(বই#১০০৩) [  *কওমে লূতের চারিত্রিক বিকৃতি :-] www.motaher21.net

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০০৩)
[  *কওমে লূতের চারিত্রিক বিকৃতি :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৬:শুআরা
পারা:১৯
১৬০-১৭৫ নং আয়াত:-
২৬:১৬০
کَذَّبَتۡ قَوۡمُ لُوۡطِۣ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۶۰﴾ۚۖ
লূতের সম্প্রদায় রসূলগণকে মিথ্যা মনে করেছিল।
২৬:১৬১
اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ لُوۡطٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۶۱﴾ۚ
যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, ‘তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না?
২৬:১৬২
اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۶۲﴾ۙ
আমি অবশ্যই তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রসূল।
২৬:১৬৩
فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۶۳﴾ۚ
সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।
২৬:১৬৪
وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۴﴾ؕ
এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন প্রতিদানের প্রত্যাশী নই। আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো রব্বুল আলামীনের।
২৬:১৬৫
اَتَاۡتُوۡنَ الذُّکۡرَانَ مِنَ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۵﴾ۙ
তোমরা কি গোটা দুনিয়ার মধ্যে পুরুষদের কাছে যাও!
২৬:১৬৬
وَ تَذَرُوۡنَ مَا خَلَقَ لَکُمۡ رَبُّکُمۡ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ عٰدُوۡنَ ﴿۱۶۶﴾
‘আর তোমাদের রব তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগণকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে তোমরা বর্জন করে থাক। বরং তোমরা তো এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।’
২৬:১৬৭
قَالُوۡا لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَہِ یٰلُوۡطُ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُخۡرَجِیۡنَ ﴿۱۶۷﴾
ওরা বলল, ‘হে লূত! যদি নিবৃত্ত না হও, তাহলে অবশ্যই তুমি নির্বাসিত হবে।’
২৬:১৬৮
قَالَ اِنِّیۡ لِعَمَلِکُمۡ مِّنَ الۡقَالِیۡنَ ﴿۱۶۸﴾ؕ
লূত বললেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের এ কাজের ঘৃণাকারী।
২৬:১৬৯
رَبِّ نَجِّنِیۡ وَ اَہۡلِیۡ مِمَّا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾
‘হে আমার রব! আমাকে এবং আমার পরিবার-পরিজনকে, তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা করুন।’
২৬:১৭০
فَنَجَّیۡنٰہُ وَ اَہۡلَہٗۤ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۷۰﴾ۙ
সুতরাং আমি তাকে এবং তার পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করলাম;
২৬:১৭১
اِلَّا عَجُوۡزًا فِی الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۱۷۱﴾ۚ

এক বৃদ্ধা ছাড়া , যে ছিল পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
২৬:১৭২
ثُمَّ دَمَّرۡنَا الۡاٰخَرِیۡنَ ﴿۱۷۲﴾ۚ
তারপর অবশিষ্ট লোকদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম।
২৬:১৭৩
وَ اَمۡطَرۡنَا عَلَیۡہِمۡ مَّطَرًا ۚ فَسَآءَ مَطَرُ الۡمُنۡذَرِیۡنَ ﴿۱۷۳﴾
তাদের উপর বিশেষ ধরনের বৃষ্টিবর্ষণ করলাম, যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল তাদের জন্য এ বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট ।
২৬:১৭৪
اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۴﴾
এতে তো অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়।
২৬:১৭৫
وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۷۵﴾٪
আর প্রকৃতপক্ষে তোমার রব পরাক্রমশালী এবং করুণাময়ও।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

হযরত লুত(আ.)-এর কাহিনী এখানে বর্ণনা করা হলেও এ ঘটনার ঐতিহাসিক অবস্থান হযরত ইবরাহীম(আ.)-এর কাহিনীর সাথে। কিন্তু আমি আগেই বলেছি যে, এ সূরায় ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়নি। কেবল নবুওত ও রেসালাতের আদর্শগত অভিন্নতা এবং নবুওত প্রত্যাখ্যানকারীদের পরিণামের অভিন্নতাই বিবেচনায় রাখা হয়েছে। আর সেই পরিণাম হলাে, প্রত্যাখ্যানকারীদের ধ্বংস ও মােমেনদের নিস্তার লাভ।  *কওমে লূতের চারিত্রিক বিকৃতি : হযরত নূহ, হুদ ও সালেহ(আ.) যে কথা দিয়ে দাওয়াত ও প্রচারের কাজ শুরু করেছিলেন, হযরত লূত(আ.) ও সেই কথা দিয়েই শুরু করেন। তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকারের সমালােচনা করেন, তাদের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় জাগানাের চেষ্টা করেন, তাদেরকে ঈমান ও আনুগত্যের আহ্বান জানান, তাদেরকে আশ্বস্ত করেন যে, তাদেরকে হেদায়াত করার বিনিময়ে তিনি তাদের কাছ থেকে কোনােই বিনিময় চান না। অতপর তাদেরকে ইতিহাসের সেই বিরলতম পাপাচারের জন্যে তিরস্কার করেন, যাতে তারা বিভাের ছিলেন, ‘একি! (যৌন চাহিদা পুরণের জন্যে) তােমরা দুনিয়ার পুরুষদের কাছেই আস অথচ তােমাদের প্রভু তােমাদের (এই চাহিদা পুরণের) জন্যে তােমাদের যে স্ত্রীদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে পরিহার করাে? আসলে তােমরা একটা সীমা অতিক্রমকারী জাতি।’ জর্ডান উপত্যকার কয়েকটা গ্রাম জুড়ে বসবাসকারী এই জাতি যে জঘন্য পাপ কাজটার জন্যে কুখ্যাত হয়, তা ছিলাে নারীদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে পুরুষদের সমকাম। এটা স্বভাবের একটা নিকৃষ্ট বিকৃতি। কেননা আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ উভয়কে সৃষ্টি করেছেন পরস্পরের প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ দিয়ে, যাতে নারী ও পুরুষের মিলনের মাধ্যমে মানুষের বংশ বিস্তার ঘটে। নর নারীর এ আকর্ষণ একটা সর্বব্যাপী প্রাকৃতিক নিয়ম। এ নিয়ম বিশ্ব প্রকৃতির প্রত্যেক বস্তু ও প্রাণীকে সৃষ্টি সংক্রান্ত আল্লাহর পরিকল্পিত ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্যে পরস্পরের সহযােগী বানিয়ে দেয়। পুরুষের সাথে পুরুষের সমকাম দ্বারা কোনাে লক্ষ্যই অর্জিত হয় না এবং তা এই বিশ্ব প্রকৃতির নিয়ম কানুনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। এই অস্বাভাবিক সমকামে আনন্দ উপভােগ করা খুবই বিস্ময়ের ব্যাপার। যে আনন্দ নারী ও পুরুষ তাদের মিলনে উপভােগ করে, তা আল্লাহর ইচ্ছা পূরণকারী একটা স্বাভাবিক পন্থা, সুতরাং হযরত লুতের জাতির এ কাজে প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ সুস্পষ্ট। তাই তাদেরকে এই বিকৃতি থেকে হয় ফিরিয়ে আনা নচেত ধ্বংস করে দেয়া অনিবার্য ছিলাে। কেননা তারা প্রকৃতির কাফেলার সাথে থাকার অযোগ্য হয়ে গিয়েছিলাে এবং পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব টিকে থাকার আর কোনো যৌক্তিকতা অবশিষ্ট ছিলাে না। কারণ তাদেরকে তাে প্রাকৃতিক নিয়মে বিয়ে ও প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা হয়েছিলাে। কিন্তু হযরত লূত(আ.) যখন তাদেরকে এই নব আবিষ্কৃত পাপ পরিত্যাগ করতে বললেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে যে নারী জাতি সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে পরিত্যাগ করা, প্রকৃতির ওপর জোরপূর্বক বিকৃতি চাপিয়ে দেয়া ও এতে নিহিত মহৎ উদ্দেশ্য নস্যাৎ করে দেয়ার সমালােচনা করলেন, তখন দেখা গেলাে যে, তারা স্বাভাবিক নিয়ম ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে প্রস্তুত নয়। ‘তারা বললাে, ওহে লুত, তুমি যদি আমাদের বিরুদ্ধে এ সব কথা বন্ধ না করে, তাহলে তােমাকে এই দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে।’ সেখানে হযরত লূত(আ.) ছিলেন একজন বিদেশী । তার চাচা হযরত ইবরাহীম(আ.) যখন নিজ পিতা ও জাতিকে ত্যাগ করে এখানে চলে এলেন তখন হযরত লূত(আ.) ও তার সাথে সাথে এসেছিলেন। তিনি হযরত ইবরাহীম(আ.) ও তার সাথী মুষ্টিমেয়সংখ্যক মুসলমানের সাথে জর্ডান নদী পার হয়ে এসেছিলেন। অতপর তিনি এই জাতির সাথে একাকী বাস করতে থাকেন। তারপর যখন তিনি নবুওত লাভ করলেন এবং তাদেরকে তাদের অপরাধমূলক কার্যকলাপ পরিত্যাগ করার আহ্বান জানালেন, তখন তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হলাে যদি তিনি এই প্রচার থেকে বিরত না হন। এ সময় তাদের অস্বাভাবিক অপকর্মের বিরুদ্ধে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করা ছাড়া হযরত লুতের আর কোনাে বিকল্প থাকলাে না। তাই তিনি বললেন, ‘আমি তােমাদের কার্যকলাপের ঘাের বিরােধী।’ ‘কালীন’ শব্দের অর্থ ঘাের বিরােধী ও প্রবলভাবে অপছন্দকারী। একথাটা বলে হযরত লূত(আ.) প্রথমে তাদের কাছে নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করলেন, অতপর আল্লাহর কাছে এই মুসিবত থেকে তাকে ও তার সন্তান সন্তুতিকে অব্যাহতি দানের জন্যে দোয়া করতে লাগলেন। ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ও আমার পরিবারকে তারা যেসব অপকর্ম করছে, তা থেকে অব্যাহতি দাও।’ তিনি যদিও তাদের এই অপকর্মে জড়িত নন, কিন্তু তিনি নিজের সত্যাশ্রয়ী বিবেক দ্বারা অনুভব করলেন যে, তিনি তাদের ভেতরে থাকা অবস্থায় তারা এমন কাজে লিপ্ত, যার পরিণামে আল্লাহর আযাব ও ধ্বংসযজ্ঞ নেমে আসা অবধারিত। তাই তিনি আল্লাহর কাছে আবেদন জানালেন যে, তার জাতিকে তিনি অচিরেই যে শাস্তি দিতে যাচ্ছেন, তা থেকে যেন তাকে ও তার পরিবারকে নিষ্কৃতি দেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর দোয়া কবুল করলেন, ‘অতপর তাদের অপকর্ম থেকে আমি তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করলাম। কেবল এক বৃদ্ধাকে বাদে’ যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাে। এই বৃদ্ধা হযরত লূত(আ.)-এরই স্ত্রী, যেমন অন্যান্য সূরায় বলা হয়েছে, এই বৃদ্ধা ছিলাে ভয়ংকর অপরাধপ্রবণ। সে তার জাতিকে তাদের অপকর্মের সমর্থন ও সহযােগিতা করতাে। ‘অতপর অন্যদেরকে আমি ধ্বংস করে দিলাম। আর তাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। সেই সতর্ককৃতদের দৃষ্টি ছিলাে খুবই অশুভ।’ কথিত আছে, তাদের গ্রামগুলােকে মাটির নীচে ধসিয়ে দেয়া হয় এবং পানি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এগুলাের ভেতরে সদোম নামক গ্রামটাও রয়েছে। ধারণা করা হয় যে, এগুলাে জর্ডানে মৃত সাগরের নীচে চাপা পড়ে আছে। কোনাে কোনাে ভূ-তত্ত্ববিদ জোর দিয়ে বলেন যে, মৃত সাগরের নিচে এমন কিছু শহর নিমজ্জিত রয়েছে, যা এক সময় জন অধ্যুষিত ছিলাে। কোনাে কোনাে নৃতত্ত্ববিদ এই সাগরের আশপাশে একটা দুর্গের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন, যার পাশেই কোরবানীর একটা বেদীও রয়েছে। সে যাই হােক, কোরআন হযরত লূত(আ.)-এর জাতির ইতিহাস এভাবেই বর্ণনা করেছে এবং এ ব্যাপারে কোরআনের বক্তব্যই চূড়ান্ত । অতপর সেই একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই এ ঘটনায় নিদর্শন রয়েছে। তাদের বেশীর ভাগই ঈমান আনেনি। তােমার প্রভু মহা প্রতাপশালী করুণাময়।’

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য দেখুন সূরা আল আ’রাফ ৮০-৮৪ , হূদ ৭৪-৮৩ , আল হিজর ৫৭-৭৭ , আল আম্বিয়া ৭১-৭৫ , আন নামল ৫৪-৫৮ , আল আনকাবুত ২৮-৩৫ , আস্ সাফফাত ১৩৩-১৩৮ এবং আল কামার ৩৩-৩৯ আয়াত।
# এর দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, সমগ্র সৃষ্টিকুলের মধ্য থেকে তোমরা শুধুমাত্র পুরুষদেরকে বাছাই করে নিয়েছো নিজেদের যৌন ক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য, অথচ দুনিয়ায় বিপুল সংখ্যক মেয়ে রয়েছে। দুই, সারা দুনিয়ার মধ্যে একমাত্র তোমরাই যৌন ক্ষুধা মেটাবার জন্য পুরুষদের কাছে যাও। নয়তো মানবজাতির মধ্যে এমন দল দ্বিতীয়টি নেই। বরং পশুদের মধ্যেও কেউ এ কাজ করে না। সূরা আ’রাফ ও সূরা আনকাবুতে এ দ্বিতীয় অর্থটিকে আরো সুস্পষ্ট করে এভাবে তুলে ধরা হয়েছেঃ

لَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُمْ بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِنَ الْعَالَمِينَ

“তোমরা কি এমন নির্লজ্জতার কাজ কর, যা দুনিয়ার সৃষ্টিকুলের মধ্যে তোমাদের আগে কেউ করেনি?”
# এরও দু’টি অর্থ হতে পারে। এক, এ ক্ষুধা পরিতৃপ্তির জন্য আল্লাহ‌ যে স্ত্রী জাতির সৃষ্টি করেছিলেন তাদেরকে বাদ দিয়ে তোমরা অস্বাভাবিক উপায়ে অর্থাৎ পুরুষদেরকে এ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছো। দুই, আল্লাহ‌ এ স্ত্রীদের মধ্যে এ ক্ষুধা পরিতৃপ্তির যে স্বাভাবিক পথ রেখেছিলেন তা বাদ দিয়ে তোমরা অস্বাভাবিক পথ অবলম্বন করছো। এই দ্বিতীয় অর্থটি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এ জালেমরা নিজেদের স্ত্রীদেরকেও প্রকৃতি বিরোধী পথে ব্যবহার করতো। হতে পারে পরিবার পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নিয়ে তারা এ কাজ করেছে।
# তোমাদের কেবলমাত্র এ একটিই অপরাধ নয়। তোমাদের জীবনের সমস্ত রীতিই সীমাতিরিক্ত ভাবে বিগড়ে গেছে। কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে তাদের এ সাধারণ অবস্থা এভাবে বর্ণনা করা হয়েছেঃ

أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ وَأَنْتُمْ تُبْصِرُونَ

“তোমাদের অবস্থা কি এমন হয়ে গেছে যে, চোখে দেখে অশ্লীল কাজ করছো?” (আন্ নামলঃ ৫৪ আয়াত)

أَئِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ وَتَقْطَعُونَ السَّبِيلَ وَتَأْتُونَ فِي نَادِيكُمُ الْمُنْكَرَ

“তোমরা কি এমনই বিকৃত হয়ে গেছো যে, পুরুষদের সাথে সঙ্গম করছো, রাজপথে দস্যূতা করছো এবং নিজেদের মজলিসে প্রকাশ্যে খারাপ কাজ করছো?” (আল আনকাবুতঃ ২৯ আয়াত)

আরো বেশী বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল হিজর, ৩৯ টীকা ।
# তুমি জানো এর আগে যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছে অথবা আমাদের কাজের প্রতিবাদ করেছে কিংবা আমাদের ইচ্ছা বিরোধী কাজ করেছে তাকেই আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এখন যদি তুমি এসব কথা বলতে থাকো, তাহলে তোমার পরিণামও অনুরূপই হবে। সূরা আ’রাফ ও সূরা নামলে বর্ণনা করা হয়েছে, হযরত লূতকে (আ) এ নোটিশ দেবার আগে এ পাপাচারী জাতির লোকেরা নিজেদের মধ্যে ফায়সালা করে নিয়েছিলঃ

أَخْرِجُوا آلَ لُوطٍ مِنْ قَرْيَتِكُمْ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ

“লূত ও তাঁর পরিবারের লোকদের এবং সাথীদেরকে জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা বড়ই পবিত্রতার পরাকাষ্ঠা দেখাচ্ছে। এ ‘নেককারদের’কে বাইরের পথ দেখিয়ে দাও।”
# এর এ অর্থও হতে পারে, তাদের খারাপ কাজের পরিণাম থেকে আমাদের বাঁচাও। আবার এ অর্থও হতে পারে, এই অসৎ লোকদের জনপদে যেসব নৈতিক আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের সন্তান-সন্ততিদের গায়ে যেন সেগুলোর স্পর্শ লেগে না যায়। ঈমানদারদের নিজেদের বংশধররা যেন নোংরা পরিবেশে প্রভাবিত না হয়ে পড়ে। কাজেই হে আমাদের রব! এ কলুষিত সমাজে জীবন যাপন করার ফলে আমরা যে সার্বক্ষণিক আযাবে লিপ্ত হচ্ছি তার হাত থেকে আমাদের বাঁচাও।
# এখানে লূতের (আ) স্ত্রীর কথা বলা হচ্ছে। সূরা তাহরীমে নূহ (আ) ও লূতের (আ) স্ত্রীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ

كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَيْنِ فَخَانَتَاهُمَا

“এ মহিলা দু’টি আমার দু’জন সৎ বান্দার গৃহে ছিল। কিন্তু তারা তাঁদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে।” (১০ আয়াত)

অর্থাৎ তারা উভয়ই ছিল ঈমান শূন্য এবং নিজেদের সৎ স্বামীদের সাথে সহযোগিতা করার পরিবর্তে তারা তাদের কাফের জাতির সহযোগী হয়। এজন্য আল্লাহ‌ যখন লূতের জাতির উপর আযাব নাযিল করার ফায়সালা করলেন এবং লূতকে নিজের পরিবার পরিজনদের নিয়ে এ এলাকা ত্যাগ করার হুকুম দিলেন তখন সাথে সাথে নিজের স্ত্রীকে সঙ্গে না নেবার হুকুমও দিলেনঃ

فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنْكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ

“কাজেই কিছু রাত থাকতেই তুমি নিজের পরিবার-পরিজনদেরকে সাথে নিয়ে বের হয়ে যাও এবং তোমাদের কেউ যেন পেছন ফিরে না তাকায়। কিন্তু তোমার স্ত্রীকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে না। তাদের ভাগ্যে যা ঘটবে তারও তাই ঘটবে।” (হূদঃ ৮১ আয়াত)
# এ বৃষ্টি বলতে এখানে পানির বৃষ্টি নয় বরং পাথর বৃষ্টির কথা বুঝানো হয়েছে। কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এ আযাবের যে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হযরত লূত যখন রাতের শেষ প্রহরে নিজের সন্তান-পরিজনদের নিয়ে বের হয়ে গেলেন তখন ভোরের আলো ফুটতেই সহসা একটি প্রচণ্ড বিষ্ফোরণ হলো ((فَأَخَذَتْهُمُ الصَّيْحَةُ مُشْرِقِينَ একটি ভয়াবহ ভূমিকম্প তাদের জনপদকে ওলট-পালট করে দিয়ে গেলো। (جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا)

একটি ভয়ংকর আগ্নেয়গিরির আগ্নোৎপাতের মাধ্যমে তাদের ওপর পোড়া মাটির পাথর বর্ষণ করা হলোঃ (وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِنْ سِجِّيلٍ مَنْضُودٍ) এবং একটি ঝড়ো হাওয়ার মাধ্যমেও তাদের ওপর পাথর বর্ষণ করা হয়েছেঃ (إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ حَاصِبًا)

বাইবেলের বর্ণনাসমূহ, প্রাচীন গ্রীক ও ল্যাটিন রচনাবলী, আধুনিক ভূমিস্তর গবেষণা এবং প্রত্মতাত্ত্বিক অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণ থেকে এ আযাবের বিস্তারিত বিবরণের ওপর যে আলোকপাত হয় তার সংক্ষিপ্ত সার নিচে বর্ণনা করছিঃ

মরু সাগরের (dead sea) দক্ষিণ ও পশ্চিমে যে এলাকাটি বর্তমানে একেবারেই বিরান ও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুরাতন জনপদের ঘর-বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো প্রমাণ করে যে, এটি এক সময় ছিল অত্যন্ত জনবহুল এলাকা। আজ সেখানে শত শত ধ্বংস প্রাপ্ত পল্লীর চিহ্ন পাওয়া যায়। অথচ বর্তমানে এ এলাকাটি আর তেমন শস্য-শ্যামল নয়। ফলে এ পরিমাণ জনবসতি লালন করার ক্ষমতা তার নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞগণের ধারণা, খৃস্টপূর্ব ২৩০০ থেকে খৃস্টপূর্ব ১৯০০ সাল পর্যন্ত এটি ছিল বিপুল জনবসতি ও প্রাচুর্যপূর্ণ এলাকা। আর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আমল সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের অনুমান, সেটি ছিল খৃস্টপূর্ব দু’হাজার সালের কাছাকাছি সময়। এদিক দিয়ে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য একথা সমর্থন করে যে, এ এলাকাটি হযরত হযরত ইব্রাহীম ও তাঁর ভাতিজা হযরত লূতের সময় ধ্বংস হয়েছিল।

বাইবেলে যে এলাকাটিকে বলা হয়েছে ‘সিদ্দিমের উপত্যকা’ সেটিই ছিল এখানকার সবচেয়ে জনবহুল ও শস্য-শ্যামল এলাকা। এ এলাকাটি সম্পর্কে বাইবেলে বলা হয়েছেঃ যর্দ্দনের সমস্ত অঞ্চল সোয়র পর্যন্ত সর্বত্র সজল, সদাপ্রভুর উদ্যানের ন্যায়, মিসর দেশের ন্যায়, কেননা তৎকালে সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরা বিনষ্ট করেন নাই।” (আদিপুস্তক ১৩:১০) বর্তমান কালের গবেষকদের অধিকাংশের মত হচ্ছে, সে উপত্যকাটি বর্তমানে মরুসাগরের বুকে জলমগ্ন আছে। বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে এ মত গঠন করা হয়েছে। প্রাচীনকালে মরুসাগর দক্ষিণ দিকে আজকের মতো এতোটা বিস্তৃতি ছিল না। ট্রান্স জর্দানের বর্তমান শহর ‘আল করক’—এর সামনে পশ্চিম দিকে এ হ্রদের মধ্যে ‘আল লিসান’ নামক একটি ব-দ্বীপ দেখা যায়। প্রাচীনকালে এখানেই ছিল পানির শেষ প্রান্ত। এর নিম্নাঞ্চলে বর্তমানে পানি ছড়িয়ে গেছে (সংশ্লিষ্ট নকশায় পার্শ্বরেখা দিয়ে একে সুস্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি)। পূর্বের এটি উর্বর শস্য শ্যামল এলাকা হিসেবে জনবসতিপূর্ণ ছিল। এটিই ছিল সিদ্দিম উপত্যকা এবং এখানেই ছিল লূতের জাতির সাদোম, ঘমোরা, অদমা, সবোয়ীম ও সুগার —এর মতো বড় বড় শহরগুলো। খৃস্টপূর্ব দু’হাজার বছরের কাছাকাছি এক সময় একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে এ উপত্যকাটি ফেটে ভূগর্ভে প্রোথিত হয়ে যায় এবং মরুসাগরের পানি একে নিমজ্জিত করে ফেলে। আজও এটি হ্রদের সবচেয়ে অগভীর অংশ। কিন্তু বাইজানটাইন শাসকদের যুগে এ অংশটি এতো বেশী অগভীর ছিল যে, লোকেরা আল লিসান থেকে পশ্চিম তীর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে পানি পার হয়ে যেতো। তখনো দক্ষিণ তীরের লাগোয়া এলাকায় পানির মধ্যে ডুবন্ত বনাঞ্চল পরিষ্কার দেখা যেতো। বরং পানির মধ্যে কিছু দালান কোঠা ডুবে আছে বলে সন্দেহ করা হতো।

বাইবেল ও পুরাতন গ্রীক ও ল্যাটিন রচনাবলী থেকে জানা যায়, এ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে নাফাত (পেট্টোল) ও স্ফল্টের কূয়া ছিল। অনেক জায়গায় ভূগর্ভ থেকে অগ্নিউদ্দীপক গ্যাসও বের হতো। এখনো সেখানে ভূগর্ভে পেট্টোল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। ভূ-স্তর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুমান করা হয়েছে, ভূমিকম্পের প্রচণ্ড ঝাকুনীর সাথে পেট্টোল, গ্যাস ও স্ফলট ভূ-গর্ভ থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়ে জ্বলে ওঠে এবং সমগ্র এলাকা ভষ্মীভূত হয়ে যায়। বাইবেলের বর্ণনা মতে, এ ধ্বংসের খবর পেয়ে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম হিব্রোন থেকে এ উপত্যকার অবস্থা দেখতে আসেন। তখন মাটির মধ্য থেকে কামারের ভাটির ধোঁয়ার মতো ধোঁয়া উঠছিল। (আদিপুস্তক ১৯:২৮)।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১৬০-১৬৪ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় বান্দা ও রাসূল হযরত লূত (আঃ)-এর বর্ণনা দিচ্ছেন। তাঁর নাম ছিল পূত ইবনে হারান ইবনে আষর। তিনি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর ভ্রাতুস্পুত্র ছিলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জীবদ্দশাতেই আল্লাহ তাআলা হযরত লূত (আঃ)-কে অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির উম্মতের নিকট প্রেরণ করেন। ঐ লোকগুলো সাযুম এবং ওর আশে পাশে বসবাস করতো। অবশেষে তাদের দুষ্কর্মের কারণে তাদের উপরও আল্লাহর শাস্তি আপতিত হয় এবং তারা সবাই ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের বসতিগুলোর জায়গাটি একটি ময়লাযুক্ত দুর্গন্ধময় পানির বিলে পরিণত হয়েছে। ওটা এখনো বেলাদে গাওর নামে প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং বেলাদে কারক ও শাওবাকের মধ্যভাগে অবস্থিত। ঐ লোকগুলোও আল্লাহর রাসূল হযরত লূত (আঃ)-কে অবিশ্বাস করে। তিনি তাদেরকে আল্লাহর নাফরমানী পরিত্যাগ করার এবং তাঁর আনুগত্য করার উপদেশ দেন। তিনি যে তাদের নিকট রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছে তা তিনি তাদের কাছে প্রকাশ করেন। তিনি তাদেরকে বলেন যে, তিনি ঐ কাজের জন্যে তাদের কাছে কোন প্রতিদান চান না। তার পুরস্কার তো রয়েছে বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর নিকট। তিনি তাদেরকে বলেন, তোমরা তোমাদের জঘন্য কাজ হতে বিরত থাকো অর্থাৎ নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষদের দ্বারা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে যেয়ো না। কিন্তু তারা তাঁর কথা মানলো না, বরং তাকে কষ্ট দিতে শুরু করলো।
১৬৫-১৭৫ নং আয়াতের তাফসীর

হযরত লূত (আঃ) তাঁর কওমকে এই বিশেষ নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ থেকে বিরত রাখতে গিয়ে বলেনঃ “তোমরা তোমাদের কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পুষদের নিকট যেয়ো না। বরং তোমরা তোমাদের হালাল স্ত্রীদের কাছে গিয়ে তোমাদের কাম বাসনা চরিতার্থ কর, যাদেরকে মহান আল্লাহ তোমাদের জোড়া বানিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এ কথার উত্তরে তাঁর কওমের লোকেরা তাঁকে বললোঃ ‘হে লূত (আঃ)! তুমি যদি এ কাজ হতে বিরত না হও তবে অবশ্যই তোমাকে দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “উত্তরে তার সম্প্রদায় শুধু বললোঃ তোমরা লুত (আঃ) ও তার অনুসারীদেরকে তোমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার কর, তারা তো এমন লোক যারা অতি পবিত্র হতে চায়।” ২৭: ৫৬) তাদের এ অবস্থা দেখে হযরত লুত (আঃ) তাদের প্রতি অসন্তুষ্টি ও তাদের থেকে বিচ্ছিন্নতার কথা ঘোষণা করেন এবং বলেন, “আমি তোমাদের এ জঘন্য কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট। আমি এ কাজ মোটেই পছন্দ করি না। আমি মহান আল্লাহর সামনে নিজেকে এসব কাজ হতে মুক্তরূপে প্রকাশ করছি।’
অতঃপর হযরত লূত (আঃ) তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা’আলার নিকট বদদু’আ করেন এবং নিজের ও পরিবার-পরিজনদের জন্যে মুক্তির প্রার্থনা করেন। তাঁর স্ত্রী তাঁর কওমের সাথে যোগ দিয়েছিল। তাই সেও তাদের সাথে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যেমন সূরায়ে আ’রাফ, সূরায়ে হৃদ এবং সূরায়ে হিজরে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

হযরত লূত (আঃ) আল্লাহ তাআলার নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর অনুসারীদেরকে নিয়ে ঐ জনপদ হতে সরে পড়লেন। নির্দেশ ছিল যে, তাঁদের সেখান হতে চলে যাওয়ার পরই তাঁর কওমের উপর আল্লাহর শাস্তি আপতিত হবে, ঐ সময় তাদের দিকে ফিরেও তাকানো যাবে না। অতঃপর তাদের সবারই উপর আযাব এসে পড়ে এবং তারা সব ধ্বংস হয়ে যায়। তাদের উপর আকাশ হতে পাথর বর্ষিত হয়। তাদের জন্যে এই প্রস্তর বৃষ্টি ছিল কতই না নিকৃষ্ট! তাদের এ ঘটনাটিও একটি শিক্ষামূলক বিষয়। এতে সবারই জন্যে উপদেশ রয়েছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। তবে আল্লাহ যে মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু এতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।

 

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1003)
[The people of Lot’s perverse character:-]
www.motaher21.net
Sura:26
Para:19
Sura: Ash-Shu’araa
Ayat: 160-175
26:160

کَذَّبَتۡ قَوۡمُ لُوۡطِۣ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۱۶۰﴾ۚۖ

The people of Lot denied the messengers

 

Lut and His Call

Allah tells:

كَذَّبَتْ قَوْمُ لُوطٍ الْمُرْسَلِينَ

إِذْ قَالَ لَهُمْ أَخُوهُمْ لُوطٌ أَلَا تَتَّقُونَ

26:161

اِذۡ قَالَ لَہُمۡ اَخُوۡہُمۡ لُوۡطٌ اَلَا تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۶۱﴾ۚ

When their brother Lot said to them, “Will you not fear Allah ?

 

إِنِّي لَكُمْ رَسُولٌ أَمِينٌ

26:162

اِنِّیۡ لَکُمۡ رَسُوۡلٌ اَمِیۡنٌ ﴿۱۶۲﴾ۙ

Indeed, I am to you a trustworthy messenger.

 

فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ

26:163

فَاتَّقُوا اللّٰہَ وَ اَطِیۡعُوۡنِ ﴿۱۶۳﴾ۚ

So fear Allah and obey me.

 

وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ

إِنْ أَجْرِيَ إِلاَّ عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ

26:164

وَ مَاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ مِنۡ اَجۡرٍ ۚ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلٰی رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۴﴾ؕ

And I do not ask you for it any payment. My payment is only from the Lord of the worlds.

 

The people of Lut denied the Messengers. When their brother Lut said to them:

“Will you not have Taqwa! Verily, I am a trustworthy Messenger to you. So, have Taqwa of Allah, and obey me. No reward do I ask of you for it; my reward is only from the Lord of all that exits.”

Here Allah tells us about His servant and Messenger Lut, peace be upon him.

He was Lut bin Haran bin Azar, the nephew of Ibrahim Al-Khalil, upon him be peace. Allah sent him to a mighty nation during the lifetime of Ibrahim, peace be upon them both. They lived in Sadum (Sodom) and its environs, where Allah destroyed them and turned the area into a putrid, stinking lake, which is well-known in the land of Al-Ghur (the Jordan Valley), bordering the mountains of Jerusalem, between the mountains and the land of Al-Karak and Ash-Shawbak.

He called them to Allah, to worship Him alone with no partner or associate, and to obey the Messenger whom Allah sent to them.

He forbade from disobeying Allah and committing the sin that they had invented which was unknown on earth before their time; intercourse with males instead of with females.

26:165

اَتَاۡتُوۡنَ الذُّکۡرَانَ مِنَ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶۵﴾ۙ

Do you approach males among the worlds

 

Lut’s Denunciation of His People’s Deeds, Their Response and Their Punishment

Allah said:

أَتَأْتُونَ الذُّكْرَانَ مِنَ الْعَالَمِينَ

وَتَذَرُونَ مَا خَلَقَ لَكُمْ رَبُّكُمْ مِنْ أَزْوَاجِكُم

بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ عَادُونَ

26:166

وَ تَذَرُوۡنَ مَا خَلَقَ لَکُمۡ رَبُّکُمۡ مِّنۡ اَزۡوَاجِکُمۡ ؕ بَلۡ اَنۡتُمۡ قَوۡمٌ عٰدُوۡنَ ﴿۱۶۶﴾

And leave what your Lord has created for you as mates? But you are a people transgressing.”

 

“Go you in unto the males of Al-`Alamin (people), And leave those whom Allah has created for you to be your wives! Nay, you are a trespassing people!”

The Prophet of Allah forbade them from committing evil deeds and intercourse with males, and he taught them that they should have intercourse with their wives whom Allah had created for them. Their response was only to say

26:167

قَالُوۡا لَئِنۡ لَّمۡ تَنۡتَہِ یٰلُوۡطُ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُخۡرَجِیۡنَ ﴿۱۶۷﴾

They said, “If you do not desist, O Lot, you will surely be of those evicted.”

 

قَالُوا لَيِن لَّمْ تَنتَهِ يَا لُوطُ

They said:If you cease not, O Lut,

meaning, `if you do not give up what you have brought,’

لَتَكُونَنَّ مِنَ الْمُخْرَجِينَ

verily, you will be one of those who are driven out!

meaning, `we will expel you from among us.’

This is like the Ayah,

فَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلاَّ أَن قَالُواْ أَخْرِجُواْ ءَالَ لُوطٍ مِّن قَرْيَتِكُمْ إِنَّهمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ

There was no other answer given by his people except that they said:”Drive out the family of Lut from your city. Verily, these are men who want to be clean and pure!” (27:56)

When he saw that they would not give up their ways, and that they were persisting in their misguidance, he declared his innocence of them:

قَالَ إِنِّي لِعَمَلِكُم مِّنَ الْقَالِينَ

26:168

قَالَ اِنِّیۡ لِعَمَلِکُمۡ مِّنَ الۡقَالِیۡنَ ﴿۱۶۸﴾ؕ

He said, “Indeed, I am, toward your deed, of those who detest [it].

 

He said:I am, indeed, of those who disapprove with severe anger and fury.

`Of those who are outraged, I do not like it and I do not accept it, and I have nothing to do with you.’

Then he prayed to Allah against them and said:

رَبِّ نَجِّنِي وَأَهْلِي مِمَّا يَعْمَلُونَ

26:169

رَبِّ نَجِّنِیۡ وَ اَہۡلِیۡ مِمَّا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۶۹﴾

My Lord, save me and my family from [the consequence of] what they do.”

 

My Lord! Save me and my family from what they do.

Allah says:

فَنَجَّيْنَاهُ وَأَهْلَهُ أَجْمَعِينَ

26:170

فَنَجَّیۡنٰہُ وَ اَہۡلَہٗۤ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿۱۷۰﴾ۙ

So We saved him and his family, all,

 

إِلاَّ عَجُوزًا فِي الْغَابِرِينَ

26:171

اِلَّا عَجُوۡزًا فِی الۡغٰبِرِیۡنَ ﴿۱۷۱﴾ۚ

Except an old woman among those who remained behind.

 

So, We saved him and his family, all. Except an old woman among those who remained behind.

This was his wife, who was a bad old woman. She stayed behind and was destroyed with whoever else was left.

This is similar to what Allah says about them in Surah Al-A`raf and Surah Hud, and in Surah Al-Hijr, where Allah commanded him to take his family at night, except for his wife, and not to turn around when they heard the Sayhah as it came upon his people. So they patiently obeyed the command of Allah and persevered, and Allah sent upon the people a punishment which struck them all, and rained upon them stones of baked clay, piled up.

Allah says:

ثُمَّ دَمَّرْنَا الاْخَرِينَ

26:172

ثُمَّ دَمَّرۡنَا الۡاٰخَرِیۡنَ ﴿۱۷۲﴾ۚ

Then We destroyed the others.

 

وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا

فَسَاء مَطَرُ الْمُنذَرِينَ

26:173

وَ اَمۡطَرۡنَا عَلَیۡہِمۡ مَّطَرًا ۚ فَسَآءَ مَطَرُ الۡمُنۡذَرِیۡنَ ﴿۱۷۳﴾

And We rained upon them a rain [of stones], and evil was the rain of those who were warned.

 

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَايَةً

وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُم مُّوْمِنِينَ

26:174

اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیَۃً ؕ وَ مَا کَانَ اَکۡثَرُہُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۷۴﴾

Indeed in that is a sign, but most of them were not to be believers.

 

وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ

26:175

وَ اِنَّ رَبَّکَ لَہُوَ الۡعَزِیۡزُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۷۵﴾٪

And indeed, your Lord – He is the Exalted in Might, the Merciful.

 

Then afterward We destroyed the others. And We rained on them a rain, and how evil was the rain of those who had been warned!

Verily, in this is indeed a sign, yet most of them are not believers. And verily your Lord, He is indeed the All-Mighty, the Most Merciful

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply