায্যে বিবৃত করেন। এ রূহের সম্পর্ক আল্লাহর সাথে সম্ভবত এজন্য করা হয়েছে যে, এর ফুঁকে দেওয়াটা অলৌকিক ধরনের। আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা নিসা, ২১২ – ২১৩ টীকা।
# তাঁরা মা ও ছেলে দু’জনের কেউই আল্লাহ বা আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বে শরীক ছিলেন না বরং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শন ছিলেন। তাঁরা কোন্ অর্থে নিদর্শন ছিলেন? এর ব্যাখ্যা জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা মারয়াম ২১ এবং সূরা আল মু’মিনূন ৪৩ টীকা।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৮৯-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে যাকারিয়া (عليه السلام)-এর কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি, স্ত্রী ছিল বন্ধ্যা। তিনি মারা গেলে নবুওয়াতের কোন উত্তরাধিকার থাকবে না। তাই আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ তা‘আলা আমাকে নির্বংশ করো না, আমার একজন বংশধর দান করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “সে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমার অস্থি দুর্বল হয়েছে, বার্ধক্যে আমার মাথার চুল সাদা হয়ে গেছে; হে আমার প্রতিপালক! তোমাকে আহ্বান করে আমি কখনো ব্যর্থকাম হইনি। ‘আমি আশংকা করি আমার পর আমার স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে; আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। সুতরাং তুমি তোমার নিকট হতে আমাকে দান কর উত্তরাধিকারী, ‘যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকূবের বংশের এবং হে আমার প্রতিপালক! তাকে কর সন্তোষভাজন’।” (সূরা মারইয়াম ১৯:৪-৬)
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবূল করে ইয়াহইয়া (عليه السلام)-কে সন্তান হিসেবে দান করলেন।
(وَأَصْلَحْنَا لَه۫)
অর্থাৎ যাকারিয়া (عليه السلام)-এর স্ত্রী যে বন্ধ্যা ছিলেন এবং বৃদ্ধা হয়ে যাওয়ার কারণে সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে গেছেন তা দূর করে সন্তান জন্মদানের যোগ্যতা দিয়ে দিয়েছেন।
(وَيَدْعُوْنَنَا رَغَبًا وَّرَهَبًا)
‘তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে’ দু‘আ কবূলের জন্য এ সকল গুণের প্রতি খেয়াল রাখা উচিত। কারণ দু‘আ কবূলের অন্যতম উপায় হল বেশি বেশি সৎ আমল করা, আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিনীত হওয়া, কাকুতি-মিনতিসহ প্রার্থনা করা। আশা ও ভয় উভয়টাসহ তাঁকে ডাকা। এ সর্ম্পকে সূরা মারইয়ামের ২ নং থেকে ১৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সন্তান দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাই তাঁর কাছে চাইতে হবে, অন্য কেউ তা দেয়ার ক্ষমতা রাখে না।
২. সৎ কাজের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা প্রসংশনীয়। অতএব সৎ কাজের প্রতিযোগিতা করা উচিত।
৯১ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতে মারইয়াম (عليه السلام)-এর কথা আলোচনা করা হয়েছে। তিনি তাঁর সতীত্বকে হেফাযত করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা জিবরীল (عليه السلام)-এর মাধ্যমে তাঁর মাঝে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলেন, এর মাধ্যমেই তিনি গর্ভবতী হয়েছিলেন। বিনা স্বামীতে সন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাকে এবং সন্তান ঈসা (عليه السلام)কে শিশুকালে কথা বলা ও অন্যান্য মুজিযাহ দিয়ে উভয়কে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন করেছিলেন। তাঁর স¤পর্কে সূরা মারইয়ামে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) নিজের সতীত্বকে হেফাযত করেছিলেন, কোন পরপুরুষের সাথে খারাপ কাজ করেন নি।
২. মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) ও ঈসা (عليه السلام) উভয়ে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন।
পূর্বের আয়াতগুলোতে বিভিন্ন নাবীদের কথা আল্লাহ তা‘আলা নিয়ে এসে নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উত্তম পন্থায় ও মর্যাদার সাথে স্মরণ করতে বলেছেন। কারণ এসব নাবীদেরকে তিনি প্রেরণ করেছিলেন তাওহীদের দিকে স্বজাতিকে আহ্বান করার জন্য। সে সাথে তাদেরকে হিকমত, জ্ঞান ও অনেক নিয়ামত দান করেছিলেন। তারা যখন বিপদে পড়েছেন তখন আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। সুতরাং হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখ, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে সাহায্য করবেন।
(إِنَّ هٰذِه۪ٓ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَّاحِدَةً….)
এখানে একই উম্মত বলতে দীনকে বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ সকল নাবীদের দীন ছিল একটাই, তা হল ইসলাম। এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা ও তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার স্থাপন না করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমরা নাবীরা বৈমাত্রেয় ভাই (সকলের পিতা এক, মাতা ভিন্ন) কিন্তু আমাদের দীন এক।
(وَتَقَطَّعُوْآ أَمْرَهُمْ)
অর্থাৎ মানুষের তাওহীদের পথ থেকে সরে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে গেল, রাসূলদের নিয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি করল। একদল মুশরিক হয়ে গেল, আরেক দল কাফির হয়ে গেল। আজ মুসলিমরাও এমন চক্রে পড়ে বিবিধ দলে বিভক্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাওহীদের বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, সুতরাং সকলকে তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে এবং তাঁর কাছে কর্মের হিসাব দিতে হবে। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সৎ আমল করবে তার আমল অস্বীকার করা হবে না। বরং যথার্থ প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(إِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ إِنَّا لَا نُضِيْعُ أَجْرَ مَنْ أَحْسَنَ عَمَلًا)
“যারা ঈমান আনে ও সৎ কর্ম করে আমি তার শ্রমফল নষ্ট করি না যে উত্তমরূপে কার্য সম্পাদন করে।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৩০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল নাবীদের দীনের মূলনীতি ছিল একই, আর তা হল আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই।
২. সৎ কর্মশীলদের প্রতিদান পূর্ণমাত্রায় দেয়া হবে। তাদের কর্মফল নষ্ট করা হবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৮৯-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দা হযরত যাকারিয়্যার (আঃ) খবর দিচ্ছেন যে, তিনি প্রার্থনা করেছিলেনঃ “আমাকে একটি সন্তান দান করুন, যে আমার পরে নবী হবে।” সূরায়ে মারইয়াম ও সূরায়ে আল-ইমরানে এই ঘটনা বিস্তারিত ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি এই দুআ’ নির্জনে করেছিলেন।
‘আমাকে একা ছেড়ে দিয়েন না, এই উক্তির তাৎপর্য হচ্ছেঃ আমাকে সন্তানহীন করবেন না। দুআ ও চাওয়ার জন্যে তিনি আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রার্থনা কবূল করেন এবং তার যে স্ত্রী বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন তাকে তিনি সন্তানের যোগ্যা করে তোলেন। হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ) বলেন যে, তিনি বন্ধ্যা ছিলেন, অতঃপর তিনি সন্তান প্রসব করেন। আবদুর রহমান ইবনু মাহদী (রঃ) তালহা ইবনু আমর (রঃ) হতে, তিনি আতা (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর লম্বা চওড়া কথা বন্ধ করে দেয়া হয়। আবার অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, তার চরিত্রে কিছু ত্রুটি ছিল তা সংশোধন করে দেয়া হয়। কিন্তু প্রথম অর্থটিই কুরআনের ভাষার বেশী নিকটবর্তী।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করতো। তারা আমাকে ডাকতো আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত। বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) একদা তাঁর এক ভাষণে বলেনঃ “হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে আল্লাহকে ভয় করতে থাকা, পূর্ণভাবে তাঁর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করা, লোভ ও ভয়ের সাথে প্রার্থনা করা এবং প্রার্থনায় বিনয় প্রকাশ করার উপদেশ দিচ্ছি। দেখো, আল্লাহ তাআলা হযরত যাকারিয়্যার (আঃ) পরিবারের লোকদের এই ফযীলতই বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি- (আরবী) এই আয়াতাংশ টুকু পাঠ করেন।
এভাবেই আল্লাহ তাআলা হযরত মারইয়াম (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) ঘটনা বর্ণনা করেছেন। কুরআন কারীমে প্রায়ই হযরত যাকারিয়া (আঃ) ও হযরত ইয়াহইয়ার (আঃ) ঘটনার সাথে সাথেই হযরত মারইয়াম (আঃ) ও হযরত ঈসার (আঃ) ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা, তাঁদের মধ্যে পুরোপুরি সম্পর্ক ও সম্বন্ধ রয়েছে। হযরত যাকারিয়্যা (আঃ) পূর্ণ বার্ধক্যে পদার্পণ করেছিলেন এবং তার স্ত্রীও ছিলেন বন্ধ্যা। আর তিনিও বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন, এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সন্তান দান করেছিলেন। মহান আল্লাহ নিজের এই ক্ষমতা প্রদর্শনের পর স্বামী ছাড়াই শুধু স্ত্রী লোককে সন্তান দান করে তিনি নিজের আর এক ব্যাপক ক্ষমতা প্রকাশ করেছেন। সরায়ে আল-ইমরান ও সুরায়ে মারইয়ামেও এই শ্রেণী বিন্যাসই রয়েছে।
‘যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল এই উক্তি দ্বারা হযরত মারইয়ামকে (আঃ) বুঝানো হয়েছে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ সূরায়ে তাহরীমে বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(আরো দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন) ইমরান-তনয়া মারইয়ামের (আঃ) যে তার সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তার মধ্যে রূহ ফুকে দিয়েছিলাম।” (৬৬:১২)
আল্লাহ বলেনঃ আমি তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্যে এক নিদর্শন। যাতে বিশ্ববাসী আল্লাহ তাআলার সর্বপ্রকারের ক্ষমতা, সৃষ্টি কৌশলের ব্যাপক অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে। হযরত ঈসা (আঃ) ছিলেন আল্লাহর কুদরতের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। তিনি নিদর্শন ছিলেন দানব ও মানব উভয় জাতির জন্যেই।
হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ), হযরত মুজাহিদ (রাঃ), হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রঃ), কাতাদা (রঃ) এবং হযরত আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলাম (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) এর অর্থ হচ্ছে। তোমাদের দ্বীন হলো একই দ্বীন। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এই আয়াতে যা হতে বিরত থাকতে হবে এবং যা করতে হবে তাই বর্ণনা করা হয়েছে। (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের (আরবী) এবং (আরবী) ওর। আর (আরবী) শব্দ দুটি (আরবী) হয়েছে। অর্থাৎ যে শরীয়তের বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা তোমাদের সবারই শরীয়ত, যার মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর একত্ববাদ। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) (হে রাসুলগণ! তোমরা উৎকৃষ্ট জিনিস ভক্ষণ কর) (আমি তোমাদের প্রতিপালক, সুতরাং তোমরা আমাকে ভয় কর) … পর্যন্ত। (২৩:৫১-৫২)
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমরা নবীদের দল পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই (আমাদের সবারই পিতা একই), আমাদের সবারই একই দ্বীন)” তা হলো। এক শরীক বিহীন আল্লাহর ইবাদত করা। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যে আমি পথ ও পন্থা করে দিয়েছি।” (৫:৪৮) অতঃপর লোকেরা মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তাদের বীদের (আঃ) উপর ঈমান এনেছে এবং কেউ কেউ ঈমান আনয়ন করে নাই।
মহান আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতের দিন সকলকেই আমারই নিকট প্রত্যাবর্তন করতে হবে। প্রত্যেককেই নিজ নিজ কতকর্মের প্রতিদান দেয়াহবে। ভাল লোকদেরকে দেয়া হবে ভাল প্রতিদান। মন্দ লোকদেরকে দেয়া হবে মন্দ প্রতিদান।
সুতরাং কেউ যদি মু’মিন হয়ে সৎকর্ম করে তবে তার কর্ম প্রচেষ্টা অগ্রাহ্য হবে না এবং আল্লাহ তাআলা তা লিখে রাখেন। যেমন অন্য জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সকর্মশীলদের বিনিময় আমি নষ্ট করি না।” (১৮:৩০) আল্লাহ তাআ’লা অনুপরিমাণ যুলুম করাও সমীচীন মনে করেন না। তিনি স্বীয় বান্দাদের সমস্ত আমল লিখে রাখেন। একটিও ছুটে যায় না।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#935)
[وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
You are the Best of the inheritors.]
Sura:21
Sura: Al-Anbiyaa
Ayat: 89-92
www.motaher21.net
21:89
وَ زَکَرِیَّاۤ اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗ رَبِّ لَا تَذَرۡنِیۡ فَرۡدًا وَّ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ ﴿ۚۖ۸۹﴾
And [mention] Zechariah, when he called to his Lord, “My Lord, do not leave me alone [with no heir], while you are the best of inheritors.”
Zakariyya and Yahya
Allah tells:
وَزَكَرِيَّا
And (remember) Zakariyya,
Allah tells us of His servant Zakariyya, who asked Allah to grant him a son who would be a Prophet after him. The story has already been given in detail at the beginning of Surah Maryam and also in Surah `Imran. Here an abbreviated version is given.
إِذْ نَادَى رَبَّهُ
when he cried to his Lord,
means, in secret, hiding it from his people.
رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا
O My Lord! Leave me not single,
means, with no child and no heir to stand among the people after me.
وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
though You are the Best of the inheritors.
This is a supplication and form of praise befitting the topic.
21:90
فَاسۡتَجَبۡنَا لَہٗ ۫ وَ وَہَبۡنَا لَہٗ یَحۡیٰی وَ اَصۡلَحۡنَا لَہٗ زَوۡجَہٗ ؕاِنَّہُمۡ کَانُوۡا یُسٰرِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ وَ یَدۡعُوۡنَنَا رَغَبًا وَّ رَہَبًا ؕوَ کَانُوۡا لَنَا خٰشِعِیۡنَ ﴿۹۰﴾
So We responded to him, and We gave to him John, and amended for him his wife. Indeed, they used to hasten to good deeds and supplicate Us in hope and fear, and they were to Us humbly submissive.
Allah says:
فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَوَهَبْنَا لَهُ يَحْيَى وَأَصْلَحْنَا لَهُ زَوْجَهُ
So We answered his call, and We bestowed upon him Yahya, and cured his wife for him.
Ibn Abbas, Mujahid and Sa`id bin Jubayr said:
“She was barren and never had a child, then she gave birth.”
…
إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ
Verily, they used to hasten on to do good deeds,
means, acts of worship and acts of obedience towards Allah.
…
وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا
and they used to call on Us with hope and fear,
Ath-Thawri said,
“Hoping for that (reward) which is with Us and fearing that (punishment) which is with Us.”
…
وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ
and they were Khashi`in before Us.
Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas that;
this means, sincerely believing in that which was revealed by Allah.
Mujahid said:
“Truly believing.”
Abu Al-`Aliyah said:
“Fearing.”
Abu Sinan said:
“Khushu` means the fear which should never leave our hearts.”
It was also reported from Mujahid that;
“the Khashi`in are those who are humble.”
Al-Hasan, Qatadah and Ad-Dahhak said,
“The Khashi`in are those who humble themselves before Allah.”
All of these suggestions are close in meaning.
21:91
وَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہَا مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ جَعَلۡنٰہَا وَ ابۡنَہَاۤ اٰیَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۹۱﴾
And [mention] the one who guarded her chastity, so We blew into her [garment] through Our angel [Gabriel], and We made her and her son a sign for the worlds.
`Isa and Maryam the True Believer
Allah tells:
وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا ايَةً لِّلْعَالَمِينَ
And she who guarded her chastity, We breathed into her through Our Ruh, and We made her and her son a sign for nations.
Here Allah mentions the story of Maryam and her son `Isa, just after mentioning Zakariyya and his son Yahya, may peace be upon them all.
He mentions the story of Zakariyya first, followed by the story of Maryam because the one is connected to the other. The former is the story of a child being born to an old man of advanced years, from an old woman who had been barren and had never given birth when she was younger. Then Allah mentions the story of Maryam which is even more wondrous, for in this case a child was born from a female without (the involvement of) a male.
These stories also appear in Surah Al `Imran and in Surah Maryam. Here Allah mentions the story of Zakariyya and follows it with the story of Maryam, where He says:
وَالَّتِي أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا
And she who guarded her chastity,
means, Maryam (peace be upon her).
This is like the Ayah in Surah At-Tahrim:
وَمَرْيَمَ ابْنَةَ عِمْرَانَ الَّتِى أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا
And Maryam, the daughter of `Imran who guarded her chastity. And We breathed into it (her garment) through Our Ruh. (66:12)
وَجَعَلْنَاهَا وَابْنَهَا ايَةً لِّلْعَالَمِينَ
and We made her and her son a sign for the nations.
means, evidence that Allah is able to do all things and that He creates whatever He wills; verily, His command, when He intends a thing, is only that He says to it, “Be” — and it is!
This is like the Ayah:
وَلِنَجْعَلَهُ ءَايَةً لِّلْنَّاسِ
And (We wish) to appoint him as a sign to mankind. (19:21)
21:92
اِنَّ ہٰذِہٖۤ اُمَّتُکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً ۫ۖ وَّ اَنَا رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡنِ ﴿۹۲﴾
Indeed this, your religion, is one religion, and I am your Lord, so worship Me.
Mankind is One Ummah
Allah says:
إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً
Truly, this, your Ummah is one,
Ibn Abbas, Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Qatadah and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said,
“Your religion is one religion.”
Al-Hasan Al-Basri said:
“In this Ayah, Allah explains to them what they should avoid and what they should do.”
Then He said:
إِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً
Truly, this, your Ummah is one religion,
“Meaning, your path is one path. Certainly this is your Shariah (Divine Law) which I have clearly explained you.”
So Allah says:
وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ
and I am your Lord, therefore worship Me.
This is like the Ayah:
يأَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُواْ مِنَ الطَّيِّبَـتِ وَاعْمَلُواْ صَـلِحاً
O (you) Messengers! Eat of the Tayyibat (good things) and do righteous deeds.) Until His saying,
وَأَنَاْ رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ
(And I am your Lord, so have Taqwa of Me). (23:51-52)
The Messenger of Allah said:
نَحْنُ مَعَاشِرَ الاَْنْبِيَاءِ أَوْلَادُ عَلَّتٍ دِينُنَا وَاحِد
We Prophets are brothers from different mothers and our religion is one.
What is meant here is that they all worshipped Allah Alone with no partner or associate, although the Laws of each Messenger may have differed, as Allah says:
لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَـجاً
To each among you, We have prescribed a Law and a clear way. (5:48
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran