(বই#৯৮৩) [সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে অনুমতি ছাড়া সরে পড়ো না;] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#৯৮৩) [সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে অনুমতি ছাড়া সরে পড়ো না;]
www.motaher21.net
সূরা:- আন-নূর।
সুরা:২৪
পারা:১৮
৬২-৬৪ নং আয়াত:-
২৪:৬২
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ اِذَا کَانُوۡا مَعَہٗ عَلٰۤی اَمۡرٍ جَامِعٍ لَّمۡ یَذۡہَبُوۡا حَتّٰی یَسۡتَاۡذِنُوۡہُ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَاۡذِنُوۡنَکَ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ فَاِذَا اسۡتَاۡذَنُوۡکَ لِبَعۡضِ شَاۡنِہِمۡ فَاۡذَنۡ لِّمَنۡ شِئۡتَ مِنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمُ اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۶۲﴾
মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনে এবং রাসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত ব্যাপারে একত্র হলে তারা অনুমতি ছাড়া সরে পড়ে না; নিশ্চয় যারা আপনার অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান রাখে। অতএব তারা তাদের কোন কাজের জন্য আপনার অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছে আপনি অনুমতি দেবেন এবং তাদের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌ পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
২৪:৬৩
لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَکُمۡ کَدُعَآءِ بَعۡضِکُمۡ بَعۡضًا ؕ قَدۡ یَعۡلَمُ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ یَتَسَلَّلُوۡنَ مِنۡکُمۡ لِوَاذًا ۚ فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۶۳﴾
হে মুসলমানরা! রসূলের আহবানকে তোমাদের মধ্যে পরস্পরের আহবানের মতো মনে করো না। আল্লাহ তাদেরকে ভালো করেই জানেন যারা তোমাদের মধ্যে একে অন্যের আড়ালে চুপিসারে সটকে পড়ে। রসূলের হুকুমের বিরুদ্ধাচারণকারীদের ভয় করা উচিত যেন তারা কোন বিপর্যয়ের শিকার না হয় অথবা তাদের ওপর যন্ত্রণাদায়ক আযাব না এসে পড়ে।
২৪:৬৪
সাবধান হয়ে যাও, আকাশে ও পৃথিবীতে যা কিছু সব আল্লাহরই। তোমরা যে নীতিই অবলম্বন করো আল্লাহ‌ তা জানেন। যেদিন লোকেরা তাঁর দিকে ফিরে যাবে সেদিন তিনি তাদের বলে দেবেন তারা কি সব করে এসেছে। তিনি সব জিনিসের জ্ঞান রাখেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক শিক্ষা : আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদের মধ্যকার সম্পর্কের সুশৃংখলা বিধানের পর এখন মুসলিম উম্মাহ ও তাদের নেতা ও প্রধান মােহাম্মদ(স.)-এর মধ্যকার সম্পর্ক কিরূপ হওয়া উচিত এবং তার বৈঠকে বসতে হলে কি ধরনের আদব কায়দা রক্ষা করে চলা উচিত সে সম্পর্কে বলা হচ্ছে, ‘মােমেন তাে তারাই যারা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে…'(আয়াত ৬২-৬৪) আলােচ্য আয়াতের শানে নুযূল সম্পর্কে ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন যে, খন্দক যুদ্ধের সময় কোরায়শ ও তাদের মিত্রবাহিনী যখন সম্মিলিতভাবে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা নেয় তখন মদিনা কে রক্ষা করার জন্যে পরিখা খনন করা হয়। এই খনন কাজে উৎসাহ দেয়ার জন্যে স্বয়ং রাসূল(স.) তাতে শরীক হয়েছেন। মুসলমানরা অত্যন্ত পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করছিলেন। অপরদিকে মােনাফেকরা অত্যন্ত টিলেমী ভাব নিয়ে কাজ করতো আর সুযােগ পেলে রসূলকে না জানিয়েই সটকে পড়তাে। অথচ মুসলমানরা যে কোনাে ছােট-খাটো প্রয়ােজন বা অসুবিধা দেখা দিলে তা রসূলকে জানাতেন এবং তা দূর করার জন্য রাসূলের কাছ থেকে অনুমতি প্রার্থনা করতেন। তিনি অনুমতি দিলে তারা যেতেন এবং প্রয়ােজন শেষ হওয়ার সাথে সাথে ফিরে এসে পুনরায় খনন কাজে যােগ দিতেন। এটা করতেন তারা একমাত্র আল্লাহকে রাজী খুশী করার জন্যে। এবং ইহকাল ও পরকালের মঙ্গলের আশায়। তাই তাদের সম্পর্কে আলােচ্য আয়াতে প্রশংসার বাণী উচ্চারিত হয়েছে। অপরদিকে মােনাফেকদের কার্যকলাপের নিন্দাবাদ জানানাে হয়েছে। আলােচ্য আয়াতের শানে নুযূল বা পটভূমি যাই থাকুক না কেন এর মাধ্যমে সাংগঠনিক ও মনস্তাত্তিক নিয়ম নীতি বর্ণনা করা হয়েছে। এর দ্বারা কোনাে সংগঠনের সাধারণ অনুসারী ও নেতৃস্থানীয় লােকদের মধ্যকার সম্পর্কের ধরন ও প্রকৃতিও তুলে ধরা হয়েছে। এই আদব কায়দা ও শিষ্টাচার যদি অনুভূতি, চেতনা ও বিবেকের গভীর থেকে উৎসারিত না হয় এবং তা জীবনের চলার পথে অনুসৃত প্রথা ও অলংঘনীয় নীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না হয় তাহলে কোনাে সামষ্টিক কার্যক্রমই স্থায়িত্ব লাভ করতে পারবে না, স্থিতিশীল হতে পারবে না। বরং তা সীমাহীন নৈরাজ্যে পর্যবসিত হবে। আলােচ্য আয়াতে যে সকল মােমেনদের কথা বলা হয়েছে তারা হচ্ছেন সত্যিকার অর্থে মােমেন। কথায় ও কাজে মােমেন। তারা এমন মােমেন নন যারা কেবল মুখে ঈমানের দাবী করে, অথচ বাস্তব জীবনে ঈমানের কোনাে চিহ্নই তাদের মাঝে দেখা যায় না। কারণ, তারা আল্লাহরও আনুগত্য করে না এবং রসূলের আনুগত্য করে না। এখানে সমষ্টিগত কাজ বলতে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বুঝানাে হয়েছে যে ব্যাপারে সলা-পরামর্শ করার জন্যে সকলের উপস্থিতি প্রয়ােজন হয়ে পড়ে। যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ বা জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনাে বিষয়। এ সকল ক্ষেত্রে একজন মােমেনের দায়িত্ব হলাে, নেতা বা দায়িত্বশীল ব্যক্তির অনুমতি ব্যতীত সভা ত্যাগ না করা। অন্যথায় গােটা ব্যাপারটাই উচ্ছৃংখল ও নৈরাজ্যপূর্ণ পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়বে। আর যারা এই পর্যায়ের মযবুত ঈমানী গুণাবলীর অধিকারী হয় এবং এই পর্যায়ের আদব কায়দা ও নিয়ম নীতির অনুসারী হয় তারা অত্যন্ত অসুবিধায় না পড়লে অনুমতি প্রার্থনা করে না। তাদের ঈমান এবং তাদের শিষ্টাচারই তাদেরকে বাধ্য করে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনাে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না রাখতে। এরপরও উম্মতের কর্ণধার মহান নেতা রসূলুল্লাহ(স.) কে অনুমতি প্রদান করা বা না করার পূর্ণ এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য হলাে, ‘অতপর তারা তােমার কাছে তাদের কোনাে কাজের জন্যে অনুমতি চাইলে তুমি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা অনুমতি দাও।’ উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে মােনাফেকদেরকে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি দেয়ার কারণে রসূলকে তিরস্কার করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তােমাকে ক্ষমা করুন, তুমি কেন তাদেরকে অব্যাহতি দিলে, যে পর্যন্ত না তােমার কাছে সত্যবাদীরা পরিষ্কার হয়ে যেতাে এবং জেনে নিতে মিথ্যাবাদীদের'(সুর তাওবা ৪৩) তাই আলােচ্য আয়াতে তাকে অনুমতি দেয়া বা না দেয়ার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হচ্ছে। এর ফলে গুরুতর প্রয়ােজনের পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে অনুমতি না দেয়ার স্বাধীনতাও তিনি পেয়ে গেলেন। এই হিসেবে একজন দলনেতার দায়িত্ব হলো, অনুমতি প্রার্থনাকারীর উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি সামষ্টিক স্বার্থের ক্ষেত্রে কতােটুকু প্রভাব ফেলতে পারে, তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সাংগঠনিক বিষয় সুষ্ঠু পরিচালনার স্বার্থে তার মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এ সত্তেও আয়াতের মূল বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, ব্যক্তিগত প্রয়ােজন ত্যাগ করে সমষ্টিগত প্রয়ােজনকে প্রাধান্য দেয়াই উত্তম এবং অনুমতি নিয়ে সভা ত্যাগ করাও এক প্রকারের দোষ ও ত্রুটি। যার ফলে রসূলকে তাদের জন্যে এস্তেগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে বলা হয়েছে যেমন, ‘এবং তাদের জন্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, মেহেরবান।’ আর এ কারণেই অনুমতি প্রার্থনা করতে গিয়ে প্রকৃত মােমেনদের বিবেকে বাধবে। ফলে শত প্রয়ােজন থাকলেও তারা সহজে অনুমতি তলব করবে না। এই আয়াতে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। তাহলাে, অনুমতি তলব করার সময় বা যে কোনাে অবস্থায় আল্লাহর নবীকে তার নাম ধরে সম্বােধন করা যাবে না। বরং তাঁকে ‘হে আল্লাহর রসূল’ বা ‘হে আল্লাহর নবী’ এভাবে সম্বােধন করতে হবে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাকে এভাবে সম্বােধন করে সম্মানিত করেছেন। তাই বলা হয়েছে, ‘রসুলের আহ্বানকে তােমরা তােমাদের একে অপরকে আহ্বানের মতাে গণ্য করাে না…’ বরং অত্যন্ত আদবের সাথে ও সম্মানের সাথে তাকে সম্বােধন করতে হবে। এই নির্দেশের ফলে নবীর প্রতি মােমেনদের ভক্তি শ্রদ্ধা আরাে বৃদ্ধি পাবে এবং তার প্রতিটি কথা ও প্রতিটি নির্দেশকে তারা সম্মানের চোখে দেখবে। এটা অত্যন্ত জরুরী বিষয়। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাঝে গাম্ভীর্য থাকতে হবে। একজন নেতার আচরণ আচরণ ও কথা বার্তায় দায়িত্বশীল ব্যক্তির মাঝে গাম্ভীর্য থাকতে হবে। একজন নেতার আচারণ আচরণে ও কথা বার্তায় একটা ওযন থাকতে হবে। তিনি অবশ্যই বিনয়ী হবেন, উদার হবেন ও নম্র হবেন। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তার অনুসারীরা তাঁর মান-মর্যাদার কথা ভুলে গিয়ে তাঁকে সেভাবেই সম্বােধন করবে যেভাবে নিজেরা একে অপরকে সম্বােধন করে থাকে। বরং অনুসারীদের মনে নেতার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা থাকতে হবে, তার মান-মর্যাদার অনুভূতি থাকতে হবে যেন কোনােভাবেই তারা নেতার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করতে না পারে। এরপর আলােচ্য আয়াতে মােনাফেকদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে যে, রসূলের দৃষ্টিকে ফাকি দিয়ে এবং অনুমতি ছাড়াই চুপিসারে সটকে পড়লেও তারা আল্লাহর দৃষ্টিকে ফাঁকি দিতে পারবে না। তারা যা কিছু করছে তা সবই আল্লাহর দৃষ্টির সামনে রয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জানেন, যারা তােমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে…’ আলােচ্য আয়াতে মােনাফেকদের আচরণের বর্ণনা যে ভাষায় দেয়া হয়েছে তা দ্বারা ওদের কাপুরুষতা ও নীচুতা প্রকাশ পায়। ওদেরকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ‘অতপর যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হােক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তা…’ এটা অত্যন্ত ভীতিকর সতর্কবাণী, অত্যন্ত লােমহর্ষক সতর্কবাণী। এই সতর্কবাণী তাদের জন্যে যারা রসুলের নির্দেশকে অমান্য করে, যারা তার আদর্শের বিপরীতে চলে, যারা স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে অথবা কোনাে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে অনুমতি ছাড়াই সটকে পড়ে। এদেরকে এমন বিপর্যয় থেকে সতর্ক করা হচ্ছে যে বিপর্যয়ের ফলে সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে পড়বে, সকল মানদন্ড ভেংগে পড়বে, শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট হয়ে পড়বে। ফলে ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য থাকবে না, ভালাে মন্দের পার্থক্য থাকবে না, সামাজিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। তখন কারাে জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না, কেউ কোনাে নিয়ম নীতির ধার ধারবে না। মংগল অমংগলের কোনাে পার্থক্যই তখন অবশিষ্ট থাকবে না। এ জাতীয় মুহূর্ত নিসন্দেহে সবার জন্যে হবে দুর্ভাগ্যজনক। যদি এ জাতীয় কোনাে বিপর্যয়ের সম্মুখীন তারা না হয় তাহলে অবশ্যই এই পৃথিবীর বুকে অথবা পরকালে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করার কারণে এবং তার মনােনীত জীবন বিধানকে পাশ কাটিয়ে চলার অপরাধে তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এই সাবধানবাণী উচ্চারণ করার পর এই সূরাটির সমাপ্তি ঘটছে, মুসলিম ও অমুসলিম সকলের দৃষ্টি একটি নিতান্ত বাস্তব সত্যের প্রতি আকর্ষণ করা হচ্ছে। আর তা হলাে, ‘মনে রেখাে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। তােমরা যে অবস্থায় আছো তা তিনি জানেন…'(আয়াত ৬৪) মানুষের মনের মাঝে আল্লাহ তায়ালা থাকুক, দৃষ্টির সামনে আল্লাহ তায়ালা থাকুক এবং গােপনে ও প্রকাশ্যে মানুষ আল্লাহকে ভয় করে চলুক এটাই হচ্ছে আলােচ্য সূরার শেষ বক্তব্য। কারণ এই আল্লাহভীতিই হচ্ছে তার রক্ষাকবচ এবং আল্লাহর যাবতীয় বিধি-নিষেধ ও নীতি-নৈতিকতার অতন্দ্র প্রহরী।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

# মুসলমানদের জামায়াতের নিয়ম-শৃংখলা আগের তুলনায় আরো বেশী শক্ত করে দেবার জন্য শেষ নির্দেশাবলী দেয়া হচ্ছে।
# নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে তাঁর স্থলাভিষিক্তগণ এবং ইসলামী জামায়াত ব্যবস্থার আমীরগণের জন্যও এ একই বিধান। কোন সামগ্রীক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বা শান্তি যে কোন সময় মুসলমানদের যখন একত্র করা হয় তখন আমীরের অনুমতি ছাড়া তাদের ফিরে যাওয়া বা ছড়িয়ে পড়া কোনক্রমেই জায়েয নয়।
# এর মধ্যে এ সতর্কবাণী রয়েছে যে, কোন যথার্থ প্রয়োজন ছাড়া অনুমতি চাওয়া তো আদতেই অবৈধ। বৈধতা কেবল তখনই সৃষ্টি হয় যখন যাবার জন্য কোন প্রকৃত প্রয়োজন দেখা দেয়।
# প্রয়োজন বর্ণনা করার পরও অনুমতি দেয়া বা না দেয়া রসূলের এবং রসূলের পর জামায়াতের আমীরের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। যদি তিনি মনে করেন সামগ্রিক প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ব্যক্তিগত প্রয়োজনের তুলনায় বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাহলে অনুমতি না দেবার পূর্ণ অধিকার তিনি রাখেন। এ অবস্থায় একজন মু’মিনের এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকা উচিত নয়।
# এখানে আবার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, অনুমতি চাওয়ার মধ্যে যদি সামান্যতম বাহানাবাজীরও দখল থাকে অথবা সামগ্রিক প্রয়োজনের ওপর ব্যক্তিগত প্রয়োজনকে প্রাধান্য দেবার প্রবণতা সক্রিয় থাকে, তাহলে এ হবে একটি গোনাহ। কাজেই রসূল ও তাঁর স্থলাভিষিক্তের শুধুমাত্র অনুমতি দিয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না বরং যাকেই অনুমতি দেবেন সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলে দেবেন যে, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন।
# মূলে دُعَاء শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ ডাকা ও আহবান করা হয় আবার দোয়া করাও হয়। তাছাড়া دُعَاءِ الرَّسُول এর মানে রসূলের ডাক বা দোয়াও হতে পারে আবার রসূলের আহবানও হতে পারে। এসব বিভিন্ন অর্থের প্রেক্ষিতে আয়াতের তিনটি অর্থ হতে পারে এবং তিনটি অর্থই সঠিক ও যুক্তিসঙ্গত।

একঃ “রসূলের আহবানকে কোন সাধারণ মানুষের আহবানের মতো মনে করো না।” অর্থাৎ রসূলের আহবান অস্বাভাবিক গুরুত্বের অধিকারী। অন্য কারোর আহবানে সাড়া দেয়া না দেয়ার স্বাধীনতা আছে কিন্তু রসূলের আহবানে না গেলে বা মনে ক্ষীণতম সংকীর্ণতা অনুভব করলে ঈমান বিপন্ন হয়ে পড়বে।

দুইঃ “রসূলের দোয়াকে সাধারণ মানুষের দোয়ার মতো মনে করো না” তিনি খুশী হয়ে দোয়া করলে তোমাদের জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন নিয়ামত নেই আর নারাজ হয়ে বদদোয়া করলে তার চেয়ে বড় আর কোন দুর্ভাগ্য তোমাদের জন্য থাকবে না।

তিনঃ “রসুলকে ডাকা সাধারণ মানুষের একজনের অন্য একজনকে ডাকার মতো হওয়া উচিত নয়।” অর্থাৎ তোমরা সাধারণ লোকদেরকে যেভাবে তাদের নাম নিয়ে উচ্চস্বরে ডাকো সেভাবে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ডেকো না। এ ব্যাপারে তাঁর প্রতি চরম শিষ্টাচার ও মর্যাদা প্রদর্শন করতে হবে। কারণ তাঁর প্রতি সামান্যতম বেআদবীর জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহির হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না।
# মুনাফিকদের আর একটি আলামত হিসেবে একথাটি বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ইসলামী সামগ্রিক কাজের জন্য যখন ডাকা হয় তখন তারা এসে যায় ঠিকই কিন্তু এ উপস্থিতি তাদের কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর ও অপছন্দনীয় হয়, ফলে কোন রকম গা ঢাকা দিয়ে তারা সরে পড়ে।
# ইমাম জাফর সাদেক (রা.) বিপর্যয় অর্থ করেছেন “জালেমদের কর্তৃত্ব ও প্রতিপত্তি।” অর্থাৎ যদি মুসলমানরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে তাহলে তাদের ওপর জালেম ও স্বৈরাচারী শাসক চাপিয়ে দেয়া হবে। মোটকথা এটাও এক ধরনের বিপর্যয় হতে পারে। আর এছাড়াও আরো অসংখ্য ধরনের বিপর্যয় হওয়া সম্ভবপর। যেমন পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, গৃহযুদ্ধ, নৈতিক অবক্ষয়, জামা’আতী ব্যবস্থায় বিশৃংখলা, আভ্যন্তরীণ নৈরাজ্য, রাজনৈতিক ও বস্তুগত শক্তি ভেঙ্গে পড়া, বিজাতির অধীন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-

৬২-৬৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আলোচ্য আয়াতে মু’মিনদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কয়েকটি শিক্ষামূলক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। এক. মু’মিনরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কোন সমষ্টিগত বিষয়েন যেমন জিহাদ, পরামর্শ, আলোচনা বৈঠক অনুরূপ ইত্যাদি ব্যাপারে একত্রিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি ছাড়া মাজলিস ত্যাগ করবে না। কোন প্রয়োজন দেখা দিলে তাঁর কাছে যথারীতি অনুমতি গ্রহণ করবে। এরকম সমষ্টিগত বৈঠক থেকে প্রয়োজনে অনুমতি নিয়ে যাওয়াকে ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমানদার তারাই এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে অনুমতি নিয়ে বের হয় যা আয়াতের প্রথম শব্দে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং যারা ঈমানদার নয়, অন্তরে নিফাকী রয়েছে কেবল তারাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুমতি না নিয়ে মাজলিস ত্যাগ করে। তাই কেউ এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুটি শর্তসাপেক্ষে অনুমতি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ১. যিনি অনুমতি চাচ্ছেন তিনি যদি কোন বিশেষ প্রয়োজনে অনুমতি প্রার্থনা করেন যেমনন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া বা পরিবারের কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইত্যাদিন তাহলে অনুমতি দেয়া হবে, বিনা প্রয়োজনে অনুমতি দেয়া যাবে না। ২. তিনি যাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার ইচ্ছা করবেন এবং তাকে অনুমতি দেয়াটাই কল্যাণ হবে বলে মনে করেন। সুতরাং এ দুটি শর্ত সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে মাজলিস ত্যাগ করার অনুমতি দেবেন সে ব্যক্তিই মাজলিস ত্যাগ করতে পারবে, সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি প্রার্থনাকারী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার নির্দেশ দিচ্ছেন। (তাফসীর সা‘দী) এরূপ সমষ্টিগত মাজলিস থেকে বিনা অনুমতিতে চলে যাওয়া কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, না ব্যাপক? এটা শুধু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তরাধিকারী আলেম, ইমাম ও আমীরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং কোন আলেম যদি মুসলিমদের নিয়ে সমাবেশ করেন, ধর্মীয় কোন আলোচনা বৈঠক করেন তাহলে সেখান থেকে সে আলেমের বিনা অনুমতিতে চলে যাওয়া বৈধ নয়।

দুই. ‘‘রাসূলের আহ্বানকে” এখানে দুটি অর্থ রয়েছেন

১. اضافة الي الفاعل

আয়াতের অর্থ হলন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ডাকেন তখন একে তোমাদের সাধারণ মানুষের ডাকার মত মনে করো না, যার সাড়া দেয়া, না দেয়া তোমাদের ইচ্ছাধীন নয়। বরং তখন সাড়া দেয়া ওয়াজিব। এমনকি সালাতরত অবস্থাতে থাকলেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক।
২. اضافة الي المفعول

আয়াতের অর্থ হলন যখন তোমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন প্রয়োজনে আহ্বান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তাঁর নাম নিয়ে “হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ” বলবে না। এটা বেআদবী, বরং সম্মানসূচক উপাধি “হে আল্লাহর রাসূল, হে আল্লাহ তা‘আলার নাবী” ইত্যাদি বলে ডাকবে। এরূপভাবে ডাকতে সূরা হুজুরাতেও নিষেধ করা হয়েছে।

التسلل অর্থ বের হয়ে যাওয়া, لواذ কোন কিছু গোপন রাখা যাতে কেউ না দেখে। অর্থাৎ মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈঠক থেকে চুপিসারে বের হয়ে যেত যাতে কেউ দেখতে না পায়। এদেরকে আল্লাহ তা‘আলা হুশিয়ারী দিয়ে বলছেন, তোমার যা করছো তা মানুষ দেখতে না পেলেও আল্লাহ তা‘আলা দেখছেন। এর যথার্থ প্রতিদান তিনিই দেবেন।

(عَنْ أَمْرِه۪) “তাঁর আদেশের” তাঁর আদেশ বলতে কার আদেশ বুঝানো হয়েছেন এ নিয়ে দুটি মত পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার আদেশ; কেউ বলেছেন, রাসূলের আদেশ। তবে উদ্দেশ্য একটাই, কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার আদেশগুলো পৌছে দেন, তাই রাসূলের আদেশ মানে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ। সুতরাং যারা রাসূলের আদেশ অমান্য করে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত, রাসূলের আদেশকে অমান্য করার কারণে তাদের ওপর ফেতনা আপতিত হবে অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।

فِتْنَةٌ অর্থাৎ শিরক, অকল্যাণ ও অন্তরের সে বক্রতা আপতিত হবে যা ঈমান থেকে বঞ্চিত করে। আর ঈমান থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলাফল হল জাহান্নাম, যাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ, সুন্নাত ও আদর্শ বর্জন করার কোন সুযোগ নেই। যে কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ অমান্য করে সুন্নত বর্জন করে কোন আমল করবে আল্লাহ তা‘আলা তার আমল কবূল করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:

مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে যা আমাদের নির্দেশিত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত। (সহীহ মুসলিম হা: ১৭১৮)

এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার ওপর কারো কথা প্রাধান্য দেয়া গুরুতর অপরাধ। সে ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন। ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন: আমি আশংকা করছি তোমাদের ওপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হবে। আমি বলছি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আর তোমরা বলছ আবূ বকর ও উমার বলেছেন। অর্থাৎ যেখানে আল্লাহ তা‘আলার রাসূলের কথা রয়েছে সেখানে আবূ বকর ও উমারের কথা কিভাবে নিয়ে আসছো?

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল বলেন: আমি ঐ সকল লোকদের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করি যারা (কোন হাদীসের) সনদ সহীহ হিসেবে জানে তার পরে (তা বাদ দিয়ে) সুফইয়ান সাওরীর কথার দিকে চলে যায়। অর্থাৎ হাদীস সহীহ জানা সত্ত্বেও তা বর্জন করে বিভিন্ন ইমাম সাহেবের কথা গ্রহণ করে। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন এবং বললেন: তোমরা কি জান ফেতনা কী? ফেতনা হলন শিরক, যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা পাওয়ার পর তা বর্জন করে তাহলে তার অন্তরে এমন বক্রতা সৃষ্টি হবে যা তাকে ধ্বংস করে দিবে।

(أَلَآ إِنَّ لِلّٰهِ)

অর্থাৎ সৃষ্টি, মালিক, পরিচালনাসহ সব কিছুর দিক দিয়ে আকাশ-জমিনের যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তা‘আলার। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করা উচিত।

(قَدْ يَعْلَمُ مَآ أَنْتُمْ عَلَيْهِ)

অর্থাৎ আনুগত্য, অবাধ্য বা অন্য যে কোন অবস্থাতে থাক না কেন আল্লাহ তা‘আলা সব জানেন। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ط وَمَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِيْ ظُلُمٰتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَّلَا يَابِسٍ إِلَّا فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ)

“জলে ও স্থলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তাঁর অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অঙ্কুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফূজে) নেই।” (সূরা আন‘আম ৬:৫৯)

সুতরাং যেদিন তোমরা তাঁর কাছে ফিরে যাবে সেদিন তিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার আমল সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন, আর সে অনুপাতে প্রতিদান দেবেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল তারা সমষ্টিগত কোন বৈঠকে থাকলে নেতার অনুমতি ছাড়া চলে যায় না।
২. যার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবে সে প্রয়োজন মনে করলে অনুমিত দিবে, অথবা দিবে না।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)‎-কে সাধারণ লোকের মত ডাকতে নিষেধ করা হয়েছে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের নির্দেশের অমান্য করা যাবে না।
৫. সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৬. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সকল বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।
৭. কিয়ামত দিবসে প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফলাফল দেয়া হবে।
৮. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অনুযায়ী আমল না করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

# এখানে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মুমিন বান্দাদেরকে আরো একটি আদব বা ভদ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ যেমন তোমরা আগমনের সময় অনুমতি নিয়ে আগমন করে থাকো, অনুরূপভাবে প্রস্থানের সময়ও আমার নবী (সঃ)-এর কাছে অনুমতি নিয়ে প্রস্থান করো। বিশেষ করে যখন কোন সমাবেশ হবে এবং কোন জরুরী বিষয়ের উপর আলোচনা চলবে। যেমন জুমআর নামায, ঈদের নামায, কোন জামাআত এবং পরামর্শ সভা ইত্যাদি। এরূপ স্থলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে অনুমতি না নেয়া পর্যন্ত তোমরা কখনো এদিক-ওদিক যাবে না। পূর্ণ মুমিনের এটাও একটা নিদর্শন।

এরপর মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তারা তাদের কোন কাজে বাইরে যাবার জন্যে তোমার কাছে অনুমতি চাইলে তাদের মধ্যে যাদেরকে ইচ্ছা তুমি অনুমতি দেবে এবং তাদের জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনাও করবে।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যখন কোন মজলিসে যাবে তখন সে যেন মজলিসের লোকদেরকে সালাম করে। আর যখন সেখান হতে চলে আসার ইচ্ছা করবে তখনো যেন সালাম দিয়ে আসে। মর্যাদার দিক দিয়ে দ্বিতীয় বারের সালাম প্রথমবারের সালামের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আৰু দাউদ (রঃ) ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন)

# হযরত যহহাক (রঃ) এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ‘হে মুহাম্মাদ (সঃ)!’ এবং ‘হে আবুল কাসেম (সঃ)!’ বলে আহ্বান করতো, যেমন তারা একে অপরকে ডেকে থাকে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এই বেআদবী হতে নিষেধ করে দেন। তাদেরকে তিনি বলেনঃ তোমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নাম ধরে ডাকো না। বরং হে আল্লাহর নবী (সঃ)!’ বা ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)!’ এই বলে ডাকবে। তাহলে তাঁর বুযর্গী, মর্যাদা ও অদিবের প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে। নিম্নলিখিত আয়াতগুলোও এই আয়াতের মতই। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে মুমিনগণ!” রাইনা (হে নির্বোধ) বলো না, এবং ‘উনযুর না’ (আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন!) বলো, আর শুনে রেখো, কাফিরদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (২: ১০৪) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! তোমরা নবী (সঃ)-এর কণ্ঠস্বরের উপর নিজেদের কণ্ঠস্বর উঁচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চ স্বরে কথা বল তার সাথে সেইরূপ উচ্চ স্বরে কথা বলো না, কারণ এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে।

যারা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নীচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্যে পরিশোধিত করেছেন; তাদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।

যারা ঘরের পিছন হতে তোমাকে উচ্চ স্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ। তুমি বের হয়ে তাদের নিকট আসা পর্যন্ত যদি তারা ধৈর্যধারণ করতো তবে তাই তাদের জন্যে উত্তম হতো; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম, দয়ালু।” (৪৯;২-৫)

সুতরাং এসব দ্বারা মুমিনদেরকে দ্রতা শিখানো হয়েছে যে, তাঁকে কিভাবে সম্বোধন করতে হবে, কিভাবে তার সাথে কথাবার্তা বলতে হবে, কিভাবে তার সাথে আলাপ-আলোচনা করতে হবে ইত্যাদি। এমনকি পূর্বে তো তার সাথে আলাপ-আলোচনা করার সময় সাদকা করার হুকুম ছিল। এই আয়াতের একটি ভাবার্থততা এই হলো। দ্বিতীয় ভাবার্থ হলোঃ রাসূল (সঃ)-এর দু’আকে তোমরা তোমাদের পরস্পরের দু’আর মত মনে করো না। তার দু’আতো কবুল হবেই। সুতরাং সাবধান! তোমরা আমার নবী (সঃ)-কে কষ্ট দিয়ো না। অন্যথায় তোমাদের বিরুদ্ধে কোন বদদু’আ যদি তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে তবে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে।

এর পূর্ববর্তী বাক্যের তাফসীরে মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) বলেন যে, জুমআর দিন খুৎবায় বসে থাকা মুনাফিকদের কাছে খুবই ভারী বোধ হতো। আর মসজিদে এসে যাওয়া এবং খুৎবা শুরু হয়ে যাবার পর কেউ নবী (সঃ)-এর অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারতো না। কারো বাইরে যাওয়ার একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়লে সে নবী (সঃ)-এর কাছে অনুমতি চাইতো এবং তিনি তাকে অনুমতি দিতেন। কেননা, খুত্বার সময় কথা বললে জুমআ বাতিল হয়ে যায়। তখন এই মুনাফিক আড়ে আড়েই দৃষ্টি বাঁচিয়ে সটকে পড়তো। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, জামাআতে যখন এই মুনাফিক থাকতো তখন একে অপরের আড়ালে হয়ে পালিয়ে যেতো। আল্লাহর নবী (সঃ) হতে এবং তার কিতাব হতে সরে যেতো। জামাআতের সারি হতে বেরিয়ে গিয়ে ইসলামের বিরোধিতায় উঠে পড়ে লেগে যেতো।

যে ব্যক্তি রাসূল (সঃ)-এর আদেশের, তাঁর সুন্নাতের, তাঁর হুকুমের, তার নীতির এবং তাঁর শরীয়তের বিরুদ্ধাচরণ করবে সে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে। মানুষের কথা ও কাজকে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সুন্নাত ও হাদীসের সাথে মিলানো উচিত। যদি তা তাঁর সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে তো তা ভাল। আর যদি সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয় তবে তা অবশ্যই অগ্রাহ্য।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করে যার উপর আমার আদেশ নেই তা অগ্রাহ্য।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে) প্রকাশ্যে বা গোপনে যে কেউই শরীয়তে মুহাম্মাদীর (সঃ) বিপরীত করে, তার অন্তরে কুফরী, নিফাক, বিদাআত ও মন্দের বীজ বপন করে দেয়া হয়। তাকে কঠিন শাস্তি দেয়া হয়, হয়তো দুনিয়াতেই হত্যা, বন্দী, হদ ইত্যাদির মাধ্যমে অথবা পরকালের পারলৌকিক শাস্তি দ্বারা।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “আমি এবং মানুষের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির ন্যায়, যে আগুন জ্বালালো। আর আগুন যখন তার চারপাশ আলোকিত করলো, পতঙ্গ ও যেসব প্রাণী আগুনে ঝাঁপ দেয় সেগুলো ঝাঁপ দিতে লাগলো। তখন সেই ব্যক্তি সেগুলোকে (আগুন থেকে ফিরাবার চেষ্টা করলো, তা সত্ত্বেও সেগুলো আগুনে পুড়ে মরে। সুতরাং এটাই আমার ও তোমাদের দৃষ্টান্ত। আমিও তোমাদের কোমর ধরে আগুন থেকে বাঁচাবার চেষ্টা করি, কিন্তু তোমরা তাতে পতিত হও। (হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম ফুসলিমও (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)

# আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, যমীন ও আসমানের মালিক, অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা এবং বান্দাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় কার্যাবলীর জান্তা একমাত্র আল্লাহ। (আরবি)-এর (আরবি) শব্দটি তাহকীক বা নিশ্চয়তা বুঝাবার জন্যে এসেছে। যেমন এর পূর্ববর্তী আয়াতে রয়েছে(আরবি)জায়গায় আছেঃ (আরবি) (৩৩:১৮) আর এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি) (৫৮: ১) অন্য একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেনঃ (আরবি) (৬:৩৩) আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবি) (২:১৪৪) ইত্যাদি। এই সমুদয় স্থানে এসেছে বা ক্রিয়ার বা নিশ্চয়তা বুঝাবার জন্যে। যেমন মুআযযিন বলে থাকেন (আরবি) এখানেও (আরবি)শব্দটি নিশ্চয়তা বুঝাবার জন্যেই এসেছে।

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তোমরা যাতে ব্যাপৃত রয়েছে তিনি তা জানেন। তোমরা যে অবস্থাতেই থাকে না কেন এবং যে আমল ও বিশ্বাসের উপর থাকে না কেন সবই তাঁর কাছে উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। আসমান ও যমীনের অণু পরিমাণ জিনিসও তাঁর কাছে গোপন নেই। তোমাদের আমল ও অবস্থা সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম বস্তুও তার কাছে প্রকাশমান। ছোট বড় সমস্ত জিনিস স্পষ্ট কিতাবে রক্ষিত রয়েছে। বান্দাদের ভাল-মন্দ সমস্ত কাজ তিনি পূর্ণভাবে পরিজ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা কাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকো অথবা গোপনে গোপনে কিছু করো না কেন, আল্লাহর কাছে কিছুই গোপন থাকবে না। প্রকাশ্য ও গোপনীয় সবই তাঁর কাছে সমান। চুপি চুপি কথা এবং উচ্চ স্বরের কথা সবই তাঁর কানে পৌঁছে যায়। সমস্ত প্রাণীর রিযকদাতা তিনিই। প্রত্যেক প্রাণীর প্রত্যেক অবস্থার খবর তিনিই রাখেন। প্রথম থেকেই সব কিছু লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রয়েছে। অদৃশ্যের চাবি তাঁরই হাতে আছে, যা তিনি ছাড়া আর কেউই জানে না। জলে ও স্থলে অবস্থানরত সব কিছুর খবর একমাত্র তিনিই রাখেন। গাছের একটি পাতা ঝরে পড়লে সেটাও তাঁর অজানা থাকে না। যমীনের অন্ধকারের মধ্যে কোন দানা নেই এবং শুষ্ক ও সিক্ত এমন কোন জিনিস নেই যা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই। এই বিষয়ের বহু আয়াত এবং হাদীস রয়েছে। যখন সৃষ্টজীব আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে, ঐ সময় তাদের সামনে ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম পুণ্য ও পাপ পেশ করা হবে। তারা তাদের পূর্বের ও পরের সমস্ত আমল দেখতে পাবে। আমলনামা তারা ভীত ও কম্পিতভাবে দেখবে এবং ওর মধ্যে তাদের সারা জীবনের কার্যাবলী দেখতে পেয়ে অত্যন্ত বিস্ময়ের সুরে বলবেঃ “এটা কেমন কিতাব যে, এতে বড় তত বড়ই এমনকি ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম কোন কিছুও বাদ পড়েনি!” যে যা করেছে তার সবই সেখানে বিদ্যমান পাবে। যেমন মহামহিমান্বিত ও প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে কি অগ্রে পাঠিয়েছে এবং কি পশ্চাতে রেখে গিয়েছে।” (৭৫: ১৩) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আর হাযির করা হবে আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভাগ্য আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! এটা ছোট বড় কিছুই বাদ দেয় না; রবং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সামনে হাযির পাবে; তোমার প্রতিপালক কারো প্রতি যুলুম করেন না।” (১৮:৪৯)

এজন্যেই মহান আল্লাহ এখানে বলেনঃ যেদিন তারা তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে সেদিন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন তারা যা করতো। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।

اللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#983)
[Asking Permission to leave when They are doing something together .]
www.motaher21.net
Sura:24
Para:18
Sura: An- Noor.
Ayat: 62-64

24:62

اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ اِذَا کَانُوۡا مَعَہٗ عَلٰۤی اَمۡرٍ جَامِعٍ لَّمۡ یَذۡہَبُوۡا حَتّٰی یَسۡتَاۡذِنُوۡہُ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَاۡذِنُوۡنَکَ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ فَاِذَا اسۡتَاۡذَنُوۡکَ لِبَعۡضِ شَاۡنِہِمۡ فَاۡذَنۡ لِّمَنۡ شِئۡتَ مِنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمُ اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۶۲﴾

The believers are only those who believe in Allah and His Messenger and, when they are [meeting] with him for a matter of common interest, do not depart until they have asked his permission. Indeed, those who ask your permission, [O Muhammad] – those are the ones who believe in Allah and His Messenger. So when they ask your permission for something of their affairs, then give permission to whom you will among them and ask forgiveness for them of Allah . Indeed, Allah is Forgiving and Merciful.

 

Asking Permission to leave when They are doing something together

Allah says:

إِنَّمَا الْمُوْمِنُونَ الَّذِينَ امَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَإِذَا كَانُوا مَعَهُ عَلَى أَمْرٍ جَامِعٍ لَمْ يَذْهَبُوا حَتَّى يَسْتَأْذِنُوهُ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ أُوْلَيِكَ الَّذِينَ يُوْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِذَا اسْتَأْذَنُوكَ لِبَعْضِ شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِيْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

The believers are only those who believe in Allah and His Messenger; and when they are with him on some common matter, they go not away until they have asked his permission. Verily, those who ask your permission, those are they who (really) believe in Allah and His Messenger. So if they ask your permission for some affairs of theirs, give permission to whom you will of them, and ask Allah for their forgiveness. Truly, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

This is another matter of etiquette to which Allah has guided His believing servants. Just as He commanded them to seek permission when entering, He also commanded them to seek permission when leaving, especially when they are doing something together with the Messenger, such as the Friday, `Id, or congregational prayers, or a meeting for the purpose of consultation and so on.

Allah commanded them not to leave him in these situations until they had asked his permission. If they did this, then they were of the true believers. Then Allah commanded His Messenger to give permission when someone asked for it, if he wanted to.

He said:

شَأْنِهِمْ فَأْذَن لِّمَن شِيْتَ مِنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمُ اللَّهَ

give permission to whom you will of them, and ask Allah for their forgiveness.

Abu Dawud reported that Abu Hurayrah said,

“The Messenger of Allah said:

إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَجْلِسِ فَلْيُسَلِّمْ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُومَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الاُْولَى بِأَحَقَّ مِنَ الاْخِرَةِ

When any of you joins a gathering, let him say Salam, and when he wants to leave, let him say Salam. The former is not more important than the latter.

This was also recorded by At-Tirmidhi and An-Nasa’i;

At-Tirmidhi said:”It is a Hasan Hadith.

24:63

لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَکُمۡ کَدُعَآءِ بَعۡضِکُمۡ بَعۡضًا ؕ قَدۡ یَعۡلَمُ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ یَتَسَلَّلُوۡنَ مِنۡکُمۡ لِوَاذًا ۚ فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ اَوۡ یُصِیۡبَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۶۳﴾

Do not make [your] calling of the Messenger among yourselves as the call of one of you to another. Already Allah knows those of you who slip away, concealed by others. So let those beware who dissent from the Prophet’s order, lest fitnah strike them or a painful punishment.

 

The Etiquette of addressing the Prophet

Allah says:

لَاا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا

Make not the calling of the Messenger among you as your calling one of another.

Ad-Dahhak said, reporting from Ibn Abbas:

“They used to say, `O Muhammad,’ or `O Abu Al-Qasim,’ but Allah forbade them to do that, as a sign of respect towards His Prophet, and told them to say, `O Prophet of Allah,’ `O Messenger of Allah.”‘

This was also the view of Mujahid and Sa`id bin Jubayr.

Qatadah said:

“Allah commanded that His Prophet should be treated with respect and honor, and that he should be a leader.”

Muqatil said concerning the Ayah:
لَاا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا
(Make not the calling of the Messenger among you as your calling one of another).

“When you address him, do not say, `O Muhammad,’ or `O son of `Abdullah’; rather honor him and say, `O Prophet of Allah,’ or, `O Messenger of Allah.’

لَاا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا

Make not the calling of the Messenger among you as your calling one of another.”

A second view concerning the meaning of the Ayah is that it means

`do not think that if he prays against you it is like when anyone else prays against you, because his prayers will be answered; so beware lest he prays against you and you will be doomed.’

Ibn Abi Hatim recorded this from Ibn Abbas, Al-Hasan Al-Basri and Atiyyah Al-`Awfi.

And Allah knows best.

قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنكُمْ لِوَاذًا

Allah knows those of you who slip away under shelter.

Muqatil bin Hayyan said,

“This refers to the hypocrites who used to find it too difficult to listen to the Khutbah on Fridays, so they would hide behind some of the Companions of Muhammad and sneak out of the Masjid.

It was not proper for a man to leave on Fridays once the Khutbah began, unless he had permission from the Prophet. If one of them wanted to leave, he would make a gesture to the Prophet with his finger, and the Prophet would give permission without the man speaking. This is because if the Prophet was giving the Khutbah and a man spoke, it would invalidate his Friday prayer.” As-Suddi said, “If they were with him for a congregational prayer, they would hide behind one another so that he could not see them.”
The Prohibition of going against the Messenger’s Commandment

Then Allah says:

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ

And let those beware who oppose the Messenger’s commandment,

This means going against the commandment of the Prophet, which is his way, methodology and Sunnah. All words and deeds will be measured against his words and deeds; those that are in accordance with his words and deeds will be accepted, and whatever does not match up will be rejected, no matter who the person is who said and did them.

It was recorded in the Two Sahihs and elsewhere that the Messenger of Allah said:

مَنْ عَمِلَ عَمَلً لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ

Whoever does a deed that is not in accordance with this matter of ours will have it rejected.

meaning, let those beware who go against the Shariah of the Messenger, in secret and in the open,

أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ

lest some Fitnah should befall them,

i.e., lest some disbelief or hypocrisy or innovation enter their hearts.

أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

or a painful torment be inflicted on them.

means in this world afflicting them with capital punishment, or by law of prescribed punishment, or by confinement in prison, or so on.

Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said,

“The Messenger of Allah said:

مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهَا جَعَلَ الْفَرَاشُ وَهَذِهِ الدَّوَابُّ اللَّيِي يَقَعْنَ فِي النَّارِ يَقَعْنَ فِيهَا وَجَعَلَ يَحْجُزُهُنَّ وَيَغْلِبْنَهُ فَيَقْتَحِمْنَ فِيهَا قَالَ فَذَلِكَ مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ أَنَا اخِذٌ بِحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ هَلُمَّ عَنِ النَّارِ فَتَغْلِبُونِي وَتَقْتَحِمُونَ فِيهَا

The parable of me and you is as the example of a man who kindled a fire and when it illuminated all around him, moths and other creatures started falling into the fire, and he was trying to stop them but they overwhelmed him and still kept falling in. This is the parable of me and you. I am trying to restrain you and keep you away from the fire, but you overwhelm me and fall in.

This was also narrated by Al-Bukhari and Muslim

24:64

اَلَاۤ اِنَّ لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ قَدۡ یَعۡلَمُ مَاۤ اَنۡتُمۡ عَلَیۡہِ ؕ وَ یَوۡمَ یُرۡجَعُوۡنَ اِلَیۡہِ فَیُنَبِّئُہُمۡ بِمَا عَمِلُوۡا ؕ وَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿٪۶۴﴾

Unquestionably, to Allah belongs whatever is in the heavens and earth. Already He knows that upon which you [stand] and [knows] the Day when they will be returned to Him and He will inform them of what they have done. And Allah is Knowing of all things.

 

Allah knows your Condition

Allah says:

أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالاَْرْضِ

Certainly, to Allah belongs all that is in the heavens and the earth.

Allah tells us that He is the Sovereign of the heavens and the earth, and He knows the seen and the unseen. He knows what His servants do in secret and in the open.

So He says:

قَدْ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ

Indeed, He knows your condition,

He knows and it is visible to Him, and not one iota is hidden from him.

This is like the Ayah:

وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ

الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ

وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ

إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

And put your trust in the All-Mighty, the Most Merciful, Who sees you when you stand up. And your movements among those who fall prostrate. Verily, He, only He, is the All-Hearer, the All-Knower. (26:217-220)

وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُواْ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الاٌّرْضِ وَلَا فِى السَّمَأءِ وَلَا أَصْغَرَ مِن ذَلِكَ وَلا أَكْبَرَ إِلاَّ فِى كِتَابٍ مُّبِينٍ

Neither you do any deed nor recite any portion of the Qur’an, nor you do any deed but We are Witness thereof when you are doing it. And nothing is hidden from your Lord; (even) the weight of a speck of dust on the earth or in the heaven. Not what is less than that or what is greater than that but is in a Clear Record. (10:61)

أَفَمَنْ هُوَ قَأيِمٌ عَلَى كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ

Is then He Who takes charge of every person and knows all that he has earned. (13:33)

He sees all that His servants do, good and evil alike.

And Allah says:

أَلا حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ

Surely, even when they cover themselves with their garments, He knows what they conceal and what they reveal. (11:5)

سَوَاءٌ مِّنْكُمْ مَّنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَنْ جَهَرَ بِهِ

It is the same (to Him) whether any of you conceals his speech or declares it openly). (13:10)

وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الاٌّرْضِ إِلاَّ عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِى كِتَابٍ مُّبِينٍ

And no moving creature is there on earth but its provision is due from Allah. And He knows its dwelling place and its deposit. All is in a Clear Book. (11:6)

وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَأ إِلاَّ هُوَ وَيَعْلَمُ مَا فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِى ظُلُمَـتِ الاٌّرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلاَّ فِى كِتَـبٍ مُّبِينٍ

And with Him are the keys of the Unseen, none knows them but He. And He knows whatever there is in the land and in the sea; not a leaf falls, but He knows it. There is not a grain in the darkness of the earth nor anything fresh or dry, but is written in a Clear Record. (6:59)

And there are many Ayat and Hadiths which say similar things.

وَيَوْمَ يُرْجَعُونَ إِلَيْهِ

the Day when they will be brought back to Him,

means, the day when all creatures will be brought back to Allah, which is the Day of Resurrection.

فَيُنَبِّيُهُم بِمَا عَمِلُوا

then He will inform them of what they did.

means, He will tell them everything they did in this life, major and minor, significant and insignificant.

As Allah says:

يُنَبَّأُ الاِنسَـنُ يَوْمَيِذِ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ

On that Day man will be informed of what he sent forward (of deeds), and what he left behind. (75:13)

وَوُضِعَ الْكِتَـبُ فَتَرَى الْمُجْرِمِينَ مُشْفِقِينَ مِمَّا فِيهِ وَيَقُولُونَ يوَيْلَتَنَا مَا لِهَـذَا الْكِتَـبِ لَا يُغَادِرُ صَغِيرَةً وَلَا كَبِيرَةً إِلاَّ أَحْصَاهَا وَوَجَدُواْ مَا عَمِلُواْ حَاضِرًا وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا

And the Book will be placed, and you will see the criminals, fearful of that which is therein. They will say:”Woe to us! What sort of Book is this that leaves neither a small thing nor a big thing, but has recorded it with numbers!”

And they will find all that they did, placed before them, and your Lord treats no one with injustice. (18:49)

Allah says here:

وَيَوْمَ يُرْجَعُونَ إِلَيْهِ فَيُنَبِّيُهُم بِمَا عَمِلُوا

وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

the Day when they will be brought back to Him, then He will inform them of what they did. And Allah is All-Knower of everything.

Praise be to Allah, the Lord of all that exists, and we ask Him to help us achieve perfection.

The end of the Tafsir of Surah Al-Nur. All praise and thanks are due to Allah

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply