(বই#১০০৭) [  হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার ওপর অবতীর্ণ হয়?] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৭)
[  হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার ওপর অবতীর্ণ হয়?]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
২২১-২২৭ নং আয়াত:-
২৬:২২১
ہَلۡ اُنَبِّئُکُمۡ عَلٰی مَنۡ تَنَزَّلُ الشَّیٰطِیۡنُ ﴿۲۲۱﴾ؕ
হে লোকেরা! আমি তোমাদের জানাবো শয়তানরা কার ওপর অবতীর্ণ হয়?
২৬:২২২
تَنَزَّلُ عَلٰی کُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍ ﴿۲۲۲﴾ۙ
ওরা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী পাপিষ্ঠের নিকট।
২৬:২২৩
یُّلۡقُوۡنَ السَّمۡعَ وَ اَکۡثَرُہُمۡ کٰذِبُوۡنَ ﴿۲۲۳﴾ؕ
শোনা কথা কানে ঢুকিয়ে দেয় এবং এর বেশির ভাগই হয় মিথ্যা।
২৬:২২৪
وَ الشُّعَرَآءُ یَتَّبِعُہُمُ الۡغَاوٗنَ ﴿۲۲۴﴾ؕ
আর কবিরা! তাদের পেছনে চলে পথভ্রান্ত যারা।
২৬:২২৫
اَلَمۡ تَرَ اَنَّہُمۡ فِیۡ کُلِّ وَادٍ یَّہِیۡمُوۡنَ ﴿۲۲۵﴾ۙ
তুমি কি দেখো না তারা উপত্যকায় উপত্যকায় উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়।
২৬:২২৬
وَ اَنَّہُمۡ یَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۲۲۶﴾ۙ
এবং এমনসব কথা বলে যা তারা করে না?
২৬:২২৭
اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ ذَکَرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا وَّ انۡتَصَرُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا ظُلِمُوۡا ؕ وَ سَیَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَیَّ مُنۡقَلَبٍ یَّنۡقَلِبُوۡنَ ﴿۲۲۷﴾٪
তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরন করে আর তাদের প্রতি জুলুম করা হলে শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়।—আর জুলুমকারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের পরিণাম কি!

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*কোরআন ও কোরআনের বাহক বনাম কাব্য শাস্ত্র : আলােচ্য সূরার সর্বশেষ প্রসংগটিও পবিত্র কোরআনকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। প্রথম দিকে জোর দিয়ে বলা হয়েছিলাে যে, এই কোরআন বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের পক্ষ থেকেই নাযিল করা হয়েছে। সাথে সাথে এ কথা দৃঢ়তার সাথে অস্বীকার করা হয়েছিলাে যে, এই পবিত্র কোরআন কখনাে কোনাে শয়তানের কাছ থেকে অবতীর্ণ হতে পারে না। এখন বলা হচ্ছে যে, মুহাম্মদ(স.)-এর মতাে একজন সত্য নবী, বিশ্বস্ত নবী ও আদর্শবান নবীর কাছে কোনাে শয়তানের আগমন ঘটতে পারে না। শয়তানদের আগমন তারে ঘটে ভক্তদের কাছে মিথ্যুকদের কাছে, নষ্ট ও ভ্রষ্টদের কাছে এবং সেই সব প্রতারক গণকদের কাছে যারা শয়তানদের কাছ থেকে কিছু ইশারা ইংগিত পেয়ে সেগুলােকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করে বেড়ায়। বলা হয়েছে, ‘আমি তােমাকে বলবাে কি, কার কাছে শয়তানরা অবতরণ করে? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক মিথ্যাবাদী, গােনাহগারের ওপর।'(আয়াত ২২১-২২৩) জাহেলী যুগে আরব সমাজে জ্যোতিষী ও গণকদের বেশ প্রভাব ছিলাে। তাদের ধারণা ছিলাে, জ্বিন পরীরা তাদের কাছে অদৃশ্য জগতের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়ে আসে। তাই মানুষ তাদের কাছে আসতো, তাদের ভবিষ্যতবাণীর শরণাপন্ন হতাে। অথচ এদের অধিকাংশই ছিলাে মিথ্যুক, ভন্ড ও প্রতারক । মানুষ কেবল কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে তাদের কথায় বিশ্বাস করতাে। তবে এরা কখনাে মানুষকে সত্য পথের দিকে আহ্বান করতাে না, সততা ও আল্লাহভীতির নির্দেশ দিতাে না এবং ঈমানের দিকেও মানুষকে ডাকতাে না। অথচ রসূল তাে এমনটি করতেন না। তিনি তাে এই কোরআনী নির্দেশের আলােকে মানুষকে সত্যের পথে ডাকতেন এবং একটা সত্য ও সরল আদর্শের প্রতি মানুষকে আহ্বান করতেন। ওরা পবিত্র কোরআন সম্পর্কে কথনাে কখনাে বলতাে, এটা এক ধরনের কাব্য। এই সুবাদে তারা নবীকে কবি বলে আখ্যায়িত করতাে। কিন্তু এই পবিত্র কালামের যে যাদুময়ী প্রভাব তারা অনুভব করতো ও প্রত্যক্ষ করে তার বিপরীতে কিছু দাড় করানাের মতাে ক্ষমতা তাদের ছিলাে না। তারা হতবাক হয়ে লক্ষ্য করতাে কি ভাবে এই বাণীর মর্ম মানুষের হৃদয়ের গভীরে পৌছে গিয়ে তাদের অনুভূতিকে নাড়া দিচ্ছে, তাদের ইচ্ছা শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটাকে প্রতিহত করার মতাে কোনাে শক্তিই তাদের ছিলাে না। পবিত্র কোরআন ওদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিচ্ছে যে, রসূলের আদর্শ ও কোরআনের আদর্শ কখনাে কোনাে কবি সাহিত্যিকের আদর্শের মতাে নয়। এই দুই আদর্শের মাঝে বিরাট ব্যবধান রয়েছে। কারণ, এই পবিত্র কোরআন সুস্পষ্ট আদর্শ নিয়ে চলে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি আহ্বান করে এবং এই লক্ষ্যে পৌছার জন্যে সহজ সরল পথ অনুসরণ করে। অপরদিকে রসূল(স.)-এর বৈশিষ্ট্য হলাে, তিনি যা বলেন তার বরখেলাপ করেন না। তিনি আবেগ ও খেয়াল-খুশী দ্বারা পরিচালিত হন না। তিনি অস্থির চিত্তের মানুষও নন। বরং একটা সুনির্দিষ্ট আদর্শের প্রতি মানুষকে আহ্বান করেন। তিনি নিজেও এই আদর্শের ওপর অটল এবং এই বিশ্বাসের ওপর অনঢ়। যে আদর্শের তিনি ধারক ও বাহক তাতে কোনো বক্রতা নেই কোনাে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। অথচ যারা কবি ও সাহিত্যিক তাদের মাঝে এই গুণগুলাে নেই। কারণ, কবি-সাহিত্যিকরা হচ্ছে অস্থির চিত্তের মানুষ। তারা আবেগ ও কল্পনার হাতে ইচ্ছামতাে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। তারা একই বস্তুকে একবার দেখে কালাে আর একবার দেখে সাদা। সন্তুষ্ট থাকলে বলে এক কথা, আর অসন্তুষ্ট হলে বলে আর এক কথা। মােট কথা, এরা হচ্ছে অস্থির চিত্তের অধিকারী। এদের মন মেজাজের কোনাে ঠিক ঠিকানা নেই। এ ছাড়া এসব কবি সাহিত্যিকরা নিজেরাই কল্পনার জগত সৃষ্টি করে সেখানেই বাস করতে থাকে। কল্পনা ও আবেগের বশবর্তী হয়ে হয়ে তারা এমন অনেক কথাই বলে যার সাথে বাস্তব জীবনের কোনােই মিল নেই, কোনােই সম্পর্ক নেই। ফলে তারা নিজেরাই সে সব কথার বিপরীতে চলতে বাধ্য হয়। এরা খুব কমই বাস্তবমুখী হয়ে থাকে। এদের কথা ও কাজে কোনাে মিল নেই। কিন্তু যিনি একটি নির্দিষ্ট আদর্শের প্রতি মানুষকে ডাকেন। যিনি বাস্তব জীবনে এই আদর্শের বাস্তবায়ন চান তার কথা ও কাজ এমনটি হয় না। কারণ, তার সামনে একটি লক্ষ্য থাকে, একটা আদর্শ থাকে এবং একটা পন্থা থাকে, তিনি চোখ কান খােলা রেখে এবং সম্পূর্ণ সচেতনভাবে সেই লক্ষ্য ও আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যে সুনির্দিষ্ট পন্থা অবলম্বন করে থাকেন। তিনি এক্ষেত্রে কোনাে কল্পনাকে প্রশ্রয় দেন না, কোনাে খেয়াল জগতে বাস করেন না এবং স্বপ্নের মাঝে ডুবে থাকেন। তিনি হচ্ছেন বাস্তব দুনিয়ার বাসিন্দা। কাজেই তার প্রতিটি কথা ও কাজ হয় বাস্তবমুখী। এই হিসেবে রসূলের আদর্শ ও কবি সাহিত্যিকদের আদর্শের মাঝে তফাত রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশয়-সন্দেহের কোনাে অবকাশ নেই। কারণ বিষয়টি খুবই সুস্পষ্ট। আয়াতে সে কথাই বলা হয়েছে, ‘বিভ্রান্ত লােকেরাই কবিদের অনুসরণ করে…'(আয়াত ২২৪-২২৬) আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কবি সাহিত্যিকরা হচ্ছে খেয়াল খুশীর দাস। মনে যা আসে তাই তারা করে ও বলে। কাজেই যারা লক্ষ্যহীন, আদর্শহীন, বিভ্রান্ত ও খেয়াল খুশীর হাতে বন্দী কেবল তারাই এসব কবি সাহিত্যিকদের অনুসরণ করে থাকে। এই কবি সাহিত্যিকরা কল্পনা, জল্পনা এবং আবেগ অনুভূতির স্বপ্নীল জগতে বিচরণ করে। আবেগতাড়িত হয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, এরা যা বলে, নিজেরাই তা করে না। কারণ এরা কাল্পনিক জগতের বাসিন্দা। এরা কঠিন বাস্তব জীবন থেকে পলায়ন করে। ফলে এমন অনেক কথাই বলে থাকে যা করার মতাে সামর্থ্য তাদের নিজেদেরই থাকে না। কারণ এসব কথাবার্তা হচ্ছে বাস্তবতা বিবর্জিত ও কাল্পনিক গাল গল্প। বাস্তব ও চাক্ষুস জীবনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম হচ্ছে একটি পূর্ণাংগ জীবন বিধান। ব্যবহারিক জীবনে প্রয়ােগের জন্যে এই বিধানের প্রবর্তন হয়েছে। এটা এমন একটি বিশাল সংগ্রাম যার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হচ্ছে আত্মার সাথে এবং দৃশ্যমান জগতের সাথে । কাজেই এই জীবন বিধান তথা ইসলামের প্রকৃতি ও স্বভাব কখনাে কোনাে কবির স্বভাব ও মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্যশীল হতে পারে না। মানব ইতিহাসই হচ্ছে এর প্রধান সাক্ষী। কারণ, একজন কবি মূলত, তার চেতনা ও কল্পনার মাধ্যমে স্বপ্নীল জগত সৃষ্টি করে তাতেই অবগাহন করতে আনন্দ পায়। পক্ষান্তরে ইসলাম স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দান করতে প্রয়াসী হয় এবং এর জন্যে মানুষের গােটা চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগাতে চায়। ইসলাম চায়, মানুষ কঠিন বাস্তবতার মুখােমুখি হােক, এই কঠিন বাস্তবতা থেকে পলায়ন করে মানুষ কাল্পনিক জগতের বাসিন্দা হােক, এটা কখনাে ইসলামের কাম্য নয়। যদি এসব কঠিন বাস্তবতা তাদের পছন্দনীয় না হয় এবং ইসলামের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয় তখন ইসলাম তাদেরকে এসব বাস্তবতার পরিবর্তনের জন্যে এবং ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়নের জন্যে উদ্বুদ্ধ করে। এর ফলে স্বপ্নীল ও কাল্পনিক জগতে বসবাসের কোনাে শক্তিই আর মানুষের মাঝে অবশিষ্ট থাকে না, তখন গােটা মানবীয় শক্তি এক মহান আদর্শের বাস্তবায়নই ব্যবহৃত হয়। এতসব সত্তেও ইসলাম কাব্য ও শিল্পের বিরােধী নয়। আলােচ্য আয়াতের মর্ম থেকে সেটাই বুঝা যায়। তবে যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে কাব্য ও শিল্প গড়ে উঠেছে, সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে সমর্থন যােগ্য নয়। যে আদর্শ আবেগ ও কল্পনা সর্বস্ব, যে আদর্শ মানুষকে বাস্তবতা বিবর্জিত কর্মকান্ডে জড়িয়ে রাখে, তা কখনাে ইসলাম সমর্থন করতে পারে না। তবে, কারাে গােটা মন-মানসিকতা ও চিন্তা-চেতনা ইসলামের আলােকে আলােকিত হয়ে পড়লে এবং ইসলামী ভাবধারায় কাব্য ও শিল্প পুষ্ট হয়ে থাকলে তখন এই কাব্য ও শিল্প ব্যবহাৱিক কল্যাণ সাধন করে। অর্থাৎ ইসলাম চায় না শিল্প কেবলই কল্পনা ও আবেগসর্বস্বই হয়ে পড়ক, বাস্তব জীবনের পরিবর্তে কল্পনার জগত সৃষ্টি করুক এবং বাস্তব জীবনকে তার বিকৃত, নােংরা ও পশ্চাদপদ অবস্থায় ফেলে রাখুক এটাও ইসলাম সমর্থন করে না। কোনাে মানুষের জীবনের লক্ষ্য ও আদর্শ যদি ইসলাম হয়, তাহলে সে প্রতিটি বস্তুকেই ইসলামী দৃষ্টিভংগিতে দেখার চেষ্টা করবে এবং শিল্প ও সাহিত্যে তার প্রকাশও ঘটবে সে একই দৃষ্টিভংগিতে। আর এই পর্যায়ের শিল্প ও সাহিত্যকে ইসলাম কখনাে ঘৃণা করে না। আমরা জানি, পবিত্র কোরআনে মানুষের হৃদয় মন ও চিন্তা চেতনাকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি এবং মানবাত্মার রহস্যের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়েছে। বলা বাহুল্য, এসবই হচ্ছে শিল্প ও সাহিত্যের মৌলিক উপাদান। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে পবিত্র কোরআন যে পর্যায়ের সচ্ছতা ও হৃদয়গ্রাহী করে প্রকাশ করেছে তা কখনাে মানব রচিত কাব্য দ্বারা সম্ভবপর নয়। পবিত্র কোরআন যে সব কবিদেরকে অস্বীকার করে না, নিন্দা করে না তাদের বৈশিষ্ট্যগুলাে এভাবে বর্ণনা করেছে, ‘তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে।'(আয়াত ২২৭) অর্থাৎ এরা সাধারণ কবি সাহিত্যিকদের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। এদের হৃদয় ঈমানে ভরপুর। এরা আদর্শবান। এরা সৎ কাজেই এদের গােটা শক্তি ও প্রতিভা কল্যাণ সাধনে, এরা কঠোর পরিশ্রমী ও সংগ্রামী। এরা অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয়ী হয়। এরা নিজেদের আদর্শ ও বিশ্বাসকে উর্ধে তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়। এরাই হচ্ছেন, হাসসান বিন সাবিত, কা’ব ইবনে মালেক, আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা, আবদুল্লাহ এবনে সিবআরী, আবু সুফিয়ান ইবনুল হারেস প্রমুখ সাহাবা। তারা ইসলামের জয়গান গেয়েছেন। রসূল(স.)-এর সমর্থনে কবিতা রচনা করেছেন। কাফের মােশরেকদের বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করেছেন। এদের মধ্যে শেষের দু’জন ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে রসূলুল্লাহর বিরুদ্ধে কবিতা রচনা করতাে। কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করার পর তারা ইসলামেরই জয়গান গেয়েছেন এবং রসূল(স.)-এর প্রশংসায় কবিতা রচনা করেছেন। বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রসূল(স.) হাসসান বিন সাবিতকে বলেন, তাদের (মােশরেকদের) বিরুদ্ধে কবিতা পাঠ করাে, জিবরাঈল(আ.) তােমার সাথে রয়েছেন, অপর এক বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, পবিত্র কোরআনে কবিদের সম্পর্কে আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রসূল(স.) বললেন, ‘মােমেন বান্দা তার তলােয়ার ও ভাষার সাহায্যে জেহাদ করে। যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ নিয়ে বলছি, এর আঘাতও তােমাদের ছুঁড়ে মারা তীরের আঘাতের মতােই মারাত্মক হয় (ইমাম আহমদ কর্তৃক বর্ণিত) এর বাইরেও ইসলামী কাব্য ও ইসলামী শিল্প সাহিত্যের অসংখ্য নযির রয়েছে। মােট কথা, জীবনের যে কোনাে দিককে কেন্দ্র করে ইসলামী ভাবধারা থেকে উৎসারিত যে, কবিতা বা শিল্প ও সাহিত্য সেটাই হচ্ছে ইসলাম সম্মত শিল্প ও সাহিত্য। ইসলাম সম্মত শিল্প ও সাহিত্যে সরাসরি ইসলামের দাওয়াত দিতে হবে বা ইসলামের সমর্থনে কথা সরাসরি বলতে হবে৷ এমনটি জরুরী নয়।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এখানে গণৎকার, জ্যোতিষী, ভবিষ্যত বক্তা, “আমলকারী” ইত্যাদি লোক, যারা ভবিষ্যতের খবর জানে বলে ভণ্ড প্রতারকের অভিনয় করে অথবা যারা দ্ব্যর্থবোধক শব্দগুচ্ছ উচ্চারণ করে মানুষের ভাগ্য গণনা করে কিংবা ধড়িবাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জিন, আত্মা ও মক্কেলদের সহায়তায় মানুষের সংকট নিরসনের ব্যবসায় করে থাকে তাদের কথা বলা হয়েছে।
# এর দু’টি অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে, শয়তানরা কিছু শুনেটুনে নিয়ে নিজেদের চেলাদেরকে জানিয়ে দেয় এবং তাতে সামান্যতম সত্যের সাথে বিপুল পরিমাণ মিথ্যার মিশ্রণ ঘটায়। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, মির্থুক-প্রতারক গণৎকাররা শয়তানের কাছ থেকে কিছু শুনে নেয় এবং তারপর তার সাথে নিজের পক্ষ থেকে অনেকটা মিথ্যা মিশিয়ে মানুষের কানে ফুঁকে দিতে থাকে। একটি হাদীসে এর আলোচনা এসেছে। হাদীসটি বুখারী শরীফে আয়েশার (রা.) বর্ণনায় উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে আয়েশা (রা.) বলেনঃ কোন কোন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গণকদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। জবাবে তিনি বলেন ওসব কিছুই নয়। তারা বলে, হে আল্লাহর রসূল! কখনো কখনো তারা তো আবার ঠিক সত্যি কথাই বলে দেয়। রসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, সত্যি কথাটা কখনো কখনো জিনেরা নিয়ে আসে এবং তাদের বন্ধুদের কানে ফুঁকে দেয় তারপর তারা তার সাথে নানা রকম মিথ্যার মিশ্রণ ঘটিয়ে একটি কাহিনী তৈরী করে।
# কবিদের সাথে যারা থাকে ও চলাফেরা করে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যাদেরকে চলাফেরা করতে তোমরা দেখছো তাদের থেকে স্বভাবে-চরিত্রে, চলনে-বলনে, অভ্যাসে-মেজাজে সম্পূর্ণ আলাদা। উভয় দলের ফারাকটা এতই সুস্পষ্ট যে, এক নজর দেখার পর যে কোন ব্যক্তি উভয় দলের কোনটি কেমন তা চিহ্নিত করতে পারে। একদিকে আছে একান্ত ধীর-স্থির ও শান্ত-শিষ্ঠ আচরণ, ভদ্র ও মার্জিত রুচি এবং সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও আল্লাহভীতি। প্রতিটি কথায় ও কাজে আছে দায়িত্বশীলতার অনুভূতি। আচার-ব্যবহারে মানুষের অধিকারের প্রতি সজাগ দৃষ্টি। লেনদেনে চূড়ান্ত পর্যায়ের আমানতদারী ও বিশ্বস্ততা। কথা যখনই বলা হয় শুধুমাত্র কল্যাণ ও ন্যায়ের জন্যই বলা হয়, অকল্যাণ বা অন্যায়ের একটি শব্দও কখনো উচ্চারিত হয় না। সবচেয়ে বড় কথা, এদেরকে দেখে পরিষ্কার জানা যায়, এদের সামনে রয়েছে একটি উন্নত ও পবিত্র উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের নেশায় এরা রাতদিন সংগ্রাম করে চলছে এবং এদের সমগ্র জীবন একটি উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত হয়েছে। অন্যদিকে অবস্থা হচ্ছে এই যে, সেখানে কোথাও প্রেম চর্চা ও শরাব পানের বিষয় আলোচিত হচ্ছে এবং শ্রোতৃবর্গ লাফিয়ে লাফিয়ে তাতে বাহবা দিচ্ছে। কোথাও কোন দেহপশারিণী অথবা কোন পুরনারী বা গৃহ-ললনার সৌন্দর্যের আলোচনা চলছে এবং শ্রোতারা খুব স্বাদ নিয়ে নিয়ে তা শুনছে “কোথাও অশ্লীল কাহিনী বর্ণনা করা হচ্ছে এবং সমগ্র সমাবেশের উপর যৌন কামনার প্রেত চড়াও হয়ে বসেছে। কোথাও মিথ্যা ও ভাঁড়ামির আসর বসেছে এবং সমগ্র মাহফিল ঠাট্টা-তামাশায় মশগুল হয়ে গেছে। কোথাও কারোর দুর্নাম গাওয়া ও নিন্দাবাদ করা হচ্ছে এবং লোকেরা তাতে বেশ মজা পাচ্ছে। কোথাও কারো অযথা প্রশংসা করা হচ্ছে এবং শাবাশ ও বাহবা দিয়ে তাকে আরো উসকিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার কোথাও কারো বিরুদ্ধে শত্রুতা ও প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং তা শুনে মানুষের মনে আগুন লেগে যাচ্ছে। এসব মজলিসে কবির কবিতা শোনার জন্য যে বিপুল সংখ্যক লোক জমায়েত হয় এবং বড় বড় কবিদের পেছনে যেসব লোক ঘুরে বেড়ায় তাদেরকে দেখে কোন ব্যক্তি একথা অনুভব না করে থাকতে পারে না যে, এরা হচ্ছে নৈতিকতার বন্ধনমুক্ত, আবেগ ও কামনার স্রোতে ভেসে চলা এবং ভোগ ও পাপ-পংকিলতার পূজারী অর্ধ-পাশবিক একটি নরগোষ্ঠি দুনিয়ায় মানুষের যে কোন উন্নত জীবনাদর্শ ও লক্ষ্যও থাকতে পারে এ চিন্তা কখনো এদের মন-মগজ স্পর্শও করতে পারে না। এ দু’দলের সুস্পষ্ট পার্থক্য ও ফারাক যদি কারো নজরে না পড়ে তাহলে সে অন্ধ। আর যদি সবকিছু দেখার পরও কোন ব্যক্তি নিছক সত্যকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ঈমানকে বেমালুম হজম করে একথা বলতে থাকে যে মুহাম্মাদ ﷺ এবং তাঁর আশেপাশে যারা সমবেত হয়েছে তারা কবি ও কবিদের সাংগোপাংগদের মতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, তারা মিথ্যা বলার ক্ষেত্রে নির্লজ্জতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে।
# “অর্থাৎ তাদের নিজস্ব চিন্তার ও বাকশক্তি ব্যবহার করার কোন একটি নির্ধারিত পথ নেই। বরং চিন্তার পাগলা ঘোড়া বল্গাহারা অশ্বের মতো পথে-বিপথে, মাঠে-ঘাটে সর্বত্র উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ায়। আবেগ, কামনা-বাসনা বা স্বার্থের প্রতিটি নতুন ধারা তাদের কণ্ঠ থেকে একটি নতুন বিষয়ের রূপে আবির্ভূত হয়। চিন্তা ও বর্ণনা করার সময় এগুলো সত্য ও ন্যায়সঙ্গত কিনা সেদিকে দৃষ্টি রাখার কোন প্রয়োজনই অনুভব করা হয় না। কখনো একটি তরংগ জাগে, তখন তার স্বপক্ষে জ্ঞান ও নীতিকথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে দেয়া হয়। আবার কখনো দ্বিতীয় তরংগ জাগে, সেই একই কণ্ঠ থেকে এবার একেবারেই পুতিগন্ধময় নীচ, হীন ও নিম্নমুখী আবেগ উৎসারিত হতে থাকে। কখনো কারোর প্রতি সন্তুষ্ট হলে তাকে আকাশে চড়িয়ে দেয়া হয় আবার কখনো নারাজ হলে সেই একই ব্যক্তিকেই পাতালের গভীর গর্ভে ঠেলে দেয়া হয়। কোন কুঞ্জুশকে হাতেম এবং কোন পুরুষকে বীর রুস্তম গণ্য করতে তাদের বিবেকে একটুও বাধে না যদি তার সাথে তাদের কোন স্বার্থ জড়িত থাকে। পক্ষান্তরে কেউ যদি তাদেরকে কোন দুঃখ দিয়ে থাকে তার পবিত্র জীবনকে কলঙ্কিত করার এবং তার ইজ্জত-আবরু ধূলায় মিশিয়ে দেবার বরং তার বংশধারার নিন্দা করার ব্যাপারে তারা একটুও লজ্জা অনুভব করে না। আল্লাহ‌ বিশ্বাস ও নাস্তিক্যবাদ, বস্তুবাদিতা ও আধ্যাত্মিকতা, সদাচার ও অসদাচার, পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ও অপবিত্রতা-অপরিচ্ছন্নতা, গাম্ভীর্য ও হাস্য-কৌতুক এবং প্রশংসা ও নিন্দাবাদ সবকিছু একই কবির একই কাব্যে পাশাপাশি দেখা যাবে। কবিদের এ পরিচিত বৈশিষ্ট্য যারা জানে তারা কেমন করে এ কুরআনের বাহককে কবিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারে? কারণ তাঁর ভাষণ মাপাজোকা, তাঁর বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন, তাঁর পথ একেবারে সুস্পষ্ট ও নির্ধারিত এবং সত্য, সততা ন্যায় ও কল্যাণের দিকে আহ্বান করা ছাড়া তাঁর কণ্ঠ থেকে অন্য কোন কথাই বের হয়নি। কুরআন মজীদের অন্য এক জায়গায় নবী ﷺ সম্পর্কে বলা হয়েছে, কবিত্বের সাথে তাঁর প্রকৃতি ও মেজাজের আদৌ কোন সম্পর্ক নেইঃ

وَمَا عَلَّمْنَاهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْبَغِي لَهُ

“আমি তাঁকে কবিতা শিখাইনি এবং এটা তাঁর করার মতো কাজও নয়।” (ইয়াসিন, ৬৯)

এটি এমন একটি সত্য ছিল, যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ব্যক্তিগতভাবে জানতেন তাঁরা সবাই একথা জানতেন। নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলা হয়েছেঃ কোন একটি কবিতাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পুরোপুরি মুখস্থ ছিল না। কথাবার্তার মাঝখানে কোন কবির ভালো কবিতার চরণ তাঁর মুখে এলেও তা অনুপযোগীভাবে পড়ে যেতেন অথবা তার মধ্যে শব্দের হেরফের হয়ে যেতো। হযরত হাসান বাসরী বলেন, একবার ভাষণের মাঝখানে তিনি এক কবিতার চরণ এভাবে পড়লেনঃ

كفى بالاسلام والشيب للمرء ناهيا-

হযরত আবু বকর (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! চরণটি হবে এ রকম,

كفى الشيب والاسلام للمرء ناهيا-

একবার তিনি আব্বাস ইবনে মিরদাস সুলামীকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কবিতাটা কি তোমার?

أَتَجْعَلُ نَهْبِى وَنَهْبَ الْعُبَيْدِ وبَيْنَ وَالأَقْرَعِ وعُيَيْنَةَ

আব্বাস বললেন, শেষ বাক্যাংশটি ওভাবে নয়, বরং এভাবে হবেঃ بَيْنَ عُيَيْنَةَ وَالأَقْرَعِ একথায় রসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, কিন্তু অর্থ তো উভয়ের এক।

হযরত আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞেস করা হয়, নবী ﷺ কি কখনো নিজের ভাষণের মধ্যে কবিতা ব্যবহার করতেন? তিনি বলেন, কবিতার চেয়ে বেশী তিনি কোন জিনিসকে ঘৃণা করতেন না। তবে কখনো কখনো তিনি বনী কায়েসের কবিতা পড়তেন। কিন্তু প্রথমটা শেষে এবং শেষেরটা প্রথম দিকে পড়ে ফেলতেন। হযরত আবু বকর (রা.) বলতেন, হে আল্লাহর রসূল! এভাবে নয় বরং এভাবে। তখন তিনি বলতেন, “আমি কবি নই এবং কবিতা পাঠ করা আমার কাজ নয়।” আরবের কবিতা অঙ্গনে যে ধরনের বিষয়বস্তুর সমাবেশ ঘটেছিল তা ছিল যৌন আবেদন ও অবৈধ প্রেমচর্চা অথবা শরাব পান কিংবা গোত্রীয় ঘৃণা, বিদ্বেষ ও যুদ্ধবিগ্রহ বা বংশীয় ও বর্ণগত অহংকার। কল্যাণ ও সুকৃতির কথার স্থান সেখানে অতি অল্পই ছিল। এছাড়া মিথ্যা, অতিরঞ্জন, অপবাদ, নিন্দাবাদ, অযথা প্রশংসা, আত্মগর্ব, তিরস্কার, দোষারোপ, পরিহাস ও মুশরিকী অশ্লীল পৌরানিকতা তো এ কাব্যধারার শিরায় শিরায় প্রবাহিত ছিল। তাই এ কাব্য সাহিত্য সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রায় ছিলঃ

لَأَنْ يَمْتَلِئَ جَوْفُ أَحَدِكُمْ قَيْحًا , خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمْتَلِئَ شِعْرًا

“তোমাদের কারো পেট পুঁজে ভরা থাকা কবিতায় ভরা থাকার চেয়ে ভালো। তবুও যে কবিতায় কোন ভালো কথা থাকতো তিনি তার প্রশংসা করতেন।” তাঁর উক্তি ছিলঃ امن شعره وكفر قلبه

“তার কবিতা মু’মিন কিন্তু অন্তর কাফের।” একবার একজন সাহাবী একশোটা ভালো ভালো কবিতা তাঁকে শুনান এবং তিনি চলে যেতে থাকলে বলেনঃ هيه অর্থাৎ “আরো শুনাও।”
# এটি হচ্ছে কবিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। এটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মধারার সম্পূর্ণ বিপরীত। নবী (সা.) সম্পর্কে তাঁর প্রত্যেক পরিচিত জন জানতেন, তিনি যা বলতেন তাই করতেন এবং যা করতেন তাই বলতেন। তাঁর কথা ও কর্মের সামঞ্জস্য এমনই একটি জাজ্বল্যমান সত্য ছিল যা তাঁর আশেপাশের সমাজের কেউ অস্বীকার করতে পারতো না। অথচ সাধারণ কবিদের সম্পর্কে সবাই জানতো যে, তারা বলতেন এক কথা এবং করতেন অন্য কিছু। তাদের কবিতায় দানশীলতার মাহাত্ম এমন উচ্চ কণ্ঠে প্রচারিত হবে যেন মনে হবে তাদের চেয়ে বড় আর কোন দাতা নেই। কিন্তু তাদের কাজ দেখলে বুঝা যাবে তারা বড়ই কৃপণ। বীরত্বের কথা তারা বলবেন কিন্তু নিজেরা হবেন কাপুরুষ। অমুখাপেক্ষিতা, অল্পে তুষ্টি ও আত্মমর্যাদাবোধ হবে তাদের কবিতার বিষয়বস্তু কিন্তু নিজেরা লোভ, লালসা ও আত্ম বিক্রয়ের শেষ সীমানাও পার হয়ে যাবেন। অন্যের সামান্যতম দুর্বলতাকেও কঠোরভাবে পাকড়াও করবেন কিন্তু নিজেরা চরম দুর্বলতার মধ্যে হাবুডুবু খাবেন।
# ওপরে সাধারণভাবে কবিদের প্রতি যে নিন্দাবাদ উচ্চারিত হয়েছে তা থেকে এমন সব কবিদেরকে এখানে আলাদা করা হয়েছে যাদের মধ্যে রয়েছে চারটি বৈশিষ্ট্য।

একঃ যারা মু’মিন অর্থাৎ আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর কিতাবগুলো যারা মানেন এবং আখেরাত বিশ্বাস করেন।

দুইঃ নিজেদের কর্মজীবনে যারা সৎ, যারা ফাসেক, দুষ্কৃতিকারী ও বদকার নন। নৈতিকতার বাঁধন মুক্ত হয়ে যারা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় না দেন।

তিনঃ আল্লাহকে যারা বেশী বেশী করে স্মরণ করেন নিজেদের সাধারণ অবস্থায়, সাধারণ সময়ে এবং নিজেদের রচনায়ও। তাদের ব্যক্তি জীবনে আল্লাহভীতি ও আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে কিন্তু তাদের কবিতা পাপ-পংকিলতা, লালসা, কামনা রসে পরিপূর্ণ, এমন যেন না হয়। আবার এমনও যেন না হয়, কবিতায় বড়ই প্রজ্ঞা ও গভীর তত্ত্বকথা আওড়ানো হচ্ছে কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আল্লাহর স্মরণের কোন চিহ্ন নেই। আসলে এ দু’টি অবস্থা সমানভাবে নিন্দনীয়। তিনিই একজন পছন্দনীয় কবি যার ব্যক্তিজীবন যেমন আল্লাহর স্মরণে পরিপূর্ণ তেমনি নিজের সমগ্র কাব্য প্রতিভাও এমন পথে উৎসর্গীকৃত যা আল্লাহ‌ থেকে গাফিল লোকদের নয় বরং যারা আল্লাহকে জানে, আল্লাহকে ভালোবাসে ও আল্লাহর আনুগত্য করে তাদের পথ।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্যটি বর্ণনা করা হয়েছে এমন সব ব্যতিক্রমধর্মী কবিদের যারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কারোর নিন্দা করে না এবং ব্যক্তিগত, বংশীয় বা গোত্রীয় বিদ্বেষে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিশোধের আগুন জ্বালায় না। কিন্তু যখন জালেমের মোকাবিলায় সত্যের প্রতি সমর্থন দানের প্রয়োজন দেখা দেয় তখন তার কণ্ঠকে সেই একই কাজে ব্যবহার করে যে কাজে একজন মুজাহিদ তার তীর ও তরবারিকে ব্যবহার করে। সবসময় আবেদন নিবেদন করতেই থাকা এবং বিনীতভাবে আর্জি পেশ করেই যাওয়া মু’মিনের রীতি নয়। এ সম্পর্কেই হাদীসে বলা হয়েছে, কাফের ও মুশরিক কবিরা ইসলাম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দোষারোপ, অপবাদের যে তাণ্ডব সৃষ্টি করতো এবং ঘৃণা ও বিদ্বেষের যে বিষ ছড়াতো তার জবাব দেবার জন্য নবী (সা.) নিজে ইসলামী কবিদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন ও সাহস যোগাতেন। তাই তিনি কা’ব ইবনে মালেককে (রা.) বলেনঃ

اهْجُهُمْ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُو أَشَدُّ عليهم مِنَ النَّبْلِ

“ওদের নিন্দা করো, কারণ সেই আল্লাহর কসম, যার হাতের মুঠোয় আমার প্রাণ আবদ্ধ, তোমার কবিতা ওদের জন্য তীরের চেয়েও বেশী তীক্ষ্ন ও ধারালো।” হাসসান ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেনঃ

قل وروح القدس معك এবং اهْجُهُمْ وَجِبْرِيلُ مَعَكَ

“তাদের মিথ্যাচারের জবাব দাও এবং জিব্রীল তোমার সঙ্গে আছে।” এবং “বলো এবং পবিত্র আত্মা তোমার সঙ্গে আছে।”

তাঁর উক্তি ছিলঃ

إِنَّ الْمُؤْمِنَ يُجَاهِدُ بِسَيْفِهِ وَلِسَانِهِ

“মু’মিন তলোয়ার দিয়েও লড়াই করে এবং কণ্ঠ দিয়েও।”

# জুলুমকারী বলতে এখানে এমনসব লোকদের কথা বুঝানো হয়েছে যারা সত্যকে খাটো ও হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সম্পূর্ণ হঠকারিতার পথ অবলম্বন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কবি, গণক, যাদুকর ও পাগল হবার অপবাদ দিয়ে বেড়াতো। এ ধরনের অপবাদ দেবার পেছনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল, যারা তাঁর সম্পর্কে জানে না তাঁর দাওয়াত সম্পর্কে তাদের মনে কু-ধারণা সৃষ্টি করা এবং তাঁর শিক্ষার প্রতি যাতে তারা আকৃষ্ট না হয় সে ব্যবস্থা করা।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২২১-২২৭ নং আয়াতের তাফসীর:

যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, বলে থাকে মুহাম্মাদের কাছে শয়তান এসে ওয়াহী করে, মুহাম্মাদ একজন কবি ইত্যাদি ইত্যাদি, তাদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: অর্থাৎ আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব যে, প্রকৃতপক্ষে শয়তান কোন্ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তির কাছে আগমন করে? শয়তান কোন ভাল মানুষের ওপর অবতীর্ণ হতে পারে না। বরং যারা বেশি বেশি মিথ্যা কথা বলে ঐ সমস্ত মিথ্যাবাদী ও পাপিষ্ঠ লোকদের ওপর নাযিল হয়। মুহাম্মাদ তো এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী নন, তিনি মিথ্যা কথা বলেন না, পাপ কাজেও লিপ্ত হয় না। সুতরাং তাঁর কাছে শয়তান আগমন করে, তিনি কবি ইত্যাদি বলার কোন অবকাশ নেই।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের একটি মন্দ অভ্যাসের কথা বর্ণনা করেছেন যে, সে আকাশ থেকে কথা চুরি করে শোনে অতঃপর তা গণকের কানে পৌঁছে দেয় আর গণক তার সাথে আরো একশটি মিথ্যা কথা যোগ করে তা মানুষের নিকট বর্ণনা করে। যেমন হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যখন আল্লাহ তা‘আলা আকাশে কোন কাজের ফায়সালা করেন, ফেরেশতারা তখন ভয়ে তাদের ডানাসমূহ নাড়াতে থাকে। যেন এটি মসৃণ পাথরের ওপর শিকলের শব্দ। অতঃপর যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় কেটে যায় তখন একে অপরকে জিজ্ঞেস করে, তোমাদের রব কী বলেছেন? প্রশ্নকারীকে তারা বলে, তিনি সত্যই বলেছেন আর তিনি সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে বড়। তখন তারা কোন কথা চুরি করে শুনে ফেলে। তারা একে অপরের ওপর আরোহণ করে এভাবে শুনে। অতঃপর যে তার নীচে থাকে সে তাকে বলে, এভাবে তার নীচের জন তার নীচের জনকে। এভাবে একপর্যায়ে কবি অথবা গণকের কাছে পৌঁছে যায়। আবার কখনো ঐ কথা নীচে পৌঁছানোর পূর্বে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ তাকে ধ্বংস করে দেয়। আবার কখনো তার পূর্বেই কথা পৌঁছে দেয়। অতঃপর ঐ জাদুকর তার সাথে আরো একশটি মিথ্যা সংমিশ্রণ করে। এরপর (যারা গণক দ্বারা গণনা করায় তাদেরকে) বলা হয়, সে কি আমাদেরকে বলেনি যে, অমুক দিন এ এ হবে? অতঃপর সে তার ঐ কথা দ্বারা তার কথার সত্যতা প্রমাণ করে যা সে আকাশ থেকে শুনেছে।” (সহীহ বুখারী হা: ৪৮০০)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শয়তান আগমন করে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা থেকে পবিত্র করার পর আল্লাহ তা‘আলা আরো পবিত্র করছেন যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন কবি নন, তিনি যা তেলাওয়াত করেন তা কবিতা নয়। কবিরা যা কিছু বলে তা শুধু কাল্পনিক ও অবাস্তব। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলে তা কাল্পনিক নয় এবং অবাস্তবও নয়, বরং তা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত বাণী। তাই কবিরা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ও পাপিষ্ঠ হয়, অনুরূপ যারা সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত ও পাপিষ্ঠ হয় তারাই কবিদের অনুসরণ করে থাকে।

(اَفَّاکٍ اَثِیْمٍ)

অর্থাৎ প্রত্যেক অসার ও অনর্থক কথায় মত্ত থাকে। সত্যের অনুসরণ করে না। وَادٍ দ্বারা উদ্দেশ্য কবিতার উপত্যকা, অর্থাৎ কবিতার জগতে উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়। কখনো ভাল কথা বলে, কখনো খারাপ কথা বলে, কখনো মানুষের প্রশংসা ও দোষত্র“টি বর্ণনা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে ইত্যাদি। এক কথায় তারা স্থির থাকে না। আর তারা এমন সব কথাবার্তা বলে যা নিজেরা করে না। অর্থাৎ কথা ও কাজে মিল রাখে না।

সুতরাং যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কবি বলতে চাও, তারা একটু চিন্তা করে দেখন উল্লিখিত বিষয়গুলোর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিল আছে কিনা? মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেন তিনি কি তার বিপরীত করেন? তিনি কি খারাপ কাজের নির্দেশ দেন? তিনি কি সত্য ছাড়া মিথ্যা কোন সংবাদ দেন? অতএব মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন কবি নয়, আমি আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে কবিতা শিখাইনি এবং তাঁর জন্য এটা শোভনীয় নয়।

কুপ্রবৃত্তি ও কল্পনার অনুসারী কবিদের আলোচনা করার পর তাদের আলোচনা নিয়ে আসা হয়েছে যারা ঈমান এনেছে, সৎআমল করেছে ও বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে এবং মুসলিমদেরকে তাদের শত্র“ মুশরিকদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করে। এদের কবিতা সৎ আমলের শামিল। কারণ তারা কবিতা বলে মুসলিমদেরকে ঈমান ও সৎ আমলের প্রতি প্রেরণা দেয়, শত্র“দের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রেরণা দেয়।

ইসলামী শরীয়তে কাব্যচর্চার বিধান: পূর্বের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে গেল কবিতা ও কবি দুপ্রকার- ১. যারা অশ্লীল-বেহায়া, অসত্য ও কাল্পনিক-অবাস্তব কথা বলে, মানুষের প্রশংসা ও নিন্দা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে কবিতা রচনা করে এবং আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ, কুরআন ও জ্ঞানচর্চার ওপর প্রবল হয়ে যায় ও শরীয়ত বিরোধী বিষয়বস্তু সম্বলিত হয় তাহলে সে সব কবি ও কবিতা নিন্দনীয়, এরূপ কবি ও কবিতাকে আল্লাহ তা‘আলা নিন্দা করেছেন যেমন ২২৪-২২৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের কেউ বমি দিয়ে পেট পূর্ণ করুক এটা তার জন্য উত্তম কবিতা দিয়ে পেট পূর্ণ করা থেকে। (সহীহ বুখারী হা: ৬১৫৪, সহীহ মুসলিম হা: ২২৫৭) খলীফা উমার (رضي الله عنه) প্রশাসক আদী বিন নযলাকে অশ্লীল কবিতা বলার কারণে পদচ্যুত করেন। উমর বিন আব্দুল আযীয একই কারণে আবুল আহওয়াসকে দেশান্তরিত করেন। (কুরতুবী)

২. যে সব কবিতায় অসত্য, বেহায়া, অশ্লীল ও শরীয়ত গর্হিত কোন কথা নেই এবং আল্লাহ তা‘আলার যিকির, ইবাদত ও কুরআন থেকে গাফেল রাখে না বরং ঈমান ও আমলের প্রতি উৎসাহ প্রদান করে, জিহাদের প্রতি প্রেরণা জোগায় তা ভাল ও প্রশংসনীয়। এরূপ কবি ও কবিতা উভয়কে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল প্রশংসা করেছেন। যেমন ২২৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ مِنَ الشِّعْرِ حِكْمَةً

কতক কবিতা রয়েছে যা হেকমতপূর্ণ। (সহীহ বুখারী হা: ৬১৪৫) তিনি আরো বলেন: ভাল কবিতা ভাল কথার মত, খারাপ কবিতা খারাপ কথার মত। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৪৪৭)

সাহাবীরা অনেক ভাল কবিতা বলতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন কবি ছিলেন যার নাম হাসসান বিন সাবেত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষে কাফিরদের কবিতার প্রত্যুত্তর দিতেন। মদীনায় দশজন কবি ছিলেন (কুরতুবী)।

সুতরাং কবিদের সতর্ক হওয়া উচিত সে কী কবিতা বলছে, যদি ভাল হয় তাহলে ভাল, আর মন্দ হলে তার মন্দ পরিণাম নিজের ওপর বর্তাবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. শয়তান কোন ভাল মানুষের ওপর অবতরণ করতে পারে না।
২. মিথ্যা কবিতা রচনা করা যাবে না।
৩. অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করা বৈধ অত্যাচারের সমপরিমাণ, তবে ক্ষমা করে দেয়াটা অতি উত্তম।
৪. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন কবি নন এবং তাঁকে কবিতা শিক্ষা দেয়া হয়নি ।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২২১-২২৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, মুশরিকরা বলতো: রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কুরআন নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য নয়। তিনি এটা স্বয়ং রচনা করেছেন। অথবা তার কাছে জ্বিনদের নেতা এসে থাকে যে তাঁকে শিখিয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে এই আপত্তিকর কথা হতে পবিত্র করছেন এবং প্রমাণ করছেন যে, তিনি যে কুরআন আনয়ন করেছেন তা আল্লাহর কালাম এবং তাঁর নিকট হতেই এটা অবতারিত। সম্মানিত, বিশ্বস্ত ও শক্তিশালী ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল (আঃ) এটা আনয়ন করেছেন। এটা কোন শয়তান বা জ্বিন আনয়ন করেনি। শয়তানরা তো কুরআনের শিক্ষা হতে সম্পূর্ণ বিমুখ। তাদের শিক্ষা তো কুরআন কারীমের শিক্ষার একেবারে বিপরীত। সুতরাং কি করে তারা কুরআনের ন্যায় পবিত্র ও সুপথ প্রদর্শনকারী কালাম আনয়ন করতঃ মানুষকে সুপথ প্রদর্শন করতে পারে? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। কেননা, তারা নিজেরাও চরম মিথ্যাবাদী ও পাপী। তারা চুরি করে আকাশে যে এক আধটি কথা শুনে নেয়, ওর সাথে বহু কিছু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ যাদুকররা তখন ওর সাথে নিজেদের পক্ষ হতে আরো বহু মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে লোকদের মধ্যে প্রচার করে। এখন শয়তান লুকিয়ে যে সত্য কথাটি আকাশে শুনেছিল ওটা সত্যরূপেই প্রকাশিত হয়, কিন্তু লোকেরা ঐ একটি সত্য কথার উপর ভিত্তি করে যাদুকরের আরো শত শত মিথ্যা কথাকেও সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকে। এভাবে তারা ধ্বংস হয়ে যায়।

সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, একদা জনগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যাদুকর ও ভবিষ্যদ্বক্তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “তারা কিছুই নয়।” জনগণ বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তারা এমনও কথা বলে যা সত্য হয়ে থাকে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, এটা ঐ কথা যা জ্বিনেরা-চুরি করে আকাশ হতে শুনে আসে এবং তা ঐ ভবিষ্যদ্বক্তার কানে পৌঁছিয়ে থাকে। অতঃপর ঐ ভবিষ্যদ্বক্তা নিজের পক্ষ হতে শতটি মিথ্যা কথা ওর সাথে মিলিয়ে বলে দেয়।”

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আল্লাহ তা’আলা আকাশে কোন কাজের ফায়সালা করেন তখন ফেরেশতারা আদবের সাথে নিজেদের পালক ঝুঁকিয়ে দেন। কোন কংকরময় ভূমিতে জিঞ্জীর বাজানো হলে যেরূপ শব্দ হয় ঐরূপ শব্দ ঐ সময় আসতে থাকে। যখন ঐ বিহ্বলতা বিদূরিত হয় তখন ফেরেশতারা একে অপরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমাদের প্রতিপালক কি বলেছেন (কি হুকুম করেছেন)?” উত্তরে বলা হয়ঃ “তিনি সত্য বলেছেন (সঠিক হুকুম করেছেন)। তিনি সমুন্নত ও মহান।” কখনো কখনো আল্লাহ তা’আলার ঐ হুকুম চুরি করে শ্রবণকারী কোন জ্বিনের কানে পৌঁছে যায় যারা এভাবে একের উপর এক হয়ে ঐ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত সুফিয়ান (রঃ) স্বীয় হাতের অঙ্গুলীগুলো বিছিয়ে দিয়ে ওর উপর অপর হাত ঐভাবেই রেখে ওগুলোকে মিলিত করে বলেনঃ “এইভাবে।” এখন উপরের জন নীচের জনকে, সে তার নীচের জনকে ঐ কথা বলে দেয়। শেষ পর্যন্ত সর্ব নীচের জন ঐ কথা ভবিষ্যদ্বক্তা বা যাদুকরের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। কখনো কখনো এমনও হয় যে, ঐ কথা পৌঁছাবার পূর্বেই অগ্নিশিখা পৌঁছে যায়, সুতরাং শয়তান ঐ কথা পৌঁছাতে পারে না। আবার কখনো কখনো অগ্নিশিখা পৌঁছার পূর্বেই শয়তান ঐ কথা পৌঁছিয়ে থাকে। ঐ কথার সাথে যাদুকর নিজের পক্ষ হতে শত শত মিথ্যা কথা মিলিয়ে দিয়ে প্রচার করে দেয়। ঐ একটি কথা সত্যরূপে প্রকাশিত হওয়ায় জনগণ সবগুলোকেই সত্য মনে করে থাকে। (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) এই সমুদয় হাদীসের বর্ণনা (আরবি) (৩৪: ২৩) এই আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশাআল্লাহ।

সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে এও আছে যে, ফেরেশতারা আসমানী বিষয়ক কথাবার্তা মেঘের উপর বলে থাকেন যা শয়তান শুনে নিয়ে যাদুকরদের কানে পৌঁছিয়ে থাকে। আর ঐ যাদুকর একটি সত্যের সাথে শতটি মিথ্যা মিলিয়ে দেয়।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (কাফির) কবিদের অনুসরণ বিভ্রান্ত লোকেরাই করে থাকে। আরব কবিদের মধ্যে প্রচলিত ছিল যে, কারো নিন্দায় তারা কিছু বলতো। জনগণের একটি দল তাদের সাথে হয়ে যেতো এবং তাদের নিকট হতে ঐ নিন্দাসূচক কবিতা নিয়ে আসতো।

একবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের একটি দলকে সাথে নিয়ে আ’রজের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে একজন কবির সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয় যে কবিতা পাঠ করতে করতে চলছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “তাকে ধর অথবা তাকে কবিতা পাঠ হতে বিরত রাখো। কারো রক্ত পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তুমি কি দেখো না যে, তারা উড্রান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? প্রত্যেক বাজে বিষয়ের মধ্যে তারা ঢুকে পড়ে। কারো প্রশংসা করতে গিয়ে তারা তাকে একেবারে আকাশে উঠিয়ে দেয়। মিথ্যা প্রশংসা করে তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে। তারা হয় কথার সওদাগর, কিন্তু কাজে অলস। তারা নিজেরা যা করে না তা বলে থাকে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে দু’টি লোক একে অপরকে নিন্দা করে। তাদের একজন ছিল আনসারী এবং অপরজন ছিল অন্য গোত্রের লোক। তখন দুই গোত্রেরই বড় বড় লোকেরা তাদের সাথে যোগ দেয়। তাই এই আয়াতে এটাই রয়েছে যে, বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদেরকে অনুসরণ করে থাকে। তারা ঐ কথা বলে থাকে যা তারা নিজেরা করে না। এজন্যেই আলেমগণ এ ব্যাপারে মতভেদ করেছেন যে, যদি কোন কবি নিজের কবিতার মধ্যে এমন কোন পাপের কথা স্বীকার করে নেয় যার উপর শরীয়তের হদ ওয়াজিব হয়, তবে তার উপর হদ জারী করা যাবে কি যাবে না? আলেমরা দুই দিকেই গিয়েছেন। আসলে তারা ফখর ও গর্ব করে এ ধরনের কথা বলে থাকে। তারা বলেঃ “আমি এই করেছি, ঐ করেছি, অথচ আসলে তারা কিছুই করেনি এবং করতেও পারে না। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনে সা’দ (রঃ) তাবাকাতে এবং যুবায়ের ইবনে বিকার (রঃ) কিতাবুল ফুকাহাতে বর্ণনা করেছেন যে, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) তাঁর খিলাফতের আমলে হযরত নুমান ইবনে আদী ইবনে ফুলা (রাঃ)-কে বসরার মাইসান শহরের গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি একজন কবি ছিলেন। তিনি কবিতায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “সুন্দরী মহিলারা কি এ খবর পায়নি যে, তাদের প্রেমিক মাইসানে অবস্থান করছে? যেখানে সদা-সর্বদা শীশার গ্লাসে মদ্যচক্র চলছে? আর গ্রামের তরুণীরা নাচ-গানে মত্ত রয়েছে। হ্যাঁ, যদি আমার কোন বন্ধু দ্বারা এটা সম্ভব হয় তবে এর চেয়ে বড় ও পূর্ণ মদ্যের গ্লাস আমাকে পান করাতে পারে। কিন্তু ছোট গ্লাস আমার নিকট খুবই অপছন্দনীয়। আল্লাহ করুন যেন আমীরুল মুমিনীনের কাছে এ খবর না পেীছে। অন্যথায় তিনি এতে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন এবং আমাকে শাস্তি দিবেন।” ঘটনাক্রমে সত্যিই এ কবিতাগুলো আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাঃ)-এর নিকট পৌছে যায় এবং সাথে সাথেই তিনি লোক পাঠিয়ে তাঁকে পদচ্যুত করেন এবং তিনি একটি চিঠিও পাঠান। ঐ চিঠিতে তিনি লিখেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। হা-মীম। এই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিকট হতে, যিনি পাপ ক্ষমা করেন, তওবা কবুল করেন, যিনি শাস্তি দানে কঠোর, শক্তিশালী। তিনি ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। প্রত্যাবর্তন তাঁরই নিকট। অতঃপর আমার কাছে তোমার (কবিতার) কথা পৌঁছেছে। আল্লাহর কসম! অবশ্যই ওটা আমাকে অসন্তুষ্ট করেছে। তাই আমি তোমাকে পদচ্যুত করলাম।”

এ চিঠি পাঠ মাত্রই হযরত নু’মান (রাঃ) হযরত উমার (রাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে যান এবং অত্যন্ত দ্রতার সাথে আরয করেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো মদ্যপানও করিনি, নাচও দেখিনি এবং গান বাজনাও করিনি। এটা তো শুধু কবিতাসূচক আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল।” তাঁর একথা শুনে আমীরুল মুমিনীন বলেনঃ “আমারও ধারণা এটাই ছিল। কিন্তু আমি তো এটা সহ্য করতে পারি না যে, এরূপ অশ্লীলভাষী কবিকে কোন পদে রেখে দিই।” তাহলে বুঝা গেল যে, হযরত উমার (রাঃ)-এর মতেও কবি যদি তার কবিতার মাধ্যমে এমন কোন অপরাধের কথা ঘোষণা করে যা হদের যোগ্য, তবুও তাকে হদ মারা যাবে না। কেননা, সে বলে বটে, কিন্তু করে না। তবে নিঃসন্দেহে সে তিরস্কার ও নিন্দার যোগ্য। হাদীসে আছে যে, রক্ত, পুঁজ দ্বারা পেট পূর্ণ করা কবিতা দ্বারা পেট পূর্ণ করা অপেক্ষা উত্তম। ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবিও নন, যাদুকরও নন, ভবিষ্যদ্বক্তাও নন এবং মিথ্যা আরোপকারীও নন। তাঁর বাহ্যিক অবস্থাই তাঁর এসব দোষ হতে মুক্ত হওয়ার বড় সাক্ষী। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আমি রাসূল (সঃ)-কে কাব্য রচনা করতে শিখাইনি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয় নয়, এটাতো শুধু এক উপদেশ এবং সুস্পষ্ট কুরআন।” (৩৬:৬৯) আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “এটা কোন কবির রচনা নয়, তোমরা অল্পই বিশ্বাস কর। এটা কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা অল্পই অনুধাবন কর। এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ।” (৬৯: ৪১-৪৩) অনুরূপভাবে এখানে বলেছেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আর নিশ্চয়ই এটা (আল-কুরআন) জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট হতে অবতীর্ণ। জিবরাঈল (আঃ) এটা নিয়ে অবতরণ করেছে তোমার হৃদয়ে, যাতে তুমি সতর্ককারী হতে পার। অবতীর্ণ করা হয়েছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।” (২৬:১৯২-১৯৫) এ সূরারই আর একটি জায়গায় বলেছেনঃ “শয়তানরা ওটাসহ অবতীর্ণ হয়নি। তারা এ কাজের যোগ্য নয় এবং তারা এর সামর্থ্যও রাখে না। তাদেরকে তো শ্রবণের সুযোগ হতে দূরে রাখা হয়েছে। এর আরো কিছু পরে বলেছেনঃ “তোমাদেরকে কি আমি জানিয়ে দেবো কার কাছে শয়তানরা অবতীর্ণ হয়? তারা তো অবতীর্ণ হয় প্রত্যেকটি ঘোর মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী। আর কবিদেরকে অনুসরণ করে তারা যারা বিভ্রান্ত। তুমি কি দেখো না তারা। উল্লান্ত হয়ে প্রত্যেক উপত্যকায় ঘুরে বেড়ায়? এবং যা করে না তা বলে।” এরপরে যা রয়েছে তার শানে নুযূল এই যে, এর পূর্ববর্তী আয়াত যখন অবতীর্ণ হয় (যাতে কবিদেরকে নিন্দে করা হয়েছে), তখন নবী (সঃ)-এর দরবারের কবিরা যেমন হযরত হাস্সান ইবনে সাবিত (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) এবং হযরত কা’ব ইবনে মালিক (রাঃ) ক্রন্দনরত অবস্থায় নবী (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে তো কবিদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমরাও তো কুবি (সুতরাং আমরাও তো তাহলে নিন্দনীয়?)।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই পরবর্তী আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “ঈমান আনয়নকারী ও সৎকর্মশীল তোমরাই এবং আল্লাহকে বার বার স্মরণকারীও তোমরাই। তোমরাই অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণকারী। সুতরাং তোমরা এদের হতে স্বতন্ত্র।”

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে হযরত কা’ব (রাঃ)-এর নাম নেই। একটি রিওয়াইয়াতে শুধু আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ)-এর কথা আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও তো কবি?” তারই একথার পরিপ্রেক্ষিতে (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কথা বর্ণিত আছে। কিন্তু এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরা। আর আনসার কবিরা মক্কায় ছিলেন না। তারা সবাই ছিলেন মদীনায়। কাজেই তাদের ব্যাপারে এ সূরা অবতীর্ণ হওয়া অসম্ভবই বটে। যে হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে ওগুলো মুরসাল। সুতরাং এগুলোর উপর ভরসা করা যায় না। তবে এ আয়াতটি যে স্বাতন্ত্রের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে তাতে সন্দেহের লেশ মাত্র নেই। আর এই স্বাতন্ত্র শুধু এই আনসার কবিদের ব্যাপারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং যে কোন কবি তার অজ্ঞতার যুগে যদি ইসলাম ও মুসলমানদের বিপক্ষে কবিতা লিখে থাকে, অতঃপর মুসলমান হয়ে গিয়ে তাওবা করে থাকে এবং পূর্বের দুষ্কর্মের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বার বার আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে তবে তারাও নিন্দনীয় কবিদের হতে স্বতন্ত্র হবে। কেননা, সৎ কার্যাবলী দুষ্কর্মগুলোকে মিটিয়ে দেয়। তাহলে সে যখন কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের দুর্নাম করেছিল এবং আল্লাহর দ্বীনকে মন্দ বলেছিল তখন ওটা নিঃসন্দেহে মন্দ কাজই ছিল। কিন্তু পরে যখন সে মুসলমানদের ও ইসলামের প্রশংসা করলো তখন ঐ দুষ্কর্ম সকর্মে পরিবর্তিত হয়ে গেল। যেমন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যাবআরী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দুর্নাম করেছিলেন। কিন্তু ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর বড়ই প্রশংসা করেছিলেন এবং পূর্বে যে তিনি তাঁর দুর্নাম করেছিলেন, কবিতার মাধ্যমে ওর ওজর পেশ করতে গিয়ে বলেন যে, ঐ সময় তিনি শয়তানের খপ্পরে পড়েছিলেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও তার একজন বড় শত্রু ছিলেন এবং কবিতার মাধ্যমে তাঁর খুবই দুর্নাম করতেন। কিন্তু যখন তিনি মুসলমান হলেন তখন এমন পাকা মুসলমান হলেন যে, সারা দুনিয়ায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অপেক্ষা বড় প্রিয়জন তাঁর কাছে আর কেউই ছিল না। প্রায়ই তিনি তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তার সাথে অত্যন্ত ভালবাসা রাখতেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব যখন মুসলমান হন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে আপনি তিনটি জিনিস দান করুন। প্রথম এই যে, আমার পুত্র মুআবিয়া (রাঃ)-কে আপনার লেখক (অর্থাৎ অহী লেখক) বানিয়ে নিন। দ্বিতীয় এই যে, আমার সাথে এক দল সৈন্য প্রেরণ করুন যাতে আমি কাফিরদের সাথে লড়তে পারি যেমন আমি মুসলমানদের সাথে লড়তাম।” তাঁর এই দু’টি আবেদনই রাসূলুল্লাহ (সঃ) কবুল করে নেন। তৃতীয় আর একটি আবেদন তিনি করেন এবং সেটাও গৃহীত হয়। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন) সুতরাং এই লোকদেরকে পূর্ববর্তী আয়াতের হুকুম হতে এই পরবর্তী আয়াত দ্বারা পৃথক করা হয়েছে। আল্লাহর অধিক স্মরণ তাঁরা তাঁদের কবিতার মাধ্যমেই করুন অথবা অন্য কোন প্রকারে করুন, নিশ্চিতরূপে তা তাদের পূর্ববর্তী পাপসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর উক্তিঃ তারা অত্যাচারিত হবার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে অর্থাৎ কবিতার মাধ্যমে তারা কাফিরদের নিন্দামূলক কবিতার জবাব দিয়ে থাকেন। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ)-কে বলেছিলেনঃ “তুমি কাফিরদের নিন্দা করে কবিতা রচনা কর, হযরত জিবরাঈল (আঃ) তোমার সাথে রয়েছেন।”

হযরত কাব ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন তিনি কুরআন পাকে কবিদের নিন্দা শুনেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আর্য করেনঃ “আল্লাহ তা’আলা (কবিদের সম্পর্কে) যা নাযিল করার তা তো নাযিল করেছেন (তাহলে আমিও কি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত?)।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেনঃ “ (না, না, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও। জেনে রেখো যে,) মুমিন তরবারী ও জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করে থাকে। যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! তোমাদের কবিতাগুলো তো তাদেরকে (কাফিরদেরকে) মুজাহিদের তীরের ন্যায় ছিদ্র করে দিয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ অত্যাচারীদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। সেই দিন তাদের ওজর আপত্তি কোন কাজে আসবে না। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা যুলুম হতে বেঁচে থাকো। কারণ কিয়ামতের দিন যুলুম অন্ধকারের কারণ হবে।” কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ পাকের (আরবি) উক্তিটি আম বা সাধারণ, কবি হোক বা অন্য কেউ হোক, সবাই এর অন্তর্ভুক্ত।

হযরত হাসান বসরী (রঃ) একজন খৃষ্টানের জানাযা যেতে দেখে এ আয়াতটিই পাঠ করেছিলেন। তিনি যখন এ আয়াতটি পাঠ করতেন তখন এতো কাঁদতেন যে, তাঁর হেঁচকী বন্ধ হয়ে যেতো।

হযরত ফুযালা ইবনে উবায়েদ (রঃ) যখন রোমে আগমন করেন তখন একটি লোক নামায পড়ছিলেন। যখন লোকটি (আরবি) আয়াতটি পাঠ করেন তখন তিনি বলেন যে, এর দ্বারা বায়তুল্লাহর ধ্বংসকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, এর দ্বারা মক্কাবাসী উদ্দেশ্য। আবার এটাও বর্ণিত আছে যে, এর দ্বারা মুশরিকরা উদ্দেশ্য। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, আয়াতটি হলো সাধারণ। সুতরাং এটা সব যালিমকেই অন্তর্ভুক্তকারী।

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর মৃত্যুর সময় মাত্র দু’টি লাইনে তাঁর অসিয়ত লিখে যান। তা ছিল নিম্নরূপঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবনে আবি কাহাফা (রাঃ)-এর অসিয়ত। এটা ঐ সময়ের অসিয়ত, যখন তিনি দুনিয়া ছেড়ে যাচ্ছেন। যে সময় কাফিরও মুমিন হয়ে যায়, পাপীও তাওবা করে এবং মিথ্যাবাদীকেও সত্যবাদী মনে করা হয়। আমি উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে তোমাদের উপর আমার খলীফা নিযুক্ত করে যাচ্ছি। সে যদি ইনসাফ করে তবে খুব ভাল কথা এবং তার সম্পর্কে আমার ধারণা এটাই আছে। আর যদি সে যুলুম করে এবং কোন পরিবর্তন আনয়ন করে তবে জেনে রেখো যে, আমি ভবিষ্যদ্রষ্টা নই। অত্যাচারীরা তাদের গন্তব্যস্থল কোথায় তা সত্বরই জানতে পারবে।”

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1007)
[Shall I inform you upon whom the devils descend?]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 221-227

26:221

ہَلۡ اُنَبِّئُکُمۡ عَلٰی مَنۡ تَنَزَّلُ الشَّیٰطِیۡنُ ﴿۲۲۱﴾ؕ

Shall I inform you upon whom the devils descend?

 

Refutation of the Fabrications of the Idolators

Here Allah addresses those idolators who claimed that what was brought by the Messenger was not the truth but was merely something that he had made up by himself, or that it came to him in visions from the Jinn.

Allah stated that His Messenger was above their claims and fabrications, and that what he had brought did indeed come from Allah, and that it was a revelation and inspiration, brought down by a noble, trustworthy and mighty angel. It did not come from the Shayatin, because they have no desire for anything like this Noble Qur’an — they descend upon those who are like them, the lying fortune-tellers.

Allah says:

هَلْ أُنَبِّيُكُمْ

Shall I inform you,

meaning, shall I tell you,

عَلَى مَن تَنَزَّلُ الشَّيَاطِينُ

تَنَزَّلُ عَلَى كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ

26:222

تَنَزَّلُ عَلٰی کُلِّ اَفَّاکٍ اَثِیۡمٍ ﴿۲۲۲﴾ۙ

They descend upon every sinful liar.

 

upon whom the Shayatin descend.

They descend on every lying, sinful person (Athim).

meaning, one whose speech is lies and fabrication.

أَثِيمٍ
(Athim)

means, whose deeds are immoral.

This is the person upon whom the Shayatin descend, fortune-tellers and other sinful liars.

The Shayatin are also sinful liars

26:223

یُّلۡقُوۡنَ السَّمۡعَ وَ اَکۡثَرُہُمۡ کٰذِبُوۡنَ ﴿۲۲۳﴾ؕ

They pass on what is heard, and most of them are liars.

 

يُلْقُونَ السَّمْعَ

Who gives ear,

means, they try to overhear what is said in the heavens, and they try to hear something of the Unseen, then they add to it a hundred lies and tell it to their human comrades, who then tell it to others. Then the people believe everything they say because they were right about the one thing which was heard from the heavens.

وَأَكْثَرُهُمْ كَاذِبُونَ

and most of them are liars.

This was stated in an authentic Hadith recorded by Al-Bukhari from A’ishah, may Allah be pleased with her, who said,

“The people asked the Prophet about fortune-tellers, and he said:

إِنَّهُمْ لَيْسُوا بِشَيْء

They are nothing.

They said:”O Messenger of Allah, they say things that come true.”

The Prophet said:

تِلْكَ الْكَلِمَةُ مِنَ الْحَقِّ يَخْطَفُهَا الْجِنِّيُّ فَيُقَرْقِرُهَا فِي أُذُنِ وَلِيِّهِ كَقَرْقَرَةِ الدَّجَاجِ فَيَخْلِطُونَ مَعَهَا أَكْثَرَ مِنْ مِايَةِ كَذْبَة

That is a word of truth which the Jinn snatches, then he gabbles it like the clucking of a chicken into the ear of his friend, but he mixes it with more than one hundred lies.

Al-Bukhari also recorded that Abu Hurayrah said,

“The Prophet said:

إِذَا قَضَى اللهُ الاَْمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلَيِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَأَنَّهَا سِلْسِلَةٌ عَلَى صَفْوَانٍ فَإِذَا فُزِّعَ عَنْ قُلُوبِهِمْ قَالُوا مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ قَالُوا لِلَّذِي قَالَ الْحَقَّ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ فَيَسْمَعُهَا مُسْتَرِقُو السَّمْعِ وَمُسْتَرِقُو السَّمْعِ هَكَذَا بَعْضُهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ وَصَفَ سُفْيَانُ بِيَدِهِ فَحَرَّفَهَا وَبَدَّدَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ فَيَسْمَعُ الْكَلِمَةَ فَيُلْقِيهَا إِلَى مَنْ تَحْتَهُ ثُمَّ يُلْقِيهَا الاْخَرُ إِلَى مَنْ تَحْتَهُ حَتَّى يُلْقِيَهَا عَلَى لِسَانِ السَّاحِرِ أَوِ الْكَاهِنِ فَرُبَّمَا أَدْرَكَهُ الشِّهَابُ قَبْلَ أَنْ يُلْقِيَهَا وَرُبَّمَا أَلْقَاهَا قَبْلَ أَنْ يُدْرِكَهُ فَيَكْذِبُ مَعَهَا مِايَةَ كَذْبَةٍ فَيُقَالُ أَلَيْسَ قَدْ قَالَ لَنَا يَوْمَ كَذَا وَكَذَا كَذَا وَكَذَا فَيُصَدَّقُ بِتِلْكَ الْكَلِمَةِ الَّتِي سُمِعَتْ مِنَ السَّمَاء

When Allah decrees a matter in heaven, the angels beat their wings in submission to His decree, a chain beating on a rock. And when the fear in their hearts subsides, they say:”What is it that your Lord has said”

They say:”The truth. And He is the Most High, the Most Great.”

Then when the Jinn who are listening out, one above the other

(– and Sufyan illustrated this with a gesture, holding his hand vertically with his fingers outspread –)

when they hear this, they throw it down from one to another, until it is passed to the fortune-teller or soothsayer. The shooting star may strike the Jinn before he passes it on, or he may pass it on before he is struck, and he adds to it one hundred lies, thus it is said:

“Did he not tell us that on such and such a day, such and such would happen”

So they believe him because of that one thing which was heard from the heavens.

This was recorded by Al-Bukhari.

Al-Bukhari recorded from A’ishah, may Allah be pleased with her, that the Prophet said:

إِنَّ الْمَلَيِكَةَ تَحَدَّثُ فِي الْعَنَانِ وَالْعَنَانُ الْغَمَامُ بِالاَْمْرِ يَكُونُ فِي الاَْرْضِ فَتَسْمَعُ الشَّيَاطِينُ الْكَلِمَةَ فَتَقُرُّهَا فِي أُذُنِ الْكَاهِنِ كَمَا تُقَرُّ الْقَارُورَةُ فَيَزِيدُونَ مَعَهَا مِايَةَ كَذْبَة

The angels speak in the clouds about some matter on earth, and the Shayatin overhear what they say, so they tell it to the fortune-teller, gurgling into his ear like (a liquid poured) from a glass bottle, and he adds to it one hundred lies.
Refutation of the Claim that the Prophet was a Poet

Allah tells:

وَالشُّعَرَاء يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ

26:224

وَ الشُّعَرَآءُ یَتَّبِعُہُمُ الۡغَاوٗنَ ﴿۲۲۴﴾ؕ

And the poets – [only] the deviators follow them;

 

As for the poets, the astray ones follow them.

Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas that this means:

“The disbelievers follow the misguided among mankind and the Jinn.”

This was also the view of Mujahid, Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam, and others.

Ikrimah said,

“Two poets would ridicule one another in verse, with one group of people supporting one and another group supporting the other. Hence Allah revealed the Ayah,
وَالشُّعَرَاء يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ
(As for the poets, the erring ones follow them).

أَلَمْ تَرَ أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ يَهِيمُونَ

26:225

اَلَمۡ تَرَ اَنَّہُمۡ فِیۡ کُلِّ وَادٍ یَّہِیۡمُوۡنَ ﴿۲۲۵﴾ۙ

Do you not see that in every valley they roam

 

See you not that they speak about every subject in their poetry!

Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas that this means:

“They indulge in every kind of nonsense.”

Ad-Dahhak reported that Ibn Abbas said,

“They engage in every kind of verbal art.”

This was also the view of Mujahid and others.

وَأَنَّهُمْ يَقُولُونَ مَا لَاأ يَفْعَلُونَ

26:226

وَ اَنَّہُمۡ یَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا یَفۡعَلُوۡنَ ﴿۲۲۶﴾ۙ

And that they say what they do not do? –

 

And that they say what they do not do.

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said:

at the time of the Messenger of Allah, two men, one from among the Ansar and one from another tribe, were ridiculing one another in verse, and each one of them was supported by a group of his own people, who were the foolish ones, and Allah said:

وَالشُّعَرَاء يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ

أَلَمْ تَرَ أَنَّهُمْ فِي كُلِّ وَادٍ يَهِيمُونَ

وَأَنَّهُمْ يَقُولُونَ مَا لَاأ يَفْعَلُونَ

As for the poets, the erring ones follow them. See you not that they speak about every subject in their poetry and that they say what they do not do.

What is meant here is that the Messenger, to whom this Qur’an was revealed, was not a soothsayer or a poet, because his situation was quite obviously different to theirs, as Allah says:

وَمَا عَلَّمْنَـهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنبَغِى لَهُ إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرٌ وَقُرْءَانٌ مُّبِينٌ

And We have not taught him poetry, nor is it suitable for him. This is only a Reminder and a plain Qur’an. (36:69)

إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُولٍ كَرِيمٍ

وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلً مَّا تُوْمِنُونَ

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيلً مَّا تَذَكَّرُونَ

تَنزِيلٌ مِّن رَّبِّ الْعَـلَمِينَ

That this is verily, the word of an honored Messenger. It is not the word of a poet, little is that you believe!

Nor is it the word of a soothsayer, little is that you remember! This is the Revelation sent down from the Lord of all that exits. (69:40-43)
The Exception of the Poets of Islam

Allah tells

26:227

اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ ذَکَرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا وَّ انۡتَصَرُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا ظُلِمُوۡا ؕ وَ سَیَعۡلَمُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَیَّ مُنۡقَلَبٍ یَّنۡقَلِبُوۡنَ ﴿۲۲۷﴾٪

Except those [poets] who believe and do righteous deeds and remember Allah often and defend [the Muslims] after they were wronged. And those who have wronged are going to know to what [kind of] return they will be returned.

 

إِلاَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ

Except those who believe and do righteous deeds,

Muhammad bin Ishaq narrated from Yazid bin Abdullah bin Qusayt, that Abu Al-Hasan Salim Al-Barrad, the freed servant of Tamim Ad-Dari said:

“When the Ayah —
وَالشُّعَرَاء يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ
(As for the poets, the erring ones follow them) was revealed, Hasan bin Thabit, Abdullah bin Rawahah and Ka`b bin Malik came to the Messenger of Allah, weeping, and said:

“Allah knew when He revealed this Ayah that we are poets.”

The Prophet recited to them the Ayah,
إِلاَّ الَّذِينَ امَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ
(Except those who believe and do righteous deeds), and said:
أَنْتُم
(This means) you.

وَذَكَرُوا اللَّهَ كَثِيرًا

and remember Allah much.

He said:
أَنْتُم
(This means) you.

وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا

and vindicate themselves after they have been wronged.

He said:
أَنْتُم
(This means) you.

This was recorded by Ibn Abi Hatim and Ibn Jarir from the narration of Ibn Ishaq.

But this Surah was revealed in Makkah, so how could the reason for its revelation be the poets of the Ansar? This is something worth thinking about.

The reports that have been narrated about this are all Mursal and cannot be relied on. And Allah knows best.

But this exception could include the poets of the Ansar and others. It even includes those poets of the Jahiliyyah who indulged in condemning Islam and its followers, then repented and turned to Allah, and gave up what they used to do and started to do righteous deeds and remember Allah much, to make up for the bad things that they had previously said, for good deeds wipe out bad deeds. So they praised Islam and its followers in order to make up for their insults, as (the poet) Abdullah bin Az-Zab`ari said when he became Muslim:

“O Messenger of Allah, indeed my tongue will try to make up for things it said when I was bad — When I went along with the Shaytan during the years of misguidance, and whoever inclines towards his way is in a state of loss.”

Similarly, Abu Sufyan bin Al-Harith bin Abd Al-Muttalib was one of the most hostile people towards the Prophet, even though he was his cousin, and he was the one who used to mock him the most. But when he became Muslim, there was no one more beloved to him than the Messenger of Allah. He began to praise the Messenger of Allah where he had mocked him, and take him as a close friend where he had regarded him as an enemy.

وَانتَصَرُوا مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا

and vindicate themselves after they have been wronged.

Ibn Abbas said,

“They responded in kind to the disbelievers who used to ridicule the believers in verse.”

This was also the view of Mujahid, Qatadah and several others.

It was also recorded in the Sahih that the Messenger of Allah said to Hasan:

اهْجُهُم

Ridicule them in verse.

Or he said:

هاجِهِمْ وَجِبْرِيلُ مَعَك

Ridicule them in verse, and Jibril is with you.

Imam Ahmad recorded that Ka`b bin Malik said to the Prophet,

“Allah has revealed what He revealed about the poets. The Messenger of Allah said:

إِنَّ الْمُوْمِنَ يُجَاهِدُ بِسَيْفِهِ وَلِسَانِهِ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَكَأَنَّ مَا تَرْمُونَهُمْ بِهِ نَضْحُ النَّـبْل

The believer wages Jihad with his sword and with his tongue, By the One in Whose Hand is my soul, it is as if you are attacking them with arrows.

وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ

And those who do wrong will come to know by what overturning they will be overturned.

This is like the Ayah,

يَوْمَ لَا يَنفَعُ الظَّـلِمِينَ مَعْذِرَتُهُمْ

The Day when their excuses will be of no profit to wrongdoers. (40:52)

According to the Sahih, the Messenger of Allah said:

إِيَّاكُمْ وَالظُّلْمَ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَة

Beware of wrongdoing, for wrongdoing will be darkness on the Day of Resurrection.

Qatadah bin Di`amah said concerning the Ayah —
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
(And those who do wrong will come to know by what overturning they will be overturned),

this refers to the poets and others.

This is the end of the Tafsir Surah Ash-Shu`ara’. Praise be to Allah, Lord of the worlds

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply