(বই#১০০০) [নূহের সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যা মনে করেছিল।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০০)
[নূহের সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যা মনে করেছিল।]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
১০৫-১২২ নং আয়াত:-
২৬:১০৫
کَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوۡحِۣ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾ۚۖ
নূহের সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যা মনে করেছিল।
২৬:১০৬
اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ نُوۡحٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۰۶﴾ۚ
যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না?
২৬:১০৭
اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۰۷﴾ۙ
নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রসূল।
২৬:১০৮
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۰۸﴾ۚ
অতএব আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
২৬:১০৯
وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۰۹﴾ۚ
২৬:১১০
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۱۰﴾ؕ
সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
২৬:১১১
قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ لَکَ وَ اتَّبَعَکَ الۡاَرۡذَلُوۡنَ ﴿۱۱۱﴾ؕ
তারা জবাব দিল, “আমরা কি তোমাকে মেনে নেবো, অথচ নিকৃষ্টতম লোকেরা তোমার অনুসরণ করছে?”
২৬:১১২
قَالَ وَ مَا عِلۡمِیۡ بِمَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۱۲﴾ۚ
নূহ বললো, “তাদের কাজ কেমন, আমি কেমন করে জানবো।
২৬:১১৩
اِنۡ حِسَابُہُمۡ اِلَّا عَلٰی رَبِّیۡ لَوۡ تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۱۳﴾ۚ
তাদের হিসেব গ্রহণ করা তো আমার প্রতিপালকের কাজ। হায়! যদি তোমরা একটু সচেতন হতে।
২৬:১১৪
وَ مَاۤ اَنَا بِطَارِدِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ۚ
যে ঈমান আনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।
২৬:১১৫
اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۱۵﴾ؕ
আমি তো কেবল একজন স্পষ্ট সতর্ককারী।’
২৬:১১৬
قَالُوۡا لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَہِ یٰنُوۡحُ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمَرۡجُوۡمِیۡنَ ﴿۱۱۶﴾ؕ
ওরা বলল, ‘হে নূহ! তুমি যদি নিবৃত্ত না হও, তবে তোমাকে অবশ্যই প্রস্তরাঘাতে নিহত করা হবে।’
২৬:১১৭
قَالَ رَبِّ اِنَّ قَوۡمِیۡ کَذَّبُوۡنِ ﴿۱۱۷﴾ۚۖ
নূহ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে মিথ্যাবাদী বলছে।
২৬:১১৮
فَافۡتَحۡ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَہُمۡ فَتۡحًا وَّ نَجِّنِیۡ وَ مَنۡ مَّعِیَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۸﴾
‘কাজেই আপনি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সাথে যেসব মুমিন আছে, তাদেরকে রক্ষা করুন।
২৬:১১৯
فَاَنۡجَیۡنٰہُ وَ مَنۡ مَّعَہٗ فِی الۡفُلۡکِ الۡمَشۡحُوۡنِ ﴿۱۱۹﴾ۚ
শেষ পর্যন্ত আমি একটি বোঝাই করা নৌযানে তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে বাঁচিয়ে নিলাম,
২৬:১২০
ثُمَّ اَغۡرَقۡنَا بَعۡدُ الۡبٰقِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾ؕ
এরপর আমরা বাকী সবাইকে ডুবিয়ে দিলাম।
২৬:১২১
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۲۱﴾
এতে তো অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই ঈমানদার নয়।
২৬:১২২
وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۲۲﴾٪
আর আপনার রব, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

সংক্ষিপ্ত আলোচনা (১০৫-১২২) : এ সূরায় যেমন হযরত মূসা (আ.)-এর কাহিনী থেকে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর কাহিনীতে ঐতিহাসিক বিবরণের উল্টো উত্তরণ ঘটেছে, তেমনি উল্টো উত্তরণ ঘটেছে হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর কাহিনী থেকে হযরত নূহের কাহিনীতে। কারণ ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা এখানে লক্ষ্য নয়, বরং লক্ষ্য হলাে শিরক ও ইসলামের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানের পরিণাম বর্ণনা করা ও তার শিক্ষা তুলে ধরা। হযরত মূসা ও হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর কাহিনীর মতো হযরত নূহ(আ.)-এর কাহিনীও কোরআনের একাধিক সূরায় বর্ণিত হয়েছে। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা সহকারে এ কাহিনী রয়েছে সূরা আরাফ, যেখানে হযরত আদমের বেহেশত থেকে অবতরণ থেকে শুরু করে নবী ও রসূলদের বৃত্তান্ত সংক্ষেপে আলােচিত হয়েছে। সেখানে সংক্ষেপে হযরত নূহ(আ.) কর্তৃক স্বজাতিকে দেয়া তাওহীদের দাওয়াত, আখেরাতের ভয়াবহ আযাব থেকে তাদেরকে সতর্ককরণ, তার জাতি কর্তৃক তাকে পথভ্রষ্ট বলে আখ্যায়িত করণ, তাদের কাছে ফেরেশতার পরিবর্তে একজন মানুষকে রসূল হিসাবে প্রেরণে বিস্ময় প্রকাশ, তাকে মিথ্যুক সাব্যন্ত করণ, আর এ কারণে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক তাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে শাস্তি দান এবং হযরত নূহ ও তার সাথীদেরকে সে শাস্তি থেকে অব্যাহতি দানের কাহিনী সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। সূরা ইউনুসেও হযরত নূহের ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে শুধু তার জাতির পক্ষ থেকে তাকে চ্যালেঞ্জ প্রদান ও মিথ্যুক সাব্যস্তকরণ, অতপর তাকে ও তার সাথীদেরকে জাহাজের মাধ্যমে অব্যাহতি দিয়ে বাদ বাকী সকলকে ডুবিয়ে মারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর সূরা হুদে দেয়া হয়েছে বন্যার বিবরণ। বন্যায় ডুবে মরা অন্যান্যদের সাথে হযরত নূহ(আ.)-এর যে ছেলেটা মারা গিয়েছিলাে তার সম্পর্কে বলার পর আল্লাহর কাছে হযরত নূহের দোয়া এবং বন্যার আগে তার সাথে তার জাতির তাওহীদ বিষয়ক বিতর্কের বিস্তারিত বিবরণ। সূরা মােমেনেও হযরত নূহের কিসসা বর্ণিত হয়েছে। হযরত নূহ(আ.) কর্তৃক স্বজাতিকে এক আল্লাহর এবাদাতের আহ্বান, হযরত নূহ(আ.) অন্যান্যদের মতাে মানুষ হওয়া সত্তেও নিজেকে সবার চেয়ে ভালাে মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান বলে তার জাতির পক্ষ থেকে আপত্তি জ্ঞাপন ও বিরােধিতা, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছে করলে ফেরেশতা পাঠাতে পারতেন এবং তিনি একজন উন্মাদ এই বলে তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান, অবশেষে হযরত নূহ(আ.) কর্তৃক আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা এবং বন্যা ও জাহাজ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ইংগিত এই কিসসার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ হযরত লুতের জাতির কাহিনীর পাশাপাশি আনুষংগিকভাবেই এসেছে, এখানেও তেমনি এসেছে। এখানে এই কাহিনীর যে দিকটা বিশেষভাবে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে তা হলাে, হযরত নূহ(আ.) কর্তৃক তার জাতিকে আল্লাহকে ভয় করার দাওয়াত দেয়া, তার পক্ষ থেকে এই মর্মে ঘােষণা দেয়া যে, তিনি তাদেরকে হেদায়াত করার জন্যে তাদের কাছ থেকে কোনাে প্রতিদান চান না এবং তিনি সেই দরিদ্র মােমেনদেরকে কখনাে তাড়িয়ে দেবেন না যাদেরকে দেখে জাতির প্রতাপশালী ও ধনী লােকেরা নাক সিটকাতাে। বলাবাহুল্য রাসূল(স.) মক্কায় অবিকল এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন ছিলেন। সবার শেষে এসেছে আল্লাহর কাছে এই মর্মে হযরত নূহের দোয়া যে, তিনি যেন তার সাথে তার জাতির একটা চূড়ান্ত মীমাংসা করে দেন, অতপর আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফেরদেরকে পানিতে ডুবিয়ে মারা ও মােমেনদেরকে মুক্তিদানের মাধ্যমে দোয়া কবুল করার বিবরণ।

*বিভিন্ন পর্যায়ে নুহ (আ.)-এর দাওয়াত : আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘নূহের জাতি রসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিলাে। এ হচ্ছে ঘটনার শেষ পর্যায়। এটা দিয়েই কিসসা শুরু করা হয়েছে, যাতে বুঝানাে যায় যে, রসূলকে অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান শুরু থেকে শেষ পর্যন্তই অব্যাহত ছিলাে। এরপর বিশদ বিবরণ দেয়া শুরু হয়েছে। হযরত নূহ(আ.)-এর জাতি হযরত নূহ(আ.) ছাড়া আর কাউকে অবিশ্বাস করেনি, তবুও বলা হয়েছে যে, তারা রসূলদেরকে অবিশ্বাস করেছিলাে। কেননা নবুওত ও রেসালাত মূলত একটাই। রিসালাত হলাে এক আল্লাহর ইবাদত ও দাসত্বের দাওয়াতের আরেক নাম। যে ব্যক্তি কোনাে একজন রসূলের রেসালাতকেও অস্বীকার করে, সে আসলে সকল নবী রসূলকেই অস্বীকার করে। কারণ এক আল্লাহর এবাদাত ও দাসত্ব মেনে নেয়ার দাওয়াত সকল নবীই দিয়েছেন। কোরআন একাধিক জায়গায় এ দাওয়াতের উল্লেখ করেছে। কেননা এটা ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের অন্যতম মূলনীতি। ইসলামী দাওয়াত ও আন্দোলন মাত্রেই এ মূলনীতির অনুসরণ করে থাকে। আর এরই ভিত্তিতে সমগ্র মানব জাতি অমুসলমান ও মুসলমান- এই দুই শিবিরে বিভক্ত। এ বিভক্তি সকল নবী ও রসূলের যুগে ছিলাে, আজও আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। মুসলমানের দৃষ্টিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত প্রত্যেক আকীদা তার উম্মাতভূক্ত। হযরত আদম(আ.)-এর মাধ্যমে মানব জাতির প্রথম আবির্ভাব থেকে সর্বশেষ তাওহীদী ধর্ম পর্যন্ত সকল নবী ও সকল আসমানী কিতাবের অনুসারীরাই মুসলিম। আর যে কোনাে ও নবীর প্রতি অবিশ্বাসীরাই কাফের ও অমুসলিম । যারা মােমেন ও মুসলমান, তারা সকল নবী ও রসূলকেই মানে ও ভক্তি করে। কেননা সকল নবীই তাওহীদবাদী। সকলেই এক আল্লাহর দাওয়াতের প্রবক্তা। একজন মুসলমানের দৃষ্টিতে মানব জাতি বহু জাতি, গােষ্ঠী, বর্ণ, বংশ ও দেশে বিভক্ত নয়। মানব জাতি শুধু দুটো ভাগে বিভক্ত, হকপন্থী ও বাতিল পন্থী । মুসলমান সব সময় হকপন্থীদের পক্ষে এবং বাতিলপন্থীদের বিপক্ষে তা সে যে কোনাে দেশের ও যে কোনাে যুগেরই হােক না কেন। এভাবে ইতিহাসের সকল যুগে মুসলমানের মাপকাঠি ও দৃষ্টিভংগি একই থাকে। তার দৃষ্টিতে বর্ণ, বংশ, ভাষা, ভৌগলিক সীমারেখা ও আত্মীয়তা ইত্যাদি যাবতীয় সংকীর্ণ গন্ডীর উর্ধে থাকে বিচার বিবেচনা ও মূল্যবােধ। সে শুধু ঈমান ও ইসলামের মাপকাঠিতে সবাইকে মাপে ও আপন পর বাছ বিচার করে। নূহ জাতি রসূলকে অবিশ্বাস করেছিলাে…'(আয়াত ১০৫-১১০) এ আয়াত কটাতেই হযরত নূহ(আ.)-এর দাওয়াতের নির্যাস তুলে ধরা হয়েছে। এই দাওয়াত তাদের ভাই নূহ তাদেরকে দিয়েছিলাে। অথচ তারা এই ভ্রাতৃত্বেরও কোনাে তােয়াক্কা না করে তা প্রত্যাখ্যান করলাে। অথচ ভ্রাতৃত্বের দাবী অনুসারে তাদের উচিৎ ছিল এই দাওয়াতের প্রতি ঈমান আনা। কিন্তু তারা এই ভ্রাতৃত্বের কোনাে কদর করলাে না এবং তাদের ভাই-এর দাওয়াতের প্রতি তাদের মন নরম হলো না। নূহ বললাে, ‘তোমরা কি ভয় করাে না?’ অর্থাৎ তােমরা যা করছে, তার পরিণামকে কি তােমরা ভয় করাে না। তােমাদের মনে কি আল্লাহর কোনাে ভয় নেই? আল্লাহভীতির এই উদাত্ত আহ্বান সমগ্র সূরা জুড়েই অব্যাহত রয়েছে। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা ফেরাউন সম্পর্কেও বলেছেন। হযরত মূসা(আ.)ও এভাবেই ফেরাউনকে সম্বােধন করেছিলেন। সকল রসূলই এভাবেই দাওয়াতের সূচনা করেছেন। আমি তোমাদের জন্যে একজন বিশ্বস্ত রাসূল। আমি তােমাদের সাথে কোনাে কারচুপি, ধোকা প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতা করছি না, তােমাদের কাছে যে দাওয়াত পৌছানাের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে, আমি তার কিছুমাত্র কম বা বেশী পৌছাচ্ছি না। অতএব তােমরা আল্লাহকে ভয় করাে এবং আমার অনুসরণ করো। এভাবেই বারবার তাদেরকে আল্লাহর ভয়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে। আর এই আল্লাহভীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানাে হয়েছে। অতপর তাদেরকে দুনিয়া ও দুনিয়াবী স্বার্থের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করা হয়েছে। একজন নবী হিসাবে তিনি যে তাদেরকে এক আল্লাহর এবাদাত আনুগত্যের দাওয়াত দিচ্ছেন, তার বিনিময়ে তিনি তাদের কাছে কোনাে পারিশ্রমিক চান না, তিনি এর পারিশ্রমিক শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই চান, যিনি এই দাওয়াতের আদেশ দিয়েছেন ও এই কাজে তাকে নিযুক্ত করেছেন। পারিশ্রমিক না চাওয়ার ওপর এতাে জোর দেয়ার দ্বারা বুঝা যায় যে, সঠিক দ্বীনী দাওয়াত ও তাবলীগের জন্যে এটা চিরদিনই অত্যন্ত জরুরী। ইসলামের দাওয়াতের সাথে অন্যান্য বাতিল ধর্মমতের প্রচারক ও পুরােহিতদের প্রচারকার্যের পার্থক্য এখানেই সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

১০৫-১১০ নং আয়াতের তাফসীর

ভূ-পৃষ্ঠে সর্বপ্রথম যখন মূর্তি-পূজা শুরু হয় এবং জনগণ শয়তানী পথে চলতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর স্থির প্রতিজ্ঞ নবীদের ক্রম হযরত নূহ (আঃ)-এর দ্বারা সূচনা করেন। তিনি জনগণকে আল্লাহর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেন। কিন্তু তবুও তারা তাদের দুষ্কর্ম হতে বিরত হলো না। গায়রুল্লাহর ইবাদত তারা পরিত্যাগ করলো না। বরং উল্টোভাবে হযরত নূহ (আঃ)-কেই তারা মিথ্যাবাদী বললো, তাঁর শত্রু হয়ে গেল এবং তাঁকে কষ্ট দিতে থাকলো। হযরত নূহ (আঃ)-কে অবিশ্বাস করার অর্থ যেন সমস্ত নবীকেই অস্বীকার করা। এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “নূহ (আঃ)-এর কওম রাসূলদের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল। যখন তাদের ভ্রাতা নূহ (আঃ) তাদেরকে বললো- তোমরা কি সাবধান হবে না? আমি তো তোমাদের জন্যে এক বিশ্বস্ত রাসল। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর। আর জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের নিকট এর জন্যে কোন প্রতিদান চাই না। আমার পুরস্কার তো শুধু জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকটই আছে। সুতরাং তোমাদের উচিত আল্লাহকে ভয় করা এবং আমার আনুগত্য করা। আমার সত্যবাদিতা, আমার শুভাকাঙ্ক্ষা তোমাদের উপর উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সাথে সাথে আমার বিশ্বস্ততাও তোমাদের কাছে পূর্ণভাবে প্রকাশমান।

১১১-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত নূহ (আঃ)-এর কওম তাঁর পয়গামের উত্তর দেয় যে, কতকগুলো ইতর শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসারী হয়েছে, কাজেই তাঁর অনুসরণ তারা কি করে করতে পারে? তাদের একথার জবাবে আল্লহর নবী হযরত নূহ (আঃ) বলেনঃ আমার এটা দায়িত্ব নয় যে, যে আমার আহ্বানে সাড়া দেবে আমি তার পেশা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। আভ্যন্তরীণ অবস্থার সংবাদ রাখা এবং হিসাব গ্রহণ আল্লাহ তা’আলারই কাজ। বড়ই দুঃখজনক ব্যাপার যে, তোমাদের বুদ্ধিটুকুও নেই! তোমাদের এ চাহিদা পূরণ করা আমার সাধ্যের অতিরিক্ত। তা এই যে, আমার মজলিস হতে আমি মিসকীনদেরকে দূরে সরিয়ে দিই। মুমিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। আমি তো শুধুমাত্র একজন স্পষ্ট সতর্ককারী। যে আমাকে মানবে সে-ই আমার লোক। আর যে আমাকে মানবে তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। যে আমার দাওয়াত কবুল করবে সে আমার এবং আমি তার, সে ইতর হোক বা ভদ্রই হোক এবং ধনী হোক বা দরিদ্রই হোক।

১১৬-১২২ নং আয়াতের তাফসীর

দীর্ঘদিন ধরে হযরত নূহ (আঃ) তাঁর কওমের মধ্যে অবস্থান করেন। দিন-রাত তাদেরকে তিনি প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহর পথে আহ্বান করতে থাকেন। কিন্তু যতই তিনি সৎ কর্মে বেড়ে চলেন ততই তারা মন্দ কর্মে এগিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত শক্তির দাপট দেখিয়ে বলেঃ “যদি তুমি আমাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া বন্ধ না কর তবে আমরা তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করবো।” তিনিও তখন তাদের বিরুদ্ধে মহান আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দেন। তিনি বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো আমাকে অস্বীকার করছে। সুতরাং আপনি আমার ও তাদের মধ্যে স্পষ্ট মীমাংসা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সাথে যেসব মুমিন রয়েছে তাদেরকে রক্ষা করুন।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর প্রার্থনা কবুল করেন এবং মানুষ, জীবজন্তু ও আসবাবপত্রে ভরপুর নৌকায় আরোহণের নির্দেশ দেন। এরপর আসমান ও যমীন হতে প্লাবন এসে পড়ে এবং ভূ-পৃষ্ঠের সমস্ত কাফিরের মূলোৎপাটিত হয়। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই মুমিন নয়। আল্লাহ পরাক্রমশালী, আবার সাথে। সাথে তিনি পরম দয়ালুও বটে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন আল আ’রাফ ৫৯-৬৪, ইউনুস ৭১-৭৩ , হূদ ২৫-৪৮ , বনী ইসরাঈল ৩ , আল আম্বিয়া ৭৬-৭৭ , আল মু’মিনুন ২৩-৩০ , আল ফুরকান ৩৭ আয়াত এবং এছাড়া নূহ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত স্থানগুলো সামনে রাখুনঃ আল আনকাবুত ১৪-১৫ , আস সাফফাত ৭৫-৮২ , আল কামার ৯-১৫ আয়াত এবং সূরা নূহ সম্পূর্ণ।

# যদিও তারা একজন মাত্র রসূলকে অস্বীকার করেছিল কিন্তু যেহেতু রসূলকে অস্বীকার করা আসলে তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে পয়গাম নিয়ে এসেছেন তাকে অস্বীকার করা হয়, তাই যে ব্যক্তি বা দল কোন একজন রসূলকেও অস্বীকার করে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে সকল রসূলকে অস্বীকারকারীতে পরিণত হয়। এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত সত্য। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পদ্ধতিতে একথা বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি তাদেরকেও কাফের গণ্য করা হয়েছে যারা কেবলমাত্র একজন নবীকে অস্বীকার করতো এবং অন্যান্য সকল নবীকে মানতো। এর কারণ হচ্ছে, যে ব্যক্তি রিসালাতের মূল পয়গাম মেনে নেয় সে অনিবার্যভাবে প্রত্যেক রসূলকে মেনে নেবে। কিন্তু যে ব্যক্তি কোন একজন রসূলকে অস্বীকার করে সে যদি অন্য সকল রসূলকে মানেও তাহলে কোন গোত্র, দল বা সংকীর্ণ স্বার্থপ্রীতি অথবা পূর্ব পুরুষদের অনুসৃতির কারণেই মানে, রিসালাতের মূল পয়গামকে মানে না। অন্যথায় একই সত্য একজন পেশ করলে মেনে নেবে এবং অন্যজন পেশ করলে অস্বীকার করবে, এটা কখনো সম্ভব ছিল না।

# অন্যান্য স্থানে হযরত নূহ তাঁর নিজের জাতিকে যে প্রাথমিক সম্বোধন করেছিলেন তার শব্দাবলী নিম্নরূপঃ

اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ أَفَلَا تَتَّقُونَ

“আল্লাহর বন্দেগী করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই, তাহলে তোমরা কি ভয় করো? ”(আল মু‘মিনুন ২৩ আয়াত)

اعْبُدُوا اللَّهَ وَاتَّقُوهُ وَأَطِيعُونِ

“আল্লাহর বন্দেগী করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।” ( নূহ ৩ আয়াত)

তাই এখানে হযরত নূহের এ উক্তির অর্থ নিছক ভীতি নয় বরং আল্লাহ‌ ভীতি। অর্থাৎ তোমাদেরও কি আল্লাহর ভয় নেই? তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের বন্দেগী করার সময় তোমরা একটুও ভেবে দেখো না, এ বিদ্রোহাত্মক নীতির পরিণাম কি হবে? দাওয়াতের সূচনায় ভয় দেখাবার কারণ হচ্ছে এই যে, যতক্ষণ নাকোন ব্যক্তি বা দলকে তার ভুল নীতির অশুভ পরিণামের ভীতি অনুভব করানো যায় ততক্ষণ সে সঠিক কথা ও তার যুক্তির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয় না, মানুষের মনে সঠিক পথের অনুসন্ধিৎসা তখনই জন্ম নেয় যখন তার মনে এ চিন্তা জাগে যে, সে কোন বাঁকা পথে যাচ্ছে না তো, যেখানে ধ্বংসের কোন আশঙ্কা আছে।
# এর দু’টি অর্থ হয়। এক, আমি নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে বা কমবেশী করে বলি না বরং যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে আমার উপর নাযিল হয় তাই হুবহু বর্ণনা করি। দুই, আমি এমন একজন রসূল যাকে তোমরা আগে থেকেই একজন সত্যবাদী ও আমানতদার হিসেবে জানো। মানুষের ব্যাপারে যখন আমি আমানতের খেয়ানত করি না তখন আল্লাহর ব্যাপারে কেমন করে আমানতের খেয়ানত করতে পারি। কাজেই তোমাদের জানা উচিত, আমি যা কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে পেশ করছি সে ব্যাপারে আমি ঠিক তেমনিই আমানতদার যেমন দুনিয়ার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত তোমরা আমাকে পেয়েছো।
# আমার আমানতদার রসূল হবার অনিবার্য দাবী হচ্ছে এই যে, তোমরা অন্য সবার আনুগত্য পরিত্যাগ করে একমাত্র আমার আনুগত্য করবে এবং আমি তোমাদের যে বিধান দেবো তা সর্বান্তঃকরণে মেনে নেবে। কারণ আমি বিশ্ব-জাহানের প্রভুর ইচ্ছার প্রতিনিধি। আমার আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সমান। আর আমার নাফরমানী করা নিছক আমার সত্তার নাফরমানী করা নয় বরং সরাসরি আল্লাহর নাফরমানীর নামান্তর। অন্য কথায় এর অর্থ দাঁড়ায়, রসূলের অধিকার শুধুমাত্র এতটুকুন নয় যে, যাদের কাছে তাঁকে রসূল বানিয়ে পাঠানো হয়েছে তারা তাঁর সত্যবাদিতা মেনে নেবে এবং তাঁকে সত্য রসূল হবার স্বীকৃতি দেবে। বরং তাঁকে আল্লাহর সত্য রসূল বলে মেনে নেবার সাথে সাথেই তাঁর আনুগত্য করা এবং অন্য সমস্ত আইন পরিহার করে একমাত্র তিনি যে আইন এনেছেন তার আনুগত্য করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। রসূলকে রসূল বলে স্বীকার না করা অথবা রসূল বলে স্বীকার করার পর তাঁর আনুগত্য না করা উভয় অবস্থায়ই আসলে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নামান্তর এবং উভয়েরই ফল হয় আল্লাহর গযবের আওতায় চলে আসে। তাই ঈমান ও আনুগত্যের দাবীর আগে “আল্লাহকে ভয় করো” এর সতর্কতামূলক বাক্য উচ্চারণ করা হয়েছে, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি ভালোভাবে কান খুলে রসূলের রিসালাত স্বীকার না করা অথবা তাঁর আনুগত্য গ্রহণ না করার ফল কি হবে তা শুনে নিতে পারে।
# এটি হচ্ছে হযরত নূহের সত্যতার সপক্ষে দ্বিতীয় যুক্তি। প্রথম যুক্তি ছিল, নবুওয়াত দাবীর পূর্বে আমার সমগ্র জীবন তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। আজ পর্যন্ত তোমরা আমাকে একজন আমানতদার হিসেবেই জানো। আর দ্বিতীয় যুক্তিটি হচ্ছে, আমি একজন নিস্বার্থপর ব্যক্তি। একাজের মাধ্যমে আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হচ্ছে অথবা নিজের কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভ করার জন্য আমি প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, এমন কোন ব্যক্তিগত লাভ বা স্বার্থ তোমরা চিহ্নিত করতে পারবে না। এহেন নিস্বার্থভাবে কোন ব্যক্তিগত লাভ ছাড়াই যখন আমি এ সত্যের দাওয়াতের কাজে দিনরাত প্রাণপাত করে যাচ্ছি, নিজের সময় ও শ্রম নিয়োগ করছি এবং সকল প্রকার কষ্ট বরদাশত করছি তখন তোমাদের জানা উচিত, আমি আন্তরিকতা সহকারে এ কাজ করে যাচ্ছি। ঈমানদারীর সাথে যে জিনিসকে সত্য মনে করি এবং যার আনুগত্যের মধ্যে আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ ও সাফল্য দেখি তাই পেশ করছি। আমার এ কাজের পেছনে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থোদ্যোগ নেই। এ স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য মিথ্যা বলে লোকদের ধোঁকা দেবার কোন প্রয়োজন আমার নেই।

আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ কুরআন মজীদ বারবার এ যুক্তি দু’টি পেশ করেছে এবং এ দু’টিকে নবুওয়াত যাচাই করার মানদণ্ড গণ্য করেছে। নবুওয়াত লাভ করার আগে যে ব্যক্তি একটি সমাজে বছরের পর বছর জীবন যাপন করেছেন এবং লোকেরা সব সময় সব ব্যাপারে তাঁকে সত্যবাদী, নিখাদ ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পেয়েছে তাঁর সম্পর্কে কোন নিরপেক্ষ মানুষ এরূপ সন্দেহ পোষণ করতে পারে না যে, তাকে নবী না করা সত্ত্বেও তিনি বলবেন, আল্লাহ‌ আমাকে নবী করে পাঠিয়েছেন। সারা জীবনে একটিবারও যে ব্যক্তি মিথ্যা বলেনি। সে হঠাৎ আল্লাহর নামে এত বড় একটি মিথ্যা বলতে উদ্যত হবে, তা কোন নিরাসক্ত ব্যক্তির পক্ষে ধারণা করা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তারপর দ্বিতীয় কথাটা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ সে কথাটি হচ্ছে, কোন ব্যক্তি সদুদ্দেশ্যে এত বড় ডাহা মিথ্যা তৈরী করে না। নিশ্চিতভাবে কোন সংকীর্ণ স্বার্থই এরূপ শঠতা ও প্রতারণার প্ররোচনা দিয়ে থাকে। কোন ব্যক্তি যখন নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এহেন প্রতারণামূলক কাজ করে তখন গোপন করার যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তার চিহ্ন সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। নিজের কাজ কারবার বাড়াবার ও সম্প্রসারিত করার জন্য তাকে নানা ধরণের উপায় অবলম্বন করতে হয়। এসবের কুৎসিত দিকগুলো হাজার চেষ্টা করলেও আশপাশের সমাজে লুকিয়ে রাখা যায় না। তাছাড়া নিজের আধ্যাত্মবাদের ব্যবসায় ফেঁদে তার নিজের কিছু না কিছু লাভ হতে দেখা যায়। ভক্তদের থেকে নজরানা নেয়া হয়। লংগরখানা খোলা হয়। জমিজমা কেনা হয়। অলংকারাদি তৈরী করা হয়। ফকিরির আস্তানা দেখতে দেখতে বাদশাহের দরবারে পরিণত হয়। কিন্তু যেখানে এর বিপরীত নবুওয়াত দাবীকারীর ব্যক্তিগত জীবন এমন সব নৈতিক গুণাবলীতে পরিপূর্ণ দেখা যায়, যার মধ্যে প্রতারণামূলক উপায়ের নাম নিশানাও খুঁজে পাওয়া যায় না এবং এ কাজের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ লাভ তো দূরের কথা বরং এ সেবামূলক কাজের জন্য সে নিজের সব কিছু বিলিয়ে দেয়, সেখানে মিথ্যাচারের সন্দেহ করার কোন সুস্থ বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয় না। কোন বুদ্ধিমান ও ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি একথাও কল্পনা করতে পারে না যে, একজন নিশ্চিত জীবন যাপনকারী ভালো লোক কেন বিনা কারণে একটি মিথ্যা দাবী নিয়ে দাঁড়াবেন, যখন এ দাবীর মাধ্যমে তার কোন স্বার্থোদ্ধার হচ্ছে না বরং উল্টো নিজের ধন-দৌলত, সময় ও শক্তিসামর্থ্য-শ্রম সবকিছু একাজে নিয়োগ করে এর বদলে সে সারা দুনিয়ার লোকদের শত্রুতা মাথা পেতে নিয়েছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ জলাঞ্জলী দেয়া মানুষের আন্তরিক হবার সবচেয়ে বেশী সুস্পষ্ট প্রমাণ। বছরের পর বছর ধরে যখন কোন ব্যক্তি এ ধরণের ত্যাগ স্বীকার করে যেতে থাকে তখন যে ব্যক্তি নিজেই অসৎ সংকল্পকারী একমাত্র সে-ই তার প্রতি অসৎ সংকল্পকারী বা স্বার্থপর হবার দোষারোপ করতে পারে। (আরো বেশী জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আল মু’মিনুন ৭০ নং টীকা )

# অকারণে এ বাক্যের পুনরাবৃত্তি করা হয়নি। আগে এটি বলা হয়েছিল এক প্রেক্ষিতে, এখানে পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে ভিন্ন প্রেক্ষিতে। উপরে إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ এর সাথে فَاتَّقُوا اللَّهَ বাক্যাংশের সম্পর্ক এ ছিল যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে ব্যক্তি হচ্ছেন একজন আমানতদার রসূল, যার আমানতদারীর গুণ সম্পর্কে তোমরা নিজেরাই অবগত, তাঁর প্রতি মিথ্যা আরোপ করতে গিয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর এখানে مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ এর সাথে এ বাক্যের সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, নিজের কোন ব্যক্তিগত লাভ ছাড়াই যে ব্যক্তি নিছক মানুষের সংস্কার সাধনের জন্য পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে কাজ করছে তার উদ্দেশ্যকে অসৎ আখ্যায়িত করতে গিয়ে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। এ কথাটির ওপর এত বেশী জোর দেবার কারণ ছিল এই যে, জাতির সরদাররা হযরত নূহের আন্তরিকতাপূর্ণ সত্যের দাওয়াতের মধ্যে খুঁত বের করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এ মর্মে অভিযোগ আনছিল যে, তিনি নিজের বড়াই করার জন্য এতসব প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেনঃ

يُرِيدُ أَنْ يَتَفَضَّلَ عَلَيْكُمْ (المؤمنون: 24)

“সে তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে চায়।”
# হযরত নূহের দাওয়াতের এ জবাব যারা দিয়েছিল তারা ছিল সম্প্রদায়ের সরদার, মাতব্বর ও গণ্য মান্য ব্যক্তি। যেমন অন্যান্য জায়গায় এ কাহিনী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ

فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَى لَكُمْ عَلَيْنَا مِنْ فَضْلٍ

“সে জাতির কাফের সরদাররা বললো, আমরা তো তোমাকে ছাড়া আর কিছুই দেখছি না যে, তুমি নিছক একজন আমাদেরই মত মানুষ এবং আমরা দেখছি একমাত্র এমন সব লোকেরা না বুঝেই তোমার অনুসারী হয়েছে যারা এখানে নিম্ন শ্রেণীর লোক। আর আমরা এমন কোন জিনিসই দেখি না যার বলে তোমরা আমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠ।” (হুদঃ ২৭ আয়াত)

এ থেকে জানা যায়, হযরত নূহের প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদের অধিকাংশ ছিল গরীব ও ক্ষুদ্র পেশাদার অথবা এমন পর্যায়ের যুবক জাতির মধ্যে যাদের কোন মর্যাদা ছিল না। অন্যদিকে ছিল উচ্চ শ্রেণীর বিত্তশালী ও প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকেরা। তারা আদাপানি খেয়ে তাঁর বিরোধিতায় নেমেছিল এবং তারাই জাতির সাধারণ লোকদেরকে নানাভাবে প্রতারিত করে নিজেদের দলভূক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। এ প্রসঙ্গে তারা হযরত নূহের বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি প্রমাণ পেশ করেছিল তার মধ্যে একটি যুক্তি ছিল নিম্নরূপঃ যদি নূহের দাওয়াতের কোন গুরুত্ব থাকতো, তাহলে জাতির প্রধানগণ, উলামায়ে কেরাম, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, সম্ভ্রান্ত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তিবর্গ তা গ্রহণ করতো। কিন্তু তাদের কেউ তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। জাতির হীনবল ও নিম্ন শ্রেণীর কিছু অবুঝ লোক তাঁর দলে ভিড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের মতো উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন লোকেরা কি এসব অজ্ঞ ও নিম্নশ্রেণীর লোকদের দলে শামিল হয়ে যাবে?

এ একই কথা কুরাইশ বংশীয় কাফেররা নবী ﷺ সম্পর্কে বলতো। তারা বলতো, দাস ও দরিদ্র লোকেরা অথবা কয়েকজন অবুঝ ছোকরাই তো এঁর অনুসারী। জাতির প্রধান ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ এঁর সাথে নেই। আবু সুফিয়ান হিরাকলের প্রশ্নের জবাবেও একথাই বলেছিলেনঃ

تبعه منا الضُّعَفَاءُ وَالْمَسَاكِينُ

(আমাদের গরীব ও দুর্বল লোকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারী হয়েছে।)

তাদের চিন্তাধারা যেন এ ধরণের ছিলঃ জাতির প্রধানরা যাকে সত্য বলে মনে করে তা-ই একমাত্র সত্য। কারণ একমাত্র তারাই বুদ্ধি-জ্ঞানের অধিকারী। আর ছোট লোকদের ব্যাপারে বলা যায়, তাদের ছোট হওয়াই একথা প্রমাণ করে যে, তারা বুদ্ধিহীন ও দুর্বল সিদ্ধান্তের অধিকারী। তাই তাদের কোন কথা মেনে নেয়া এবং বড় লোকদের কথা প্রত্যাখ্যান করার পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে এই যে, সেটি একটি গুরুত্বহীন কথা। বরং মক্কার কাফেররা তো এর চাইতেও অগ্রসর হয়ে এ মর্মে যুক্তি পেশ করতো যে, কোন মামুলী ও সাধারণ লোক নবী হতে পারে না। আল্লাহ‌ যদি সত্যিই কোন নবী পাঠাতে চাইতেন তাহলে কোন বড় সমাজপতিকে নবী করে পাঠাতেনঃ

وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْآنُ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ

“তারা বলে, এ কুরআন আমাদের দু‘টি বড় নগরীর (মক্কা ও তায়েফ) কোন প্রভাবশালী লোকের প্রতি নাযিল করা হলো না কেন? (আয্ যুখরুফঃ ৩১ আয়াত )
# এটি তাদের আপত্তির প্রথম জবাব। যেমন উপরে বলা হয়েছে, তাদের আপত্তির ভিত্তি ছিল একটি কাল্পনিক সিদ্ধান্তের উপর। সেটি ছিলঃ গরীব, শ্রমজীবী এবং যারা নিম্ন শ্রেণীর কাজ করে অথবা যারা সমাজের নিম্ন শ্রেণীর সাথে যুক্ত। তাদের কোন বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা থাকে না। তারা জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক শূন্য হয়। তাই তাদের ঈমান কোন চিন্তা ও দূরদৃষ্টির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তাদের আকীদা বিশ্বাস নির্ভরযোগ্য নয়। তাদের কর্মকাণ্ডের কোন গুরুত্ব নেই। নূহ এর জবাবে বলেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে এসে ঈমান আনে এবং একটি আকীদা গ্রহণ করে সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকে তার একাজের পেছনে কোন্ ধরনের উদ্যোগ কাজ করছে এবং তা কতটুকু মূল্য ও মর্যাদার অধিকারী তা জানার কোন মাধ্যম আমার কাছে নেই। এ বিষয়গুলো দেখা এবং এগুলোর হিসেব রাখা আল্লাহর কাজ, আমার ও তোমাদের নয়।
# এটি তাদের আপত্তির দ্বিতীয় জবাব। তাদের আপত্তির মধ্যে এ কথা প্রচ্ছন্ন ছিল যে, হযরত নূহের চারদিকে মু’মিনদের যে দলটি সমবেত হচ্ছে তারা যেহেতু আমাদের সমাজের নিম্ন শ্রেণীর লোক, তাই উচ্চ শ্রেণীর কোন ব্যক্তি এ দলে শামিল হতে পারে না। অন্যকথায় তারা যেন একথা বলছিল, হে নূহ! তোমার প্রতি ঈমান এনে আমরা কি নিজেদেরকেও নিম্ন শ্রেণীর নির্বোধদের দলভূক্ত করবো? আমরা কি দাস, চাকর-বাকর, শ্রমিক ও কায়িক পরিশ্রমকারীদের লাইনে এসে বসে যাবো? হযরত নূহ এর জবাব এভাবে দেন, যারা আমার কথা মানে না আমি তাদের পেছনে দৌড়াতে থাকবো এবং যারা আমার কথা মেনে নেয় তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেবো, এ ধরণের অযৌক্তিক কর্মনীতি আমি কেমন করে অবলম্বন করতে পারি! আমার অবস্থা এমন এক ব্যাক্তির মত যে দাঁড়িয়ে সোচ্চার কন্ঠে একথা ঘোষণা করে দিয়েছে যে, তোমরা মিথ্যা ও বাতিলের পথে চলছো। এ পথে চলার পরিণাম ধ্বংস। আমি তোমাদের যে পথ দেখাচ্ছি তার মধ্যেই রয়েছে তোমাদের সবার সাফল্য ও মুক্তি। এখন যে চাও আমার এ সতর্কবাণী গ্রহণ করে সোজা পথে চলে এসো এবং যে চাও চোখ বন্ধ করে ধ্বংসের পথে চলতে থাকো। আমি তো এমন এক কর্মনীতি অবলম্বন করতে পারি না যার ফলে যে সমস্ত আল্লাহর বান্দা আমার এ সতর্কববাণী শুনে সঠিক সোজা পথ অবলম্বন করার জন্য আমার কাছে আসবে আমি তাদের জাতি, গোত্র, বংশ, পেশা জিজ্ঞেস করবো এবং যদি তারা তোমাদের দৃষ্টিতে “নিম্ন শ্রেণীর” হয়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়ে “অভিজাত” লোকেরা কবে ধ্বংসের পথ ছেড়ে দিয়ে নাজাতের পথে এগিয়ে আসবে সে আশায় বসে থাকবো।

ঠিক এ একই ব্যাপার চলছিল এ আয়াতগুলো নাযিল হবার সময় মক্কার কাফের সমাজ ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে। এ জিনিসটি সামনে রাখলে হযরত নূহ ও তাঁর জাতির সরদারদের এ কথোপকথন এখানে শুনানো হচ্ছে কেন তা বুঝা যেতে পারে। মক্কার কাফেরদের বড় বড় সরদার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতো, আমরা এই বেলাল, আম্মার, সুহাইবের মতো গোলাম এবং শ্রমজীবী মানুষের সাথে কেমন করে বসতে পারি। তাদের কথার অর্থ যেন এ ছিল যে, মু’মিনদের দল থেকে যদি এ গরীবদের বের করে দেয়া হয় তাহলেই না এ অভিজাতদের ওদিক মুখো হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। অন্যথায় সুলতান মাহমুদ ও তার ভৃত্য আয়াযের এক কাতারে দাঁড়ানো কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। এ অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরিষ্কার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এ নির্দেশ দেয়া হয়, যারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এমন সব অহংকারীদের জন্য ঈমান গ্রহণকারী গরীবদেরকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে নাঃ

أَمَّا مَنِ اسْتَغْنَى – فَأَنْتَ لَهُ تَصَدَّى – وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّى – وَأَمَّا مَنْ جَاءَكَ يَسْعَى – وَهُوَ يَخْشَى – فَأَنْتَ عَنْهُ تَلَهَّى – كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ – فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَهُ

“হে মুহাম্মাদ! যে বেপরোয়া ভাব দেখালো তুমি তার প্রতি মনোযোগী হলে? অথচ যদি সে সংশোধিত না হয়, তাহলে তোমার উপর কি দায়িত্ব আছে? আর যে ব্যক্তি মনে আল্লাহর ভয় নিয়ে তোমার কাছে ছুটে আসে তুমি তাকে অবজ্ঞা করছো? কখখনো না, এতো একটি উপদেশ, যার মন চায় একে গ্রহণ করে নেবে।” (সূরা আবাসাঃ ৫-১২ আয়াত)

وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ- وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لِيَقُولُوا أَهَؤُلَاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنْ بَيْنِنَا أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ

“যারা দিনরাত নিজেদেরকে রব ডাকছে নিছক তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করো না। তোমার ওপর তাদের কোন দায়দায়িত্ব নেই এবং তাদের ওপরও তোমার কোন দায়দায়িত্ব নেই। এরপরও যদি তুমি তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করো তাহলে তুমি জালেমদের মধ্যে গণ্য হবে। আমি তো এভাবে তাদের মধ্য থেকে কতককে কতকের মাধ্যমে পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছি, যাতে তারা বলেঃ ‘আমাদের মধ্যে কি কেবল এ লোকেরাই অবশিষ্ট ছিল, যাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয়েছে?’ হ্যাঁ, আল্লাহ‌ নিজের কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে কি এরচেয়ে বেশী জানেন না?” (আল আন’আমঃ ৫২ আয়াত)
# চূড়ান্ত ও শেষ পর্যায়ে মিথ্যা বলে দিয়েছে ও প্রত্যাখ্যান করেছে। এরপরে আর কোন প্রকার সত্যায়ন করার ও ঈমান আনার আশা থাকে না। আলোচনার বাইরের চেহারা দেখে কেউ যেন এ সন্দেহ পোষণ না করে যে, নবী ও তাঁর সম্প্রদায়ের সরদারদের মধ্যে উপরের কথোপকথন হয় এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রথম প্রত্যাখ্যানের পর নবী আল্লাহর কাছে এ মর্মে রিপোর্ট পেশ করেন যে, তারা আমার নবুওয়াত মানছে না কাজেই এখন আপনি আমার ও তাদের সমস্যার ফায়সালা করে দিন। হযত নূহের (আ) দাওয়াত এবং তাঁর সম্প্রদায়ের কুফরীর ওপর অবিচল থাকার মধ্যে যে শত শত বছর ধরে সুদীর্ঘকালীন সংঘাত চলেছে কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে তা আলোচিত হয়েছে। সূরা আনকাবুতে বলা হয়েছে, সাড়ে নয় শত বছর ধরে এ সংঘাত চলেঃ

فَلَبِثَ فِيهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِينَ عَامًا

“তারপর তিনি তাদের মধ্যে বসবাস করেন সাড়ে নয় শত বছর।” (১৪ আয়াত)

এ দীর্ঘ সময়ে হযরত নূহ বংশ পরম্পরায় তাদের সামাজিক কার্যক্রম দেখে বুঝতে পারেন যে, কেবল তাদের মধ্যেই সত্যকে গ্রহণ করার যোগ্যতা খতম হয়ে যায়নি। বরং তাদের ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যেও সৎ ও ঈমানদার মানুষের জন্ম হবার আশা নেই।

إِنَّكَ إِنْ تَذَرْهُمْ يُضِلُّوا عِبَادَكَ وَلَا يَلِدُوا إِلَّا فَاجِرًا كَفَّارًا

“হে পরওয়ারদিগার! যদি তুমি তাদেরকে ছেড়ে দাও, তাহলে তারা তোমার বান্দাদেরকে গোমরাহ করবে এবং তাদের বংশে যে-ই জন্ম নেবে সে-ই হবে চরিত্রহীন ও কঠোর সত্য অস্বীকারকারী।” (নূহঃ ২৭ আয়াত)

আল্লাহ নিজেও নূহের এ অভিমতকে সঠিক বলে স্বীকার করেন এবং নিজের পূর্ণ ও নির্ভুল জ্ঞানের ভিত্তিতে বলেনঃ لَنْ يُؤْمِنَ مِنْ قَوْمِكَ إِلَّا مَنْ قَدْ آمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

“তোমাদের সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া এখন আর ঈমান আনার মত কেউ নেই। কাজেই এখন তাদের কার্যকলাপের জন্য দুঃখ করা থেকে বিরত হও।” (হূদঃ ৩৬ আয়াত)
# কেবল কে সত্য ও কে মিথ্যা এতটুকু ফায়সালা করে দিলে হবে না বরং এ ফায়সালাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করো যাতে মিথ্যাপন্থীকে ধ্বংস করে দেয়া যায় এবং সত্যপন্থীকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। “আমার ও আমার মু’মিন সাথীদেরকে রক্ষা করো।” এ শব্দগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ অর্থ প্রকাশ করছে যে, অবশিষ্ট লোকদের প্রতি আযাব নাযিল করো এবং ধরার বুক থেকে তাদেরকে চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন করে দাও।
# বোঝাই করা নৌযান অর্থ হচ্ছে, এ নৌকাটি সকল মু’মিন ও সকল প্রাণীতে পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বেই এ প্রাণীদের এক একটি জোড়া সঙ্গে নেবার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন সূরা হূদ ৪০ আয়াত ।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1000)
[Nuh’s preaching to His People, and Their Response .]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 105-122

26:105

کَذَّبَتۡ قَوۡمُ نُوۡحِۣ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۰۵﴾ۚۖ

The people of Noah denied the messengers

 

Nuh’s preaching to His People, and Their Response

Here Allah tells us about His servant and Messenger Nuh, peace be upon him, who was the first Messenger sent by Allah to the people of earth after they started to worship idols.

Allah sent him to forbid that and to warn people of the consequences of idol worship. But his people belied him and continued their evil practice of worshipping idols besides Allah. Allah revealed that their disbelieving in him was akin to disbelieving in all the Messengers,

So Allah said:

كَذَّبَتْ قَوْمُ نُوحٍ الْمُرْسَلِينَ

إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ نُوحٌ أَلَا تَتَّقُونَ

26:106

اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ نُوۡحٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۰۶﴾ۚ

When their brother Noah said to them, “Will you not fear Allah ?

 

The people of Nuh belied the Messengers. When their brother Nuh said to them:”Will you not have Taqwa!”

meaning, `do you not fear Allah when you worship others instead of Him!’

إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ

26:107

اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۰۷﴾ۙ

Indeed, I am to you a trustworthy messenger.

 

I am a trustworthy Messenger to you.

means, `I am the Messenger of Allah to you, faithfully fulfilling the mission with which Allah has sent me. I convey the Messages of my Lord to you, and I do not add anything to them or take anything away from them.’

فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ

26:108

فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۰۸﴾ۚ

So fear Allah and obey me.

26:109

وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۰۹﴾ۚ

And I do not ask you for it any payment. My payment is only from the Lord of the worlds.

 

وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ

So have Taqwa of Allah, and obey me. No reward do I ask of you for it;

means, `I do not want any payment for the advice I give you; I will save my reward for it with Allah.’

إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ

my reward is only from the Lord of all that exists.”

فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ

26:110

فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۱۰﴾ؕ

So fear Allah and obey me.”

 

So have Taqwa of Allah, and obey me.

`It is clear to you that I am telling the truth and that I am faithfully fulfilling the mission with which Allah has entrusted me.

26:111

قَالُوۡۤا اَنُؤۡمِنُ لَکَ وَ اتَّبَعَکَ الۡاَرۡذَلُوۡنَ ﴿۱۱۱﴾ؕ

They said, “Should we believe you while you are followed by the lowest [class of people]?”

 

The Demand of the People of Nuh and His Response

They said:”We do not believe in you, and we will not follow you and become equal to the meanest of the people, who follow you and believe in you, and they are the lowest among us.”

قَالُوا أَنُوْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الاْاَرْذَلُونَ

قَالَ وَمَا عِلْمِي بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

26:112

قَالَ وَ مَا عِلۡمِیۡ بِمَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۱۲﴾ۚ

He said, “And what is my knowledge of what they used to do?

 

They said:”Shall we believe in you, when the inferior follow you!”

He said:”And what knowledge have I of what they used to do”

meaning, `what does it have to do with me if they follow me! No matter what they used to do before, I do not have to check on them and examine their background; all I have to do is accept it if they believe in me; whatever is in their hearts is for Allah to know.’

إِنْ حِسَابُهُمْ إِلاَّ عَلَى رَبِّي لَوْ تَشْعُرُونَ
26:113

اِنۡ حِسَابُہُمۡ اِلَّا عَلٰی رَبِّیۡ لَوۡ تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۱۳﴾ۚ

Their account is only upon my Lord, if you [could] perceive.

 

Their account is only with my Lord, if you could (but) know. And I am not going to drive away the believers.

It seems that they asked him to drive these people away, then they would follow him, but he refused to do that, and said:

وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الْمُوْمِنِينَ

26:114

وَ مَاۤ اَنَا بِطَارِدِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾ۚ

And I am not one to drive away the believers.

 

إِنْ أَنَا إِلاَّ نَذِيرٌ مُّبِين

26:115

اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِیۡرٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۱۵﴾ؕ

I am only a clear warner.”

 

And I am not going to drive away the believers. I am only a plain warner.

meaning, `I have been sent as a warner, and whoever obeys me and follows me and believes in me, then he belongs to me and I to him, whether he is noble or common, upper-class or lower-class.

26:116

قَالُوۡا لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَہِ یٰنُوۡحُ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمَرۡجُوۡمِیۡنَ ﴿۱۱۶﴾ؕ

They said, “If you do not desist, O Noah, you will surely be of those who are stoned.”

 

His People’s Threat, Nuh’s Prayer against Them, and Their Destruction

Nuh stayed among his people for a long time, calling them to Allah night and day, in secret and openly. The more he repeated his call to them, the more determined were they to cling to their extreme disbelief and resist his call. In the end, they said:

قَالُوا لَيِن لَّمْ تَنتَهِ يَا نُوحُ لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ

They said:If you cease not, O Nuh you will surely be among those stoned.

meaning, `if you do not stop calling us to your religion,’

لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمَرْجُومِينَ
(you will surely be among those stoned),

meaning, `we will stone you.’

At that point, he prayed against them, and Allah responded to his prayer.

Nuh said:

قَالَ رَبِّ إِنَّ قَوْمِي كَذَّبُونِ

26:117

قَالَ رَبِّ اِنَّ قَوۡمِیۡ کَذَّبُوۡنِ ﴿۱۱۷﴾ۚۖ

He said, “My Lord, indeed my people have denied me.

26:118

فَافۡتَحۡ بَیۡنِیۡ وَ بَیۡنَہُمۡ فَتۡحًا وَّ نَجِّنِیۡ وَ مَنۡ مَّعِیَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۱۸﴾

Then judge between me and them with decisive judgement and save me and those with me of the believers.”

 

فَافْتَحْ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَتْحًا

My Lord! Verily, my people have denied me. Therefore judge You between me and them.

This is like the Ayah:

فَدَعَا رَبَّهُ أَنُّى مَغْلُوبٌ فَانتَصِرْ

Then he invoked his Lord (saying):”I have been overcome, so help (me)!” (54:10)

وَنَجِّنِي وَمَن مَّعِي مِنَ الْمُوْمِنِينَ

and save me and those of the believers who are with me.”

And Allah says here:

فَأَنجَيْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُونِ

26:119

فَاَنۡجَیۡنٰہُ وَ مَنۡ مَّعَہٗ فِی الۡفُلۡکِ الۡمَشۡحُوۡنِ ﴿۱۱۹﴾ۚ

So We saved him and those with him in the laden ship.

 

ثُمَّ أَغْرَقْنَا بَعْدُ الْبَاقِينَ
26:120

ثُمَّ اَغۡرَقۡنَا بَعۡدُ الۡبٰقِیۡنَ ﴿۱۲۰﴾ؕ

Then We drowned thereafter the remaining ones.

 

And We saved him and those with him in the laden ship. Then We drowned the rest thereafter.

The “laden ship” is one that is filled with cargo and the couples, one pair from every species, that were carried in it.

This Ayah means:

`We saved Nuh and all of those who followed him, and We drowned those who disbelieved in him and went against his commands, all of them.’

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَةً وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّوْمِنِينَ

26:121

اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۲۱﴾

Indeed in that is a sign, but most of them were not to be believers.

 

وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

26:122

وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۲۲﴾٪

And indeed, your Lord – He is the Exalted in Might, the Merciful.

 

Verily, in this is indeed a sign, yet most of them are not believers. And verily your Lord, He is indeed the All-Mighty, the Most Merciful.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply