أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৬৪)
[اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ
মন্দকে দূর করো সর্বোত্তম পদ্ধতিতে।]
সূরা:- আল্-মুমিনূন।
সুরা:২৩
পারা:১৮
৯৩-৯৮ নং আয়াত:-
www.motaher21.net
২৩:৯৩
قُلۡ رَّبِّ اِمَّا تُرِیَنِّیۡ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ﴿ۙ۹۳﴾
বলুন,“হে আমার রব! এদেরকে যে আযাবের হুমকি দেয়া হচ্ছে, তুমি যদি আমার উপস্থিতিতে সে আযাব আনো,
২৩:৯৪
رَبِّ فَلَا تَجۡعَلۡنِیۡ فِی الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۹۴﴾
হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত করো না।’
২৩:৯৫
وَ اِنَّا عَلٰۤی اَنۡ نُّرِیَکَ مَا نَعِدُہُمۡ لَقٰدِرُوۡنَ ﴿۹۵﴾
আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করছি, আমি তা তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম।
২৩:৯৬
اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَصِفُوۡنَ ﴿۹۶﴾
তুমি ভালো দ্বারা মন্দের মুকাবিলা কর। তারা যা বলে, আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।
২৩:৯৭
وَ قُلۡ رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ ہَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ ﴿ۙ۹۷﴾
আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানদের প্ররোচনা হতে।
২৩:৯৮
وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ ﴿۹۸﴾
হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট ওদের (শয়তানদের) উপস্থিতি হতে।’
৯৩-৯৮ নং আয়াতের তাফসীরে:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৯৩-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
কাফির-মুশরিকদের কাছে দলীল-প্রমাণ পেশ করার পরেও যখন তারা ঈমান আনল না এবং আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে কুফরী বর্জন করল না, তখন তাদের ওপর শাস্তি অবধারিত হয়ে গেল এবং তাদেরকে যে বিষয়ে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তা চলে আসা আবশ্যক হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন: হে আল্লাহ, যখন তাদেরকে শাস্তি দেবেন তখন যদি আমাকে দেখাতেন! তবে শাস্তি দানে জালেমদের মাঝে আমাকে অন্তর্ভুক্ত করবেন না। যেমন হাদীস বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন আপনি কোন সম্প্রদায়কে ফেতনায় পতিত করার ইচ্ছা করেন তখন ফেতনায় পতিত করার পূর্বেই আমাকে আপনার নিকট উঠিয়ে নিন। (মুসনাদ আহমাদ ৫/২৪৩, তিরমিযী হা: ৩২৩৩)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি যেন ভাল দ্বারা মন্দের মোকাবেলা করেন। এতে করে যারা শত্র“ থাকবে তারাও বন্ধুতে পরিণত হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَلَا تَسْتَوِی الْحَسَنَةُ وَلَا السَّیِّئَةُﺚ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ ھِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَکَ وَبَیْنَھ۫ عَدَاوَةٌ کَاَنَّھ۫ وَلِیٌّ حَمِیْمٌﭱوَمَا یُلَقّٰٿھَآ اِلَّا الَّذِیْنَ صَبَرُوْاﺆ وَمَا یُلَقّٰٿھَآ اِلَّا ذُوْ حَظٍّ عَظِیْمٍ)
“ভাল এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে, তোমার সাথে যার শত্র“তা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল, এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকে যারা মহা ভাগ্যবান।” (সূরা হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩৪-৩৫)
সাথে সাথে এ নির্দেশও প্রদান করেছেন যে, শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং জালিমদের সাহচর্য হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নবর্ণিত দু‘আসমূহ পাঠ করতেন:
اللَّهُمَّ إنِّي أَعُوذُ بِك من الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ من هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তা‘আলার নিকট বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা, কুমন্ত্রণা ও ফুঁৎকার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ ইবনু হিব্বান হা: ২৬০১) ঘুমন্ত অবস্থায় ভয় পেলে এ দু‘আটি পড়তেন:
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অসীলায় তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, শয়তানের প্ররোচনাদি এবং আমার নিকট ওদের হাজির হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবূ দাঊদ হা: ৩৮৯৩, তিরমিযী হা: ৩৫২৮, সহীহ)
অতএব যে কোন কাজ করতে গেলে শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে, শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে আরম্ভ করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জালিম সম্প্রদায়ের সাহচর্য ও শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
৩. মন্দের মোকাবেলা করতে হবে ভাল দিয়ে, মন্দ দিয়ে নয়।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*দ্বীনের দায়ীদের প্রতি কোরআনের কিছু নির্দেশনা : মােশরেকদের প্রসঙ্গ রেখে এখন রসূল(স.)-এর প্রতি নির্দেশ দান করা হচ্ছে। তাকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তিনি যেন নিজ প্রতিপালকের প্রতি মনােনিবেশ করেন, তার আশ্রয় কামনা করেন এবং কাফের মােশরেকদের শাস্তি তার জীবদ্দশায়ই ঘটলে তা থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া করেন। এছাড়া তিনি যেন শয়তানের কূমন্ত্রণা থেকেও আশ্রয় কামনা কৱেন। তার হৃদয় মনে আক্রোশের সৃষ্টি যাতে না হয়, কাফের মােশরেকদের কথাবার্তায় তিনি যাতে মনোক্ষুন্ন না হন সে দোয়াও তাকে করতে বলা হয়েছে নিচের আয়াতে। তুমি বলাে, ‘হে আমার পালনকর্তা! যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা যদি আমাকে দেখান…'(আয়াত ৯৩-৯৮) খােদাদ্রোহী লােকদের ওপর আল্লাহর মর্মান্তিক আযাব ও গযব পতিত হওয়ার মুহূর্তে এবং ওদের সম্পর্কিত খােদায়ী ওয়াদা বাস্তবায়িত হওয়ার সময় নিজেকে নিরাপদে রাখার জন্যে আল্লাহর রসূল দোয়া করছেন। কিন্তু এই দোয়া অধিক সতর্কতার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এর মাঝে পরবর্তী লােকদের জন্য শিক্ষাও রয়েছে, তারা যেন আল্লাহর মার ও কৌশলের ব্যাপারে নিরুদ্বিগ্ন না থাকে, সব সময়ই সজাগ থাকে এবং সদা তার আশ্রয় কামনা করে। রসূলুল্লাহ(স.)-এর জীবদ্দশায়ই যে আল্লাহ তায়ালা বিদ্রোহী লােকদের ব্যাপারে তার কৃত ওয়াদা বাস্তবায়িত করতে সক্ষম, তা ঘােষণা দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন, ‘আমি তাদেরকে যে বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছি, তা তােমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম’… উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালা তার করা ওয়াদার কিছু কিছু অংশ বদর যুদ্ধে ও মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল(স.)-কে দেখিয়ে দিয়েছেন। যেহেতু আলােচ্য সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং তখন দাওয়াত ও তাবলীগের অন্যতম পদ্ধতি ছিলাে অন্যায় অবিচারের জবাব সৎ ব্যবহারের মাধ্যমে দেয়া, ধৈর্যধারণ করা এবং গােটা বিষয় আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেয়া। তাই নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, মন্দের জওয়াবে তাই বলুন, যা উত্তম। ‘তারা যা বলে, আমি সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত।’ সব ধরনের শয়তানী কুমন্ত্রণা ও প্রবঞ্চনা থেকে মুক্ত হওয়া সত্তেও তা থেকে রসূলের পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনার মাঝে অতিরিক্ত সাবধানতা, আল্লাহর কাছে অতিরিক্ত সহায়তা কামনা এবং উম্মতকে শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যগুলাে নিহিত রয়েছে। তিনিই হচ্ছেন উম্মতের জন্যে আদর্শ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাই তিনি নিজ উম্মতকে সর্ব অবস্থায় শয়তানী কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনার শিক্ষা দিচ্ছেন। অন্যথায় রসূলকে শয়তানদের কুমন্ত্রণা ও প্রবঞ্চনাই নয়, বরং এরা যেন তার ধারে কাছেও ঘেঁষতে না পারে সে দোয়া করার জন্যে তাঁকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, ‘হে আমার পালনকর্তা। শয়তানের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমাদের কাছে পানাহ চাই এবং সে যেন আমার ধারে কাছেও ঘেষতে না পারে এ ব্যাপারেও আমি তােমার তােমার আশ্রয় চাই।’… জীবনের শেষ মুহূর্তে এবং মৃত্যুর সময় যাতে শয়তানের উপস্থিতি না ঘটে সে ব্যাপারেই সম্ভবত, রসূল(স.) আল্লাহর আশ্রয় কামনা করেছেন। পরবর্তী আয়াতে এর প্রতি প্রচ্ছন্ন ইংগিত রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, ‘যখন তাদের কারাে কাছে মৃত্যু আসে’… পবিত্র কোরআনের সুসামঞ্জস্যশীল ও অর্থবহ বর্ণনাভংগিই এই ইংগিত বহন করে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এর অর্থ এ নয় যে, নাউযুবিল্লাহ! নবী সাল্লাল্লাহু আইলাহি ওয়া সাল্লামের ওপরো সে আযাব আসার কোন আশঙ্কা ছিল অথবা তিনি দোয়া না চাইলে তাঁর ওপর এ আযাব এসে যেতো। বরং এ ধরনের বর্ণনাভংগী অবলম্বন করা হয়েছে কেবল এ ধারণা সৃষ্টি করার জন্য যে, আল্লাহর আযাব অবশ্যি ভয় করার মতো জিনিস। এ আযাব দাবী করে চেয়ে নেবার মতো জিনিস নয় এবং যদি আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ ও ধৈর্য্যশীলতার কারণে তা নিয়ে আসতে বিলম্ব করে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তে নাফরমানি ও শয়তানির কাজ ।
# আপাতত দৃষ্টিতে নবী (সা.) কে সম্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে বক্তব্যের লক্ষ হচ্ছে তারা, যারা নবী (সা.) এর রিসালাত এবং তার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হবার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। সূরার শুরুতে আয়াতে যে বিষয়বস্তু উপস্থাপন করা হয়েছে এখান থেকে সেদিকেই বক্তব্যের মোড় ফিরে যাচ্ছে। মক্কার কাফেররা বলছিল, মুহাম্মাদ ﷺ এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব আসেনি, তিনি নিজেই সেটি রচনা করেছেন এবং এখন দাবী করছেন এটি আল্লাহ নাযিল করেছেন। এর একটি জবাব প্রথম দিকের আয়াতে দেয়া হয়েছিল, এখন দ্বিতীয় জবাব দেয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে যে প্রথম কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হে নবী! এই মূর্খ লোকেরা তোমার প্রতি আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়া অসম্ভব মনে করছে এবং তারা চাচ্ছে প্রতি দু’জনে একজন এটি অস্বীকার না করলেও অন্তত যেন এ ব্যাপারে সন্দেহেই লিপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু এক বান্দার প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব নাযিল হওয়াতো মানুষের ইতিহাসে কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগে বহু নবীর প্রতি কিতাব নাযিল হয়েছিল, এগুলোর মধ্যে মূসা (আ) কে প্রদত্ত কিতাবটি ছিল সবচেয়ে খ্যাতিমান। কাজেই একই ধরনের আর একটি জিনিস আজ তোমাদের দেয়া হয়েছে। তাহলে অযথা এর মধ্যে সন্দেহ করার মতো এমন নতুন কি তোমরা দেখলে?
# সে কিতাবটিকে বনী ইসরাঈলের জন্য পথনির্দেশ লাভের মাধ্যমে পরিণত করা হয়েছিল এবং এ কিতাবটিকে ঠিক তেমনি তোমাদের পথনির্দেশ লাভের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগেই তিন আয়াতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। এ উক্তির পূর্ণ তাৎপর্য এর ঐতিহাসিক পটভূমি দৃষ্টিসম্মুখে রাখার পরই অনুধাবণ করা যেতে পারে। একথা ইতিহাস থেকে প্রমাণিত এবং মক্কার কাফেরদের কাছেও একথা অজানা ছিল না যে, বনী ইসরাঈল কয়েকশো বছর থেকে মিসরে চরম লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত জীবন যাপন করে আসছিল। এ অবস্থায় আল্লাহ তাদের মধ্যে মূসার (আ) জন্ম দেন। তার মাধ্যমে এ জাতিকে দাসত্বমুক্ত করেন। তারপর তাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেন এবং তার বদৌলতে সেই অনুন্নত ও নিষ্পেষিত জাতি পথের দিশা লাভ করে দুনিয়ার বুকে একটি খ্যাতিমান জাতিতে পরিণত হয়। এ ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে আরববাসীদেরকে বলা হচ্ছে, যেভাবে বনী ইসরাঈলকে পথের দিশা দান করার জন্য সেই কিতাব পাঠানো হয়েছিল ঠিক তোমাদেরকে পথের দিশা দান করার জন্য এ কিতাব পাঠানো হয়েছে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৯৩-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-কে নির্দেশ নিচ্ছেন যে, শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি যেন দু’আ করেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি আমার বিদ্যমানতায় ঐ অসৎ লোকদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন তবে আমাকে ঐ শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিন। যেমন হাদীসে এসেছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আপনি কোন কওমকে ফিৎনায় পতিত করার ইচ্ছা করেন তখন ফিৎনায় পতিত করার পূর্বেই আমাকে আপনার নিকট উঠিয়ে নেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম তিরিমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন)
আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে এই শিক্ষা দেয়ার পর বলেনঃ আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তা আমি তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম। অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে ঐ কাফিরদের উপর যে শাস্তি ও বিপদ-আপদ আসবে তা ইচ্ছা করলে আমি তোমাকে দেখাতে পারি।
এরপর মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (সঃ)-কে এমন কথা শিখিয়ে দিচ্ছেন যা সমস্ত কঠিন সমস্যা ও বিপদ-আপদ দূর করতে সক্ষম। তা হলো, তুমি মন্দের মুকাবিলা কর যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত। অর্থাৎ যারা তোমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে তুমি তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার কর যাতে তাদের শত্রুতা বন্ধুত্বে এবং ঘৃণা প্রেম-প্রীতিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল; এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা। মহা ভাগ্যবান।” (৪১:৩৪-৩৫)
মানুষের অনিষ্ট থেকে বাঁচবার উত্তম পন্থা বলে দেয়ার পর মহান আল্লাহ, শয়তানের অনিষ্ট হতে বাঁচবার উপায় বলে দিচ্ছেনঃ বল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে। কেননা, তার প্ররোচনা হতে বাঁচবার অস্ত্র এই প্রার্থনা ছাড়া তোমাদের অধিকারে আর কিছুই নেই। সদাচরণ দ্বারা সে মানুষের বশে আসতে পারে না। আশ্রয় প্রার্থনা করার বর্ণনায় আমরা লিখে এসেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি শ্রোতা ও জ্ঞাতা আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা, কুমন্ত্রণা ও ফুৎকার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
আল্লাহ তা’আলার উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতে। শয়তান যেন আমার কোন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।
সুতরাং প্রত্যেক কাজের প্রারম্ভে আল্লাহর স্মরণ ঐ কাজের মধ্যে শয়তানের প্রবেশকরণকে সরিয়ে রাখে। পানাহার, সহবাস, যবেহ ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজের শুরুতে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নের দু’আটিও পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অতি বার্ধক্য হতে, আশ্রয় চাচ্ছি পিষ্ট হয়ে (আকস্মিকভাবে) মৃত্যুবরণ করা হতে ও ডুবে মরা হতে এবং শয়তান যেন আমাকে আমার মৃত্যুর সময় বিভ্রান্ত করতে না পারে সে জন্যে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কছি।” (এটা ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আমর ইবনে শশাআইব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে একটি দু’আ শিখাতেন যেন ওটা আমা ঘুমোবার সময় পাঠ করি যাতে উদ্বেগের কারণে নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার রাগে দূর হয়ে যায়। তা হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর নামে তাঁর পূর্ণ কালেমার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তার গযব হতে, তার শাস্তি হতে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, শয়তানদের প্ররোচনা হতে এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতে।”
হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নীতি ছিল এই যে, তিনি তাঁর প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে উপরোক্ত দু’আটি শিখিয়ে দিতেন এবং এটা লিখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের গলায় লটকিয়ে দিতেন। (ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#964)
[اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ
Repel evil with that which is better.]
Sura:23
Para:18
Sura: Al-Muminoon.
Ayat: 93-98
www.motaher21.net
23:93
قُلۡ رَّبِّ اِمَّا تُرِیَنِّیۡ مَا یُوۡعَدُوۡنَ ﴿ۙ۹۳﴾
Say, [O Muhammad], “My Lord, if You should show me that which they are promised,
The Command to call on Allah when Calamity strikes, to repel Evil with that which is better, and to seek refuge with Allah
Allah commands His Prophet Muhammad to:
قُل
Say:
Allah commands His Prophet Muhammad to call on Him with this supplication when calamity strikes:
رَّبِّ إِمَّا تُرِيَنِّي مَا يُوعَدُونَ
My Lord! If You would show me that with which they are threatened.
رَبِّ فَلَ تَجْعَلْنِي فِي الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
23:94
رَبِّ فَلَا تَجۡعَلۡنِیۡ فِی الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۹۴﴾
My Lord, then do not place me among the wrongdoing people.”
“My Lord! Then, put me not amongst the people who are the wrongdoers.”
meaning, `if You punish them while I am witnessing that, then do not cause me to be one of them.’
As was said in the Hadith recorded by Imam Ahmad and At-Tirmidhi, who graded it Sahih:
وَإِذَا أَرَدْتَ بِقَومٍ فِتْنَةً فَتَوفَّنِي إِلَيْكَ غَيْرَ مَفْتُون
If You want to test people, then take me to You (cause me to die) without having to undergo the test.
وَإِنَّا عَلَى أَن نُّرِيَكَ مَا نَعِدُهُمْ لَقَادِرُونَ
23:95
وَ اِنَّا عَلٰۤی اَنۡ نُّرِیَکَ مَا نَعِدُہُمۡ لَقٰدِرُوۡنَ ﴿۹۵﴾
And indeed, We are able to show you what We have promised them.
And indeed We are able to show you that with which We have threatened them.
means, `if We willed, We could show you the punishment and test that We will send upon them.’
Then Allah shows him the best way to behave when mixing with people, which is to treat kindly the one who treats him badly, so as to soften his heart and turn his enmity to friendship, and to turn his hatred to love.
Allah says
23:96
اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ ؕ نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَصِفُوۡنَ ﴿۹۶﴾
Repel, by [means of] what is best, [their] evil. We are most knowing of what they describe.
ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّيَةَ
Repel evil with that which is better.
This is like the Ayah:
ادْفَعْ بِالَّتِى هِىَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِى بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِىٌّ حَمِيمٌوَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ
Repel (the evil) with one which is better, then verily he, between whom and you there was enmity, (will become) as though he was a close friend. But none is granted it except those who are patient.
meaning, nobody will be helped or inspired to follow this advice or attain this quality,
إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُواْ
(except those who are patient),
meaning, those who patiently bear people’s insults and bad treatment and deal with them in a good manner when they are on the receiving end of bad treatment from them,
وَمَا يُلَقَّاهَأ إِلاَّ ذُو حَظِّ عَظِيمٍ
and none is granted it except the owner of the great portion.
means, in this world and the Hereafter. (41:34-35)
نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
We are best-acquainted with the things they utter.
And Allah says:
وَقُل رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ
23:97
وَ قُلۡ رَّبِّ اَعُوۡذُ بِکَ مِنۡ ہَمَزٰتِ الشَّیٰطِیۡنِ ﴿ۙ۹۷﴾
And say, “My Lord, I seek refuge in You from the incitements of the devils,
And say:”My Lord! I seek refuge with You from the whisperings of the Shayatin.”
Allah commanded him to seek refuge with Him from the Shayatin, because no trick could help you against them and you cannot protect yourself by being kind to them.
We have already stated, when discussing Isti`adhah (seeking refuge), that the Messenger of Allah used to say,
أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِه
I seek refuge with Allah, the All-Hearing, All-Seeing, from the accursed Shayatin, from his whisperings, evil suggestions and insinuations.
His saying:
وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ
23:98
وَ اَعُوۡذُ بِکَ رَبِّ اَنۡ یَّحۡضُرُوۡنِ ﴿۹۸﴾
And I seek refuge in You, my Lord, lest they be present with me.”
“And I seek refuge with You, My Lord! lest they should come near me.”
means, in any issue of my life.
So we are commanded to mention Allah at the beginning of any undertaking, in order to ward off the Shayatin at the time of eating, intercourse, slaughtering animals for food, etc.
Abu Dawud recorded that the Messenger of Allah used to say:
اللَّهُمَّ
إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَرَمِ
وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَمِنَ الْغَرَقِ
وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْت
O Allah,
I seek refuge with You from old age,
I seek refuge with You from being crushed or drowned, and
I seek refuge with you from being assaulted by the Shayatin at the time of death.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran