(বই#৯৫৯) [أُوْلَيِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ।] সূরা:- আল্-মুমিনূন। সুরা:২৩ পারা:১৮ ৫৭-৬১ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৫৯)
[أُوْلَيِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ
তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ।]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
পারা:১৮
৫৭-৬১ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৫৭
اِنَّ الَّذِیۡنَ ہُمۡ مِّنۡ خَشۡیَۃِ رَبِّہِمۡ مُّشۡفِقُوۡنَ ﴿ۙ۵۷﴾
নিঃসন্দেহে যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত,]
২৩:৫৮
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِاٰیٰتِ رَبِّہِمۡ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿ۙ۵۸﴾
যারা নিজেদের রবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনে,
২৩:৫৯
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِرَبِّہِمۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿ۙ۵۹﴾
যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না।
২৩:৬০
وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡتُوۡنَ مَاۤ اٰتَوۡا وَّ قُلُوۡبُہُمۡ وَجِلَۃٌ اَنَّہُمۡ اِلٰی رَبِّہِمۡ رٰجِعُوۡنَ ﴿ۙ۶۰﴾
এবং যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, যা কিছুই দেয় এমন অবস্থায় দেয় যে, তাদের অন্তর এ চিন্তায় কাঁপতে থাকে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে।
২৩:৬১
اُولٰٓئِکَ یُسٰرِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ وَ ہُمۡ لَہَا سٰبِقُوۡنَ ﴿۶۱﴾
ঐসব লোক কল্যাণের দিকে দৌড়ে যাওয়া ও অগ্রসর হয়ে তা অর্জনকারী ।

৫৭-৬১ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-
# এখানে এসে সূরার সূচনা পর্বের আয়াতগুলোর ওপর আর একবার নজর বুলিয়ে নিন। সে একই বিষয়বস্তুকে আবার অন্যভাবে এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে। তারা “কল্যাণ”, “ভালো” ও “সমৃদ্ধি”র একটি সীমিত বস্তুবাদী ধারণা রাখতো। তাদের মতে, যে ব্যক্তি ভালো খাবার, ভাল পোশাক ও ভালো ঘর-বাড়ী লাভ করছে, যাকে অর্থ –সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করা হয়েছে এবং সমাজে যে খ্যাতি ও প্রভাব – প্রতিপত্তি অর্জন করতে পেরেছে সে সাফল্য লাভ করছে। আর যে ব্যক্তি এসব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে ব্যর্থহয়ে গেছে। এ মৌলিক বিভ্রান্তির ফলে তারা আবার এর চেয়ে অনেক বড় আর একটি বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে। সেটি ছিল এই যে, এ অর্থে যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করেছে সে নিশ্চয়ই সঠিক পথে রয়েছে বরং সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা, নয়তো এসব সাফল্য লাভ করা তার পক্ষে কেমন করে সম্ভব হলো। পক্ষান্তরে এ সাফল্য থেকে যাদেরকে আমরা প্রকাশ্যে বঞ্চিত দেখছি তারা নিশ্চয়ই বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে ভুল পথে রয়েছে এবং তারা খোদা বা খোদাদের গযবের শিকার হয়েছে। এ বিভ্রান্তিটি আসলে বস্তুবাদী দৃষ্টিভংগীর অধিকারী লোকদের ভ্রষ্টতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলোর অন্যতম। একে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে একে খণ্ডন করা হয়েছে এবং বিভিন্নভাবে প্রকৃত সত্য কি তা বলে দেয়া হয়েছে। (দৃষ্টান্ত স্বরূপ দেখুন সূরা আল বাকারাহ ১২৬ ও ২১২ ; আল আ’রাফ ৩২ , আত্‌ তাওবাহ ৫৫, ৬৯ ও ৮৫ ; ইউনুস ১৭ ; হূদ ৩ , ২৭ থেকে ৩১ , ৩৮ ও ৩৯ ; আর রাআদ ২৬ ; আল কাহ্‌ফ ২৮ , ৩২ থেকে ৪৩ ও ১০৩ থেকে ১০৫ ; মার্‌য়াম ৭৭ থেকে ৮০ ; ত্বা-হা ১৩১ ও ১৩২ ও আল আম্বিয়া ৪৪ আয়াত এবং এই সঙ্গে টীকাগুলো)।

এক্ষেত্রে এমন পর্যায়ের কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ সত্য রয়েছে যেগুলো ভালোভাবে অনুধাবন না করলে চিন্তা ও মন-মানস কখনোই পরিচ্ছন্ন হতে পারে না।

একঃ “মানুষের সাফল্য”কে কোন ব্যক্তি, দল বা জাতির নিছক বস্তুবাদী সমৃদ্ধি ও সাময়িক সাফল্য অর্থে গ্রহণ করার চাইতে তা অনেক বেশী ব্যাপক ও উন্নত পর্যায়ের জিনিস।

দুইঃ সাফল্যকে এ সীমিত অর্থে গ্রহণ করার পর যদি তাকেই সত্য ও মিথ্যা এবং ভালো ও মন্দের মানদন্ড গণ্য করা হয় তাহলে তা এমন একটি মৌলিক ভ্রষ্টতায় পরিণত হয় যার মধ্য থেকে বাইরে বের না হওয়া পর্যন্ত কোন মানুষ কখনো বিশ্বাস, চিন্তা, নৈতিকতা ও চারিত্রিক ক্ষেত্রে সঠিক পথ লাভ করতেই পারে না।

তিনঃ দুনিয়াটা আসলে প্রতিদান দেবার জায়গা নয় বরং পরীক্ষাগৃহ। এখানে নৈতিক শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকলেও তা বড়ই সীমিত পর্যায়ের ও অসম্পূর্ণ ধরণের এবং তার মধ্যেও পরীক্ষার দিকটি রয়েছে। এ সত্যটি এড়িয়ে গিয়ে একথা মনে করা যে, এখানে যে ব্যক্তি যে নিয়ামতই লাভ করছে তা লাভ করছে “পুরস্কার” হিসেবেই এবং সেটি লাভ করা পুরস্কার লাভকারীর সত্য, সৎ ও আল্লাহর প্রিয় হবার প্রমাণ আর যার ওপর যে বিপদও আসছে তা হচ্ছে তার ‘শাস্তি” এবং তা একথাই প্রমাণ করছে যে, শাস্তি লাভকারী মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত, সে অসৎ ও আল্লাহর কাছে অপ্রিয়। আসলে এসব কিছু একটি বিভ্রান্তি বরং নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সম্ভবত আমাদের সত্য সম্পর্কিত ধারণা ও নৈতিকতার মানদণ্ডকে বিকৃত করার ক্ষেত্রে এর চেয়ে বড় আর কোন জিনিস নেই। একজন সত্যসন্ধানীকে প্রথম পদক্ষেপেই একথা অনুধাবন করতে হবে যে, এ দুনিয়াটি মূলত একটি পরীক্ষাগৃহ এবং এখানে অসংখ্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যক্তিদের, জাতিদের ও সমগ্র বিশ্বমানবতার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এ পরীক্ষার মাঝখানে লোকেরা যে বিভিন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয় সেগুলো পুরস্কার ও শাস্তির শেষ পর্যায় নয়। কাজেই সেগুলোকে মতবাদ, চিন্তাধারা, নৈতিকতা ও কর্মকাণ্ডের সঠিক ও বেঠিক হওয়ার মানদণ্ডে পরিণত করা এবং আল্লাহর কাছে প্রিয়ও অপ্রিয় হবার আলামত গণ্য করা যাবে না।

চারঃ সাফল্যের প্রান্ত নিশ্চিতভাবেই সত্য সৎকর্মের সাথে বাঁধা আছে এবং মিথ্যা ও অসৎকর্মের পরিণাম ক্ষতি এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এ দুনিয়ায় যেহেতু মিথ্যা ও অসৎকর্মের সাথে সাময়িক ও বাহ্যিক সাফল্য এবং অনুরূপভাবে সত্য ও সৎকর্মের সাথে প্রকাশ্য ও সাময়িক ক্ষতি সম্ভবপর আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ জিনিসটি ধোঁকা বলে প্রমাণিত হয়েছে, তাই সত্য-মিথ্যা ও সৎ-অসৎ যাচাই করার জন্য একটি স্থায়ী ও স্বতন্ত্রমানদণ্ডের প্রয়োজন, যার মধ্যে প্রতারণার ভয় থাকবে না। নবীগণের শিক্ষা ও আসমানী কিতাবসমূহ আমাদের এ মানদণ্ড সরবরাহ করে। মানুষের সাধারণ জ্ঞান (Common sense)-এর সঠিক হওয়ার সত্যতা বিধান করে এবং “মারূফ” ও “মুন্‌কার” তথা সৎ কাজ ও অসৎকাজ সম্পর্কিত মানব জাতির সম্মিলিত মানসিক চিন্তা-অনভুতি এর সত্যতার সাক্ষ্য দেয়।

পাঁচঃ যখন কোন ব্যক্তি বা জাতি একদিকে সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ফাসেকী, অশ্লীল কার্যকলাপ, জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করতে থাকে এবং অন্যদিকে তা ওপর অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকে তখন বুজতে হবে, বুদ্ধি ও কুরআন উভয় দৃষ্টিতে আল্লাহ‌ তাকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন করেছেন এবং তার ওপর আল আল্লাহর করুণা নয় বরং তাঁর ক্রোধ চেপে বসেছে। ভুলের কারণে যদি তার ওপর আঘাত আসতো তাহলে এর এই অর্থ হতো যে, আল্লাহ‌ এখনো তার প্রতি অনুগ্রহশীল আছেন, তাকে সতর্ক করছেন এবং সংশোধিত হবার সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু ভুলের জন্য “পুরস্কার” এ অর্থ প্রকাশ করে যে, তাকে কঠিন শাস্তি দেবার ফয়সালা হয়ে গেছে এবং পেট ভরে পানি নিয়ে ডুবে যাওয়ার জন্য তার নৌকাটি ভাসছে। পক্ষান্তরে যেখানে একদিকে থাকে আল্লাহর প্রতি সত্যিকার আনুগত্য, চারিত্রক পবিত্রতা, পরিচ্ছন্ন লেনদেন, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি সদাচার, দয়া, স্নেহ ও মমতা এবং অন্যদিকে তার প্রতি বিপদ-আপদ ও কাঠিন্যের অবিরাম ধারা বর্ষিত হতে থাকে এবং আঘাতের পর আঘাতে সে হতে থাকে জর্জরিত সেখানে তা আল্লাহরক্রোধের নয় বরং হয় তাঁরঅনুগ্রহেরই আলামত। স্বর্ণকার স্বর্ণকে খুব বেশী উত্তপ্ত করতে থাকে যাতে তা খুব বেশী ঝকঝকে তকতকে হয় যায় এবং দুনিয়াবাসীর সামনে তার পূর্ণনিখাদ হওয়া প্রমাণ হয়ে যায়। দুনিয়ার বাজারে তার দাম না বাড়লে কিছু আসে যায় না। স্বর্ণকার নিজেই তার দাম দেবে। বরং নিজের অনুগ্রহে বেশী দিয়ে দেবে। তার বিপদ-আপদে যদি ক্রোধের দিক থেকে থাকে তাহলে তা তার নিজের জন্য নয় বরং তার শত্রুদের জন্য অথবা যে সমাজে সৎকর্মশীলরআ উৎপীড়িত হয় এবং আল্লাহর নাফরমানরা হয় অনুগৃহীত সে সমাজের জন্য।

# তারা দুনিয়ায় আল্লাহর ব্যাপারে ভীতি শূন্য ও চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করে না। যা মনে আসে তাই করে না এবং ওপরে একজন আল্লাহ‌ আছেন তিনি জুলুম ও বাড়াবাড়ি করলে পাকড়াও করেন একথা কখনো ভুলে যায় না। বরং তাদের মন সবসময় তাঁর ভয়ে ভীত থাকে এবং তিনিই তাদেরকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে থাকেন।
# আয়াত বলে দু’ধরনের আয়াতই বুঝানো হয়েছে। সেসব আয়াতও যেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর নবীগণ পেশ করেন আবার সেগুলো ও যেগুলো মানুষের নিজের মনের মধ্যে এবং বিশ্ব চরাচরে চারদিকে ছড়িয়ে আছে। কিতাবের আয়াতের প্রতি ঈমান আনা প্রকৃতপক্ষে সেগুলোর সত্যতার স্বীকৃতি দেয়ারই নামান্তর এবং বিশ্ব চরাচর ও মানব মনের আয়াতের অর্থাৎ নিদর্শনাবলীর প্রতি ঈমান আনার মূলত সেগুলো যেসব সত্য প্রকাশ করছে তার প্রতি ঈমান আনাই প্রমাণ করে।

# যদিও আয়াতের প্রতি ঈমান আনার অনিবার্য ফল এ দাঁড়ায় যে মানুষ তাওহীদ বিশ্বাসী ও আল্লাহর একক সত্তার প্রবক্তা হবে কিন্তু এ সত্ত্বেও শির্‌ক না করার কথা আলাদাভাবে এ জন্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, অনেক সময় মানুষ আয়াত মেনে নিয়েও কোন না কোনভাবে শিরকে লিপ্ত হয়। যেমন রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা। এটিও এক ধরনের শির্‌ক। অথবা নবী ও অলীগণের শিক্ষার মধ্যে এমন ধরনেরবাড়াবাড়ি করা যা শির্‌ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। অথবা আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য সত্তার কাছে প্রার্থনা ও ফরিয়াদ করা। কিংবা স্বেচ্ছায় ও সানন্দে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যান্য রবের বন্দেগী ও আনুগত্য এবং আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য প্রভুর আইন মেনে চলা। কাজেই আল্লাহর আয়াতের প্রতি ঈমান আনার পর আলাদাভাবে শির্‌ক না করার কথা বলার অর্থ হচ্ছে এই যে, তারা নিজেদের বন্দেগী, আনুগত্য ও দাসত্বকে সম্পূর্ণরূপে একক আল্লাহর জন্য নির্ধারতি করে নেয় এবং তার গায়ে অন্য কারোর বন্দেগীর সামান্যতম গন্ধও লাগায় না।

# আরবী ভাষায় “দেয়া”—–শব্দটি শুধুমাত্র সম্পদ বা কোন বস্তু দেয়া অর্থেই ব্যবহার হয় না বরং বিমূর্ত জিনিস দেয়া অর্থেও বলা হয়। যেমন কোন ব্যক্তির আনুগত্য গ্রহণ করার জন্য বলা হয়—–আবারকোন ব্যক্তির আনুগত্য অস্বীকার করার জন্য বলা হয়—–কাজেই এ দেয়ার মানে শুধুমাত্র এই নয় যে, তারা আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ দান করে বরং আল্লাহর দরবারে আনুগত্য ও বন্দেগী পেশ করাও এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত। এ অর্থের দৃষ্টিতে আয়াতের পুরোপুরি মর্ম এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহর হুকুম পালনের ক্ষেত্রে যা কিছু সদাচার, সেবামূলক কাজ ও ত্যাগ করে সেজন্য একটুও অহংকার ও তাকওয়ার বড়াই করে না এবং আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যাবার অহমিকায় লিপ্ত হয় না। বরং নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সবকিছু করার পরও এ মর্মে আল্লাহর ভয়ে ভীত হতে থাকে যে, না জানি এসব তাঁর কাছে গৃহীত হবে কিনা এবং রবের কাছে মাগফেরাতের জন্য এগুলো যথেষ্ট হবে কিনা। ইমাম আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, হাকেম ও জারির বর্ণিত নিম্মোক্তা হাদীসটিই এ অর্থ প্রকাশ করে। এখানে হযরত আয়েশা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘হে আল্লাহর রসূল! এর অর্থ কি এই যে, এক ব্যক্তি চুরি, ব্যভিচার ও শরাব পান করার সময়ও আল্লাকে ভয় করবে? ” এ প্রশ্ন থেকে জানা যায়, হযরত আয়েশা একে———-অর্থে গ্রহণ করছিলেন অর্থাৎ “যা কিছু করে করেই যায়। জবাবে নবী ﷺ বলেনঃ ———— “না, হে সিদ্দীকের মেয়ে! এর অর্থ হচ্ছে এমন লোক, যে নামায পড়ে, রোযা রাখে, যাকাতা দেয় এবং মহান আল্লাহকে ভয় করতে থাকে।” এ জবাব থেকে জানা যায় যে, আয়াতের সঠিক পাঠ—–নয় বরং—–এবং এ—–শুধু অর্থ-সম্পদ দান করার সীমিত অর্থে নয় বরং আনুগত্য করার ব্যাপক অর্থে। একজন মু’মিন কোন্‌ ধরনের মানসিক অবস্থা সহকারে আল্লাহর বন্দেগী করে এ আয়াতটি তা বর্ণনা করে। হযরত উমরের (রা.) অবস্থাই এর পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করে। তিনি সারা জীবনের অতুলনীয় কার্যক্রমের পর যখন দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে থাকেন তখন আল্লাহর জবাবদিহির ভয়ে ভীত হতে থাকেন এবং যেতে থাকেন, যদি আখেরাতে সমান সমান হয়ে মুক্তি পেয়ে যাই তাহলেও বাঁচোয়া। হযরত হাসান বাসরী (র) বড়ই চমৎকার বলেছেনঃ মু’মিন আনুগত্য করে এরপরও ভয় করে এবং মুনাফিক গোনাহ করে তারপরও নির্ভীক ও বেপরোয়া থাকে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*মানব চরিত্রে ঈমানের প্রভাব : বিপথগামী জনগােষ্ঠীর এই উদাসীনতার পাশাপাশি মােমেনদের সতর্কতা ও সচেতনতাকেও তুলে ধরা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যারা তাদের মনিবের ভয়ে ভীত, যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে… তারাই কল্যাণধর্মী কাজে দ্রুতগামী এবং অগ্রণী।'(আয়াত ৫৭-৬১) এ আয়াতগুলাে থেকে জানা যায়, ঈমান মানুষের মনের ওপর কেমন তীব্র প্রভাব বিস্তার করে, মনকে কত সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর, সচেতন ও সচকিত করে, যাবতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করার পরও তাকে কতাে পরিণামদর্শী সাবধানী ও সংযমী রূপে গড়ে তােলে। মােমেনরা আল্লাহর ভয়ে সর্বদা সংযত থাকে। তারা তার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস রাখে এবং তার সাথে কাউকে শরীক করে না। তারা তাদের যাবতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে। যতােদূর সাধ্যে কুলায়, আল্লাহর আনুগত্য করে ও আল্লাহর পথে অর্থ সম্পদ দান করে। কিন্তু তারপরও তৃপ্তি পায় না, স্বস্তি বােধ করে না, বরং আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার ভয়ে তাদের মন দুরু দুরু করে কাঁপতে থাকে। কেননা সব সময় তারা মনে করে, আল্লাহর প্রতি দায়িত্ব পালনে তাদের ক্রুটি বিচ্যুতি ও কমতি থেকেই যাচ্ছে। যা কিছু দান করে তা তাদের দৃষ্টিতে নগণ্য ও অপর্যাপ্ত মনে হয়। হযরত আয়েশা(রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে রসূল, এই আয়াতে ‘আল্লাহর পথে দান করার সময়ও যাদের মন ভয়ে কাঁপে’ কথাটা দ্বারা কি এ কথাই বুঝানাে হয়েছে যে, চোর মদ খাের ও ব্যাভিচারীরা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে। রসূল(স.) বললেন, ওহে সিদ্দীকের মেয়ে, তা নয়। বরঞ্চ এখানে নামায, রােযাদার ও সদকাকারী সম্পর্কেই বলা হয়েছে যে, সে এসব সৎকাজ করেও আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে।'(তিরমিযী) আসলে মােমেনের অন্তর এতাে সংবেদনশীল হয়ে থাকে যে, সে জানে যে, অনবরতভাবে তার ঘাড়ের ওপর আল্লাহর হাত রয়েছে। সে প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসে অনুভব করে যে, আল্লাহর অশেষ নেয়ামত সে ভােগ করছে। তাই সে যতাে এবাদাতই করে, তাকে সে যথেষ্ট মনে করে না। আল্লাহর নেয়ামতের তুলনায় তার করা যাবতীয় সৎকাজই তার কাছে অতি ক্ষুদ্র ও নগণ্য বলে মনে হয়। অনুরূপভাবে, তার আশপাশের প্রতিটা অণু-পরমাণুকে আল্লাহর বিরাট শক্তি ও প্রতাপের প্রতীক বলে সে মনে করে এবং তার আশপাশের প্রতিটা গন্ডিতে সে আল্লাহর হাত সক্রিয় দেখতে পায়। এ জন্যে সে সর্বদা এই ভয়ে জড় সড় থাকে যে, আল্লাহর দায়িত্ব পালনে বহু ক্ৰুটি-বিচ্যুতি ও অসম্পূর্ণতা নিয়েই কখন না জানি তার দরবারে উপস্থিত হতে হয়। এ ধরনের লােকেরাই নিজেদের কল্যাণ সাধনে দ্রুতগামী ও অগ্রণী। তারা তাদের সদা জাগৃতি, সদা সচেতনতা, সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা, তৎপরতা ও আনুগত্য দিয়েই নিজেদের কল্যাণ সাধন করে থাকে। পক্ষান্তরে উদাসীন ও নিরুদ্বেগ জীবন-যাপনকারীরা, যারা মনে করে যে, তারা তাে কল্যাণের জন্যেই দুনিয়ায় এসেছে এবং যাবতীয় সুখ ও সমৃদ্ধি তাদের জন্যেই তৈরী হয়েছে, তারা প্রকৃতপক্ষে অকল্যাণের পথের যাত্রী, তারা সেই পাখির মতাে, যাকে মজার মজার খাবারের লােভ দেখিয়ে যবাই করার জন্যে ডাকা হয়। মানুষের মধ্যে এ ধরনের পাখির সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। পার্থিব সুখ সমৃদ্ধি তাদেরকে এতােই মাতােয়ারা করে রাখে যে, তারা পরিণাম সম্পর্কে একেবারেই নিশ্চিন্ত ও উদাসীন হয়ে যায়। অবশেষে এই উদাসীনতার মধ্য দিয়েই এক সময় আকস্মিকভাবে আপন শােচনীয় পরিণতির সম্মুখীন হয়। পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, মুসলমানের মনে ইসলামের সৃষ্টি করা এই জাগৃতি ও সচেতনতা কোনাে অসাধ্য ব্যাপার নয়। হৃদয়ে ঈমানের স্থীতিশীল ও অবিচল অবস্থান থেকেই তা জন্ম নেয়। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, তার কাছে প্রত্যাবর্তনের অনিবার্যতা এবং গােপন ও প্রকাশ্যে তার সার্বক্ষণিক ও সর্বত্র উপস্থিতি সম্পর্কে সচেতনতাই এই জাগৃতি ও সংবেদনশীলতা জান্নাতের জন্য যথেষ্ট। ‘আমি কাউকে তার ক্ষমতাবহির্ভূত কোনাে কাজের দায়িত্ব অর্পণ করি না। আমার কাছে এমন এক দফতর রয়েছে যা সত্য সম্পর্কে সােচ্চার। তাদের ওপর কোনাে যুলুম করা হয় না।’ বস্তুত আল্লাহ তায়ালা যাকে যেমন যােগ্যতা ও ক্ষমতা দিয়েছেন, তাকে সেই যােগ্যতা ও ক্ষমতা অনুপাতে তদ্রুপ দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দায়িত্ব নিজ নিজ ক্ষমতা অনুসারে কে কতােটা পালন করে, সে ব্যাপারে তিনিই হিসাব নেবেন। কারাে ওপর ক্ষমতা বহির্ভূত কাজের দায়িত্ব চাপালে বা যা করেছে তার উপযুক্ত প্রতিদান দিতে কসূর করলে অবশ্যই যুলুম করা হয়। আল্লাহ তায়ালা কারাে ওপর যুলুম করেন না। মানুষ যা কিছু করে, তার সঠিক বিবরণ আল্লাহর সেই দফতরে সুরক্ষিত থাকে, যা একেবারে সত্য বিবরণ লিপিবদ্ধ করে থাকে, কিছু মাত্র কম লিপিবদ্ধ করে না। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা সবচেয়ে নিখুঁত হিসাবে গ্রহণকারী।

 

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৫৭-৬১ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলোতে যারা ভাল কাজে অগ্রগামী তাদের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। তাদের গুণাগুণ হল তারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীর প্রতি ঈমান রাখে, তাদের প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করে না এবং তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে এ ভয়ে তাদেরকে যা দান করা হয়েছে তা হতে ব্যয় করে।

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে: আয়িশাহ (رضي الله عنها) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যারা ভীত-সন্ত্রস্ত হৃদয়ে তাদেরকে দেয়া সম্পদ হতে ব্যয় করে, চুরি করে, যিনা করে এবং মদ পান করে, সে কি আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে না? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎ বলেন: হে আবূ বাকরের মেয়ে! বিষয়টি এমন নয়। বরং যারা সালাত আদায় করে, সিয়াম পালন করে এবং তাদের সম্পদ হতে ব্যয় করে মূলত তারাই আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে আর তাদের দান কবূল করা হয়। (মুসনাদ আহমাদ ২/১৫৯, তিরমিযী হা: ৩১৭৫, সহীহ)

যারা এসকল কাজ সম্পাদন করে তারাই মূলত সৎ কাজ করে, আর তারাই এ ব্যাপারে অগ্রগামী। সুতরাং আমাদের উচিত হবে, উল্লিখিত সৎ আমলগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সকল অন্যায় কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
২. মু’মিন সর্বদা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকে, হয়তো কোন কারণে তাদের আমল বাাতিল হয়ে যেতে পারে।
৩. নিজের সম্পদ হতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করা ঈমানের পরিচায়ক।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৫৭-৬১ নং আয়াতের তাফসীর:

মহান আল্লাহ বলেন যে, ইহসান ও ঈমানের সাথে সাথে সৎ কাজ করা এবং এরপরেও আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হওয়া মুমিনের বিশেষণ। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মুমিন ভাল কাজ করে এবং সাথে সাথে আল্লাহকে ভয় করতে থাকে। পক্ষান্তরে মুনাফিক খারাপ কাজ করে, আবার আল্লাহ থেকে নির্ভয় থাকে।

ঘোষিত হচ্ছেঃ তারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীতে ঈমান আনে। যেমন মহান আল্লাহ হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে তার প্রতিপালকের কালেমা ও কিতাবসমূহর্কে সত্য বলে জেনেছিল।” (৬৬: ১২) অর্থাৎ তিনি আল্লাহ তাআলার ক্ষমতা, ইচ্ছা ও শরীয়তের উপর পূর্ণ আস্থা রাখতেন। তাঁর আদিষ্ট প্রতিটি কাজকে তিনি ভালবাসতেন। আর তাঁর নিষেধকৃত প্রতিটি কাজকে তিনি অপছন্দ করতেন।

আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে শরীক করে না বরং তাকে এক বলে বিশ্বাস করে। তারা স্বীকার করে যে, আল্লাহ সম্পূর্ণরূপে অভাবমুক্ত। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান নেই। তিনি অতুলনীয়। তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই। তাঁর নামে তারা দান-খয়রাত করে থাকে। কিন্তু তা ককূল হবে কি না এ ভয় তাদের অন্তরে থাকে। তাই আল্লাহর পথে খরচ করার সময় তারা ভীত-কম্পিত হয়। হযরত সাঈদ ইবনে অহাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যারা যা দান করার তা দান করে ভীত-কম্পিত হৃদয়ে’-এর দ্বারা কি ঐ লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা চুরি করে, ব্যভিচার করে এবং মদ্যপান করে, অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহকে ভয় করে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)-এর কন্যা! হে সিদ্দীক (রাঃ)-এর কন্যা। না, তারা নয়; বরং যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং দান-খয়রাত করে, অথচ আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। জামেউত তিরমিযী ও মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমেও অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে আছেঃ “হে সিদ্দীক (রাঃ)-এর কন্যা! না, তারা নয়, বরং যারা নামায পড়ে, রোযা রাখে এবং দান-খয়রাত করে অথচ ওগুলো কবুল হয় কি-না এজন্যে সদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে তাদেরকেই বুঝানো হয়েছে)

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ‘তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী হয়। (আরবী) অন্য কিরাতে (আরবী) রয়েছে। অর্থাৎ তারা যা করার তা করে থাকে, কিন্তু তাদের অন্তর থাকে ভীত-সন্ত্রস্ত।

বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু আসিম (রাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করেন। তখন তিনি তাকে মারহাবা বলে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং বলেনঃ “তুমি মাঝে মাঝে আমাকে দর্শন দান কর না কেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আপনি হয়তো বিরক্তিবোধ করবেন এ জন্যেই আসি না। আজকে একটি আয়াতের শব্দগুলোর বিশ্লেষণের উদ্দেশ্যেই আগমন করেছি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিভাবে এটা পড়তেন তা আমি জানতে চাই।” হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “ওটা কোন আয়াত?” তিনি জবাবে বললেনঃ “আয়াতটি হলোঃ (আরবী)

উনি এভাবে পাঠ করতেন, না (আরবী) এভাবে পাঠ করতেন?” হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “এ দুটোর মধ্যে কোনটি তোমার নিকট অধিক পছন্দনীয়?” তিনি উত্তরে বললেনঃ (আরবী) এরূপভাবে পঠিত হয়ে থাকলে আমি যেন সারা দুনিয়াই পেয়ে যাবো, এমনকি এর চেয়েও বেশী আমি আনন্দিত হবো।” তখন হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তুমি শুনে খুশী হও যে, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে। এই আয়াতটি এভাবেই পড়তে শুনেছি। (এটা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। এর একজন বর্ণনাকারী হলেন ইসমাঈল ইবনে মুসলিম। তিনি দুর্বল। বর্তমানে কুরআনে যেরূপ আছে এটাই প্রসিদ্ধ সাতটি কিরআত ও জমহূরের কিরাত। অর্থের দিক দিয়েও এটাই বেশী প্রকাশমান। কেননা, তাদেরকে অগ্রগামী বলা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় কিরআতটি নিলে তারা অগ্রগামী থাকেন না। বরং মধ্যম হালকা হয়ে যান। এসব ব্যাপারে আল্লাহই বেশী ভাল জানেন)

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#959)
[أُوْلَيِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ
It is those who hasten to good deeds, ]
Sura:23
Para:18
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 57-61
www.motaher21.net
23:57

اِنَّ الَّذِیۡنَ ہُمۡ مِّنۡ خَشۡیَۃِ رَبِّہِمۡ مُّشۡفِقُوۡنَ ﴿ۙ۵۷﴾

Indeed, they who are apprehensive from fear of their Lord

 

Description of the People of Good Deeds

Allah says:

إِنَّ الَّذِينَ هُم مِّنْ خَشْيَةِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ

Verily, those who live in awe for fear of their Lord;

means, even though they have reached the level of Ihsan and have faith and do righteous deeds, they are still in awe of Allah and fear Him and His hidden plans for them, as Al-Hasan Al-Basri said,

“The believer combines Ihsan with awe, while the disbelievers combine evil deeds with a sense of security.”

وَالَّذِينَ هُم بِأيَاتِ رَبِّهِمْ يُوْمِنُونَ

23:58

وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِاٰیٰتِ رَبِّہِمۡ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿ۙ۵۸﴾

And they who believe in the signs of their Lord

 

And those who believe in the Ayat of their Lord;

means, they believe in His universal and legislative signs, as Allah says about Maryam, peace be upon her:

وَصَدَّقَتْ بِكَلِمَـتِ رَبَّهَا وَكُتُبِهِ

and she testified to the truth of the Words of her Lord, and His Scriptures. (66:12),

meaning that she believed that whatever existed was by the will and decree of Allah, and that whatever Allah decreed, if it was a command, it would be something that He liked and accepted; if it was a prohibition, it would be something that He disliked and rejected; and if it was good, it would be true.

This is like the Ayah:

وَالَّذِينَ هُم بِرَبِّهِمْ لَاا يُشْرِكُونَ

23:59

وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ بِرَبِّہِمۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿ۙ۵۹﴾

And they who do not associate anything with their Lord

 

And those who join not anyone (in worship) as partners with their Lord;

meaning, they do not worship anyone or anything else besides Him, but they worship Him Alone and know that there is no god except Allah Alone, the One, the Self-Sufficient Master, Who does not take a wife or have any offspring, and there is none comparable or equal unto Him.

وَالَّذِينَ يُوْتُونَ مَا اتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ

23:60

وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡتُوۡنَ مَاۤ اٰتَوۡا وَّ قُلُوۡبُہُمۡ وَجِلَۃٌ اَنَّہُمۡ اِلٰی رَبِّہِمۡ رٰجِعُوۡنَ ﴿ۙ۶۰﴾

And they who give what they give while their hearts are fearful because they will be returning to their Lord –

 

And those who give that which they give with their hearts full of fear, because they are sure to return to their Lord.

means, they give in charity, fearing that it may not be accepted from them because of some shortcoming or failure to meet the required conditions of giving.

This has to do with fear and taking precautions, as Imam Ahmad recorded from A’ishah:

I said:

“O Messenger of Allah,
وَالَّذِينَ يُوْتُونَ مَا اتَوا وَّقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ
(And those who give that which they give with their hearts full of fear…),

Are these the ones who steal and commit Zina and drink alcohol while fearing Allah!”

The Messenger of Allah replied:

لَاا يَا بِنْتَ أَبِي بَكْرٍ يَا بِنْتَ الصِّدِّيقِ وَلَكِنَّهُ الَّذِي يُصَلِّي وَيَصُومُ وَيَتَصَدَّقُ وَهُوَ يَخَافُ اللهَ عَزَّ وَجَل

No, O daughter of Abu Bakr. O daughter of As-Siddiq, the one who prays, fast and gives in charity, fearing Allah.

This was recorded by At-Tirmidhi, and Ibn Abi Hatim recorded something similar in which the Prophet said:

لَاا يَا بِنْتَ الصِّدِّيقِ وَلَكِنَّهُمُ الَّذِينَ يُصَلُّونَ وَيَصُومُونَ وَيَتَصَدَّقُونَ وَهُمْ يَخَافُونَ أَلاَّ يُقْبَلَ مِنْهُمْ
No, O daughter of As-Siddiq, they are the ones who pray and fast and give in charity while fearing that it will not be accepted from them

23:61

اُولٰٓئِکَ یُسٰرِعُوۡنَ فِی الۡخَیۡرٰتِ وَ ہُمۡ لَہَا سٰبِقُوۡنَ ﴿۶۱﴾

It is those who hasten to good deeds, and they outstrip [others] therein.

 

أُوْلَيِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ
It is these who hasten in the good deeds.
This is also how Ibn Abbas, Muhammad bin Ka`b Al-Qurazi and Al-Hasan Al-Basri interpreted this Ayah.

وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ

and they are foremost in them

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply