أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬২)
[وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالاَْبْصَارَ وَالاَْفْيِدَةَ
তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় সৃষ্টি করেছেন;]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
পারা:১৮
৭৬-৮৩ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৭৬
وَ لَقَدۡ اَخَذۡنٰہُمۡ بِالۡعَذَابِ فَمَا اسۡتَکَانُوۡا لِرَبِّہِمۡ وَ مَا یَتَضَرَّعُوۡنَ ﴿۷۶﴾
তাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি তাদের দুঃখ-কষ্টে ফেলে দিয়েছি, তারপরও তারা নিজেদের রবের সামনে নত হয়নি এবং বিনয় ও দ্বীনতাও অবলম্বন করে না।
২৩:৭৭
حَتّٰۤی اِذَا فَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِیۡدٍ اِذَا ہُمۡ فِیۡہِ مُبۡلِسُوۡنَ ﴿٪۷۷﴾
তবে যখন অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যে, আমি তাদের জন্য কঠিন আযাবের দরজা খুলে দেবো তখন অকস্মাত তোমরা দেখবে যে, এ অবস্থায় তারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে হতাশ হয়ে পড়েছে।
২৩:৭৮
وَ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۷۸﴾
তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় সৃষ্টি করেছেন; তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো!
২৩:৭৯
وَ ہُوَ الَّذِیۡ ذَرَاَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ اِلَیۡہِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۷۹﴾
তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্রিত করা হবে।
২৩:৮০
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ وَ لَہُ اخۡتِلَافُ الَّیۡلِ وَ النَّہَارِ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۸۰﴾
তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান, আর তাঁরই অধিকারে রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তন; তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
২৩:৮১
بَلۡ قَالُوۡا مِثۡلَ مَا قَالَ الۡاَوَّلُوۡنَ ﴿۸۱﴾
কিন্তু তারা সে একই কথা বলে যা তাদের পূর্বের লোকেরা বলেছিল।
২৩:৮২
قَالُوۡۤا ءَ اِذَا مِتۡنَا وَ کُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَ اِنَّا لَمَبۡعُوۡثُوۡنَ ﴿۸۲﴾
তারা বলে, ‘আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি আমরা পুনরুত্থিত হব?
২৩:৮৩
لَقَدۡ وُعِدۡنَا نَحۡنُ وَ اٰبَآؤُنَا ہٰذَا مِنۡ قَبۡلُ اِنۡ ہٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۸۳﴾
আমরা এ প্রতিশ্রুতি অনেক শুনেছি এবং আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারাও শুনে এসেছে। এগুলো নিছক পুরাতন কাহিনী ছাড়া আর কিছুই নয়!
৭৬-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৭৬-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَلَقَدْ أَخَذْنٰهُمْ بِالْعَذَابِ…) শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল: হে মুহাম্মাদ! আমি তোমাকে আল্লাহ তা‘আলার শপথ ও আত্মীয়তার সম্পর্কের মাধ্যম দিয়ে বলছি যে, আমরা গোবর ও রক্ত খেতে শুরু করে দিয়েছি। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মুসতাদরাক হাকিম ; ২:৩৯৪)
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, মানুষকে যখন কোন শাস্তি গ্রাস করে তখন তার উচিত আল্লাহ তা‘আলার কাছে নতি শিকার করা, তাঁর কাছে বিনয়ী হওয়া। কিন্তু তারা তা করে না। বরং যখন বিপদ চূড়ান্তভাবে এসে যায় তখন কল্যাণ থেকে নিরাশ হয়ে যায়। অথচ ইতোপূর্বে ছোট ছোট আযাব দ্বারা সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ أَرْسَلْنَآ إِلٰٓي أُمَمٍ مِّنْ قَبْلِكَ فَأَخَذْنٰهُمْ بِالْبَأْسَا۬ءِ وَالضَّرَّا۬ءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُوْنَ - فَلَوْلَآ إِذْ جَا۬ءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُوْا وَلٰكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطٰنُ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ)
“তোমার পূর্বেও আমি বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; অতঃপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা পীড়িত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। আমার শাস্তি যখন তাদের ওপর আসল তখন তারা কেন বিনীত হল না? অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল।” (সূরা আন‘আম ৬:৪২-৪৩) অনুরূপ সূরা আ‘রাফের ৯৪-৯৫ নং আয়াতেও বলা হয়েছে।
সুতরাং প্রতিটি ব্যক্তির উচিত, যখনই কোন অন্যায় করবে তখন সাথে সাথে তাওবাহ করা। কেননা যদি সে তাওবাহ না করে আর গুনাহ করতেই থাকে তাহলে যখন আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসে যাবে তখন আর শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
(وَهُوَ الَّذِيْٓ أَنْشَأَ لَكُمْ)
‘তিনিই তোমাদের জন্য কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ সৃষ্টি করেছেন’ এ সম্পর্কে সূরা নাহলের ৭৮ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, তিনিই সকলকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছেন, প্রত্যেকেই নিজ আয়ূ পর্যন্ত বসবাস করবে অতঃপর যখন আয়ূ শেষ হয়ে যাবে তখন তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ هُوَ الَّذِيْ ذَرَأَكُمْ فِي الْأَرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُوْنَ - وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰي هٰذَا الْوَعْدُ إِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ)
“বল: তিনিই পৃথিবীব্যাপী তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। আর তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও (তবে বল:) এই প্রতিশ্র“তি কবে বাস্তবায়িত হবে?” (সূরা মুলক ৬৭:২৪-২৫)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। এ ক্ষেত্রে কারো কোন ক্ষমতা নেই। হায়াত-মওতের মালিক একমাত্র তিনি। দিবা-রাত্রির পরিবর্তন তিনিই করে থাকেন। তিনি চাইলে ২৪ ঘন্টাই দিন রাখতে পারতেন, আবার চাইলে ২৪ ঘন্টাই রাত রাখতে পারতেন। কিন্তু বান্দার প্রতি তাঁর যে দয়া, তিনি তা করেননি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَهُوَ الَّذِيْٓ أَحْيَاكُمْ ز ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ط إِنَّ الْإِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ)
“এবং তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন; অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পুনরায় তোমাদেরকে জীবন দান করবেন। মানুষ তো অতি মাত্রায় অকৃতজ্ঞ।” (সূরা হজ্জ ২২:৬৬) আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللّٰهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إلٰهٌ غَيْرُ اللّٰهِ يَأْتِيْكُمْ بِلَيْلٍ تَسْكُنُوْنَ فِيْهِ ط أَفَلَا تُبْصِرُوْنَ)
“বল: ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ তা‘আলা যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত এমন কোন্ মা‘বূূদ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না?” (সূরা কাসাস ২৮:৭২)
অতএব প্রমাণ দেয়ার পরও তারা পূববর্তীদের মত কথা বলে, পূর্বের অবাধ্য লোকেরা যে পথে চলেছে তারাও সে পথের পথিক। তারা বলত, আমরা কি মাটিতে পচে গলে যাওয়ার পরেও পুনরায় জীবিত হব। এটা অসম্ভব, আমাদের বাপ-দাদাদেরকেও এরূপ প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল, কই তাদেরকে তো জীবিত করা হল না। যেমন তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَه۫ ط قَالَ مَنْ يُّحْيِ الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ)
“আর সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ বর্ণনা করে, অথচ সে নিজের জন্মের কথা ভুলে যায়। সে বলেঃ কে জীবিত করবে এ হাড়গুলোকে, যখন তা পচে গলে যাবে?” (সূরা ইয়াসীন: ৩৬:৭৮) অতএব আখিরাতের ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখা জরুরী।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শাস্তি আসার পূর্বে তাওবাহ করতে হবে। শাস্তি এসে গেলে তখন আর হায়-হুতাশ করে কোন লাভ হবে না।
২. জীবন ও মৃত্যুদানকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৩. পুনরুত্থান দিবস সত্য এবং মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে।
৪. কুরআন কোন কল্পকাহিনী নয়, বরং এটি সত্যসহ প্রেরিত কিতাব।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন্য বলেছেন :-
# মূলে—–শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। হতাশা শব্দটি এর পূর্ণ অর্থ প্রকশ করে না।———-শব্দের কয়েকটি অর্থ হয়। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়া, ভয়ে ও আতংকে নিথর হয়ে যাওয়া, দুঃখে ও শোকে মনমরা হয়ে যাওয়া, সবদিক থেকে নিরাশ হয়ে সাহস হারিয়ে ফেলা এবং এরই একটি দিক হতাশা ও ব্যর্থতারফলে মরিয়া (esperate) হয়ে ওঠা। এ কারণেই শয়তানের নাম ইবিলস রাখা হয়েছে। এ নামের মধ্যে যে অর্থ প্রচ্ছন্ন রয়েছে তা হলো, হতাশা ও নিরাশার (Frustration) ফলে তার আহত অহমিকা এত বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে যে, এখন সে প্রাণের মায়া ত্যাগ করে মরণ খেলায় নামতে এবং সব ধরণের অপরাধ অনুষ্ঠানে উদ্যত হয়েছে।
# হতভাগারা! এ চোখ, কান, মন ও মস্তি্ক তোমাদের কি এ জন্য দেয়া হয়েছে যে, পশুরা এদেরকে যেব কাজে লাগায় তোমরাও এদেরকে সেসব কাজে লাগাবে। তোমরা কেবল পশু মতো দেহ ও প্রবৃত্তির দাবী পূরণ করার উপায় তালাশ করতে এবং সবসময় নিজের জীবনমান উন্নত করার কৌশল চিন্তা করতে থাকবে, এগুলোর উপযোগিতা কি শুধুএতটুকই? তোমাদের মানুষ হিসেবে তৈরী করা হয়েছিল কিন্তু তোমরা নিছক পশু হয়ে রইলে, এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা কি আর কিছু হতে পারে? যেসব চোখ দিয়ে সবকিছু দেখা কিন্তু শুধুমাত্র সত্যের দিকে পথ নির্দেশক চিহ্নগুলো দেখা যায় না, যেসব কান দিয়ে সবকিছু শোনা যায় কিন্তু একটি শিক্ষণীয় কথাই শুধু শোনা যায় না যে, যেসব মন-মস্তিষ্ক দিয়ে সবকিছু চিন্তা করা যায় চিন্তা শুধু এটুকু চিন্তা করা যায় না যে, আমি এ অস্তিত্ব কেমন করে লাভ করলাম, কেন লাভ করলাম এবং আমার জীবনের লক্ষ কি, সেসব চোখ, কান ও মন-মগজ যদি একটি গরুর পরিবর্তে একটি মানুষের দেহ কাঠামোতে অবস্থান করে তাহলে অবশ্যই আফসোস করতে হয়।
# জ্ঞানের উপরকণগুলো (ইন্দ্রিয়সমূহ ও চিন্তাশক্তি(ও তাদের সঠিক প্রয়োগের ব্যাপারে মানুষের গাফলতি সম্পর্কে কতর্ক করে দেবার পর এখন কতকগুলো নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। এসব নিদর্শন খোলা চোখে প্রত্যক্ষ করা হলো প্রত্যক্ষ করার পর সঠিকভাবে যুক্তি প্রদান করা হলে অথবা কান খোলা রেখে কোন ন্যায়সঙ্গত যুক্তির কথা শোনা হলে মানুষ সত্যে পৌঁছে যেতে পারে। সে সাথে একথাও জানতে পারে যে, এ অস্তিত্ব জগতটি খোদা বিহীন অথবা বহু খোদার নির্মিত নয়। বরং একটি তাওহীদের তথা একক আল্লাহর সৃষ্টির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আর একথাও জানতে পারে যে, এটি উদ্দেশ্যহীন নয়, নিছক খেলা-তামাসা ও একটি অর্থহীন তেলেসমাতিও নয় বরং এ একটি বিজ্ঞানময় ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় মানুষের মতো স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন জীবের পক্ষে নিজের যাবতীয় কর্মের জবাবদিহি না করে মরে যাওয়ার পর এমনি এমনিই মাটিতে মিশে গিয়ে শেষ হয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
# মনে রাখতে হবে, এখানে তাওহীদ ও মৃতু্য পরের জীবন সম্পর্কে এক সাথে যুক্তি প্রদান করা হচ্ছ এবং সামনের দিকে যেসব নিদর্শনের প্রতি দৃষ্টি আকষর্ণ করা হয়েছে সেগুলো থেকে শির্ক ও আখেরাত অস্বীকৃতি বাতিল হওয়া সম্পর্কে যুক্তি পেশ করা হচ্ছে।
# মনে রাখতে হবে, তাদের আখেরাতকে অসম্ভব মনে করা কেবলমাত্র আখেরাতেরই অস্বীকৃতি ছিল না, আল্লাহর শক্তি ও জ্ঞানেরওঅস্বীকৃতি ছিল।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
* আয়াতগুলােতে আল্লাহ বলছেন যে, যারা আখেরাতে বিশ্বাস করে না এবং যারা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত, তাদেরকে বিপদ-মুসিবত, দুঃখ ও দারিদ্র অথবা সুখ, শান্তি ও প্রাচুর্য যেটা দিয়েই পরীক্ষা করা হােক না কেন, তা সুফল বয়ে আনে না। তাদেরকে যদি সম্পদ ও প্রাচুর্য দান করা হয়, তাহলে তারা মনে করে যে, তাদের জন্যে আমি ত্বরিত কল্যাণ কামনা করি বলেই তাদেরকে মানব সম্পদ ও অর্থ সম্পদে প্রাচুর্য দান করে থাকি। আর যদি তাদের ওপর বিপদ-মুসিবত আসে তাহলেও তাদের মন নরম হয় না, তাদের বিবেক জাগ্রত হয় না এবং তারা বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে না। এভাবে অনমনীয় ও হঠকারী মানসিকতা নিয়েই তারা শেষ পর্যন্ত মারা যায় এবং কেয়ামতের দিন কঠিন আযাবের সম্মুখীন হয়ে চরম হতাশায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। আর যদি আমি তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করি ও তারা যে বিপদে আছে তা থেকে উদ্ধার করি, তাহলে তারা তাদের হঠকারিতা অব্যাহত রাখে আর আমি তাদেরকে আযাব দিয়েও পাকড়াও করেছি। তাতেও তারা তাদের প্রতিপালকের সামনে কিছুমাত্র নতি স্বীকার ও কাকুতি মিনতি করে না। ‘অবশেষে আমি যখন তাদের ওপর কঠিন আযাবের দ্বারােদঘাটন করেছি, অমনি তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।’ এটা এমন একশ্রেণীর মানুষের চরিত্রের সাধারণ বিশ্লেষণ যাদের হৃদয় পাষাণ হয়ে গেছে, যারা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে উদাসীন এবং যারা আখেরাতকে মিথ্যা মনে করে। রসূল(স.)-এর সময়ের পৌত্তলিক এই শ্রেণীরই অন্তর্ভুক্ত ছিলাে। বিপদে আপদে আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ও অনুতপ্ত হয়ে দোয়া করা ও উদ্ধার চাওয়া আল্লাহর নাফরমানী পরিত্যাগ করে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আক্রান্ত মানুষটা আল্লাহকেই একমাত্র আশ্রয়স্থল ও একমাত্র ত্রাণকর্তা বলে মনে করে। যখন কারাে মন এভাবে আল্লাহর কাছে নত হয়, তখন তা অবশ্যই নরম হয়ে যায়, জাগ্রত ও সচেতন হয়ে যায়। একমাত্র এই জাগৃতি ও সচেতনতা এবং এই সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতাই মানুষকে উদাসীনতা, পদস্খলন ও গোমরাহী থেকে রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়। এই জাগরণও অনুশােচনা থাকলে মানুষ বিপদ মুসিবত দ্বারা উপকৃত হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি বিপদ মুসিবতে পড়েও গােমরাহী ও বিকৃতি অব্যাহত রাখে, তার আর সংশােধনের আশা করা যায় না। আখেরাতের আযাব তার জন্যে অবধারিত হয়ে যায় এবং সে আকস্মিকভাবেই তার শিকার হয়ে যায়। যখন সে এই আযাবের সম্মুখীন হয়, তখন তার আর মুক্তির কোনাে আশা থাকে না।
*প্রতি মুহুর্তেই আমরা নিদর্শনের মুখােমুখি হচ্ছি : এর পরের তিনটে আয়াতে মানুষের মনমগযকে তাদের নিজ নিজ সত্ত্বার অভ্যন্তরে ও আশপাশের প্রকৃতিতে বিরাজমান ঈমানের উপকরণগুলাে সম্পর্কে সচেতন করার প্রয়াস চালানাে। হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই সেই আল্লাহ, যিনি তােমাদের কান চোখ ও হৃদয় সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তােমরা খুব কমই শােকর আদায় করে থাক। তিনিই পৃথিবীতে তােমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই তােমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দিয়ে থাকেন এবং রাত ও দিনের আবর্তন তার জন্যেই হয়ে থাকে। তবুও কি তােমরা বুঝবে না?’ মানুষ যদি তার সৃষ্টি তত্ত্ব ও গঠন প্রণালী সম্পর্কে চিন্তা করে, তার ইন্দ্রিয় শক্তি ও অংগ-প্রত্যংগ সম্পর্কে চিন্তা করে এবং তার মধ্যকার শক্তি সামর্থ্য ও জ্ঞান বুদ্ধির কথা চিন্তা করে তাহলে সে অবশ্যই আল্লাহর সন্ধান পেয়ে যাবে। এ সকল বিস্ময়কর সৃষ্টি রহস্যই তাকে আল্লাহর সন্ধান দিয়ে দেবে। কারণ, এগুলাে একক ও অভিন্ন সৃষ্টিকর্তারই পরিচয় বহন করে। এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ সকল বিস্ময়কর সৃষ্টির মধ্য থেকে ছােট বড় কোনাে একটিও সৃষ্টি করার মতাে ক্ষমতা আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আর অন্য কারাে নেই। এই একটি মাত্র শ্রবণ শক্তির কথাই ধরুন। ভেবে দেখেছেন কি এটা কি ভাবে কাজ করে? কিভাবে বিভিন্ন শব্দ তরংগ থেকে একটা নির্দিষ্ট শব্দকে ধারণ করে নিয়ে সেটাকে নিজের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। এই দৃষ্টি শক্তির ব্যাপারটাই ধরুন। ভেবে দেখেছেন কি এটা কি ভাবে কাজ করে? কি ভাবে বিভিন্ন আলাে ও চিত্র ধারণ করে? এই অন্তরটার কথা কি কোনােদিন ভেবে দেখেছেন, সেটা কি এবং কি ভাবে অনুভব করে? কি ভাবে বিভিন্ন বস্তু, বিভিন্ন আকৃতি, বিভিন্ন অর্থ, বিভিন্ন মান, বিভিন্ন অনুভূতি এবং বিভিন্ন অনুভূত বস্তুর মূল্যায়ন করে? আসলে কেউ যদি শুধু এই ইন্দ্রিয় শক্তি ও বিভিন্ন অংগ-প্রতংগের প্রকৃতি এবং এগুলাের কর্ম প্রণালী সম্পর্কেই জ্ঞান লাভ করতে পারে, তাহলে এর মাধ্যমেই সে মানব জগতের একটা বিস্ময়কর রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবে। আর যদি এগুলাের সৃষ্টি ও গঠন প্রণালীর রহস্য উদ্ঘাটন করে, তবে তাে কথাই নেই। কারণ, মানুষ যে জগতে বাস করছে, সে জগতের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে তার সকল অংগ-প্রত্যংগ ও ইন্দ্রিয় শক্তিকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এতো নিখুঁতভাবে এই সামঞ্জস্য রক্ষা করা হয়েছে যে, এর মাঝে সামান্যতম তারতম্য ঘটলে মানুষের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। তখন তার কানে কোনাে শব্দই তরংগায়িত হবে না, তার চোখে কোনাে আলােই ধরা পড়বে না। কিন্তু এই মহাজাগতিক কর্মকান্ডের পেছনে যার শক্তি ও কুদরত কাজ করছে তিনি মানুষের প্রকৃতি এবং যে জগতে সে বাস করছে সে জগতের প্রকৃতির মাঝে পূর্ণ সামঞ্জস্য রক্ষা করেছেন বলেই উভয়ের মাঝে যােগসূত্র অক্ষুণ্ন রয়েছে। তা সত্তেও মানুষ এই নেয়ামতের শোকর আদায় করে না। তাই বলা হয়েছে, ‘তােমরা খুব কমই শােকর আদায় করে থাকো’ বলা বাহুল্য, শােকরের প্রথম স্তরই হচ্ছে দাতার পরিচয় লাভ করা, তার বিভিন্ন গুণাবলীর প্রশংসা করা। এরপর একমাত্র তারই এবাদাত বন্দেগী করা। কারণ, তিনি একক ও অভিন্ন। তার এক ও অভিন্নতার প্রধান সাক্ষীই হচ্ছে তার সৃষ্টি নৈপুণ্যের অসংখ্য নিদর্শনাবলী। সব শেষে জীবন ও জীবনের সুখ শাস্তি ভােগ করার জন্যে এসব ইন্দ্রিয় শক্তি ও অংগ-প্রত্যংগ ব্যবহার করার সময় আল্লাহকে স্মরণ করা, প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি উপভােগের মুহূর্তে হৃদয় দিয়ে আল্লাহকে অনুভব করা। ‘তিনিই তােমাদেরকে পৃথিবীতে ছড়িয়ে রেখেছেন।’ তােমাদেরকে পৃথিবীর কর্তৃত্ব দান করেছেন, খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এই দায়িত্ব পালনের জন্যে তােমাদের শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি, মনন শক্তিসহ বিভিন্ন প্রয়ােজনীয় শক্তি সামর্থ্য ও যােগ্যতা অভিজ্ঞতা দান করেছেন। এরপর তােমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। তখন তােমাদের বিচার হবে। পার্থিব জীবনের ভাল মন্দ, ন্যায় অন্যায় এবং ত্রুটি বিচ্যুতি যা কিছু করেছে সে সবের বিচার হবে। কারণ, তােমাদেরকে অহেতুক সৃষ্টি করা হয়নি। তােমাদেরকে লাগামহীন ছেড়ে দেয়া হয়নি। বরং তােমাদের সৃষ্টির পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, বিশেষ রহস্য রয়েছে এবং একটা বিশেষ নিয়ম নীতি রয়েছে। তিনিই জীবন দেন এবং মৃত্যু ঘটান… আসলে জীবন ও মৃত্যু হচ্ছে এমন দুটো ঘটনা যা প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলেছে। তবে আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অন্য কেউ হায়াত মউতের মালিক নয়। মানুষ যদিও উন্নততর একটা প্রাণী, কিন্তু সে একটি কোধেও জীবন সঞ্চার করতে সক্ষম নয়। তেমনিভাবে সত্যিকার অর্থে কোনাে প্রাণীর প্রাণও সংহার করতে সক্ষম নয়। কারণ জীবনের রহস্য তিনিই জানেন, যিনি জীবন দান করেন। ফলে জীবন দান করার ক্ষমতা ও জীবন অবসানের ক্ষমতা একমাত্র তার হাতেই রয়েছে। এটা ঠিক যে, মানুষ কখনাে কখনাে জীবন নাশের কারণ ও হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে থাকে। কিন্তু, তাই বলে সত্যিকার অর্থে তারা কোনাে জীবন্ত প্রাণীকে জীবন মুক্ত করতে পারে না। এ কাজ একমাত্র আল্লাহর। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই জীবন ছিনিয়ে নেন, অন্য কেউ নয়। ‘এবং দিবা-রাত্রির বিবর্তন তারই কাজ’… অর্থাৎ দিবা-রাত্রির পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। জীবন ও মৃত্যুর পরিবর্তনের ন্যায় দিন ও রাতের পরিবর্তনও একটি নির্দিষ্ট জাগতিক নিয়মের অধীনেই ঘটে। জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারটি আত্মা ও দেহের সাথে, আর দিন ও রাতের ব্যাপারটি জগত ও সৌরমন্ডলীর সাথে সম্পৃক্ত। জীবন্ত প্রাণীর প্রাণ সংহার করলে তার দেহ যেমন নিস্তেজ ও নিস্কৃয় হয়ে পড়ে, তেমনিভাবে পৃথিবী থেকে আলো ছিনিয়ে নিলে পৃথিবীর বুকে অন্ধকার নেমে আসে, নিস্তব্ধতা ছেয়ে যায়। এরপর পুনরায় জীবন ফিরে আসলে আলােও ফিরে আসে। এই পরিবর্তন ও বিবর্তন অবিরাম ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে ঘটে চলছে ও চলবে যতাে দিন পর্যন্ত না আল্লাহর পক্ষ থেকে ভিন্ন কোনাে নির্দেশ জারি হয়। ‘তোমরা কি বুঝাে না?’ এর মাঝে মহান আল্লাহর অসীম কুদরতের কি নিদর্শন ও প্রমাণ রয়েছে। তােমরা কি উপলব্ধি করতে পারোনা যে, এই জীবন ও জগতের যিনি একচ্ছত্র মালিক, সৃষ্টিকর্তা ও ব্যবস্থাপক তিনিই এ সবের পরিচালনায় নিয়ােজিত?
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৭৬-৮৩ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করলাম অর্থাৎ আমি তাদের দুষ্কর্মের কারণে তাদেরকে কষ্ট ও বিপদে জড়িত করে ফেললাম, কিন্তু এতেও তারা না কুফরী পরিত্যাগ করলো, না তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনত হলো। বরং তখন তারা কুফরী ও বিভ্রান্তির উপর অটল থাকলো। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের কাছে যখন আমার শাস্তি এসে গেল তখন কেন তারা বিনীতভাবে আমার দিকে ঝুঁকে পড়লো না। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেছে।” (৬:৪৩) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই আয়াতে এ দুর্ভিক্ষের বর্ণনা রয়েছে যা কুরায়েশদের উপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে না মানার কারণে পতিত হয়েছিল, যার অভিযোগ নিয়ে আবু সুফিয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট গমন করেছিলেন এবং তাঁকে বলেছিলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে ও আত্মীয়তার সম্পর্কের মাধ্যম দিয়ে বলছি যে, (দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়ে এখন) আমরা গোবর ও রক্ত খেতে শুরু করে দিয়েছি।” তখন আল্লাহ তা’আলা (আরবী) এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানে নাসাঈতেও এটা বর্ণিত হয়েছে)
এ কথাও বর্ণিত আছে যে, কুরায়েশদের দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের উপর বদ দু’আ করে বলেছিলেনঃ “হে আল্লাহ! হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর যুগের মত এদের উপর সাত বছরের দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিয়ে আমাকে সাহায্য করুন! (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে)
হযরত আমর ইবনে কাইসান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ)-কে বন্দী করা হলে তথায় একজন নব যুবক তাঁকে বলেনঃ “হে আবু আবদিল্লাহ (রঃ)! আপনার মনোরঞ্জনের জন্যে আমি কিছু কবিতা পাঠ করাবো কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “এখন আমরা আল্লাহর শাস্তির মধ্যে রয়েছি। আর যারা এরূপ অবস্থাতেও আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে না তাদের বিরুদ্ধে কুরআন কারীমে অভিযোগ করা হয়েছে।” অতঃপর তিনি ক্রমান্বয়ে তিনটি রোযা রাখেন (মাঝে ইফতার না করে)। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আবু আবদিল্লাহ! এটা কিরূপ রোযা (যাতে আপনি মাঝে ইফতার করেননি)?” জবাবে তিনি বলেনঃ “আমাদের জন্যে একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করা হয়েছে, সুতরাং আমরাও একটা নতুন বিষয় উদ্ভাবন করলাম। অর্থাৎ আমাদেরকে বন্দী করে বাড়াবাড়ি করা হয়েছে, সুতরাং আমরাও ইবাদতে বাড়াবাড়ি করলাম।” (মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে এটা বর্ণনা করা হয়েছে)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ অবশেষে যখন আমি তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির দর্য খুলে দেই তখনই তারা এতে হতাশ হয়ে পড়ে। অর্থাৎ যে শাস্তির কথা তারা কল্পনাও করেনি সেই শাস্তি আকস্মিকভাবে যখন তাদের উপর এসে পড়ে তখন তারা পরিত্রাণ লাভে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে।
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে অসংখ্য নিয়ামত দান করেছেন। তিনি চক্ষু, কর্ণ, অন্তঃকরণ এবং জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে তার একত্ব ও ব্যাপক ক্ষমতা এবং একচ্ছত্র আধিপত্য অনুধাবন করতে পারে। কিন্তু যতই নিয়ামত বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই শুকরগুযারী কমে যাচ্ছে। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।” আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) তোমার চাহিদা থাকলেও অধিকাংশ লোকই মুমিন নয়।” (১২:১০৩)।
অতঃপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর বিরাট সাম্রাজ্য এবং মহাশক্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তিনিই তোমাদেরকে পৃথিবীতে বিস্তৃত করেছেন এবং তোমাদেরকে তাঁরই নিকট একত্রিত করা হবে। প্রথমে তিনি সৃষ্টি করেছেন, মৃত্যুর পরে পুনরায় তিনিই সৃষ্টি করবেন। ছোট, বড়, পূর্বের ও পরের কেউই অবশিষ্ট থাকবে না। পচা সড়া হাড়কে জীবিতকারী এবং মানুষকে মৃত্যুদানকারী একমাত্র তিনিই। তাঁর হুকুমেই দিন যাচ্ছে রাত্রি আসছে এবং রাত্রি যাচ্ছে দিন আসছে। সুশৃংখলভাবে একটার পর একটা আসছে ও যাচ্ছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সৃর্ষে পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া এবং রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম ; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে।” (৩৬:৪০) তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ তবুও কি তোমরা বুঝবে না? এতো বড় বড় নিদর্শন দেখেও কি তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহকে চিনবে না? তিনি যে মহা-ক্ষমতাবান ও অসীম জ্ঞানের অধিকারী এটা তোমাদের মেনে নেয়া উচিত।
এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এতদসত্ত্বেও তারা বলে, যেমন বলেছিল তাদের পূর্ববর্তীরা। প্রকৃত কথা এই যে, এ যুগের কাফির ও পূর্ববর্তী যুগের কাফিরদের অন্তর একই। তাদের ও এদের উক্তির মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। ঐ উক্তি হলোঃ “আমাদের মৃত্যু ঘটলে এবং আমরা মৃত্তিকা ও অস্থিতে পরিণত হলেও কি পুনরুত্থিত হবো? এটা বোধগম্য নয়। এই প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দেয়া হয়েছে এবং অতীতে আমাদের পূর্বপুরুষদেরকেও এই প্রতিশ্রুতিই দেয়া হয়েছিল। এটা তো সে কালের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়। কিন্তু আমরা সে মৃত্যুর পরে কাউকেও জীবিত হতে দেখিনি।” এর দ্বারা তারা বুঝাতে চেয়েছে যে, পুনরুত্থান সম্ভব নয়। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(তারা বলে, আমরা কি পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তিত হবো) গলিত অস্থিতে পরিণত হওয়ার পরও? তারা বলে, তাই যদি হয় তবে তো এটা সর্বনাশা প্রত্যাবর্তন। এটা তো শুধু এক বিকট আওয়াজ, তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।” (৭৯: ১১-১৪) আর এক জায়গায় মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মানুষ কি দেখে না যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু হতে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী। আর সে আমার সামনে উপমা রচনা করে অথচ সে নিজের সৃষ্টির কথা ভুলে যায়; বলে, অস্থিতে প্রাণ সঞ্চার করবে কে যখন ওটা পচে গলে যাবে? বলঃ ওর মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করবেন তিনিই যিনি এটা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত।” (৩৬:৭৭-৭৯)
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#962)
[وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالاَْبْصَارَ وَالاَْفْيِدَةَ
It is He Who has created for you hearing, eyes, and hearts.]
Sura:23
Para:18
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 76-83
www.motaher21.net
23:76
وَ لَقَدۡ اَخَذۡنٰہُمۡ بِالۡعَذَابِ فَمَا اسۡتَکَانُوۡا لِرَبِّہِمۡ وَ مَا یَتَضَرَّعُوۡنَ ﴿۷۶﴾
And We had gripped them with suffering [as a warning], but they did not yield to their Lord, nor did they humbly supplicate, [and will continue thus]
Allah’s saying:
وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ
And indeed We seized them with punishment,
means, `We tried and tested them with difficulties and calamities.’
His saying:
فَمَا اسْتَكَانُوا لِرَبِّهِمْ وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
but they humbled not themselves to their Lord, nor did they invoke with submission to Him.
means, that did not deter them from their disbelief and resistance, rather they persisted in their sin and misguidance,
فَمَا اسْتَكَانُوا
(but they humbled not themselves),
وَمَا يَتَضَرَّعُونَ
(nor did they invoke (Allah) with submission to Him).
they did not call on Him.
This is like the Ayah:
فَلَوْلا إِذْ جَأءَهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُواْ وَلَـكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ
When Our torment reached them, why then did they not humble themselves! But their hearts became hardened, (6:43)
Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas said,
“Abu Sufyan came to the Messenger of Allah and said, `O Muhammad, I ask you by Allah and by the ties of kinship between us, we have been reduced to eating camel hair and blood.’
Then Allah revealed,
وَلَقَدْ أَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ فَمَا اسْتَكَانُوا
(And indeed We seized them with punishment, but they humbled not themselves).
This was also recorded by An-Nasa’i.
The basis of this Hadith is in the Two Sahihs, where it says that the Messenger of Allah prayed against the Quraysh when he could not make any headway with them, and he said,
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَيْهِمْ بِسَبْعٍ كَسَبْعِ يُوسُف
O Allah, help me against them sending on them seven years (of famine) like the seven (years of drought) of Yusuf.
حَتَّى إِذَا فَتَحْنَا عَلَيْهِم بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِيدٍ إِذَا هُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
23:77
حَتّٰۤی اِذَا فَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ بَابًا ذَا عَذَابٍ شَدِیۡدٍ اِذَا ہُمۡ فِیۡہِ مُبۡلِسُوۡنَ ﴿٪۷۷﴾
Until when We have opened before them a door of severe punishment, immediately they will be therein in despair.
Until, when We open for them the gate of severe punishment, then lo! they will be plunged in despair.
When the command of Allah reaches them and the Hour comes to them suddenly, and they are overtaken by the punishment of Allah which they were not expecting, then they will despair of any ease and goodness, and all their hopes will disappear.
A reminder of the Blessings of Allah and His immense Power
Allah tells
23:78
وَ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ لَکُمُ السَّمۡعَ وَ الۡاَبۡصَارَ وَ الۡاَفۡـِٕدَۃَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۷۸﴾
And it is He who produced for you hearing and vision and hearts; little are you grateful.
وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالاَْبْصَارَ وَالاَْفْيِدَةَ
It is He Who has created for you hearing, eyes, and hearts.
Allah mentions His blessings to His servants, in that He has given them hearing, sight and understanding through which they come to know things and draw lessons from them, the signs which attest to the Oneness of Allah and indicate that He is the One Who does what He wills and chooses what He wants.
قَلِيلً مَّا تَشْكُرُونَ
Little thanks you give.
means, how little you thank Allah for the blessings He has given you.
This is like the Ayah:
وَمَأ أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُوْمِنِينَ
And most of mankind will not believe even if you desire it eagerly. (12:103)
He says:
وَهُوَ الَّذِي ذَرَأَكُمْ فِي الاَْرْضِ وَإِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
23:79
وَ ہُوَ الَّذِیۡ ذَرَاَکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ اِلَیۡہِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۷۹﴾
And it is He who has multiplied you throughout the earth, and to Him you will be gathered.
And it is He Who has created you on the earth, and to Him you shall be gathered back.
Allah tells us about His great power and overwhelming authority, for He is the One Who originated creation and put people in all parts of the earth, with their different nations, languages and characteristics, then on the Day of Resurrection He will gather them all together, the first of them and the last, at a fixed time on a day appointed, and none will be left out, young or old, male or female, noble or insignificant, but all will be brought back as they were originally created.
Allah said
23:80
وَ ہُوَ الَّذِیۡ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ وَ لَہُ اخۡتِلَافُ الَّیۡلِ وَ النَّہَارِ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۸۰﴾
And it is He who gives life and causes death, and His is the alternation of the night and the day. Then will you not reason?
وَهُوَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ
And it is He Who gives life and causes death,
meaning, He will bring the scattered bones back to life and cause the death of the nations,
وَلَهُ اخْتِلَفُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
and His is the alternation of night and day.
meaning, by His command night and day are subjugated, each of them following the other and never departing from that pattern, as Allah says:
لَا الشَّمْسُ يَنبَغِى لَهَأ أَن تدْرِكَ القَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ
It is not for the sun to overtake the moon, nor does the night outstrip the day. (36:40)
أَفَلَ تَعْقِلُونَ
Will you not then understand!
means, do you not have minds that tell you of the Almighty, All-Knowing to Whom all things are subjugated, Who has power over all things and to Whom all things submit!
The Idolators thought that Resurrection after Death was very unlikely
Then Allah tells us about those who denied the resurrection, who were like the disbelievers who came before them:
بَلْ قَالُوا مِثْلَ مَا قَالَ الاَْوَّلُونَ
23:81
بَلۡ قَالُوۡا مِثۡلَ مَا قَالَ الۡاَوَّلُوۡنَ ﴿۸۱﴾
Rather, they say like what the former peoples said.
قَالُوا أَيِذَا مِتْنَا وَكُنَّا تُرَابًا وَعِظَامًا أَيِنَّا لَمَبْعُوثُونَ
23:82
قَالُوۡۤا ءَ اِذَا مِتۡنَا وَ کُنَّا تُرَابًا وَّ عِظَامًا ءَ اِنَّا لَمَبۡعُوۡثُوۡنَ ﴿۸۲﴾
They said, “When we have died and become dust and bones, are we indeed to be resurrected?
Nay, but they say the like of what the men of old said. They said:
“When we are dead and have become dust and bones, shall we be resurrected indeed!”
They thought it very unlikely that this would happen after they had disintegrated into nothing.
لَقَدْ وُعِدْنَا نَحْنُ وَابَاوُنَا هَذَا مِن قَبْلُ إِنْ هَذَا إِلاَّ أَسَاطِيرُ الاَْوَّلِينَ
Nay, but they say the like of what the men of old said. They said:
“When we are dead and have become dust and bones, shall we be resurrected indeed!”
They thought it very unlikely that this would happen after they had disintegrated into nothing.
لَقَدْ وُعِدْنَا نَحْنُ وَابَاوُنَا هَذَا مِن قَبْلُ إِنْ هَذَا إِلاَّ أَسَاطِيرُ الاَْوَّلِينَ
23:83
لَقَدۡ وُعِدۡنَا نَحۡنُ وَ اٰبَآؤُنَا ہٰذَا مِنۡ قَبۡلُ اِنۡ ہٰذَاۤ اِلَّاۤ اَسَاطِیۡرُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۸۳﴾
We have been promised this, we and our forefathers, before; this is not but legends of the former peoples.”
“Verily, this we have been promised — we and our fathers before (us)! This is only the tales of the ancients!”
This means,
“It is impossible that we could be brought back. This was said by those who learned it from the books and disputes of the ancients.”
This denial and rejection on their part is like the Ayah where Allah tells us about them:
أَءِذَا كُنَّا عِظَـماً نَّخِرَةً
قَالُواْ تِلْكَ إِذاً كَرَّةٌ خَـسِرَةٌ
فَإِنَّمَا هِىَ زَجْرَةٌ وَحِدَةٌ
فَإِذَا هُم بِالسَّاهِرَةِ
“Even after we are crumbled bones,”
They say:”It would in that case, be a return with loss!”
But it will be only a single Zajrah, When behold, they find themselves on the surface of the earth alive after their death. (79:11-14)
أَوَلَمْ يَرَ الاِنسَـنُ أَنَّا خَلَقْنَـهُ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مٌّبِينٌ
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلً وَنَسِىَ خَلْقَهُ قَالَ مَن يُحىِ الْعِظَـمَ وَهِىَ رَمِيمٌ
قُلْ يُحْيِيهَا الَّذِى أَنشَأَهَأ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيمٌ
Does not man see that We have created him from Nutfah. Yet behold he (stands forth) as an open opponent. And he puts forth for Us a parable, and forgets his own creation.
He says:”Who will give life to these bones after they are rotten and have become dust!”
Say:”He will give life to them Who created them for the first time! And He is the All-Knower of every creation!” (36:77-79)
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran