(বই#৯৪৬) [ لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاوُهَا আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না;] সূরা:- আল্ – হাজ্জ। সুরা:২২ ২৬-৩৭ নং আয়াত:- www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৪৬)
[ لَن يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاوُهَا
আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না;]
সূরা:- আল্ – হাজ্জ।
সুরা:২২
২৬-৩৭ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২২:২৬
وَ اِذۡ بَوَّاۡنَا لِاِبۡرٰہِیۡمَ مَکَانَ الۡبَیۡتِ اَنۡ لَّا تُشۡرِکۡ بِیۡ شَیۡئًا وَّ طَہِّرۡ بَیۡتِیَ لِلطَّآئِفِیۡنَ وَ الۡقَآئِمِیۡنَ وَ الرُّکَّعِ السُّجُوۡدِ ﴿۲۶﴾
স্মরণ করো সে সময়ের কথা যখন আমি ইবরাহীমের জন্য এ ঘরের (কাবাঘর) জায়গা নির্ধারণ করেছিলাম (এ নির্দেশনা সহকারে) যে, আমার সাথে কোন জিনিসকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে তাওয়াফকারী ও রুকূ’-সিজদা-কিয়ামকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।
২২:২৭
وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ ﴿ۙ۲۷﴾
এবং লোকদেরকে হজ্বের জন্য সাধারণ হুকুম দিয়ে দাও, তারা প্রত্যেকে দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে।
২২:২৮
لِّیَشۡہَدُوۡا مَنَافِعَ لَہُمۡ وَ یَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ۚ فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَ اَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ ﴿۫۲۸﴾
তোমার কাছে আসবে, যাতে এখানে তাদের জন্য যে কল্যাণ রাখা হয়েছে তা তারা দেখতে পায় এবং তিনি তাদেরকে যেসব পশু দান করেছেন তার উপর কয়েকটি নির্ধারিত দিনে আল্লাহর নাম নেয় নিজেরাও খাও এবং দুর্দশাগ্রস্ত অভাবীকেও খাওয়াও।
২২:২৯
ثُمَّ لۡیَقۡضُوۡا تَفَثَہُمۡ وَ لۡیُوۡفُوۡا نُذُوۡرَہُمۡ وَ لۡیَطَّوَّفُوۡا بِالۡبَیۡتِ الۡعَتِیۡقِ ﴿۲۹﴾
অতঃপর তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে, তাদের মানত পূর্ণ করে এবং তাওয়াফ করে প্রাচীন (কা’বা) গৃহের।
২২:৩০
ذٰلِکَ ٭ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ حُرُمٰتِ اللّٰہِ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّہٗ عِنۡدَ رَبِّہٖ ؕ وَ اُحِلَّتۡ لَکُمُ الۡاَنۡعَامُ اِلَّا مَا یُتۡلٰی عَلَیۡکُمۡ فَاجۡتَنِبُوا الرِّجۡسَ مِنَ الۡاَوۡثَانِ وَ اجۡتَنِبُوۡا قَوۡلَ الزُّوۡرِ ﴿ۙ۳۰﴾
এ ছিল (কাবা নির্মাণের উদ্দেশ্য) এবং যে কেউ আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত পবিত্র অনুষ্ঠানগুলোকে সম্মান করবে, তার রবের কাছে এ হবে তারই জন্য ভালো। আর তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করে দেয়া হয়েছে, সেগুলো ছাড়া যেগুলো তোমাদের বলে দেয়া হয়েছে। কাজেই মূর্তিসমূহের আবর্জনা থেকে বাঁচো, মিথ্যা কথা থেকে দূরে থাকো,
২২:৩১
حُنَفَآءَ لِلّٰہِ غَیۡرَ مُشۡرِکِیۡنَ بِہٖ ؕ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰہِ فَکَاَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَآءِ فَتَخۡطَفُہُ الطَّیۡرُ اَوۡ تَہۡوِیۡ بِہِ الرِّیۡحُ فِیۡ مَکَانٍ سَحِیۡقٍ ﴿۳۱﴾

আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে, তাঁর কোন শরীক না করে; আর যে কেউ আল্লাহর শরীক করে (তার অবস্থা) সে যেন আকাশ হতে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল।
২২:৩২
ذٰلِکَ ٭ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ ﴿۳۲﴾
এ হচ্ছে আসল ব্যাপার (এটি বুঝে নাও), আর যে ব্যক্তি আল্লাহ নির্ধারিত রীতি-নীতির প্রতি সম্মান দেখায়, তার সে কাজ তার অন্তরের আল্লাহভীতির পরিচায়ক।
২২:৩৩
لَکُمۡ فِیۡہَا مَنَافِعُ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی ثُمَّ مَحِلُّہَاۤ اِلَی الۡبَیۡتِ الۡعَتِیۡقِ ﴿٪۳۳﴾
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের ঐ সমস্ত (কুরবানীর পশু) থেকে উপকার লাভের অধিকার আছে। তারপর ওগুলোর (কুরবানী করার) জায়গা এ প্রাচীন ঘরের নিকটেই।
২২:৩৪
وَ لِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا لِّیَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ؕ فَاِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَلَہٗۤ اَسۡلِمُوۡا ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ ﴿ۙ۳۴﴾
প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর একটি নিয়ম ঠিক করে দিয়েছি, যাতে (সে উম্মতের) লোকেরা সে পশুদের ওপর আল্লাহর নাম নেয় যেগুলো তিনি তাদেরকে দিয়েছেন।৬৪ (এ বিভিন্ন নিয়মের উদ্দেশ্য একই) কাজেই তোমাদের ইলাহও সে একজনই এবং তোমরা তাঁরই ফরমানের অনুগত হয়ে যাও। আর হে নবী! সুসংবাদ দিয়ে দাও বিনয়ের নীতি অবলম্বনকারীদেরকে,
২২:৩৫
الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰہُ وَجِلَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ عَلٰی مَاۤ اَصَابَہُمۡ وَ الۡمُقِیۡمِی الصَّلٰوۃِ ۙ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۳۵﴾
যাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহর নাম স্মরণ করা হলে তাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে, যে বিপদই তাদের ওপর আসে তার ওপর তারা সবর করে, নামায কায়েম করে এবং যা কিছু রিযিক তাদেরকে আমি দিয়েছি তা থেকে খরচ করে।
২২:৩৬
وَ الۡبُدۡنَ جَعَلۡنٰہَا لَکُمۡ مِّنۡ شَعَآئِرِ اللّٰہِ لَکُمۡ فِیۡہَا خَیۡرٌ ٭ۖ فَاذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلَیۡہَا صَوَآفَّ ۚ فَاِذَا وَجَبَتۡ جُنُوۡبُہَا فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَ اَطۡعِمُوا الۡقَانِعَ وَ الۡمُعۡتَرَّ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرۡنٰہَا لَکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۳۶﴾
আর কুরবানীর উটকে আমি করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্তর্ভুক্ত; তোমাদের জন্য রয়েছে তার মধ্যে কল্যাণ। কাজেই তাদেরকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে৬৯ তাদের ওপর আল্লাহর নাম নাও। আর যখন (কুরবানীর পরে) তাদের পিঠ মাটির সাথে লেগে যায়৭ তখন তা থেকে নিজেরাও খাও এবং তাদেরকেও খাওয়াও যারা পরিতুষ্ট হয়ে বসে আছে এবং তাদেরকেও যারা নিজেদের অভাব পেশ করে। এ পশুগুলোকে আমি এভাবেই তোমাদের জন্য বশীভূত করেছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
২২:৩৭
لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ لُحُوۡمُہَا وَ لَا دِمَآؤُہَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ ؕ کَذٰلِکَ سَخَّرَہَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۳۷﴾
আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি ওগুলিকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এই জন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। আর তুমি সুসংবাদ দাও সৎকর্মশীলদেরকে।

২৬-৩৭ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন‌্য বলেছেন :-

# কোন কোন মুফাসসির হযরত ইবরাহীমকে (আ) যে ফরমান দেয়া হয়েছিল “পবিত্র রাখো” পর্যন্তই তা শেষ করে দিয়েছেন এবং “হজ্জের জন্য সাধারণ হুকুম দিয়ে দাও” নির্দেশটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে উচ্চারিত হয়েছে বলে মনে করেছেন। কিন্তু বক্তব্যের ধরণ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে, এ সম্বোধনও হযরত ইবরাহীমের প্রতিই করা হয়েছে এবং তাঁকে কাবাঘর নির্মাণের সময় যে হুকুম দেয়া হয়েছিল এটি তারই একটি অংশ। এছাড়াও এখানে বক্তব্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একথা বলা যে, প্রথম দিন থেকেই এ ঘরটি এক আল্লাহর বন্দেগী করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং আল্লাহর বন্দেগীকারী সকল মানুষের এখানে আসার সাধারণ অনুমতি ছিল।
# মূলে ضَامِرٍ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি বিশেষ করে শীর্ণ ও ক্ষীণকায় উটের প্রতিশব্দ হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এর উদ্দেশ্য এমন সব মুসাফিরের ছবি তুলে ধরা যারা দূর-দূরান্ত থেকে চলে আসছে এবং পথে তাদের উটগুলো খাদ্য ও পানীয় না পাওয়ার কারণে শীর্ণকায় হয়ে গেছে।

# শুরুতে হযরত ইবরাহীমকে যে হুকুম দেয়া হয়েছিল এখানে তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে যা বলা হয়েছে তা এর সাথে বাড়তি সংযোজন। অতিরিক্ত ব্যাখ্যা হিসেবে এ সংযোজন করা হয়েছে। আমাদের এ অভিমতের কারণ হচ্ছে এই যে, “এই প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ করে” পর্যন্তই এই বক্তব্য শেষ হয়ে গেছে। এটি কাবাঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবার সময় বলা হয়ে থাকবে। (হযরত ইবরাহীমের কাবাঘর নির্মাণ সংক্রান্ত আরো বিস্তারিত বিবরণ জানার জন্য দেখুন সূরা বাকারাহ ১২৫-১২৯ ,
# সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-১২৫

وَ اِذْ جَعَلْنَا الْبَیْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَ اَمْنًا١ؕ وَ اتَّخِذُوْا مِنْ مَّقَامِ اِبْرٰهٖمَ مُصَلًّى١ؕ وَ عَهِدْنَاۤ اِلٰۤى اِبْرٰهٖمَ وَ اِسْمٰعِیْلَ اَنْ طَهِّرَا بَیْتِیَ لِلطَّآئِفِیْنَ وَ الْعٰكِفِیْنَ وَ الرُّكَّعِ السُّجُوْدِ

আর স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কা’বা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিরাম এবং ইবরাহীম যেখানে ইবাদাত করার জন্য দাঁড়ায় সে স্থানটিকে স্থায়ীভাবে নামাযের স্থানে পরিণত করার হুকুম দিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে তাকীদ করে বলেছিলাম, আমার এই গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকূ’-সিজদাকারীদের জন্য পাক-পবিত্র রাখো।

# পাক-পবিত্র রাখার অর্থ কেবলমাত্র ময়লা-আবর্জনা থেকে পাক-পবিত্র রাখা নয়। আল্লাহর ঘরের আসল পবিত্রতা হচ্ছে এই যে, সেখানে আল্লাহর ছাড়া আর কারোর নাম উচ্চারিত হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘরে বসে আল্লাহ‌ ছাড়া আর কাউকে মালিক, প্রভু, মাবুদ, অভাব পূরণকারী ও ফরিয়াদ শ্রবনকারী হিসেবে ডাকে, সে আসলে তাকে নাপাক ও অপবিত্র করে দিয়েছে। এ আয়াতে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পদ্ধতিতে কুরাইশ মুশরিকদের অপরাধসমূহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ এ যালেমরা ইবরাহীম ও ইসমাঈলের উত্তরাধিকারী হবার জন্য গর্ব করে বেড়ায় কিন্তু উত্তারাধিকারের হক আদায় করার পরিবর্তে এরা উল্টো সেই হককে পদদলিত করে যাচ্ছে। কাজেই ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাথে যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল তা থেকে বনী ইসরাঈলরা যেমন বাদ পড়েছে তেমনি এই ইসমাইলী মুশরিকরাও বাদ পড়ে গেছে।

# সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-১২৬

وَ اِذْ قَالَ اِبْرٰهٖمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا بَلَدًا اٰمِنًا وَّ ارْزُقْ اَهْلَهٗ مِنَ الثَّمَرٰتِ مَنْ اٰمَنَ مِنْهُمْ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ١ؕ قَالَ وَ مَنْ كَفَرَ فَاُمَتِّعُهٗ قَلِیْلًا ثُمَّ اَضْطَرُّهٗۤ اِلٰى عَذَابِ النَّارِ١ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ

আর এও স্মরণ করো যে, ইবরাহীম দোয়া করেছিলঃ “হে আমার রব! এই শহরকে শান্তি ও নিরাপত্তার শহর বানিয়ে দাও। আর এর অধিবাসীদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহ‌ ও আখেরাতকে মানবে তাদেরকে সব রকমের ফলের আহার্য দান করো।” জবাবে তার রব বললেনঃ “আর যে মানবে না, দুনিয়ার গুটিকয় দিনের জীবনের সামগ্রী আমি তাকেও দেবো। কিন্তু সব শেষে তাকে জাহান্নামের আযাবের মধ্যে নিক্ষেপ করবো এবং সেটি নিকৃষ্টতম আবাস।”

#হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন মানবজাতির নেতৃত্ব সম্পর্কে আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন জবাবে তাঁকে বলা হয়েছিল, তোমার সন্তানদের মধ্য থেকে একমাত্র মু’মিন ও সত্যনিষ্ঠরাই এ পদের অধিকারী হবে। জালেমদেরকে এর অধিকারী করা হবে না। অতঃপর হযরত ইবরাহীম যখন রিযিকের জন্য দোয়া করতে লাগলেন তখন আগের ফরমানটিকে সামনে রেখে তিনি কেবলমাত্র নিজের মু’মিন সন্তান ও বংশধরদের জন্য দোয়া করলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ‌ জবাবে সঙ্গে সঙ্গেই তার ভুল ধারণা দূর করে দিলেন এবং তাঁকে জানিয়ে দিলেন, সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্ব এক কথা আর রিযিক ও আহার্য দান করা অন্য কথা। সত্যনিষ্ঠ ও সৎকর্মশীল মু’মিনরাই একমাত্র সত্যনিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী হবে। কিন্তু দুনিয়ার রিযিক ও আহার্য মু’মিন ও কাফের নির্বিশেষে সবাইকে দেয়া হবে। এ থেকে একথা স্বতস্ফূর্তভাবে প্রতিভাত হয় যে, কারোর অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে যেন কেউ এ ধারণা না করে বসেন যে, আল্লাহ‌ তার প্রতি সন্তুষ্ট আছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সে-ই নেতৃত্ব –যোগ্যতারও অধিকারী।

আলে ইমরান ৯৬-৯৭ এবং

# ইহুদীদের দ্বিতীয় আপত্তি ছিল এই-তোমরা বাইতুল মাকদিসকে বাদ দিয়ে কাবাকে কিবলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছো কেন? অথচ এ বাইতুল মাকদিসই ছিল পূর্ববর্তী নবীদের কিবলাহ। সূরা বাকারায় এ আপত্তির জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু ইহুদীরা এরপরও নিজেদের আপত্তির ওপর জোর দিয়ে আসছিল। তাই এখানে আবার এর জবাব দেয়া হয়েছে। বাইতুল মাকদিস সম্পর্কে বাইবেল নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সাড়ে চারশো বছর পর হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম এটি নির্মাণ করেছিলেন। (১-রাজাবলী, ৬: ১) আর হযরত সুলাইমানের (আ) আমলেই এটি তাওহীদবাদীদের কিবলাহ গণ্য হয়। (১-রাজাবলী, ৮: ২৯-৩০) (দেখুন ) বিপরীত পক্ষে সমগ্র আরববাসীর একযোগে সুদীর্ঘকালীন ধারাবাহিক বর্ণনায় একথা প্রমাণিত যে, কাবা নির্মাণ করেছিলেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। তিনি হযরত মূসার (আ) আট নয়শো বছর আগে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। কাজেই কাবার অগ্রবর্তী অবস্থান ও নির্মাণ সন্দেহাতীতভাবে সত্য।
# সুরা: আলে-ইমরান
আয়াত নং :-৯৭

فِیْهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبْرٰهِیْمَ١ۚ۬ وَ مَنْ دَخَلَهٗ كَانَ اٰمِنًا١ؕ وَ لِلّٰهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا١ؕ وَ مَنْ كَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الْعٰلَمِیْنَ

তার মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এবং ইব্রাহীমের ইবাদাতের স্থান। আর তার অবস্থা হচ্ছে এই যে, যে তার মধ্যে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। মানুষের মধ্য থেকে যারা সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন এই গৃহের হজ্ব সম্পন্ন করে, এটি তাদের ওপর আল্লাহ‌র অধিকার। আর যে ব্যক্তি এ নির্দেশ মেনে চলতে অস্বীকার করে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ‌ বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।

# এর মধ্যে কিছু সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়, যা থেকে একথা প্রমাণ হয় যে, এ ঘরটি আল্লাহর কাছে গৃহীত হয়েছে এবং আল্লাহ‌ একে নিজের ঘর হিসেবে পছন্দ করে নিয়েছেন। ধূ ধূ মরুর বুকে এ ঘরটি তৈরী করা হয়। তারপর মহান আল্লাহ‌ এর আশপাশের অধিবাসীদের আহার্য সরবরাহের চমৎকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। জাহেলিয়াতের কারণে আড়াই হাজার বছর পর্যন্ত সমগ্র আরব ভূখণ্ডে চরম অশান্তি ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছিল। কিন্তু এই বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ দেশটিতে একমাত্র কাবাঘরও তার আশেপাশের এলাকাটি এমন ছিল যেখানে শান্তি ও নিরাপত্তা পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত ছিল। বরং এই কাবার বদৌলতেই সমগ্র দেশটি বছরে চার মাস শান্তি ও নিরাপত্তা ভোগ করতো। তারপর এই মাত্র অর্ধ শতাব্দী আগে সবাই প্রত্যক্ষ করেছিল কাবা আক্রমণকারী আবরাহার সেনাবাহিনী কিভাবে আল্লাহর রোষানলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল। আরবের সে সময়ের শিশু-বৃদ্ধ-যুবক সবাই এ ঘটনা জানতো। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরাও কুরআন নাযিলের সময় জীবিত ছিল।

# এ ঘরটির মর্যাদা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল যে, মারাত্মক প্রাণঘাতী শত্রুকে এখানে ঘোরাফেরা করতে দেখেও শত্রুর রক্তে হাত রঞ্জিত করার আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ব্যক্তিরা পরস্পরের ওপর হাত ওঠাবার সাহস করতো না।

 

ইবরাহীম ৩৫-৪১ আয়াত

# এখানে কেবলমাত্র দ্বীনী কল্যাণের কথাই বলা হয়নি, এর সাথে পার্থিব কল্যাণও সংযুক্ত রয়েছে। এ কাবাঘর ও হজ্জের বরকতেই হযরত ইবরাহীমের (আ) যুগ থেকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ পর্যন্ত আড়াই হাজার বছর ধরে আরবরা একটি ঐক্যকেন্দ্র লাভ করেছে। এটিই তাদের আরবীয় অস্তিত্বকে গোত্রবাদের মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাবার হাত থেকে রক্ষা করেছে। কেন্দ্রের সাথে এর সংযুক্তি এবং হজ্জের জন্য প্রতি বছর দেশের সব এলাকা থেকে লোকদের এখানে আসা যাওয়ার কারণে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি এক থাকে, তাদের মধ্যে আরব হবার অনুভূতি জাগ্রত থাকে এবং তারা চিন্তা ও তথ্য সরবরাহ এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পদ্ধতির প্রচার ও প্রসারের সুযোগ লাভ করে। তারপর এ হজ্জের বরকতেই আরবের যাবতীয় সন্ত্রাস, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাহীনতা অন্তত চার মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যেতো এবং সে সময় এমন ধরনের নিরাপত্তা লাভ করা যেতো যার মধ্যে দেশের সকল এলাকার লোকেরা সফর করতে পারতো এবং বাণিজ্য কাফেলাও নিরাপদে চলাফেরা করতে সক্ষম হতো। এজন্য আরবের অর্থনৈতিক জীবনের জন্যও হজ্জ একটি রহমত ছিল। আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আলে ইমরান ৮০ টীকা – ৮১ টীকা এবং আল মায়েদাহ ১১৩ টীকা। ইসলামের আগমনের পরে হজ্জের দ্বীনী কল্যাণের সাথে সাথে পার্থিব কল্যাণও কয়েকগুণ বেশী হয়ে গেছে। প্রথমে তা ছিল কেবলমাত্র আরবের জন্য রহমত, এখন হয়ে গেছে সারা দুনিয়ার তাওহীদবাদীদের জন্য রহমত। কা’বা শরীফের নক্সা (চিত্র)

# পশু বলতে এখানে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ উট, গরু, ছাগল, ভেড়া, যেমন সূরা আন’আমের ১৪২-১৪৪ আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাদের উপর আল্লাহর নাম নেবার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর নামে এবং তাঁর নাম উচ্চারণ করে তাদেরকে যবেহ করা যেমন পরবর্তী বাক্য নিজেই বলে দিচ্ছে। কুরআন মজীদে কুরবানীর জন্য সাধারণভাবে “পশুর উপর আল্লাহর নাম নেয়া”র পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সব জায়গায়ইএর অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নামে পশু যবেহ করা। এভাবে যেন এ সত্যটির ব্যাপারে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর নাম না নিয়ে অথবা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু যবেহ করা কাফের ও মুশরিকদের পদ্ধতি। মুসলমান যখনই পশু যবেহ করবে আল্লাহর নাম নিয়ে করবে এবং যখনই কুরবানী করবে আল্লাহর জন্য করবে।

কয়েকটি নির্ধারিত দিন বলতে কোন্ দিনের কথা বুঝনো হয়েছে? এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে। একটি মত হচ্ছে, এর অর্থ, যিলহজ্জের প্রথম দশটি দিন। ইবনে আব্বাস (রা.) হাসান বসরী, ইবরাহীম নখঈ, কাতাদাহ এবং অন্যান্য বহু সাহাবী ও তাবেঈনের এ মত উদ্ধৃত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফাও (র) এ মতের পক্ষে। ইমাম শাফেঈ (র) ও ইমাম আহমদেরও (র) একটি উক্তি এর সমর্থনে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় মতটি হচ্ছে, এর অর্থ, ইয়াওমুন নাহর (অর্থাৎ ১০ যিলহজ্জ) এবং তার পরের তিন দিন। এর সমর্থনে ইবনে আব্বাস (রা.), ইবনে উমর (রা.), ইবরাহীম নখঈ, হাসান ও আতার উক্তি পেশ করা হয়। ইমাম শাফেঈ (র) ও ইমাম আহমদেরও (র) একটি উক্তি এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তৃতীয় মতটি হচ্ছে, এর অর্থ তিন দিন তথা ইয়াওমুন নাহর (কুরবানীর ঈদের দিন) এবং এর পরের দু’দিন। এর সমর্থনে হযরত উমর (রা.), আলী (রা.), ইবনে উমর (রা.) ইবনে আব্বাস (রা.), আনাস ইবনে মালিক (রা.), আবু হুরাইরাহ (রা.) সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব (রা.) ও সাঈদ ইবনে জুবায়েরের (রা.) উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে। ফকীহগণের মধ্য থেকে সুফিয়ান সওরী (র), ইমাম মালেক (র), ইমাম আবু ইউসূফ (র) ও ঈমাম মুহাম্মাদ (র) এ মত গ্রহণ করেছেন। হানাফী ও মালেকী মাযহাবে এ মতের ভিত্তিতেই ফতোয়া দেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু একক উক্তি আছে। যেমন কেউ কুরবানীর দিনগুলোকে পহেলা মহররমের দিন পর্যন্ত দীর্ঘ করেছেন। কেউ শুধুমাত্র ইয়াওমুন নাহরের মধ্যেই তাকে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছেন। কেউ ইয়াওমুন নাহরের পরে মাত্র আর একদিন কুরবানীর দিন হিসেবে স্বীকার করেছেন। কিন্তু এগুলো দুর্বল উক্তি। এসবের পেছনে শক্তিশালী যুক্তি প্রমাণ নেই।

# কেউ কেউ এ বক্তব্যের এ অর্থ গ্রহণ করেছেন যে, খাওয়া ও খাওয়ানো উভয়টিই ওয়াজিব। কারণ, এখানে আদেশসূচক ক্রিয়াপদের মাধ্যমে হুকুম দেয়া হয়েছে। অন্য একটি দলের মতে, খাওয়া হচ্ছে মুস্তাহাব এবং খাওয়ানো ওয়াজিব। ইমাম মালিক (র) ও ইমাম শাফেঈ (র) এ মত প্রকাশ করেছেন। তৃতীয় দল বলেন, খাওয়া ও খাওয়ানো দু’টোই মুস্তাহাব। খাওয়া মুস্তাহাব হবার কারণ হচ্ছে এই যে, জাহেলী যুগে লোকেরা নিজেদের কুরবানীর গোশত নিজেদের খাওয়া নিষেধ মনে করতো। আর খাওয়ানো এজন্য পছন্দনীয় যে, এর মাধ্যমে গরীবদের সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়। এটি ইমাম আবু হানীফার (র) মত। হাসান বসরী, আতা, মুজাহিদ ও ইবরাহীম নাখঈ থেকে ইবনে জারীর এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, فَكُلُوا مِنْهَا এর মধ্যে আদেশসূচক ক্রিয়াপদ ব্যবহারের কারণে খাওয়া ওয়াজিব প্রমাণিত হয় না। এ হুকুমটি ঠিক তেমনি যেমন বলা হয়েছে وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوا “যখন তোমরা ইহরামের অবস্থা থেকে বের হয়ে আসো তখন আবার শিকার করো।” ( আল-মায়েদাহঃ ২ ) এবং فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانْتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ “তারপর যখন নামায শেষ হয়ে যায় তখন আবার পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়ো।” ( আল জুমআহঃ ১০ ) এর অর্থ এই নয় যে, ইহরাম থেকে বের হয়ে শিকার করা এবং জুমআর নামায শেষে পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে পড়া ওয়াজিব। বরং এর অর্থ হচ্ছেঃ এরপর এমনটি করার পথে কোন বাধা নেই। অনুরূপভাবে এখানেও যেহেতু লোকেরা কুরবানীর গোশত নিজেদের খাওয়া নিষিদ্ধ মনে করতো তাই বলা হয়েছেঃ না, তা খাও অর্থাৎ এটা মোটেই নিষিদ্ধ নয়।

দুর্দশাগ্রস্ত অভাবীকে আহার করানোর ব্যাপারে যা বলা হয়েছে তার অর্থ এ নয় যে, সচ্ছল বা ধনী ব্যক্তিকে আহার করানো যেতে পারে না। বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন অভাবী না হলেও তাদেরকে কুরবানীর গোশত দেওয়া জায়েয। এ বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামের কার্যাবলী থেকে প্রমাণিত। আলকামা বলেন, হযরত আবুদল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আমার হাতে কুরবানীর পশু পাঠান এবং নির্দেশ দেন, কুরবানীর দিন একে যবেহ করবে, নিজে খাবে, মিসকীনদেরকে দেবে এবং আমার ভাইয়ের ঘরে পাঠাবে। ইবনে উমরও (রা.) একই কথা বলেছেন অর্থাৎ একটি অংশ খাও, একটি অংশ প্রতিবেশীদেরকে দাও এবং একটি অংশ মিসকীনদের মধ্যে বণ্টন করো।

# ইয়াওমুন নাহরে (১০ যিলহজ্জ) কুরবানীর কাজ শেষ করার পর ইহরাম খুলে ফেলবে, ক্ষৌরকর্ম করবে, গোছল করবে, কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলবে এবং ইহরাম অবস্থায় যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল সেগুলো খতম করে দেবে। تَفَثَ এর আসল আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, সফরকালে যেসব ধূলা-ময়লা মানুষের গায়ে লেগে যায়। কিন্তু হজ্জ প্রসঙ্গে যখন ধূলো-ময়লা দূর করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তখন এর সে একই অর্থ গ্রহণ করা হবে যা উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ, হাজী যতক্ষণ পর্যন্ত হজ্জের আনুষ্ঠানিক কার্যাবলী ও কুরবানীর কাজ শেষ না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি চুল ও নখ কাটতে পারবেন না এবং শরীরের অন্য কোন পরিচ্ছন্নতার কাজও করতে পারবেন না। (এ প্রসঙ্গে একথা জেনে নেয়া উচিত যে, কুরবানীর কাজ শেষ করার পর অন্যান্য যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়ে যায় কিন্তু স্ত্রীর কাছে যাওয়া ততক্ষণ পর্যন্ত বৈধ না যতক্ষণ না “তাওয়াফে ইফাদাহ” শেষ করা হয়।)

# এ সময়ের জন্য যে ব্যক্তি কোন মানত করে।

# কাবাঘরের জন্য بَيْتُ الْعَتِيْق শব্দ অত্যন্ত অর্থবহ। “আতীক” শব্দটি আরবী ভাষায় তিনটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে প্রাচীন। দ্বিতীয় অর্থ স্বাধীন, যার ওপর কারোর মালিকানা নেই। তৃতীয় অর্থ সম্মানিত ও মর্যাদাপূর্ণ। এ তিনটি অর্থই এ পবিত্র ঘরটির বেলায় প্রযোজ্য।

তাওয়াফ বলতে “তাওয়াফে ইফাদাহ” অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারত বুঝানো হয়েছে। ইয়াওমুন নাহরে (কুরবানীর দিন) কুরবানী করার ও ইহরাম খুলে ফেলার পর এ তাওয়াফ করা হয়। এটি হজ্জের রোকন তথা ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর যেহেতু ধূলা-ময়লা দূর করার হুকুমের সাথে সাথেই এর উল্লেখ করা হয়েছে তাই এ বক্তব্য একথা প্রকাশ করে যে, কুরবানী করার এবং ইহরাম খুলে গোসল করে নেবার পর এ তাওয়াফ করা উচিত।

# আপাতদৃষ্টিতে এটা একটা সাধারণ উপদেশ। আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সকল মর্যাদাশালী জিনিসের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য একথা বলা হয়েছে। কিন্তু মসজিদে হারাম, হজ্জ, উমরাহ ও মক্কার হারামের যেসব মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এ বক্তব্যের সেগুলোই প্রধানতম উদ্দেশ্য। তাছাড়া এর মধ্যে এ মর্মে একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও রয়েছে যে, কুরাইশরা হারাম থেকে মুসলমানদেরকে বের করে দিয়ে, তাদের জন্য হজ্জের পথ বন্ধ করে দিয়ে, হজ্জের কার্যক্রমের মধ্যে জাহেলী ও মুশরিকী রীতিনীতি অন্তভূক্ত করে এবং আল্লাহর ঘরকে শিরকের আবর্জনায় দূষিত, কলুষিত করে এমন বহু মর্যাদাশালী জিনিসের মর্যাদা বিনষ্ট করে দিয়েছে যেগুলোর মর্যাদা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময় থেকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল।

# এ প্রসঙ্গে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর হালাল হওয়ার কথা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দু’টি ভুল ধারণা দূর করা। প্রথমত, কুরাইশ ও আরবের মুশরিকরা “বাহীরা” “সায়েবা”, “অসীলা” ও “হাম”কেও আল্লাহর প্রতিষ্ঠিত মর্যাদাসমূহের মধ্যে গণ্য করতো। তাই বলা হয়েছে, এগুলো তাঁর প্রতিষ্ঠিত মর্যাদা নয়। বরং তিনি সমস্ত গৃহপালিত পশু হালাল করেছেন। দ্বিতীয়ত, ইহরাম অবস্থায় যেভাবে শিকার করা হারাম তেমনিভাবে যেন একথা মনে না করা হয় যে, গৃহপালিত জন্তু যবেহ করা ও খাওয়াও হারাম। তাই বলা হয়েছে, এগুলো আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত মর্যাদাসমূহের মধ্যে গণ্য নয়।

# সূরা আন’আম ও সূরা নাহলে যে হুকুম দেয়া হয়েছে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছেঃ আল্লাহ যেসব জিনিস হারাম করেছেন সেগুলো হচ্ছেঃ মৃত, রক্ত, শুয়োরের মাংস এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নামে যবেহ করা পশু। আন’আম ১৪৫ ও নাহল ১১৫ আয়াত।

# মূর্তিপূজা থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেমন দুর্গন্ধময় ময়লা আবর্জনা থেকে মানুষ নাকে কাপড় দিয়ে দূরে সরে আসে। অন্য কথায় বলা যায়, তা যেন নাপাক ও ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ এবং কাছে যাবার সাথে সাথেই মানুষ তার সংস্পর্শ লাভ করে নাপাক ও নোংরা হয়ে যাবে।

# যদিও শব্দগুলো এখানে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং এ থেকে প্রত্যেকটি মিথ্যা, অপবাদ ও মিথ্যা সাক্ষ্যের হারাম হওয়া প্রমাণ হয় তবুও এ আলোচনায় বিশেষভাবে এমনসব বাতিল আকীদা-বিশ্বাস, বিধি-বিধান, রীতি-রেওয়াজ ও কল্পনা-কুসংস্কারের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যেগুলোর ওপর কুফরী ও শিরকের ভিত গড়ে উঠেছে। আল্লাহর সাথে অন্যদেরকে শরীক করা এবং তাঁর সত্তা, গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে তাঁর বান্দাদেরকে অংশীদার করা সবচেয়ে বড় মিথ্যা। এ থেকে এখানে নিষেধ করা হয়েছে। আবার আরবের মুশরিকরা যে মিথ্যার ভিত্তিতে “বাহীরা”, “সায়েবা” ও “হাম” ইত্যাদিকে হারাম গণ্য করতো তাও এ ফরমানের সরাসরি আওতাধীনে এসে যায়। যেমন সূরা আন নাহল-এ বলা হয়েছেঃ

وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَذَا حَلَالٌ وَهَذَا حَرَامٌ لِتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ

“আর তোমাদের কণ্ঠ যে মিথ্যা বিধান দিয়ে থাকে যে, এটা হালাল এবং এটা হারাম, এ ধরনের বিধান দিয়ে আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপ করো না।” ( ১১৬ আয়াত ) এ সঙ্গে মিথ্যা সাক্ষ্য ও মিথ্যা কসমও একই বিধানের আওতায় আসে। যেমন বিভিন্ন সহীহ হাদীসে নবী ﷺ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ

عُدِلَتْ شَهَادَةُ الزُّورِ بِالإِشْرَاكِ بِاللَّهِ

“মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়াকে আল্লাহর সাথে শিরক করার সমান পর্যায়ে রাখা হয়েছে।”

এরপর তিনি প্রমাণ হিসেবে এ আয়াতটি পেশ করেছেন। ইসলামী আইনে এ অপরাধটি শাস্তিযোগ্য। ইমাম আবু ইউসুফ (র) ও ইমাম মুহাম্মাদের (র) ফতোয়া হচ্ছে, যে ব্যক্তি আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্যদাতা প্রমাণিত হয়ে যাবে তার নাম চারদিকে প্রচার করে দিতে হবে এবং তাকে দীর্ঘকাল অন্তরীণ রাখার শাস্তি দিতে হবে। হযরত উমরও (রা.) একথাই বলেছেন এবং কার্যত এ পদক্ষেপই নিয়েছেন। মাকহূলের বর্ণনা হচ্ছে, হযরত উমর (রা.) বলেন,

يُضْرَبُ ظَهْرُهُ وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ ويسخم وجهه ويطال حبسه

“তার পিঠে চাবুক মারতে হবে, মাথা ন্যাড়া করে দিতে হবে, মুখ কালো করে দিতে হবে এবং দীর্ঘকাল অন্তরীণ রাখার শাস্তি দিতে হবে।”

আবদুল্লাহ ইবনে আমের নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ হযরত উমরের (রা.) আদালতে এক ব্যক্তির সাক্ষ্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তিনি তাকে একদিন প্রকাশ্য জনসমাগমের স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং ঘোষণা করে দেন যে, এ ব্যক্তি হচ্ছে অমুকের ছেলে অমুক এ মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে, একে চিনে রাখো। তারপর তাকে কারাগারে আটক করেন। বর্তমান কালে এ ধরনের লোকের নাম খবরের কাগজে ছেপে দিলেই ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে।

# এ উপমায় আকাশ বলতে বুঝানো হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক অবস্থাকে। এ অবস্থায় সে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো বান্দা হয় না এবং তার প্রকৃতি তাওহীদ ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে চেনে না। মানুষ যদি নবী প্রদত্ত পথনির্দেশনা গ্রহণ করে তাহলে সে জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি সহকারে এ প্রাকৃতিক অবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। এবং পরবর্তী পর্যায়ে সে নিচের দিকে নয় বরং উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু শিরক (এবং শুধুমাত্র শিরকই নয় বরং জড়বাদ ও নাস্তিক্যবাদও) গ্রহণ করার সাথে সাথেই সে নিজের প্রকৃতির আকাশ থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে যায়। তখন সে অনিবার্যভাবে দু’টি অবস্থার যে কোনটির মুখোমুখি হয়। একটি অবস্থা হচ্ছে, শয়তান ও বিপথে পরিচালনাকারী মানুষ, যাদেরকে এ উপমায় শিকারী পাখির সাথে তুলনা করা হয়েছে, তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং প্রত্যেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। আর দ্বিতীয় অবস্থাটি হচ্ছে, তার নিজের প্রবৃত্তির কামনা-বাসনা, তার আবেগ, অনুভূতি ও চিন্তাধারা, যাদরকে বাতাসের সাথে তুলনা করা হয়েছে, তাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং শেষ পর্যন্ত কোন গভীর খাদে নিক্ষেপ করে।

মূলে “সহীক” শব্দ বলা হয়েছে এটি ‘সাহক’ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। “সাহক” এর আসল মানে হচ্ছে পিষ্ট করা। কোন জায়গাকে এমন অবস্থায় “সাহীক” বলা হয় যখন তা এতবেশী গভীর হয় যে, তার মধ্যে কোন জিনিস গেলে তা টুকরো টুকরো বা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখানে চিন্তা ও নৈতিক চরিত্রের অধঃপতনকে এমন গভীর খাদের সাথে তুলনা করা হয়েছে যার মধ্যে পড়ে গিয়ে মানুষের সমস্ত কলকব্জা ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যায়।

# আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন এটি কোন কাজ হতে পারে। যেমন নামায, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি অথবা কোন জিনিসও হতে পারে যেমন মসজিদ, কুরবানীর জন্য হাজীদের সঙ্গে নেয়া উট ইত্যাদি।

সূরা আল মায়েদাহ বলেছেন।

# যে জিনিসটি কোন আকীদা-বিশ্বাস, মতবাদ, চিন্তাধারা, কর্মনীতি বা কোন ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে তাকে তার “শেআ’র” বলা হয়। কারণ সেটি তার আলামত, নিদর্শন বা চিহ্নের কাজ করে। সরকারী পতাকা, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রভৃতির ইউনিফরম, মুদ্রা, নোট ও ডাকটিকিট সরকারের “শেআ’র” বা নিশানীর অন্তর্ভুক্ত। সরকার নিজের বিভিন্ন বিভাগের কাছে বরং তার অধীনস্থ সকলের কাছে এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের দাবী জানায়। গীর্জা, ফাঁসির মঞ্চ ও ক্রুশ খৃস্টবাদের শেআ’র বা নিশানী। টিকি, পৈতা ও মন্দির ব্রাহ্মণ্যবাদের নিশানী। ঝুঁটি চুল, হাতের বালা ও কৃপাণ ইত্যাদি শিখ ধর্মের নিশানী। হাতুড়ি ও কাস্তে সমাজতন্ত্রের নিশানী। স্বস্তিকা আর্য বংশ-পূজার নিশানী। এ ধর্ম বা মতবাদগুলো তাদের নিজেদের অনুসারীদের কাছে এ নিদর্শনগুলোর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের দাবী করে। যদি কোন ব্যক্তি কোন ব্যবস্থার নিশানীসমূহের মধ্য থেকে কোন একটি নিশানীর অবমাননা করে, তাহলে এটি মূলত তার ঐ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে শত্রুতা পোষণ করার আলামত হিসেবে বিবেচিত হয়। আর ঐ অবমাননাকারী নিজে যদি ঐ ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে তার এ কাজটি তার নিজের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সমার্থক বলে গণ্য হয়।

“শাআইর” হচ্ছে “শে’আর” শব্দের বহুবচন। “শাআইরুল্লাহ” বলতে এমন সব আলামত বা নিশানী বুঝায় যা শিরক, কুফরী ও নাস্তিক্যবাদের পরিবর্তে নির্ভেজাল আল্লাহ আনুগত্য সূচক মতবাদের প্রতিনিধিত্ব করে। এ ধরনের আলামত ও চিহ্ন যেখানে যে মতবাদ ও ব্যবস্থার মধ্যে পাওয়া যাবে, প্রত্যেক মুসলমানকে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে শর্ত হচ্ছে তাদের মনস্তাত্বিক পটভূমিতে নির্ভেজাল আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্বের মানসিকতা বিরাজ করা চাই এবং সকল প্রকার মুশরিকী ও কুফরী চিন্তার মিশ্রণ থেকে তাদের মুক্ত হওয়া চাই। কোন ব্যক্তি, সে কোন অমুসলিম হলেও, যদি তার নিজের বিশ্বাস ও কর্মের মধ্যে এক আল্লাহর আরাধনা ও ইবাদাতের কোন অংশ থেকে থাকে তাহলে অন্তত সেই অংশে মুসলমানদের উচিত তার সাথে একাত্ম হওয়া এবং সেই অধ্যায়ে তার যে সমস্ত “শ’আর” নির্ভেজাল আল্লাহর ইবাদাত উপসনার আলামত হিসেবে বিবেচিত হবে সেগুলোর প্রতিও পূর্ণ মর্যাদা প্রদর্শন করা। এ বিষয়ে তার ও আমাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বরং সামঞ্জস্য ও সাদৃশ্য আছে সে আল্লাহর বন্দেগী করে কেন, এটা বিরোধের বিষয় নয়। বরং বিরোধের বিষয় হচ্ছে এই যে, আল্লাহর বন্দেগীর সাথে সে অন্য কিছুর বন্দেগীর মিশ্রণ ঘটাচ্ছে কেন?

মনে রাখতে হবে, আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এ নির্দেশ এমন এক সময় দেয়া হয়েছিল যখন আরবে মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যে যুদ্ধ চলছিল। মক্কা ছিল মুশরিকদের দখলে। আরবের প্রত্যক এলাকা থেকে মুশরিক গোত্রের লোকেরা হজ্জ ও যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কাবাগৃহের দিকে আসতো। এ জন্য অনেক গোত্রকে মুসলমানদের এলাকা অতিক্রম করতে হতো। তখন মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তারা মুশরিক হলেও তোমাদের এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করলেও তারা যখন আল্লাহর ঘরের দিকে যাচ্ছে তখন তাদেরকে বাধা দিয়ো না। হজ্জের মাসগুলোয় তাদের ওপর আক্রমণ করো না এবং আল্লাহর সমীপে নজরানা পেশ করার জন্য যে পশুগুলো তারা নিয়ে যাচ্ছে সেগুলোর ওপর হস্তক্ষেপ করো না। কারণ তাদের বিকৃত ধর্মে আল্লাহর আরাধনার যতটুকু অংশ বাকি রয়ে গেছে তা অবশ্যি সম্মান লাভের যোগ্য, অসম্মান লাভের নয়।

# এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয় অভ্যন্তরের তাকওয়ার ফল এবং মানুষের মনে যে কিছু না কিছু আল্লাহর ভয় আছে তা এরই চিহ্ন। তাইতো সে তাঁর নিদর্শনসমূহের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করছে। অন্য কথায় যদি কোন ব্যক্তি জেনে বুঝে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অমর্যাদা করে তাহলে এটা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তার মনে আল্লাহর ভয় নেই। অথবা সে আল্লাহকে স্বীকারই করে না কিংবা স্বীকার করলেও তাঁর মোকাবিলায় বিদ্রোহাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করতে এগিয়ে এসেছে।

# পূর্বের আয়াতে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এবং তাকে মনের তাকওয়ার আলামত হিসেবে চিহ্নিত করার পর এ বাক্যটি একটি বিভ্রান্তি দূর করার জন্য বলা হয়েছে। হাজীদের সাথে আনা কুরবানীর পশুও আল্লাহর নিদর্শনাবলী অন্তর্ভুক্ত। যেমন আরববাসীরা স্বীকার করতো এবং কুরআন নিজেই পরবর্তী পর্যায়ে বলছেঃ

وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ

“এবং এ সমস্ত কুরবানীর উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছি।”

এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান দেখানোর যে হুকুম উপরে দেয়া হয়েছে তার দাবী কি এই যে, কুরবানীর পশুগুলোকে যখন আল্লাহর ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাদেরকে কোনভাবে ব্যবহার করা যাবে না? তাদের পিঠে চড়া অথবা পিঠে জিনিসপত্র চাপিয়ে দেয়া কিংবা তাদের দুধ পান করা কি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান দেখাবার বিরোধী নয়? আরবের লোকেরা একথাই মনে করতো। তারা এ পশুগুলোকে একেবারেই আরোহীশূন্য অবস্থায় সুসজ্জিত করে নিয়ে যেতো। পথে তাদের থেকে কোন প্রকার লাভবান হওয়া তাদের দৃষ্টিতে ছিল পাপ। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য এখানে বলা হচ্ছে, কুরবানীর জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তোমরা এ পশুদের থেকে লাভবান হতে পারো। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিরোধী নয়। এ কথাটিই এ সম্পর্কিত হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) ও হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীস থেকে জানা যায়। সেখানে বলা হয়েছে, নবী ﷺ দেখলেন এক ব্যক্তি উটের লাগাম ধরে পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে এবং সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছে। তিনি বললেন, “ওর পিঠে সওয়ার হয়ে যাও” সে বললো, এটা হজ্জের সময় কুরবানী করার জন্য নিয়ে যাওয়া উট। বললেন, “তাতে কি, সওয়ার হয়ে যাও।”

মুফাসসিরগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা.), কাতাদাহ, মুজাহিদ, দ্বাহহাক ও আতা খোরাসানী এ মত পোষণ করেছেন যে, এ আয়াতে “একটি নির্দিষ্ট সময়” মানে হচ্ছে, “যতক্ষণ পর্যন্ত পশুকে কুরবানীর জন্য নির্বাচিত ও কুরবানীর পশু নামে আখ্যায়িত না করা হয়।” এ ব্যাখ্যা অনুযায়ী মানুষ এ পশুগুলো থেকে কেবলমাত্র ততক্ষণ পর্যন্ত লাভবান হতে পারে যতক্ষণ তারা তাদেরকে কুরবানীর পশু নামে আখ্যায়িত করে না। যখনই তারা তাদেরকে কুরবানীর পশু বানিয়ে আল্লাহর ঘরে নিয়ে যাবার নিয়ত করে তখনই তাদের থেকে আর কোন প্রকার লাভবান হবার অধিকার তাদের থাকে না। কিন্তু এ ব্যাখ্যা মোটেই সঠিক বলে মনে হয় না। প্রথমত, এ অবস্থায় ব্যবহার করার ও লাভবান হবার অনুমতি দেওয়াটাই অর্থহীন। কারণ কুরবানীর পশু ছাড়া অন্য পশুদের থেকে লাভবান হবার বা না হবার ব্যাপারে কবেই বা সন্দেহ দেখা দিয়েছিল যে, সু্স্পষ্ট অনুমতির মাধ্যমে তা দূর করার প্রয়োজন দেখা দেয়? তারপর আয়াত পরিষ্কার বলছে, এমন সব পশু ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে যাদের ওপর “আল্লাহর নিদর্শন” শব্দ প্রযুক্ত হয়। আর একথা সুস্পষ্ট যে, এটি কেবলমাত্র তখনই হতে পারে যখন তাদেরকে কুরবানীর পশু গণ্য করা হয়।

অন্য তাফসীরকারগণ যেমন উরওয়া ইবনে যুবাইর ও আতা ইবনে আবি রিবাহ বলেন, “নির্দিষ্ট সময়” অর্থ হচ্ছে “কুরবানীর সময়।” কুরবানীর পূর্বে এ কুরবানীর পশুগুলো সওয়ারীর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, এদের দুধও পান করা যায়, এদের বাচ্চাও গ্রহণ করা যেতে পারে এবং এদের পশম ও চুল ইত্যাদিও কাটা যেতে পারে। ইমাম শাফেঈ এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন। হানাফীগণ যদিও প্রথম ব্যাখ্যাটির সমর্থক তবুও সেখানে এতটুকু অবকাশ বের করেছেন যে, প্রয়োজনের শর্তে লাভবান হওয়া জায়েয।

# যেমন অন্য জায়গায় هَدْيًا بَالِغَ الْكَعْبَةِ (সূরা মায়েদাহ ৯৫ আয়াত) এর অর্থ এই নয় যে, কাবাঘরে বা মসজিদে হারামে কুরবানী করতে হবে বরং সেখানে এর অর্থ হচ্ছে হারামের সীমানার মধ্যে কুরবানী করতে হবে। কুরআনে যে কা’বা, বায়তুল্লাহ বা মসজিদে হারাম শব্দ উচ্চারণ করে এ থেকে সাধারণত শুধুমাত্র কাবার ইমারত নয় বরং মক্কার হারাম অর্থ গ্রহণ করে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।

# এ আয়াত থেকে দু’টি কথা জানা গেছে। এক, কুরবানী ছিল আল্লাহ প্রদত্ত সমস্ত শরীয়াতের ইবাদাত ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ বিশেষ। মানুষ যেসব পদ্ধতিতে গায়রুল্লাহর বন্দেগী করেছে সেগুলো সবই গায়রুল্লাহর জন্য নিষিদ্ধ করে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে দেয়াই হচ্ছে ইবাদাতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের অন্যতম মৌলিক দাবী। যেমন, মানুষ গায়রুল্লাহর সামনে রুকূ’ ও সিজদা করেছে। আল্লাহর শরীয়াত একে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। মানুষ গায়রুল্লাহর সামনে আর্থিক নযরানা পেশ করেছে। আল্লাহর শরীয়াত তাকে নিষিদ্ধ করে যাকাত ও সদকা আল্লাহর জন্য ওয়াজিব ঘোষণা করেছে। মানুষ বাতিল উপাস্যদের উদ্দেশ্যে তীর্থযাত্রা করেছে। আল্লাহর শরীয়াত কোন একটি স্থানকে পবিত্র বা বায়তুল্লাহ গণ্য করে তার যিয়ারত ও তাওয়াফ করার হুকুম দিয়েছে। মানুষ গায়রুল্লাহর নামে রোযা রেখেছে। আল্লাহর শরীয়াত তাকেও আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। ঠিক এমনিভাবে মানুষ তার নিজের মনগড়া উপাস্যদের জন্য পশু বলি করতে থেকেছে। আল্লাহর শরীয়াত পশু কুরবানীকেও গায়রুল্লাহর জন্য একেবারে হারাম এবং আল্লাহর জন্য ওয়াজিব করে দিয়েছে। দুই, এ আয়াত থেকে জানা গেছে, আল্লাহর নামে কুরবানী করাই হচ্ছে আসল জিনিস। কুরবানী কখন করা হবে, কোথায় করা হবে, কিভাবে করা হবে— এ নিয়মটির এ বিস্তারিত নিয়মাবলী মোটেই কোন মৌলিক বিষয় নয়। বিভিন্ন যুগের, জাতির ও দেশের নবীদের শরীয়াতে অবস্থার প্রেক্ষিতে এ বিস্তারিত বিষয়াবলীতে পার্থক্য ছিল। কিন্তু সবার মূল প্রাণশক্তি ও উদ্দেশ্য একই রয়েছে।

# মূলে مُخْبِتِينَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কোন একটি মাত্র শব্দের সাহায্যে এর অন্তর্নিহিত অর্থ পুরোপুরি প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এর মধ্যে রয়েছে তিনটি অর্থঃ অহংকার ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করে আল্লাহর সামনে অক্ষমতা ও বিনয়াবনত ভাব অবলম্বন করা। তাঁর বন্দেগী ও দাসত্বে একাগ্র ও একনিষ্ঠ হয়ে যাওয়া। তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট হওয়া।

# আল্লাহ কখনো হারাম ও নাপাক সম্পদকে নিজের রিযিক হিসেবে আখ্যায়িত করেননি, এর আগে আমরা একথা বলেছি। তাই আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যে পাক-পবিত্র রিযিক ও যে হালাল উপার্জন আমি তাদেরকে দান করেছি তা থেকে তারা খরচ করে। আবার খরচ করা মানেও সব ধরনের যা-তা খরচ নয় বরং নিজের ও নিজের পরিবার-পরিজনদের বৈধ প্রয়োজন পূর্ণ করা, আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অভাবীদেরকে সাহায্য করা, জনকল্যাণমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা এবং আল্লাহর কালেমা বুলন্দ করার জন্য আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করা। অযথা খরচ, ভোগ বিলাসিতার জন্য খরচ এবং লোক দেখানো খরচকে কুরআন “খরচ” গণ্য করছে না। বরং কুরআনের পরিভাষায় এ খরচকে অমিতব্যয়িতা ও ফজুল খরচ বলা হয়। অনুরূপভাবে কার্পণ্য ও সংকীর্ণমনতা সহকারে যা খরচ করা হয়, তার ফলে মানুষ নিজের পরিবার-পরিজনদেরকেও সংকীর্ণতার মধ্যে রাখে এবং নিজেও নিজের মর্যাদা অনুযায়ী প্রয়োজন পূর্ণ করতে পারে না আর এই সঙ্গে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী অন্যদেরকে সাহায্য করতেও পিছপা হয়। এ অবস্থায় মানুষ যদিও কিছু না কিছু খরচ করে কিন্তু কুরআনের ভাষায় এ খরচের নাম “ইনফাক” নয়। কুরআন একে বলে “কৃপণতা” ও মানসিক সংকীর্ণতা।

# মূলে بُدْنَ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এ শব্দটি শুধুমাত্র উটের জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নবী ﷺ কুরবানীর বিধানে গরুকেও উটের সাথে শামিল করেছেন। একটি উট কুরবানী করলে যেমন তা সাত জনের জন্য যথেষ্ট, ঠিক তেমনি সাত জন মিলে একটি গরু কুরবানী দিতে পারে। মুসলিমে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণিত একটি হাদীস রয়েছে। তাতে বলা হয়েছেঃ

أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ نَشْتَرِكَ فِى الأَضَاحِى الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ

“রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের হুকুম দিয়েছেন আমরা যেন কুরবানীতে উটের ক্ষেত্রে সাতজন এবং গরুর ক্ষেত্রে সাতজন শরীক হয়ে যাই।”

# তোমরা তা থেকে ব্যাপক হারে কল্যাণ লাভ করে থাকো। তোমাদের সেগুলো কেন করতে হবে সেদিকে এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মানুষ আল্লাহ প্রদত্ত যেসব জিনিস থেকে লাভবান হয় তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটিই আল্লাহর নামে কুরবানী করা উচিত, শুধুমাত্র নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য নয় বরং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মালিকানার স্বীকৃতি দেবার জন্যও, যাতে মানুষ মনে মনে ও কার্যত একথা স্বীকার করে যে, আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন এ সবই তাঁর। ঈমান ও ইসলাম হচ্ছে আত্মত্যাগের নাম। নামায ও রোযা হচ্ছে দেহ ও তার শক্তিসমূহের কুরবানীর নাম। যাকাত হচ্ছে আল্লাহ আমাদের বিভিন্নভাবে যেসব সম্পদ দিয়েছেন সেগুলোর কুরবানী। জিহাদ সময় এবং মানসিক ও শারীরিক যোগ্যতাসমূহের কুরবানী। আল্লাহর পথে যুদ্ধ প্রাণের কুরবানী। এসব এক এক প্রকার নিয়ামত এবং এক একটি দানের জন্য কৃতজ্ঞতা। এভাবে পশু কুরবানী করার দায়িত্বও আমাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে আমরা আল্লাহর এ বিরাট নিয়ামতের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেই। কারণ, তিনি তাঁর সৃষ্ট বহু প্রাণীকে আমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা তাদের পিঠে চড়ি। তাদের সাহায্যে চাষাবাদ ও মাল পরিবহন করি। তাদের গোশত খাই, দুধ পান করি এবং তাদের চামড়া, লোম, পশম, রক্ত, হাড় ইত্যাদি প্রত্যেকটি জিনিস নানাভাবে ব্যবহার করি।

# উল্লেখ করা যেতে পারে, উটকে দাঁড় করিয়ে যবেহ করা হয়। তার একটি পা বেঁধে দেয়া হয় তারপর কণ্ঠনালীতে সজোরে বল্লম মারা হয়। সেখান থেকে রক্তের একটি ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। তারপর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে গেলে উট মাটির ওপর পড়ে যায়। ‘সাওয়াফ’ বা দাঁড় করিয়ে রাখা বলতে এটিই বুঝানো হয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) মুজাহিদ, দ্বাহহাক প্রমূখ ব্যাখ্যাতাগণ এর এ ব্যাখ্যাই করেছেন। বরং নবী ﷺ থেকেও একথাই উদ্ধৃত হয়েছে। মুসলিম ও বুখারী হাদীস বর্ণনা করেছেন, ইবনে উমর (রা.) এক ব্যক্তিকে তার উটকে বসিয়ে রেখে কুরবানী করতে দেখেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি বলেন,

ابْعَثْهَا قِيَامًا مُقَيَّدَةً ، سُنَّةَ اَبِى الْقَاسِم صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

“পা বেঁধে তাকে দাঁড় করিয়ে দাও। এটা হচ্ছে আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।” আবু দাউদ জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে হাদীস উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবীগণ উটের বাম পা বেঁধে রেখে বাকি তিন পায়ের ওপর তাকে দাঁড় করিয়ে দিতেন। তারপর তার হলকুমে বর্শা নিক্ষেপ করতেন। কুরআন নিজেও এ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করেছেঃ إِذَا وَجَبَتْ جُنُوبُهَا “যখন তাদের পিঠ জমিতে ঠেকে যায়।” একথা এমন অবস্থায় বলা হয় যখন পশু দাঁড়িয়ে থাকে এবং তারপর জমির ওপর পড়ে যায়। অন্যথায় শুইয়ে দিয়ে কুরবানী দিয়ে কুরবানী করা অবস্থায় পিঠ তো আগে থেকেই জমির সাথে লেগে থাকে।

# এ বাক্যটি আবার একথা প্রমাণ করছে যে, আল্লাহর নাম উচ্চারণ না করে যবেহ করলে কোন পশু হালাল হয় না। তাই আল্লাহ “তাদেরকে যবেহ করো” না বলে বলছেন “তাদের ওপর আল্লাহর নাম নাও” এবং এর অর্থ হচ্ছে, পশু যবেহ করো। এ থেকে একথা আপনা আপনিই বের হয়ে আসে যে, ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহর নাম না নিয়ে পশু যবেহ করার কোন অবকাশ নেই। যবেহ করার সময় بِسْمِ اللَّهِ اللَّهِ أَكْبَرُ বলার পদ্ধতি এখান থেকেই গৃহীত হয়েছে। ৩৬ আয়াতে বলা হয়েছে فَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا “তাদের ওপর আল্লাহর নাম নাও।” আর ৩৭ আয়াতে বলা হয়েছে لِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ “যাতে আল্লাহ প্রদত্ত হিদায়াতের ভিত্তিতে তোমরা তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো।” হাদীসে কুরবানী করার সময় নাম উচ্চারণ করার বিভিন্ন পদ্ধতি উদ্ধৃত হয়েছে। যেমন

(১) بِسْمِ اللَّهِ واللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ “আল্লাহর নামে এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়, হে আল্লাহ! তোমারই সম্পদ এবং তোমারই জন্য হাজির।”

(২) اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا الله اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا الله اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ “আল্লাহ সবচেয়ে বড়, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, হে আল্লাহ! তোমারই সম্পদ এবং তোমারই জন্য হাজির।” إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ- إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ- لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ, اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ

(৩) “আমি একনিষ্ঠ হয়ে আমার চেহারা এমন সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই। অবশ্যই আমার নামায ও কুরবানী এবং আমার বাঁচা ও মরা সবই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই। আমাকে এরই হুকুম দেয়া হয়েছে এবং আমি আনুগত্যের শির নতকারীদের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ! তোমারই সম্পদ এবং তোমারই জন্য হাজির।”

# লেগে যাওয়ার মানে শুধু এতটুকু নয় যে, তারা মাটিতে পড়ে যায় বরং এ অর্থও এর অন্তর্ভুক্ত যে, তারা পড়ে গিয়ে স্থির হয়ে যায় অর্থাৎ তড়পানো বন্ধ করে দেয় এবং প্রাণবায়ু পুরোপুরি বের হয়ে যায়। আবু দাউদ, তিরমিযী ও মুসনাদে আহমদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণী উদ্ধৃত হয়েছে যে,

مَا قُطِعَ (اَوْ مَا بَانَ) مِنَ الْبَهِيمَةِ وَهِىَ حَيَّةٌ فَهِىَ مَيْتَةٌ

“এখনো জীবিত আছে এমন পশুর যে গোশত কেটে নেয়া হয় তা মৃত পশুর গোশত (এবং হারাম)।”

# কুরবানীর হুকুম কেন দেয়া হয়েছে, এখানে আবার সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এ চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়ে আল্লাহ‌ তোমাদেরকে যে নিয়ামত দান করেছেন এ কুরবানী হচ্ছে সে বিরাট নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

# জাহেলীয়াতের যুগে যেমন আরববাসীরা দেবদেবীর মূর্তিদের জন্য যেসব পশু কুরবানী দিতো সেগুলো নিয়ে গিয়ে আবার তাদেরই বেদীমূলে অর্ঘ দিতো, ঠিক তেমনি আল্লাহর নামে কুরবানী দেয়া জানোয়ারের গোশত কাবাঘরের সামনে এনে রাখতো এবং রক্ত তার দেয়ালে লেপটে দিতো। তাদের মতে, এ কুরবানী যেন আল্লাহর সামনে সংশ্লিষ্ট কুরবানীর গোশত ও রক্ত পেশ করার জন্য করা হতো। এ মূর্খতার পর্দা ছিন্ন করে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর সামনে যে আসল জিনিস পেশ করা হয় তা পশুর গোশত ও রক্ত নয় বরং তোমাদের তাকওয়া। যদি তোমরা নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে খালেস নিয়তে একমাত্র আল্লাহর জন্য কুরবানী করো, তাহলে এ প্রবণতা, নিয়ত ও আন্তরিকতার নযরানা তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে অন্যথায় রক্ত ও গোশত এখানেই থেকে যাবে। একথাই হাদীসে নবী ﷺ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلاَ الى الْوَانِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ-

“আল্লাহ তোমাদের চেহারা-সুরাত ও তোমাদের রঙ দেখেন না বরং তিনি দেখন তোমাদের মন ও কার্যকলাপ।”

# অন্তরে তাঁর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নাও এবং কাজে তার প্রকাশ ঘটাও ও ঘোষণা দাও। এরপর কুরবানীর হুকুমের উদ্দেশ্য ও কারণের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। পশুদের ওপর আল্লাহ মানুষের কর্তৃত্ব দান করেছেন, শুধুমাত্র এ নিয়ামতের বিনিময়ে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্যই কুরবানী ওয়াজিব করা হয়নি। বরং এজন্য ওয়াজিব করা হয়েছে যে, এগুলো যাঁর পশু এবং যিনি এগুলোর ওপর আমাদের কর্তৃত্ব দান করেছেন, আমরা অন্তরে ও কাজে-কর্মেও তাঁর মালিকানা অধিকারের স্বীকৃতি দেবো, যাতে আমরা কখনো ভুল করে একথা মনে করে না বসি যে, এগুলো সবই আমাদের নিজেদের সম্পদ। কুরবানী করার সময় যে বাক্যটি উচ্চারণ করা হয় তার মধ্য দিয়ে এ বিষয়বস্তুটিরই প্রকাশ ঘটে। যেমন সেখানে বলা হয় اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ হে আল্লাহ! তোমারই সম্পদ এবং তোমারই জন্য উপস্থিত।

এক্ষেত্রে একথা জেনে নেয়া উচিত যে, এ প্যারায় কুরবানীর যে হুকুম দেয়া হয়েছে তা কেবলমাত্র হাজীদের জন্য নয় এবং শুধুমাত্র মক্কায় হজ্জের সময় কুরবানী করার জন্য নয় বরং প্রত্যেক সমর্থ মুসলমান যেখানেই সে থাকুক না কেন তার জন্য ব্যাপকভাবে এ হুকুম দেয়া হয়েছে, যাতে সে পশুদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করার নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করার দায়িত্ব পালন করতে এবং এই সঙ্গে নিজের স্থানে হাজীদের অবস্থার সাথে শরীক হয়ে যেতেও পারে। হজ্জ সম্পাদন করার সৌভাগ্য না হলেও কমপক্ষে হজ্জের দিনগুলোতে আল্লাহর ঘরের সাথে জড়িত হয়ে হাজীগণ যেসব কাজ করতে থাকেন সারা দুনিয়ার মুসলমানরা সেসব কাজ করতে থাকবে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে এ বিষয়টির বিস্তারিত আলোচনা এসেছে।

এছাড়াও অসংখ্য নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকেও একথা প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী ﷺ মদীনা তাইয়্যেবায় অবস্থানের সমগ্র সময়ে নিজেই প্রত্যেক বছর বকরা ঈদের সময় কুরবানী করতেন এবং তাঁরই সুন্নাত থেকে মুসলমানদের মধ্যে এ পদ্ধতির প্রচলন হয়। মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজায় হযরত আবু হুরাইরার (রা.) এ বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছেঃ

مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلاَ يَقْرَبَنَّ مُصَلاَّنَا “যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখার পরও কুরবানী করে না তার আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছে না আসা উচিত।”

এ হাদীসটির সকল রাবীই সিকাহ তথা নির্ভরযোগ্য। মুহাদ্দিসগণ শুধুমাত্র রেওয়ায়াতটির মারফূ’ (অর্থাৎ যার বর্ণনার ধারাবাহিকতা সরাসরি নবী ﷺ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে) অথবা মওকূফ (যার বর্ণনার ধারাবাহিকতা সাহাবী পর্যন্ত পৌঁছে শেষ হয়ে গেছে) হবার ব্যাপারে দ্বিমত ব্যক্ত করেছেন। (হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে কোন মতভেদ হয়নি) তিরমিযীতে ইবনে উমর (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ

أَقَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّى

“নবী ﷺ মদীনায় দশ বছর থাকেন এবং প্রত্যেক বছর কুরবানী করতে থাকেন।” বুখারীতে হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছেঃ مَنْ كَانَ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلاَةِ فَلْيُعِدْ وَمَنْ ذَبَحَ بَعْدَ الصَّلاَةِ فَقَدْ تَمَّ نُسُكُهُ ، وَأَصَابَ سُنَّةَ الْمُسْلِمِينَ

“যে ব্যক্তি নামাযের আগে যবেহ করলো তার আবার কুরবানী করা উচিত। আর যে ব্যক্তি নামাযের পরে কুরবানী করে তার কুরবানী পূর্ণ হয়েছে এবং সে মুসলমানদের পথ পেয়ে গেছে।”

আর একথা সবার জানা যে, কুরবানীর দিন মক্কায় এমন কোন নামায হতো না যার পূর্বে কুরবানী করা মুসলমানদের সুন্নাতের বিরোধী হতো এবং পরে করা হতো তার অনুকূল। কাজেই নিশ্চিতরূপেই এ উক্তি হজ্জের সময় মক্কায় নয় বরং মদীনায় করা হয়।

মুসলিমে জাবের ইবনে আবদুল্লাহর (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, নবী ﷺ মদীনায় বকরা ঈদের নামায পড়ান এবং কোন কোন লোক তিনি কুরবানী করে ফেলেছেন মনে করে নিজেদের কুরবানী করে বসে। এ অবস্থা দেখে তিনি হুকুম দেন, যারা আমার পূর্বে কুরবানী করেছে তাদের আবার কুরবানী করতে হবে।

কাজেই একথা সকল প্রকার সংশয়-সন্দেহের ঊর্ধ্বে যে, বকরা ঈদের দিন সাধারণ মুসলমানরা সারা দুনিয়ায় যে কুরবানী করে এটা নবী ﷺ প্রবর্তিত সুন্নাত। তবে এখানে এ কুরবানী ওয়াজিব অথবা শুধুমাত্র সুন্নাত নিছক এ বিষয়েই মতবিরোধ দেখা যায়। ইবরাহীম নাখঈ, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম মুহাম্মাদ এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আবু ইউসুফও একে ওয়াজিব মনে করতেন। কিন্তু শাফেঈ ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে এটা শুধুমাত্র মুসলমানদের সুন্নাত। সুফিয়ান সাওরীও বলতেন, কেউ কুরবানী না দিলে কোন ক্ষতি নেই। তবুও উম্মতে মুসলিমার কোন একজন আলেমও একথা বলেন না যে, মুসলমানরা একমত হয়ে যদি তা পরিহার করে তবুও কোন ক্ষতি নেই। এ নতুন কথা শুধু আমাদের যুগের কোন কোন লোকের উর্বর মস্তিষ্কের উদ্ভাবন যাদের জন্য নিজের প্রবৃত্তিই কুরআন এবং প্রবৃত্তিই সুন্নাত।

 

তাফসীরে‌ ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

২৬-৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:

(وَإِذْ بَوَّأْنَا لِإِبْرَاهِيْمَ):

আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে যারা কাবা ঘরে মূর্তি পূজা করত তাদেরকে লক্ষ্য করে বলেছেন, তোমরা কাবাগৃহে মূর্তিপূজা করছ, যারা ঐ গৃহে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করছ, তোমরা জেনে রাখ! আমি ইবরাহীম (عليه السلام) -কে নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম কাবাগৃহের স্থান আর সেখানে তার বংশধরের জন্য বসতি স্থাপন করলাম। তখন তাকে এ নির্দেশ দিলাম, তুমি এ ঘর তাক্বওয়া ও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের ভিত্তির ওপর নির্মাণ কর। ফলে ইবরাহীম (عليه السلام) ও তাঁর সন্তান নাবী ইসমাঈল তা নির্মাণ করেছিলেন। এ থেকে বুঝা যায়, নূহ (عليه السلام)-এর প্লাবনে কাবা ঘরের ভিত্তি ভেঙ্গে গিয়েছিল। আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তিনি যেন এ গৃহকে তাওয়াফকারী, সালাত আদায়কারী, রুকু ও সাজদাকারীদের জন্য শিরক, অপবিত্রতা, বিদ‘আত থেকে মুক্ত রাখেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَعَهِدْنَآ إِلٰٓي إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ أَنْ طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّا۬ئِفِيْنَ وَالْعٰكِفِيْنَ وَالرُّكَّعِ السُّجُوْدِ)

“আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলের নিকট এ অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ই‘তিক্বাফকারী, রুকূকারী এবং সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রেখ।” (সূরা বাক্বারাহ ২:১২৫)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি তাকে আরো নির্দেশ দিলাম যে, তুমি হজ্জের ঘোষণা মানুষের মধ্যে দিয়ে দাও যে, তারা যেন দূর-দূরান্ত থেকে এসে এ ঘরের তাওয়াফ করে। আর তারা তথায় আসবে পায়ে হেঁটে অথবা সাওয়ারীর ওপর আরোহণ করে। এর সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা এ কথাও বলেছেন যে, এ স্থানে উপস্থিত হওয়াতে তাদের কোন ক্ষতি নেই বরং এতে রয়েছে তাদের জন্য কল্যাণ। এ কল্যাণ দীনি হতে পারে। যেমন সেখানে গিয়ে মানুষ সালাত, তাওয়াফ ও হজ্জ-উমরার কার্যাবলী দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করবে। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে:

ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার নিকট এমন কোন দিনের আমল নেই যা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং অধিক প্রিয় (হাজ্জের) দশ দিনের আমলের চেয়ে। সুতরাং তোমরা বেশি বেশি করে

اَللّٰهُ أَكْبَرُ ، لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ এবং اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ

পাঠ কর। (মুসানাদ আহমাদ হা: ৫৪৪৬)

আবার এ কল্যাণ দুনিয়াবীও হতে পারে। যেমন হাজ্জের মৌসুমে হজ্জ করতে গিয়ে তার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জন করা। কেননা হাজ্জের মৌসুমে ব্যবসা করা বৈধ।

(أَيَّامٍ مَّعْلُوْمٰتٍ)

দ্বারা মূলত যিলহজ্জ মাসের দশ তারিখ এবং পরবর্তী তিন দিনকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এগুলো হল: কুরবানীর দিন এবং পরবর্তী তিন দিন। (তাফসীর মুয়াস্সার)

(بَهِيْمَةِ الْأَنْعَامِ)

দ্বারা মূলত উট, গরু, ছাগল এবং ভেড়া বা দুম্বাকে বুঝানো হয়েছে। এদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার নাম স্মরণ করা বলতে বুঝানো হয়েছে যে, তাদের জবাইকালে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে জবাই করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলার নাম ব্যতীত অন্যের নামে জবাই করলে তা হালাল হবে না।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(فَكُلُوْا مِنْهَا وَأَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَالْمُعْتَرَّ)

“অতঃপর তোমরা তা হতে আহার কর‎ এবং আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্ত‎কে ও বিনয়ের সাথে ভিক্ষাকারীকে।” এখান থেকে অনেকে দলীল গ্রহণ করেন যে, কুরবানীর গোশত তিনভাগ করতে হবে। একভাগ নিজের জন্য, দ্বিতীয়ভাগ আত্মীয়-স্বজনের জন্য এবং তৃতীয়ভাগ ফকির-মিসকীনদের জন্য। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এরূপ কোন নির্দেশই জারী করে দেননি। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি তোমাদের তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশত রাখতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমাদেরকে অনুমতি দিচ্ছি তোমরা খাও, প্রয়োজন মত জমা রাখ। অন্য বর্ণনায় এসেছেন খাও, সদাকা কর এবং জমা রাখ। অন্য আরেকটি বর্ণনায় বলা হয়েছেন খাও, খাওয়াও ও সদকা কর। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫৬৯, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭১)

সঠিক মত এই যে, কোন আয়াত বা সহীহ হাদীসে এরূপ ভাগাভাগি করতেই হবে এমনটি প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই কেউ যদি ভাগ নাও করে তাতে সে গুনাহগার হবে না। মূলত দেখা হবে তার অন্তরে কী ছিল। তাই আমাদেরকে প্রথমত আমাদের নিয়ত ঠিক করা একান্ত কর্তব্য, তা না হলে কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা হাজীদেরকে অনুমতি দিলেন তারা যেন তাদের অপরিচ্ছন্নতা দূর করে। অর্থাৎ যিলহজ্জের ১০ তারিখে জামরাতুল কুবরায় পাথর মারার পর হাজীরা প্রাথমিকভাবে হালাল হয়ে যায়। তার পর ইহরাম খুলে ফেলে। এক কথায় স্ত্রী সহবাস ব্যতীত ঐ সব কাজ যা ইহরাম অবস্থায় হারাম ছিল তা হালাল হয়ে যায়। আর অপরচ্ছিন্নতা বলতে চুল, নখ কেটে নিয়ে তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার করা, সেলাই করা কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি। আর যদি কেউ কোন মানত করে থাকে তাহলে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর তারা যেন সর্বশেষ তাওয়াফ তাওয়াফে ইফাযাহ করে যাকে তাওয়াফে যিয়ারাহও বলা হয়। এটি হাজ্জের একটি রুকন যা আরাফায় অবস্থান ও জামরাতুল কুবরায় পাথর মারার পর করা হয়।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এগুলোই হল, (যা আলোচনা করা হয়েছে) আল্লাহ তা‘আলার বিধান। যে এগুলো পালন করবে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য সে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার নিকট উত্তম ব্যক্তি বলে গণ্য হবে। হাজ্জের এ সকল বিধি-বিধান সূরা বাক্বারাহ ও সূরা আল ইমরানে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তারা যেন চতুষ্পদ জন্তু যা হালাল করা হয়েছে তা ভক্ষণ করে আর যা হারাম তা থেকে বিরত থাকে। এ সম্পর্কে সূরা মায়িদায়ও আলোচনা করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলা এ নির্দেশও দিয়েছেন, তারা যেন অপবিত্র জিনিস যেমন মূর্তিপূজো থেকে এবং মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّـيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوْا بِاللّٰهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِه۪ سُلْطٰنًا وَّأَنْ تَقُوْلُوْا عَلَي اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ)

“বল:‎ নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ ও অন্যায় বিরোধিতা এবং কোন কিছুকে আল্লাহর সাথে শরীক করা যার কোন প্রমাণ তিনি প্রেরণ করেননি, এবং আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:৩৩)

হাদীসে বলা হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বলেন: আমি কি তোমাদেরকে কবীরা গুনাহ সম্পর্কে সতর্ক করব না? সাহাবারা উত্তরে বললেন: হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করা, ২. পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া। ঐ সময় তিনি হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এ কথা বলার সময় তিনি সোজা হয়ে বসলেন: অতঃপর বললেন: জেনে রেখে যে, সেটি হল মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। তিনি এ কথা বারবার বলতে থাকেন শেষ পর্যন্ত সাহাবীরা বলেন, আমরা বলতে লাগলাম, যদি তিনি চুপ থাকতেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৫৪, সহীহ মুসলিম হা: ৮৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঙ্গে শির্ককারীর একটি উপমা পেশ করেছেন, তার দৃষ্টান্ত যে আমার সঙ্গে শরীক স্থাপন করে এমন যে, সে যেন আকাশ হতে পড়ল, অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে গেল এক দূরবর্তী স্থানে।) উক্ত দুই অবস্থাতেই যেমন মৃত্যু বা ধ্বংস অবধারিত, ঠিক অনুরূপ যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে সে সুস্থ প্রকৃতি ও আন্তরিক পবিত্রতার দিক দিয়ে পবিত্রতা ও নির্মলতার এক উচ্চাসনে আসীন হয়। কিন্তু যখনই সে শির্কের পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে তখনই সে নিজেকে উঁচু হতে একদম নীচে, পবিত্রতা হতে অপবিত্রতায় এবং নির্মলতা হতে কর্দমাতে নিক্ষেপ করে। যার ফলে সে ধ্বংস হয়।

شعائر এটি شعيرة এর বহুবচন। অর্থ বিশেষ চিহ্ন বা নিদর্শন। অর্থাৎ ইসলামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধান যার দ্বারা প্রকাশ পায় এবং অন্য ধর্মাবলম্বী হতে তাকে সহজে পৃথকভাবে চেনা যায়।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা চতুষ্পদ জন্তুর উপকারিতার কথা বর্ণনা করেছেন যা আমরা ইতোপর্বে সূরা নাহলে আলোচনা করেছি।

المخبتين অর্থ হল متواضنعين لله অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার জন্য বিনয়ী হয় তাদের مخبتين বলা হয়।

بدن শব্দটি بدنة এর বহুবচন, এর অর্থ হল: মোটা-তাজা দেহবিশিষ্ট পশুটা। এ উটগুলো হল আল্লাহ তা‘আলার দ্বীনের যে সকল নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নিদর্শন।

صواف শব্দটি مصفوفة অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায়। কেননা উটকে দাঁড়ানো অবস্থায় নহর করা হয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
২. হাজ্জের কিছু বিধি-বিধান জানতে পারলাম।
৩. মিথ্যা কথা বলা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাকতে হবে।
৪. মূর্তি বা এ জাতীয় কোন কিছুরই পূজা করা যাবে না।
৫. প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই কুরবানীর বিধান ছিল।
৬. মু’মিনদের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে প্রকম্পিত হয়।
৭. কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা জরুরী নয়, তবে ভাগ করা উত্তম।
৮. যারা প্রকৃত অর্থে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম।
৯. শির্রকারীর অবস্থা কেমন হবে তা জানা গেল।

কুরবানী করা একটি ইবাদত যা একমাত্র আল্লাকে খুশি করার জন্য করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে না হয়ে যদি মানুষের প্রশংসা পাওয়া, এভাবে যে, অমুক এত বড় কুরবানী করছে, অমুক এতটা কুরবানী করেছে বা এত টাকার পশু কুরবানী দিয়েছে বা না করলে মানুষ কী বলবে এ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা কুরবানী হবে না, সে ব্যক্তির কেবল গোশত খাওয়া হবে। কারণ তার উদ্দেশ্য হল মানুষের প্রশংসা পাওয়া। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: তোমরা কত বড় কুরবানী করছো, কত দামের কুরবানী করছো সেটা দেখার বিষয় নয়, কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে কুরবানীর গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও পৌঁছে না, বরং তোমরা কোন্ উদ্দেশ্যে কুরবানী করেছ সেটা দেখার বিষয়। মানুষের প্রশংসা পাওয়া বা মানুষের নিন্দা থেকে বাঁচার জন্য কুরবানী করেছো, নাকি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য কুরবানী করেছো। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করলে তা কবূল হবে অন্যথায় হবে না। তাই কুরবানীসহ সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলাকে খুশী করার জন্য করতে হবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাযার, দরগাহ, ওরশ ও পীর বাবার জন্য উৎসর্গ করা বা তাদের খুশীর জন্য করা যাবে না, করলে শির্ক হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ إِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمٰتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ)

“বল:‎ ‘আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ শুধুমাত্র জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’’ (সূরা আন‘আম ৬:১৬২)

কুরবানীর ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার অন্যতম একটি বহিঃপ্রকাশ হল কুরবানী করে শুধু নিজে না খাওয়া বরং আত্মীয়-স্বজন, গরীব ও মিসকিনদের হক আদায় করা। যেমন সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ اللّٰهَ لَا يَنْظُرُ إِلَي صُوَرِكُمْ وَأَمْوَالِكُمْ، وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَي قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُمْ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের অন্তর এবং আমলের দিকে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৬৪)

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করতে হলে প্রথমে অন্তর বিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ করতে হবে। অন্যথায় মোটা তাজা কুরবানী এবং পাহাড় সমান আমল করেও কোনই লাভ হবে না।

(سَخَّرَهَا لَكُمْ)

অর্থাৎ এ বিশাল বড় বড় প্রাণী তোমাদের অধীন করে দিয়ে তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। নচেৎ এ বড় প্রাণীগুলো যারা তোমাদের চেয়ে শক্তিশালী তাদেরকে কিভাবে জবাই করতে পারতে।

(لِتُكَبِّرُوا اللّٰهَ) ‘তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর’‎ পূর্বে ৩৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

এসব পশু জবাই করার সময় যাতে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারণ কর। এখানে বললেন যাতে আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এ দুয়ের সমন্বয় করে ইবনু উমার (রাঃ) বলেন: যখন কুরবানী করবে তখন বলবে: (بِسْمِ اللّٰهِ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ) আনাস (رضي الله عنه) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিশ্রিত রঙের শিংবিশিষ্ট দুটি দুম্বা কুরবানী করলেন। বর্ণনাকারী বলছেন: আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি স্বহস্তে তা জবাই করছেন, আরো দেখেছি, জবাই করার সময় তাঁর পা পশুর পার্শ্বে রাখা ছিল। আল্লাহ তা‘আলার নাম নিলেন এবং তাকবীর বলে জবাই করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫৬৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৬৬)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য পেতে হলে নিয়ত বিশুদ্ধ করতে হবে।
২. অন্যকে খুশী করার জন্য কোন আমল করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না।
৩. কোন মাযার, দরগাহ, ওলী-আওলিয়া ও পীর বাবার নামে বা তাদের সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করলে বা পশু দান করলে শির্ক হবে।

Leave a Reply