(বই#১০০৬) [  তোমার নিকটতম স্বজনবর্গকে তুমি সতর্ক করে দাও। ] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৬)
[  তোমার নিকটতম স্বজনবর্গকে তুমি সতর্ক করে দাও। ]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
২১৩-২২০ নং আয়াত:-
২৬:২১৩
فَلَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُعَذَّبِیۡنَ ﴿۲۱۳﴾ۚ
অতএব আপনি অন্য কোন ইলাহকে আল্লাহ্‌র সাথে ডাকবেন না, ডাকলে আপনি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
২৬:২১৪
وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ ﴿۲۱۴﴾ۙ
তোমার নিকটতম স্বজনবর্গকে তুমি সতর্ক করে দাও।
২৬:২১৫
وَ اخۡفِضۡ جَنَاحَکَ لِمَنِ اتَّبَعَکَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۱۵﴾ۚ
এবং মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা তোমার অনুসরণ করে তাদের সাথে বিনম্র ব্যবহার করো।
২৬:২১৬
فَاِنۡ عَصَوۡکَ فَقُلۡ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۱۶﴾ۚ
ওরা যদি তোমার অবাধ্যতা করে তাহলে তুমি বল, ‘তোমরা যা কর তার জন্য আমি দায়ী নই।’
২৬:২১৭
وَ تَوَکَّلۡ عَلَی الۡعَزِیۡزِ الرَّحِیۡمِ ﴿۲۱۷﴾ۙ
আর আপনি নির্ভর করুন পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহ্‌র উপর,
২৬:২১৮
الَّذِیۡ یَرٰىکَ حِیۡنَ تَقُوۡمُ ﴿۲۱۸﴾ۙ
যিনি তোমাকে দেখেন; যখন তুমি দন্ডায়মান হও (নামাযে)।
২৬:২১৯
وَ تَقَلُّبَکَ فِی السّٰجِدِیۡنَ ﴿۲۱۹﴾
এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে।
২৬:২২০
اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۲۲۰﴾
তিনি সব কিছুই শোনেন ও জানেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*সুপারিশ কারাে নয় আমলই একমাত্র নাজাতের উপায় : পরবর্তী আয়াতে সরাসরি রসূল(স.) কে লক্ষ্য করে নির্দেশ দিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি যেন শেরক থেকে দূরে থাকেন, আপনজনদের সতর্ক করেন এবং সব বিষয়ে একমাত্র আল্লাহর ওপরই ভরসা রাখেন। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতএব, তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ কে ডাকবে না, ডাকলে শাস্তিতে পতিত হবে…'(আয়াত ২১৩-২২০) আল্লাহর সাথে শিরক করা বা আল্লাহর সাথে শরীক করে অন্য কোনাে উপাস্যকে ডাকা রসূল(স.)-এর ক্ষেত্রে কল্পনাই করা যায় না। এরপরও বলা হচ্ছে, তিনি যেন আল্লাহর সাথে অন্য কোনাে উপাস্যকে না ডাকেন, যদি ডাকেন তাহলে তিনি কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেন। রসূলের ক্ষেত্রেই যদি এই সাবধান বাণী উচ্চারিত হতে পারে, তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে এই সাবধান বাণী কতােটুকু জোরালােভাবে উচ্চারিত হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। কাজেই নিসন্দেহে। একথা বলা যায়, শিরক হচ্ছে এমন একটি মহা পাপ যার শাস্তি থেকে খােদ রসূলও রেহাই পাবেন না, যদি তিনি ঘটনাক্রমে সে পাপে লিপ্ত হন। এরপর রসূল(স.)-কে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তিনি যেন নিজের আত্মীয়স্বজনদেরকে শিরকের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন এবং এ কঠিন শাস্তির ভয় দেখান। এর ফলে অন্যরাও সতর্ক হয়ে যাবে। কারণ, খােদ রসূলের আত্মীয়স্বজনরাও যদি শিরকের ওপর মৃত্যুবরণ করে কঠিন শাস্তির হাত থেকে রেহাই না পায়, তাহলে অন্যদের তাে কোনাে কথাই নেই। আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তুমি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও।'(আয়াত ২১৪) বােখারী ও মুসলিম বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হয়েছে, যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রসূল(স.) সাফা পাহাড়ে উঠে উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে বললেন, বিপদ থেকে সাবধান! ডাক শুনে লােকজন তার কাছ জমায়েত হতে লাগলাে, অনেকে স্বয়ং এসে হাযির হলাে আবার অনেকে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে দিলাে। তাদেরকে লক্ষ্য করে রসূল বললেন, ‘হে আবদুল মােত্তালেবের বংশধরর, ‘হে ফিহরের বংশধররা, হে লুয়াই-এর বংশধররা। যদি আমি তােমাদেরকে বলি যে, পাহাড়ের পাদদেশে একটা আশ্বারােহী দল তােমাদের ওপর আক্রমণ করার জন্যে প্রস্তুত রয়েছে তাহলে কি তােমরা আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা বললাে, হাঁ! তিনি বললেন, ‘তাহলে আমি তােমাদেরকে আসন্ন এক কঠিন শাস্তির ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছি তখন আবু লাহাব বলে উঠলাে, ‘গােটা দিনটাই তােমার জন্যে অশুভ হােক, এজন্যেই কি তুমি আমাদেরকে ডেকেছো?’ এই পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ নাযিল করেন, ‘আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হােক এবং ধ্বংস হােক সে নিজেও। আয়েশা(র.)-এর বরাত দিয়ে মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন রসূলের প্রতি নাযিল হলাে, ‘তুমি নিকটতম আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও’ তখন তিনি দাঁড়িয়ে তার স্বজনদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে মােহাম্মদের কন্যা ফাতেমা! হে আবদুল মােত্তালেবের কন্যা সাফিয়াহ! হে আবদুল মােত্তালেবের বংশধররা! আল্লাহর সামনে তােমাদের জন্যে কিছু করার মত ক্ষমতা আমার নেই। আমার ধন সম্পদ থেকে তােমাদের যা চাওয়ার চাইতে পারাে। আবু হােরায়রা(র.)-এর বরাত দিয়ে মুসলিম ও তিরমিযী শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন এই আয়াতটি নাযিল হয় তখন রাসূল(সা.) কুরাইশ বংশের ছােট বড় সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘হে কোরায়শ বংশধররা! জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করাে। হে বনী কা’ব গােত্রের লােকেরা। জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করাে। হে মােহাম্মদের কন্যা ফাতেমা! তুমিও নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করাে। কারণ, আল্লাহর শপথ নিয়ে তােমাদেরকে বলছি, আল্লাহর সামনে তােমাদের জন্যে কোনাে কিছুই করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে আত্মীয়তার দাবী আমি রক্ষা করতে পারি।’ এসব হাদীসের বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, রসূল(স.) উক্ত নির্দেশকে কতটুকু গুরুত্বসহকারে গ্রহণ করেছিলেন এবং তা পালন করেছিলেন। এই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তিনি কিভাবে তার আত্মীয়স্বজন ও বংশের লােকদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এবং সুস্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, আল্লাহর সামনে রক্তের সম্পর্ক কোনােই কাজে আসবে না। সেখানে ব্যক্তিগত আমলই কাজে আসবে। তিনি আরাে জানিয়ে দিয়ে ছিলেন যে, আল্লাহর রসূল হয়েও তিনি আল্লাহর সামনে কোনাে কিছুই করার ক্ষমতা রাখেন না। এটাই হচ্ছে ইসলামের সুস্পষ্ট বক্তব্য। এই বক্তব্যে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর বান্দাদের মধ্যকার সব ধরনের মধ্যস্থতাকে অস্বীকার করা হয়েছে। এমনকি স্বয়ং রসূলে করীম(স.)-এর মধ্যস্থতাকেও অস্বীকার করা হয়েছে।

*মুমিনের আচরণ বিধি : এরপর মােমেনদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হবে সে সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে রসূল(স.)-কে বলা হচ্ছে, ‘এবং তােমার অনুসারী মােমেনদের জন্যে সহানুভূতির ডানা নামিয়ে দাও'(আয়াত ২১৫)। এই নাম ও সদয় আচরণকে স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যে ‘ডানা নিচু করা’ এর রূপক বর্ণনাভংগির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ, উড়ন্ত পাখী নিচের দিকে নেমে আসার সময় তার ডানা দুটোকে যেভাবে নামিয়ে দেয় সেভাবেই তুমি মােমেনদেরকে দু’হাত মেলে ধরে নিজের কাছে টেনে নাও। এই কোরআনী নির্দেশ পালন করতে গিয়ে রসূল(স.) জীবন ভর তাঁর অনুসারীদের প্রতি সদয় ছিলেন, মেহেরবান ছিলেন। তিনি ছিলেন কোরআনী চরিত্রের মূর্ত প্রতীক। এরপর রসূলকে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, তিনি নাফরমান ও অবাধ্য লােকদের সাথে কি রূপ আচরণ করবেন। এ পর্যায়ে বলা হয়েছে, ‘যদি তারা তােমার অবাধ্যতা করে, তবে বলে দাও, তােমরা যা করাে, তা থেকে আমি মুক্ত'(আয়াত ২১৬) রাসূলের মক্কায় অবস্থান ও জেহাদ ফরজ হওয়া পর্যন্ত বলবত ছিলাে। এরপর রসূল(স.)-কে নিজের প্রতিপালক, প্রভু ও মালিকের প্রতি ভরসা রাখার জন্যে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। এর ফলে তিনি সর্বক্ষণ তারই হেফাযতে থাকবেন এবং তারই সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন। তাই আয়াতে বলা হয়েছে…'(আয়াত ২১৭-২১৯) অর্থাৎ কাফের মােশরেকদের কোনাে তােয়াক্কা করবে না। ওদের আচার আচরণকে আমলে আনবে না। ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে তুমি নিজ প্রভু ও মালিকের প্রতি মনােনিবেশ করাে, তার প্রতি আস্থা রাখাে ও ভরসা রাখাে। তারই কাছে সাহায্য কামনা, সব বিষয়ে তাঁরই কাছে মদদ তলব করাে। আলােচ্য সূরাতে আল্লাহর দুটো গুণের উল্লেখ একাধিকবার করা হয়েছে। গুণ দুটো হচ্ছে, শক্তি ও দয়া। আলােচা আয়াতে এই গুণ দুটো উল্লেখ করা হয়েছে রসূল(স.)-কে সান্তনা দেয়ার জন্যে এবং তাঁর মনােবলকে দৃঢ় করার জন্যে। এখানে বলা হয়েছে, আল্লাহর দৃষ্টি রসূলের প্রতি সর্বক্ষণই রয়েছে। রসূল যখন একাকী নামায আদায় করেন তখনও আল্লাহর দৃষ্টি তার প্রতি নিবদ্ধ থাকে এবং মুসল্লীদের সাথে একত্রিত যখন সিজদারত থাকেন তখনও আল্লাহর দৃষ্টি তার প্রতি নিবদ্ধ থাকে। অর্থাৎ রসূল(স.) নির্জনবাস, জনসমক্ষে উপস্থিতি, তার চলা ফেরা, ওঠা বসা ও প্রতিটি কাজকর্ম আল্লাহর দৃষ্টিতে রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার মনের খবর রাখেন এবং তার দোয়া ফরিয়াদও শুনে থাকেন। কারণ তিনি তাে হচ্ছে, ‘সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ আয়াতের বর্ণনা ভংগির দ্বারা আল্লাহর সার্বক্ষণিক হেফাযত, নেক দৃষ্টি ও কল্যাণ কামনার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ফলে রসূল(স.)-এর মাঝেও এই অনুভূতি জাগ্রত ছিলাে যে, তিনি আপন প্রভুর হেফাযতেই রয়েছেন, তাঁর পাশেই অবস্থান করছেন এবং তাঁর দৃষ্টির সামনেই রয়েছেন। অর্থাৎ একটা সার্বক্ষণিক আস্থা ও ভরসার অনুভূতি তার মাঝে বিরাজ করতাে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এর অর্থ এ নয়, নাউযুবিল্লাহ নবী ﷺ থেকে শিরকের অপরাধ সংঘটিত হবার ভয় ছিল এবং এজন্য তাঁকে ধমক দিয়ে এ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। আসলে কাফের ও মুশরিকদেরকে সতর্ক করাই এর উদ্দেশ্য। বক্তব্যের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কুরআন মজীদে যে শিক্ষা পেশ করা হচ্ছে তা যেহেতু বিশ্ব-জাহানের শাসনকর্তার পক্ষ থেকে নির্ভেজাল সত্য এবং তার মধ্যে শয়তানী মিশ্রণের সামান্যও দখল নেই, তাই এখানে সত্যের ব্যাপারে কাউকে কোন প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেবার কোন প্রশ্নই দেখা দেয় না। সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় যদি কেউ হতে পারেন তবে তিনি হচ্ছেন তাঁর রসূল। কিন্তু ধরে নেয়া যাক যদি তিনিও বন্দেগীর পথ থেকে এক তিল পরিমাণ সরে যান এবং এক আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কাউকে মাবুদ হিসেবে ডাকেন তাহলে পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অন্যরা তো ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য নয়। এ ব্যাপারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই যখন কোন সুবিধা দেয়া হয়নি তখন আর কোন্ ব্যক্তি আছে যে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতায় কাউকে শরীক করার পর আবার এ আশা করতে পারে যে, সে রক্ষা পেয়ে যাবে অথবা কেউ তাকে রক্ষা পেতে সাহায্য করবে।

# আল্লাহর এ পবিত্র পরিচ্ছন্ন দ্বীনের মধ্যে যেমন নবীকে কোন সুবিধা দেয়া হয়নি ঠিক তেমনি নবীর পরিবার ও তাঁর নিকটতম আত্মীয়-বান্ধবদের জন্যও কোন সুবিধার অবকাশ রাখা হয়নি। এখানে যার সাথেই কিছু করা হয়েছে তার গুণাগুণের (Merits) প্রেক্ষিতেই করা হয়েছে। কারো বংশ মর্যাদা বা কারো সাথে কোন ব্যক্তির সম্পর্ক কোন উপকার করতে পারে না। পথ ভ্রষ্টতা ও অসৎকর্মের জন্য আল্লাহর আযাবের ভয় সবার জন্য সমান। এমন নয় যে, অন্য সবাই তো এসব জিনিসের জন্য পাকড়াও হবে কিন্তু নবীর আত্মীয়রা রক্ষা পেয়ে যাবে। তাই হুকুম দেয়া হয়েছে, নিজের নিকটতম আত্মীয়দেরকেও পরিষ্কার ভাষায় সতর্ক করে দাও। যদি তারা নিজেদের আকীদা-বিশ্বাস ও কার্যকলাপ পরিচ্ছন্ন না রাখে তাহলে তারা যে নবীর আত্মীয় একথা তাদের কোন কাজে লাগবেনা। নির্ভরযোগ্য হাদীসে বলা হয়েছে, এ আয়াত নাযিল হবার পর নবী ﷺ সবার আগে নিজের দাদার সন্তানদের ডাকলেন এবং তাদের একেক জনকে সম্বোধন করে বললেনঃ

يَا بَنِي عَبْدِ الْمُطَّلِبِ, يَا عَبَّاس,يَا صَفِيَّةُ عَمَّة رَسُول الله, يَا فَاطِمَةَ بنَت مُحَمَّدٍ أَنْقِذُوا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ , فَإِنِّي لَا أَمْلِكُ مِنَ اللهِ شَيْئًا سَلُونِى مِنْ مَالِى مَا شِئْتُمْ-

“হে বনী আবদুল মুত্তালিব, হে আব্বাস, হে আল্লাহর রসূলের ফুফী সফীয়াহ, হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমা, তোমরা আগুনের আযাব থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার চিন্তা করো। আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদের বাঁচাতে পারবো না। তবে হ্যাঁ আমার ধন-সম্পত্তি থেকে তোমরা যা চাও চাইতে পারো।”

তারপর তিনি অতি প্রত্যুষে সাফা পাহাড়ের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় উঠে দাঁড়িয়ে ডাক দিলেনঃ يا صباحاه (হায়, সকালের বিপদ!) হে কুরাইশের লোকেরা! হে বনী কা’ব ইবনে লুআই! হে বনী মুররা! হে কুসাইর সন্তান-সন্ততিরা! হে বনী আবদে মান্নাফ! হে বনী আবদে শামস! হে বনী হাশেম, হে বনী আবদুল মুত্তালিব! এভাবে কুরাইশদের প্রত্যেকটি গোত্র ও পরিবারের নাম ধরে তিনি আওয়াজ দেন। আরবে একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল, অতি প্রত্যুষে যখন কোন বহিশত্রুর হামলার আশঙ্কা দেখা দিতো ওয়াকিফহাল ব্যক্তি এভাবেই সবাইকে ডাকতো এবং লোকেরা তার আওয়াজ শুনতেই চারদিকে থেকে দৌড়ে যেতো। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ আওয়াজ শুনে লোকেরা যার যার ঘর থেকে বের হয়ে এলো। তখন তিনি বললেনঃ “হে লোকেরা! যদি আমি বলি, এ পাহাড়ের পেছনে একটি বিশাল সেনাবাহিনী তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। তাহলে কি তোমরা আমার কথা সত্য বলে মেনে নেবে? ” সবাই বললো, হ্যাঁ আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, তুমি কখনো মিথ্যা বলনি। তিনি বললেন, “বেশ, তাহলে আমি আল্লাহর কঠিন আযাব আসার আগে তোমাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। তাঁর পাকড়াও থেকে নিজেদের বাঁচাবার চিন্তা করো। আল্লাহর মোকাবিলায় আমি তোমাদের কোন কাজে লাগতে পারবোনা। কিয়ামতের দিন কেবলমাত্র মুত্তাকীরাই হবে আমার আত্মীয়। এমন যেন না হয়, অন্য লোকেরা সৎকাজ নিয়ে আসবে এবং তোমরা দুনিয়ার জঞ্জাল মাথায় করে নিয়ে উপস্থিত হবে। সে সময় তোমরা ডাকবে, হে মুহাম্মাদ! কিন্তু আমি তোমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবো। তবে দুনিয়ায় আমার সাথে তোমাদের রক্তের সম্পর্ক এবং এখানে আমি তোমাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবো।” এ বিষয়বস্তু সম্বলিত অনেকগুলো হাদীস বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত আয়েশা, আবু হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, যুহাইর ইবনে আমর ও কুবাইসাহ ইবনে মাহারিক থেকে বর্ণিত হয়েছে।

কুরআনে وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ —এর হুকুম হলো এবং নবী (সা.) তাঁর আত্মীয়দেরকে একত্র করে একথা জানিয়ে দিয়ে সে হুকুম তামিল করলেন, ব্যাপারটির এখানেই শেষ নয়। আসলে এর মধ্যে যে মূলনীতি সুস্পষ্ট করা হয়েছিল তা ছিল এই যে, দ্বীনের মধ্যে নবী ও তাঁর বংশের জন্য এমন কোন বিশেষ সুবিধা নেই যা থেকে অন্যরা বঞ্চিত। যে জিনিসটি প্রাণ সংহারক বিষ সেটি সবারই জন্য প্রাণ সংহারক। নবীর কাজ হচ্ছে সবার আগে নিজে তা থেকে বাঁচবেন এবং নিজের নিকটবর্তী লোকদেরকে তার ভয় দেখাবেন। তারপর সাধারণ অসাধারণ নির্বিশেষে সবাইকে এ মর্মে সতর্ক করে দেবেন যে, এটি যে-ই খাবে, সে-ই মারা পড়বে। আর যে জিনিসটি লাভজনক তা সবার জন্য লাভজনক। নবীর দায়িত্ব হচ্ছে, সবার আগে তিনি নিজে সেটি অবলম্বন করবেন এবং নিজের আত্মীয়দেরকে সেটি অবলম্বন করার উপদেশ দেবেন। এর ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি দেখে নেবে এ ওয়াজ-নসিহত শুধুমাত্র অন্যের জন্য নয় বরং নিজের দাওয়াতের ব্যাপারে নবী আন্তরিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সারা জীবন এ পদ্ধতি অবলম্বন করে গেছেন। মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি শহরে প্রবেশ করলেন তখন ঘোষণা করে দিলেনঃ

كُلَّ رِبًا فِى الْجَاهِلِيَّةِ مَوْضُوعٌ تحت قدمى ها تين وأَوَّلَ رِباً يُوضَعُ رِبَا عَبَّاسِ

“লোকদের কাছে অনাদায়কৃত জাহেলী যুগের প্রত্যেকটি সুদ আমার এ দু’পায়ের তলে পিষ্ট করা হয়েছে। আর সবার আগে যে সুদকে আমি রহিত করে দিচ্ছি তা হচ্ছে আমার চাচা আব্বাসের সুদ।”

(উল্লেখ্য, সুদ হারাম হবার আগে আব্বাস (রা.) সুদে টাকা খাটাতেন এবং সে সময় পর্যন্ত লোকদের কাছে তাঁর বহু টাকার সুদ পাওনা ছিল) একবার চুরির অভিযোগে তিনি কুরাইশদের ফাতিমা নামের একটি মেয়ের হাত কাটার হুকুম দিলেন। হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রা.) তার পক্ষে সুপারিশ করলেন। এতে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতিমাও চুরি করতো তাহলে আমি তার হাত কেটে দিতাম।

# এর দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, তোমার আত্মীয় পরিজনদের মধ্যে থেকে যারা ঈমান এনে তোমার অনুসরণ করবে তাদের সাথে কোমল, স্নেহপূর্ণ ও বিনম্র ব্যবহার করো। আর যারা তোমার কথা মানবে না তাদের দায়মুক্ত হবার কথা ঘোষণা করে দাও। দুই, যেসব আত্মীয়কে সতর্ক করার হুকুম দেয়া হয়েছিল এ উক্তি কেবলমাত্র তাদের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং এটি ব্যাপকভাবে সবার জন্য। অর্থাৎ যারা ঈমান এনে তোমার আনুগত্য করে তাদের সাথে বিনম্র আচরণ করো এবং যারাই তোমার নাফরমানি করে তাদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দাও যে, তোমাদের কার্যকলাপের সমস্ত দায়-দায়িত্ব থেকে আমি মুক্ত।

এ আয়াত থেকে জানা যায়, সে সময় কুরাইশ ও তার আশেপাশের আরববাসীদের মধ্যে এমন কিছু লোকও ছিল যারা রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতার স্বীকৃতি দিয়েছিল কিন্তু কার্যত তারা তাঁর আনুগত্য করছিল না বরং তারা যথারীতি তাদের ভ্রষ্ঠ ও বিভ্রান্ত সমাজ কাঠামোর মধ্যে ঠিক তেমনিভাবে জীবন যাপন করে যাচ্ছিল যেমন অন্যান্য কাফেররা করছিল। আল্লাহ‌ এ ধরণের স্বীকৃতি দানকারীদেরকে এমন সব মু’মিনদের থেকে আলাদা গণ্য করেছিলেন যাঁরা নবীর ﷺ স্বীকৃতি দান করার পর তাঁর আনুগত্যের নীতি অবলম্বন করেছিল। বিনম্র ব্যবহার করার হুকুম শুধুমাত্র এ শেষোক্ত দলটির জন্য দেয়া হয়েছিল। আর যারা নবীর ﷺ আনুগত্য করা থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল, যার মধ্যে তাঁর সত্যতার স্বীকারকারী এবং তাঁকে অস্বীকারকারীও ছিল, তাদের সম্পর্কে নবীকে ﷺ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল, তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের কথা প্রকাশ করে দাও এবং পরিষ্কার বলে দাও, নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলাফলে তোমরা নিজেরাই ভুগবে এবং তোমাদের সতর্ক করে দেবার পর এখন আর তোমাদের কোন কাজের দায়-দায়িত্ব আমার ওপর নেই।

# দুনিয়ার বৃহত্তম শক্তিরও পরোয়া করো না এবং মহাপরাক্রমশালী ও দয়াময় সত্তার উপর নির্ভর করে কাজ করে যাও। তাঁর পরাক্রমশালী হওয়াই একথার নিশ্চয়তা বিধান করে যে, যার পেছনে তাঁর সমর্থন আছে তাকে দুনিয়ায় কেউ হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে না। আর তাঁর দয়াময় হওয়া এ নিশ্চিন্ততার জন্য যথেষ্ট যে, তাঁর জন্য যে ব্যক্তি সত্যের ঝাণ্ডা বুলন্দ করার কাজে জীবন উৎসর্গ করবে তার প্রচেষ্টাকে তিনি কখনো নিষ্ফল হতে দেবেন না।
# ওঠার অর্থ রাতে নামাযের জন্য ওঠাও হতে পারে, আবার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য ওঠাও হতে পারে।

# এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক, আপনি যখন জামায়াতের সাথে নামায পড়ার সময় নিজের মুকতাদীদের সাথে উঠা-বসা ও রুকূ’-সিজদা করেন তখন আল্লাহ‌ আপনাকে দেখতে থাকেন। দুই, রাতের বেলা উঠে যখন নিজের সাথীরা (যাদের বৈশিষ্ট্যসূচক গুণ হিসেবে “সিজদাকারী” শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে) তাদের পরকাল গড়ার জন্য কেমন তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখার উদ্দেশ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকেন তখন আপনি আল্লাহর দৃষ্টির আড়ালে থাকেন না। তিন, আপনি নিজের সিজদাকারী সাথীদেরকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর বান্দাদের সংশোধন করার জন্য যেসব প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন আল্লাহ‌ তা অবগত আছেন। চার, সিজদাকারী লোকদের দলে আপনার যাবতীয় তৎপরতা আল্লাহর নজরে আছে। তিনি জানেন আপনি কিভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, কিভাবে ও কেমন পর্যায়ে তাদের আত্মশুদ্ধি করছেন এবং কিভাবে ভেজাল সোনাকে খাঁটি সোনায় পরিণত করেছেন।

নবী ﷺ ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামের এসব গুণের উল্লেখ এখানে যে উদ্দেশ্যে করা হয়েছে তার সম্পর্কে ওপরের বিষয়বস্তুর সাথেও এবং সামনের বিষয়বস্তুর সাথেও আছে। ওপরের বিষয়বস্তুর সাথে তার সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রহমত ও তাঁর শক্তিশালী সমর্থন লাভের যোগ্য। কারণ আল্লাহ‌ কোন অন্ধ ও বধির মাবুদ নন বরং একজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তি সম্পন্ন শাসক। তাঁর পথে আপনার সংগ্রাম-সাধনা এবং সিজদাকারী সাথীদের মধ্যে আপনার তৎপরতা সবকিছু তাঁর দৃষ্টিতে আছে। পরবর্তী বিষয়বস্তুর সাথে এর সম্পর্ক হচ্ছে এই যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মতো যে ব্যক্তি জীবন এবং যার সাথীদের গুণাবলী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথীদের মতো, তার ওপর শয়তান অবতীর্ণ হয় অথবা সে কবি একথা কেবলমাত্র একজন বুদ্ধিভ্রষ্ট ব্যক্তিই বলতে পারে। শয়তান যেসব গণকের কাছে আসে তাদের এবং কবি ও তাদের সাথী সহযোগীদের আচার-আচরণ কেমন হয়ে থাকে তা কি কারো অজানা? তোমাদের নিজেদের সমাজে এ ধরনের লোক বিপুল সংখ্যায় পাওয়া যায়। কোন চক্ষুষ্মান ব্যক্তি কি ঈমানদারীর সাথে একথা বলতে পারে, সে মুহাম্মাদ ﷺ ও তাঁর সাথীদের জীবন এবং কবি ও গণকদের জীবনের মধ্যে কোন ফারাক দেখে না? এখন এর চেয়ে বড় বেহায়াপনা আর কি হতে পারে যে, আল্লাহর এ বান্দাদেরকে প্রকাশ্যে কবি ও গণৎকার বলে পরিহাস করা হচ্ছে অথচ কেউ একটু লজ্জাও অনুভব করছে না।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সতর্ক করে বলছেন যে, তুমি কখনো আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করো না। যদি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে মা‘বূদ হিসেবে ডাক তাহলে তোমাকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

(لَا تَجْعَلْ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَتَقْعُدَ مَذْمُوْمًا مَّخْذُوْلًا)‏

“আল্লাহ তা‘আলার সাথে অপর কোন ইলাহ্ সাব্যস্ত কর না; করলে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়বে।” (সূরা ইসরা ১৭:২২) শির্ক সম্পর্কে সূরা নিসার ৪৮ নং আয়াতসহ আরো একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ প্রদান করেছেন যে, তিনি যেন তাঁর নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করেন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফা পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং আহ্বান জানালেন: হে বানী ফিহর! হে বানী আদী! কুরাইশদের বিভিন্ন গোত্রকে। অবশেষে তারা জমায়েত হল। যে নিজে আসতে পারল না সে তার প্রতিনিধি পাঠাল যাতে দেখতে পায় ব্যাপার কী? সেখানে আবূ লাহাব ও কুরাইশগণও আসল। তখন রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: বল তো আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, শত্র“ সৈন্য উপত্যকায় চলে এসেছে, তারা তোমাদের ওপর হঠাৎ হামলা করতে প্রস্তুত, তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে? তারা বলল: আমরা তোমাকে সর্বদা সত্য পেয়েছি। তখন তিনি বললেন: আমি তোমাদেরকে কঠিন শাস্তির ভয় প্রদর্শন করছি। আবূ লাহাব বলল: সারাদিন তোমার ওপর ধ্বংস নামুক! এ জন্যই কি তুমি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? তখন সূরা লাহাব অবতীর্ণ হল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৭৭০, সহীহ মুসলিম হা: ২০৮)

নম্রতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَقَدْ جَا۬ءَکُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِکُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْھِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْکُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ)

“অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি তিনি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।” (সূরা তাওবাহ ৯:১২৮) এবং যারা তাঁর অনুসরণ করে তাদের সাথে যেন বিনয়ী ভাব অবলম্বন করেন। এর দ্বারা সকল মু’মিনকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ সকল মু’মিনরা যেন তাদের সাথীদের সাথে বিনয়ী হন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِلْمُؤْمِنِيْنَ)

“তুমি মু’মিনদের জন্য তোমার দয়ার ডানা অবনমিত কর‎।” (সূরা হিজর: ১৫:৮৮) এ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

সুতরাং মু’মিনগণ তাদের নিকটাত্মীয়দেরকে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করবে অতঃপর যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের প্রতি সদয় হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।
২. প্রথমত নিজের আত্মীয়স্বজনকে কুরআন ও হাদীসের দাওয়াত দিতে হবে অতঃপর অন্যান্যদেরকে।
৩. অধীনস্থ ব্যক্তিবর্গের সাথে নম্র ব্যবহার করতে হবে। কঠোরতা অবলম্বন করা যাবে না।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে, অন্য কারো ওপর ভরসা করা যাবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২১৩-২২০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ তুমি শুধু আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। আর যে এরূপ করবে না অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে সে অবশ্যই শাস্তির যোগ্য হবে। তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিবে যে, ঈমান ছাড়া অন্য কিছুই মুক্তিদাতা নয়।

এরপর তিনি নির্দেশ দিচ্ছেনঃ একত্ববাদী ও তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হবে। আর যে কেউই আমার আদেশ ও নিষেধ অমান্য করবে সে যে-ই হোক না কেন তার সাথে কোনই সম্পর্ক রাখবে না এবং তার প্রতি স্বীয় অসন্তোষ প্রকাশ করবে।

বিশেষ লোককে এই ভয় প্রদর্শন সাধারণ লোককে ভয় প্রদর্শন করার বিপরীত নয়। কেননা, এটা তার একটা অংশ। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাতে তুমি সতর্ক করতে পার এমন এক জাতিকে যাদের পিতৃপুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়নি, যার ফলে তারা গাফিল।” (৩৬: ৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মূল জনপদকে এবং ওর আশে পাশের লোকদেরকে।”(৭: ৪২) অন্য এক জায়গায় তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “এর দ্বারা তুমি সতর্ক কর তাদেরকে যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের নিকট একত্রিত করা হবে।” (৬: ৫১) আরো এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ যাতে তুমি এর দ্বারা পরহেযগারদেরকে সুসংবাদ দিতে ও উদ্ধতদেরকে সতর্ক করতে পার।”(১৯:৯৭) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যাতে আমি এর দ্বারা ভয় প্রদর্শন করতে পারি তোমাদেরকে এবং তাদেরকেও যাদের কাছে এটা পৌঁছে।” (৬: ১৯)

সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এই উম্মতের মধ্যে যার কানে আমার খবর পৌঁছেছে, সে ইয়াহুদী হোক অথবা খৃষ্টানই হোক, অতঃপর আমার উপর সে ঈমান আনেনি, সে অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে। আমরা এগুলো বর্ণনা করছিঃ

প্রথম হাদীস

ও হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তা’আলা (আরবি)-এই আয়াত অবতীর্ণ করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাফা পর্বতের উপর উঠে (আরবি) আকস্মিক কোন বিপদের সময় আরবের লোকেরা বিপদ সংকেত হিসেবে এরূপ শব্দ উচ্চারণকরতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই প্রচলিত প্রথারই অনুসরণ করেছিলেন। বলে উচ্চ স্বরে ডাক দেন। এ শব্দ শুনে লোকেরা তাঁর নিকট একত্রিত হয়ে যায়। যারা আসতে পারেনি তারা লোক পাটিয়ে দেয়। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “হে বানী আবদিল মুত্তালিব! হে বানী ফাহর! হে বানী লুওয়াই! আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, এই পাহাড়ের পিছনে তোমাদের শত্রু- সেনাবাহিনী রয়েছে এবং তারা ওঁৎ পেতে বসে আছে। সুযোগ পেলেই তোমাদেরকে হত্যা করে ফেলবে। তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি?” সবাই এক বাক্যে উত্তর দেয়ঃ “হ্যা, আমরা আপনার কথা সত্য বলেই বিশ্বাস করবো।” তিনি তখন বলেনঃ ‘তাহলে জেনে রেখো যে, সামনের কঠিন শাস্তি হতে আমি তোমাদেরকে ভয় প্রদর্শনকারী।” তাঁর একথা শুনে আবু লাহাব বলে ওঠে-“তুমি ধ্বংস হও। এটা শুনাবার জন্যেই কি তুমি আমাদেরকে ডেকেছিলে?” তার কথার প্রতিবাদে সূরায়ে তাব্বাত ইয়াদা’ অবতীর্ণ হয়। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী(রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

দ্বিতীয় হাদীসঃ

হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন (আরবি) অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)! হে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা সুফিয়া (রাঃ)! হে বানী আবদিল মুত্তালিব! জেনে রেখো যে, আল্লাহর কাছে আমি তোমাদের জন্যে কোন (উপকারের) অধিকার রাখবো না। হ্যাঁ, তবে আমার কাছে যে মাল আছে তা হতে তোমরা যা চাইবে তা আমি তোমাদেরকে দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)

তৃতীয় হাদীসঃ

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, এই আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরায়েশদেরকে আহ্বান করেন। এবং এক এক করে ও সাধারণভাবে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে কুরায়েশের দল! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম হতে রক্ষা কর। হে কাবের বংশধরগণ! তোমরা নিজেদের জীবনকে আগুন হতে বাঁচাও। হে হাশেমের সন্তানগণ! তোমরা নিজেদের প্রাণকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা কর। হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানরা! তোমরা আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর। হে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)! নিজের জীবনকে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচিয়ে নাও। আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্যে কোন কিছুরই মালিক হতে পারবো না। তবে অবশ্যই আমার সাথে তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে যার পার্থিব সর্বপ্রকারের হক আদায় করতে আমি সদা প্রস্তুত আছি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ, ইমাম মুসলিম ও ইমম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সহীহ বুখারীতেও শব্দের কিছু পরিবর্তনের সাথে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ভাতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ফুফু হযরত সুফিয়া (রাঃ) এবং স্বীয় কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে বলেন, তোমরা দুজন নিজেদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে বাচিয়ে নাও এবং জেনে রেখো যে, (কিয়ামতের দিন) আমি আল্লাহর সামনে তোমাদের কোন কাজে লাগবো না। অতঃপর বলেনঃ “হে বানী কুসাই! হে বানী হাশিম! এবং হে আবদে মানাফ! (মনে রেখো যে) আমি হলাম সতর্ককারী, আর মৃত্যু হচ্ছে পরিবর্তন আনয়নকারী এবং কিয়ামত হলো ওয়াদার স্থান।”

চতুর্থ হাদীসঃ

হযরত কুবাইসা ইবনে মাখারিক (রাঃ) এবং হযরত যুহায়ের ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁরা দু’জন বলেন, যখন -এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি পাহাড়ের উপর আরোহণ করেন যার চূড়ার উপর একটি পাথর ছিল। সেখান থেকে তিনি ডাক দিয়ে বলতে শুরু করেনঃ “হে বানী আবদে মানাফ! আমি তো একজন সতর্ককারী মাত্র। আমার ও তোমাদের উপমা ঐ লোকটির মত যে শত্রু দেখলো এবং দৌড়িয়ে নিজের লোকদেরকে সতর্ক করতে আসলো যাতে তারা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। দূর থেকেই সে চীকার করতে শুরু করে দিলো যাতে প্রথম থেকেই তারা সতর্ক হয়ে যেতে পারে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)

পঞ্চম হাদীসঃ

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় আহলে বায়েতকে একত্রিত করেন। তাঁরা ছিলেন সংখ্যায় ত্রিশজন। তাঁদের পানাহার শেষ হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “কে এমন আছে যে আমার কর্জ তার দায়িত্বে নিয়ে নেয় এবং আমার পরে আমার অঙ্গীকারসমূহ পূরণ করে, অতঃপর জান্নাতে আমার সাথী হতে পারে ও আমার আঙ্গুলের মধ্যে আমার খলীফা হতে পারে?” একটি লোক উত্তরে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো সমুদ্র (সদৃশ), সুতরাং কে আপনার সাথে দাড়াতে পারে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার তার উক্তির পুনরাবৃত্তি করেন, কিন্তু কেউই ওর জন্যে প্রস্তুত হলো না। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এজন্যে আমিই প্রস্তুত আছি। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) এক সনদে এর চেয়েও বেশী বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু আবদিল মুত্তালিবের একটি বড় দলকে একত্রিত করেন যারা বড়ই পেটুক ছিল। তাদের এক একজন একটি বকরীর বাচ্চা ও একটি বড় পিয়ালাপূর্ণ দুধ পান করে ফেলতো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের জন্যে শুধু তিন পোয়া পরিমাণ খাদ্য রান্না করিয়ে নেন। কিন্তু তাতে এতো বরকত দেয়া হয় যে, সবাই পেট পুরে পানাহার করে, অথচ না খাদ্য কিছু হ্রাস পায় এবং না পানীয় কিছু কমে যায়। এরপর নবী (সঃ) তাদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে বানী আবদিল মুত্তালিব! আমি তোমাদের নিকট বিশিষ্টভাবে এবং সমস্ত মানুষের নিকট সাধারণভাবে নবীরূপে প্রেরিত হয়েছি। এই সময় তোমরা আমার একটি মুজিয়াও দেখলে। এখন তোমাদের মধ্যে কে আছে যে, সে আমার হাতে আমার ভাই ও সাথী হওয়ার দীক্ষা গ্রহণ করে?” কিন্তু মজলিসের একটি লোকও দাঁড়ালো না। (হযরত আলী রাঃ বলেনঃ) আমি তখন দাঁড়িয়ে গেলাম আর মজলিসের মধ্যে আমি ছিলাম সবচেয়ে ছোট। তিনি আমাকে বললেনঃ “তুমি বসে পড়।” তিনি তিনবার তাদেরকে ঐ কথা বলেন কিন্তু তিনবারই আমি ছাড়া আর কেউই দাঁড়ায়নি। তৃতীয়বারে তিনি আমার বায়আত গ্রহণ করেন।”

ইমাম বায়হাকী (রঃ) দালাইলুন নবুওয়াত’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, যখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যদি আমার কওমের সামনে আমি এখনই এটা পেশ করি তবে তারা মানবে না এবং তারা এমন উত্তর দেবে যা আমার কাছে কঠিন ঠেকবে।” তাই তিনি নীরব হয়ে যান। ইতিমধ্যে হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে পড়েন এবং বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনাকে যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা পালনে যদি আপনি বিলম্ব করেন তবে আপনার প্রতিপালক আপনাকে শাস্তি প্রদান করবেন।” তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে ডেকে বলেনঃ “হে আলী (রাঃ)! আমার প্রতিপালক আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন আমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করি। আমি মনে করলাম যে, আমি যদি তাড়াতাড়ি এ কাজে লেগে পড়ি তবে আমার কওম আমাকে মানবে না এবং আমাকে এমন উত্তর দেবে যাতে আমি মনে ব্যথা পাবো। তাই আমি নীরবতা অবলম্বন করি। এমতাবস্থায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেনঃ “আপনি যদি আপনার প্রতিপালকের আদেশ পালনে বিলম্ব করেন তবে তিনি আপনাকে শাস্তি দিবেন।” সুতরাং হে আলী (রাঃ)! তুমি একটি বকরী যবাহ কর, তিন সের খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত কর এবং এক বাটি দুধও সগ্রহ কর। অতঃপর বানী আবদিল মুত্তালিবকে একত্রিত কর। হযরত আলী (রাঃ) তাই করলেন এবং সবাইকে দাওয়াত দিলেন। তারা সংখ্যায় দু’এক কমবেশী চল্লিশ জন ছিল। তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচারাও ছিলেন। তাঁরা হলেন আবু তালিব, হযরত হামযা (রাঃ) এবং হযরত আব্বাস (রাঃ)। তার কাফির ও খবীস চাচা আবু লাহাবও ছিল। হযরত আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে তরকারী পেশ করলে তিনি তা হতে এক টুকরা নিয়ে কিছু খেলেন। অতঃপর তা হাঁড়িতে রেখে দিলেন। এরপর তিনি সকলকে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু কর।” সবাই খেতে লাগলো এবং পেট পুরে খেলো। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! হাঁড়িতে যা ছিল তাই থেকে গেল। গোশতে শুধু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অঙ্গুলীর দাগ ছিল, কিন্তু গোশত এতটুকু কমেনি। অথচ তাদের এক একজনই হাঁড়িতে রাখা সব গোশত খেয়ে নিতে পারতো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বললেনঃ “হে আলী (রাঃ)! তাদেরকে এখন দুধ পান করিয়ে দাও।” আমি তখন দুধের ঐ বাটিটি আনলাম এবং তাদেরকে পান করতে বললাম। তারা পালাক্রমে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেল। কিন্তু দুধ মোটেই কমলো না। অথচ তাদের এক একজনই ঐ বাটির সম্পূর্ণ দুধ পান করে নিতে পারতো। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আবু লাহাব মজলিস হতে উঠে গেল এবং বলতে লাগলোঃ “তোমাদের এ লোকটির এ সবকিছুই যাদু।” তার দেখাদেখি সবাই মজলিস হতে উঠে গেল এবং নিজ নিজ পথ ধরলো। ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে উপদেশ দেয়ার সুযোগ পেলেন না।”

পরের দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) পুনরায় হযরত আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ “হে আলী (রাঃ)! অনুরূপভাবে আজকেও আবার তাদেরকে দাওয়াত কর। কেননা, গতকাল তারা আমাকে কথা বলার কোন সুযোগই দেয়নি।” হযরত আলী (রাঃ) বলেন, সুতরাং আমি পুনরায় ঐ প্রকারের ব্যবস্থা করলাম। সবকে দাওয়াত দিয়ে আসলাম। ঐদিনও আবু লাহাব দাঁড়িয়ে গিয়ে পূর্বের ন্যায়ই কথা বললো এবং ঐভাবে মজলিসের লোক ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। তৃতীয় দিন আবার আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে সবকিছুরই ব্যবস্থা করলাম। খাওয়া দাওয়ার পর ঐদিন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাড়াতাড়ি তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ “আল্লাহর কসম! আরবের কোন যুবক তার কওমের কাছে এমন উত্তম কিছু নিয়ে আসেনি যা আমি তোমাদের কাছে নিয়ে এসেছি। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ আনয়ন করেছি।”

অন্য রিওয়াইয়াতে এরপর এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এখন তোমরা বল তো তোমাদের মধ্যে কে আমার আনুকূল্য করতে পারে এবং কে আমার সহচর হতে পারে? আল্লাহ তা’আলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন তোমাদেরকে তার দিকে আহ্বান করি। সুতরাং কে আমাকে এ কাজে সহায়তা করতে পারে এই শর্তে যে, সে আমার ভাই হয়ে যাবে এবং সে এরূপ এরূপ মর্যাদা লাভ করবে?” তাঁর একথা শুনে কওমের সবাই নীরব থাকে। এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আলী (রাঃ) বলেন, যদিও আমি তাদের মধ্যে বয়সে ছিলাম সবচেয়ে ছোট, দুঃখময় চক্ষু বিশিষ্ট, মোটা পেট বিশিষ্ট এবং ভারী পদনালী বিশিষ্ট, তথাপি আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনার আনুকূল্য করতে প্রস্তুত আছি। তিনি তখন আমার স্কন্ধে হাত রেখে বললেনঃ “এটা আমার ভাই এবং তার এরূপ এরূপ মর্যাদা রয়েছে। সুতরাং তোমরা তার কথা শুনো এবং তার আনুগত্য কর।” তাঁর এ কথা শুনে কওমের লোকেরা উঠে গেল এবং হেসে উঠলো ও আবু তালিবকে বললোঃ “তুমিই তোমার ছেলের কথা শুনো ও তার আনুগত্য করতে থাকো (আমাদের দ্বারা এ কাজ হবে না।” কিন্তু এ হাদীসটির বর্ণনাকারী আবদুল গাফফার ইবনে কাসিব ইবনে আবি মারইয়াম পরিত্যাজ্য এবং চরম মিথ্যাবাদী। সে শিয়াও বটে, ইবনে মাদনী (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, সে হাদীস নিজে বানিয়ে নিতো। হাদীসের অন্যান্য ইমামগণও তাকে দুর্বল বলেছেন।

অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, এই দাওয়াতে শুধুমাত্র বকরীর একটি পায়ের গোশত ছিল। এতে এও রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ভাষণ দিতে শুরু করলেন তখন তারা হঠাৎ করে বলে ফেললোঃ “এরূপ যাদু তো ইতিপূর্বে আমরা কখনো দেখিনি।” তখন তিনি নীরব হয়ে যান। তাঁর ভাষণ ছিলঃ “কে আছে, যে আমার ঋণ তার দায়িত্বে গ্রহণ করবে এবং আমার আহূলের মধ্যে খলীফা হয়ে যাবে?” হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “ঐ মজলিসে হযরত আব্বাসও (রঃ) বিদ্যমান ছিলেন। শুধু মাল-ধনের কার্পণ্যের কারণে তিনিও নীরব ছিলেন।

অকে নীরব থাকতে দেখে আমিও নীরব থাকলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দ্বিতীয়বারও এ ই বললেন। এবারও চতুর্দিকে নীরবতা বিরাজ করে। এবার আমি আর নীরব থাকতে পারলাম না, বরং উপরোক্ত কথা বলে ফেললাম। ঐ সময় আমি বয়সে ছিলাম সবচেয়ে ছোট এবং ছিলাম ক্ষীণ দৃষ্টি সম্পন্ন, বড় পেট ও ভারী পদনালী বিশিষ্ট।” ঐ রিওয়াইয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ফরমান রয়েছেঃ “কে আমার ঋণ তার দায়িত্বে নিচ্ছে এবং আমার পর কে আমার আহলের হিফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করছে?” এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিলঃ “আমি আমার এই দ্বীনের প্রচার চারদিকে ছড়িয়ে দিবো এবং লোকদের আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করবো। ফলে সবাই আমার শত্রুতে পরিণত হয়ে যাবে এবং আমাকে হত্যা করে ফেলার চেষ্টা করবে।” এরূপ আশংকা তিনি করতে থাকেন। অবশেষে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাকে লোকদের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন।” (৫: ৬৭) এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আশংকা দূর হয়ে যায়। এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে তিনি নিজের জন্যে প্রহরী নিযুক্ত রাখতেন। কিন্তু এটা অবতীর্ণ হওয়ার পর প্রহরী রাখাও তিনি বন্ধ করে দেন। বাস্তবিকই ঐ সময় বানু হাশেমের সবারই মধ্যে হযরত আলী (রাঃ) অপেক্ষা বড় ঈমানদার ও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সত্যায়নকারী আর কেউ ছিল না। এজন্যেই তিনিই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সাহচর্য দান করার স্বীকারোক্তি করেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাফা পর্বতের উপর উঠে জনগণকে সাধারণ দাওয়াত দেন এবং তাদেরকে খাঁটি তাওহীদের দিকে আহ্বান করেন এবং নিজের নবুওয়াতের ঘোষণা দেন।

আবদুল ওয়াহিদ দেমাশকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একদা হযরত আবূ দারদা (রাঃ) মসজিদে বসে ওয়াজ করছিলেন এবং ফতওয়া দিচ্ছিলেন। মজলিস লোকে ভরপুর ছিল। সবারই দৃষ্টি তার চেহারার উপর ছিল এবং তারা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে তার ওয়াজ শুনছিল। কিন্তু তার ছেলে এবং তার বাড়ীর লোকেরা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে নিজেদের কথায় লিপ্ত ছিল। কেউ একজন হযরত আবু দারদা (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে বলেনঃ “অন্যান্য সব লোকই তো আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে, কিন্তু আপনার বাড়ীর লোকেরা অত্যন্ত বেপরোয়াভাবে নিজেদের কথায় লিপ্ত রয়েছে, ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “দুনিয়া হতে সম্পূর্ণরূপে বিমুখ থাকেন নবীরা এবং তাঁদের উপর সবচেয়ে বেশী কঠিন ও ভারী হয় তাঁদের পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজন। এব্যাপারেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন।”

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তুমি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু আল্লাহর উপর নির্ভর কর। তিনিই তোমার রক্ষক ও সাহায্যকারী। তিনিই তোমার শক্তি যোগাবেন এবং তোমার কথাকে সমুন্নত করবেন। তাঁর দৃষ্টি সব সময় তোমার উপর রয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তুমি তোমার প্রতিপালকের হুকুমের উপর ধৈর্য ধারণ কর, তুমি তো আমার চোখের সামনেই রয়েছো।” (৫২: ৪৮) ভাবার্থ এটাওঃ যখন তুমি নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হও তখন তুমি আমার চোখের সামনে থাকো। আমি তোমার রুকু ও সিজদা দেখে থাকি। তুমি দাঁড়িয়ে থাকো বা বসে থাকো অথবা যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আমার চোখের সামনেই থাকো। অর্থাৎ তুমি একাকী নামায পড়লেও আমি দেখতে পাই এবং জামাআতে পড়লেও তুমি আমার সামনেই থাকো। ভাবার্থ এটাও যে, আল্লাহ তা’আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যেভাবে তাঁর সামনের জিনিসগুলো দেখাতেন তেমনিভাবে তার পিছনের মুক্তাদীরাও তাঁর দৃষ্টির সামনে থাকতো। যেমন সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ “তোমরা তোমাদের নামাযের সারি সোজা করে নেবে। জেনে রেখো যে, আমি তোমাদেরকে আমার পিছন হতে দেখতে পাই।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ভাবার্থ এও করেছেনঃ “তার এক নবীর পিঠ হতে অন্য নবীর পিঠের দিকে স্থানান্তরিত হওয়াকে আমি বরাবরই দেখতে রয়েছি, শেষ পর্যন্ত তিনি নবী হিসেবে দুনিয়ায় এসেছেন।”

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা খুবই শুনে থাকেন এবং তাদের কাজ কারবার সম্পর্কে তিনি পূর্ণ অবহিত। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তুমি যে অবস্থায় থাকো, তুমি যে কুরআন পাঠ কর, তুমি যে আমল কর সেসব সম্পর্কে আমি পূর্ণ ওয়াকিফহাল।” (১০:৬১)

 

 

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1006)
[The Command to warn His Tribe of near Kindred.]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 213-220

26:213

فَلَا تَدۡعُ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ فَتَکُوۡنَ مِنَ الۡمُعَذَّبِیۡنَ ﴿۲۱۳﴾ۚ

So do not invoke with Allah another deity and [thus] be among the punished.

 

The Command to warn His Tribe of near Kindred

Allah said:

فَلَ تَدْعُ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا اخَرَ فَتَكُونَ مِنَ الْمُعَذَّبِينَ

وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الاْأَقْرَبِينَ

26:214

وَ اَنۡذِرۡ عَشِیۡرَتَکَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ ﴿۲۱۴﴾ۙ

And warn, [O Muhammad], your closest kindred.

 

وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ

26:215

وَ اخۡفِضۡ جَنَاحَکَ لِمَنِ اتَّبَعَکَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۱۵﴾ۚ

And lower your wing to those who follow you of the believers.

 

So, invoke not with Allah another god lest you should be among those who receive punishment. And warn your tribe of near kindred. And be kind and humble to the believers who follow you.

Here Allah commands (His Prophet) to worship Him alone, with no partner or associate, and tells him that whoever associates others in worship with Him, He will punish them.

Then Allah commands His Messenger to warn his tribe of near kindred, i.e., those who were most closely related to him, and to tell them that nothing couldt nothing could save any of them except for faith in Allah.

Allah also commanded him to be kind and gentle with the believing servants of Allah who followed him, and to disown those who disobeyed him, no matter who they were.

Allah said:

فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ

26:216

فَاِنۡ عَصَوۡکَ فَقُلۡ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّمَّا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۱۶﴾ۚ

And if they disobey you, then say, “Indeed, I am disassociated from what you are doing.”

 

Then if they disobey you, say:”I am innocent of what you do.”

This specific warning does not contradict the general warning; indeed it is a part of it, as Allah says elsewhere:

لِتُنذِرَ قَوْماً مَّأ أُنذِرَ ءَابَأوُهُمْ فَهُمْ غَـفِلُونَ

In order that you may warn a people whose forefathers were not warned, so they are heedless. (36:6)

وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الَاحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ

but those of the sects that reject it, the Fire will be their promised meeting place. (11:17)

According to Sahih Muslim, the Prophet said:

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَاا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الاْاُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلَاا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ لَاا يُوْمِنُ بِي إِلاَّ دَخَلَ النَّار

By the One in Whose Hand is my soul, no one from these nations — Jewish or Christian — hears of me then does not believe in me, but he will enter Hell.

Many Hadiths have been narrated concerning the revelation of this Ayah, some of which we will quote below:

Imam Ahmad, may Allah have mercy on him, recorded that Ibn `Abbas, may Allah be pleased with him, said:

“When Allah revealed the Ayah,
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الاْأَقْرَبِينَ
(And warn your tribe of near kindred), the Prophet went to As-Safa’, climbed up and called out,
يَا صَبَاحَاه
O people!

The people gathered around him, some coming of their own accord and others sending people on their behalf to find out what was happening.

The Messenger of Allah said:

يَا بَنِي عَبْدِالْمُطَّلِبِ يَا بَنِي فِهْرٍ يَااَبنِي لُوَيَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَخْبَرْتُكُمْ أَنَّ خَيْلًا بِسَفْحِ هَذَا الْجَبَلِ تُريدُ أَنْ تُغِيرَ عَلَيْكُمْ صَدَّقْتُمُونِي

O Bani `Abd Al-Muttalib, O Bani Fihr, O Bani Lu’ayy! What do you think, if I told you that there was a cavalry at the foot of this mountain coming to attack you — would you believe me!

They said, “Yes.”

He said:

فَإِنِّي نَذِيرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَي عَذَابٍ شَدِيد

Then I warn you of a great punishment that is close at hand.

Abu Lahab said, “May you perish for the rest of the day! You only called us to tell us this”

Then Allah revealed:

تَبَّتْ يَدَا أَبِى لَهَبٍ وَتَبَّ

Perish the two hands of Abu Lahab and perish he! (111:1)

This was also recorded by Al-Bukhari, Muslim, At-Tirmidhi and An-Nasa’i.

Imam Ahmad recorded that A’ishah, may Allah be pleased with her said:

“When the Ayah,
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الاْأَقْرَبِينَ
(And warn your tribe of near kindred) was revealed, the Messenger of Allah stood up and said:

يَا فَاطِمَةُ ابْنَةُ مُحَمَّدٍ يَا صَفِيَّةُ ابْنَةُ عَبْدِالْمُطَّلِبِ يَا بَنِي عَبْدِالْمُطَّلِبِ لَاا أَمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيْيًا سَلُونِي مِنْ مَالِي مَا شِيْتُم

O Fatimah daughter of Muhammad, O Safiyyah daughter of Abd Al-Muttalib, O Bani Abd Al-Muttalib, I cannot help you before Allah. Ask me for whatever you want of my wealth.

This was recorded by Muslim.

Imam Ahmad recorded that Qabisah bin Mukhariq and Zuhayr bin `Amr said:

“When the Ayah:
وَأَنذِرْ عَشِيرَتَكَ الاْأَقْرَبِينَ
(And warn your tribe of near kindred) was revealed, the Messenger of Allah climbed on top of a rock on the side of a mountain and started to call out:

يَا بَنِي عَبْدِ مَنَافٍ إِنَّمَا أَنَا نَذِيرٌ وَإِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَرَجُلٍ رَأَى الْعَدُوَّ فَذَهَبَ يَرْبَأُ أَهْلَهُ يَخْشَى أَنْ يَسْبِقُوهُ فَجَعَلَ يُنَادِي وَيَهْتِفُ يَا صَبَاحَاه

O Bani Abd Manaf, I am indeed a warner, and the parable of me and you is that of a man who sees the enemy so he goes to save his family, fearing that the enemy may reach them before he does. And he started to call out, (O people!)

It was also recorded by Muslim and An-Nasa’i.

Allah’s saying:

وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ

26:217

وَ تَوَکَّلۡ عَلَی الۡعَزِیۡزِ الرَّحِیۡمِ ﴿۲۱۷﴾ۙ

And rely upon the Exalted in Might, the Merciful,

 

And put your trust in the All-Mighty, the Most Merciful,

means, `in all your affairs, for He is your Helper, Protector and Supporter, and He is the One Who will cause you to prevail and will make your word supreme.’

الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ

26:218

الَّذِیۡ یَرٰىکَ حِیۡنَ تَقُوۡمُ ﴿۲۱۸﴾ۙ

Who sees you when you arise

 

Who sees you when you stand up.

means, He is taking care of you.

This is like the Ayah,

وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا

So wait patiently for the decision of your Lord, for verily, you are under Our Eyes. (52:48)

Ibn Abbas said that the Ayah,
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ
(Who sees you when you stand up) means,

“To pray.”

Ikrimah said:

“He sees him when he stands and bows and prostrates.”

Al-Hasan said:
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ
(Who sees you when you stand up) means,

“When you pray alone.”

Ad-Dahhak said:
الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ
(Who sees you when you stand up) means,

“When you are lying in bed and when you are sitting.”

Qatadah said:
الَّذِي يَرَاكَ
(Who sees you)

“When you are standing, when you are sitting, and in all other situations.”

وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ

26:219

وَ تَقَلُّبَکَ فِی السّٰجِدِیۡنَ ﴿۲۱۹﴾

And your movement among those who prostrate.

 

And your movements among those who fall prostrate.

Qatadah said:

الَّذِي يَرَاكَ حِينَ تَقُومُ

وَتَقَلُّبَكَ فِي السَّاجِدِينَ

Who sees you when you stand up. And your movements among those who fall prostrate.

“When you pray, He sees you when you pray alone and when you pray in congregation.”

This was also the view of Ikrimah, Ata’ Al-Khurasani and Al-Hasan Al-Basri.

إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

26:220

اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۲۲۰﴾

Indeed, He is the Hearing, the Knowing.

 

Verily, He, only He, is the All-Hearer, the All-Knower.

He hears all that His servants say and He knows all their movements, as He says:

وَمَا تَكُونُ فِى شَأْنٍ وَمَا تَتْلُواْ مِنْهُ مِن قُرْءَانٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ

Neither you do any deed nor recite any portion of the Qur’an, nor you do any deed, but We are Witness thereof, when you are doing it. (10:61

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply