أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪১)
[ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ
নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার।]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
০১-০৪ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:০১
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ۚ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱﴾
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর ; নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার ।
২২:০২
یَوۡمَ تَرَوۡنَہَا تَذۡہَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَہَا وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا ہُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰہِ شَدِیۡدٌ ﴿۲﴾
যেদিন তোমরা তা দেখবে, অবস্থা এমন হবে যে, প্রত্যেক দুধদানকারিনী নিজের দুধের বাচ্চাকে ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে এবং মানুষকে তোমরা মাতাল দেখবে অথচ তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। আসলে আল্লাহর আযাবই হবে এমনি কঠিন।
২২:০৩
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ یَتَّبِعُ کُلَّ شَیۡطٰنٍ مَّرِیۡدٍ ۙ﴿۳﴾
কতক লোক এমন আছে যারা জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্ক করে এবং প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের অনুসরণ করতে থাকে।
২২:০৪
کُتِبَ عَلَیۡہِ اَنَّہٗ مَنۡ تَوَلَّاہُ فَاَنَّہٗ یُضِلُّہٗ وَ یَہۡدِیۡہِ اِلٰی عَذَابِ السَّعِیۡرِ ﴿۴﴾
তার সম্বন্ধে লিখে দেয়া হয়েছে যে, যে কেউ তাকে অভিভাবক বানাবে সে তাকে পথভ্রষ্ট করবে এবং তাকে পরিচালিত করবে প্রজ্জলিত আগুনের শাস্তির দিকে।
০১-০৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
(২২-হজ্ব) : নামকরণ:
চতুর্থ রুকূ’র দ্বিতীয় আয়াত وَأَذِّنْ فِي النَّاسِ بِالْحَجِّ থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।
(২২-হজ্ব) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
এ সূরায় মক্কী ও মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য মিলেমিশে আছে। এ কারণে মুফাসসিরগণের মাঝে এর মক্কী বা মাদানী হওয়া নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু আমার মতে এর একটি অংশ মক্কী যুগের শেষের দিকে এবং অন্য অংশটি মাদানী যুগের প্রথম দিকে নাযিল হবার কারণে এর বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গীতে এ বিশেষ রূপ পরিগ্রহ করেছে। এজন্য উভয় যুগের বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে একক হয়ে গেছে।
গোড়ার দিকের বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, এটি মক্কায় নাযিল হয়েছে। এ ব্যাপারে বেশী নিশ্চয়তার সাথে বলা যেতে পারে যে, এ অংশটি মক্কী জীবনের শেষ যুগে হিজরতের কিছু পূর্বে নাযিল হয়েছে। এ অংশটি ২৪ আয়াত وَهُدُوا إِلَى الطَّيِّبِ مِنَ الْقَوْلِ وَهُدُوا إِلَى صِرَاطِ الْحَمِيدِ এ এসে শেষ হয়ে গেছে। এরপর إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ থেকে হঠাৎ বিষয়বস্তুর প্রকৃতি পাল্টে গেছে এবং পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এখান থেকে শেষ পর্যন্তকার অংশটি মদীনা তাইয়েবায় নাযিল হয়েছে। এ অংশটি যে, হিজরতের পর প্রথম বছরেই যিলহজ্ব মাসে নাযিল হয়েছে তা মনে করাটা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কারণ, ২৫ থেকে ৪১ আয়াত পর্যন্ত যে বিষয়বস্তু উপস্থাপিত হয়েছে তা একথাই নির্দেশ করে এবং ৩৯-৪০ আয়াতে শানে নুযূল তথা নাযিলের কার্যকারণও এর প্রতি সমর্থন দেয়। সে সময় মুহাজিররা সবেমাত্র নিজেদের জন্মভূমি ও বাড়িঘর ছেড়ে মদীনায় এসেছিলেন। হজ্বের সময় তাদের নিজেদের শহর ও হজ্বের সমাবেশের কথা মনে পড়ে থাকতে পারে। কুরাইশ মুশরিকরা যে তাদের মসজিদে হারামে যাবার পথ বন্ধ করে দিয়েছে একথা তাদের মনকে মারাত্মকভাবে তোলপাড় করে থাকবে। যে অত্যাচারী কুরাইশ গোষ্ঠী ইতিপূর্বে তাদেরকে নিজেদের ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, মসজিদে হারামের যিয়ারত থেকে বঞ্চিত করেছে এবং আল্লাহর পথ অবলম্বন করার জন্য তাদের জীবন পর্যন্ত দুর্বিসহ করে তুলেছে, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা হয়তো যুদ্ধ করারও অনুমতি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। এ ছিল এ আয়াতগুলোর নাযিলের যথার্থ মনস্তাত্বিক পটভূমি। এখানে প্রথমে হজ্বের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দুনিয়ায় একমাত্র আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য মসজিদে হারাম নির্মাণ এবং হজ্বের পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়েছিল। কিন্তু আজ সেখানে শির্ক করা হচ্ছে এবং এক আল্লাহর ইবাদাতকারীদের জন্য তার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এরপর এ দুরাচারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং এদেরকে বেদখল করে দেশে এমন একটি কল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মুসলমানদেরকে অনুমতি দেয়া হয়েছে যেখানে অসৎবৃত্তি প্রদমিত ও সৎবৃত্তি বিকশিত হবে। ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, উরওয়াহ ইবনে যুবাইর, যায়েদ ইবনে আসলাম, মুকাতিল ইবনে হাইয়ান, কাতাদাহ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণের মতে মুসলমানদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দান সম্পর্কিত এটিই প্রথম আয়াত। অন্যদিকে হাদীস ও সীরাতের বর্ণনাসমূহ থেকে প্রমাণ হয়, এর অনুমতির পরপরই কুরাইশদের বিরুদ্ধে বাস্তব কর্মতৎপরতা শুরু করা হয় এবং দ্বিতীয় হিজরীর সফর মাসে লোহিত সাগরের দিকে প্রথম অভিযান পরিচালনা করা হয়। এটি দাওয়ান যুদ্ধ বা আবওয়া যুদ্ধ নামে পরিচিত।
(২২-হজ্ব) : বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়:
এ সূরায় তিনটি দলকে সম্বোধন করা হয়েছেঃ মক্কার মুশরিক সমাজ, দ্বিধাগ্রস্ত ও দোটানায় পড়ে থাকা মুসলিমগণ এবং আপোষহীন সত্যনিষ্ঠ মু’মিন সমাজ। মুশরিকদেরকে সম্বোধন করার পর্বটি মক্কায় শুরু হয়েছে এবং মদীনায় এর সমাপ্তি ঘটানো হয়েছে। এ সম্বোধনের মাধ্যমে তাদেরকে বজ্রকন্ঠে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা হঠকারিতা ও জিদের বশবর্তী হয়ে নিজেদের ভিত্তিহীন জাহেলী চিন্তাধারার ওপর জোর দিয়েছো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সব মাবুদদের ওপর ভরসা করেছো যাদের কাছে কোন শক্তি নেই এবং আল্লাহর রসূলকে মিথ্যা বলেছো। এখন তোমাদের পূর্বে এ নীতি অবলম্বনকারীরা যে পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে তোমাদেরও অনিবার্যভাবে সে একই পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। নবীকে অমান্য করে এবং নিজের জাতির সবচেয়ে সৎলোকদেরকে জুলুম নিপীড়নের শিকারে পরিণত করে তোমরা নিজেদেরই ক্ষতি করেছো। এর ফলে তোমাদের ওপর আল্লাহর যে গযব নাযিল হবে তা থেকে তোমাদের বানোয়াট উপাস্যরা তোমাদের রক্ষা করতে পারবে না। এ সতর্কীকরণ ও ভীতি প্রদর্শনের সাথে সাথে বুঝাবার ও উপলব্ধি করাবার কাজও চলেছে। সমগ্র সূরার বিভিন্ন জায়গায় স্মরণ করিয়ে দেয়া ও উপদেশ প্রদানের কাজও চলেছে। এ সংগে শির্কের বিরুদ্ধে এবং তাওহীদ ও আখেরাতের পক্ষে শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণও পেশ করা হয়েছে।
। দ্বিধান্বিত মুসলমানরা, যারা আল্লাহর বন্দেগী গ্রহণ করেছিল ঠিকই কিন্তু তাঁর পথে কোন প্রকার বিপদের মোকাবিলা করতে রাজি ছিল না, তাদেরকে সম্বোধন করে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করা ও ধমক দেয়া হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, এটা কেমন ঈমান! আরাম, আয়েশ, আনন্দ ও সুখ লাভ হলে তখন আল্লাহ তোমাদের আল্লাহ থাকে এবং তোমরা তাঁর বান্দা থাকো, কিন্তু যখনই আল্লাহর পথে বিপদ আসে এবং কঠিন সংকটের মোকাবিলা করতে হয় তখনই আল্লাহ আর তোমাদের আল্লাহ থাকে না এবং তোমরাও তাঁর বান্দা থাকো না। অথচ নিজেদের এ নীতি ও কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে তোমরা এমন কোন বিপদ, ক্ষতি ও কষ্টের হাত থেকে রেহাই পেতে পারবে না, যা আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে লিখে দিয়েছেন।
। ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দান করা হয়েছে দু’টি পদ্ধতিতে। একটি ভাষণে সম্বোধন এমনভাবে করা হয়েছে যার লক্ষ্য তারা নিজেরাও এবং এ সংগে আরবের সাধারণ জনসমাজও। আর দ্বিতীয় ভাষণটির লক্ষ্য কেবলমাত্র মু’মিনগণ।
। প্রথম ভাষণে মক্কার মুশরিকেদর মনোভাব ও কর্মনীতির সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে তারা মুসলমানদের জন্য মসজিদে হারামের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ মসজিদে হারাম তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। কাজেই কাউকে হজ্ব করার পথে বাধা দেবার অধিকার তাদের নেই। এ আপত্তি শুধু যে, যথার্থই ছিল তাই নয় বরং রাজনৈতিক দিক দিয়ে এটি কুরাইশদের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তম অস্ত্রও ছিল। এরর মাধ্যমে আরবের অন্যান্য সকল গোত্রের মনে এ প্রশ্ন সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে যে, কুরাইশরা হারাম শরীফের খাদেম, না মালিক? আজ যদি তারা নিজেদের ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে একটি দলকে হজ্ব করতে বাধা দেয় এবং তাদের এ পদক্ষেপকে মেনে নেয়া হয়, তাহলে কালকেই যে তারা যার সাথে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে তাকে হারাম শরীফের সীমানায় প্রবেশ করতে বাধা দেবে না এবং এবং তার উমরাহ ও হজ্ব বন্ধ করে দেবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এ প্রসঙ্গে মসজিদুল হারামের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে একদিকে বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন আল্লাহর হুকুমে এ ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন তখন সবাইকে এ ঘরে হজ্ব করার সাধারণ অনুমতি দিয়েছিলেন। প্রথম দিন থেকেই সেখানে স্থানীয় অধিবাসী ও বহিরাগতদের সমান অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে বলা হয়েছে, এ ঘরটি শির্ক করার জন্য নয় বরং এক আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। অথচ কী ভয়ংকর কথা! আজ সেখানে এক আল্লাহর বন্দেগী নিষিদ্ধ কিন্তু মূর্তি ও দেব-দেবীর পূজার পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।
। দ্বিতীয় ভাষণে মুসলমানদেরকে কুরাইশদের জুলুমের জবাবে শক্তি প্রয়োগ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ সংগে মুসলমানরা যখন কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা লাভ করবে তখন তাদের নীতি কি হবে এবং নিজেদের রাষ্ট্রে তাদের কি উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে একথাও তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি সূরার মাঝখানে আছে এবং শেষেও আছে। শেষে ঈমানদারদের দলের জন্য “মুসলিম” নামটির যথারীতি ঘোষণা দিয়ে বলা হয়েছে, তোমরাই হচ্ছো ইবরাহীমের আসল স্থলাভিষিক্ত। তোমরা দুনিয়ায় মানবজাতির সামনে সাক্ষ্যদানকারীর স্থানে দাঁড়িয়ে আছো, এ দায়িত্ব পালন করার জন্য তোমাদেরকে বাছাই করে নেয়া হয়েছে। এখন তোমাদের নামায কায়েম, যাকাত দান ও সৎকাজ করে নিজেদের জীবনকে সর্বোত্তম আদর্শ জীবনে পরিণত করা এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হয়ে আল্লাহর কলেমাকে বুলন্দ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালানো উচিত।
। এ সুযোগে সূরা বাকারাহ ও সূরা আনফালের ভূমিকার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলে ভালো হয়। এতে আলোচ্য বিষয় অনুধাবন করা বেশী সহজ হবে।
# এ প্রকম্পন হবে কিয়ামতের প্রাথমিক অবস্থার প্রকাশ আর সম্ভবত এটা এমন সময় শুরু হবে যখন যমীন অকস্মাৎ উল্টে পড়তে শুরু করবে এবং সূর্য পূর্বদিকের পরিবর্তে পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে। একথাই বর্ণনা করেছেন প্রাচীন তাফসীরকারদের মধ্য থেকে আলকামাহ ও শা’বী। তারা বলেছেনঃ يكون ذلك عند طُلُوعُ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا
ইবনে জারীর, তাবারানী, ইবনে আবী হাতেম প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হযরত আবু হুরাইরা(রা.) থেকে যে দীর্ঘ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তা থেকে একথাটিই জানা যায়। সেখানে নবী ﷺ বলেছেনঃ তিনবার সিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। এক ফুঁক হবে “ফাযা” তথা ভীতি উৎপাদনকারী, দ্বিতীয় ফূঁক “সা’আক” তথা সংজ্ঞা লোপকারী বিকট গর্জন এবং তৃতীয় ফুঁক হবে “কিয়াম লি-রাব্বিল আলামীন” অর্থাৎ রব্বুল আলামীনের সামনে হাজির হবার ফূঁক। প্রথম ফুঁকটি সাধারণ বিভীষিকার সৃষ্টি করবে এবং মানুষ হতভম্ভ হয়ে যাবে। দ্বিতীয় ফুঁকে সবাই মরে পড়ে যাবে। তৃতীয় ফুঁকের পর সবাই জীবিত হয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হবে। তারপর প্রথম ফুঁকের বিস্তারিত অবস্থা বর্ণনা করে তিনি বলেছেন, সে সময় পৃথিবীর অবস্থা হবে এমন একটি নৌকার মতো যা ঢেউয়ের আঘাতে টলমল করছে অথবা এমন ঝুলন্ত প্রদীপের মতো যা বাতাসের ঝটকায় প্রচণ্ডভাবে দুলছে। সে সময় পৃথিবী পৃষ্ঠে বসতকারীরা যে অবস্থার সম্মুখীন হবে তার চিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে অংকন করা হয়েছে। যেমনঃ
فَإِذَا نُفِخَ فِي الصُّورِ نَفْخَةٌ وَاحِدَةٌ – وَحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَاحِدَةً – فَيَوْمَئِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
“যখন সিংগায় এক ফুঁক দেয়া হবে এবং যমীন ও পাহাড় তুলে এক আঘাতে ভেঙে দেয়া হবে তখন সে বিরাট ঘটনাটি ঘটে যাবে।” ( আল হা-ক্কাহ ১৩-১৫)
إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا – وَأَخْرَجَتِ الْأَرْضُ أَثْقَالَهَا – وَقَالَ الْإِنْسَانُ مَا لَهَا
“যখন পৃথিবীকে পুরোপুরি প্রকম্পিত করে দেয়া হবে এবং সে তার পেটের বোঝা বের করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে আর মানুষ বলবে, এর কি হলো? ” ( আয যিলযাল ১-৩ )
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ – تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ – قُلُوبٌ يَوْمَئِذٍ وَاجِفَةٌ – أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ
“যেদিন প্রকম্পনের একটি ঝটকা একেবারে নাড়িয়ে দেবে এবং এরপর আসবে দ্বিতীয় ঝটকা। সেদিন অন্তর কাঁপতে থাকবে এবং দৃষ্টি ভীতি বিহ্বল হবে।” ( আন নাযিআত ৫-৯)
إِذَا رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا – وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسًّا – فَكَانَتْ هَبَاءً مُنْبَثًّا
“যে দিন পৃথিবীকে মারাত্মকভাবে ঝাঁকিয়ে দেয়া হবে এবং পাহাড় গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ধূলির মতো উড়তে থাকবে।” ( আল ওয়াকিআহ, আয়াত-৪-৬ )
فَكَيْفَ تَتَّقُونَ إِنْ كَفَرْتُمْ يَوْمًا يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا – السَّمَاءُ مُنْفَطِرٌ بِهِ
“যদি তোমরা নবীর কথা না মানো, তাহলে কেমন করে রক্ষা পাবে সেদিনের বিপদ থেকে, যা বাচ্চাদেরকে বুড়া করে দেবে এবং যার প্রচণ্ডতায় আকাশ ফেটে চৌচির হয়ে যাবে? ” ( আল মুযযাম্মিল, আয়াত-১৭-১৮ )
যদিও কোন কোন মোফাসসিরের মতে এ কম্পনটি হবে এমন সময়ে যখন মৃতরা জীবিত হয়ে নিজেদের রবের সামনে হাজির হবে এবং এর সমর্থনে তাঁরা একাধিক হাদীসও উদ্ধৃত করেছেন তবুও কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনা এব হাদীস গ্রহণ করার পথে বাধা। কুরআন এর যে সময় বর্ণনা করেছে তা হচ্ছে এমন এক সময় যখন মায়েরা শিশু সন্তানদের দুধ পান করাতে করাতে তাদেরকে ফেলে রেখে পালাতে থাকবে এবং গর্ভবতীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। এখন একথা সুস্পষ্ট যে, আখেরাতের জীবনে কোন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করাবে না এবং কোন গর্ভবতীর গর্ভপাত হবার কোন সুযোগও সেখানে থাকবে না। কারণ, কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনা অনুযায়ী সেখানে সবরকমের সম্পর্ক খতম হয়ে যাবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত মর্যাদা নিয়ে আল্লাহর সামনে হিসেব দিতে দাঁড়াবে। কাজেই আমি পূর্বেই যে হাদীস উদ্ধৃত করেছি সেটিই অগ্রাধিকার লাভের যোগ্য। যদিও তার বর্ণনা পরম্পরা দুর্বল কিন্তু কুরআনের সমর্থন তার দুর্বলতা দূর করে দেয়। অন্যদিকে অন্যান্য হাদীসগুলো বর্ণনা পরম্পরার দিক দিয়ে বেশী শক্তিশালী হলেও কুরআনের বর্ণনার সাথে গরমিল থাকায় এগুলোকে দুর্বল করে দেয়।
# আয়াতে مُرْضِعَ এর পরিবর্তে مُرْضِعَة শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষার দিক দিয়ে উভয় শব্দের অর্থের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে, مُرْضِعَ অর্থ হচ্ছে যে দুধ পান করায় এবং مُرْضِعَة এমন অবস্থাকে বলা হয় যখন কার্যত সে দুধ পান করাতে থাকে এবং শিশু তার স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে থাকে। কাজেই এখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে সেটি হচ্ছে এই যে, যখন কিয়ামতের সে কম্পন শুরু হবে, মায়েরা নিজেদের শিশু সন্তানদেরকে দুধ পান করাতে করাতে ফেলে দিয়ে পালাতে থাকবে এবং নিজের কলিজার টুকরার কি হলো, একথা কোন মায়ের মনেও থাকবে না।
# একথা সুস্পষ্ট যে, এখানে কিয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করা বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্য নয়। বরং আল্লাহর আযাবের ভয় দেখিয়ে তাঁর গযবের কারণ হয় এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেয়াই উদ্দেশ্য। এজন্য কিয়ামতের এ সংক্ষিপ্ত অবস্থা বর্ণনার পর সামনের দিকে আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা শুরু হয়েছে।
# সামনের দিকের ভাষণ থেকে জানা যায়, এখানে আল্লাহ সম্পর্কে তাদের যে বিতর্কের ওপর আলোচনা করা হচ্ছে তা আল্লাহর সত্তার ও তাঁর অস্তিত্ব সম্পর্কিত নয় বরং তাঁর অধিকার ও ক্ষমতা-ইখতিয়ার এবং তাঁর পাঠানো শিক্ষাবলী সম্পর্কিত ছিল। নবী ﷺ তাদের কাছ থেকে তাওহীদ ও আখেরাতের স্বীকৃতি চাচ্ছিলেন। এ বিষয়েই তিনি তাদের সাথে বিতর্ক করতেন। এ দু’টি বিশ্বাসের ওপর বিতর্ক শেষ পর্যন্ত যেখানে গিয়ে ঠেকতো তা এই ছিল যে, আল্লাহ কি করতে পারেন এবং কি করতে পারেন না, তাছাড়া এ বিশ্ব-জাহানের প্রভুত্বের কর্তৃত্ব কি শুধুমাত্র এক আল্লাহরই হাতে ন্যস্ত অথবা অন্য কতক সত্তারও এখানে প্রভুত্বের কর্তৃত্ব আছে?
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলােচনা : এ সূরার আয়াতগুলাের বক্তব্য থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, এ সূরাটা মক্কী ও মাদানী মিশ্রিত। বিশেষত যুদ্ধের অনুমতি দান সম্বলিত আয়াতগুলাে অর্থাৎ ৩৮-৪১ নং আয়াত এবং সমান প্রতিশােধ গ্রহণের অনুমতি সংক্রান্ত আয়াত অর্থাৎ ৬০ নং আয়াত সুনিশ্চিতভাবে মাদানী। কেননা মুসলমানদেরকে যুদ্ধ ও খুনের বদলায় খুনের অনুমতি হিজরতের পরে ছাড়া দেয়া হয়নি। হিজরতের পরে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই এই অনুমতি দেয়া হয়। হিজরতের আগে যখন একদল মদীনাবাসী মক্কায় এসে ইসলাম গ্রহণ করলো, তখন তারা রসূল(স.)-এর কাছে মিনার অধিবাসীদের ওপর আক্রমণ করা ও তাদেরকে হত্যা করার অনুমতি চাইলাে। রসূল(স.) বললেন, ‘আমাকে এর আদেশ দেয়া হয়নি।’ পরে যখন মদীনা ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হলো, তখন আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের ওপর থেকে মােশরেকদের অত্যাচার ও নির্যাতন প্রতিহত করা, ঈমানের স্বাধীনতা রক্ষা করা ও মুসলমানদের এবাদাত করার অধিকার রক্ষার জন্যে যুদ্ধ করার বিধান জারী করলেন। মক্কী সূরাগুলাের ন্যায় আল্লাহর একত্ব, কেয়ামতের ভয় জন্মানাে, পরকালের সত্যতা প্রতিষ্ঠা, শিরক খন্ডন, কেয়ামতের দৃশ্যাবলী এবং প্রকৃতির রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর নিদর্শনাবলী ইত্যাদি এ সূরার প্রধান আলােচ্য বিষয়। এর পাশাপাশি যুদ্ধের অনুমতি দান, ইসলামী এবাদাত ও পবিত্র স্থানগুলাে সংরক্ষণ, আগ্রাসন প্রতিরােধকারীর জন্যে আল্লাহর সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এবং আল্লাহর পথে জিহাদের আদেশের বিষয়গুলাে আলােচিত হয়েছে। সূরার সার্বিক প্রেক্ষাপটে যে ভাবধারাটা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান, সেটা হচ্ছে শক্তি, তেজোদ্দীপ্ততা, দুর্ধর্ষতা, আতংক, সংঘাত, সতর্কীকরণ, ভীতি প্রদর্শন, আল্লাহভীতির প্রেরণা সৃষ্টি ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধকরণের ভাবধারা। এই ভাবধারা বিভিন্ন দৃশ্য ও উদাহরণের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। তন্মধ্যে কেয়ামতের দৃশ্যটা এক ভয়াবহ, লােমহর্ষক ও সংঘাতময় দৃশ্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানব জাতি, তােমাদের রবকে ভয় করাে। নিশ্চয় কেয়ামতের কম্পন এক ভয়াবহ ব্যাপার। যেদিন তােমরা তা দেখবে, সেদিন প্রত্যেক দুধমাতা তার দুগ্ধপােষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত ঘটবে…'(আয়াত ১-২) অনুরূপ আযাবের দৃশ্যের মধ্য দিয়েও এ ভাবধারা ফুটে উঠেছে। যেমন, ‘যারা কুফরী করেছে, তাদেরকে আগুনের পােশাক পরানাে হবে, তাদের মাথার ওপর দিয়ে এমন গরম পানি ঢালা হবে, যার দরুন তাদের পেটের নাড়িভুড়ি ও শরীরের চামড়া গলে যাবে।'(আয়াত ১৯-২২) আল্লাহর সাথে যারা শরীক করে তাদের উদাহরণের মধ্য দিয়েও এ ভাবধারার প্রতিফলন ঘটেছে। যথা, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে, সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়লাে। তারপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেলাে…'(আয়াত ৩১) আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাহায্য সম্পর্কে হতাশ হয়, তার আচরণের উদাহরণ দেয়া হয়েছে এভাবে, ‘যে ব্যক্তি মনে করে যে, আল্লাহ তায়ালা রসূলকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে কখনাে সাহায্য করবেন না, সে যেন আকাশ পর্যন্ত একটা রশি টানিয়ে নেয়, তারপর তা কেটে দেয়। অতপর সে যেন ভেবে দেখে তার এ কৌশল তার আক্রোশ দূর করে কিনা'(আয়াত ১৫) আর যেসব নগরবাসীকে তাদের অত্যাচার অনাচারের কারণে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, তাদের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে ৪৫ নং আয়াতে। এসব ভীতিপ্রদ দৃশ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন আদেশ ও বিধি নিষেধ, শক্তি দ্বারা প্রতিরােধের যৌক্তিকতা, সাহায্য ও বিজয়ের আশ্বাস এবং আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও তথাকথিত শরীকদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা বর্ণনা করা হয়েছে সূরার বিভিন্ন জায়গায়। প্রথমে আদেশ ও বিধি নিষেধ জারী করা হয়েছে এভাবে, ‘যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলাে তাদেরকে- যাদের ওপর আক্রমণ করা হয়'(আয়াত ৩৯-৪১) দ্বিতীয় পর্যায়ে তথাকথিত শরীকদের অক্ষমতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে, ‘হে মানব জাতি, একটা উদাহরণ দেয়া হয়েছে শােনাে। তােমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের উপাসনা করে, তারা একটা মাছিও সৃষ্টি করতে পারে না…'(আয়াত ৭৩, ৭৪) আর এই দুই বিষয়ের মাঝখানে রয়েছে তাকওয়া, আল্লাহভীতি ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের নির্দেশাবলী, যেমন, ‘হে মানব সকল, তােমাদের প্রভুকে ভয় করাে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে মর্যাদা দান করে, তার সে কাজ অন্তরের আল্লাহভীতির অন্তর্ভুক্ত…’ অতএব তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ, তার কাছেই আত্মসমর্পণ করাে। সুসংবাদ দাও সেই অনুগতদেরকে, যাদের সামনে আল্লাহর প্রসংগ আলােচিত হলে তাদের মন ভয়ে কেঁপে ওঠে… (কোরবানীর জন্তুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌছে না, আল্লাহর কাছে পৌছে শুধু তােমাদের ভয়।’ এছাড়াও রয়েছে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীর পর্যালােচনা, কেয়ামতের বিভিন্ন দৃশ্য, পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ধ্বংসের বৃত্তান্ত, আরাে রয়েছে বিভিন্ন উদাহরণ, শিক্ষামূলক, বর্ণনামূলক ও মননশীল পর্যালােচনা। এ সবের উদ্দেশ্য হলাে পাঠক শ্রোতার মনমগযে ঈমান, আল্লাহভীতি, আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের প্রেরণা সৃষ্টি করা। এই হলাে সূরার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য। সমগ্র সূরাটাকে মােটামুটিভাবে চারটি অধ্যায়ে বিভক্ত করা যায় । প্রথম অধ্যায়টা শুরু হয়েছে আল্লাহকে ও কেয়ামতের ভয়াবহ ভূমিকম্প ও অন্যান্য বিভীষিকাময় দৃশ্যাবলীকে ভয় করার জন্যে সমগ্র মানব জাতিকে সর্বাত্মক আহ্বান জানানাের মধ্য দিয়ে। তারপর এই ভীতির পটভূমিতে আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে না জেনে শুনে তর্ক করার সমালােচনা করা হয়েছে। নিন্দা করা হয়েছে সেই অভিশপ্ত শয়তানের অনুসরণের যার অনুসরণে বিপথগামিতা অনিবার্য। তারপর মাতৃগর্ভে মানব ভ্রুণের পর্যায়ক্রমিক রূপান্তর ও বিবর্তন এবং উদ্ভিদের জীবন সম্পর্কে পর্যালােচনা করে তা দ্বারা আখেরাতের প্রমাণ দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রাণীর মাঝে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রমাণ করা হয়েছে। আর আবহমান কাল ব্যাপী বিরাজিত এই পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের সাথে। আল্লাহর মৃতকে জীবিত করার ক্ষমতা, তার অসীম ক্ষমতা, কেয়ামতের অনিবার্যতা, কবর থেকে মানুষের জীবিত হয়ে পুনরুত্থানের মাঝে গভীর সম্পর্ক দেখানাে হয়েছে। এ সবই চিরন্তন রীতি, শাশ্বত সত্য এবং প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। অতপর বিশ্ব প্রকৃতির অভ্যন্তরে আল্লাহ তায়ালা ও আখেরাতের এতাে প্রমাণ থাকা সত্তেও কোনাে যুক্তি-প্রমাণ ও জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার কঠোর সমালােচনা করা হয়েছে। সমালােচনা করা হয়েছে পার্থিব লাভ ক্ষতির নিরীখে আকীদা বিশ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের। বিপদ মুসিবতে পড়লেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কারাে আশ্রয় গ্রহণ ও সাহায্য প্রার্থনা করার এবং আল্লাহর সাহায্য সম্পর্কে হতাশ হওয়ার। এই অধ্যায়টার সমাপ্তি টানা হয়েছে ও সমালােচনা করা হয়েছে এই বলে যে, বিপথগামিতা ও সুপথগামিতা আল্লাহর হাতেই নিবন্ধ এবং বিবিধ রকমের আকীদা বিশ্বাস অবলম্বনকারীদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালাই কেয়ামতের দিন নিষ্পত্তি করে দেবেন। এই পর্যায়ে কাফেরদের কঠিন শাস্তি ও মােমেনদের বিপুল নিয়ামতের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তির সাথে সাথে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করা হচ্ছে। যারা কুফরী করেছে এবং আল্লাহর পথ থেকে ও মাসজিদুল হারাম থেকে জনগণকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পর্কেই আলােচনা এসেছে এ অধ্যায়ের শুরুতে। এই মাসজিদুল হারামকে আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষের জন্যে তৈরী করেছেন, চাই এর স্থায়ী অধিবাসী হােক বা অস্থায়ী অধিবাসী হােক। এই প্রসংগে তিনি কাবাঘর নির্মাণ, কাবাঘর কেক তাওহীদের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা ও শিরকের নােংরামি থেকে পবিত্র করার জন্যে হযরত ইবরাহীম(আ.)-কে নির্দেশ দিয়েছেন। হজ্জের কিছু বিধি আলােচনা করার পর অন্তরে আল্লাহভীতি জাগিয়ে তােলার ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়েছে। কেননা এটাই হলো মূল উদ্দেশ্য আর এই অধ্যায়টার উপসংহার টানা হয়েছে একমাত্র আল্লাহকে হুকুমদাতা প্রভু মেনে নেয়ার অপরাধে মােমেনদের ওপর আগ্রাসন চালানাে হলে তা প্রতিহত করার জন্যে লড়াই করার অনুমতি দানের মাধ্যমে। তৃতীয় অধ্যায়টার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পূর্ববর্তী যুগের কাফেরদের পক্ষ থেকে নবীদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানের কিছু নমুনা ও তাদের ধ্বংসের কাহিনী। এগুলাে তুলে ধরার উদ্দেশ্য ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহর চিরাচরিত নীতি বর্ণনা করা, ক্রমাগত বিরােধিতা ও উপেক্ষায় বিব্ৰত রাসূল(স.) ও মুসলমানদের সান্ত্বনা দান ও চূড়ান্ত বিজয়ের আশ্বাস দান। অনুরূপভাবে দাওয়াতের বিভিন্ন পর্যায়ে নবী ও রসূলের বিরুদ্ধে শয়তানের নানা ধরনের কুটিল ষড়যন্ত্র, তাদের দাওয়াতের পথে টিকে থাকার জন্যে আল্লাহর সাহায্য। তাঁর আয়াতগুলােকে অবিকৃতভাবে বহাল রাখার পদক্ষেপও এ অধ্যায়ে আলােচিত হয়েছে, যাতে মােমেনদের ঈমান দৃঢ় হয় এবং দুর্বল ঈমানের অধিকারীরা ও অহংকারীরা কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। সর্বশেষ অধ্যায়টাতে আলােচিত হয়েছে আগ্রাসন ও অত্যাচারের শিকার সংগ্রামরত মুসলমানদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে আল্লাহর প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতির উল্লেখের অব্যবহিত পরই প্রকৃতির জগতে মহান আল্লাহর অসীম শক্তির যেসব নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে তার বিবরণ দেয়া হয়েছে। আর এরই পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে মােশরেকদের উপাসিত দেব-দেবীর অক্ষমতার কথা। অতপর এক আল্লাহর আনুগত্য, আল্লাহর পথে যথাযথভাবে জিহাদ করা। একমাত্র আল্লাহকেই সর্বাবস্থায় আঁকড়ে ধরা এবং হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর আমল থেকে যে আকীদা ও আদর্শের প্রতি তার অনুগত রয়েছে তার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পালনে তৎপর হওয়ার জোরদার আহ্বান জানানাের মধ্য দিয়ে এই অধ্যায় ও সূরার সমাপ্তি টানা হয়েছে। এভাবে সূরার আলােচিত বিষয়গুলাের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সমন্বিত ধারাবাহিকতা সুরক্ষিত হয়েছে। এবার প্রথম অধ্যায়টার তাফসীরে মনােনিবেশ করছি।
*কেয়ামতের ভয়াবহ পরিস্থিতি : ‘হে মানব জাতি, তােমাদের প্রতিপালককে ভয় করাে, নিশ্চয়ই কেয়ামতের ভূকম্পন অত্যন্ত ভয়ংকর ব্যাপার…'(আয়াত ১-২) এক নিদারুণ ভীতিপ্রদ দৃশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সমগ্র মানব জাতিকে আহ্বান জানিয়ে শুরু হয়েছে এই মন কাঁপানো দৃশ্য বর্ণনা। প্রথম আয়াতে ‘হে মানব জাতি’ বলে সম্বােধন করে আল্লাহকে ভয় করতে ও কেয়ামতের বিপর্যয়কর দিন সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। এভাবে প্রথমে সংক্ষেপে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। ওই ভাষায় প্রকাশ করা দুসাধ্য এমন এক ভীতিপ্রদ অজানা ঘটনার আভাষ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, ‘ওটা একটা ভূকম্পন এবং সেই ভূমিকম্প একটা ভয়ংকর ব্যাপার।’ এর কোনাে সুনির্দিষ্ট স্বরূপ বা সংজ্ঞা দেয়া হয়নি। এরপর একে একে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া শুরু হয়েছে। এ বিবরণে দেখা যায়, পূর্ববর্তী আয়াতের বর্ণনার চেয়েও তা ভয়াবহ। এ যেন এমন একটা ঘটনা, যা একজন মাকে তার দুগ্ধপােষ্য শিশুর কথা ভুলিয়ে দেয়, সে চোখ মেলে তাকায়, কিন্তু কিছুই দেখতে পায় না, সে কর্মতৎপর, কিন্তু হতবুদ্ধি ও দিশেহারা। এ যেন এমন এক দৃশ্য, যেখানে গর্ভবতীদের ভয়ের আতিশয্যে গর্ভপাত ঘটে যায়, যেখানে মানুষকে মাতাল বলে মনে হয় অথচ আসলে তারা মাতাল নয়। তাদের হতভম্বসুলভ দৃষ্টিতে এবং দিশেহারার মতাে চলাফেরায় মাতলামির আলামত ফুটে ওঠে। এসব বিচিত্র দৃশ্যে পরিপূর্ণ ঘটনা যেন তেলাওয়াতের মুহুর্তে চোখে দেখা যায়, কল্পনায় ভাসে, আবার আতংকে তা মন থেকে অপসৃত হয়ে যায়। ফলে দৃশ্যটা পূর্ণতা লাভ করে না। কেয়ামতের এ আতংকময় দৃশ্যকে তার আকৃতি ও আয়তন দিয়ে মাপা যায় না, তবে মানব মনের ওপর তার যে প্রভাব পড়ে, তা দিয়ে পরিমাপ করা যায়। যেমন মা কর্তৃক স্বীয় দুগ্ধ পানরত শিশুকে ভুলে যাওয়া একমাত্র এমন আতংকের কারণেই সম্ভব, যা তার হুশ জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে দেয়। আনুরূপভাবে গর্ভবতীর গর্ভপাত ঘটা এবং প্রকৃত মানুষেরও মাতালের মতাে হয়ে যাওয়াও কেবল আতংকের তীব্রতার দরুণই সম্ভবপর হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহর আযাব বড়ােই সাংঘাতিক।’ বস্তুত এ এক লোমহর্ষক ও হৃদয় কাঁপানাে দৃশ্য। এহেন ভয়ংকর ও আতংকজনক দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে বলা হচ্ছে যে, এসব সত্তেও এমন বহু লােক রয়েছে, যারা আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হবার স্পর্ধা দেখায় এবং আল্লাহকে ভয় করার কোনাে তাগিদ অনুভব করে না। (আয়াত ৩-৪) আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া বলতে আল্লাহর অস্তিত্ব, একত্ব, সার্বভৌমত্ব ও সর্বময় ক্ষমতা, সর্বাত্মক জ্ঞান বা তার অন্য যে কোনাে গুণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিতর্ক করা বুঝায়। যে ভয়াবহ দিন মানব জাতির জন্যে অপেক্ষা করছে এবং যে দিনের বিচার ফয়সালা ও আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া একমাত্র আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির ওপরই নির্ভরশীল, সেই দিনের কোনাে ভয়ভীতির তােয়াক্কা না করে এইসব জিনিসের যে কোনাে একটা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া কোনাে বিবেকবান ও সুস্থ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের পক্ষে বড়ােই বিস্ময়কর। এই বিতর্ক কোনাে জ্ঞান বুদ্ধির ভিত্তিতে করা হলেও একটা কথা ছিলাে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ অজ্ঞতা ও মূর্খতা প্রসূত বিতর্ক। এ বিতর্কের পেছনে রয়েছে যুক্তি ও জ্ঞানের পরিবর্তে নিছক ধৃষ্টতা ও শয়তানের অনুসরণজনিত বিভ্রান্তি। এ ধরনের লােকেরা নিছক ঝোকের বশে ও ঔদ্ধত্যের বশে আল্লাহকে নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়ে থাকে। ‘আর বিভ্রান্ত শয়তানের অনুসরণ করে।’ অর্থাৎ সত্যদ্রোহী, একগুঁয়ে, হঠকারী শয়তানের অনুসরণ করে। ‘তার ভাগ্যে এটাই বরাদ্দ হয়ে আছে যে, যে ব্যক্তি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে তাকে বিপথগামীই করবে এবং জাহান্নামের আযাবের দিকে নিয়ে যাবে।’ অর্থাৎ শয়তানের পক্ষে এটাই অবধারিত যে, সে তার অনুসারীকে সত্য ও ন্যায়ের বিপরীত পথে চালাবে ও জাহান্নামের আযাবের শিকার বানাবে। এখানে শয়তান কর্তৃক জাহান্নামের আযাবের দিকে নিয়ে বুঝাতে ‘হেদায়াত’ শব্দটা প্রয়ােগ করা হয়েছে কটাক্ষপূর্ণ পরিহাসচ্ছলে । ভেবে দেখুন, শয়তান কেমন সর্বনাশা হেদায়াত করে থাকে। তারপর কি মানুষ আখিরাত সম্পর্কে সংশয়াপন্ন ও সন্দিহান?
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
নামকরণ:
উক্ত সূরাটিতে হজ্জ সংক্রান্ত বিধি-বিধান আলোচনা করা হয়েছে বিধায় এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে সূরাতুল হজ্জ। এ সূরাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূরা। সূরার শুরুতে কিয়ামতের ভয়াবহতা, শয়তানের অনুসরণের খারাপ পরিণতি, মানব সৃষ্টির প্রক্রিয়া এবং যাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়টা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। সকল সৃষ্টি আল্লাহর ইবাদত করে, কিন্তু একশ্রেণির মানুষ সেসব সৃষ্টির ইবাদত করে, মূলত তারা নির্বোধ, ইবরাহীম (عليه السلام) ও তাঁর সন্তান ইসমাঈল (عليه السلام) -এর কাবা নির্মাণ ও হজ্জের ঘোষণা এবং কুরবানীর বিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও সূরার শেষের দিকে যারা অন্যায়ভাবে নির্যাতিত হবে তাদের জন্য জিহাদ করা, কিসসাতুল গারানীক সম্পর্কে সতর্ক করা এবং যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে তাদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে।
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
সূরার প্রারম্ভিকাতেই আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীর সকল মানুষকে সতর্ক করে বলছেন, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করার মাধ্যম হল তাঁর নির্দেশাবলী পালন করা এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে বিরত থাকা। কারণ কিয়ামতের প্রকম্পন ভয়াবহ জিনিস। মানুষের মাঝে কঠিন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। আতঙেঙ্কর ভয়াবহতা পরের আয়াতে উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: দুগ্ধদানকারিণী মা তার দুগ্ধপোষ্য শিশুর কথা ভুলে যাবে, গর্ভবতী নারীর কখন গর্ভপাত হবে বুঝতেও পারবে না, এমনকি মানুষ নেশাগ্রস্ত হলে তার অবস্থা যেমন হয় কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে তাদের অবস্থা সেরূপ হবে। কিয়ামতের ভয়াবহতা অন্যত্র তুলে ধরে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَھَاﭐﺫ وَاَخْرَجَتِ الْاَرْضُ اَثْقَالَھَاﭑﺫ وَقَالَ الْاِنْسَانُ مَا لَھَاﭒﺆ یَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ اَخْبَارَھَا)
“যখন পৃথিবীকে তার কম্পনে প্রকম্পিত করা হবে, এবং যখন পৃথিবী তার বোঝা বের করে দেবে, আর মানুষ বলবে, এর কী হল? সেদিন সে তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে।” (সূরা যিলযাল ৯৯:১-৪)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَّحُمِلَتِ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً لا - فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ)
“আর পৃথিবী ও পর্বতমালাকে উত্তোলন করা হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে। সেদিন যা সংঘটিত হওয়ার তা অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:১৪-১৫)
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন: হে আদম! তিনি বলবেন: হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার দরবারে হাজির আছি। অতঃপর উচ্চস্বরে ঘোষণা করা হবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তুমি তোমার সন্তানদের মধ্য যারা জাহান্নামী তাদেরকে বের কর। তিনি জিজ্ঞেস করবেন: হে আমার প্রতিপালক! কত হাজারের মধ্যে থেকে কত জনকে? তিনি উত্তরে বলবেন: প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শ নিরানব্বই জনকে। ঐ সময় গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে এবং স্তন্যদাত্রী তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে। আর শিশুরা হয়ে যাবে বৃদ্ধ। মানুষকে সেদিন দেখে মাতাল মনে হবে যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলার কঠিন শাস্তির কারণেই তাদের এ অবস্থা হবে। এ কথা শুনে সাহাবীদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বলেন: ইয়া‘জূজ-মা‘জুজের মধ্য হতে নয়শত নিরানব্বই জন (জাহান্নামী) এবং তোমাদের মধ্যে হতে একজন (জান্নাতী)। তোমরা লোকদের মধ্যে এমনই যেমন সাদা রঙের গরুর কয়েকটি কালো লোম এর পার্শ্বদেশে থাকে বা কালো রঙের গরুর কয়েকটি সাদা লোম এর পার্শ্বদেশে থাকে। তারপর তিনি বলেন: আমি আশা করি যে, সমস্ত জান্নাতীদের মধ্যে তোমরাই হবে এক চতুর্থাংশ। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা তখন আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর দিলাম। আবার বললেন: জান্নাতীদের মধ্যে তোমরাই হবে এক তৃতীয়াংশ। এবারও আমরা তাকবীর ধ্বনি করলাম। এরপর তিনি আবার বললেন: তোমরাই হবে জান্নাতীদের অর্ধাংশ। আমরা এবারও তাকবীর ধ্বনি পাঠ করলাম। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪১, ৬৫৩০, ৭৪৮৩, সহীহ মুসলিম হা: ২০২২) কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কিত অসংখ্য আয়াত রয়েছে; যেমন সূরা ওয়াকিয়ার ৪-৫ নং আয়াত, সূরা নাযিয়াতের ৬-৮ নং আয়াত, সূরা মু’মিনের ৩২-৩৩ নং আয়াত, সূরা আহযাবের ১০-১১ নং আয়াত ইত্যাদি । কিয়ামতের এ ভয়াবহ প্রকম্পন কখন হবে তা নিয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। কেউ বলেছেন মানুষ হাশরের উদ্দেশ্যে কবর থেকে উত্থিত হওয়ার পূর্বে। কেউ বলেছেন, শেষ যুগে। আবার কেউ বলেছেন হাশরের ময়দানে ইত্যাদি। তবে অধিকাংশ বিদ্বান বলেছেন কবর থেকে উঠে হাশরের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার পর। বলা হয়, কিয়ামতের দিন তো কোন স্তন্যদানকারী থাকবে না এবং কোন গর্ভবতী মহিলাও থাকবে না, তাহলে কিভাবে আয়াতে তা বলা হল। উত্তর, এটা একটি উপমা দিয়ে বলা হয়েছে যে, সেদিন এরূপ কোন মহিলা থাকলে তাদের অবস্থা অনুরূপ হতো। অথবা সেদিন এরূপ মহিলা বানানো হবে।
সুতরাং কিয়ামতের এরূপ ভয়াবহ অবস্থা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সঠিক ঈমান ও সৎ আমল নিয়ে যেতে হবে। কিয়ামতের ভয়াবহতা মু’মিনের দুশ্চিন্তার কারণ হবে না। তারা নিরাপদে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করা যাবে না।
২. কিয়ামতের দিনের অবস্থা হবে খুবই ভয়াবহ।
৩. আদম সন্তানের হাজারে একজন জান্নাতে যাবে।
৪. সমস্ত জান্নাতবাসীর অর্ধেক হবে উম্মাতে মুহাম্মাদী হতে।
৫. কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে হলে ঈমান আনয়ন অতঃপর বেশি বেশি সৎ আমল করতে হবে।
৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ…..)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা একশ্রেণির মানুষের একটা মন্দ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা সঠিক দলীল প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে এমন কথা বলে ও মন্তব্য করে যা তাঁর সত্তার সাথে উপযোগী নয়। যেমন বলে থাকে, আল্লাহ তা‘আলার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে, আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান, কুরআন হল পূর্ব যুগের কল্প-কাহিনী ইত্যাদি। মূলত এরা শয়তানের অনুসারী, শয়তান তাদের কাছে এসকল খারাপ চিন্তা-চেতনা জাগিয়ে দেয় যাতে সঠিক পথের অনুসারীদের সাথে বিবাদ করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী।
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِي اللّٰهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًي وَّلَا كِتٰبٍ مُّنِيْرٍ – وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ط أَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطٰنُ يَدْعُوْهُمْ إِلٰي عَذَابِ السَّعِيْرِ)
“মানুষের মধ্যে কতক এরূপও আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করে কোন জ্ঞান, কোন পথনির্দেশ ও কোন উজ্জ্বল গ্রন্থ ছাড়াই। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা তার অনুসরণ কর যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন, তখন তারা বলে, বরং আমরা তার অনুসরণ করব, যার ওপর আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহ্বান করতে থাকে তবুও কি?” (সূরা লুকমান ৩১:২০-২১)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنَّ الشَّيٰطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلٰٓي أَوْلِيَا۬ئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ ج وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ)
“নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে গোপনীয়ভাবে জানিয়ে দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।” (সূরা আন‘আম ৬:১২১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সতর্ক করে বলছেন, এ কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, যে ব্যক্তি শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে এবং তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত রবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ فَإِنَّه۫ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَا۬ءِ وَالْمُنْكَرِ)
“আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।” (সূরা নূর ২৪:২১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا ط إِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَه۫ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ)
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহ্বান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) দোযখীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” (সূরা ফাতির ৫:৬)
অতএব কখনো শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ সে মানুষের প্রকাশ্য শত্র“। সে সবর্দা মানুষের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে ঐ বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়।
২. শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ সে মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদেরকে সংযমশীল ও ধর্মভীরু হওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং আগমনকারী ভয়াবহ ব্যাপার হতে সতর্ক করছেন। বিশেষ করে তিনি তাদেরকে সতর্ক করছেন কিয়ামতের দিনের প্রকম্পন হতে। এটা ঐ প্রকম্পমান যা কিয়ামত সংঘটি হওয়ার অবস্থায় উঠবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রকম্পিত হবে, এবং পৃথিবী যখন ওর ভার বের করে দিবে।” (৯৯৪ ১-২) মহিমময় আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পর্বতমালা সমেত পৃথিবী উৎক্ষিপ্ত হবে এবং একই ধাক্কায় চূর্ণ-বিচূণ হয়ে যাবে। সেইদিন সংঘটিত হবে মহাপ্রলয়।” (৬৯:১৪-১৫) অন্যত্র বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে পৃথিবী এবং পর্বতমালা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়বে।” (৫৬:৪-৫) কতকলোক বলেছেন যে, এই প্রকম্পন হবে দুনিয়ার শেষ অবস্থায় ও কিয়ামতের প্রাথমিক অবস্থায়। তাফসীরে ইবনু জারীরে আলকামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই প্রকম্পন হবে কিয়ামতের পূর্বে। আমির শা’বীও (রঃ) বলেন যে, এটা হবে দুনিয়াতেই কিয়ামতের পূর্বে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা যখন আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত করেন তখন তিনি সূর’ বা শিংগা সৃষ্টি করেন এবং ওটা তিনি হযরত ইসরাফীলকে (আঃ) প্রদান করেন। হযরত ইসরাফীল (আঃ) ওটা মুখে করে রয়েছেন এবং চক্ষু উপরের দিকে উঠিয়ে আবৃশের দিকে তাকিয়ে আছেন এই অপেক্ষায় যে, কখন আল্লাহর হুকুম হবে এবং তিনি ঐ শিংগায় ফুৎকার দিবেন।” হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ‘সূর বা শিংগা কি জিনিস?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটা একটা শিং।” তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ “ওটা কেমন?” তিনি জবাব দেনঃ “ওটা একটা বড় শিং, যাতে তিন বার ফুঁক দেয়া হবে। প্রথম ফুকে সবাই হতবুদ্ধি ও কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পড়বে। দ্বিতীয় খুঁকে সবাই আল্লাহ তাআলার সামনে দণ্ডায়মান হবে।” বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহর নির্দেশক্রমে হযরত ইসরাফীল (আঃ) তাতে ফুঙ্কার দিবেন যার ফলে সমস্ত যমীন ও আসমানবাসী হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, শুধু তারা নয় যাদেরকে আল্লাহ চাইবেন। নিঃশ্বাস না নিয়েই দীর্ঘক্ষণ ধরে অনবরত হযরত ইসরাফীল (আঃ) তাতে ফুৎকার দিতে থাকবেন। এটাই হলো ঐ ফুৎকার যে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এরা তো অপেক্ষা করছে একটি মাত্র প্রচণ্ড নিনাদের, যাতে কোন বিরাম থাকবে না।” (৩৮:১৫) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেইদিন প্রথম শিংগা ধ্বনি প্রকম্পিত করবে। ওটাকে অনুসরণ করবে পরবর্তী শিংগা ধ্বনি। কত হৃদয় সেদিন সন্ত্রস্ত হবে।” (৭৯:৬-৮) যমীনের ঐ অবস্থা হবে যে অবস্থা তূফানে এবং জলঘূর্ণিতে নৌকার হয়ে থাকে। অথবা যেমন কোন লণ্ঠন আশে লটকানো হয় যাকে বাতাস চারদিকে হেলাতে দোলাতে থাকে। আহা! তখন অবস্থা এই হবে যে, স্তন্যদাত্রী মহিলা তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হয়ে যাবে এবং গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে, শিশু বৃদ্ধ হয়ে পড়বে, শয়তানরা পালাতে শুরু করবে এবং পালাতে পালাতে যমীনের প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কিন্তু সে ফেরেশতাদের মার খেয়ে সেখান হতে ফিরে আসবে। লোকেরা হতবুদ্ধি হয়ে এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করবে। তারা একে অপরকে ডাকতে থাকবে। এজন্যেই এই দিনটিকে কুরআন কারীমে ইয়াওমুত তানাদ’ (ডাকাডাকির দিন) বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের জন্যে আশংকা করছি। কিয়ামত দিবসের যেই দিন তোমরা পশ্চাৎ ফিরে পলায়ন করতে চাইবে, আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাদেরকে রক্ষা করার কেউ থাকবে না; আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যে কোন পথ প্রদর্শক নেই।” (৪০:৩২-৩৩) ঐ দিনই যমীন এক দিক হতে অন্যদিক পর্যন্ত ফেটে যাবে। ঐদিনের ভীতি বিহ্বলতার অনুমান করা যেতে পারে না। আকাশে পরিবর্তন প্রকাশ পাবে। সূর্য ও চন্দ্র কিরণ হীন হয়ে পড়বে। তারকারাজি ঝরে পড়তে থাকবে। চামড়া খসে পড়তে শুরু করবে। জীবিত লোকেরা এসব কিছু দেখতে থাকবে। তবে মৃত লোকেরা এ থেকে সম্পূর্ণ রূপে অজ্ঞাত থাকবে।
মহান আল্লাহর (আল্লাহ যাদেরকে চান তারা ছাড়া যারা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে রয়েছে। সবাই অজ্ঞান হয়ে যাবে এই উক্তি দ্বারা যাদেরকে পৃথক করা হয়েছে যে, তারা অজ্ঞান হবে না তারা হলো শহীদ লোকগুলি। এই ভীতি বিহবলতা। জীবিতদের উপর হবে। শহীদরা আল্লাহ তাআলার নিকট জীবিত রয়েছে এবং তাদেরকে ঐদিনের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন এবং পূর্ণ নিরাপত্তা দান করবেন। আল্লাহর এই শাস্তি শুধু দুষ্ট ও অবাধ্য লোকদের উপর হবে। এটাকেই মহান আল্লাহ এই সূরার প্রাথমিক আয়াতগুলিতে বর্ণনা করেছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ), ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এবং ইবনু আবি হাতিম (রঃ) খুবই লম্বা চওড়াভাবে বর্ণনা করেছেন) হাদীসের এই অংশটুকু এখানে আনয়নের উদ্দেশ্য এই যে, এই আয়াতে যে প্রকম্পনের কথা বলা হয়েছে তা হবে কিয়ামতের পূর্বে। কিয়ামতের দিকে এর সম্বন্ধ করার কারণ হলো ঐ সময় কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী হওয়া। যেমন বলা হয় “কিয়ামতের নিদর্শন সমূহ’ ইত্যাদি। এই সব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ। অথবা এর দ্বারা ঐ প্রকম্পনকে বুঝানো হয়েছে যা কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় হাশরের মাঠে সংঘটিত হবে, যে সময় মানুষ কবর থেকে উঠে ময়দানে একত্রিত হবে। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। এর প্রমাণ হিসেবে বহু হাদীসও রয়েছে।
প্রথম হাদীসঃ হযরত ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সফরে ছিলেন। তাঁর সাহাবীবর্গ (রাঃ) দ্রুতগতিতে চলছিলেন। হঠাৎ করে তিনি উচ্চস্বরে উপরোক্ত আয়াত দু’টি পাঠ করেন। সাবাহীদের কানে এ শব্দ পৌঁছা মাত্রই তারা সবাই তাদের সওয়ারীগুলি নিয়ে তার চতপার্শ্বে একত্রিত হয়ে যান। তাদের ধারণা ছিল। যে, তিনি আরো কিছু বলবেন। তিনি বললেনঃ “এটা কোন দিন হবে তা তোমরা জান কি? এটা হবে ঐদিন যেই দিন আল্লাহ তাআ’লা হযরত আদমকে (আঃ) বলবেনঃ “হে আদম (আঃ)! জাহান্নামের অংশ বের করে নাও।” তিনি বলবেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কতজনের মধ্য হতে কতজনকে বের করবো?” আল্লাহ তাআলা জবাব দিবেনঃ “প্রতি হাযারের মধ্য হতে নয়শ নিরানব্বই জনকে জাহান্নামের জন্যে এবং একজনকে জান্নাতের জন্যে।” এটা শোনা মাত্রই সাহাবীদের অন্তর কেঁপে ওঠে এবং তারা নীরব হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ অবস্থা দেখে তাদেরকে বলেনঃ “দুঃখিত ও চিন্তিত হয়ো না, বরং আনন্দিত হও ও আমল করতে থাকো। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তোমাদের সাথে দু’টি মাখলুক রয়েছে, এ দু’টি মাখলূক যাদের সাথেই থাকে তাদের বৃদ্ধি করে দেয়। অর্থাৎ ইয়াজুজ মাজু। আর বাণী আদমের মধ্যে যারা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ইবলীসের সন্তানরা (জাহান্নামীদের মধ্যে এরাও রয়েছে)।” একথা শুনে সাহাবীদের ভীতি বিহ্বলতা কমে আসে। তখন আবার তিনি বলেনঃ “আমল করতে থাকো এবং সুসংবাদ শুনো। যার অধিকারে মুহাম্মদের (সঃ) প্রাণ রয়েছে তার শপথ! তোমরা তো অন্যান্য লোকদের তুলনায় তেমন, যেমন উটের পার্শ্বদেশের বা জন্তুর হাতের (সামনের পায়ের) দাগ।” (এ রিওয়াইয়াতটি মুসনাদে আহমাদে রয়েছে) এই রিওয়াইয়াতেরই অন্য সনদে রয়েছে যে, এই আয়াতটি সফরের অবস্থায় অবতীর্ণ হয়। তাতে রয়েছে যে, সাহাবীরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহর (সঃ) পূর্ব। ঘোষণাটি (অর্থাৎ হাজারের মধ্যে নয়শ’ ব্রিানব্বই জন জাহান্নামী ও মাত্র একজন জান্নাতী) শুনে কাঁদতে শুরু করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা কাছে কাছেই হও এবং ঠিক ঠাক থাকো। (ভয়ের কোন কারণ নেই। কেননা, জেনে রেখো যে,) প্রত্যেক নবুওয়াতের পূর্বেই অজ্ঞতার যুগ থেকেছে। ঐ যুগের লোকদের দ্বারাই (জাহান্নামীদের) এই সংখ্যা পূরণ হবে। যদি তাদের দ্বারা পূরণ না হয় তবে মুনাফিকরা এই সংখ্যা পূরণ করবে। আমি তো আশা করি যে, জান্নাতীদের এক চতুর্থাংশ হবে তোমরাই।” একথা শুনে সাহাবীগণ ‘আল্লাহু আকবার’ বলেন। এরপর নবী (সঃ) বলেনঃ “এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, তোমরাই এক তৃতীয়াংশ।” এতে সাহাবীরা আবার তাকবীর পাঠ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি আশা রাখি যে, তোমরাই হবে জান্নাতীদের অর্ধেক।” বর্ণনাকারী বলেনঃ “ব্বী (সঃ) পরে দুই তৃতীয়াংশের কথাই বলেছিলেন কিনা তা আমার স্মরণে নেই।” (এ রিওয়াইয়াতটি জামে তিরমিযীতে রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি বিশুদ্ধ) অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তাৰূকের যুদ্ধ হতে ফিরবার পথে মদীনার নিকটবর্তী হয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) (আরবী) (২২:১) এই আয়াতটি পাঠ করেন। তারপর হাদীসটি ইবনু জাদআনের (রঃ) বর্ণনার মতই বর্ণনা করা হয়। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
দ্বিতীয় হাদীসঃ হযরত আনাস (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (আরবী) এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এরপর তিনি ঐ হাদীসের মতই হাদীস বর্ণনা করেন যা হাসান (রঃ) ইমরান (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এটুকুও বর্ণনা করেছেন যে, দানব ও মানবের অধিকাংশ যারা ধ্বংস হয়েছে (তারাও জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত)। (এটা ইবনু আবি হাতিম (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এটাকে মামারের (রঃ) হাদীস হতে দীর্ঘভাবে বর্ণনা করেছেন)
তৃতীয় হাদীসঃ যরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি অনুরূপভাবে হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে তিনি বলেনঃ “আমি আশা করি যে, জান্নাতবাসীদের এক চতুর্থাংশ তোমরাই হবে। তারপর বলেনঃ “আমি আশা রাখি যে, তোমরা হবে জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ।” এরপর আবার বলেনঃ “আমার আশা এই যে, তোমরাই হবে বেহেশতবাসীদের অর্ধাংশ।” এতে সাহাবীগণ অত্যন্ত খুশী হন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আরও বলেনঃ “তোমরা হাজার অংশের এক অংশ।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
চতুর্থ হাদীসঃ হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেনঃ “হে আদম (আঃ)!” তিনি বলবেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আমি আপনার দরবারে হাজির আছি।” অতঃপর উচ্চ স্বরে ঘোষণা করা হবেঃ “আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তুমি তোমার সন্তানদের মধ্যে যারা জাহান্নামী তাদেরকে বের কর।” তিনি জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! কত জনের মধ্য হতে কতজনকে (বের করবো)? তিনি উত্তরে বলবেনঃ “প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শ নিরানব্বই জনকে।” ঐ সময় গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে এবং স্তন্যদাত্রী তার দুগ্ধ পোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে, আর শিশুরা হয়ে যাবে বৃদ্ধ। মানুষকে সেই দিন মাতাল সদৃশ দেখা যাবে, যদিও তারা নেশাগ্রস্ত নয়। আল্লাহর কঠিন শাস্তির কারণেই তাদের এই অবস্থা হবে।” এ কথা শুনে সাহাবীদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “ইয়াজুজ মাজুজের মধ্য হতে নয়শ নিরানব্বইজন (জাহান্নামী) এবং তোমাদের মধ্য হতে একজন (জান্নাতী)। তোমরা লোকদের মধ্যে এমনই যেমন সাদা রঙ এর গরুর কয়েকটি কালো লোম ওর পার্শ্বদেশে থাকে বা কালো রঙ এর গরুর কয়েকটি সাদা লোম ওর পার্শ্বদেশে থাকে। তারপর তিনি বলেনঃ “আমি আশা করি যে, সমস্ত জান্নাতবাসী তোমরাই হবে এক চতুর্থাংশ।” (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা তখন তাকবীর ধ্বনি করলাম। আবার তিনি বলেনঃ “তোমরাই হবে বেহেশতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ।” এবারেও আমরা আল্লাহু আকবার’ বললাম। এরপর তিনি বললেনঃ “জান্নাতবাসীদের অর্ধাংশ হবে তোমরাই।” আমরা এবারেও তাকবীর ধ্বনি করলাম। (এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
পঞ্চম হাদীসঃ হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা একজন ঘোষণাকারীকে পাঠাবেন যিনি ঘোষণা করবেনঃ “হে আদম (আঃ)! আল্লাহ আপনাকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আপনি যেন আপনার সন্তানদের মধ্য হতে জাহান্নামের অংশ বের করেন।” তখন হযরত আদম (আঃ) বলবেনঃ হে আমার প্রতিপালক! তারা কারা?” উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “প্রতি একশ জন হতে নিরানব্বই জনকে।” তখন কওমের একটি লোক বললেনঃ “আমাদের মধ্যকার এই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি কে হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা মানুষের মাঝে তো উটের বুকের একটা চিহ্নের মত।” (এহাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
ষষ্ঠ হাদীসঃ হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন তোমরা শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খত্না বিহীন অবস্থায় আল্লাহর কাছে উত্থিত হবে।” একথা শুনে হযরত আয়েশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! পুরুষ লোক ও স্ত্রীলোক একে অপরের দিকে তাকাবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! ঐ সময়টা হবে খুবই কঠিন ও ভয়াবহ (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে।)” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিয়ামতের দিন বন্ধু তার বন্ধুকে স্মরণ করবে কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “হে আয়েশা (রাঃ)! তিনটি অবস্থায় বা সময় কেউ কাউকেও স্মরণ করবে না। প্রথম হলো আমল ওজন করার সময়, যে পর্যন্ত না ওর কম বা বেশী হওয়া জানতে পারে। দ্বিতীয় হলো, যখন আমলনামা প্রদান করা হবে যে, না জানি তা ডান হাতে প্রদান করা হচ্ছে কি বাম হাতে প্রদান করা হচ্ছে। তৃতীয় হলো ঐ সময়, যখন জাহান্নাম হতে একটি গর্জন বের হবে ও সবকে পরিবেষ্টন করে ফেলবে এবং অত্যন্ত ক্রোধান্বিত অবস্থায় থাকবে। আর বলবেঃ ” তিন প্রকার লোকের উপর আমাকে আধিপত্য দেয়া হয়েছে। প্রথম প্রকার হলো ঐ লোকেরা যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আহ্বান করতো। দ্বিতীয় প্রকারের লোক হলো ওরাই যারা হিসাবের দিনের উপর বিশ্বাস করতো না। আর তৃতীয় শ্রেণীর লোক হলো প্রত্যেক উদ্ধত, হঠকারী এবং অহংকারী।” তাদেরকে জড়িয়ে ফেলবে এবং বেছে বেছে নিজের পেটের মধ্যে ভরে নেবে। জাহান্নামের উপর পুলসিরতি থাকবে যা হবে চুলের চেয়েও বেশী সূক্ষ্ম এবং তরবারীর চেয়েও বেশী তীক্ষ্ণ ওর উপর আঁকড়া ও কাটা থাকবে। আল্লাহ তাআলা যাকে চাইবেন তাকে এ দুটো ধরে ফেলবে। ঐ পুলসিরাত যারা অতিক্রম করবে তারা কেউ কেউ বিদ্যুৎ বেগে ওটা পার হয়ে যাবে, কেউ কেউ চোখের পলকে পার হবে, কেউ পার হবে বায়ুর গতিতে, কেউ অতিক্রম করবে দ্রুতগতি ঘোড়ার মত এবং কেউ পার হবে দ্রুতগতি উটের মত। চতুর্দিকে ফেরেশতারা দাড়িয়ে দুআ করতে থাকবেনঃ “হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দান করুন!” সুতরাং কেউ কেউ তো সম্পূর্ণ ব্রিপিত্তার সাথে পার হয়ে যাবে, কেউ কিছুটা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে রক্ষা পেয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ ও ওর ভয়াবহতা সম্পর্কে আরো বহু হাদীস রয়েছে, যেগুলির জন্যে অন্য স্থান রয়েছে। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবী) (নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার)। ভীতি বিহ্বলতার সময় অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠাকে বলা হয়। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তখন মু’মিনরা পরীক্ষিত হয়েছিল এবং তারা ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়েছিল।” (৩৩:১১)
মহান আল্লাহ বলেনঃ “যে দিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে’ (আরবী) এটা যামীরে শান এর প্রকারভুক্ত। এ কারণেই এর পরে এর তাফসীর রয়েছেঃ ঐ দিনের কাঠিন্যের কারণে স্তন্যদাত্রী মাতা তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষ হয়ে যাবে মাতাল সদৃশ্য। তাদেরকে নেশাগ্রস্ত বলে মনে হবে। কিন্তু আসলে তারা নেশাগ্রস্ত হবে না। বরং শাস্তির কঠোরতা তাদেরকে অজ্ঞান করে রাখবে।
# যারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে অস্বীকার করে আর মনে করে যে, আল্লাহ তাআলা এটার উপর সক্ষম নন এবং তার আদেশ নিষেধ অমান্য করে ও নবীদের (আঃ) আনুগত্য পরিত্যাগ করে হঠকারী এবং উদ্ধত মা ও দানবের আনুগত্য করে, এখানে আল্লাহ তাআলা তাদেরই নিন্দে করছেন। তিনি বলেনঃ যত বিদআতী ও পথভ্রষ্ট লোক রয়েছে তারা সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, বাতিল ও মিথ্যার আনুগত্যে লেগে পড়ে, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সঃ) সুন্নাতকে ছেড়ে দেয় এবং পথভ্রষ্ট লোকদের আনুগত্য করে ও তাদের মনগড়া মতবাদের উপর আমল করে থাকে। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তারা অজ্ঞানতা বশতঃ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে। তাদের কাছে কোন সঠিক জ্ঞান নেই। তারা অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। তারা। এদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং এদেরকে পরিচালিত করবে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ও শাস্তির দিকে। এই আয়াতটি নযর ইবনু হারিসের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এই নরাধম বলেছিলঃ “ আচ্ছা বলতো, আল্লাহ তাআলা সোনালী তৈরী, না রূপার তৈরী, না তামার তৈরী?” তার এই প্রশ্নের কারণে আকাশ কেঁপে ওঠে এবং ঐ খবীছের মাথার উপরিভাগ উড়ে যায়। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একজন ইয়াহুদী এরূপই প্রশ্ন করেছিল। ফলে তৎক্ষণাৎ আসমানী গর্জনে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
# যারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনকে অস্বীকার করে আর মনে করে যে, আল্লাহ তাআলা এটার উপর সক্ষম নন এবং তার আদেশ নিষেধ অমান্য করে ও নবীদের (আঃ) আনুগত্য পরিত্যাগ করে হঠকারী এবং উদ্ধত মা ও দানবের আনুগত্য করে, এখানে আল্লাহ তাআলা তাদেরই নিন্দে করছেন। তিনি বলেনঃ যত বিদআতী ও পথভ্রষ্ট লোক রয়েছে তারা সত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়, বাতিল ও মিথ্যার আনুগত্যে লেগে পড়ে, আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সঃ) সুন্নাতকে ছেড়ে দেয় এবং পথভ্রষ্ট লোকদের আনুগত্য করে ও তাদের মনগড়া মতবাদের উপর আমল করে থাকে। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তারা অজ্ঞানতা বশতঃ আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে। তাদের কাছে কোন সঠিক জ্ঞান নেই। তারা অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের। তারা। এদেরকে পথভ্রষ্ট করবে এবং এদেরকে পরিচালিত করবে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি ও শাস্তির দিকে। এই আয়াতটি নযর ইবনু হারিসের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। এই নরাধম বলেছিলঃ “ আচ্ছা বলতো, আল্লাহ তাআলা সোনালী তৈরী, না রূপার তৈরী, না তামার তৈরী?” তার এই প্রশ্নের কারণে আকাশ কেঁপে ওঠে এবং ঐ খবীছের মাথার উপরিভাগ উড়ে যায়। একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একজন ইয়াহুদী এরূপই প্রশ্ন করেছিল। ফলে তৎক্ষণাৎ আসমানী গর্জনে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#941)
[ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ
The convulsion of the [final] Hour is a terrible thing.]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 01-04
www.motaher21.net
22:1
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ ۚ اِنَّ زَلۡزَلَۃَ السَّاعَۃِ شَیۡءٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱﴾
O mankind, fear your Lord. Indeed, the convulsion of the [final] Hour is a terrible thing.
The Hour
Allah commands:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
O mankind! Have Taqwa of your Lord! Verily, the earthquake of the Hour is a terrible thing.
Allah commands His servants to have Taqwa of Him, He informs them of the terrors of the Day of Resurrection which will come to them with its earthquakes and other horrors, as He says:
إِذَا زُلْزِلَتِ الاٌّرْضُ زِلْزَالَهَا
وَأَخْرَجَتِ الَارْضُ أَثْقَالَهَا
When the earth is shaken with its (final) earthquake. And when the earth throws out its burdens. (99:1-2)
وَحُمِلَتِ الاٌّرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَحِدَةً
فَيَوْمَيِذٍ وَقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
And the earth and the mountains shall be removed from their places, and crushed with a single crushing. Then on that Day shall the (Great) Event befall. (69:14-15)
إِذَا رُجَّتِ الاٌّرْضُ رَجّاً
وَبُسَّتِ الْجِبَالُ بَسّاً
When the earth will be shaken with a terrible shake. And the mountains will be powdered to dust. (56:4-5)
It was said that this earthquake will come at the end of the life span of this world, at the outset of the Hour.
Ibn Jarir recorded that Alqamah commented on Allah’s saying,
إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
(Verily, the earthquake of the Hour (of Judgement) is a terrible thing).
“Before the Hour.”
Others said that this refers to the terror, fear, earthquakes and chaos that will happen on the Day of Resurrection, in the arena (of Judgement), after the resurrection from the graves.
This was the view favored by Ibn Jarir, who took the following Hadiths as evidence:
Imam Ahmad recorded that Imran bin Husayn said that when the Messenger of Allah was on one of his journeys and some of his Companions had fallen behind, he raised his voice and recited these two Ayat:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى
وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
O mankind! Have Taqwa of your Lord! Verily, the earthquake of the Hour is a terrible thing. The Day you shall see it, every nursing mother will forget her nursling, and every pregnant one will drop her load, and you shall see mankind as in a drunken state, yet they will not be drunken, but Allah’s torment is severe.
When his Companions heard that, they hastened to catch up with him, because they knew that he wanted to say something. When they reached him, he said:
أَتَدْرُونَ أَيُّ يَوْمٍ ذَاكَ ذَاكَ يَوْمُ يُنَادَى ادَمُ عَلَيْهِ السَّلَمُ فَيُنَادِيهِ رَبُّهُ عَزَّ وَجَلَّ فَيَقُولُ يَا ادَمُ ابْعَثْ بَعْثَكَ إِلَى النَّارِ فَيَقُولُ يَا رَبِّ وَمَا بَعْثُ النَّارِ فَيَقُولُ مِنْ كُلِّ أَلْفٍ تِسْعُمِايَةٍ وَتِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدٌ فِي الْجَنَّة
Do you know what Day that is! That is the Day when Adam will be called. His Lord will call him and will say:”O Adam, send forth (those of your progeny) who are to be sent to the Fire.”
He will say, “O Lord, how many are to be sent to the Fire!”
He will say, “From every thousand, nine hundred and ninety-nine will be in the Fire and one will be in Paradise.”
His Companions were filled with despair and stopped smiling. When he saw that, he said:
أَبْشِرُوا وَاعْمَلُوا فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ إِنَّكُمْ لَمَعَ خَلِيقَتَيْنِ مَا كَانَتَا مَعَ شَيْءٍ قَطُّ إِلاَّ كَثَّرَتَاهُ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَمَنْ هَلَكَ مِنْ بَنِي ادَمَ وَبَنِي إِبْلِيس
Be of good cheer and strive hard, for by the One in Whose Hand is the soul of Muhammad, you will be counted with two creations who are of immense numbers, Ya’juj and Ma’juj, and those who have already died of the progeny of Adam and the progeny of Iblis.
Then they felt happier, and he said:
اعْمَلُوا وَأَبْشِرُوا فَوَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ فِي النَّاسِ إِلاَّ كَالشَّامَةِ فِي جَنْبِ الْبَعِيرِ أَوِ الرَّقْمَةِ فِي ذِرَاعِ الدَّابَّة
Strive hard and be of good cheer, for by the One in Whose Hand is the soul of Muhammad, in comparison to mankind you are like a mole on the flank of a camel or a mark on the foreleg of a beast.
This was also recorded by At-Tirmidhi and by An-Nasa’i in the Book of Tafsir in their Sunans.
At-Tirmidhi said, “It is Hasan Sahih.”
Another Version of this Hadith
At-Tirmidhi recorded from Imran bin Husayn that when the words,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ
(O mankind! Have Taqwa of your Lord.) Until His saying,
وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
(but Allah’s torment is severe), were revealed, the Prophet was on a journey, and he said:
أَتَدْرُونَ أَيُّ يَوْمٍ ذَلِكَ
قَالُوا اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ
قَالَ ذَلِكَ يَوْمٌ يَقُولُ اللهُ لاِادَمَ ابْعَثْ بَعْثَ النَّارِ
قَالَ يَا رَبِّ وَمَا بَعْثُ النَّارِ
قالَ تِسْعُمِايَةٍ وَتِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ إِلَى النَّارِ وَوَاحِدٌ إِلَى الْجَنَّة
Do you know what Day that is?
They said, “Allah and His Messenger know best.”
He said:That is the Day on which Allah will say to Adam, “Send forth (those of your progeny) who are to be sent to the Fire.”
He will say, “O Lord, how many are to be sent to the Fire!”
He will say, “From every thousand, nine hundred and ninety-nine will be in the Fire and one will be in Paradise.”
The Muslims started to weep, then the Messenger of Allah said:
قَارِبُوا وَسَدِّدُوا فَإِنَّهَا لَمْ تَكُنْ نُبُوَّةٌ قَطُّ إِلاَّ كَانَ بَيْنَ يَدَيْهَا جَاهِلِيَّةٌ قَالَ فَيُوْخَذُ الْعَدَدُ مِنَ الْجَاهِلِيَّةِ فَإِنْ تَمَّتْ وَإِلاَّ كُمِّلَتْ مِنَ الْمُنَافِقِينَ وَمَا مَثَلُكُمْ وَمَثَلُ الاْاُمَمِ إِلاَّ كَمَثَلِ الرَّقْمَةِ فِي ذِرَاعِ الدَّابَّةِ أَوْ كَالشَّامَةِ فِي جَنْبِ الْبَعِير
Be close in your rank and be straight forward, for there was never any Prophet but there was a time of ignorance just before his advent, so the number will be taken from that time of ignorance, and if that is not enough, it will be made up from the hypocrites. A parable of yours in comparison to the other nations is that, you are like a mark on the foreleg of an animal, or a mole on the flank of a camel.
Then he said,
إِنِّي لَاَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّة
I hope that you will be a quarter of the people of Paradise.
They said, “Allahu Akbar!”
Then he said,
إِنِّييَلَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّة
I hope that you will be a third of the people of Paradise.
They said, “Allahu Akbar!”
Then he said,
إِنِّييَلَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْلِ الْجَنَّة
I hope that you will be half of the people of Paradise.
They said, “Allahu Akbar!”
Then he (the narrator) said,
“I do not know if he said two-thirds or not.”
This was also recorded by Imam Ahmad.
Then At-Tirmidhi also said, “This is a Hasan Sahih Hadith.”
In his Tafsir, under this Ayah, Al-Bukhari recorded that Abu Sa`id said,
“The Prophet said:
يَقُولُ اللهُ تَعَالَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ادَمُ
فَيَقُولُ لَبَّيْكَ رَبَّنَا وَسَعْدَيْكَ فَيُنَادَى بِصَوْتٍ إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكَ أَنْ تُخْرِجَ مِنْ ذُرِّيَّتِكَ بَعْثًا إِلَى النَّارِ
قَالَ يَا رَبِّ وَمَا بَعْثُ النَّارِ
قَالَ مِنْ كُلِّ أَلْفٍ أُرَاهُ قَالَ تِسْعُمِايَةٍ وَتِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ
فَحِينَيِذٍ تَضَعُ الْحَامِلُ حَمْلَهَا وَيَشِيبُ الْوَلِيدُ
On the Day of Resurrection, Allah will say:”O Adam.”
He will say, “At Your service, O Lord.”
Then a voice will call out:”Allah commands you to send forth from your progeny those who are destined for the Fire.”
He will say, “O Lord, who is destined for the Fire?”
He will say, “From every thousand” — I think he said — “nine hundred and ninety-nine.”
At that time every pregnant female will drop her load and children will turn grey.
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
and you shall see mankind as in a drunken state, yet they will not be drunken, but Allah’s torment is severe.
That will be so difficult for mankind to bear that their faces will change.
The Prophet said:
مِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ تِسْعُمِايَةٍ وَتِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ
وَمِنْكُمْ وَاحِدٌ أَنْتُمْ فِي النَّاسِ كَالشَّعْرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جَنْبِ الثَّوْرِ الاَْبْيَضِ أَوْ كَالشَّعْرَةِ الْبَيْضَاءِ فِي جَنْبِ الثَّوْرِ الاَْسْوَدِ وَإِنِّي لَاَرْجُو أَنْ تَكُونُوا رُبُعَ أَهْلِ الْجَنَّةِ
فَكَبَّرْنَا
ثُمَّ قَالَ ثُلُثَ أَهْلِ الْجَنَّةِ
فَكَبَّرْنَا
ثُمَّ قَالَ شَطْرَ أَهْلِ الْجَنَّةِ
فَكَبَّرْنا
Nine hundred and ninety-nine from Ya’juj and Ma’juj, and one from you.
Among mankind you are like a black hair on the side of a white bull, or a white hair on the side of a black bull. I hope that you will be one quarter of the people of Paradise.
We said “Allahu Akbar!”
Then he said, A third of the people of Paradise.
We said, “Allahu Akbar!”
Then he said, One half of the people of Paradise.
We said, “Allahu Akbar!”
Al-Bukhari also recorded this elsewhere.
It was also recorded by Muslim, and An-Nasa’i in his Tafsir.
The Hadiths and reports about the terrors of the Day of Resurrection are very many, and this is not the place to quote them all.
And Allah says:
إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ
Verily, the earthquake of the Hour is a terrible thing.
means, a serious matter, a terrifying crisis, a horrendous event.
This earthquake is what will happen to people when they are filled with terror, as Allah says:
هُنَالِكَ ابْتُلِىَ الْمُوْمِنُونَ وَزُلْزِلُواْ زِلْزَالاً شَدِيداً
There, the believers were tried and shaken with a mighty shaking. (33:11)
Then Allah says
22:2
یَوۡمَ تَرَوۡنَہَا تَذۡہَلُ کُلُّ مُرۡضِعَۃٍ عَمَّاۤ اَرۡضَعَتۡ وَ تَضَعُ کُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَہَا وَ تَرَی النَّاسَ سُکٰرٰی وَ مَا ہُمۡ بِسُکٰرٰی وَ لٰکِنَّ عَذَابَ اللّٰہِ شَدِیۡدٌ ﴿۲﴾
On the Day you see it every nursing mother will be distracted from that [child] she was nursing, and every pregnant woman will abort her pregnancy, and you will see the people [appearing] intoxicated while they are not intoxicated; but the punishment of Allah is severe.
يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ
The Day you shall see it, every nursing mother will forget her nursling,
means, she will be distracted by the horror of what she is seeing, which will make her forget the one who is the dearest of all to her and to whom she shows the most compassion. Her shock will make her neglect her infant at the very moment of breastfeeding,
Allah says,
كُلُّ مُرْضِعَةٍ
(every nursing mother), and He did not say a mother who has an infant of breastfeeding age.
عَمَّا أَرْضَعَتْ
(her nursling) means, her nursing infant that has not yet been weaned.
وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا
and every pregnant one will drop her load,
means, before the pregnancy has reached full term, because of the intensity of the horror.
وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى
and you shall see mankind as in a drunken state,
means, because of the severity of their situation, when they will lose their minds, so that whoever sees them, will think, that they are drunk,
وَمَا هُم بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ
yet they will not be drunken, but Allah’s torment is severe.
22:3
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّ یَتَّبِعُ کُلَّ شَیۡطٰنٍ مَّرِیۡدٍ ۙ﴿۳﴾
And of the people is he who disputes about Allah without knowledge and follows every rebellious devil.
Condemnation of the Followers of the Shaytan
Allah condemns those who deny the Resurrection and who deny that Allah is able to restore life to the dead, those who turn away from that which Allah has revealed to His Prophets and, in their views — denial and disbelief — follow every rebellious Shaytan among men and Jinn. This is the state of the followers of innovation and misguidance, who turn away from the truth and follow falsehood, following the words of the leaders of misguidance who call people to follow innovation and their own desires and opinions.
Allah says concerning them and their like,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ
And among mankind is he who disputes about Allah, without knowledge,
meaning, without sound knowledge.
وَيَتَّبِعُ كُلَّ شَيْطَانٍ مَّرِيدٍ
22:4
کُتِبَ عَلَیۡہِ اَنَّہٗ مَنۡ تَوَلَّاہُ فَاَنَّہٗ یُضِلُّہٗ وَ یَہۡدِیۡہِ اِلٰی عَذَابِ السَّعِیۡرِ ﴿۴﴾
It has been decreed for every devil that whoever turns to him – he will misguide him and will lead him to the punishment of the Blaze.
كُتِبَ عَلَيْهِ
and follows every rebellious Shaytan. For him it is decreed,
Mujahid said,
“This refers to that Shaytan.”
meaning that is a matter written in the decree.
أَنَّهُ مَن تَوَلاَّهُ
that whosoever follows him, (and imitates him),
فَأَنَّهُ يُضِلُّهُ وَيَهْدِيهِ إِلَى عَذَابِ
السَّعِيرِ
he will mislead him, and will drive him to the torment of the Fire.
means, he will mislead him in this world, and in the Hereafter he will drive him to the torment of the Fire, which is unbearably hot, painful and agonizing.
As-Suddi reported that Abu Malik said,
“This Ayah was revealed about An-Nadr bin Al-Harith.”
This was also the view of Ibn Jurayj
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran