(বই#১০১৫)   [*কোরআন শুনে ঈমান আনা :-] www.motaher21.net সূরা:- ২৮:ক্বাসাস পারা:২০ ৫২- ৫৫ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০১৫)
[*কোরআন শুনে ঈমান আনা :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৮:ক্বাসাস
পারা:২০
৫২- ৫৫ নং আয়াত:-
২৮:৫২
اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِہٖ ہُمۡ بِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۵۲﴾
যাদেরকে আমি এর আগে কিতাব দিয়েছিলাম তারা এর (কুরআন) প্রতি ঈমান আনে।
২৮:৫৩
وَ اِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِہٖۤ اِنَّہُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّنَاۤ اِنَّا کُنَّا مِنۡ قَبۡلِہٖ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۵۳﴾
আর যখন তাদেরকে এটা শুনানো হয়, তারা বলো, “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এটি যথার্থই সত্য আমাদের রবের পক্ষ থেকে, আমরা তো আগে থেকেই মুসলিম।”
২৮:৫৪
اُولٰٓئِکَ یُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَہُمۡ مَّرَّتَیۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۵۴﴾
ওদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করা হবে, কারণ ওরা ধৈর্যশীল। ওরা ভালোর দ্বারা মন্দকে দূর করে এবং আমি ওদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।
২৮:৫৫
وَ اِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡہُ وَ قَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ ۫ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۫ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۵۵﴾
ওরা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে, তখন ওরা তা পরিহার করে চলে এবং বলে, আমাদের কাজের জন্য আমরা দায়ী এবং তোমাদের কাজের জন্য তোমরা দায়ী; তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*কোরআন শুনে খৃষ্টান কাফেলার ঈমান আনা : এ পর্বটা শেষ হওয়ার পর দেখা গেলাে মােশরেকরা বক্র পথ অনুসরণ করতে ও বিতর্ক তুলতে শুরু করেছে। তাই পরবর্তী আলােচনায় তাদের সামনে আহলে কিতাবের একটা গােষ্ঠীর সততা, সত্যনিষ্ঠা ও কোরআনের প্রতি ঈমান আনার দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। তারা স্বভাবগতভাবে সৎ সরলমতি ও সদুদ্দেশ্য প্রণােদিত। তাই তারা কোনাে বক্র পথ অনুসরণ না করে সরাসরি ঈমান এনেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যাদের ইতিপূর্বে আমি কিতাব দিয়েছি, তারা এর প্রতি ঈমান আনে'(আয়াত ৫২- ৫৫) হযরত সাঈদ বিন জোবায়র বলেছেন, এ আয়াত কটা সত্তর জন খৃষ্টান ধর্মযাজক সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। নাজ্জাশী তাদের রসূল(স.)-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা যখন রসূল(স.)-এর কাছে এলেন, তখন তিনি তাদের সামনে ‘সূরা ইয়াসীন’ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে শােনালেন। এটা শুনে তারা সবাই কাঁদতে লাগলেন এবং ইসলাম গ্রহণ করলেন। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক স্বীয় সীরাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, অতপর রাসূল(স.) মক্কায় থাকা অবস্থায় বিশ জন অথবা তার কাছাকাছি সংখ্যক খৃষ্টান তার কাছে এলাে। আবিসিনিয়া থেকে তারা রসূল(স.)-এর খবর শুনে এসেছিলাে। তারা এসে রসূল(স.)-কে মসজিদে পেলাে। তারা রসূলের কাছে বসলাে, কথাবার্তা বললাে এবং নানা রকম প্রশ্ন করলাে। এ সময় কোরায়শ বংশীয় কিছু লােকজন কাবা শরীফের চত্বরে বসে কথাবার্তা বলছিলাে । আগন্তুক খৃষ্টানরা প্রয়ােজনীয় বিষয়গুলাে রসূল(স.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করে জেনে নেয়ার পর তিনি তাদেরে এক আল্লাহর এবাদাতের দাওয়াত দিলেন এবং কোরআন পড়ে শােনালেন। কোরআন শােনার পর তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে পড়তে লাগলাে। তারা দাওয়াত গ্রহণ করলাে, আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাে, রসূলের প্রতিটি কথা তারা সত্য বলে মেনে নিলাে এবং খৃষ্টানদের আসমানী কিতাবে তার সম্পর্কে যেসব বিবরণ রয়েছে, তা তার কাছ থেকে জেনে নিলাে। এরপর তারা যখন রসূল(স.)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হলাে, আবু জাহল ইবনে হিশাম তাদের পথ রােধ করে দাঁড়ালাে। সে তাদের বললাে, তােমাদের মতাে কাফেলাকে আল্লাহ ব্যর্থ করে দিক। তােমাদের স্বদেশী মুরব্বীরা তােমাদের পাঠিয়েছিলো এই লােক (মােহাম্মদ স.) সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে, আর তােমরা তার সাথে বৈঠক করেই অস্থির হয়ে পড়লে, শেষ পর্যন্ত নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে বসলে এবং মােহাম্মদের সব কথা সত্য বলে বিশ্বাস করলে? তােমাদের মতাে এমন নির্বোধ কাফেলা আর কখনাে দেখিনি। তারা বললাে, ‘তােমাদের ওপর শান্তি হােক। আমরা তােমাদের সাথে ঝগড়া করবাে না। আমরা যে পথে আছি সেই পথে আমাদেরকে থাকতে দাও। আর তােমরা যে পথে আছ সেই পথে তােমরা থাকো। আমরা নিজেদের কল্যাণের জন্যে সাধ্যমতাে চেষ্টা করেছি।’ ইবনে ইসহাক আরাে বলেন, কারাে কারাে মতে এই খৃষ্টানরা ছিলাে নাজরান থেকে আগত। আল্লাহ তায়ালাই ভালাে জানেন, তারা কোথাকার লোক ছিলাে। কেউ কেউ এ কথাও বলেন যে, এই খৃষ্টান কাফেলা সম্পর্কে ‘যাদের আমি ইতিপূর্বে কিতাব দিয়েছিলােম, তারা তার প্রতি ঈমান এনেছে…'(আয়াত ৫২-৫৫) আয়াতগুলাে নাযিল হয়েছে। ইবনে ইসহাক আরাে বলেন, আমি ইমাম যুহরীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এ আয়াতগুলাে কাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, আমাদের মনীষীদের কাছ থেকে আমরা বরাবরই শুনে আসছি, এগুলাে নাজ্জাশী ও তার সাথীদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার ওপর সন্তুষ্ট হােন। অনুরূপভাবে সূরা মায়েদার ৮২ ও ৮৩ নং আয়াতও তাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়। যাদের সম্পর্কেই এ আয়াতগুলাে নাযিল হয়ে থাক না কেন, কোরআন মােশরেকদের একটা বাস্তব ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যা তারা জানে এবং যার সত্যতা তারা অস্বীকার করে না। কোরআন একদল সত্যনিষ্ঠ লােকের নমুনা তাদের সামনে তুলে ধরে এবং দেখায়, কিভাবে তারা এই কোরআনকে গ্রহণ করে, কোরআন কিভাবে তাদের সন্দেহ নিরসন করে, কিভাবে তারা কোরআনে অকাট্য সত্যের সাক্ষাত পায় এবং তাদের নিজেদের কাছে আগে থেকে বিদ্যমান আসমানী কিতাবে তারা কোরআনের সাথে কতাে মিল খুঁজে পায়। এ কারণেই কোনাে দম্ভ, অহংকার বা প্রবৃত্তির খেয়াল খুশি তাদের ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারে না। বরং যে সত্যের ওপর তারা ঈমান এনেছে, শত দুঃখ-কষ্ট ও মূর্খ লােকদের দৌরাত্ম সহ্য করেও তার ওপর তারা অবিচল থাকে এবং সকল অত্যাচার অনাচারে ধৈর্য ধারণ করে। ‘যাদের আমি ইতিপূর্বে কিতাব দিয়েছি, তার প্রতি তারা ঈমান আনে'(আয়াত ৫২) এটা কোরআনের বিশুদ্ধতার একটা অকাট্য প্রমাণ। কেননা সমস্ত আসমানী কিতাবই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। তাই প্রত্যেক কিতাবেই অপর কিতাবের সাথে সমন্বয়, সামঞ্জস্য ও মিল রয়েছে। পূর্ববর্তী কিতাব যে পায়, পরবর্তী কিতাবেও সে একই সত্যের সাক্ষাত পায়। তাই সে সন্দেহমুক্ত হয়ে যায়, পরবর্তী কিতাবের প্রতিও নির্দ্বিধায় ঈমান আনে এবং নিশ্চিত বিশ্বাস করে, যে আল্লাহ তায়ালা সকল কিতাব নাযিল করেছেন, এ কিতাবও সেই আল্লাহর কাছ থেকেই এসেছে। ‘আর যখন তাদের সামনে তা পাঠ করা হয়, তারা বলে যে, আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এটাও আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকেই আগত সত্য। আমরা এর পূর্বেও আত্মসমর্পণকারী ছিলাম'(আয়াত ৫৩) অর্থাৎ কোরআনের সত্য বিশুদ্ধতা স্পষ্ট যে, পাঠ করাই যথেষ্ট। যারা ইতিপূর্বে সত্যকে চিনেছে, তারা তেলাওয়াত শুনেই বুঝতে পারে যে, এটাও সেই একই উৎস থেকে আগত, যেখান থেকে কখনাে মিথ্যা বলা হয় না। এটাও আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ বিশ্বাসীদের ধর্মই হলাে ইসলাম তথা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ। ‘তাদেরকে তাদের পুরস্কার দুবার দেয়া হবে। কেননা তারা ধৈর্য ধারণ করেছিলাে।’ অর্থাৎ যারা ইতিপূর্বেও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং পুনরায় শুধুমাত্র পড়া শুনেই কোরআনের প্রতি ঈমান এনেছে, তারা দুবার পুরস্কার পাবে। কেননা তারা ধৈর্য ধারণ করেছিলাে। এই ধৈর্য কয়েক রকমের। যেমন মনের ও দেহের একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণের ওপর এবং প্রবৃত্তির কামনা বাসনার ওপর ধৈর্য ধারণ, অর্থাৎ অবিচল থাকা ও শৈথিল্য প্রদর্শন না করা। আল্লাহর দ্বীনের ওপর প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকা ও টিকে থাকা। এই ধৈর্যের পুরস্কারস্বরূপ তাদের দু’বার পুরস্কার দেয়া হবে। কেননা এই ধৈর্য হচ্ছে মনের জন্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর প্রবৃত্তির কামনা বাসনা, লালসা বিকৃতি ও বিপথগামিতার ওপর ধৈর্যধারণ, অর্থাৎ তা থেকে নিজেকে রক্ষা করা হলাে সবচেয়ে কঠিন ধৈর্য । খৃষ্টান কাফেলার লােকেরা এসব কিছুর ওপর ধৈর্য ধারণ করেছিলাে। শুধু তাই নয়, তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ ও উত্যক্ত করার ওপরও ধৈর্য ধারণ করেছে। এ কথা ইতিপূর্বে বর্ণনায়ও উল্লেখ করা হয়েছে। আর গােমরাহ ও অজ্ঞ সমাজে সর্বকালে সর্বত্র দ্বীনের ওপর অবিচল লােকেরা এ ধরনের আচরণের শিকার হয়ে থাকে এবং তারা অন্যায় ও অসততাকে সততা ও ন্যায় দ্বারা প্রতিহত করে। এটাও এক ধরনের ধৈর্য। উপহাস ও উত্ত্যক্ত করার ওপর ধৈর্য ধারণের চেয়েও এটা কষ্টকর। এতে প্রথমত নিজের অহমিকা দমন করতে হয়, ঠাট্টা বিদ্রুপ, নির্যাতন ও উত্ত্যক্তকরণ প্রতিহত করার ইচ্ছা দমন করতে হয়, নির্যাতন নিপীড়নে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন এবং রাগ ও প্রতিশােধের ইচ্ছা দমন করতে হয়। এ সবের পর আরাে এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে উদারতা ও মহানুভবতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে হয়। খারাপ ব্যবহারের বিনিময়ে ভালাে ব্যবহার করতে হয়। মূৰ্খ ব্যাংগ বিদ্রুপকারীর জবাবে শান্ত থেকে মহত্ত্ব ও দয়া প্রদর্শন করতে হয়। এটা শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের এতাে উঁচু স্তর, যেখানে একমাত্র পূর্ণাংগ মােমেনরাই পৌছুতে পারে। একমাত্র সেই মােমেনরাই পৌছুতে পারে, যারা আল্লাহর সাথে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলেছে যে, তিনিও তাদের ওপর সন্তুষ্ট এবং তারাও তাঁর ওপর সন্তুষ্ট। ফলে তারা মানুষের সব ধরনের ব্যবহারে সন্তুষ্ট ও শান্ত থাকে। ‘এবং আমার দেয়া সম্পদ থেকে দান করো’ অর্থাৎ খারাপ ব্যবহারের বিনিময়ে ভালাে ব্যবহার দ্বারা মহত্ব ও মহানুভবতাই শুধু প্রদর্শন করে না, সেই সাথে অর্থ দান করার মাধ্যমেও মহানুভবতা ও বদান্যতা প্রদর্শন করো। বস্তুত এই দুই ধরনের মহানুভবতা একই উৎস থেকে, উদ্ভুত হয়ে থাকে। প্রথমটা আসে মনের আবেগ ও কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রণ করা থেকে যা মানুষের সত্ত্বার ভেতরেই বিদ্যমান। আর দ্বিতীয়টা আসে পার্থিব সহায় সম্পদের চেয়ে বৃহত্তর ও মূল্যবান সহায় সম্পদ অর্জন করা থেকে, যা একমাত্র অর্থ সম্পদ দ্বারাই লাভ করা যায়। প্রায়ই এই দুটো জিনিস কোরআনে এক সাথেই উল্লেখ করা হয়। ইসলামের ওপর অবিচল দৃঢ় প্রত্যয়ী মােমেনদের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলাে, যখন তারা কুরুচিপূর্ণ কথা শােনে, তখন তা এড়িয়ে যায় এবং বলে, ‘আমাদের কাজ আমাদের জন্যে এবং তােমাদের কাজ তােমাদের জন্যে। তােমাদের ওপর সালাম। আমরা অজ্ঞ লােকদের চাই না।’ ‘লাগউন’ শব্দের অর্থ হলাে অর্থহীন, অন্তসারশূন্য ও অনুপকারী কথা। এ ধরনের কথাবার্তা নিছক সময় নষ্ট করার শামিল। এ জাতীয় কথা হৃদয় ও বিবেককে নতুন কিছু উপহার দেয় না কিংবা এ দ্বারা কোনাে লাভজনক জ্ঞান অর্জিত হয় না। এ ধরনের কথাবার্তা নিছক আবেগ অনুভূতি ও জিহ্বাকে নষ্ট করে দেয়। চাই তা কোনাে উপস্থিত শ্রোতাকে বলা হােক কিংবা কোনাে অনুপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কেই বলা হােক। মুমিন ব্যক্তিরা কখনাে এ ধরনের অর্থহীন ও নিষ্প্রয়ােজন বাজে কথা বলেও না, শােনেও না। কেননা তারা ঈমানী দায়িত্ব পালনে সদা ব্যস্ত থাকে। একমাত্র ঈমানসম্মত রুচি তাদের সব সময় মহৎ কাজে ও মহৎ কথায় উদ্বুদ্ধ করে থাকে। ঈমানী জ্যোতিতে তারা সব সময় পবিত্র ও আলােকোদ্ভাসিত থাকে। ‘যখন তারা কোনাে কুরুচিপূর্ণ কথা শােনে, তখন তা এড়িয়ে যায়।’ অর্থাৎ ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয় না এবং কুরুচিপূর্ণ কথা যারা বলে, তাদের ওপর প্রতিশােধপরায়ণ হয়ে একই রকম কুরুচিপূর্ণ বা অর্থহীন কথা বলে না এবং তা নিয়ে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হয় না। কেননা কুরুচিপূর্ণ ও অর্থহীন কথা যারা বলে, তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হওয়াও কুরুচিপূর্ণ বাজে কাজ। তারা তাদের সালাম দিয়ে বিদায় নেয় এবং বলে, আমাদের কাজ আমাদের জন্যে এবং তােমাদের কাজ তােমাদের জন্যে। তােমাদের ওপর শাস্তি হােক। শিষ্টাচারের সাথে, কল্যাণ কামনার সাথে এবং হেদায়াতের আকাংখা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তারা এ কথা বলেছিলাে, কিন্তু সেই সাথে তারা তাদের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের অনিচ্ছাও প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ‘আমরা অজ্ঞ লােকদের সাথে জড়িত হতে চাই না।’ অর্থাৎ আমরা তাদের সাথে আমাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করা, তাদের আজেবাজে কাজে অংশ গ্রহণ করা কিংবা তা নীরবে শুনে যাওয়া- এর কোনােটাই চাই না। এ হচ্ছে সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী মােমেনদের মানসিকতার একটা বিশুদ্ধ রূপ। তারা আজেবাজে কথা, রুচি বিগর্হিত নিরর্থক কার্যকলাপের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেও মানুষের প্রতি উদার ও সহনশীল থাকে। যারা আল্লাহর শেখানাে শিষ্টাচারের অনুসারী হয়ে চায়, তাদের তারা শিষ্টাচারের নীতি পদ্ধতি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়। সে নীতি হলাে, অজ্ঞ ও অভদ্র লােকদের অপকর্মে অংশ গ্রহণও নয়, আবার তাদের সাথে ঝগড়া-লড়াইও নয়, তাদের সাথে প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক ও নয়, আবার তাদের সাথে বিরক্তিপূর্ণ আচরণ নয়; বরং তাদের কর্মকান্ড থেকে দূরে থেকে উদার আচরণ এবং সকলের জন্যে কল্যাণ কামনা, এমনকি অপরাধীর জন্যেও কল্যাণ কামনা করা।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫২-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর:

উক্ত আয়াতগুলোতে আহলে কিতাবদের ঐ সমস্ত ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানদের কথা বলা হয়েছে যারা তাদের নিকট আগত নাবী ও অবতীর্ণ কিতাবের ওপর ঈমান এনেছিল, তারা তাদের ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাওরাত ও ইনজিলের সুসংবাদ অনুপাতে তাদের বিশ্বাস ছিল মুহাম্মাদ নামে একজন সর্বশেষ নাবী আগমন করবেন । তাই যখন নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করলেন তখন বিলম্ব না করে পূর্ব জ্ঞান ও সুসংবাদ অনুপাতে তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনল, কুরআনের প্রতি ঈমান আনল এবং মুসিলমদের কাতারে শামিল হল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

( وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ)

“আর নিশ্চয়ই আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি ও তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।” (সূরা আলি ইমরান ৩:১৯৯)

(وَإِذَا يُتْلٰي عَلَيْهِمْ)

অর্থাৎ যখন তাদের সামনে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এর প্রতি ঈমান আনলাম এবং বিশ্বাস করলাম যে, এটা আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ কিতাব। এ কিতাব নাযিল হওয়ার পূর্ব থেকেই আমরা মুসলিম, আল্লাহ তা‘আলার একত্ববাদে বিশ্বাসী। এদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সকল ঈমানদারদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেয়া হবে। প্রথম প্রতিদানন তাদের নিকট আগত রাসূলের প্রতি ঈমান আনার কারণে, দ্বিতীয় প্রতিদানন মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনার কারণে। কারণ তারা দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে গিয়ে ধৈর্যধারণ করেছে। আর যখনই কোন কষ্টপ্রাপ্ত হয়েছে তখনই তারা প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তা ক্ষমা করে দেয়, মন্দকে ভাল দ্বারা প্রতিহত করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

(اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ ط نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُوْنَ)‏

“মন্দের মুকাবিলা কর‎ যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা মু’মিনূন ২৩:৯৬) এবং তাদেরকে যা রিযিক দেয়া হয় তারা তা থেকে আল্লাহ তা‘আলার পথে খরচ করে।

হাদীসে এসেছে: আবূ মূসা আশয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তিন শ্রেণির লোক যাদেরকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেয়া হবেন ১. আহলে কিতাবের যে ব্যক্তি তার নাবীর প্রতি ঈমান এনেছে এবং (আমাকে পাওয়ার পর) আমার প্রতি ঈমান এনেছে। ২. ঐ দাস যে আল্লাহ তা‘আলার হক আদায় করে এবং তার মালিকেরও হক আদায় করে। ৩. ঐ ব্যক্তি যার একটি দাসী রয়েছে। সে তাকে উত্তমভাবে আদব শিক্ষা দেয় অতঃপর স্বাধীন করে দেয় এবং সে তাকে বিবাহ করে নেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৯৭, মুসলিম হা: ১৫৪, ২৮১১)

আর তারা যখন কোন বেহুদা কথা শুনতে পায় সেখান থেকে বিমুখ হয় এবং সেখান থেকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَإِذَا مَرُّوْا بِاللَّغْوِ مَرُّوْا كِرَامًا)

“এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয় মর্যাদার সাথে সেটা পরিহার করে চলে।” (সূরা ফুরকান ২৫:৭২) এবং যারা মন্দ কর্মে লিপ্ত তাদের মন্দ থেকে ফিরে আসার নসীহত করে তথাপি যদি তারা ফিরে না আসে তাহলে তারা শুধু এ কথা বলে তাদেরকে সতর্ক করে দেয় যে, আমাদের আমল আমাদের জন্য আর তোমাদের আমলসমূহ তোমাদের জন্য।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ)

“তোমাদের দীন তোমাদের জন্যন আর আমার দীন আমার জন্য।” (সূরা কাফিরূন ১০৯:৬)

সুতরাং মু’মিনদের অন্যতম একটি গুণ হল তারা অসার কথা-বার্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে। দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কেউ মন্দ আচরণ করলে সুন্দর পন্থায় বিদায় দিয়ে চলে আসে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা তাদের নাবীর প্রতি ঈমান আনবে ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনবে তাদের প্রতিদান দ্বিগুণ।
২. বিপদে ধৈর্যধারণ করার ফযীলত অনেক।
৩. যেখানে অশ্লীল ক্রিয়াকলাপ হবে সেখান থেকে দূরে থাকতে হবে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# এর অর্থ এটা নয় যে, সমস্ত আহলি কিতাব (ইহুদী ও ঈসায়ী) এর প্রতি ঈমান আনে। বরং সূরা নাযিল হবার সময় যে ঘটনা ঘটেছিল এখানে আসলে সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মক্কাবাসীদেরকে এই মর্মে লজ্জা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, তোমাদের নিজেদের গৃহে যে নিয়ামত এসেছে তাকে তোমরা প্রত্যাখ্যান করছো। অথচ দূর দেশ থেকে লোকেরা এর খবর শুনে আসছে এবং এর মূল্য অনুধাবন করে এ থেকে লাভবান হচ্ছে।

ইবনে হিশাম ও বাইহাকী এবং অন্যরা এ ঘটনাকে মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বরাত দিয়ে নিন্মোক্তভাবে বর্ণনা করেছেনঃ আবিসিনিয়ায় হিজরাতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত প্রাপ্তি এবং তার দাওয়াতের খবর যখন সেই দেশে ছড়িয়ে পড়লো তখন সেখান থেকে প্রায় ২০ জনের একটি খৃস্টান প্রতিনিধি দল প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধানের জন্য মক্কা মু’আযযমায় এলো। তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে মসজিদে হারামে সাক্ষাৎ করলো। কুরাইশদের বহু লোকও এ ব্যাপার দেখে আশপাশে দাঁড়িয়ে গেলো। প্রতিনিধি দলের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু প্রশ্ন করলেন। তিনি সেগুলোর জবাব দিলেন। তারপর তিনি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন এবং কুরআন মজীদের আয়াত তাদের সামনে পাঠ করলেন। কুরআন শুনে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগলো। তারা একে আল্লাহর বাণী বলে অকুণ্ঠভাবে স্বীকার করলেন এবং নবীর ﷺ প্রতি ঈমান আনলেন। মজলিস শেষ হবার পর আবু জেহেল ও তার কয়েকজন সাথী প্রতিনিধিদলের লোকদেরকে পথে ধরলো এবং তাদেরকে যাচ্ছেতাই বলে তিরস্কার করলো। তাদেরকে বললো, “তোমাদের সফরটাতো বৃথাই হলো। তোমাদের স্বধর্মীয়রা তোমাদেরকে এজন্য পাঠিয়েছিল যে, এ ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে তোমরা যথাযথ অনুসন্ধান চালিয়ে প্রকৃত ও যথার্থ ঘটনা তাদেরকে জানাবে। কিন্তু তোমরা সবেমাত্র তার কাছে বসেছিলে আর এরই মধ্যেই নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে তাঁর প্রতি ঈমান আনলে? তোমাদের চেয়ে বেশী নির্বোধ কখনো আমরা দেখিনি।” একথায় তারা জবাব দিল, “ভাইয়েরা, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সাথে জাহেলী বিতর্ক করতে চাই না। আমাদের পথে আমাদের চলতে দাও এবং তোমার তোমাদের পথে চলতে থাকো। আমরা জেনে বুঝে কল্যাণ থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে পারি না।” ( সীরাতে ইবনে হিশাম , ২ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা এবং আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩ খণ্ড, ৮২ পৃষ্ঠা। আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা শূ’আরা, ১২৩ টীকা)
# এর আগেও আমরা নবীদের ও আসমানী কিতাবের আনুগত্য করে এসেছি। তাই ইসলাম ছাড়া আমাদের অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন যে নবী আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এনেছেন তাঁকেও আমরা মেনে নিয়েছি। কাজেই মূলত আমাদের দ্বীনের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং আগেও যেমন আমরা মুসলমান ছিলাম তেমনি এখনও মুসলমান আছি।

একথা থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, মুহাম্মাদ ﷺ যে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন কেবলমাত্র তার নামই ইসলাম নয় এবং “মুসলিম” পরিভাষাটি শুধুমাত্র নবী করীমের ﷺ অনুসারীগণ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। বরং সব সময় এ ইসলামই ছিল সকল নবীর দ্বীন এবং সব জামানায় তাঁদের সবার অনুসারীগণ মুসলমানই ছিলেন। এ মুসলমানরা যদি কখনো পরবর্তীকালে আগত কোন সত্য নবীকে মানতে অস্বীকার করে থাকে তাহলে কেবল তখনই তারা কাফের হয়ে গিয়ে থাকবে। কিন্তু যারা পূর্বের নবীকে মানতো এবং আগত নবীকে মেনে নিয়েছে তাদের ইসলামে কোন ছেদ পড়েনি। তারা পূর্বেও যেমন মুসলমান ছিল, পরেও তেমনি থেকেছে।

আশ্চর্যের কথা, বড় বড় জ্ঞানী গুণী ও আলেমদের মধ্যেও কেউ কেউ এ সত্যটি অনুধাবন করতে অক্ষম হয়েছেন। এমনকি এ সুস্পষ্ট আয়াতটি দেখেও তাঁরা নিশ্চিন হননি। আল্লামা সুয়ুতী “মুসলিম” পরিভাষাটি কেবলমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের সাথেই বিশেষভাবে জড়িত এ মর্মে বিস্তারিত আলোচনা সম্বলিত একটি বই লিখেছেন। তারপর যখন এ আয়াতটি সামনে এসেছে তখন নিজেই বলেছেন, এখন তো আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেছে। কিন্তু এরপর বলেছেন, আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করলাম এ মর্মে যে, এ ব্যাপারে আমার হৃদয় প্রসারিত করে দাও। শেষে নিজের অভিমত প্রত্যাহার করার পরিবর্তে তিনি তারই ওপর জোর দিয়েছেন এবং আয়াতটির কয়েকটি ব্যাখ্যা পেশ করেছেন। এ ব্যাখ্যাগুলোর একটি অন্যটির চেয়ে বেশি ওজনহীন। যেমন তাঁর একটি ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ إِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আমরা কুরআন আসার আগেই মুসলিম হয়ে যাবার সংকল্প পোষণ করতাম। কারণ আমাদের কিতাবসমূহ থেকে আমরা এর আসার খবর পেয়ে গিয়েছিলাম এবং আমাদের সংকল্প ছিল, তিনি আসলেই আমরা ইসলাম গ্রহণ করে নেব। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে, এ বাক্যাংশে مُسْلِمِينَ শব্দের পরে به শব্দ উহ্য রয়েছে। অর্থ্যাৎ আগে থেকেই আমরা কুরআন মানতাম। কারণ আমরা তার আগমনের আশা পোষণ করতাম এবং পূর্বাহ্ণেই তাঁর প্রতি ঈমান এনে বসেছিলাম। তাই তাওরাত ও ইন্‌জিল মানার ভিত্তিতে নয় বরং কুরআনকে তাঁর নাযিল হবার পূর্বে যথার্থ সত্য বলে মেনে নেবার জন্যই আমরা মুসলিম ছিলাম। তৃতীয় ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ আল্লাহর তকদীরে পূর্বেই আমাদের জন্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল যে, মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরআনের আগমনে আমরা ইসলাম গ্রহণ করে নেবো। তাই আসলে আমরা আগে থেকেই মুসলিম ছিলাম। এই ব্যাখ্যাগুলোর মধ্য থেকে কোনটি দেখে আল্লাহ‌ প্রদত্ত হৃদয়ের প্রশস্ততার কোন প্রভাব সেখানে আছে বলে মনে হচ্ছে না।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, কুরআন কেবলমাত্র এই একটি স্থানেই নয় বরং অসংখ্য জায়গায় এ সত্য বর্ণনা করেছে। কুরআন বলছে, আসল দ্বীন হচ্ছে একমাত্র “ইসলাম” (আল্লাহর আনুগত্য) এবং আল্লাহর বিশ্ব-জাহানে আল্লাহর সৃষ্টির জন্য এছাড়া দ্বিতীয় কোন দ্বীন হতে পারে না। সৃষ্টির প্রথম দিন থেকে যে নবীই মানুষকে পথ নির্দেশ দেবার জন্য এসেছেন তিনি এ দ্বীন নিয়েই এসেছেন। আর নবীগণ হামেশাই নিজেরা মুসলিম থেকেছেন, নিজেদের অনুসারীদেরকে মুসলিম হয়ে থাকার তাগিদ করেছেন এবং তাঁদের যেসব অনুসারী নবুওয়াতের মাধ্যমে আগত আল্লাহর ফরমানের সামনে আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছেন তারাও প্রতি যুগে মুসলিমই ছিলেন। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত স্বরূপ শুধুমাত্র গুটিকয় আয়াত পেশ করছিঃ

إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ

“আসলে আল্লাহর কাছে ইসলামই একমাত্র দ্বীন।” (আল ইমরানঃ ১৯)

وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন অবলম্বন করে তা কখনো গৃহীত হবে না।” (আল ইমরানঃ ৮৫)

হযরত নূহ আলাইহিস সালাম বলেনঃ

إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِين

“আমার প্রতিদান দেবার দায়িত্ব তো আল্লাহর এবং আমাকে হুকুম দেয়া হয়েছে আমি যেন মুসলিমদের মধ্যে শামিল হয়ে যাই।” (ইউনুসঃ ৭২)

হযরত ইবরাহীম আলাহহিস সালাম এবং তাঁর সন্তানদের সম্পর্কে বলা হয়

إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ – وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَا بَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمُ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ – أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِنْ بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَهَكَ وَإِلَهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

“যখন রব তাঁকে বললেন, মুসলিম (ফরমানের অনুগত) হয়ে যাও, সে বললো আমি মুসলিম হয়ে গেলাম রব্বুল আলামীনের জন্য। আর এ জিনিসটিরই অসিয়াত করে ইবরাহীম তাঁর সন্তানদেরকে এবং ইয়াকুবওঃ হে আমার সন্তানরা! আল্লাহ‌ তোমাদের জন্য এ দ্বীনটিই পছন্দ করেছেন। কাজেই মুসলিম না হয়ে তোমরা কখনো মৃত্যুবরণ করো না। তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে যখন ইয়াকূবের মৃত্যুর সময় এসে গিয়েছিল, যখন সে তাঁর পুত্রদের জিজ্ঞেস করেছিল, আমার মৃত্যুর পর তোমরা কার বন্দেগী করবে? তারা জবাব দিয়েছিল আমরা বন্দেগী করবো আপনার মাবুদের এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাকের মাবুদের, তাঁকে একক মাবুদ হিসেবে মেনে নিয়ে। আর আমরা তাঁরই অনুগত মুসলিম।” (আল বাকারাহঃ ১৩১-১৩৩)

مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا

“ইবরাহীম ইহুদী ছিল না, খৃস্টানও ছিল না বরং একনিষ্ট মুসলিম।” (আলে ইমরানঃ ৬৭)

হযরত ইবরাহীম (আ) ও ইসমাইল (আ) নিজেই দোয়া করেনঃ

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُسْلِمَةً لَكَ

“হে আমাদের রব! আমাকে তোমার মুসলিম (অনুগত) করো এবং আমাদের বংশ থেকে একটি উম্মত সৃষ্টি করো যে হবে তোমার মুসলিম।” (আল বাকারাহঃ ১২৮)

হযরত লূতের কাহিনীতে বলা হচ্ছে

فَمَا وَجَدْنَا فِيهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“আমরা লূতের জাতির জনপদে একটি ঘর ছাড়া মুসলমানদের আর কোন ঘর পাইনি।” (আয-যারিয়াতঃ ৩৬)

হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম মহিমান্বিত রবের দরবারে নিবেদন করেন

تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ

“আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দান করো এবং সৎকর্মশীলদের সাথে মিলিয়ে দাও।” (ইউসুফঃ ১০১)

হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর নিজের জাতিকে বলেনঃ

يَا قَوْمِ إِنْ كُنْتُمْ آمَنْتُمْ بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِنْ كُنْتُمْ مُسْلِمِينَ “হে আমার জাতি! যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাকো, তাহলে তাঁরই ওপর ভরসা করো যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাকো।” (ইউনূসঃ ৮৪)

বনী ইসরাঈলের আসল ধর্ম ইহুদীবাদ নয় বরং ইসলাম ছিল। বন্ধু ও শত্রু সবাই একথা জানতো। কাজেই ফেরাউন সাগরে ডুবে যেতে যেতে যে শেষ কথাটি বলে তা হচ্ছেঃ

آمَنْتُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“আমি মেনে নিলাম বনী ইসরাঈল যার প্রতি ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (ইউনূসঃ ৯০) বনী ইসরাঈলের সকল নবীর দ্বীনও ছিল এ ইসলাম

إِنَّا أَنْزَلْنَا التَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا النَّبِيُّونَ الَّذِينَ أَسْلَمُوا لِلَّذِينَ هَادُوا

“আমি তাওরাত নাযিল করেছি, যাতে ছিল হিদায়াত ও আলো, সে অনুযায়ী সে নবীগণ যারা মুসলিম ছিল তাদের বিষয়াদির ফায়সালা করতো যারা ইহুদী হয়ে গিয়েছিল।” (আল মায়েদাহঃ ৪৪)

এটিই ছিল হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের দ্বীন। সেজন্য সাবার রাণী তাঁর প্রতি ঈমান আনতে গিয়ে বলেছেন

أَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ‌ রব্বুল আলামীনের মুসলিম হয়ে গেলাম।” (আন্‌ নাম্‌লঃ ৪৪)

আর এটিই ছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর হাওয়ারীদের (সহযোগী) দ্বীনঃ وَإِذْ أَوْحَيْتُ إِلَى الْحَوَارِيِّينَ أَنْ آمِنُوا بِي وَبِرَسُولِي قَالُوا آمَنَّا وَاشْهَدْ بِأَنَّنَا مُسْلِمُونَ

“আর যখন আমি হাওয়ারীদের কাছে ওহী পাঠালাম এ মর্মে যে, ঈমান আনো আমার প্রতি এবং আমার রসূলের প্রতি তখন তারা বললো, আমরা ঈমান এনেছি এবং সাক্ষী থাকো আমরা মুসলিম।” (আল মায়েদাহঃ ১১১)

যদি সন্দেহ পোষণ করা হয় যে, আরবী ভাষায় “ইসলাম” ও “মুসলিম” শব্দ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন ভাষায় কেমন করে ব্যবহৃত হতে পারতো, তাহলে বলতে হয় যে, এটা নিছক একটা অজ্ঞতাপ্রসূত কথা। কারণ এ আরবী শব্দগুলো আসল বিবেচ্য নয়, আরবী ভাষায় এ শব্দগুলো যে অর্থে ব্যবহৃত হয় সেটিই মূল বিবেচ্য বিষয়। আসলে এ আয়াতগুলোতে যে কথাটি বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে এই যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে প্রকৃত দ্বীনটি এসেছে তা খৃস্টবাদ, মূসাবাদ বা মুহাম্মাদবাদ নয় বরং তা হচ্ছে নবীগণ ও আসমানী কিতাবসমূহের মাধ্যমে আগত আল্লাহর ফরমানের সামনে আনুগত্যের শির নত করে দেয়া এবং এ নীতি আল্লাহর যে বান্দা যেখানেই যে যুগে অবলম্বন করেছে সে হয়েছে একই বিশ্বজনীন, আদি ও সত্য চিরন্তন সত্য দ্বীনের অনুসারী। যারা এ দ্বীনকে যথার্থ সচেতনতা ও আন্তরিকতা সহকারে গ্রহণ করেছে তাদের জন্য মূসার পরে ঈসাকে এবং ঈসার পরে মুহাম্মাদ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেনে নেয়া ধর্ম পরিবর্তন করা হবে না বরং হতে হবে প্রকৃত ও আসল ধর্মের অনুসরণ করার স্বাভাবিক ও ন্যায়সঙ্গত দাবী। পক্ষান্তরে যারা আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের উম্মতের মধ্যে না জেনে বুঝে ঢুকে পড়েছে অথবা তাদের দলে জন্ম নিয়েছে এবং জাতীয় ও বংশীয় স্বার্থপ্রীতি যাদের জন্য আসল ধর্মে পরিণত হয়ে গেছে তারা ইহুদী ও খৃস্টান হয়ে রয়ে গেছে এবং মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনে তাদের মূর্খতা ও অজ্ঞতার হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে গেছে। কারণ তারা আল্লাহর শেষ নবীকে অস্বীকার করেছে। আর এটা করে তারা শুধু যে নিজেদের ভবিষ্যতে মুসলিম হয়ে থাকাকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাই নয় বরং নিজেদের এ কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করে দিয়েছে যে, তারা আসলে ইতিপূর্বেও “মুসলিম” ছিল না নিছক একজন নবীর বা কয়েকজন নবীর ব্যক্তিত্বের ভক্ত ও অনুরক্ত ছিল। অথবা পিতা-প্রপিতার অন্ধ অনুকরণকে ধর্মীয় আচারে পরিণত করে রেখেছিল।”
# একটি পারিশ্রমিক দেয়া হবে সাইয়েদিনা ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ইতিপূর্বে যে ঈমান রাখতো সেজন্য এবং দ্বিতীয় পারিশ্রমিকটি দেয়া হবে এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান আনার জন্য। একথাটিই একটি হাদীসে ব্যক্ত করা হয়েছে। হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবু মূসা আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। নবী ﷺ বলেছেনঃ

ثَلاَثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّهِ ، وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ…………..

“তিন ব্যক্তি দ্বিগুণ প্রতিদান পাবে। তাদের একজন হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যে আহলি কিতাবের অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং নিজের নবীর প্রতি ঈমান রাখতো, তারপর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিও ঈমান আনে।”
# তাদের এ দ্বিগুণ প্রতিদান লাভ করার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা জাতীয়, বংশীয়, দলীয় ও স্বদেশের স্বার্থপ্রীতি মুক্ত থেকে দ্বীনের ওপর অবিচল ছিল এবং নতুন নবীর আগমনে যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাতে প্রমাণ করে দিয়েছিল যে, আসলে তারা ঈসা পূজারী নয় বরং আল্লাহর পূজারী ছিল। তারা ব্যক্তি ঈসার ভক্ত-অনুরক্ত ছিল না বরং ছিল “ইসলামের” আনুগত্যকারী। এ কারণে ঈসার পর যখন অন্য নবী ঈসার মতো সেই একই ইসলাম নিয়ে এলেন তখন তারা দ্বিধাহীন চিত্তে তাঁর নেতৃত্বে ইসলামের পথ অবলম্বন করলো এবং যারা খৃস্টবাদের ওপর অবিচল ছিল তাদের পথ পরিহার করলো।
# তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয় বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। জুলুমকে জুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়।
# তারা সত্যের পথে সম্পদ উৎসর্গও করে। সম্ভবত এখানে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তারা নিছক সত্যের সন্ধানে হাব্‌শা থেকে সফর করে মক্কায় এসেছিল। এ পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয়ের পেছনে তাদের কোন বৈষয়িক লাভের উদ্দেশ্য ছিল না। তারা যখন শুনলো মক্কায় এক ব্যক্তি নবুওয়াতের দাবী করেছেন তখন তারা নিজেরা সশরীরে এসে অনুসন্ধান চালনো জরুরী মনে করল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, এভাবে অনুসন্ধানের পর যদি প্রমাণিত হয় তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত একজন সত্য নবী, তাহলে তারা তাঁর প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর থেকে পথনির্দেশনা লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকবে না।
# আবু জেহেল ও তার সাথীরা হাবশার খৃস্টান প্রতিনিধি দলের সাথে যেসব আজে বাজে কথা বলেছিল সেদিকে ইশারা করা হয়েছে। উপরে ৭২ টীকায় এ বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৫২-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর

আহলে কিতাবের আলেমগণ, যারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রিয়পাত্র ছিলেন, তাঁদের গুণাবলী বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা কুরআনকে মেনে চলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যাদেরকে আমি কিতাব দান করেছি তারা ওটাকে সঠিকভাবে পাঠ করে থাকে, তারা ওর উপর ঈমান আনয়ন করে।” (২:১২১) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আহলে কিতাবের মধ্যে অবশ্যই এমন লোকও আছে যারা আল্লাহ্র উপর ঈমান আনয়ন করে এবং তোমাদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তাদের উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, এসবগুলোর উপরই বিশ্বাস স্থাপন করে, আর তারা আল্লাহর নিকট বিনীত হয়।” (৩:১৯৯) অন্য এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যাদেরকে এর পূর্বে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের নিকটে যখন এটা পাঠ করা হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। আর বলে- আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে।” (১৭:১০৭-১০৮) আর একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব হিসেবে সমস্ত লোক হতে বেশী নিকটতম ঐ লোকদেরকে তুমি পাবে যারা বলে- আমরা নাসারা, এটা এই কারণে যে, তাদের মধ্যে আলেম ও বিবেকবান লোকেরা রয়েছে, তারা অহংকার ও দাম্ভিকতা শূন্য এবং তারা কুরআন শুনে কেঁদে ফেলে ও বলে ওঠেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি, সুতরাং (ঈমানের) সাক্ষ্যদাতাদের সাথে আমাদের নাম লিখে নিন।” (৫:৮২-৮৩)।

হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যাদের ব্যাপারে এটা অবতীর্ণ হয়েছে তাঁরা ছিলেন সত্তরজন খৃষ্টান আলেম। তারা আবিসিনিয়ার বাদশাহ্ নাজ্জাশী কর্তৃক প্রেরিত প্রতিনিধি ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে সূরায়ে ‘ইয়াসীন’ শুনিয়ে দেন। শোনা মাত্রই তাঁরা কান্নায় ফেটে পড়েন এবং সাথে সাথেই মুসলমান হয়ে যান। তাঁদের ব্যাপারেই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। এখানে তাদেরই প্রশংসা করা হয় যে, আয়াতগুলো শোনা মাত্রই তাঁরা। নিজেদেরকে খাটি একত্ববাদী ঘোষণা করেন এবং ইসলাম কবূল করে মুমিন ও মুসলমান হয়ে যান। তাঁদের ব্যাপারেই আল্লাহ পাক বলেনঃ তাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে। প্রথম পুরস্কার তাঁদের নিজেদের কিতাবের উপর ঈমান আনয়নের কারণে এবং দ্বিতীয় পুরস্কার কুরআনকে বিশ্বাস করে নেয়ার কারণে। তাঁরা সত্যের অনুসরণে অটল থাকেন, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বড় কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

সহীহ্ হাদীসে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তিন প্রকারের লোককে দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া হবে। প্রথম হলো ঐ আহলে কিতাব যে নিজের নবীকে মেনে নেয়ার পর আমার উপরও ঈমান আনে। দ্বিতীয় হলো ঐ গোলাম যে নিজের পার্থিব মনিবের আনুগত্য করার পর আল্লাহর হকও আদায় করে। তৃতীয় হলো ঐ ব্যক্তি, যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। তাকে আদব ও বিদ্যা শিক্ষা দেয়। অতঃপর তাকে আযাদ করে দিয়ে বিয়ে করে নেয়।”

হযরত কাসেম ইবনে আবি উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “মক্কা বিজয়ের দিন আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সওয়ারীর সাথে ছিলাম এবং তাঁর খুবই নিকটে ছিলাম। তিনি খুবই ভাল ভাল কথা বলেন। সেদিন তিনি একথাও বলেনঃ “ইয়াহুদী ও নাসারার মধ্যে যে মুসলমান হয়ে যায় তার জন্যে দ্বিগুণ পুরস্কার। তার জন্যে আমাদের সমান (অর্থাৎ সাধারণ মুসলমানের সমান অধিকার রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তাঁদের গুণ বর্ণনা করছেন যে, তারা মন্দের প্রতিদান মন্দ দ্বারা গ্রহণ করেন না, বরং ক্ষমা করে দেন। তাঁদের সাথে যারা মন্দ ব্যবহার করে তাদের সাথে তারা উত্তম ব্যবহারই করে থাকেন। তাদের হালাল ও পবিত্র জীবিকা হতে তারা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকেন, নিজেদের সন্তানদেরকেও লালন পালন করেন, দান-খয়রাত করার ব্যাপারেও তারা কার্পণ্য করেন না এবং বাজে ও অসার কার্যকলাপ হতে তারা দূরে থাকেন। যারা অসার কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে তাদের সাথে তারা বন্ধুত্ব করেন না। তাদের মজলিস হতে তারা দূরে থাকেন। ঘটনাক্রমে সেখান দিয়ে হঠাৎ গমন করলে ভদ্রভাবে তারা সেখান হতে সরে পড়েন। এইরূপ লোকদের সাথে তারা মেলামেশা করেন না এবং তাদের সাথে ভালবাসাও রাখেন না। পরিষ্কারভাবে তাদেরকে বলে দেনঃ “আমাদের কাজের ফল আমাদের জন্যে এবং তোমাদের কাজের ফল তোমাদের জন্যে। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সঙ্গ চাই না।” অর্থাৎ তারা অজ্ঞদের কঠোর ভাষাও সহ্য করে নেন। তাদেরকে এমন জবাব দেন না যাতে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে যায়। বরং তারা তাদের অপরাধ ক্ষমা করে থাকেন। যেহেতু তারা নিজেরা পাক-পবিত্র, সেহেতু মুখ দিয়ে পবিত্র কথাই বের করে থাকেন।

ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, আবিসিনিয়া হতে প্রায় বিশ জন খৃষ্টান রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন এবং তাঁর সাথে আলাপ আলোচনা শুরু করেন। ঐ সময় কুরায়েশরা নিজ নিজ মজলিসে কাবা ঘরের চতুর্দিকে বসেছিল। ঐ খৃষ্টান আলেমগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর পেয়ে যান। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং কুরআন কারীম পাঠ করে শুনিয়ে দেন। তাঁরা ছিলেন শিক্ষিত ও ভদ্র এবং তাঁদের মস্তিষ্ক ছিল প্রখর। তাই কুরআন কারীম তাঁদের মনকে আকৃষ্ট করলো এবং তাদের চক্ষুগুলো অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ তারা দ্বীন ইসলাম কবুল করে নিলেন। তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর ঈমান আনয়ন করলেন। কেননা, আসমানী কিতাবসমূহে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যেসব বিশেষণ তারা পড়েছিলেন সেগুলোর সবই তার মধ্যে বিদ্যমান পেয়েছিলেন। যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে বিদায় নিয়ে চলতে শুরু করেন তখন অভিশপ্ত আবূ জেহেল তার লোকজনসহ পথে তাদের সাথে মিলিত হয় এবং তাদেরকে বিদ্রুপ করতে থাকে। তারা তাদেরকে বলেঃ “তোমাদের ন্যায় জঘন্যতম প্রতিনিধি আমরা কখনো কোন কওমের মধ্যে দেখিনি। তোমাদের কওম তোমাদেরকে এই লোকটির (হযরত মুহাম্মদের সঃ) অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে এখানে পাঠিয়েছিলেন। এখানে এসেই তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষদের ধর্ম ত্যাগ করে দিলে এবং এই লোকটির প্রভাব তোমাদের উপর এমনভাবে পড়ে যায় যে, অল্পক্ষণের মধ্যেই তোমরা তোমাদের নিজেদের ধর্ম পরিত্যাগ করে তার ধর্ম গ্রহণ করে বসলে। সুতরাং তোমাদের চেয়ে বড় আহমক আর কেউ আছে কি?” তারা ঠাণ্ডা মনে তাদের কথাগুলো শুনলেন এবং উত্তরে বললেনঃ “আমরা তোমাদের সাথে অজ্ঞতামূলক আলোচনা করতে চাই না। আমাদের ধর্ম আমাদের সাথে এবং তোমাদের ধর্ম তোমাদের সাথে। আমরা যে কথার মধ্যে আমাদের কল্যাণ নিহিত পেয়েছি সেটাই আমরা কবুল করে নিয়েছি।” একথাও বলা হয়েছে যে, তাঁরা ছিলেন নাজরানের খৃষ্টান প্রতিনিধি। এই ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। এটাও বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতগুলো তাদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। হযরত যুহরী (রঃ)-কে এ আয়াতগুলোর শানে নুযূল জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “আমি তো আমার আলেমদের থেকে শুনে আসছি যে, এ আয়াতগুলো নাজ্জাশী ও তাঁর সাথীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে এবং সূরায়ে মায়েদার (আরবি) হতে (আরবি) (৫:৮২-৮৩) পর্যন্ত এই আয়াতগুলোও তাঁদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1015)
[The Believers among the People of the Book :-]
www.motaher21.net
Sura:28
Para:20
Sura: Al-Qasas
Ayat: 52-55
28:52

اَلَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلِہٖ ہُمۡ بِہٖ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۵۲﴾

Those to whom We gave the Scripture before it – they are believers in it.

 

The Believers among the People of the Book

Allah tells:

الَّذِينَ اتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِن قَبْلِهِ هُم بِهِ يُوْمِنُونَ

Those to whom We gave the Scripture before it, they believe in it.

Allah tells us that the pious scholars among the People of the Book believe in the Qur’an, as He says:

الَّذِينَ اتَيْنَـهُمُ الْكِتَـبَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَوَتِهِ أُوْلَـيِكَ يُوْمِنُونَ بِهِ

Those to whom We gave the Book recite it as it should be recited, they are the ones who believe therein. (2:121)

وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَـبِ لَمَن يُوْمِنُ بِاللَّهِ وَمَأ أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَأ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَـشِعِينَ للَّهِ

And there are, certainly, among the People of the Scripture, those who believe in Allah and in that which has been revealed to you, and in that which has been revealed to them, humbling themselves before Allah. (3:199)

قُلْ ءَامِنُواْ بِهِ أَوْ لَا تُوْمِنُواْ إِنَّ الَّذِينَ أُوتُواْ الْعِلْمَ مِن قَبْلِهِ إِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ يَخِرُّونَ لِلٌّذْقَانِ سُجَّدًا

وَيَقُولُونَ سُبْحَانَ رَبِّنَأ إِن كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولاً

Verily, those who were given knowledge before it, when it is recited to them, fall down on their faces in humble prostration. And they say:”Glory be to our Lord! Truly, the promise of our Lord must be fulfilled.” (17:107-108)

وَلَتَجِدَنَّ أَقْرَبَهُمْ مَّوَدَّةً لِّلَّذِينَ امَنُواْ الَّذِينَ قَالُوَاْ إِنَّا نَصَارَى ذَلِكَ بِأَنَّ مِنْهُمْ قِسِّيسِينَ وَرُهْبَانًا وَأَنَّهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ

وَإِذَا سَمِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ الْحَقِّ يَقُولُونَ رَبَّنَا امَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
… and you will find the nearest in love to the believers those who say:”We are Christians.” That is because among them are priests and monks, and they are not proud.

And when they listen to what has been sent down to the Messenger, you see their eyes overflowing with tears because of the truth they have recognized.

They say:”Our Lord! We believe; so write us down among the witnesses.” (5:82-83)

Sa`id bin Jubayr said,

“This was revealed concerning seventy priests who were sent by An-Najashi (ruler of Ethiopia). When they came to the Prophet, he recited to them:

يس

وَالْقُرْءَانِ الْحَكِيمِ
Ya Sin. By the Qur’an, full of wisdom. (36:1-2) until he completed the Surah.

They began to weep, and they embraced Islam.

These other Ayat were revealed concerning them:

الَّذِينَ اتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِن قَبْلِهِ هُم بِهِ يُوْمِنُونَ

وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا امَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ

28:53

وَ اِذَا یُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا بِہٖۤ اِنَّہُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّنَاۤ اِنَّا کُنَّا مِنۡ قَبۡلِہٖ مُسۡلِمِیۡنَ ﴿۵۳﴾

And when it is recited to them, they say, “We have believed in it; indeed, it is the truth from our Lord. Indeed we were, [even] before it, Muslims [submitting to Allah ].”

 

Those to whom We gave the Scripture before it, they believe in it.

And when it is recited to them, they say:”We believe in it. Verily, it is the truth from our Lord. Indeed even before it we have been from Muslims.”

meaning, `even before the Qur’an came we were Muslims, i.e., we believed in One God and were sincerely responding to Allah’s commands.

28:54

اُولٰٓئِکَ یُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَہُمۡ مَّرَّتَیۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۵۴﴾

Those will be given their reward twice for what they patiently endured and [because] they avert evil through good, and from what We have provided them they spend.

 

أُوْلَيِكَ يُوْتَوْنَ أَجْرَهُم مَّرَّتَيْنِ بِمَا صَبَرُوا

These will be given their reward twice over, because they are patient,

means, those who have this characteristic — that they believed in the first Book and then in the second.

Allah says:

بِمَا صَبَرُوا
(because they are patient), meaning, in their adherence to the truth, for taking such thing upon oneself is not easy for people.

It was reported in the Sahih from the Hadith of Amir Ash-Sha`bi from Abu Burdah that Abu Musa Al-Ash`ari, may Allah be pleased with him, said that the Messenger of Allah said:

ثَلَثَةٌ يُوْتَوْنَ أَجْرَهُمْ مَرَّتَيْنِ

رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ امَنَ بِنَبِيِّهِ ثُمَّ امَنَ بِي

وَعَبْدٌ مَمْلُوكٌ أَدَّى حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوَالِيهِ

وَرَجُلٌ كَانَتْ لَهُ أَمَةٌ فَأَدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا

There are three who will be given their reward twice:

a man among the People of the Book who believed in his Prophet then believed in me;

a slave who fulfills his duty towards Allah and towards his master; and

a man who has a slave woman and educates her and teaches her good manners, then he frees her and marries her.

Imam Ahmad recorded that Abu Umamah said:

“On the day of the Conquest (of Makkah) I was walking alongside the Messenger of Allah as he was riding, and he said some very beautiful words, including the following:

مَنْ أَسْلَمَ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابَيْنِ فَلَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ وَلَهُ مَا لَنَا وَعَلَيْهِ مَا عَلَيْنَا وَمَنْ أَسْلَمَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَلَهُ أَجْرُهُ وَلَهُ مَا لَنَا وَعَلَيْهِ مَا عَلَيْنَا

Whoever among the people of the two Books becomes Muslim, he will have his reward twice, and he has the same rights and duties as we do. Whoever among the idolators becomes Muslim will have one reward, and he has the same rights and duties as we do.”

Allah’s saying:

وَيَدْرَوُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّيَةَ

and repel evil with good,

means, they do not respond to evil in kind, rather they forgive and overlook.

وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

and spend out of what We have provided for them.

meaning, `from the lawful provision that We have given them, they spend on their families and relatives as they are required to do, and they pay Zakah and give voluntary charity.

28:55

وَ اِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡہُ وَ قَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ ۫ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ ۫ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰہِلِیۡنَ ﴿۵۵﴾

And when they hear ill speech, they turn away from it and say, “For us are our deeds, and for you are your deeds. Peace will be upon you; we seek not the ignorant.”

 

وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ

And when they hear evil vain talk, they withdraw from it,

meaning, they do not mix with the people who indulge in such talk, rather they do as Allah says:

وَإِذَا مَرُّواْ بِاللَّغْوِ مَرُّواْ كِراماً

and if they pass by some evil vain talk, they pass by it with dignity. (25:72)

وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَمٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ

and they say:”To us our deeds, and to you your deeds. Peace be to you. We seek not (the way of) the ignorant.”

means, if some foolish person speaks to them in a foolish manner and says something to which it does not befit them to respond, they turn away from him and do not respond in kind with ugly speech. They never say anything but good words. Allah says of them that they say:
لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَمٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
(To us our deeds, and to you your deeds. Peace be to you. We seek not (the way of) the ignorant),

meaning, `we do not seek the way of the ignorant and we do not like it.

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply