أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪২)
[ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্বন্ধে যদি তোমাদের সন্দেহ হয়, তাহলে ,]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
০৫- ০৭ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:০৫
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَکُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُکُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّکُمۡ ۚ وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِکَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ ہَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡہَا الۡمَآءَ اہۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍۭ بَہِیۡجٍ ﴿۵﴾
হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর—আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে , তারপর শুক্র হতে , তারপর ‘আলাকাহ’ হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূর্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে— যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভ স্থিত রাখি , তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি , পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও , তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হিন্তম বয়সে প্রত্যাবৃত্ত করা হয় যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। আর আপনি ভূমিকে দেখুন শুস্ক, অতঃপর তাতে আমরা পানি বর্ষণ করলে তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সব ধরনের সুদৃশ্য উদ্ভিদ ।
২২-০৬
ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّہٗ یُحۡیِ الۡمَوۡتٰی وَ اَنَّہٗ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ۙ﴿۶﴾
এটা এ জন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবন দান করেন এবং তিনিই সর্ববিষয়ে শক্তিমান।
২২-০৭
وَّ اَنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ لَّا رَیۡبَ فِیۡہَا ۙ وَ اَنَّ اللّٰہَ یَبۡعَثُ مَنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ ﴿۷﴾
আর কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর অবশ্যই আল্লাহ কবরে যারা আছে তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।
০৫-০৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর:
মৃত্যুর পর জীবিত হতে হবে তথা পুনরুত্থানকে সন্দেহ করে বা অস্বীকার করে এমন ব্যক্তিদেরকে উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা সম্বোধন করে বলেছেন: তোমর যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার কর, তারা নিজেদের সৃষ্টির প্রক্রিয়া সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখ তো; তোমরা কি ছিলে! তোমাদের শরীরের মূল উপাদান হল মাটি। তোমাদের আদি পিতা আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি হতে, তোমরা তো তারই সন্তান। পিতার পৃষ্ঠদেশ থেকে নির্গত শুক্রকীট ও মায়ের বক্ষদেশ হতে নির্গত ডিম্বানু একত্র করে মায়ের গর্ভে জমাট বাঁধা রক্ত আকারে রাখলাম, তারপর তা মাংসপিণ্ডে পরিণত করলাম, এরপর আস্তে আস্তে হাড় দিলাম অতঃপর চামড়া দিয়ে সারা শরীর ঢেকে দিলাম। তারপর মায়ের গর্ভে যতদিন আমার ইচ্ছা রাখলাম, সময় শেষে শিশু আকারে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে আনলাম। এ হল তোমাদের সৃষ্টি প্রক্রিয়া, সুতরাং তোমরা কতই না দুর্বল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللّٰهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْۭ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْۭ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَّشَيْبَةً ط يَخْلُقُ مَا يَشَا۬ءُ ج وَهُوَ الْعَلِيْمُ)
“আল্লাহ তিনি, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বল অবস্থায়, অতঃপর তিনি দুর্বলতার পর শক্তি দিয়েছেন, তারপর শক্তির পর পুনরায় দিয়েছেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।” (সূরা রূম ৩০:৫৪)
সুতরাং তোমরা তো কিছ্ইু ছিলে না। সেখান থেকে তোমাদের অস্তিত্ব দিয়েছি, তাহলে অস্তিত্বহীনতা থেকে আবার অস্তিত্ব দিতে পারব না? আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(أَلَيْسَ ذٰلِكَ بِقَادِرٍ عَلٰٓي أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰي)
“তবুও কি তিনি মৃতকে পুনর্জীবিত করতে সক্ষম নন?” (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৪০) অবশ্যই, আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম এবং এটা তাঁর জন্য প্রথমবারের তুলনায় অধিক সহজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَهُوَ الَّذِيْ يَبْدَؤُا الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيْدُه۫ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ)“
তিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর তিনিই আবার তা পুনরাবৃত্তি করবেন এটা তার জন্য খুবই সহজ।” (সূরা রূম ৩০:২৭)
مُّخَلَّقَةٍ পূর্ণাকৃতি বলতে এমন ভ্রুণকে বুঝানো হয়েছে যার আকার-আকৃতি পরিপূর্ণ ও স্পষ্ট। এ রকম ভ্রুণের মাঝে রূহ ফুঁকে দেয়া হয়, আর وَّغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ অপূর্ণাকৃতি বলতে এর বিপরীত, যে ভ্রুণ থেকে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এরূপ ভ্রুণ সময় হওয়ার আগেই গর্ভচ্যুত হয়ে যায়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা মাতৃগর্ভের জন্য একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে বলতে থাকেন, হে রব! এখন বীর্য-আকৃতিতে আছে, হে রব! এখন জমাট রক্তে পরিণত হয়েছে। হে রব! এখন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান তখন জিজ্ঞেস করেন: ছেলে, না মেয়ে? সৌভাগ্যবান, না দুর্ভাগা? রিযক ও বয়স কত? আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তার মাতৃগর্ভে থাকতেই তা লিখে দেয়া হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৮, ৩৩৩৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৪৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে: তোমাদের প্রত্যেকের সৃষ্টি (অর্থাৎ তার মূল উপাদান প্রথমে) ৪০ দিন, তার মায়ের গর্ভে শুক্ররূপে থাকে। অতঃপর ৪০ দিন লাল জমাট রক্ত পিণ্ডরূপে অবস্থান করে, তারপর ৪০ দিন মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫৯৪)
(لِتَبْلُغُوْآ أَشُدَّكُمْ) অর্থাৎ যৌবনে পদার্পণ করে এবং সুন্দর রূপ ধারণ করে। কেউ কেউ যৌবনে পদার্পণ করার পূর্বেই মৃত্যু বরণ করে, আবার কেউ কেউ অতি বার্ধক্যে পৌঁছে যায়। তখন তার জ্ঞান-বুদ্ধিও লোপ পায় এবং সে শিশুর মত দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পূর্বের সমস্ত জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলে। আর এগুলো মূলত আল্লাহ তা‘আলাই করে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ مِنْ نُّطْفَةٍ ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ يُخْرِجُكُمْ طِفْلًا ثُمَّ لِتَبْلُغُوْآ أَشُدَّكُمْ ثُمَّ لِتَكُوْنُوْا شُيُوْخًا وَمِنْكُمْ مَّنْ يُّتَوَفّٰي مِنْ قَبْلُ وَلِتَبْلُغُوْآ أَجَلًا مُّسَمًّي وَّلَعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ)
“তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর বের করেন শিশুরূপে, অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হও যৌবনে, তারপর হও বৃদ্ধ।
তোমাদের মধ্যে কারো এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে এবং এটা এজন্য যে, তোমরা নির্ধারিত কালে পৌঁছে যাও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার।” (সূরা মু’মিন ৪০:৬৭)
(وَتَرَي الْأَرْضَ هَامِدَةً…..)
এটি মৃতকে পুনরায় জীবিত করার ব্যাপারে দ্বিতীয় আরো একটি উপমা, আর তা হল আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তুমি ভূমিকে শুষ্ক ও মৃত দেখ, কিন্তু বৃষ্টির পর তা কেমন সঞ্জীবিত শস্য-শ্যামল নানান প্রকৃতির উদ্ভিদ ও নানান ফল-ফসলে ভরে উঠে। এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলা কিয়ামত দিবসে মানুষকে কবর থেকে উঠাবেন। যেমন হাদীসে এসেছে:
একজন সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ তা‘আলা কিভাবে মৃতকে জীবিত করবেন? সৃষ্টি জগতের মধ্যে তার নির্দশন কী? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি কি এমন উপত্যকা অতিক্রম করেছ যা শুকনো ও মৃত? সে বলল: হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি পরে তা সবুজ শ্যামল অবস্থায় দেখেছ? সে বলল: হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এভাবেই আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে মৃত্যুর পর জীবিত করবেন। (আবূ দাঊদ হা: ৪৭৩১, ইবনু মাযাহ হা: ১৮০, হাসান)
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(حَتّٰيٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَا۬ءَ فَأَخْرَجْنَا بِه۪ مِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ط كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰي لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ)
“এমনকি যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখণ্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তৎপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি যাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৭)
এ সম্পর্কে সূরা হা-মীম সাজদাহ: ৩৯ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।
অতএব কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, আল্লাহ মানুষকে পুনরায় জীবিত করে হাশরের ময়দানে একত্রিত করবেন, তারপর দুনিয়ার কর্মের হিসাব-নিকাশ নেবেন। এতে কোন প্রকার সন্দেহ নেই।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পুনরুত্থান সম্ভব তার জ্বলন্ত প্রমাণ পেলাম। সুতরাং এতে কোন সন্দেহ নেই।
২. মানুষ সৃষ্টির প্রক্রিয়া জানতে পারলাম।
৩. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, তা ঘটানো আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে খুবই সহজ।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষ এমন একটি উপাদান থেকে তৈরি হয় যার সবটুকুই গৃহীত হয় মাটি থেকে এবং এ সৃজন প্রক্রিয়ার সূচনা হয় শুক্র থেকে। অথবা মানব প্রজাতির সূচনা হয়েছে আদম আলাইহিস সালাম থেকে। তাঁকে সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তারপর পরবর্তী পর্যায়ে শুক্র থেকেই মানব বংশের ধারাবাহিকতা চলতে থাকে। যেমন সূরা সিজদায় বলা হয়েছেঃ
وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ – ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ
“মানুষের সৃষ্টি শুরু করেন মাটি থেকে তারপর তার বংশ-ধারা চালান একটি নির্যাস থেকে যা বের হয় তুচ্ছ পানির আকারে।” (আস সাজদাহ, ৭-৮ আয়াত)
# এখানে মাতৃগর্ভে ভ্রূণ ও বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করতে থাকে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আজকাল শুধুমাত্র শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তাদের বিভিন্ন স্তরের যেসব বিস্তারিত বিষয়াবলী দৃষ্টিগোচর হতে পারে সেগুলো বর্ণনা করা হয়নি। বরং সেকালের সাধারণ বদ্দুরাও যেসব বড় বড় সুস্পষ্ট পরিবর্তনের কথা জানতো সেগুলো এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ শুক্র গর্ভাশয়ে প্রবেশ করে স্থিতি লাভ করার পর প্রথমে জমাট রক্তের একটি পিণ্ড হয়। তারপর তা একটি গোশতের টুকরায় পরিবর্তিত হয়। এ অবস্থায় কোন আকৃতি সৃষ্টি হয় না। এরপর সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে মানবিক আকৃতি সুস্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। গর্ভপাতের বিভিন্ন অবস্থায় যেহেতু মানব সৃষ্টির এসব পর্যায় লোকেরা প্রত্যক্ষ করতো তাই এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটি বুঝার জন্য সেদিন ভ্রুণতত্বের বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন ছিল না, আজো নেই।
# এমন বৃদ্ধাবস্থা যখন মানুষের নিজের শরীরের ও অংগ-প্রত্যংগের কোন খোঁজ-খবর থাকে না। যে ব্যক্তি অন্যদেরকে জ্ঞান দিতো বুড়ো হয়ে সে এমন অবস্থায় পৌঁছে যায়, যাকে শিশুদের অবস্থার সাথে তুলনা করা যায়। যে জ্ঞান জানা শোনা, অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা ছিল তার গর্বের বস্তু তা এমনই অজ্ঞতায় পরিবর্তিত হয়ে যায় যে, একটি ছোট ছেলেও তার কথায় হাসতে থাকে।
# এ ধারাবাহিক বক্তব্যের মধ্যে এ বাক্যাংশটির তিনটি অর্থ হয়। এক, আল্লাহই সত্য এবং মৃত্যুর পর পুনরায় জীবনদানের কোন সম্ভাবনা নেই, —তোমাদের এ ধারণা ডাহা মিথ্যা। দুই, আল্লাহর অস্তিত্ব নিছক কাল্পনিক নয়। কতিপয় বুদ্ধিবৃত্তিক জটিলতা দূর করার জন্য এ ধারণা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি নিছক দার্শনিকদের চিন্তার আবিষ্কার, অনিবার্য সত্তার ও সকল কার্যকারণের প্রথম কারণই (First Cause) নয় বরং তিনি প্রকৃত স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন কর্তা, যিনি প্রতি মুহূর্তে নিজের শক্তিমত্তা, সংকল্প, জ্ঞান ও কলা-কৌশলের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ব-জাহান ও এর প্রতিটি বস্তু পরিচালনা করছেন। তিন, তিনি কোন খেলোয়াড় নন যে, নিছক মন ভুলাবার জন্য খেলনা তৈরি করেন এবং তারপর অযথা তা ভেঙে চুরে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন। বরং তিনি সত্য, তাঁর যাবতীয় কাজ গুরুত্বপূর্ণ, উদ্দেশ্যমূলক ও বিজ্ঞানময়।
#এ আয়াতগুলোতে মানুষের জন্মের বিভিন্ন পর্যায়, মাটির ওপর বৃষ্টির প্রভাব এবং উদ্ভিদ উৎপাদনকে পাঁচটি সত্য নির্ণয়ের প্রমাণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে সে সত্যগুলো হচ্ছেঃ
একঃ আল্লাহই সত্য।
দুইঃ তিনি মৃতকে জীবিত করেন।
তিনঃ তিনি সর্বশক্তিমান।
চারঃ কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবেই।
পাঁচঃ যারা মরে গেছে আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদের সবাইকে জীবিত করে উঠাবেন।
এখন দেখুন এ নিদর্শনগুলো এ পাঁচটি সত্যকে কিভাবে চিহ্নিত করে। সমগ্র বিশ্ব-ব্যবস্থার কথা বাদ দিয়ে মানুষ যদি শুধুমাত্র নিজেরই জন্মের ওপর চিন্তা-ভাবনা করে, তাহলে জানতে পারবে যে, এক একটি মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে আল্লাহর প্রকৃত ও বাস্তব ব্যবস্থাপনা ও কলা-কৌশল সর্বক্ষণ সক্রিয় রয়েছে। প্রত্যেকের অস্তিত্ব, বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রতিটি পর্যায়েই তাঁর স্বেচ্ছামূলক সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই স্থিরীকৃত হয়। একদল বলে, একটা অন্ধ, বধির এবং জ্ঞান ও সংকল্পহীন প্রকৃতি একটা ধরাবাঁধা আইনের ভিত্তিতে এসব কিছু চালাচ্ছে। কিন্তু তারা চোখ মেলে তাকালে দেখতে পাবে যে, এক একটি মানুষ যেভাবে অস্তিত্ব লাভ করে এবং তারপর যেভাবে অস্তিত্বের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে, তার মধ্যে একজন অতিশয় জ্ঞানী ও একচ্ছত্র শক্তিশালী সত্তার ইচ্ছামূলক সিদ্ধান্ত কেমন সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষ যে খাদ্য খায়, তার মধ্যে কোথাও মানবিক বীজ লুকিয়ে থাকে না এবং তার মধ্যে এমন কোন জিনিস থাকে না যা মানবিক প্রাণের বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করে। এ খাদ্য শরীরে গিয়ে কোথাও চুল, কোথাও গোশত এবং কোথাও হাড়ে পরিণত হয়, আবার একটি বিশেষ স্থানে পৌঁছে এই খাদ্যই এমন শুক্রে পরিণত হয়, যার মধ্যে মানুষে পরিণত হবার যোগ্যতার অধিকারী বীজ থাকে। এ বীজগুলোর সংখ্যা এত অগণিত যে, একজন পুরুষ থেকে একবারে যে শুক্র নির্গত হয় তার মধ্যে কয়েক কোটি শুক্রকীট পাওয়া যায় এবং তাদের প্রত্যেকেই স্ত্রী-ডিম্বের সাথে মিলে মানুষের রূপ লাভ করার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু একজন জ্ঞানী, সর্বশক্তিমান ও একচ্ছত্র শাসকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে এ অসংখ্য প্রার্থীদের মধ্য থেকে মাত্র একজনকে কোন বিশেষ সময় ছাটাই বাছাই করে এনে স্ত্রী-ডিম্বের সাথে মিলনের সুযোগ দেয়া হয় এবং এভাবে গর্ভধারণ প্রক্রিয়া চলে। তারপর গর্ভধারণের সময় পুরুষের শুক্রকীট ও স্ত্রীর ডিম্বকোষের (Egg cell) মিলনের ফলে প্রথমদিকে যে জিনিসটি তৈরি হয় তা এত ছোট হয় যে, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা সম্ভব নয়। এ ক্ষুদ্র জিনিসটি নয় মাস ও কয়েক দিন গর্ভাশয়ে লালিত হয়ে যে অসংখ্য স্তর অতিক্রম করে একটি জ্বলজ্যান্ত মানুষের রূপ গ্রহণ করে তার মধ্য থেকে প্রতিটি স্তরের কথা চিন্তা করলে মানুষের মন নিজেই সাক্ষ্য দেবে যে, এখানে প্রতি মুহূর্তে একজন সদা তৎপর বিচক্ষণ জ্ঞানীর ইচ্ছামূলক সিদ্ধান্ত কাজ করে চলছে। তিনিই সিদ্ধান্ত দেন, কাকে পূর্ণতায় পৌঁছাবেন এবং কাকে রক্তপিণ্ডে অথবা গোশতের টুকরায় কিংবা অসম্পূর্ণ শিশুর আকারে খতম করে দেবেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নেন, কাকে জীবিত বের করবেন এবং কাকে মৃত। কাকে সাধারণ মানবিক আকার আকৃতিতে বের করে আনবেন এবং কাকে অসংখ্য অস্বাভাবিক আকারের মধ্য থেকে কোন একটি আকার দান করবেন। কাকে পূর্ণাংগ মানবিক অবয়ব দান করবেন আবার কাকে অন্ধ, বোবা, বধির বা লুলা ও পঙ্গু বানিয়ে বের করে আনবেন। কাকে সুন্দর করবেন এবং কাকে কুৎসিত। কাকে পুরুষ করবেন এবং কাকে নারী। কাকে উচ্চ পর্যায়ের শক্তি ও যোগ্যতা দিয়ে পাঠাবেন এবং কাকে নির্বোধ ও বেকুফ করে সৃষ্টি করবেন। সৃজন ও আকৃতিদানের এ কাজটি প্রতিদিন কোটি কোটি নারীর গর্ভাশয়ে চলছে। এর মাঝখানে কোন সময় কোন পর্যায়েও এক আল্লাহ ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোন শক্তি সামান্যতমও প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। বরং কোন্ পেটে কি জিনিস তৈরি হচ্ছে এবং কি তৈরি হয়ে বের হয়ে আসবে এতটুকুও কেউ বলতে পারে না। অথচ মানব সন্তানদের কমপক্ষে শতকরা ৯০ জনের ভাগ্যের ফায়সালা এই স্তরগুলোতেই হয়ে যায় এবং এখানেই কেবল ব্যক্তিদেরই নয় জাতিসমূহেরও এমনকি সমগ্র মানবজাতির ভবিষ্যতের ভাঙাগড়া সম্পন্ন হয়। এরপর যেসব শিশু দুনিয়ায় আসে তাদের কাকে প্রথম শ্বাস নেবার পরই মরে যেতে হবে, কাকে বড় হয়ে যুবক হতে হবে এবং কার যৌবনের পর বার্ধক্যের পাট চুকাতে হবে? তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে কে এ সিদ্ধান্ত নেয়? এখানেও একটি প্রবল ইচ্ছা কার্যকর দেখা যায়। গভীর মনোযোগ সহকারে চিন্তা করলে অনুভব করা যাবে তাঁর কর্মতৎপরতা কোন্ বিশ্বজনীন ব্যবস্থাপনা ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে এবং এরই ভিত্তিতে তিনি কেবল ব্যক্তিদেরই নয়, জাতির ও দেশের ভাগ্যের ফায়সালা করছেন। এসব কিছু দেখার পরও যদি আল্লাহ “সত্য” এবং একমাত্র আল্লাহই “সত্য” এ ব্যাপারে কেউ সন্দেহ পোষণ করে তাহলে নিঃসন্দেহে সে বুদ্ধিভ্রষ্ট।
দ্বিতীয় যে কথাটি এ নিদর্শনগুলো থেকে প্রমাণিত হয় তা হচ্ছে এই যে, “আল্লাহ মৃতদেরকে জীবিত করেন” আল্লাহ কখনো মৃতদেরকে জীবিত করবেন, একথা শুনে লোকেরা অবাক হয়ে যায়। কিন্তু তারা চোখ মেলে তাকালে দেখতে পাবে তিনি তো প্রতি মুহূর্তে মৃতকে জীবিত করছেন। যেসব উপাদান থেকে মানুষের শরীর গঠিত হয়েছে এবং যেসব খাদ্যে সে প্রতিপালিত হচ্ছে সেগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এর মধ্যে রয়েছে কয়লা, লোহা, চূন, কিছু লবণজাত উপাদন ও কিছু বায়ু এবং এ ধরনের আরো কিছু জিনিস। এর মধ্যে কোন জিনিসেও জীবন ও মানবাত্মার বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু এসব মৃত র্নিজীব উপাদানগুলোই একত্র করে তাকে একটি জীবিত ও প্রাণময় অস্তিত্বে পরিণত করা হয়েছে। তারপর এসব উপাদান সম্বলিত খাদ্য মানুষের দেহে পরিবেশিত হয় এবং সেখানে এর সাহায্যে পুরুষের মধ্যে এমন শুক্রকীট এবং নারীর মধ্যে এমন ডিম্বকোষের সৃষ্টি হয় যাদের মিলনের ফলে প্রতিদিন জীবন্ত ও প্রাণময় মানুষ তৈরি হয়ে বের হয়ে আসছে। এরপর নিজের আশপাশের মাটির ওপরও একবার নজর বুলিয়ে নিন। পাখি ও বায়ু অসংখ্য জিনিসের বীজ চারদিকে ছড়িয়ে রেখেছিল এবং অসংখ্য জিনিসের মূল এখানে সেখানে মাটির সাথে মিশে পড়েছিল। তাদের কারো মধ্যেও উদ্ভিদ জীবনের সামান্যতম লক্ষণও ছিল না। মানুষের চারপাশের বিশুষ্ক জমি এ লাখো লাখো মৃতের কবরে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু যখনই এদের ওপর পড়লো পানির একটি ফোঁটা, অমনি চারদিকে জেগে উঠলো জীবনের বিপুল সমারোহ। প্রত্যেকটি মৃত বৃক্ষমূল তার কবর থেকে মাথা উঁচু করলো এবং প্রত্যেকটি নিষ্প্রাণ বীজ একটি জীবন্ত চারাগাছের রূপ ধারণ করলো। এ মৃতকে জীবিত করার মহড়া প্রত্যেক বর্ষা ঋতুতে মানুষের চোখের সামনে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ থেকে তৃতীয় যে জিনিসটি প্রমাণিত হয় তা হচ্ছে এই যে, “আল্লাহ সর্বশক্তিমান।” সমগ্র বিশ্ব-জাহানের কথা বাদ দিন শুধুমাত্র আমাদের এই ক্ষুদ্র পৃথিবীটির কথাই ধরা যাক। আর পৃথিবীরও সমস্ত তত্ত্ব ও ঘটনাবলীর কথা বাদ দিয়ে কেবলমাত্র মানুষ ও উদ্ভিদেরই জীবনধারা বিশ্লেষণ করা যাক। এখানে তাঁর শক্তিমত্তার যে অভাবনীয় কর্মকাণ্ড দেখা যায় সেগুলো দেখার পর কি কোন বুদ্ধি-বিবেকবান ব্যক্তি একথা বলতে পারেন যে, আজ আমরা আল্লাহকে যা কিছু করতে দেখছি তিনি কেবল অতটুকুই করতে পারেন এবং কাল যদি তিনি কারো কিছু করতে চান তাহলে করতে পারবেন না? আল্লাহ তো তবুও অনেক বড় ও উন্নত সত্তা, মানুষের সম্পর্কেও বিগত শতক পর্যন্ত লোকেরা ধারণা ছিল যে, এরা শুধুমাত্র মাটির ওপর চলাচলকারী গাড়িই তৈরি করতে পারে বাতাসে উড়ে চলা গাড়ি তৈরী করার ক্ষমতা এর নেই। কিন্তু আজকের উড়োজাহাজগুলো জানিয়ে দিয়েছে যে, মানুষের “সম্ভাবনা”র সীমানা নির্ধারণ করার ব্যাপারে তাদের ধারণা কত ভুল ছিল। আজ যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর আজকের কাজগুলো দেখে তাঁর জন্য সম্ভাবনার কিছু সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে বলতে থাকে যে, তিনি যা কিছু করছেন এছাড়া আর কিছু করতে পারেন না, তাহলে সে শুধুমাত্র নিজেরই মনের সংকীর্ণতার প্রমাণ দেয়, আল্লাহর শক্তি তার বেঁধে দেয়া সীমানার মধ্যে আটকে থাকতে পারে না।
চতুর্থ ও পঞ্চম কথা অর্থাৎ “কিয়ামতের দিন আসবেই” এবং আল্লাহ অবশ্যই মৃত লোকদেরকে জীবিত করে উঠাবেন”—একথা দু’টি উপরে আলোচিত তিনটি কথার যৌক্তিক পরিণতি। আল্লাহর কাজগুলোকে তাঁর শক্তিমত্তার দিক দিয়ে দেখলে মন সাক্ষ্য দেবে যে, তিনি যখনই চাইবেন সকল মৃতকে আবার জীবিত করতে পারবেন, ইতিপূর্বে যাদের অস্তিত্ব ছিল না, তাদেরকে তিনি অস্তিত্ব দান করেছিলেন। আর যদি তাঁর কার্যাবলীকে তাঁর প্রজ্ঞার দিক দিয়ে দেখা যায় তাহলে বুদ্ধিবৃত্তি সাক্ষ্য দেবে যে, এ দু’টি কাজও তিনি অবশ্যই করবেন। কারণ, এগুলো ছাড়া যুক্তির দাবী পূর্ণ হয় না এবং একজন প্রাজ্ঞ সত্তা এ দাবী পূর্ণ করবেন না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। মানুষ যে সীমিত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করছে তার ফল আমরা দেখি যে, সে যখনই নিজের টাকা-পয়সা, সম্পত্তি বা ব্যবসা-বাণিজ্য কারো হাতে সোপর্দ করে দেয় তার কাছ থেকে কোন না কোন পর্যায়ে হিসেব অবশ্যই নেয়। অর্থাৎ আমানত ও হিসেব-নিকেশের মধ্যে যেন একটি অনিবার্য যৌক্তিক সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের সীমিত প্রজ্ঞাও কোন অবস্থায় এ সম্পর্ককে উপেক্ষা করতে পারে না। তারপর এ প্রজ্ঞার ভিত্তিতে মানুষ ইচ্ছাকৃত কাজ ও অনিচ্ছাকৃত কাজের মধ্যে ফারাক করে থাকে। ইচ্ছাকৃত কাজের সাথে নৈতিক দায়িত্বের ধারণা সম্পৃক্ত করে। কাজের মধ্যে ভালো-মন্দের পার্থক্য করে। ভালো কাজের ফল হিসেবে প্রশংসা ও পুরস্কার পেতে চায় এবং মন্দ কাজের দরুন শাস্তি দাবী করে। এমনকি এ উদ্দেশ্যে নিজেরাই একটি বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলে। যে স্রষ্টা মানুষের মধ্যে এ প্রজ্ঞা সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে এ প্রজ্ঞা হারিয়ে ফেলবেন একথা কি কল্পনা করা যেতে পারে? একথা কি মেনে নেয়া যায় যে, নিজের এত বড় দুনিয়াটা এত বিপুল সাজ-সরঞ্জাম ও ব্যাপক ক্ষমতা সহকারে মানুষের হাতে সোপর্দ করার পর তিনি ভুলে গেছেন এবং এর হিসেব কখনো নেবেন না? কোন সুস্থ বোধসম্পন্ন মানুষের বুদ্ধি কি সাক্ষ্য দিতে পারে যে, মানুষের যে সমস্ত খারাপ কাজ শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যায় অথবা যেসব খারাপ কাজের উপযুক্ত শাস্তি তাকে দেয়া যেতে পারেনি, সেগুলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য কখনো আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং যেসব ভালো কাজ তাদের ন্যায়সঙ্গত পুরস্কার থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে সেগুলো চিরকাল বঞ্চিতই থেকে যাবে? যদি এমনটি না হয়ে থাকে, তাহলে কিয়ামত ও মৃত্যু পরের জীবন জ্ঞানবান ও প্রাজ্ঞ আল্লাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার একটি অনিবার্য দাবী। এ দাবী পূরণ হওয়া নয় বরং পূরণ না হওয়াটাই সম্পূর্ণ বুদ্ধি বিরোধী ও অযৌক্তিক।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*বুদ্ধিভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুনরুত্থানের দর্শন : আখেরাতের পুনরুজ্জীবন সম্পর্কে সন্দিহান হলে তাদের ভেবে দেখা উচিত কিভাবে জীবনের সৃষ্টি হয়, কিভাবে তাদের জন্ম ও বিকাশ ঘটলো, তাদের চারপাশের জগতে কিসের প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানে তাে এই প্রমাণই পাওয়া যায় যে, আখেরাতের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারটা একেবারেই সহজ ও স্বাভাবিক। অথচ তারা নিজেদের ভেতরে ও চারপাশের জগতে বিদ্যমান এসব সাক্ষ্য প্রমাণ সম্পর্কে উদাসীন। ‘হে মানব জাতি, তােমরা যদি পরকাল সম্পর্কে সন্দেহে থেকে থাকে…'(আয়াত ৫) বস্তুত আখেরাত হচ্ছে মানুষের সাবেক পার্থিব জীবনের পুনরাবৃত্তি। মানবীয় বিচারবিবেচনায় ও জীবনের প্রথম সৃষ্টি অপেক্ষা পরবর্তী সৃষ্টি সহজতর। আল্লাহর অসীম শক্তির কাছে তাে কোনাে জিনিস অপেক্ষাকৃত কঠিন বা সহজ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তার কাছে প্রথম সৃষ্টি বা পুনসৃষ্টি উভয়ের জন্যেই একটা ‘হও’ শব্দ উচ্চারণই যথেষ্ট। ‘তিনি যখন কোনাে কিছুর আবির্ভাব ঘটানাের ইচ্ছা করেন, তখন তাকে শুধু ‘হও’ বলেন, অমনি তা হয়ে যায়।'(সূরা ইয়াসীন)। কিন্তু কোরআন মানুষকে তাদের নিজস্ব মাপকাঠি, যুক্তি ও উপলব্ধি অনুযায়ী বিচার বিবেচনা করে। তাই সে তার চোখে দেখা প্রতিটি জিনিসকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলে। মানুষ প্রতি মুহর্তে প্রতিটি স্থানে যা কিছুই দেখতে পায়, তা যদি সে খােলা মন, মুক্ত বিবেক ও সক্রিয় উপলব্ধি নিয়ে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে, তাহলে প্রতিটা জিনিসকেই তার কাছে অলৌকিক মনে হবে। কিন্তু মানুষ তেমন গভীর চিন্তা ও বিবেচনা সহকারে কোনাে জিনিস দেখে না। তার দৃষ্টি নিতান্ত দায়সারা ও ভাসাভাসাভাবে সব কিছুর ওপর দিয়ে চলে যায়। ফলে কোথাও লক্ষণীয় কিছু তার চোখে পড়ে না। প্রশ্ন এই যে, মানুষ কে? সে কোথা থেকে এসেছে? কিভাবে জন্ম নিয়েছে সে এবং তাকে কোন কোন স্তর অতিক্রম করে এপর্যন্ত আসতে হয়েছে। ‘আমি তােমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।’ মানুষ এই পৃথিবীরই সন্তান। এর মাটি থেকেই সে জন্মেছে এবং জীবন ধারণ করেছে। তার দেহে এমন কোনাে উপাদান নেই, যা এই ভূখন্ডের দেহে নেই। কেবল একটা উপাদান এর ব্যতিক্রম। তা হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত সেই সুক্ষ্ম ও রহস্যময় বস্তু অর্থাৎ আল্লাহর ফুকে দেয়া আত্মা বা প্রাণ। এ জিনিসটার কল্যাণেই সে মাটির উপাদান থেকে পৃথক হয়েছে। অন্যথায় মূলত সে উপাদানগত, কাঠামােগত ও খাদ্যগত দিক থেকে মাটি থেকেই তৈরী । তার সবকটা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য উপাদান মাটি থেকেই সৃষ্ট। কিন্তু কোথায় সেই মাটি আর কোথায় এই মানুষ সেই যে সুঠাম কর্মক্ষম ও কর্মতৎপর, অন্যের দ্বারা প্রভাবিত প্রভাব বিস্তারকারী সৃষ্টি মানুষের পা থাকে ভূ-পূষ্ঠে, কিন্তু মন থাকে আকাশচুম্বী এবং নিজের চিন্তা ও মননশক্তি দ্বারা বস্তুজগতের বাইরের, এমনকি যে মাটি থেকে সে সৃজিত, সেই মাটিরও বাইরের বহু জিনিস সৃষ্টি করে, সেই মানুষ অতি নগণ্য মাটি থেকে সৃজিত। অথচ সেই মাটির সাথে তার কী বিরাট প্রভেদ! যিনি এই সৃষ্টিকে সর্বপ্রথম মাটি দিয়ে গড়েছেন, তার পক্ষে তাকে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা কিছুতেই অসম্ভব হতে পারে না। ‘অতপর বীর্য থেকে, অতপর জমাট রক্ত থেকে, অতপর মাংসপিন্ড থেকে, যা পূর্ণাকৃতির অথবা অপূর্ণাকৃতির হয়ে থাকে তোমাদের কাছে প্রকাশ করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত যা ইচ্ছা করি গর্ভে স্থিত রাখি। অতপর আমি তােমাদেরকে শিশুর আকারে মাতৃগর্ভ থেকে বের করি।’ সাধারণ মাটির প্রাথমিক উপাদানের মাঝে এবং জীবন্ত শুক্রকীটগুলাের সমন্বয়ে গঠিত বীর্যের মাঝে বিরাট ব্যবধান। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে জীবনের গভীরতম রহস্য। এই রহস্য সম্পর্কে মানুষ লক্ষ লক্ষ বছরেও উল্লেখযােগ্য কোনাে তথ্য জানতে পারেনি। আর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রতি মুহূর্তে সাধারণ উপাদানগুলাে যে অসংখ্য জীবন্ত কোষে পরিণত হয়েছে, তাও মানুষ জানতে পারেনি। এগুলাের জন্ম ও সষ্টির নিগুঢ় তত্ত্ব অনুসন্ধান করাও তার সাধ্যের বাইরে তা সে যতােই আকাংখা করুক না কেন। সে বড়জোর এর জন্মের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও নিবন্ধীকরণই করতে পারে। এরপর অবশিষ্ট থাকে আর একটা রহস্য। সেটা হলাে, ওই বীর্য কিভাবে জমাট রক্তে, জমাট রক্ত কিভাবে গোশতের টুকরােয় এবং গােশতের টুকরাে কিভাবে মানুষে পরিণত হয়, সেই রহস্য। বীর্য জিনিসটা কী? ওটা তাে পুরুষের তরল বীজ। এই তরল বীজের একটা ফোটায় হাজার হাজার শুক্রকীট থাকে। এর মধ্য থেকে কোনো একটামাত্র কীটের সাথে নারীর জরায়ুতে অবস্থানরত ডিম্বানুর মিলন ঘটে এবং এই সংযুক্ত উপাদান বা বীজটা জরায়ুর প্রাচীরের সাথে যুক্ত হয়। জরায়ুর প্রাচীরের সাথে যুক্ত এই অতি ক্ষুদ্র সংযুক্ত বীজটাই মহান আল্লাহর অসীম শক্তি বলে ভবিষ্যতের মানুষের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে, চাই সেটা দৈহিক বৈশিষ্ট্য হােক-যথা লম্বা বা বেটে হওয়া, চিকন বা মােটা হওয়া, সুদর্শন বা ভাবাবেগজনিত বৈশিষ্ট্য হােক যেমন আকর্ষণ ও প্রবণতা, স্বভাব ও দৃষ্টিভংগি, যােগ্যতা ও বিপথগামিতা ইত্যাদি। কে ভাবতে পারে বা বিশ্বাস করতে পারে যে, এতােসব শুণবৈশিষ্ট্য সে ক্ষুদ্র বিন্দুটার মধ্যে লুকিয়ে থাকে? কে কল্পনা করতে পারে যে, সে ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ বিন্দুটাই আজকের এই বহুমুখী বৈশিষ্ট্যধারী মানুষ, যার প্রতিজন অপরজন থেকে ভিন্ন? পৃথিবীতে কোনাে দু’জন মানুষও কি কোনাে কালেও হুবহু একই রকম হয়েছে? তারপর জমাট রক্তের মাংস পিন্ডে রূপান্তর লক্ষ্য করুন। প্রথমে জমাট রক্তের এই টুকরাের কোনাে রূপও থাকে না, আকৃতিও থাকে না। এরপর এর ভেতরে চলতে থাকে সৃজন প্রক্রিয়া। একপর্যায়ে তা একটা মাংস পরিবেষ্টিত হাড্ডিতে রূপান্তরিত হয়ে সুনির্দিষ্ট রূপ ধারণ করে। আর যদি তার পূর্ণাংগ মানবাকৃতি লাভ আল্লাহর ইচ্ছা না হয়ে থাকে, তাহলে এই সুনির্দিষ্ট রূপ বা আকৃতি লাভের আগেই জরায়ু তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ‘তোমাদের কাছে প্রকাশ করার জন্যে…’ অর্থাৎ আমার ক্ষমতার প্রমাণ প্রকাশ করার জন্যে। কেননা একটা মাংস পিন্ডে ভবিষ্যত মানুষের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাওয়া আল্লাহর সীমাহীন ক্ষমতার ফলশ্রুতি ছাড়া আর কিছু নয়। এখানে মাংস পিন্ড ও মানব শিশুর মাঝে একটা বিরতি রয়েছে বুঝানাের জন্যেই, ‘তােমাদের কাছে আমার ক্ষমতা প্রকাশ করার জন্যে’ এই মধ্যবর্তী কথাটা জুড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর পুনরায় ভ্রুণের বিবর্তন ধারা বর্ণনা করা হয়েছে, ‘আর আমি একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জরায়ুতে যা ইচ্ছা করি স্থিত রাখি।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যে মানব শিশুকে পূর্ণ পরিণত করতে ইচ্ছা করেন, তাকে ভূমিষ্ট হওয়ার সময় না আসা পর্যন্ত জরায়ুতেই রাখেন। ‘অতপর তােমাদেরকে শিশুর আকারে বের করি।’ প্রথম স্তর ও এই শেষ স্তরের মাঝে কী বিরাট ব্যবধান লক্ষ্য করুন। সময়ের দিক দিয়ে এই ব্যবধান সাধারণত নয় মাস ব্যাপী হয়ে থাকে। কিন্তু শুক্রকীটের প্রকৃতি ও শিশুর প্রকৃতির পার্থক্যের দিক দিয়ে এই ব্যবধান অনেক বেশী। শুক্রকীটকে তাে খালি চোখে দেখাই যায় না। অথচ সেটাই একটা বহুমুখী দোষগুণ বিশিষ্ট, নানা অংগ প্রত্যংগ সমন্বিত, বিচিত্র লক্ষণ ও আলামতের ধারক। বিবিধ যােগ্যতা ও ক্ষমতার অধিকারী এবং বিভিন্ন স্বভাব ও মনােভাব সম্বলিত জলজ্যান্ত মানুষের রূপ ধারণ করে। এই দুই অবস্থার মাঝে যে ব্যবধান, তা পাড়ি দিতে গিয়ে যে কোনাে বিবেকবান ও চিন্তাশীল মানুষকে অসীম শক্তিশালী স্রষ্টার ক্ষমতার নিদর্শনাবলীর সামনে বারবার থমকে দাঁড়াতে হয়। এই শিশু যখন চোখের আড়ালের সেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে এতােসব বড়াে বড়ো অলৌকিক স্তর অতিক্রম করে বের হয়ে আসে ও পৃথিবীর আলাে দেখে, তারপর শিশু ক্রমান্বয়ে যেসব স্তর পার হতে থাকে, তার বর্ণনা দেয়া হয়েছে আয়াতের পরবর্তী অংশে। ‘অতঃপর যেন তােমরা যৌবনে পদার্পণ করো।’ অর্থাৎ তােমরা দৈহিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অগ্রগতি অর্জন করো। লক্ষণীয় বিষয়, একটা সদ্যপ্রসূত শিশু ও একজন পরিণত বয়সের মানুষের মাঝে সময় বা বয়সের ব্যবধান যতােটা, তার চেয়ে ঢের বেশী থাকে গুণগত ব্যবধান। অথচ অসীম শক্তিশালী স্রষ্টার যে সুদক্ষ উদ্ভাবনী হাত সদ্যজাত শিশুর মধ্যে পরিণত মানুষের যাবতীয় গুণবৈশিষ্ট্য এবং যাবতীয় সম্ভাবনাময় যােগ্যতা ও প্রতিভার সমাবেশ ঘটায়, সেই উদ্ভাবনী হাতই সে ব্যবধান অনায়াসে অতিক্রম করে। কেননা এই কুশলী হাতই ইতিপূর্বে জরায়ুর প্রাচীরে সংরক্ষিত তুচ্ছ পানির বিন্দুর মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন মানব শিশুর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য। আর তােমাদের মধ্যে কতক এমন আছে, যারা মারা যায়, আর তােমাদের মধ্যে কতক এমনও আছে যাদেরকে অকর্মণ্য বয়স পর্যন্ত পৌছানাে হয়, ফলে জানা কথাও সে মনে রাখতে পারে না। যে ব্যক্তি মারা যায়, সেতাে প্রত্যেকটা প্রাণীর জন্যে নির্ধারিত পরিণত স্তরে পৌছে যায়। আর যাকে অকর্মণ্য বয়স পর্যন্ত পৌছানাে হয়, সে সকলের চিন্তা-গবেষণার খােরাক যােগাতে থাকে। জ্ঞান, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতায় পূর্ণ পরিণতি লাভ করার পরও সে আবেগ ও ঝোকের দিক দিয়ে, জ্ঞান ও বুদ্ধির দিক দিয়ে এবং দক্ষতা ও কুশলতার দিক দিয়ে পুনরায় একটা শিশুর রূপ ধারণ করে। সে সামান্যতম বস্তুতেই খুশীতে গদগদ হয়ে যায়, আবার সামান্য কারণেই হাউমাউ করে কাঁদে। স্মরণ শক্তির ক্ষেত্রেও শিশু হয়ে যায়। ফলে কিছুই মনে রাখতে পারে না। সঞ্চিত অভিজ্ঞতাগুলােকে সে পরস্পরের সাথে যুক্ত করতে পারে না, ফলে সব কিছু তার কাছে বিচ্ছিন্ন থেকে যায় এবং তার অনুভূতি ও উপলব্ধি কোনাে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না। ‘সে তার পরবর্তী সিদ্ধান্তে পৌছার আগে পূর্ববর্তীं অভিজ্ঞতাকে ভুলে যায়। ফলে জানা কথাও সে মনে রাখতে পারে না।’ তার মগজ থেকে ও স্মৃতি ভান্ডার থেকে সেই জ্ঞানও হারিয়ে যায় যাকে সম্বল করে কখনাে কখনাে সে ঔদ্ধত্য ও দম্ভ দেখিয়েছে এবং আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণাবলী নিয়ে অন্যায় বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে। আয়াতের পরবর্তী অংশে সৃষ্টির বিভিন্ন দৃশ্য এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে, যেমন পূর্ববর্তী অংশে তুলে ধরা হয়েছে মানুষের সত্ত্বার অভ্যন্তরে বিরাজমান বিভিন্ন অংশের দৃশ্য, ‘আর তুমি পৃথিবীকে দেখতে পাও শুকনাে, তারপর যখন আমি তাতে পানি বর্ষণ করি, তখন তা সতেজ, শিহরিত ও উর্বর হয় এবং নানা রকমের মনােহর উদ্ভিদ উৎপন্ন করে।’ হানিদাতান শব্দটার মূল ধাতু হচ্ছে হুমুদ। এর আভিধানিক অর্থ শুকনাে অবস্থা, আর মূলত এ দ্বারা জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী অবস্থাকে বুঝায়। বৃষ্টির আগে মাটির অবস্থা, এ রকমই হয়ে থাকে। পানিই হলাে জীবন ও প্রাণীর মৌল উপাদান। মাটির ওপর যখনই বৃষ্টি নামে, অমনি তা শিহরিত ও উর্বর হয়। এ এক অপূর্ব তৎপরতা, কোরআনে যার উল্লেখ করা হয়েছে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ারও বহু শতাব্দী আগে। শুকনাে মাটির ওপর পানি পড়লেই তা একই সাথে শিহরিত ও স্পন্দিত হয়। পানি পান করে তা কিঞ্চিত স্ফীত হয় ও সতেজ হয় । অতঃপর সেই মাটি সজীব হয়ে নানারকমের মনােহর উদ্ভিদ জন্মায়। শুকনাে নির্জীব হয়ে যাওয়ার পর মাটির সজীব, সতেজ ও শস্য শ্যামল হওয়ার চেয়ে মনােহর আর কী হতে পারে। কোরআনে এভাবেই সকল প্রাণীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বর্ণনা দেয় এবং তাদের সকলকে আল্লাহর একটা নিদর্শনের আওতায় একত্রিত করে। এটা এই অবিচ্ছেদ্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতি এক বিস্ময়কর সংকেত এবং জীবনের উপাদান ও তার পেছনে সক্রিয় স্রষ্টার ইচ্ছার একত্বের অকাট্য প্রমাণ, যা মাটি, মানুষ, প্রাণী ও উদ্ভিদ সকলের বেলায় সমভাবে প্রযােজ্য। এ সবের কারণ এই যে, ‘আল্লাহ তায়ালাই সত্য এবং তিনিই প্রাণহীনকে প্রাণ দেন।'(আয়াত ৬) অর্থাৎ মাটি থেকে মানুষের সৃষ্টি, ভ্রুণের পর্যায়ক্রমিক বিবর্তন, মানব শিশুর পর্যায়ক্রমিক বিকাশ বৃদ্ধি এবং শুকনাে নির্জীব হয়ে যাওয়া মাটি থেকে জীবনের উন্মেষ ও উদ্গমন এই সত্যের সাথে সম্পৃক্ত যে, আল্লাহ তায়ালাই সত্য। তিনি সত্য বলেই তার সৃষ্টির নিয়মনীতিও চির সত্য ও অপরিবর্তনীয় এবং এই বিবর্তন ও বিকাশ প্রক্রিয়া তার এই চিরন্তন সৃষ্টির নীতিরই অন্তর্ভুক্ত। জীবনের বিকাশ বৃদ্ধি ও বিবর্তনের এই পর্যায়ক্রমিক ধারা থেকেই প্রমাণিত হয় যে, এর পেছনে মহান স্রষ্টার সেই অমােঘ ইচ্ছাই সক্রিয় রয়েছে, যা এই প্রক্রিয়াকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিচ্ছে, এর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করছে এবং স্তরগুলাে চিহ্নিত করছে। বস্তুত আল্লাহর সত্য হওয়া ও এই নিরবিচ্ছিন্ন সৃজন প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, গভীর ও জোরদার। ‘এবং তিনিই মৃতদেরকে জীবন দেন…’ মৃতকে জীবন দান পুনরুজ্জীবনেরই সমার্থক। যিনি প্রথমবার জীবন দান করেন তিনিই পরবর্তীবার আখেরাতে পুনরুজ্জীবিত করেন। ‘এবং আল্লাহ তায়ালাই কবরে শায়িতদেরকে পুনরুত্থিত করবেন।’ যাতে তারা তাদের সমুচিত কর্মফল লাভ করে। বস্তুত এই পুনরুজ্জীবন সৃষ্টির উদ্দেশ্যেরই অনিবার্য দাবী। ভ্রুণ যে সমস্ত স্তর অতিক্রম করে এবং পৃথিবীতে আসার পর শিশু যে সমস্ত স্তর পার হয়, সেগুলাে থেকে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, যে মহান স্রষ্টার ইচ্ছা এই স্তরগুলাের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করে, তিনি মানুষকে এমন এক জায়গায় পৌছাতে বদ্ধপরিকর, যেখানে গিয়ে মানুষ তার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পূর্ণতা লাভ করতে পারবে। পার্থিব জীবনে সে এই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। কেননা এখানে সে কিছুটা অগ্রগতি লাভ করে থেমে যায় এবং আবার পূর্বের স্তরে ফিরে যায়, যেখানে সে জানা জিনিসও মনে রাখতে পারে না এবং শিশুর মতাে হয়ে যায়। সুতরাং এমন একটা জগত অপরিহার্য, যেখানে মানুষ যথার্থ পূর্ণতা লাভ করতে পারবে। সুতরাং পার্থিব জীবনের ক্রমবিকাশের এই স্তরগুলাে আখিরাতের দুটো প্রমাণ বহন করে। প্রথমত, যিনি প্রথম সৃষ্টিতে সক্ষম, তিনি পুনসৃষ্টিতেও সমর্থ। দ্বিতীয়ত, মানুষের ক্রমবিকাশের ধারাটাই এমন যে, তার সর্বশেষ পূর্ণতার স্তর ইহকালে নয় বরং পরকালে অবস্থিত। এভাবে সৃষ্টি ও পুনসৃষ্টির নিয়ম, ইহকাল ও পরকালের নিয়ম এবং হিসাব ও কর্মফলের নিয়ম একই সূত্রে গ্রোথিত। এসবই অসীম ক্ষমতাধর, মহাকুশলী স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রত্যক্ষ প্রমাণ । তার অস্তিত্ব অবিসংবাদিত।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫-৭ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা কিয়ামতকে অস্বীকার করে তাদের সামনে আল্লাহ তাআলা দলীল পেশ করছেনঃ তোমরা তোমাদের পুনর্জীবনকে অস্বীকার করলে আমি তোমাদেরকে তোমাদের প্রথম বারের সষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। তোমরা তোমাদের মূল সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখো তো! আমি তোমাদেরকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি অর্থাৎ তোমাদের আদি পিতা হযরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেছি মাটি দ্বারা তোমরা হলে তারই বংশধর। অতঃপর তোমাদের সকলকে আমি তুচ্ছ পানির ফোটার মাধ্যমে সৃষ্টি করেছি। প্রথমে ওটা রক্ত পিণ্ডের রূপ ধারণ করে। তারপর ওটা মাংস পিণ্ড হয়। চল্লিশ দিন পর্যন্ত তো ঐ শুক্র নিজের আকারেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর আল্লাহর হুকুমে ওটা রক্ত পিণ্ড হয়। আরো চল্লিশ দিন পরে ওটা একটা মাংস খণ্ডের রূপ ধারণ করে। তখনও ওকে কোন আকার বা রূপ দেয়া হয় না অতঃপর মহান আল্লাহ ওকে রূপ দান করেন। তাতে তিনি মাথা, হাত, বুক, পেট, উরু, পা এবং সমস্ত অঙ্গ গঠন করেন। কখনো কখনো এর পূর্বেই বাচ্চা পড়ে যায়। হে মানুষ! এটা তো তোমাদের পর্যবেক্ষণ করার বিষয়। কখনো আবার ঐ বাচ্চা পেটের মধ্যে স্থিতিশীল হয়। যখন ঐ পিণ্ডের উপর চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয় তখন আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে দেন তিনি ওটাকে ঠিকঠাক করে তাতে রূহ ঠুকে দেন এবং আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সুশ্রী, কুশ্রী, পুরুষ, স্ত্রী, বানিয়ে দেন। আর রিক, আজল, ভাল ও মন্দ তখনই লিখে দেন।
হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ), যিনি সত্যবাদী ও সত্যায়িত, আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেনঃ “তোমাদের সৃষ্টি (সূত্র) চল্লিশ রতি (দিন) পর্যন্ত তোমাদের মায়ের পেটে জমা হয়। অতঃপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত রক্ত পিণ্ডের আকারে থাকে। তারপর চল্লিশ দিন পর্যন্ত মাংস পিণ্ডের আকারে অবস্থান করে। এরপর একজন ফেরেশতাকে চারটি জিনিস লিখে দেয়ার জন্যে পাঠানো হয়। তা হলো রিক, আমল, আজল (মৃত্যু) এবং সৌভাগ্যবান বা হতভাগ্য হওয়া। তারপর তাতে রূহ, ফুকে দেয়া হয়। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আলকামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ “শুক্র গর্ভাশয়ে পড়া মাত্রই ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এটা সৃষ্টি হবে কি হবে না?” উত্তরে অস্বীকৃতি জানানো হলে ঐ শুক্র গর্ভাশয়ে জমাই হয় না। রক্তের আকারে গর্ভাশয় হতে ওটা বেরিয়ে যায়। আর যদি ওটা সৃষ্ট হওয়ার নির্দেশ হয় তবে ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেনঃ
“ছেলে হবে, না মেয়ে হবে? সৎ হবে না অসৎ হবে? এর আয়ুষ্কাল কত? এর ক্রিয়া কি? এর মৃত্যু কোথায় হবে?” তার পর শুক্রকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “তোমার প্রতিপালককে?” সে উত্তর দেয়ঃ “আল্লাহ।” আবার জিজ্ঞেস করা। হয়ঃ “তোমার রিযুকদাতা কে?” উত্তরে সে বলেঃ “আল্লাহ।” অতঃপর ফেরেশতাকে বলা হয় “তুমি (মূল) কিতাবের কাছে যাও। সেখানে তুমি এই শুক্রের সমস্ত তথ্য পেয়ে যাবে। এরপর সে সৃষ্ট হয়, তকদীরে লিখিত জীবন যাপন করে, লিখিত রিক পেয়ে থাকে, নির্ধারিত জায়গায় চলাফেরা করে, তারপর মৃত্যু আসে এবং তকদীরে লিখিত জায়গায় সমাধিস্থ হয়।” অতঃপর বর্ণনাকারী আমির শাবী (রঃ) উপরোক্ত আয়াত (আরবী) (২২:৫) পাঠ করেন। (এটা ইনু আবি হাতিম (রঃ) ও ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মাংস পিণ্ড হওয়ার পর চতুর্থ সৃষ্টির দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং আত্মা বিশিষ্ট হয়ে যায়।
হযরত হুযাইফা ইবনু উসায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “শুক্র গর্ভাশয়ে চল্লিশ দিন বা পঁয়তাল্লিশ দিন স্থিত হওয়ার পর ফেরেশতা শুক্রের কাছে আসেন এবং বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এটা কি হতভাগ্য না সৌভাগ্যবান?” উত্তরে যা বলা হয় তা তিনি লিখে নেন। আবার ফেরেশতা প্রশ্ন করেনঃ “ছেলে, না মেয়ে?” জবাবে যা বলা হয় তা তিনি লিপিবদ্ধ করেন। তারপর তার আমল, ক্রিয়া, রিক এবং আয়ুষ্কাল লিখে নেয়া হয়। অতঃপর সাহীফা (পুস্তিকা) গুটিয়ে নেয়া হয়। এতে কোন কম বেশী করা সম্ব নয়।” (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এরপর ওটা শিশুরূপে জন্ম গ্রহণ করে। ঐ সময় না থাকে তার কোন জ্ঞান এবং না থাকে কোন বোধশক্তি। অত্যন্ত দূর্বল থাকে এবং অঙ্গ প্রত্যঙ্গে কোন শক্তি থাকে না। তারপর আল্লাহ পাক তাকে বড় করতে থাকেন এবং পিতা মাতার অন্তরে তার প্রতি দয়া ও মমতা দিয়ে দেন। তারা সব সময় তারই চিন্তায় নিমগ্ন থাকে। বহু কষ্ট সহ্য করে তারা তাকে লালন পালন করে। অতঃপর সে যৌবনে পদার্পণ করে এবং সুন্দর রূপ ধারণ করে। কেউ কেউ তো যৌবন অবস্থাতেই মত্যর ডাকে সাড় দেয়। কেউ কেউ তো অতি বার্ধক্যে পৌঁছে যায়। তখন তার জ্ঞান বুদ্ধিও লোপ পায় এবং শিশুর মত দুর্বল হয়ে পড়ে। পূর্বের সমস্ত জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “আল্লাহ তিনিই যিনি তোমাদেরকে দুর্বলতা হতে সৃষ্টি করেছেন, আবার দুর্বলতার পরে সবলতা দান করেছেন, পুনরায় সবলতার পর তিনি দুর্বলতা ও বার্ধক্যে আনয়ন করে থাকেন, তিনি যা কিছু চান সৃষ্টি করেন, তিনি সর্বজ্ঞাতা, পূর্ণ ক্ষমতাবান।” (৩০:৫৪)
হযরত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “শিশু যে পর্যন্ত যৌবনে পদার্পণ না করে সে পর্যন্ত তার সৎ কার্যাবলী তার পিতা মাতার আমল নামায় লিপিবদ্ধ করা হয়। আর তার দুষ্কার্যাবলী তার নিজের আমল নামায়ও লিখা হয় না এবং তার পিতামাতার আমল নামায়ও নয়। যৌবনে পদার্পণ করা মাত্রই কলম তার উপর চলতে থাকে। তার সাথে অবস্থানকারী ফেরেশতাদ্বয়কে তার হিফাযত করার নির্দেশ দেয়া হয়। সে যখন ইসলামের অবস্থাতেই চল্লিশ বছর বয়সে পৌঁছে তখন আল্লাহ তাআলা তাকে তিনটি মসীবত হতে পরিত্রাণ দিয়ে থাকেন। তাহলে উন্মাদনা, কুষ্টরোগ, ও ধবল কুষ্ঠ। আল্লাহর দ্বীনের উপর যখন তার বয়স পঞ্চাশ বছরে উপনীত হয় তখন আল্লাহ পাক তার হিসাব হাল্কা করে দেন। তার বয়স ষাট হলে তখন মহান আল্লাহ তার সন্তুষ্টিপূর্ণ ও পছন্দনীয় কাজের দিকে তার প্রকৃতিকে ঝুঁকিয়ে দেন এবং তার মনের আকর্ষণ তার নিজের দিকে করে দেন। যখন সে সত্তর বছর বয়সে উপনীত হয় তখন আকাশের ফেরেশতারা তার সাথে ভালবাসা স্থাপন করতে শুরু করেন। যখন তার বয়স আশি হয় তখন আল্লাহ তাআলা তারপুণ্যগুলি লিখেন বটে, কিন্তু পাপগুলি ক্ষমা করে দেন। যখন সে নব্বই বছর বয়সে পৌঁছে তখন আল্লাহ তাআলা তার পুর্বের ও পরের সমস্ত পাপ মার্জনা করে দেন এবং তার পরিবারের লোকদের জন্যে তাকে সুপারিশকারী বানিয়ে দেন। আল্লাহর কাছে সে ‘আমীনল্লাহ (আল্লাহর বিশ্বস্ত) উপাধি প্রাপ্ত হয় এবং যমীনে আল্লাহর বন্দীদের মত থাকে। যখন সে হীনতম বয়সে পৌছে যায় এবং সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়ে, আর তার অবস্থা এমনই হয় যে, যা কিছু সে জানতো সে সম্বন্ধে মোটেই সজ্ঞান থাকে না, তখন সুস্থ ও সজ্ঞান অবস্থায় যা কিছু ভাল কাজ সে করতো তা সব কিছুই বরাবরই তার আমল নামায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। আর কোন দুষ্কর্ম তার দ্বারা হয়ে গেলে তা লিখা হয় না।” (হাদীসটি হাফিয আবু ইয়া’লা আহমাদ ইনু আলী ইবনু মুনা আল মুল্লিী (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল এবং এতে কঠিন অস্বীকৃতি রয়েছে। এতদসত্ত্বে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রঃ) এটা স্বীয় মুসনাদে আনয়ন করেছেন। মার রূপে এনেছেন এবং মাওকুফ রূপেও এনেছেন। হযরত আনাস (রাঃ) হতেই অন্য সনদে মার রূপে এটা আনয়ন করেছেন। হাফিজ আবু বকর ইবনু বাযযারও (রঃ) হযরত আনাস ইবনু মালিকের (রাঃ) রিওয়াইয়াতের মাধ্যমে মারফুরূপে বর্ণনা করেছেন। আর মুসলমানদের উপর মহান প্রতিপালকের মেহেরবানীর দাবীও এটাই বটে। আল্লাহ তাআলা আমাদের বয়সকে পুণ্যের সাথে বরকত দান করুন। আমীন)
মৃতকে জীবিত করার উপরোক্ত দলীল বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা। এর আর একটি দলীল বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ তোমরা ভূমি দেখে থাকো শুষ্ক, অতঃপর ওতে আমি বারি বর্ষণ করি। ফলে তা শস্য-শ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং উদগত করে সর্বপ্রকারের নয়নাভিরাম উদ্ভিত। যেখানে কিছুই ছিল না সেখানে সবকিছুই হয়ে যায়। মৃত ভূমি জীবনের প্রশস্ত শ্বাস গ্রহণ করতে শুরু করে। যেখানে ভয় লাগছিল সেখানে এখন আত্মার আনন্দ, চক্ষুর জ্যোতি এবং অন্তরের খুশী বিদ্যমান। নানা প্রকারের টক-মিষ্টি, সুস্বাদু ও সৌন্দর্যপূর্ণ ফলে গাছ ভর্তি হয়ে গেছে। ছোট ছোট সুন্দর গাছগুলি বসন্তকালে সৌন্দর্য প্রদর্শন করে চক্ষু জুড়িয়ে দিচ্ছে! এটাই ঐ মৃত যমীন যেখান হতে কাল পর্যন্ত ধূলো উড়ছিল, আর আজ হয়ে গেল ওটা মনের আনন্দও চোখের জ্যোতি। আজ ওটা স্বীয় জীবনের যৌবনের স্বাদ গ্রহণ করেছে। ফুলের ছোট ছোট চারাগুলির সুগন্ধে মন মস্তিষ্ক সতেজ হয়ে উঠেছে। দূর হতে প্রবাহিত সুগন্ধযুক্ত মৃদু মন্দ বায়ু মন মাতিয়ে তুলেছে। সুতরাং কতই না মহান ঐ আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্যে। এটা বাস্তব কথা যে, নিজের ইচ্ছামত সৃষ্টিকারী একমাত্র তিনিই। এ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তিনিই। প্রকৃত শাসনকর্তা ও বিচারক তিনিই বটে। তিনিই মৃতকে পুনর্জীবন দানকারী। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ হচ্ছে মৃত ও শুষ্ক যমীনকে পুনরায় শ্যামল সবুজ করে তোলা। এটা মানুষের চোখের সামনে রয়েছে। তিনি সব কিছুর উপর বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম। তিনি যা চান তাই হয়ে যায়। যখন তিনি কোন কাজের ইচ্ছা করেন তখন বলেনঃ হয়ে যাও’। তিনি এ কথা বলার সাথে সাথেই ওটা হয়ে যাবে না এটা অসম্ভব।
মহান আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে তিনি নিশ্চয় পুনরুত্থিত করবেন। তিনি অস্তিত্ব হীনতা হতে অস্তিত্বে আনয়নে সক্ষম। এ কাজে তিনি পূর্ণ ক্ষমতাবান পূর্বেও ছিলেন, এখনও আছেন এবং পরেও থাকবেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে আমার সম্বন্ধে উপমা রচনা করে, অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়; সে বলেঃ অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন ওটা পচে গলে যাবে? তুমি বলে দাওঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি ওটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত। তিনি তোমাদের জন্যে সবুজ বৃক্ষ হতে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং তোমরা তা দ্বারা প্রজ্জ্বলিত কর।” (৩৬:৭৮-৮০) এই ব্যাপারে আরো বহু আয়াতও রয়েছে।
হযরত লাকীত ইবনু আমির (রাঃ) যিনি আবু রাযীন আকীলী উপনামে প্রসিদ্ধ ছিলেন, একদা রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিয়ামতের দিন আমরা সবাই কি মহামহিমান্বিত আল্লাহকে দেখতে পাবো? তাঁর সৃষ্ট বস্তুর মধ্যে এর কোন নমুনা আছে কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ “তোমরা সবাই কি চন্দ্রকে সমানভাবে দেখতে পাও না?” হযরত লাকীত (রাঃ) জবাব দেনঃ “হা দেখতে পাইতো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা তো বড়ই শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী (সুতরাং কেন তাঁকে দেখতে পাবে না)।” হযরত লাকীত (রাঃ) আবার জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ‘মৃতকে জীবিত করার কোন প্রমাণ ও দৃষ্টান্ত দুনিয়ায় বিদ্যমান আছে কি?” রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তর দেনঃ “তুমি কি এমন কোন অনাবাদ পতিত ভূমির মধ্য দিয়ে গমন কর নাই যা। এতো মৃত ও শুষ্ক হয়ে গিয়েছিল যে, সেখান থেকে ধূলো উড়তে শুরু করেছিল? তারপর কি তুমি দেখো নাই যে, ঐ ভূমিই শষ্য শ্যামল হয়ে উঠেছে। এবং নানা প্রকারের উদ্ভিদে পূর্ণ হয়ে গেছে?” তিনি জবাবে বলেনঃ “হাঁ।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “এভাবেই আল্লাহ তাআলা মৃতকে জীবিত করবেন।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞান রাখেন।
হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেনঃ “যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস রাখে যে, আল্লাহ প্রকাশ্য সত্য, কিয়ামত অবশ্য অবশ্যই সংঘটিত হবে এবং আল্লাহ তাআলা মৃতদেরকে কবর হতে নিশ্চয়ই পুনরুত্থিত করবেন সে নিঃসন্দেহে জান্নাতী”। (এটা ইবন আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#942)
[ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ
O mankind!
If you are in doubt about the Resurrection, ]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 05-07
www.motaher21.net
22:5
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ رَیۡبٍ مِّنَ الۡبَعۡثِ فَاِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ تُرَابٍ ثُمَّ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ ثُمَّ مِنۡ عَلَقَۃٍ ثُمَّ مِنۡ مُّضۡغَۃٍ مُّخَلَّقَۃٍ وَّ غَیۡرِ مُخَلَّقَۃٍ لِّنُبَیِّنَ لَکُمۡ ؕ وَ نُقِرُّ فِی الۡاَرۡحَامِ مَا نَشَآءُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ نُخۡرِجُکُمۡ طِفۡلًا ثُمَّ لِتَبۡلُغُوۡۤا اَشُدَّکُمۡ ۚ وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّتَوَفّٰی وَ مِنۡکُمۡ مَّنۡ یُّرَدُّ اِلٰۤی اَرۡذَلِ الۡعُمُرِ لِکَیۡلَا یَعۡلَمَ مِنۡۢ بَعۡدِ عِلۡمٍ شَیۡئًا ؕ وَ تَرَی الۡاَرۡضَ ہَامِدَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡہَا الۡمَآءَ اہۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ وَ اَنۡۢبَتَتۡ مِنۡ کُلِّ زَوۡجٍۭ بَہِیۡجٍ ﴿۵﴾
O People, if you should be in doubt about the Resurrection, then [consider that] indeed, We created you from dust, then from a sperm-drop, then from a clinging clot, and then from a lump of flesh, formed and unformed – that We may show you. And We settle in the wombs whom We will for a specified term, then We bring you out as a child, and then [We develop you] that you may reach your [time of] maturity. And among you is he who is taken in [early] death, and among you is he who is returned to the most decrepit [old] age so that he knows, after [once having] knowledge, nothing. And you see the earth barren, but when We send down upon it rain, it quivers and swells and grows [something] of every beautiful kind.
Evidence of the Resurrection in the creation of Man and of Plants
When Allah speaks of disbelief in the Resurrection, He also mentions the evidence of His power and ability to resurrect that is evident from the way He initiates creation.
Allah says:
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّنَ الْبَعْثِ
O mankind!
If you are in doubt about the Resurrection,
which means the time when souls and bodies will be raised up on the Day of Resurrection,
فَإِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن تُرَابٍ
then verily, We have created you from dust,
meaning, `you were originally created from dust’, which is what Adam, peace be upon him, was created from.
ثُمَّ مِن نُّطْفَةٍ
then from a Nutfah,
meaning,
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِن سُلَلَةٍ مِّن مَّاء مَّهِينٍ
then He made his offspring from semen of despised water. (32:8)
The Development of the Nutfah and Embryo in the Womb
Allah says:
ثُمَّ مِنْ عَلَقَةٍ ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ
then from a clot then from a little lump of flesh,
if the Nutfah establishes itself in the woman’s womb, it stays like that for forty days, then more material is added to it and it changes into a red clot, by the leave of Allah, and it remains like that for forty days.
Then it changes and becomes a lump of flesh, like a piece of meat with no form or shape. Then it starts to take on a form and shape, developing a head, arms, chest, stomach, thighs, legs, feet and all its members.
Sometimes a woman miscarries before the fetus is formed and sometimes she miscarries after it has formed. As Allah says:
ثُمَّ مِن مُّضْغَةٍ
مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ
then from a little lump of flesh — some formed and some unformed,
meaning, as you see.
لِّنُبَيِّنَ لَكُمْ وَنُقِرُّ فِي الاَْرْحَامِ مَا نَشَاء إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى
that We may make (it) clear to you. And We cause whom We will to remain in the wombs for an appointed term,
meaning that sometimes the fetus remains in the womb and is not miscarried.
Mujahid said about the ayah,
مُّخَلَّقَةٍ وَغَيْرِ مُخَلَّقَةٍ
(some formed and some unformed),
“This means the miscarried fetus, formed or unformed. When forty days have passed of it being a lump of flesh, then Allah sends an angel to it who breathes the soul into it and forms it as Allah wills, handsome or ugly, male or female. He then writes its provision, its allotted length of life and whether it is to be one of the blessed or the wretched.”
It was recorded in the Two Sahihs that Ibn Mas`ud said,
“The Messenger of Allah, who is the true and truly inspired one, told us:
إِنَّ خَلْقَ أَحَدِكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ إِلَيْهِ الْمَلَكَ فَيُوْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَعَمَلِهِ وَأَجَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ ثُمَّ يُنْفَخُ فِيهِ الرُّوح
Every one of you is collected in the womb of his mother for the first forty days, and then he becomes a clot for another forty days, and then a lump of flesh for another forty days. Then Allah sends an angel to write four words:He writes his provision, his deeds, his life span, and whether he will be blessed or wretched. Then he blows the soul into him.”
Man’s Development from Infancy to Old Age
His saying;
ثُمَّ نُخْرِجُكُمْ طِفْلً
then We bring you out as infants,
means, weak in his body, hearing, sight, senses, stamina and mind.
Then Allah gives him strength, gradually and causes his parents to treat him with tender kindness night and day.
Allah says:
ثُمَّ لِتَبْلُغُوا أَشُدَّكُمْ
then (give you growth) that you may reach your age of full strength.
meaning, his strength increases until he reaches the vitality and handsomeness of youth.
وَمِنكُم مَّن يُتَوَفَّى
And among you there is he who dies,
means, when he is young and strong.
وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمُرِ
and among you there is he who is brought back to the miserable old age,
meaning advanced old age with its weakness in mind and body, in steady decline in comprehension, and disability to grasp.
As Allah says:
لِكَيْلَ يَعْلَمَ مِن بَعْدِ عِلْمٍ شَيْيًا
so that he knows nothing after having known.
اللَّهُ الَّذِى خَلَقَكُمْ مِّن ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةٍ ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفاً وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَأءُ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ
Allah is He Who created you in (a state of) weakness, then gave you strength after weakness, then after strength gave (you) weakness and grey hair. He creates what He wills. And it is He Who is the All-Knowing, the All-Powerful. (30:54)
Another Parable of the Resurrection from Plants
Allah says:
وَتَرَى الاَْرْضَ هَامِدَةً
And you see the earth Hamidatan,
This is another sign of the power of Allah to bring the dead back to life, just as He brings the dead, barren earth back to life, the lifeless earth in which nothing grows.
Qatadah said,
“This means, the eroded, dusty earth.”
As-Suddi said,
“Dead.”
فَإِذَا أَنزَلْنَا عَلَيْهَا الْمَاء اهْتَزَّتْ وَرَبَتْ وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
but when We send down water on it, it is stirred (to life), and it swells and puts forth every lovely kind (of growth).
When Allah sends the rain upon it, it is stirred to life, that is, vegetation begins to grow and it comes alive after it was dead. Then it rises after the soil had settled, then it puts forth its different kinds of fruit and crops with all their varied colours, tastes, fragrances, shapes and benefits.
Allah says:
وَأَنبَتَتْ مِن كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ
and puts forth every lovely kind (of ).
meaning, beautiful in appearance and with delightful fragrances
22:6
ذٰلِکَ بِاَنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡحَقُّ وَ اَنَّہٗ یُحۡیِ الۡمَوۡتٰی وَ اَنَّہٗ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ۙ﴿۶﴾
That is because Allah is the Truth and because He gives life to the dead and because He is over all things competent
ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ
That is because Allah:He is the Truth,
means, the Creator, the Controller, the One Who does as He wills.
وَأَنَّهُ يُحْيِي الْمَوْتَى
and it is He Who gives life to the dead,
means, just as He gives life to the dead earth and brings forth from it all these kinds of vegetation.
إِنَّ الَّذِى أَحْيَـهَا لَمُحْىِ الْمَوْتَى إِنَّهُ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
Verily, He Who gives it life, surely is able to give life to the dead. Indeed He is able to do all things. (41:39)
إِنَّمَأ أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْياً أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
Verily, His command, when He intends a thing, is only that He says to it, “Be!” — and it is! (36:82)
وَأَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
and it is He Who is able to do all things.
22:7
وَّ اَنَّ السَّاعَۃَ اٰتِیَۃٌ لَّا رَیۡبَ فِیۡہَا ۙ وَ اَنَّ اللّٰہَ یَبۡعَثُ مَنۡ فِی الۡقُبُوۡرِ ﴿۷﴾
And [that they may know] that the Hour is coming – no doubt about it – and that Allah will resurrect those in the graves.
وَأَنَّ السَّاعَةَ اتِيَةٌ لاَّ رَيْبَ فِيهَا
And surely, the Hour is coming, there is no doubt about it;
meaning, it will inevitably come to pass.
وَأَنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ مَن فِي الْقُبُورِ
and certainly, Allah will resurrect those who are in the graves.
means, He will bring them back to life after they have become dust; He will create them anew after they have become nothing.
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلً وَنَسِىَ خَلْقَهُ قَالَ مَن يُحىِ الْعِظَـمَ وَهِىَ رَمِيمٌ
قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِى أَنشَأَهَأ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
الَّذِى جَعَلَ لَكُم مِّنَ الشَّجَرِ الاٌّخْضَرِ نَاراً فَإِذَا أَنتُم مِّنْه تُوقِدُونَ
And he puts forth for Us a parable, and forgets his own creation. He says:”Who will give life to these bones after they are rotten and have become dust!”
Say:”He will give life to them Who created them for the first time! And He is the All-Knower of every creation!”
He Who produces for you fire out of the green tree, when behold you kindle there- with. (36:78-80)
And there are many similar Ayat
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran