(বই#১০০৪) [  সঠিক পাল্লায় ওজন করো।] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৪)
[  সঠিক পাল্লায় ওজন করো।]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
১৭৬-১৯১ নং আয়াত:-
২৬:১৭৬
کَذَّبَ اَصۡحٰبُ لۡـَٔـیۡکَۃِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۷۶﴾ۚۖ
আইকাহবাসীরা রসূলগণকে মিথ্যা মনে করেছিল;
২৬:১৭৭
اِذۡ قَالَ لَہُمۡ شُعَیۡبٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷﴾ۚ
যখন শু‘আইব তাদেরকে বলেছিলেন, ‘তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না?
২৬:১৭৮
اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۷۸﴾ۙ
আমি তোমাদের জন্য একজন আমানতদার রসূল।
২৬:১৭৯
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۷۹﴾ۚ
সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর ।
২৬:১৮০
وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۸۰﴾ؕ
আমি এ কাজে তোমাদের কাছ থেকে কোন প্রতিদান প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।
২৬:১৮১
اَوۡفُوا الۡکَیۡلَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُخۡسِرِیۡنَ ﴿۱۸۱﴾ۚ
তোমরা মাপ পূর্ণ করে দাও এবং কাউকে কম দিয়ো না।
২৬:১৮২
وَ زِنُوۡا بِالۡقِسۡطَاسِ الۡمُسۡتَقِیۡمِ ﴿۱۸۲﴾ۚ
সঠিক পাল্লায় ওজন করো।
২৬:১৮৩
وَ لَا تَبۡخَسُوا النَّاسَ اَشۡیَآءَہُمۡ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۚ
লোকদেরকে তাদের প্রাপ্যবস্তু কম দিও না এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ঘটায়ো না।
২৬:১৮৪
وَ اتَّقُوا الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ وَ الۡجِبِلَّۃَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۸۴﴾ؕ
এবং ভয় কর তাঁকে, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে সৃষ্টি করেছেন।
২৬:১৮৫
قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مِنَ الۡمُسَحَّرِیۡنَ ﴿۱۸۵﴾ۙ

তারা বললো, “তুমি নিছক একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি।
২৬:১৮৬
وَ مَاۤ اَنۡتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا وَ اِنۡ نَّظُنُّکَ لَمِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۱۸۶﴾ۚ
তুমি তো আমাদেরই মত একজন মানুষ। আমরা মনে করি, তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্যতম।
২৬:১৮৭
فَاَسۡقِطۡ عَلَیۡنَا کِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۸۷﴾ؕ
‘সুতরাং তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও।’
২৬:১৮৮
قَالَ رَبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸۸﴾
শো’আইব বললো, আমার রব জানেন তোমরা যা কিছু করছো।”
২৬:১৮৯
فَکَذَّبُوۡہُ فَاَخَذَہُمۡ عَذَابُ یَوۡمِ الظُّلَّۃِ ؕ اِنَّہٗ کَانَ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۱۸۹﴾
তারা তার প্রতি মিথ্যারোপ করল, ফলে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি গ্রাস করল । এ তো ছিল এক ভীষণ দিনের শাস্তি!
২৬:১৯০
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۹۰﴾
এতে তো অবশ্যই রয়েছে নিদর্শন , আর তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
২৬:১৯১
وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۹۱﴾٪
আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং দয়াময়ও।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

এ হচ্ছে হযরত শােয়ায়বের কাহিনী। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় এটা হযরত মুসা(আ.)-এর পূর্বে আসার কথা। কিন্তু এখানে এ সূরার অন্যান্য কাহিনীর মতাে নিছক এর শিক্ষার দিকটা বিবেচনা করেই বর্ণনা করা হয়েছে। ‘আসহাবুল আইকা’ দ্বারা সম্ভবত মাদায়েনবাসীকেই বুঝানাে হয়েছে। আইকা শব্দের অর্থ ঘন গাছপালা। সম্ভবত তৎকালে মাদায়েনের আশপাশে ঘন গাছপালা ছিলাে। মাদায়েনের অবস্থান হেজেস ও ফিলিস্তিনের মাঝে আকাবা উপসাগরের পার্শ্বে। অন্যান্য নবীর মতােই হযরত শােয়ায়বও ইসলামের মূল আকীদার দাওয়াত দান ও নিজেকে পার্থিব পারিশ্রমিক বা পারিতােষিকের আশা থেকে মুক্ত বলে আশ্বস্ত করে কাজের সূচনা করেন। তারপর তাদের বিশেষ কর্মকান্ড নিয়ে আলােচনা করেন। যেমন বলেন, ‘তােমরা পুরােপুরি মেপে দাও, মাপে কম দিও না'(আয়াত ১৮১-১৮৩) সূরা আরাফ ও হুদে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তারা মাপে ও ওযনে কম দিতাে এবং জোরপূর্বক বেশী আনতাে। তারা বেচাকেনার মাধ্যমে মানুষকে ঠকাতাে, অত্যধিক কম দামে কিনত ও বেশী দামে বিক্রী করতাে। মনে হয়, তারা কোনাে বাণিজ্যিক পথের পাশেই বাস করতাে। তাই তারা বাণিজ্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতাে। তাদের নবী বেচাকেনায় সততা ও ইনসাফের আদেশ দেন। কেননা বিশুদ্ধ আকীদা বিশ্বাস মানুষকে সততার সাথে লেন দেনের প্রেরণা যােগায়। লেনদেনে বে-ইনসাফী করতে দেয় না। এরপর হযরত শোয়ায়ব তাদের মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতির চেতনা জাগ্রত করেন। তিনি তাদের একক স্রষ্টাকে স্মরণ করিয়ে দেন, যেন অতীত ও বর্তমান সকল প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছেন।(আয়াত ১৮৪) কিন্তু তার জাতি তাকে যাদুকৃত উন্মাদ ও প্রলাপ বক্তা বলে আখ্যায়িত করে।(আয়াত ১৮৫) তারা তাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করে এবং তাদেরই মতাে মানুষ হওয়ায় তার নবুওত বিশ্বাসযােগ্য নয় বলে জানায়।(আয়াত ১৮৬) অতপর তারা তাকে চ্যালেঞ্জ দেয় যে, তিনি সত্যবাদী হয়ে থাকলে আকাশ ভেংগে তার টুকরােগুলােকে যেন তাদের ওপর নিক্ষেপ করে।(আয়াত ১৮৭) এ হচ্ছে চরম ধৃষ্টতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ঠিক এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মােশরেকরা রসূল(স.)-কেও দিয়েছিলাে। তিনি বললেন, তােমাদের কাজ সম্পর্কে আমার প্রভুই ভালাে জানেন।(আয়াত ১৮৮) অতপর ঘটনার দ্রুত শেষ পরিণতির বিবরণ দেয়া হয়, তারা তাকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করলাে। ফলে তাদেরকে পাকড়াও করলাে ‘ছায়ার দিনের আযাব’।(আয়াত ১৮৯) কথিত আছে যে, তাদের ওপর প্রচন্ড শ্বাসরুদ্ধকর গরম আবহাওয়া নেমে এসেছিলাে। এই সময়ে তারা এক টুকরাে মেঘ দেখতে পায়। ছায়া লাভের আশায় তারা সেই মেঘের নীচে আশ্রয় নেয়। প্রথমে তারা কিছু ঠান্ডা অনুভব করে। কিন্তু পরক্ষণেই অনুভব করে যে, তা তাদের জন্যে আরাে বিপর্যয়কর এবং তা তাদেরকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংস করে ছাড়ে। এই ছিলাে তাদের জন্যে ‘ইয়াওমুয যুল্লাহ’ বা ছায়ার দিন। এই ছায়া আসলে চিহ্নিত আযাবের দিনের প্রতীক ছিলাে!

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আইকাবাসীদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ইতিপূর্বে সূরা আল হিজরের ৭৮-৮৪ আয়াতে করা হয়েছে। এখানে করা হচ্ছে তার বিস্তারিত আলোচনা। মাদয়ান ও আইকাবাসীরা দু’টি আলাদা জাতি অথবা একটি জাতির পৃথক নাম, এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। একদল মনে করেন, তারা দু’টি পৃথক জাতি। এজন্য তাদের সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে, সূরা আ’রাফে হযরত শো’আইবকে মাদয়ানবাসীদের ভাই বলা হয়েছেঃ

وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا

আর এখানে আইকাবাসীদের উল্লেখ করতে গিয়ে শুধুমাত্র বলা হয়েছে إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ (যখন শু’আইব তাদেরকে বললো)। এখানে তাদের ভাই (اَخُوْهُمْ) শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। পক্ষান্তরে কোন কোন মুফাসসির উভয়কে একই জাতি গণ্য করেছেন। কারণ, সূরা আ’রাফ ও সূরা হূদে মাদয়ানবাসীদের যেসব রোগ ও গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে এখানে আইকাবাসীদের সে একই রোগ ও গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে। হযরত শো’আইবের দাওয়াত ও উপদেশও একই এবং শেষে তাদের পরিণতির মধ্যেও কোন ফারাক নেই।

গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে জানা যায়, এ দু’টি উক্তি মূলতঃ সঠিক। সন্দেহাতীতভাবে মাদয়ানবাসী ও আইকাবাসীরা দু’টি আলাদা গোত্র। কিন্তু মূলত তারা একই বংশধারার দু’টি পৃথক শাখা। হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী বা দাসী কাতুরার গর্ভজাত সন্তানরা আরব ও ইসরাঈলী ইতিহাসে বনী কাতুরা নামে পরিচিত। এদের একটি গোত্র সবচেয়ে বেশী খ্যাতি লাভ করে। মাদয়ান ইবনে ইব্রাহীমের বংশোদ্ভূত হবার ফলে তাদেরকে মাদয়ানী বা মাদয়ানবাসী বলা হয়। এদের বসতি উত্তর হেজায থেকে ফিলিস্তীনের দক্ষিণ পর্যন্ত এবং সেখান থেকে সিনাই ব-দ্বীপের শেষ কিনারা পর্যন্ত লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরের পশ্চিম উপকূল এলাকায় বিস্তৃত হয়। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মাদয়ান শহর। আবুল ফিদার মতে এটি আকাবা উপসাগরের উপকূলে আইলা (বর্তমান আকাবা) থেকে পাঁচ দিনের দুরত্বে অবস্থিত। বনী কাতুরার অন্যান্য গোত্রের মধ্যে বনী দীদান (deanties) তুলনামূলকভাবে বেশী পরিচিত। উত্তর আরবে তাইমা, তাবুক ও আলা’উলার মাঝামাঝি স্থানে তারা বসতি গড়ে। তাদের কেন্দ্রীয় স্থান ছিল তাবুক। প্রাচীনকালে একে আইকা বলা হতো। (মু’জামুল বুলদান গ্রন্থে ইয়াকূত আইকা শব্দের আলোচনায় বলেছেন, এটি তাবুকের পুরাতন নাম এবং তাবুকবাসীদের মধ্যে একথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল যে, এ স্থানটিই এক সময় আইকা নামে পরিচিত ছিল।) মাদয়ানবাসী ও আইকাবাসীদের জন্য একজন রসূল পাঠাবার কারণ সম্ভবত এ ছিল যে, তারা একই বংশধারার সাথে সম্পর্কিত ছিল, একই ভাষায় কথা বলতো এবং তাদের এলাকাও পরস্পরের সাথে সংযুক্ত ছিল। বরং বিচিত্র নয়, কোন কোন এলাকায় তাদের বসতি একই সঙ্গে গড়ে উঠেছিল এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়ে সমাজে তারা মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া বনী কাতুরার এ দু’শাখার লোকদের পেশাও ছিল ব্যবসা। তাদের মধ্যে একই ধরণের ব্যবসায়িক অসততা এবং ধর্মীয় ও চারিত্রিক দোষ পাওয়া যেত। বাইবেলের প্রথম দিকের পুস্তকগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় এ আলোচনা পাওয়া যায় যে, এরা বা’লে ফুগূরের পূজা করতো। বনী ইসরাঈল যখন মিসর থেকে বের হয়ে এদের এলাকায় আসে তখন তাদের মধ্যেও এরা শিরক ও ব্যভিচারের রোগ ছড়িয়ে দেয়। (গণনা পুস্তক ২৫: ১-৫ এবং ৩১: ১৬-১৭) তাছাড়া দু’টি বড় বড় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের ওপর এদের বসতি গড়ে উঠেছিল। এ পথ দু’টি ইয়ামন থেকে সিরিয়া এবং পারস্য উপসাগর থেকে মিসরের দিকে চলে গিয়েছিল। এ দু’টি রাজপথের ধারে বসতি হবার কারণে এদের লুটতরাজ ও রাহাজানির কারবার ছিল খুবই রমরমা। অন্যসব জাতির বাণিজ্য কাফেলাকে বিপুল পরিমাণ কর না দিয়ে তারা এ এলাকা অতিক্রম করতে দিতো না। নিজেরা আন্তর্জাতিক পথ দখল করে রাখার ফলে পথের শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে রেখেছিল। কুরআন মজীতে তাদের এ অবস্থানকে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ إِنَّهُمَا لَبِإِمَامٍ مُبِينٍ “এ জাতি দু’টি (লূতের জাতি ও আইকাবাসী) প্রকাশ্য রাজপথের ওপর বসবাস করতো।” এদের রাহাজানির কথা সূরা আ’রাফে এভাবে বলা হয়েছেঃ وَلَا تَقْعُدُوا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوعِدُونَ “আর প্রত্যেক পথের ওপর লোকদেরকে ভয় দেখাবার জন্য বসে যেয়ো না।” এ সমস্ত কারণে আল্লাহ‌ এ উভয় সম্প্রদায়ের জন্য একই নবী পাঠিয়েছিলেন এবং তাদেরকে একই ধরণের শিক্ষা দিয়েছিলেন।

হযরত শো’আইব ও মাদয়ানবাসীদের কাহিনী বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আল আ’রাফের ৮৫-৯৩ , হূদের ৮৪-৯৫ , এবং আল আনকাবুতের ৩৬-৩৭ আয়াত ।
# আযাব নাযিল করা আমার কাজ নয়। এটা তো আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীনের ক্ষমতার অন্তর্ভুক্ত এবং তিনি তোমাদের কার্যকলাপ দেখছেন। যদি তিনি তোমাদেরকে এ আযাবের উপযুক্ত মনে করেন তাহলে তিনি নিজেই আযাব পাঠাবেন। আইকাবাসীদের এ দাবী ও শো’আইবের এ জবাবের মধ্যে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের জন্য একটি সতর্কবাণী ছিল। অর্থাৎ তারাও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ একই দাবী করছিলঃ

أَوْ تُسْقِطَ السَّمَاءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا

“অথবা ফেলে দাও আমাদের উপর আকাশের একটি টুকরা যেমন তুমি দাবী করছো।” (বনী ইসরাঈলঃ ৯২)

তাই তাদেরকে বলা হচ্ছে, এ ধরনের দাবী আইকাবাসীরাও তাদের নবীর কাছে করেছিল, তার যে জবাব তারা পেয়েছিল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে তোমাদের দাবীর জন্যও রয়েছে সেই একই জবাব।
# এ আযাবের কোন বিস্তারিত বিবরণ কুরআন মজীদে বা কোন সহীহ হাদীসে উল্লেখিত হয়নি। শব্দের বাহ্যিক অর্থ থেকে যা বুঝা যায় তা হচ্ছে এই যে, তারা যেহেতু আসমানী আযাব চেয়েছিল তাই আল্লাহ‌ তাদের ওপর পাঠিয়ে দিলেন একটি মেঘমালা। এ মেঘমালাটি আযাবের বৃষ্টি বর্ষণ করে তাদেরকে পুরোপুরি ধ্বংস করে না দেয়া পর্যন্ত ছাতার মত তাদের ওপর ছেয়ে রইলো। কুরআন থেকে একথা পরিষ্কারভাবে জানা যায় যে, মাদয়ানবাসীদের আযাবের ধরণ আইকাবাসীদের আযাব থেকে আলাদা ছিল। যেমন এখানে বলা হয়েছে এরা ছাতার দিনের আযাবে ধ্বংস হয়েছিল। আর তাদের ওপর আযাব এসেছিল একটি বিষ্ফোরণ ও ভূমিকম্পের মাধ্যমে।

(فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ এবং وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ)

তাই উভয় সম্প্রদায়কে মিলিয়ে একটি কাহিনী বানিয়ে দেবার চেষ্টা করা ঠিক নয়। কোন কোন তাফসীরকার “ছাতার দিনের আযাব”-এর কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তাদের এসব তথ্যের উৎস আমাদের জানা নেই। ইবনে জারীর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের এ উক্তি উদ্ধৃত করেছেনঃ

مَنْ حَدَّثَكَ مِنَ الْعُلَمَاءِ مَا عَذَابُ يَوْمِ الظَّلَّةِ فَكَذّبِه-

“আলেমদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই ছাতার দিনের আযাব কি ছিল সে সম্পর্কে তোমাকে কোন তথ্য জানাবে, তা সঠিক বলে মেনে নিয়ো না।”

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৭৬-১৮০ নং আয়াতের তাফসীর

এ লোকগুলো মাদইয়ানের অধিবাসী ছিল। হযরত শুআইবও (আঃ) তাদেরই মধ্যে একজন ছিলেন। তাঁকে তাদের ভাই না বলার কারণ শুধু এই যে, তারা আয়কার পূজা করতো। আর এই আয়কার সাথেই তাদেরকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। আয়কা ছিল একটি গাছ। এ কারণেই অন্যান্য নবীদেরকে বংশগত সম্পর্কের কারণে যেমন তাদের উম্মতের ভাই বলা হয়েছে, হযরত শুআইব (আঃ)-কে তাঁর উম্মতের ভাই বলা হয়নি, যদিও বংশগত হিসেবে তিনিও তাদের ভাই ছিলেন। যারা এই বিন্দু পর্যন্ত পৌছতে পারেননি তারা বলেন যে, এ লোকগুলো হযরত শুআইব (আঃ)-এর কম ছিল না বলেই তাঁকে তাদের ভাই বলা হয়নি। তারা অন্য কওম ছিল। হযরত শুআইব (আঃ)-কে তাঁর নিজের কওমের নিকটও পাঠানো হয়েছিল এবং ঐ কওমের নিকটও তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। অন্য কেউ বলেন যে, তিনি তৃতীয় একটি কওমের নিকটও প্রেরিত হয়েছিলেন। যেমন হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কোন নবীকে আল্লাহ দুই বার প্রেরণ করেননি, শুধু হযরত শুআইব (আঃ)-কে ছাড়া। একবার তাকে মাদইয়ানবাসীর নিকট পাঠানো হয়। তারা তাকে অবিশ্বাস করে। তখন বিকট চীৎকার দ্বারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। দ্বিতীয়বার তাকে প্রেরণ করা হয় আয়কাবাসীর নিকট। তারাও তাকে অস্বীকার করে। ফলে তাদের উপর আল্লাহর মেঘাচ্ছন্ন দিনের শাস্তি নেমে আসে এবং তারা ধ্বংস হয়ে যায় ।

হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আসহাবে রস ও আসহাবে আয়কা হলো হযরত শুআইব (আঃ)-এর কওম। একজন বুযর্গ ব্যক্তির উক্তি এই যে, আসহাবে আয়কা ও আসহাবে মাদইয়ান একই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কওমে মাদইয়ান ও আসহাবে আয়কা দু’টি উম্মত, যাদের নিকট আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী হযরত শুআইব (আঃ)-কে প্রেরণ করেছিলেন।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি গারীব এবং এর মারফু হওয়া সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে। খুব সম্ভব এটা মাওকুফ হাদীস) আর সঠিক কথা এই যে, দুটো একই উম্মত।
১৮১-১৮৪ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত শুআইব (আঃ) ওজন ও মাপ ঠিক করার হিদায়াত করছেন। মাপে ঘাটতি করতে তিনি নিষেধ করছেন। তিনি বলছেনঃ “যখন তোমরা কাউকে কোন জিনিস মেপে দেবে তখন পূর্ণমাত্রায় দেবে, তার প্রাপ্য হতে কম দেবে না। অনুরূপভাবে কারো নিকট থেকে যখন কোন জিনিস নেবে তখন বেশী নেয়ার চেষ্টা করো না। এটা কেমন বিচার যে, নেয়ার সময় বেশী নেবে এবং দেয়ার সময় কম দেবে? লেন-দেন ঠিকভাবে করবে। দাঁড়িপাল্লা সঠিক রাখবে যাতে ওজন সঠিক হয়। ন্যায়ের সাথে ওজন করবে, ডান্ডি মারবে না এবং কম দেবে না।

কাউকেও তার জিনিস কম দেবে না। চুরি-ডাকাতি এবং লুটপাট করবে না। লোকদেরকে ভয় দেখিয়ে তাদের মাল-ধন ছিনিয়ে নেবে না। ঐ আল্লাহর শাস্তিকে তোমরা ভয় করো যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তী সমস্ত লোককে সৃষ্টি করেছেন। যিনি তোমাদের ও তোমাদের বড়দের প্রতিপালক।” এ শব্দটিই। (আরবি) (৩৬:৬২) এই আয়াতেও এই অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ “শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল।”
১৮৫-১৯১ নং আয়াতের তাফসীর

সামূদ সম্প্রদায় তাদের নবীকে যে উত্তর দিয়েছিল ঐ উত্তরই এই লোকগুলোও তাদের নবীকে দিলো। তারাও নবী (আঃ)-কে বললোঃ “তোমাকে কেউ যাদু করেছে। তোমার জ্ঞান ঠিক নেই। তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ। আর আমাদের তো বিশ্বাস যে, তুমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা’আলা তোমাকে নবীরূপে প্রেরণ করেননি। আচ্ছা, তুমি যদি সত্যিই নবী হয়ে থাকো তবে আকাশের একটি খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও দেখি? আসমানী শাস্তি আমাদের উপর নিয়ে এসো।”

যেমন কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেছিলঃ “আমরা তোমার উপর ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না তুমি আরবের এই বালুকাময় ভূমিতে নদী প্রবাহিত করবে।” এমনকি তারা এ কথাও বলেছিলঃ “অথবা তুমি আকাশের একটা খণ্ড আমাদের উপর নিক্ষেপ করবে যেমন তুমি ধারণা করছো অথবা আল্লাহ কিংবা ফেরেশতাদেরকে সরাসরি আমাদের সামনে নিয়ে আসবে।” অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ “তারা বলেছিল-হে আল্লাহ! যদি এটা তোমার পক্ষ হতে সত্য হয় তবে আকাশ হতে একটা টুকরা আমাদের উপর নিক্ষেপ কর।” অনুরূপভাবে ঐ কাফির অজ্ঞ লোকেরা বলেছিলঃ “তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের এক খণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও।” নবী (আঃ) উত্তরে বলেনঃ তোমরা যা কর আমার প্রতিপালক তা ভালরূপে অবগত আছেন। তোমরা যা হওয়ার যোগ্য তিনি তোমাদেরকে তাই করবেন। যদি তোমরা তাঁর কাছে আসমানী শাস্তির যোগ্য হয়ে থাকো তবে তিনি অনতিবিলম্বে তোমাদের উপর ঐ শাস্তি অবতীর্ণ করবেন। শেষ পর্যন্ত যে শাস্তি তারা কামনা করেছিল সেই শাস্তিই তাদের উপর এসে পড়ে। তারা কঠিন গরম অনুভব করে। সাত দিন পর্যন্ত যমীন যেন টগবগ করে ফুটতে থাকে। কোন জায়গায়, কোন ছায়ায় ঠাণ্ডা ও শান্তি তারা প্রাপ্ত হয়নি। তারা চরম অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। সাত দিন পর তারা দেখতে পায় যে, একখণ্ড কালো মেঘ তাদের নিকট চলে আসছে। ঐ মেঘখণ্ড এসে তাদের মাথার উপর ছেয়ে যায়। তারা গরমে অস্থির হয়ে পড়েছিল। ঐ মেঘ দেখে তারা ওর নীচে বসে পড়ে। যখন সবাই ওর নীচে এসে যায় তখন ঐ মেঘ হতে অগ্নি বর্ষণ শুরু হয়ে যায়। সাথে সাথে যমীন প্রচণ্ডভাবে টান দিতে শুরু করে এবং এমন ভীষণ শব্দ করে যে, তাদের অন্তর ফেটে যায় এবং একই সাথে সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। ঐ দিনের মহাপ্লাবন তাদের একজনকেও অবশিষ্ট রাখেনি। সূরায়ে আ’রাফে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “অতঃপর তারা ভূমিকম্প দ্বারা আক্রান্ত হলো, ফলে তাদের প্রভাত হলো নিজগৃহে অধঃমুখে পতিত অবস্থায়।” (৭: ৭৮) এটা এই কারণে যে, তারা বলেছিলঃ(আরবি)

অর্থাৎ “হে শুআইব (আঃ)! তোমাকে ও তোমার সাথে যারা বিশ্বাস করেছে। ভাদেরকে আমরা জনপদ হতে বহিষ্কার করবই অথবা তোমাদেরকে আমাদের ধর্মাদর্শে ফিরে আসতে হবে।” (৭: ৮৮) সূরায়ে হূদে রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যারা সীমালংঘন করেছিল মহা-নাদ তাদেরকে আঘাত করলো।” (১১:৬৭) এটা এই কারণে যে, তারা আল্লাহর নবী (আঃ)-কে বিদ্রুপ করেছিলঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমার নামায কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষরা যার ইবাদত করতে আমাদেরকে তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধন-সম্পদ সম্পর্কে যা করি তাও না? তুমি তো অবশ্যই সহিষ্ণু, সদাচারী।” (১১:৮৭)।

আর এখানে রয়েছে যে, তারা বলেছিলঃ “তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে আকাশের একখণ্ড আমাদের উপর ফেলে দাও। অতঃপর তারা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলো, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করলো।” সুতরাং ঐ তিন জায়গায় তিন প্রকারের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই বর্ণনা জায়গার সম্পর্কের কারণেই দেয়া হয়েছে। সূরায়ে আ’রাফে তাদের এই খিয়ানতের উল্লেখ রয়েছে যে, তারা হযরত শুআইব (আঃ)-কে ধমকের সুরে বলেছিলঃ তুমি যদি আমাদের ধর্মে না আসো তবে আমরা তোমাকে ও তোমার সহচরদেরকে আমাদের শহর হতে বের করে দিবো। যেহেতু সেখানে নবী (আঃ)-এর অন্তরকে কম্পিত করে তোলার বর্ণনা রয়েছে, সেই হেতু তাদেরকে শাস্তি দেয়ার বর্ণনা দেয়া হয়েছে ভূমিকম্প দ্বারা, যাতে তাদেরও অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। সূরায়ে হৃদে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা তাদের নবী হযরত শুআইব (আঃ)-কে উপহাস করে বলেছিলঃ তুমি তো বড় সহিষ্ণু ও ভাল লোক।’ এ কথার ভাবার্থ ছিলঃ তুমি বড়ই বাজে উক্তিকারী ও দুষ্ট লোক। কাজেই সেখানে তাদের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে মহা-নাদ দ্বারা। আর এখানে যেহেতু তাদের কামনা ছিল যে, যেন তাদের প্রতি আকাশের একটি খণ্ড নিক্ষিপ্ত হয়, সেই হেতু এখানে তাদের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তাদের উপর আকাশ হতে শাস্তিমূলক প্রস্তরবৃষ্টি বর্ষিত হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (লাঃ) বলেন যে, সাত দিন পর্যন্ত তাদের উপর এই প্রস্তর বর্ষিত হতে থাকে। কোন জায়গাতেই তারা একটু শান্তি ও শীতলতা লাভ করতে পারেনি। এরপর আকাশে একখণ্ড মেঘ তারা দেখতে পায়। একটি লোক ঐ মেঘের নীচে পৌঁছে এবং সেখানে শান্তি লাভ করে। তাই সে অন্যদেরকে সেখানে আহ্বান করে। যখন সবাই সেখানে একত্রিত হয়ে যায় তখন ঐ মেঘ ফেটে যায় এবং তা হতে অগ্নি বর্ষিত হয়।

এও বর্ণিত আছে যে, ছায়ারূপে যে মেঘমালা ছিল তা তাদের একত্রিত হওয়া মাত্রই সরে যায় এবং সূর্য হতে তাদের উপর অগ্নি বর্ষিত হয়। ফলে তারা সবাই দগ্ধীভূত হয়। মুহাম্মাদ ইবনে কাব কুরতী (রঃ) বলেন যে, মাদইয়ানবাসীদের উপর তিনটি শাস্তিই আপতিত হয়েছিল। শহরে ভূমিকম্প শুরু হলে তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে শহর হতে বাইরে পালিয়ে যায় এবং বাইরে সবাই একত্রিত হয়। কিন্তু সেখানেও তাদের হতবুদ্ধিতা ও অস্বস্তিকর অবস্থা শুরু হয়ে যায়। সুতরাং আবার তারা সেখান হতে পলায়ন করে। কিন্তু শহরে প্রবেশ করতে তারা ভয় পায়। এমতাবস্থায় এক জায়গায় তারা একখণ্ড মেঘ দেখতে পায়। একটি লোক ঐ মেঘখণ্ডের নীচে যায় এবং সেখানে ঠাণ্ডা ও শান্তি অনুভব করে সকলকে সেখানে আসতে বলে। তারা এ কথা শোনা মাত্র সবাই ঐ মেঘখণ্ডের নীচে একত্রিত হয়ে যায়। এমন সময় এক ভীষণ চীৎকারের শব্দ আসে, যার ফলে তাদের কলেজা ফেটে যায় এবং সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, বজ্রের ভীষণ গর্জন ও কঠিন গরম শুরু হয়, ফলে শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তাদের অস্বস্তিকর অবস্থা সীমা ছাড়িয়ে যায়। হতবুদ্ধি হয়ে সবাই শহর ছেড়ে দিয়ে ময়দানে গিয়ে জমা হয়ে যায়। এখানে তারা মেঘখণ্ড দেখতে পায় এবং ঠাণ্ডা ও আরাম লাভ করার। উদ্দেশ্যে ওর নীচে সবাই একত্রিত হয়। কিন্তু সেখানে অগ্নি বর্ষিত হয় এবং তারা সব জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায়। এটা ছিল মেঘাচ্ছন্ন দিনের বড় শাস্তি যা তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
নিঃসন্দেহে এ ঘটনা মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর মহাশক্তির একটি বড় নিদর্শন। তাদের অধিকাংশই মুমিন ছিল না। আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করার ব্যাপারে মহাপরাক্রমশালী। কেউই তার উপর বিজয় লাভ করতে পারে না। তিনি তাঁর সৎ বান্দাদের প্রতি পরম করুণাময়। তিনি তাদেরকে কঠিন শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নেন।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1004)
[Weigh with an even balance.]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 176-191

26:176

کَذَّبَ اَصۡحٰبُ لۡـَٔـیۡکَۃِ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۷۶﴾ۚۖ

The companions of the thicket denied the messengers

 

Shu`ayb and His Preaching to the Dwellers of Al-Aykah

Allah says:

كَذَّبَ أَصْحَابُ الاَْيْكَةِ الْمُرْسَلِينَ

إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ أَلَا تَتَّقُونَ

إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ

26:177

اِذۡ قَالَ لَہُمۡ شُعَیۡبٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۷۷﴾ۚ

When Shu’ayb said to them, “Will you not fear Allah ?

 

فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ

26:178

اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۷۸﴾ۙ

Indeed, I am to you a trustworthy messenger.

 

وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ

إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ

26:179

فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۷۹﴾ۚ

So fear Allah and obey me.

 

The companions of Al-Aykah denied the Messengers. When Shu`ayb said to them:”Will you not have Taqwa! I am a trustworthy Messenger to you. So, have Taqwa of Allah, and obey me. No reward do I ask of you for it; my reward is only from the Lord of Al-`Alamin.”

The companions of Al-Aykah were the people of Madyan, according to the most correct view.

The Prophet of Allah Shu`ayb was one of them, but it does not say here, their brother Shu`ayb, because they called themselves by a name denoting their deification of Al-Aykah, which was a tree which they used to worship; it was said that it was a group of trees which were tangled, like trees in a thicket. For this reason, when Allah said that the companions of Al-Aykah denied the Messengers, He did not say, “When their brother Shu`ayb said to them.” Rather, He said

26:180

وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۸۰﴾ؕ

And I do not ask you for it any payment. My payment is only from the Lord of the worlds.

 

إِذْ قَالَ لَهُمْ شُعَيْبٌ

When Shu`ayb said to them,

He is not described as belonging to them because of the meaning that was inherent in the name given to them even though he was their brother by blood.

Some people did not notice this point, so they thought that the dwellers of Al-Aykah were different from the people of Madyan, and claimed that Shu`ayb was sent to two nations; some said that he was sent to three.

أَصْحَابُ الاَْيْكَةِ
(The companions of Al-Aykah) were the people of Shu`ayb.

This was the view of Ishaq bin Bishr.

Someone besides Juwaybir said,

“The dwellers of Al-Aykah and the people of Madyan are one and the same.”

And Allah knows best.

Although there is another opinion that they were different nations with two identities, the correct view is that they were one nation, but they are described differently in different places.

Shu`ayb preached to them and commanded them to be fair in their weights and measures, the same as is mentioned in the story of Madyan, which also indicates that they were the same nation

26:181

اَوۡفُوا الۡکَیۡلَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُخۡسِرِیۡنَ ﴿۱۸۱﴾ۚ

Give full measure and do not be of those who cause loss.

 

The Command to give Full Measure

Allah commanded them to give full measure, and forbade them to give short measure.

He said:

أَوْفُوا الْكَيْلَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُخْسِرِينَ

Give full measure, and cause no loss.

meaning, `when you give to people, give them full measure, and do not cause loss to them by giving them short measure, while taking full measure when you are the ones who are taking. Give as you take, and take as you give.’

وَزِنُوا بِالْقِسْطَاسِ الْمُسْتَقِيم

26:182

وَ زِنُوۡا بِالۡقِسۡطَاسِ الۡمُسۡتَقِیۡمِ ﴿۱۸۲﴾ۚ

And weigh with an even balance.

 

And weigh with the true and straight balance.

The balance is the scales.
26:183

وَ لَا تَبۡخَسُوا النَّاسَ اَشۡیَآءَہُمۡ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۚ

And do not deprive people of their due and do not commit abuse on earth, spreading corruption.

 

وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءهُمْ

And defraud not people by reducing their things,

means, do not shortchange them.

وَلَا تَعْثَوْا فِي الاَْرْضِ مُفْسِدِينَ

nor do evil, making corruption and mischief in the land.

means, by engaging in banditry.

This is like the Ayah,

وَلَا تَقْعُدُواْ بِكُلِّ صِرَطٍ تُوعِدُونَ

And sit not on every road, threatening, (7:86)

وَاتَّقُوا الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالْجِبِلَّةَ الاْاَوَّلِينَ

26:184

وَ اتَّقُوا الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ وَ الۡجِبِلَّۃَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۸۴﴾ؕ

And fear He who created you and the former creation.”

 

And have Taqwa of Him Who created you and the generations of the men of old.

Here he is frightening them with the punishment of Allah Who created them and created their forefathers.

This is like when Musa, peace be upon him, said:

رَبُّكُمْ وَرَبُّ ءَابَأيِكُمُ الاٌّوَّلِينَ

Your Lord and the Lord of your ancient fathers! (26:26)

Ibn Abbas, Mujahid, As-Suddi, Sufyan bin Uyaynah and Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said:

وَالْجِبِلَّةَ الاْاَوَّلِينَ
(the generations of the men of old) means, He created the early generations. And Ibn Zayd recited:

وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّ كَثِيراً

And indeed he (Shaytan) did lead astray a great multitude of you. (36:62

26:185

قَالُوۡۤا اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مِنَ الۡمُسَحَّرِیۡنَ ﴿۱۸۵﴾ۙ

They said, “You are only of those affected by magic.

 

The Response of Shu`ayb’s People, Their Disbelief in Him and the coming of the Punishment upon Them

Allah tells us how his people responded and how it was like the response of Thamud to their Messenger — for they were of like mind — when:

قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مِنَ الْمُسَحَّرِينَ

They said:You are only one of those bewitched!

meaning, `you are one of those who are affected by witchcraft.’

وَمَا أَنتَ إِلاَّ بَشَرٌ مِّثْلُنَا وَإِن نَّظُنُّكَ لَمِنَ الْكَاذِبِينَ

26:186

وَ مَاۤ اَنۡتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا وَ اِنۡ نَّظُنُّکَ لَمِنَ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۱۸۶﴾ۚ

You are but a man like ourselves, and indeed, we think you are among the liars.

 

You are but a human being like us and verily, we think that you are one of the liars!

means, `we think you are deliberately lying to us in what you say, and Allah has not sent you to us.

26:187

فَاَسۡقِطۡ عَلَیۡنَا کِسَفًا مِّنَ السَّمَآءِ اِنۡ کُنۡتَ مِنَ الصّٰدِقِیۡنَ ﴿۱۸۷﴾ؕ

So cause to fall upon us fragments of the sky, if you should be of the truthful.”

 

فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَاء

So cause a piece of the heaven to fall on us,

Ad-Dahhak said:

“One side of the heavens.”

Qatadah said:

“A piece of the heaven.”

As-Suddi said:

“A punishment from heaven.”

This is like what the Quraysh said, as Allah tells us:

وَقَالُواْ لَن نُّوْمِنَ لَكَ حَتَّى تَفْجُرَ لَنَا مِنَ الاٌّرْضِ يَنْبُوعًا

And they say:”We shall not believe in you, until you cause a spring to gush forth from the earth for us, until:

أَوْ تُسْقِطَ السَّمَأءَ كَمَا زَعَمْتَ عَلَيْنَا كِسَفًا أَوْ تَأْتِىَ بِاللَّهِ وَالْمَلَـيِكَةِ قَبِيلً

Or you cause the heaven to fall upon us in pieces, as you have pretended, or you bring Allah and the angels before (us) face to face.” (17:90-92)

وَإِذْ قَالُواْ اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَـذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَأءِ

And (remember) when they said:”O Allah! If this is indeed the truth from You, then rain down stones on us from the sky….” (8:32)
Similarly, these ignorant disbelievers said:

فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَاء إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

So, cause a piece of the heaven to fall on us, if you are of the truthful!

قَالَ رَبِّي أَعْلَمُ بِمَا تَعْمَلُونَ

26:188

قَالَ رَبِّیۡۤ اَعۡلَمُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸۸﴾

He said, “My Lord is most knowing of what you do.”

 

He said:”My Lord is the Best Knower of what you do.”

means, `Allah knows best about you, and if you deserve that, He will punish you therewith, and He will not treat you unjustly.’

So this is what happened to them — as they asked for — an exact recompense.

Allah says:

فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ

إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

26:189

فَکَذَّبُوۡہُ فَاَخَذَہُمۡ عَذَابُ یَوۡمِ الظُّلَّۃِ ؕ اِنَّہٗ کَانَ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ ﴿۱۸۹﴾

And they denied him, so the punishment of the day of the black cloud seized them. Indeed, it was the punishment of a terrible day.

 

But they denied him, so the torment of the Day of Shadow seized them. Indeed that was the torment of a Great Day.

This is what they asked for, when they asked for a part of the heaven to fall upon them. Allah made their punishment in the form of intense heat which overwhelmed them for seven days, and nothing could protect them from it.

Then He sent a cloud to shade them, so they ran towards it to seek its shade from the heat. When all of them had gathered underneath it, Allah sent sparks of fire and flames and intense heat upon them, and caused the earth to convulse beneath them, and He sent against them a mighty Sayhah which destroyed their souls.

Allah says:

إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
Indeed that was the torment of a Great Day.

Allah has mentioned how they were destroyed in three places in the Qur’an, in each of which it is described in a manner which fits the context.

In Surah Al-A`rafHe says that:

the earthquake seized them, and they lay (dead), prostrate in their homes. This was because they said:

لَنُخْرِجَنَّكَ يـشُعَيْبُ وَالَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَأ أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا

“We shall certainly drive you out, O Shu`ayb, and those who have believed with you from our town, or else you (all) shall return to our religion.” (7:88)

They had sought to scare the Prophet of Allah and those who followed him, so they were seized by the earthquake.

In Surah Hud, Allah says:

وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُواْ الصَّيْحَةُ

And As-Sayhah seized the wrongdoers. (11:94)

This was because they mocked the Allah’s Prophet when they said:

أَصَلَوَتُكَ تَأْمُرُكَ أَن نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ ءابَاوُنَأ أَوْ أَن نَّفْعَلَ فِى أَمْوَالِنَا مَا نَشَوُا إِنَّكَ لاّنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ

“Does your Salah command that we give up what our fathers used to worship, or that we give up doing what we like with our property Verily, you are the forbearer, right-minded!” (11:87)

They had said this in a mocking, sarcastic tone, so it was befitting that the Sayhah should come and silence them, as Allah says:

فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ

So As-Saihah overtook them. (15:73)

وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُواْ الصَّيْحَةُ

And As-Saihah seized the wrongdoers. (11:94)

And here, they said:

فَأَسْقِطْ عَلَيْنَا كِسَفًا مِّنَ السَّمَاء

So, cause a piece of the heaven to fall on us,

in a stubborn and obstinate manner. So, it was fitting that something they never thought would happen should befall them:

فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ إِنَّهُ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

so the torment of the Day of Shadow seized them. Indeed that was the torment of a Great Day.

Muhammad bin Jarir narrated from Yazid Al-Bahili:”I asked Ibn Abbas about this Ayah:
فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ
(so the torment of the Day of Shadow seized them).

He said:

`Allah sent upon them thunder and intense heat, and it terrified them (so they entered their houses and it pursued them to the innermost parts of their houses and terrified them further), and they ran fleeing from their houses into the fields. Then Allah sent upon them clouds which shaded them from the sun, and they found it cool and pleasant, so they called out to one another until they had all gathered beneath the cloud, then Allah sent fire upon them.’

Ibn Abbas said,

`That was the torment of the Day of Shadow, indeed that was the torment of a Great Day.”‘

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَةً

وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّوْمِنِينَ

26:190

اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۹۰﴾

Indeed in that is a sign, but most of them were not to be believers.

 

وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

26:191

وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۹۱﴾٪

And indeed, your Lord – He is the Exalted in Might, the Merciful.

 

Verily, in this is an Ayah, yet most of them are not believers. And verily, your Lord, He is truly, the All-Mighty, the Most Merciful.

meaning, He is All-Mighty in His punishment of the disbelievers, and Most Merciful towards His believing servants

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply