أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০২৪)
[ ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার একটি মূলনীতি:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ২৯:আল-আনকাবুত
পারা:২১
৪৬ নং আয়াত:-
২৯:৪৬
وَ لَا تُجَادِلُوۡۤا اَہۡلَ الۡکِتٰبِ اِلَّا بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ٭ۖ اِلَّا الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡہُمۡ وَ قُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا بِالَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡنَا وَ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ وَ اِلٰـہُنَا وَ اِلٰـہُکُمۡ وَاحِدٌ وَّ نَحۡنُ لَہٗ مُسۡلِمُوۡنَ ﴿۴۶﴾
আর উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া আহলে কিতাবের সাথে বিতর্ক করো না, তবে তাদের মধ্যে যারা জালেম তাদেরকে বলো, “আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছে তার প্রতি এবং তোমাদের প্রতি যা পাঠানো হয়েছিল তার প্রতিও, আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা তারই আদেশ পালনকারী।”
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৪৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আলোচ্য আয়াতে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়ার একটি মূলনীতি বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ করে যদি তারা আহলে কিতাব হয় তাহলে এ নীতির দিকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ তারা আসমানী কিতাব প্রাপ্ত, তাদের কাছে জ্ঞান রয়েছে। সূরা নাহলে মুশরিকদের সাথেও অনুরূপ নীতি অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যখন মানুষকে দীনের পথে আহ্বান করবে তখন নম্র-ভদ্রভাবে সুন্দর কথাবার্তার দ্বারা তাদেরকে ডাকবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَقُوْلَا لَه۫ قَوْلًا لَّيِّنًا لَّعَلَّه۫ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشٰي)
‘তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।’ (সূরা ত্বা-হা- ২০:৪৪)
তবে যদি সীমালঙ্ঘন করে অর্থাৎ আহলে কিতাবরা দাওয়াত কবূল না করে, উল্টো খারাপ আচরণ করে তাহলে তাদেরকে বলবে: ‘আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তাতে আমরা ঈমান এনেছি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই এবং আমরা তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণকারী।’ এসম্পর্কে সূরা নাহলের ১২৫ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(مُسْلِمُوْنَ ….. وَقُوْلُوْآ اٰمَنَّا بِالَّذِيْ)
অর্থাৎ হে আহলে কিতাবরা! তোমরা জান তোমাদের ও আমাদের মা‘বূদ একজন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। আমরা তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। সুতরাং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(قُلْ يٰٓأَهْلَ الْكِتٰبِ تَعَالَوْا إِلٰي كَلِمَةٍ سَوَا۬ءٍۭ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللّٰهَ وَلَا نُشْرِكَ بِه۪ شَيْئًا وَّلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ ط فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُوْلُوا اشْهَدُوْا بِأَنَّا مُسْلِمُوْنَ)
“বলুন, হে আহলে কিতাবরা! তোমরা আস এমন একটি কালেমার দিকে যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে সমান, তা হল, আমরা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কারো ইবাদত করব না এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ অপর কাউকে রব হিসেবে গ্রহণ করবে না। এরপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলে দাও, তোমরা সাক্ষী থাক যে, আমরা মুসলিম।” (সূরা আলি ইমরান ৩:৬৪)
হাদীসে এসেছে: আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আহলে কিতাবগণ ইবরানী ভাষায় তাওরাত পাঠ করত আর মুসলিমদের জন্য তার তাফসীর করত আরবি ভাষায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা আহলে কিতাবদেরকে সত্যও মনে কর না, মিথ্যাও মনে কর না। বরং তোমরা বল, আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি, আমাদের নিকট যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি এবং আহলে কিতাবের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান এনেছি। আর আমাদের প্রভু ও তোমাদের প্রভু একই প্রভু, এবং আমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণকারী। (সহীহ বুখারী হা: ৪৪৮৫, ৭৩৬২, ৭৫৪২)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলামে কোন বাড়াবাড়ি নেই, কাউকে বাধ্য করে ইসলামে প্রবেশ করানোর নির্দেশ নেই।
২. ইসলামের সত্যতা তুলে ধরার পরেও কেউ দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলে তার দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলার।
৩. আহলে কিতাবদের কোন বাণী শুনলে তা সত্য বা মিথ্যা কোনটাই মনে করা যাবে না।
৪. সকলের সত্যিকার উপাস্য একজনই তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# উল্লেখ্য, সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে এ সূরায় হিজরত করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সে সময় হাবশাই ছিল মুসলমানদের পক্ষে হিজরত করে যাবার জন্য একমাত্র নিরাপদ জায়গা। আর হাবশায় সে সময় ছিল খৃস্টানদের প্রাধান্য। তাই আহলে কিতাবের মুখোমুখি হলে দ্বীনের ব্যাপারে তাদের সাথে কোন্ ধরনের ও কিভাবে আলাপ আলোচনা করতে হবে আয়াতগুলোতে সেসব উপদেশ দেয়া হয়েছে।
# বিতর্কও আলাপ-আলোচনা উপযুক্ত যুক্তি-প্রমাণ সহকারে, ভদ্র ও শালীন ভাষায় এবং বুঝবার ও বুঝাবার ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে করতে হবে। এর ফলে যার সাথে আলোচনা হয় তার চিন্তার সংশোধন হবে। প্রচারকের চিন্তা করা উচিত, তিনি শ্রোতার হৃদয় দুয়ার উন্মুক্ত করে সত্য কথা তার মধ্যে বসিয়ে দেবেন এবং তাকে সঠিক পথে আনবেন। একজন পাহলোয়ানের মতো তার লড়াই করা উচিত নয়, যার উদ্দেশ্যই হয় প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেয়া। বরং একজন ডাক্তারের মতো তাকে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকতে হবে, যিনি তার রোগীর চিকিৎসা করার সময় একথাকে গুরুত্ব দেন যে, তার নিজের কোন ভুলের দরুন রোগীর রোগ যেন আরো বেশি বেড়ে না যায় এবং সর্বাধিক কম কষ্ট সহ্য করে যাতে তার রোগীর রোগ নিরাময় হওয়া সম্ভব হয় এ জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আহলি কিতাবের সাথে বিতর্ক-আলোচনা করার ব্যাপারে এ নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এটা কেবলমাত্র বিশেষভাবে আহলি কিতাবদের জন্য নয় বরং দ্বীনের প্রচারের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ নির্দেশ। কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে এর উল্লেখ রয়েছে। যেমনঃ
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
“আহ্বান করো নিজের রবের পথের দিকে প্রজ্ঞা ও উৎকৃষ্ট উপদেশের মাধ্যমে এবং লোকদের সাথে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক-আলোচনা করো।” (আন নাহল-১২৫)
وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
“সুকৃতি ও দুষ্কৃতি সমান নয়। (বিরোধীদের আক্রমণ) প্রতিরোধ করো উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে। তুমি দেখবে এমন এক ব্যক্তি যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল সে এমন হয়ে গেছে যেমন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।” (হা-মীম আস সাজদাহ ৩৪) ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ السَّيِّئَةَ نَحْنُ أَعْلَمُ بِمَا يَصِفُونَ
“তুমি উত্তম পদ্ধতিতে দুষ্কৃতি নির্মূল করো। আমি জানি (তোমার বিরুদ্ধে) তারা যেসব কিছু তৈরি করে।” (আল মু’মিনুন ৯৬)
خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ – وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ
“ক্ষমার পথ অবলম্বন করো, ভালো কাজ করার নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলো। আর যদি (মুখে মুখে জবাব দেবার জন্য) শয়তান তোমাকে উসকানী দেয় তাহলে আল্লাহর আশ্রয় চাও।” (আল আ’রাফ ১৯৯-২০০)
# যারা জুলুমের নীতি অবলম্বন করে তাদের সাথে তাদের জুলুমের প্রকৃতি বিবেচনা করে ভিন্ন নীতিও অবলম্বন করা যেতে পারে। এর অর্থ হচ্ছে, সবসময় সব অবস্থায় সব ধরনের লোকদের মোকাবিলায় নরম ও সুমিষ্ট স্বভাবের হয়ে থাকলে চলবে না। যেন মানুষ সত্যেও আহ্বায়কের ভদ্রতাকে দুর্বলতা ও অসহায়তা মনে না করে বসে। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে অবশ্যই ভদ্রতা, বিনয়, শালীনতা যুক্তিবাদিতার শিক্ষা দেয় কিন্তুহীনতা ও দ্বীনতার শিক্ষা দেয় না। তাদেরকে প্রত্যেক জালেমের জুলুমের সহজ শিকারে পরিণত হবার শিক্ষা দেয় না।
# এ বাক্যগুলোতে মহান আল্লাহ নিজেই উৎকৃষ্ট পদ্ধতিতে বিতর্ক-আলোচনার পথ-নির্দেশ দিয়েছেন। সত্য প্রচারের দায়িত্ব যারা গ্রহণ করেছেন তাদের এ পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। এখানে শেখানো হয়েছে, যে ব্যক্তির সাথে তোমাকে বিতর্ক করতে হবে তার ভ্রষ্টতাকে আলোচনার সূচনা বিন্দুতে পরিণত করো না। বরং সত্য ও ন্যায়-নীতির যে অংশগুলো তোমার ও তার মধ্যে সমভাবে বিরাজ করছে সেগুলোর থেকে আলোচনা শুরু করো। অর্থাৎ বিরোধীয় বিন্দু থেকে আলোচনা শুরু না করে ঐক্যেও বিন্দু থেকে শুরু করতে হবে। তারপর সেই সর্বসম্মত বিষয়াবলী থেকে যুক্তি পেশ করে শ্রোতাকে একথা বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে যে, তোমার ও তার মধ্যে যেসব বিষয়ে বিরোধ রয়েছে সেগুলোতে তোমার অভিমত সর্বসম্মত ভিত্তিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রাখে এবং তার অভিমত হচ্ছে তার বিপরীতধর্মী।
এ প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, আহলি কিতাব আরবের মুশরিকদের মতো অহী, রিসালাত ও তাওহীদ অস্বীকারকারী ছিল না। বরং তারা মুসলমানদের মতো এ সত্যগুলো স্বীকার করতো। এ মৌলিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করার পর যদি তাদের মধ্যে মতবিরোধের বড় কোন ভিত্তি হতে পারতো তাহলে তা হতো এই যে, তাদের কাছে যেসব আসমানী কিতাব এসেছে মুসলমানরা সেগুলো মানছে না এবং মুসলমানদের নিজেদের কাছে যে আসমানী কিতাব এসেছে তাদেরকে তার প্রতি ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছে আর তা গ্রহণ না করলে তাদেরকে কাফের বলে গণ্য করছে। বিরোধের জন্য এটি খুবই শক্তিশালী ভিত্তি হতে পারতো। কিন্তু মুসলমানদের অবস্থান ছিল এ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আহলি কিতাবের কাছে যেসব কিতাব ছিল সেসবকেই তারা সত্য বলে মানতো এবং এ সঙ্গে মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি যে অহী নাযিল হয়েছিল তার প্রতি তারা ঈমান এনেছিল। এরপর কোন যুক্তিসঙ্গত কারণে আহলি কিতাব এক আল্লাহরই নাযিল করা একটি কিতাব মানে এবং অন্যটি মানে না একথা বলার দায়িত্ব ছিল তাদের নিজেদেরই। এ জন্য আল্লাহ এখানে মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন, যখনই আহলি কিতাবদের মুখোমুখি হবে সবার আগে তাদের কাছে ইতিবাচকভাবে নিজেদের এ অবস্থানটি তুলে ধরো। তাদেরকে বলো, তোমরা যে আল্লাহকে মানো আমরাও তাকেই মানি এবং আমরা তার হুকুম পালন করি। তার পক্ষ থেকে যে বিধান, নির্দেশ ও শিক্ষাবলীই এসেছে, তা তোমাদের ওখানে বা আমাদের এখানে যেখানেই আসুক না কেন, সেসবের সামনে আমরা মাথা নত করে দেই। আমরা তো হুকুমের দাস। দেশ, জাতি ও বংশের দাস নই। আল্লাহর হুকুম এক জায়গায় এলে আমরা মেনে নেবো এবং এই একই আল্লাহর হুকুম অন্য জায়গায় এলে আমরা তা মানবো না, এটা আমাদের রীতি নয়। একথা কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানে বার বার বলা হয়েছে। বিশেষ করে আহলি কিতাবের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে তো জোর দিয়ে এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন দেখুন, সূরা আল বাকারার ৪ , ১৩৬ , ১৭৭ ; আল ইমরানের ৮৪ ; আন নিসার ১৩৬ , ১৫০-১৫২ , ১৬২-১৬৪ এবং আশ শু’আরার ১৩ আয়াত।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
সংক্ষিপ্ত আলোচনা (৪৬-৬৯) : যদি তাদের তুমি জিজ্ঞাসা করাে, কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ তায়ালা… আর যারা আমার সাথে পথে থাকার জন্যে চূড়ান্ত প্রচেষ্টা চালায়; অবশ্যই আমি মহান আল্লাহ তাদের দেখাবাে আমার বহু পথ এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ আছেন এহসানকারীদের সাথে।’ এটিই সূরা আনকাবুতের শেষ অধ্যায়। অবশ্য ইতিপূর্বে বিশ পারা এই আলােচ্য বিষয়ের ওপর আরও দুটি অধ্যায় বর্ণিত হয়েছে। যে মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে সূরাটি আবর্তিত হয়েছে তা হচ্ছে, ‘যে কোনাে ব্যক্তি ঈমানের বাক্য উচ্চারণ করবে, তার ওপর অবশ্যই আসবে নানা প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা, বিপদ আপদ’ অর্থাৎ, নানা প্রকার বিপদ আপদের মধ্যে ফেলে তাদের ঈমানকে পরীক্ষা করা হবে এবং এর বিবরণ ইতিপূর্বে এসে গেছে। এ পরীক্ষা আসে অন্তরকে পরখ করে মুনাফিকদের মধ্যে পার্থক্য বুঝানাের জন্যে। এ জন্যে বিপদ আপদ দিয়ে মােমেনদের সবরের পরীক্ষা নেয়া হয়। আর এসব পরীক্ষা হয় এভাবে যে, ঈমান ও মােমেনদের মােকাবেলায় দাড়িয়ে যায় দুনিয়ার বস্তুগত শক্তিমানেরা এবং তারা নানাভাবে এদের লাঞ্ছিত করে, নানাভাবে তাদেরকে কষ্ট দেয় এবং সরল সঠিক পথ থেকে সরিয়ে রাখতে চায়। এ পর্যায়ে ধৈর্যশীল মােমেনদের সান্তনা দেয়ার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে জানানাে হচ্ছে যে, সর্বপ্রকার বিপদের হুমকির মােকাবেলায় যারা দৃঢ়তা অবলম্বন করবে তাদের আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং যারা বিপদাপন্ন করার চেষ্টা করবে তাদের আল্লাহ তায়ালা নানা কঠিন শাস্তির মধ্যে ফেলে জব্দ করবেন। এটাই আল্লাহর চিরাচরিত নিয়ম যা নূহ(আ.)-এর ঘটনা অবলম্বনে দেখা যাচ্ছে। আল্লাহর থেকে আসা এ হচ্ছে এক অমােঘ নিয়ম, যার কোনাে পরিবর্তন নেই। এ ঘটনা সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সৃষ্টির প্রকৃতিই হচ্ছে এই এবং একইভাবে এক আল্লাহর দিকে দাওয়াত দানের নিয়ম থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে, যার পরিবর্তন নেই। পূর্বেকার অধ্যায়ের শেষের দিকে ‘মা উহিয়া ইলাইকা মিনাল কিতাবি’-আয়াতটির দিকে রসূলুল্লাহ(স.) ও মােমেনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্বিতীয় ভাষণ শেষ করা হয়েছে। শেষ করা হয়েছে আল্লাহর স্মরণের উদ্দেশ্যে নামায কায়েম করার কথা বলে এবং এ কথা বলে যে, মহাজ্ঞানী আল্লাহ রব্বুল আলামীন ওদের সমস্ত কাজ তদারক করছেন। শেষ ভাষণটিতে বিশেষভাবে আলােচনা এসেছে এই কিতাব সম্পর্কে এবং এ কিতাব ও পূর্বে আগত কিতাবসমূহের মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কের আলােচনা থেকে সাময়িকভাবে নযর সরিয়ে নেয়া হয়েছে। মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সুন্দর এবং যুক্তিপূর্ণ কথা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে কোনাে তর্ক-বিতর্ক বা ঝগড়া যেন না করা হয়, তবে ওদের একদল যালেম আছে, যারা তাদের কেতাবের মধ্যে নানা প্রকার পরিবর্তন এনেছে এবং শিরকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে আর শিরক হচ্ছে মহা যুলুম। অর্থাৎ তাদেরকে তাদের দাওয়াতী কাজের মাধ্যমে এবং তাদের কিতাবসমূহ প্রচারের মাধ্যমে ঈমান আনার কথা জানাতে বলা হয়েছে। এসব কিতাবই হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য কিতাব। এ কিতাব তােমাদের কাছে সত্যের যে বার্তা রয়েছে সেগুলাের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্যদানকারী। এরপর বলা হচ্ছে, মােশরেকরা যখন শেষ কিতাব অস্বীকার করছে, দেখা যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে বহু আহলে কিতাব এ সমাপ্তিকর কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মেনে নিচ্ছে। এ সব মােশরেকরাও তাে সেই জাতি, যাদের কাছেও আল্লাহর নবীরা এসেছেন এবং যাদের কাছেও কিতাব নাযিল হয়েছে। তারা জেনে বুঝে এ কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মানছে না। তাহলে কি তারা ঠেকাতে পারবে এ কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে মানা থেকে? ইচ্ছা করলেও তারা এ কিতাবকে নিজেদের মধ্যে অন্য কারাে কাছে নাযিল করাতে পারবে না। এ কিতাব দ্বারা তাে তিনি তাদেরও সম্বােধন করছেন এবং তিনি তাদের সাথে কথা বলছেন আল্লাহরই কালাম দিয়ে। কই এর আগে (তাঁর বয়স চল্লিশ হওয়ার পূর্বে) তাে তিনি এ কিতাব পড়েননি বা নিজের হাতে এ কিতাব লেখেননি। যদি তিনি লিখতে জানতেন বা কখনাে কিছু লিখতেন তাহলে হয়তাে সন্দেহ জাগার কিছু না কিছু সুযোেগ থাকতাে যে, এ কিতাব তাঁর নিজের কীর্তি বা নিজ হাতে রচিত কোনাে পুস্তক। মােশরেকরা আযাবের ব্যাপারে বেশী ব্যস্ততা দেখাচ্ছে, এ জন্যে তাদের সময়মতাে সাবধান করা হচ্ছে এবং এজন্যে ধমক দেয়া হচ্ছে যে, তারা দাবী করছে, যেন হঠাৎ করে নাযিল হয়ে যায় কঠিন সে ওয়াদাকৃত কঠিন আযাব। তাদের এমনভাবে সে আযাব সম্পর্কে জানানাে হচ্ছে যেন তারা নিজেদের চোখে দেখতে পাচ্ছে এবং তাদের অন্তরে এই অনুভূতি আসছে যে জাহান্নাম তাদের ঘিরে ফেলেছে, যেন এসে গেছে সেই ভয়ানক দিন যখন মাথার ওপর দিয়ে এবং পায়ের নীচে থেকে আযাব তাদের ঘিরে ফেলেছে। এরপর আলােচনার গতি ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে সে সকল মােমেনদের দিকে, যাদের নানাপ্রকার বিপদ-আপদ ঘিরে রেখেছে এবং মক্কী যিন্দেগীতে তাদের বিভিন্নভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। এ আয়াতগুলাের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের দ্বীনের ওপর টিকে থাকার জন্যে এবং হিজরত করার জন্যে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, যেন সেখানে গিয়ে তারা নিশ্চিন্তে একমাত্র আল্লাহর হুকুম মতাে জীবন যাপন করতে পারে। এক অতি চমৎকার পদ্ধতিতে তাদের মনােযােগ আকর্ষণ করা হচ্ছে, কাফেরদের পক্ষ থেকে তাদের অন্তরের মধ্যে যত প্রকার ভীতির সঞ্চার করা হচ্ছে, সেসব বিষয়ে তাদেরকে নিশ্চিন্ত করা হচ্ছে এবং ঈমানী যিন্দেগী যাপনের যতাে প্রকার বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে, এ বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে। তাদের অন্তরকে পরিচালনা করা হচ্ছে এমনভাবে যে তারা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে আল্লাহর হাতেই তাদের জীবন, তিনিই তাদের নিয়ন্ত্রণকারী এবং তারা গভীরভাবে অনুভব করছে, যিনি আল কোরআনের প্রেরণকারী তিনিই এ অন্তরগুলাের সৃষ্টিকারী। সুতরাং এদের গভীর অনুভূতি জানা এবং এদের সঠিক গতিপথ দান করার কাজ একমাত্র তাঁরই। এরপর সেসব মােশরেকদের বর্তমান অবস্থার ওপর বিস্ময় প্রকাশ করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে, তাদের যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, কে সৃষ্টি করেছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে? কে নিয়ন্ত্রণ করছে সূর্য ও চাঁদকে, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করছে এবং কে মৃত যমীনকে যিন্দা করছে, তখন ওরা অন্য কোনাে জওয়াব না পেয়ে, পরিশেষে হয়রান পেরেশান হয়ে স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, অবশ্যই এক আল্লাহ তায়ালা এ সবের সৃষ্টিকর্তা। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এ সব মানুষরাই যখন জাহাজে আরােহণ করে অকূল সমুদ্রের বুকে পাড়ি জমায়, তখন অন্য কারাে কথা তাদের মনে থাকে না। তখন কায়মনােবাক্যে এবং ঐকান্তিকভাবে তারা আল্লাহকে ডাকে তখন ওরা স্বীকার করে যে, মানুষের জীবন বিধানদানকারী অবশ্যই একমাত্র আল্লাহ তায়ালা! এরপরও ওরা পাক পরওয়ারদেগার মহান আল্লাহর সাথে শরীক করতে দ্বিধা করে না। এরপরও তার কিতাবকে তারা অস্বীকার করে, কষ্ট দেয় তার রসূলকে এবং মােমেনদেরকেও নানাভাবে কষ্ট দেয়। দেখুন, আবারও মােশরেকদের স্মরণ করানাে হচ্ছে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের ওই তুলনাহীন নেয়ামত সম্পর্কে, এই যে নিরাপদ শহরে তারা বাস করে, যেখানে কেউ তাদের হামলা করে না, এটা হচ্ছে সেই পবিত্র শহর যার প্রতি শ্রদ্ধাবােধ, তাদের বুকে ও মুখে, যে শহরের মধ্যে, শত অপরাধ করে এসে প্রবেশ করার সাথে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে যায়, অথচ এ শহরের বাইরে এমন কোনাে জায়গা নেই যেখানে মানুষের জান মাল ইযযতের কোনাে নিরাপত্তা আছে; বরং এই শহরের বাইরে আশেপাশের যে কোনাে অঞ্চল থেকে মানুষকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাওয়া হয়, জান মালের নিরাপত্তার অভাবে যেখানে মানুষের কোন স্বস্তি নেই, সারা দিনমান ভয়ভীতি লেগেই আছে, কখন কি মসিবত এসে পড়ে, এ চিন্তায় তারা সর্বদা অস্থির হয়ে থাকে। তারা একটুও ভেবে দেখে না যে, কে সে মহান সত্ত্বা যিনি মানুষের অন্তরে হারাম শরীফের প্রতি এমন মর্যাদাবােধ সৃষ্টি করে দিলেন। কার অদৃশ্য হাত এ সবকে এক নির্দিষ্ট মাত্রা অনুযায়ী পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে। এতােসব আশ্চর্যজনক জিনিস তাদের সামনে থাকা সত্তেও তারা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে মনগড়া মিথ্যা কথা বলছে ও তার ক্ষমতায় অন্য কারও অংশীদারিত্ব আছে বলে জানাচ্ছে। প্রাণ বা প্রাণহীন, যে নিজে সৃষ্ট জীবন, যার নিজের নেই কোনাে স্থায়িত্ব, যার নিজের জীবনের গ্যারান্টি দেয়ার কোন ক্ষমতা নেই, যে নিজের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে না, যে সাহায্যের জন্যে অপরের ওপর নির্ভরশীল, সে কেমন করে সবার ভালাে মন্দের কর্তা হবে? কেন এই ভ্রান্ত মানুষ সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের ক্ষমতা এতাে সীমাবদ্ধ মনে করে। কেন সে তাকে অপরের মুখাপেক্ষী ভাবে? যাকে আল্লাহ রব্বুল আলামীন সৃষ্টির সেরা বানালেন, যাকে সকল কিছু পরিচালনা করার জ্ঞান-গরিমা দান করলেন, যার খেদমতে আঠার হাজার আলমের সবাইকে নিয়ােজিত করে দিলেন, যাকে খােদ মালিক মুখতার নিজের প্রতিনিধি বানালেন সে কেন নিজেকে এমনভাবে অপমানিত করছে? এ সব যুক্তির কোন কিছুই যদি তার কানে না পৌছে, বিদ্ধ না করে দিলকে, না যদি জাগে তার বিবেক আর এই ভাবে যদি সে তার জীবনের মহামূল্যবান ক্ষণগুলাে হেলায় ও অসার খেলায় কাটিয়ে দেয়, তাহলে তাদের পরিণতি আর কি হতে পারে। এ তাে হলাে অর্বাচীন এর জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালা ভয়ানক জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছেন, সেটাই হবে কাফের (সত্য অস্বীকারকারীদের শেষ ঠিকানা। সূরাটি সমাপ্ত করা হচ্ছে এ কথার দৃঢ় ঘােষণাদানের সাথে যে, যারা আল্লাহর পথে টিকে থাকার জন্যে চূড়ান্তভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের জন্যে আল্লাহর জোরদার ওয়াদা রয়েছে যে অবশ্যই তিনি তাদের সঠিক পথ দেখাবেন। যারা খালেস মনে আল্লাহর বান্দা থাকতে চায় এবং যাদের জীবনের চাওয়া পাওয়ার মূলে তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার খাহেশ রয়েছে, তাদের থেকে অবশেষে সকল বাধা বিঘ্ন ও বিপদ আপদের ঝড় ও শক্রদের রক্তচক্ষুর চাহনি দূরে সরিয়ে দেবেন, তাদের সকল সংকট সহজ করে করে দেবেন, তাদের জীবনের দীর্ঘ সফর ক্ষেত্র তাদের বন্ধুর পথের দূরত্ব সহজ করে দেবেন এবং তাদের শত বাধার বিন্ধ্যাচল অতিক্রম করার যোগ্যতা দেবেন। *তাফসীর : দাওয়াতে কাজে উত্তেজিত হওয়া নিষিদ্ধ : এরশাদ হচ্ছে, ‘(হে মুসলমানরা,) তােমরা কিতাবধারী (ইহুদী খৃষ্টান)-দের সাথে কোনােরকম তর্ক-বিতর্ক করে না, অবশ্য ভালাে কিছুর ব্যাপারে (বিতর্ক করা) হলে তা আলাদা কথা, তবে তাদের মধ্যে যারা যুলুম করে (তাদের সাথে তর্ক করতে দোষ নেই,) তুমি (এদের) বলো, আমরা ঈমান এনেছি যা কিছু আমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে সে (সে কিতাবের ওপর, (আরাে ঈমান এনেছি) যা কিছু তােমাদের ওপর নাযিল হয়েছে (সে কিতাবের) ওপর, (সত্যি কথা হচ্ছে) আমাদের মাবুদ ও তােমাদের মাবুদ হচ্ছেন এক (ও অভিন্ন) এবং আমরা সবাই তারই কাছে আত্মসমর্পণ করি।’ উপরের আয়াতটিতে এ কথাই বলা হচ্ছে যে, আল্লাহর আহবানে সেই একই কথা বলা রয়েছে যা নূহ(আ.) এবং তার পরবর্তীতে আগত রসূলরা বহন করে নিয়ে এসেছিলেন। সেই পয়গামটাই শেষ নবী মুহাম্মদ(সা.)-এর কাছে পৌছেছে। অবশ্যই সে দাওয়াত এক আল্লাহর নিকট থেকে আগত অবিকল একই দাওয়াত। এ দাওয়াতের লক্ষ্য একটিই, আর তা হলো ভ্রান্ত মানুষকে তার রবের দিকে ফিরিয়ে দেয়া, তার পথটা দেখিয়ে দেয়া এবং তারই দেয়া পদ্ধতি অনুসারে তাদের গড়ে তােলা। আর সে পথ হচ্ছে, মােমেনরা তাদের ভাইদের কাছে যে পয়গামটা পৌছে দেবে তা অন্য সকল পয়গামের যে লক্ষ্য সে একই লক্ষ্যে পৌছে দেয়ার জন্যে নিবেদিত হবে। তার মূল কথাই হচ্ছে, সারা দুনিয়ার সকল মানুষ একই জাতি, যদি তারা এক আল্লাহর দাসত্ব করে। অর্থাৎ, যারা নিজেদের আল্লাহর বান্দা বা দাস মনে করে, তারা যেখানেই থাকুক এবং যে ভাষাতেই কথা বলুক, তারা সবাই মিলে একই জাতি। আর এটাই সর্ববাদী সত্য কথা যে, সর্বযুগে গােটা দুনিয়ার সকল মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত থেকেছে, একভাগ মােমেন আরেক ভাগ হচ্ছে শয়তানের দল। স্থান কাল নির্বিশেষে এই একই সত্য বরাবর মানুষের মধ্যে আবর্তিত হয়ে চলেছে। প্রত্যেক যমানাতে মােমেনরা ঈমানী গুণের অধিকারী হওয়ার কারণে যে যেখানে থাকুক না কেন, এই একটি মাত্র দলের অন্তর্ভুক্ত। এই হচ্ছে সেই মর্যাদাপূর্ণ সত্য যা প্রতিষ্ঠার জন্যেই ইসলামের আগমন এবং তার অভিযাত্রার চূড়ান্ত লক্ষ্য আর ওপরের বর্ণিত আল কোরআনের আয়াতটিতে এই কথার দিকেই ইংগীত করা হয়েছে। এই সত্যটিই তাকে রক্ত ও বংশ সম্পর্কের উর্ধে টেনে তুলেছে এবং তাকে মর্যাদাবান বানিয়েছে, দেশ-শ্রেণী, গােত্র ও বিশেষ কোনাে দেশের নাগরিক হওয়া থেকে তাকে ওপরে তুলেছে এবং তাকে বিশ্বব্যাপী পরিব্যাপ্ত সর্বশক্তিমান আল্লাহর রাজ্যের নাগরিক হওয়ার সম্মান দিয়েছে। তারা একই ব্যবসায়ী দলের সদস্য হওয়ার বা বিশেষ দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমে মর্যাদাবান হওয়া থেকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কের কারণে বিশ্ব নাগরিক হওয়া বেশী গৌরবজনক বলে বুঝেছে। আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির উপায় একটিই, আর তা হচ্ছে ঈমানী যােগ্যতা বৃদ্ধি করা। এই আকীদার অধিকারী হওয়ার কারণে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের মধ্যে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেখানে মানুষের বর্ণ-ভাষা ও রক্তের সম্পর্ক, গৌণ হয়ে যায় সেখানে ভাষা বা ভৌগােলিক জাতীয়তা ও দেশের সীমাবদ্ধতা ঢাকা পড়ে যায়, সেখানে স্থানকালের সীমাবদ্ধতা গৌণ হয়ে যায়, সেখানে একটিই মাত্র সম্পর্ক মানুষকে সংঘবদ্ধ করে, আর তা হচ্ছ স্রষ্টা ও বিধানদাতা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সাথে নিজেকে আবদ্ধ করা। এই আংগিকে চিন্তা করলে আহলে কিতাবদের সাথে উত্তম পন্থা ও যুক্তিপূর্ণ কথা দ্বারা আলােচনা করার তাৎপর্য বুঝা যায়। ‘মুজাদালা’ শব্দটি দ্বারা বুঝায় উত্তেজিত অবস্থায় প্রতিপক্ষকে কোনাে কিছু মানতে বাধ্য করা। সেখানে যুক্তি থেকে কড়া ভাষা এবং উত্তজিত কণ্ঠস্বর দ্বারা প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করাটা প্রাধান্য পায়, কিন্তু ইসলামী দাওয়াত হবে যুক্তি প্রধান এবং সে যুক্তি পেশ করার মধ্যে মিষ্টতা অনুভূত হতে হবে। যেমন অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘ডাকো আল্লাহর পথে হেকমত (জ্ঞান-বুদ্ধি ও যুক্তি) এবং সুন্দর সুমিষ্ট কথামালা দ্বারা।’ এমন ভাবে থাকো যেন নতুন এ পয়গাম আসার যৌক্তিকতা সুন্দরভাবে তাদের সামনে ফুটে উঠে এবং শ্রোতার কাছে কথাগুলাে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। এটাও যেন বুঝে আসে যে এ পয়গাম এবং পূর্বে অবতীর্ণ পয়গামসমূহের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। মানুষ যেন হৃদয় দিয়ে এটা অনুভব করে যে, আল্লাহর আহবান পূর্বে যেভাবে এবং যে ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে, সেই একই দাওয়াত আরও সুন্দরভাবে আরবী ভাষায় পেশ করা হচ্ছে। তাদের হৃদয় যেন বলে ওঠে, আহা, এ কথাগুলাে কত মনােমুগ্ধকর মনে হচ্ছে, যতােই শুনছি শুনতে যেন আরও ভালাে লাগছে, আহ, কী চমৎকার ভাষা, কতাে মধুর এ বাচনভংগী, এ তাে সেই কথা যা আমাদের নবীর কথার মধ্যে ঝংকৃত হয়েছে, আহা, সেই কথাটাই তাে আরও কত সুন্দরভাবে বলা হচ্ছে, হাঁ এভাবে দাওয়াত প্রসারিত হলেই তাে আশা করা যায় আজকের বিরাজমান সমস্যা দূর হবে, হয়তাে আবার হারিয়ে যাওয়া শান্তি ফিরে আসবে এবং মানুষের সকল প্রয়ােজন পূরণ হবে। ‘তবে ওদের মধ্যে যারা যুলুম করেছে’ অর্থাৎ যারা সরে গেছে সেই তাওহীদ থেকে যা স্থায়ী নীতি ও বিশ্বাস হিসেবে সুস্থ বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে চিরদিন স্বীকৃত, যারা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক জ্ঞান করেছে এবং দুনিয়ার জীবনের জন্যে প্রদত্ত তার বিধান পরিত্যাগ করেছে, তারাই হচ্ছে সেসব ব্যক্তি যাদের সাথে যুক্তিতর্ক করার কোন প্রয়ােজন নেই, বা নেই কোনাে সদ্ব্যবহারের আদান প্রদান। ওদের বিরুদ্ধে ইসলাম যুদ্ধ ঘােষণা করেছে। যখন মদীনাতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তখন এসেছে এই ঘােষণা। আর ওদের মধ্যে অনেকে আছে যারা রসূল(স.) সম্পর্কে চরম বেয়াদবীপূর্ণ উক্তি করে। ওরা তার সম্পর্কে এ মন্তব্য করে যে, যখন তিনি মক্কাবাসীদের থেকে পালিয়ে এসে মদীনায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন, তখন তারা আহলে কিতাবদের কৃপাধন্য হয়েছিলেন এবং তাদের সদ্ব্যবহারের কারণেই তিনি মদীনায় আশ্রয় পেয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি তাদের আশ্রিত হয়েছিলেন বলে তারা এহসান প্রদর্শন করতে চাইতাে। তিনি যখন শক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম হলেন তখন তিনি ওদের মদীনা থেকে বিতাড়িত করলেন; এভাবে তিনি প্রমাণ করলেন যে, তিনি মক্কায় থাকতে আহলে কিতাবদের সম্পর্কে যা কিছু বলতেন, তার পরবর্তীকালের আচরণের মাধ্যমে তিনি নিজের সেসব পূর্বেকার কথার বিরােধিতা করেছেন। এটা তার সম্পর্কে সুস্পষ্ট বানােয়াট মিথ্যা কথা এবং এ সম্পর্কে অবতীর্ণ এ সূরাই সাক্ষ্য দিচ্ছে, তিনি আহলে কিতাবদের সম্পর্কে মক্কায় থাকাকালে কি মনােভাব পোষণ করতেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আহলে কিতাবদের সাথে সুন্দরভাবে কি আলােচনা করা যায় বা কি যুক্তিতর্ক বিনিময় করা যায়? হাঁ, এর জওয়াব হচ্ছে, কথাটা শুধু তাদের জন্যেই সীমাবদ্ধ যারা যুলুম করেনি এবং আল্লাহর দ্বীন (জীবন বিধান) থেকে সরে যায়নি, তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়নি সেই তাওহীদ (একত্ববাদ) থেকে যা নিয়ে সর্বকালে সব নবীদের কাছে সমস্ত আসমানী পয়গাম এসেছে। ওদের সম্বোধন করে এরশাদ করা হয়েছে, ‘বলাে, আমরা ঈমান এনেছি সেই কথার (কিতাবের) ওপর যা নাযিল হয়েছে আমাদের ওপর এবং সেসব কিতাবের ওপরও যা তােমাদের নিকট নাযিল হয়েছে। আমাদের ও তােমাদের ইলাহ একজনই এবং আমরা (সবাই) তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। সুতরাং মতবিরােধ করা বা ঝগড়া ফাসাদ করার কোনাে প্রয়ােজন নেই, দরকার নেই কোনাে বিবাদ-বিসম্বাদ করার। যেহেতু সবাই এক ও সর্বশক্তিমান মনিব-মালিকের ওপর ঈমান রাখে আর মুসলমানরা তাে ঈমান এনেছে সেই কিতাবের ওপর যা তাদের কাছে এবং তাদের পূর্বে অন্যান্য নবী রসূলদের ওপর নাযিল হয়েছে, বলা হয়েছে যে, সকল কিতাবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য একটিই। আর তাহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত আর জীবন বিধান যা সকল কিতাবের মাধ্যমে এসেছে, তা পরস্পর ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক যুক্ত।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
হযরত কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এ আয়াতটি জিহাদের হুকুমের দ্বারা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। এখন তো হুকুম এই যে, হয় ইসলাম কবূল করবে; না হয় জিযিয়া দেবে, না হয় যুদ্ধ করবে। কিন্তু অন্যান্য বুযর্গ তাফসীরকারগণ বলেন যে, এটা মুহকাম ও বাকী রয়েছে। যে ইয়াহূদী বা খৃষ্টান ধর্মীয় বিষয় জানতে ও বুঝতে চায় তাকে উত্তম পন্থায় ও ভদ্রতার সাথে তা বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, সে হয়তো সত্য ও সঠিক পথ অবলম্বন করবে। যেমন অন্য আয়াতে সাধারণ হুকুম বিদ্যমান রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হিকমত ও উত্তম উপদেশের সাথে তোমার প্রতিপালকের পথের দিকে আহ্বান কর।” (১৬:১২৫)
হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারুন (আঃ)-কে যখন ফিরাউনের নিকট প্রেরণ করা হয় তখন মহান আল্লাহ তাদেরকে নির্দেশ দেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা তার সাথে নম্রভাবে কথা বলবে, হয়তো সে উপদেশ গ্রহণ করবে অথবা ভয় করবে।” (২০:৪৪) এটাই ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর পছন্দনীয় উক্তি। হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। তবে, তাদের মধ্যে যে যুলুম ও হঠকারিতাকে আঁকড়ে ধরে থাকবে এবং সত্যকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করবে, তার সাথে আলোচনা বৃথা। এরূপ লোকের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হওয়ার নির্দেশ রয়েছে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। আমি লৌহও দিয়েছি যাতে রয়েছে প্রচণ্ড শক্তি ও রয়েছে মানুষের জন্যে বহুবিধ কল্যাণ; এটা এই জন্যে যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন কে প্রত্যক্ষ না করেও তাকে ও তাঁর রাসূলদেরকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী ।” (৫৭:২৫)।
সুতরাং আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ এই যে, উত্তম ও নম্র ব্যবহারের পর যে না মানবে তার প্রতি কঠোর হতে হবে, যে যুদ্ধ করবে তার সাথে যুদ্ধ করতে হবে। তবে কেউ যদি অধীনে থেকে জিযিয়া কর আদায় করে তাহলে সেটা অন্য কথা।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “বল, আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি।’ অর্থাৎ যখন আমাদেরকে এমন কিছুর খবর দেয়া হবে যা সত্য কি মিথ্যা তা আমাদের জানা নেই ওটাকে মিথ্যাও বলা যাবে না এবং সত্য বলাও চলবে না। কেননা, এরূপ করলে হতে পারে যে, আমরা কোন সত্যকেও মিথ্যা বলে দেবো এবং হয়তো কোন মিথ্যাকে সত্য বলে ফেলবো। সুতরাং শর্তের উপর সত্যতা স্বীকার করতে হবে। অর্থাৎ বলতে হবেঃ “আল্লাহর বাণীর উপর আমাদের ঈমান রয়েছে। যদি তোমাদের পেশকৃত বিষয় আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে তবে আমরা তা মেনে নিবো। আর যদি তোমরা তাতে পরিবর্তন করে ফেলে থাকো তবে আমরা তা মানতে পারি না।”
সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আহলে কিতাব তাওরাত ইবরানী ভাষায় পাঠ করতো এবং মুসলমানদের জন্যে আরবী ভাষায় ওর তাফসীর করতো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তোমরা তাদেরকে সত্যবাদীও বলো না, মিথ্যাবাদীও বলো না। বরং তোমরা বলল- আমাদের প্রতি ও তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে আমরা বিশ্বাস করি এবং আমাদের মা’বুদ ও তোমাদের মাবুদ তো একই এবং তারই প্রতি আমরা আত্মসমর্পণকারী।”
হযরত আবু নামলাহ আল আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বসেছিলেন এমন সময় তাঁর নিকট একজন ইয়াহুদী এসে তাকে জিজ্ঞেস করেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এই জানাযা কথা বলে কি?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলাই খুব ভাল জানেন।” তখন ইয়াহূদী বলেঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই জানাযা কথা বলে।”
তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “এই ইয়াহূদীরা যখন তোমাদেরকে কোন কথা বলে তখন তোমরা তাদেরকে সত্যবাদীও বলো না এবং মিথ্যাবাদীও বলো না। বরং তোমরা বলো- আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর এবং তাঁর রাসূলদের উপর। সুতরাং তারা যদি সত্য কথা বলে থাকে তাহলে তাদেরকে তোমাদের মিথ্যাবাদী বলা হলো না, আর যদি তারা মিথ্যা কথা বলে থাকে তাহলে তোমাদের তাদেরকে সত্যবাদী বলা হলো না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এটা মনে রাখা দরকার যে, এই আহলে কিতাবের অধিকাংশ কথাই তো ভুল ও মিথ্যা হয়ে থাকে। প্রায়ই দেখা যায় যে, আল্লাহ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করেছে। পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও ভুল ব্যাখ্যার প্রচলন তাদের মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রয়েছে। বলতে গেলে তাদের মধ্যে সত্য বলতে কিছুই নেই। তবুও যদি ধরে নেয়া হয় যে, তাদের কথার মধ্যেও সত্যতা কিছু রয়েছে তাহলেই বা আমাদের তাতে কি লাভ? আমাদের কাছে তো মহান আল্লাহর এমন এক শ্রেষ্ঠ কিতাব বিদ্যমান রয়েছে যা পূর্ণ ও ব্যাপক। এমন কিছু নেই যা এর মধ্যে পাওয়া যাবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “আহলে কিতাবকে তোমরা কিছুই জিজ্ঞেস করো না। তারা নিজেরাই যখন পথভ্রষ্ট তখন কি করে তারা তোমাদেরকে পথ দেখাবে? হ্যাঁ, তবে এটা হয়ে যেতে পারে যে, তোমরা তাদের কোন সত্যকে মিথ্যা বলে দেবে বা কোন মিথ্যাকে সত্য বলে দেবে। স্মরণ রাখবে যে, আহলে কিতাবের অন্তরে তাদের ধর্মের ব্যাপারে গোঁড়ামি রয়েছে, যেমন মাল-ধনের ব্যাপারে তাদের লোভ-লালসা রয়েছে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “কি করে তোমরা আহলে কিতাবকে (দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে পার? তোমাদের উপর তো আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে সবেমাত্রই কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত। এর মধ্যে মিথ্যার মিশ্রণ ঘটতে পারে না। আল্লাহ তাআলা তো তোমাদেরকে বলেই দিয়েছেন যে, আহলে কিতাব আল্লাহর দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা আল্লাহর কিতাবকে বদলিয়ে দিয়েছে এবং নিজেদের হাতের লিখা কিতাবকে আল্লাহর কিতাব বলে চালাতে শুরু করেছে। আর এভাবে তারা পার্থিব উপকার লাভ করতে রয়েছে। তোমাদের কাছে যে আল্লাহর ইলম রয়েছে তা কি তোমাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, তাদেরকে তোমরা জিজ্ঞেস করতে যাবে? এটা কত বড় লজ্জার কথা যে, তোমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করছো অথচ তারা তোমাদেরকে কিছুই জিজ্ঞেস করে না? এটা কি তোমরা চিন্তা করে দেখো এটা ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। একদা মুআবিয়া (রাঃ) মদীনায় কুরায়েশদের একটি দলের সামনে বলেনঃ “দেখো, এসব আহলে কিতাবের মধ্যে তাদের কথা বর্ণনায় সবচেয়ে উত্তম ও সত্যবাদী হচ্ছেন হযরত কা’ব-আল্ আহবার (রঃ)। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমরা কখনো কখনো তাঁর কথার মধ্যেও মিথ্যা পেয়ে থাকি। এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা বলেন। বরং তিনি যে কিতাবগুলোর উপর নির্ভর করেন ওগুলোর মধ্যেই সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত রয়েছে। তাদের মধ্যে মযবৃত ইলমের অধিকারী হাফিযদের দল ছিলই না। এ উম্মতের (উম্মতে মুহাম্মদীর সঃ) উপর আল্লাহর এটা একটা বিশেষ অনুগ্রহ যে, তাদের মধ্যে উত্তম মন মস্তিষ্কের অধিকারী, বিচক্ষণ ও মেধাবী এবং ভাল স্মরণশক্তি সম্পন্ন লোক তিনি সৃষ্টি করেছেন। তবুও দেখা যায় যে, এখানেও কতই না জাল ও বানানো হাদীস জমা হয়ে গেছে। তবে মুহাদ্দিসগণ এসব মিথ্যাকে সত্য হতে পৃথক করে দিয়েছেন। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যেই।”
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1024)
[A Basic rule of Dawat:-]
www.motaher21.net
Sura:29
Para:21
Sura: Al-Ankabut
Ayat: 46
29:46
وَ لَا تُجَادِلُوۡۤا اَہۡلَ الۡکِتٰبِ اِلَّا بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ٭ۖ اِلَّا الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡہُمۡ وَ قُوۡلُوۡۤا اٰمَنَّا بِالَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡنَا وَ اُنۡزِلَ اِلَیۡکُمۡ وَ اِلٰـہُنَا وَ اِلٰـہُکُمۡ وَاحِدٌ وَّ نَحۡنُ لَہٗ مُسۡلِمُوۡنَ ﴿۴۶﴾
And do not argue with the People of the Scripture except in a way that is best, except for those who commit injustice among them, and say, “We believe in that which has been revealed to us and revealed to you. And our God and your God is one; and we are Muslims [in submission] to Him.”
Arguing with the People of the Book
Allah says:
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلاَّ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
And argue not with the People of the Scripture, except with that which is better —
What is meant here is that anyone who wants to find out about religion from them should argue with them in a manner that is better, as this will be more effective.
Allah says:
ادْعُ إِلِى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ
Invite to the way of your Lord with wisdom and fair preaching… (16:125)
And Allah said to Musa and Harun when he sent them to Fir`awn:
فَقُولَا لَهُ قَوْلاً لَّيِّناً لَّعَلَّهُ يَتَذَكَّرُ أَوْ يَخْشَى
And speak to him mildly, perhaps he may accept admonition or fear. (20:44)
Allah says here:
إِلاَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ
except with such of them as do wrong;
meaning, those who turn away from the truth, turning a blind eye to clear evidence, being stubborn and arrogant. In this case you should progress from debate to combat, fighting them in such a way as to deter them from committing aggression against you.
Allah says:
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَـتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَـبَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنزْلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ
Indeed We have sent Our Messengers with clear proofs, and revealed with them the Scripture and the Balance that mankind may keep up justice. And We brought forth iron wherein is mighty power… until:
إِنَّ اللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
Verily, Allah is All-Strong, All-Mighty. (57:25)
Jabir said:
“We were commanded to strike with the sword whoever opposes the Book of Allah.”
And His saying:
وَقُولُوا امَنَّا بِالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْنَا وَأُنزِلَ إِلَيْكُمْ
and say (to them):”We believe in that which has been revealed to us and revealed to you;
means, `if they tell you something which you do not know to be true or false, say to them:We do not hasten to say it is a lie, because it may be true, and we do not hasten to say it is true because it may be false. We believe in it in general, under the condition that it has been revealed and has not been altered or deliberately misinterpreted.’
وَإِلَهُنَا وَإِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
our God and your God is One, and to Him we have submitted.”
Imam Al-Bukhari, may Allah have mercy on him, recorded that Abu Hurayrah, may Allah be pleased with him, said,
“The People of the Book used to read the Tawrah in Hebrew and explain it in Arabic to the Muslims. The Messenger of Allah said:
لَاا تُصَدِّقُوا أَهْلَ الْكِتَابِ وَلَاا تُكَذِّبُوهُمْ وَقُولُوا
امَنَّا بِاللهِ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَإِلَهُنَا وَإِلَهُكُمْ وَاحِدٌ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُون
Do not believe the People of the Book and do not deny them. Say:
“We believe in Allah and what has been revealed to us and what has been revealed to you. Our God and your God is One, and to Him we have submitted.””
This Hadith was narrated only by Al-Bukhari.
Al-Bukhari recorded that Ibn Abbas said:
“How can you ask the People of the Book about anything, when your Book that was revealed to the Messenger of Allah is more recent, you read it pure and uncontaminated, it tells you that the People of the Book altered and changed the Book, that they write the Book with their own hands and then say, `This is from Allah,’ to purchase with it a small price.
Should not the knowledge that you have, prevent you from asking them?
No, by Allah, we have never seen any of them asking you about what was sent down to you.”
Al-Bukhari recorded that Humayd bin Abdur-Rahman heard Mu`awiyah talking to a group of Quraysh in Al-Madinah. He mentioned Ka`b Al-Ahbar, and said:
“He was one of the most truthful of those who narrated from the People of the Book, even though we found that some of what he said might be lies.”
I say, this means that some of what he said could be classified linguistically as lies, but he did not intend to lie, because he was narrating from manuscripts which he thought were good, but they contained fabricated material, because they did not have people who were so conscientious in memorizing the Scriptures by heart as the people of this great Ummah
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran