(বই#৯৪৫) [ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ যারা আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে।] সূরা:- আল্ – হাজ্জ। সুরা:২২ ২৫ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪৫)
[ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ
যারা আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে।]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
২৫ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
সুরা: আল-হাজ্জ
আয়াত নং :-২৫
اِنَّ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا وَ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ وَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ الَّذِیْ جَعَلْنٰهُ لِلنَّاسِ سَوَآءَ اِ۟لْعَاكِفُ فِیْهِ وَ الْبَادِ١ؕ وَ مَنْ یُّرِدْ فِیْهِ بِاِلْحَادٍۭ بِظُلْمٍ نُّذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ اَلِیْمٍ۠

যারা কুফরী করেছে এবং যারা (আজ) আল্লাহর পথে চলতে বাধা দিচ্ছে আর সেই মসজিদে হারামের যিয়ারতে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যাকে আমি তৈরি করেছি সব লোকের জন্য যাতে স্থানীয় বাসিন্দা ও বহিরাগতদের অধিকার সমান। (তাদের নীতি অবশ্যই শাস্তিযোগ্য) এখানে (মসজিদে হারামে) যে-ই সত্যতা থেকে সরে গিয়ে জুলুমের পথ অবলম্বন করবে৪৪ তাকেই আমি যন্ত্রণাদায়ক আযাবের স্বাদ আস্বাদান করাবো।

২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল
কুরআন‌্য বলেছেন :-
# মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত মেনে নিতে অস্বীকার করেছে। পরবর্তী বিষয়বস্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিচ্ছে যে, এখানে মক্কার কাফেরদের কথা বলা হচ্ছে।

# মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর অনুসারীদেরকে হজ্জ ও উমরাহ করতে দেয় না।

# যা কোন ব্যক্তি, পরিবার বা গোত্রের নিজস্ব সম্পত্তি নয়। বরং সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত, যার যিয়ারত থেকে বাধা দেবার অধিকার কারো নেই। এখানে ফিকাহর দৃষ্টিতে দু’টি প্রশ্ন দেখা দেয়। ফকীহদের মধ্যে এ ব্যাপারে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছেঃ

প্রথমত, মসজিদে হারাম অর্থ কি? এটা কি শুধু মসজিদকে বুঝাচ্ছে না সমগ্র মক্কা নগরীকে?

দ্বিতীয়ত, এখানে “আকিফ” (অবস্থানকারী) ও “বাদ” (বহিরাগত)-এর অধিকার সমান হবার অর্থ কি?

এক দলের মতে এর অর্থ শুধু মসজিদ, সমগ্র মক্কা নগরী নয়। কুরআনের শব্দাবলীর বাহ্যিক অর্থ থেকেই এটা সুস্পষ্ট হয়। এখানে অধিকার সমান হবার অর্থ ইবাদাত করার সমান অধিকার। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত উক্তি থেকে জানা যায়ঃ

يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ مَنْ وَلى مِنْكُمْ مِنْ أُمُورِ النَّاسِ شَيْئًا فَلاَ يَمْنَعَنَّ أَحَدًا طَافَ بِهَذَا الْبَيْتِ اوَصَلِّي أَيَّةً سَاعَةٍ شَاءَ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ

“হে আবদে মান্নাফের সন্তানগণ! তোমাদের যে কেউ জনগণের বিষয়াদির ওপর কোন প্রকার কর্তৃত্বের অধিকারী হবে তার পক্ষে রাতে ও দিনের কোন সময় কোন ব্যক্তির কাবাগৃহের তাওয়াফ করা অথবা নামায পড়ায় বাধা দেয়া উচিত নয়।”

এ অভিমতের সমর্থকরা বলেন, মসজিদে হারাম বলতে পুরা হারাম শরীফ মনে করা এবং তারপর সেখানে সবদিক দিয়ে স্থানীয় অধিবাসী ও বাইর থেকে আগতদের অধিকার সমান গণ্য করা ভুল। কারণ মক্কার ঘরবাড়ি ও জমি জমার ওপর লোকদের মালিকানা, অধিকার, উত্তরাধিকার এবং কেনা-বেচা ও ইজারা দেবার অধিকার ইসলামপূর্ব যুগ থেকে প্রতিষ্ঠিত এবং ইসলামের আগমনের পরও প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন কি হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে মক্কায় কারাগার নির্মাণের জন্য সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার গৃহ চার হাজার দিরহাম কিনে নেয়া হয়। কাজেই এ সাম্য শুধুমাত্র ইবাদাতের ব্যাপারে, অন্য কোন বিষয়ে নয়। এটি ইমাম শাফেঈ ও তাঁর সমমনা লোকদের উক্তি। দ্বিতীয় দলটির মতে, মসজিদে হারাম বলতে মক্কার সমগ্র হারাম শরীফকে বুঝানো হয়েছে। এর প্রথম যুক্তি হচ্ছে, এ সংশ্লিষ্ট আয়াতটিতেই মক্কার মুশরিকদেরকে যে বিষয়ে তিরস্কার করা হয়েছে সেটি হচ্ছে মুসলমানদের হজ্জে বাধা হওয়া। তাদের এ কাজকে এ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যে, সেখানে সবার অধিকার সমান। এখন এ কথা সুস্পষ্ট যে, হজ্জ কেবল মসজিদে হয় না বরং সাফা ও মারওয়া থেকে নিয়ে মিনা, মুযদালিফা, আরাফাত সবই হজ্জ অনুষ্ঠানের স্থানের অন্তর্ভুক্ত। তারপর কুরআনে শুধু এক জায়গায়ই নয়, অসংখ্য জায়গায় মসজিদে হারাম বলে সমগ্র হারাম শরীফ ধরা হয়েছে যেমন বলা হয়েছেঃ

الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِنْدَ اللَّه

“মসজিদে হারাম থেকে বাধা দেয়া এবং তার অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে হারাম মাসে যুদ্ধ করার চাইতে বড় গুনাহ।”

# ( আল বাকারাহঃ ২১৭ আয়াত )

এখানে কুরআনে আলাদ্দুল খিসাম শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এমন শত্রু যে সকল শত্রুর বড়। অর্থাৎ সত্যের বিরোধিতার ক্ষেত্রে সে সম্ভাব্য সব রকমের অস্ত্র ব্যবহার করে। মিথ্যা, জালিয়াতি, বেঈমানি, বিশ্বাসঘাতকতা এবং যে কোন ধরনের কপটতার অস্ত্র ব্যবহার করতে সে একটুও ইতস্তত করে না।

# বলাবাহুল্য, এখানে মসজিদে হারামে যারা নামায পড়ায় রত তাদেরকে বের করা নয় বরং মক্কা থেকে মুসলমান অধিবাসীদেরকে বের করা বুঝানো হয়েছে। অন্য জায়গায় বলা হয়েছেঃ

ذَلِكَ لِمَنْ لَمْ يَكُنْ أَهْلُهُ حَاضِرِي الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

“এ সুবিধা তার জন্য যার পরিবারবর্গ মসজিদে হারামের বাসিন্দা নয়।”

# ( আল বাকারাহঃ ১৯৬ )

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-১৯৬

وَ اَتِمُّوا الْحَجَّ وَ الْعُمْرَةَ لِلّٰهِ١ؕ فَاِنْ اُحْصِرْتُمْ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ١ۚ وَ لَا تَحْلِقُوْا رُءُوْسَكُمْ حَتّٰى یَبْلُغَ الْهَدْیُ مَحِلَّهٗ١ؕ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَّرِیْضًا اَوْ بِهٖۤ اَذًى مِّنْ رَّاْسِهٖ فَفِدْیَةٌ مِّنْ صِیَامٍ اَوْ صَدَقَةٍ اَوْ نُسُكٍ١ۚ فَاِذَاۤ اَمِنْتُمْ١ٙ فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ اِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَیْسَرَ مِنَ الْهَدْیِ١ۚ فَمَنْ لَّمْ یَجِدْ فَصِیَامُ ثَلٰثَةِ اَیَّامٍ فِی الْحَجِّ وَ سَبْعَةٍ اِذَا رَجَعْتُمْ١ؕ تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ١ؕ ذٰلِكَ لِمَنْ لَّمْ یَكُنْ اَهْلُهٗ حَاضِرِی الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ١ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ وَ اعْلَمُوْۤا اَنَّ اللّٰهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ۠

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যখন হজ্ব ও উমরাহ করার নিয়ত করো তখন তা পূর্ণ করো। আর যদি কোথাও আটকা পড়ো তাহলে যে কুরবানী তোমাদের আয়ত্বাধীন হয় তাই আল্লাহর উদ্দেশ্যে পেশ করো। আর কুরবানী তার নিজের জায়গায় পৌঁছে না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা নিজেদের মাথা মুণ্ডন করো না। তবে যে ব্যক্তি রোগগ্রস্ত হয় অথবা যার মাথায় কোন কষ্ট থাকে এবং সেজন্য মাথা মুণ্ডন না করে তাহলে তার ‘ফিদিয়া’ হিসেবে রোযা রাখা বা সাদকা দেয়া অথবা কুরবানী করা উচিত। তারপর যদি তোমাদের নিরাপত্তা অর্জিত হয় (এবং তোমরা হজ্বের আগে মক্কায় পৌঁছে যাও) তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি হজ্ব্বের সময় আসা পর্যন্ত উমরাহ্‌র সুযোগ লাভ করে সে যেন সামর্থ অনুযায়ী কুরবানী করে। আর যদি কুরবানীর যোগাড় না হয়, তাহলে হজ্ব্বের যামানায় তিনটি রোযা এবং সাতটি রোযা ঘরে ফিরে গিয়ে, এভাবে পুরো দশটি রোযা যেন রাখে। এই সুবিধে তাদের জন্য যাদের বাড়ী-ঘর মসজিদে হারামের কাছাকাছি নয়। আল্লাহর এ সমস্ত বিধানের বিরোধিতা করা থেকে দূরে থাকো এবং ভালোভাবে জেনে নাও আল্লাহ‌ কঠিন শাস্তি প্রদানকারী।

 

# পথে যদি এমন কোন কারণ দেখা দেয় যার ফলে সামনে এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং বাধ্য হয়ে পথেই থেমে যেতে হয় তাহলে উট, গরু, ছাগলের মধ্য থেকে যে পশুটি পাওয়া সম্ভব হয় সেটি আল্লাহর জন্য কুরবানী করো।

# কুরবানী তার নিজের জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার অর্থ কি? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত প্রকাশ করা হয়েছে। হানাফী ফকীহদের মতে এর অর্থ হচ্ছে হারাম শরীফ। অর্থাৎ হজ্জযাত্রী যদি পথে থেমে যেতে বাধ্য হয় তাহলে নিজের কুরবানীর পশু বা তার মূল্য পাঠিয়ে দেবে এবং তার পক্ষ থেকে হারাম শরীফের সীমানার মধ্যে কুরবানী করতে হবে। ইমাম মালিক (র) ও ইমাম শাফেঈর (র) মতে হজ্জযাত্রী যেখানে আটক হয়ে যায় সেখানে কুরবানী করে দেয়াই হচ্ছে এর অর্থ। মাথা মুণ্ডন করার অর্থ হচ্ছে, মাথার চুল চেঁছে ফেলা। অর্থাৎ কুরবানী না হওয়া পর্যন্ত মাথার চুল চেঁছে ফেলতে পারবে না।

# হাদীস থেকে জানা যায়, এ অবস্থায় নবী সালআল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন দিন রোযা রাখা বা ছয় জন মিসকিনকে আহার করানো অথবা কমপক্ষে একটি ছাগল যবেহ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

# যে কারণে পথে তোমাদের বাধ্য হয়ে থেমে যেতে হয়েছিল সে কারণ যদি দূর হয়ে যায়। যেহেতু সে যুগে ইসলাম বৈরী গোত্রদের বাঁধা দেয়ার ফলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে হজ্জের পথ বন্ধ হয়ে যেতো এবং হাজীদের পথে থেমে যেতে হতো, তাই আল্লাহ‌ ওপরের আয়াতে “আটকা পড়ো” এবং তার মোকাবিলায় “নিরাপত্তা অর্জিত হয়” শব্দ ব্যবহার করেছেন। কিন্তু “আটকা পড়া”র মধ্যে যেমন শত্রুর বাঁধা দেয়া ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার সাথে সাথে অন্যান্য যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অর্থও অন্তর্ভুক্ত হয় তেমনি “নিরাপত্তা অর্জিত হয়” শব্দের মধ্যেও যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবার অর্থ অন্তর্ভুক্ত হয়।

# জাহেলী যুদ্ধে আরবের লোকেরা ধারণা করতো, একই সফরে হজ্জ ও উমরাহ দু’টো সম্পন্ন করা মহাপাপ। তাদের মনগড়া শরীয়াতী বিধান অনুযায়ী হজ্জের জন্য একটি সফর এবং উমরাহর জন্য আর একটি সফল করা অপরিহার্য ছিল। মহান আল্লাহ‌ তাদের আরোপিত এই বাধ্য-বাধকতা খতম করে দেন এবং বাইর থেকে আগমনকারীদেরকে এই সফরে হজ্জ ও উমরাহ করার সুবিধা দান করেন। তবে যারা মক্কার আশেপাশের মীকাতের (যে স্থান থেক হজ্জযাত্রীকে ইহরাম বাঁধতে হয়) সীমার মধ্যে অবস্থান করে তাদেরকে এই সুযোগ দেয়া হয়নি। কারণ তাদের পক্ষে হজ্জ ও উমরাহর জন্য পৃথক পৃথক সফর করা মোটেই কঠিন কাজ নয়।হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত উমরাহর সুযোগ লাভ করার অর্থ হচ্ছে, উমরাহ সম্পন্ন করে ইহরাম খুলে ফেলতে হবে এবং ইহরাম থাকা অবস্থায় যেসব বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হচ্ছিল সেগুলো থেকে মুক্ত হয়ে যাবে। তারপর হজ্জের সময় এলে আবার নতুন করে ইহরাম বেঁধে নেবে।

 

# এখানেও মসজিদে হারাম বলতে সমগ্র মক্কার হারাম শরীফ, নিছক মসজিদ নয়। কাজেই “মসজিদে হারামে” সাম্যকে শুধুমমাত্র মসজিদের মধ্যে সাম্য গণ্য করা যেতে পারে না বরং এটি হচ্ছে মক্কার হারামের মধ্যে সাম্য।

তারপর এ দলটি আরো বলে, সাম্য ও সমান অধিকার শুধুমাত্র ইবাদাত, সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে নয় বরং মক্কার হারমে সকল প্রকার অধিকারের ক্ষেত্রে রয়েছে। এ দেশটি আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফকৃত। কাজেই এর এবং এর ইমারাতসমূহের ওপর কারো মালিকানা অধিকার নেই। প্রত্যেক ব্যক্তি প্রত্যেক জায়গায় অবস্থান করতে পারে। কেউ কাউকে বাধা দিকে পারে না এবং কোন উপবেশনকারীকে উঠিয়ে দিতেও পারে না। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা অসংখ্য হাদীস ও সাহাবায়ে কেরামের বাণী ও কর্ম পেশ করে থাকেন। যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী ﷺ বলেনঃ

مَكَّةُ مُنَاخٌ لاَ يُبَاعُ رِبَاعُهَا وَلاَ تُؤَاجَرُ بُيُوتُهَا

“মক্কা মুসাফিরদের অবতরণস্থল, এর জমি বিক্রি করা যাবে না এবং এর গৃহসমূহের ভাড়া আদায় করাও যাবে না। ইবরাহীম নাখঈ সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়াই একটি (মুরসাল) হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ

مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللَّهُ لَا يَحِلُّ بَيْعُ رِبَاعِهَا , وَلَا إِجَارَةُ بُيُوتِهَا

“মক্কাকে আল্লাহ হারাম গণ্য করেছেন। এর জমি বিক্রি করা এবং এর গৃহসমূহের ভাড়া আদায় করা হালাল নয়।” (উল্লেখ করা যেতে পারে, ইবরাহীম নাখঈর মুরসাল তথা সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়া বর্ণিত হাদীস মারফু’ তথা সাহাবীর নাম উল্লেখসহ বর্ণিত হাদীসের পর্যায়ভুক্ত)। কারণ, তাঁর সর্বজন পরিচিত নিয়ম হচ্ছে, যখন তিনি সাহাবীর নাম উল্লেখ ছাড়াই (মুরসাল) কোন হাদীস বর্ণনা করেন তখন আসলে আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদের (রা.) মাধ্যমেই বর্ণনা করেন। মুজাহিদও প্রায় এ একই শব্দাবলীর মাধ্যমে একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। ‘আলকামাহ ইবনে ফাদলাহ বর্ণনা করেছেন,

“নবী ﷺ এবং আবুবকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের আমলে মক্কার জমিকে পতিত জমি মনে করা হতো। যার প্রয়োজন হতো এখানে থাকতো এবং প্রয়োজন ফুরালে অন্য কাউকে বসিয়ে দিতো।”

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হযরত উমর (রা.) হুকুম দিয়েছিলেন যে, হজ্জের সময় মক্কার কোন লোক নিজের দরজা বন্ধ করতে পারবে না। বরং মুজাহিদ বর্ণনা করেন, হযরত উমর (রা.) মক্কাবাসীদেরকে নিজেদের বাড়ির আঙিনা খোলা রাখার হুকুম দিয়ে রেখেছিলেন এবং আগমণকারীদেরকে তাদের ইচ্ছামত স্থানে অবস্থান করতে দেয়ার জন্য আঙিনায় দরজা বসাতে নিষেধ করতেন। আতাও এ একই কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত উমর (রা.) একমাত্র সোহাইল ইবনে আমরকে আঙিনায় দরজা বসাবার অনুমতি দিয়েছিলেন। কারণ, ব্যবসায় ব্যাপদেশে তাঁকে নিজের উট সেখানে আটকে রাখতে হতো। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি মক্কার গৃহের ভাড়া নেয় সে নিজের পেট আগুন দিয়ে ভরে।

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাসের (রা.) উক্তি হচ্ছে, আল্লাহ মক্কার সমগ্র হারামকে মসজিদ বানিয়ে দিয়েছেন। সেখানে সবার অধিকার সমান। বাইরের লোকদের থেকে ভাড়া আদায় করার কোন অধিকার মক্কার লোকদের নেই।

উমর ইবনে আবদুল আযীয (র) মক্কার গভর্ণরের নামে ফরমান জারি করেন যে, মক্কার গৃহের ভাড়া নেয়া যাবে না। কারণ, এটা হারাম।

এসব রেওয়ায়াতের ভিত্তিতে বিপুল সংখ্যক তাবেঈ এমত পোষণ করেন এবং ফকীহগণের মধ্যে ইমাম মালেক (র), ইমাম আবু হানীফা (র), সুফিয়ান সওরী (র), আহমদ ইবনে হাম্বল (র) ও ইসহাক ইবনে রাহাওয়াইয়াহও এ মতের অনুসারী হয়েছেন যে, মক্কার জমি বেচা-কেনা করা এবং কমপক্ষে হজ্জ মওসূমে মক্কার গৃহের ভাড়া আদায় করা জায়েয নয়। তবে অধিকাংশ ফকীহ মক্কার গৃহসমূহের ওপর জনগণের মালিকানা অধিকার স্বীকার করেছেন এবং জমি হিসেবে নয়, গৃহ হিসেবে সেগুলো বেচা-কেনা বৈধ গণ্য করেছেন।

এ অভিমতটিই আল্লাহর কিতাব, রসূলের সুন্নাত ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতের কাছাকাছি মনে হয়। কারণ, আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানদের ওপর হজ্জ এজন্য ফরয করেননি যে, এটা মক্কার মুসলমানদের উপার্জনের একটা উপায় হবে এবং যেসব মুসলমান ফরয পালনের জন্য বাধ্য হয়ে সেখানে যাবে তাদের কাছ থেকে সেখানকার গৃহমালিক ও জমি মালিকগণ ভাড়া আদায় করে লুটের বাজার গরম করবেন। বরং সেগুলো সকল ঈমানদারের জন্য ব্যাপকভাবে ওয়াকফকৃত। তার জমির ওপর কারোর মালিকানা নেই। প্রত্যেক যিয়ারতকারী তার ইচ্ছা মতো যে কোন জায়গায় অবস্থান করতে পারে।

# এখানে নিছক কোন বিশেষ কাজ নয় বরং এমন প্রত্যেক কাজই বুঝানো হয়েছে যা সত্য থেকে বিচ্যুত এবং জুলুমের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে। যদিও সকল অবস্থায় এ ধরনের কাজ করা পাপ কিন্তু হারাম শরীফে একাজ করা আরো অনেক বেশী মারাত্মক পাপ। মুফাসসিরগণ বিনা প্রয়োজনে কসম খাওয়াকে পর্যন্ত হারাম শরীফের মধ্যে বেদ্বীনী গণ্য করেছেন এবং একে এ আয়াতের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এ সমস্ত সাধারণ গোনাহ ছাড়া হারাম শরীফের মর্যাদার সাথে জড়িত যে বিশেষ বিধানগুলো আছে সেগুলোর বিরুদ্ধাচরণ করা সুস্পষ্টভাবে গোনাহের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে। যেমনঃ

হারামের বাইরে যদি কোন ব্যক্তি কাউকে হত্যা করে অথবা এমন কোন অপরাধ করে যার ফলে তার ওপর শরীয়াত নির্ধারিত শাস্তি অনিবার্য হয়ে পড়ে এবং তারপর সে হারাম শরীফে আশ্রয় নেয়, তাহলে যতক্ষণ সে সেখানে থাকে তার ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না। হারামের এ মর্যাদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকে চলে আসছে। মক্কা বিজয়ের দিন শুধুমাত্র কিছুক্ষণের জন্য এ হুরমত উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল তারপর আবার চিরকালের জন্য তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। কুরআন বলেছেঃ وَمَنْ دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا “যে এর মধ্যে প্রবেশ করলো সে নিরাপত্তাধীন হয়ে গেলো।” বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াতে হযরত উমর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের এ উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে যে, যদি আমরা নিজেদের পিতৃহন্তাকেও সেখানে পাই তাহলে তার গায়েও হাত দেবো না। এ কারণে অধিকাংশ তাবেঈ, হানাফী, হাম্বলী ও আহলে হাদীস উলামা হারামের বাইরে অনুষ্ঠিত অপরাধের শাস্তি হারামের মধ্যে দেয়া যেতে পারে না বলে মত পোষণ করেন।

সেখানে যুদ্ধ ও রক্তপাত হারাম। মক্কা বিজয়ের পর দ্বিতীয় দিন নবী ﷺ যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “হে লোকেরা! আল্লাহ সৃষ্টির শুরু থেকেই মক্কাকে হারাম করেছেন এবং আল্লাহর মর্যাদাদানের কারণে কিয়ামত পর্যন্ত এটি মর্যাদাসম্পন্ন তথা হারাম। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তার জন্য এখানে রক্ত প্রবাহিত করা হালাল নয়।” তারপর তিনি বলেছিলেন, “যদি আমার এ যুদ্ধকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে কোন ব্যক্তি এখানে রক্তপাত বৈধ করে নেয় তাহলে তাকে বলে দাও, আল্লাহ তাঁর রসূলের জন্য এটা বৈধ করেছিলেন, তোমার জন্য নয়। আর আমার জন্যও এটা মাত্র একটি দিনের একটি সময়ের জন্য হালাল করা হয়েছিল, আবার আজ গতকালের মতই তার হারাম হওয়ার হুকুম সেই একইভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

সেখানকার প্রাকৃতিক গাছপালা কাটা যেতে পারে না। জমিতে স্বতঃ উৎপাদিত ঘাস তুলে ফেলা যেতে পারে না এবং পাখ-পাখালী ও অন্যান্য জন্তু জানোয়ার শিকার করাও যেতে পারে না। হারামের বাইরে শিকার করার জন্য সেখান থেকে প্রাণীদের তাড়িয়ে বাইরে আনাও যেতে পারে না। শুধুমাত্র সাপ, বিছা ইত্যাদি অনিষ্টকারী প্রাণীগুলো এর অন্তর্ভুক্ত নয়। আর ইযখির (এক ধরনের সুগন্ধি ঘাস) ও শুকনা ঘাসকে স্বতঃউৎপাদিত ঘাস থেকে আলাদা করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে সহী হাদীসসমূহে পরিষ্কার বিধান রয়েছে।

সেখানকার পড়ে থাকা জিনিস উঠানো নিষেধ। যেমন আবু দাউদে বলা হয়েছেঃ

أَنَّ النبى اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ- نَهَى عَنْ لُقَطَةِ الْحَاجِّ

“নবী ﷺ হাজীদের পড়ে থাকা জিনিস উঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন।”

যে ব্যক্তি হজ্জ বা উমরাহর নিয়তে আসে সে ইহরাম না বেঁধে সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। তবে অন্য কোন নিয়তে সেখানে প্রবেশকারীর জন্য ইহরাম বাঁধা অপরিহার্য কিনা এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। ইবনে আব্বাসের মত হচ্ছে, কোন অবস্থায়ই ইহরাম না বেঁধে সেখানে প্রবেশ করা যেতে পারে না। ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেঈর একটি করে উক্তিও এ মতের সপক্ষে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে এই যে, একমাত্র তাদের এই ইহরাম বাঁধতে হবে না যাদের নিজেদের কাজের জন্য বারবার সেখানে যাওয়া-আসা করতে হয়। বাকি সবাইকে ইহরাম বাঁধতে হবে। এটি হচ্ছে ইমাম আহমদ ও ইমাম শাফেঈ’র দ্বিতীয় উক্তি। তৃতীয় মতটি হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি মীকাতের (হারাম শরীফের মধ্যে প্রবেশের সময় সেখান থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়) সীমানার মধ্যে বাস করে সে ইহরাম না বেঁধে মক্কায় প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু মীকাতের সীমানার বাইরে অবস্থানকারীরা বিনা ইহরামে মক্কায় প্রবেশ করতে পারবে না। এটি ইমাম আবু হানীফার উক্তি।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

হজ্জ্ব ও ওমরাহ সংক্রান্ত আলোচনা : এই আলোচনার পর হজ্জ, ওমরা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য করণীয় বিষয় সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। প্রথমে চন্দ্রমাসসমূহ সম্পর্কে , এই চন্দ্রমাসগুলো যে মানুষের জন্যে ও হজ্জের জন্যে সময় নির্দেশক, সে সম্পর্কে বক্তব্য রাখা হয়েছে। তারপর আলোচনা করা হয়েছে নিষিদ্ধ মাসসমূহে যুদ্ধ বিগ্রহ ও মাসজিদুল হারাম সম্পর্কে ৷ আর সর্বশেষে আলোচনা এসেছে হজ্জ ওমরা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ সম্পর্কে ৷ সুতরাং এ বিষয়গুলোর ভেতরে একটা সুসমন্বিত ধারাবাহিকতা সুস্পষ্ট। ১৯৬ নং আয়াত থেকে ১০৩ নং আয়াত লক্ষ্য করুন। হজ্জ সংক্রান্ত এই আয়াতগুলো কবে নাযিল হয়েছে, সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনে সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক তথ্য নেই । কেবল একটি মাত্র রেওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে যে, হজ্জে যাওয়ার পথে কোনো বাধা পেয়ে হজ্জে যেতে অসমর্থ হলে সহজলভ্য জন্তু কোরবানী দেয়ার বিধান সম্বলিত ১৯৬ নং আয়াতটি নাযিল হয় ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়াবিয়া নামক স্থানে । অনুরূপ হজ্জ ফরয হওয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখও আমাদের জানা নেই, চাই তা সূরা বাকারার আলোচ্য ১৯৬ নং আয়াত দ্বারাই ফরয হোক কিংবা সূরা আলে-ইমরানের ৯৪ নং আয়াত দ্বারা ৷ এ দুই আয়াতের কোনোটিরই নাযিল হওয়ার সময় সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই । ‘যাদুল মায়া’দ’ নামক গ্রন্থে ইমাম ইবনে কাইয়েম বলেছেন যে, ৯ম কিংবা ১০ম হিজরীতে হজ্জ ফরয হয়েছিলো । তিনি যুক্তি দেন যে, রসূল (স.) ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ সম্পন্ন করেন এবং সেটা তিনি হজ্জ ফরয হবার পরই করে থাকবেন, চাই তা ওই বছরেই হয়ে থাক কিংবা পূর্ববর্তী বছরে। কিন্তু এটা তেমন সবল যুক্তি নয়। কেননা রসূল (স.) অন্য কোনে কারণেও ১০ম হিজরী পর্যন্ত হজ্জকে মুলতবী করতে পারেন। বিশেষত যখন আমরা দেখতে পাই যে, তিনি ৯ম হিজরীতে হযরত আবু বকর (রা.)-কে হজ্জের আমীর নিয়োগ করে পাঠান, তখন এ যুক্তি মোটেই ধোপে টেকে বলে মনে হয় না। হাদীস থেকে এ কথাও জানা যায় যে, রসূল (স.) তবুক অভিযান থেকে ফেরার পর হজ্জ করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু পরক্ষণেই তার মনে পড়লো যে, মুশরিকরা চিরাচরিত নিয়মে হজ্জে যোগদান করে থাকে এবং তাদের অনেকে নগ্ন হয়ে কাবা শরীফ তওয়াফ করতে অভ্যস্ত । তাই তাদের সাথে একত্রে হজ্জ করা তিনি পছন্দ করলেন না, এই সময় সূরা তাওবা নাযিল হলো। রাসূল (স.) সূরা তাওবার বক্তব্য অনুসারে হযরত আলী (রা.)-কে মক্কায় পাঠিয়ে ঘোষণা করিয়ে দিলেন যে, মুশরিকদের সাথে সমঝোতা ও সহাবস্থানের সমাপ্তি ঘটেছে। কোরবানীর দিন লোকেরা মিনায় সমবেত হলে হযরত আলী সেখানে ঘোষণা করলেন যে, “কাফেররা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং এ বছরের পর আর কোনো মুশরিক হজ্জ করার এবং নগ্নাবস্থায় কেউ কাবা শরীফের তওয়াফ করার সুযোগ পাবে না। আর যার সাথে রসূল (স. )- এর কোনো চুক্তি আছে, তার সাথে তিনি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চুক্তি রক্ষা করবেন ।’ সুতরাং তিনি পবিত্র কাবা শরীফ মুশরিক ও নগ্ন তওয়াফকারীদের কবল থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত হজ্জ স্থগিত রাখলেন। আরো একটা যুক্তি প্রদর্শন করা হয় যে, হজ্জ ফরয হওয়া ও হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজের নির্দেশ ইসলাম ইতিপূর্বেই দিয়েছিলো। তাছাড়া হজ্জ যে একটা ফরয কাজ, তা হিজরতের পূর্বে মক্কায় থাকাকালেই জানানো হয়েছিলো । তবে এই উক্তির সপক্ষে তেমন কোনো অকাট্য প্রমাণ নেই । অবশ্য এ কথা সত্য যে, মক্কী সূরা ‘হজ্জের’ কিছুসংখ্যক আয়াতে হজ্জের অধিকাংশ করণীয় কাজের উল্লেখ এভাবে পাওয়া যায় যে, ইবরাহীম (আ.)-কে এ সব কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো । ওই সূরার ২৬ থেকে ২৯ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘স্মরণ করো সেই সময়টিকে, যখন আমি ইবরাহীমকে এই ঘরের জায়গা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম (এই নির্দেশ সহকারে যে) আমার সাথে কোনো জিনিসকে শরীক করো না, আমার ঘরকে তওয়াফকারী ও রুকু সেজদাকারী লোকদের জন্যে পবিত্র রাখো। লোকদেরকে হজ্জ করার জন্যে আহবান জানাও, তারা তোমার কাছে সকল দূরবর্তী স্থান থেকে পায়ে হেঁটে ও উটের ওপর সওয়ার হয়ে আসবে, যাতে তাদের জন্যে এখানে রক্ষিত সুবিধাসমূহ তারা প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনে সেই জন্তু জানোয়ারের ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে, যা তিনি তাদেরকে দান করেছেন, তা তারা নিজেরাও খাবে এবং অভাবগ্রস্ত দরিদ্র লোকদেরকেও দিবে । পরে তারা নিজেদের ময়লা কালিমা দূর করবে। নিজেদের মান্নতসমূহ পূরণ করবে এবং প্রাচীনতম ঘরের তওয়াফ করবে ।’ অতপর ৩২ নং আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে, ‘এটাই হচ্ছে আসল হজ্জ ৷ যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তার সে কাজ অন্তরের তাকওয়ার আওতাভুক্ত ।’ অতপর ৩৬ ও ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “কোরবানীর উটগুলোকে আমি তোমাদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছি। তোমাদের জন্যে তাতে বিপুল কল্যাণ নিহিত আছে। কাজেই ওইগুলোকে দাড় করিয়ে এগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো। আর (কোরবানীর পর) যখন তাদের পিঠগুলো মাটির ওপর স্থির হয়, তখন তা থেকে নিজেরাও খাও, আর যারা অল্পে তুষ্ট হয়ে চুপচাপ আছে এবং যারা এসে নিজেদের অভাবের কথা ব্যক্ত করে, তাদেরকেও খাওয়াও ৷ তোমরা যাতে শোকর আদায় করো, সে জন্যে এই জন্তুগুলোকে আমি এভাবে তোমাদের জন্যে অনুগত করে দিয়েছি। আল্লাহর কাছে ওইসব জন্তুর গোশতও পৌছে না, রক্তও পৌছে না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া তার কাছে অবশ্যই পৌছে। তোমরা যাতে তার হেদায়াত অনুযায়ী আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে পারো। সে জন্যে তিনি এভাবে ওই জন্তুগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন। আর তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দিয়ে দাও ।” উল্লেখিত আয়াতগুলোতে কোথাও সরাসরিভাবে এবং কোথাও ইংগিতে হজ্জের কয়েকটি মৌলিক কাজ ও আচার অনুষ্ঠান যথা কোরবানী, তওয়াফ, এহরাম থেকে মুক্ত হওয়া ও আল্লাহর নাম স্মরণ করা ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম উম্মাহর পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) এর জীবনবৃত্তান্ত বর্ণনার মাধ্যমে এখানে প্রকারাস্তরে মুসলিম উম্মাহকেই সম্বোধন করা হয়েছে। মুসলমানরা যেহেতু হযরত ইবরাহীমের সন্তান এবং হযরত ইবরাহীম (আ.) হজ্জের এই সব আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিলেন, তাই এ বর্ণনা থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, হজ্জ অনেক আগে থেকেই মুসলমানদের ওপর ফরয হয়ে আছে। কিন্তু কাবা শরীফের যাবতীয় কর্তৃত্ব মুশরিকদের হাতে থাকায় এবং সেই মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের বনিবনা না থাকায় এ যাবত মুসমানদের পক্ষে হজ্জ পালন করা সম্ভব ছিলো না৷ এটা একটা ভিন্ন যুক্তি বটে। ইতিপূর্বে এই পারার শুরুতে আমি এ কথা বলে এসেছি যে, দ্বিতীয় হিজরীতে কেবলা পরিবর্তনের পর কিছু কিছু মুসলমান ব্যক্তিগতভাবে হজ্জ আদায় করতেন। যাই হোক, হজ্জ ফরয হওয়ার ইতিহাস সম্পর্কে এখানে যা কিছু বর্ণনা করা হলো হজ্জ সংক্রান্ত আলোচ্য আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা প্রসংগে এটুকুই আমাদের জন্যে যথেষ্ট। এবার ১৯৬ নং আয়াত লক্ষ্য করুন। এতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা হজ্জ ও ওমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূর্ণ করো। তবে কোথাও যদি অবরুদ্ধ হয়ে যাও, তবে যে কোরবানীই সম্ভব, তাই পেশ করে দাও। আর যতক্ষণ কোরবানী যথাস্থানে পৌছে না যায়, ততক্ষণ নিজের মাথাকামিওনা । কিন্তু যে ব্যক্তি রুগ্ন হয়ে পড়ে, অথবা তার মাথায় কোনো ব্যাধি হয়, (এবং সে জন্যে মাথা কামিয়ে ফেলে) তার ফিদিয়া হিসাবে রোযা রাখা, সদকা দেয়া অথবা কোরবানী করা কর্তব্য । এরপর যদি শান্তি ফিরে আসে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় (এবং তোমরা হজ্জের আগেই মক্কায় পৌছে যাও) তবে তোমাদের যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত ওমরার সুযোগ গ্রহণ করবে, সে যেন সমর্থ অনুসারে কোরবানী দেয়। আর তা সম্ভব না হলে সে যেন তিনটি রোযা হজ্জের সময়ে এবং সাতটি বাড়ী ফেরার পর রাখে । এভাবে মোট দশটি রোযা পূর্ণ হবে। যাদের ঘরবাড়ি মাসজিদুল হারামের নিকটবর্তী নয় তাদের জন্যে এই সুবিধা। আল্লাহর এই আদেশসমূহ সম্পর্কে সতর্ক থাকো এবং জেনে রেখো যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা ।” এ আয়াতের বর্ণনাভংগীতে যে বিষয়টি সর্বপ্রথম চোখে পড়ে তাহলো আইনগত বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের নৈপুণ্য ও সুক্ষতা।আয়াতটিকে ছোট ছোট অংশে বিভক্তকরণ এবং প্রত্যেক অংশে আলাদাভাবে নির্দিষ্ট বর্ণনা এবং প্রত্যেক বিধির শেষে তার ব্যতিক্রমের উল্লেখ করার পরই পরবর্তী বিধি বর্ণনা করা, আর সবার শেষে এই সবকয়টি বিষয়কে আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার সাথে সংযুক্ত করা। আয়াতের প্রথম অংশটিতে এই মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, হজ্জ ও ওমরা আদায়ে ইচ্ছুক ব্যক্তি যখন তার কাংখিত কাজ শুরু করবে, তখন হজ্জ বা ওমরা যেটি দিয়েই সে শুরু করুক না কেন, উভয়টি যেন সম্পূর্ণ করে এবং তা যেন একাগ্রভাবে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করে। এই অংশটি হলো, ‘হজ্জ ও ওমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে পূর্ণ করো ।’ কোনো কোনো তাফসীরকার এই আদেশ থেকে বুঝেছেন যে, এ দ্বারা হজ্জ ফরয করা হয়েছে । আবার অন্যদের মত এই যে, হজ্জ যখনই শুরু করা হোক না কেন, পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে হবে এটাই এ আদেশের মর্ম ও লক্ষ্য । শেষোক্ত মতটিই অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়। যেহেতু ওমরা সর্বসম্মতভাবেই ফরয নয়, তথাপি এখানে তা হজ্জের মতোই পূর্ণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে. তাই এ থেকে প্রমাণিত হয় যে. এই উক্তি দ্বারা হজ্জ ফরয্‌ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং সম্পূর্ণ করার আদেশ দেয়াই উদ্দেশ্য। আরেকটি বিষয়ও এখান থেকে জানা যায় যে, ওমরা প্রাথমিকভাবে আবশ্যিক কাজ না হলেও একবার তা শুরু করা হলে শেষ করা ওয়াজিব ৷ আর একমাত্র আরাফার ময়দানে অবস্থান ছাড়া ওমরার যাবতীয় কার্যকলাপ হজ্জের মতোই । সর্বাধিক প্রচলিত মতানুসারে ওমরা সারা বছর করা যায় । এর জন্যে হজ্জের মতো নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস জরুরী নয়। হজ্জ ও ওমরাকে পরিপূর্ণভাবে সমাধা করার এই সাধারণ নির্দেশের একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে অবরোধমূলক অবস্থা । কোনো শত্রু হজ্জ ও ওমরা আদায়কারীকে তার সকল আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার সুযোগ না দিলে সেটি সর্বসম্মতভাবে অবরোধমূলক পরিস্থিতি বিবেচিত হবে। আর কোনো রোগব্যাধি বা অনুরূপ কোনো বাধার কারণে হজ্জ ও ওমরার কাজ পূর্ণরূপে সমাধা করা অসম্ভব হলে তাও অবরোধ বলে গণ্য হবে। রোগজনিত অবরোধের ব্যাখ্যা নিয়ে কিছু মতভেদ থাকলেও অধিকাংশের মত এই যে, রোগজনিত অবরোধকে অবরোধ বলে গণ্য করা হবে। “তবে কোথাও যদি অবরুদ্ধ হয়ে যাও, তাহলে যে কোরবানীই সম্ভব পেশ করে দাও ।” এরূপ পরিস্থিতিতে হজ্জ বা ওমরাকারী তার পক্ষে যে কোরবানীই করা সম্ভব হয় করে দেবে এবং যেখানে সে পৌছতে সক্ষম হয়েছে সেখানেই এহরাম থেকে মুক্ত হবে। চাই সে আদৌ মাসজিদুল হারামে পৌছতে না পেরে থাকুক কিংবা মীকাতে এহরাম বাধা ছাড়া হজ্জ ও ওমরার আর কোনো আচার অনুষ্ঠান না করে থাকুক । (হজ্জকারী ও ওমরাকারী যে স্থান থেকে হজ্জ বা ওমরার কাজ শুরু করে অথবা এক সাথে দুটোই শুরু করে, সেলাই করা পোশাক বর্জন করে এবং চুল কাটা, কামানো, নখ কাটা এবং কোনো পশু বা পাখী শিকার করা ও খাওয়া ইত্যাদি তার ওপর হারাম হয়ে যায়, সেই জায়গাকে মীকাত বলা হয় ।) হুদায়বিয়াতে এরূপ ঘটনাই ঘটেছিলো ৷ ৬ষ্ঠ হিজরীতে মুশরিকরা রাসূল (স.) ও তাঁর সহযাত্রী মুসলমানদেরকে মাসজিদুল হারামে যেতে বাধা দিয়েছিলো অতপর তাঁর সাথে হুদায়বিয়ার সন্ধি সম্পাদন করে। এই সন্ধি চুক্তি অনুসারে তাকে পরের বছর ওমরা করার অনুমতি দেয়া হয়। বর্ণিত আছে যে, এই সময় এ আয়াত নাযিল হয়। রসূল (স.) তার সহযাত্রী মুসলমানদেরকে ওই স্থানেই কোরবানী করার ও এহরাম থেকে মুক্ত হবার নির্দেশ দেন। এই আদেশ কার্যকর করতে তারা ইতস্তত করছিলেন । সচরাচর যে জায়গায় কোরবানী করা হয়ে থাকে, সেখানে পৌছার আগেই কোরবানী করা তাদের কাছে খুবই কঠিন বলে মনে হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত রাসূল (স.) তাদের সামনে নিজের জন্যে কোরবানী করলেন এবং নিজের এহরাম থেকে মুক্ত হলেন, অমনি সকল মুসলমান তার আদেশ কার্যকর করলেন। (আরো বিস্তারিত বিবরণের জন্যে সূরা আল-ফাতাহ এর তাফসীর-এ দ্রষ্টব্য ।) “যে কোরবানীই সম্ভব হয়।” এ কথার অর্থ হলো, যে কোরবানীই হস্তগত হয় এবং সহজসাধ্য হয়। অবশ্য কোরবানী হওয়া চাই পশু জাতীয় এবং তা উট, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এই পাঁচ রকমের কোনো একটি হওয়া চাই। তবে একটি গরু বা উটে একাধিক হাজী অংশ নিতে পারে, যেমন হুদায়বিয়ায় প্রত্যেক উটে সাত জন করে হাজী অংশ নিয়েছিলেন । এটাই হবে সহজসাধ্য কোরবানী । ছাগল বা ভেড়ার একটি একজনই কোরবানী করবে। হুদায়বিয়ার ঘটনার ন্যায় শত্রু কর্তৃক অবরুদ্ধ হওয়ার অবস্থাকে উক্ত বিধির ব্যতিক্রম বলে উল্লেখ করার পেছনে যে মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, সেটি হলো কাজটিকে সহজ করে দেয়া । হজ্জ ও ওমরার নির্ধারিত আচার অনুষ্ঠানগুলোর প্রথম উদ্দেশ্য তাকওয়া ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উদ্দীপনার সঞ্চার এবং ফরয এবাদাতগুলো যথাযথভাবে আদায় করা৷ এটা যখন সম্পন্ন হয়েছে এবং অতপর শত্রু, রোগব্যাধি ইত্যাদির কারণে পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, তখন হজ্জ ও ওমরাকারীকে তার হজ্জ বা ওমরার সওয়াব থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। ধরে নিতে হবে যে, সে যেন তা সম্পন্ন করেছে। তার কাছে যে জন্তুই থাকে, তা কোরবানী করে দিয়ে এহররাম মুক্ত হতে পারবে সহজীকরনের এই নীতি ইসলামের মূল প্রাণশক্তি, এবাদাতের উদ্দেশ্য ও যাবতীয় আচার অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্যের সাথে সংগতিপূর্ণ । প্রথম সাধারণ আদেশ থেকে, এই ব্যতিক্রমমূলক বিধি ঘোষণা করার পর আয়াতের পরবর্তী অংশে হজ্জ ও ওমরার নতুন বিধি ঘোষণা করা হচ্ছে, “কোরবানী যথাস্থানে পৌছে যাওয়ার আগে তোমরা মাথা কামিও না ।”এই নিষেধাজ্ঞা সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যখন হজ্জ ও ওমরা সম্পন্ন করা হয় এবং এ ব্যাপারে কোনো বাধা বিপত্তি দেখা দেয় না। এক্ষেত্রে কোরবানী যথাস্থানে পৌছে যাওয়ার অর্থাৎ কোরবানীর জন্তু তার জবাইয়ের স্থানে মিনায় পৌছে যাওয়ার আগে মাথা কামানো যাবে না। কেননা মাথা মুন্ডানো হচ্ছে হজ্জ বা ওমরা বা উভয়টির এহরাম থেকে অব্যাহতি লাভের সংকেত । ৯ই যিলহজ আরাফার ময়দানে অবস্থান ও সেখান থেকে বিদায় হয়ে যাওয়ার পর দশ তারিখে মিনায় কোরবানী করতে হয়। এই কোরবানীর পরই এহরাম শেষ হয়ে যায়। মিনায় কোরবানীর জন্তু পৌঁছার আগে চুল ছাটা বা কামানোর কোনো অবকাশ নেই, তাই তার আগ পর্যন্ত এহরামও যথারীতি বহাল থাকবে । কিন্তু এই সাধারণ নিষেধাজ্ঞারও ব্যতিক্রম আছে। সেটি হচ্ছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রুগ্ন থাকবে কিংবা তার মাথায় যন্ত্রণা থাকবে, (এবং সে জন্যে মাথা কামিয়ে ফেলে) তার ফিদিয়া হিসাবে রোযা রাখা অথবা সদকা দেয়া অথবা কোরবানী করা উচিত।’ বস্তুত কোনো রোগব্যাধির জন্যে যদি মাথা কামানোর প্রয়োজন পড়ে, কিংবা চুল লম্বা হয়ে গেলে ও না আঁচড়ালে তাতে উকুন ইত্যাদির জন্যে কষ্টকর অবস্থার সৃষ্টি করে, তাহলে এহরামের সময় কোরবানীর যে জন্তু সাথে নিয়েছিলো তা তার জবাইয়ের স্থানে পৌছার আগে এবং হজ্জের সকল কাজ সমাধা করার আগে বাস্তব পরিস্থিতির কারণে মাথা কামানো জায়েয হবে। কেননা ইসলাম উদারতার ব্যবস্থা । তবে এই মাথা মুন্ডানোর জন্যে ফিদিয়া দিতে হবে। ফিদিয়া হলো তিনদিন রোযা রাখা, অথবা ছয়জন দরিদ্র লোককে এক ওয়াক্ত খাওয়ানোর মাধ্যমে (অথবা সেই পরিমাণ অর্থ) সদকা প্রদান অথবা একটি ছাগল যবাই করে তা বন্টন করা। এই বিকল্প পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। বোখারী শরীফে উদ্ধৃত এই হাদীসে হযরত কা’ব বিন আজরা থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূল (স.)-এর কাছে গেলাম। তখন আমার মুখমন্ডলে উকুন গড়িয়ে পড়ছিলো। তা দেখে রাসূল (স.) বললেন, “আমি যে অবস্থা দেখছি তা এই যে, এই উকুন তোমাকে খুবই কষ্ট দিচ্ছে। তুমি একটা ছাগল সংগ্রহ করতে পারো না? আমি বললাম, না, তিনি বললেন, তাহলে তিন দিন রোযা রাখো, অথবা ছয়জন মিসকীনকে মাথা প্রতি আধা সা’ খাবার দাও এবং মাথা কামিয়ে ফেল ।”এরপর হজ্জ ও ওমরা সম্পর্কে একটা নতুন সাধারণ বিধি ঘোষণা করা হচ্ছে, “এরপর যখন তোমরা শাস্তি ও নিরাপত্তা লাভ করবে, তখন তোমাদের যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত ওমরার সুযোগ গ্রহণ করবে, সে যেন নিজের সামর্থ অনুসারে কোরবানী দেয় ।” অর্থাৎ যখন কোনো বাধাবিপত্তি ও অবরোধের সম্মুখীন হবে না এবং হজ্জের যাবতীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে সমর্থ হবে, তখন যে ব্যক্তি হজ্জের সময় আসার আগ পর্যন্ত হাতে যে সময় পাওয়া যায় তা কাজে লাগিয়ে ওমরা করতে চায়, সে যেন সহজে সম্ভব হয় এমন একটা কোরবানী দিয়ে দেয়। এই বিধিটি খোলাসা করে বললে এরূপ দাড়ায়-প্রথমত, কোনো মুসলমান হজ্জের মাসগুলোতে অর্থাৎ শাওয়াল, যিলকদ ও যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনে ওমরার নিয়তে মীকাত থেকে এহরাম বাধলো এবং ক্বাবা শরীফে তওয়াফ এবং সাফা ও মারওয়ায় সা’ই করার মাধ্যমে তওয়াফ সম্পন্ন করার পর হজ্জের জন্যে পুনরায় এহরাম বাধলো ও হজ্জের সময়ের অপেক্ষা করতে থাকলো । তার এই কার্যক্রম হবে ওমরার পরে হজ্জের সুযোগ গ্রহণ । দ্বিতীয়ত, মীকাত থেকে একই সাথে হজ্জ ও ওমরার জন্যে এহরাম বাধলো। অতপর ওমরার কাজ সম্পন্ন করার পর হজ্জের সময় আসা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকলো ৷ এই দুটি অবস্থা ‘হজ্জে তামাত্তু’র অবস্থা । এই উভয় অবস্থায় ওমরা আদায়কারীকে ওমরা সমাপনের পর এহরাম খোলার জন্যে তার সামর্থ অনুসারে কোরবানী করতে হবে। ওমরা ও হজ্জের মাধ্যমে সে এহরাম মুক্ত অবস্থায় কিছু সময় অবস্থানের সুযোগ পাবে এটাই “তামাত্তু’ ৷ “সামর্থ অনুসারে কথাটার অর্থ দাড়ায় এই যে, সে উট, গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়ার মধ্যে যেটি ক্রয় করা ও কোরবানী করার সামর্থ রাখে সেটি কোরবানী দেবে। আর যদি কোনো কোরবানীই দিতে না পারে তবে তার ফিদিয়ার বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি হলো, ‘যে ব্যক্তি তা না পারবে, সে হজ্জের মওসুমে তিন দিন এবং বাড়ীতে ফিরে আসার পর সাত দিন এই পূর্ণ দশ দিন রোযা রাখবে।’ যিলহজ্জের নয় তারিখে আরাফায় অবস্থানের আগেই উক্ত তিনটি রোযা রেখে নেয়া উত্তম। আর বাকী সাত দিনের রোযা আপন বাসস্থানে ফিরে আসার পর রাখতে হবে৷ ‘এই পূর্ণ দশ দিন’ কথাটা বলার উদ্দেশ্য বক্তব্যকে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট করে দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। আর এই কোরবানী বা রোযার উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, হজ্জ ও ওমরার মাঝখানে এহরামমুক্ত অবস্থায়ও যেন আল্লাহর সাথে অন্তরের সম্পর্ক বজায় থাকে, হজ্জের পরিবেশ সংক্রান্ত অনুভূতি ও চেতনা যেন ব্যাহত না হয় এবং এই ফরয কাজটি আদায় কালে নিজের প্রকৃতি ও চাল চলনের ওপর অত্যাবশ্যকীয় সতর্ক প্রহরা যেন বজায় থাকে । যারা হারাম শরীফের স্থায়ী বাসিন্দা, তাদের যেহেতু ওমরা আদায় করার নিয়ম নেই, বরং তাদের শুধু হজ্জই আদায় করতে হয়। তাই তাদের “তামাত্তু’ তথা হজ্জ ও ওমরার মাঝে এহরাম খোলার প্রশ্নই ওঠে না, আর সে কারণে স্বভাবতই তাদের ফিদিয়া দিতে বা রোযাও রাখতে হয় না। এ কথাই আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে যে, “যাদের ঘরবাড়ী মাসজিদুল হারামের নিকটবর্তী নয়, কেবলমাত্র তাদের জন্যেই এ সুবিধা হজ্জ ও ওমরার এই বিধি কয়টি বর্ণনা করার পর কোরআন মানুষের মনে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করার মানসে তার স্বভাবসুলভ ভংগীতে এভাবে উপসংহার টেনেছে, ‘আল্লাহকে ভয় করো এবং জেনে রাখো যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা ।” বস্তুত এইসব বিধি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা একমাত্র তাকওয়া দ্বারাই অর্জিত হতে পারে । তাকওয়ার অর্থ হচ্ছে আল্লাহকে ও তার আযাবকে ভয় করা । এহরাম স্বাভাবিকভাবেই মানুষকে সংযমী করে তোলে । সেই এহরাম থেকে যখন সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হলো, তখন হৃদয়ে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি করা হলো, যাতে ওই সংযমী ভাবটা তখনো বহাল থাকে এবং কূপ্রবৃত্তির ওপর সতর্ক প্রহরা বজায় থাকে।

*মসজিদে হারামে অবাধ যাতায়াত ও সেখানে অবস্থান : আল্লাহ তায়ালা সংক্রান্ত বিতর্কের পরিণতি, কাফেরদের জাহান্নামের শাস্তি ভােগের দৃশ্য এবং মােমেনদের জান্নাতের নেয়ামত ভােগের দৃশ্য বর্ণনার মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী অধ্যায় সমাপ্তি ঘটেছে। এরপরই শুরু হয়েছে নতুন একটা অধ্যায়। এতে সেসব কাফের সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে, যারা কুফরীর পাশাপাশি আল্লাহর পথে ও মাসজিদুল হারামে যেতে মানুষকে বাধা দেয়। এ ধরনের লােকেরাই মক্কায় ইসলামী আন্দোলনের মােকাবেলা করতাে। তারা সাধারণ মানুষকে সে আন্দোলনে যােগদান করতে বাধা দিয়েছে। তাছাড়া তারা রসূল(স.) ও মােমেনদেরকে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে দিলো না। এই প্রসংগে আলােচনা করা হয়েছে মাসজিদুল হারাম যে ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত, সে সম্পর্কেও। হযরত ইবরাহীম(আ.)-কে যেদিন মসজিদুল হারামের নির্মাণের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিলাে সেই দিন সে ভিত্তি চিহ্নিত করা হয়েছিলাে, অপরদিকে মানুষকে হজ্জ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছিলাে। হযরত ইবরাহীম(আ.)-কে আদেশ দেয়া হয়েছিলাে আল্লাহর ঘরকে তাওহীদের ভিত্তির ওপর নির্মাণ করতে ও সেখান থেকে শিরক নিশ্চিহ্ন করতে। তাকে আরাে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে যেন তিনি কা’বা শরীফকে সকল মুসলমানের জন্যে নির্মাণ করেন, যেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের সমান অধিকার থাকবে। কেউ কাউকে বাধাও দেবে না এবং কেউ তার মালিকও হবে না। অতপর হজ্জের কিছু বিধি, হৃদয়ে আল্লাহভীতি, আল্লাহর স্মরণ ও আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির আদেশও এসেছে। সবার শেষে মসজিদে হারামকে সেই সব লােকদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, যারা সেখানে মানুষকে প্রবেশ করতে বাধা দিতাে, কাবার ভিত্তি তাওহীদকে পরিবর্তন করতে চায় এবং ইসলামকে রক্ষার জন্যে যারা জেহাদ করবে তাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ‘যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথ থেকে ও সেই মাসজিদুল হারাম থেকে মানুষকে নিবৃত্ত করে যাকে আমি সকল মানুষের জন্যে তৈরী করেছি এবং যার ভেতরে স্থানীয় ও প্রবাসী সমান যারা সেখানে… তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ ভােগ করাবাে'(আয়াত ২৫) এটা ছিলাে কোরায়শ বংশীয় পৌত্তলিকদের কাজ যে, মানুষকে আল্লাহর দ্বীন থেকে ফেরাতাে। অথচ এটাই আল্লাহকে পাওয়ার এক মাত্র পথ এবং মানব জাতির জন্যে আল্লাহর মনােনীত একমাত্র বিধান। তারা মুসলমানদেরকে হজ্জ ও ওমরা করতে মাসজিদুল হারামে যেতে দিতো না, যেমন হুদায়বিয়ার বছর দেয়নি। অথচ এই মসজিদুল হারামকে আল্লাহ তায়ালা সকল মানুষের জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তার স্থান বানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মক্কার স্থানীয় অধিবাসী ও বিদেশী মুসলমানদের অধিকার সমান। সুতরাং কাবা শরীফ হচ্ছে আল্লাহর সেই ঘর, যেখানে আল্লাহর বান্দারা সবাই সমান। কেউ তার মালিক হবে না, কেউ কোনাে বৈষম্যের শিকার হবে না। মানব জাতি নিরাপত্তার নির্দিষ্ট এলাকা গড়ার যতাে চেষ্টা চালিয়েছে, তন্মধ্যে কা’বা শরীফকে সকলের নিরাপত্তার এলাকা রূপে নির্দিষ্ট করার ঘােষণা ছিলাে সর্ব প্রথম ও সবার আগের পদক্ষেপ। এখানে অস্ত্র ফেলে দেয়া হয়, বিবদমান লােকেরা নিরাপদে পাশাপাশি অবস্থান করে। এখানে রক্তপাত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সকলের জন্যে এটা আশ্রয় স্থল। এটা কারাে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নয়, বরং সমানাধিকারের ভিত্তিতে স্থিরীকৃত। মক্কার যে সব বাড়ী ঘরে মক্কার লােক বাস করে না, সেগুলাের ব্যক্তিগত মালিকানা সম্পর্কে ফকীহদের মধ্যে মতভেদ ঘটেছে। অনুরূপভাবে যারা এগুলাের মালিকানা বৈধ মনে করেন, এ সব ঘর ভাড়া দেয়ার ব্যাপারেও তাদের মতান্তর রয়েছে। ইমাম শাফেয়ীর মতে, এসব ঘরের ব্যক্তিগত মালিকানা বৈধ। ভাড়া দেয়া বৈধ এবং উত্তরাধির সূত্রে হস্তান্তরও বৈধ। তার দলীল হলাে, হযরত ওমর(রা.) হযরত সাফওয়ান বিন উমাইয়ার কাছ থেকে চার হাজার দিরহাম দিয়ে মক্কার একটা বাড়ী ক্রয় করেন এবং তাকে কারাগারে রূপান্তরিত করেন। ইসহাক বিন রহিওয়ের মতে ভাড়া দেয়া ও উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর জায়েয নয়। তিনি বলেন, রসূল(স.) আবু বকর ওমর(রা.) যখন ইন্তিকাল করেন, তখন মক্কার ভূমি ও গৃহগুলাে উন্মুক্ত স্থান বলে বিবেচিত হতাে। যার প্রয়ােজন হতাে, এগুলােতে বাস করতাে। আর যার প্রয়ােজন হতাে না সে অন্যকে থাকতে দিতাে। আব্দুর রাজ্জাক আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণনা করেন যে, মক্কার বাড়ী ঘর কেনা-বেচা ও ভাড়া দেয়া বৈধ নয়। তিনি ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন যে, হারাম শরীফে কোনাে ভাড়া দেয়া নেয়া চলে না। ওমর ইবনে খাত্তাব(রা.) মক্কার ঘরগুলােতে দরজা বানাতে নিষেধ করতেন, যাতে হাজীরা তার ভেতরে হজ্জের সময় বসবাস করতে পারে। সর্ব প্রথম সােহায়েল বিন আমর দরজা বানালে হযরত ওমর আপত্তি জানান। সােহায়েল বলেন, হে আমীরুল মােমেনীন, আমাকে অনুমতি দিন। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমি চাই, আমার ঘােড়াগুলাে যেন ভেতরে থাকতে পারে। তখন হযরত ওমর(রা.) অনুমতি দিলেন। হযরত ওমর(রা.) বলেছিলেন, হে মক্কাবাসী, তােমরা তােমাদের বাড়ীতে দরজা বানিও না যাতে বহিরাগতরা যেখানে ইচ্ছা অবস্থান করতে পারে। ইমাম আহমাদ বলেছেন, মালিকানা ও উত্তরাধিকার বৈধ, কিন্তু ভাড়া দেয়া বৈধ নয়। মােটকথা, একটা শান্তি ও নিরাপত্তার উন্মুক্ত ও সুরক্ষিত স্থান সৃষ্টিতে ইসলাম সবাইকে হার মানিয়েছে এবং তা বহু আগেই দেয়া হয়েছে। যারা এ ব্যাপারে কোনাে বক্রতা সৃষ্টির চেষ্টা করে, কোরআন তাদেরকে কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছে। যে ব্যক্তি এতে কোনাে যুলুম করতে ইচ্ছা করবে, তাকে কঠিন শাস্তির স্বাদ ভোগ করাবাে। শুধু অন্যায়ের ইচ্ছা করলেই যেখানে এই হুমকি, সেখানে কেউ যদি অন্যায় করেই বসে, তবে তার কী পরিণাম হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। কেবল ইচ্ছাতেই হুমকি দান এমন এক সূক্ষ্ম বাচন ভংগী যে, এ দ্বারা অধিকতর সতর্কীকরণ করা হয়েছে ও শান্তি ভংগের চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্রতর প্রতিরােধ গড়ে তােলা হয়েছে। আরো একটা সূক্ষ্ম ও তাৎপর্যময় বাচনভংগি এ আয়াতে লক্ষণীয়। সেটা এই যে, এতে উদ্দেশ্য উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু বিধেয় উহ্য রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথ থেকে ও সেই মাসজিদুল হারাম থেকে মানুষকে নিবৃত করে, যাকে আমি সকল মানুষের কল্যাণের জন্যে তৈরী করেছি, যেখানে স্থানীয় ও বহিরাগত সবাই সমান…’ যারা এই অপকর্ম করে তাদের কী পরিণাম হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। যেন তাদের এই অপকর্মের বিবরণ দেয়াই যথেষ্ট। এরপর তাদের সম্পর্কে আর কিছু বলার প্রয়ােজন থাকে না। এই অপকর্মই যেন তাদের পরিণাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে ।

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

২৫ নং আয়াতের তাফসীর:

যারা নিজেরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কুফরী করবে এবং মানুষকে ঈমান আনতে বাধা দিবে এমনকি মাসজিদে হারাম যা স্থানীয় ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান তা হতে বাধা দিবে তারা মক্কার কাফির হোক আর অন্য যে কোন এলাকার কাফির হোক তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। যেমন ৬ষ্ঠ হিজরীতে মক্কার মুশরিকরা মুসলিমদেকে উমরা করতে বাধা দিয়েছিল।

মাসজিদে হারামে ইবাদত করার অধিকার সকলের সমান। সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হোক কিংবা বিদেশী হোক। তবে কোন অমুসলিম তাতে প্রবেশ করতে পারবে না। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সকল কাফির-মুশরিকদের কথা বর্ণনা করেছেন যারা কুফরী করত এবং মানুষকে হজ্জ পালন করা থেকে বাধা দিত। তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيْهِ ط قُلْ قِتَالٌ فِيْهِ كَبِيْرٌ ط وَصَدٌّ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَكُفْرٌۭ بِه۪ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ق وَإِخْرَاجُ أَهْلِه۪ مِنْهُ أَكْبَرُ عِنْدَ اللّٰهِ)

“তারা তোমাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করে; তুমি বল, তাতে যুদ্ধ করা বড় অপরাধ। আর আল্লাহর পথে বাধা দেয়া এবং তাঁর সাথে কুফরী করা ও মসজিদে হারামে প্রবেশে বাধা দেয়া এবং এর অধিবাসীদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া আল্লাহর কাছে আরও বড় গুনাহ।” (সূরা বাক্বারাহ ২:২১৭)

إِلْحَادٍ অর্থ অপব্যাখ্যা করা, বাঁকা পথ অবলম্বন করা। এখানে কুফর ও শিরকসহ সমস্ত পাপকেই বুঝানো হয়েছে।

এমনকি কিছু আলেম কুরআনের শব্দ থেকে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে, যদি কেউ হারামের মধ্যে পাপের ইচ্ছা পোষণ করে সেও এ সতর্কবাণীর আওতায় পড়বে। কেউ কেউ বলেছেন, পাপের শুধু ইচ্ছা করলেই পাকড়াও হবে না। তবে ইচ্ছা যদি কাজে পরিণত করার কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাহলে সে অবশ্যই শাস্তিযোগ্য হবে।

সুতরাং জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের উচিত সৎ কাজ করা আর মানুষকে সৎ কাজের নির্দেশ দেয়া। কাউকে সৎ কাজ করার ব্যাপারে বাধা দেয়া যাবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষকে সৎ কাজ থেকে বাধা দেয়া যাবে না।
২. মাসজিদুল হারামের মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

আল্লাহ তাআলা কাফিরদের এ কাজ খণ্ডন করছেন যে, তারা মুসলমানদেরকে মসজিদুল-হারাম হতে নিবৃত্ত রাখতো এবং তাদেরকে হজ্জের আহকাম পালন করা হতে বিরত রাখতো। এতদসত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে আল্লাহর ওয়ালী বা প্রিয় পাত্র মনে করতো। অথচ তার ওয়ালী তো তারাই যাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এটা মাদানী আয়াত। যেমন মহান আল্লাহ সূরা বাকারায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি বলে দাওঃ ওতে যুদ্ধ করা ভীষণ অন্যায়, কিন্তু আল্লাহর পথে বাধা দান করা, আল্লাহকে অস্বীকার করা, মসজিদুল-হারামে বাধা দেয়া এবং ওর বাসিন্দাকে ওখান থেকে বহিষ্কার করা আল্লাহর নিকট তদপেক্ষা বেশী অন্যায়।”(২:২১৭) এই আয়াতে এই তারতীব বিন্যাসই রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের বিশেষণ এই যে, যারা ঈমান আনে তাদের অন্তর আল্লাহর যিকরের কারণে প্রশান্ত থাকে। জেনে রেখো, আল্লাহর স্বরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।” (১৩:২৮)।

মসজিদুল-হারামকে আল্লাহ তাআলা সবারই জন্যে সমানভাবে মর্যাদাপূর্ণ করেছেন। এতে স্থানীয় ও বহিরাগতদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মক্কাবাসীও মসজিদে হারামে যেতে পারে এবং বাইরের লোকও পারে। তথাকার ঘরবাড়ীতে তথাকার বাসিন্দা ও বাইরের লোক সমান অধিকার রাখে।

এই মাসআলায় ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলের (রঃ) সামনে ইমাম শাফেয়ী (রঃ) ও ইমমি ইসহাক ইবনু রাহওয়াই-এর (রঃ) মধ্যে মতানৈক্য হয়। ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেন যে, মক্কার ঘর বাড়ীগুলোকে মালিকানাধীনে আনা যেতে পারে, ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টন করা যেতে পারে এবং ভাড়াও দেয়া যেতে পারে। দলীল হিসেবে তিনি ইমাম যুহীর (রঃ) বর্ণিত হাদীসটি পেশ। করেছেন। তা এই যে, হযরত উসামা ইবনু যায়েদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহকে (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আগামীকাল আপনি আপনার মক্কার বাড়ীতে প্রবেশ করবেন কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আকীল আমার জন্যে কি কোন বাড়ী ছেড়েছে?” অতঃপর তিনি বলেনঃ “কাফির মুসলমানের উত্তরাধিকারী হয় না এবং মুসলমান কাফিরের ওয়ারিস হয় না।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাখরীজ করা হয়েছে)

ইমাম শাফেয়ীর (রঃ) আরো দলীল এই যে, হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) হযরত সাফওয়ান ইবনু উমাইয়ার (রাঃ) বাড়ীটি চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়ে ওটাকে জেল খানা বানিয়েছেন। তাউস (রঃ) আমর ইবনু দীনারও (রঃ) এই মাসআ’লায় ইমাম শাফিয়ীর (রঃ) সাথে একমত হয়েছেন।

ইমাম ইসহাক ইবনু রাওয়াই (রঃ) ইমাম শাফেয়ীর (রঃ) বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি বলেন যে, মক্কার ঘরবাড়ী ওয়ারিসদের মধ্যেও বন্টন করা যাবে না এবং ভাড়ার উপরও দেয়া চলর্বে না। পূর্ব যুগীয় গুরুজনদের একটি দলও এদিকেই গিয়েছেন। মুজাহিদ (রঃ) ও আতা’ও (রঃ) এ কথাই বলেন। তাদের দলীল হলো নিম্নের হাদীসটিঃ

হযরত উছমান ইবনু আবি সুলাইমান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলকামা ইবনু ফাযলাহ্ (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ), হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ) ইন্তেকাল করেছেন, (তাদের যামানায়) মক্কার ঘরবাড়ীকে আযাদ ও মালিকানাবিহীন হিসেবে গণ্য করা হতো। প্রয়োজন হলে তাতে বাস করতেন, অন্যথায় অপরকে বসবাসের জন্যে প্রদান করতেন।” (এটা ইমাম ইবনু মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, মক্কা শরীফের ঘরবাড়ী বিক্রি করাও জায়েয নয় এবং ভাড়া নেয়াও বৈধ নয়।” (এটা আবদুর রাযযাক ইবনু মুজাহিদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) হযরত আতা’ও (রঃ) হারাম শরীফে ভাড়া নিতে নিষেধ করেছেন। হযরত উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) মক্কার ঘরে দরজা রাখতে নিষেধ করতেন। কেননা, প্রাঙ্গনে বা চত্বরে হাজীরা অবস্থান করতেন। সর্বপ্রথম ঘরের দর নির্মাণ করেন সাহল ইবনু আমর (রাঃ)। হযরত উমার (রাঃ) তৎক্ষণাৎ তাঁকে তাঁর কাছে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি এসে বলেনঃ “হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাকে ক্ষমা করুন! আমি একজন ব্যবসায়ী লোক। আমি প্রয়োজন বশতঃ এই দরজা বানিয়েছি, যাতে আমার সওয়ারী পশু আমার আয়াত্ত্বের মধ্যে থাকে। তখন হযরত উমার (রাঃ) তাকে বলেনঃ “তা হলে ঠিক আছে তোমাকে অনুমতি দেয়া হলো।

অন্য রিওয়াইয়াতে হযরত উমার ফারূকের (রাঃ) নির্দেশ নিম্নলিখিত ভাষায় বর্ণিত আছেঃ “হে মক্কাবাসীরা! তোমরা তোমাদের ঘর গুলিতে দরজা করো না, যাতে বাইরের লোক যেখানে ইচ্ছা সেখানেই অবতরণ করতে পারে।”

হযরত আতা’ (রঃ) বলেন যে, এতে শহুরে লোক ও বিদেশী লোক সমান। তারা যেখানে ইচ্ছা সেখানেই অবতরণ করতে পারে।

হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর (রাঃ) বলেন যে, যারা মক্কা শরীফের ঘর বাড়ীর ভাড়া নেয় তারা আগুন ভক্ষণ করে।

ইমাম আহমাদ (রঃ) এই দুই-এর মাঝামাঝি পথটি পছন্দ করেছেন। অর্থাৎ মক্কার বাড়ী ঘরের অধিকারিত্ব ও উত্তরাধিকারকে জায়েয বলেছেন বটে, কিন্তু ভাড়া নেয়াকে অবৈধ বলেছেন। এ সব ব্যাপারে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আরববাসী কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন যে এখানে (আরবী) এর (আরবী) অক্ষরটি অতিরিক্ত। যেমন (আরবী) এর মধ্যে (আরবী) অক্ষরটি অতিরিক্ত এবং অনুরূপভাবে আশীর কবিতাংশে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের পরিবারবর্গের রিকের জামিন হয়েছে আমাদের বর্শাগুলি।” এখানেও অক্ষরটি অতিরিক্ত রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এর চেয়েও উত্তম কথা আমরা বলতে পারি যে, এখানকার (আরবী) বা ক্রিয়াটি (আরবী) (ইচ্ছা করে) এর অর্থকে অন্তর্ভুক্ত করে। এ জন্যেই (আরবী) এর সাথে এটা (আরবী) হয়েছে।

(আরবী) শব্দের ভাবার্থ হলো কাবীরা ও লজ্জাজনক পাপ। এখানে (আরবী) এর অর্থ হলো ইচ্ছাপূর্বক। হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) এর অর্থ হলো শিরক। ভাবার্থ এটাও যে, হারাম শরীফের মধ্যে আল্লাহর হারামকৃত কাজকে হালাল মনে করা। যেমন কোন দুষ্কর্ম করা কাউকে হত্যা করা এবং যে যুলুম করে নাই তার উপর যুলুম করা ইত্যাদি। এই ধরনের লোক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির যোগ্য। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, সেখানে যে কোন দুষ্কর্ম করাই হলো যুলুম ।

হারাম শরীফের বৈশিষ্ট্য এটাই যে, কোন দূরদেশীয় লোক যখন সেখানে কোন দুষ্কর্ম করার সংকল্প করে তখন সে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায় যদিও সে ওটা করে না বসে।

হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, যদি কোন লোক আদনে থাকে এবং মক্কায় ইলহাদ ও যুলুমের ইচ্ছা করে তবেও আল্লাহ তাআলা তাকে বেদনাদায়ক শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবেন। শু’বা (রঃ) বলেনঃ “উনি তো এটাকে মার’রূপে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু আমি মারফুরূপে বর্ণনা করি না। এর আরো সনদ রয়েছে যা বিশুদ্ধ এবং এটা মারফু হওয়া অপেক্ষা মাওকূফ হওয়াই সঠিকতর। সতঃ হযরত ইবনু মাসউদের (রাঃ) উক্তি হতেই এটা বর্ণিত হয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, কারো উপর শুধু পাপ কার্যের ইচ্ছার কারণেই পাপ লিখা হয় না। কিন্তু যদি সে দূর দূরান্তরে থেকে যেমন আদনে থেকেই হারাম শরীফের কোন লোককে হত্যা করার ইচ্ছা করে তবে আল্লাহ তাআলা তাকে বেদনাদায়ক শান্তির স্বাদ গ্রহণ করাবেন।

হযরত সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাঃ) বলেন যে, হারাম শরীফে কারো তার নিজের খাদেমকে গালি দেয়াও ইলহাদ বা সীমা লংঘনের মধ্যে গণ্য।

হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি এই যে, এখানে এসে কোন ধনী ব্যক্তির ব্যবসা করাও ইলহাদের অন্তর্ভুক্ত। হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বলেন যে, মক্কায় শস্য বিক্রি করাও ইলহাদ বা সীমালংঘন। হাবীব ইবনু আবিসাবিত (রাঃ) বলেন যে, উচ্চ মূল্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে শস্যকে মক্কায় আটক রাখাও ইলহাদের মধ্যে গণ্য। মুসনাদে ইবনু আবি হাতিমেও রাসূলুল্লাহর (সঃ) উক্তি দ্বারা এটাই বর্ণিত আছে।

হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতটি আবদুল্লাহ ইবনু আনীসের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে একজন মুহাজির ও একজন আনসারের সাথে পাঠিয়েছিলেন। একবার তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ নসব নামার (বংশ তালিকার) উপর গর্ব করতে শুরু করে। সে তখন ক্রোধান্বিত হয়ে আনসারীকে হত্যা করে ফেলে। অতঃপর সে মক্কায় পালিয়ে যায় এবং মুরতাদ হয়ে যায়। তাহলে ভাবার্থ হবেঃ যে সীমালংঘন করে মক্কায় আশ্রয় নেবে (তার জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি) ।

এ ‘আছার’সমূহ দ্বারা যদিও এটা বুঝা যাচ্ছে যে, এ সব কাজ ইলহাদ বা সীমালংঘনের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা এসবগুলি হতে অধিকতর সাধারণ। বরং এতে সতর্কতা রয়েছে এর চেয়ে বড় বিষয়ের উপর। এজন্যেই যখন হাতীওয়ালারা বায়তুল্লাহ শরীফ ধ্বংস করার ইচ্ছা করে তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখী পাঠিয়ে দেন, যেগুলি তাদের উপর কংকন নিক্ষেপ করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয় এবং এটাকে অন্যদের জন্যে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যম বানিয়ে দেন। একারণেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক সেনাবাহিনী এই বায়তুল্লাহতে যুদ্ধ করতে আসবে। যখন তারা এখানে পৌছবে তাদের প্রথম ও শেষ সবকেই যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে (শেষ পর্যন্ত)।

বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়েরকে (রাঃ) বলেনঃ “তুমি এখানে ইলহাদ করা হতে বেঁচে থাকো! আমি রাসূলুল্লাহকে (সঃ) বলতে শুনেছিঃ “এখানে একজন কুরায়েশী ইলহাদ করবে। তার পাপরাশি যদি সমস্ত দানব ও মানবের পাপরাশি দ্বারা ওজন করা হয় তবে তার পাপরাশিই বেশী হয়ে যাবে।”দেখো, তুমিই যেন ঐ ব্যক্তি হয়ে না যাও।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে) আর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তিনি তাকে হাতীমে বসে এই উপদেশ দিয়েছিলেন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#945)
[ یَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِیْلِ اللّٰهِ
Avert [people] from the way of Allah.]
Sura:22
Sura: Al-Hajj
Ayat: 25
www.motaher21.net

22:25

اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَ یَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ الَّذِیۡ جَعَلۡنٰہُ لِلنَّاسِ سَوَآءَۨ الۡعَاکِفُ فِیۡہِ وَ الۡبَادِ ؕ وَ مَنۡ یُّرِدۡ فِیۡہِ بِاِلۡحَادٍۭ بِظُلۡمٍ نُّذِقۡہُ مِنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ﴿٪۲۵﴾

Indeed, those who have disbelieved and avert [people] from the way of Allah and [from] al-Masjid al-Haram, which We made for the people – equal are the resident therein and one from outside; and [also] whoever intends [a deed] therein of deviation [in religion] or wrongdoing – We will make him taste of a painful punishment.

 

A Warning to Those Who hinder Others from the Path of Allah and from Al-Masjid Al-Haram and Who seek to do Evil Actions therein

Allah rebukes the disbelievers for preventing the believers from coming to Al-Masjid Al-Haram and performing their rites and rituals there, claiming that they were its guardians,

وَمَا كَانُواْ أَوْلِيَأءَهُ إِنْ أَوْلِيَأوُهُ إِلاَّ الْمُتَّقُونَ

and they are not its guardians. None can be its guardians except those who have Taqwa. (8:34)

In this Ayah there is proof that it was revealed in Al-Madinah, as Allah says in Surah Al-Baqarah:

يَسْـَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللَّهِ

They ask you concerning fighting in the Sacred Months. Say, “Fighting therein is a great (transgression) but a greater (transgression) with Allah is to prevent mankind from following the way of Allah, to disbelieve in Him, to prevent access to Al-Masjid Al-Haram, and to drive out its inhabitants. (2:217)

And Allah says here:

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

Verily, those who disbelieved and hinder (men) from the path of Allah, and from Al-Masjid Al-Haram,

meaning, not only are they disbelievers, but they also hinder people from the path of Allah and from Al-Masjid Al-Haram. They prevent the believers who want to go there from reaching it, although the believers have more right than anyone else to go there.

The structure of this phrase is like that to be found in the Ayah:

الَّذِينَ ءَامَنُواْ وَتَطْمَيِنُّ قُلُوبُهُمْ بِذِكْرِ اللَّهِ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَيِنُّ الْقُلُوبُ

Those who believed, and whose hearts find rest in the remembrance of Allah, verily, in the remembrance of Allah do hearts find rest. (13:28)

Not only are they believers, but their hearts also find rest in the remembrance of Allah.
The Issue of renting Houses in Makkah

Allah says:

الَّذِي جَعَلْنَاهُ لِلنَّاسِ سَوَاء الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ

which We have made (open) to (all) men, the dweller in it and the visitor from the country are equal there.

meaning that they prevent people from reaching Al-Masjid Al-Haram, which Allah has made equally accessible to all in Shariah, with no differentiation between those who live there and those who live far away from it.

سَوَاء الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ

the dweller in it and the visitor from the country are equal there,

Part of this equality is that everyone has equal access to all parts of the city and can live there, as Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas concerning the Ayah:
سَوَاء الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ
(the dweller in it and the visitor from the country are equal there), he (Ibn Abbas) said:
“Both the people of Makkah and others can stay in Al-Masjid Al-Haram.”

سَوَاء الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ

the dweller in it and the visitor from the country are equal there,

Mujahid said,

“The people of Makkah and others are equally allowed to stay there.”

This was also the view of Abu Salih, Abdur-Rahman bin Sabit and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam.

Abdur-Razzaq narrated from Ma`mar, from Qatadah who said:

“Its own people and others are equal therein.”

This is the issue about which Ash-Shafi`i and Ishaq bin Rahwayh differed in the Masjid of Al-Khayf, when Ahmad bin Hanbal was also present. Ash-Shafi`i was of the opinion that the various parts of Makkah can be owned, inherited and rented, and he used as evidence the Hadith of Usamah bin Zayd who said,

“I said, O Messenger of Allah, will you go and stay tomorrow in your house in Makkah?”

He said,

وَهَلْ تَرَكَ لَنَا عَقِيلٌ مِنْ رِبَاعٍ

Has Aqil left us any property?

Then he said,

لَاا يَرِثُ الْكَافِرُ الْمُسْلِمَ وَلَاا الْمُسْلِمُ الْكَافِر

A disbeliever does not inherit from a Muslim and a Muslim does not inherit from a disbeliever.

This Hadith was recorded in the Two Sahihs.

He also used as evidence the report that Umar bin Al-Khattab bought a house in Makkah from Safwan bin Umayyah for four thousand Dinars, and made it into a prison.

This was also the view of Tawus and `Amr bin Dinar.

Ishaq bin Rahwayh was of the opinion that they (houses in Makkah) could not be inherited or rented.

This was the view of a number of the Salaf, and Mujahid and Ata’ said likewise.

Ishaq bin Rahwayh used as evidence the report recorded by Ibn Majah from Alqamah bin Nadlah who said,

“The Messenger of Allah, Abu Bakr and Umar died, and nobody claimed any property in Makkah except the grazing animals. Whoever needed to live there would take up residence there, and whoever did not need to live there would let others take up residence there.”

Abdur-Razzaq recorded that Abdullah bin `Amr said,

“It is not allowed to sell or rent the houses of Makkah.”

He also said, narrating from Ibn Jurayj:

“`Ata’ would not allow people to charge rent in the Haram, and he told me that Umar bin Al-Khattab did not allow people to put gates on the houses of Makkah because the pilgrims used to stay in their courtyards.

The first person to put a gate on his house was Suhayl bin `Amr. Umar bin Al-Khattab sent for him about that and he said, `Listen to me, O Commander of the faithful, I am a man who engages in trade and I want to protect my back.’

He said, `Then you may do that.”‘

Abdur-Razzaq recorded from Mujahid that Umar bin Al-Khattab said,

“O people of Makkah, do not put gates on your houses, and let the Bedouins stay wherever they want.”

He said:Ma`mar told us, narrating from someone who heard `Ata’ say about the Ayah,
سَوَاء الْعَاكِفُ فِيهِ وَالْبَادِ
(the dweller in it and the visitor from the country are equal there),

“They may stay wherever they want.”

Ad-Daraqutni recorded a saying reported from Abdullah bin `Amr:

“Whoever charges rent for the houses of Makkah, consumes fire.”

Imam Ahmad took a middle path, according to what his son Salih narrated from him, and he said,

“They may be owned and inherited, but they should not be rented, so as to reconcile between all the proofs.”

And Allah knows best.
A Warning to Those Who want to commit Evil Actions in the Haram

Allah says:

وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ نُذِقْهُ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ

and whoever inclines to evil actions therein or to do wrong, him We shall cause to taste from a painful torment.

بِظُلْمٍ
(or to do wrong),

means, he aims deliberately to do wrong, and it is not the matter of misunderstanding.

As Ibn Jurayj said narrating from Ibn Abbas,

“This means someone whose actions are intentional.”

Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,

“The evil action of Shirk.”

Al-`Awfi reported that Ibn Abbas said:

“The evil action is allowing in the Haram what Allah has forbidden, such as mistreating and killing, whereby you do wrong to those who have done you no wrong and you kill those who have not fought you. If a person does this, then he deserves to suffer a painful torment.”

بِظُلْمٍ
(or to do wrong),

Mujahid said,

“To do some bad action therein. This is one of the unique features of Al-Haram, that the person who is about to do some evil action should be punished if this is his intention, even if he has not yet commenced the action.”

Ibn Abi Hatim recorded in his Tafsir that Abdullah (i.e., Ibn Mas`ud) commented about the Ayah,
وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ
(and whoever inclines to evil actions therein or to do wrong),

“If a man intends to do some evil action therein, Allah will make him taste a painful torment.”

This was also recorded by Ahmad.

I say, (its) chain is Sahih according to the conditions of Al-Bukhari, and it is more likely Mawquf than Marfu`. And Allah knows best.

Sa`id bin Jubayr said,

“Insulting a servant and anything more than that is (counted as) wrongdoing.”
Habib bin Abi Thabit said:
وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ
(and whoever inclines to evil actions therein or to do wrong),

“Hoarding (goods) in Makkah.”

This was also the view of others.

وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ
(and whoever inclines to evil actions therein or to do wrong), Ibn Abbas said,

“This was revealed about Abdullah bin Unays. The Messenger of Allah sent him with two men, one of whom was a Muhajir and the other from among the Ansar. They began to boast about their lineages and Abdullah bin Unays got angry and killed the Ansari. Then he reverted from Islam (became an apostate) and fled to Makkah. Then these words were revealed concerning him:
وَمَن يُرِدْ فِيهِ بِإِلْحَادٍ بِظُلْمٍ
(and whoever inclines to evil actions therein or to do wrong), meaning, whoever flees to Al-Haram to do evil actions, i.e., by leaving Islam.”

These reports indicate some meanings of the phrase “evil actions”, but the meaning is more general than that and includes things which are more serious. Hence when the owners of the Elephant planned to destroy the House (the Ka`bah), Allah sent against them birds in flocks,

تَرْمِيهِم بِحِجَارَةٍ مِّن سِجِّيلٍ

فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُولِ

Striking them with stones of Sijjil. And He made them like (an empty field of) stalks (of which the corn has been eaten up by cattle). (105:4-5)

means He destroyed them and made them a lesson and a warning for everyone who intends to commit evil actions there.

Hence it was reported in a Hadith that the Messenger of Allah said:

يَغْزُو هَذَا الْبَيْتَ جَيْشٌ حَتَّى إِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الاَْرْضِ خُسِفَ بِأَوَّلِهِمْ وَاخِرِهِم

This House will be attacked by an army, then when they are in a wide open space, the first of them and the last of them will be swallowed up by the earth

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply